যে ইব্রীয় শব্দকে পবিত্রতা বা পবিত্রীকরণ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা পুরাতন নিয়মে ৬০০ বারেরও বেশি দেখা যায়। পবিত্র শব্দের জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় ও গ্রিক উভয় শব্দেরই অর্থ মূলত পৃথক করা, কোন উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত বা উৎসর্গীকৃত করা। পবিত্রীকৃত কোনো কিছুকে এক নতুন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য পূর্বের ব্যবহার থেকে আলাদা করা হয়। পুরাতন নিয়মে নিবেদিত এবং পবিত্র বলে বিবেচিত বেশ কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করুন:
পবিত্র ভূমি। ঈশ্বর মোশির সঙ্গে সাক্ষাতের স্থানকে আলাদা করেছিলেন (যাত্রাপুস্তক ৩:৫)।
পবিত্র তাম্বু ও মন্দির। তাম্বু ও মন্দিরের সঙ্গে অনেক পবিত্র বিষয় জড়িত ছিল, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল যাজকের পোশাক (লেবীয় পুস্তক ১৬:৩২), রুটি (যাত্রাপুস্তক ২৯:৩৪) এবং আসবাবপত্র (যাত্রাপুস্তক ৪০:৯) অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগুলি ঈশ্বরের উপাসনার জন্য আলাদা করা হয়েছিল।
পবিত্র দিন। বিশ্রামবারের দিনটি পবিত্র হিসাবে পৃথক করা হয়েছিল (আদিপুস্তক ২:৩, যাত্রাপুস্তক ২০:৮)। অন্যান্য ইহুদি ছুটির দিন যেমন প্রায়শ্চিত্তের দিনও বিশেষ ছিল (লেবীয় পুস্তক ২৩:২৬-২৯)। এই দিনগুলি বিশ্রাম, প্রতিফলন এবং উপাসনার জন্য পৃথক করা হয়েছিল।
পবিত্র ঈশ্বর। বাইবেলে পবিত্রতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন স্বয়ং ঈশ্বর। ঈশ্বর সম্বন্ধে যা কিছু আছে সমস্তকিছুই পবিত্র। তাঁর নাম পবিত্র (লেবীয় পুস্তক ২২:২), তাঁর বাক্য পবিত্র (যিরমিয় ২৩:৯) এবং তাঁর পথ পবিত্র (গীতসংহিতা ৭৭:১৩)। পবিত্রতার অর্থ হল ঈশ্বর তাঁর ঐশ্বরিক ব্যক্তিত্ব এবং পদের জন্য যে কোন পাপ, অশুচিতা, প্রচলিত, সাধারণ বা অনুপযুক্ত বিষয় থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক।
নতুন নিয়মে যিশুকে পবিত্র (যোহন ১৭:১৯, প্রেরিত ৪:২৭, ৩০) এবং পাপহীন (২ করিন্থীয় ৫:২১) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বর্গদূতদের (মার্ক ৮:৩৮) এবং প্রেরিত ও ভাববাদীদেরও (ইফিষীয় ৩:৫) পবিত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তারা সবাই ছিল বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথকীকৃত।
বাইবেল ঈশ্বরের লোকেদের পবিত্র বলে সম্বোধন করে (লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪-৪৫, ১ করিন্থীয় ১:২, ১ পিতর ১:১৫-১৬)। এই পাঠটি ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যে পবিত্রতা আশা করেন তা ব্যাখ্যা করবে।
ঈশ্বরের পবিত্র উপাসকবৃন্দ
► গীতসংহিতা ১১৯:৩৩-৪০ পদ একসঙ্গে পড়ুন। ঈশ্বর যেভাবে একজন বিশ্বাসীকে রূপান্তরিত করেন, সেই সম্বন্ধে এই অনুচ্ছেদটি আমাদের কী বলে?
