রোমীয় ১০ অধ্যায়টি হল রোমীয় পুস্তকের চরমসীমা। প্রেরিত ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা করেছেন যে পরিত্রাণ বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা আসে এবং বিশ্বের প্রত্যেকেরই এটি প্রয়োজন। যেহেতু বিশ্বাস অত্যাবশ্যক, সুসমাচারের বার্তাটি গুরুত্বপূর্ণ: লোকেদের বার্তাটি শুনতে হবে যাতে তারা এটি বিশ্বাস করতে পারে। এই অধ্যায়টি বইটির উদ্দেশ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ পুরো বইটি মিশনারি কাজের ভিত্তি প্রদান করে।
রোমীয় ১১ অধ্যায় ইস্রায়েল এবং মন্ডলীর সম্পর্কের দিকে আলোকপাত করে। বেশিরভাগ ইহুদিই সুসমাচারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। পৌল ব্যাখ্যা করেছেন যে ঈশ্বরের পরিকল্পনা সমগ্র জগতের জন্য ছিল এবং ইহুদিরাও পরিত্রাণ পেতে পারত। সামগ্রিকভাবে ইস্রায়েল একদিন খ্রিষ্টকে গ্রহণ করবে।
ধার্মিকতা অবশ্যই বিশ্বাসের দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা উচিত, এবং বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা সুসমাচারের বার্তাকে জরুরিভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
১০ অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ
ব্যক্তিগত ধার্মিকতার দ্বারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হওয়ার চেষ্টা করা একটি ভুল। ঈশ্বর মানুষের থেকে যে ধার্মিকতার গ্রহণ করেন, তা তিনি মানুষকে প্রথমে বিশ্বাসের প্রত্যুত্তরে প্রদান করেন। সুসমাচারের বার্তা বিশ্বাসের জন্য একটি সুযোগ প্রদান করে।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১০ অধ্যায় পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১০:১-৫) ইহুদিদের এখনো পরিত্রাণ পাওয়া প্রয়োজন আছে কারণ তারা বুঝতে পারেনি যে তাদের কোন ধার্মিকতার প্রয়োজন ছিল। তারা ব্যক্তিগত ধার্মিকতার একটি নিখুঁত নথি স্থাপন করে তাদের নিজেদেরকে ন্যায্য বা ধার্মিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, তারা উপলব্ধি করতেই পারেনি যে এটি অসম্ভব। যে ধার্মিকতা ঈশ্বর গ্রহণ করেন তা হল সেটি যা বিশ্বাসীর বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়ায় একজন মানুষের মধ্যে তিনি সাধন করেন।
বিধানের উদ্দেশ্য হল পাপকে দণ্ডাজ্ঞা দিয়ে এবং একজন মুক্তিদাতার প্রয়োজন আছে তা দেখিয়ে আমাদেরকে খ্রিষ্টের কাছে নিয়ে আসা। যখন একজন ব্যক্তি খ্রিষ্টের কাছে আসে, তখন বিধান আর ঈশ্বরের কাছে সেই ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি থাকে না, কারণ খ্রিষ্টই হলেন বিধানের ব্যবহারের সেই সমাপ্তি (১০:৪)। তার মানে এই নয় যে বিধান আমাদেরকে আর দেখায় না যে কীভাবে ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলতে হয়, বরং এটি প্রকাশ করে যে ঈশ্বরের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আমাদের বাধ্যতার একটি নিখুঁত, আজীবন রেকর্ডের ওপর নির্ভর করে না।
খ্রিষ্ট পৃথিবীতে আসার আগে যারা বাস করত তারা তাদের কাজ দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছিল – এই তত্ত্বটি এই অংশে সম্পূর্ণরূপে ভুল বলে প্রমাণ করা হয়েছে। পৌল স্পষ্টভাবে বলেছেন যে যারা কাজের দ্বারা তাদের নিজস্ব ধার্মিকতা স্থাপন করার চেষ্টা করেছিল তারা ভুল পথে চালিত হয়েছিল এবং হারিয়ে গিয়েছিল। তাদের সুসমাচারের সত্য বিশ্বাস করা উচিত ছিল যা পৌল ১০:৬-৮-এ দ্বিতীয় বিবরণ থেকে উদ্ধৃত করেছেন।[1]
(১০:৬-১১) এটি দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১১-১৪ থেকে নেওয়া একটি উক্তি। মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন যে ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলা কোনো বীরত্বপূর্ণ বা অতিমানবীয় কাজের উপর নির্ভর করে না, যেমন স্বর্গে আরোহণ করা বা সমুদ্র পার করে যাওয়া। পরিবর্তে, এটি তাদের বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের দ্বারা তাদের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
পৌল স্বর্গে বা পৃথিবীতে আরোহণের কৃতিত্বের উল্লেখ করার জন্য বিবৃতিটিকে উপযোগী করে নিয়েছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে খ্রিষ্ট প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু পূরণ করেছেন।
অনুগ্রহের দ্বারা পরিত্রাণ এতই কাছে যে এটি আমাদের হৃদয়ে এবং মুখে রয়েছে। এর মানে হল যে আমরা এটি বিশ্বাস (আমাদের হৃদয়ে) এবং স্বীকারোক্তি (আমাদের মুখ দ্বারা) দ্বারা গ্রহণ করি।
(১০:১২-১৩) এখানে আরেকটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে যে পরিত্রাণের একই উপায় প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উপলব্ধ। সকলের উপর যিশু হলেন প্রভু, এবং বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তি তাঁকে ডাকতে পারে।
(১০:১৪-১৫, ১৭) এটি মিশনারি কাজের জন্য একটি আহ্বান। মিশনারির বার্তাটি আশু প্রয়োজনীয়—যেহেতু লোকেরা বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ পায়, তাই তাদের বার্তা শোনা উচিত যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে। এই পদগুলি বইটির উদ্দেশ্যের মূল বিষয়বস্তু।
পৌল মিশনারি কাজের জন্য গভীর আবেগ প্রকাশ করেছেন এবং যারা সুসমাচার শোনেনি তাদের দুরাবস্থা বর্ণনা করেছেন। তারা বিশ্বাসের দ্বারা পরিত্রাণ পেতে পারে; কিন্তু কীভাবে তারা বিশ্বাস করবে যদি তারা না শোনে, এবং কীভাবে তারা শুনবে যদি কোনো মিশনারি সেখানে না যায়?
