হার্নান্ডো কর্টেস (Hernando Cortes) এমন এক ব্যক্তির উদাহরণ নয় যার চরিত্র এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি আমাদের অনুসরণ করা উচিত। তবে, তার একটি কর্মকাণ্ড তার লক্ষ্যের প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছিল। ১৫১৯ সালের বসন্তকালে, হার্নান্ডো কর্টেস একটি এলাকা দখলের অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যেটি এখন মেক্সিকো নামে পরিচিত। স্পেন সরকার ১১টি জাহাজ এবং ৭০০ জন্য লোক দিয়ে এই অভিযানটিকে সহায়তা করেছিল। বহু মাস সমুদ্রে কাটানোর পর কর্টেসে এবং তাঁর সঙ্গীরা অবশেষে মেক্সিকোর তীরে এসে পৌঁছান। পরবর্তী প্রতিকূলতাটি ছিল স্থলপথে রাজধানী শহরে পৌঁছানো। কর্টেস জানতেন যে স্থলপথে ভ্রমণ করা কঠিন এবং বিপদজনক হবে। তিনি চেয়েছিলেন যে তার সঙ্গীরা উপলব্ধি করুক যে ফিরে যাওয়ার কোনো বিকল্পই নেই, তাই তিনি সমস্ত জাহাজ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি স্পেনে ফিরে যাওয়া অসম্ভব করে তুলেছিলেন, এবং একই সময়ে সফল হওয়ার জন্য একটি দৃঢ় অনুপ্রেরণা তৈরি করেছিলেন। একইভাবে, বিয়েতে প্রবেশ করা প্রত্যকে ব্যক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত, এইটা জেনে যে যখন সে বিবাহিত, তার কাছে আর অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ভূমিকা
বাইবেলভিত্তিক বিবাহ একটি অপূর্ব বিষয়।[1] কিন্তু যে দম্পতিরা এর সৌন্দর্য অভিজ্ঞতা লাভ করতে চায় এবং এর উত্তমতার আস্বাদ করতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই শাস্ত্র এটি সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয় তা পর্যালোচনা করতে হবে, এবং তারপর তা যা শিখেছে তা মেনে চলতে হবে। একটি সন্তুষ্টিজনক বিবাহের জন্য প্রচেষ্টা এবং ত্যাগের প্রয়োজন।
► কেউ কি এই বিষয়ে শেয়ার করতে চান যে কীভাবে তিনি প্রয়োজনীয় অঙ্গীকার উপলব্ধি না করে কিছু সুবিধার আশায় বিয়ে করেছিলেন?
বিবাহ সম্পর্কে বোঝার জন্য আমাদের এটির শুরুতে ফিরে যেতে হবে—আদিপুস্তকে ফিরে যেতে হবে। সৃষ্টির কাহিনী আমাদেরকে বিবাহের ব্যাপারে শিক্ষা দেয়।
“সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, ‘মানুষের একা থাকা ভালো নয়। আমি তার উপযুক্ত এক সহকারিণী তৈরি করব’” (আদি পুস্তক ২:১৮)।
ঠিক যেভাবে পিতা ঈশ্বর, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা সহভাগিতায় আছেন, সেইভাবেই ঈশ্বর আমাদেরকে সামাজিক হওয়ার জন্য বিন্যস্ত করেছেন। আমরা সংযোগ স্থাপনের জন্য সৃষ্টি হয়েছি। আমরা ঘনিষ্ঠতা এবং সহভাগিতার জন্য সৃষ্টি হয়েছি। ঈশ্বর বলেছেন যে একা থাকা ভালো নয়!
আদিপুস্তকের ঘটনাবলীর বর্ণনার প্রতিটি অংশ বিবাহকে মর্যাদা দেয়। ঈশ্বর পুরুষের কাছ থেকে একটি পাঁজর নিয়েছিলেন এবং সেটিকে একজন সুন্দরী নারীতে পরিণত করেছিলেন, যে ছিল অন্য এক ব্যক্তি, ঈশ্বরের মূর্তিতে সমানভাবে তৈরি, সমান মূল্যবান, কিন্তু নকশায় ভিন্ন, যে পুরুষকে সম্পূর্ণ করেছিল। তাকে “সৃষ্টিকর্তার শেষ এবং সবচেয়ে নিখুঁত কাজ হিসেবে পুরুষের কাছে বিশেষ সম্মানের সাথে আনা হয়েছে।”[1]
বিবাহ একটি আনন্দদায়ক মিলন হতে হবে।
যখন আদম বলেছিল, “এখন এই আমার অস্থির অস্থি” (আদিপুস্তক ২:২৩), সে সম্মান এবং আনন্দ প্রকাশ করেছিল। আদম বলেনি, “অবশেষে, একজন দাসীকে পেলাম! এখন আমার জামা-কাপড় কেচে দেওয়ার, খাবার বানিয়ে দেওয়ার, পিঠ টিপে দেওয়ার, এবং সব কাজ করে দেওয়ার লোক আছে!” না, আদম বলেছিল, “অবশেষে, একজন সহকারিণী যে আমাকে সম্পূর্ণ করে!”
