► আদিপুস্তক 3 অধ্যায় একসঙ্গে পড়ুন। এই শাস্ত্রাংশটি পাপ সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?
► কেন আমাদেরকে পাপ সম্বন্ধে বুঝতে হবে?
পাপ সম্বন্ধে অবশ্যই আমাদের বুঝতে হবে:
১। পৃথিবীর পরিস্থিতি বোঝার জন্য। বাইবেল আমাদের বলে যে, পাপ হল মানুষের দুঃখকষ্টের কারণ। পাপের দ্বারাই মৃত্যু পৃথিবীতে এসেছিল। (পড়ুন রোমীয় ৫:১২ পড়ুন)। পাপের অভিশাপের কারণে অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং ব্যথা রয়েছে। মিথ্যা বলা, চুরি করা, হত্যা করা, ব্যভিচার করা, মাতাল হওয়া এবং অত্যাচারের মতো পাপপূর্ণ কাজ জগৎকে দুঃখকষ্টে পূর্ণ করেছে। পাপের কাজগুলি হৃদয়ে পাপ থেকে আসে, যেমন ঘৃণা, লালসা, লোভ, অহংকার এবং স্বার্থপরতা।
২। অনুগ্রহ ও পরিত্রাণ বোঝার জন্য। ঈশ্বর আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করার জন্য অনুগ্রহ দান করেন (মথি ১:২১; রোমীয় ৫:২০-২১)।
৩। পবিত্রতা বোঝার জন্য। পাপাচার হল পবিত্রতার বিপরীত। এটি ঈশ্বর ভক্তির বিরোধী। ঈশ্বরের প্রত্যাশা অনুযায়ী একজন ব্যক্তির পবিত্র হওয়ার জন্য (১ পিতর ১:১৫-১৬), তাকে অবশ্যই পাপ থেকে পৃথক হতে হবে।
পাপের উৎপত্তি
ঈশ্বরের সৃষ্টি নিখুঁত ছিল এবং তিনি যা কিছু তৈরি করেছিলেন, সেগুলিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। ঈশ্বর যখন সৃষ্টি শেষ করলেন, তখন তিনি দেখলেন যে সেটি খুবই ভালো (আদিপুস্তক ১:৩১)। তাই আমরা জানি যে পাপ আসার পিছনে ঈশ্বরের দোষ ছিল না।
আদম ও হবা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট রাখতে চেয়েছিল এবং যা কিছু সঠিক তা করার ক্ষমতা তাদের ছিল। শয়তান হবাকে ঈশ্বরের অবাধ্য হতে প্ররোচিত করেছিল। এর দ্বারা আমরা জানি যে পৃথিবীতে পাপ আগে থেকেই ছিল। শয়তান আগেই পাপে পড়েছিল। কিন্তু পাপ তখনও মানবসমাজে বা সৃষ্টির সেই অংশে প্রবেশ করেনি যা মানুষের কর্তৃত্বের অধীনে ছিল।
আদম ও হবার স্বাধীন ইচ্ছা ছিল। পাপ করা সম্ভব হয়েছিল কারণ তারা নিজেদের জন্যে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিল। তারা ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করা বেছে নিয়েছিল এবং সেটিই ছিল মানব জাতির পাপের শুরু।
পাপের প্রথম কাজটি মানবজাতিকে ঈশ্বর থেকে পৃথক করেছিল। পাপ মানবপ্রকৃতিকে কলুষিত করেছিল। (পড়ুন গীতসংহিতা ৫১:৫)। এরপর জন্ম নেওয়া সমস্ত সন্তানই এক কলুষিত স্বভাবের হবে এবং তারা পাপ করবে। (পড়ুন রোমীয় ৫:১২, ১৪, ১৮-১৯)
