► মথি ৪:১-১১ পদ একসঙ্গে পড়ুন। এই অংশটি মন্দ আত্মাদের সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?
লোকেরা যখন স্বর্গদূতদের সম্পর্কে কথা বলে, প্রায়শই প্রথম প্রশ্নটি হয়, “স্বর্গদূতদের দেখতে কেমন? অনেক শিল্পী তাদের বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন।
► স্বর্গদূতদের দেখতে কেমন?
স্বর্গদূতদের কি ডানা আছে? যিশাইয় যে সরাফদের দেখেছিলেন, তার ছয়টি ডানা ছিল (যিশাইয় ৬:২)। করূবদের যে মূর্তিটি ঈশ্বর মোশিকে নিয়ম-সিন্দুকের উপরে রাখতে বলেছিলেন তার ডানা ছিল (যাত্রাপুস্তক ২৫:২০)। যিহিষ্কেল যে করূবকে দেখেছিলেন তার চারটি ডানা ছিল (যিহিষ্কেল ১:৬, যিহিষ্কেল ১০:১৫)।
স্বর্গদূতদের ডানা থাকে কিনা তা আমরা জানি না। সাধারণত তাদের ভ্রমণের জন্য ডানার প্রয়োজন হয় না, কারণ তারা আত্মা এবং ডানা দিয়ে উড়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে তারা ভ্রমণ করে। আত্মা হিসাবে, তাদের শারীরিক দেহও থাকবে না। স্বর্গদূতদের জন্য ডানা সাধারণত অপ্রয়োজনীয়।
আমরা শিল্প-কলায় স্বর্গদূতদের নারী অথবা শিশুদের মতো দেখতে পাই, কিন্তু বাইবেল কখনো সেভাবে তাদেরকে বর্ণনা করে না। তারা পুরুষ রূপে আবির্ভূত হয়েছে, কিন্তু মানবিক অর্থে তাদের লিঙ্গ নেই। তাদের মধ্যে বিবাহ বা পারিবারিক সম্পর্ক থাকে না। (পড়ুন মথি ২২:৩০)। প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্বর্গদূতেরা সাধারণত লোকেদের কাছে অদৃশ্য থাকে, কিন্তু যখন এর জন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তখন তারা আবির্ভূত হতে পারে। কখনও কখনও যখন কোন দূতের আবির্ভাব হয়েছেন, তখন লোকেরা প্রথমে ভেবেছিল যে সে একজন সাধারণ মানুষ (আদিপুস্তক ১৯:১-২)। অন্যান্য সময়ে স্বর্গদূতেরা এমন আলোকসজ্জায় আবির্ভূত হয়েছিলেন যে লোকেরা ভয়ে মাটিতে পড়ে যায় (মথি ২৮:২-৪)। যখন একজন স্বর্গদূত কারো কাছে আবির্ভূত হতেন, তখন তিনি সাধারণত "ভয় পেও না" এই কথাটি বলে সেই ব্যক্তিকে সম্ভাষণ জানাতেন। (পড়ুন লূক ১:১৩, ৩০; লূক ২:১০)
স্বর্গদূতেরা হল আত্মা (ইব্রীয় ১:১৪),[1] কিন্তু এই কারণে আমাদের তাদের কম বাস্তব বলে মনে করা উচিত নয়। বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে, শারীরিক সমস্ত কিছুর চেয়ে আত্মাগুলো আরও বেশি শক্তিশালী। (পড়ুন যিশাইয় ৩১:১,৩)
দূতদের ঈশ্বরের পুত্র বলা হয় (ইয়োব ১:৬) এবং তাদের ঈশ্বরের প্রকৃতির কিছু অংশ আছে, কিন্তু মানুষের মতো নয়। স্বর্গদূতেরা এখন ক্ষমতা ও বুদ্ধিতে মানুষের চেয়ে অনেক উন্নত, কিন্তু মানুষ একদিন স্বর্গদূতদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে। (পড়ুন ১ করিন্থীয় ৬:৩)
আদিপুস্তকে স্বর্গদূতদের সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাদেরকে পৃথিবীর পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং যখন তারা ঈশ্বরকে এটি সৃষ্টি করতে দেখেছিল তখন তারা উৎসব উদযাপন করেছিল (ইয়োব ৩৮:৪-৭)।