বিবাহ একটি সমতার মিলন হতে হবে।
“...তার উপযুক্ত এক সহকারিণী” (আদিপুস্তক ২:১৮)। ঈশ্বর নারীকে পুরুষের সাথে যথাযথ মিল হিসেবে এবং তাকে সম্পূর্ণ করার জন্য ডিজাইন করেছিলেন।
ম্যাথিউ হেনরি (Matthew Henry) আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, “নারীকে আদমের একদিকের পাজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছিল; তার মাথার হাড় থেকে নয় যে সে তার উপর কর্তৃত্ব করবে, তার পায়ের পাতার হাড় থেকে নয় যে সে তার দ্বারা পদদলিত হবে, বরং তার পাঁজর থেকে যাতে সে তার সমান হতে পারে, তার হাতের নিচে সুরক্ষিত থাকতে পারে, এবং প্রেমে তার হৃদয়ের কাছাকাছি থাকতে পারে।”[2] নারী পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট বা উচ্চতর ছিল না, বরং তার সাথে তুলনীয় ছিল।
বিবাহ একটি অঙ্গীকারবদ্ধ মিলন হতে হবে।
“এই কারণে একজন পুরুষ তার পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করে, তার স্ত্রীর সাথে সংযুক্ত হবে ও সেই দুজন একাঙ্গ হবে” (আদিপুস্তক ২:২৪)। দৃঢ় বৈবাহিক সম্পর্কগুলি রোম্যান্সের উপর, (রোম্যান্টিক অনুভূতি আসে এবং যায়), বা সুখভোগের উপর (যদিও সুস্থ বৈবাহিক সম্পর্ক আনন্দ নিয়ে আসে), বা ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতার উপর (যদিও দৃঢ় বৈবাহিক সম্পর্কগুলি নিশ্চিতভাবে পরিপূর্ণকারী) নির্ভর করে না। একটি দৃঢ় বৈবাহিক সম্পর্কের কারণ চমৎকার উপকারিতাগুলি নয়; এই উপকারিতাগুলি হল একটি দৃঢ় বৈবাহিক সম্পর্কের ফলাফল। চুক্তির অটুট ভিত্তির উপর বিবাহ প্রতিষ্ঠিত—একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কেবলমাত্র একে অপরের প্রতি আজীবন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবাহকে একটি স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য সম্পর্ক হতে হবে—“সেই পুরুষ ও তাঁর স্ত্রী, দুজনেই নগ্ন ছিলেন, আর তাদের কোনো লজ্জাবোধও ছিল না” (আদি পুস্তক ২:২৫)। কারণ পাপ তখনও প্রথম দম্পতির সরলতাকে কলুষিত করেনি, তাদের বিবাহ ছিল বিচারবিহীন, লজ্জাহীন এবং ভয়মুক্ত। নতুন নিয়ম আমাদের জানায়, “বিবাহ-সম্পর্ককে সবারই সম্মান করা উচিত এবং বিবাহ-শয্যা শুচিশুদ্ধ রাখতে হবে” (ইব্রীয় ১৩:৪)।
যেখানে নিরাপত্তাহীনতা, অবিশ্বাস, সন্দেহ বা ভয় থাকে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীরা একে অপরের বিবাহের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে নিশ্চিত নয়, সেখানে একটি দৃঢ় বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো অস্তিত্ব নেই। দৃঢ় বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য একটি অটল অঙ্গীকার প্রয়োজন যা কেবল কোনো একজন জীবনসঙ্গীর মৃত্যুতে শেষ হয় (রোমীয় ৭:১-২)।
ঈশ্বরের অভিপ্রায় হল যে একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মধ্যে বিবাহ একটি আজীবন চুক্তি হবে (মথি ১৯:৩-৬)। পৌল বলেছেন যে বিশ্বাসীরা আর বন্ধনের অধীনে থাকে না যখন তাদের অবিশ্বাসী জীবনসঙ্গী তাদের থেকে আলাদা হয় (১ করিন্থীয় ৭:১৫), কিন্তু একজন বিশ্বাসীর অবিশ্বাসী সঙ্গীর থেকে বিচ্ছেদ চাওয়া উচিত নয় (১ করিন্থীয় ৭:১২-১৪, ১৬)৷ পৌল আগে লিখেছেন যে প্রভু একই কথা বলেছেন: বিশ্বাসীরা তাদের জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে ছেড়ে যাওয়া/বিচ্ছিন্ন হওয়া বেছে নিতে পারে না, তবে যদি তারা তা করে তবে তাদের আর অন্য কাউকে বিয়ে করা উচিত নয় (১ করিন্থীয় ৭:১০-১১, মথি ৫:৩১-৩২, মথি ১৯:৯)।
চুক্তিবদ্ধ প্রেম আত্মত্যাগী, সম্মানপূর্ণ এবং সৌন্দর্যবর্ধক, এমনকি সম্পর্ক কঠিন হলেও (১ করিন্থীয় ১৩)। দুর্বল প্রতিশ্রুতি অস্থায়ী প্রচেষ্টা, মানসিক সংযোগ বিচ্ছিন্নতা, প্রত্যাহার, এবং প্রলোভনের জন্ম দেয়।