পাপ সমস্ত সৃষ্টির উপর অভিশাপ নিয়ে আসে (আদিপুস্তক ৩:১৬-১৯)। পাপের কারণে মানুষের জীবন বদলে যায়। যন্ত্রণা, বার্ধক্য এবং মৃত্যু শুরু হয়। (পড়ুন ১ করিন্থীয় ১৫:২২)। কাজ করা এবং বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষের একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল দ্বন্দ্বে ভরা। বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, এবং সেই সঙ্গে পাপের ফলাফলগুলিও বহুগুণ বাড়ে যা ছিল আদম এবং হবা কল্পনার অতীত।
ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষায় পাপ শব্দের প্রতিশব্দ
[1]অধিকাংশ ভাষায় পাপের জন্য বিভিন্ন প্রতিশব্দ রয়েছে। বাইবেলের মূল ভাষা ইব্রীয় ও গ্রিকেও বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয়েছে যেগুলি পাপকে বর্ণনা বা সংজ্ঞায়িত করে, যা নিচে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যখন একত্রে নেওয়া হয়, তখন এই শব্দগুলি পাপের একটি সর্বাঙ্গীণ চিত্র তুলে ধরে।
পাপ হল কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করা - বিদ্রোহ ও বিরুদ্ধাচরণ (গীতসংহিতা ৫১:১)। যাকোব এই ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন যখন তিনি ত্রুদ্ধভাবে লাবনকে তার বিরুদ্ধে কী অপরাধ করেছেন তা বলার জন্য তিনি দাবি করেছিলেন (আদিপুস্তক ৩১:৩৬)। এ ছাড়া, এই শব্দটি রাজা যিহোরামের বিরুদ্ধে মোয়াবের রাজার পদক্ষেপকেও বর্ণনা করে (২ রাজাবলি ৩:৭)।
পাপ হল বিপথগমন বা বিকৃতি - যা বাঁকানো বা মোচড়ান হয়েছে (গীতসংহিতা ৫১:২ক)। শয়তান কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, তাই সকল পাপই হল ঈশ্বরের সৃষ্ট কোন ভালো জিনিসের বিকৃত রূপ।
পাপ হল কোন প্রত্যাশিত চিহ্নতে অনুপস্থিত থাকা বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া। গীতসংহিতা ৫১:২খ পদে এই অর্থ পাপের জন্য ইব্রীয় শব্দ ব্যবহৃত রয়েছে। এই একই শব্দটি বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২০:১৬ পদে অ-নৈতিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে ৭০০ জন বাঁ-হাতি যোদ্ধার কথা বলা হয়েছে যারা চুলের মতো সূক্ষ্ম নিশানায় গুলতি দিয়ে পাথর ছুঁড়তে পারত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না। পাপ হল ঈশ্বরের সত্য, পবিত্রতা বা ধার্মিকতার লক্ষ্যে ভ্রষ্ট হওয়া।
নতুন নিয়মে একটি গ্রিক শব্দের একই অর্থ রয়েছে। সেই শব্দটি সমগ্র জগতের পাপের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে (মথি ১:২১) অথবা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির পাপের জন্য যেমন সেই মহিলার পাপ যিনি যিশুর পা ধুয়েছিলেন (লূক ৭:৪৮-৫০) অথবা কোন ব্যক্তিগত পাপ যেমন স্তিফানকে হত্যা করার পাপ (প্রেরিত ৭:৬০)। পাপ ঈশ্বরের ইচ্ছা থেকে বিপথগামী হয়।
