► একসাথে গীতসংহিতা ৮৫ পড়ুন। এই অনুচ্ছেদটি পরিত্রাণ সম্পর্কে আমাদের কী বলে?
ক্রুশ
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ খ্রিষ্টীয় প্রতীক হল ক্রুশ। ক্রুশ সেই ঘটনাকে প্রতিনিধিত্ব করে যা সমস্ত ইতিহাসের কেন্দ্র। এটি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস এবং অন্যান্য সকলের মধ্যে পার্থক্য উপস্থাপন করে।
অনেক মানুষের কাছে ক্রুশ একটি রহস্য। যিশু কেন মারা গেলেন তা তারা বুঝতে পারে না। এমনকি যখন তারা শোনে যে তিনি মারা গেছেন কারণ তিনি আমাদের ভালবাসেন এবং আমাদের বাঁচাতে চান, তখন তারা বুঝতে পারে না কেন এটি হওয়া দরকার ছিল। তারা জিজ্ঞাসা করে, "ঈশ্বর যদি আমাদের ক্ষমা করতে চান তবে কেন তিনি তা এমনিতেই করতে পারলেন না?"
ক্রুশ নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছিল সেই প্রথম থেকেই, যখন প্রথম খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করেছিল। (পড়ুন ১ করিন্থীয় ১:২২-২৩)। ইহুদিরা ভেবেছিল যে ঈশ্বর নিজেকে ক্ষমতায় প্রদর্শন করবেন। তারা ভেবেছিল যে তাদের যে উদ্ধার প্রয়োজন তা নির্যাতন থেকে মুক্তি। তাই ক্রুশ ছিল তাদের কাছে দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার প্রতীক।
গ্রীকরা মনে করেছিল যে ঈশ্বর নিজেকে জ্ঞানের মধ্যে দেখাবেন। তারা ভেবেছিল যে তাদের যে উদ্ধার প্রয়োজন তা হ'ল কীভাবে জীবনের সেরাটি কীভাবে পেতে হয় সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা। তাই ক্রুশটি তাদের কাছে একটি বোকামি এবং ব্যর্থতা বলে মনে হয়েছিল।
► কেন কিছু মানুষ ক্রুশে দ্বারা অসন্তুষ্ট হয়?
ক্রুশ অনেক মানুষের কাছে অসন্তোষের কারণ। অনেকে ধার্মিক হতে ইচ্ছুক। তারা নির্দিষ্ট কিছু বিশ্বাস করতে, ধর্মীয় রীতিনীতি অনুশীলন করতে এবং পরামর্শ নিতে ইচ্ছুক। তবে তারা এই ধারণাটি নিয়ে ক্ষুব্ধ যে তারা এমন পাপী যে তাদের ক্ষমার জন্য ত্রুশের প্রয়োজন ছিল। তারা মনে করে তাদের কাজকর্ম বা চরিত্র নিয়ে ঈশ্বরের আপত্তি করা উচিত নয়। ত্রুশ তাদের আপত্তির কারণ ক্রুশের অর্থ হল তারা পাপী এবং তাদের ক্ষমার প্রয়োজন।
ক্রুশ যিশুর বলিদানকৃত মৃত্যু বোঝার জন্য আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে পাপী মানুষের অবস্থা এবং ঈশ্বরের পবিত্র প্রকৃতি একটি মহাসঙ্কট সৃষ্টি করেছিল। আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে ঈশ্বরের পক্ষে ক্ষমা করা সম্ভব করে তুলেছিল।
মানব পরিস্থিতি
আদমের পাপের কারণে, ইতিমধ্যেই প্রতিটি মানুষ জন্মের সময় থেকে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে (রোমীয় ৫:১২)। এর অর্থ হল প্রতিটি ব্যক্তি আত্মকেন্দ্রিক এবং তার নিজস্ব পথে চলে।
যখন থেকে কোনও ব্যক্তি নিজ পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে তখন থেকেই সে পাপ করাও শুরু করেন। প্রত্যেক পাপী অনেক পাপ কাজের জন্য দোষী। (পড়ুন রোমীয় ৩:২৩)
পাপ হল ঈশ্বরের আইনের লঙ্ঘন (১ যোহন ৩:৪; যাকোব ২:১০-১১)। যেহেতু ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে ন্যায়পরায়ণ, তিনি পাপকে ক্ষমা করেন না, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা করেছে তার জন্য বিচার করা হবে (২ করিন্থীয় ৫:১০; প্রকাশিত বাক্য ২০:১২-১৩)। কোন ব্যক্তির অপরাধ বা তার প্রাপ্য বিচার সম্পর্কে কোন প্রশ্ন নেই। প্রত্যেক অবিশ্বাসী ইতিমধ্যেই দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত। (পড়ুন যোহন ৩:১৮-১৯)
