► যিশাইয় ৪০ অধ্যায়টি একসঙ্গে পড়ুন। এই অংশটি ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়, তা আলোচনা করুন।
► একজন ব্যক্তির ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক ধারণা রয়েছে কি না, তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ঈশ্বর কে? এই প্রশ্নের গুরুত্ব দেখিয়ে এ. ডব্লিউ. টোজার বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে মতবাদে খুব কমই ত্রুটি রয়েছে বা খ্রিষ্টীয় নীতিশাস্ত্র প্রয়োগে ব্যর্থতা রয়েছে যা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের অসম্পূর্ণ ও অবজ্ঞাজনক [অসম্মানজনক] চিন্তাভাবনার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না।“[1] যিশু কূপের কাছে শমরীয় মহিলাকে বলেছিলেন যে শমরীয়দের উপাসনার একটি সমস্যা ছিল যে তারা কাকে উপাসনা করে তা তারা জানে না। যে কোনো ব্যক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ঈশ্বর সম্পর্কে তার ধারণা। একজন ব্যক্তির ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণাই হল তার ধর্মের ভিত্তি। ঈশ্বর কেমন তা নিয়ে ভুল বোঝার চেয়ে মারাত্মক ভুল আর কিছুই হতে পারে না।
ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করার জন্য যে কোন তুলনাই অপর্যাপ্ত, কারণ তিনি অসীম এবং আমাদের নাগালের ঊর্ধ্বে। এমনকি বাইবেলও ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের কোন বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা দেয় না, যদিও সর্বত্র এটি তাঁর সত্তা ও তাঁর শক্তির বর্ণনা করে। আদিপুস্তক আমাদের জানায় যে কীভাবে ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী, গাছপালা, সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র এবং পশুপাখি এবং পরিশেষে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। শাস্ত্রের প্রথম পাঠটি খুবই স্পষ্ট: ঈশ্বর সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তাই, তিনি বিদ্যমান সমস্ত কিছু থেকে স্বতন্ত্র, কারণ তিনি তাঁর সৃষ্টির অংশ নন।
বাইবেল জুড়ে ঈশ্বর সম্বন্ধে আরও অনেক বিবৃতি রয়েছে। ঈশতত্ত্ববিদরা সতর্কতার সাথে গুলিতে বাইবেলের তথ্যগুলিকে সারসংক্ষেপ করে ঈশ্বরের গুণাবলীর তালিকা প্রস্তুত করেছেন। আমরা কখনোই আমাদের অসিদ্ধ বোধগম্যতায় এগুলো আয়ত্ত করতে পারি না। তবে ঈশ্বরের গুণাবলি নিয়ে শ্রদ্ধাপূর্ণ অধ্যয়ন করা হল এক মূল্যবান আধ্যাত্মিক অনুশীলন। তাই, আসুন আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে নীচের বিবৃতিগুলি বিবেচনা করি। এগুলি বাইবেলে নিজের সম্পর্কে তাঁর প্রকাশের উপর ভিত্তি করে লেখা, এবং সেই কারণে আমরা জানি যে এগুলি সত্য।
[1]A. W. Tozer, The Knowledge of the Holy (New York: Harper and Row, 1961), 10.
ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যসকল
আমরা এখানে যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করব, সেগুলি ঈশ্বরের গুণাবলির সম্পূর্ণ তালিকা নয় কিন্তু সেই বিষয়গুলি যা আমাদের জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
► ঈশ্বরের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি আপনি তালিকাভুক্ত করতে পারেন?
ঈশ্বর হলেন এক ব্যক্তিসত্ত্বা
এর অর্থ হল, তিনি বুদ্ধি, অনুভূতি এবং ইচ্ছাসম্পন্ন একজন বাস্তব, জীবিত ব্যক্তি।[1] তিনি প্রকৃতির নিয়মের সমষ্টি বা বিদ্যুৎ বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মতো নৈর্ব্যক্তিক শক্তি নন। তিনি সৃষ্টি করেন, কাজ করেন, জানেন, ইচ্ছা করেন, পরিকল্পনা করেন এবং কথা বলেন।
► ঈশ্বর যদি ব্যক্তিসত্ত্বা না হতেন, তা হলে আমাদের জন্য কী পার্থক্য হোত?
