জন ওয়েসলি (John Wesley) ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৯১ সালে মারা যান। তিনি সেই সমস্ত দরিদ্র লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন যাদের চার্চে প্রবেশ করার অনুমতি ছিল না। তিনি খুব সচেতনতার সাথে জীবনযাপন করতেন, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে সম্মান করার চেষ্টা করতেন, যার মধ্যে অর্থের ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি শিক্ষা দিতেন যে, যখন বিশ্বাসীরা অর্থ উপার্জন করে, তখন তাদের যথাসাধ্য সঞ্চয় করা উচিত এবং যথাসাধ্য দান করা উচিত। তিনি সুশৃঙ্খল আর্থিক অভ্যাস অনুশীলনের একজন বিশ্বস্ত দৃষ্টান্ত ছিলেন। তিনি তার বার্ষিক খরচ কমিয়েছিলেন, যাতে তার দান করার জন্য অতিরিক্ত কিছু থাকে। তারপর, যখন তার উপার্জন বৃদ্ধি পায়, তখনও তিনি তার ব্যয় একই রেখেছিলেন এবং অতিরিক্ত অর্থ দান করেছিলেন। যদিও তিনি তার জীবনকালে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছিলেন, তবুও মৃত্যুর সময় তার কাছে কেবল সামান্য অর্থই অবশিষ্ট ছিল। ওয়েসলি জানতেন যে ঈশ্বর তাঁর জন্য অর্থের তত্বাবধান করার জন্য মানুষকে বিশ্বাস করেন, এবং তিনি শিক্ষা দিয়েতেন যে অর্থের লেনদেনের জন্য বিশ্বাসীদের ঈশ্বরের নীতি অনুসরণ করা উচিত।
ভূমিকা
নতুন নিয়মে অন্যান্য বেশিরভাগ বিষয়ের তুলনায় অর্থের উল্লেখ বেশি করা হয়েছে, এবং এর কারণ এই নয় যে অর্থ ঈশ্বরের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, বরং এর কারণ হল টাকাপয়সা নিয়ে মানুষের অনেক সমস্যা রয়েছে।
সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, ঈশ্বর সকল মানুষের এবং তাদের সম্পদের মালিক। বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা এক বিশেষ উপায়ে ঈশ্বরের, কারণ তিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন। আমাদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের গৌরবের জন্য ব্যবহৃত সম্পদের ম্যানেজার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
ভালো জিনিস উপভোগ করা ভুল নয়। যদি আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে এবং নম্রভাবে সবকিছু গ্রহণ করি, তাহলে ঈশ্বর আমাদেরকে আশীর্বাদ করে সন্তুষ্ট হন।
কিন্তু অর্থ হল বহু মানুষের কাছেই এক আত্মিক বিপদ।
ধনী ব্যক্তিদের জন্য কিছু সতর্কতা এবং নির্দেশনা
► ধনী হওয়ার অর্থ কী?
একজন ব্যক্তিকে ধনী হিসেবে বিবেচনা করার বিভিন্ন কারণ আছে।
যদি আপনার কাছে আপনার প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন চাহিদার চেয়ে বেশি জিনিস কেনার মতো অর্থ থাকে, তাহলে আপনি পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের চেয়ে বেশি ধনী। বহু মানুষ তাদের দৈনিক খাদ্য জোগান দেওয়ার জন্য কাজ করে; যদি এমনকিছু ঘটে যার ফলে তাদের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তাদের সেদিন খাবার মতো কিছুই থাকবে না।
লোকেরা সাধারণত সেই ব্যক্তিকে ধনী বলে বিবেচনা করে যে তার নিজের সমাজের বাকিদের চেয়ে বেশি সম্পদের অধিকারী। তার জীবনযাত্রা দেখায় যে বেশিরভাগ লোকের তুলনায় সে বেশি অর্থ খরচ করে। লোকেরা তাকে উচ্চ সামাজিক স্তরের মনে করে। সে এমন বিলাসিতা উপভোগ করতে পারে যা বেশিরভাগ লোকে কিনতেই পারে না। কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদেরকে সে প্রভাবিত করতে পারে। তার ধন-সম্পদের কারণে লোকেরা তার সেবা করতে প্রস্তুত থাকে।
পবিত্র বাইবেলে ধনী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশনা এবং সতর্কতা আছে।
একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হল স্বয়ং যিশুর একটি উক্তিতে বলেছেন যে একজন ধনী ব্যক্তির পক্ষে স্বর্গে যাওয়া খুবই কঠিন (মথি ১৯:২৪)।
ধনী ব্যক্তিদের জন্য প্রেরিত পৌলের একটি বার্তা থেকে আমরা ধনসম্পদের বিপদ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে পারি।
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য ১ তিমথি ৬:১৭-১৯ পদ পড়বে।
পৌল ধনী ব্যক্তিদের সতর্ক করেছেন যে তারা যেন নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে উচ্চস্তরের না মনে করে। ধনী ব্যক্তিদের নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে উৎকৃষ্ট ভাবার একটি প্রলোভন রয়েছে। যাকোব সতর্ক করেছেন যে মন্ডলীরও লোকেদেরকে তাদের সম্পদ বা সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠিতে সম্মান করার এই একই ভুল করা উচিত নয় (যাকোব ২:১-৪)।
