(১) খ্রিষ্টীয় প্রেম এবং বিশ্বাসীর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ব্যবহারিক সম্পর্ক অন্বেষণ করবে।
(২) সেই দশটি ক্ষেত্রে জোর দেবে যেখানে বিশ্বাসীদের ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের জীবনকে শাস্ত্রীয় নীতির সাথে সমান করা উচিত।
(৩) জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শাস্ত্রীয় নীতিগুলির ব্যক্তিগত প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেন বিশ্বাসীরা আলাদা হয় সেই ব্যাপারে অন্তত দু’টি কারণ ব্যাখ্যা করবে।
(৪) জীবনধারার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নয়টি নীতির (পাঠে প্রদত্ত) সারসংক্ষেপ করবে।
এক আফ্রিকান মা, গাছের নিচে খেলা করা তার ছোটো ছেলেটিকে দেখতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে গাছ থেকে একটি বিষাক্ত সাপকে তার ছেলের মাথার ঠিক উপরেই ঝুলতে দেখে তিনি হতচকিত হয়ে যান। সাপটি ছেলেটিকে ছোবল মারার জন্য প্রস্তুত ছিল। মা জানতেন যে যদি তিনি তার ছেলেকে সতর্ক করতে যান, তাহলে সে দ্রুত সেখান থেকে সরে যাওয়ার পরিবর্তে উপরের দিকেই তাকাবে। তাই কোনোকিছু বর্ণনা না করে, তিনি তাঁর ছেলেকে ডাকেন, “বাবু, এক্ষুণি মাটিতে শুয়ে পড়ো।” ছেলেটি ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল না, কিন্তু যেহেতু তাকে বাধ্য হতে শেখানো হয়েছিল, সে মায়ের কথা মতোই কাজ করল। তারপর তার মা তাকে বলেন, “নিচু হয়েই থাকো আর আর হামাগুড়ি দিয়ে আমার কাছে চলে এসো।” আবারও, সে কথার বাধ্য হয়েছিল এবং দ্রুত সেই সাপটির থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে গিয়েছিল।
কেন ছেলেটি আদেশের কারণ না বুঝেও তা পালন করেছিল? সে তার মা’কে সম্মান করেছিল কারণ তাকে ইতিমধ্যেই বাধ্য হতে শেখানো হয়েছিল, এবং যখন সে অবাধ্য হয়েছিল, তাকে সংশোধন করা হয়েছিল। সে তার মা’কে বিশ্বাসও করেছিল, কারণ সে জানত যে তার মা তাকে ভালোবাসে। আমাদের সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া উচিত, কেবল এই কারণে নয় যে আমরা তাঁর সংশোধনকে ভয় পাই, বরং এই কারণে যে আমরা জানি তিনি আমাদের ভালোবাসেন।
ভালোবাসার প্রেরণা
► যদি কোনো ব্যক্তি ঈশ্বরকে বেশি ভালোবাসে, তাহলে তার ফলাফল কী কী হতে পারে? আপনি এই বিবৃতিটি শেষ করার মাধ্যমে প্রশ্নটি বিবেচনা করতে পারেন: “যদি আমি ঈশ্বরকে বেশি ভালোবাসতাম, তাহলে আমি...”
