পৌলের সময়ে রোম ছিল বিশ্বের বৃহত্তম শহর, যেখানে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস করত।[1] সেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, ভাষা এবং ধর্মের মিশ্রণ ছিল। অধিকাংশ মানুষ ছিল ক্রীতদাস।
রোমে প্রথম মিশনারী
আমরা জানি না কে বা কারা প্রথমে রোমে সুসমাচার নিয়ে এসেছিল। পঞ্চাশত্তমীর দিনে ইহুদিরা রোম থেকে উপস্থিত ছিল (প্রেরিত ২:১০)। যারা মন পরিবর্তন করেছিল তারা নিশ্চয়ই সুসমাচারের বার্তা রোমে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের ঘোষণা যে মশীহ এসেছেন তা হয়তো উৎসাহ ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। যারা ইতিমধ্যেই ইহুদি ধর্মকে সম্মান করত সেই পরজাতীয়দের মধ্যে হয়তো সুসমাচারটি সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।
একটি পরজাতীয় মন্ডলী
যদিও পত্রের কিছু অংশে ইহুদিদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে, রোমের মন্ডলীর বেশিরভাগ মানুষই ছিল অইহুদি। পল তাদের পরজাতীয় (১:১৩-১৫) বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে যেহেতু তিনি গ্রীক এবং বর্বর উভয়ের কাছেই ঋণী ছিলেন, তাই তিনি রোমীয়দের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে প্রস্তুত ছিলেন। যাইহোক না কেন, রোমীয় মন্ডলীতে ইহুদি প্রভাব শক্তিশালী ছিল, যেহেতু সেখানকার প্রথম বিশ্বাসীরা ছিল ইহুদি। এটা সম্ভব যে সুসমাচারটি তেমন স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি যা বিশ্বাসীদেরকে দেখায় যে তারা ইহুদি ধর্মের নিয়মকানুন থেকে মুক্ত।
[1]Bruce Wilkinson & Kenneth Boa, Talk through the New Testament, 375
যেহেতু পৌলের উদ্দেশ্য ছিল মিশনারি কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তাই স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন উঠবে, "প্রত্যেকেরই কি বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকগণিত হওয়া প্রয়োজন?" সর্বোপরি, এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা সবার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরমেরুর লোকজনদের জন্য বরফ আনার কোন প্রয়োজন নেই এবং মরুভূমির বাসিন্দাদের বালির প্রয়োজন নেই।
কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারেন যে বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকগণিত হওয়া এমন বিষয় নয় যা বিশ্বের সকলের প্রয়োজন; হয়ত কিছু মানুষ ধার্মিক জীবন যাপন করেছে এবং ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের দ্বারা গৃহীত হয়েছে৷ এটি দেখানোর জন্য পত্রের ২য় ভাগে (১:১৮-৩:২০) লেখা হয়েছে যে প্রত্যেকেরই বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকগণিত হওয়া প্রয়োজন আছে, এবং তাই এ বিষয়ে বার্তাটি প্রয়োজন।
১:১৮-৩:২০ পদের মূল পয়েন্ট
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই ঈশ্বরের আবশ্যিকতা লঙ্ঘন করেছে এবং দণ্ডাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। ঈশ্বরের আবশ্যিকতা পূরণের ভিত্তিতে কেউ রক্ষা পাবে না কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি ইতিমধ্যেই সেগুলি লঙ্ঘন করেছে।
১:১৮-৩:২০ পদের সারসংক্ষেপ
প্রথমত, পৌল পৌত্তলিক পরজাতীয়দের অবস্থা বর্ণনা করেছেন যারা ঈশ্বরের প্রকাশিত বাক্য বিহীন ছিল এবং দেখিয়েছেন যে তারা ঈশ্বরের জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করেছে যা ঈশ্বর তাদেরকে সৃষ্টিতে দেখিয়েছিলেন। তারপর, তিনি ইস্রায়েলীয়দের অবস্থা বর্ণনা করেন, যাদের কাছে ঈশ্বরের লিখিত বাক্য ছিল কিন্তু তারা তা অনুসরণ করেনি। তিনি পৃথিবীর সার্বজনীন পাপপূর্ণতা বর্ণনা করে শেষ করেন। উপসংহার হল যে বিশ্বব্যাপী সবাই ঈশ্বরের সামনে দোষী। সবার সুসমাচারের প্রয়োজন আছে কারণ কেউ তার নিজের সদগুণের দ্বারা পরিত্রান পাবে না।
এই পাঠগুলির জন্য, ২য় পর্ব (১:১৮-৩:২০) তিনটি প্যাসেজে ভাগ করা হবে। এই পাঠে আমরা প্রথম প্যাসেজটি অধ্যয়ন করব (১:১৮-৩২)।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ২য় পর্ব, ১ নং প্যাসেজ
১:১৮ হল এই প্যাসেজের এবং পূর্ববর্তীটির সংযোগের পদ।
১:১৮-৩২ পদের মূল পয়েন্ট
