রোমীয়দের প্রতি পত্রের ৬ষ্ঠ পর্বে (১২:১-১৫:৭) রয়েছে মন্ডলী, পরিচর্যা, খ্রিষ্টীয় সম্পর্ক এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক সম্বন্ধে অনেক ব্যবহারিক নির্দেশনা।
১২:১-২ পদ ৬ষ্ঠ পর্বটি উপস্থাপন করে, আমাদের বলে যে আমাদের সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গীকৃত হতে হবে। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে পৌলের বক্তব্য থেকে এই বিষয়টি আসে: আমরা ঈশ্বরের কাছে সবকিছুর জন্য ঋণী (১১:৩৫) এবং ঈশ্বরের পথ সকল সম্পূর্ণরূপে সুবিবেচিত (১১:৩৩)।
পৌল এক জীবন্ত বলিদানের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছেন (১২:১)। একটি বলির মতো যাকে বধ করা হবে, আমরা নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিবৃত্ত করি; কিন্তু মৃত্যুর পরিবর্তে আমরা ঈশ্বরের জন্য বাঁচি। তার অর্থ হল, অঙ্গীকার বজায় রাখতে হবে। দিনের পর দিন আমাদের অবশ্যই আমাদের আনুগত্যের কোন পরিবর্তন করতে অস্বীকার করতে হবে। এক জীবন্ত বলিদানের দৃষ্টান্ত আমাদের নৈবেদ্যর সামগ্রিকতার উপর জোর দেয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা ছাড়া আমাদের জীবনের কোনো অংশ আমরা নিজেদের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারি না। ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকারের দাবি থেকে নির্দিষ্ট কিছু ইচ্ছা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আমরা আলাদা করে রাখতে পারি না।
পবিত্র বলি হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করা হল এক আধ্যাত্মিক উপাসনা, নিছক আনুষ্ঠানিক ধর্মের বিপরীত।[1]
১২:২ পদে বর্ণিত রূপান্তর (transformation) ছাড়া সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গীকৃত সেবা সম্ভব নয়। আমাদের মনের পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই রূপান্তরিত হতে হবে। আমাদের মূল্যবোধ, আচরণ বা মতামত জগতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের সিদ্ধ ইচ্ছার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি প্রশ্ন বিবেচনা করেন, তিনি জগতের বিপরীত হবেন। তিনি কোন পাপপূর্ণ ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেন না, তা তিনি স্বাভাবিক বলে মেনে নেন না।
লক্ষ করুন যে, দেহ পবিত্র হতে হবে। পাপ শরীরের এমন এক অপরিহার্য বিষয় নয়, যা ঈশ্বর শুচি করতে পারেন না। শরীর নিজে পাপপূর্ণ নয় এবং ইচ্ছা ছাড়া পাপ করে না, বরং পাপের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
১২:১-১৫:৭ পদগুলি বর্ণনা করে যে কীভাবে উৎসর্গীকৃত, রূপান্তরিত জীবনযাপন করতে হয়।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১২ অধ্যায় পড়তে হবে।
(১২:৩) পৌলকে যে অনুগ্রহ দেওয়া হয়েছিল, তা তার প্রেরিতদের কর্তৃত্ব (apostolic authority) এবং প্রকাশের বরদান (gift of revelation) কে নির্দেশ করে।
আমাদের নম্র হওয়া উচিত কারণ আমাদের যা কিছু আছে তা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আত্মিক দানপ্রাপ্ত ব্যক্তির নম্রভাবে উপলব্ধি করা উচিত যে, অর্জিত বরদানগুলি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে এবং তা অন্যদের সেবা করার উদ্দেশ্যে।
(১২:৪-৫) দেহের সদস্য হিসেবে, আমাদের অন্যদের প্রয়োজন আছে এবং আমরা অন্যদের সেবা করতে বাধ্য। ১ করিন্থীয় ১২:১২-২৬ পদে দেহের রূপক বর্ণনা করা হয়েছে।
(১২:৬-৮) এই পদগুলি বেশ কয়েকটি পরিচর্যার নাম উল্লেখ করে। প্রত্যেক বিশ্বাসীকে সেই পরিচর্যা অনুসরণ করতে হবে, যেটির জন্য তাকে আহ্বান করা এবং বরদান দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তির যদি অনুগ্রহ-ভিত্তিক নম্রতা না থাকে, তা হলে তিনি হয়তো তার প্রচেষ্টাকে ভুল পথে চালিত করতে পারেন (সম্ভবত মানুষের অনুমোদন লাভের চেষ্টায়) এবং তার প্রকৃত আহ্বানে ব্যর্থ হতে পারেন।
বরদানের অধিকারীদের সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রদানকারীকে অনাড়ম্বরভাবে দেওয়া উচিত, নিজেকে সম্মানিত করার উদ্দেশ্যে নয়। তত্ত্বাবধায়ককে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে - বিস্তারিত তথ্যের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং সবসময় নির্ভরযোগ্য হতে হবে। যাদের প্রয়োজন আছে তাদের যে ব্যক্তি সাহায্য করেন, তার কোনো উদ্ধত অথবা বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে তা করা উচিত নয়, যা প্রাপককে অপমানিত করে।
► কীভাবে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা তাদের আত্মিক বরদানগুলিকে জগতের লোকেরা যেভাবে তাদের দক্ষতাকে ব্যবহার করে, তার চেয়ে ভিন্নভাবে ব্যবহার করে?