পাপ হল মন্দ, যা ভালোর বিপরীত (গীতসংহিতা ৫১:৪)। ফরৌণের স্বপ্নে যে সাতটি রুগ্ন গরু এবং যিরমিয় ২৪:২-এ অভোজ্য ডুমুরের বর্ণনা করার জন্য একই ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
পাপ হল ব্যর্থতা বা শুনতে অনিচ্ছুক, যার ফলে আসে সক্রিয় অবাধ্যতা (রোমীয় ৫:১৯)। এই আচরণের একটা উদাহরণ প্রেরিত ৭:৫৭ পদে দেওয়া হয়েছে, যেখানে যারা স্তিফানকে পাথর মারছিল তারা তাদের কান ঢেকে রেখেছিল। এই গ্রিক শব্দের সবচেয়ে ভাল সারাংশ হল অবাধ্যতা।
কিছু নির্দিষ্ট আইন লঙ্ঘন হল পাপ - ঈশ্বর যা দাবি করেন তার বিপরীত কাজ করা (১ যোহন ৩:৪)। এটি দুটি গ্রীক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত যার অর্থ "আইন নেই" বা "অনাচার।"
পাপ হল ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে সরে যাওয়া বা যা ঈশ্বর জ্ঞাত আছেন ও তিনি যা চান তার বাইরে যাওয়া (যাত্রাপুস্তক ৩২:৭-৮)। এই পদে দেখা যায় যে যখন মোশি সীনয় পর্বতে উঠেছিলেন তখন লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছিল।
অনিচ্ছাকৃত পাপ (লেবীয় পুস্তক ৪:২)। এই ধরনের পাপ সম্পর্কে পুরাতন ও নূতন উভয় নিয়মেই আলোচনা করা হয়েছে। ইব্রীয় ৯:৭-এ ব্যবহৃত গ্রীক শব্দটি একটি ক্রিয়াপদ থেকে এসেছে যার অর্থ হল "অজ্ঞ হওয়া" বা "বুঝতে না পারা," এবং তাই এর অর্থ "অজ্ঞতার মাধ্যমে পাপ করা।" এই পদটিতে মানুষের অনিচ্ছাকৃত পাপের জন্য মহাযাজক যে প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন তা বর্ণনা করে।
এই শব্দগুলি থেকে আমরা দেখতে পাই যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পাপ হল একটি সমস্যা। কিছু শব্দ পাপকে এর সবচেয়ে সাধারণ অর্থে বর্ণনা করে। অন্য শব্দগুলি পাপকে চিত্রিত করে ঈশ্বরের বাক্য শুনতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে সৃষ্ট পাপ, কোনো মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হওয়ার পাপ, ইচ্ছাকৃতভাবে পূর্বনির্ধারিত পাপ অথবা অজ্ঞতার পাপ বা এমনকি দুর্ঘটনাজনিত পাপ হিসাবে। যাই হোক না কেন, এটা মনে রাখা এক আশীর্বাদজনক চিন্তা যে লোকেদের তাদের পাপ থেকে বাঁচানোর করার জন্য যিশু ত্রুশে মারা গিয়েছিলেন (মথি ১:২১)।
“পাপ এবং ঈশ্বরের সন্তান বেমানান। তারা মাঝে মাঝে দেখা করতে পারে [কিন্তু] তারা একসঙ্গে থাকতে পারে না "
- জন স্টট (John Stott)
ইচ্ছাকৃত পাপ
► ইচ্ছাকৃত পাপ কি?