স্বর্গদূতেরা কখনো মারা যায় না (লূক ২০:৩৬)। পৃথিবী সৃষ্টির আগেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এর অর্থ হল যে সমস্ত স্বর্গদূত হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে এবং তারা মানব ইতিহাসের সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।
স্বর্গদূতদের ব্যক্তিত্ব আছে। তারা কথা বলতে ও কথোপকথন করতে পারে (লূক ১:১৮-২০)। তারা ঈশ্বরের আরাধনা করে, যার অর্থ হল তারা তাঁর প্রকৃতির কিছুটা বুঝতে পারে এবং তাঁর প্রতি সম্ভ্রম সহকারে সাড়া দিতে পারে (ইব্রীয় ১:৬)। একজন পাপী যখন অনুতপ্ত হয় তখন তারা আনন্দ করে, যা দেখায় যে তাদের মধ্যে আবেগ রয়েছে। (পড়ুন লূক ১৫:১০)। তারা পরিত্রাণের পরিকল্পনাটি বোঝার জন্য গভীরভাবে আগ্রহী, যা দেখায় যে তাদের বুদ্ধিগত ক্ষমতা রয়েছে। (পড়ুন ১ পিতর ১:১২)। তারা যিশুর জন্মের ঘোষণার সময় উদযাপন করেছিল (লূক ২:১৩-১৪)।
দূতেরা সকলেই সমান নয়, কারণ সেখানে কেউ কেউ করূব (গীতসংহিতা ৮০:১) এবং সরাফ (যিশাইয় ৬:২) নামে পরিচিত। তাদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরও রয়েছে, কারণ বাইবেল স্বর্গদূতগণ ও অন্তত একজন প্রধান স্বর্গদূতের কথা বলে, এবং “শয়তান ও তার দূতদের” উল্লেখ করে (মথি ২৫:৪১)। তাদের মধ্যে একটি কর্তৃত্বের কাঠামো রয়েছে, যা সিংহাসন, আধিপত্য এবং রাজত্ব হিসাবে উল্লেখ করা হয়। (পড়ুন ইফিষীয় ৬:১২; কলসীয় ১:১৬)
ইহুদি ও খ্রিষ্টীয় উভয় পরম্পরাগত মতবাদে স্বর্গদূতদের সম্বন্ধে অনেক কিছু লেখা হয়েছে, যা আমরা শাস্ত্র থেকে যা জানি তার চেয়েও অনেক বেশি।
স্বর্গদূতদের মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে শাস্ত্রে খুব বেশি কিছু প্রকাশ করা হয়নি। বাইবেলে মাত্র দুবার প্রধান দূত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। মীখায়েলকে একজন প্রধান স্বর্গদূত বলা হয় এবং যিশুর প্রত্যাবর্তনের সময় একজন প্রধান দূতের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে (১ থিষলনীকীয় ৪:১৬; যিহূদা ১:৯)। প্রধান দূত শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “মুখ্য দূত”। আমরা জানি না ঠিক কতজন প্রধান স্বর্গদূত আছে।
সরাফদের কথা বাইবেলে কেবলমাত্র যিশাইয় ৬ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ছয়টি ডানা ছিল। ডানা ছাড়া অন্য কিছু দেখে হয়তো তাদের কিছুটা মানুষ বলে মনে হয়েছিল, কারণ তাদের হাত, পা ও মুখ ছিল।
আদম ও হবাকে অপসারিত করার পর এদন উদ্যানে করূব ও একটি জ্বলন্ত তরবারি স্থাপন করা হয়েছিল (আদিপুস্তক ৩:২৪)। এটি ছিল বাগানটিকে নাগালবহির্ভূত করে তোলা। যিহিষ্কেলে যে করূবকে দেখেছিলেন তার বর্ণনা আমাদের জানা অন্য যেকোন প্রাণীর থেকে একেবারেই আলাদা। তাদের চারটি পাখা ছিল, চারটি মুখ ছিল যা সবই আলাদা, সেই সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি হাত, আগুনের মতো দীপ্তি, বিদ্যুতের ঝলকানি এবং বিদ্যুতের গতি (যিহিষ্কেল ১:৫-১৪, যিহিষ্কেল ১০:১৫)।