► পৌল মিশনারিদের পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন, যার অর্থ হল তাদের প্রস্তুত করা এবং সাহায্য করা। যারা আপনার কাছাকাছি নেই এমন লোকেদের কাছে সুসমাচার পাঠাতে সাহায্য করার জন্য আপনার কী করা উচিত?
[2](১০:১৬, ১৮-২১) মিশনারি আহ্বানে নিবদ্ধ করা আছে যা মনে করিয়ে দেয় যে সকলে সাড়া দেবে না। মানুষ কেবল সুসমাচারের তথ্য দিয়ে পরিত্রাণ পায় না। পরজাতিদের কাছে সাধারণ প্রকাশ দ্বারা কিছু জ্ঞান ছিল (১:১৮-২০-তে আলোচিত), কিন্তু সেগুলি তাদেরকে রক্ষা করতে পারেনি কারণ তারা এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল (১০:১৮ হল গীত ১৯:৪ থেকে নেওয়া একটি উক্তি)। ইস্রায়েলের কাছে আরো অনেক বেশি প্রকাশ ছিল, তবুও তারা কেবল এটির দ্বারা পরিত্রাণ পায়নি। যিশাইয় ইস্রায়েলের মশীহকে প্রত্যাখ্যান করা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন (যিশাইয় ৫৩:১, ৩)।
প্রেরিত বিরোধিতা বা আপত্তির উত্তর দিয়েছেন। প্রথমে, পরজাতিদের সম্পর্কে, কেউ বলতেই পারে, “কিন্তু তারা কি সত্যিই জানে না?” পৌল উত্তর দিয়েছেন, “হ্যাঁ, ঈশ্বরের জ্ঞান সর্বত্র,” যা তিনি ১:২০-তে ব্যাখ্যা করেছেন। তারপর, আপত্তিকারী ইহুদিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছে: “ইস্রায়েল কি জানত না?” তিনি উত্তর দিয়েছেন যে ঈশ্বর ক্রমাগত ইস্রায়েলীয়দের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তা মানতে অস্বীকার করেছিল। আপত্তিকারী সুসমাচারের বার্তার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ করছে কারণ অনেকেই এটি শুনেছিল কিন্তু পরিত্রাণ পায়নি।
পৌল ব্যাখ্যা করেছেন যে বহু ইস্রায়েলীয়ই বিশ্বাসে সাড়া দেয়নি।[3] লোকেরা যদি সাড়া না দেয়, তাহলে তারা বার্তা দ্বারা পরিত্রাণ পেতে পারে না।
প্রচার সেই ব্যক্তিকে রক্ষা করে না যে ব্যক্তি অস্বীকার করে – ঈশ্বরের অনুগ্রহ অপ্রতিরোধ্য নয়। তবে, এটি পরিত্রাণের সুযোগের প্রস্তাব দেয়। প্রত্যেকেই ঈশ্বরের সম্পর্কে কিছু না কিছু জানলেও, সুসমাচার আরো উজ্জ্বল আলো এবং পবিত্র আত্মার দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষমতা নিয়ে আসে।
“পৌলের পত্রগুলি ইঙ্গিত দেয় যে সুসমাচার প্রচারের বিষয়ে তার দুটি মহৎ প্রেরণা ছিল: ঈশ্বর তার জন্য যা করেছেন ও অন্যদের জন্য তাকে কাজ করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা থেকে উদ্ভূত বাধ্যবাধকতার অনুভূতি; এবং একটি আকাঙ্ক্ষা যে ঈশ্বর যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষের দ্বারা মহিমান্বিত হবেন। সুসমাচারে ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রসারিত করে আমাদেরকে পৌলের অনুকরণ করতে হবে ঠিক যেমনটি তিনি করেছিলেন।“
ঈশ্বরের শর্ত অনুযায়ী পরিত্রাণ গ্রহণ না করলে কেউ রক্ষা পেতে পারে না।
১১ অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ
ইস্রায়েল সাধারণভাবে পরিত্রাণ পায়নি কারণ তারা ঈশ্বরের পদ্ধতি দ্বারা পরিত্রাণ পেতে অস্বীকার করেছিল। বহু পরজাতি বা অইহুদি পরিত্রাণ পেয়েছিল, কিন্তু যে কেউ বিশ্বাস থেকে পতিত হয়েছিল, সে তার পরিত্রাণ হারিয়েছিল। ইহুদিরাও পরিত্রাণ পেতে পারত যদি তারা তা বেছে নিত, এবং সমগ্রভাবে ইস্রায়েল একদিন সুসমাচার গ্রহণ করবে। ঈশ্বর তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা সাধন করবেন।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১১:১-১৫ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১১:১) প্রশ্ন হল, “ঈশ্বর কি ইহুদিদের প্রত্যাখ্যান করেছেন?” পৌল উত্তর দিয়েছেন, “না, আমিও একজন ইহুদি।” কিছু ইহুদি পরিত্রাণ পেয়েছিল।