তিনি যে একজন ব্যক্তিসত্ত্বা, এই বিষয়টা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব করে তোলে। তিনি যদি ব্যক্তিসত্ত্বা না হতেন, তাহলে আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পারতাম না। তিনি যদি ব্যক্তিগত না হতেন তাহলে তাঁর পক্ষে খুশি হওয়া বা অসন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব হতো না।
ঈশ্বর হলেন আত্মা
“ঈশ্বর আত্মা, তাই যারা তাঁর উপাসনা করে, তাদেরকে আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করতে হবে।” (যোহন ৪:২৪)।
তিনি যে আত্মা, এই সত্যটি তাঁর সাথে আমাদের আধ্যাত্মিক যোগাযোগ এবং তাঁকে উপাসনা করার ভিত্তি জোগায়। প্রার্থনা ও উপাসনা বস্তুগত বস্তু, নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থান, নির্ধারিত কার্যক্রম অথবা কোনো বিল্ডিংয়ের ওপর নির্ভর করে না। এই বিষয়গুলি হয়তো আমাদের উপাসনায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু উপাসনা সেগুলির ওপর নির্ভর করে না।
ঈশ্বর যে আত্মা, সেই কারণে তিনি আমাদেরকে তাঁর কোনো শারীরিক প্রতিমা বা প্রতিচ্ছবি তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। (পড়ুন যাত্রাপুস্তক ২০:৪-৬) আত্মা হিসাবে, ঈশ্বর আমাদের কাছে অগোচর (১ তীমথিয় ১:১৭), কিন্তু ব্যতিক্রম হল যখন তিনি নিজে দৃশ্যমান রূপ বেছে নেন (পড়ুন আদিপুস্তক ১৮: ১; যিশাইয় ৬:১)। যেহেতু ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি সীমিত, এমনকি যখন তিনি দৃশ্যমান রূপে আবির্ভূত হন, তখন এটা বলা সত্য যে কেউ ঈশ্বরকে পুরোপুরি দেখেনি (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০; যোহন ১:১৮; যোহন ৬:৪৬)।
ঈশ্বর চিরন্তন বা অনন্ত
এমন কোন সময় ছিল না, যখন ঈশ্বরের অস্তিত্ব ছিল না এবং এমন কোনো সময় আসবে না, যখন তাঁর অস্তিত্ব থাকবে না; ঈশ্বরের কোন শুরু এবং কোন শেষ নেই। ঈশ্বর নিজেকে এই নামে প্রকাশ করেছেন, আমি যে আমিই (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪)। যোহন তাঁকে যিনি আছেন, যিনি ছিলেন এবং যিনি আসবেন, যিনি সর্বশক্তিমান হিসাবে বর্ণনা করেছেন (প্রকাশিত বাক্য ১:৮)। অনন্ত থেকে অনন্ত পর্যন্ত তিনিই ঈশ্বর (গীতসংহিতা ৯০:২)। কিছু ধর্মের কল্পকাহিনী আছে যে তাদের দেবতাদের জন্ম হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ঈশ্বর চিরন্তন।
ঈশ্বর ত্রিত্ব
বাইবেল বলে যে, একজন ঈশ্বর আছেন কিন্তু তিনজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে ঈশ্বর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঈশ্বর একজনই, কিন্তু তাঁর প্রকৃতিতে তিন ব্যক্তি রয়েছেন। যদিও ত্রিত্ব সম্বন্ধে আমরা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারি না কিন্তু এটি অযৌক্তিক নয়, কারণ আমরা বলছি না যে তিনটি এবং একটি উভয়ই একই জিনিস। একজনই ঈশ্বর, কিন্তু তিনি তিন ব্যক্তি হিসেবে বিরাজমান। যেহেতু পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা একসাথে ঈশ্বরত্বের সমস্ত গুণাবলীর অধিকারী, তাদের প্রত্যেককে যথাযথভাবে ঈশ্বর বলা যেতে পারে এবং ঈশ্বর হিসাবে উপাসনা করা যেতে পারে। (পরবর্তী পাঠে ত্রিত্ব সম্বন্ধে আরও বলা হবে।)
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান
তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে সক্ষম। "আমাদের ঈশ্বর স্বর্গে আছেন; তিনি তাঁর ইচ্ছামতোই কাজ করেন।" (গীতসংহিতা ১১৫:৩)। তাঁর পবিত্র প্রকৃতির বিপরীতে তিনি কখনও কাজ করেন না এবং তিনি যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা সর্বদা সম্পাদন করা ছাড়া তাঁর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ঈশ্বরের কাছে কোনো কিছুই কঠিন বা চ্যালেঞ্জ নয়। “আমাদের সর্বশক্তিমান, প্রভু ঈশ্বর, রাজত্ব করছেন।” (প্রকাশিত বাক্য ১৯:৬)।
[2]► ঈশ্বর যে সর্বশক্তিমান, তা জানা আমাদের জন্য কী পার্থক্য নিয়ে আসে?