একজন স্বামী তখনই চুক্তিবদ্ধ ভালোবাসায় জীবনযাপন করে যখন সে তার স্ত্রীর প্রতি কোনোমতেই হাল ছেড়ে দেয় না এমনকি যখন সে প্রতিক্রিয়াহীন, বা অসম্মানজনক, বা অসুস্থ থাকে। একজন স্ত্রী যখন তার স্বামীকে সম্মান করতে এবং তার বাধ্য থাকতে বেছে নেয়, খ্রিষ্টের জন্য, এমনকি যখন তার স্বামী তাকে ভালোবাসে না, তখনও সে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রেমে জীবনযাপন করে।
স্বামীর প্রেম স্ত্রীর সম্মানকে, এবং স্ত্রীর সম্মান স্বামীর ভালোবাসাকে জয় করে। এবং তারা একসাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে!
► যদি কেউ এই ভেবে বিয়ে করে যে, যদি তারা বিবাহে অসন্তুষ্ট হয়, তাহলে পরে তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নেবে, তাহলে কী কী সমস্যা দেখা দেবে? পূর্ণ প্রতিশ্রুতি কী পার্থক্য আনে যখন একজন ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে তার বিবাহ স্থায়ী?
বাইবেলভিত্তিক বিবাহ হল সৃষ্টির স্থান: বংশবৃদ্ধি
“সন্তানসন্ততি সদাপ্রভুর দেওয়া অধিকার, তাঁর দেওয়া পুরস্কার” (গীত ১২৭:৩)।
সন্তানসন্ততি হল ঈশ্বরের থেকে পাওয়া একটি উপহার, কিন্তু অপরদিকে তারা বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে ঈশ্বরের জন্য একটি উপহার হিসেবেও গণ্য হয়। “একই ঈশ্বর কি তোমাদের সৃষ্টি করেননি? দেহ এবং আত্মাতে তো তোমরা তাঁরই। আর সেই এক ঈশ্বর কি চান? ঈশ্বরভক্ত সন্তানসন্ততি। সুতরাং নিজেদের সম্পর্কে সতর্ক হও এবং তোমাদের যৌবনের স্ত্রীর প্রতি অবিশ্বস্ত হোয়ো না” (মালাখি ২:১৫)। ঈশ্বর একজন বিশ্বাসী স্বামী এবং স্ত্রীর প্রেমময় বন্ধন থেকে ঈশ্বরবিশ্বাসী সন্তান কামনা করেন।
অনেকে এমন জীবনধারা পছন্দ করে যেখানে সন্তানরা অন্তর্ভুক্ত নয়, কিন্তু বাইবেল শেখায় যে বাবা-মায়ের ঈশ্বরীয় সন্তান থাকলে ঈশ্বর খুশি হন।
একইসাথে, এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ঈশ্বর যে কেবল নিছক বংশবৃদ্ধি চান, তা নয়, কিন্তু তিনি ঈশ্বরবিশ্বাসী সন্তান চান। ঈশ্বর পিতামাতাদের আহ্বান করেছেন যেন তারা তাদের সন্তানদেরকে খ্রিষ্টের অনুগামী করে তোলে।
বাইবেলভিত্তিক বিবাহ হল খ্রিষ্টের জন্য
ইফিষীয় ৫:৩০-৩২ পদে পবিত্র আত্মা বিবাহের একটি গভীরতর অর্থ প্রকাশ করেছেন যা যিশুর পৃথিবীতে আসার আগে পর্যন্ত গুপ্ত ছিল। বিবাহ হল যিশুখ্রিষ্ট এবং তাঁর মন্ডলীর মধ্যবর্তী সম্পর্কের একটি পার্থিব চিত্র—একটি প্রতিফলন।
পৌল বিশ্বাসীদের আত্মায় পূর্ণ হতে উৎসাহিত করে এই বিভাগটি শুরু করেছেন (ইফিষীয় ৫:১৮)। এই প্রেক্ষাপটে তিনি বিবাহ সম্পর্কে নিম্নলিখিত নির্দেশনা প্রদান করেছেন:
ঠিক যেভাবে বিশ্বাসীরা যিশুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, সেইভাবেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ স্ত্রী প্রভুতে তার স্বামীর (তার “মস্তক”) কাছে সমর্পিত হবে (ইফিষীয় ৫:২৪, ৩২; এছাড়াও ১ পিতর ৩:১ দেখুন)। এইভাবে সে যিশু এবং তার স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
প্রত্যেক স্ত্রী’র তার সমর্পণের সময়ে প্রভুকে স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সে প্রভুর কাছে সমর্পিত হয় এবং প্রভুর জন্যই সমর্পিত হয়, এবং এটি কেবল তার স্বামীর জন্য তা নয়। তার দৃষ্টি যিশুর প্রতি থাকে, যিনি একমাত্র কোনো ত্রুটিহীন। একজন স্ত্রী’র তার স্বামীর প্রতি স্বেচ্ছাকৃত সমর্পণ হল যিশুকে আরাধনা করার একটি প্রদর্শন।