(১১:২-৫) ঈশ্বর যাদের আগে থেকেই জানতেন তারা প্রত্যাখ্যাত নয়। অবশ্যই, ঈশ্বর সর্বজ্ঞ বলে সকলকেই আগে থেকে জানেন, কিন্তু এই পদ অনুযায়ী যাদেরকে আগে থেকেই ঈশ্বরের জানতেন তারা সমগ্র মানবজাতি নয় কারণ পদটি ইস্রায়েলের নির্দিষ্ট কিছু লোকের ব্যাপারে কথা বলছে। এই পদটি তাদেরকে উদ্দেশ্য করছে যাদের ঈশ্বর জানতেন যে তারা তাঁর অনুগ্রহে সাড়া দেবে।[1] পৌল এই ধারণা অনুযায়ী একদল লোকের উদাহরণ দিয়েছেন যাদেরকে ঈশ্বর আগে থেকেই জানতেন এবং গ্রহণ করেছিলেন – সেই ৭,০০০ লোক যারা বাল-দেবতার কাছে মাথা নত করেনি।
অবশিষ্ট (the remnant) যারা ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত (১১:৫) তারা নির্বিচারে বা এলোমেলোভাবে নির্বাচিত হয়নি। তারা হল সেই ব্যক্তি যাদের ঈশ্বর জানতেন যে তারা তাঁকে বিশ্বাস করবে।
(১১:৬) কাজ এবং অনুগ্রহ সর্বদাই খ্রিষ্টীয় জীবনে একসাথে চলে, কিন্তু এগুলি পরিত্রাণের ভিত্তি হিসেবে একে অপরকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে। কিছু মিথ্যা ধর্ম যেমন শেখায় সেই অনুযায়ী, এগুলি ঈশ্বরের দ্বারা আমাদের গ্রহণযোগ্যতার একটি ভিত্তি হিসেবে একসাথে যুক্ত হতে পারে না।
(১১:৭-১০) ১১:৮, যেটি হল যিশাইয় ২৯:১০-এর একটি উক্তি, দেখায় যে মানুষের কপটতা তাদেরকে আত্মিকভাবে অন্ধ করে তুলেছিল। তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল কারণ তারা ক্রমাগত সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যিশাইয় ৬:৯-১০-ও বলে যে কিছু লোক অন্ধ হয়ে যায় যখন তারা করুণার প্রস্তাব শুনতে থাকে এবং প্রত্যাখ্যান করতে থাকে। রোমীয়তে এই পদগুলি বোঝায় না যে ঈশ্বর কিছু লোকের কাছে করুণার প্রস্তাব দেওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন। দায়ূদের অভিশাপ (গীত ৬৯:২২, ২৩), যা পৌল রোমীয় ১১:৯-১০-এ উল্লেখ করেছেন, তার অর্থ এই নয় যে অনুতপ্ত লোকেরা প্রত্যাখ্যাত হবে, কিন্তু দুষ্ট লোকেরা শাস্তি পাবে।
(১১:১১) ঈশ্বর কি তাদের সমস্ত আশা বাতিল হয়ে যেতে দিয়েছেন? না। ইস্রায়েলের খ্রিষ্টকে প্রত্যাখ্যানের ফল ছিল তাঁর ক্রুশারোপণ, যা ঈশ্বরের পরিত্রাণের উদ্দেশ্য ছিল। এই অর্থে, তাদের প্রত্যাখ্যানের ফল হয়েছিল পরজাতিদের গ্রহণযোগ্যতা। যখন ইহুদিরা পরজাতিদের পরিত্রাণ পেতে দেখে, তারা বুঝতে পারে যে তারাও একইভাবে পরিত্রাণ পেতে পারত।
(১১:১২-১৫) এমনকি পরজাতিরা বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবে যদি ইস্রায়েল ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে। ঈশ্বরের কাছে ইহুদি এবং পরজাতিদের মধ্যে নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি সবাইকে রক্ষা করতে চান।
► কিছু ধর্মতত্ত্ববিদ বিশ্বাস করেন যে যেহেতু ঈশ্বর কিছু লোককে পরিত্রাণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাই তিনি তাদের থেকে তাঁর অনুগ্রহ সরিয়ে নিয়েছিলেন, যা তাদের পক্ষে পরিত্রাণ পাওয়াকে অসম্ভব করে তুলেছিল। আপনি কীভাবে ১১:১২-১৫ থেকে এই ধারণাটির উত্তর দেবেন?