এটি উৎসাহজনক, কারণ আমরা জানি যে আমাদের সংগ্রামের মাঝে তিনি "এখন আমাদের অন্তরে যিনি তাঁর সক্রিয় ক্ষমতা অনুসারে আমাদের সকল চাহিদা পূর্ণ করতে অথবা কল্পনারও অতীত কাজ করতে সমর্থ" ((ইফিষীয় ৩:২০)। এমনকি যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে হয়, তখনও আমরা জানি যে, ঈশ্বরের মহান পরিকল্পনা পূর্ণ হবে। আমরা আস্থার সঙ্গে প্রার্থনা করতে পারি যে, ঈশ্বর যেকোনো পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম।
ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান
এমন কোনও স্থান নেই যেখানে তিনি নেই, এবং এমন কিছু ঘটে না যা তিনি দেখেন না। সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “স্বর্গ আমার সিংহাসন, আর পৃথিবী আমার পা রাখার স্থান।" (যিশাইয় ৬৬:১)। তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ঈশ্বর, এবং তাঁর ক্ষমতা কোনও অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। "কেউ কি এমন কোনো গোপন স্থানে লুকাতে পারে, যেখানে আমি তাকে দেখতে পাব না?” সদাপ্রভু এই কথা বলেন। “আমি কি স্বর্গ ও মর্ত্য জুড়ে থাকি না?” (যিরমিয় ২৩:২৪)। এটি আমাদের আশ্বস্ত করে যে, ঈশ্বর আমাদের পরিস্থিতি ও সমস্যাগুলো জানেন। এটি আমাদের এও বলে যে, কেউ কখনও ঈশ্বরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে না বা পাপ করতে পারে না যা তিনি দেখতে পান না। সমস্ত জিনিস তাঁর চোখের সামনে নগ্ন এবং উন্মুক্ত। (পড়ুন ইব্রীয় ৪:১৩)
ঈশ্বর অপরিবর্তনীয়
এমন কোন সময় ছিল না যখন তিনি ঈশ্বর হয়েছিলেন, এবং তিনি কখনও ঈশ্বর হওয়া থেকে বিরত থাকবেন না। (পড়ুন যাকোব ১:১৭)। এমন কিছু ধর্ম আছে যারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর ক্রমশ একটি বিকাশের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। কিন্তু বাইবেল আমাদের বলে যে, তাঁর সত্তা ও প্রকৃতিতে এবং তাঁর গুণাবলী / বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্যগুলিতে ঈশ্বর কখনও পরিবর্তিত হন না। (পড়ুন মালাখি ৩:৬)। তিনি সবসময় যা সঠিক তা পছন্দ করেন এবং যা ভুল তা তিনি সর্বদা ঘৃণা করেন। শাশ্বত ঈশ্বর যিনি নিজেকে মোশির কাছে "আমি" হিসাবে প্রকাশ করেছিলেন তিনি আজকেরও "আমি"। তিনি তাঁর সত্তা, জ্ঞান, শক্তি, পবিত্রতা, ন্যায়বিচার, মঙ্গল ও সত্যে অসীম, চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয়। তিনি সর্বদা একই, এবং তাঁর বছরের কোন শেষ হবে না (গীতসংহিতা ১০২:২৭)।
ঈশ্বর সর্বজ্ঞ
“তার বোধশক্তির কোনও সীমা নেই” (গীতসংহিতা ১৪৭:৫)। ঈশ্বরের জন্য শেখার কোন প্রক্রিয়া নেই, কারণ তিনি সবকিছু জানেন। ঈশ্বর কখনও কারও কাছ থেকে কিছু শেখেন নি, এবং এমন কেউ নেই যে তাকে পরামর্শ দিতে পারে (পড়ুন যিশাইয় ৪০:১৩-১৪)। ঈশ্বর ভবিষ্যত জানেন এবং তাই যা কিছু ঘটে তার জন্য তিনি কখনও অবাক বা অপ্রস্তুত হন না (গীতসংহিতা ১৩৯:৪)।
► ঈশ্বর যে সর্বজ্ঞ, তা জানা আমাদের জন্য কী পার্থক্য নিয়ে আসে?