ইচ্ছাকৃত পাপ হল ঈশ্বরের জ্ঞাত ইচ্ছার উদ্দেশ্যমূলক লঙ্ঘন। (পড়ুন ১ যোহন ৩:৪; যাকোব ৪:১৭)। এটা তখনই হয় যখন কোন ব্যক্তি যা ভুল তা করে অথবা যা সঠিক তা না করা বেছে নেয় বা চালিয়ে যায়। এটা ইচ্ছাকৃত অন্যায় আচরণ।
১ যোহন ৩:৫-৬ পদে প্রেরিত যোহন লিখেছেন,
কিন্তু তোমরা জানো যে, আমাদের পাপ হরণের জন্য তিনি [যিশু] প্রকাশিত হয়েছিলেন এবং তাঁর মধ্যে পাপের লেশমাত্র নেই। যে তাঁর মধ্যে বাস করে, সে পাপে লিপ্ত থাকে না। যে অবিরত পাপ করতেই থাকে, সে তাঁকে দেখেনি বা তাঁকে জানেও না।
এখানে যে পাপের কথা বলা হয়েছে, তা হল ইচ্ছাকৃত পাপের এক ক্রমাগত অভ্যাস। এর একটি পরিবর্ধিত অনুবাদ এই রকম হবে: যে কেউ অবিচ্ছিন্নভাবে যিশুতে অবস্থান করে, সে নিয়ত বা অভ্যাসবশতঃ পাপ করে না, এবং যে কেউ নিয়ত বা অভ্যাসবশতঃ পাপ করে, সে তাঁকে দেখেই নি, জানেও না।
যদি কেউ এটিকে তার সাধারণ অর্থে এই পাপকে ব্যাখ্যা করে (অজ্ঞতা এবং অনিচ্ছাকৃত পাপ সহ), তবে এই বিবৃতিটির কোন অর্থ হয় না। খ্রিষ্টবিস্বাসীদের জীবনে এখনও এমন ব্যর্থতা রয়েছে যেগুলো ইচ্ছাকৃত নয়। যাইহোক, কেউ যদি (এই অনুচ্ছেদে) "ঈশ্বরের আইনের ইচ্ছাকৃত প্রত্যাখ্যান" এর অর্থে পাপ বোঝে, তাহলে অনুচ্ছেদটি পুরোপুরি ভাল অর্থ বহন করে।
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি (Inherited Depravity)
► মানুষ যে-পাপপূর্ণ স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তা আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি হল মানুষের নৈতিক স্বভাবের কলুষতা, যা তাকে জন্ম থেকেই পাপের প্রতি আকৃষ্ট করে। এটিকে অনেক সময় "আদি পাপ" বলা হয়। আদমের পাপের কারণে আমরা যে-পাপপূর্ণ স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, সেটা হল সেই পাপপূর্ণ স্বভাব।
সমস্ত মানুষ জন্ম থেকেই মন্দতার প্রতি এই প্রবণতা রয়েছে। (পড়ুন গীতসংহিতা ৫৮:৩)। একজন ব্যক্তি যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার স্বভাব ইতিমধ্যেই পাপপূর্ণ প্রবণতা দ্বারা বিকৃত হয়ে যায়। সে বাছাই করা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই পাপ করতে শুরু করে। পাপপূর্ণ প্রবণতা এমন কিছু নয় যা সে তার পরিবেশ থেকে শেখে।
দায়ূদ বলেছিলেন যে তিনি পাপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং পাপে গর্ভধারিত হয়েছিলেন। (পড়ুন গীতসংহিতা ৫১:৫)। তার অর্থ এই নয় যে, তার মা কোনো ভুল কাজ করেছিলেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, যখন গর্ভে একটি শিশু গঠিত হচ্ছে, তখন তার প্রকৃতি ইতিমধ্যেই পাপ দ্বারা কলুষিত হয়েছে।
কলুষিত প্রকৃতির কারণে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তিই এমন একটি ইচ্ছাশক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যা আত্মকেন্দ্রিক এবং পাপের দিকে ঝুঁকে থাকে (রোমীয় ৩:১০-১২)। ঈশ্বর আমাদের ইচ্ছা এবং শক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের ইচ্ছাশক্তি সঠিক বিষয় বেছে নেবার জন্য স্বাধীন নয়। (পড়ুন রোমীয় ৬:১৬-১৭)