পরজাতীয়দের ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান ছিল, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং মূর্তির দিকে ফিরেছিল, সম্পূর্ণরূপে অধঃপতিত হয়েছিল।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১:১৮-৩২ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১:১৮) ঈশ্বর তাদেরকে নিজের সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান দিয়েছেন। তারা সত্যকে দাবিয়ে রেখেছে। এটি বোঝায় যে তারা কিছু সত্য জানা ছিল, যেমনটি পরবর্তী পদটি ব্যাখ্যা করেছে। তাদের দণ্ডাজ্ঞা এই যে, তাদের কাছে যে সত্য ছিল তা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। “অধার্মিকতাকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে একটি অপরাধকে হিসাবে বর্ণনা করে এবং তা নিজেকে মূর্তিপূজা হিসাবে প্রকাশ করে, সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে সৃষ্টির উপাসনা (১:১৯-২৩)। অধার্মিকতার অর্থ হল নৈতিক বিকৃতি এবং তা পাপাচার এবং নষ্টামিতে প্রকাশ পায় (১:২৪-৩২)।[1]
তারা যে সত্যকে চাপা দেয় তা ১:২০ পদে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত হল তাদের উপর ঈশ্বরের কর্তৃত্বের জ্ঞান। তাদের জীবনধারা প্রমাণ করে যে তারা ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে। অপরদিকে, একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জীবনধারা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে, তিনি যা করেন এবং যা করেন না উভয় ক্ষেত্রেই।
[1]William Greathouse, “Romans”, in Beacon Bible Commentary, Vol VIII. (Kansas City: Beacon Hill Press, 1968) 50 থেকে অভিযোজিত।
প্রকাশ বা প্রত্যাদেশের প্রকারভেদ - বিশেষ এবং সাধারণ
► কোন কোন উপায়ে ঈশ্বরের সত্য সকল মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়?
যেহেতু ঈশ্বর বিভিন্ন উপায়ে সত্য প্রকাশ করেছেন, আমরা দু'টি বিভাগ সম্পর্কে কথা বলি: সাধারণ প্রকাশ এবং বিশেষ প্রকাশ। পৌল রোমীয়দের পুস্তকে এগুলি উল্লেখ করেছেন, যদিও এই এই পরিভাষাগুলি ব্যবহার করে নয়।
সাধারণ প্রকাশ (General Revelation) হল যা আমরা ঈশ্বর সম্পর্কে তাঁর সৃষ্টিকে দেখে বুঝতে পারি। আমরা মহাবিশ্বের নকশায় ঈশ্বরের বিস্ময়কর বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তি দেখতে পাই।
মানুষকে যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে তাতে আমরা ঈশ্বরের গুরূত্ব দেখতে পাই। আমরা যে যুক্তি দিতে পারি, সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে পারি এবং সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য বলতে পারি (যদিও অব্যর্থভাবে নয়) তা আমাদের দেখায় যে আমাদের সৃষ্টিকর্তার অবশ্যই সেই ক্ষমতাগুলি উচ্চতর মাত্রায় রয়েছে। আমরা জানি যে ঈশ্বর চিন্তা করতে এবং যোগাযোগ করতে পারেন কারণ আমাদের সেই ক্ষমতা রয়েছে। (দেখুন গীতসংহিতা ১৯:১-৪ এবং ৯৪:৯)
যেহেতু সাধারণ প্রকাশ আমাদের দেখায় যে ঈশ্বর কথা বলতে পারেন, তাই আমরা উপলব্ধি করি যে, বিশেষ প্রকাশ ঘটতে পারে। ঈশ্বর একজন ব্যক্তি[1] এবং তাঁর বিজ্ঞতাপূর্ণ প্রাণীদের সাথে তিনি কথা বলতে সক্ষম। এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা এবং এমনকি ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি পুস্তকও আসতে পারে।
সাধারণ প্রকাশের মাধ্যমে, এমনকি শাস্ত্র ছাড়াই, মানুষ জানে যে একজন ঈশ্বর আছেন, তাকে মান্য করা উচিত, এবং তারা ইতিমধ্যেই তাঁর অবাধ্য হয়েছে (রোমীয় ১:২০)। কিন্তু সাধারণ প্রকাশ আমাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সঠিক সম্পর্কে কীভাবে আসতে হয় তা জানায় না। সাধারণ প্রকাশ আমাদের বিশেষ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা দেখায়, কারণ এটি দেখায় যে কোন অজুহাত ছাড়াই মানুষ তাদের সৃষ্টিকর্তার সামনে পাপী।
সাধারণ প্রকাশ আমাদের দেখায় যে, মানবজাতি পতিত ও দোষী। বিশেষ প্রকাশ ব্যাখ্যা করে যে, কেন মানবজাতির এই অবস্থা। বিশেষ প্রকাশ হল বাইবেলের অনুপ্রেরণায় এবং খ্রিষ্টের মানবদেহ-ধারণে প্রকাশিত সত্য। বিশেষ প্রকাশ ঈশ্বরের চরিত্র বর্ণনা করে, পতন ও পাপ ব্যাখ্যা করে এবং দেখায় যে কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারি।
[1]আমরা বলছি না যে, ঈশ্বর একজন মানুষ, কিন্তু তিনি একজন ব্যক্তি, যিনি চিন্তা করতে, ইচ্ছা করতে, এবং কথা বলতে সক্ষম, কিন্তু ব্যক্তিসত্তাহীন শক্তি নন।
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ২য় পর্ব, ১ নং প্যাসেজ
পদের টীকাভাষ্য (অব্যাহত)
► সাধারণ প্রকাশ থেকে আমরা যা জানি তার অতিরিক্ত বিশেষ উদ্ঘাটন আমাদের কী বলে?