ধনী ব্যক্তিদের নিজের ধন-সম্পদের কারণে নিরাপদ বোধ করা উচিত নয়, বরং তাদের ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা উচিত। একজন ধনী ব্যক্তির কাছে যখন আর্থিক সংস্থান মজুত থাকে, তখন তাদের পক্ষে ঈশ্বরের সংস্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা বেশ কঠিন। ঈশ্বরের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করার কারণে আত্মিকভাবে অসতর্ক হয়ে যাওয়ার একটি প্রবণতা থাকে (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৬-১৮)।
ধনীব্যক্তিদের উদারচিত্ত দাতা হওয়া উচিত এবং তাদের অর্থ দিয়ে ভালো কাজ করা উচিত।
যাকোব ৫:৫ পদে জাগতিকভাবে ধনী ব্যক্তিদের প্রতি অন্যতম দোষারোপ হল যে অন্যেরা যখন কষ্টভোগ করে, তারা বিলাসিতায় জীবন যাপন করে। বুদ্ধিপূর্বক দানের মাধ্যমে অনেক ভালো কাজই সাধন করা সম্ভব। অর্থ সুখ কিনতে পারে না, কিন্তু এটি অনেক কষ্টকে লাঘব করতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি অন্যের কষ্টভোগের সময়ে নিজে বিলাসিতায় থাকে, তা মন্দ।
ভাববাদী আমোষের মাধ্যমে ঈশ্বর এই কথাগুলির মাধ্যমে মানব বিচারের (দরিদ্র এবং নিপীড়িতদের প্রতি দয়া এবং করুণা) প্রতি তাঁর মনের কথাকে তুলে ধরেছেন: “কিন্তু ন্যায়বিচার নদীর মতো প্রবাহিত হোক,ধার্মিকতা কখনও শুকিয়ে না যাওয়া স্রোতের মতো হোক” (আমোষ ৫:২৪)। ঈশ্বর সেই সময়ে সমৃদ্ধির উপর বিচার ঘোষণা করেছিলেন, যখন সমৃদ্ধি স্বাচ্ছন্দ্য, আত্মতৃপ্তি এবং দরিদ্রদের দুর্দশার প্রতি উদাসীনতার দিকে পরিচালিত করেছিল (আমোষ ৬:১, ৩-৬; আমোষ ৮:৪-৭, ১১-১২)।
প্রত্যেক বিশ্বাসীর দরিদ্র এবং নিপীড়িতদের সাহায্য করার জন্য ত্যাগস্বীকার করে দান করা উচিত, তার স্থানীয় মন্ডলীকে সাহায্য করার জন্য দশমাংশ দেওয়া উচিত, এবং সুসমাচারের বিস্তারের জন্য মিশনারি কাজকে সহায়তা করতে দান করা উচিত। জন ওয়েসলি (John Wesley) বলেছিলেন যে তিনটি কারণের জন্য তার সময়কালে মন্ডলী জগতে বিশেষ প্রভাব ফেলতেই পারেনি:
১। সঠিক ধর্মতত্বের অভাব
২। দায়বদ্ধ শৃঙ্খলার অভাব
৩। ব্যক্তিগত ত্যাগের অভাব
অর্থের প্রতি ভালোবাসা
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য ১ তিমথি ৬:৮-১০ পদ পড়বে।
অর্থের ব্যাপারে এই সতর্কতা কেবল ধনী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে তা নয়। অনেক দরিদ্র ব্যক্তি মনে করে যে তারা দরিদ্র বলে তারা কখনোই খুশি হতে পারবে না। বাইবেল আমাদের বলে যে অর্থের প্রতি ভালোবাসা সকল ধরণের মন্দতার কারণ। এই সতর্কতাটি সকলের জন্য প্রযোজ্য।
অর্থের প্রতি ভালোবাসা কোনোদিনই সন্তুষ্ট বা তৃপ্ত হয় না। যে ব্যক্তি অর্থকে ভালোবাসে, সে এর কোনো পরিমাণ নিয়েই কোনোদিন সন্তুষ্ট হবে না (উপদেশক ৫:১০)। বাইবেল আমাদের বলে যে আমাদের অর্থের প্রতি ভালোবাসা এড়িয়ে চলা উচিত এবং আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণেই সন্তষ্ট থাকা উচিত (ইব্রীয় ১৩:৫)।
যে ব্যক্তি প্রবলভাবে ধনী হতে চায়, তার কাছে নিজের চরিত্রের সাথে আপোস করার একাধিক প্রলোভন আছে। ধনী হয়ে ওঠার চেষ্টার পদ্ধতির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার বিশ্বাস ত্যাগ করতে পারে, এবং তার প্রত্যাশিত আনন্দের পরিবর্তে একাধিক দুঃখ বয়ে আনতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতারা তাদের অনুসারীদেরকে সম্পদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করে। তারা বলে যে বিশ্বাসী ব্যক্তির ধন-সম্পদ থাকা উচিত। দরিদ্র সমাজের অনেক মানুষ এই প্রতিশ্রুতি দ্বারা আকৃষ্ট হয়, কারণ তাদের জীবনযাত্রা কঠিন। এই নেতারা প্রতিনিয়ত অর্থ সম্পর্কে কথা বলে এবং প্রচার করে, এবং জগতের লোকেরা যে আর্থিক সাফল্যের লক্ষণ দেখায়, তারাও সেই একই লক্ষণ দেখাতে পেরে গর্বিত হয়।
পবিত্র বাইবেল বলে যে ভক্তির সাথে পরিতৃপ্তি যুক্ত থাকলে তা মহালাভজনক (১ তিমথি ৬:৬)। যে ব্যক্তি ধর্মীয় উপায়ে সম্পদের পিছনে ছোটে, তার বিপদ পৃথিবীর অন্য যেকোনো ব্যক্তির মতোই, যারা সম্পদের পিছনে ছুটছে। যেসব মন্ডলী সম্পদের প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা এমন লোকেদের আকর্ষণ করে যারা তাদের ব্যক্তিগত আকাঙ্খার কাছে নতিস্বীকার করে রূপান্তরিত হয়নি। তবে, এই মন্ডলীগুলি আশাবাদী লোকেদের দ্বারা পূর্ণ, যারা কখনো প্রতিশ্রুত জিনিসগুলি পায় না। সম্পদের সুসমাচারের মাধ্যমে একমাত্র যারা ধনী হয়, তারা হল প্রচারক, যারা তাদের বিশ্বাস করে এমন লোকেদের কাছ থেকে দান-উপহার সংগ্রহ করে।
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য ফিলিপীয় ৪:১০-১৩ পদ পড়বে।
