ভূমিকা
► একজন ব্যক্তি কি সুসমাচার না শুনে ধার্মিকগণিত হতে পারে? সুসমাচার প্রচারের কাজ কি প্রয়োজনীয়?
শাস্ত্রে আমরা ইস্রায়েল বা মন্ডলীর কোনো সংযোগ ছাড়াই ঈশ্বরের অনুগ্রহে পৌঁছেছেন এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাই। মোশির জীবনকালের আগে এবং শাস্ত্রের একটি পৃষ্ঠাও লেখার আগেই ইয়োব ন্যায়পরায়ণ ছিলেন এবং মন্দকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিলিয়ম ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন এবং একজন দ্রষ্টা (seer) হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সন্মোহের (trance) মধ্যে না গিয়েও ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছিলেন। আব্রাহাম যখন এই কথাটি ভেবেছিলেন যে, “নিঃসন্দেহে এখানে মানুষের মনে ঈশ্বরভয় নেই,” তারপর অবীমেলক অব্রাহামের চেয়ে বেশি ধার্মিকতার কাজ করেছিলেন। রোমীয় ১:২১-৩২ সেইসব বিধর্মীদের কথা বর্ণনা করে যারা ভ্রষ্ট (depraved) অবস্থায় ছিল, তার কারণ এই নয় যে তারা ঈশ্বরকে জানত না, বরং তারা যা জানত তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।[1]
“যারা তাঁকে সম্ভ্রম করে সদাপ্রভু গুপ্ত বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করেন; তিনি তাঁর নিয়ম তাদের কাছে প্রকাশ করেন” (গীত ২৫:১৪)। নিয়ম বা চুক্তি (covenant) হল মানুষের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্কের শর্ত, যার জন্য অনুগ্রহের বিধান প্রয়োজন কারণ সবাই পাপ করেছে। যদি একজন ব্যক্তি ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে শ্রদ্ধা করে, তবে ঈশ্বর তাকে তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পথ দেখাবেন।
বাইবেল বলে যিশু ছাড়া অন্য কোনো নামে পরিত্রাণ নেই (প্রেরিত ৪:১২)। তবে, পুরাতন নিয়মে যারা পরিত্রাণ পেয়েছিল তারা যিশুর নাম জানত না। তারা মুক্তি এবং ক্ষমার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রদত্ত প্রতিজ্ঞার উপর ভরসা রেখেছিল, এবং তিনি যিশুর মাধ্যমে এটি প্রদান করেছিলেন। একইভাবে, যারা এখনো যিশুর নাম শোনেনি তারা পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের উপর ভরসা করতে পারে যা তিনি যিশুর মাধ্যমে প্রদান করেন।
এই কথাটির অর্থ কী যে অন্য কোনো নামে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না? এর মানে হল পরিত্রাণের অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। একজন ব্যক্তি মুক্তির অন্য কোনো পরিকল্পনা দ্বারা রক্ষা পেতে পারে না। এছাড়াও এর মানে হল যে, যে ব্যক্তি যিশুকে জানে সে যেন তাঁকে কখনোই প্রত্যাখ্যান না করে, কারণ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার মানে হল পরিত্রাণকে প্রত্যাখ্যান করা বা পরিত্রাণের অন্য কোনো পথ খুঁজতে থাকা।
“সেই প্রকৃত জ্যোতি, যিনি প্রত্যেক মানুষকে আলো দান করেন, জগতে তাঁর আবির্ভাব হচ্ছিল” (যোহন ১:৯)। পবিত্র আত্মা সেইসব লোকদের কাছেও যিশুর আলো নিয়ে আসেন যারা যিশুর কথা শোনে নি।
বহু মানুষই বিভিন্ন দর্শন পেয়েছে বা অন্য কোনো বিশেষ প্রকাশ পেয়েছে যা তাদেরকে একজন বার্তাবাহক ব্যক্তির কাছ থেকে সুসমাচার শোনার আগেই ঈশ্বরের কাছে আসতে সাহায্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আজকাল বহু মুসলিমই ঈশ্বরের বার্তা পেয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে।
► আপনি কি এমন কারও সম্বন্ধে শুনেছেন, যিনি সুসমাচার সঠিকভাবে বোঝার আগে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিশেষ সংযোগ লাভ করেছেন?
[2]সুতরাং, আমরা দেখলাম যে একজন ব্যক্তির পক্ষে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া এবং কোনো মানব বার্তাবাহকের কাছ থেকে সুসমাচার শোনার আগে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তবে, বাইবেল সুসমাচারকে এমন এক বার্তা হিসেবে বর্ণনা করে যা প্রত্যেকের জরুরীভাবে শোনা প্রয়োজন।
রোমীয় পুস্তকটি সুসমাচারের জরুরী প্রয়োজনীয়তার কথা বর্ণনা করে। প্রেরিত বলেছেন যে সুসমাচার হল পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের শক্তি (রোমীয় ১:১৬)। তিনি বলেছেন যে প্রত্যকের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দেওয়ার জন্যই তিনি ঋণী (রোমীয় ১:১৪)। তিনি একটি সত্য স্থাপন করেছেন যে আমরা কেবল ঈশ্বরের ক্ষমার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাসের মাধ্যমে ধার্মিকগণিত হয়েছি (রোমীয় ৩:২৬, রোমীয় ৫:১)।
এরপর আসে জরুরী প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। তিনি বলেছেন, “আর যাঁর কথাই তারা শোনেনি, কীভাবে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে? আবার কেউ তাদের কাছে প্রচার না করলে তারা কীভাবে শুনতে পাবে?” (রোমীয় ১০:১৪)। তিনি বলেছেন, “সুতরাং, সুসমাচারের প্রচার শুনে বিশ্বাস উৎপন্ন হয় ও প্রচার হয় খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা” (রোমীয় ১০:১৭)। বিশ্বাসীদের জন্য পরিত্রাণকারী বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য ঈশ্বর সুসমাচারকে ব্যবহার করেন। সুসমাচার প্রচার হল হারিয়ে যাওয়া আত্মাদের রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের এক প্রচলিত পদ্ধতি।
যদি তারা একজন বার্তাবাহককে ছাড়াই উদ্ধার পেতে পারে, তাহলে একজন বার্তাবাহক এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
“উত্তরদিকে বিস্তীর্ণ সমভূমিতে, আমি কখনো কখনো সকালের সূর্যের আলোয় এমন অসংখ্য গ্রামের প্রমাণ পেয়েছি যেখানে কোনো প্রচারক কখনোই ছিল না - যে গ্রামগুলির লোকেরা খ্রিষ্টহীন, ঈশ্বরহীন এবং এই পৃথিবীতে আশাহীন।”
- রবার্ট মোফাৎ (Robert Moffat)