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১১:১৬-২৪ পড়তে হবে।
(১১:১৬-২৪) এই পদগুলি একটি গাছ থেকে শাখা নিয়ে সেগুলিকে অন্য গাছে লাগানোর অনুশীলনের দৃষ্টান্তকে তুলে ধরে। ইস্রায়েল ছিল ঈশ্বরের গাছ থেকে ভেঙে পড়ে যাওয়া শাখাগুলির মতো, এবং পরজাতিরা ছিল যুক্ত হওয়া শাখাগুলির মতো। ইহুদিরা তাদের অবিশ্বাসের জন্য ভেঙে পড়েছিল। যাদেরকে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে যে কেউ ভেঙে পড়তে পারে যদি সে বিশ্বাসে অবিচল না থাকে। যারা ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে, তারা পুনঃস্থাপিত হতে পারে।
পৌল বলেননি যে ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নেন কারা গাছের উপর থাকবে এবং তাঁর সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়। তিনি বলেছেন যে ঈশ্বর তাদেরকে বাদ দেন যারা অবিশ্বাসী, কিন্ত যদি তারা বিশ্বাস করে তাহলে তাদের যুক্ত করা হবে। বিশ্বাসী পরজাতিরা যুক্ত হয়, কিন্তু তাদের বাদ দেওয়া হবে যদি তারা অবিশ্বাসে পতিত হয়। ঈশ্বর মানুষের পছন্দে প্রতিক্রিয়া জানান।
► এই পদগুলি থেকে, যুক্ত হওয়া বা বাদ দেওয়া শাখাগুলির দৃষ্টান্তটি আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে বাইবেল একজন বিশ্বাসীর নিরাপত্তা সম্পর্কে কী শেখায়। বাইবেলে বিশ্বাসীদের জন্য বহু গুরুতর সতর্কতা রয়েছে।
যোহন ১৫:২-১০-এ দ্রাক্ষালতা এবং শাখার বিখ্যাত রূপকটি রয়েছে। এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়।
কীভাবে আমরা খ্রিষ্টে বাস করি? “তোমরা যদি আমার আদেশ পালন করো, তাহলে আমার প্রেমে অবস্থিতি করবে” (১৫:১০)। খ্রিষ্টে বসবাস করা থামিয়ে দেওয়ার অর্থ হতে পারে যে একজন ব্যক্তি তাঁর বাধ্য হয়ে চলা বন্ধ করে দিয়েছে। তখন কী ঘটে?
“কেউ যদি আমার মধ্যে না থাকে, সে সেই শাখার মতো, যেটিকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয় ও সেটি শুকিয়ে যায়। সেই শাখাগুলিকে তুলে নিয়ে আগুনে ফেলা হয় ও সেগুলি পুড়ে যায়।” (১৫:৬)। যদি একজন ব্যক্তি আনুগত্যে চলা বন্ধ করে দেয় এবং ফলস্বরূপ খ্রিষ্টে বসবাস করা বন্ধ করে দেয়, সে প্রত্যাখ্যাত। দ্রাক্ষালতা থেকে বাইরে ফেলে দেওয়া এবং আগুনে পোড়ানোর জন্য একত্রিত করা শাখাগুলির দৃষ্টান্তটি সবচেয়ে পরিপূর্ণ প্রত্যাখ্যানকে দেখায় যা আমরা কল্পনা করতে পারি।
“তোমরা আমার মধ্যে থাকলে, আমিও তোমাদের মধ্যে থাকব। নিজে থেকে কোনো শাখা ফলধারণ করতে পারে না, দ্রাক্ষালতার সঙ্গে অবশ্যই সেটিকে যুক্ত থাকতে হবে। আমার সঙ্গে যুক্ত না থাকলে, তোমরাও ফলবান হতে পারো না” (১৫:৪)। “আমার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি শাখায় ফল না ধরলে, তিনি তা কেটে ফেলেন।” (১৫:২)। ফলধারণ করার অর্থ হল এমন একটি জীবন যাপন করা যেটি পরিবর্তিত, আশীর্বাদযুক্ত, এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ দ্বারা পরিচালিত। আমরা যদি আনুগত্য দ্বারা খ্রিষ্টে বসবাস না করি, তাহলে আমরা ফলবান হতে পারব না। যে ব্যক্তি ফলধারণ করে না, তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
বাইবেল আমাদের কোথাওই বলে না যে আমরা যা খুশি করলেও পরিত্রাণ ধরে রাখতে পারব। খ্রিষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্কে দ্বারা খ্রিষ্টীয় জীবনযাপনের জন্য অবিরাম অনুগ্রহ আসে। খ্রিষ্ট হলেন এক দ্রাক্ষালতা যেখান থেকে আমরা ক্রমাগত জীবন পেতেই থাকব। দ্রাক্ষালতার রূপকটি দেখায় যে পরিত্রাণের উপহার সম্পর্কের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়। তাঁর থেকে পৃথক হওয়ার অর্থ হল পরিত্রাণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। আমরা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের দ্বারা এই পরিত্রাণের সম্পর্ককে বজায় রাখি।
একটি আধুনিক দৃষ্টান্ত হতে পারে একটি বাল্ব এবং বিদ্যুৎ। বাল্বটি তখনই জ্বলে ওঠে যখন এটির মধ্যে দিয়ে বৈদ্যুতিক শক্তি প্রবাহিত হয়। যদি বাল্বটিকে এটির শক্তির উৎস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বাল্বটি আর জ্বলে থাকতে পারে না। একইভাবে, খ্রিষ্টের সাথে আমাদের সম্পর্কের মাধ্যমে আমাদের অনন্ত জীবন রয়েছে। তাঁর জীবন আমাদের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। আমরা যদি তাঁর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি, তাহলে আমরা কোনোমতেই সেই জীবন ধরে রাখতে পারব না।
শাস্ত্র আমাদেরকে সতর্ক করে যে পরিত্রাণ পাওয়া কোনো ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে পাপের দ্বারা পরাজিত হয়ে পরিত্রাণ হারাতে পারে। “যে বিজয়ী হবে, সেও তাদের মতোই সাদা পোশাক পরবে। আমি জীবনপুস্তক থেকে তার নাম কখনও মুছে ফেলব না” (প্রকাশিত বাক্য ৩:৫)। এরা ছিল পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তবুও তাদের পরিত্রাণ হারিয়ে যেতে পারত যদি তারা পাপের দ্বারা পরাজিত হত।
