Lesson 16: জনসমক্ষে কথা বলা

“ন্যায়সংগতভাবে দেওয়া রায় রুপোর ডালিতে সাজানো সোনার আপেলের মতো” (হিতোপদেশ ২৫:১১)। সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলা এবং ভালোভাবে বলা হল একটি শিল্পকলা। ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করা এমন একটি দক্ষতা যা বিকশিত করা যেতে পারে।

আপনার সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা থেকে মানুষ আপনার বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। যদি সেই ধারণাটি অনুকূল হয়, তাহলে আপনি তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। পরিচর্যা কাজে আপনার কার্যকারিতা অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে, তাই একজন ভালো সংযোগস্থাপনকারী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

উপরন্তু, বেশিরভাগ পরিচর্যা কাজ সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। প্রচার, শিক্ষাদান, পরামর্শদান এবং উৎসাহদান সবকিছুই সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বেশিরভাগ মিনিস্ট্রি লিডারই ভালো বক্তা। যে ব্যক্তি ভালো বক্তা নয়, তার পক্ষে কার্যকর লিডার হওয়া খুবই অস্বাভাবিক।

► একটি পুরনো প্রবাদ আছে, “তরবারির চেয়েও কলম বেশি শক্তিশালী।” এটি কী অর্থ প্রকাশ করছে বলে আপনার মনে হয়?

কার্যকরভাবে প্রকাশ করা ধারণার শক্তির সাথে শারীরিক শক্তির তুলনা হতেই পারে না। একটি অস্ত্র মানুষকে কিছু করতে বাধ্য করে, কিন্তু একটি আইডিয়া বা ধারণা তাদের মন ও হৃদয় জয় করে। এই কারণেই কিছু সরকার বাকস্বাধীনতাকে সীমিত করে দেয়।

► একজন শিক্ষার্থী গ্রুপের জন্য যাকোব ৩:১-৮ পদ পড়বে। এই প্যাসেজটি সংযোগ স্থাপনের শক্তি সম্পর্কে কী বলে তা আলোচনা করুন।

এই প্যাসেজটি বেশিরভাগই জিহ্বার, অর্থাৎ কথার, দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা সম্পর্কে বলে। সংযোগ স্থাপনের শক্তিকে ভালো বা ক্ষতির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ঈশ্বর পবিত্র আত্মার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত মানুষের কথা বলাকে তাঁর পরিত্রাণের পরিকল্পনা ঘোষণার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন (১ করিন্থীয় ১:২১)।

সংযোগ স্থাপনের শক্তির কারণে, একজন বিশ্বাসীর সর্বদা এটিকে সতর্কভাবে ব্যবহার করা উচিত। একজন বক্তা হিসেবে, আপনার খ্রিষ্টীয় নৈতিকতাগুলি অনুসরণ করা উচিত। সর্বদার সত্যের পক্ষে থাকুন। এমন কোনো প্ল্যান বা প্রজেক্টের পক্ষে কথা বলবেন না যেটিতে আপনার সত্যিকারের ভরসা নেই। যা একেবারেই সত্য নয় এমন কিছু বলে, অথবা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে কখনোই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন না।

আপনি যেভাবে সংযোগ স্থাপন করেন তা মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। মানুষজনের সাথে একজন লিডারের ব্যক্তিগত আলাপআলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ জানতে চায় যে লিডার তাদেরকে সম্মান করে এবং তাদের প্রশংসা করে। তার আচরণের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে সে মানুষকে মূল্য দেয়।

আপনার এমনভাবে মানুষের সাথে এমনভাবে ভাব বিনিময় করার অনুশীলন করা উচিত যাতে তারা সেটির কদর করে। কিছু মানুষ মনে করে যে তাদের কখনোই এমন আচরণ করা উচিত নয় যা তাদের কাছে স্বাভাবিক নয়। তবে, আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার জন্য নিজেকে প্রশিক্ষিত করা উচিত, তা আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হোক বা না হোক।