(১:১৯) সৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে আমরা ঈশ্বর সম্পর্কে সত্য দেখতে পাই। এমনকি গ্রিক দার্শনিকরাও স্বীকার করেছেন যে, নিশ্চয়ই এমন কিছু ঐশ্বরিক ব্যক্তিত্ব (divine mind) রয়েছে যা মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। সৃষ্টির একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হল মানুষের প্রকৃতি। মানুষের সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে এক নৈতিক সচেতনতা রয়েছে - এই বিষয়টি লক্ষ করার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি সম্বন্ধে সত্য বুঝতে পারি। (দেখুন ১:৩২)
► মানুষকে দেখে আমরা আমরা ঈশ্বর সম্পর্কে কী বুঝতে পারি?
(১:২০) সৃষ্টির সময় থেকেই মানুষ জানে যে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর তাদের উপর ঈশ্বরের চিরন্তন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে। ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রত্যাখ্যানকে অমার্জনীয় করার জন্য এটিই যথেষ্ট জ্ঞান। তাদের পাপের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার করা হবে। তারা জানে যে তারা বিরুদ্ধাচরণের দোষে দোষী।[1] এ কথা সত্য যে তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে এই বিষয়গুলি জানে এবং তাদের অজুহাত দেখাবার কোন পথ নেই।
ঈশ্বরের ন্যায়বিচার দাবি করে যে পাপকে শাস্তি দেওয়ার আগে তা ইচ্ছাকৃত ছিল কিনা তা দেখাতে হবে। এটাও প্রয়োজন ছিল যে তাদের কাছে যে জ্ঞান ছিল তা ভালোভাবে বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য পর্যাপ্ত ছিল। যদি তাদের পক্ষে ভিন্নভাবে করা সম্ভব না হতো, তাহলে তাদের এক বৈধ অজুহাত থাকত। কিন্তু যেহেতু তাদের পক্ষে ভিন্নভাবে কাজ করা সম্ভব, তাই তাদের কোনো অজুহাত নেই। ঈশ্বর এখানে নিজেকে ব্যাখ্যা করছেন।[2]
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সংস্কৃতির মধ্যেই ধারণা রয়েছে যে একজন সর্বোচ্চ ঈশ্বর আছেন যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সাধারণত তারা ঈশ্বরের পরিবর্তে অন্যান্য অতিপ্রাকৃত শক্তির উপাসনা করে কারণ তারা জানে যে তারা সর্বোচ্চ ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন। পৌল ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেননি, বরং উল্লেখ করেছেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও কর্তৃত্ব সমস্ত সংস্কৃতিতে রয়েছে। এই জ্ঞান দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিকে চালিত করে।
[3]সাধারণ প্রকাশের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ প্রকাশ ছাড়া খ্রিষ্ট সম্বন্ধে জ্ঞান এবং সুসমাচার প্রকাশ করা হয় নি। এছাড়া, সৃষ্ট জগৎ ঈশ্বরকে সঠিকভাবে চিত্রিত করে না, কারণ এটা পাপের অভিশাপের অধীনে রয়েছে এবং এর আসল নকশা পুরোপুরিভাবে দেখায় না। সৃষ্টি একটা সুন্দর আঁকা ছবির মতো যার উপর একটি কর্দমাক্ত পায়ের ছাপ রয়েছে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু এর কিছু আসল সৌন্দর্য এখনও রয়ে গেছে যা শিল্পী সম্পর্কে কিছু জানায়।
(১:২১-২২) ঈশ্বরের প্রাপ্য যে মানুষ তাঁকে ঈশ্বর হিসেবে সম্মান করে (উপাসনা) এবং কৃতজ্ঞ হয় (স্তব)। কিন্তু তারা তাঁর কাছ থেকে যা পেয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে বরং তাঁর কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা নিজেরাই দেবতা হতে চেয়েছিল, তাদের যা কিছু ছিল, সেগুলির জন্য তারা কৃতিত্ব নিয়েছিল। এই ধরনের স্বাধীন ঈশ্বরত্ব দাবি করা ছিল মূর্খতা।
তাদের হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন। হৃদয় হল কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ও আনুগত্যকে দেখায়। আলো সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। যেহেতু তারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাই তারা তা দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। তারা আধ্যাত্মিক ও শাশ্বত বিষয় সম্বন্ধে তাদের বোধগম্যতা হারিয়ে ফেলেছিল, এবং তাই বস্তুজগতকেও সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি।
(১:২৩, ২৫) তারা নিজেদের ও বস্তুজগতের প্রতি তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল এবং সৃষ্টিকর্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই বিষয়টি তাদের এমন দেবদেবীদের তৈরি করতে পরিচালিত করেছিল, যা তাদের নিজেদের পতিত প্রকৃতির গুণকীর্তন করেছিল। তারা সৃষ্ট প্রাণীদের কাছে সেই মহিমা হস্তান্তর করেছিল যা ছিল ঈশ্বরের। সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের যে দায়িত্ব ছিল, তা এড়ানোর জন্য তারা তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিল এবং সৃষ্টিকে সম্মান করেছিল। এই মনোভাব আধুনিক বিবর্তন (evolution) এবং মানবতাবাদের (humanism) ভিত্তি। মানুষ যদি নিজেদের তৈরি করে, তাহলে তারা তাদের নিজেদের উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাও নির্ধারণ করতে পারে।