ফিলিপীয় মন্ডলীর বিশ্বাসীরা সাহায্যের জন্য দান পাঠিয়েছে বলে পৌল কৃতজ্ঞ ছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন যে তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে, এমনকি ক্ষুধার্ত অবস্থাতেও সন্তুষ্ট থাকতে শিখেছেন। এই উক্তিটি আমাদের দেখায় যে পৌলের সবসময়েই যে প্রচুর অর্থ ছিল, তা নয়। তিনি বলেছিলেন যে ঈশ্বরের সাহায্যে তিনি সবকিছু করতে পারেন। এই উক্তির প্রেক্ষাপট থেকে বোঝা যায় যে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি সন্তুষ্ট এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন।
সততা
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য হিতোপদেশ ১১:১ পদ পড়বে।
এই পদটি বিভিন্ন পরিমাপের কথা বলছে যা ওজন হিসেবে কোনোকিছু বিক্রির জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন ফল বা সব্জি বা মাংস। কিছুক্ষেত্রে লোকেরা এমন দাঁড়িপাল্লা বা ওজনযন্ত্র ব্যবহার করে যা ভুল ওজন দেয়, যাতে তারা অতিরিক্ত টাকা নিতে পারে। এই পদটি বলে যে ঈশ্বর অসাধুতা ঘৃণা করেন।
বহু মানুষ টাকার জন্য অসৎ কাজকর্ম করেন। এই কোর্সের পরবর্তী পাঠটি সততার বিষয়ে।
ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা
সাধু পৌল ফিলিপীয় মন্ডলীর বিশ্বাসীদেরকে চিঠি লিখেছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর তাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করবেন। এটি একটি অপূর্ব প্রতিজ্ঞা। আমাদের সেই অনুচ্ছেদটি দেখা উচিত যেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতিটি দেখা যায়।
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য ফিলিপীয় ৪:১৫-১৯ পদ পড়বে।
এই মন্ডলীটি পৌলকে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন এটি ছিল ঈশ্বরের প্রতি নৈবেদ্য। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর তাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করবেন। তিনি তাদের এক বিশাল অর্থ-বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেননি।
এই প্রতিশ্রুতিটি সেইসব ব্যক্তিদের জন্য ছিল না যারা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অপচয়কারী ছিল। এটি সেইসব ব্যক্তিদের জন্য ছিল যারা আত্মিক অগ্রাধিকার অনুযায়ী তাদের অর্থের তত্বাবধান করত।
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য মথি ৬:২৫-৩৩ পদ পড়বে।
যিশু বলেছিলেন যে কীভাবে ঈশ্বর পাখিদের খাবার জোগান দেন এবং ফুলকে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করেন, এবং তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে ঈশ্বর আমাদেরও যত্ন নেন। তিনি আমাদেরকে আমাদের বেঁচে থাকা নিয়ে চিন্তিত হতে বারণ করেছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে যদি আমরা ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখি, তাহলে আমাদের সমস্ত চাহিদা পরিপূরণ হবে।
মানুষ সাধারণত আজকের কথা চিন্তা করে না, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। ঈশ্বর অনেক আগে থেকেই সবকিছু জুগিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি। মনে রাখবেন যে পুরাতন নিয়মে যখন মান্না পড়েছিল, তখন সেটি প্রতিদিন আসত (যাত্রা পুস্তক ১৬)। একইভাবে, যিশু বলেছিলেন যে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের জন্য প্রার্থনা করা উচিত (মথি ৬:১১)। ঈশ্বর চান আমরা প্রতিদিন তাঁর উপর নির্ভর করি।
যাকোব বলেছেন যে ঈশ্বর দরিদ্রদেরকে বিশ্বাসে ধনী করেছেন (যাকোব ২:৫)। যারা মনে যে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা আছে, তাদের তুলনায় দরিদ্র ব্যক্তিদের ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার একটি তুলনামূলকভাবে ভালো সুযোগ আছে।
ঈশ্বরে নির্ভর করার মানে এই নয় যে আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়া উচিত। ঈশ্বর সাধারণত আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের প্রয়োজনসকল পূরণ করেন (ইফিষীয় ৪:২৮)। যদি কোনো ব্যক্তি কাজ করতে ইচ্ছুক না হয়, তাহলে তার আশা করা উচিত নয় যে ঈশ্বর তার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবেন, এবং অন্যদেরও তাকে দান করার জন্য বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয় (১ থিষলনীকীয় ৩:১০)।
আমাদের আশা করা উচিত নয় যে ঈশ্বরের সংস্থান আমাদের ধনী করবে। ঈশ্বর অল্প কিছু লোককে ধন-সম্পদের আশীর্বাদ করেন, কিন্তু সকলের জন্য ধন-সম্পদের ঈশ্বরের পরিকল্পনা নয়। যে ব্যক্তি ধন-সম্পদের তীব্র আকাঙ্খা করে, সে আত্মিক সমস্যায় পড়বে।
কার্যকারী সম্পদসমূহ