যে পাপী অনুশোচনা করেনি সে ঈশ্বরের শত্রু (রোমীয় ৫:১০)। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর অপরাধ অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত একজন পাপী ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।
পাপী ব্যক্তিও এমন অবস্থায় থাকে যা তাকে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের জন্য অযোগ্য করে তোলে। পাপী তার আকাঙ্ক্ষায় কলুষিত (ইফিষীয় ২:৩)। যেহেতু সে পাপের দাস, পাপী তার অবস্থা পরিবর্তন করতে শক্তিহীন। (পড়ুন রোমীয় ৬:২০, রোমীয় ৭:২৩)
তাহলে পাপীর পরিত্রাণের জন্য কি প্রয়োজন? যেহেতু পাপী দোষী, পরিত্রাণ মানে হল ক্ষমা। যেহেতু সে ঈশ্বরের শত্রু, পরিত্রাণের অর্থ হল পুনর্মিলন। যেহেতু সে কলুষিত, পরিত্রাণ মানে হল শুচিকরণ। যেহেতু সে শক্তিহীন, পরিত্রাণ মানে হল মুক্তি। এগুলি পরিত্রাণের কয়েকটি দিক যা পাপীর প্রয়োজন আছে।
দ্বিধা
[1]মানুষ নিজের পাপের মূল্য প্রদান করতে পারেনি। তার একটি কারণ হল আমাদের যা কিছু আছে ইতিমধ্যে তা সবকিছই ঈশ্বরের। আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই যে পাপ করা হয়েছে এক অসীম ঈশ্বরের বিরুদ্ধে, এবং মানুষের কাছে সেই মূল্য প্রদানের জন্য অসীম মূল্যের কিছুই নেই।
মানুষ তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে কিছুই করতে পারে না, তাই তাদের জন্য এমন কোন প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা যায় না যা পরিত্রাণ সম্পন্ন করতে পারে। (পড়ুন গালাতীয় ৩:২১)। যদি মানুষের পক্ষে তাদের নিজেদের পরিত্রাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো, তাহলে যিশুর ক্রুশে মারা যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। (পড়ুন গালাতীয় ২:২১)।
► ঈশ্বর যদি ক্ষমা করতে চান তাহলে তিনি ক্রুশ ছাড়াই কেন ক্ষমা করলেন না?
যেহেতু ঈশ্বর পবিত্র এবং ন্যায়পরায়ণ, তাই তাঁকে অবশ্যই সত্য ও ন্যায়বিচার অনুসারে বিচার করতে হবে (রোমীয় ২:৫-৬)। প্রায়শ্চিত্ত শব্দটি এই সত্যটিকে নির্দেশ করে যে যিশুর বলিদান হল ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার পথ।
কল্পনা করুন, খ্রিস্ট যদি নিজেকে বলিদান না দিতেন এবং ঈশ্বর যদি কোন প্রায়শ্চিত্ত ছাড়াই পাপ ক্ষমা করে দিতেন তাহলে কি হোত?
ঈশ্বর যদি প্রায়শ্চিত্ত ছাড়াই পাপ ক্ষমা করে দেন, তা হলে এটা মনে হবে যে পাপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এটা মনে হবে যে, ঈশ্বর অন্যায্য এবং এমনকি তিনি অপবিত্র। এটা মনে হবে যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি সঠিক কাজ করে এবং আর একজন অন্যায় করে, তাদের মধ্যে সামান্যই ফারাক রয়েছে।
ক্ষমা যদি প্রায়শ্চিত্ত ছাড়াই হতো, তাহলে ঈশ্বরকে ন্যায়পরায়ণ ও পবিত্র ঈশ্বর হিসেবে উপাসনা করা যেত না। প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া ক্ষমা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরকে সম্মান করার পরিবর্তে তাঁর অসম্মান নিয়ে আসবে। এই কারণে তা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু ঈশ্বর প্রেমময় এবং তিনি ক্ষমা করতে চান। তিনি সমস্ত মানবজাতিকে এক পাপপূর্ণ অবস্থায় ছেড়ে দিতে এবং চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে দিতে চান নি, যদিও তা তাদের প্রাপ্য ছিল।
ক্রুশে যিশুর বলিদান অসীম মূল্য প্রদান করেছিল, যা মানুষের পরিত্রানের জন্য প্রয়োজন ছিল। যিশু এর যোগ্য ছিলেন কারণ (১) যিশু পাপহীন ছিলেন (পরিপূর্ণ এবং নিজের পরিত্রাণের প্রয়োজন ছিল না, ২ করিন্থীয় ৫:২১) এবং (২) তিনি ছিলেন ঈশ্বর ও মানুষ উভয়ই।
