Lesson 3: ত্রিত্ব

(১) শিক্ষার্থী ব্যাখ্যা করতে পারবে:

• কিভাবে মহাবিশ্ব ত্রিত্বের প্রকৃতির একটি দৃষ্টান্ত।

• ত্রিত্বের মতবাদের জন্য বাইবেলের ভিত্তি।

• কেন ত্রিত্বের মতবাদ সুসমাচারের ভিত্তি।

• ত্রিত্বের মধ্যে সম্পর্কের গঠন।

• কিভাবে ত্রিত্ব মানুষের সম্পর্কের জন্য একটি উদাহরণ দেয়।

• ত্রিত্বে আমাদের বিশ্বাস আমাদের উপাসনাকে কীভাবে পরিচালনা করে

• ত্রিত্ব সম্পর্কে খ্রিষ্টবিশ্বাসের একটি বিবৃতি।

(২) শিক্ষার্থী ত্রিত্ব ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করার সময় সাধারণ ভুলগুলি এড়াবে।

► যোহন ১৪ একসাথে পড়ুন। আলোচনা করুন কিভাবে এই অনুচ্ছেদ দেখায় যে ঈশ্বর ত্রিত্ব।

বহু মানুষ ত্রিত্বের মতবাদ দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন কারণ এটি বলে যে ঈশ্বর এক অর্থে

তিন, তবুও অন্য অর্থে এক।

কিন্তু আমরা যখন মহাবিশ্বের দিকে তাকাই তখন আমরা একটিতে তিনটির আরেকটি

উদাহরণ দেখতে পাই। মহাবিশ্বের তিনটি দিক রয়েছে - স্থান, সময় এবং পদার্থ।

এই তিনটির একটি না থাকলে মহাবিশ্ব থাকবে না।

সেই তিনটির প্রত্যেকটিও তিনটি দিক নিয়ে গঠিত।

স্থান গঠিত হয় দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা নিয়ে - একের মধ্যে তিন। এই মাত্রার কোনো একটি ছাড়া, কোন স্থান হবে না।

সময় গঠিত হয় অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে - একের মধ্যে তিনটি। এই দিকগুলোর কোনো একটি ছাড়া, সময় হবে না।

পদার্থের মধ্যে রয়েছে শক্তি যা গতিশীল ঘটনা তৈরি করে – একের মধ্যে তিন। শক্তি না থাকলে কোন গতি বা ঘটনা থাকতে পারে না। কোন গতি না থাকলে, কোন শক্তি বা ঘটনা থাকবে না। যদি কোন ঘটনা না থাকে, তাহলে এটা হবে কারণ কোন শক্তি বা গতি ছিল না।

মনে করা যেতে পারে যে মহাবিশ্ব তিনটি একের আদলে তৈরি করা হয়েছে। হয়তো ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে মহাবিশ্বকে এমন একটি নকশা দিয়েছেন যা তার নিজের প্রকৃতিকে চিত্রিত করে।

বাইবেল ত্রিত্ব সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয়? এটি স্পষ্টভাবে তিনটি স্বতন্ত্র ব্যক্তির অস্তিত্বকে নিশ্চিত করে যে সকলকে মহাবিশ্বের এক ঈশ্বর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি একটি অসঙ্গতি নয় কারণ আমরা বলছি না যে ঈশ্বর একাধারে এক ব্যক্তি এবং সেই সঙ্গে তিন ব্যক্তি। আমরা এও বলছি না যে ঈশ্বর এক ঈশ্বর এবং তিন ঈশ্বর। আমরা বলছি যে ঈশ্বর মূলত এক এবং ব্যক্তিতে তিনজন। যেমন এক মহাবিশ্ব স্থান, সময় এবং পদার্থ হিসাবে বিদ্যমান, তেমনি এক ঈশ্বর পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা হিসাবে বিদ্যমান।

ভিত্তি ১: ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।

হে ইস্রায়েল, শোনো: আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, একই প্রভু ((দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪)।

