ইতিহাসে সুসমাচার প্রচার: জন ওয়াইক্লিফ এবং জন ওয়েসলি-র দৃষ্টান্ত
জন ওয়াইক্লিফ (John Wycliffe) ইংল্যান্ডের একজন পাস্টার ছিলেন। তার জীবনকাল ১৩২৪-১৩৮৪। সেই সময়, বাইবেল সাধারণত মানুষের ভাষায় পাওয়া যেত না। রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাদেরকে যা শিখত, লোকেদের তার উপরেই নির্ভর করতে হত। বেশিরভাগ লোকই সুসমাচার জানত না। এমনকি বহু ক্যাথলিক যাজক বাইবেল ভালো করে জানত না। যাজকরা সাধারণত ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করার জন্য এবং টাকা আদায় জন্য দেশের নানা জায়গায় যেত। বেশির ভাগ চার্চই এমন যাজকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল যারা সুসমাচার প্রচার করত না। ওয়াইক্লিফ এবং তার সাহায্যকারীরা ইংরাজিতে বাইবেল অনুবাদ করেন। সেই সময় মেশিনে প্রিন্ট করা উপলব্ধ ছিল না, তাই তারা পুরোটাই হাতে লিখেছিলেন। তারা জোড়ায় জোড়ায় ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন এবং সর্বত্র বিভিন্ন দল তৈরি করে বাইবেলের শিক্ষা দিয়েছিলেন। লোকেরা তাদেরকে “গরীব যাজক” (poor priests) বলত কারণ তারা টাকা চাইতেন না।
সুসমাচার প্রচারের পদ্ধতি অবশ্যই একটি সমাজের পরিস্থিতির সাথে মানানসই হতে হবে। ওয়াইক্লিফ এবং তার সাহায্যকারীরা সুসমাচারের প্রাথমিক দিকটি বুঝেছিলেন; তারা বাইবেলের বার্তা সরাসরি লোকেদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।
জন ওয়েসলি (John Wesley) ইংল্যান্ডে ১৭০৩-১৭৯১ জীবন কাটিয়েছেন।[1] সেই সময় অ্যাংলিকান চার্চ বিত্তশালী বা ধনী লোকদের মন্ডলী হয়ে উঠেছিল। তারা ধর্মীয় আচার পালনে বেশি গুরুত্ব দিত এবং সুসমাচারের স্পষ্ট শিক্ষা দিত না। দেশের বেশিরভাগ গরীব লোকেরই সেই চার্চগুলিতে ঢোকার অনুমতি ছিল না এবং তারা সুসমাচার জানত না। ওয়েসলি একজন অ্যাংলিকান যাজক ছিলেন, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন যেন লোকেরা সুসমাচার জানতে পারে। একদিন সকালে, তিনি এমন একটা জায়গায় গিয়েছিলেন যেখান দিয়ে কয়লা খনির শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিল। তিনি প্রচার করেছিলেন, এবং বহু লোক সেখানে থেমে গিয়ে তার প্রচার শুনেছিল। এরপর, তিনি তার বাকি জীবনের প্রায় প্রত্যেকদিনই বাইরে প্রচার করতেন। কয়েক হাজার লোক তার পরিচর্যার মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছিল।
► আপনার এলাকায় কোন মিশনারী প্রথম সুসমাচার আনার জন্য স্মরণীয়?
