► ২ যোহন একসঙ্গে পড়ুন। এই অধ্যায়টি মন্ডলীর মূল মতবাদগুলির গুরুত্ব সম্বন্ধে আমাদের কী বলে?
বিশ্বাসসূত্রের উৎপত্তি
বিশ্বাসসূত্র হল অপরিহার্য খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের সংক্ষিপ্তসার। প্রাচীন মণ্ডলী বাইবেলের শিক্ষাগুলির সারাংশ প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল।[1]
আথানাসিয়াস, ২৯৬-৩৭৩ খ্রিস্টাব্দ, "অন দ্য ইনকারনেশন" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যিশুর পূর্ণরূপে ঈশ্বর এবং পূর্ণ মানবতা কেন খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নিসিয় কাউন্সিলে প্রভাবশালী ছিলেন, যেখান থেকে নিসিয় বিশ্বাসসূত্রটি
(Nicene Creed) এসেছে।
► মণ্ডলীর কেন বিশ্বাসসূত্রের প্রয়োজন হয়েছিল? বাইবেল কি যথেষ্ট নয়?
সর্বদা এমন কিছু মানুষ থাকে যারা বাইবেলকে বিশ্বাস করে বলে দাবি করে কিন্তু বাইবেলের বিরোধী মতবাদগুলি শিক্ষা দেয়। মণ্ডলী বাইবেলের মতবাদের বিবৃতিগুলি গড়ে তুলেছিল যেগুলি প্রকৃত খ্রিষ্টধর্মকে মিথ্যা মতবাদগুলি থেকে পৃথক করে।
মতবাদের প্রথম বিবৃতিগুলির মধ্যে একটি ছিল, “যিশু হলেন প্রভু,” যার অর্থ হল যিশু ঈশ্বর। এ ছাড়া, প্রভু যিশু খ্রিষ্টও এই কথা বলেছিলেন যে, যিশু হলেন মশীহ (খ্রিষ্ট) এবং তিনি ঈশ্বর। যে ব্যক্তি যিশুকে প্রভু বলতে বা প্রভু যিশু খ্রিষ্ট শব্দগুলি ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিল সে বিশ্বাসী ছিল না।
পরবর্তীকালে এমন লোকেরা ছিল যারা নিজেদেরকে খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে দাবি করেছিল কিন্তু বিশ্বাস করেনি যে যিশু সত্যিকারের মানুষ ছিলেন। এই কারণেই যোহনের ১ম পত্রে আমরা বিশ্বাসসূত্রেরবিবৃতিগুলি খুঁজে পাই, “আত্মা স্বীকার করে যে যীশু খ্রীষ্ট মানবদেহে আগমন করেছেন, সে ঈশ্বর থেকে, কিন্তু যে আত্মা যীশু খ্রীষ্টকে শরীরে আগত বলে স্বীকার করে না, সে ঈশ্বর থেকে নয়।” (১ যোহন ৪:২-৩)। প্রেরিত আরও বলেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি যদি খ্রিস্টের অপরিহার্য শিক্ষাগুলিকে অস্বীকার করে তবে সে পাপ করছে এবং সে ঈশ্বরের নয় (২ যোহন ১:৯)।
সর্বপ্রথম যে বিশ্বাসসূত্র বেশ কয়েকটি বিবৃতি দেয়, তা ১ তীমথিয় ৩:১৬ পদে রয়েছে:
[ঈশ্বর] দেহ ধারণ করে প্রকাশিত হলেন, আত্মার দ্বারা নির্দোষ প্রতিপন্ন হলেন, তিনি দূতদের কাছে দেখা দিলেন, সর্বজাতির মাঝে প্রচারিত হলেন, তিনি বিশ্বাসে জগতের মাঝে গৃহীত হলেন, মহিমান্বিত হয়ে ঊর্ধ্বে উন্নীত হলেন।
[2]১ তীমথিয় পত্রে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তার পশ্চাৎপট আমরা জানি না, কিন্তু এটা যিশুর ঐশ্বরিক সত্তা ও মানবসত্তার উপর জোর দেয় যখন বলা হয় যে, ঈশ্বর দেহে প্রকাশিত হয়েছিলেন।