ক্ষমার ভিত্তি হিসাবে যা কিছু প্রয়োজন তা প্রায়শ্চিত্ত প্রদান করে। এখন ঈশ্বর সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন, যিনি অনুতপ্ত হন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করেন। যে কেউ ক্রুশের বলিদানকে বুঝতে পারে সে কখনই ভাবতে পারে না যে পাপ ঈশ্বরের কাছে গুরুতর বিষয় নয়।
প্রায়শ্চিত্ত এমন এক উপায় জোগায় যার ফলে একজন ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর একজন পাপীকে ধার্মিক হিসাবে গণনা করতে পারেন, যে তাঁর প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করে। (পড়ুন রোমীয় ৩:২৬)। প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে কাজ করে তার একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা রোমীয় ৩:২০-২৬ পদে পাওয়া যায়।
বাইবেল আমাদের বলে যে, ঈশ্বর যে পরিত্রাণ জুগিয়েছেন তাই হল একমাত্র উপায়। যদি কোন ব্যক্তি খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে অনুগ্রহের মাধ্যমে প্রদত্ত পরিত্রাণ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সে উদ্ধার পাবে না। (পড়ুন মার্ক ১৬:১৫-১৬, প্রেরিত ৪:১২, ইব্রীয় ২:৩)
এই কারণেই কেবলমাত্র অনুগ্রহের দ্বারা প্রাপ্ত পরিত্রাণ, যা কেবলমাত্র বিশ্বাসের দ্বারা প্রাপ্ত, মতবাদটি জানা গুরুত্বপূর্ণ। পরিত্রাণ একমাত্র অনুগ্রহেই সম্ভব হয় কারণ এটি অর্জন করতে বা প্রাপ্য হওয়ার জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। এটি কেবল বিশ্বাসের দ্বারাই হয়ে থাকে কারণ এটা অর্জন করার জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। আমরা শুধুমাত্র যা করতে পারি তা হল ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাতে বিশ্বাস করা।
ঈশ্বরের সামনে একজন পাপী কীভাবে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে তা প্রতিটি মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কারণ আমরা ঈশ্বরের শত্রু থাকাকালীন সত্যিকারের শান্তি বা সুরক্ষিত আনন্দ থাকতে পারে না, তা এখন হোক কি অনন্তকালে। ”
- জন ওয়েসলি -র “Justification by Faith” শিরোনামের একটি প্রচারে
প্রথমে অনুগ্রহ
► একজন ব্যক্তির পরিত্রাণের অভিমুখে কে প্রথম পদক্ষেপ নেয়, ঈশ্বর বা ব্যক্তি নিজেই?
পাপীদের পরিত্রাণের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বর প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি ক্রুশে যিশুর বলিদানের মাধ্যমে মানুষকে ক্ষমা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এর ফলে ঈশ্বরের অনুগ্রহ সেই পাপীর হৃদয়ে পৌঁছায়, তাকে তার পাপের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং সে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চায়। (পড়ুন তীত ২:১১, যোহন ১:৯, রোমীয় ১:২০)। সেই পাপী ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া তার পাপ ত্যাগ করতে সমর্থ নয় (যোহন ৬:৪৪)। ঈশ্বর পাপীকে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা দেন। একজন ব্যক্তি যদি পরিত্রাণ না পান, তার অর্থ এই নয় যে সে অনুগ্রহ পাই নি, বরং ঈশ্বর তাকে যে অনুগ্রহ দিয়েছিলেন সে তাতে সাড়া দেয় নি।
যিশু সমগ্র জগতের পাপের জন্য মারা গিয়েছিলেন, এবং ঈশ্বর চান যেন প্রত্যেকে পরিত্রাণ পায়। (পড়ুন ২ পিতর ৩:৯, ১ যোহন ২:২, ১ তীমথিয় ৪:১০ পড়ুন)। ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা দেয়, কিন্তু তিনি কাউকে জোর করেন না। এই কারণেই ঈশ্বর পাপীকে অনুতপ্ত হতে এবং বিশ্বাস করার জন্য আহ্বান করেন (মার্ক ১:১৫)।
অনুতাপ
► অনুতাপ বা মন-পরিবর্তন কি?