প্রেমের মত বাইবেলভিত্তিক সমর্পণও জোর করে হয় না। বাইবেলভিত্তিক সমর্পণ হল এমন একটি উপহার যা স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের খ্রীষ্টের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার জন্য প্রদান করে (ইফিষীয় ৫:৩৩)। সবকিছুতেই আনুগত্য হল যিশুর প্রতি উপাসনার একটি কাজ।[3]
একজন স্ত্রী’র স্বামীর প্রতি সমর্পণ তার জন্য সম্মানের একটি কাজ (৩৩ পদ), যা আত্মায় পরিপূর্ণ জীবনের অংশ (ইফিষীয় ৫:১৮-২১)। এই সম্মান ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মূল্যবান যা এক নম্র ও শান্ত আত্মা থেকে আসে (১ পিতর ৩:৪-৫)।
ঠিক যেমন যিশু তাঁর মন্ডলীকে প্রেম করেন, পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ স্বামী তার স্ত্রীকে সেইভাবেই প্রেম করবে (ইফিষীয় ৫:২৫)। স্বামী অবশ্যই স্ত্রীকে তার নিজের দেহের মতো ভালোবাসবে (ইফিষীয় ৫:২৮-২৯)। যিশু যেমন তাঁর মন্ডলীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, তেমন স্বামীকেও একইভাবে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ আত্মত্যাগ প্রকাশ করতে হবে। এটি তার সমর্পণের কাজ (ইফিষীয় ৫:২১)। একজন ভাষ্যকার এটিকে এইভাবে উল্লেখ করেছেন:
যেমন তিনি (যিশু) মন্ডলীকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ক্রুশে কষ্টভোগের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, তেমনই আমাদেরও নিজেদেরকে অস্বীকার করতে এবং পরিশ্রম ও পরীক্ষা সহ্য করতে ইচ্ছুক থাকতে হবে, যাতে আমরা আমাদের স্ত্রী’দের সুখ বৃদ্ধি করতে পারি। স্বামীর কর্তব্য হল স্ত্রী’র সহায়তার জন্য পরিশ্রম করা; তার চাহিদা পূরণ করা; প্রয়োজনে বিশ্রাম ও স্বাচ্ছন্দ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা, অসুস্থতার সময় তার সেবা করার জন্য; বিপদে তার আগে এগিয়ে যাওয়া; বিপদে পড়লে তাকে রক্ষা করা; যখন সে বিরক্ত হয় তখন তাকে মানিয়ে চলা; যখন সে তাকে দূরে ঠেলে দেয় তখন তাকে আঁকড়ে ধরা; যখন সে আত্মিক সমস্যায় পড়ে তখন তার সাথে প্রার্থনা করা; এবং তাকে বাঁচানোর জন্য মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। আর এমনটি তো হওয়া উচিত, তাই না? যদি তারা জাহাজডুবিতে পড়ে, এবং একটিমাত্র তক্তা থাকে যার উপর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে, তাহলে কি তার স্ত্রীকে তার উপর রাখতে এবং নিজের জন্য সমস্ত বিপদে তাকে নিরাপদ দেখতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত নয়? কিন্তু আরো কিছু আছে... একজন স্বামীর মনে রাখা উচিত যে তার জীবনের একটি মহান লক্ষ্য হওয়া উচিত তার স্ত্রীর পরিত্রাণের চেষ্টা করা। তাকে তার আত্মার জন্য যা যা প্রয়োজন তা সবই দিতে হবে... এবং তাকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে; যদি তার পরামর্শের প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে পরামর্শ দিতে হবে; এবং তার জন্য পরিত্রাণের পথ যতটা সম্ভব সহজ করে তুলতে হবে। যদি একজন স্বামী পবিত্র আত্মার অধিকারী হয় এবং তার মধ্যে ত্রাণকর্তার আত্মত্যাগমূলক মানসিকতা থাকে, তাহলে সে যদি তার পরিবারের পরিত্রাণকে উন্নীত করতে পারে, তবে সে কোনো ত্যাগকেই খুব বড়ো বলে মনে করবে না।[4]
বরকে তার বধূর পবিত্রতা অন্বেষণ করতে হবে ঠিক যেমন খ্রিষ্ট তাঁর বধূ, অর্থাৎ মন্ডলীকে, “...পবিত্র করেন, বাক্যের মাধ্যমে জলে স্নান করিয়ে তাকে শুচি করেন, এবং তাকে সব রকম কলঙ্ক, বিকৃতি এবং কলুষতা থেকে মুক্ত করে পবিত্র ও অনিন্দনীয়ভাবে এক প্রদীপ্ত মণ্ডলী করে নিজের কাছে উপস্থিত করেন” (ইফিষীয় ৫:২৬-২৭)।