আপনার আচরণে মানুষের প্রতি আপনার বন্ধুত্বপূর্ণতা এবং শ্রদ্ধা এমনভাবে প্রকাশ করা উচিত যাতে তারা তা বুঝতে পারে। যদি তা না হয়, তাহলে আপনার আচরণ আপনার হৃদয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

কাউকে অভিবাদন জানানোর সময়ে যদি আপনাকে দেখে আগ্রহহীন বলে মনে হয় বা যদি কারোর সাথে হাত মেলানোর সময়ে অন্য কোথাও তাকিয়ে থাকেন, তাহলে তারা জানে যে আপনি তাদের মূল্য দেন না। আপনি যদি একজন লিডার হন, তাহলে অন্যরা আপনার সাথে কথা বলতে পেরে সৌভাগ্যবান বোধ করে। তাদের প্রতি মনোযোগ এবং আগ্রহ দিয়ে তাদেরকে মূল্য দিন। আপনি হয়তো ভাববেন যে সবার প্রতি এটি করার জন্য আপনার কাছে সময় নেই, কিন্তু একজন ব্যক্তির কাছে কয়েক সেকেন্ডের মনোযোগও তার কাছে মূল্যবান।

যদি না তোমার সংস্কৃতি অন্যথা নির্দেশ করে, তাহলে দৃঢ়ভাবে হাত মেলান, আপনার উল্টোদিকে থাকা ব্যক্তির চোখের দিকে তাকান, আপনার কণ্ঠে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাব প্রকাশ করুন এবং হাসুন। যদি একজন পুরুষ বসে থাকে, এবং কেউ যদি তাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসে, তাহলে তার উঠে দাঁড়ানো উচিত।

► এই আচরণগুলি অনুশীলন করুন।

মানুষের অন্যতম বড়ো ভয় হলো জনসমক্ষে কথা বলার ভয়।

► বহু মানুষ কেন জনসমক্ষে কথা বলতে ভয় পায়?

বহু মানুষ জনসমক্ষে কথা বলতে ভয় পায় কারণ …

১। তারা জানে না কী বলতে হবে।

২। তারা তাদের চিন্তাগুলিকে সঠিকভাবে সাজায়নি।

৩। তারা নিশ্চিত নয় যে লোকেরা তাদের কথা বলবে পছন্দ করবে কিনা।

ভয়ের প্রথম কারণটি অপসারিত হয় গভীর আসক্তির দ্বারা। বক্তার এমন একটি বার্তা থাকা উচিত যা সে অন্যদেরকে জানাতে চায়। আপনাকে যদি প্রচার করতে বা শিক্ষা দিতে বলা হয়, তাহলে জানানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু না পাওয়া পর্যন্ত আপনার প্রার্থনা করা এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করা উচিত।

ভয়ের দ্বিতীয় কারণটি প্রস্তুতির মাধ্যমে দূর করা যায়। ধারণাগুলি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন তা ভেবে দেখার জন্য সময় নিন। আপনার পয়েন্টগুলি তালিকাভুক্ত করুন এবং সেগুলি কোন ক্রমে উপস্থাপন করবেন তা স্থির করুন। আপনি কীভাবে শেষ করবেন তা পরিকল্পনা করুন। আপনার শেষ বাক্যগুলি এমন হওয়া উচিত যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণার উপর জোর দেয় এবং আপনার পছন্দসই প্রত্যুত্তরটিই জানতে চায়।

ভয়ের তৃতীয় কারণটি সাফল্যের মাধ্যমে দূর করা যায়। আপনার কথা বলা এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পরেই আপনি ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।