অনুতপ্ত হওয়া বা মন-পরিবর্তনের অর্থ হল, ঘুরে দাঁড়ানো এবং বিপরীত দিকে যাওয়া। এর অর্থ হল, একজন পাপী নিজেকে দোষী ও শাস্তির যোগ্য হিসেবে দেখে কিন্তু সে তার পাপ থেকে দূরে সরে যেতে ইচ্ছুক।
দুষ্টলোক তার পথ, মন্দ ব্যক্তি তার চিন্তাধারা পরিত্যাগ করুক। সে সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসুক, তাহলে তিনি তার প্রতি করুণা প্রদর্শন করবেন, সে আমাদের ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসুক, তাহলে তিনি অবাধে ক্ষমা করবেন। (যিশাইয় ৫৫:৭)
অনুতাপের অর্থ এই নয় যে, একজন পাপীকে অবশ্যই তার জীবন সংশোধন করতে হবে এবং ঈশ্বরের সামনে নিজেকে ধার্মিক করে তুলতে হবে। সেটা অসম্ভব। কিন্তু, পাপীকে অবশ্যই ইচ্ছুক থাকতে হবে যাতে ঈশ্বর তাকে তার পাপ থেকে উদ্ধার করেন।
► অনুগ্রহ দ্বারা পরিত্রাণ পাওয়া যায়, তাহলে পরিত্রাণের জন্য কেন অনুতপ্ত হওয়া প্রয়োজন?
ক্ষমা করার একমাত্র প্রয়োজন হল বিশ্বাস, কিন্তু অনুতাপ ছাড়া পরিত্রাণের জন্য বিশ্বাসের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। একজন ব্যক্তি যদি অনুতপ্ত হতে না চান, তাহলে তিনি পাপ থেকে উদ্ধার পেতেও চান না।
ঈশ্বর যদি সেই লোকেদের ক্ষমা করেন, যারা পাপ করেতে থাকে এবং অনুতপ্ত হতে অস্বীকার করে, তাহলে তা তাঁকে পৃথিবীর ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসেবে অসম্মানিত করবে। অনুতপ্ত হওয়া প্রয়োজন, কারণ একজন ব্যক্তি যদি অনুতপ্ত না হন, তাহলে তিনি পাপের মন্দতাকে স্বীকার করছেন না। যদি সে বুঝতে না পারে যে কেন তাকে পাপ থেকে ফিরে যেতে হবে, তাহলে কেন তার ক্ষমা প্রয়োজন তাও সে দেখতে পাবে না।
যদি একজন ব্যক্তি নিজেকে সত্যিকার অর্থে দোষী, অজুহাতহীন এবং শাস্তির যোগ্য বলে না দেখে থাকেন তবে সে পুরোপুরি অনুতপ্ত হয়নি। আবার যদি সে স্বীকার করে যে সে একজন পাপী কিন্তু পাপকাজ করা চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে তার অনুতাপ অসম্পূর্ণ, কারণ সে যা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে বলেছে সে তাই করতে চায়।
ত্রাণকারী বিশ্বাস
► যদি একজন ব্যক্তির ত্রাণকারী বিশ্বাস থাকে, তাহলে তিনি কী বিশ্বাস করেন?
যখন একজন ব্যক্তির মধ্যে ত্রাণকারী-বিশ্বাস থাকে, তখন সে বিশ্বাস করে যে:
(১) নিজেকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করার জন্য সে কিছুই করতে পারে না।
[1]কারণ বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারাই তোমরা পরিত্রাণ লাভ করেছ। তা তোমাদের থেকে হয়নি, কিন্তু ঈশ্বরেরই দান। তা কোনো কাজের ফল নয় যে তা নিয়ে কেউ গর্ববোধ করবে। (ইফিষীয় ২:৮-৯)
তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি কিছুই করতে পারেন না (কাজ) যা তাকে পরিত্রাণ পাওয়ার যোগ্য করে তুলবে, এমনকি আংশিকভাবেও নয়।
(২) খ্রিস্টের বলিদান তার ক্ষমার জন্য যথেষ্ট।
তিনি আমাদের সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত, শুধুমাত্র আমাদের জন্য নয়, কিন্তু সমস্ত জগতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। (১ যোহন ২:২)
পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত (Propitiation) বলতে সেই বলিদানকে বোঝায়, যা আমাদের পক্ষে ক্ষমালাভ করা সম্ভবপর করে তোলে। আমাদের ক্ষমা করার জন্য খ্রিস্টের বলিদান ছাড়া আর কিছুরই প্রয়োজন নেই।
(৩) যিশু পাপ ও মৃত্যু জয় করে পুনরুত্থিত হয়েছেন।
…যদি তুমি “যীশুই প্রভু,” বলে মুখে স্বীকার করো ও হৃদয়ে বিশ্বাস করো যে, ঈশ্বর তাঁকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করেছেন, তাহলে তুমি পরিত্রাণ পাবে। (রোমীয় ১০:৯)
পাপ এবং মৃত্যুকে পরাজিত করার একমাত্র উপায় ছিল যিশুর পুনরুত্থান। যীশুর পুনরায় জীবিত হয়ে উঠা প্রমাণ করে উভয়ের উপর তাঁর সম্পূর্ণ বিজয়।
(৪) একমাত্র বিশ্বাসের শর্তে ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করেন।
আমরা যদি আমাদের পাপস্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ, তাই তিনি আমাদের সব পাপ ক্ষমা করে সমস্ত অধার্মিকতা থেকে শুচিশুদ্ধ করবেন। (১ যোহন ১:৯)
একজন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে পরিত্রাণের জন্য অন্যান্য শর্ত রয়েছে, তা হলে তিনি আশা করেন যে তিনি সম্পূর্ণরূপে অনুগ্রহের পরিবর্তে কাজের দ্বারা আংশিক পরিত্রাণ আশা করেন।
আশ্বাস
► কীভাবে মানুষ নিশ্চিত হতে পারে যে তারা পরিত্রাণ পেয়েছে?