ঈশ্বরকে অধিক ভালোবাসার একটি ফলাফল ফিলিপীয় ১:৯-১১ পদে বর্ণনা করা হয়েছে:
এখন, আমার প্রার্থনা এই: তোমাদের ভালোবাসা যেন জ্ঞান ও গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে, যেন কোনটি উৎকৃষ্ট, তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো এবং খ্রীষ্টের পুনরাগমনের দিন পর্যন্ত পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক হয়ে থাকতে পারো; ঈশ্বরের গৌরব ও প্রশংসার জন্য তোমরা ধার্মিকতার সেই ফলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠো, যা যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
এই পদগুলি বিশ্বাসীর জীবনে একটি চলমান প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কথা বলে। তার ভালোবাসা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকা উচিত। ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসা যত বাড়তে থাকে, কোনটি শ্রেষ্ঠ তা নির্বাচন করার জন্য তার সক্ষমতা তত দৃঢ় এবং প্রসারিত হয়। যখন সে বুঝতে পারে কোনটি শ্রেষ্ঠ, তখন সে শ্রেষ্ঠটির উপরেই নিজের জীবনের দৃষ্টিকে আবদ্ধ করে। একজন বিশ্বাসীকে আন্তরিক ও অপরাধমুক্ত হওয়ার জন্য এটি অবশ্যই হতে হবে।
ঠিক যেমন একটি নবজাত শিশুর শেখার এবং বেড়ে ওঠার জন্য গোটা জীবনকাল থাকে, তেমনি আমরা, আমাদের রূপান্তরের সময়, সেই সমস্ত সত্য বুঝতে পারি না যার দ্বারা আমাদের জীবনকে পরিচালনা করা উচিত। উপরের পদগুলি, পৌল এমন ব্যক্তিদের জন্য লিখেছেন যারা ইতিমধ্যে খ্রিষ্টের অনুসারী হিসেবে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত করেছে। তবুও পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যে তারা ঈশ্বরকে আরও ভালোবাসতে থাকবে এবং সেই ভালোবাসার দ্বারা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং বাধ্য হতে সক্ষম হবে।
ঈশ্বর যেমন বিচক্ষণতা দেন তেমনভাবেই আমাদের জীবনকে ক্রমাগত উন্নত করার আশা করা উচিত। ঈশ্বর কেবল ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনে নয়, বরং আমাদের জীবনের সমস্ত দিকে আমাদের সম্পূর্ণ আনুগত্য চান।
আমাদের কখনোই এমন অনুমান করে নেওয়া উচিত নয় যে কীভাবে জীবন যাপন করতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের যা জানা দরকার তা আমরা ইতিমধ্যেই জানি। আমাদের এমন মনে করা উচিত নয় যে আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োজনীয় সবকিছুরই সমন্বয়সাধন করে ফেলেছি।
একজন বিশ্বাসীর যে যে ক্ষেত্রগুলিতে উন্নতি করা উচিত
(১) প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতা (হিতোপদেশ ২২:১, মথি ৫:১৪-১৬)
আপনি কি এমন কিছু করেন যা আপনি চান না অন্যরা করুক? আপনি যা করেন তা আপনার পাস্টারকে করতে দেখে কি আপনি হতাশ হবেন?
আপনার যা করা উচিত তা করার জন্য আপনি কি আপনার অনুভূতি এবং আকাঙ্খাগুলিকে যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করেন, না কি আপনি কখনো কখনো আপনার অনুভূতিগুলিকে আপনাকে এমনভাবে পরিচালনা করতে দেন যা একজন অবিশ্বাসীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত?
(৩) স্বাস্থ্যের যত্ন (১ করিন্থীয় ৬:১৯, ১ করিন্থীয় ১০:৩১)
ঈশ্বরের জন্য কাজ করার জন্য নিবেদিত এক অপূরণীয় হাতিয়ার হিসেবে কি আপনি আপনার দেহের যত্ন নেন? যেহেতু আপনার শরীর ঈশ্বরের, তাই এটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়। আপনি এটিকে অবহেলা করতে পারেন না।
(৪) বিনোদনের পছন্দ (কলসীয় ৩:১৭, ১ করিন্থীয় ৬:১২)
আপনার আমোদপ্রমোদ কি আপনাকে ভুল চিন্তা বা মনোভাবের কারণে প্রলোভনের সাথে লড়াই করার প্রবণতায় নিয়ে যায়? পাপকে আকর্ষণীয় বা মজা হিসেবে উপস্থাপন করে এমন সবকিছু থেকে সাবধান থাকুন।
(৫) আচার-আচরণ (রোমীয় ১৩:৯, কলসীয় ৩:১৯, ১ তিমথি ২:৮, ১ পিতর ৩:২)
অন্যদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করুন, কারণ মানুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট এবং অনন্ত ভবিতব্যের অধিকারী। মানুষের সৌজন্য দেখানোর বিভিন্ন রীতি আছে। আপনার এমনভাবে বিনয়ী হতে শেখা উচিত যাতে লোকেরা তা উপলব্ধি করতে পারে। কেউ এর যোগ্য না হলেও আপনার তার প্রতি সদয় হওয়া উচিত।
(৬) ব্যবসায়িক নৈতিকতা (হিতোপদেশ ২০:২৩)
আপনি কি সমস্ত কাজে সম্পূর্ণভাবে সৎ? আপনি কি বিষয়গুলি যেমন আছে ঠিক তেমনই বর্ণনা করেন, নাকি কাউকে এমনকিছু ভাবতে বাধ্য করেন যা সত্য নয়?