আমিই ঈশ্বর, অন্য আর কেউ নয়; আমিই ঈশ্বর এবং আমার মতো আর কেউ নেই (যিশাইয় ৪৬:৯)।

ভিত্তি ২: পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা সকলেই ঈশ্বর৷

পিতা ঈশ্বর (গালাতীয় ১:১)।

বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন...সেই বাক্য দেহ ধারণ করলেন (যোহন ১:১,১৪)।

“এ কী রকম হল, শয়তান তোমার অন্তরকে এমন পূর্ণ করল যে, তুমি পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা বললে...? তুমি মানুষের কাছে নয়, কিন্তু ঈশ্বরেরই কাছে মিথ্যা বললে” (প্রেরিত ৫:৩-৪)।

ভিত্তি ৩: এই তিনটি একে অপরের সাথে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে সম্পর্কিত।

► আমরা কিভাবে জানি যে তারা তিনজন ব্যক্তি এবং ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় শুধু একজন নয়?

মার্ক ১:১০-১১-এ, যিশু বাপ্তিস্ম নিয়েছেন, পবিত্র আত্মা কপোতের মতো নেমে এসেছেন এবং স্বর্গ থেকে একটি কণ্ঠস্বর বলেছেন, “তুমি আমার পুত্র, আমি তোমাকে প্রেম করি, তোমারই উপর আমি পরম প্রসন্ন।” আমরা এখানে দেখতে পাই যে পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা একই ব্যক্তি হতে পারেন না; তারা একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন।

তাঁর পরিচর্যার শেষের দিকে, যিশু বলেছিলেন যে তিনি পিতাকে আমাদের কাছে অন্য একজন সাহায্যকারী পাঠাতে বলবেন - পবিত্র আত্মা (যোহন ১৫:২৬)। আপনি কি এই অনুরোধের সাথে জড়িত তিনজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছেন?

আপনি যদি যোহন ১৪-১৭ পড়েন, তাহলে আপনি পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মার মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে অনেক উল্লেখ খুঁজে পাবেন।

উপসংহার: বাইবেলের এক সত্য ঈশ্বর নিজেকে তিনটি স্বতন্ত্র ব্যক্তিতে বিদ্যমান হিসাবে প্রকাশ করেছেন: পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা। ঈশ্বর প্রকৃতিতে এক, কিন্তু ব্যক্তিতে তিনজন।

সুতরাং, যদিও ত্রিত্ব শব্দটি বাইবেলে ব্যবহার হয় নি, তবে ত্রিত্বের মতবাদটি স্পষ্টভাবেই শাস্ত্রীয় বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। ত্রিত্ব শব্দটি এমন একটি শব্দ যা বাইবেল এই মতবাদ সম্পর্কে যা কিছু শিক্ষা দেয় তার সংক্ষিপ্তসারে ব্যবহার আমরা করি।

বাইবেলের এই মতবাদটি প্রেরিতদের সময় থেকে মন্ডলী শিক্ষা দিয়ে

এসেছে। এখানে ডান দিকে দেওয়া রেখাচিত্রটি ত্রিত্ববাদ বর্ণনা করার জন্য মন্ডলী বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহার করে আসছে।

► একজন ব্যক্তি ত্রিত্বে বিশ্বাস করেন বা না করেন তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ত্রিত্বের মতবাদ মূল শিক্ষাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যা সুসমাচারের জন্য অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, যারা ত্রিত্বকে অস্বীকার করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ অস্বীকার করে যে যীশু ঈশ্বর। কিন্তু আপনি যে যিশুতে বিশ্বাস করেন তিনি যদি ঈশ্বর না হন, তাহলে আপনার কাছে এমন কোনো যীশু নেই যিনি আপনাকে বাঁচাতে পারেন! শুধুমাত্র এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজে নিষ্পাপ ছিলেন তিনিই সমস্ত মানুষের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পারেন। তার বলিদান সীমাহীন হতে হবে কারণ আমরা অসীম ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছি। যেহেতু যীশু নিজে ঈশ্বর, তিনি পাপহীন ও অসীম বলিদান প্রদান করেছিলেন যা সর্বকালের সমস্ত মানুষের পাপের জন্য পরিশোধ করেছে।