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৬ষ্ঠ পর্ব, ২ নং প্যাসেজ
পদের টীকাভাষ্য
(১২:৯) প্রেম অকৃত্রিম ও আন্তরিক হওয়া উচিত। মন্দকে প্রত্যাখ্যান করুন এবং যা উত্তম তা ধরে রাখুন। যা উত্তম তা উন্নত বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রেমেরে বৃদ্ধি সম্পর্কযুক্ত (ফিলিপীয় ১:৯-১০)।
(১২:১০) মন্ডলী হল অনেক ভাই ও বোনের সঙ্গে ঈশ্বরের পরিবার। আমাদের নিজেদের পরিবর্তে অন্যদের কাছে সম্মান যাক, তার জন্য আমাদের ইচ্ছুক হওয়া উচিত।
(১২:১১) দায়িত্বের ক্ষেত্রে অলস হবেন না। একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর ভালো কাজের নীতিবোধের মডেল হওয়া উচিত। তিনি যদি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেন, তাহলে অপচয় করার মতো সময় তার নেই। তার এমনভাবে কাজ করা উচিত যেন সে ঈশ্বরের জন্য কাজ করছে (ইফিষীয় ৬:৬-৭)।
(১২:১২) আমাদের আনন্দ আমাদের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে না, কারণ আমাদের অনন্তকালের জন্য আশা রয়েছে। ধৈর্য ধরার অর্থ হল বিশ্বাসের সঙ্গে সহ্য করা। একজন ব্যক্তির ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীলতার একটি অপরিবর্তনীয় মনোভাব থাকা উচিত, যেকোনো সময়ে প্রার্থনা করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
(১২:১৩) অন্যান্য বিশ্বাসীদেরকে তাদের দ্রব্যসামগ্রীগত প্রয়োজনগুলি মেটাতে সাহায্য করুন। আতিথেয়তা বলতে বোঝায় খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য অন্যদের চাহিদা পূরণ করা।
(১২:১৪) লোকেদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করবেন না যেমনটা তাদের প্রাপ্য। বরং তেমন আচরণ করুন যেমন খ্রিষ্ট তাদের সাথে করবেন। লোকেদের যা প্রাপ্য বলে আপনি মনে করেন তা দেওয়া হল আক্ষরিক অর্থে তাদের বিচার করা, যা ঈশ্বরের জন্য সংরক্ষিত একটি ভূমিকা।
(১২:১৫) অন্যদের দুঃখে বা আনন্দে অংশ নিতে প্রস্তুত থাকুন।
(১২:১৬) মর্যাদার প্রতীকগুলি (স্ট্যাটাস সিম্বল) সম্পর্কে সচেতন হবেন না। উচ্চ শ্রেণীর লোকদের পক্ষপাতী হবেন না। এমনকি দরিদ্রদের প্রতিও সম্মান দেখান। নিজেকে অন্যদের ঊর্ধ্বে রাখার উপায় খুঁজবেন না।
(১২:১৭) কারো ক্ষতি করা কখনই ঠিক নয়, যদিও সে আপনার ক্ষতি করেছে। মানুষকে শাস্তি দিতে নয়, কিন্তু ক্ষমা করার জন্যে আমাদের আহ্বান করা হয়েছে।
সততা প্রদর্শন করুন। যদি আপনি সম্মানিত হতে চান, তাহলে আপনার এবং ঈশ্বরের পক্ষে এটা জানা যথেষ্ট নয় যে আপনি সৎ; এমন নীতিসকল বজায় রাখুন যা প্রত্যেকের কাছে আপনার সততা প্রদর্শন করে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুনর্নির্মাণ করার চেয়ে সুনাম বজায় রাখা সহজ।
(১২:১৮) আপনার উপর যতটা নির্ভর করে, সকলের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করুন। সমন্বয়পূর্ণ সম্পর্কের মাঝে শান্তির প্রকাশ সর্বোত্তম। কখনও কখনও শান্তির জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হয়, এমনকি অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্যও। কখনও কখনও এর জন্য সদয় ভাবে একজন অন্যায়কারীর মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন, যাতে আপনার সম্পর্কে বাধা বাধা হয়ে দাঁড়ায় এমন কোনো অন্যায়ের সমাধান করা যেতে পারে। আপনি যদি ক্ষমা চাইতে অথবা প্রয়োজন হলে সেটার মুখোমুখি হতে প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে আপনি শান্তি বজায় রাখার জন্য আপনি যা করতে পারেন তা করছেন না।
(১২:১৯) প্রতিশোধ নেবেন না, বরং ঈশ্বরের ক্রোধের জন্য জায়গা ছেড়ে দিন। যদি কোন ব্যক্তি শাস্তিদাতা হতে চায়, সে দেখায় যে সে বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর তাঁর কাজ সঠিকভাবে করছেন।
(১২:২০) অন্যদের যা প্রাপ্য তা দেওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে তাদের ভাল করুন। জ্বলন্ত কয়লার স্তূপ করে রাখার অর্থ চতুর উপায়ে প্রতিশোধ নেওয়া নয়, কারণ তা এই পদের মূল পয়েন্টের বিপরীত হবে। এটি একজন ব্যক্তির মনোভাবের কঠোরতা গলানোর প্রতীক হতে পারে।
(১২:২১) মন্দতা যেন আপনাকে পরিবর্তিত না করে এবং আধ্যাত্মিকভাবে আপনাকে পরাজিত না করে। যাইহোক, মন্দ দিয়ে নয়, বরং ভাল দিয়ে এর বিরোধিতা করুন। তিক্ত হয়ে ওঠার এবং ভুলভাবে এর বিরোধিতা করার অর্থ হল আধ্যাত্মিকভাবে পরাজিত হওয়া, এমনকি যদি আপনি দ্বন্দ্বে জয়ীও হন।
► চিন্তা করে দেখুন যে, একজন ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত না হন, তাহলে তিনি এই নির্দেশাবলী সুষ্ঠভাবে কাজে লাগাতে পারবেন না। এই নির্দেশাবলীর কারণে আপনার জীবনে কি কি পরিবর্তন আনতে চান?
