অনুগ্রহ যা পরিত্রাণের দিকে চালিত করে
এমনকি একটি বলিদান প্রদান করেও, একজন পাপীর হৃদয়ে যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহ কাজ না করে তাহলে সে আশাহীন থাকবে। পাপী ব্যক্তি তার পাপের দ্বারা আধ্যাত্মিকভাবে মৃত, মন্দ আকাঙ্ক্ষার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং শয়তানের শাসনাধীনে রয়েছে (ইফিষীয় ২:১-৩) তিনি তার আচরণ পরিবর্তন করতে অক্ষম (রোমীয় ৭:১৮-১৯)। কীভাবে তিনি অনুতাপ ও বিশ্বাস সহকারে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেবেন?
ঈশতত্ত্ববিদরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন কিভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ মানুষের অবস্থার প্রতি সাড়া দেয়।
জন ক্যালভিন (John Calvin)
জন ক্যালভিন বিশ্বাস করতেন যে মানুষ যেহেতু সম্পূর্ণভাবে পাপ-প্রবৃত্তিতে (totally depraved) রয়েছে, সে ঈশ্বরের প্রতি সাড়া দিতে পারে না।[1] তাই, ঈশ্বরই বেছে নেন কে রক্ষা পাবে আর কে পাবে না। যেহেতু ঈশ্বর কেবলমাত্র কিছু মানুষকে পরিত্রাণ করার জন্য বেছে নিয়েছেন, তাই প্রায়শ্চিত্ত কেবলমাত্র তাদের জন্যই দেওয়া হয়, সমস্ত মানুষের জন্য নয়। এই বিষয়টি মানুষ নিজে বেছে নিতে পারে না। এমন এক অনুগ্রহ যা প্রতিরোধ করা যায় না, ঈশ্বর তাদের অনুতপ্ত হতে এবং বিশ্বাস করতে বাধ্য করেন। তারা কখনোই পরিত্রাণ থেকে দূরে সরে যেতে পারে না কারণ তাদের ইচ্ছা ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটিই ছিল ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে ক্যালভিনের ধারণা।
ক্যালভিন বিশ্বাস করতেন নাযে, সকলের পরিত্রাণকারী অনুগ্রহ (saving grace) লাভ করা সম্ভব। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বিশেষ অনুগ্রহ (special grace) ছাড়া কেউই অনুতপ্ত হতে এবং বিশ্বাস করতে পারে না, এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই অনুগ্রহ অধিকাংশ মানুষকে দেওয়া হয়নি।
ক্যালভিন বিশ্বাস করতেন যে একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া কোনো ভালো কাজ করতে পারেন না, যেমন প্রতিশ্রুতি রাখা বা তার পরিবারকে ভালবাসা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর সমস্ত মানুষকে অনুগ্রহ প্রদান করেন, যা তাদেরকে উত্তম কাজ করতে সমর্থ করে। তিনি এই অনুগ্রহকে ‘সাধারণ অনুগ্রহ’ (common grace) বলে অভিহিত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন না যে ‘সাধারণ অনুগ্রহ’ একজন ব্যক্তিকে পরিত্রাণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
জন ওয়েসলি (John Wesley) ঈশ্বরের অনুগ্রহ সম্পর্কে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তিনি দেখেছিলেন যে বাইবেল সবসময় মানুষকে ঈশ্বরের প্রতি সাড়া দিতে আহ্বান জানায়। এই কারণেই তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের পক্ষে বেছে নেবার বিষয়টি বাস্তব। ক্যালভিনের মতো, তিনিও বিশ্বাস করতেন যে মানুষ পাপ-প্রবৃত্তিগ্রস্থ এবং ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া সে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দিতে পারে না। কিন্তু তিনি এও বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর প্রত্যেককে সেই সাহায্যটি দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর লোকেদের সাড়া দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতা দেন, কিন্তু তাদেরকে অপ্রতিরোধ্যভাবে পরিত্রাণ দেন না। ঈশ্বর মানুষকে বেছে নেওয়াকে সম্ভব করে তোলেন। এটি প্রথম অনুগ্রহ (first grace) যা প্রতিটি ব্যক্তির কাছে আসে। ঈশ্বরতত্ত্ববিদেরা একে ‘প্রিভেনিয়েন্ট অনুগ্রহ’ (prevenient grace) বলে অভিহিত করেছেন, যার অর্থ “আগে যে অনুগ্রহ আসে” (the grace that comes before)।
ঈশ্বরের অনুগ্রহ সেই পাপীর হৃদয়ে পৌঁছায়, তাকে তার পাপের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে দেখিয়ে দেয় যে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য সে নিজে দায়ী। ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাকে ক্ষমা কামনা করতে এবং ঈশ্বরের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা দেয়।
অনুগ্রহ ছাড়া একজন পাপী ঈশ্বরের কাছেও আসতে পারে না। ঈশ্বরের অন্বেষণ শুরু করার আগে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে অনুগ্রহ আসে, যদিও সে এটির যোগ্য কিছুই করেননি।
ইফিষীয় ২:১-৩ একটি নিরাশার বর্ণনা দেয়। কিন্তু সেই বর্ণনার পরে যে দু'টি পদ আসে, তা দেখুন।
কিন্তু আমাদের প্রতি মহাপ্রেমের জন্য ঈশ্বর, যিনি অপার করুণাময়, আমরা যখন অপরাধের ফলে মৃত হয়েছিলাম, তখনই তিনি খ্রীষ্টের সঙ্গে আমাদের জীবিত করলেন। আর তোমরা অনুগ্রহেই পরিত্রাণ লাভ করেছ। ইফিষীয় ২: ৪-৫
একজন ব্যক্তি যদি পরিত্রাণ না পায়, তাহলে সেটি এই কারণে নয় যে সে অনুগ্রহ পাই নি, বরং সে যে অনুগ্রহ লাভ করেছিল সেটির প্রতি সে সাড়া দেয় নি।
► কোনটি প্রথমে আসে, ঈশ্বরের জন্য মানুষের অনুসন্ধান, নাকি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের কাজ? আপনি কিভাবে এটি বর্ণনা করবেন?