মূর্তিপূজার মূল বিষয়টি হল ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছেন সেটির সেবা করা ও উপাসনা করা। কোনো কিছুর পরিচর্যা করার অর্থ হল সেটিকে জীবনে প্রথম স্থান দেওয়া এবং সেই অগ্রাধিকার অনুযায়ী জীবনযাপন করা। কোনো কিছুর উপাসনা করার অর্থ হল তার উপর নির্ভর করা ও সমাদর করা, যা কেবলমাত্র ঈশ্বরের। বস্তুগত বিষয়গুলোকে সম্মান করতে পারেন না। মূর্তিপূজা সৃষ্ট জিনিস থেকে এমন পরিতৃপ্তি আশা করে যা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই দিতে পারেন। আধুনিক বস্তুবাদ (materialism) হল মূর্তিপূজা। একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতি তার উপাসনাকে হ্রাস না করে বস্তুগত বিষয়গুলোকে মান্য করতে পারেন না।
► পরজাতীয়রা কীভাবে ঈশ্বরের জ্ঞানের প্রতি সাড়া দিয়েছিল?
(১:২৪) এই পদটি সেই বিষয়বস্তুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় যা ১:২৬-২৭ পদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মূর্তিপূজক প্রেম স্বাভাবিকভাবেই অনৈতিকতা সহ যৌন পাপের দিকে পরিচালিত করে। যৌন পাপ দৈহিক আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয় কিন্তু তা শরীরকে অসম্মান করে, কারণ দেহ পবিত্র ও ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গীকৃত হওয়া উচিত।
(১:২৬-২৭) অনৈতিকতার কারণ ছিল, নিজেকে গৌরবান্বিত করা এবং স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাকে শাসন করতে দেওয়ার স্বাভাবিক ফলাফল। যখন ইচ্ছা শাসন করে, তখন তারা বিকৃত হয়ে যায়। কেউ কাউকে সঠিকভাবে ভালবাসতে পারে না বা কোন কিছুকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারে না যদি না সে ঈশ্বরকে সর্বোচ্চভাবে ভালবাসে এবং উপভোগ করে। ১:২৪ এই বিষয়টির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন এবং অনৈতিকতা ও ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা দেখায়।
সমস্ত পাপই হল ঈশ্বরের সৃষ্ট উত্তম কোন কিছুর বিকৃত রূপ, যৌন বিকৃতির পাপ তাদের মধ্যে বেশি প্রকট। মানুষ ঈশ্বরের পথ থেকে সরে যেতে থাকে, সে তত বেশি নৃশংস, নিষ্ঠুর এবং বিকৃত হয়ে যায়। কিছু মানুষ মনে করে যে এমন সহজসরল সংস্কৃতি রয়েছে যেখানকার মানুষরা এক উত্তম জীবন যাপন করে কারণ তারা সভ্যতার দ্বারা কলুষিত নয়। সত্য বিষয়টা হল যে সভ্যতার আলোকবঞ্চিত সংস্কৃতির অধিকাংশ মানুষ মৃত্যু ও অতিপ্রাকৃতের ভয়ে বাস করে, নিষ্ঠুর রীতিনীতি পালন করে এবং এক বিকৃত, পাপপূর্ণ জীবনধারার ফলাফল ভোগ করে।
ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ করার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। যদি তাকে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, তাহলে সে সত্যিই মানবজাতির উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না। এমনকি তার নিজের আদর্শেরও ঘাটতি ঘটবে। পুরুষত্ব ও নারীত্বের আদর্শগুলি ঈশ্বরবিহীন ব্যক্তির পক্ষে নাগালের বাইরে হয়ে যায়। যৌন বিকৃতি হল সবচেয়ে সুস্পষ্ট চরম অবস্থা, যদিও প্রতিটি ব্যক্তিই অন্য উপায়েও প্রকৃত মানবতার ক্ষতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঈশ্বরকে ঈশ্বর হিসাবে প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হল মানুষকে মানুষ হিসাবে প্রত্যাখ্যান করা। ঈশ্বরকে উপাসনা করতে অস্বীকার করা হল আপনার নিজের মানবতাকে প্রত্যাখ্যান করা।
আশ্চর্যের বিষয় যে, যারা সৃষ্ট জিনিসের উপাসনা করত তারা প্রাকৃতিক বিষয়ের বিপরীতে এমনকি প্রাণীজগতকেও, বিকৃত করেছিল। লোকেরা যদি তাদের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষাগুলির দ্বারা নিজেদেরকে শাসন করার সুযোগ দেয়, তাহলে সেই আকাঙ্ক্ষাগুলি চরম, অপ্রাকৃত রূপ ধারণ করে।
এটি পরিহাসের বিষয় যে, একজন ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের ঊর্ধ্বে দেহের আকাঙ্ক্ষাগুলিকে সম্মান করেন, তা হলে সে শেষ পর্যন্ত দেহের সাথে অসম্মানজনক আচরণ করবে। দেহের যে অংশগুলিতে মানুষ যৌন পাপে পূজা করে সেই একই অংশগুলিই তারা উল্লেখ করে যখন তারা অশ্লীল ও অপমানজনক কিছু বলতে চায়।
সাধারণত, নারীরা পুরুষদের মতো দ্রুত যৌন অনৈতিকতা এবং বিকৃতির কাছে নিজেকে সঁপে দেয় না। তারা সহজাতভাবে পরিবারের ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়। নারীরা যে এই মহাপাপ করছিল তা থেকে বোঝা যায় যে তাদের সমাজের ধ্বংসযজ্ঞ সম্পূর্ণ হয়েছিল।
► কী কী ধরনের বিকৃতি আপনার সমাজে প্রচলিত রয়েছে?
