► রোমীয় ৬ অধ্যায়টি একসঙ্গে পড়ুন। এই অধ্যায়টি পরিত্রাণের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের কী জানায়?
পরিত্রাণের প্রমাণ
পরিত্রাণের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা হল ১ যোহনের অন্যতম মুখ্য বিষয়বস্তু। যোহন এই পত্রটি লেখার কারণ উল্লেখ করে বলেন, "তোমরা যারা ঈশ্বরের পুত্রের নামে বিশ্বাস করো, তাদের কাছে আমি এসব বিষয় লিখছি, যেন তোমরা জানতে পারো যে, তোমরা অনন্ত জীবন লাভ করেছ" (১ যোহন ৫:১৩)।
► কোনও ব্যক্তির যদি সে পরিত্রাণ পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে সংশয় থাকে তবে তার কী করা উচিত?
প্রেরিত জানতেন যে এমন সময় আসবে, যখন একজন বিশ্বাসীর এই আশ্বাস প্রয়োজন যে পরিত্রাণ পেয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন যে বিশ্বাসীর পক্ষে তার আশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করার প্রমাণ অনুসন্ধান করা উপযুক্ত। পুরো পত্র জুড়ে তিনি প্রমাণের কিছু উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, "আমরা এভাবেই বুঝতে পারি" (১ যোহন ৩:১৬)।[1] তিনি বলেছিলেন যে বিশ্বাসীরা তাদের হৃদয়কে আশ্বস্ত করার জন্য এই প্রমাণগুলি ব্যবহার করতে পারে (১ যোহন ৩:১৯)।
১ম যোহনের পত্র জুড়ে বিশ্বাসীর যে বৈশিষ্টের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে তা হল পাপের উপর বিজয়। প্রেরিত বলেছিলেন, “আমার প্রিয় সন্তানেরা, আমি তোমাদের এসব লিখছি, যেন তোমরা পাপ না করো।” (১ যোহন ২:১) এই বিবৃতির দ্বারা প্রেরিত দেখান যে বিশ্বাসী ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত পাপ (willful sin) থেকে মুক্ত এক জীবন যাপন করা উচিত।[2] তিনি তাদের বিজয় জীবনের গুরুত্ব দেখানোর জন্য লিখছেন।
...কিন্তু কেউ যদি পাপ করে, তাহলে আমাদের একজন পক্ষসমর্থনকারী আছেন; তিনি আমাদের হয়ে পিতার কাছে মিনতি করেন। তিনি যিশু খ্রীষ্ট, সেই ধার্মিক পুরুষ। তিনি আমাদের সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত, শুধুমাত্র আমাদের জন্য নয়, কিন্তু সমস্ত জগতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। (১ যোহন ২:১-২)
এখানে যোহন স্বীকার করেছেন যে পাপ ঘটতে পারে, যদিও এমন হতেই হবে তা নয়। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন যে একজন বিশ্বাসী পাপ করলে খ্রিস্টের বলিদান সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে, একজন বিশ্বাসী আবার পাপে ফিরে যেতে এবং অনুতাপ না করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষমা পেতে পারে। এই পদটি কেবল বলে যে সমগ্র জগৎ এবং সমস্ত পাপের জন্য বলিদান প্রাপ্তিসাধ্য। আমরা জানি যে সমগ্র পৃথিবী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিত্রাণ পায় না। যদি একজন বিশ্বাসী পাপ করে তবে তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের সাথে তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে।
১ যোহন থেকে নিম্নলিখিত পদগুলি দেখায় যে একজন বিশ্বাসীর গুরুত্বপূর্ণ স্বাতন্ত্র্যতা হল ইচ্ছাকৃত পাপের উপর বিজয়। বন্ধনীর বাক্যাংশগুলিতে মন্তব্য যোগ করা হয়েছে।
আমরা যদি তাঁর আদেশ পালন করি, তাহলেই বুঝতে পারব যে আমরা তাঁকে জেনেছি [ঈশ্বরের অবাধ্য একজন ব্যক্তির এই প্রমাণের অভাব রয়েছে]। যে ব্যক্তি বলে, “আমি তাঁকে জানি,” কিন্তু তাঁর আদেশ পালন করে না, সে মিথ্যাচারী, তার অন্তরে সত্য নেই। (১ যোহন ২:৩-৪)
যে কেউ পাপ করে, সে বিধান লঙ্ঘন করে; প্রকৃতপক্ষে, বিধান লঙ্ঘন করাই হল পাপ। কিন্তু তোমরা জানো যে, আমাদের পাপ হরণের জন্য তিনি প্রকাশিত হয়েছিলেন এবং তাঁর মধ্যে পাপের লেশমাত্র নেই। যে তাঁর মধ্যে বাস করে, সে পাপে লিপ্ত থাকে না। যে অবিরত পাপ করতেই থাকে, সে তাঁকে দেখেনি বা তাঁকে জানেও না। (১ যোহন ৩:৪-৬)
প্রিয় সন্তানেরা, কাউকে তোমাদের বিপথে চালিত করতে দিয়ো না। যে ন্যায়সংগত আচরণ করে, সে ধার্মিক [পাপ করতে থাকা ব্যক্তি কোনোভাবে ধার্মিক গণ্য হননি], যেমন তিনি ধার্মিক। যে পাপ করে, সে দিয়াবলের, কারণ দিয়াবল প্রথম থেকেই পাপ করে আসছে। ঈশ্বরের পুত্র এই কারণেই প্রকাশিত হয়েছেন, যেন দিয়াবলের সব কাজ ধ্বংস করেন। (১ যোহন ৩:৭-৮)
ঈশ্বর থেকে জাত কোনো ব্যক্তি পাপে লিপ্ত থাকতে পারে না, কারণ ঈশ্বরের স্বভাব তার মধ্যে থাকে; সে ক্রমাগত পাপ করতে পারে না, কারণ সে ঈশ্বর থেকে জাত। (১ যোহন ৩:৯)