নিয়ম-সিন্দুকের শেষ প্রান্তে দুটি করূবের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল, যার মাঝখানে ছিল পাপাবরণ বা করুণার স্থান।[2] ঈশ্বরকে বার বার সেই ব্যক্তি বলে অভিহিত করা হয় যিনি করূবের উপরে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত।[3] এটি তাঁকে ইস্রায়েলের ঈশ্বর হিসাবে চিহ্নিত করেছিল যাকে মন্দিরে উপাসনা করা হতো, এবং এটিও দেখায় যে তিনি যেভাবে নির্দেশ করেছিলেন তা পালন করা ছাড়া তাঁর কাছে পৌঁছানো অসম্ভব ছিল।
তাঁর যে ধরণের সেবকেরা রয়েছে তার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের শক্তি এবং মহিমা দেখা যায়। করূবরা এমন প্রাণী যাদের দেখে কোন মানুষের মনে করতে পারেন যে সে ঈশ্বরকে দেখছে, এবং তাদেরকে উপাসনা করতে প্রবৃত্ত হইতে পারে, কিন্তু তারা কেবল ঈশ্বরের সেবক মাত্র।
ঈশ্বরের সাক্ষাতে এত স্বর্গদূতদের উপস্থিত তাঁর রাজকীয়তাকে প্রকাশ করে। প্রেরিত যোহন ঈশ্বরের সিংহাসনের চারপাশে স্বর্গদূতদের এক ভিড় দেখেছিলেন যা তিনি "হাজার হাজার ও অযুত অযুত" বলে প্রকাশ করেছিলেন (প্রকাশিত বাক্য ৫:১১)।
একজন স্বর্গদূতের ক্ষমতা অসীম নয় কারণ আমরা পড়ি যে, দানিয়েলের জন্য বার্তা বহন করার সময় সংঘর্ষের কারণে একজন স্বর্গদূতের দেরি হয়েছিল। (পড়ুন দানিয়েল ১০:১২-১৩)। তা সত্ত্বেও ঈশ্বর আরোপিত কাজের জন্য তাদের যতটা প্রয়োজন তা দিতে পারেন, তিনি তাদের যে-কাজই দেন না কেন, যেমন এক সময় একজন ১,৮৫,০০০ সৈন্যকে হত্যা করেছিল (২ রাজাবলি ১৯:৩৫)।
স্পষ্টতই, স্বর্গদূতদের উপর নির্দিষ্ঠ দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাইবেল আমাদের বলে যে যারা পরিত্রাণ লাভ করেছে তাদেরকে সেবা করার জন্য স্বর্গদূতদের পাঠানো হয়েছে। (পড়ুন ইব্রীয় ১:১৪)। স্বর্গদূতেরা সেই লোকেদের ঘিরে রাখে এবং তাদের রক্ষা করে, যারা ঈশ্বরের সেবা করে (গীতসংহিতা ৩৪:৭)। আমরা অনুমান করতে পারি যে, অনেক স্বর্গদূত সব সময় আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকেন।
যিশু বলেছিলেন যে শিশুদের জন্য স্বর্গদূতদের নিযুক্ত করা হয়েছে। (পড়ুন মথি ১৮:১০)। প্রধান দূত মীখায়েলকে অধিপতি বলা হয়, যিনি ইস্রায়েল জাতিকে রক্ষা করেন (দানিয়েল ১২:১)।
বাইবেল কখনও বলে না যে আমাদের দূতেদের কাছে প্রার্থনা করতে হবে। এটিও কখন বলা হয় না যে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারা আমাদের এবং ঈশ্বরের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নয়। যারা স্বর্গদূতদের উপাসনা করে এবং আত্মার জগতের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িত হয় যা তারা সত্যিই বোঝে না, তাদের সম্পর্কে একটি সতর্কবাণী রয়েছে। (পড়ুন কলসীয় ২:১৮)। আমরা যদি এমনভাবে স্বর্গদূতদের সাথে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করি যা ঈশ্বর চান না, তাহলে ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের পরিবর্তে মন্দ আত্মারা আমাদের প্রতি সাড়া দেবে।
[1]মথি ৮:১৬, মথি ১২:৪৫; প্রেরিত ১৯:১২; এবং অন্যান্য অংশে ভূতদেরও “আত্মা” বলা হয়েছে।
[3]উদাহরণস্বরূপ, ২ রাজাবলি ১৯:১৫, ১ বংশাবলি ১৩:৬; যিশাইয় ৩৭:১৬
শয়তান ও পতিত দূতেরা
► মন্দ আত্মাদের উৎপত্তি কোথায়?