ঈশ্বর যখন নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল তিনি কী ধরনের ঈশ্বর তা দেখানো। ঈশ্বর নিজেকে মূলত পবিত্র বলে বর্ণনা করেছিলেন। যিশাইয় প্রায়ই ঈশ্বরকে “ইস্রায়েলের পবিত্রতম” বলে উল্লেখ করতেন।
ঈশ্বরের পবিত্রতা ছিল উপাসনার বিষয়বস্তু:
তারা তোমার মহান ও ভয়াবহ নামের প্রশংসা করুক—তিনি পবিত্র। সদাপ্রভু আমাদের ঈশ্বরের গৌরব করো, তাঁর পাদপীঠে আরাধনা করো; তিনি পবিত্র। (গীতসংহিতা ৯৯:৩, ৫)
ঈশ্বরের পবিত্রতা হল মানুষের প্রতি তাঁর দাবির ভিত্তি। যেহেতু তিনি পবিত্র, তাই তিনি তাঁর উপাসকদের পবিত্র হতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, "পবিত্র হও, কেননা আমি পবিত্র" (লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪-৪৫, লেবীয় পুস্তক ১৯:২, লেবীয় পুস্তক ২০:২৬, লেবীয় পুস্তক ২১:৮)।
ইস্রায়েলের ঈশ্বর অন্য জাতির মিথ্যা দেবতাদের থেকে আলাদা ছিলেন এবং এক ভিন্ন ধরনের উপাসনার প্রয়োজন ছিল।
কে সদাপ্রভুর পর্বতে আরোহণ করবে? কে তাঁর পুণ্যস্থানে দাঁড়াবে? সে, যার হাত পরিষ্কার ও হৃদয় নির্মল, যে প্রতিমায় আস্থা রাখে না অথবা মিথ্যা দেবতার নামে শপথ করে না। (গীতসংহিতা ২৪:৩-৪)
এখানে প্রশ্ন হল, "ঈশ্বর কার উপাসনা গ্রহণ করেন?" সবাই ঈশ্বরের উপাসক হিসেবে গৃহীত হয় না। ঈশ্বরের উপাসকদের অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।
ঈশ্বর যে পবিত্রতা আশা করেন তা কেবল আনুষ্ঠানিক বা সাজান (ভান) নয়; এটা হল প্রকৃত পবিত্রতা। ঈশ্বরের উপাসকদের জন্য পবিত্রতার মানটি নতুন নিয়মে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে:
কিন্তু যিনি তোমাদের আহ্বান করেছেন, তিনি যেমন পবিত্র, তোমরাও তেমনই সমস্ত আচার-আচরণে পবিত্র হও। কারণ লেখা আছে, “তোমরা পবিত্র হও, কারণ আমি পবিত্র।” (১ পিতর ১:১৫-১৬)
আচরণ বলতে একজন ব্যক্তির স্বভাব এবং সম্পূর্ণ জীবনধারাকে বোঝায়। ঈশ্বর কেবল এটাই চান না যে, তাঁর উপাসকরা আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র হবে অথবা তাদেরকে পবিত্র বলা হবে, যখন তারা সত্যিই নয়। তিনি আশা করেন যে, তাঁর উপাসকরা পবিত্র জীবনযাপন করবে।
► পবিত্রতা উপাসনার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণগুলি কি?
উপাসনা করার জন্য পবিত্রতা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ …
১। আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি এবং তাঁর মতো হতে চাই। ঈশ্বরের উপাসনা করার অর্থ হল, তিনি হলেন বিদ্যমান সবচেয়ে অপূর্ব সত্তা এবং তাঁর মতো করে তাঁকে উপাসনা করা। উপাসনা হল তাঁর প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যকে উপলব্ধি করা। ঈশ্বরের প্রকৃতি অপরিহার্যরূপে পবিত্র, তাই আমরা যদি সত্যিই ঈশ্বরের প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করি, তাহলে আমরা পাপ ও অপবিত্রতাকে ঘৃণা করব, এমনকি যদি আমরা নিজেদের মধ্যেও তা দেখতে পাই।
২। আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি এবং তাঁকে খুশি করতে চাই। ঈশ্বরের আবশ্যিকতা আমাদের অবাক করবে না যদি আমরা বুঝতে পারি যে উপাসনা আসলে কী। ভয়ের কারণে আমরা তাঁর উপাসনা করি না। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করেন বলে আমরা তাঁর উপাসনা করি না। আমরা তাঁকে ভালোবাসি বলে তাঁর উপাসনা করি।
মন পরিবর্তনের সময় পবিত্রীকরণ
প্রত্যেক বিশ্বাসীর জীবনে যা ঘটেছে তা বোঝাতে বাইবেল “পবিত্রকৃত” বা "পবিত্রীকরণ" (Sanctification) শব্দটি ব্যবহার করে। পৌল লিখেছিলেন, "করিন্থে অবস্থিত ঈশ্বরের মণ্ডলীর প্রতি, খ্রীষ্ট যিশুতে যাদের শুচিশুদ্ধ ও পবিত্ররূপে আহ্বান করা হয়েছে তাদের প্রতি, সেই সঙ্গে যারা সর্বত্র আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ডাকে, তাদের সকলের প্রতি; তিনি তাদের ও আমাদেরও প্রভু।" (১ করিন্থীয় ১:২) পৌল আরও লিখেছিলেন, "… তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা ধৌত হয়েছ, শুচিশুদ্ধ হয়েছ ও নির্দোষ প্রতিপন্ন হয়েছ।" (১ করিন্থীয় ৬:১১) করিন্থীয়েরা ইতিমধ্যেই পবিত্রীকৃত হয়েছিল, যদিও তারা আধ্যাত্মিক পরিপক্বতায় বেড়ে ওঠেনি এবং তারা তখনও মাংসিক ছিল, খ্রীষ্টে শিশু হিসাবে (১ করিন্থীয় ৩:১)।
[1]এই করিন্থীয়দের সম্বন্ধে উল্লেখ করার সময় পবিত্র করা শব্দটি এর সবচেয়ে সাধারণ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। করিন্থীয়দেরকে পাপ ও জগৎ থেকে বের করে আনা হয়েছিল এবং তাদেরকে ঈশ্বরের জন্য পৃথক করা হয়েছিল। পবিত্রতায় তারা নিশ্চিতভাবেই পরিপক্ব ছিল না, কিন্তু তারা পুরাতন জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এবং এখন ঈশ্বরের পরিবারের অংশ ছিল।
আমরা যখন প্রথম ঈশ্বরের মুখোমুখি হই, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাপ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণেই ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ক শুরু হতে পারে না যতক্ষণ না আমরা অনুতপ্ত হই, ক্ষমাপ্রাপ্ত হই এবং নতুন হৃদয় লাভ করি।
একই সময়ে আমরা ঈশ্বরের সাথে সম্মিলিত হয়েছি, আমরা রূপান্তরিত হয়েছি (তীত ৩:৫)। আধ্যাত্মিকভাবে, আমরা নতুন সৃষ্টি হয়েছি। আমরা পাপের ক্ষমতা থেকে মুক্ত হয়েছি এবং আমরা ঈশ্বরকে খুশি করতে চাই। খ্রিস্টীয় পবিত্রতা শুরু হয় যখন একজন ব্যক্তি পরিত্রাণ পান।
বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে, পরিত্রাণ অবিলম্বে পবিত্র জীবনের দিকে পরিচালিত করে। ঈশ্বরের অনুগ্রহ যা পরিত্রাণ নিয়ে আসে তা আমাদের বর্তমান যুগে আত্মসংযমী, ন্যায়নিষ্ঠ এবং ঈশ্বরীয় জীবনযাপন করতে শেখায় (তীত ২:১১-১২)। পরিত্রাণের উদ্দেশ্য হল আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করা এবং পবিত্র করা, যাতে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি (লূক ১:৭৪-৭৫, রোমীয় ৬:২, ১১-১৬)।
এক বৃদ্ধ হিন্দু ভদ্রলোক এমি কারমাইকেলকে প্রশ্ন করেছিলেন, “আমরা অনেক প্রচার শুনেছি। আপনি কি আমাদেরকে আপনার প্রভু যীশুর জীবন দেখাতে পারেন?"