যারা তাঁর আদেশ পালন করে, তারা তাঁর মধ্যেই বাস করে এবং তিনিও তাদের মধ্যে বাস করেন। আবার তিনি যে আত্মা আমাদের দিয়েছেন, তাঁর দ্বারা আমরা জানতে পারি যে, তিনি আমাদের মধ্যে আছেন। (১ যোহন ৩:২৪) [খ্রীষ্টেতে অবস্থান করে অনবরত ঈশ্বরের আদেশগুলি লঙ্ঘন করা অসঙ্গতিপূর্ণ।]
ঈশ্বরকে প্রেম করে এবং তাঁর আদেশ পালনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তানদের প্রেম করি। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম করা হল এই: তাঁর আদেশ পালন করা। আর, কারণ তাঁর আদেশ দুর্বহ নয়। (১ যোহন ৫:২-৩) [প্রকৃত প্রেম বাধ্যতাকে অনুপ্রাণিত করে। অবাধ্যতা দেখায় যে, প্রেমের অভাব রয়েছে।]
কারণ ঈশ্বর থেকে জাত প্রত্যেক ব্যক্তি জগৎকে [এর প্রলোভন ও আত্মাকে] জয় করে। আমাদের জয় এই যে, আমাদের বিশ্বাসই জগতকে পরাস্ত করেছে। (১ যোহন ৫:৪)
আমরা জানি, যে ঈশ্বর থেকে জাত, সে পাপকর্মে রত থাকে না; ঈশ্বর থেকে যে জাত, সে নিজেকে সুরক্ষিত [পাহারায়] রাখে এবং সেই পাপাত্মা তার ক্ষতি করতে পারে না। (১ যোহন ৫:১৮)
► বিশ্বাসীর কোন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এই পদগুলিতে সুস্পষ্ট?
এই পদগুলি থেকে এটি সুস্পষ্ট যে বিশ্বাসীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল সে ঈশ্বরের আনুগত্যে থাকে। ইচ্ছাকৃত পাপের উপর বিজয় বিশ্বাসীর একটি বিশেষাধিকার।
[1]১ যোহন ২:৩, ৫, ২৯; ১ যোহন ৩:১০, ১৪, ১৯, ২৪. ১ যোহন ৫:২, ১৮
[2]৫ নং পাঠে ইচ্ছাকৃত পাপ (Willful Sin) সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
১ যোহন ১:৮ পদের টীকা
কখনও কখনও যারা অস্বীকার করে যে একজন বিশ্বাসী ইচ্ছাকৃত পাপের উপর বিজয়ী হতে পারে তারা ১ যোহন ১:৮ পদ উদ্ধৃত করে: “আমরা যদি নিজেদের নিষ্পাপ বলে দাবি করি, তাহলে আমরা নিজেদের প্রতারণা করি এবং সত্য আমাদের মধ্যে বাস করে না।” তবে পাপ করার অর্থ কী? এর অর্থ কি এই যে, এমনকি বিশ্বাসীরাও ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে চলেছে? উপরে উল্লেখিত ১ যোহন ৩ অধ্যায়ের বিবৃতিগুলির সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। যদি যোহন আগেই বলতেন, "প্রত্যেক বিশ্বাসীসহ প্রত্যেক জন পাপ করে চলে," তাহলে ৩ অধ্যায়ের বিবৃতিগুলির কোন মানেই হয় না।
প্রসঙ্গ থেকে আমরা জানি যে ১ যোহন ১:৭ পদে পাপের জন্য একটি শুদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই শুদ্ধিকরণ তাদের জন্য যারা জ্যোতিতে চলে, যার অর্থ ঈশ্বরের আনুগত্যে থেকে সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করা। যারা এখন ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে জীবনযাপন করছে, তারা খ্রিস্টের রক্তের দ্বারা তাদের অতীতের পাপগুগুলি থেকে শুচি হয়েছে।
কিন্তু এমন কিছু লোক থাকতে পারে যারা অস্বীকার করে যে তারা পাপ করেছে এবং তাদের শুদ্ধিকরণের প্রয়োজন রয়েছে। তারাই সেই মানুষ যারা বলে তাদের কোন পাপ নেই এবং নিজেদেরকে প্রতারিত করে। তারা দাবি করছে যে তারা কখনও পাপ করেনি, অথবা তারা খ্রীষ্ট ছাড়াই তাদের পাপের সমস্যার সমাধান করেছে।
১ যোহন ১:৯ পদে আবার ক্ষমা ও শুচি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ১ যোহন ১:১০ পদে তিনি আবার বলেন যে, যারা বলে যে তারা পাপ করেনি তারা স্বয়ং ঈশ্বরের বিরোধিতা করছে।
যোহন সেই ব্যক্তিদের ভুল শোধরানোর জন্য লিখেছিলেন, যারা মনে করেনি যে, খ্রিস্টের দ্বারা প্রদত্ত শুদ্ধিকরণ ও ক্ষমার প্রয়োজন - বরং তারা মনে করেছিল যে তাদের পরিত্রাণ পাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি এই কথা বলছিলেন না যে বিশ্বাসীরাও পাপ করে চলেছে, কারণ তাহলে তিনি যে মূল বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন এবং যা এই পত্রে যে সরাসরি বিবৃতিগুলি দেওয়া হয়েছে তার পরস্পরবিরোধী হবে।
বিজয় জীবনের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি (Depravity) ও মানবিক দুর্বলতার কারণে বিজয়ী জীবন যাপন করা সবসময় সহজ নয়। এই কারণে, অনেক লোক বিশ্বাস করে যে ইচ্ছাকৃত পাপ না করে বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহে উভয় সমস্যারই উত্তর রয়েছে।
► উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি কী?