কিছু মিশনারি পরিবারি একটি বড়ো সমাবেশে যোগদান করেছিল। পরিচালক দু’জন বাবাকে বলেছিলেন যেন তারা তাদের সন্তানদের মধ্যে কোনো একজনকে মিশনারি জীবন নিয়ে কয়েক মিনিট কথা বলার জন্য প্রস্তুত করেন। একজন বাবা তার ১০ বছর বয়সী ছেলেকে মিশনারি হিসেবে তাদের জীবন সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় কথা বলতে সাহায্য করার মাধ্যমে প্রস্তুত করেছিলেন। তারা একসাথে অনুশীলন করেছিল এবং কী বলতে হবে তা মনে রাখার জন্য একটি নোট বইয়ে কিছু শব্দ লিখে রেখেছিল। সেই ছেলেটি জনতার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলেছিল; এবং লোকেরা তার বক্তৃতা উপভোগ করেছিল।

অপর বাবা তার ছেলের সাথে প্রস্তুতি নেননি। যখন সেই ছেলেটিকে কথা বলার জন্য স্টেজে দাঁড় করানো হয়েছিল, ভয় তাকে গ্রাস করেছিল, সে বলার জন্য বিশেষ কিছুই মনে করতে পারেনি, এবং তার খারাপ পারফর্ম্যান্সের জন্য অপদস্ত অনুভব করেছিল।

বক্তৃতার বিষয়টিকে অবশ্যই মিটিংয়ের কারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করু, “আমার শ্রোতারা এই বক্তৃতা থেকে কী আশা করে?”

বক্তৃতার বিষয়বস্তুটি অবশ্যই কদরযোগ্য হতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “কেন তাদের এটি শোনা প্রয়োজন? এটি তাদেরকে কীভাবে সাহায্য করবে?"

বিষয়বস্তুটির প্রতি আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “কেন তারা আমার কথা শুনবে?” যদি এমন কোনো বিষয়ের উপর কথা বলা প্রয়োজন হয় যা সম্পর্কে আপনি তেমন কিছু জানেন না, তাহলে আপনাকে অবশ্যই গবেষণা করতে হবে। কোনো বিষয় নিয়ে দ্রুত গবেষণা করার একটি উপায় হলো সেই বিষয় সম্পর্কে একজন সম্মানিত জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে কথা বলা।

বিষয়টিবস্তুটি অতি অবশ্যই শ্রোতাদের আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতাসমূহের সাথে সম্পর্কিত হওয়া হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “কেন তারা এটিকে গুরুত্ব দেবে? আমি কীভাবে তাদেরকে এটি বোঝাতে পারি?”

বিতর্কিত বিষয় মনোযোগ আকর্ষণ করে ঠিকই, কিন্তু তা কিছু শ্রোতাকে আপনার বিরোধী করে তোলে। দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে যখনই প্রয়োজন হয় তখনই বিতর্কিত বিষয়গুলি মোকাবেলা করুন, কিন্তু কখনোই কেবল মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সেগুলি নিয়ে কথা বলবেন না।

আপনার কাছে নতুন এমন বিতর্কিত বিষয়বস্তু উপস্থাপনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত নতুন ধারণায় ভারসাম্য আসবে।

আপনার নিজের অভিজ্ঞতা এবং আপনি যে পাঠগুলি শিখেছেন সে সম্পর্কে কাহিনীগুলি আকর্ষণীয়, তবে নিজের সম্পর্কে এত বেশি কথা বলবেন না যে বক্তৃতাটি কেবল আপনার সম্পর্কেই বলে মনে হয়।

প্রায়শই বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ বা দায়িত্ব এতটাই হঠাৎ করে এসে পড়ে যে বক্তা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে না। সেই সময়ে বক্তাকে তার সমস্ত অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান থেকেই কাজ চালাতে হবে। একজন বক্তাকে ক্রমাগত অধ্যয়ন করে যেতে হবে যাতে সে তার উপদানের সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে পারে যেখান থেকে সে বিভিন্ন বক্তৃতা তৈরি করে রাখতে পারবে।