প্রেরিতের পত্রগুলি ব্যাখ্যা করা
পৌলের পত্রগুলি নির্দিষ্ট পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসাবে লেখা হয়েছিল: “সাধারণত উপলক্ষটি ছিল এমন কিছু আচরণ যা সংশোধন করার প্রয়োজন ছিল, বা একটি মতবাদ সংক্রান্ত ত্রুটি যা সঠিক হওয়ার প্রয়োজন ছিল, বা একটি ভুল বোঝাবুঝি যার জন্য আরও আলোকপাতের প্রয়োজন ছিল।“[1] পত্রগুলি প্রণালীবদ্ধ ঈশতত্ত্বের (systematic theology) আকারে নয়, কিন্তু প্রয়োজনের প্রতিক্রিয়ায় গঠিত ঈশতত্ত্ব। এই ধর্মতত্ত্ব শুরু থেকেই ব্যবহারিক। এটি বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিকশিত হয়নি।
নতুন নিয়মের পত্রগুলি সাধারণ জনগণের জন্য সাহিত্য প্রযোজনা ছিল না, কিন্তু সেগুলি একটি একক প্রাপক এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োগের উদ্দেশ্যের চেয়ে বেশি ছিল। পৌল কলসীয়দের বলেছিলেন যে, তার কাছ থেকে তারা যে পত্রগুলি পেয়েছে সেগুলি যেন তারা লায়োদেকিয়ার মণ্ডলীর সঙ্গে বিনিময় করে (কলসীয় ৪:১৬)। খুব তাড়াতাড়িই মন্ডলী পৌলের পত্রগুলি সংগ্রহ করতে এবং সেগুলিকে একসঙ্গে সঞ্চলন করতে শুরু করেছিল। তাই, আমরা জানি যে তারা পত্রগুলিকে সমস্ত স্থানে এবং সর্বকালে মণ্ডলীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হিসাবে দেখেছিল।
যদিও আমাদের এবং মূল প্রাপকদের মধ্যে সময় এবং সংস্কৃতির ব্যবধান বিদ্যমান, তবুও পত্রগুলি নতুন নিয়মের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের কাছে লিখিত হয়েছিল যারা আমাদের মতোই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। তাই, পৌলের পত্রগুলি শাস্ত্রে প্রাপ্ত সাহিত্যের তুলনায় আধুনিক মণ্ডলীতে প্রয়োগ করা সহজ। এগুলি নির্দিষ্টভাবে ইহুদি জাতির উদ্দেশে লেখা হয়নি, কিংবা পুরাতন নিয়মের আইনের অধীনে লোকেদের উদ্দেশে বলা হয়নি।
লেখার মূল পরিস্থিতি অনুবাদককে আধুনিক প্রয়োগের জন্য একটি শুরু করার জায়গা করে দেয়। ব্যাখ্যা করার একটি নীতি হল আমরা একটি লেখাকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারি যদি আমরা জানি যে এটি কে লিখেছিলেন, কে এটি পেয়েছিলেন এবং কেন এটি লেখা হয়েছিল। পত্রগুলি অনুবাদককে লেখক এবং প্রাপকদের পরিচয় জানার সুবিধা করে দেয়।
রোমীয় পুস্তকটি পৌলের লেখাগুলির মধ্যে সবচেয়ে গঠনাত্মক (formal)। এটি একটি পরিকল্পিত কাঠামো অনুসরণ করে। এটি প্রায় একটি ঈশতাত্ত্বিক প্রবন্ধ (theological treatise) আকারে লেখা। পৌল রোমীয় মন্ডলীর কোনো নির্দিষ্ট ত্রুটির উল্লেখ করেননি। তিনি নির্দিষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেননি, যেমন তিনি যে মন্ডলীগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ও পরিদর্শন করেছিলেন, সেগুলির প্রতি তার চিঠিতে করেছিলেন।
[1]Gordon Fee and Douglas Stuart, How toRead the Bible for All Its Worth, (Grand Rapids, MI: Zondervan, 1993) 48.