মন্দ আত্মারা হল সেই দূতেরা যারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এটি মানুষ সৃষ্টির আগে ঘটেছিল এবং বাইবেল এ বিষয়ে বেশি কিছু প্রকাশ করে না। শয়তান ছিল বিদ্রোহের নেতা, এবং দূতেদের এক তৃতীয়াংশ তাকে অনুসরণ করেছিল (প্রকাশিত বাক্য ১২:৪)। যিহূদা সেই দূতেদের সম্বন্ধে বলেন যারা তাদের প্রথম অবস্থান ত্যাগ করেছিল (যিহূদা ১:৬)। তারা ইতিমধ্যে ঈশ্বরের রায় দ্বারা দোষীসাব্যস্ত হয়েছে। (পড়ুন যোহন ১৬:১১, ২ পিতর ২:৪)
ভাববাদীদের লেখার মধ্যে দুটি অনুচ্ছেদ রয়েছে, যেগুলি সম্ভবত শয়তানের পতনকে নির্দেশ করে (যিশাইয় ১৪:১২-১৭ এবং যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৯)। প্রতিটা অনুচ্ছেদ একজন মানুষ, পার্থিব রাজা সম্বন্ধে বলে, কিন্তু তারা হয়তো রাজাদের পতনকে শয়তানের পতনের সঙ্গে তুলনা করছে।
[1]মনে হয় যে শয়তান গর্ব করেছিল এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হতে চেয়েছিল। প্রেরিত পৌল সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তি গর্বিত হতে এবং দিয়াবলের মতো একই তবে দোষে পড়তে পারে। (পড়ুন ১ তীমথিয় ৩:৬)। এই একই প্রলোভন দিয়াবল আদম ও হবাকে দিয়েছিল, যখন সে বলেছিল, "তোমরা … ঈশ্বরের মতো হয়ে যাবে।" এটি ছিল ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করা এবং নিজেকে ঈশ্বরের সমান করার প্রলোভন।
► শয়তান সম্বন্ধে আমরা কি কি জানি?
শয়তান এখনও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়। তাকে "আকাশের রাজ্যশাসক" বলা হয় (ইফিষীয় ২:২)। শয়তানকে এই জগতের শাসক বলা হয় কারণ এই জগতের লোকেরা মূলত ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে (যোহন ১২:৩১)। সে বিশ্ব সাম্রাজ্যের মালিকানা দাবি করে, যা সে যাকে চায় তাকে সাময়িকভাবে দেয় (লূক ৪:৪-৬)। সুসমাচার গ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য সে পাপীদের মন অন্ধ করে রাখে। (পড়ুন ২ করিন্থীয় ৪:৪)। পাপীরা যারা অনুতাপ করেনি তারা সত্যই তাঁর বন্দী (২ তীমথিয় ২:২৬)। সে মানুষের মন থেকে ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করা থেকে দূরে রাখে যাতে তার কোন প্রভাব না পড়ে। (পড়ুন মার্ক ৪:১৫ পড়ুন)। সে অননিয় ও সাফিরার হৃদয়ে মণ্ডলী ও পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা বলার পরিকল্পনা ঢুকিয়েছিল (প্রেরিত ৫:৩), এবং সে যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যিহূদার মধ্যে প্রবেশ করেছিল (লূক ২২:৩)। তিনি ভুল ধর্মীয় মতবাদগুলি উদ্ভাবন করে এবং মানুষকে তা শেখাতে উৎসাহিত করে। (পড়ুন ১ তীমথিয় ৪:১) পড়ুন)
শয়তান ঈশ্বরকে ঘৃণা করে এবং তাই মানুষকেও ঘৃণা করে, কারণ তারা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট এবং তারা ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ লাভ করে। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য সে তাদের প্রভাবিত করে যেন সে যে দণ্ডাজ্ঞা পেয়েছে সেই একই দণ্ডাজ্ঞার আওতায় যেন সে যত বেশি সম্ভব মানুষকে নিয়ে আসতে পারে।