কিছু লোক তাদের অনুভূতির উপর নির্ভর করে কিন্তু অনুভূতি পরিবর্তনযোগ্য এবং বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
বাইবেল আমাদের বলে যে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি (১ যোহন ৫:১৩) আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের গ্রহণ করেছেন। আমাদের ভয়ের মধ্যে থাকতে হবে না কারণ ঈশ্বরের আত্মা আমাদের আশ্বস্ত করে যে আমরা ঈশ্বরের দত্তক সন্তান। প্রেরিত পৌল বলেছেন যে, পবিত্র আত্মা আমাদের মানব আত্মাদের কাছে সাক্ষ্য দেয় যে আমরা ঈশ্বরের সন্তান (রোমীয় ৮:১৫-১৬)।
এই নিশ্চয়তা এতটাই সম্পূর্ণ যে আমাদের বিচারের দিনকে ভয় করতে হবে না। (পড়ুন ১ যোহন ৪:১৭)। কিছু লোক বলে যে তারা আশা করে যে, তারা স্বর্গে গৃহীত হবে কিন্তু আমরা এর চেয়ে ভাল নিশ্চয়তা পেতে পারি। এটা বিশ্বাস করা মতো যথেষ্ট নয় যে সাধারণভাবে মানবতার জন্য পরিত্রাণ দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই জানতে হবে যে তিনি নিজেই সেই পরিত্রাণ পেয়েছেন।
পরিবর্তিত জীবন হল একজন ব্যক্তির পরিত্রাণ পাওয়ার প্রমাণ, কিন্তু সেই প্রমাণ প্রথম মুহূর্তে মুহূর্তে বিদ্যমান থাকে না। পরিত্রাণের ফলাফল প্রকাশ করার সময় তখনও আসেনি। অতএব, অনুতাপের সময়ে, পরিবর্তিত জীবন নিশ্চয়তার ভিত্তি নয়।
বিশ্বাসী তার পরিত্রাণের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে এই বিষয়টি জেনে যে সে পরিত্রাণের জন্য শাস্ত্রীয় পথ অনুসরণ করেছে। যদি কেউ সত্যই অনুতপ্ত হয় এবং বাইবেলের নির্দেশ অনুসারে বিশ্বাস করে তবে তার বিশ্বাস করার অধিকার রয়েছে যে ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করেছেন এবং তিনি ঈশ্বরের সন্তান হয়েছেন।
একজন ব্যক্তি যদি এইরকম মনে করেন যে তিনি সত্যিকারে অনুতাপ না করেই পরিত্রাণ পেয়েছেন, তা হলে তিনি বিভ্রান্ত এবং প্রতারিত করছেন।
একজন ব্যক্তি যদি (১) সত্যিই অনুতপ্ত হন, (২) শাস্ত্রে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করেন এবং (৩) আত্মার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন, তা হলে তিনি প্রতারিত হবেন না। এই নিশ্চয়তা ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে, যা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য। ঈশ্বর সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলি রাখেন।
“ত্রাণকারী বিশ্বাস হল নির্ভরতার বিশ্বাস যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাতার ওপর নির্ভর করে।”
- জন স্টট
পরিত্রাণের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে ১০টি পরিভাষা
পুনর্মিলন (Reconciliation): এই শব্দটির অর্থ হল, যারা পূর্বে শত্রু ছিল, তারা এখন শান্তিতে রয়েছে। পরিত্রাণে ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে সম্মিলিত হন এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের শান্তি হয়। (পড়ুন ২ করিন্থীয় ৫:১৯, ২ করিন্থীয় ৫:১ রোমীয় ৫:১। এই পদগুলি ধার্মিকগণনা এবং পুনর্মিলন উভয় বিষয়ের কথা বলে।)
প্রায়শ্চিত্তকরণ (Expiation): এই শব্দের অর্থ হল, কোনো রেকর্ড মুছে ফেলা হয়েছে। পরিত্রাণে, আমাদের পাপের রেকর্ড মুছে ফেলা হয়। (পড়ুন ইব্রীয় ৮:১২)
তুষ্টিসাধন (Propitiation): এই শব্দটি এমন কিছুকে বোঝায়, যা কারও রাগ দূর করার জন্য দেওয়া হয়েছিল। পরিত্রাণে, যিশুর বলিদান আমাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ধার্মিক ক্রোধকে অপসারণ করে। (পড়ুন ১ যোহন ২:২)