(৭) সময়ানুবর্তিতা (গালাতীয় ৫:১৪)
সময় হল একটি মূল্যবান সম্পদ যা আমাদের ঈশ্বরের জন্য ব্যবহার করা উচিত। আপনি কি সম্ভাব্য সমস্ত ক্ষেত্রে একটি সময়সূচী বজায় রাখার মাধ্যমে নিজের এবং অন্যদের সময়ের গুরুত্ব দেন?
(৮) পোশাক (১ তিমথি ২:৯, ১ পিতর ৩:৩-৪)
আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ কি এই নিম্নলিখিত মূল্যবোধগুলিকে প্রকাশ করে?
শালীনতা - যথেষ্ট পরিমাণে শরীর ঢেকে রাখা
নম্রতা - আপনি যে পোশাক পরেন, সেটির দ্বারা অযথা মনোযোগ বা প্রশংসা আকর্ষণ করার চেষ্টা না করা
মিতব্যয়িতা - আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দামী পোশাক না কেনা
(৯) ভাষা (কলসীয় ৪:৬, ইফিষীয় ৪:২৯)
আপনার কথাবার্তা কি ঈশ্বর এবং অন্যদের প্রতি শুদ্ধ এবং সম্মানজনক? জগতে বিশেষ কিছু ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একাধিক শব্দ অশ্লীলতা থেকে আসে বা তা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কুরুচিকর।
আপনি কি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন? লোকেরা কি আশা করতে পারে যে আপনি যা বলেন তা করবেন? আপনি কি আপনার প্রতিজ্ঞাগুলি ভুলে যান যদি সেগুলি আপনার জন্য সুবিধাজনক না হয়?
বহু মানুষই তাদের উন্নতি করার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। তারা নিজেদেরকে কেবল শাস্ত্রের সাধারণ আদেশগুলির জন্য দায়বদ্ধ বোধ করে, তারা বুঝতে পারে না যে সেই আদেশগুলির একাধিক প্রয়োগ রয়েছে।
আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে এই উন্নতি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধির সাথে সংযুক্ত। আমরা যে পদগুলি (ফিলিপীয় ১:৯-১১) দিয়ে এই পাঠটি শুরু করেছিলাম, সেই পদগুলির উপর আমাদের আন্তরিকভাবে ধ্যান করা প্রয়োজন। যদি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, আমাদের বিচক্ষণতা এবং সঠিক আচরণের পছন্দও উন্নত হওয়া উচিত।
গ্রুপে আলোচনার জন্য
► যখন ঈশ্বর আপনাকে দেখিয়েছিলেন যে আপনার মনোভাব, অভ্যাস বা কাজ সর্বোত্তম নয়, তখন আপনি আপনার জীবনে যে পরিবর্তন এনেছিলেন তার একটি উদাহরণ কী দিতে পারেন?
► আপনার জীবনধারায় কি এমন কিছু আছে যা আপনি জানেন যে আপনার পরিবর্তন করা উচিত? আপনি কি তা করবেন?
► আপনি কি এমন কিছু করছেন যেখানে তা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করছে কিনা সেই ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত নন?
► আপনি কি ঈশ্বরকে প্রার্থনায় আপনাকে যেকোনো পরিবর্তন দেখাতে দিতে ইচ্ছুক যা আপনার করা উচিত?
আসুন, এই সপ্তাহে এক উন্মুক্ত হৃদয়ে প্রার্থনা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই যাতে ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর মূল্যবোধ এবং তিনি আমাদের জীবনে করতে চান এমন যেকোনো পরিবর্তন দেখাতে পারেন। আপনি কি এটা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ? পরের সপ্তাহে আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করব আপনি তা করেছেন কিনা।
বাইবেলের নীতিগুলির ব্যক্তিগত প্রয়োগ
► আপনি কি কখনো বিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন, বিশেষত তারা কী করে এবং কী করে না সেই বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশ্নে? তারা একই বাইবেল ব্যবহার করা সত্ত্বেও কেন এই পার্থক্যগুলি রয়েছে? যেহেতু বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, তাই আমরা যা করি তা কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ? কেন?