বক্তৃতা জুড়ে একজন বক্তাকে মাঝে মাঝেই শ্রোতাদের মনোযোগ ফিরে পেতে হবে। ধরে নেবেন না যে লোকেরা শুনছে।

অনেক লক্ষণ আছে যা দেখায় যে একজন শ্রোতা মনোযোগ সহকারে শুনছে। শ্রোতারা বক্তার দিকে তাকিয়ে আছে, মনোযোগী অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে, মাথা নাড়ছে বা উত্তর দিচ্ছে, সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে আছে, বিক্ষেপ উপেক্ষা করছে, এবং বক্তার কৌতুক বা অন্যান্য আবেগের প্রতি সাড়া দিচ্ছে। যখন আপনি এই লক্ষণগুলি দেখেন, তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে তারা শুনছে।

আপনার বক্তৃতা জুড়ে আপনি তাদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি বর্তমান পরিসংখ্যান, হাস্যরস, একটি জীবনীমূলক বা ঐতিহাসিক উদাহরণ, একটি আকর্ষণীয় উদ্ধৃতি, একটি আলংকারিক প্রশ্ন, জীবন সংক্রান্ত কোনো সমস্যা, একটি কাল্পনিক পরিস্থিতি, একটি বাক্যাংশ বা স্লোগানের নাটকীয় পুনরাবৃত্তি, একটি বর্তমান ঘটনা বা জাতীয় পরিস্থিতি, অথবা একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে পারেন।

► একজন শিক্ষার্থীর সম্প্রতি প্রদত্ত একটি বক্তৃতা বা সারমন বর্ণনা করবে। মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সে ব্যবহার করেছে এমন কৌশল তাকে বর্ণনা করতে হবে। বক্তৃতায় অন্যান্য কৌশল কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে সে সম্পর্কে ধারণাগুলি নিয়ে গ্রুপটি আলোচনা করবে। যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীদের এই কৌশলগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখানোর জন্য বেশ কয়েকটি বক্তৃতা বা সারমন পরীক্ষা করা যেতে পারে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে লোকেরা শুনছে। তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য কিছু করুন।

সাময়িক মনোযোগহানির সময়ে কোনো বিশেষ বক্তব্য বলবেন না। যদি কোনোকিছু সেখানে কিছু সেকেন্ডের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে সমস্যাটি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আপনি ইতিমধ্যেই যা বলেছেন তা নিয়ে কিছু বলুন, তারপর শ্রোতাদের মনোযোগ পুনরায় ফিরিয়ে আনুন।

নীতিন প্রচার করার সময় একটি ছোটো বাচ্চা গীর্জা ঘরের সামনে দিয়ে তার মা’কে ডাকতে ডাকতে যাচ্ছিল। মন্ডলীতে উপস্থিত বেশিরভাগ লোকই সেই বাচ্চাটিকে দেখতে শুরু করেছিল। বাচ্চাটিকে কোলে তুলে না নেওয়া পর্যন্ত নীতিন ইতিমধ্যেই তার বলা কিছু কথা পুনরাবৃত্ত করেছিল, তারপর লোকেদের মনোযোগ পুনরায় আকর্ষণ করার জন্য কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার স্বর একটু জোরে করেছিল।

১। আপনার শেষ বিবৃতিগুলি সেই যথাযথ শব্দগুলি দিয়ে প্রস্তুত করুন ঠিক যেগুলি আপনি বলতে চান।

২। স্মরণীয়ভাবে সেই বক্তব্যগুলিকে সারসংক্ষিপ্ত করুন যেগুলি আপনি চান যে আপনার শ্রোতারা মনে রাখুক।