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৬ষ্ঠ পর্ব, ৩ নং প্যাসেজ
রোমীয় ১৩:১-৭ পদের মূল পয়েন্ট
বিশ্বাসীদের নাগরিক সরকারের প্রতি বশীভূত হওয়া উচিত কারণ সরকার ঈশ্বর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।
ক্লাস লিডারের জন্য নোট:পরবর্তী প্যাসেজটি অধ্যয়ন করার সময় সম্ভবত অনেক আলোচনা ও মতবিরোধ হবে। আপনার উচিত প্যাসেজটি যাতে সদস্যদের মতামত সংশোধন করতে পারে তার সুযোগ করে দেওয়া।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৩:১-৭ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১৩:১-২) ঈশ্বর সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেক শাসক ন্যায়নিষ্ঠ, কিন্তু ঈশ্বর চান যেন মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের কর্তৃত্বের অধীনে থাকতে অস্বীকার করা হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। আমরা যেমন দৃশ্যমান ভাইকে না ভালবাসলে ঈশ্বরকে সত্যিকারের ভালবাসি না, তেমনি দৃশ্যমান মানব কর্তৃত্বের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে অস্বীকার করেও আমরা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনে থাকার দাবি করতে পারি না। একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর আইনব্যবস্থার কর্মকর্তাদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করা উচিত নয়।
(১৩:৩-৪) সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হল অন্যায়কারীদের শাস্তি দেওয়া। সরকার যখন সঠিকভাবে কাজ করে, তখন দুষ্কৃতীরা ভয় পায়। সাধারণ পরিস্থিতিতে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা সরকারের সাথে বিরোধ করবে না, কারণ খ্রিষ্টীয় গুণাবলি খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে একজন উত্তম নাগরিক করে তোলে। কিন্তু, ইতিহাসে বহুবার শাসকরা এমন আনুগত্য দাবি করার চেষ্টা করেছে যা কেবল ঈশ্বরেরই, এবং তারপর তারা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের তাড়না করেছে।
যে সরকার সঠিকভাবে কাজ করে তা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ৪ পদ আমাদের বলে যে সরকারের কাছে ঈশ্বরের কাছ থেকে আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা আছে, এমনকি দুষ্কর্মকারীদের হত্যা করেও।
কিছু দেশের খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা মনে করে যে সরকারি কোনো পদে কাজ করা অন্যায্য, বিশেষ করে এমন একটি পদ যেখানে তাদের হিংস্রতা প্রয়োগ করতে হতে পারে। এই বিশ্বাসের সাথে অনেক খ্রিষ্টবিশ্বাসী এমন দেশে বাস করে যেখানে সরকার বিশ্বাসীদের তাড়না করেছে এবং অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। যাইহোক, সরকার যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর পক্ষে সরকারি পদে কাজ করা ভুল নয়, কারণ সরকার ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত।
(১৩:৫) খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের কেবল সরকারি শাস্তির ভয়ে নয়, কিন্তু একটি পরিষ্কার সংবেদের জন্য কর্তৃপক্ষের বশীভূত হওয়া উচিত। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অথবা আইন মানতে অস্বীকার করা হল সরকারের ভূমিকা অস্বীকার করা। কোনো সরকার থাকলে সব সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া যায় না। ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সেই কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পণ করতে হবে যা ব্যক্তি অধিকার রক্ষা করে, এমনকি যদি আমরা সবসময় যেভাবে সুরক্ষা করা হয় তার সাথে একমত না হলেও।
(১৩:৬-৭) একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর সরকারের বৈধ কর দিতে হবে। সম্মান দেখানোর প্রথাগত উপায় অনুসরণ করুন।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৬ষ্ঠ পর্ব, ৪ নং প্যাসেজ
১৩:৮-১০ পদের মূল পয়েন্ট
প্রেম আইনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে, কারণ এটা বিশ্বাসীদেরকে অন্যদের প্রতি যা সঠিক তা করতে অনুপ্রাণিত করে।
এই পদগুলি প্রমাণ করে যে, আইনব্যবস্থা বিশ্বাসী ব্যক্তির কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে না। বিশ্বাসী আইন পূরণ করে, যেহেতু অনুগ্রহে সে এখানে বর্ণিত প্রেম পেতে পারে। অনুগ্রহ শুধুমাত্র আইন লঙ্ঘনের জন্য নিছক একটি আচ্ছাদন নয়। আমাদের মধ্যে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য অনুগ্রহ ঈশ্বরের কাজে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৩:৮-১০ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১৩:৮) এই অর্থে ঋণী হওয়ার অর্থ হল, কারো প্রাপ্য দিতে ব্যর্থ হওয়া। কিছু ধরনের বাধ্যবাধকতা পূর্ববর্তী পদে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যদি এটি আমাদের বাধ্যবাধকতা পূরণের সম্মত উপায় হয়, তাহলে একটি সময়সূচীতে ঋণ নেওয়া ও পরিশোধ করা ভুল নয়। আমাদের আদেশ করা হয়েছে, ৭ পদের মতো, যেন আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমাদের কাছ থেকে তার যে প্রাপ্য তা প্রদান করি।
► একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী যখন তার ঋণ পরিশোধ করেন না, তখন এর ফল কী হয়?