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি অহংকার, হিংসা, ঘৃণা এবং ক্ষমাহীনতার মতো অভ্যন্তরীণ পাপকে অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া, এটি পাপের ক্রিয়াকলাপগুলিকেও প্রেরণা জুগায়।
মানুষের স্বাভাবিকভাবেই ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি বিদ্রোহের মনোভাব থাকে এবং তাঁর নিয়মকানুনে ক্ষুব্ধ হয়। পাপীদের কেবল তাদের পাপের কাজের জন্যই বিচার করা হবে না কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মনোভাবের জন্যও বিচার করা হবে। (পড়ুন যিহূদা ১:১৫)
পাপী স্বভাবের ব্যক্তি স্বভাবতই আত্মকেন্দ্রিক হন। তিনি ঈশ্বর ও অন্যদের কর্তৃত্বের বশীভূত না হয়ে বরং নিজের ইচ্ছাকে জাহির করতে চান। তিনি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেয়ে বরং নিজের আকাঙ্ক্ষাগুলি চরিতার্থ করতে চান। সে তার নিজের ওপর আস্থা রাখে এবং সে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে চায় না। ঈশ্বরের গৌরবের চেয়ে তাঁর নিজের সাফল্যই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লোকেরা ঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য সঠিকভাবে বুঝতে পারে না কারণ তাদের মন অন্ধকারাচ্ছন্ন। (পড়ুন ইফিষীয় ৪:১৭-১৮)। স্বভাবতই, তারা বিদ্রোহী জগতের নির্দেশনা, শয়তানের নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের নিজেদের পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ করে; এবং তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের ক্রোধের অধীনে নিয়ে আসে। (পড়ুন ইফিষীয় ২:২-৩ পড়ুন)। তাদের স্বাভাবিক প্রবণতা প্রতি মুহূর্তে পাপের দিকে থাকে (আদিপুস্তক ৬:৫)।
ঈশ্বরের অনুগ্রহ যে পার্থক্য নিয়ে আসে তা ছাড়া মানুষ ভাল কিছু করতে সক্ষম নয়, এমনকি তারা ভাল কিছু করতেও চায় না। তারা অনুতপ্ত হতে বা ঈশ্বরের অন্বেষণ করতে অক্ষম (পড়ুন যোহন ৬:৪৪)। তারা অপরাধ ও পাপে মৃত (ইফিষীয় ২:১)। ঈশতত্ত্ববিদরা এই অবস্থাকে “সম্পূর্ণ পাপ-প্রবৃত্তি” (Total Depravity) হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ-প্রবৃত্তির প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহ কীভাবে সাড়া দেয়। প্রথমত, ঈশ্বরের শক্তি সুসমাচারের বার্তা নিয়ে আসে এবং সেই ব্যক্তি যিনি হারিয়ে গেছেন তাকে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেওয়ার ইচ্ছা এবং ক্ষমতা দেন। (পড়ুন রোমীয় ১:১৬)। তারপর, যখন একজন ব্যক্তি পরিত্রাণ পায়, তখন তাকে পাপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পায় (রোমীয় ৬:১১-১৪)। তবে, একজন নতুন খ্রিষ্টবিস্বাসীর মধ্যে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তির প্রভাব অব্যাহত থাকে।
একজন খ্রিষ্টবিস্বাসীর জীবনে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তির প্রভাব বিভিন্ন উপায়ে দেখা যায়।
১। প্রলোভনের সময় এই নতুন খ্রিষ্টবিস্বাসী কখনো কখনো তার নিজের ইচ্ছার সঙ্গে সংগ্রাম করবেন।
২। নতুন খ্রিষ্টবিস্বাসী ভুল উদ্দেশ্যগুলি উপলব্ধি করবেন, যা তাকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।