যারা সচেতনভাবে শয়তানের সেবা করে তারা জগতের সবচেয়ে প্রতারিত মানুষ, কারণ তারা এমন এক বিদ্রোহের মধ্যে রয়েছে যা সফল হতে পারে না, এবং তারা এমন এক প্রভুর সেবা করছে যে তাদের ঘৃণা করে এবং শুধুমাত্র তাদের ধ্বংস করতে আগ্রহী (১ পিতর ৫:৮)। সে এমন প্রতিশ্রুতি দেয় যা সে জানে যে সে তা পূরণ করতে পারবে না (যোহন ৮:৪৪)।
অন্যেরা অবচেতনভাবে শয়তানেকে অনুসরণ করে যখন তারা পাপে বাস করা বেছে নেয় (ইফিষীয় ২:২-৩)। এই কারণেই সে প্রলোভন ও প্রতারণার জন্য অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করে (২ করিন্থীয় ৪:৪, ২ করিন্থীয় ১১:৩, ১৪)। সে চায় মানুষ যেন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে, ঈশ্বরকে উপাসনা করার পরিবর্তে সৃষ্ট বস্তুর মূর্তি তৈরি করে (রোমীয় ১:২৫)। তার প্রলোভনগুলি হল প্রতারণা, কারণ ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছেন,তার বিকৃতি ছাড়া তার কাছে সত্যিই কিছু দেওয়ার নেই। দিয়াবল কোন আনন্দ বা খুশি সৃষ্টি করেনি; ঈশ্বর সেগুলি সৃষ্টি করেছেন। দিয়াবল শুধুমাত্র অপকর্মের আনন্দ দিতে পারে, যা ঈশ্বরের ইচ্ছার বাইরে। আসলে শয়তান কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং সে কেবল ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলিকে বিকৃত করতে পারে।
কিছু মন্দ আত্মারা স্পষ্টতই নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকা বা মানুষের গোষ্ঠীতে মনোযোগ দেয়। ঠিক যেমন স্বর্গদূত মীখায়েলকে প্রধান অধিপতি বলা হয়েছিল যিনি ইস্রায়েলকে রক্ষা করেছিলেন, তেমনই মন্দ আত্মারা ছিল যাদেরকে পারস্য ও গ্রিসের অধিপতি বলা হয়েছে (দানিয়েল ১০:১৩, ২০)। কিছু আত্মা জাতিগণের দেবতা হয়ে উঠেছিল।
শয়তান উপাসনা চায়। (পড়ুন মথি ৪:৯)। মন্দ আত্মারা ভ্রান্ত ধর্মের মাধ্যমে কাজ করে। বাইবেল আমাদের বলে যে মানুষ যখন প্রতিমা পূজা করে তখন তারা মন্দদূতদের উপাসনা করে। (পড়ুন দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:১৭, ১ করিন্থীয় ১০:২০-২১)। মন্দ দূতেরা সেই মানুষদের উপাসনায় সাড়া দেয়, যারা জানে না তারা কার উপাসনা করছে। ঈশ্বরের উপাসক যেমন ঈশ্বরের মতো হয়ে ওঠে এবং পবিত্রতায় আনন্দিত হয়, তেমনি মন্দ আত্মার উপাসক আরও মন্দ হয়ে ওঠে এবং মন্দে আনন্দিত হয়। সম্ভবত সবচেয়ে মন্দ ধরনের উপাসনা ঘটেছিল যখন লোকেরা মন্দ দূতেদের কাছে তাদের নিজেদের সন্তানদের উৎসর্গ করেছিল। (পড়ুন গীতসংহিতা ১০৬:৩৭-৩৮)