কার্যকারী সম্পদ হল মানুষের অধিকারভুক্ত এমন ধন-সম্পদ যা তাদেরকে উৎপাদনে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, জমি, একগুচ্ছ সরঞ্জাম, বা একটি কম্পিউটার। একজন ব্যক্তি লাভের জন্য একটি কার্যকারী সম্পদ ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু তাকে অবশ্যই সেটির তদারকি করতে হবে এবং সেটি বিক্রি করে দিলে চলবে না, নয়তো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। একটি কার্যকারী সম্পদের বাইবেলভিত্তিক উদাহরণ হল হিতোপদেশ ১৪:৪, “বলদ না থাকলে জাবপাত্রও পরিষ্কার থাকে, কিন্তু বলদের ক্ষমতাতেই প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়।”
একজন দরিদ্র ব্যক্তি কার্যকারী সম্পদের ধারণাটি নাও বুঝতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সে সম্ভবত অনুমান করে নিতে পারে যে তার বন্ধুর কাছে প্রচুর টাকা আছে কারণ তার কাছে দামি সরঞ্জাম, কম্পিউটার, গাড়ি আছে। সে মনে করে যে তার বন্ধু বা আত্মীয় যার কাছে এরকম কিছু আছে, তার প্রয়োজনের সময় সেই ব্যক্তির তাকে টাকা দেওয়া উচিত। তবে, এই জিনিসগুলির যেকোনো একটি কার্যকরী সম্পদ হতে পারে যা বিক্রি করলে ব্যক্তি তার উপার্জন হারাতে পারে।
► আপনার সমাজব্যবস্থায় আরো কিছু কার্যকারী সম্পদের উদাহরণ কী কী হতে পারে?
যদি একজন ব্যক্তি বুঝতে না পারে যে কার্যকারী সম্পদ অন্যদের জন্য কীভাবে কাজ করে, তাহলে সে সম্ভবত জানে না যে কোন সম্পদ তার জন্য একইভাবে কাজ করবে। সে হয়ত ঠিকভাবে বলতে পারবে না যে তার সবচেয়ে বেশি কী প্রয়োজন আছে, বা কোন ধরণের সাহায্য তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে। সে হয়ত জীবনের প্রকৃত পরিবর্তনের পরিবর্তে তার দৈনন্দিন প্রচেষ্টায় তাৎক্ষণিক, সংক্ষিপ্ত বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সাহায্যের ব্যাখ্যা দেবে।
দারিদ্র্যের একটি দিক হল কার্যকারী সম্পদের অভাব। দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ব্যক্তি যদি কার্যকারী সম্পদ অর্জন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা না শেখে, তাহলে সে কোনোমতেই নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে পারবে না।
কিছু কিছু সমাজব্যবস্থায়, একজন ব্যক্তির পক্ষে অর্থ সঞ্চয় করা এবং কার্যকারী সম্পদ বিকাশ করা কঠিন, কারণ তার চারপাশের লোকেরা আশা করে যে সে সবকিছুই সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেবে। তারা বুঝতে পারে না যে কেন সে অর্থ সঞ্চয় করছে, যখন অন্য কারোর অর্থের প্রয়োজন। তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলেও তার কাছে যা আছে তা ভাগ করে নেওয়ার আশা করে।
খ্রিস্টের একজন অনুসারীকে তার সংস্কৃতির প্রত্যাশাগুলিকে সম্মান করতে হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে বাইবেলের নীতিগুলিও প্রয়োগ করতে হবে। শাস্ত্র আমাদের বলে যে আমরা এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে বাধ্য নই যে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে না (১ থিষলনীকীয় ৩:১০)। যদি কোনো ব্যক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য তার কার্যকারী সম্পদ দান করে, তাহলে তারা দু’জনেই দরিদ্র থাকবে।
শাস্ত্র থেকে বোঝা যায় যে ঈশ্বর যে ধরণের সমৃদ্ধি দান করেন তা হল মানুষের নিজস্ব কার্যকারী সম্পদ থাকা। ভাববাদী মীখা বলেছিলেন যে একটি আশীর্বাদপ্রাপ্ত সমাজে, প্রতিটি ব্যক্তির নিরাপদে নিজস্ব দ্রাক্ষালতা এবং ডুমুর গাছ থাকবে (মীখা ৪:৪)। এটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তি এবং কিছু উৎপাদনের উপায়কে বোঝায়। কিছু জায়গায়, কৃষি উৎপাদনের সর্বোত্তম উপায় নাও হতে পারে, তবে নীতিটি হল যে আশীর্বাদধন্য ব্যক্তিদের সম্পদ উৎপাদনের জন্য যা প্রয়োজন তা থাকা উচিত।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বাসী হয়ে ওঠা দরিদ্র ব্যক্তিরা কেবল ঈশ্বরের সরাসরি আশীর্বাদের কারণেই নয়, বরং তাদের উন্নত জীবনযাত্রার কারণেও আরো সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। তারা মদ, জুয়া এবং ভুল বিনোদনের মতো জিনিসগুলিতে অর্থ অপচয় করা বন্ধ করে দেয়। তারা আরো ভাল কর্মী হয়ে ওঠে এবং আরো সুনাম অর্জন করে। ঈশ্বর তাদের মিনিস্ট্রির কাজে সহায়তায় আশীর্বাদ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বাসীর পরিবারের প্রথম প্রজন্মের তুলনায় দ্বিতীয় প্রজন্ম অনেক ভালো পরিস্থিতিতে থাকে।
► আপনার সমাজব্যবস্থায় লোকেরা তাদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোন কোন উপায়ে কাজ এবং সঞ্চয় করতে পারে?