[1]ছবি: “John Wesley preaching on his fathers grave”, by Currier & Ives, retrieved from the Library of Congress Prints and Photographs Division, https://www.loc.gov/pictures/item/2002707689/, “কোনো নিষেধাজ্ঞা অজানা”
মানানসই পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা
২০০৩ সালে এক ভদ্রলোক তার পরিবারের সাথে লন্ডন যাচ্ছিলেন এবং সেই সময় তিনি বিশ্রামের জন্য একটি পার্কে থামেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে একজন মহিলা পার্কের উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে একটি বাইবেল ছিল এবং তিনি কথা বলছিলেন। সেই ভদ্রলোক কাছে যান এবং শুনতে পান যে মহিলাটি কোনো ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে সেই মহিলার এক বন্ধু কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন, তা দেখে তিনি সেই বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন যে সেখানে কী হচ্ছে। বন্ধুটি উত্তর দেন, “আমরা একটা দলের অংশ যেটা মূলত বাইরে প্রচার করার রীতি অনুসরণ করে চলেছে, ঠিক যেমন ওয়েসলি করতেন। কখনো কখনো, আমরা জনবহুল এলাকাতেও প্রচারের জন্য যাই।” তবে, সেই ভদ্রলোক লক্ষ্য করেছিলেন যে মহিলাটি এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যেখান দিয়ে খুব কম লোকই যাচ্ছিল, খুব বেশি লোক তার কথা শুনছিল না, এবং তার স্টাইল বাইরের লোকদের আকর্ষণ করার মতো খুব একটা কার্যকরও ছিল না। তিনি এই রেওয়াজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি সেই পদ্ধতিকে কার্যকর করার জন্য আসল সবকিছুরই অভাব ছিল।
পদ্ধতি সবসময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে মানানসই হতে হবে। কিছু কিছু সময় লোকেরা ধরে নেয় যে সুসমাচার প্রচারের কেবল একটিই পদ্ধতি রয়েছে, এবং তারা এমন একটা পদ্ধতির অভ্যাস করে যায় যা আর কার্যকর নয়। কিছু কিছু সময় লোকেরা এটাও মনে করে যে একটা পদ্ধতি যা কোনো একটি জায়গায় কার্যকর ছিল তা সব জায়গাতেই কার্যকর হবে, কিন্তু আসলে তা সত্যি নয়।
বহু জায়গায় মন্ডলী বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং অপরিচিত লোকদের দরজায় কড়া নেড়ে সুসমাচার প্রচার করেছে। এই পদ্ধতির ফলে অনেক মানুষ রূপান্তরিত হয়েছে, কিন্তু এটি সব জায়গায় কার্যকর হবে না।
কিছু মন্ডলী বাস কিনেছে এবং লোকেদের মন্ডলীতে আসার প্রস্তাব দিয়েছে। রবিবার সকালে, তারা লোকেদের জড়ো করার জন্য আশেপাশের এলাকার মধ্যে দিয়ে বাসটি চালায়। বহু লোক এই বাস মিনিস্ট্রির মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে, কিন্তু সেই পদ্ধতি সব জায়গায় কাজ করবে না।
বহু মন্ডলী রবিবারে মন্ডলীগৃহের কাছে আসা লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করেছে। তারা লোকেদেরকে বেদীর কাছে এগিয়ে এসে নতজানু হয়ে তাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। কয়েক হাজার লোক এই পদ্ধতির দ্বারা রূপান্তরিত হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ অবিশ্বাসীই মন্ডলীতে আসে না। বেশিরভাগ লোকই সুসমাচার শুনবে না, যদি না কেউ ব্যক্তিগতভাবে তাদের সাথে কথোপকথনের সময় সুসমাচার প্রচার করে।
প্রেরিত পৌল ছিলেন সুসমাচার প্রচারের মানানসই পদ্ধতি ব্যবহারের এক আদর্শ উদাহরণ। তিনি ইহুদীদের সিনাগগে কথা বলতে পারতেন কারণ তিনি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ইহুদি গুরু (রব্বি) ছিলেন, এবং তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে যিশুই মশীহ। তিনি সেইসব জায়গাতেও প্রচার করতেন যেখানে বহু লোক তাদের দার্শনিক ধ্যান-ধারণা উপস্থাপন করতে সমবেত হতেন। কিছু কিছু সময় তিনি বাজার এলাকাতেও প্রচার করতেন। প্রায়শই, তিনি পারিবারিক জমায়েতে প্রচার করতেন।
কিছু আধুনিক পদ্ধতি
লোকেরা সুসমাচার সম্পর্কিত কথোপকথন শুরু করার জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করেছে। কিছু কিছু মন্ডলী সমীক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নের ব্যবহার করেছে। তারা বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে গেছে এবং এরকম কিছু প্রশ্ন করেছে: “আপনার কী মনে হয়, কমিউনিটির মধ্যে মন্ডলীর কী করা উচিত? খ্রিষ্টধর্মে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস কী? আপনার কাছে একজন খ্রিষ্টিয়ানের বর্ণনা কী? একজন ব্যক্তি কীভাবে খ্রিষ্টবিশ্বাসী হতে পারে?” একজন ব্যক্তির মতামতে ধৈর্য্য ধরে শোনার পর, একজন খ্রিষ্টিয়ান জিজ্ঞাসা করতে পারে, “আমি কি আপনাকে বলতে পারি যে বাইবেল একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী সম্পর্কে কী বলে?”