৩। নতুন খ্রিষ্টবিস্বাসীর ভুল প্রতিক্রিয়া ও মনোভাব থাকবে, যা তিনি তা উপলব্ধি করার আগেই ঘটবে।
নতুন খ্রিষ্টবিস্বাসীকে অবশ্যই উৎসাহিত করতে হবে যাতে সে তার বিশ্বাস পরিত্যাগ না করে, কারণ সে অনুভব করে যে তার মধ্যে এখনও পাপপূর্ণ প্রবণতা রয়েছে। তাকে ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা সম্পাদিত শক্তি ও রূপান্তরের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
একজন পালককে অবশ্যই নতুন খ্রিষ্টবিস্বাসীদের প্রতি ধৈর্য ধরতে হবে। তাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে তারা যা বলে ও যা করে তাতে তারা অবিচলিত খ্রিষ্টবিস্বাসী নয়। তারা হয়তো সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমস্যা দেখতেও পায় না।
অনিচ্ছাকৃত লঙ্ঘন (Unintentional Violations)
[1]কখনও কখনও একজন ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞতাবশত ঈশ্বরের বাক্য লঙ্ঘন করে থাকেন। লেবীয় পুস্তক ৪:২-৩ পদে আমরা দেখতে পাই যে এই পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তির যখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি কোনো ভুল করেছেন, তখনই তাকে একটা বলি উৎসর্গ করার প্রয়োজন ছিল। যেহেতু খ্রীষ্টের মৃত্যু পুরাতন নিয়মের সমস্ত বলিদানের স্থান নিয়েছে, আমরা জানি যে খ্রিষ্টবিস্বাসীরা অনিচ্ছাকৃত লঙ্ঘন থেকে মুক্তি পায়।
আমাদের বোধশক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে অনিচ্ছাকৃত লঙ্ঘন অনিবার্য। কিন্তু সেগুলি ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভঙ্গ করে না কারণ তারা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে না। ঈশ্বর বলেন যে তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ ভালবাসা আমাদের কাছ থেকে তিনি যা চান তা পূরণ করে। (পড়ুন মথি ২২:৩৭-৪০; রোমীয় ১৩:৮-১০) । যা আমরা জানি না, তার জন্য আমরা দায়বদ্ধ নই। (পড়ুন যাকোব ৪:১৭)
আমরা যখন আলোতে চলি (অর্থাৎ, আমরা যে সত্য জেনেছি সেই অনুসারে জীবনযাপন করি) তখন আমরা সমস্ত পাপ থেকে শুদ্ধ হই। (পড়ুন ১ যোহন ১:৭)। অজানা লঙ্ঘনগুলি ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ককে ভেঙে দেবে বলে আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ আমরা খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তের উপর ভরসা করি।
লেবীয় পুস্তক দেখায় যে আমরা যখন বুঝতে পারি যে আমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল করেছি, তখন আমাদের অনুতপ্ত হওয়া উচিত, ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং যা ঈশ্বর চান সেই অনুসারে আমাদের জীবনকে সংশোধন করা উচিত।
আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি, পবিত্র আত্মাকে অনুসরণ করি, অন্যান্য বিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করি এবং পরিপক্বতায় বৃদ্ধি পাই, তখন আমাদের সেই আচরণগুলি পরিবর্তন করা উচিত যেগুলি অনিচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে লঙ্ঘন করে।
► কেন আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আরও ভালভাবে জানতে ও তা পালন করতে চাওয়া উচিত?