শয়তান ও অন্যান্য মন্দ দূতেরা মানুষের মন ও আচরণের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। একে ‘মন্দ শক্তির দখল’ বলা হয়। কিছু মানুষ সচেতনভাবে এই ধরনের দখলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন; আবার সম্ভবত অন্যরা তারা কি করছেন তা না বুঝেই অনুমতি দিয়েছেন। কিছু মানুষ এই অবস্থায় ধাপে ধাপে চলে এই অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছেন, এই ভেবে যে তারা তাদের নিজেদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ক্ষমতা অর্জন করছেন। এমন একজন ব্যক্তি মন্দ আত্মার দাস হয়ে ওঠে, আত্মবিনাশের দিকে চালিত হয় এবং মন ও আবেগের ভয়ানক যন্ত্রণা ভোগ করে। (পড়ুন মার্ক ৫:২-৫)। একমাত্র যিশুই মানুষকে এই দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেন।
“শয়তান নিজেকে পাপীর হৃদয়, চক্ষু ও পাপীর জিহ্বার মালিক করে তোলে। তার হৃদয় সে পাপের প্রেমে পূর্ণ করে, তার চোখ সে অন্ধ করে দেয় যাতে সে তার জন্য অপেক্ষা করা অপরাধ এবং সর্বনাশ দেখতে পায় না, এবং তাঁর জিহ্বাকে প্রার্থনা থেকে বিরত রাখে।"
- অ্যাডাম ক্লার্ক –এর
Christian Theology,
“Good and Bad Angels”
ঈশ্বরের বিজয়
যে দেশগুলিতে সুসমাচার ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে সেখানে মন্দ আত্মাদের কার্যকলাপ সাধারণত ছদ্মবেশী। পরিহাসের বিষয় হল, এই ‘সভ্য’ দেশগুলির মধ্যে মানুষ সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ, অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলিকে উপহাস করে এবং আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। এই ধরণের পরিবেশে মন্দ আত্মারা প্রকাশ্যে কাজ করে না, কারণ তারা যদি সুসমাচার শুনেছে এমন লোকেদের আতঙ্কিত করে, তবে তাদের মধ্যে অনেকেই মুক্তি এবং সুরক্ষার জন্য ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাবে।
যেসব দেশে সুসমাচার খুব কম পরিচিত, সেখানে মন্দ আত্মারা প্রকাশ্যে কাজ করে। সেখানকার লোকেরা জানে না যে তারা মুক্তির জন্য খ্রিষ্টের দিকে ফিরতে পারে, তাই মন্দ দূতেরা তাদের ভয় দেখায় এবং তাদের বশীভূত করে। মানুষ স্বেচ্ছায় ও আনন্দের সঙ্গে নয়, বরং ভয়ে আত্মাদের সেবা করে। সুসমাচার নিয়ে আসে মুক্তি ও স্বাধীনতার এক চমৎকার বার্তা।
[1]শয়তানের ক্রমাগত আক্রমণের কারণে আমরা এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রয়েছি। আমাদের মনে রাখার জন্য সতর্ক করে বলা হয়েছে যে আমাদের যুদ্ধ আত্মিক জগতে, শারীরিক শত্রুর বিরুদ্ধে নয়। (পড়ুন ইফিষীয় ৬:১২ পড়ুন)। আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরিধান করতে বলা হয়েছে, যাতে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি (ইফিষীয় ৬:১৩)। আমরা বিজয়ের ব্যাপারে আস্থা রাখতে পারি, কারণ দিয়াবল আমাদের মধ্যে থাকা ঈশ্বরের শক্তিকে প্রতিরোধ করতে পারে না, এবং আমরা যখন দিয়াবলকে প্রতিরোধ করি তখন সে আমাদের কাছ থেকে পলায়ন করবে (যাকোব ৪:৭)।
► শয়তান কি ঈশ্বরের বিপরীত?