(১৩:৯-১০) আপনি যদি আপনার মতো কাউকে সত্যিই প্রেম করেন, তা হলে আপনি তার কাছ থেকে চুরি করবেন না, তার কাছে মিথ্যা কথা বলবেন না, তার যা আছে তাতে লোভ করবেন না অথবা তার বিবাহকে লঙ্ঘন করবেন না। নিছক বন্ধুত্ব এবং ভালবাসা, যেমন পৃথিবীতে সাধারণত হয়, সবসময় এই ভুলগুলির প্রতিরোধ করে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে খ্রিষ্টের প্রেম, এমনকি যারা অপরিচিত ব্যক্তি, যারা আমাদের অসন্তুষ্ট করে, অথবা যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি, অন্যায় করা থেকে আমাদের বিরত করবে।
অধিকাংশ সংস্কৃতি ও ধর্ম শিক্ষা দেয় যে, কিছু মানুষের প্রতি আমরা এই ধরনের ভালবাসার ঋণী, হতে পারে তারা আমাদের পরিবারের সদস্য বা উপজাতীয় সদস্য। কিন্তু তারা মনে করে যে, বাকি মানবজাতির কাছে এই ধরনের কোনো প্রেমের ঋণ নেই। তারা হয়তো বিদেশিদের অথবা নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে চুরি করা এবং অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করাকে অনুমোদনযোগ্য বলে মনে করতে পারে। খ্রিষ্ট আমাদের আদেশ দেন, যেন আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তাদের প্রত্যেকের প্রতি প্রেম প্রসারিত করি। লূক ১০:২৫-৩৭ পদে, আপনার প্রতিবেশীকে প্রেম করার আদেশ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য যিশু একজন শমরীয়ের গল্প বলেছিলেন, যিনি একজন আহত ইহুদিকে সাহায্য করেছিলেন।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৬ষ্ঠ পর্ব, ৫ নং প্যাসেজ
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৩:১১-১৪ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১৩:১১) এই পদে পরিত্রাণ বলতে খ্রিষ্টের পুনরাগমনে চূড়ান্ত পরিত্রাণকে নির্দেশ করে। আমরা এমনভাবে জীবনযাপন করব না, যেন এই জগৎ চিরকাল থাকবে। আমাদের সেই লোকেদের মতো জীবনযাপন করা উচিত, যারা শীঘ্রই বিষয়গুলি ঘটবে বলে আশা করছে।
(১৩:১২) রাত্রি হল একটি বাক্যালংকার, যা প্রভুর আগমনের অভিমুখের সময়কে নির্দেশ করে। (এছাড়া, ২ পিতর ১:১৯ পদ দেখুন।) নতুন নিয়মে অন্ধকার প্রায়শই পাপপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। (এছাড়া, ১ থিষলনীকীয় ৫:৪-৮ এবং ইফিষীয় ৫:১১-১৪ পদ দেখুন।)
(১৩:১৩) এখানে এক অসতর্ক পাপীর জীবন বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তা করেন না এবং বিশেষ করে অনন্তকাল নিয়ে ভাবেন না। তিনি নৈতিকতাকে পরোয়া না করে অভিলাষে জীবনযাপন করেন। একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী জীবন এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
(১৩:১৪) পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে কোনো ছাড় দেবেন না। মানবস্বভাবকে পাপের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করবেন না। জ্যোতিতে জীবনযাপন করুন এবং আপনার জীবনে এমন কিছুই না থাকুক যাতে আপনি লজ্জিত হবেন।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৬ষ্ঠ পর্ব, ৫ নং প্যাসেজ
সবসময় এমন কিছু বিষয় থাকবে যেগুলি নিয়ে অকপট বিশ্বাসীরা ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন। রোমীয় ১৪ পদ নির্দেশ দেয় যে কিভাবে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা যারা কিছু বিশ্বাস ও অনুশীলনে ভিন্ন তারা তবুও একে অপরকে ভালবাসতে ও সম্মান করতে এবং একসঙ্গে উপাসনা ও সেবা করতে পারে।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৪:১-২৩ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১৪:১) দুর্বল ভাই হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি এমন কোনো কাজের জন্য নিজেকে দোষী বলে মনে করেন যা আসলে ঈশ্বরের দ্বারা নিষিদ্ধ নয় (১ করিন্থীয় ৮:৭-১২ পদ দেখুন)। একজন সবল ভাই হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অপরাধবোধ ছাড়াই কোনো কাজ করতে পারেন, কারণ তিনি জানেন যে কাজ করা সত্যিই ঈশ্বরের অবাধ্যতা নয়।