কিছু কিছু সময় সুসমাচার প্রচারকরা কোনো জনবহুল স্থানে এমন একটা ছবি বা ডায়াগ্রাম এঁকে লোকেদের মনোযোগ আকর্ষণ করে যা সুসমাচারকে তুলে ধরে। কেউ কেউ চক দিয়ে ছবি আঁকে। আবার কোনো কোনো সুসমাচার প্রচারক গল্প বলতে বলতে একটা বোর্ডে রঙিন ছবি আটকায়।[1]
কিছু মন্ডলী তাদের কমিউনিটির লোকদের প্রয়োজনীয় কোনো বাস্তবিক বিষয়ে একটি সেমিনার করে থাকে। যেকোনো বিষয় হতে পারে, যেমন বিবাহ, সন্তান লালন-পালন, ব্যবসায়িক নীতি, স্বাস্থ্য বা কোনো ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ। মন্ডলী যখন সমাজের চাহিদা পূরণ করে তখন তা একটি উত্তম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাইবেলের সত্য দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে প্রযোজ্য তা দেখানোর দায়িত্ব মন্ডলীর। সেমিনারে সুসমাচার সরাসরি উপস্থাপন নাও হতে পারে, তবে এটি বাইবেলের সত্য শিক্ষা দেয় এবং মন্ডলী ও পারিপার্শ্বিক এলাকার মধ্যে সম্পর্ক বিকাশ করে।
কিছু মন্ডলী একটি জনবহুল স্থানে একটি অস্থায়ী প্রার্থনা কেন্দ্র স্থাপন করেছে যেখান দিয়ে অনেক লোক যাওয়া-আসা করছে। তারা “প্রার্থনা কেন্দ্র” নামে একটি চিহ্ন রাখে এবং যারা পাশ দিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে প্রার্থনা করার প্রস্তাব দেয়। তারা জিজ্ঞাসা করে, “আপনার কি এমন কোনো প্রয়োজন আছে যেটির জন্য আপনি চান যে আমি প্রার্থনা করি?” তারা প্রয়োজনের জন্য উদ্বেগ দেখায় এবং তর্ক শুরু করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার সুযোগ থাকে।[2]
একটি সুসমাচার প্রচার পদ্ধতির সবচেয়ে মৌলিক অপরিহার্য উপাদান হল সুসমাচারটি সেইসব লোকদের কাছে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা যাদের এটি শোনা প্রয়োজন। যেহেতু ঈশ্বর তাঁর বাক্যকে শক্তি দেন এবং পবিত্র আত্মা যারা শোনে তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন, তাই একটি সুসমাচার প্রচার পদ্ধতির কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যদি এটি সুসমাচারকে স্পষ্টভাবে এবং সরাসরি উপস্থাপন করে।
প্রতিটি জায়গায় এবং প্রত্যেকবার মন্ডলীর জন্য চ্যালেঞ্জ হল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার এবং সমাজে সুসমাচারকে উপস্থাপন করার সঠিক উপায় খুঁজে বের করা।
► আপনার শহরের মন্ডলীগুলি কোন কোন পদ্ধতিতে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে? এই পদ্ধতিগুলি কি সুসমাচারকে তুলে ধরে?
[1]এই পদ্ধতির উদাহরণের জন্য, Open Air Campaigners- এর ওয়েবসাইট দেখুন: https://www.oacgb.org.uk/ and https://oacusa.org.