যদি আমরা অস্বীকার করি যে পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা স্বতন্ত্র, তাহলে আমরা ঈশ্বরকে তাঁর স্বাভাবিক ব্যক্তিসত্ত্বা বা সম্পর্কীয় বৈশিষ্ট্য অস্বীকার করি। উদাহরণ-স্বরূপ, ঈশ্বর অনন্তকাল থেকে প্রেমময় ঈশ্বর হবেন না যদি তিনি কাউকে ভালবাসার জন্য সৃষ্টি না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু ঈশ্বর যদি একাধিক ব্যক্তি হন, তাহলে এই ব্যক্তিরা একে অপরকে অনন্তকাল থেকে ভালবাসতে পারেন। এই সম্পর্কযুক্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ (যিনি আত্ম-দানে বিদ্যমান) কারণ এটি আমাদের একে অপরের সাথে এবং ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।

সম্ভবত সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল যে আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে। যারা ত্রিত্বকে অস্বীকার করে তারা সাধারণত অস্বীকার করে যে যিশু এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বর, তাই তারা তাদের উপাসনা করেন না। একজন ব্যক্তির সবচেয়ে মারাত্বক ভুলগুলির মধ্যে একটি হল হয় এমন কাউকে উপাসনা করা যিনি ঈশ্বর নন বা যিনি ঈশ্বর তাকে উপাসনা করতে ব্যর্থ হওয়া।

জন স্টটের দৈনিক ত্রিত্ববাদী প্রার্থনা

স্বর্গীয় পিতা, আমি প্রার্থনা করি যে আমি এই দিনটি আপনার উপস্থিতিতে বেঁচে থাকতে পারি এবং আপনাকে আরও বেশি করে খুশি করতে পারি।

প্রভু যিশু, আমি প্রার্থনা করি যে এই দিনে আমি আমার ক্রুশ বহন করতে পারি এবং আপনাকে অনুসরণ করতে পারি।

পবিত্র আত্মা, আমি প্রার্থনা করি যে এই দিন আপনি আমাকে নিজের মধ্যে পূর্ণ করবেন এবং আমার জীবনে আপনার ফল পরিপক্ক করবেন: প্রেম, আনন্দ, শান্তি, ধৈর্য, ​​দয়া, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, ভদ্রতা এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ।

পবিত্র, আশীর্বাদপূর্ণ, ও মহিমান্বিত ত্রিত্ব, এক ঈশ্বরে তিন ব্যক্তি, আমাকে দয়া করুন।

সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা এবং বিশ্বজগতের ধারক, আমি আপনার উপাসনা করি।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, ত্রাণকর্তা এবং বিশ্বের প্রভু, আমি আপনাকে উপাসনা করি।

পবিত্র আত্মা, ঈশ্বরের লোকদের পবিত্রকারী, আমি আপনাকে উপাসনা করি।

পিতা এবং পুত্র এবং পবিত্র আত্মার মহিমা হোক,

আদিতে যেমন ছিলেন, এখন আছেন এবং চিরকাল থাকবেন, আমেন।

পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা প্রত্যেকেই নিজস্ব ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং তারা সর্বদা একে অপরের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কে অবস্থিতি করেন। আমরা তাদের ব্যক্তি বলি কারণ তারা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকেন। তারা একে অপরকে ভালবাসেন, একে অপরকে দেন, একে অপরের সাথে কথা বলেন এবং একে অপরের জন্য বেঁচে থাকেন। এটি দেখায় যে তারা ব্যক্তি।