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি (Inherited Depravity) হল মানুষের নৈতিক প্রকৃতির অবক্ষয় যা জন্ম থেকেই মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করে। মন পরিবর্তনের (conversion) পর, একজন বিশ্বাসী পাপের প্রতি এই প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করে। কিন্তু ঈশ্বর কেবলমাত্র প্রতিদিন বিজয় লাভের জন্যই নয়, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি দূর করার জন্যও অনুগ্রহ প্রদান করে থাকেন (প্রেরিত ১৫:৯, ১ থিষলনীকীয় ৫:২৩, ১ যোহন ১:৭)।
পাপপূর্ণ প্রকৃতি এমন এক অবস্থা নয় যে আমাদের সমগ্র পার্থিব জীবনে এর বশীভূত থাকতে হবে। (রোমীয় ১২:১) জয়ী হওয়ার জন্য একজন বিশ্বাসীকে এমন এক পর্যায়ে আসতে হবে, যখন তিনি সম্পূর্নরুপে ঈশ্বরের কাছে তার হৃদয় সমর্পণ করেন। যখন পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীকে পরিপূর্ণ করেন, তখন তিনি বিশ্বাসীকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরকে ভালবাসতে সক্ষম করেন।
► মানবিক দুর্বলতা কী?
মানবিক দুর্বলতা (Human Weaknesses) হল শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতা বা ঘাটতি। আদমের পাপে পতিত হওয়ার কারণে এবং ক্রমাগত পাপের মাধ্যমে মানবজাতির অধঃপতনের কারণে ঈশ্বর আমাদের যে স্তরে সৃষ্টি করেছিলেন সে তুলনায় আমরা মানসিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল।
মানবিক দুর্বলতাগুলি আমাদেরকে ভুল করতে পরিচালিত করে। কোনো পরিস্থিতিতে আমরা হয়তো সঠিক কাজটি করতে পারি না। কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণী বা সাম্প্রদায়িক দল সম্বন্ধে হয়তো আমাদের ভুল ধারণা রয়েছে। একজন ব্যক্তি যখন পরিত্রাণ পান, তখন ভুল ধারণাগুলি নিজে থেকে সংশোধন হয়ে যায় না। ভুল ধারণাগুলি ভুল কাজের হয় কারণ একজন ব্যক্তি যদি তার কী করা উচিত সে সম্পর্কে ভুল করে তবে সে ভুল কাজ করবে।
দুর্বলতাগুলি হয়তো একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন কারণে তার জীবনে দ্বন্দ নিয়ে আসতে।পারে হয়তো তিনি শাস্ত্রীয় নীতিগুলি কীভাবে প্রয়োগ করতে হয় তা শেখেননি। হয়তো তিনি এমন কোনো সংযম গড়ে তোলেননি যা তাকে তার আবেগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। হয়তো তার দৈনন্দিন নিয়মানুবর্তিতা নেই যা তাকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করবে। তিনি হয়তো আত্মার বশে চলার গুরুত্ব বোঝেন না।
আমরা অবশ্যই চটজলদি অন্যদের বিচার করব না, কারণ তারা কখন ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করছে তা আমরা সবসময় জানি না। প্রায়শই লোকেরা জ্ঞানের অভাব এবং আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার অভাবে ভুল করে থাকে।
আপনার জীবনে কি কখনো এমন কোনো প্রলোভন ছিল যা আপনি মনে করেছিলেন যে অন্য কেউ কখনো অনুভব করেননি? আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে পাপের ওপর পুরোপুরি জয়ী হয়ে বেঁচে থাকা সত্যিই কী সম্ভব? ঈশ্বর সক্ষমকারী-অনুগ্রহ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন যা প্রলোভনে আমাদের দুর্বলতার চেয়ে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন:
[1]মানুষের কাছে সাধারণভাবে যেমন ঘটে থাকে, তা ছাড়া অন্য কোনো প্রলোভন তোমাদের প্রতি ঘটেনি। আর ঈশ্বর বিশ্বস্ত। তোমরা যা সহ্য করতে পারো, তার অতিরিক্ত কোনো প্রলোভনে তিনি তোমাদের পড়তে দেবেন না। কিন্তু তোমরা যখন প্রলোভিত হও, তিনিই তোমাদের রক্ষা পাওয়ার পথও করে দেবেন, যেন তার মধ্যেও তোমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারো। (১ করিন্থীয় ১০:১৩)
► এই পদটি থেকে আমরা কি কি জানতে পারি?