তারা যে পাপপূর্ণ অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছিল তা তাদের ন্যায্যভাবে প্রাপ্য ছিল। পাপপূর্ণ অবস্থা পাপের জন্য উপযুক্ত শাস্তি, যা এর ক্রমবর্ধমান দুঃখ ও লজ্জার কারণ হয়, অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা এবং অশ্লীলতার কারণ হয়।
“মানুষের পাপের মূল যদি হয় ধর্মীয় বিকৃতি হয়, তার ফল হল নৈতিক দুর্নীতি।“
- উইলিয়াম গ্রেটহাউস (Commentary on Romans)
সমকামী পাপের বিষয়ে খ্রিষ্টীয় প্রতিক্রিয়া
এমন কোন প্রমাণ নেই যে বাইবেল "প্রেমময়, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমকামী (হোমোসেক্সচুয়াল বা লেসবিয়ান) সম্পর্কের" বৈধতা স্বীকার করে।[1] যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে আমরা শাস্ত্র জুড়ে শিক্ষা খুঁজে পাওয়ার আশা করব ঠিক যেমনটি অন্যান্য রূপের সাথে করা হয় (যেমন, স্বামী ও স্ত্রী, পিতামাতা ও সন্তান, নাগরিক এবং সরকার)। পরিবর্তে, এমন কোনো পদ নেই যা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এই ধরনের সম্পর্ক গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
এটি নয় যে শাস্ত্রে প্রলোভন, দুই মানুষের মধ্যে প্রেম বা আকর্ষণের অনুভূতি, বা আমাদের আত্মার সংগ্রাম নিষিদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর আমাদের বলেন যে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত, বিভ্রান্ত এবং প্রলুব্ধ হওয়া মানুষের নিকটবর্তী থাকেন। কিন্তু পাপ ঘটে যখন কামনাপূর্ণ চিন্তাকে স্বাগত জানানো হয় (যাকোব ১:১৫) অথবা আমরা ঈশ্বরের নকশার বাইরে আচরণে লিপ্ত হই।
সমকামিতার প্রতি মন্ডলীর উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া অবশ্যই সহানুভূতিশীল প্রেম, শালীনতাপূর্ণ সত্য এবং অকৃত্রিম নম্রতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যদের প্রেম করার অর্থ হল, তাদের যত্ন নেওয়া এবং খ্রিষ্টের ভালবাসাকে প্রসারিত করা, তা তারা কখনো তাদের পাপ থেকে ফিরে আসুক বা না-ই আসুক। অন্যদের প্রেম করার অর্থ হল, খ্রিষ্টের চোখ দিয়ে তাদের দেখা, ঠিক যেভাবে তিনি আমাদের পাপে আমাদের দেখেছেন (এবং এখনও দেখেন)। প্রায়শই, প্রায়শই, এটি একজন ব্যক্তির সাথে আমাদের সম্পর্ক যা প্রাথমিকভাবে সেই ব্যক্তিকে খ্রিষ্টের সাথে একটি পরিত্রাণের সম্পর্কের দিকে পরিচালিত করে। পরবর্তীকালে, পবিত্র আত্মার কাজ হল, সাধারণত স্থানীয় মন্ডলীর মধ্যে কাজ করা, যাতে সেখানে সামগ্রিকতা পুনরুদ্ধিত হয়।
তবুও, প্রেম করার অর্থ হল সত্য বলা, এমনকি যদিও তা শত্রুতাপরায়ণতা বা উদাসীনতার সম্মুখীন হয়। ঈশ্বরের বাক্য ভাগ করে নেওয়া একজন পুরুষ বা নারীকে তার জীবনকে অসঙ্গত সিদ্ধান্ত, বিভ্রান্তি, পাপ ও দুঃখকষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে। সবাই বাইবেলের অনুশাসন মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। সত্য নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের অবশ্যই ধৈর্য এবং নম্রতা দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। আমাদের অবশ্যই এক খোলা হৃদয় দিয়ে শুনতে হবে এবং প্রেম ও বিচক্ষণতার সঙ্গে শাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই ব্যক্তির প্রতি আমাদের অকৃত্রিম যত্নশীলতা দেখাতে হবে, যাতে সে আমাদের মতামতকে মূল্য দেয়।
খ্রিষ্টীয় বার্তার জন্য অকৃত্রিম নম্রতা অপরিহার্য। ঈশ্বরের সাথে কথোপকথন এবং সময় কাটানো থেকে; পাপের সত্যতা স্বীকার করা, নিজ পাপস্বীকার ও পাপ থেকে ফেরা; এবং ক্রুশের উপর ঈশ্বরের গভীর প্রেমকে উপলব্ধি করা থেকে নম্রতা আসে। ভয়, রাগ এবং ঘৃণার পরিবর্তে আমাদের অবশ্যই প্রেম ও সহানুভূতিকে আমাদের উদ্দেশ্য হতে দিতে হবে।