নিস্তার (Deliverance): এই শব্দের অর্থ হল কাউকে অন্যের শক্তি থেকে উদ্ধার করা। পরিত্রাণে, আমাদেরকে শয়তান ও পাপের ক্ষমতা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। (পড়ুন লূক ১:৭৪, রোমীয় ৬:৬, ১২-১৮)
পুনরুদ্ধার (Redemption): এই শব্দটির অর্থ হল কাউকে মুক্ত করার জন্য মূল্য প্রদান করা। পরিত্রাণের ক্ষেত্রে যিশুর মৃত্যু হল সেই মূল্য যাতে আমরা পাপের দাসত্ব ও শাস্তি থেকে মুক্ত হই। (পড়ুন ইফিষীয় ১:৭, তীত ২:১৪)
ধার্মিকগণনা (Justification): এই শব্দটির অর্থ হল কাউকে ধার্মিক বা নির্দোষ ঘোষণা করা। পরিত্রাণে, একজন পাপী ধার্মিক গণিত হয় কারণ যিশু তাঁর জায়গায় কষ্টভোগ করেছিলেন। (পড়ুন রোমীয় ৫:১, ২ করিন্থীয় ৫:১৯। এই পদগুলি ধার্মিকগণনা এবং পুনর্মিলন উভয় বিষয়ের কথা বলে।)
পবিত্রীকরণ (Sanctification): এই শব্দের অর্থ হল কাউকে পবিত্র করা। পরিত্রাণে, একজন দোষী পাপী ঈশ্বরের পবিত্র সন্তান হয়ে ওঠে। অনেক পত্রে বিশ্বাসীদের ‘পবিত্রগণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (পড়ুন ইফিষীয় ১:১, ফিলিপীয় ১:১, কলসীয় ১:২)
দত্তকগ্রহন (Adoption): এই শব্দের অর্থ হল, কেউ অন্যের বৈধ সন্তান হয়ে ওঠে। পরিত্রাণে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হই। (পড়ুন যোহন ১:১২, রোমীয় ৮:১৫)
পুনর্জন্ম / নতুন জন্ম (Regeneration / New Birth): এই শব্দের অর্থ হল আবার জীবন শুরু করা। পরিত্রাণে, বিশ্বাসীরা খ্রিষ্টের পুনরুত্থানের মাধ্যমে এক নতুন আধ্যাত্মিক জীবন শুরু করে। (পড়ুন ইফিষীয় ২:১, যোহন ৩:৩, ৫)
মুদ্রাঙ্কিতকরণ (Sealing): এই শব্দটির অর্থ এমন কোন চিহ্ন যা দেখায় যে এর মালিক কে। পরিত্রাণে, আমাদের মধ্যে পবিত্র আত্মা আমাদেরকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে যে আমরা ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত। (পড়ুন ইফিষীয় ১:১৩-১৪)
ত্রুটি এড়ান: অনুতাপহীন ধর্ম
ক্লাস লিডারের জন্য নোট: ক্লাসের একজন সদস্য এই বিভাগটি ব্যাখ্যা করতে পারে।
এমন এক ধরনের মানুষ আছেন যিনি সহজেই মনে করেন যে তিনি পরিত্রাণ পেয়েছেন কারণ তিনি শুনেছেন যে পরিত্রাণ বিশ্বাসের দ্বারা অনুগ্রহের মাধ্যমে আসে। তিনি সত্যিই অনুতপ্ত হননি কারণ তিনি বুঝতে পারেননি যে তার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি কখনো নিজেকে ঈশ্বরের বিচারের যোগ্য একজন পাপী হিসেবে দেখেননি। তিনি মনে করেন যে অনুগ্রহের অর্থ হল তিনি নিজের পথে চলতে পারেন। যেহেতু তিনি খ্রিস্টধর্মকে গ্রহণ করেছেন, তাই তিনি মনে করেন যে তিনি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী, যদিও তার জীবনের কোনো রূপান্তর ঘটেনি। তিনি কখনও নিজের ইচ্ছাকে আত্মসমর্পণ করেননি, বরং তিনি ঈশ্বরকে তাঁর জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁর নিজের ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করেন। শাস্ত্রীয় বর্ণনা অনুযায়ী এটি ঈশ্বরের সঙ্গে এক ত্রাণকারী সম্পর্কের সূত্রপাত নয়।