৩। একটি সংক্ষিপ্ত সমাপ্তি টানুন।

৪। বক্তৃতায় যেসব ভুল ছিল বলে আপনি মনে করেন, তার জন্য ক্ষমা চাইবেন না।

৫। এমন কোনো চ্যালেঞ্জ বা দাবি নিয়ে সমাপ্তি করুন যা আবেগকে আলোড়িত করে।

বক্তাকে শ্রোতাদের সকলের দিকে তাকাতে হবে, যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষের সাথে সরাসরি দৃষ্টি সংযোগ করতে হবে।

বলার নোটগুলি এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে সেগুলি দ্রুত নজরে পড়ে, যাতে বক্তাকে খুব বেশি পড়তে না হয়। আপনার নোটগুলির সাথে সুপরিচিত থাকুন যাতে দ্রুত নজরেই কাজ হয়ে যায়।

কণ্ঠস্বরের গুণগত মানের কিছু সাধারণ সমস্যা হল:

• খুব দ্রুত কথা বলা

• খুব ধীরে কথা বলা

• খুব জোরে কথা বলা

• খুব মৃদুভাবে কথা বলা

• বিড়বিড় করা (শব্দগুলি বোঝার জন্য যথেষ্ট স্পষ্টভাবে বলা হয় না)

• একইরকম সুরে কথা বলে যাওয়া (যথাযথ স্বরভঙ্গি এবং অভিব্যক্তি ছাড়া)

• একটি কৃত্রিম স্বরে কথা বলা (কপট বা ভান করা)

• ক্রমাগত জোর দিয়ে কথা বলে যাওয়া

আপনার কণ্ঠস্বরের গুণগত মান আপনার বার্তার প্রভাবকে প্রভাবিত করে। আপনার কণ্ঠস্বরের গুণগত মান উন্নত করতে:

• স্পষ্টভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলুন।

• যেখানে উপযুক্ত সেখানে কথোপকথনের ধাঁচে কথা বলুন।

• গতি, বল, স্বর, এবং আওয়াজ পরিবর্তন করুন।

► আগের বাক্যের উল্লিখিত চারটি উপাদান (গতি, বল, স্বর, আওয়াজ) কীভাবে একজন ব্যক্তির পরিবর্তন করা উচিত তার কিছু উদাহরণ আলোচনা করুন।

একটি বক্তৃতা হলো শ্রোতাদের সাথে একটি কথোপকথন, এমনকি শ্রোতারা প্রত্যুত্তর না করলেও। আপনি যা বলেন সেই ব্যাপারে তাদের বিভিন্ন অনুভূতি এবং মতামত আছে, এবং সেই মতামতগুলি বক্তৃতা চলাকালীন বদলাতে পারে।

একটি উঁচু এবং বড়ো মঞ্চ বক্তাকে মর্যাদা দেয় বটে, কিন্তু সেগুলি তাকে শ্রোতাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং কথোপকথনকে আরো কঠিন করে তোলে। যদি লোকজন খুব বেশি না থাকে, তাহলে একজন বক্তাকে শ্রোতাদের সাথে একই স্তরে দাঁড়ানো উচিত এবং একটি ছোট মঞ্চ ব্যবহার করা উচিত।

সম্মানজনক মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, আপনার বক্তব্যকে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়ান, তাহলে সবাই শুনবে; কিন্তু যেহেতু আপনার কাজকর্ম এতটাই অস্বাভাবিক, তাই তারা আপনার বার্তাকে গুরুত্ব সহকারে নাও নিতে পারে। প্রতিটি পরিবেশের জন্য কিছু আচরণ এবং পোশাক প্রত্যাশিত হয়। আপনি যদি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি দূরে সরে যান, তাহলে শ্রোতারা আপনাকে বৈধ বক্তা হিসেবে বিবেচনা নাও করতে পারে।

আপনার শ্রোতাদের কুসংস্কার বা পূর্বধারণাগুলি বোঝার চেষ্টা করুন এবং বিনা কারণে তাদের চটাবেন না। যদি আপনি তাদেরকে কোনো বিষয়ে রাগান্বিত করেন কিন্তু কোনো সে বিষয়ে তাদেরকে বোঝাতে না পারেন, তাহলে আপনার অভীষ্টলাভ হবে না। তাদের সমস্ত সমস্যা এবং ভুল বোঝাবুঝি একটি মাত্র বক্তৃতাতেই সংশোধন করার চেষ্টা করবেন না।