(১:২৮) যেহেতু তারা তাদের চিন্তাধারার পাশাপাশি তাদের জীবনধারায় ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাই তাদের চিন্তাভাবনা ও জীবনদর্শন তাদের আচরণের মতোই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। গ্রীক ভাষায় এখানে শব্দের একটি খেলা রয়েছে যা দেখায় যে যেহেতু তারা ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাই ঈশ্বর তাদের এমন একটি মনের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন - অর্থাৎ অর্থাৎ, প্রভাব ফেলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা (free will) দিয়েছেন এবং তা পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছেন। কিছু সময় পর, যারা ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে যাদেরকে তাঁর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে দেন। এরপর, তাদের মন ঈশ্বরের দ্বারা বাধাহীনভাবে পাপ-প্রবৃত্তির (depravity) পথ অনুসরণ করে।
(১:২৪, ২৬, ও ২৮) ঈশ্বর তাদের ছেড়ে দিয়েছেন এমন বিবৃতি ইঙ্গিত করে যে এই লোকেরা বাস্তবিকভাবে আশাহীন অবস্থায় ছিল এবং এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যা তারা বিপরীতমুখী করতে পারে না (২ থিষলনীকীয় ২:১০-১২ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।)
মানুষের মন ও চিন্তাভাবনায় পাপ-প্রবৃত্তির (depravity) নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যখন তাদের নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন পাপ-প্রবৃত্তি মানুষকে বাধা দেয়। এর ফলে লোকেরা তাদের পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ও ক্রিয়াকলাপকে সমর্থন করে।
► লোকেরা তাদের পাপের সমর্থনে যে অযৌক্তিক অজুহাতগুলি দেখায় তার কিছু উদাহরণ কী কী?
(১:২৯-৩১) এই পদগুলিতে আমরা ভয়ানক পাপের একটি তালিকা দেখতে পাই। সংস্কৃতি এবং শাসনব্যবস্থা এই প্রবণতাগুলি দমন করে, কিন্তু সেগুলি পাপী মানুষের হৃদয়ে বিদ্যমান। যদি সাংস্কৃতিক ও সরকারি বিধিনিষেধগুলো সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলে অনেক মানুষ দ্রুত বর্বর হয়ে উঠবে।
এখানে তালিকাভুক্ত পাপীদের পাপ এবং বর্ণনাগুলি একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র নয়। এখানে প্রতিটির দ্বারা কিছু মূল ধারণা সূচিত হয়েছে।
দুষ্টতা - এক সাধারণ শব্দ, সম্ভবত সমস্ত কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত।
মন্দতা - ভুল কাজ এবং মন্দ চরিত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ।
লোভ - গ্রিক সাহিত্যে আগ্রাসনমূলক স্বার্থপরতা বোঝাতে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। এটি এমন একজন ব্যক্তির বর্ণনা করে যে তার নিজের স্বার্থ অনুধাবন করে, অন্যদের স্বার্থকে পদদলিত করতে ইচ্ছুক। কোন লাভের জন্য কর্তৃত্বের অপব্যবহার এর অন্তর্ভুক্ত।
বিকৃতরুচি - অন্তরের দুষ্টতা এবং মন্দের প্রবণতা।
ঈর্ষা - অন্যদের যা আছে তার জন্য আকাঙ্ক্ষা, এবং যাদের কাম্য জিনিস আছে তাদের প্রতি অসন্তোষ।
নরহত্যা - অবৈধ, ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য মানুষের প্রাণনাশ করা, যা ঘৃণা ও অসন্তোষের চরম ফল।
বিবাদ - বিবাদ, সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে।
প্রতারণা - জালিয়াতি, ফাঁদে ফেলার জন্য টোপ দেওয়ার প্রস্তাবকে বোঝাতে পারে।
বিদ্বেষ - অমঙ্গলকারী, অকারণে অন্যদের আঘাত করতে প্রস্তুত।
গুজবরটনাকারী - গোপনে অপবাদকারী।
পরনিন্দুক – অপবাদক তাঁদের সম্পর্কে মন্দ বা মিথ্যা কথা বলে অন্যের সুনাম নষ্ট করে।
ঈশ্বরঘৃণাকারী – তারা ঈশ্বরকে শত্রু হিসাবে দেখে কারণ তাঁর আইন তাদের দোষীসাব্যস্ত করে।
অশিষ্ট - অন্য ব্যক্তির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা।