পবিত্রীকরণে বৃদ্ধি পাওয়া
আমরা যখন ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলি, তখন আমরা তাঁর সত্য সম্বন্ধে আরও বেশি বুঝতে পারি এবং তাঁর ফলে পবিত্রতায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকি। জ্যোতিতে চলার অর্থ হল, তাঁর সত্য সম্বন্ধে আমরা যত বেশি শিখি, ততই তাঁর বাধ্য থাকা (১ যোহন ১:৭)। আমরা যখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি যে, কী তাঁকে খুশি করে এবং কী তাঁকে অসন্তুষ্ট করে, তখন আমরা তাঁর সত্য ও পবিত্র আত্মার শক্তি শক্তি দ্বারা পরিবর্তিত হই।
যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভালোবাসে, তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হতে চাইবেন। তিনি শুধু নিজের কর্মের পরিবর্তন চান না। তিনি চান তার অভিপ্রায়গুলি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হোক। দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন যে, তিনি পাপের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিজয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম হবেন এবং তারপর প্রার্থনা করেছিলেন যে, তার কথাবার্তা, এমনকি তার হৃদয়ের ধ্যানও ঈশ্বরকে খুশি করবে। (গীতসংহিতা ১৯:১২-১৪. এ ছাড়া, গীতসংহিতা ১১৯:৭, ৩৪, ৩৬, ৬৯, ৮০ এবং ১১২ পদ দেখুন।)
আধ্যাত্মিক পরিপক্কতার পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় পবিত্রকরণ। পবিত্রকরণ হল পাপ এবং জগৎ থেকে ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এবং ঈশ্বরের প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে উৎসর্গীকৃত হওয়ার একটি আজীবন প্রক্রিয়া। জগতের আদর্শের অনুরূপ হওয়ার বিরুদ্ধে পৌলের সতর্কবাণী এবং "মনের নতুনীকরণের দ্বারা রূপান্তরিত হও [অবিরতভাবে]" (রোমীয় ১২:২) বিষয়ে তার এই পরামর্শ এই বিষয়টিকে চিত্রিত করে। জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং মনের রূপান্তর এমন কোন অভিজ্ঞতা নয়যা কোনও খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জীবনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হয়। প্রভুর সঙ্গে গমনাগমন করার ফলে বিশ্বাসীরা ক্রমাগত উন্নতি ও বৃদ্ধি অনুভব করে থাকে। এই সমস্ত কিছুই পবিত্রীকরণ শব্দের অন্তর্ভুক্ত।
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি এবং পবিত্রীকরণ
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি (Inherited Depravity) হল একজন ব্যক্তির নৈতিক স্বভাবের কলুষতা যা তাকে জন্ম থেকেই পাপের দিকে প্ররোচিত করে। ঈশ্বরতত্ত্ববিদগণ কখনও কখনও একে 'আদি পাপ' বলে অভিহিত করেন কারণ আদমের পাপের কারণে আমরা স্বভাবের পাপবোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করি।
প্রত্যেক মানুষ এমন ইচ্ছা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যা আত্মকেন্দ্রিক এবং পাপের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যদি না ঈশ্বর আমাদের ইচ্ছা ও শক্তি দেন তা হলে আমাদের ইচ্ছা সঠিক বাছাই করার জন্য স্বাধীন নয় (রোমীয় ৬:১৬-১৭)। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি অহংকার, ঈর্ষা, ঘৃণা এবং ক্ষমাহীনতার মতো পাপকে প্রবৃত্ত করে। এ ছাড়া, এটি পাপের কাজগুলিকেও প্রেরণা যোগায়।
► পরিত্রাণ পাওয়ার পরও কি একজন ব্যক্তির মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি থাকে?