বিশ্বাসসূত্রের এই সংক্ষিপ্ত উক্তিগুলি একটি উদ্দেশ্য সাধন করত। প্রথম শতাব্দীর কোন খ্রিষ্টবিশ্বাসী যদি কারও সাথে মিলিত হতেন যিনি দাবি করতেন যে তিনি যিশুতে বিশ্বাস করেন, তাহলে খ্রিষ্টবিশ্বাসী জিজ্ঞাসা করতে পারতেন, "আপনি কি বিশ্বাস করেন যে যিশু ঈশ্বর?" অথবা "আপনি কি বিশ্বাস করেন যে যিশু হলেন দেহে আগমনকারী ঈশ্বর?" যদি সেই ব্যক্তি বলেন "না," তাহলে সেই খ্রিষ্টবিশ্বাসী জানতেন যে ব্যক্তিটি যিশু এবং প্রেরিতেরা যা শিক্ষা দিয়েছিলেন তা তিনি সত্যিই জানেন না বা গ্রহণ করেননি।
পঞ্চাশত্তমীর দিনের প্রথম কয়েক শতাব্দীতে, মণ্ডলী ত্রিত্ব, খ্রিষ্টের মানব দেহধারণ (incaranaiton), এবং পবিত্র আত্মার পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেছিল। তারা ভ্রান্তশিক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে খ্রিষ্টীয় শিক্ষার মান প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসী যে মৌলিক সত্যগুলি বিশ্বাস করত, সেগুলির সারাংশ করাই ছিল বিশ্বাসসূত্রের উদ্দেশ্য।
বিশ্বাসসূত্রগুলিতে প্রতিটি বিষয়কে কভার করতে সম্ভব ছিল না, তবে একজন ব্যক্তি যদি সেই প্রাথমিক বিশ্বাসসূত্রগুলির কিছু অস্বীকার করত তবে তাকে খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসাবে বিবেচনা করা হত না। তারা খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছিল।
এখানে মণ্ডলীর প্রথম দিকের তিনটি বিশ্বাসসূত্র দেওয়া হল।
[1]ছবি: S. Athanasius, Bibliothèque Sainte-Geneviève Images, https://archive. org/details/est84Respecta, পাবলিক ডোমেইন থেকে সংগৃহীত।
“অনন্তকালীন পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন যে একজন ব্যক্তি আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের মানব দেহধারণকেও সঠিকভাবে বিশ্বাস করেন। সঠিক বিশ্বাস হল এই যে আমরা বিশ্বাস করি এবং স্বীকার করি যে আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র, তিনিই ঈশ্বর এবং মানুষ।"
আথানাসিয় বিশ্বাসসূত্র
(Athanasian Creed)
প্রৈরিতিক বিশ্বাসসূত্র (Apostles’ Creed)
প্রৈরিতিক বিশ্বাসসূত্রটি প্রেরিতদের দ্বারা লিখিত হয়নি, কিন্তু প্রেরিতদের শিক্ষাগুলি প্রকাশ করার জন্য দ্বিতীয় শতাব্দীতে লিখিত হয়েছিল।
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি
যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, সর্বশক্তিমান পিতা
এবং তাঁর একমাত্র পুত্র, আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টে,
যিনি পবিত্র আত্মা দ্বারা গর্ভস্থ হইলেন,
কুমারী মরিয়ম হইতে জন্মিলেন,
পন্তীয় পীলাতের সময়ে দুঃখভোগ করিলেন,
ত্রুশবিদ্ধ হলেন, মরিলেন ও কবরস্থ হইলেন,
তৃতীয় দিবসে মৃতদের হইতে পুনরায় উঠিলেন,
স্বর্গে আরোহণ করিলেন এবং
সর্বশক্তিমান পিতা ঈশ্বরের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া আছেন,
তথা হইতে জীবিত ও মৃতদের বিচার করিতে আসিবেন।
আমি পবিত্র আত্মায়, পবিত্র সর্বজনীন মণ্ডলীতে,
সাধুদের সহভাগিতায়, পাপমোচনে, শরীরের পুনরুত্থানে
ও অনন্ত জীবনে বিশ্বাস করি। আমেন।