প্রাচীনকালে রাজাদের বধূদের ব্যয়বহুল সৌন্দর্য চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিকভাবে শুদ্ধ করা হত——“ছয় মাস গন্ধরসের তেল ও ছয় মাস সুগন্ধি ও মহিলাদের জন্য নির্ধারিত প্রসাধনের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হত” (ইষ্টের ২:১২ দেখুন)। এইভাবে একজন কুমারীকে তার স্বামীর জন্য প্রস্তুত করা হত।
আত্মিক অর্থে, স্বামীর তার স্ত্রীর উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপায় সরবরাহ করতে হবে—বিশ্বস্ততা, নিঃশর্ত ভালোবাসা, বোধগম্যতা, প্রার্থনা, পরামর্শ, শিক্ষা এবং সহানুভূতি।
যখন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে এমন প্রেমময় আচরণ করে, তখন সে আনন্দের সাথে তার প্রতিদান পাবে। পৌল বলেছেন, “যে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে, সে নিজেকেই ভালোবাসে” (ইফিষীয় ৫:২৮)। যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের এই আত্মত্যাগমূলক ভাবে ভালোবাসে, তারা প্রভুর কাছ থেকে অনেক বেশি প্রতিদান পাবে, এবং সম্ভবত তারা তাদের স্ত্রী’র শ্রদ্ধা, স্নেহ এবং বিশ্বস্ততার মাধ্যমেও প্রতিদান পাবে।
► স্ত্রীকে আত্মিকভাবে সহায়তা করার জন্য একজন স্বামীর কোন নির্দিষ্ট কাজগুলি করা উচিত?
[3]বাইবেলভিত্তিক সমর্পনের বিষয়ে আরও জানার জন্য, আত্মিক গঠন কোর্সের ১০ নং পাঠটি দেখুন, যা Shepherds Global Classroom থেকে উপলব্ধ।
[4]Albert Barnes, Commentary on Ephesians, (পঞ্চম অধ্যায়)
দম্পতিদের তাদের বিবাহকে শক্তিশালী করার উপায়সমূহ
(১) তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের মূল বিন্যাসটি সম্মানিত করতে হবে এবং বিবাহের মধ্যে তাদের অনন্য ভূমিকার মর্ম উপলব্ধি করতে হবে।
একজন স্বামীর মনে রাখা উচিত যে তার স্ত্রী হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার, একজন সহায়িকা যে তাকে পূর্ণতা প্রদান করে। স্ত্রীর নিরাপত্তা এবং আত্মিক, মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য তাকে অবশ্যই তার জীবন উৎসর্গ করতে হবে। তাকে অবশ্যই স্ত্রী’র প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে এবং তাকে ভালোবাসতে হবে, এমনকি যখন তার স্ত্রী সেই ভালোবাসার যোগ্য নয়–তখনও, এই উপলব্ধি করে যে কেবলমাত্র ঈশ্বরই তার স্ত্রীর মধ্যে যা পরিবর্তন করা দরকার তা পরিবর্তন করতে পারেন। ঈশ্বর সেই স্বামীর বাধ্যতা এবং বিশ্বাসকে সম্মান করবেন।
ঈশ্বর যেমন স্বামীকে মস্তক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, সেইভাবেই একজন স্ত্রীর উচিত স্বামীকে মস্তকে হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করা, তাকে যথাসাধ্য সমীহ করা এবং তার নেতৃত্বকে সম্মান করা। স্বামী যখন ভুল করে এবং অযোগ্য হয়, তখনও স্ত্রীকে তার প্রতি সমর্পন করা ও শ্রদ্ধা করা বেছে নিতে হবে, প্রার্থনা করতে হবে যেন ঈশ্বর তার মধ্যে যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা পরিবর্তন করেন। ঈশ্বর স্ত্রীর বাধ্যতা এবং বিশ্বাসকে সম্মান করবেন।
(২) বিবাহিত দম্পতিদের অবশ্যই প্রকৃত আত্মিক এবং শারীরিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে হবে।
তাদের অবশ্যই ভয়, সমালোচনা, অন্যের সাথে তুলনা, অপব্যবহার, লালসা, আত্মতৃপ্তি বা অবমাননা ছাড়াই একে অপরকে জানার চেষ্টা করতে হবে। তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের সামনে এবং একে অপরের সামনে স্বচ্ছতা এবং সততার সাথে জীবনযাপন করতে হবে।
(৩) বিবাহিত দম্পতিরা যখন তাদের যোগ্যতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের অনুগ্রহের উদাহরণ অনুসরণ করতে হবে।