এই পদ আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানায়।
১। আমাদের মানবপ্রকৃতির কারণে প্রলোভন আসে। এর অর্থ হল, আপনার জীবনের লড়াই আপনার কাছে অনন্য নয়।
২। ঈশ্বর আমাদের সহ্যের সীমা জানেন। বোঝেন আমরা কতটা সহ্য করতে পারি। আমরা নিজেরা জানি না আমরা কত সহ্য করতে পারি, কিন্তু তিনি তা জানেন।
৩। ঈশ্বর আমাদের কাছে আসা প্রলোভনগুলিকে সীমিত করেন। তিনি চান যে আমরা বিজয়ী জীবনযাপন করি। এই পদ অনুসারে, সবসময় বিজয় সম্ভব।
৪। জয়ের জন্য আমাদের যা কিছু প্রয়োজন ঈশ্বর তা জোগান। তিনি পাপ এড়াবার পথ করে দেন। ঈশ্বর চান আমরা যেন জয়ী হই। তিনি বিজয়ীর জীবনযাপনের জন্য অনুগ্রহ দেন।
“ঈশ্বরের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি আমাদের বলেন, 'পবিত্রতা ব্যতিরেকে কেউ প্রভুর দর্শন পাবে না’ (ইব্রীয় ১২:১৪) পবিত্রতা আমাদের করণীয় কাজ করার বা না করার তালিকা নয়। বরং, এটি হল খ্রিষ্টসাদৃশ্যতা।“
― জিম সিমবালা
আত্মাতে জীবন
[1]► রোমীয় ৮ অধ্যায় খুলুন এবং এই বিভাগে ব্যবহৃত পদগুলো দেখুন।
রোমীয় ৮ অধ্যায়ে বিশ্বাসীর জীবনে আত্মার কাজের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। রোমীয় ৮:২৬ পদ আমাদের বলে যে, কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় তা আমরা জানি না কিন্তু পবিত্র আত্মা আমাদের মাধ্যমে প্রার্থনা করেন।
এই অধ্যায়টি আমাদের জানায় কিভাবে বিজয়ী জীবনযাপন করতে হয়। আমরা যদি মাংসের পরিবর্তে আত্মাকে অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের দণ্ডবিধান করা করা হবে না (রোমীয় ৮:১,৪)। আমরা সেই ধার্মিকতাকে পরিপূর্ণ করতে পারি যা ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে আশা করেন, কারণ আত্মার শক্তি আমাদের মধ্যে কাজ করে (রোমীয় ৮:৪)।
একজন ব্যক্তি যদি পাপপূর্ণ প্রকৃতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন, তাহলে সে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে না (রোমীয় ৮:৮), নিন্দিত হবে (রোমীয় ৮:১), এবং ঈশ্বরের দ্বারা বিচারিত হবে (রোমীয় ৮:১৩-এ "মৃত্যু") কিন্তু পবিত্র আত্মার শক্তি ও নির্দেশনার মাধ্যমে আমরা পাপ কর্মের অবসান ঘটাতে পারি (রোমীয় ৮:১৩-১৪)।
“মানুষ পবিত্রতার দিকে ধাবিত হয় না। অনুগ্রহ-চালিত প্রচেষ্টা ছাড়া, মানুষ ধার্মিকতা, প্রার্থনা, শাস্ত্রের প্রতি বাধ্যতা, বিশ্বাস এবং প্রভুতে আনন্দের দিকে আকৃষ্ট হয় না। আমরা সমঝোতার দিকে ধাবিত হই এবং একে সহনশীলতা বলি; আমরা অবাধ্যতার দিকে ধাবিত হই এবং একে স্বাধীনতা বলি; আমরা কুসংস্কারের দিকে ধাবিত হই এবং একে বিশ্বাস বলি। আমরা হারিয়ে যাওয়া আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্বিচারে লালন করি এবং এটিকে তা চিত্তবিনোদন বলি; আমরা প্রার্থনাহীনতার দিকে ঝুঁকে পড়ি এবং নিজেদেরকে এই ভেবে প্রতারিত করি যে, আমরা আইনসর্বস্বতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি; আমরা ঈশ্বরহীনতার দিকে এগিয়ে যাই এবং নিজেদের আশ্বস্ত করি যে আমরা বিমুক্ত হয়েছি”।
- ডি.এ. কারসন
খ্রীষ্টেতে জীবন
যোহন ১৫:১-১০ পদে দ্রাক্ষালতা ও শাখাগুলির একটি বিখ্যাত রূপক রয়েছে। এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়।
আমরা কিভাবে খ্রীষ্টে থাকতে পারি? "তোমরা যদি আমার আদেশ পালন করো, তাহলে আমার প্রেমে অবস্থিতি করবে" (যোহন ১৫:১০)। খ্রিস্টে অবস্থান বন্ধ করার অর্থ হবে যে একজন ব্যক্তি তাঁর বাধ্য হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে কী হবে?