ঈশ্বরের জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হল ঈশ্বরের প্রজ্ঞা, যা সৃষ্টিতে এবং বিশেষ করে পরিত্রাণের পরিকল্পনায় দেখানো হয়েছে। (পড়ুন গীতসংহিতা ১০৪:২৪; রোমীয় ১১:৩৩)। যেহেতু তিনি সবকিছুই জানেন এবং বোঝেন, তাই তিনি সর্বদা সঠিক কাজটি করতে জানেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা সর্বদা আমাদের জন্য সর্বোত্তম কারণ ঈশ্বর প্রতিটি পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বোঝেন এবং প্রতিটি কাজের ফলাফল কী হবে তা তিনি জানেন।
ঈশ্বর পবিত্র
ঈশ্বর নিজেকে মূলত পবিত্র বলে বর্ণনা করেছেন। ভাববাদী যিশাইয় বারংবার ঈশ্বরকে "ইস্রায়েলের পবিত্রতম" বলে উল্লেখ করেছেন। স্বর্গদূতেরা তাঁর সামনে নিরন্তর উচ্চস্বরে "পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র" বলে (প্রকাশিত বাক্য ৪:৮; যিশাইয় ৬:৩)। ঈশ্বরের পবিত্রতা ছিল উপাসনার মূল বিষয়বস্তু: “তারা তোমার মহান ও ভয়াবহ [বিস্ময়কর] নামের প্রশংসা করুক—তিনি পবিত্র” (গীতসংহিতা ৯৯:৩)। তিনি সমস্ত নৈতিক পূর্ণতার পরম মানদণ্ড। তাঁর ক্রিয়াকলাপ সমস্ত মঙ্গলের উপস্থিতি এবং সমস্ত মন্দের অনুপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত হয়, এবং কখনই এর অন্যথা হতে পারে না। ঈশ্বরের পবিত্রতা দেখায় যে, মানুষ প্রথমে অনুগ্রহে রূপান্তরিত না হয়ে সেবা ও উপাসনা করার যোগ্য হয় না। (পড়ুন যিশাইয় ৬:৫)। ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর মতো পবিত্র হই। “কিন্তু যিনি তোমাদের আহ্বান করেছেন, তিনি যেমন পবিত্র, তোমরাও তেমনই সমস্ত আচার-আচরণে পবিত্র হও। কারণ লেখা আছে, 'তোমরা পবিত্র হও, কারণ আমি পবিত্র।'” (১ পিতর ১:১৫-১৬)।
ঈশ্বর ধার্মিক
ঈশ্বরের কাজ সর্বদা সঠিক। তাঁর ক্রিয়াকলাপ তাঁর পবিত্র স্বভাব থেকে প্রবাহিত হয়। (পড়ুন দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪)। তাঁর নিজের স্বভাবই হচ্ছে সঠিকতার মানদন্ড। তিনি সর্বদা তাঁর কথা রাখেন এবং কখনও মিথ্যা বলেন না (গণনাপুস্তক ২৩:১৯; ২ শমূয়েল ৭:২৮)।
► কেন এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে ঈশ্বর ধার্মিক?