যখন আদম ও হবা পাপে লিপ্ত হয়ে লজ্জা ও অনুশোচনা অনুভব করেছিল, তখন ঈশ্বর তাদের ব্যর্থতা থেকে উদ্ধার করার জন্য তাঁর শক্তি প্রকাশ করেছিলেন। আদম ও হবার নগ্নতা ঢাকতে ঈশ্বর তাদের জন্য পোশাক তৈরি করার জন্য একটি পশু বলিদান করেছিলেন (আদি পুস্তক ৩:২১)। ঈশ্বরের এই প্রেমময় কাজটি ছিল অনুগ্রহের এবং খ্রিষ্টের মাধ্যমে মুক্তি প্রদানের জন্য ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির একটি চিত্র। খ্রিষ্ট আমাদের ক্ষমা এবং পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করেন। খ্রিষ্টের মাধ্যমে, বিবাহিত দম্পতিরা ব্যর্থ হওয়ার পরেও কোনোরকম লজ্জা ছাড়াই ঘনিষ্ঠতায় ফিরে আসতে পারে।
নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ
প্রথম শতাব্দীর রোমান বিশ্ব এবং ইহুদি ধর্মে নারীদেরকে পুরুষদের তুলনায় নিকৃষ্ট বলে মনে করা হত। বিশ্বের অনেক সংস্কৃতিতে এবং অনেক পরিবারেই এখনও নারীদের প্রতি একটি নিচু দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত। নারীদের অসম্মান করা হয়, যৌন সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং নির্যাতন করা হয়। কিন্তু নারীদের প্রতি যিশুর উচ্চ সম্মান আমাদের উদাহরণ হওয়া উচিত।
খ্রিষ্টের কাছে, নারীদের পুরুষদের সমান সহজাত মর্যাদা এবং মূল্য রয়েছে। যিশু বলেছেন, “প্রথমে সৃষ্টিকর্তা ‘তাদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন” (মথি ১৯:৪, আদি পুস্তক ১:২৭)। পুরুষের মতোই নারীকেও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। পুরুষদের মতো, তাদের আত্ম-সচেতনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, আত্ম-সংকল্পের একটি পরিমাপ এবং তাদের কাজের জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব রয়েছে। নারীদেরকে যিশু প্রকৃত মানুষ হিসেবে দেখেছেন, কেবল পুরুষের আকাঙ্ক্ষার বস্তু হিসেবে দেখেননি। তিনি তাদের সেই মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন যাদের জন্য তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন (লূক ৮:১-৩)।
জন পাইপার (John Piper) এবং ওয়েন গ্রুডেম (Wayne Grudem)’র সাথে জেমস বোরল্যান্ড (James Borland), চারটি সুসমাচারে পাওয়া নারীদের প্রতি যিশুর উচ্চ দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার এই স্পষ্ট উদাহরণগুলি উপস্থাপন করেছেন:
(১) যিশু নিয়মিতভাবে জনসমক্ষে মহিলাদের সাথে সরাসরি কথা বলতেন।
যিশুর সময়কালে একজন পুরুষের পক্ষে এটা করা স্বাভাবিক ছিল না (যোহন ৪:২৭)। শিষ্যরা শুখর গ্রামের কূপের ধারে যিশুকে শমরীয় মহিলার সাথে কথা বলতে দেখে অবাক হয়েছিলেন (যোহন ৪:৭-২৬)। তিনি ব্যভিচারে ধরা পড়া মহিলার সাথেও স্বচ্ছন্দে কথা বলেছিলেন (যোহন ৮:১০-১১)। লূক উল্লেখ করেছেন যে যিশু নায়িনের বিধবা স্ত্রী’র সাথে (লূক ৭:১২-১৩), রক্তপাতজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত মহিলার সাথে (লূক ৮:৪৮, মথি ৯:২২, মার্ক ৫:৩৪), এবং জনতার মধ্য থেকে তাঁকে ডাকা একজন মহিলার সাথে (লূক ১১:২৭-২৮) প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন। যিশু ১৮ বছর ধরে কুঁজো হয়ে থাকা একজন মহিলাকে (লূক ১৩:১২) এবং ক্রুশের পথে একদল মহিলাকে (লূক ২৩:২৭-৩১) সম্বোধন করে কথা বলেছিলেন।
(২) যিশু যেভাবে নারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাতে তাদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও উচ্চ সম্মান প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি চিন্তাশীল, যত্নশীল ভঙ্গিতে কথা বলেছেন। মথি, মার্ক এবং লূক নথিভুক্ত করেছেন যে রক্তপাতজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত মহিলাটিকে যিশু “কন্যা” বলে সম্বোধন করেছিলেন এবং প্রতিবন্ধী মহিলাকে “অব্রাহামের কন্যা” (লূক ১৩:১৬) বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাদেরকে “অব্রাহামের কন্যা” বলে অভিহিত করে যিশু তাদেরকে “অব্রাহামের সন্তান” সম্বোধনটির সমান আত্মিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন।