[2]ছবি এবং তথ্যের জন্য এই ওয়েবসাইটটি দেখুন: https://prayerstations.org
বন্ধুদের মাঝে সুসমাচার প্রচার
সুসমাচারের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল যখন কোনো ব্যক্তি এমন কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি সুসমাচার প্রচার করে যাকে সে জানে এবং বিশ্বাস করে।
খ্রিষ্টের একজন অনুগামীকে সেই সময় সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে হয় যখন সে তার বন্ধু এবং পরিচিতদের কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছে কারণ তারা তার জীবনের উদাহরণ দেখেছে। যদি সে একটি ভালো উদাহরণ হয়, তাহলে তারা তার সাক্ষ্যকে সম্মান করবে। একজন বিশ্বাসীর কাছে তার বিশ্বাস তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ যাতে লোকেরা সবসময় জেনে রাখে যে সে একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী। লোকেরা তাকে বাইবেল পড়তে বা প্রার্থনা করতে দেখলে তার কখনোই লজ্জিত হওয়া উচিত নয়। যারা তাকে চেনে, তারা যখন জানবে যে সে একজন বিশ্বাসী, সেই সময় তাদের অবাক হওয়া উচিত নয়।
খ্রিষ্টের একজন অনুগামী স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে তার জীবনযাত্রার জন্য সম্মানিত হতে পারে, এমনকি সেইসব লোকদের কাছে যারা খ্রিষ্টধর্মকে পছন্দ করে না। এমনকি যেসব লোকেরা তাকে অপমান করেছে, তারাও তাকে সম্মান করবে যদি সে তার কাজ এবং আচার-আচরণে অবিচল থাকে। কিছু লোক তার কাছে প্রার্থনা এবং সাহয্যের জন্যও আসবে।
ব্যক্তিগত সংযোগ
কিছু লোক মনে করে যে একজন ব্যক্তির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার আগে তার সেই ব্যক্তিকে অন্তত কিছুদিনের জন্য চেনা-জানা হওয়া উচিত। এটি সত্য যে একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর কথা শুনতেই বেশি পছন্দ করে। তবে, যাইহোক, অবিলম্বে একজন ব্যক্তির প্রতি আন্তরিক উদ্বেগ এবং আগ্রহ দেখানো সম্ভব। আমরা যদি আমাদের সাথে দেখা লোকদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে না শিখি, তাহলে আমরা কার্যকর হওয়ার অনেক সুযোগ হারাব। “সুযোগের খোঁজ” সম্পর্কিত পূর্ববর্তী পাঠটি সুসমাচারের জন্য কথোপকথন শুরু করার পদ্ধতিগুলি শেখায়।
এক ব্যক্তি বলেছিলেন, “যখন আমি কোনো লোকের সাথে কিছুক্ষণের জন্য একা কথা বলি, আমি সেটাকে ঈশ্বরের দেওয়া সুযোগ বলে মনে করি।” তিনি বলতে চেয়েছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন ঈশ্বর তাঁক সুসমাচার প্রচারের কাজে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেন।
মুদ্রিত সুসমাচার
আপনি সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমন কিছু করতে পারেন যা প্রেরিত পৌল করতে পারেননি।
আমাদের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতি আছে যা বহু শতাব্দী ধরে মন্ডলীর কাছে উপলব্ধ ছিল না: তথ্য মেশিনের মাধ্যে কাগজে মুদ্রিত হতে পারে।
► আপনার কী মনে হয় প্রিন্টিং ব্যবস্থা উপলব্ধ হওয়ার আগে পরিচর্যার কাজ কতটা আলাদা ছিল?
মুদ্রণ বা প্রিন্টিংয়ের আগের চেষ্টা সময়ে পরিচর্যার কথা কল্পনা করার করুন। একটি বইয়ের প্রতিটি কপির জন্য একজন শিক্ষিত ব্যক্তির যথেষ্ট পরিমাণ দিন লাগত কারণ এটাকে হাতে লিখতে হত। আপনার মনে হতে পারে যে এখন বই খুবই দামী, কিন্তু ভেবে দেখুন একটা বইয়ের জন্য যা দিচ্ছেন তা আপনাকে একজন দক্ষ পেশাদার ব্যক্তিকে ১০দিনের মধ্যে কাজ করার জন্য নিয়োগ করার জন্য দিতে হত।
প্রায় কারোর আকছেই তাদের শাস্ত্রের নিজস্ব কপিটি থাকত না। এমনকি পাস্টারের কাছেও সম্পূর্ণ বাইবেলটি থাকত না। ভেবে দেখুন যদি আপনার কাছে বাড়িতে বসে বাইবেল পড়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকত।
[1]পাস্টারদের প্রশিক্ষণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখে মুখে হত, এবং তারা যা শুনেছে তা তাদেরকে মনে রাখার চেষ্টা করতে হত। মুদ্রিত প্রশিক্ষিণ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। প্রিন্ট ছাড়া, কোনোকিছুই লিখিত হত না এবং বহুল পরিমাণে বিলি করা যেত না।
► কোন কোন উপায়ে প্রিন্টিং সুসমাচারের বিস্তারের ক্ষেত্রে সাহায্য করে?