এক সময়ে, পৌল আশঙ্কা করেছিলেন যে থিষলনীকীয়তে তার রূপান্তরিতরা হয়ত তাদের বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে। তিনি বলেছিলেন যে যদি এমনকিছু ঘটে থাকে, তাহলে সুসমাচার প্রচারে তার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে (১ থিষলনীকীয় ৩:৫)। এটি দেখায় যে একজন বিশ্বাসীর পক্ষে তার বিশ্বাস থেকে এতটাই পরিপূর্ণভাবে পড়ে যাওয়া সম্ভব যে তার প্রকৃত রূপান্তর ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
২ পিতর ২:১৮-২১-এ আমরা দেখি যে ভণ্ড শিক্ষকেরা আছে যারা কিছু বিশ্বাসীদেরকে ঠকায় যারা “আমাদের প্রভু ও পরিত্রাতা যীশু খ্রীষ্টকে জানার পর জগতের কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে আবার তারই মধ্যে জড়িয়ে পড়ে ও পরাজিত হয়।” এই প্রাক্তন বিশ্বাসীরা ধার্মিকতার পথ জানত, কিন্তু তা ত্যাগ করেছিল। এটি দেখায় যে একজন ব্যক্তির পক্ষে পাপের পথে ফিরে গিয়ে তার পরিত্রাণ হারিয়ে ফেলা সম্ভব। যদি একজন ব্যক্তির পক্ষে তার পরিত্রাণ হারিয়ে ফেলা সম্ভব না হত, তাহলে একজন ব্যক্তি কখনোই তার পরিত্রাণের আগের অবস্থা থেকে আরো খারাপ অবস্থায় যেত না।
ঈশ্বর চান যে বিশ্বাসীরা নিরাপদ বোধ করুক, কিন্তু তাদের অনুভূতিগুলিকে মিথ্যা আশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নয় যা তাদের নিজেদেরকে প্রকৃত আত্মিক বিপদে ফেলে দেয়। আমরা বিশ্বাসীদের এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেব না যা ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দেননি। তিনি এমন প্রতিশ্রুতি দেন না যে আমরা যা খুশি তাই করলেও আমরা আমাদের পরিত্রাণ হারানো থেকে নিরাপদ থাকব।
ঈশ্বর আমাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন, আমাদের পথ দেখান এবং পাপের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা দেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে আমরা তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক থেকে আত্মিক জীবন লাভ করি। একজন বিশ্বাসী ঈশ্বরের অবিরাম অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতিতে কোনোরকম ভয় ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারে যা সেই বিশ্বাসী ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের মধ্যে পেয়ে থাকে।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৫ম পর্ব, ৩ নং প্যাসেজ
পদের টীকাভাষ্য (অব্যাহত)
(১১:২৫-২৯) একটি জাতি হিসেবে ইস্রায়েল (সমগ্র ইস্রায়েল) পরিত্রাণ পাবে। তার মানে এই নয় যে প্রত্যেক ইহুদি ব্যক্তি পরিত্রাণ পাবে, বরং ভবিষ্যতে জাতির অবশিষ্টাংশরা ঈশ্বরের প্রতি ফিরবে। অইহুদিদের পূর্ণতার কথা লূক ২১:২৪-এ উল্লেখ করা হয়েছে। (একটি জাতি হিসেবে ইস্রায়েলের পরিত্রাণের বিষয়ে অন্যান্য তথ্য যিশাইয় ২:২-৫, যিশাইয় ৬০:১-২২; সখরিয় ১২:৭-১৩:৯ তে উল্লিখিত আছে।)
(১১:৩০-৩১) ১১:১১-র নোটটি দেখুন।
(১১:৩২) ঈশ্বর তাদের সকলকে একই অবস্থায় অবিশ্বাসী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন (তাদের দলবদ্ধ করেছেন)। ঈশ্বর সকলেরই দোষীসাব্যস্ত করেছেন এবং তাদের উপর বিচার নির্ধারণ করেছেন, যাতে সকলেই সমানভাবে করুণাপ্রার্থী হয়। সকল শব্দটি এই পদে দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে। যেহেতু সকলেই পাপী, তাই ঈশ্বর সকলের প্রতি করুণা চান। তিনি যেমন সকলের নিন্দা করেছিলেন, তেমনি তিনি সকলের প্রতি করুণার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সকল মানুষকে একই শ্রেণীতে রাখা হয়েছে যাতে তারা একই পরিত্রাণ পেতে পারে। (৩:১৯-২৩ দেখুন।) মূল বিষয় হল যে তিনি সকলকে দণ্ডাজ্ঞার মধ্যে রেখেছেন যাতে তিনি সকলকে একইভাবে করুণা দিতে পারেন।
(১১:৩৩-৩৬) এই পদগুলি হল ঈশ্বরের জ্ঞানের প্রশংসার একটি বিস্ময়ের প্রকাশ। মহান পরিত্রাণের পরিকল্পনা আমাদের কল্পনার চেয়ে অনেক উপরে। তিনি যেভাবে এটি আমাদেরকে দিতে চান সেভাবেই আমাদেরকে এটি গ্রহণ করতে হবে, কারণ তিনি আমাদের কাছে কোনোকিছুর জন্যই ঋণী নন (১১:৩৫)। কেউ কেউ ঈশ্বরের পরিত্রাণের পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ হয়, যেন এটি হোঁচট খাওয়ার পাথর; কিন্তু এটি আসলে করুণার ভিত্তিপ্রস্তর।
ডিস্পেন্সাশনালিজম বনাম কভেন্যান্ট থিওলজি
ঈশতাত্ত্বিকরা ইস্রায়েল এবং মন্ডলীর মধ্যে সম্পর্কটি বোঝার চেষ্টা করেছেন।
এগুলিতে অন্তর্ভুক্ত প্রশ্নসমূহ: নতুন নিয়মের লোকেদের থেকে কি পুরাতন নিয়মের লোকেরা কোনো আলাদা পদ্ধতিতে পরিত্রাণ পেত? ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলি কি মন্ডলীর জন্যও প্রযোজ্য? ঈশ্বরের পরিকল্পনায় কি ইস্রায়েল এখনো বিশিষ্ট?