একটি উদাহরণ: যদি আপনি একটি বালতি থেকে সরু মুখের বোতলে দুধ ঢালেন, তাহলে আপনাকে ধীরে ধীরে এবং সাবধানে ঢালতে হবে, নাহলে বেশিরভাগ দুধ মাটিতে পড়ে যাবে। একইভাবে, যদি আপনি একবারে আপনার শ্রোতাদেরকে খুব বেশি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন, তাহলে তারা তা গ্রহণ করবে না।

কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস এড়িয়ে চললে আপনার শ্রোতাদের সাথে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে:

• দর্শকদের প্রতি কোনো ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করবেন না।

• দর্শকদের থেকে করুণা খুঁজবেন না। যদি তারা আপনার প্রতি করুণা দেখায়, তাহলে তারা সম্ভবত আপনাকে কম সম্মান করবে।

• আপনার কাজ বা চরিত্রের ব্যক্তিগত পক্ষসমর্থন এড়িয়ে চলুন, বিশেষত যদি সেটি বক্তৃতার উদ্দেশ্য না হয়। এমন নীতিগুলি তুলে ধরুন যা আপনার নিজের কারণের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

• আপনার সাফল্য নিয়ে গর্ব করা এড়িয়ে চলুন। ব্যক্তিগত কাহিনী সম্পর্কে সতর্ক থাকুন যা গর্ব করার মতো শোনাতে পারে।

• প্ররোচনার, অর্থাৎ আবেগজনিত আবেদনের, জন্য বেশিরভাগ শ্রোতার বর্তমান জ্ঞান এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করুন এবং তাদের প্রভাবিত করার জন্য আপনার বক্তৃতাটি সাজিয়ে তুলুন।

• দর্শকদের কী কী উদ্বেগ থাকবে তা অনুমান করুন এবং তাদের সন্তুষ্ট করুন।

• আবেগ দিয়ে অনুপ্রাণিত করার আগে বক্তৃতার সারমর্মের উপর ভিত্তি করে আপনার যুক্তি তৈরি করুন।

• সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধাপগুলি অনুসরণ করতে শ্রোতাদের চালনা করুন। তাদের মতামত পরিবর্তন করতে হলে, আপনাকে তাদের নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধাপগুলি হল:

১। একটি অসুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন করা

২। নির্দিষ্ট সমস্যাটিকে সংজ্ঞায়িত করা

৩। তাদের জন্য সম্ভাব্য সমাধান এবং তাদের সম্ভাব্য আপত্তিগুলি বিবেচনা করা

৪। সর্বোত্তম সমাধানটি ব্যাখ্যা করা

৫। সমাধানের জন্য পদক্ষেপ পরিকল্পনা করা

কথা বলার উদ্দেশ্য হলো যেন তা অন্যেরা বুঝতে পারে। এমন শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করবেন না যা শ্রোতাদের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং অন্যরা তা বুঝতেই পারে না। নিম্নলিখিত কিছু বিষয়গুলি বর্ণনামূলক শৈলীতে তৈরি করা সারমনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

• নিশ্চিত হন যে প্রতিটি বাক্য অবিলম্বে বোঝা যাচ্ছে। শ্রোতার পক্ষে উপস্থাপনার পর্যালোচনা করা বা সেটির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

• মনে রাখার মতো করে একটি এক-বাক্যের থিম রাখুন।

• উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন সমস্ত উপাদান বাতিল করুন।