ত্রিত্বের কাঠামো

পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা সর্বদা সম্পর্কের কাঠামোতে বিদ্যমান। পিতা মাথা, তারপর পুত্র, তারপর আত্মা। এই তিনটি চিরন্তন এবং সমান ব্যক্তিদের একে অপরের সাথে তাদের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তাদের কর্তৃত্বের অবস্থান রয়েছে। কর্তৃত্বের এই কাঠামো পরিবার এবং মণ্ডলীতে প্রতিফলিত হয়। ত্রিত্বের সদস্যদের মতো, একটি পরিবার বা মণ্ডলীর সকল সদস্যের সমান মূল্য আছে, কিন্তু সকলের কর্তৃত্বের অবস্থান এক নয়।

পিতার সাথে পুত্রের সম্পর্ক

পিতার সাথে পুত্রের সম্পর্ক কেমন? যিশু বলেছিলেন যে পিতা তাকে পুত্র হিসাবে নিজের মধ্যে জীবন দান করেছেন, ঠিক যেমন পিতার নিজের মধ্যে জীবন রয়েছে (যোহন ৫:২৬)। সমস্ত অনন্তকাল থেকে পুত্র হলেন পিতার একমাত্র পুত্র (যোহন৩:১৬)। পুত্র অনন্তকাল ঈশ্বর হিসাবে স্ব-অস্তিত্বশীল, এবং পিতার মতো একই প্রকৃতির, তবুও তার অস্তিত্ব পিতার কাছ থেকে। অনন্তকাল ধরে, পুত্র পিতার সাথে পুত্র হিসাবে সম্পর্কযুক্ত, এবং পিতা পুত্রকে পিতা হিসাবে সম্পর্কিত করেছেন, যদিও শারীরিক অর্থে নয়।

যিশু প্রকৃতিগতভাবে পিতার সমান। তাকে পিতার মতো একই স্তরে আরাধনা ও মহিমান্বিত করতে হবে। যীশু বলেছিলেন যে সকলের উচিত যেমন তারা পিতাকে সম্মান করে তেমনই তাকে সম্মান করা (যোহন ৫:২৩)।

পিতা ও পুত্রের সাথে পবিত্র আত্মার সম্পর্ক

যোহন ১৫:২৬ পদে যিশু বলেছিলেন যে তিনি আমাদের কাছে পবিত্র আত্মা পাঠাবেন, যিনি পিতার কাছ থেকে এসেছেন। যদিও আত্মা পিতার কাছ থেকে আসেন, তবুও তিনি পিতা ও পুত্রের সমান এবং সমানভাবে সম্মানিত হবেন। মনে রাখবেন যে এই প্রক্রিয়া এবং প্রেরণ তিনজনের মধ্যে ঘটছে যারা একে অপরের সাথে প্রেমময় সম্পর্কে অবস্থিতি করছেন।

ঈশ্বরের একত্ব রক্ষা করা

ত্রিত্বের তিন ব্যক্তিকে পৃথক ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। তাদের সত্তার ঐক্যের অর্থ হল তারা একই সারবস্তু এবং তিনটি ব্যক্তি একে অপরের মধ্যে পরিব্যাপ্ত, একে অপরের মধ্যে অবস্থিতি করে এবং একে অপরের সাথে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি ভাগ করে নেয়। পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা এমনভাবে পারস্পরিক অবস্থিতির অভিজ্ঞতা লাভ করেন যা মানুষ পারেনি।

প্রতিটি মানুষ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি এবং একমাত্র সত্তা। ঈশ্বর তিন ব্যক্তি, তবুও একমাত্র সত্তা। ঈশ্বরের একত্বের বাইবেলের ধারণাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য আমরা ত্রিত্বের সদস্যদের (পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা) একে অপরের থেকে আলাদা না বলে আলাদা (ব্যক্তি) হিসাবে কথা বলি।

ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে ব্যক্তি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন - একে অপরের সাথে এবং ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সম্পর্কের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রত্যেকের মন, ইচ্ছা এবং আবেগ রয়েছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমরা অসম্পূর্ণ