(১৪:২-৩) ইহুদি আইনব্যবস্থায় খাদ্য সম্পর্কে বিধিনিষেধ ছিল। মন্ডলীতে অনেক ইহুদি খ্রিষ্টবিশ্বাসী এবং পরজাতীয়রা ছিল যারা ইহুদি আইন অধ্যয়ন করেছিল। যে ব্যক্তি খাদ্যের ব্যাপারে যেকোনো বিধিনিষেধ থেকে নিজেকে মুক্ত বলে মনে করেন, তিনি হয়তো সেই ব্যক্তিকে তুচ্ছ করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারেন যিনি সে বিষয়ে সীমাবদ্ধ বোধ করেন। আবার, যে ব্যক্তি খাবারের নিয়মগুলি মেনে চলার চেষ্টা করেন, তিনি হয়তো অন্যদের পাপী হিসেবে বিচার করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারেন।
(১৪:৪) ঈশ্বর তাঁর নিজ দাসদের বিচার করবেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় অনুগ্রহ প্রদান করবেন। শাস্ত্রে স্পষ্ট নয় এমন বিষয়গুলি নিয়ে অন্যদের বিচার করবেন না।
বিশ্ব জুড়ে বিশ্বাসীদের মধ্যে বাপ্তিস্মের পদ্ধতি, প্রভুর ভোজ পরিবেশনের প্রণালী, বাইবেলের অনুবাদ, পোশাক-আশাক ও বিনোদনের পছন্দের মতো বিষয়গুলি নিয়ে বৈচিত্র্য রয়েছে। আমাদের খ্রিষ্টীয় একতা বজায় রাখা উচিত, কিন্তু খ্রিষ্টের দেহের মধ্যে সমরুপতা আশা করা উচিত নয়। আমাদের নীতিবাক্য হওয়া উচিৎ: “অপরিহার্য বিষয়ে ঐক্য, পরিহার্য বিষয়ে স্বাধীনতা, কিন্তু সর্ব বিষয়ে প্রেম!”
(১৪:৫-৬) ইহুদিদের উৎসবের অনেক দিন ছিল, এবং প্রতিটির জন্য বিশেষ রীতিনীতি ছিল। বিশ্রামবার দিনটিও বিতর্কিত ছিল। এর পরিবর্তে, মন্ডলী প্রভুর দিনে মিলিত হতে ও উপাসনা করতে শুরু করেছিল (প্রেরিত ২০:৭, ১ করিন্থীয় ১৬:২, প্রকাশিত বাক্য ১:১০) এবং পরবর্তীকালে রবিবার দিনটি খ্রিষ্টীয় বিশ্রামবারের মতো হয়ে উঠেছিল। সপ্তম দিনে বিশ্রামের নীতিতে এখনও উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের রাখা উচিত, কারণ এটি হল সৃষ্টির নীতি এবং মোশির ব্যবস্থা দেওয়ার সময় যে প্রথা প্রবর্তন করা হয়েছিল তা নয়।
"প্রত্যেক ব্যক্তি তার মনে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোক" (১৪:৫) দেখায় যে, নির্দিষ্ট মতামত থাকা প্রয়োজনীয়। কোনো বিষয়ে তিনি যা বিশ্বাস করেন তাতে একজন ব্যক্তির অস্পষ্ট হওয়া উচিত নয়। অন্যান্য মতামতের প্রতি সহনশীলতার অর্থ এই নয় যে, আমরা আমাদের নিজস্ব মতামত জানি না বা আমরা প্রমাণ এবং যুক্তিগুলি উপেক্ষা করি।
(১৪:৭-৯) আমরা নিজেদের মালিক নই। প্রত্যেক জীবনের উচিত খ্রিষ্টকে সম্মান করা। খ্রিষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান আমাদের উদ্ধার করে, এবং আমরা তাঁরই।
(১৪:১০-১২) প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারের সময়ে ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই, একে অপরের সম্পর্কে আমাদের মতামত কম গুরুত্বপূর্ণ।
(১৪:১৩-১৫) অন্য বিশ্বাসীকে বিঘ্ন না জন্মানোর চেষ্টা করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য সবকিছু অশুচি নয়, কারণ সবকিছুই ঈশ্বরের। কিন্তু, একজন ব্যক্তি যদি কোন বিষয়কে ভুল বলে মনে করে কিন্তু তবুও তা করে, তাহলে যেকোনোভাবেই হোক সে পাপ করেছে কারণ সে ভুল বিষয়টি করা বেছে নিয়েছে। আমরা কারো হোঁচট খাওয়ার কারণ হই যদি আমরা তাকে এমন কিছু করতে প্রভাবিত করি যা সে ভুল বলে মনে করে। (এই বিষয়ে আরেকটি শাস্ত্রপদ হল ১ করিন্থীয় ৮: ৯)
(১৪:১৬) একজন ব্যক্তির সঠিক মতবাদ (doctrine) থাকতে পারে এবং তবুও অন্যদের উপর তার প্রভাবের বিষয়ে সচেতন না থাকলে সে অন্যদের ক্ষতি করতে পারে।
(১৪:১৭) জীবনধারা অথবা স্বাধীনতার ক্ষেত্রে খ্রিষ্টধর্ম কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এটি হল আত্মিক বিজয় এবং আত্মায় জীবন।