তাঁর ধার্মিকতা হল তাঁর আইনের ভিত্তি, যা তাঁর এবং অন্যদের প্রতি আমাদের কর্তব্যগুলির এক নিখুঁত মানদন্ড। তিনি ন্যায়সঙ্গতভাবে তাঁর আইন পরিচালনা করেন। যারা তা পালন করে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করেন এবং যারা তা লঙ্ঘন করে তাদেরকে শাস্তি দেন। এটি তাদের সান্ত্বনা দেয়, যারা কষ্টভোগ করছে এবং নিপীড়িত হচ্ছে, কিন্তু সেইসঙ্গে এটা আমাদের এই বিষয়েও সাবধান করে যে, কেউ কখনো অন্যায় কাজ করে রেহাই পাবে না। “সদাপ্রভুর ভয় নির্মল, চিরকাল স্থায়ী। সদাপ্রভুর আদেশ দৃঢ়, এবং পুরোপুরি ন্যায্য” (গীতসংহিতা ১৯:৯)। তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ কৃতকর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দেবেন (রোমীয় ২:৬)। "আমরা তো সকলেই ঈশ্বরের বিচারাসনের সামনে দাঁড়াব" (রোমীয় ১৪:১০)।
ঈশ্বর প্রেম
[3]এই গুণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কল্পনা করুন যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ হওয়ায় যদি তিনি আমাদের না ভালোবাসেন তবে বিষয়টি কী ভয়ঙ্কর হবে! তিনি পবিত্র ও ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও যদি আমাদেরকে না ভালবাসতেন, তা হলে কেমন হতো? তাঁর অসীম ক্ষমতা ও পবিত্রতার সাথে ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন। (পড়ুন রোমীয় ৫:৮)। ঈশ্বর সাধারণভাবে তাঁর সকল সৃষ্টিকে আশীর্বাদ করেন (আদিপুস্তক ১:২২, ২৮)। তিনি বিশেষভাবে মানবজাতিকে জীবনের উত্তম বিষয়গুলি দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং তিনি পৃথিবীকে এমন এক স্থান হিসেবে ডিজাইন করেছিলেন [4]যেখানে মানুষ আনন্দে বসবাস করতে পারে।[5] যারা তাঁকে ভালবাসে ও তাঁর সেবা করে, তাদের জন্য জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়কে তিনি আশীর্বাদে পরিণত করেন (রোমীয় ৮:২৮)। তাঁর প্রেমের কারণে তাঁর অনুগ্রহ, করুণা, ধৈর্য এবং শান্তি আমাদের আশীর্বাদ করে। (পড়ুন যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; ইফিষীয় ১:৭; ইফিষীয় ২:৪-৫)
“কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করলেন যে, তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে দান করলেন, যেন যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (যোহন ৩:১৬)। আমাদের পাপ এবং বিরুদ্ধাচরণ সত্ত্বেও, তিনি করুণার সাথে আমাদের কাছে পৌঁছান। যিশুর মাধ্যমে তাঁর কাছে আসার জন্য তিনি আমাদের আমন্ত্রণ জানান, যাঁকে তিনি আমাদের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্তের বলিদান হিসাবে প্রদান করেছেন (১ যোহন ২:২)। ক্রুশে ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর হৃদয় দেখান, যা আমাদের প্রতি ভালবাসা ও করুণায় উপচে পড়ে। "এই হল প্রেম: এমন নয় যে আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করেছি, বরং তিনি আমাদের প্রেম করেছেন এবং আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছেন।" (১ যোহন ৪:১০)। ঈশ্বর তাদের জাতিগত, সহজাত ক্ষমতা, বা পার্থিব মর্যাদার দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সকল মানুষকে ভালবাসেন এবং সকলকে ক্ষমা করেন। (পড়ুন রোমীয় ২:১১; যাকোব ২:১-৫ পড়ুন)। তাই, ঈশ্বর চান যেন আমরা সকল লোককে ভালবাসি এবং যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করে তাকে ক্ষমা করতে ইচ্ছুক থাকি। এই কারণে ঈশ্বর চান যেন আমরা সকল লোককে ভালবাসি এবং যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করে তাকে ক্ষমা করতে ইচ্ছুক থাকি। প্রেম এবং ক্ষমা ঈশ্বরের সন্তানদের চিহ্ন। (পড়ুন মথি ৫:৪৩-৪৫)।