ট্র্যাক্ট হল মুদ্রিত ছোটো নিবন্ধ যা সাধারণত সুসমাচারকে তুলে ধরে। বিশ্বাসীরা তাদের সাথে আলাপ হওয়া লোকদেরকে এটা দিতে পারে। একটা জনবহুল স্থানে এগুলি অনেক বেশিও বিলি করা যেতে পারে। এগুলি এমন জায়গাতেও রেখে আসা যেতে পারে যেখানে লোকজন এগুলি পড়বে।
যদি কোনো ব্যক্তি অপরিচিতদের কাছে বেশি সুসমাচার প্রচার করতে না পারে, তাহলে ট্র্যাক্ট দেওয়া সেই কাজটি শুরু করার একটি ভালো উপায়।
ট্র্যাক্ট রঙিন হওয়া উচিত এবং তার একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম থাকা আবশ্যিক। যখন রাস্তায় বা অন্য কোনো জনবহুল স্থানে লোকজনের মধ্যে ট্র্যাক্ট বিলি করছেন, তখন মুখে হাসি রাখুন এবং তাদেরকে অভিবাদন করুন। আপনি বলতে পারেন, “হ্যালো, আপনি এগুলির মধ্যে কোনোটা কি কখনো পেয়েছেন?” এই বিষয়টি তাদেরকে বস্তুটি কী তা দেখার জন্য আগ্রহী করে তুলবে।
হতেই পারে যে আপনি যে ট্র্যাক্টগুলি দিয়েছেন সেগুলিতে বেশিরভাগ লোকোই আকৃষ্ট হল না। বহু লোক সেগুলো না পড়েই ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে। তবে, ভালো ফলাফলও আছে। একটি ট্র্যাক্টে লেখা বার্তার সাহায্যে মানুষ রূপান্তরিত হয়েছে। সাধারণত, আপনি যে ট্র্যাক্টগুলি দিয়েছেন আপনি তার ফলাফল জানতে পারবেন না।
ভারত, উগান্ডা এবং অন্যান্য স্থানের মিশনারীদের বিরুদ্ধে রূপান্তরিতদের অর্থ, দুর্ভিক্ষ ত্রাণ, শিক্ষাগত সুবিধা এবং চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে বা তাদের পছন্দের অন্য কোনো পরিষেবা দেওয়া মাধ্যমে 'ক্রয়' করার অভিযোগ রয়েছে।
- জে. হারবার্ট কেন (J. Herbert Kane, “The Work of Evangelism”)
বাস্তবিক চাহিদা পূরণ
কিছু কিছু সময় মানুষ জীবনের কিছু বাস্তবিক চাহিদা নিয়ে চিন্তিত থাকে। সেগুলি হতে পারে, পর্যাপ্ত খাবার বা থাকার জায়গা বা চিকিৎসার অভাব। তারা মনে করে যে সেগুলি তাদের আত্মিক চাহিদার চেয়েও বেশি জরুরী। মন্ডলী সুসমাচার প্রচার করার একটি উপায় হিসেবে বাস্তবিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতে পারে। যে সম্ভাব্য সমস্যাটি হতে পারে তা হল মন্ডলীর মনোযোগ আত্মিক চাহিদার চেয়ে জাগতিক চাহিদার ওপর বেশি থাকবে, ঠিক পরিত্রাণ না পাওয়া লোকদের মতো।
মন্ডলীর বাস্তবিক চাহিদা পূরণের দিকে নজর দেওয়া উচিত কিন্তু কিছু অভ্যাস বা অনুশীলন বজায় রাখা উচিত যা আত্মিক অগ্রাধিকারের উপর জোর দেয়।
১। তারা যখন চাহিদা পূরণের কাজটি করছে, তখন তাদের ব্যাখ্যা করা উচিত যে তারা ঈশ্বরের প্রেম শেয়ার করছে।
২। মন্ডলী থেকে বিচ্ছিন্ন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ না করে বরং তাদের একসাথে বিশ্বাসের একটি পরিবার হিসেবে কাজ করা উচিত।
৩। তাদের লোকজনকে মন্ডলীতে সহভাগিতায় আসার আমন্ত্রণ জানানো উচিত যেখানে পারস্পরিক খেয়াল রাখা হয়।
৪। তাদের সুসমাচার প্রচার করা উচিত, শেখানো উচিত যে অনন্ত জীবন এবং আশীর্বাদ ঈশ্বরকে জানার ফলে আসে।
বহু মিনিস্ট্রি এমন অনেক প্রোগ্রাম করে যার উদ্দেশ্য থাকে বস্তুগত চাহিদা পূরণ করা। তারা লোকজনের চাহিদা ততক্ষণই পূরণ করতে পারে, যতক্ষণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত সংস্থান আছে। তাদের উদ্দেশ্য হল সুসমাচার প্রচারের সুযোগ তৈরি করা। তারা মনে করে যে বাস্তবিক উপায়ে লোকজনকে সাহায্য করলে তা বন্ধুত্ব তৈরি করবে এবং সুসমাচারের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করবে। ফর্মুলাটি হল প্রোগ্রাম, তারপর সম্পর্কস্থাপন, তারপর সুসমাচার প্রচার ।