(১৪:১৮-১৯) ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন যখন আমরা যা কিছু করি তা খ্রিষ্টের কাছে সমর্পণ করি এবং অন্যদের গড়ে তোলার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করি।
(১৪:২০-২৩) সমস্ত কিছুর মালিক ঈশ্বর, এবং এবং যে ব্যক্তি এটি মনে রাখে সে স্বাধীনতা পেতে পারে। যাইহোক, যদি একজন ব্যক্তি এমন কিছু করে যা সে ভুল বলে মনে করে, তবে সে সেই পছন্দ দ্বারা পাপ করছে। যে ভাই নিজেকে স্বাধীন বোধ করেন তার উচিত অন্যদের পতন এড়াতে তার স্বাধীনতা সীমিত করা।
দূর্বল ভাইকে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি, তবে সে যাতে যার বেশি স্বাধীনতা আছে তার বিচার না করে। দুর্বল ব্যক্তি তার বিবেকের দ্বারা আবদ্ধ এবং তার আচরণ পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু সবল ভাইয়ের বেছে নেবার ক্ষমতা রয়েছে।
পূর্ববর্তী প্যাসেজটি অধ্যয়ন করার সময় সম্ভবত অনেক আলোচনা হবে, তবে কিছু প্রশ্ন যা বিবেচনা করতে হবে তা হল:
সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের মন্ডলী কোন ধরনের সমস্যাগুলি ছেড়ে দেয়?
অন্যান্য বিশ্বাসীদের মধ্যে আমরা কোন পার্থক্যগুলি দেখতে পাই যেগুলির সম্বন্ধে আমাদের আরও সহনশীল হওয়া উচিত?
কিভাবে আমরা অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আমাদের মতামত ও আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এই প্যাসেজের নীতিগুলিকে বিশ্বস্তভাবে কাজে লাগাতে পারি?
ইহূদীবাদীদের শনাক্তকরণ
ইহূদীবাদী বা জুডাইজাররা (Judaizers) কেবল ইহুদিধর্ম, অর্থাৎ ইহুদিদের ধর্মের অনুসারী ছিল না। ইহূদীবাদীরা ছিল ইহূদী যারা নিজেদের খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে দাবি করেছিল, কিন্তু তারা ভেবেছিল যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অবশ্যই ইহূদী ধর্মের চাহিদাগুলি পূরণ করতে হবে। ধর্মান্তরিত ইহুদিদের জন্য ইহুদি ধর্মের অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া কোন সমস্যা ছিল না। অনেকেই তা করেছিল, বিশেষ করে নতুন নিয়মের মন্ডলী প্রথম প্রজন্মের সময়। সমস্যা হল, যে ইহুদিরা ধর্মান্তরিত হওয়ার দাবি করেছিল, তারা অনুগ্রহের সুসমাচার বুঝতে পারেনি।
ইহুদিবাদীরা মনে করেছিল যে, পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য একজন পরজাতীয় ব্যক্তির ত্বক্চ্ছেদসহ ইহুদিধর্মের সমস্ত নিয়ম মেনে নেওয়া প্রয়োজন। তারা অবিশ্বাসীদের কাছে সুসমাচার প্রচার করে নি। এর পরিবর্তে, তারা অন্য ধর্মান্তরিতদের কাছে প্রচার করেছিল, বিভ্রান্তি ও বিভাজন নিয়ে এসেছিল। তাদের সবচেয়ে বড় নথিভুক্ত বিজয় ছিল গালাতিয়াতে, যেখানে তারা পুরো মন্ডলীকে বিপথে চালিত করেছিল। গালাতীয়দের প্রতি লেখা পৌলের পত্রটি তাদের সত্য সুসমাচারে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল।
ইহুদীদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি মন্ডলী কাউন্সিলে আনা হয়েছিল, যা প্রেরিত ১৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রেরিতরা বুঝতে পেরেছিল যে, ইহুদিবাদীদের পথ অনুসরণ করার অর্থ হবে অনুগ্রহের সুসমাচারকে অস্বীকার করা এবং এটিও অস্বীকার করা যে সুসমাচার পরজাতীয়দের কাছে সমানভাবে দেওয়া হয়েছে। কাউন্সির সিদ্ধান্ত সেই সমস্ত সত্যিকারের বিশ্বাসীদের সংশোধন করেছিল যারা সরলতায় বিপথগামী হয়েছিল, কিন্তু যাদের ভ্রান্ত উদ্দেশ্য ছিল তাদের থামাতে পারেনি। পৌল ইহুদিবাদীদের সুসমাচারের শত্রু বলে মনে করেছিলেন।
রোমীয় ১৪:১-১৫:১২ পদ সুসমাচারের সেই সত্যকে প্রয়োগ করে যা পৌল ইহুদি চাহিদাগুলি সম্বন্ধে পুরো চিঠিতে ব্যাখ্যা করেছিলেন। ইহুদিদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য বিশ্বাসীদের একে অপরকে বিচার করতে হবে না। বিভাগটি একটি জোর দিয়ে শেষ হয় যে সুসমাচার সমগ্র বিশ্বের জন্য।