ঈশ্বর আদমকে সৃষ্টি করার পর বলেছিলেন, “মানুষের একা থাকা ভালো নয়” (আদিপুস্তক ২:১৮)। তারপর তিনি হবাকে সৃষ্টি করলেন। আদম হবাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ ছিল কারণ, তাকে ছাড়া তার সাথে সম্পর্ক করার মতো অন্য মানুষ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, একটি শাস্ত্র পরামর্শ দেয় যে আদম এবং হবা একসাথে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত করেছিল: “অতএব ঈশ্বর তাঁর নিজস্ব প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করলেন,ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তিনি তাকে সৃষ্টি করলেন;পুরুষ ও স্ত্রী করে তিনি তাদের সৃষ্টি করলেন” (আদিপুস্তক ১:২৭)। আদম এবং হবার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে এমন কিছু আছে বলে মনে হয় যা আদমের নিজের তুলনায় তারা একসাথে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি প্রতিফলিত করেছে।

চিন্তা করুন এটা আমাদের কি বুঝতে সাহায্য করে। আমরা সম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে কাজ করছি না যদি না আমরা অন্যদের সাথে সম্পর্ক রাখি, ঠিক যেমন ত্রিত্বের ব্যক্তিরা। এর অর্থ এই নয় যে আমাদের বিবাহিতকে হতে হবে (স্বর্গে কেউ বিবাহিত হবে না, তবুও আমরা তখনও ব্যক্তি থাকব), তবে আমাদের অন্যদের সাথে মেলামেশা করা দরকার।

মানব সম্পর্ক ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে প্রতিফলিত করে

ঈশ্বরের প্রকৃতি এবং মন্ডলীর প্রকৃতির মধ্যে একটি চমৎকার সাদৃশ্য আছে। ঈশ্বর এবং মন্ডলী উভয়ের মধ্যেই ঐক্য ও বৈচিত্র্য রয়েছে। ১ম করিন্থীয় ১২ অনুসারে, খ্রীষ্টের দেহ হল অনেক অংশের সমন্বয়ে গঠিত একটি ঐক্য যা এক উদ্দেশ্যের জন্য একসাথে কাজ করে। আপনি দেখতে পারেন কিভাবে খ্রীষ্টের শরীর ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত করে? পৌল আশা করেছিলেন যেন মন্ডলীর বিভিন্ন সদস্যরা খ্রীষ্টে এক হিসাবে একসাথে বেড়ে ওঠে। পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যেন আমরা:

এর পরিবর্তে আমরা প্রেমে সত্য প্রকাশ করব এবং সব বিষয়ে খ্রীষ্টের মতো হয়ে উঠব, যিনি তাঁর দেহের মস্তক; আর সেই দেহ হল মণ্ডলী। তিনি সমগ্র দেহকে সুন্দরভাবে সন্নিবদ্ধ করেন। প্রতিটি অঙ্গ নিজের নিজের বিশেষ কাজ করে, যার ফলে অন্যান্য অংশ বৃদ্ধিলাভ করে। এই কারণে সমগ্র দেহ সুস্থ, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও প্রেমে পূর্ণতা লাভ করে। (ইফিষীয় ৪:১৫-১৬)

খ্রীষ্টের ঐক্যে একে অপরকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করার জন্য আমাদের সকলের উচিত নিজ নিজ বরদান ও সামর্থ ব্যবহার করা। ঈশ্বর চান যে আমরা একে অপরকে অনুগ্রহে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে তার সম্পর্কীয় প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করি। আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি ঘটে সম্প্রদায়ের মধ্যে, ঘনিষ্ঠভাবে অন্যান্য বিশ্বাসীদের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অবস্থিতিতে। এটি ঈশ্বরের সামাজিক প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে।