সমস্ত বিশ্বাসীরা বাইবেলের নীতি এবং মূল্যবোধগুলি কীভাবে পালন করতে হয় তার বিশদ বিবরণে একমত নয়। তবুও খ্রিষ্টের একজন অনুসারীকে অবশ্যই তার বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করার ব্যাপারে ঐকান্তিক হতে হবে।
আচরণ, বিনোদনের পছন্দ, এবং পোশাক – সবকিছুই হৃদয়ের প্রবণতা সম্পর্কে কিছু একটা প্রকাশ করে।
জীবনযাত্রার নির্দিষ্ট সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে কোনটি সর্বোত্তম তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করার সময় প্রতিটি বিশ্বাসীর মনে রাখা উচিত এমন কিছু নীতি এখানে দেওয়া হল।
যে কেউ এইসব আদেশের ক্ষুদ্রতম কোনো আদেশ লঙ্ঘন করে ও অপর মানুষদের সেইমতো শিক্ষা দেয়, সে স্বর্গরাজ্যে ক্ষুদ্রতম বলে গণ্য হবে; কিন্তু যে কেউ এই আদেশগুলি অনুশীলন করে ও সেইরূপ শিক্ষা দেয়, সে স্বর্গরাজ্যে মহান বলে গণ্য হবে।
আমরা কেবল যে পয়েন্টগুলিকে নিজেরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তা বেছে নিতে পারি না। শাস্ত্রীয় কোনো আদেশই উপেক্ষা করার মত গুরুত্বহীন নয়।
(২) ঈশ্বরের আদেশগুলি আমাদের উপকারের জন্য।
দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২-১৩,
এখন হে ইস্রায়েল, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের কাছে কী চান? তিনি কেবল চান যেন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করো, সব ব্যাপারে তাঁর পথে চলো, তাঁকে ভালোবাসো, তোমাদের সমস্ত হৃদয় ও প্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করো, আর তোমাদের মঙ্গলের জন্য আজ আমি তোমাদের কাছে সদাপ্রভুর যেসব আদেশ ও অনুশাসন দিচ্ছি তা পালন করো।
গীত ৮৪:১১,
কারণ সদাপ্রভু ঈশ্বর ঢাল ও সূর্যের মতো; তিনি দয়া ও সম্মান দান করেন; যাদের চলার পথ সিদ্ধ তাদের তিনি কোনো প্রকার মঙ্গল থেকে বঞ্চিত করেন না।
ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে ভালো কিছু দূরে রাখেন না, বা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন কোনো আদেশ দেন না। তাঁর বিধিনিষেধ ছাড়া আমাদের মঙ্গল হবে না। তাঁর নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হল তাঁর প্রজ্ঞা এবং প্রেমকে সন্দেহ করা। যখন আমরা মানুষের ধারণাগুলি অনুসরণ না করে তাঁর বাক্যের নির্দেশাবলী মেনে চলি, তখন আমরা প্রমাণ করি যে আমরা সত্যই ঈশ্বরের মঙ্গল এবং প্রজ্ঞাতে বিশ্বাস করি।
(৩) খ্রিষ্টীয় স্বাধীনতা কোনোমতেই ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা থেকে স্বাধীনতা নয়।
১ করিন্থীয় ৯:২১ পদে পৌল বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে এটি লিখেছেন:
যারা বিধানের অধীন নয়, তাদের জন্য আমি বিধানবিহীন মানুষের মতো হয়েছি (যদিও আমি ঈশ্বরের বিধান থেকে মুক্ত নই, কিন্তু খ্রীষ্টের বিধানের অধীন), যেন যারা বিধানের অধীন নয়, তাদের জয় করতে পারি।