যে কারণে আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং সম্পূর্ণরূপে তা অনুসরণ করতে চাওয়া উচিত:
১। আমরা এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে।
২। অনিচ্ছাকৃত হলেও ভ্রষ্টাচরণের ফল ভোগ করতে হয়।
৩। খ্রিষ্টবিস্বাসী হিসেবে আমাদের উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে হবে।
৪। আমরা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা ইচ্ছাকৃত পাপের জন্য দোষী।
আমরা যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করি, তখন আমরা মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে অন্যায় কাজকে চিনে নিতে পারি। আমরা যদি বুঝতে পারি যে আমরা যা করছি তা ভুল, কিন্তু তবুও তা করা বেছে নিই, তাহলে সেটি আর নিছক অজ্ঞতার ত্রুটি নয়। আমরা যদি সেটি পরিবর্তন করতে প্রত্যাখ্যান করি, তাহলে সেই অন্যায় কাজটি ইচ্ছাকৃত পাপে পরিণত হয়।
"ঈশ্বরের রাজ্যে মহত্ত্ব পরিমাপ করা হয় আনুগত্যের পরিপ্রেক্ষিতে।"
- জন স্টট (John Stott)
উপসংহার
কখনও কখনও ঈশ্বরতত্ত্ববিদরা পাপের কোন শ্রেণীভেদ করেন না। তারা হয়তো বলতে পারেন যে সিদ্ধতার চেয়ে যা কিছু কম সবই পাপ, অথবা তারা হয়তো বলতে পারেন যে কেবলমাত্র ইচ্ছাকৃত কাজই পাপ। যদি আমরা পাপের বিভাগগুলি বুঝতে পারি, তাহলে আমরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারব যে ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা আমাদের জন্য কী করতে চান।
একজন ব্যক্তির নতুন জন্মের পর তাকে ইচ্ছাকৃত পাপ কাটিয়ে উঠতে হবে। যোহন ঘোষণা করেছেন যে যে ব্যক্তি নতুনজন্ম প্রার্প্ত হয়েছে, সে অভ্যাসগতভাবে পাপ করে না (১ যোহন ৩:৪-৯)। ইচ্ছাকৃত পাপ খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইচ্ছাকৃত বিরুদ্ধাচরণ একজন সাধারণ বিশ্বাসীর অভ্যাসের মধ্যে পড়ে না।
পবিত্রীকরণ হল মানব প্রকৃতিতে পাপের মোকাবিলায় ঈশ্বরের কাজ, যাতে বিশ্বাসীরা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয় (১ থিষলনীকীয় ৫:২৩)। তাদের সমস্ত আত্মা, মন ও দেহ নিষ্কলঙ্ক হয়ে যায়। পবিত্রীকরণ মানুষের প্রকৃতিগত পাপকে জয় করে।
অজ্ঞতারপাপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবাধ্যতা নয় এবং তা পাপী প্রকৃতি থেকে আসে না, বরং পতিত দেহ ও মন থেকে আসে। পার্থিব জীবনে এই ধরনের পাপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পুনরুত্থানের সময় গৌরবান্বিত সেই সাধু সমস্ত ধরনের পাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে ও স্থায়ীভাবে মুক্ত হবেন।
► বিশ্বাসের বিবৃতিটি কমপক্ষে দু'বার একসাথে পড়ুন।
বিশ্বাসের বিবৃতি
প্রথম-সৃষ্ট মানুষের ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্য হওয়ার স্বাধীন সিদ্ধান্ত থেকে মানব পাপের উৎপত্তি হয়। যিশু ব্যতীত সকল মানুষই উত্তরাধিকারসূত্রে আদমের অধঃপতনের অধিকারী এবং পাপকর্মের জন্যও দোষী। মানুষের ভুল হয়তো ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ভাঙতে পারে না। চূড়ান্ত বিচারের আগে ঈশ্বরের ক্ষমা না পেলে প্রত্যেক পাপী চিরকালের জন্য দোষী সাব্যস্ত হবে।
৫ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
রোমীয় ১:২১-৩২
রোমীয় ৩:১০-২০
গালাতীয় ৫:১৬-২১
ইফিষীয় ৫:১-৮
তীত ১:১০-১৬
যাকোব ৪:১-৪
২ পিতর ২:৯-১৭
(২) পরীক্ষা: আপনি ৫ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
৫ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) তিনটি কারণ তালিকাভুক্ত করুন যেগুলির জন্য আমাদেরকে পাপ সম্পর্কে বুঝতে হবে।
(২) আমরা কিভাবে জানি যে পাপের জন্য ঈশ্বরের দায়ী নন?
(৩) প্রতিটির একটি বাক্যে সংজ্ঞা দিন: ইচ্ছাকৃত পাপ, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন।
(৪) কেন আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আরও ভালভাবে বুঝতে ও তা করতে চাওয়া উচিত?
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.