জুয়া খেলা
জুয়া খেলা মানে অবাধে টাকা কামানোর জন্য অর্থের ঝুঁকি নেওয়া। যে জেতে সে প্রত্যেক হেরে যাওয়া লোকের কাছ থেকে টাকা নেয়, বিনিময়ে তাদেরকে কিছুই দেয় না। অনেকেই জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তাদের টাকা নষ্ট করে, এবং তাদের পরিবারের যত্ন নিতে ব্যর্থ হয়। অনেকেই অন্য কারোর টাকা ধার নিয়ে জুয়া খেলায় ব্যবহার করে, এই আশায় যে তারা জিতবে এবং তা ফেরত দিতে পারবে। বহু লোক জুয়া খেলার জন্য চুরির অভিযোগে কারাগারে আছে। দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা অনেক মানুষ জুয়া খেলে, কারণ তারা মনে করে যে ভাগ্যবান হওয়া এবং টাকা জেতা ছাড়া তাদের পরিস্থিতি পরিবর্তনের আর কোনো আশা নেই।
জুয়া খেলা হল একাধিক খ্রিস্টীয় নীতির বিরুদ্ধ কাজ:
১। কাজ করার মাধ্যমে সম্পদ উপার্জনের নীতি (ইফিষীয় ৪:২৮)
২। সন্তুষ্টির নীতি (১ তিমথি ৬:৬)
৩। বপন এবং ছেদন করার নীতি (গালাতীয় ৬:৭)
এছাড়াও, ঈশ্বর চান আমরা ভাগ্যের জোরে অন্য কারোর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরিবর্তে আমরা যেন লাভের জন্য পরিষেবা বা পণ্য সরবরাহ করি। জুয়া খেলা ক্ষতিকারক, কারণ এটি আসক্তিকর এবং এটি অপরাধ বৃদ্ধি করে।
জুয়া খেলা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার বিপরীত। একজন ব্যক্তির প্রশ্ন করা উচিত, “আমি কি বিশ্বাস করি যে ঈশ্বর আমার যত্ন নিচ্ছেন?” “আমি কি প্রার্থনা করতে পারি যে ঈশ্বর আমার ভরণপোষণ করবেন?” “আমি কি বিশ্বাস করি যে জুয়া খেলার জন্য অর্থের ঝুঁকি নিয়ে, অন্য কারো কাছ থেকে টাকা জেতার মাধ্যমে ঈশ্বর আমার ভরণপোষণ করতে চান?” “আমি কি মনে করি যে ঈশ্বর আমাকে প্রচুর পরিমাণে জিতিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জুয়া খেলার জন্য পুরস্কৃত করবেন?” যে ব্যক্তি জুয়া খেলে সে তার আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখে না। যখন আমরা সত্যিই ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখি, তখন আমরা তাঁর স্পষ্ট নির্দেশাবলী মেনে চলি, কারণ আমরা জানি যে তিনি আমাদের বাধ্যতার ফলস্বরূপ বিশ্বস্ততার সাথে আমাদের চাহিদাগুলি পূরণ করবেন।
ঋণ নেওয়া
যখন একজন ব্যক্তি টাকা ধার করে, তখন সে মনে করে যে ভবিষ্যতে সে যে টাকাটা পাবে তা দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। অতএব, ধার করা মানে ভবিষ্যতের টাকা ব্যয় করা, যদিও ভবিষ্যতে নতুন চাহিদাও আসবে।
পবিত্র বাইবেল বলে যে ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার দাস (হিতোপদেশ ২২:৭)। ঋণগ্রহীতা এমন বাধ্যবাধকতা তৈরি করে যা তার স্বাধীনতাকে সীমিত করে।
কিছু ধরণের ঋণ অন্যগুলির চেয়ে আরও খারাপ। যখন একজন ব্যক্তি খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদার জন্য টাকা ধার করে, তখন সে আরো খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে। খাবার শেষ হয়ে যাবে, ঋণ থেকে যাবে এবং সে আগের চেয়ে আরো দরিদ্র হয়ে পড়বে।
যখন একজন ব্যক্তি অপ্রয়োজনীয় কিছুর জন্য টাকা ধার করে, যেমন ব্যক্তিগত সাজসজ্জা, অপ্রয়োজনীয় পোশাক, বিনোদন, অথবা ঘর সাজানো, তখন সে তার ভবিষ্যতের টাকা ব্যয় করছে। সে তার ভবিষ্যতের স্বাধীনতা সীমিত করছে; ভবিষ্যতে আর জিনিসপত্র কিনতে পারবে না, কারণ টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়ে গেছে।
কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদের হারে টাকা ধার দেয়। যারা তাদের কাছ থেকে ঋণ নেয় তারা খুব দ্রুত তাদের মূল ধারের চেয়ে অনেক বেশি ঋণী হয়ে যায়। কিছু দোকান উচ্চ সুদের হারে ঋণে জিনিসপত্র বিক্রি করে। লোকেরা ঋণে জিনিসপত্র কেনার জন্য শেষ পর্যন্ত অনেক বেশি দাম দেয়, কারণ তারা স্বাভাবিক মূল্য পরিশোধ করার জন্য পর্যাপ্ত টাকা অর্জন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক নয়।