কেউ যদি আমার মধ্যে না থাকে, সে সেই শাখার মতো, যেটিকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয় ও সেটি শুকিয়ে যায়। সেই শাখাগুলিকে তুলে নিয়ে আগুনে ফেলা হয় ও সেগুলি পুড়ে যায় (যোহন ১৫:৬)। কোন ব্যক্তি যদি বাধ্য হওয়া থেকে বিরত থাকে এবং এর ফলে খ্রিস্টে অবস্থান না করে, তাহলে তাকে প্রত্যাখ্যান করা হবে। শাখাগুলিকে পুড়িয়ে ফেলা হল সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের দৃষ্টান্ত।
"তোমরা আমার মধ্যে থাকলে, আমিও তোমাদের মধ্যে থাকব। নিজে থেকে কোনো শাখা ফলধারণ করতে পারে না, দ্রাক্ষালতার সঙ্গে অবশ্যই সেটিকে যুক্ত থাকতে হবে। আমার সঙ্গে যুক্ত না থাকলে, তোমরাও ফলবান হতে পারো না (যোহন ১৫:৪)। "আমার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি শাখায় ফল না ধরলে, তিনি তা কেটে ফেলেন" (যোহন ১৫:২)। আমরা যদি বাধ্যতার দ্বারা খ্রিস্টতে না থাকি তা হলে আমরা ফল উৎপন্ন করতে পারব না। ফল উৎপন্ন করার অর্থ হল এমন এক জীবনযাপন করা যা পরিবর্তিত, আশীর্বাদধন্য এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহে পরিচালিত হয়। কোন ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের অবাধ্য হয়, তা হলে সে নিজেকে ঈশ্বরের দেওয়া জীবনের প্রবাহ থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলে এবং আর ঈশ্বরের অনুগ্রহে জীবনযাপন করতে পারেন না। যে ফল দেয় না, তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
খ্রিষ্ট হলেন দ্রাক্ষালতার মতো, যা আমাদের জীবন দেয় (যোহন ১৫:৬)। পরিত্রাণের মূলে রয়েছে সম্পর্ক। খ্রীষ্ট থেকে পৃথক হওয়ার অর্থ হল পরিত্রাণ থেকে পৃথক হওয়া। ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা ও বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের সঙ্গে এক পরিত্রাণমূলক সম্পর্ক বজায় রাখি (যোহন ১৫:১০)।
লাইট বাল্ব এবং বিদ্যুৎ একই ধারণার একটি আধুনিক উদাহরণ। একটি বাল্ব আলো থাকে যখন বিদ্যুতের শক্তি এতে প্রবাহিত হয়। শক্তির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বাল্ব তার আলো দিতে পারে না। একইভাবে, খ্রিস্টের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের দ্বারা আমাদের অনন্তজীবন রয়েছে (যোহন ১৭:৩)। তার জীবন আমাদের মধ্যে প্রবাহিত হয়। আমরা যদি তাঁর কাছ থেকে নিজেদের পৃথক করে নিই, তা হলে আমরা সেই জীবন ধরে রাখতে পারবো না।
শাস্ত্রীয় সতর্কবাণী
কেউ কেউ বলে যে, লিখিত হওয়ার পর জীবন-পুস্তক থেকে কোনো নাম অপসরণ করা যায় না। কিন্তু অন্তত একটি বিষয় আছে যখন কোন নাম সরানো যেতে পারে:
আবার কেউ যদি ভাববাণীর এই পুঁথি থেকে কোনও বাক্য সরিয়ে দেয়, তাহলে ঈশ্বর এই পুঁথিতে লিখিত জীবনদায়ী গাছ থেকে ও সেই পবিত্র নগর থেকে তার অধিকারও সরিয়ে দেবেন (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৯)।
প্রকাশিত বাক্য পুস্তকের কিছু অংশ আক্ষরিকভাবে সরিয়ে ফেলার জন্য খুব কম লোকই দোষী। কিন্তু, বিষয়টা হল যে, জীবনপুস্তক থেকে কোনো নাম বাদ দেওয়া সম্ভব।
যিশু একটা প্রতিজ্ঞা ও সাবধানবাণী দিয়ে বলেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন, "যে বিজয়ী হবে, সেও তাদের মতোই সাদা পোশাক পরবে। আমি জীবনপুস্তক থেকে তার নাম কখনও মুছে ফেলব না, কিন্তু আমার পিতার ও তাঁর দূতদের সামনে তার নাম স্বীকার করব" (প্রকাশিত বাক্য ৩:৫)।
এক সময় পৌল চিন্তিত ছিলেন যে, থিষলনীকীতে তার ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা হয়তো তাদের বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে। তিনি বলেছিলেন যে যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য তার পরিশ্রম বিফলে যাবে (১ থিষলনীকীয় ৩:৫)। এটি দেখায় যে একজন বিশ্বাসীর পক্ষে তার বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণরূপে পতিত হওয়া সম্ভব যে তার আসল মনপরিবর্তন মূল্যহীন হয়ে যায়।
২ পিতর ২:১৮-২১ পদে আমরা দেখতে পাই যে এমন কিছু ভ্রান্ত-শিক্ষক রয়েছে, যারা আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্তা যিশুখ্রিস্টের জ্ঞানের মাধ্যমে জগতের কলুষতা থেকে রক্ষা পেয়েছে এমন কিছু বিশ্বাসীকে প্রতারিত করেছে। এই প্রাক্তন বিশ্বাসীরা ধার্মিকতার পথ জানত কিন্তু তারা তা পরিত্যাগ করেছিল। এই শাস্ত্রাংশটি বলে যে, পাপপূর্ণ জীবনধারায় ফিরে যাওয়ার চেয়ে বরং তাদের সঠিক পথ না জানাটা ভালো ছিল। এটি দেখায় যে একজন ব্যক্তির পক্ষে পাপে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে তার পরিত্রাণ হারানো সম্ভব। একজন ব্যক্তির পক্ষে যদি তার পরিত্রাণ হারিয়ে ফেলা সম্ভব না হতো, তা হলে একজন ব্যক্তি পরিত্রাণ পাওয়ার আগের চেয়ে আরও খারাপ হতে পারত না।