এটি মনে হয় যে, এই বিশ্বাসসূত্রটি উদ্দেশ্য ছিল সেই ব্যক্তিদের ত্রুটিগুলি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, যারা অস্বীকার করেছিল যে যিশু সত্যিকারের মানুষ ও এবং কুমারী গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ ছাড়া, কেউ কেউ এই বিষয়টিও অস্বীকার করেছিল যে, যিশু সত্যিই মারা গিয়েছেন অথবা তিনি শারীরিকভাবে মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন।
পবিত্র আত্মা সম্পর্কে প্রৈরিতিক বিশ্বাসসূত্রে খুব কমই বলা হয়েছে। এর কারণ এই নয় যে, মন্ডলী জানত না যে পবিত্র আত্মা কে, বরং এর কারণ ছিল যে তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে যে ভুল ধারণা রয়েছে তা তখনও মন্ডলীকে চ্যালেঞ্জ করেনি।
ক্যাথলিক"" শব্দের অর্থ "সার্বজনীন" এবং এর অর্থ হল একটি প্রকৃত মন্ডলী রয়েছে।
“পাপের ক্ষমা” বলতে বোঝায় কাজ বা আচার-অনুষ্ঠানের পরিবর্তে অনুগ্রহের মাধ্যমে পরিত্রাণ।
নিসিয় বিশ্বাসসূত্র (Nicene Creed)
৩২৫ সালে মণ্ডলী পরিষদে নিসিয় বিশ্বাসসূত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল খ্রিষ্টের ঐশ্বরিক সত্তা এবং পবিত্র আত্মার শিক্ষাগুলি রক্ষা করা। ৩৮১ সালে আরেকটি কাউন্সিলে কয়েকটি বিবৃতি যুক্ত করা হয়। এই বিশ্বাসসূত্রটি এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করে যা আগে আসেনি।
আমরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করি,
যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর,
দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল বিষয়ের সৃষ্টিকর্তা,
সর্বশক্তিমান পিতা।
এবং এক প্রভু, যিশু খ্রিষ্টে,
যিনি ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র,
সর্বযুগের পূর্বে পিতা থেকে জাত,
ঈশ্বর থেকে ঈশ্বর,
আলোক থেকে আলোক,
সত্য ঈশ্বর থেকে সত্য ঈশ্বর,
যিনি সৃষ্ট নন, কিন্তু জাত;
যাঁর ও পিতার সত্ত্বা অভিন্ন।
যাঁর দ্বারা সকল বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে।
আমাদের জন্য ও আমাদের পরিত্রাণের জন্য
তিনি স্বর্গ থেকে নেমে এলেন,
পবিত্র আত্মা ও কুমারী মরিয়মের দ্বারা তিনি দেয়াহিত হলেন,
ও মানুষ হলেন।
আমাদেরই জন্য পন্তীয় পিলাতের অধীনে তিনি ত্রুশবিদ্ধ হলেন,
তিনি দুঃখভোগ করলেন ও সমাধিস্থ হলেন।
শাস্ত্রানুসারে, তিনি তৃতীয় দিনে, পুনরুত্থিত হলেন।
তিনি স্বর্গে আরোহন করলেন
এবং পিতার দক্ষিণে বসলেন।
জীবিত ও মৃতদের বিচার করতে
তিনি সগৌরবে পুনরায় আসবেন।
তাঁর রাজ্যের কখনও শেষ হবে না।
আমরা পবিত্র আত্মায় বিশ্বাস করি,
যিনি প্রভু ও জীবনদাতা।
তিনি পিতা ও পুত্র থেকে নির্গত,
এবং তিনি পিতা ও পুত্রের সঙ্গে সমভাবে পূজিত ও গৌরবান্বিত।
তিনি ভাববাদীদের দ্বারা কথা বলেছেন।
আমরা এক পবিত্র সার্বজনীন ও পৈরিতিক মণ্ডলীতে বিশ্বাস করি।
আমরা পাপমোচনার্থে এক বাপ্তিস্ম ঘোষণা করি।
আমরা মৃতের পুনরুত্থান,
ও পরকালের জীবন আশা করি। আমেন
► এমন কিছু জিনিস কী আছে যা আপনি এই বিশ্বাসসূত্রের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন যা প্রেরিতদের বিশ্বাসসূত্রে ছিল না?