উদ্ধত - এই ব্যক্তি অহংকারী এবং নিষ্ঠুর। এই বৈশিষ্ট্যযুক্ত একজন দুর্বল চরিত্রের ব্যক্তি তাদেরকে অপমান করতে চায় আসলে যাদেরকে তার সম্মান করা উচিত। এই বৈশিষ্ট্যযুক্ত একজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি অন্যদের প্রতি নিষ্ঠুর হয় এবং যারা তার প্রতি তার ইচ্ছামত সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয় তাদের উপর চরম প্রতিশোধ নেয়।
দাম্ভিক - নিজেকে মহিমান্বিত করা। এই মানুষগুলি আত্মকেন্দ্রিক। যদি এখানে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে বিবেচনা করা হয়, তা হলে তারা অন্যদের খরচে এবং অন্যদের ক্ষতি করার জন্য প্রতারণামূলকভাবে নিজেদেরকে উচ্চ করে তোলে।
দুষ্কর্মের নতুন পন্থা খুঁজে বের করে - তারা মন্দ এবং ক্ষতিকারক জিনিসগুলির বিকাশে সৃজনশীল।
বাবা-মার অবাধ্য - পরিবার ধ্বংস পাপের ফল, এবং এটি সমাজকে আরও বিচ্ছিন্নতার দিকে চালিত করে। পাপী প্রবণতা শিশুর মধ্যে প্রাথমিক অভিব্যক্তি খুঁজে পায় যখন সে তার জানা প্রথম কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
নির্বোধ - নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন নয়। এই ব্যক্তি নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে যুক্তি দ্বারা প্ররোচিত হন না। এটি বুদ্ধিমত্তার অভাব নয়, কিন্তু এক পঙ্গু নৈতিক বোধ যা একটি দুষ্ট হৃদয়ের ফল।
বিশ্বাসহীন – অনাস্থাভাজন। নৈতিকতা ও কর্তৃত্ব ত্যাগ করা, পরম সত্যকে ঘৃণা করা, যা তাদের কাছে নতি স্বীকার করে না, এবং নিজেকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা।
হৃদয়হীন - প্রতিরক্ষামূলক এবং স্নেহময় সহজাত প্রবৃত্তির বিপরীত। তারা তাদের পরিবার ত্যাগ করে তাদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা অনুসরণ করতে পারে। প্রেমের সবচেয়ে মৌলিক প্রবৃত্তি বিকৃত হতে পারে। তারা সেই মানুষদের অপব্যবহার করতে পারে যারা তাদের সুরক্ষার উপর নির্ভর করে।
নির্মম - করুণাহীন। তারা সমবেদনা না দেখিয়ে দুঃখকষ্ট দেখতে পারে। তাদের কর্মের কারণে অন্যদের দুঃখকষ্ট দেখে তারা মন্দ কাজ থেকে বিরত হয় না।তাদের নিজেদের অন্যায়ের কারণে ইতিমধ্যে সৃষ্ট দুর্ভোগ দেখে তারা অনুশোচনা করে না।
(১:৩২) তারা জানে যে এই বিষয়গুলি ভুল। বিধর্মী লোকেরা এমনকি তাদের মধ্যে যে সত্য রয়েছে, তা বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করছে না। তারা জানে যে তারা দোষী। তবুও তারা কেবল পাপকেই অনুসরণ করে তাই-ই নয়, কিন্তু অন্যদের মধ্যে পাপকে অনুমোদনও করে। সমাজের নৈতিকতা এতটাই নিচে নেমে গেছে যে নতুন আচরণের মান অনৈতিকতাকে অনুমোদন করে।
যে ব্যক্তি পাপকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে, সে নিজেকে পাপী হিসাবে মেনে নেয় এবং অন্যদের পাপী হিসাবে অনুমোদন করে। অন্যদের পাপ তাকে আনন্দ দিতে পারে। মানুষ রোমান মল্লভূমিতে নরহত্যায় সরব উচ্ছাস জানিয়েছে। আধুনিক দিনে অনেক মানুষ বলপ্রয়োগ এবং অনৈতিক যৌনকর্ম দেখতে উপভোগ করে। তারা সেই লোকেদের মুগ্ধভাবে তারিফ যারা পরিমাণে পাপের সীমা অতিক্রম করে।
“পাপের কারণে মানুষের ব্যক্তিত্বের যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়, তা উপলব্ধি করা কঠিন। ইচ্ছার দুর্বলতার বাইরে সে হার মেনেছে এবং আর আবেগের জোরাজুরির নিচে এমন এক মন আছে যা নিস্তেজ ও কামনার দাস হয়ে উঠেছে। যুক্তি দেওয়ার পরিবর্তে অজুহাত দেখাতে শিখেছে। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরে চিন্তা করে। কারণের পরিবর্তে যুক্তিযুক্ত করে। কখনও কখনও সত্য বলে, কিন্তু ধারাবাহিক নয়। এদের উপর নির্ভর করা যায় না... মিথ্যার জন্য সত্যকে, মূর্তিপূজার জন্য ঈশ্বর, মূর্খতার জন্য প্রজ্ঞার বিনিময় করেছে...”