পুত্রত্ব পরিবর্তন করা যেতে পারে। আমরা একসময় শয়তানের সন্তান (যোহন ৮:৪৪) এবং ক্রোধের সন্তান (ইফিষীয় ২:২) ছিলাম, কিন্তু ঈশ্বরের দ্বারা দত্তক নেওয়ার সময় সেই পুত্রত্ব পরিবর্তিত হয়েছে (রোমীয় ৮:১৫)। অপব্যয়ী পুত্র পিতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুত্রত্বের সমস্ত সুবিধা হারিয়েছিল। তিনি যখন ফিরে এসেছিলেন, তখন তার পিতা তাকে এমন ভাবে উল্লেখ করেন যেন সে মারা গিয়েছিল (লূক ১৫:৩২)।
ঈশ্বর চান যেন বিশ্বাসীরা সুরক্ষিত বোধ করে, কিন্তু তাদের অনুভূতিকে মিথ্যা আশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নয় যা তাদের নিজেদেরকে সত্যিকারের বিপদে ফেলে দেয়। আমরা বিশ্বাসীদেরকে এমন প্রতিশ্রুতি দেব না, যা ঈশ্বর দেননি। আমরা যা-ই করি না কেন, তিনি এই প্রতিজ্ঞা করেন না যে, আমরা যাই করি না কেন আমরা আমাদের পরিত্রাণ হারানো থেকে সুরক্ষিত থাকব। তিনি আমাদের পরিচালনা করার প্রতিজ্ঞা করেন এবং পাপের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম করেন। ভয় মুক্ত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট আশ্বাস।
কখনও কখনও বিশ্বাসীরা তাদের পরিত্রাণ সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে। তারা হয়তো এই বিষয়ে নিশ্চিত যে তারা একসময় পরিত্রাণ পেয়েছিল কিন্তু তবুও মনে সন্দেহ রয়েছে যে তারা এখনও ঈশ্বরের সাথে রক্ষাকারী সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে কিনা। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের ধাঁধায় রাখে না। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যে, বিশ্বাসীরা তার পরিত্রাণ সম্বন্ধে এতটাই সুনিশ্চিত হোক যে, বিচার দিনের জন্য তার আত্মবিশ্বাস থাকবে (১ যোহন ৪:১৭), এবং সে ঈশ্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে কি না তা নিয়ে ভাবিত নয়।
কোন বিশ্বাসীর সন্দেহ থাকলে তার সেটা উপেক্ষা করা উচিত নয়, যদিও সে জানে যে একসময় পরিত্রাণ পেয়েছিল। তবুও সে বিশ্বাসে আছেন কিনা তা দেখার জন্য নিজেকে পরীক্ষা করা উপযুক্ত (২ করিন্থীয় ১৩:৫)। একজন ব্যক্তি যদি জানেন যে, পরিত্রাণের জন্য শাস্ত্রীয় পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করার মাধ্যমে তিনি পরিত্রাণ পেয়েছেন আর তিনি খ্রিস্টের সঙ্গে এক আনুগত্যের সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন, তা হলে তিনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তার আধ্যাত্মিক জীবন ঠিক রয়েছে।
ত্রুটি এড়ান: কম প্রত্যাশা
ক্লাস লিডারের জন্য নোট: ক্লাসের দুজন সদস্য এই বিভাগটি এবং পরবর্তী বিভাগটি ব্যাখ্যা করতে পারে।
দুটি কারণে পাপকে জয় করা মানুষের কাছে অসম্ভব বলে মনে হয়: মানব দুর্বলতা এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে মানবিক সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে ঈশ্বর আমাদের দোষীসাব্যস্ত করেন না। ঈশ্বর তাঁর আত্মার মাধ্যমে শক্তি দেন, যাতে আমরা তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি। দুর্বলতা থাকা পাপ নয় এবং দুর্বলতার কারণে কাউকে পাপ করতে হয় না।
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তির প্রভাব মনপরিবর্তনের পরেও অব্যাহত থাকে, কিন্তু ঈশ্বর শুচি করার জন্য অনুগ্রহ প্রদান করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি নিয়ে জন্ম নেওয়ার জন্য আমাদের দোষারোপ করা হয় না কিন্তু আমরা যদি ক্রমাগত এর দ্বারা প্রভাবিত হই, তা হলে সেটি আমাদের দোষ। তাই মানবিক দুর্বলতা অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ-প্রবৃত্তি আমাদের বিজয়ী হওয়ার আশাকে হারাতে পারে না।
খ্রিষ্টের প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা তাঁর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে শনাক্তিকৃত হয়েছি এবং আমাদের পক্ষে এর অর্থ হল, পাপে মৃত হওয়া ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে এক নতুন জীবন লাভ করা (রোমীয় ৬:৩-১১)। তিনি আমাদের মধ্যে আছেন এবং আমরা তাঁর মধ্যে আছি। খ্রিস্টীয় জীবন শুধু এই নয় যে আমরা যথাসাধ্য তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করি। খ্রিস্টীয় জীবনে খ্রিস্ট আমাদের মধ্যে বাস করেন। তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি পাপের উপর জয়লাভ করেছিলেন এবং তিনি এখনও আমাদের মধ্যে বিজয়ী হয়ে বাস করেন।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
একটি বড় শহরের রাস্তার পাশের ফুটপাথে বসে আছে অতি সাধারণ কাপড় পরিহিত একজন দরিদ্র মহিলা। তার চুল জট-পাকান ও ধুলোয় ঢাকা। তার গায়ের ত্বক অপরিচ্ছন্ন ও মলিন। সে হতাশ হয়ে বসে আছে। হঠাৎ, এক প্রচণ্ড হৈচৈ শোনা যায়। রাজ্যের মহান যুবরাজ তার সম্ভ্রান্ত লোকদের সঙ্গে নিয়ে সেই পথে আসছেন। রাজপুত্র সুদর্শন, শক্তিশালী এবং দয়ালু! দরিদ্র মহিলাটি যে জায়গায় বসেছিল সে স্থানটি অতিক্রম সময় যুবরাজ তার ড্রাইভারকে ‘বললেন, 'দাড়াও'।
গাড়ি থেমে গেলে যুবরাজ তার ভৃত্যদের বলেন, "যে মহিলাটি রাস্তার ধারে বসে আছে আমি তাকে বিয়ে করতে চাই!