মানুষের বর্তমান, নশ্বর অবস্থার তুলনায় দিয়াবলের ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু ঈশ্বরের শক্তির সঙ্গে তার শক্তির তুলনা হয় না। তাকে ঈশ্বরের সমকক্ষ মনে করা উচিত নয়, এমন যেন সে ক্ষমতায় সমান। কিছু দার্শনিক মনে করেন যে পৃথিবীতে ভাল ও মন্দের শক্তি সমান সমান। তা সত্য থেকে বহু দূরে। শয়তান সর্বত্র উপস্থিত নেই, সে সমস্ত বিষয় জানে না এবং ভুল করে। ঈশ্বর হলেন আত্মাদের সৃষ্টিকর্তা এবং তারা তাঁকে পরাজিত করতে পারে না। মানুষের পরীক্ষাকাল শেষ হলে সমস্ত মন্দ আত্মাদের বিচার করা হবে, বন্দী করা হবে, এবং পাপী মানুষদের সঙ্গে শাস্তি দেওয়া হবে।
শয়তানের পরাজয়ের প্রতিশ্রুতি অনেক আগেই দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বর সাপের মাথা চূর্ণ করার জন্য একজন ত্রাণকর্তাকে পাঠানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন (আদিপুস্তক ৩:১৫)। যিশু শয়তানের কাজগুলিকে ধ্বংস করতে এবং পাপের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় দিতে এসেছিলেন। (পড়ুন ১ যোহন ৩:৮ পড়ুন)। যিশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে শয়তানকে মৃত্যুর উপর ক্ষমতা লাভ করতে দেন নি (ইব্রীয় ২:১৪. প্রকাশিত বাক্য ১:১৮)। শয়তান ও অন্যান্য মন্দ আত্মাদের চূড়ান্ত ও চিরন্তন নিয়তি হল অগ্নি হ্রদ।(পড়ুন মথি ২৫:৪১ পড়ুন)
শয়তান কী করতে পারে, তার উপর ঈশ্বর ইতিমধ্যেই সীমা আরোপ করেছেন (ইয়োব ১:১২, ইয়োব ২:৬)। এর অর্থ হল, শয়তান আমাদের সাথে কি করতে পারে সেই ভয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে না। ঈশ্বর অনুমতি না দিলে কিছুই ঘটতে পারে না, এবং তিনি জানেন আমরা কতটা সামলাতে পারি (১ করিন্থীয় ১০:১৩)।
আমরা শুধুমাত্র শয়তানের আক্রমণ থেকেই সুরক্ষিত নই, শয়তানের রাজ্যের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও আমাদের রয়েছে। যিশু তাঁর শিষ্যদের, কেবল প্রেরিতদের নয়, মন্দ আত্মাদের তাড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (পড়ুন লূক ১০:১৭)। আমরা যখন সুসমাচার প্রচার করি, তখন ঈশ্বর তাঁর সত্যকে শক্তি দেন এবং যারা সুসমাচারে সাড়া দেয় তাদের শয়তানের হাত থেকে উদ্ধার করেন।
“আপনি প্রতিরোধ চালিয়ে গেলে দিয়াবল আপনাদের পরাজিত করতে পারবে না। সে যতই শক্তিশালী হিক না কেন, ঈশ্বর কখনই তাকে সেই ব্যক্তিকে জয় করার অনুমতি দেন না, যিনি ক্রমাগত তার প্রতিরোধ করে চলে। কিন্তু তিনি মানুষের ইচ্ছাকে জোর করতে পারেন না।"
- অ্যাডাম ক্লার্ক –এর
Christian Theology,
“Good and Bad Angels”
ত্রুটি এড়ান: আত্মার জগতের বিষয়ে ভুল ধরনের আগ্রহ
ক্লাস লিডারের জন্য নোট: ক্লাসের একজন সদস্য এই বিভাগটি ব্যাখ্যা করতে পারে।
কিছু মানুষ আত্মার জগতের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়। তারা হয়তো দূতদের বিষয়ে অধ্যয়ন করতে শুরু করে এবং এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও চেষ্টা করে। বাইবেল আমাদের কখনই দূতেদের কাছে প্রার্থনা করতে বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে বলে না। বরং বাইবেল আমাদের সতর্ক করে যেন আমরা তাদের উপাসনা না করি বা আমরা যতটা বুঝতে পারি তার চেয়ে বেশি জানার চেষ্টা না করি (কলসীয় ২:১৮)।