কখনো কখনো মানুষ তাদের সমাজসংস্কৃতির প্রত্যাশিত ব্যয়বহুল বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য টাকা ধার করে। তারা একটি বড় ঋণ নিয়ে তাদের বিবাহিত জীবন শুরু করে। বিশ্বাসের পরিবার হিসেবে মন্ডলীর উচিত নতুন ঐতিহ্য গড়ে তোলার মাধ্যমে অথবা অত্যধিক ব্যয়বহুল না করে বিবাহকে সুন্দর করার উপায় খুঁজে বের করার মাধ্যমে তার সদস্যদের সাহায্য করা।
► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৩:৭-৮ পদ পড়বে।
এই পদগুলি আমাদের বলে যে আমরা অন্যদেরকে যা দিতে বাধ্য, তা আমাদের তাদেরকে দিতে হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে সম্মান করতে এবং তাদের অনুগত হয়ে চলতে বাধ্য। আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য। ৮ম পদের প্রথম বাক্যটি ৭ম পদের বিবৃতিগুলিকে সারসংক্ষিপ্ত করেছে। আমাদের কখনোই অন্যদেরকে যা দেওয়ার কথা, তা দিতে ব্যর্থ হওয়া উচিত নয়। এর মানে এই নয় যে আমাদের কখনো ঋণ করা উচিত নয়, কারণ আমরা ঋণদাতাকে যা ফেরত দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছি তা যদি আমরা ফিরিয়ে দিই, তাহলে আমরা আমাদের যা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা তা ফেরাতে ব্যর্থ হচ্ছি না।
যদি কেউ পরিশোধ করার মানসিকতা ছাড়াই ধার করে, বা ধার করে নেওয়ার পরে পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা অন্যায় (গীত ৩৭:২১)।
পুরাতন নিয়মের বিধানগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইস্রায়েল জাতিকে একটি প্রাচীন কৃষিপ্রধান সমাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে এবং তাদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উৎপাদন করে জীবনযাপন করত। বহু প্রজন্ম ধরে পরিবারগুলি একই জমির মালিক ছিল। অতএব, জমি কিনতে বা ব্যবসা শুরু করার জন্য কারোর কাছে টাকা ধার করা বিরল ছিল। যদি কোনো ব্যক্তি টাকা ধার করত, তবে এর কারণ ছিল তার খারাপ পরিস্থিতি এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য টাকার প্রয়োজনীয়তা। ঈশ্বর চেয়েছিলেন ইস্রায়েল এমন একটি বিশ্বাসী পরিবার হোক যে তার সদস্যদের যত্ন নেয়। ঈশ্বর তাদেরকে কোনোরকম সুদ ছাড়াই অভাবী লোকদের টাকা ধার দিতে বলেছিলেন (যাত্রা পুস্তক ২২:২৫)। গীত ১৫ অধ্যায়ে বর্ণিত একজন ধার্মিক ব্যক্তির একটি বৈশিষ্ট্য হল যে সে সুদে টাকা ধার দেয় না (যিহিষ্কেল ১৮:৫-৯ মূলত গীত ১৫-এর অনুরূপ)।
ব্যবসা শুরু করার জন্য কাউকে ঋণ দেওয়ার সময়ে একজন বিনিয়োগকারীর সুদ নেওয়া অন্যায় নয় (মথি ২৫:২৭)। ব্যবসাটিকে সম্ভব করার জন্য বিনিয়োগকারীর পুরষ্কার হল সেই সুদ।
যারা দরিদ্রদের সাথে ব্যবসা করে, তাদের কেবল লাভ করার উপায় নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয় (হিতোপদেশ ২২:১৬ক)। নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা বা অন্যায্য দাম নেওয়া অন্যায়, কারণ দরিদ্রদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। কঠিন পরিস্থিতির কারণে ঋণ নেওয়া লোকেদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফা নেওয়ার উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া বা ধারে জিনিসপত্র বিক্রি করা অন্যায়। একজন ব্যবসায়ীর উচিত তার গ্রাহকদের পরিস্থিতির উন্নতির উপায় খুঁজে বের করা।
ভাববাদী যিহিষ্কেল বলেছিলেন যে সদোমের পাপ কেবল যৌনতাজনিত অনৈতিকতা ছিল না, এর সাথে ছিল লোকেদের বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং দরিদ্র ও দুঃস্থদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক না থাকা (যিহিষ্কেল ১৬:৪৯)। ঈশ্বর আমাদের কেবল দরিদ্রদেরকে দান করতেই বলেননি, বরং তাদেরকে সক্ষম করে তোলার জন্য কৌশলগত উপায়ে দান করতে বলেছেন।
প্রাচীন ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের বিধান আমাদেরকে তাঁর অগ্রাধিকারগুলি দেখায়। আজ আমাদের দেশের আইন ঈশ্বর ইস্রায়েলকে যে বিধান দিয়েছিলেন তার মতো নয়, তবে ঈশ্বরের চিন্তা-ভাবনাগুলি একই এবং নীতিগুলিও একই। মন্ডলীর উচিত দরিদ্রদের সক্ষম করার উপায় খুঁজে বের করা, প্রথমে বিশ্বাসের পরিবারের যত্ন নেওয়া, তারপর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পরিবর্তন আনা।