এখন দৃশ্যপট বদল হচ্ছে। বিয়ের দিন আমরা প্রাসাদের দিকে তাকাই। আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? ময়লা ও অনুজ্বল চুল নিয়ে এক অপরিচ্ছন্ন মহিলা তার ছিন্ন বস্ত্র পরে এখনও বসে আছে। তার চারপাশে তার ব্যক্তিগত অনুচারীরা বিয়ের গাউন, সাবান এবং সুগন্ধি দ্রব্য ধরে রয়েছে, কিন্তু কনে তার বিয়ের দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে আগ্রহী নন। এক মহিলা জিজ্ঞাসা করেন, ‘মহোদয়া, আপনি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে চান না? নববধূ উত্তর দেয়, “তিনি যখন আমাকে দেখেছিলেন এবং আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তখন আমি এইরকমই ছিলাম। তাই আমর মনে হয় এখন আমাকে দেখতে কেমন লাগছে তাতে কিছু যায় আসে না।”
এই মনোভাব দেখে আমরা হতবাক হব। রাজপুত্র তাকে ভালবেসেছেন, তাই তিনি চান না যে সে তার পূর্বাবস্থায় থাকুক। যেহেতু আকর্ষণীয় না হলে রাজকুমার তাকে ভাল ভালবেসেছেন, তাই এখন কনে তার জন্য নিজের সেরা রূপটি দেখাতে চাইবে।
পাপী অবস্থাতেই ঈশ্বর আমাদের ভালোবেসেছেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, পাপ কোনো ব্যাপারই নয়। যেহেতু তিনি আমাদের ভালোবাসেন, তিনি আমাদের অবস্থা পরিবর্তন করতে চান। সেই ভালোবাসার কারণে, আমাদের সেই ভাবমূর্তি ও চরিত্র গ্রহণ করতে চাওয়া উচিত যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে।
বিজয়ী জীবনযাপনের জন্য ব্যবহারিক নির্দেশনা
বিশ্বজুড়ে খ্রিষ্টীয় সত্যকে কুসংস্কারের সাথে মিশ্রিত করা হচ্ছে। কেউ কেউ পুনরুক্তিময় প্রার্থনা, অনুভূতিগত অভিজ্ঞতা, মন্দ আত্মাদের তিরস্কার (যারা নির্দিষ্ট পাপের কারণ বলে মনে করা হয়), স্ব-আরোপিত ক্লেশ, নির্দিষ্ট কবজ পরা, ঘরের চারপাশে আধ্যাত্মিক চিহ্ন স্থাপন করা অথবা বিশেষ তেল দিয়ে শরীরকে অভিষিক্ত করার মাধ্যমে পাপের বিরুদ্ধে বিজয় সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। আধ্যাত্মিক জাদুর মাধ্যমে বিজয় আশা করাটা ভুল!
এছাড়া, কেউ কেউ খুব সরলভাবে পাপের বিরুদ্ধে বিজয় শেখায়। তারা বলে যে, পরিত্রাণ ও আত্মায় পূর্ণতার অভিজ্ঞতা স্থায়ীভাবে পাপের শক্তিকে নষ্ট করে দেয়। তারা আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি, নিয়মানুবর্তিতা এবং ক্রমাগত সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে ব্যর্থ হয়।
যারা জগত এবং পাপের উপর ধারাবাহিক বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের আন্তরিকভাবে নিজেদেরকে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা উচিত:
১। আমি কি সত্যিই নতুন জন্ম পেয়েছি? আমি কি আমার পুরাতন জীবনে মারা গিয়েছি, আমি কি অনুতপ্ত হয়েছি এবং তা পরিত্যাগ করেছি? আমার কি খ্রীষ্টেতে এক নতুন জীবন আছে - নতুন মনোভাব, নতুন আকাঙ্ক্ষা, ঈশ্বরের বিষয়গুলির জন্য এক নতুন ক্ষুধা (২ করিন্থীয় ৫:১৭)? খ্রিস্ট কি পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমার হৃদয়ে বাস করতে এসেছেন? আমি কি মানবিক ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে পাপকে পরাস্ত করার চেষ্টা করছি, নাকি আমি আমার মধ্যে থাকা ঈশ্বরের শক্তির ওপর নির্ভর করছি (গালাতীয় ২:২০)?
২। আমি কি আমার হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্য সঞ্চয় করছি? গীতরচক সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, "আমি তোমার বাক্য আমার হৃদয়ে লুকিয়ে রেখেছি যেন আমি তোমার বিরুদ্ধে পাপ না করি" (গীতসংহিতা ১১৯:১১)। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের গ্রহণ করিতে হবে, ঠিক যেমন একটি নবজাতক শিশু ক্ষুধার্তভাবে মাতৃদুগ্ধ পান করে (১ পিতর ২:২)।
৩। আমি কি নিজেকে সত্যিই পাপের প্রতি মৃত এবং ঈশ্বরের প্রতি জীবিত বলে মনে করি? "একইভাবে, নিজেদের তোমরা পাপের ক্ষমতার প্রতি মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যিশুতে ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিত বলে গণ্য করো" (রোমীয় ৬:১১)। আমি কি এই আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যান করছি যে, আমার ওপর এর কোনো ক্ষমতা নেই?