ধার্মিকগণনার উপায় হিসেবে, আমরা বিধান—মোশির আইন এবং ঈশ্বরের নৈতিক চাহিদা উভয়ই—থেকে উদ্ধার পেয়েছি, কারণ আমরা অনুগ্রহের দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছি, ঈশ্বরের আদেশ পালনের মাধ্যমে নয়। আমরা বিধানের দণ্ডাজ্ঞা থেকেও উদ্ধার পেয়েছি, কারণ আমরা যে সমস্ত পাপ করেছি তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
তবে, আমরা কোনো মতেই ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার বা ভালোবাসার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত নই, “আমার ভাইবোনেরা, তোমরা স্বাধীনতার জন্য আহূত হয়েছ, কিন্তু তোমাদের স্বাধীনতাকে শারীরিক লালসা চরিতার্থ করার জন্য প্রশ্রয় দিয়ো না; বরং প্রেমে পরস্পরের সেবা করো” (গালাতীয় ৫:১৩)। উপরে উল্লেখিত ১ করিন্থীয় ৯:২১ পদ অনুযায়ী, আমরা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীন। আমাদের জন্য তাঁর ইচ্ছা বাইবেলে প্রকাশিত হয়েছে।
কিছু লোক ভুলভাবে বিশ্বাস করে যে তাদের অবশ্যই পাপের জন্য ক্ষমা পাওয়ার উপায় হিসেবে বা আত্মিকভাবে পরিপক্ক হওয়ার উপায় হিসেবে ঈশ্বরের বিধান পালন করতে হবে। কিন্তু, সত্যটি হল যে আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছি, বিধান পালন করে নয় (ইফিষীয় ২:৮-৯)।
যদিও আমরা আমাদের কাজের ফলাফল দ্বারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হইনি, তবুও আমাদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলা উচিত, কারণ আমাদেরকে তাঁর সাথে ধার্মিক গণ্য করা হয়েছে। “তোমাদের পাপ থেকে মুক্ত করা হয়েছে এবং তোমরা ধার্মিকতার ক্রীতদাস হয়েছ” (রোমীয় ৬:১৮)।
যেহেতু আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি এবং তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ, আমরা আনন্দ সহকারে তাঁর বাধ্য হই (১ যোহন ৫:৩)। যারা ধার্মিকগণিত হয়েছে, তাদের বাধ্যতা হল তাঁর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ (যোহন ১৪:১৫)।
(৪) যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা তাঁর ইচ্ছাকে এড়িয়ে যাত্তয়ার পরিবর্তে তা জানতে চাইব।
১ যোহন ৫:২-৩ বলছে,
ঈশ্বরকে প্রেম করে এবং তাঁর আদেশ পালনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তানদের প্রেম করি। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম করা হল এই: তাঁর আদেশ পালন করা। আর, কারণ তাঁর আদেশ দুর্বহ নয়।
যিরমিয় ৩১:৩৩ বলছে, “আমি ইস্রায়েল কুলের সঙ্গে এই নিয়ম স্থাপন করব… আমি তাদের মনে আমার বিধান দেব এবং তাদের হৃদয়ে তা লিখে দেব।”
যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভালোবাসে সে প্রথমে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করবে না, “এটি করার জন্য ঈশ্বর কি আমাকে দোষীসাব্যস্ত করবেন?” বরং তার প্রশ্ন হবে, “ঈশ্বর কোনটিতে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন?” বা, “সবচেয়েউৎকৃষ্ট বিষয়টি কী?” (ফিলিপীয় ১:১০, তীত ৩:৮).