যদি কোনও ব্যক্তি মন্দ আত্মাদের প্রতি বেশি আগ্রহী হন, তা হলে তা আরও বিপজ্জনক। কিছু লোক তাদের ক্ষমতা ও তারা যা করে তা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। এমন কিছু খেলা আছে যা আত্মার সাথে যোগাযোগ করে। আত্মার কাছে থেকে তথ্য পেতে মানুষ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে। ঈশ্বরের শক্তি দ্বারা তাদের প্রতিরোধ করা ছাড়া আমরা কখনই মন্দ আত্মার সাথে জড়িত হতে পারি না (যাকোব ৪:৭, ১ পিতর ৫:৮-৯)।
কিছু মানুষ আত্মার জগত এবং কীভাবে তা কাজ করে তার এক জটিল ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা তৈরি করেছেন। কিন্তু, আত্মার জগৎ সম্বন্ধে আমাদের যা কিছু জানা প্রয়োজন ঈশ্বর বাইবেলে তা প্রকাশ করেছেন।
ঈশ্বর সমস্ত আত্মা সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র দূতেরা ঈশ্বরের উপাসনা করে এবং বিশ্বাসীদের রক্ষা করে। স্বর্গদূতেরা অমর, ব্যক্তিসত্ত্বা যারা কথা বলতে, উপাসনা এবং যুক্তি দিতে পারে। তারা নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শয়তান ও অন্যান্য দূতেরা পাপ করেছিল এবং তারা ঈশ্বর ও মানবজাতির শত্রু। ঈশ্বর শয়তানের ক্ষমতাকে সীমিত করেছেন এবং তাকে অনন্ত শাস্তির জন্য দোষীসাবস্ত করেছেন।
৬ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্যাসেজ অ্যাসাইনমেন্ট: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নীচে তালিকাভুক্ত শাস্ত্রাংশগুলির একটি বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী ক্লাস সেশনের আগে আপনাকে এই শাস্ত্রাংশটি পড়তে হবে এবং সেখানে এই পাঠের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাকে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
মথি ১২:৪৩-৪৫
লূক ৮:২৭-৩৫
প্রেরিত ১২:৭-১১
২ করিন্থীয় ১১:১৩-১৫
১ পিতর ৫:৮-৯
(২) পরীক্ষা: আপনি ৬ নং পাঠটির উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাস শুরু করবেন। প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(৩) শিক্ষাদানের অ্যাসাইনমেন্ট: আপনার ক্লাসের বাইরে শিক্ষা দেওয়ার সময়সূচি এবং রিপোর্ট করার কথা ভুলবেন না।
৬ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) কীভাবে আমরা জানি যে স্বর্গদূতদের সাধারণত শারীরিক দেহ থাকে না?
(২) স্বর্গদূতদের কখন সৃষ্টি করা হয়েছিল?
(৩) স্বর্গদূতেরা কি মারা যায়?
(৪) চারটি উপায়ের নাম বলুন যাতে আমরা জানি স্বর্গদূতদের ব্যক্তিত্ব আছে।
(৫) স্বর্গদূতদের বোঝাতে বাইবেলে ব্যবহৃত চারটে শব্দের নাম লিখুন।
(৬) যারা ঈশ্বরের সেবা করে তাদের জন্য স্বর্গদূতেরা কী করে?
(৭) মন্দ আত্মাদের উৎপত্তি কোথায়?
(৮) একজন প্রতিমাপূজক প্রকৃতপক্ষে কিসের উপাসনা করেন?
(৯) শয়তান ও অন্যান্য মন্দ আত্মাদের চূড়ান্ত পরিণতি কী?
(১০) আধ্যাত্মিক আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বাসীদের অবশ্যই কী করতে হবে?
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.