৪। আমি কি বিজয়ের জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করছি? প্রেরিত যোহন ঘোষণা করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি ঈশ্বরের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, সে জগৎকে জয় করে। “কারণ ঈশ্বর থেকে জাত প্রত্যেক ব্যক্তি জগৎকে জয় করে” (১ যোহন ৫:৪)। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, তিনি কখনোই যিশুর ক্রুশ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর উপর আস্থা রাখবেন না কারণ, যে জাগতিক বিষয়গুলি আমাদের আকর্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করে ত্রুশের মাধ্যমেই তারা তাদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে (গালাতীয় ৬:১৪)। আমরা যদি সমস্ত ধার্মিকতার উৎস, যিশুকে ভুলে যাই, তা হলে আমাদের পক্ষে এক ধারাবাহিক বিজয় লাভ করা অসম্ভব।
৫। আমি কি প্রতিদিন বিশ্বাসের দ্বারা প্রভু যিশুকে অনুসরণ করি এবং কোনো পাপকে অনুমোদন করি না? আমাদের খ্রিস্টীয় যাত্রাপথে আমরা যেখানেই থাকি না কেন, বিজয় কখনোই স্বয়ংক্রিয় হয় নয়। পাপের প্রতি যিশুর মনোভাব আমাকে অবশ্যই সচেতনভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে হবে। (রোমীয় ১৩:১৪. ইফিষীয় ৪:২৪)
৬। আমি কি ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরিধান করছি? জীবনের যুদ্ধের ময়দানে অনেক বিশ্বাসী শয়তানের অগ্নিময় বাণে আহত হয় কারণ তারা তাদের আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে উদাসীন (ইফিষীয় ৬:১১)।
৭। আমি কি আত্মনিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করছি? আমরা বিশ্বাসে যত পরিপক্বই হই না কেন, সবসময় আত্ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজন থাকবে। আমি কি আমার শরীরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং শৃঙ্খলার মধ্যে আনছি? প্রাকৃতিক, ঈশ্বর-দত্ত ক্ষুধা (যেমন খাবার, ঘুম বা যৌন কামনা) অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যেন তারা আমার নবজন্মপ্রাপ্ত আত্মার উদ্দেশ্য পূরণ করে। যেহেতু আমার শরীর পাপের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই এর আকাঙ্ক্ষাগুলি ভারসাম্যপূর্ণ নয়। শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া উচিত নয়, বরং শরীরকে আত্মার সেবা করতে হবে। পৌল বলেছিলেন যে, তিনি তার শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এবং তার বাধ্য করেছিলেন, যাতে তিনি আধ্যাত্মিকভাবে প্রত্যাখ্যাত না হন (১ করিন্থীয় ৯:২৫-২৭)। প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জন্য এই শাসন অত্যাবশ্যক।
৮। আমি কি বাধ্যতায় জীবনযাপন করছি? প্রেরিত যোহনের উপদেশই হল 'আলোতে চল' (১ যোহন ১:৭)। যেহেতু স্বর্গে যাওয়ার পথে অনেক ফাঁদ, হোঁচট খাওয়া পাথর এবং বিপজ্জনক স্থান রয়েছে, তাই আমাদের সর্বদা ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) এবং পবিত্র আত্মার উপস্থিতিতে (যোহন ১৪:২৬) চলতে হবে। বাধ্যতা এই প্রতিজ্ঞা বহন করে যে, যিশুর রক্ত আমাদের শুচি রাখবে। যারা আলোর পথে চলতে অস্বীকার করে, অন্ধকারের মধ্যে চলা তাদের জীবনে হোঁচট খাওয়া, পতন, এবং পরিশেষে মৃত্যু নিয়ে আসে।
বিজয়ী খ্রিষ্টীয় জীবন যাপন করা প্রত্যেক বিশ্বাসীর বিশেষ অধিকার ও কর্তব্য। বিশ্বাসীর যে জীবন তা খ্রীষ্টের সাথে তার সম্পর্কের সাথে জড়িত। যে বিশ্বাসী ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং পাপে ফিরে যায় সে বিশ্বাসকে দুর্বল করে তোলে ও সম্ভাব্যভাবে তা নষ্ট করে, যা হল ঈশ্বরের সাথে আমাদের সংযোগ। ঈশ্বর ক্ষমতাপ্রদানকারী অনুগ্রহ দেন, তাই বিশ্বাসীরা সমস্ত প্রলোভন কাটিয়ে উঠতে পারে।
৯ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
মথি ১৩:১৮-২৩
ইব্রীয় ১০:২৩-৩৯
যাকোব ১:২১-২৭
২ পিতর ১:১-১১
প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪-২২
(২) পরীক্ষা: আপনি ৯ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
৯ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) ১ যোহনের অন্যতম মুখ্য বিষয়বস্তু কি?
(২) ১ম যোহনের পত্রে বিশ্বাসীর কোন বৈশিষ্টের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে?
(৩) ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদ থেকে আমরা কোন চারটি বিষয় জানতে পারি?
(৪) কীভাবে একজন বিশ্বাসী ক্রমাগতভাবে খ্রিস্টে থাকতে পারে?
(৫) কীভাবে আমরা খ্রিস্টের সঙ্গে এক পরিত্রাণমূলক সম্পর্ক বজায় রাখি?
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.