ইস্রায়েল এবং মন্ডলীর মধ্যবর্তী সম্পর্কের একটি ব্যাখ্যাকে “যুগবাদ” বা “ডিসপেনসেশনালিজম” (dispensationalism) বলা হয়েছে। অন্যান্য ঈশতাত্ত্বিকরা যুগবাদের সঙ্গে অসম্মত হয়েছেন এবং একটি ব্যাখ্যা গড়ে তুলেছেন যেটি কখনো কখনো “চুক্তিতত্ত্ব” বা “কভেন্যান্ট থিওলজি” (covenant theology) বলা হয়েছে।
ডিস্পেন্সাশনালিজম
ডিসপেনসেশন বা যুগবাদ কথাটি এমন একটি ধারণা থেকে আসে যেখানে বলা হয় যে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কাল আছে, যেখানে ঈশ্বর মানুষের সাথে পৃথক পদ্ধতিতে আচরণ করেন, বিবিধ উপায়ে পরিত্রাণ প্রদান করেন। একটি সময়কাল যখন ঈশ্বর পরিত্রাণের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ব্যবহার করেন, তাকে বলা হয় ডিসপেনসেশন।
কিছু ডিসপেনসেশনালিস্ট বা যুগবাদী বহু বিভাগে মানব ইতিহাসে ভাগ করেছেন। দুটি সময়কাল যা বাইবেলের ব্যাখ্যাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে তা মূলত ইস্রায়েল এবং মন্ডলীর মধ্যে পার্থক্যের উপর ভিত্তিশীল। এই ধর্মতত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন যে পুরাতন নিয়মের ইস্রায়েলীয়রা মোশির বিধান এবং বলিদানের পদ্ধতি অনুসরণ করে রক্ষা পেয়েছিল; এবং নতুন নিয়মে বিশ্বাসীরা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা পরিত্রাণ পায়৷ মন্ডলী ইস্রায়েল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, এবং ঈশ্বর তাদের সাথে ভিন্নভাবে আচরণ করেন।
যদিও যুগবাদ তত্ত্বে, অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে, তবে যুগবাদের একটি সাধারণ সংস্করণ শেখায় যে ভূমি এবং রাজ্য সম্পর্কে ইস্রায়েলের কাছে ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা আক্ষরিক অর্থেই পূর্ণ হবে।
যুগবাদীরা মনে করে যে উভয় পরিকল্পনা পৃথিবীতে সমান্তরালভাবে চলতে পারে না; তাই তারা বিশ্বাস করে যে সাত বছরের সময়কালে পৃথিবী থেকে মন্ডলীকে সরিয়ে নেওয়া হবে। সেই সময়ে ইস্রায়েল যিশুকে তাদের মশীহ রূপে গ্রহণ করবে। সেই সময়কালের পরে ১,০০০ বছরের একটি সময়কাল আসবে যখন যিশু যিরুশালেমে রাজত্ব করবেন।
যুগবাদীরা পুরাতন নিয়মকে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ করেছে, কারণ তারা বিশ্বাস করে একটি ভিন্ন বিধান বা যুগের অধীনে এটি ইস্রায়েলের জন্য উদ্দেশ্য করা হয়েছিল। তারা সত্যকে প্রকাশ করার জন্য পুরাতন নিয়মের কাহিনীগুলি ব্যবহার করে, কিন্তু তারা সাধারণত পুরাতন নিয়ম থেকে তাত্ত্বিক প্রমাণগুলি প্রত্যাখ্যান করে এবং কেবল নতুন নিয়ম অনুসরণ করার চেষ্টা করে।
বেশিরভাগ লোক যারা যুগবাদ কথাটি জানে না তারা এটির ধারণাগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। প্রায়শই লোকেরা পুরাতন নিয়মের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, যদিও নতুন নিয়ম্র লেখকরা স্পষ্টতই এটিকে তাঁদের কর্তৃত্ব বলে বিবেচনা করেছিলেন।
কভেন্যান্ট থিওলজি
চুক্তিতত্ত্ব বা কোভেন্যান্ট থিওলজি (covenant theology) অনুযায়ী, ঈশ্বরের লোকেরা হল সেই ব্যক্তি যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর সেবা করে, তারা ইতিহাসের কোন সময়কালে বাস করে তা নির্বিশেষে। যারা পরিত্রাণ পেয়েছে, পুরাতন নিয়মে হোক বা নতুন নিয়মে, তারা হল সেই ব্যক্তি যারা পরিত্রাণের জন্য অনুতাপ করে এবং ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে।
এখন মন্ডলী হল ঈশ্বরের লোক এবং পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েলের জন্য যে প্রতিজ্ঞাগুলি করা হয়েছিল সেইগুলি সহ ঈশ্বরের লোকেদেরকে করা প্রতিজ্ঞাগুলি গ্রহণ করে। ইস্রায়েল জাতির এখন আর কোনো বিশেষ গুরুত্ব নেই।
কোনো ব্যক্তি বাহ্যিকরূপে ইহুদি হলে সে ইহুদি নয়, আবার সুন্নতও নিছক বাহ্যিক ও শরীরে কৃত কোনও কাজ নয়। না, অন্তরে যে ইহুদি হয় সেই প্রকৃত ইহুদি; আবার প্রকৃত সুন্নত হল হদয়ের সুন্নত, তা আত্মার দ্বারা হয়, লিখিত বিধির দ্বারা নয়। এ ধরনের মানুষের প্রশংসা মানুষের কাছ থেকে নয়, কিন্তু ঈশ্বর থেকে হয়। (রোমীয় ২:২৮-২৯)