যে ব্যক্তি পরিত্রাণ লাভ করেন, তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণে আর থাকেন না। তিনি যদি তখনও এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন, তাহলে তিনি পাপের মধ্যে বাস করছেন এবং পরিত্রাণ পান নি। বাইবেল আমাদের বলে যে, যে ব্যক্তি মাংসিক মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় (রোমীয় ৮:৬-৮, ১৩)। পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণাধীন নয় এবং পবিত্র আত্মার শক্তিতে পাপের বিরুদ্ধে বিজয়ী জীবনযাপন করতে পারে (রোমীয় ৮:১, ৯, ১৩)।
কিন্তু, একজন পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে এখনও উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি প্রভাব রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তা থেকে শুচি হন। পৌল করিন্থের বিশ্বাসীদের বলেছিলেন যে যদিও তারা পরিত্রাণ পেয়েছে, তবুও তারা এখনও মাংসিক এবং তাদের মধ্যে জগতের লোকেদের মতো মনোভাব রয়েছে। (পড়ুন ১ করিন্থীয় ৩:১-৩)। এমনকি তিনি এও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, একজন নতুন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর পক্ষে সেই অবস্থায় থাকা স্বাভাবিক। তিনি বলেছিলেন যে, মাংসিক হওয়ার অর্থ হল খ্রিস্টেতে একটি শিশুর মতো হওয়া।
[1]এই অবস্থায় বিশ্বাসী ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভালবাসেন কিন্তু তাঁর সমস্ত হৃদয়, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে ভালবাসতে পারেন না (মথি ২২:৩৭)। পৌলের মতো তিনি বলতে পারেন না যে, ঈশ্বরের আহ্বানকে অনুসরণ করার জন্য তার একক উদ্দেশ্য রয়েছে (ফিলিপীয় ৩:১৩-১৫)। তিনি জানেন যে তার হৃদয়ের কিছু চিন্তন ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় (গীতসংহিতা ১৯:১৪)।
ঈশ্বর আমাদের এই অবস্থায় ছেড়ে দেন না। এমনকী প্রাচীনকালেও ঈশ্বর ইস্রায়েলকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি এমন এক অনুগ্রহের কাজ করবেনযা তাদেরকে তাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে তাঁকে প্রেম করতে সমর্থ করবে। (পড়ুন দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:৬)
[2]দায়ূদ এমন এক অনুগ্রহের কাজ জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যা ক্ষমার চেয়েও অধিক ছিল। তিনি পাপ করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা তার হৃদয়ের সমস্যার কারণে ঘটেছে। তিনি জানতেন যে পাপ তার স্বভাবের মধ্যেই রয়েছে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর চান যেন তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হন। তিনি শুদ্ধিকরণের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। (পড়ুন গীতসংহিতা ৫১:৫-১০)
নতুন নিয়মের বিশ্বাসীদের মনপরিবর্তিত হওয়ার পর আরেকটি বিশেষ অভিজ্ঞতার জন্য আহ্বান দেওয়া হয়েছিল। থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা ছিল বিশ্বাসীদের চমৎকার উদাহরণ, যারা সুসমাচার গ্রহণ করেছিল, প্রতিমাপূজা থেকে ফিরে এসেছিল, তাড়না সহ্য করেছিল, পবিত্র আত্মায় আনন্দ পেয়েছিল এবং যিশুর প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছিল (১ থিষলনীকীয় ১:৬-১০)। তবুও তাদের বিশ্বাসে কিছু ঘাটতি ছিল। এটি এমন কিছু ছিল না যা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বা মৃত্যুর সময় প্রদান করা হবে, কারণ পৌল বলেছিলেন যে, তাদের সঙ্গে পরিদর্শন করার সময় তা ঘটতে পারে। (পড়ুন ১ থিষলনীকীয় ৩:১০)। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন:
শান্তির ঈশ্বর স্বয়ং তোমাদের সর্বতোভাবে পবিত্র করে তুলুন। আমাদের প্রভু যিশু খ্রীষ্টের আগমনকালে তোমাদের সমগ্র আত্মা, প্রাণ ও দেহ, অনিন্দনীয়রূপে রক্ষিত হোক। যিনি তোমাদের আহ্বান করেন, তিনি বিশ্বস্ত, তিনিই এই কাজ করবেন (১ থিষলনীকীয় ৫:২৩-২৪)।
পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যে, এই বিশ্বাসীরা যেন সম্পূর্ণরূপে পবিত্রীকৃত হয়। ফলস্বরূপ বিশ্বাসীরা প্রভু ফিরে আসার সময় দেহ, আত্মা এবং আত্মায় নির্দোষ হবে।
পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিশুর শিষ্যরা অনুগ্রহের এক বিশেষ কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল (যোহন ১৫:৩, যোহন ১৭:১৪, ৯-১০, লূক ১০:২০)। আমরা জানি যে সেই সময়ের আগে তারা ইতিমধ্যেই পরিত্রাণ পেয়েছিল, কারণ যিশু বলেছিলেন যে তারা জগতের নয়, তারা তাঁর ও পিতার অধিকারভুক্ত, এবং তাদের নাম স্বর্গে লেখা হয়েছিল (যোহন ১৫:৩, যোহন ১৭:১৪, ৯-১০, লূক ১০:২০)। কিন্তু তারা আত্মকেন্দ্রিক ছিল এবং ঈশ্বরের অগ্রাধিকারগুলি তাদের ছিল না। বার বার যিশু তাদের পাপপূর্ণ মনোভাবের জন্য তাদের সংশোধন করেছিলেন। (পড়ুন মার্ক ৯:৩৩-৩৪, মার্ক ১০:৩৫-৪১, লূক ৯:৫৪-৫৫)
যিশুর পুনরুত্থানের পর, স্বর্গে ফিরে যাওয়ার ঠিক আগে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে, তারা জগতের কাছে তাঁর সাক্ষি হবে। কিন্তু, তিনি তাদের বলেছিলেন যে তাদেরকে প্রথমে পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হতে হবে। (পড়ুন লূক ২৪:৪৯, যোহন ২০:২২, প্রেরিত ১:২-৫, ৮ পড়ুন)। তিনি ইতিমধ্যেই পবিত্র আত্মার কাজ সম্বন্ধে তাদের অনেক কিছু বলেছিলেন, বিশেষ করে যোহন ১৪-১৬ অধ্যায়ে।
পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়েছিল (প্রেরিত ২:৪)। এটি তাদের প্রেরণা, অগ্রাধিকার এবং কাজের পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। নতুন নিয়মের বাকি ঘটনাগুলিতে, শিষ্যরা খ্রিস্টতুল্য মনোভাব এবং অগ্রাধিকারগুলি প্রদর্শন করেছিল, যদিও তখনও তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল এবং ভুল করেছিল। পিতর ও যোহনের লেখা পত্রগুলি খ্রিস্টের বার্তা ও হৃদয়কে প্রতিফলিত করে। পবিত্র আত্মার পূর্ণতা তাদেরকে তাদের সমস্ত হৃদয়, আত্মা, মন ও শক্তি দিয়ে তাদের প্রতিবেশীদেরকে নিজেদের মতো প্রেম করতে সক্ষম করেছিল (মথি ২২:৩৭-৩৯)। যেহেতু তারা পবিত্র আত্মার প্রতি সম্পূর্ণরূপে বসমর্পিত ছিল, তাই তিনি তাদের মাধ্যমে বাস করেছিলেন, ঠিক যেমন তিনি খ্রিস্টেতে বাস করেছিলেন (লূক ৪:১, ১৪, ১৮; প্রেরিত ২:২২)।
কিছু খ্রিস্টিয়ান শিক্ষাবিদ পবিত্রীকরণ প্রক্রিয়ার উপর তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং অন্যেরা এক সন্ধিক্ষণের ঘটনার উপর মনোনিবেশ করে। পঞ্চাশত্তমীর অভিজ্ঞতা এবং পবিত্র আত্মার বাপ্তিস্ম হল সেই লোকেদের এক উদাহরণ, যারা পবিত্রীকরণের এক নির্দিষ্ট ঘটনার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। এই বিষয়টা ইঙ্গিত করে যে, কোনো একটা সময়ে কিছু সাধিত হয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা সুসমাচারকে সীমিত করতে পারি না, এমনকি বিশ্বাস ও পূর্ণ আত্মসমর্পণের মুহূর্তেও (রোমীয় ১২:১-২)। যিশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে যা কিছু জুগিয়েছেন, তা সকলের জন্য প্রাপ্তিসাধ্য, যারা:
১। পাপের বিষয়ে নিজেদেরকে যিশুর সঙ্গে মৃত বলে বিবেচনা করে (রোমীয় ৬:১১)
২। তাদের দেহে পাপকে রাজত্ব করতে দেয় না (রোমীয় ৬:১২)
৩। তাদের দেহকে ধার্মিকতার উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করে (রোমীয় ৬:১৩)
ইতিহাস জুড়ে মহান খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা এমন মুহূর্তগুলি সাক্ষ্য দিয়েছেন যখন তারা আত্মায় পরিপূর্ণ জীবন এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক গভীর সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন, যেমন জন বানিয়ান, হাডসন টেলর, ডোয়াইট এল মুডি, স্যামি মরিস, অসওয়াল্ড চেম্বার্স, ফ্রান্সেস রিডলি হ্যাভারগাল এবং এমি কারমাইকেল।[3]
যদিও এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এক লহমায় ঈশ্বর কী করতে পারেন, তা আমরা সীমিত করি না, কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে পবিত্র আত্মার কাজ ভুলে না যাই। যদিও এই ধরনের পবিত্রীকরণকে কখনও কখনও সম্পূর্ণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়, এই স্তরটি বোঝায় না যে আর কোনও উন্নয়ন হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, ফরাসি ভাষায় কথা বলতে শেখার অর্থ এই নয় যে, একজন ব্যক্তি এমনকি আরও ভাল ফরাসি ভাষায় কথা বলতে শিখতে পারে না। যারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্রীকৃত হয়েছে, তারা পবিত্রীকরণের অভিজ্ঞতা লাভের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা তারা আগে কখনো লাভ করেনি। কিন্তু এটি পরিপূর্ণতার এক চরম পরিস্থিতি নয়। এটা হল পবিত্রতার জীবন, যেখানে একজন বিশ্বাসীর বিকাশ অব্যাহত থাকে।