ঈশ্বর তাঁর প্রতিমূর্তিতে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। যদিও আমরা সীমাবদ্ধ এবং তিনি অসীম, তবুও তাঁর সৃষ্টির অন্য যেকোনো কিছুর তুমনায় আমরা তাঁর মতো। তিনি আমাদের এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে আমরা তাঁকে জানতে পারি, তাঁর উপাসনা করতে পারি এবং তাঁকে ভালোবাসতে পারি। তিনি আমাদের নিজের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং অগাস্টিন যেমন আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না আমরা তাঁর মধ্যে আমাদের বিশ্রাম খুঁজে পাই ততক্ষণ আমরা কখনই বিশ্রাম পাব না। ঈশ্বরের বৈসাদৃশ্যে, পার্থিব কোন কিছুই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং একমাত্র তিনিই আমাদের সম্পূর্ণ নিষ্ঠার পাওয়ার যোগ্য। ঈশ্বর ছাড়া আর কোথাও স্থায়ী পরিতুষ্টি পাওয়া অসম্ভব। তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাঁকে উপাসনা করতে পারি, আমাদের স্বর্গীয় পিতা হিসাবে তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারি এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছা পালন করতে পারি।
[1]আদিপুস্তক ৬ :৬, যিশাইয় ৪২:২১, যিশাইয় ৪৬:১০-১১, নহূম ১:২, সফনিয় ৩:১৭, যাকোব ৫:১১, ১ পিতর ৫:৭
“এটা জেনে আমি দারুণ স্বস্তি পেয়েছি যে আমার প্রতি তাঁর ভালবাসা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবসম্মত, যার ভিত্তি হচ্ছে আমার সম্পর্কে সবচেয়ে মন্দ পূর্বজ্ঞানের উপর ভিত্তি, যাতে কোনও আবিষ্কারই তাকে আমার সম্পর্কে বিভ্রান্ত করতে না পারে, যেভাবে আমি প্রায়শই নিজের সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়ি, এবং আমাকে আশীর্বাদ করার জন্য তার দৃঢ়সংকল্পকে নিরাশ করি।“
ক্লাস লিডারের জন্য নোট: ক্লাসের একজন সদস্য এই বিভাগটি ব্যাখ্যা করতে পারে।
ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা ও অসীম কর্তৃত্ব উভয়ই আছে। বিশ্বব্রম্ভান্ডের শাসক হিসেবে তিনি যা কিছু পছন্দ করেন, তা সম্পাদন করতে সমর্থ (গীতসংহিতা ১১৫:৩; গীতসংহিতা ১৩৫:৫-৬)।
তিনি সমস্তই নিজের ইচ্ছা অনুসারে করেন, অন্য কারও অধীনস্ত হওয়ার প্রয়োজন হয় না (ইফিষীয় ১:১১)। তিনি যা কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তা অবশ্যই ঘটবে, কারণ এমন কেউ নেই যে তাকে বাধা দিতে পারে এবং এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। (পড়ুন যিশাইয় ৪৬:৯-১১)। তিনি যখনই চান পার্থিব শাসকদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেন (আদিপুস্তক ৫০:২০; প্রেরিত ৪:২৭-২৮)।
কিন্তু ঈশ্বর মানুষকে বেছে নেবার ক্ষমতা দিয়েছেন। তারা ভাল জিনিসগুলির মধ্যে বেছে নিতে পারে, অথবা ভাল ও মন্দের মধ্যেও বেছে নিতে পারে। তারা ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া অথবা তাঁর অবাধ্য হওয়া বেছে নিতে পারে। তিনি প্রথম যাদের সৃষ্টি করেছিলেন তারা পাপ করা বেছে নিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি বাছাই করেছে। তবে যদিও কেউ কেউ কিছু উত্তম বিষয় বেছে নিচ্ছে, কিন্তু সকলেই পাপ করেছে।
ঈশ্বর যদি সর্বোপরি প্রভু হন তা হলে তিনি কীভাবে এই পৃথিবীতে তাঁর ইচ্ছা সাধন করবেন, যেখানে কোটি কোটি প্রাণী তাদের নিজস্ব পছন্দগুলি বেছে নিচ্ছে?
এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা যে, তাঁর সৃষ্ট প্রাণীরা নিজেরা সত্যিসত্যিই পছন্দ করে নেয়। এর অর্থ হল, তিনি তাদের জন্য তাদের সমস্ত পছন্দগুলি করে দেবেন না। এ ছাড়া, এর অর্থ হল যে, তারা যা করে তার বাস্তব পরিণতি অবশ্যই রয়েছে; অন্যথায় তারা প্রকৃত পছন্দগুলি বেছে নেবে না। ঈশ্বর যদি কোনভাবে একজন ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপের ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করতেন যাতে সে কোন মন্দ কাজ না করতে পারে, তাহলে তিনি সেই ব্যক্তির কাছ থেকে মন্দ কাজ বেছে নেবার সম্ভাবনা নিয়ে নিতেন।
ঈশ্বরের ন্যায়বিচার হল যথার্থ ন্যায়বিচার কারণ তিনি মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্মের জন্য বিচার করবেন। (পড়ুন প্রকাশিত বাক্য ২০:১২-১৩)। ঈশ্বর যদি সমস্ত ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতেন, তাহলে তার পক্ষে মানুষকে শাস্তি ও পুরস্কার দেওয়া অর্থহীন হবে।
ঈশ্বর চান যেন মানুষ যা সঠিক তা বেছে নেয়, কিন্তু সর্বোপরি তিনি চান যেন তারা প্রকৃত ভাবে বাছাইগুলো করে। এইজন্যই পৃথিবী যেমন আছে, তেমনি আছে। ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা উত্তম বিষয় সকল, মানুষের উত্তম কাজের ফল, মন্দ মানুষের কাজের ফল এবং এমনকি মন্দ মানুষের কাজ থেকেও ঈশ্বর যে ভালো বিষয়গুলি নিয়ে আসেন, সেগুলির এক জটিল মিশ্রণ হল এই পৃথিবী।
পরিত্রাণের পরিকল্পনায় আমরা ঈশ্বরের অগ্রাধিকার দেখতে পাই। তিনি সকলকে পরিত্রাণ প্রদান করেন এবং সকলের পরিত্রাণ কামনা করেন (১ তীমথিয় ২:৩-৪)। তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা দেন কিন্তু সাড়া দেওয়ার জন্য জোর করেন না। এই কারণেই সমস্ত শাস্ত্র জুড়ে আমন্ত্রণ ও প্ররোচনাকে ব্যবহার করা হয়েছে।[1] ঈশ্বর মানুষকে বেছে নেবার সুযোগ দেন এবং তাদের কাছে এর পরিণতি সম্বন্ধে বর্ণনা করেন।
আমরা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে সুসমাচার প্রচার করি যেন প্রত্যেক ব্যক্তি পরিত্রাণ পেতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হল পবিত্র আত্মার সাথে সহযোগিতা করা যাতে মানুষকে ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করতে প্ররোচনা দেওয়া যায়। (পড়ুন ২ করিন্থীয় ৫:১১)
ঈশ্বর এক, যিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সকলের প্রভু। তিনি অনন্ত, অপরিবর্তনীয় আত্মা। তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্বত্র বিরাজমান। তিনি তাঁর চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র এবং তিনি যা কিছু করেন তাতে তিনি ধার্মিক। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে আশীর্বাদ করেন এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, তিনি ক্ষমা এবং নিজের সাথে একটি সম্পর্ক প্রস্তাব করছেন।
২ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
গীতসংহিতা ১৩৯:১-৪
হিতোপদেশ ৯:১০
যিশাইয় ৪৬
প্রকাশিত বাক্য ৪:৯-১১
(২) পরীক্ষা: আপনি ২ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
২ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) একজন ব্যক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কী?
(২) শাস্ত্রের প্রথম শিক্ষাটি কী?
(৩) প্রতিটি বিবৃতির সাথে মেলে এমন ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যের নাম লিখুন:
ঈশ্বর কেমন দেখতে তা আমরা বর্ণনা করতে পারি না।
ঈশ্বর চিরকালই আছেন।
ঈশ্বরের বুদ্ধি, অনুভূতি এবং ইচ্ছা আছে।
ঈশ্বর সর্বদা একই আছেন।
ঈশ্বর যা চান তাই করতে পারেন।
ঈশ্বর সবকিছু দেখেন।
ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন যাতে আমরা করুণা পেতে পারি।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.