(৩) যিশু তাদের পাপের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে নারীদের সহজাত মূল্য দেখিয়েছিলেন।
কূপের ধারের সেই মহিলার সাথে (যোহন ৪:১৬-১৮), ব্যভিচারী মহিলার সাথে (যোহন ৮:১০-১১), এবং তাঁর পায়ে অভিষেককারী পাপী মহিলার সাথে তাঁর আচরণে (লূক ৭:৪৪-৫০) এটি দেখা যায়। তাদের পাপ উপেক্ষা করা হয়নি, বরং তাদেরকে তাদের পাপের সম্মুখীন করা হয়েছিল। তাঁর কাজ দেখিয়েছিল যে প্রতিটি নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল, তারা তাদের পছন্দের জন্য দায়ী ছিলেন, এবং তাদেরকে তাদের পাপ, অনুতাপ এবং ক্ষমার বিষয়গুলি ব্যক্তিগতভাবে মোকাবেলা করা আবশ্যিক ছিল।
নারীদের প্রতি যিশুর মূল্যবোধ আজ মন্ডলীকে কীভাবে পরিচালিত করবে
পরিচর্যা কাজে এবং পরিবারে নারীর আদর্শ বাইবেলভিত্তিক ভূমিকা আজ বহু মন্ডলী এবং সম্প্রদায়ে আলোচিত হচ্ছে, যেমনটি হওয়া উচিত, তবুও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে নারীর মূল্য এবং সমতা নিয়ে কখনও প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। ব্যক্তি হিসেবে যিশু ক্রমাগতভাবে নারীদের মূল্য এবং মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন। যিশু নারীদেরকে তাঁর পুনরুত্থানের প্রথম দূত হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন (যোহন ২০:১৭)। তিনি তাদের সহভাগিতা, প্রার্থনা, খ্রিষ্টীয় সেবা, আর্থিক সহায়তা, এবং প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যকে মূল্য দিয়েছিলেন। যিশু নারীদের সম্মান করেছিলেন, নারীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং চিন্তাশীল উপায়ে নারীদের মধ্যে পরিচর্যা কাজ করেছিলেন।
নতুন নিয়মে নারীদের প্রতি প্রদর্শিত সম্মান
পবিত্র আত্মার জীবনে নারীদের প্রতি যিশুর শ্রদ্ধার উদাহরণ দেখা যায়। পঞ্চাশত্তমীর দিনে, পুত্র ও কন্যা, এবং দাস ও দাসী উভয়ের উপর পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল (প্রেরিত ২:১৭-১৮)। পবিত্র আত্মা কোনো পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেননি।
রোমীয় ১৬ অধ্যায়ে, পৌল ফৈবী নামে একজন মহিলাকে মন্ডলীর একজন সেবক হিসেবে প্রশংসিত করেছেন (১ পদ), প্রিষ্কিল্লা এবং আকিলা উভয়কেই খ্রিষ্ট যিশুতে তাঁর সহকর্মী হিসেবে প্রশংসিত করেছেন যারা তাঁর জীবনের জন্য তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল (৩-৪ পদ), মরিয়মকে কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে (৬ পদ), জুনিয়াকে প্রেরিতদের কাছে সুপরিচিত হিসেবে (৭ পদ) এবং অন্যান্য মহিলাদেরও প্রশংসা করেছেন।
১ থিষলনীকীয়তে পৌল নারীদের ঈশ্বর-পরিকল্পিত কোমলতা এবং মাতৃপ্রেমের প্রশংসা করেছেন, যেখানে তিনি লিখেছেন, “আমরা শিশুদের মতো তোমাদের কাছে নতনম্র হয়েছিলাম। যেমন মা তাঁর শিশু সন্তানদের লালনপালন করেন” (১ থিষলনীকীয় ২:৭)। ইফিষীয়তে তিনি স্বামীদেরকে ঠিক সেইভাবে তাদের স্ত্রীদের ভালোবাসার আদেশ দিয়েছেন, “যেমন খ্রীষ্ট মণ্ডলীকে ভালোবেসেছেন এবং তার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন,” এবং তাদের নিজেদের দেহ হিসেবেও ভালোবাসতে বলেছেন (ইফিষীয় ৫:২৫, ২৮)। পিতর স্বামীদেরকে আদেশ দিয়েছেন, “তোমরা তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে বাস করার সময় সুবিবেচক হও। ... তোমরা তাদের সঙ্গে শ্রদ্ধাপূর্বক আচরণ কোরো” (১ পিতর ৩:৭)।