• প্রতিটি আইডিয়াকে আগের আইডিয়ার সাথে বা থিমটির সাথে সংযুক্ত করুন।

• বক্তৃতা চলাকালীন ক্রমাগত থিম বা মূল বিষয়বস্তুটি উল্লেখ করতে থাকুন।

• পয়েন্টগুলির জন্য সর্বোত্তম ক্রমটি নির্বাচন করুন।

• আরও এগিয়ে যাওয়ার আগে প্রতিটি পয়েন্টকে যথাযথভাবে তৈরি করে নিন।

[1]একজন বক্তার বিভিন্ন বক্তৃতা এবং আর্টিকেল লেখার অভ্যাস করা উচিত। এই অভ্যাস স্পষ্টভাবে তার সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতাকে বিকশিত করবে। লেখার সময় সর্বোত্তম শব্দগুলি নির্বাচন করার অনুশীলন তাকে কথা বলার সময়েও সর্বোত্তম শব্দগুলি ভাবতে সাহায্য করবে।

লেখালেখি বক্তাকে ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করার অনুশীলনে সহায়তা করে। আপনি যদি কিছু লিখতে শুরু করেন এবং কীভাবে সেই বিষয়টি লিখতে হয় তা নিয়ে নিশ্চিত না হন, তবে আপনি সেই ধারণাটি সম্পর্কে কথা বলার জন্যও প্রস্তুত নন। কীভাবে কোনো কিছু লিখিতভাবে ব্যাখ্যা করবেন তা বিবেচনা করার জন্য আপনাকে সময় বের করতে হবে।

লেখালেখি একজন ব্যক্তিকে বুঝতে সাহায্য করে যে তার কখন আরো তথ্যের প্রয়োজন। যদি সে কোনো বক্তব্য সঠিক কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়, তাহলে সে সেটি নিয়ে গবেষণা করতে পারে। সর্বদা মনে রাখবেন যে আপনার কথাগুলি উদ্ধৃত করা হতে পারে, তা মুখে বলা হোক বা লেখা হোক। আপনি যদি এমন কিছু বলেন যা সঠিক নয়, তাহলে লোকেরা শিখবে যে তারা আপনার কথার উপর নির্ভর করতে পারে না।

► এই পাঠে আপনি যা শিখলেন, তার উপর ভিত্তি করে আপনি কীভাবে আপনার লক্ষ্য বা কাজগুলি পরিবর্তন করার প্রত্যাশা করেন?

১। আপনার সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা থেকে মানুষ আপনার বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।

২। এমনভাবে বন্ধুত্বপূর্ণতা এবং সম্মান প্রদর্শন করুন যাতে লোকেরা তা বুঝতে পারে।

৩। একজন বক্তাকে পুরো বক্তৃতা জুড়ে ঘন ঘন শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।

৪। প্ররোচনার জন্য, আপনার শ্রোতাদের সিদ্ধান্তের ধাপগুলির মধ্য দিয়ে নিয়ে যান।

৫। লেখালেখি বক্তাকে ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করার অনুশীলনে সহায়তা করে।

১। এই পাঠ থেকে জীবন পরিবর্তনকারী ধারণার সারসংক্ষেপ একটি অনুচ্ছেদে লিখুন। ব্যাখ্যা করুন যে কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি কী উপকার করতে পারে? এটি না জানার ফলে কী ক্ষতি হতে পারে?

২। বর্ণনা করুন যে আপনি কীভাবে এই পাঠের নীতিগুলি আপনার জীবনে প্রয়োগ করবেন। এই পাঠটি কীভাবে আপনার লক্ষ্যগুলি পরিবর্তন করেছে? আপনার পদক্ষেপগুলি পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে পরিকল্পনা করবেন?

৩। ১৬ নং পাঠের পাঁচটি সারসংক্ষিপ্ত বিবৃতি ভালোভাবে মুখস্থ করুন। পরবর্তী ক্লাস সেশনের শুরুতে এগুলি স্মৃতিশক্তি থেকে লেখার জন্য প্রস্তুতি নিন।