বাজেটিং বা অর্থ পরিচালনা
কিছু ব্যক্তি টাকা পাওয়ার সাথে সাথেই তাদের সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরবর্তী টাকা পাওয়ার আগেই তারা অভাবের সম্মুখীন হয়। তারা অন্যদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম হয়।
বাজেট হলো নিয়মিত খরচ ম্যানেজ করারএকটি পরিকল্পনা। বেশিরভাগ মানুষেরই নির্দিষ্ট সময়ে কিছু খরচ থাকে, এবং তাদের সেই চাহিদা পূরণের জন্য আগে থেকেই টাকা জমা রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো বাড়ি ভাড়া নিচ্ছে। তাকে মাসিক বা বার্ষিক ভাড়া দিতে হবে। সুতরাং, তাকে তার আয়ের একটি অংশ ধারাবাহিকভাবে সঞ্চয় করতে হবে যাতে সময় এলে সে ভাড়া দিতে সক্ষম হয়। যদি তার ভাড়া বার্ষিক হয়, তাহলে সে দীর্ঘ সময়ের জন্য কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখবে, এবং তা ব্যবহার করার প্রলোভন দেখা দিলেও তাকে সেই টাকা সংরক্ষণ করে রাখতে হবেএবং বিবেচনা করা উচিত যে তা ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়ে গেছে।
প্রথম সংরক্ষিত অর্থ হওয়া উচিত দশমাংশ (হিতোপদেশ ৩:৯-১০)। আপনার আয়ের ১০% পরিচর্যার কাজে দান করার অঙ্গীকার করা উচিত। ব্যয় করার পরে দশমাংশের জন্য আপনার কাছে অতিরিক্ত অর্থ আছে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন না। ঈশ্বর আপনার বিশ্বস্ততাকে আশীর্বাদ করবেন।[1]
অবশিষ্ট আয় দিয়ে মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে, একজন ব্যক্তির জরুরি অবস্থার জন্য অর্থ সংরক্ষণ করা উচিত। তার উচিত তার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কিছু অর্থ সংরক্ষণ করা, যেমন নিজের বাড়ি কেনার জন্য অর্থ সঞ্চয় করা। তার আয় বৃদ্ধির জন্য কিছু অর্থ বিনিয়োগ করার চেষ্টা করা উচিত। একটি ছোটো বিনিয়োগের উদাহরণ হতে পারে এমন সরঞ্জাম কেনা যা তাকে কাজের মাধ্যমে আরো বেশি উপার্জন করতে সাহায্য করে।
যে ব্যক্তির একটি কার্যকারী সম্পদ (যা তাকে কোনোকিছু উৎপাদন করতে সাহায্য করে) যেমন, একটি গাড়ি বা বাড়ি আছে, তার সম্পদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বাজেট করা উচিত। যদি কোনো ব্যক্তি তার গাড়ি দিয়ে লাভ উপার্জন করে, কিন্তু অর্থ সংরক্ষণ না করে, তাহলে সে গাড়িটির বড়ো কোনো মেরামতির জন্য অর্থ প্রদান করতে বা অন্য একটি কিনতে পারবে না, এবং তার লাভ অবশেষে শেষ হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি বাজেট করে না সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হতে পারে। সে সাহায্যের জন্য অন্যদের উপর নির্ভর করতে পারে, এবং অন্যদের সাহায্য করতে অক্ষম হতে পারে। তার পরিস্থিতির কখনো উন্নতি হয় না, কারণ সে কোনোভাবেই বিনিয়োগ করে না।
যিশু সেই উত্তম শমরীয় ব্যক্তির সম্পর্কে বলেছিলেন যিনি আহত ব্যক্তিকে সাহায্য করেছিলেন (লূক ১০:২৫-৩৭)। লক্ষ্য করুন যে শমরীয় ব্যক্তির কাছে কিছু টাকা এবং আহত ব্যক্তিটিকে বহন করার জন্য একটি গাধা ছিল। যদি শমরীয় ব্যক্তিটি ইতিমধ্যেই তার গাধাটি বিক্রি করে তার সমস্ত অর্থ ব্যয় করে ফেলত তাহলে কী হত? এমনকি যদি তার সাহায্য করার সদিচ্ছাও থাকত, তবুও সেই পরিস্থিতিতে তার হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা সীমিত থাকত।
বাজেটিং একজন ব্যক্তিকে তার চাহিদা পূরণের জন্য প্রস্তুত হতে, তার উপর নির্ভরশীলদের দায়িত্ব নিতে, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে, জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে, এবং পরিচর্যা কাজে সহায়তা করতে সক্ষম করে তোলে।
[1]Shepherds Global Classroom-এর মন্ডলীর মতবাদ ও অনুশীলন নামক কোর্সে দশমাংশের বিষয়ে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা https://www.shepherdsglobal.org/courses-তে উপলব্ধ।
বিশ্বাসের পরিবার