এ বিষয়ে অন্যান্য শাস্ত্রাংশগুলি হল রোমীয় ৪, প্রেরিত ১৫, গালাতীয় ২, ৩, ৫ এবং কলসীয় ২:১১-২৩।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৬ষ্ঠ পর্ব, ৬ নং প্যাসেজ
পদের টীকাভাষ্য (অব্যাহত)
(১৫:১-৪) বিশ্বাসে সবল, যারা নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করে, তাদের সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত, যারা বিশ্বাসে দুর্বল এবং অতিরিক্ত বিধিনিষেধমুক্ত বোধ করে না।
(১৫:৫-৭) এই পদগুলি প্যাসেজটি শেষ করেছে। লক্ষ্য হল খ্রিষ্টীয় ঐক্য। খ্রিষ্টের প্রেম হল আমাদের উদাহরণ।
ঐক্য, পুনর্জাগরণ এবং মিশনের কাহিনী
১৭২২ সালে জিনজেনডর্ফ নামে একজন জার্মান ভূস্বামী মোরাভিয়ান নির্যাতিত বিশ্বাসীদেরকে তার সম্পত্তিতে চলে যেতে এবং একটি উপনিবেশ গড়ে তুলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেখানে কয়েক শতাধিক লোক সেই সম্প্রদায়ে ছিল। তারা বিভিন্ন মতবাদ ও উপাসনা পদ্ধতি নিয়ে বিভক্ত হয়ে বিবাদ করেছিল; কিন্তু ১৭২৭ সালে তারা ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য "ভ্রাতৃপ্রতিম চুক্তি" (The Brotherly Agreement) (বর্তমানে বলা হয় The Moravian Covenant for Christian Living) তৈরি করেছিল।
সেই বছরই তারা উদ্দীপনা অনুভব করতে শুরু করে। তাদের সর্ব-রাত্রির প্রার্থনা সভা এবং ঈশ্বরের উপস্থিতি সম্বন্ধে এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে বেশ কিছু দীর্ঘ উপাসনা সভা ছিল, যার মধ্যে একজন বক্তা ঈশ্বরের প্রতি সশ্রদ্ধ বিশ্ময়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। একটি প্রভুর ভোজের সময়, পবিত্র আত্মা লোকেদের উপর এমনভাবে পরিচালিত হয়েছিল যে, জিনজেনডর্ফ পরে সেই দিনটিকে পুনর্নবীকৃত মোরাভিয়ান মন্ডলীর পঞ্চাশত্তমীর দিন (Pentecost of the Renewed Moravian Church) হিসেবে দেখেছিলেন। যারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল মহা আবেগের সাথে মিলিত হয়েছিল এবং জিনজেনডর্ফ মণ্ডলীতে অনৈক্যের জন্য স্বীকারোক্তিমূলক প্রার্থনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তারা একটি প্রার্থনা জাগরণ শুরু সভা করেছিল, যেখানে বিভিন্ন সদস্যরা পালা করে যোগ দিত,এবং এটি ১০০ বছর ধরে চলেছিল।
মোরাভিয়ান সম্প্রদায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মিশনারি-প্রেরণকারী মণ্ডলীগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। ১৭৩৩-১৭৪২ সাল পর্যন্ত, ৬০০ জনের সম্প্রদায় থেকে ৭০ জন মিশনারি হয়েছিল । ১৭৬০ সালের মধ্যে, ২৮ বছর পর, ২২৬ জন মিশনারিকে পাঠানো হয়েছিল; এবং বিশ্বব্যাপী মোরাভিয়ানদের সংখ্যা ছিল বেশ হাজার হাজার।
১১ নং পাঠের পর্যালোচনামূলক প্রশ্ন
(১) এক জীবন্ত বলিদানের দৃষ্টান্তটি ব্যাখ্যা করুন।
(২) সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত হওয়ার জন্য আমাদের মধ্যে কি ঘটা দরকার?
(৩) কেন আমাদের নম্র হওয়া উচিত?
(৪) দুর্বল ভাই এবং সবল ভাই শব্দগুলি ব্যাখ্যা করুন ।
(৫) ইহুদিবাদীরা (জুডাইজাররা) কারা ছিল?
১১ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) বর্তমানের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য রোমীয় ১২:১-১৫:৭ পদে প্রাপ্ত কিছু ব্যবহারিক নির্দেশনা প্রয়োগ করে এক পাতা রচনা লিখুন।
(২) এই কোর্সের পরিশিষ্টে দেওয়া প্রশ্নগুলির তালিকা অধ্যয়ন করে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হোন। আপনাকে অবশ্যই অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই এবং কোনো লিখিত উপাদান না দেখে পরীক্ষা দিতে হবে।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.