এখানে আমরা দেখতে পাই যে, ত্রিত্বের তিনটি ব্যক্তিত্বের বিবৃতি সম্প্রসারিত করা হয়েছে। যারা বিশ্বাস করে যে যিশু ঈশ্বর তবুও তাঁর ঈশ্বরত্বকে ছোট করে দেখেন তাদের বিরুদ্ধে এটি রক্ষা করার জন্য খ্রিষ্টের পূর্ণ ঈশ্বরত্বের উপর জোর দেওয়া হয়। তিনি চিরন্তন (সব যুগের আগে থেকে), সৃষ্ট নন, এবং পিতা যা কিছু নিয়ে গঠিত তা দিয়ে গঠিত। যিশুকে সেই একই কারণে ঈশ্বর বলা হবে, যে কারণে পিতাকে ঈশ্বর বলা হয়।
পবিত্র আত্মাকে পিতা ও পুত্রের মতোই উপাসনা করতে হবে, যা নিশ্চিত করে যে তিনি ঈশ্বর৷
চালসিডোনিয় বিশ্বাসসূত্র (Chalcedonian Creed)
চালসিডোনিয় বিশ্বাসসূত্র ৪৫১ সালে লেখা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল খ্রিষ্টের মানব দেহধারণ (incarnation) মতবাদটি রক্ষা করা। লেখকদের চিন্তার বিষয় ছিল খ্রিষ্টের পূর্ণ ঐশ্বরিক সত্তা এবং খ্রিষ্টের পূর্ণ মানবসত্তাকে রক্ষা করা, যাতে কোন দিক থেকেই তা লঘু বা অর্থহীন না হয়ে পড়ে।
পরিশেষে লেখকরা বলেছিলেন যে, তারা এই মতবাদগুলিকে মন্ডলীর শাস্ত্রীয় এবং পরম্পরাগত উভয় হিসেবেই বিবেচনা করেছিলেন। তারা কোন নতুন ধারণা তৈরি করছিলেন না, বরং মন্ডলী যা বিশ্বাস করত তা রক্ষা করছিলেন।
অতএব আমরা, পবিত্র ধর্মপালকদের অনুসরণ করে, সহমত হয়ে, এইকথা স্বীকার করতে শিক্ষা দিই যে, আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্ট এক এবং সমান পুত্র,
নিখুঁত ঈশ্বর নিখুঁত মানুষ;
সত্য ঈশ্বর ও সত্য মানুষ,
যিনি হেতুপূর্ণ (যুক্তিসংক্রান্ত) আত্মা ও দেহের অধিকারী;
ঈশ্বর হিসাবে পিতার সঙ্গে সমসত্তা,
ও মানুষ হিসাবে আমাদের সঙ্গে সমসত্তার অধিকারী,
সমস্ত বিষয়ে তিনি আমাদের ন্যায়, কিন্তু পাপ শূন্য।
ঈশ্বর হিসাবে সমস্ত যুগের পূর্বে তিনি পিতা থেকে জাত,
এবং মানুষ হিসাবে এই শেষ সময়ে, আমাদের জন্য এবং আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য,
ঈশ্বরের মাতা, কুমারী মরিয়মের গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন।
এক এবং সমান খ্রিষ্ট, পুত্র, প্রভু, একজাত,
যাঁর মধ্যে এই দুই প্রকৃতির অবস্থান
অমিশ্রিত, অপরিবর্তিত, অবিভক্ত ও অবিচ্ছিন্নভাবে স্বীকৃত।
এই সংযুক্তির দ্বারা প্রকৃতিদ্বয়ের মধ্যে পার্থক্য কোনও ভাবে লোপ পাওয়া নয়,
পরিবর্তে প্রত্যেকটি প্রকৃতির বৈশিষ্টসংরক্ষিত হয়েছে,
এবং এক ব্যক্তিতে ও এক সত্ত্বায় মিলিত হয়েছে,
দুই ব্যক্তির মধ্যে বিভক্ত বা পৃথকীকৃত হওয়া নয়,
কিন্তু এক ও সমান পুত্রে, এবং এক জাত,
ঈশ্বর, বাক্য, প্রভু যিশু খ্রিষ্টে মিলিত হয়েছে;
যেমন প্রথম থেকে ভাববাদীরা তাঁর সম্বন্ধে ঘোষনা করেছিলেন,
এবং প্রভু যিশু খ্রিষ্ট নিজের সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন,
এবং পবিত্র ধর্মপালকদের বিশ্বাসসূত্র আমাদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে।
► আপনি কি এমন কিছু বিষয় দেখতে পান, যেগুলির উপর এই বিশ্বাসসূত্রে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে?