যিশুখ্রিস্টের জীবন, মৃত্যু এবং পুনরুত্থান জগতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত প্রদান করে। প্রত্যেক ব্যক্তিই পাপের দোষে দোষী এবং নিজেকে রক্ষা করতে অক্ষম। প্রত্যেক পাপী যে অনুতপ্ত হয়, সে বিশ্বাস দ্বারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। বিশ্বাসীকে ক্ষমা করা হয় এবং পাপের ক্ষমতা এবং শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। পবিত্র আত্মা বিশ্বাসী ব্যক্তিকে একজন দোষী পাপী থেকে ঈশ্বরের একজন পবিত্র উপাসক করে তোলে। পরিত্রাণের আর কোনো উপায় নেই। সৃষ্টিকে সাধারণভাবে উদ্ধার করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর তা পুনঃস্থাপিত করবেন।
পুরাতন নিয়মে পরিত্রাণ
ক্লাস লিডারের জন্য নোট: এই বিভাগ এবং পরবর্তী বিভাগ উভয়ই ঐচ্ছিক। সদস্যরা যদি এই বিষয়গুলির প্রতি আগ্রহী হয়, তা হলে সেগুলি অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
পুরাতন নিয়মে, ঈশ্বর বলিদানের মাধ্যমে উপাসনার রীতি প্রদান করেছিলেন। যিশুর মৃত্যু যেভাবে পরিত্রাণ প্রদান করে বলিদান কিন্তু তা করেনি। বাইবেল আমাদের বলে যে, "... ষাঁড় ও ছাগলের রক্ত পাপ হরণ করতেই পারে না।" (ইব্রীয় ১০:৪) তাহলে কেন বলি উৎসর্গ করা হোত? এগুলি এমন উপাসনার রূপ ছিল যা ভবিষ্যতে খ্রিস্টের ত্যাগের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। (ইব্রীয় ১০:১)
এর অর্থ এই নয় যে, নতুন নিয়মের সময় পর্যন্ত পরিত্রাণ সম্ভব হয়নি। প্রেরিত পৌল যখন বিশ্বাসের মাধ্যমে ধার্মিক গণিত হওয়ার তত্বটি ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন তিনি অব্রাহাম ও দায়ূদের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন যে এটা কোনো নতুন ধারণা নয় (রোমীয় ৪:১-৮)। যিশু বলেছিলেন যে, নীকদীমের ইতিমধ্যেই নতুন জন্ম সম্বন্ধে জানা উচিত কারণ তিনি নিয়মের একজন শিক্ষক ছিলেন (যোহন ৩:১০)। পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন যে, পুরাতন নিয়মের শাস্ত্র তাকে পরিত্রাণ সম্বন্ধে বিজ্ঞ করে তুলবে (২ তীমথিয় ৩:১৫) সুতরাং, এই সুসমাচারটি পুরাতন নিয়মে উপলব্ধ ছিল যদিও এটি নতুন নিয়মের মতো স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়নি।
পুরাতন নিয়মের সময়ে কিছু মানুষ ছিল যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বুঝতে পেরেছিল। তাঁরা প্রায়শ্চিত্তের বিস্তারিত বিবরণ বা এটি কিভাবে তা কাজ করবে তা জানত না , কিন্তু তাঁরা বিশ্বাস করছিল যে ঈশ্বর ক্ষমার একটি ভিত্তি প্রদান করছেন। সেই বিশ্বাস প্রকাশ করার জন্য বলি উৎসর্গ করা হতো, ঠিক যেমন আজকে আমাদের উপাসনার একটি ধরন রয়েছে (উদাহরণস্বরূপ, প্রভুর ভোজ)। এই বলিগুলি মূল্যহীন ছিল, যদি সেগুলি বিশ্বাস ও বাধ্যতার সঙ্গে না এসে থাকত, ঠিক যেমন আমাদের উপাসনার ধরনগুলি মূল্যহীন হবে যদি না সেগুলি হৃদয় ও জীবনের অভিব্যক্তি হয়, যা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য। গীতসংহিতা ৫১ এবং যিশাইয় ১:১১-১৮ পদ দেখায় যে, পুরাতন নিয়মের সময়ে অনুতাপ ও বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
খ্রিষ্টের বলিদানের অনেক বছর আগে লিখিত গীতসংহিতা ৮৫ অধ্যায়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং কীভাবে ঈশ্বর পাপ ক্ষমা করেন, তা সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে তার ক্রোধ অবসান হওয়ার কথা বলা হয়েছে। গীতসংহিতা ৮৫:১০ পদ বলে, “প্রেম ও বিশ্বস্ততা একত্রে মিলিত হয়, ধার্মিকতা ও শান্তি পরস্পরকে চুম্বন করে।।” প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে পরিত্রাণের এটি একটি চমৎকার চিত্র। প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া ঈশ্বরের করুণা সেই সত্যের দ্বারা সীমিত হবে যে আমরা দোষী। ঈশ্বরের ধার্মিকতা শান্তি দেওয়ার পরিবর্তে আমাদেরকে তাঁর শত্রু করে তুলবে। প্রায়শ্চিত্তের সময় ন্যায়বিচার পূরণ হয় এবং করুণা দেখানো হয়।