তাহলে বুঝে নাও, যারা বিশ্বাস করে, তারাই অব্রাহামের সন্তান। শাস্ত্র আগেই দেখেছিল যে, ঈশ্বর অইহুদি জাতিদের বিশ্বাসের দ্বারা নির্দোষ প্রতিপন্ন করবেন এবং সেই সুসমাচার অব্রাহামের কাছে আগেই ঘোষণা করেছিলেন। “সমস্ত জাতি তোমার মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করবে।” তাই যাদের বিশ্বাস আছে, তারা বিশ্বাসী অব্রাহামের সঙ্গেই আশীর্বাদ লাভ করেছে। (গালাতীয় ৩:৭-৯)
যেন যে আশীর্বাদ অব্রাহামকে দেওয়া হয়েছিল, তা খ্রীষ্ট যীশুর মাধ্যমে অইহুদিদের কাছে পৌঁছায়, যেন বিশ্বাসের দ্বারা আমরা পবিত্র আত্মার প্রতিশ্রুতি লাভ করি। (গালাতীয় ৩:১৪)
ইহুদি কি গ্রিক, ক্রীতদাস কি স্বাধীন, পুরুষ কি স্ত্রী, তোমরা সকলেই খ্রীষ্ট যীশুতে এক। আর তোমরা যদি খ্রীষ্টের হও, তাহলে তোমরা অব্রাহামের বংশ, সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উত্তরাধিকারী। (গালাতীয় ৩:২৮-২৯)
চুক্তিতত্ত্ব অনুযায়ী, এই প্রতিজ্ঞাগুলি ইস্রায়েলের পরিবর্তে মন্ডলীর জন্য পরিপূর্ণ হবে:
খ্রিষ্টের সিংহাসন যিরুশালেমে প্রতিষ্ঠিত
শান্তি
পৃথিবীর নেতৃত্বপদে ইস্রায়েল
প্রত্যেক জাতি ইস্রায়েলের থেকে শিক্ষালাভ করবে
প্রতিশ্রুত জমির চিরন্তন দখল, এবং বন্য প্রাণীদের প্রতিপালন।
সমস্ত প্রতিশ্রুতি আক্ষরিক অর্থের পরিবর্তে আত্মিক অর্থের জন্য ব্যাখ্যা করা হয়। মন্ডলীতে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য এই প্রতিশ্রুতিগুলি অবশ্যই আত্মিক সুবিধার দ্বারা পূর্ণ হতে হবে।
বেশিরভাগ লোক যারা চুক্তিতত্ত্ব বিশ্বাস করে, তারা ১,০০০ বছরের জন্য পৃথিবীতে খ্রিষ্টের আক্ষরিক শাসনে বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে যে খ্রিষ্ট এবং সাধুরা এখন আত্মিকভাবে, সুসমাচারের প্রভাবের মাধ্যমে শাসন করেন। তারা বিশ্বাস করে যে অব্রাহামের কাছে তার বংশধরদের চিরকালের জন্য কনানদেশের অধিকারী হওয়ার প্রতিশ্রুতি বর্তমান বিশ্বাসীদের দ্বারা পরিত্রাণের অধিকারী হওয়ার মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়।
চুক্তিতত্ত্ব অনুযায়ী, ইস্রায়েল জাতি এখন আর কোনো তাৎপর্য নেই, কারণ তারা খ্রিষ্টকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইহুদিরা স্বতন্ত্র পরিত্রাণ প্রাপ্তির মাধ্যমে যেকোনো পরজাতীয়দের মতো, ঈশ্বরের লোকেদের অংশ হতে পারে।
একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি
বহু ধর্মতত্ত্ববিদ আজকের দিনে যুগবাদ এবং চুক্তিতত্ত্বের মধ্যে একটি শাস্ত্রীয় ভারসাম্যে আসার চেষ্টা করেছেন।
যুগবাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। প্রেরিত পৌল তিমথিকে বলেছিলেন যে শাস্ত্রাংশুলি (পুরাতন নিয়ম) পরিত্রাণের শিক্ষা দেয় (২ তিমথি ৩:১৫)। যিশু নীকদীমকে বলেছিলেন যে তার ইতিমধ্যেই নতুন জন্ম সম্পর্কে জানা উচিত যেহেতু তিনি পুরাতন নিয়মের একজন শিক্ষক ছিলেন (যোহন ৩:১০)। নতুন নিয়ম বলে যে একজন বিশ্বাসী এখন প্রকৃত ইস্রায়েলী এবং অব্রাহামের সন্তান (রোমীয় ২:২৮-২৯, গালাতীয় ৩ :২৮-২৯)। এটি আরো বলে যে পুরাতন নিয়মের বলিদান পাপের মোচন করত না (ইব্রীয় ১০:৪)। এই শাস্ত্রাংশগুলি দেখায় যে ঈশ্বর ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে পরিত্রাণের বিভিন্ন উপায় প্রদান করেননি।
চুক্তিতত্ত্বেও কিছু সমস্যা আছে। যদি বলা হয় যে পুরাতন নিয়মের প্রতিশ্রুতিগুলি আত্মিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে তাহলে সেক্ষেত্রে কাল্পনিক ব্যাখ্যাকে অনুমতি দেওয়া হয় যা পরীক্ষিত হতে পারে না। সেইসাথে, এই ব্যাখ্যাগুলি প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করে না। অব্রাহাম বা অন্যদের পক্ষে প্রতিশ্রুতিগুলি বোঝা অসম্ভব ছিল, যদিও তারা মনে করেছিলেন যে তারা তা বুঝতে পেরেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর অব্রাহামকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তার সন্তানেরা চিরকালের জন্য নির্দিষ্ট দেশের অধিকারী হবে; এটি কি প্রকৃত অর্থেই বোঝায় যে পরজাতিরা পরিত্রাণ পাবে?