এমন নয় যে খ্রিষ্টের ঈশ্বরত্ব কেবলমাত্র যিশু যখন স্বর্গে ছিলেন তখন ছিল কিন্তু পৃথিবীতে ছিল না। প্রারম্ভিক খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করতেন যে, যিশু সত্যিকার অর্থে দেহে ঈশ্বর ছিলেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর ও মানুষের সমস্ত গুণাবলির অধিকারী ছিলেন। তারা খ্রিষ্টের এই প্রকৃতিকে ত্রাণকর্তা হিসেবে তাঁর অনন্য যোগ্যতা বলে বিবেচনা করেছিল।
বর্তমানের বিশ্বাসসূত্রসমূহ
মন্ডলী শুরু হওয়ার পর বহু শতাব্দী কেটে গিয়েছে। পৃথিবী বদলে গেছে নানা ভাবে। অনেক ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে।
কিছু লোক মনে করে যে এমন কোন মতবাদ নেই যা চিরকাল একই থাকতে হবে। তারা যা চায় নির্দ্বিধায় যা খুশি বিশ্বাস করতে এবং সেই সঙ্গে নিজেদের খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে দাবি করতে।
► আমাদের কি মন্ডলীর প্রাথমিক বিশ্বাসসূত্রগুলি বিশ্বাস করা প্রয়োজন আছে?
প্রাচীন বিশ্বাসসূত্রগুলিতে বর্ণিত বাইবেলের ঈশ্বর পরিবর্তিত হন না। প্রারম্ভিক খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা জানত যে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাসের কারণে ঈশ্বর তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রকৃতি এবং পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে এই বিবৃতিগুলি শুরু থেকেই মৌলিক খ্রীষ্টধর্ম ছিল।
এই সমস্ত মতবাদ সম্বন্ধে না জেনেই অথবা সেগুলি সঠিকভাবে না বুঝে একজন ব্যক্তির পক্ষে পরিত্রাণ লাভ করা সম্ভব। সুসমাচারের জন্য সমস্ত মতবাদ প্রয়োজনীয় নয়। একজন ব্যক্তি তিনি যে সত্যকে জানেন তা অস্বীকার করতে পারেন না এবং এখনও একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী, কিন্তু তিনি হয়তো কিছু বিষয়ে ভুল করতে পারেন।
এই পাঠে প্রাচীন বিশ্বাসসূত্রগুলি কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় মতবাদগুলি সম্বন্ধে বলে। যদি কোন মণ্ডলীর ঈশ্বর সম্বন্ধে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে যা এই অপরিহার্য বিষয়গুলি থেকে আলাদা, তা হলে তাদের অবশ্যই পরিত্রাণের একটি ভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করতে হবে, যা হবে অন্য সুসমাচার। তারা যদি তা করে, তা হলে তাদের নিজেদেরকে খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলা উচিত নয় কারণ তারা এক নতুন ধর্ম উদ্ভাবন করছে।
অবশ্যই, প্রত্যেক ব্যক্তি যা চায়, তা চিন্তা করার জন্য স্বাধীন, কিন্তু তার যদি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস না থাকে তা হলে সে যিশুর প্রকৃত অনুসারী নয়।
[1]প্রথম কয়েক শতাব্দীতে আমাদের আজকের মত কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় (ডিনোমিনেশন) ছিল না। সেখানে একটি মণ্ডলী ছিল। তাই বিশ্বাসসূত্রগুলি ছিল সমগ্র মণ্ডলীর বিবৃতি। বর্তমানে, যে-মণ্ডলীগুলি বাইবেলের কর্তৃত্বকে সম্মান করে তারা ধর্মীয় বিশ্বাসসূত্রগুলিকে ধরে রাখে, যদিও তারা অন্যান্য অনেক বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে।
প্রাচীন মণ্ডলী জানত যে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা জানত যে ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মাধ্যমে তারা পরিত্রাণ পেয়েছে। এ কারণেই তাদের জন্য এটি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তারা জানে যে ঈশ্বর কেমন।