যদি ত্রিত্বের সদস্যরা (পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা) অনন্তকাল ধরে একে অপরের জন্য আত্ম-দানের প্রেমে বেঁচে থাকে তবে আমাদেরও অন্যদের সাথে প্রেমময় সম্পর্কের মধ্যে বসবাস করা উচিত। আমাদের সামাজিক, সম্পর্কযুক্ত প্রাণী হিসাবে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি তৈরি করা হয়েছিল, তাই আমাদের নিজেদের চেয়ে অন্যের দিকে বেশি মনোনিবেশ করা উচিত। আমাদের ব্যক্তিত্বের চেয়ে সম্প্রদায়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে তাঁর ত্রিমূর্তি প্রতিফলিত করার প্রেচেষ্টায় ঈশ্বর আমাদের আশীর্বাদ করবেন।

[1]ত্রিত্ববাদী আরাধনা স্বীকার করে যে আমরা আত্মার সাহায্যে এবং পুত্রের প্রায়শ্চিত্ত কাজের ভিত্তিতে পিতার কাছে আসি। ত্রিত্ববাদী হিসাবে, আমাদের পুত্রের মাধ্যমে পিতার কাছে আত্মায় প্রার্থনা করতে হবে।

আরাধনার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল আমাদের পারস্পরিক প্রেমের সম্পর্কে প্রবেশ করা যা ত্রিত্বের সদস্যদের একে অপরের মধ্যে রয়েছে। পিতা এবং পুত্রের মধ্যে বিদ্যমান প্রেমের কথা চিন্তা করুন। খ্রীষ্ট ক্রুশে কি করেছিলেন তা ভেবে দেখুন যাতে আমরা সেই প্রেম অনুভব করতে পারি। পিতা এবং পুত্র একে অপরের সাথে এক অপূর্ব সম্পর্কে অবস্থিতি করেন এবং পুত্রের প্রায়শ্চিত্তের কাজের কারণে, আত্মা আমাদের সেই অনুরক্ত প্রেমের সম্পর্কে অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করতে সক্ষম।

ত্রিত্ববাদী হিসাবে আমরা যে কেবল পিতার কাছে, আত্মায়, পুত্রের মাধ্যমে প্রার্থনা করি তাই নয়, আমরা পিতার কাছে, পুত্রের কাছে এবং আত্মার কাছেও প্রার্থনা করি৷ ত্রিত্বের সদস্যদের প্রত্যেককে আরাধনা এবং গৌরবান্বিত করতে হবে, কারণ তারা সকলেই ঈশ্বর এবং তাদেরকে সমানভাবে সম্মানিত হতে হবে। ত্রিত্ববাদী আরাধনা ত্রিত্বের প্রতিটি সদস্যের জন্য সমানভাবে গৌরব নিয়ে আসে, আমাদের পরিত্রাণে তারা প্রত্যেকে যে ভূমিকা পালন করে তা স্বীকার করে।

ক্লাস লিডারের জন্য নোট: ক্লাসের একজন সদস্য এই বিভাগটি ব্যাখ্যা করতে পারে।

আমরা বুঝতে পারি না কেন একটি বীজ মাটির মধ্যে জন্মায়, বা মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, বা কী শক্তি তারাদেরকে তাদের নিজ জায়গায় রাখে। বিজ্ঞানীরা কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু কেন এবং কীভাবে সেটি ঘটে তা তারা ব্যাখ্যা করতে পারেন না। একজন ব্যক্তির পক্ষে ত্রিত্বের মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা অর্থপূর্ণ নয় কারণ সে এটিকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করতে পারে না। ঈশ্বর সম্পর্কে প্রতিটি মতবাদই আমাদের ব্যাখ্যার বাইরে। উদাহরণ-স্বরূপ, কেউ ব্যাখ্যা করতে পারে না কিভাবে ঈশ্বর সর্বত্র থাকতে পারেন এবং সবকিছু জানেন। ত্রিত্বের ঘটনাগুলি অযৌক্তিক নয়, তবে সেগুলি মানুষের অভিজ্ঞতা এবং শর্তাবলীর বাইরে। সমুদ্রের একটি মাছ, যদিও সে বুদ্ধিমান হয়, তাকে বুঝিয়ে দিলেও মানুষ হতে কেমন লাগে তা সে কখনোই বুঝতে পারবে না।