(৫) শাস্ত্র আমাদের জীবনের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম প্রতিষ্ঠার একটি ভিত্তি প্রদান করে।
বাইবেল যে কেবল কিছু সাধারণ নীতি প্রদান করে তা নয়। কিছু অংশ ২ নং অ্যাসাইনমেন্টে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যা সচেতন খ্রিষ্টীয় জীবনযাপনের জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করে। এগুলির মধ্যে কোনো কোনোটি খ্রিষ্টীয় জীবনধারার জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়।
(৬) জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কিত নিয়মগুলি আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মবিশ্বাস নয়।
ফরিশীরা ছোটখাটো বিষয়গুলির উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়ার ভুলটি করেছিল। মথি ২৩:২৩ পদে যিশু তাদের বলেছেন,
শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীরা, ভণ্ডের দল, ধিক্ তোমাদের! তোমরা তোমাদের মশলাপাতি—পুদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়ে থাকো কিন্তু বিধানের আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন ন্যায়বিচার, করুণা, বিশ্বস্ততা—এগুলি উপেক্ষা করে থাকো। ভালো হত, তোমরা আগের বিষয়গুলি উপেক্ষা না করে যদি এগুলিও পালন করতে।
এই পদটি বলছে না যে এমন কোনো সত্য আছে যা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু, এটি বলছে যে কিছু বিষয় অন্যগুলির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
(৭) কেবল নিয়ম পালন করাই ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য বা ভালবাসা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
ফরিশীদের সাথে এই একই আলোচনায় যিশু বলেছেন (মথি ২৩:২৫),
শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীরা, ভণ্ডের দল, ধিক্ তোমাদের! তোমরা থালাবাটির বাইরেটা পরিষ্কার করে থাকো কিন্তু ভিতরের দিকটা লোভ-লালসা ও আত্ম-অসংযমে পূর্ণ।
একজন ব্যক্তি খুব কঠোর জীবনযাপন করতে পারে, তবুও হতে পারে যে সে ঈশ্বরকে ভালোবাসে না বা এমনকি তাঁকে সম্পূর্ণরূপে মেনে চলে না। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি হয়তো তার পূর্ণ হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারে কিন্তু তবুও কিছু মান বজায় রাখার কারণ সে বুঝতে নাও পারে। অতএব, তুলনামূলকভাবে কঠোর জীবন যাপন করা ব্যক্তি অধিক আত্মিক হবে, এমন নয়।
(৮) অন্যদের সাক্ষ্যের উপর আমাদের আস্থা তাদের জীবনযাত্রার ছোটোখাটো বিবরণের উপর নির্ভর করে না।
রোমীয় ১৪:১০ পদে পৌল বিশ্বাসীদেরকে প্রশ্ন করেছেন,
তাহলে তুমি কেন অপর বিশ্বাসীর বিচার করো? কিংবা, কেনই বা অপর বিশ্বাসীকে ঘৃণা করো? কারণ আমরা তো সকলেই ঈশ্বরের বিচারাসনের সামনে দাঁড়াব!
এই পদটি এমন একটি অংশে এসেছে যেখানে ব্যবহারিক বিষয়ে বিশ্বাসীদের বিভিন্ন মতামত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। খ্রিষ্টের একজন অনুসারীর কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয় সে সম্পর্কে বহুক্ষেত্রেই অকপট মতবিরোধ রয়েছে।
অন্য একজন বিশ্বাসী শাস্ত্রের একটি নির্দিষ্ট অংশের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাখ্যার সাথে একমত নাও হতে পারে, অথবা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি সেটির ক্ষতিকর দিকগুলি সে নাও দেখতে পেতে পারে। হতে পারে যে, ঈশ্বর তার জীবনে ভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন, অথবা ঈশ্বর তাকে একটি ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে রেখেছেন। এর অর্থ এই নয় যে সেই ব্যক্তি প্রকৃত বিশ্বাসী নয়।
► এই বিবৃতিটি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন? “কীভাবে একজন ব্যক্তির জীবনযাপন করা উচিত সেই সম্পর্কে ঈশ্বর প্রত্যেককে সত্য দেখাবেন; তাই সকল বিশ্বাসীর একই অভ্যাস থাকা উচিত।”