যিহূদা পত্রটি আমাদের সতর্ক করে যে আমাদের অবশ্যই সেই বিশ্বাসকে রক্ষা করতে হবে যা মূলত মণ্ডলীকে প্রদান করা হয়েছিল (যিহূদা ১:৩)। আমরা যখন বিশ্বস্তভাবে সুসমাচার প্রচারের পরিচর্যা করি, বিশ্বাসীদের শিষ্য করি এবং যাদেরকে তিনি পরিচর্যায় ডাকেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিই, তখন ঈশ্বর যেন তাঁর সত্যকে অভিষিক্ত করেন।
“কিন্তু যে কোন নতুন মতবাদই হোক না কেন, তা অবশ্যই ভ্রান্ত, কারণ পুরাতন ধর্মটিই একমাত্র সত্য; এবং কোন মতবাদই সঠিক হতে পারে না যদি না এটি একই রকম হয় যা ’শুরু থেকে’ ছিল।“
John Wesley-র “On Sin in Believers” নামক ধর্মোপদেশ থেকে গৃহীত।
ত্রুটি এড়ান: ডিনোমিনেশনগত দাম্ভিকতা
একটি সংগঠনের সাথে সংযুক্ত একগুচ্ছ মণ্ডলীকে ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ডিনোমিনেশন বলা হয়। হাজার হাজার সম্প্রদায় খ্রিস্টান বলে দাবি করে। এছাড়াও হাজার হাজার স্বাধীন মণ্ডলী আছে যেগুলো কোন ডিনোমিনেশনের সঙ্গে যুক্ত নয়।
কখনও কখনও সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে ডিনোমিনেশন শুরু হয়। যদি কোনও অঞ্চলে অনেকে পরিবর্তিত হয় এবং তাদের পরিচর্যা করার জন্য কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায় না থাকে তবে একটি নতুন ডিনোমিনেশন তৈরি হতে পারে। একটি দেশে কোন মিশন সংস্থার কাজ থেকে একটি ডিনোমিনেশন শুরু হতে পারে।
কখনও কখনও একটি ডিনোমিনেশনের উদ্ভব হয় যখন একদল বিশ্বাস করে যে তারা যে মণ্ডলী রয়েছে সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ অস্বীকার বা উপেক্ষা করা হচ্ছে। তারা মতবাদগতভাবে সঠিক হওয়ার উদ্দেশ্যে একটি নতুন সম্প্রদায় শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে তারা তাদের মতবাদগুলিকে ক্রমাগত গড়ে তোলে। যেহেতু তারা অন্যান্য খ্রিষ্টীয় গোষ্ঠী থেকে বাইবেলকে ভিন্নভাবে বোঝে, তাই তাদের কিছু মতবাদ অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন।
এছাড়া, বিভিন্ন সম্প্রদায় সঠিক উপাসনা পদ্ধতি ও বিশদ খ্রিস্টীয় জীবনযাপনের পরম্পরাগত বিধি গড়ে তোলে। সম্প্রদায়গুলি তাদের ঐতিহ্যে একে অপরের থেকে পৃথক।
অধিকাংশ খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়ই একমাত্র সত্য মণ্ডলী বলে দাবি করে না। কোন সংগঠন যদি নিজেদেরকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের সমগ্র মণ্ডলী বলে দাবি করে, তা হলে সেটি বিশ্বাস করা উচিত নয়।
অবিশ্বাসীরা প্রায়ই এর বিভাজন এবং বৈচিত্র্যের কারণে খ্রিষ্টধর্মের বিষয়ে আপত্তি তোলে। অবিশ্বাসীরা মনে করে যে খ্রিষ্টধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠী একে অপরের বিরোধী। জগতের অনেক লোক মনে করে যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের মধ্যে সামান্যই একতা রয়েছে।
একটি ডিনোমিনেশন বা স্থানীয় মণ্ডলী যা সত্যই খ্রিষ্টবিশ্বাসী তারা প্রারম্ভিক খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসসূত্রগুলি বিশ্বাস করে। এটি হল সমস্ত খ্রিষ্টীয় সংগঠনের মধ্যে বিদ্যমান মতবাদগত ঐক্য। ছোট ছোট মতবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং পরম্পরাগত বিধিগুলিতে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে, কিন্তু আমাদের বলা উচিত হবে না যে এই পার্থক্যগুলির কারণে একটি মণ্ডলী সত্যই খ্রিষ্টবিশ্বাসী নয়।
ত্রুটি এড়ান: ব্যক্তিগত প্রত্যয়ে ভুল বোঝাবুঝি
একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী যখন ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে, তখন সে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে তার বোধগম্যতা বৃদ্ধি করেন। তিনি সবসময় অন্যদের মতো একই উপসংহারে আসবেন না। তিনি যখন দৈনন্দিন জীবনে সত্য প্রয়োগ করবেন, তখন তিনি নিজের জন্য বিভিন্ন নীতি ও নিয়ম গড়ে তুলবেন, যেগুলি অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা যা করে তার চেয়ে ভিন্ন হবে।
একজন ব্যক্তি যখন তার বিশ্বাস সম্বন্ধে চিন্তা করে তখন প্রারম্ভিক খ্রিস্টধর্মের অপরিহার্য মতবাদগুলি প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে তার স্বাধীন বোধ করা উচিত নয়, যদি না সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে আর একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী নয়।
এ ছাড়া, একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর তার মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত মতবাদগুলি বিশ্বাস করতে সক্ষম হওয়া উচিত। যদি সে বিশ্বাস করে যে তার মণ্ডলীর মতবাদগুলি ভুল, তা হলে একজন সদস্য হিসেবে মণ্ডলীর প্রতি সত্যিই অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া কঠিন হবে।
একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী তার মণ্ডলীর শিক্ষাগুলোর দ্বারা পরিচালিত হবে, কিন্তু তার হয়ত ব্যক্তিগত প্রত্যয় থাকতে পারে, যা এমনকি তার মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের থেকেও ভিন্ন। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যয়ের বিষয়ে বাইবেলে সরাসরি কিছু বলা হয় নি; এটি বাইবেলের সত্যকে কোন বিষয়ে প্রয়োগ করার কারও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা।
প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর উচিত তার নিজ পরিস্থিতিতে বাইবেলের সত্যকে সৎভাবে প্রয়োগ করা, কিন্তু তার নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যদের বিচার করতে তার তৎপর হওয়া উচিত নয়। আমাদের এটি আশা করা ঠিক যে, সমস্ত খ্রিষ্টবিশ্বাসী প্রাচীন বিশ্বাসসূত্রেগুলি ধরে রাখবে, আমাদের এটিও আশা করা উপযুক্ত যে মণ্ডলীর সদস্যরা তাদের মণ্ডলীর মতবাদগুলি পালন করবে; কিন্তু একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর পক্ষে এটি আশা করা ঠিক নয় যে অন্যেরা তার সমস্ত ব্যক্তিগত বিশ্বাসের সঙ্গে একমত হবে।
► বিশ্বাসের বিবৃতিটি দুবার একসঙ্গে পড়ুন।
বিশ্বাসের বিবৃতি
শাস্ত্র আমাদেরকে খ্রিস্টধর্মের মূল মতবাদগুলিকে ধরে রাখতে ও সেগুলিকে রক্ষা করতে বলে। প্রারম্ভিক খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা সেই বিশ্বাসগুলির বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছিল যেগুলি সুসমাচার ও ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য। এই বিবৃতিগুলি এখনও অপরিহার্য খ্রীষ্টধর্মকে সংজ্ঞায়িত করে।
১৫ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
১ তীমথিয় ৩:১৬
১ তীমথিয় ৪:১-৭
তীত ১:৭-১৪
১ যোহন ৪:১-৩, ১৪-১৫; ১ যোহন ৫:১২
যিহূদা ১:৩-১৩
(২) পরীক্ষা: আপনি ১৫ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
১৫ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) বিশ্বাসসূত্র কি?
(২) যিশু সম্পর্কে প্রথম মতবাদের দুটি বিবৃতির উল্লেখ করুন।
(৩) সর্বপ্রথম যে বিশ্বাসসূত্র বেশ কয়েকটি বিবৃতি দেয়, তা শাস্ত্রের কোথায় রয়েছে?
(৪) প্রৈরিতিক বিশ্বাসসূত্রটির উদ্দেশ্য কি ছিল?
(৫) নিসিয় বিশ্বাসসূত্রটির উদ্দেশ্য কি ছিল?
(৬) চালসিডোনিয় বিশ্বাসসূত্রটির উদ্দেশ্য কি ছিল?
Print Course
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.