পঞ্চাশত্তমীর পরে, মন্ডলীর প্রথমদিকের দিনগুলিতে, বিশ্বাসীরা বিশ্বাসী পরিবারের প্রতি এতটাই নিবেদিতপ্রাণ ছিল যে তারা নিশ্চিত করত যে সকলের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। তারা তাদের সম্পত্তি ভাগ করে নিত, এবং কেউই কিছু নিজের বলে দাবি করত না। তাদের অনেকেই সম্পত্তি বিক্রি করে মন্ডলীতে সেই অর্থ দান করেছিল (প্রেরিত ২:৪৪-৪৫)। যদিও আমরা আশা করতে পারি না যে মন্ডলীর জীবনযাত্রা সবসময়ে ঠিক এরকমই থাকবে, কিন্তু আমরা এইটা দেখার প্রত্যাশা রাখি যে যখন মন্ডলী তার সেরা অবস্থায় থাকে, তখন সেখানে উদারতা এবং পরিবারের যত্ন নেওয়ার অঙ্গীকার আছে।
থিষলনীকীয় মন্ডলীর বিশ্বাসীরা নিশ্চিত করছিল যে সকল সদস্যকে খাবার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তাদের কেউ কেউ ছিল যারা কাজ করত না। মন্ডলীর উদারতার উপর নির্ভর করে সেই লোকেরা বিশ্রামের জীবনযাপন করত। পৌল মন্ডলীকে বলেননি যে পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়া তাদের ভুল হচ্ছে, কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে যদি কেউ কাজ করতে অনিচ্ছুক হয় তবে তাকে খাবার দেওয়া উচিত নয় (১ থিষলনীকীয় ৩:১০)। কারোর কারোর কাছে, কাজটি বেতন উপার্জনের জন্য কোনো কর্মসংস্থান নাও হতে পারে, বরং তা হল অন্যান্য বিশ্বাসীদেরকে প্রয়োজনে সাহায্য করা। কিছু লোক কোনো কর্মসংস্থানে নিয়োগ হতে সক্ষম নয়, কিন্তু প্রায় সকলেই সাহায্য করার জন্য কিছু করতে পারে।
অন্যান্য চিঠিতে পৌল বিধবাদের এবং পালকদের সহায়তা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন (১ তীমথিয় ৫:৩-১৮, গালাতীয় ৬:৬)।
প্রতিটি বিশ্বাসীর একটি স্থানীয় বিশ্বাসী পরিবারের অংশ হওয়া উচিত এবং সদস্যদের চাহিদা পূরণ এবং পরিচর্যা কাজের সহায়তায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত।
গ্রুপে আলোচনার জন্য
► মন্ডলীর সদস্যরা কীভাবে মন্ডলীর চাহিদা মেটাতে একসাথে কাজ করতে পারে, একইসাথে লোকেদেরকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করতে পারে?
► আপনার পরিবেশে মন্ডলীর লোকেদের একসাথে কাজ করে কার্যকারী সম্পদ তৈরি করার জন্য কী কী সুযোগ রয়েছে?
প্রার্থনা
স্বর্গস্থ পিতা,
তোমাকে ধন্যবাদ জানাই যে তুমি আমার সমস্ত চাহিদা পূরণের প্রতিজ্ঞা করেছ। আমার নিজের এবং আমার উপর নির্ভরশীল অন্যদের জন্য আমার দায়িত্ব পালনে বিশ্বস্ত থাকতে আমাকে সাহায্য করো। আমার যা আছে তাতে উদার হতে আমাকে সাহায্য করো। অন্যদের চাহিদা বুদ্ধিমত্তার সাথে পূরণ করতে আমাকে সাহায্য করো।
আমি তোমার আর্থিক আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা করি, কিন্তু সর্বোপরি আমি আত্মিক অগ্রাধিকার রাখতে চাই এবং তোমার সাথে আমার সম্পর্কের কারণে সন্তুষ্ট থাকতে চাই।
আমেন
৯ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) প্রার্থনাপূর্বক এই পাঠের শাস্ত্রীয় নীতিগুলি বিবেচনা করুন। নিচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লিখুন:
অর্থ এবং সম্পদের ক্ষেত্রে আমি কোন কোন প্রলোভনের সম্মুখীন হয়েছি?
বর্তমানে আমি কীভাবে অর্থ এবং/অথবা সম্পদ অর্জন করি?
আমি কীভাবে অর্থ এবং/অথবা সম্পদ ব্যবহার এবং পরিচালনা করি?
অর্থ এবং/অথবা সম্পদের বিষয়ে ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখার অর্থ কী?
আমার কাছে কোন কার্যকারী সম্পদ আছে?
এমন কি কোনো কার্যকারী সম্পদ আছে যা আমি ভবিষ্যতে অর্জন করার পরিকল্পনা করতে পারি? যদি তাই হয়, তাহলে আমি কীভাবে এটি করব?
আমি কোন কোন উপায়ে অর্থ এবং/অথবা সম্পদের অপব্যবহার করেছি?
উপরে তালিকাভুক্ত অর্থ এবং/অথবা সম্পদের অপব্যবহার আমি কীভাবে সংশোধন করব?
(২) এই পাঠ থেকে শেখা নীতিগুলির উপর ১ পৃষ্ঠার একটি উপস্থাপনা লিখুন, যা আপনার পরিবেশে নির্দিষ্ট প্রয়োগ করা যেতে পারে। অর্থের ব্যাপারে খ্রিষ্টীয় ধারণা সম্পর্কে আপনার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের লোকেদের কী বোঝা উচিত?
(৩) হিতোপদেশ ৩:১৩-১৭ পদ মুখস্থ করুন এবং তার উপর ভিত্তি করে একটি অনুচ্ছেদ লিখুন। পরবর্তী ক্লাসের শুরুতে, মুখস্থ এই অনুচ্ছেদটি লিখুন, এবং অনুচ্ছেদটি ক্লাস লিডারকে জমা দিন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.