সমগ্র সৃষ্টির পরিত্রাণ
উদ্ধার, নিস্তার বা পরিত্রাণ শব্দগুলি বাইবেলে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলি কেবল ব্যক্তিগত পরিত্রাণের চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়, যা এই পাঠে বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলি অতীতে কী করা হয়েছিল (ইফিষীয় ২:৮), যা বর্তমানে ঘটছে (১ করিন্থীয় ১:১৮) আর ভবিষ্যতে কী হবে (মার্ক ১৩:১৩) তা নির্দেশ করে। এই ধারণাটি বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনে কী ঘটেছে তা উল্লেখ করতে পারে (যা এই পাঠে জোর দেওয়া হয়েছে), কিন্তু এটি মানুষের গোষ্ঠীকেও বোঝাতে পারে, যেমন ইহূদীরা (রোমীয় ১:১৬) পরজাতিয়রা (রোমীয় ১১:১১), এক পরিজনবর্গ (লূক ১৯:৯), অথবা একটি পরিবার (ইব্রীয় ১১:৭) বা শারীরিক বিপদ থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত ব্যক্তি (মথি ১৪:৩০)।
প্রথম মানুষেরা যখন পাপ করেছিল, তখন সমস্ত সৃষ্টির উপর অভিশাপ এসেছিল (আদিপুস্তক ৩:১৭)। পরিত্রাণ সম্পন্ন হলে সৃষ্টিও পুনরুদ্ধার করা হবে।
আধ্যাত্মিক পুনর্নবীকরণ দিয়ে পরিত্রাণ শুরু হয়। বিশ্বাসীরা পাপ থেকে মুক্ত এবং তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদে বসবাস করে। কিন্তু, তারা এখনও পাপের অভিশাপের বাস্তবিক দিক থেকে উদ্ধার লাভ করতে পারেনি। এখনও তাদের বয়স বাড়ে ও মৃত্যু হয়।
প্রকৃতি এখনও পাপের অভিশাপের মধ্যে রয়েছে। ঈশ্বর যেভাবে প্রথম পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছিলেন তা আমরা দেখতে পাই না। । আমরা প্রকৃতিতে ক্ষতিকর প্রাণীদের দেখতে পাই যারা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। আমাদের পৃথিবীতে, অন্যদের বেঁচে থাকার জন্য অনেককে মরতে হবে।
এমন সময় আসতে চলেছে যখন সমস্ত সৃষ্টিকে পুনর্নবীকরণ করা হবে (প্রকাশিত বাক্য ২১:১, ইব্রীয় ১:১০-১২)। রোমীয় ৮:১৮-২৫ পদ পাপের অভিশাপ থেকে মুক্ত এক জগতের খ্রীষ্টীয় আশাকে বর্ণনা করে।
৮ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
গীতসংহিতা ৫১
যিশাইয় ১:১১-১৮
রোমীয় ৩:২০-২৬
রোমীয় ৮:১৯-২৫
ইফিষীয় ২:১-১০
(২) পরীক্ষা: আপনি ৮ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
৮ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) কেন অনেক মানুষের কাছে ক্রুশ একটি অমর্যাদার বিষয়?
(২) এমন চারটি বিষয় তালিকাভুক্ত করুন যেগুলি প্রত্যেক অনুতাপহীন পাপী সম্বন্ধে সত্য।
(৩) প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া ক্ষমা করলে কেন ঈশ্বরকে অসম্মান হবে?
(৪) কোন দুটি উপায়ে যিশু অনন্যভাবে বলিদান হওয়ার যোগ্য হয়েছিলেন?
(৫) একজন অনুতপ্ত পাপীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন থাকে?
(৬) একজন ব্যক্তির যদি ত্রাণকারী-বিশ্বাস থাকে, তা হলে তিনি কী বিশ্বাস করেন?
(৭) কীভাবে একজন ব্যক্তি নিশ্চিত হতে পারেন যে তিনি পরিত্রাণ পেয়েছেন?
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.