স্পষ্টতই, প্রারম্ভিক মন্ডলীতে নারীরা মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হত, এবং পুরুষদেরকে নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে শেখানো হত। আজকে, এই সময়ে সমস্ত আত্মিক লিডারদেরকে সমস্ত জায়গায় নারীদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং প্রতিটি সমাজ-সংস্কৃতিতে তাদের প্রতি অবহেলার বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে। আজকে আমাদেরকেও নারীদের গুরুত্ব দিতে হবে কারণ তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার নিজের প্রতিমূর্তিতে অনন্যভাবে সৃষ্ট। মন্ডলীতে বা বাড়িতে পুরুষ ও নারীর ভূমিকার পার্থক্যের যেকোনো শিক্ষা এই ভিত্তিটি দিয়েই শুরু করতে হবে, নয়তো আমাদের শিক্ষা অপব্যবহারের পথ হয়ে উঠবে।
উপসংহার
বিবাহ হল ঈশ্বরের সৃষ্টি; মানুষের নয়। তাই, আমাদেরকে নির্দেশের জন্য ঈশ্বরের কাছে যেতে হবে; জগৎ বা সমাজ-সংস্কৃতির কাছে নয়। একমাত্র তিনিই জানেন যে কীভাবে আমাদের বিয়েকে দৃঢ়, স্থায়ী এবং ফলপ্রসূ রাখতে হয়। কিন্তু পবিত্র আত্মা আমরা ছাড়া কখনোই আমাদের যেমন স্বামী-স্ত্রী হওয়া উচিত ছিল তেমন হতে পারব না!
গ্রুপে আলোচনার জন্য
► বিবাহ বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য মন্ডলীর যে নীতিগুলি শেখানো উচিত তা ব্যাখ্যা করুন। আপনার পরিবেশে কোন বোধগম্যতাটির বিশেষ অভাব রয়েছে?
► আপনার সংস্কৃতিতে কীভাবে নারীদের সাথে পুরুষদের থেকে আলাদা আচরণ করে?
► আপনার দেশের মন্ডলীগুলিতে নারীদের সাথে পুরুষদের থেকে কীভাবে আলাদা আচরণ করা হয়? মন্ডলী এবং সামাজিক সংস্কৃতির মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে?
► যিশুর উদাহরণের ভিত্তিতে, কোন রীতিনীতিগুলি পরিবর্তন করা উচিত?
প্রার্থনা
স্বর্গস্থ পিতা,
আমাদেরকে বিবাহের মতো চমৎকার উপহার দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। তোমার পরিকল্পনা অনুযায়ী বিবাহ উপভোগ করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি পূরণে সাহায্য করো।
আমাদেরকে সাহায্য করো যেন আমরা খ্রিষ্ট এবং মন্ডলীর মধ্যবর্তী প্রেমের মতো ভালোবাসা প্রদর্শন করতে পারি।
একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সংস্কৃতিগত সীমাবদ্ধতার বাইরে যেতে সাহায্য করো।
পবিত্র আত্মার কাজের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই যা আনন্দময়, শক্তিশালী সম্পর্ককে সম্ভব করে তোলে।
আমেন।
৬ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) আপনার সংস্কৃতিতে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে পার্থক্যগুলি প্রচলিত আছে সেগুলি লিখে বর্ণনা করুন। বাইবেলভিত্তিক সত্যের সচেতন প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে এই পার্থক্যগুলি সংশোধন করা যেতে পারে?
(২) আপনার কাছে নতুন এমন দু’টি নীতি এই পাঠ থেকে বেছে নিন। আপনার নিজের ভাষায় প্রতিটি নীতি ব্যাখ্যা করে একটি অনুচ্ছেদ লিখুন।
(৩) নীচে তালিকাভুক্ত বিষয়গুলির একটির উপর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা প্রস্তুত করুন। (ক্লাস লিডার প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি বিষয় নির্ধারণ করবেন।) পরবর্তী ক্লাসের শুরুতে উপস্থাপনাটি শেয়ার করুন।
বিবাহে ঈশ্বরের একতার ডিজাইন
বিবাহের বাইবেলভিত্তিক উদ্দেশ্যসমূহ
কারো বিবাহকে দৃঢ় করার উপায়সমূহ
নারীদের ব্যাপারে একটি বাইবেলভিত্তিক দৃষ্টিকোণ
বিবাহে ঈশ্বরপ্রদত্ত ভূমিকাসমূহ, এবং সেই ভূমিকাগুলি পালন করার জন্য পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হওয়ার গুরুত্ব
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.