চুক্তিতত্ত্ব অস্বীকার করে যে ইস্রায়েল এখনো ঈশ্বরের পরিকল্পনায় তাৎপর্যপূর্ণ, কিন্তু প্রেরিত পৌল বলেছেন যে ইস্রায়েল একটি জাতি হিসেবে একদিন পরিত্রাণ পাবে (রোমীয় ১১:২৬)।
ইস্রায়েল এবং মন্ডলীর একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পুরাতন নিয়মের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির একটি বোধগম্যতাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
১। পরিত্রাণের প্রতিজ্ঞা। পরিত্রাণ অনুগ্রহের দ্বারা হয় এবং ইতিহাসের যেকোনো সময়ে ইহুদি বা পরজাতির ক্ষেত্রে অনুতাপ ও বিশ্বাস দ্বারা প্রাপ্ত হয়। একজন ব্যক্তির ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি সর্বদা একই ছিল (রোমীয় ৪:৩, ইফিষীয় ২:৮)। পৃথিবীতে ইস্রায়েল এবং মন্ডলীর আলাদা পালা করার দরকার নেই কারণ পরিত্রাণের পরিকল্পনা উভয়ের জন্যই সমান।
২। ঈশ্বরের তাঁর লোকেদের জন্য যত্নের প্রতিশ্রুতি। অনেক প্রতিশ্রুতি তাঁর লোকেদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের স্বাভাবিক উপায় বর্ণনা করে, যাদের তাঁর সাথে আনুগত্যের সম্পর্ক রয়েছে। একটি উদাহরণ হল গীতসংহিতা ২৩। এই প্রতিশ্রুতিগুলি সম্পর্কের মধ্যে প্রকাশিত ঈশ্বরের প্রকৃতি দেখায়। ইস্রায়েল বা মন্ডলীর সাথে যেকোনো সময়ে এবং স্থানে এই নীতিগুলির প্রয়োগ রয়েছে৷
৩। একটি জাতি হিসাবে ইস্রায়েলের কাছে প্রতিশ্রুতিসমূহ। যিশু ছিলেন ইহুদিদের মশীহ। একদিন ইস্রায়েল একটি জাতি হিসাবে খ্রিষ্টের প্রতি ফিরবে (রোমীয় ১১:২৬)। ইস্রায়েলকে একটি জাতি হিসেবে ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা আক্ষরিক অর্থে বিশ্বাসী ইহুদিদের অবশিষ্টাংশের জন্য পূর্ণ হবে।
► বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন বিবৃতিগুলি যুগবাদের সাথে মেলে এবং কোন বিবৃতিগুলি এর থেকে আলাদা? কোন বিবৃতিগুলি চুক্তিতত্ত্বের সাথে মেলে এবং কোনগুলি ভিন্ন?
১০ নং পাঠের পর্যালোচনামূলক প্রশ্ন
(১) রোমীয় ১০ অধ্যায়ের মূল পয়েন্টটি কী?
(২) কীভাবে ইহুদিরা নিজেদের ধার্মিক প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছিল?
(৩) কীভাবে আমরা জানতে পারি যে যিশু আসার আগে যে লোকেরা ছিল তারা কাজ দ্বারা পরিত্রাণ পায়নি?
(৪) এই কথাটির অর্থ কী যে পরিত্রাণ আমাদের হৃদয়ে এবং মুখে রয়েছে?
(৫) কেন মিশনারির বার্তা জরুরী?
(৬) রোমীয় ১১ অধ্যায়ে গাছের শাখা-প্রশাখার দৃষ্টান্তটি ব্যাখ্যা করুন।
(৭) পুরাতন নিয়মের তিন ধরণের প্রতিজ্ঞা তালিকাভুক্ত করুন।
১০ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) কেন আজকে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য পুরাতন নিয়ম গুরুত্বপূর্ণ তা একটি পৃষ্ঠার মধ্যে ব্যাখ্যা করুন। পুরাতন নিয়মের যে শাস্ত্রাংশগুলি বিশেষভাবে মূল্যবান সেগুলির উদাহরণ দিন।
(২) অন্য মন্ডলীর অন্তত দুইজন সদস্যের সাথে কথোপকথন রিপোর্ট করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.