সাহায্যের এই প্রোগ্রামগুলি ভুল হওয়ার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। সাহায্য দাতা/গ্রহীতা সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। কখনো কখনো সুসমাচার প্রদত্ত জিনিস থেকে আলাদা বলে মনে হয়, এবং লোকজন সুসমাচারে আগ্রহী না হয়েও সাহায্য পেতে পারে। এমনকি সেই প্রোগ্রামে কর্মরত লোকেরাও সাহায্য প্রদানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সুসমাচার প্রচার করে না।
এই ফর্মুলাটি উল্টো হওয়া উচিত। মন্ডলীর সবসময় প্রত্যেকে সাথে প্রথম সংযোগের ক্ষেত্রে সুসমাচারকেই প্রধান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
যখন একটি মন্ডলী জগতের সামনে সুসমাচার উপস্থাপন করে, তখন তাদের মন্ডলীতে একটি নতুন জীবনের বর্ণনা কী তা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। পরিত্রাণ কোনো ব্যক্তিগত, ব্যক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত নয় যা একজন ব্যক্তিকে একা একটি অচেনা, নতুন জীবনে এনে ফেলে। অবিশ্বাসীরা সাধারণত সুসমাচার গ্রহণ করবে না যতক্ষণ না তারা বিশ্বাসের সেই সম্প্রদায়ের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে যা সুসমাচারকে তুলে ধরে।
যিশু এবং প্রেরিতদের পরিচর্যাতে, আমরা দেখেছি যে সুসমাচার হল ঈশ্বরের রাজ্যের সুসংবাদ। এটির বার্তাটি হল যে একজন পাপী ক্ষমা পেতে পারে এবং ঈশ্বরের সাথে সুসম্পর্কে বাস করতে পারে। সে পাপের ক্ষমতায় থেকে মুক্ত এবং এক নতুন সৃষ্টিতে পরিণত। সে বিশ্বাসের পরিবারে প্রবেশ করেছে যেখানে তার আত্মিক ভাই এবং বোনেরা তাকে উৎসাহিত করে এবং তার প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করে।
মন্ডলীর সুসমাচার প্রচারকেই তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা উচিত। মন্ডলীর সেই বিষয়টিতে ক্রমাগত কাজ করে চলা আবশ্যিক। প্রত্যেকের জানা উচিত যে মন্ডলীর মূল উদ্দেশ্য হল আত্মাদের পরিত্রাণের জন্য কাজ করা। এরপর, মন্ডলী সঠিক ব্যক্তিদের আকর্ষিত করে। এটি সেইসব লোকদের আকর্ষিত করে যারা সুসমাচারের আগ্রহী। এইসব লোকেরা মন্ডলীর সাথে সম্পর্কে যুক্ত হয়, সুতরাং সুসমাচারের পরিচর্যা একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলে।
এরপর, মন্ডলীর সাথে সম্পর্কযুক্ত সেইসব লোকদের মন্ডলী সাহায্য করে। হতে পারে যে তাদের মধ্যে সকলেই এখনো বিশ্বাসী হয়ে ওঠেনি, কিন্তু তারা একটি সুসম্পর্কে রয়েছে এবং মন্ডলীর সুসমাচার পরিচর্যার দ্বারা আকর্ষিত।
সুতরাং, বিপরীত ফর্মুলাটি হল সুসমাচার, তারপর সম্পর্কস্থাপন, তারপর সাহায্য (কোনো প্রোগ্রাম নয়)। মন্ডলীর এমন একটি প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত নয় যা কেবল সাহায্য সংক্রান্ত কর্মসূচীর প্রস্তাব দেয়। পরিবর্তে, মন্ডলী হল একদল লোক যারা তাদের সাথে সম্পর্কে থাকা লোকদের সাহায্য করে। যদি তারা প্রোগ্রাম শুরু করে, তাহলে লোকেরা সম্পর্ক ছাড়াই প্রোগ্রামের জন্য আসবে।
১৩ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) আপনার স্থানীয় মন্ডলীগুলি কীভাবে সুসমাচার প্রচার করে সেই পদ্ধতিটি পর্যবেক্ষণ করুন। মন্ডলীর বাইরে কি সেই পদ্ধতিগুলি লোকেদের আকর্ষণ করতে সফল হয়? তারা কি সুস্পষ্টভাবে সুসমাচার প্রচার করে? ২-৩ পাতায় আপনার পর্যবেক্ষণটি লিখুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.