খ্রিষ্টের অনুগামীরা জীবনের সমস্ত অনুশীলন সম্পর্কে কখনোই একমত হয়নি। যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে এবং ধার্মিক জীবনযাপন করে, তারা সবাই ধর্মতত্বের অনুশীলন এবং খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে একমত নয়। আমাদের পক্ষে এটা বলা ভুল যে অন্যরা বিশ্বাসী নয় কারণ তারা শাস্ত্রকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বা প্রয়োগ করে। আমরা তাদেরকে অকপট বিশ্বাসী হিসেবে গ্রহণ করতে পারি যদিও আমাদের মনে হয়ে থাকে যে তাদের মতামতগুলি ভুল। পবিত্র আত্মার কাজ সমস্ত বিশ্বাসীদেরকে একটি অভিন্ন বা সমতুল্য জীবনধারার অনুসরণ করতে বাধ্য করে না।
আমাদেরকে অবশ্যই অন্যান্য বিশ্বাসীদের দৃষ্টিকোণ থেকে শিখতে প্রস্তুত থাকতে হবে। অহংকার আমাকে মনে করতে বাধ্য করবে যে আমি সর্বদা নিখুঁতভাবে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা বা প্রয়োগ করি। কিন্তু এক নম্র, শিক্ষণীয়, গ্রহণযোগ্য আত্মা খ্রিষ্টীয় ঐক্য গড়ে তোলে এবং খ্রিষ্টের দেহের উন্নতিসাধন করে।
(৯) বিভিন্ন মতামতের প্রতি সহনশীলতা ব্যক্তিগত অসতর্কতাকে অজুহাত দেয় না।
“প্রত্যেক ব্যক্তি তার মনে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোক” (রোমীয় ১৪:৫খ)।
“কিন্তু যে ব্যক্তির সন্দেহ আছে, সে যদি আহার করে তাহলে সে দোষী সাব্যস্ত হয়, কারণ তার আহার করা বিশ্বাস থেকে হয় না; আর যা কিছু বিশ্বাস থেকে হয় না, তাই পাপ” (রোমীয় ১৪:২৩)।
যখন কেউ তার বিবেককে লঙ্ঘন করে, তখন বিপর্যয়কর ফলাফল আসবে। যদি একজন ব্যক্তি এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয় যা সে ভুল বলে মনে করে, তবে সে পাপের জন্য দোষী। যখন কেউ ঈশ্বরপ্রদত্ত আলোয় চলে, সে আশীর্বাদের অধিকারী হয় (১ যোহন ১:৭)।
গ্রুপে আলোচনার জন্য
এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে কোনো অসুবিধা হবে না। কিছু শিক্ষার্থী হয়তো মন্ডলীগুলিতে আচরণের নিয়ম মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে পারে। অন্যরা হয়তো পার্থক্যের প্রতি সহনশীলতার উপর জোর দিতে পারে।
উপরে তালিকাভুক্ত নয়টি নীতির প্রতিটির জন্যই সঠিক বিবেচনা দেখানোর চেষ্টা করুন।
► এই নীতিগুলির মধ্যে কোনগুলি অনেকেই ভুলে গেছেন বলে আপনি মনে করেন?
► এই নীতিগুলির মধ্যে কোনগুলি আপনার ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি?
প্রার্থনা
স্বর্গস্থ পিতা,
আমি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে চাই। আমি আমার জীবনের জন্য তোমার ইচ্ছা আরো ভালোভাবে বুঝতে চাই।
তোমার কাছে কোনটি সবচেয়ে প্রীতিজনক তা বুঝতে শিখতে আমাকে সাহায্য করো যাতে আমি একটি শুদ্ধ এবং অপরাধমুক্ত জীবনযাপন করতে পারি।
যে সমস্ত স্বভাব এবং মনোভাব পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা দেখতে, এবং তোমাকে গৌরবান্বিত করে এমন সমস্ত স্বভাব এবং মনোভাব অর্জন করতে আমাকে সাহায্য করো।
আমি ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমার জন্য ফলধারণ করতে চাই।
আমেন
২ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায় অধ্যয়ন করুন। এই অধ্যায়ে এমন একজন ব্যক্তির জীবন বর্ণনা করা হয়েছে যার অন্যদের প্রতি যে ভালোবাসা থাকা উচিত উচিত, তা তার মধ্যে আছে। ঈশ্বরকে দেখাতে দিন যে আপনার জীবনকে ভালবাসার সাথে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে তিনি কীভাবে আপনাকে পরিবর্তন করতে চান। কিছু পরিবর্তন তালিকাভুক্ত করুন যা আপনি চান যে ঈশ্বর আপনাকে আপনার নিজের জীবনে করতে সক্ষম করবেন।
(২) নিম্নলিখিত শাস্ত্রাংশগুলি অধ্যয়ন করুন যা সচেতন খ্রিষ্টীয় আচরণের জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করে:
১ করিন্থীয় ৬:১৯-২০
১ করিন্থীয় ১০:৩১
১ করিন্থীয় ১১:১৪-১৫
১ তিমথি ২:৯-১০
১ পিতর ৩:৩-৪
গীত ১৯:১৪
গীত ১০১:৩
প্রতিটা প্যাসেজের মূল অর্থ লিখুন। জীবনধারার সেই বিশদগুলি সম্বন্ধে বর্ণনা করুন যা আপনি বিশ্বাস করেন যে এই শাস্ত্রাংশগুলির কারণে আপনার অনুশীলন করা উচিত।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.