“আমাদের চারপাশের বিশ্বের ক্ষেত্রে মন্ডলীর দায়বদ্ধতা দ্বিগুণ। এক দিকে, আমাদের জগতের মধ্যে বাস করতে, সেবা করতে ও সাক্ষ্য দিতে হবে। অন্যদিকে, আমরা জগতের দ্বারা কলুষিত হওয়া এড়াতে চাই। তাই আমরা কখনই জগৎ থেকে পালিয়ে আমাদের পবিত্রতা রক্ষা করার চেষ্টা করব না বা জগতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের পবিত্রতাকে বিসর্জন দিতে চাই না।"
“পবিত্রীকরণ বিষয়টি আমার জন্য ঈশ্বর কি করতে চান সে বিষয়ে আমার ধারণা নয়, বরং পবিত্রীকরণ হল আমার জন্য তিনি কী করতে চান সে বিষয়ে ঈশ্বরের ধারণা; এবং তাঁকে আমার মন ও আত্মার মনোভাবের মধ্যে পেতে হবে যেখানে যে কোনও মূল্যে আমি তাঁকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রকৃত করতে দেব।”
- অসওয়াল্ড চেম্বার্স
[3]এই ধরনের অনেক জীবনকাহিনী আপনি Shepherds Global Classroom-এর পবিত্র জীবনের মতবাদ ও অনুশীলন কোর্সে পড়তে পারেন।
পবিত্রীকরণ এবং খ্রিষ্টীয় পরিপক্বতা
বাইবেল একজন পরিপক্ব বিশ্বাসীর জীবন সম্বন্ধে বর্ণনা করে। পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীর জীবনে খ্রিস্টীয় গুণাবলী বিকাশের জন্য কাজ করে। আত্মার কাজের অন্তর্ভুক্ত হল শুদ্ধিকরণ অথবা অভিষিক্ত করার বিশেষ মুহূর্ত এবং সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে প্রক্রিয়া। একজন বিশ্বাসীর এমন এক আধ্যাত্মিক জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয় যা একজন পরিপক্ব বিশ্বাসী সম্বন্ধে বাইবেলের বর্ণনার সঙ্গে মেলে না।
ইব্রীয়দের প্রতি পত্রে লেখক বলেছিলেন যে, তার পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ তখনও শিশুদের মতো ছিল (ইব্রীয় ৫:১২)। তিনি তাদেরকে খ্রিস্টের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে যেতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন (ইব্রীয় ৬:১)।
বিশ্বাসীদের জন্য প্রেরিতদের প্রার্থনা আমাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রদর্শন করে।
প্রেম
পৌল প্রার্থনা করেছিলেন, “প্রভু তোমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করুন এবং তোমাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা যেমন উপচে পড়ে, তেমনই পরস্পরের ও অন্য সকলের প্রতিও তোমাদের ভালোবাসা উপচে পড়ুক …” (১ থিষলনীকীয় ৩:১২-১৩)।
… তোমরা প্রেমে দৃঢ়মূল ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে, সকল পবিত্রগণের সঙ্গে যেন পরাক্রমের অধিকারী হতে পারো এবং খ্রীষ্টের প্রেমের বিস্তার, দৈর্ঘ্য, উচ্চতা ও গভীরতা উপলব্ধি করতে পারো, আর জ্ঞানের অতীত খ্রীষ্টের এই প্রেম অবগত হয়ে তোমরা যেন ঈশ্বরের সকল পূর্ণতায় ভরপুর হয়ে ওঠো (ইফিষীয় ৩:১৭-১৯)।
পৌল প্রার্থনা করছিলেন যেন এই বিশ্বাসীরা আরও বৃদ্ধি পায় এবং প্রেমে উপচে পড়ে। ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে পৌল বর্ণনা করেছিলেন যে একজন পরিপক্ব বিশ্বাসী ব্যক্তির মধ্যে প্রেম কেমন হওয়া উচিত। পবিত্রীকৃত জীবন হল নিজের সমস্ত হৃদয়, প্রাণ, মন এবং শক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে প্রেম করা এবং আপনার প্রতিবেশীকে নিজের মতো করে প্রেম করা (লূক ১০:২৭)। এটাই হল সেই ধরনের সম্পর্ক, যা পবিত্র লোকেদের ঈশ্বর ও তাদের সহমানবদের সঙ্গে রয়েছে।
নির্দোষতা
পৌল থিষলনীকীয়দের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যেন ঈশ্বর তাদের হৃদয়কে পবিত্রতায় নির্দোষ স্থাপন করেন (১ থিষলনীকীয় ৩:১২-১৩) দুটি অধ্যায় পরে, তিনি প্রার্থনা করেন যে তারা এতটাই পবিত্রীকৃত হবে যে প্রভু যিশুখ্রিস্টের আগমনের সময় তাদের সমস্ত আত্মা ও প্রাণ ও দেহ নির্দোষ থাকবে (১ থিষলনীকীয় ৫:২৩)। নির্দোষতা বলতে সব ক্ষেত্রে সিদ্ধতা বোঝায় না। একজন নির্দোষ ব্যক্তি ভুল করেন কিন্তু তার সেই চরিত্র ও আচরণ রয়েছে, যা তার থাকা উচিত।
অভ্যন্তরীণ শক্তি (মনের জোর)
পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যে ইফিষের বিশ্বাসীরা তাদের অভ্যন্তরীণ সত্তায় ঈশ্বরের আত্মার শক্তিতে শক্তিশালী হবে (ইফিষীয় ৩:১৫-১৬)। বিশ্বাসে এগিয়ে চলার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ চরিত্র আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মনের শক্তি হল সঠিক বিষয় বেছে নেওয়া এবং ভুল সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা।
আমাদের মধ্যে খ্রিষ্টের অবস্থান
পৌল ইফিষীয়দের জন্য প্রার্থনা অব্যাহতভাবে প্রার্থনা করেন যেন খ্রিস্ট তাদের হৃদয়ে বাস করেন (ইফিষীয় ৩:১৭) এই অনুচ্ছেদে যে শব্দটিকে আবাস হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে তার অর্থ হল স্থায়ীভাবে বাস করা, শুধু সাময়িকভাবে কোথাও থাকা নয়। এই শব্দচিত্র ইঙ্গিত করে যে, যিশু আমাদের সঙ্গে বাস করতে চান, শুধুমাত্র আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নয়। খ্রিস্ট সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দ ও সন্তুষ্টবোধ করেন, যারা এক ধারাবাহিক আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করে।
ঈশ্বরের পূর্ণতা
পৌল ইফিষীয়দের জন্য প্রার্থনার শেষে বলেন, তারা যেন ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতা লাভ করে (ইফিষীয় ৩:১৪-১৯)। এটি একটি আধ্যাত্মিক বাস্তবতা বর্ণনা করার জন্য এক প্রকৃত দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে। এর অর্থ হল, ঈশ্বর আমাদের সমস্ত অংশকে, আমাদের মন, ইচ্ছা, আবেগ, কার্যকলাপ, মনোভাব, প্রবৃত্তি এবং প্রতিক্রিয়াগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। বাইবেলে পাওয়া পবিত্র জীবনের সমস্ত বর্ণনার মধ্যে এটিই হয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ - ধার্মিকতায় পরিপূর্ণ হওয়া যে সেখানে অধার্মিকতার কোন স্থান থাকবে না।
পরবর্তী দু’টি পদে এই প্রার্থনা শেষ করা হয়েছে:
এখন আমাদের অন্তরে যিনি তাঁর সক্রিয় ক্ষমতা অনুসারে আমাদের সকল চাহিদা পূর্ণ করতে অথবা কল্পনারও অতীত কাজ করতে সমর্থ, মণ্ডলীতে এবং খ্রীষ্ট যিশুতে, যুগ যুগ ধরে সকল প্রজন্মে চিরকাল তাঁর গৌরব কীর্তিত হোক! আমেন (ইফিষীয় ৩:২০-২১)।
এই আশীর্বাচনটি বলে যে ঈশ্বর আমরা যা চাইতে পারি বা ভাবতে পারি তার চেয়েও বেশি কিছু করতে পারেন। পৌল আর্থিক প্রাচুর্যের বিষয়ে নয় বরং আধ্যাত্মিক জীবনের বিষয়ে বলছেন। আমাদের অবশ্যই পবিত্রতা ও পরিপক্বতার মাত্রাকে ছোট করে দেখলে হবে না যে শক্তি আমাদের সেই স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।
খ্রিষ্টীয় অনুশীলন
নতুন নিয়ম আমাদের পবিত্রতা ও পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অভ্যাসগুলি জানায়।
উত্তম সংবেদ বজায় রাখ। পৌল তীমথিয়কে জানিয়েছিলেন যে, ভাল যুদ্ধ করার পথ (বিজয়ী খ্রিষ্টীয় জীবনের এক দৃষ্টান্ত) হল বিশ্বাস ও এক সৎ বিবেক বজায় রাখা (১ তীমথিয় ১:১৮-১৯)।[1] পৌল আরও বলেছিলেন, “ঈশ্বর ও মানুষের কাছে [2]আমার বিবেক নির্মল রাখার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি” (প্রেরিত ২৪:১৬)। বিবেকের কথা শোনা হয়তো আমাদেরকে অনুতপ্ত হতে, প্রতিদান দিতে, কারো সঙ্গে সম্মিলিত হতে অথবা আমাদের আচরণ পরিবর্তন করতে পরিচালিত করতে পারে। এক উত্তম বিবেক থাকার অর্থ হল, লোকেরা যখন বুঝতে পারে যে তারা অন্যায় করেছে, তখন তারা পাপ স্বীকার করবে এবং অনুতপ্ত হবে।
ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ কর। রোমীয় ১২:১ পদে এক জোরালো উৎসাহ দেন করে পৌল লিখেছিলেন, 'অতএব, ভাইবোনেরা, ঈশ্বরের বহুবিধ করুণার পরিপ্রেক্ষিতে, আমি তোমাদের কাছে মিনতি করছি, তোমরা তোমাদের শরীরকে জীবন্ত বলিরূপে, পবিত্র ও ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্যরূপে উৎসর্গ করো—তাই হবে তোমাদের যুক্তিসংগত আরাধনা।" রোমীয় বিশ্বাসীরা মন পরিবর্তনের সময় ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিল। কিন্তু, এখানে পৌল ঈশ্বরের প্রতি আরও পূর্ণরূপে ভক্তি দেখানোর জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