ত্রিত্বের বাস্তবতা হল এক ঈশ্বর যিনি তিন ব্যক্তির মধ্যে বিরাজমান কিন্তু প্রকৃতিতে অভিন্ন এবং ঈশ্বরত্বে সমান । বহু মানুষ এটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারা প্রায়শই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হারিয়ে ফেলেন। নিচে কিছু ত্রুটির উদাহরণ দেওয়া হল।

১। ঈশ্বর আসলে একজনই ব্যক্তি যিনি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেন। এই তত্ত্বে, স্বর্গে ঈশ্বর ছিলেন পিতা, পৃথিবীতে তিনি ছিলেন যিশু, এবং এখন তিনি পবিত্র আত্মা হিসাবে আমাদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু সারা যোহন ১৪-১৬ অধ্যায়ে যীশুর কথাগুলি তাঁর সঙ্গে পিতা এবং পবিত্র আত্মার মিথস্ক্রিয়া বর্ণনা করে। তারা তিনজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি না হলে এই বর্ণনার কোনো যৌক্তিকতা থাকবে না।

২। পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা হলেন পৃথক পৃথক সত্তা। এই মতবাদ অনুযায়ী তাদের প্রকৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন পিতা হয়তো বিচার করতে চান, কিন্তু পুত্র করুণা দেখাতে চান। এই ধারণাটি বাইবেলের মতবাদের বিরোধিতা করে যে একমাত্র ঈশ্বর আছেন।

৩। ত্রিত্বের একজন ব্যক্তি অন্যের তুলনায় নিকৃষ্ট। যে ব্যক্তি এই ধারণাটি বিশ্বাস করে সে পিতাকে ঈশ্বর এবং পুত্র এবং পবিত্র আত্মাকে নিকৃষ্ট সত্তা বলে মনে করেন। তিনি আত্মার ব্যক্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেন এবং পুত্রকে ভাবতে পারেন একজন বিশেষ মানুষ হিসেবে যাকে ঈশ্বর ব্যবহার করেছিলেন। এই ভ্রান্তির কারণে মানুষ পুত্রকে ও পবিত্র আত্মাকে ঈশ্বর হিসাবে আরাধনা করে না এবং একটি ভ্রান্ত সুসমাচারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

► বিশ্বাসের বিবৃতিটি কমপক্ষে দু’বার একসঙ্গে পড়ুন।

ঈশ্বর হলেন ত্রিত্ব, তিন ব্যক্তির মধ্যে এক ঈশ্বর, পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা৷ তিনটি ভূমিকায় ভিন্ন, কিন্তু প্রকৃতিতে অভিন্ন এবং ঐশ্বরিকতার গুণে সমান ও আরাধনার সমান যোগ্য।

(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।

• যোহন ১৫:২৬

• যোহন ১৭:১-৫

• ইফিষীয় ১:১৭-২৩

• কলসীয় ১:১২-১৯

• ইব্রীয় ১:১-৩, ৮

(২) পরীক্ষা: আপনি ৩ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।

(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।

(১) মহাবিশ্ব কিভাবে ঈশ্বরের প্রকৃতিকে চিত্রিত করে?

(২) বাইবেলের কোন তিনটি ভিত্তিপ্রমাণের উপর ত্রিত্বের মতবাদটি গঠিত?

(৩) ত্রিত্বের মধ্যে সম্পর্কের গঠন কি?

(৪) কীভাবে একটি পরিবার বা মণ্ডলীর গঠন ত্রিত্বের কাঠামোর সাথে তুলনীয়?

(৫) ত্রিত্ববাদী হিসাবে, আমাদের কার কাছে প্রার্থনা করা উচিত?

(৬) ত্রিত্ব সম্পর্কে তিনটি সাধারণ ভুল তত্ত্বের নাম দিন।