জগতের অনুরূপ হইও না (রোমীয় ১২:২)। জগতের সঙ্গে মানিয়ে চলার অর্থ হল অবিশ্বাসী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা গঠিত মূল্যবোধগুলি গ্রহণ করা এবং অবিশ্বাসীদের মতো আচরণ করা। জগতের লোকেরা স্বার্থপর ও অন্যায্য হওয়ার এবং পাপপূর্ণ উপায়ে মাংসের অভিলাষ সকল পূর্ণ করার জন্য যুক্তি খুঁজে পায়। একজন বিশ্বাসী তাদের থেকে ভিন্ন (২ করিন্থীয় ১০:৩-৪)।
আপনার মন পুনর্নবীকরণ করুন। পৌল রোমীয়দের এই বলে পরামর্শ অব্যাহত রেখেছেন:
… কিন্তু তোমাদের মনের নতুনীকরণের দ্বারা রূপান্তরিত হও। তখন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে যাচাই ও অনুমোদন করতে পারবে, যা উৎকৃষ্ট, প্রীতিজনক ও সিদ্ধ (রোমীয় ১২:২)।
জগৎ যেভাবে চিন্তা করে তা যত বেশি প্রত্যাখ্যান করবে এবং ঈশ্বরের ভাবধারাকে সাগ্রহে গ্রহণ করবে, ততই সে ব্যক্তি রূপান্তরিত হবে।
জ্যোতিতে চলুন। যোহন লিখেছিলেন, “কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন আমরাও যদি তেমন জ্যোতিতে জীবন কাটাই, তাহলে পরস্পরের সঙ্গে আমাদের সহভাগিতা আছে এবং তাঁর পুত্র যিশুর রক্ত সব পাপ থেকে আমাদের শুচিশুদ্ধ করে” (১ যোহন ১:৭) আলো হল সত্যের একটি বাক্যালংকার। তাই, দীপ্তিতে চলার অর্থ হল ক্রমাগত সত্য শেখা এবং তা অনুসরণ করা।
বিশ্বাসের দ্বারা কষ্ট সহ্য করুন। ১ পিতর ৫:১০ পদে পিতরের আশির্বাচন এক পুনর্স্থাপিত, শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বিশ্বাসী হওয়ার গৌরবান্বিত উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর এক অপ্রীতিকর উপায় সম্বন্ধে বর্ণনা করে। "আর সমস্ত অনুগ্রহের ঈশ্বর, যিনি খ্রীষ্টে তাঁর অনন্ত মহিমা প্রদানের জন্য তোমাদের আহ্বান করেছেন, সাময়িক কষ্টভোগ করার পর তিনি স্বয়ং তোমাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন এবং তোমাদের শক্তিশালী, সুদৃঢ় ও অবিচল করবেন (১ পিতর ৫:১০)"। দুঃখকষ্ট আমাদের মনোভাবকে শুদ্ধ করার এবং আমাদের আচরণ সংশোধন করার এক উপায় করে দেয়। ঈশ্বর সেইসমস্ত দুঃখকষ্ট অনুমোদন করেন যা আমাদের গড়ে তোলে। আমাদের অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে এবং ঈশ্বর আমাদের কী শিক্ষা দিচ্ছেন তা জানার চেষ্টা করতে হবে (২ করিন্থীয় ১২:৭-১০)।
[1]পৌল বিশেষভাবে চিন্তিত ছিলেন যে, পালকদের এক শুদ্ধ বিবেক থাকা প্রয়োজন কারণ তিনি পালক তীমথিয়ের কাছে লেখা তার পালকীয় পত্রগুলিতে এই বিষয়টি আরও তিনবার “সৎ বিবেক” (১ তীমথিয় ১:৫) আর “শুদ্ধ/নির্মল বিবেক” (১ তীমথিয় ৩:৮-৯, ২ তীমথিয় ১:৩) উল্লেখ করেছিলেন।
“সস্তা অনুগ্রহ হল [কাল্পনিক] অনুগ্রহ যা আমরা নিজেদের প্রদান করি। সস্তা অনুগ্রহ হল অনুতাপ ছাড়াই ক্ষমার প্রচার করা, মণ্ডলীর নিয়মানুবর্তিতা ছাড়াই বাপ্তিস্ম, স্বীকারোক্তি ছাড়াই প্রভুর ভোজ .সস্তা অনুগ্রহ হল শিষ্যত্ব ছাড়া অনুগ্রহ, ক্রুশ ছাড়া অনুগ্রহ, জীবিত ও মাংসে মূর্তমান যিশু খ্রিস্ট ছাড়া অনুগ্রহ।“
- ডিট্রিচ বনহোফার
বিশ্বাসের বিবৃতি
খ্রিষ্টীয় পবিত্রতা শুরু হয় যখন একজন পাপী অনুতপ্ত হয় এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহে রূপান্তরিত হয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাসী ব্যক্তি আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমাগত তা মেনে চলতে থাকে। পবিত্রীকরণ হল ঈশ্বরের কাজ, যেখানে তিনি বিশ্বাসীদেরকে শুচি করেন এবং পবিত্র চরিত্র ও জীবনে নিয়ে আসেন।
১১ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
যিশাইয় ৬:১-৮
প্রেরিত ২:১-১৮
১ করিন্থীয় ১০:১-১৩
১ থিষলনীকীয় ৫:১৪-২৪
তীত ২:১১-১৪
(২) পরীক্ষা: আপনি ১১ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
১১ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) পবিত্র শব্দের মূল অর্থ কি?
(২) ঈশ্বরের কাছে পবিত্র হওয়ার অর্থ কি?
(৩) পবিত্রতা কেন উপাসনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
(৪) খ্রিস্টীয় পবিত্রতা কখন থেকে শুরু হয়?
(৫) দীপ্তিতে চলার অর্থ কি?
(৬) পবিত্রীকরণের আজীবন প্রক্রিয়া চলাকালীন একজন বিশ্বাসীর কি ঘটে?
(৭) উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি কি?
(৮) প্রভু যখন ফিরে আসবেন তখন একজন বিশ্বাসী কিভাবে দেহ, প্রাণ ও আত্মায় নির্দোষ হতে পারে?
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.