- উইলবার ডেটন (Wilbur Dayton)
প্রত্যেক অ-রূপান্তরিত (unconverted) পাপীই কি এইরকম?
প্রত্যেক ব্যক্তি এই সমস্ত পাপ সক্রিয়ভাবে করেনি। কিন্তু, পতিত মানবজাতির এই সমস্ত পাপের প্রতি একটি প্রবণতা রয়েছে, এবং তারা যদি ভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকত তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি হয়তো এই পাপগুলির যে কোন একটি করত।
সেনেকা (Seneca) ছিলেন একজন রোমান দার্শনিক এবং সরকারী কর্মকর্তা যিনি পৌলের সময়ে বসবাস করতেন। তিনি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী ছিলেন না এবং বাইবেলের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে প্রতিটা পাপের সম্ভাবনা প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, “সমস্ত দুষ্কর্ম সব মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান, যদিও প্রতিটি সকল কলুষতা প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সুস্পষ্টরূপে পরিলক্ষিত হয় না।”[1] আমরা লক্ষ্য করতে পারি যে অ-রূপান্তরিত পাপী সম্পর্কে পৌলের বর্ণনা প্রতিটি সময়কাল এবং প্রতিটি সংস্কৃতির জন্য প্রযোজ্য।
সরকারী শাসনব্যবস্থা ও সমাজের মানদণ্ড মানুষের মন্দ প্রবণতাকে অনেকাংশে সংযত করে রাখে। অনেক মানুষ তাদের হৃদয় ও মনে পাপপূর্ণ ইচ্ছা পোষণ করে যা তারা প্রকাশ্যে দেখায় না কারণ তারা অন্যদের অনুমোদন চায়। এই প্যাসেজে তালিকাভুক্ত পাপের প্রতি মানুষের গোপন প্রবণতা রয়েছে এবং হৃদয়ের এই পাপের জন্য তারা দোষী।
[1]F.F. Bruce, The Epistle to the Romans, in Tyndale Bible Commentaries (Grand Rapids: William B. Eerdmans Pub. Co., 1963), 87 দ্বারা উদ্ধৃত।
প্যাসেজের প্রয়োগ
এই প্যাসেজটি মূলত সেই সমাজের মানুষদের বর্ণনা করে যারা সুসমাচার শোনেনি। তারা সৃষ্টির মধ্যে ও তাদের সংবেদে প্রকাশিত ঈশ্বরের জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারপর তারা উপাসনা করার জন্য অন্য কিছু খুঁজে নিয়েছিল যা তাদের পাপ-প্রকৃতির ইচ্ছাগুলিকে প্রশ্রয় দিতে দেয় এবং তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলি বিকৃত হয়ে যায়। এই অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করে কেন সেই মানুষদের সুসমাচারের প্রয়োজন।
এই অনুচ্ছেদটি প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অনেক ধরনের পাপকে তালিকাভুক্ত করে এবং দেখায় যে ঈশ্বর সমস্ত পাপকে ঘৃণা করেন। এ ছাড়া, এটা এই সতর্কবাণীও যে সমস্ত পাপের মধ্যেই পাপীকে আরও দুষ্টতার দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যারা সুসমাচার শোনে এবং তা প্রত্যাখ্যান করে, তারা সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে তাদের বোধগম্যতা হারিয়ে ফেলার একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এই পদগুলি আমাদের নিজেদের সমাজে আমরা যে পরিস্থিতি দেখতে পাই তা ব্যাখ্যা করে, যদিও সেখানে সুসমাচার প্রচারিত হয়েছে। ঈশ্বরের মানকে উপেক্ষা করে সংস্কৃতি নির্দিষ্ট কিছু পাপকে গ্রহণযোগ্য করার উপায় খুঁজে নেয়।
একটি সাক্ষ্য
শমাগী (Shmagi) পূর্ব ইউরোপের জর্জিয়া দেশে জন্মগ্রহণ করেন। শমাগীর বাবা-মা ছিলেন নাস্তিক এবং ছোটবেলায় তিনি গির্জায় যাননি। তাঁর নামের অর্থ ছিল "বদরাগী" এবং নামটি ছিল তার মেজাজের সঙ্গে মানানসই। যুবক বয়সে প্রায়ই তিনি সমস্যায় পড়তেন। অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাকে দুই বছরের জন্য রাশিয়ার কারাগারে পাঠানো হয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জর্জিয়ার বিদ্রোহের সময় তিনি মুক্তি পান এবং জর্জিয়ায় ফিরে আসেন।
মদ্যপানের কারণে শমাগীর লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং একজন চিকিৎসক তাকে বলেছিলেন যে তিনি বেশিদিন বাঁচবেন না। শামাগী তার জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং ঈশ্বরকে জানার আকাঙ্ক্ষা অনুভব করতে শুরু করেছিলেন। তিনি কিছু খ্রিস্টান বন্ধুদের তাকে গির্জায় নিয়ে যেতে বলেছিলেন। প্রথমে তারা তাকে বলেছিল যে, গির্জা তার জন্য নয়। এরপর তারা তাকে বলেছিল যে সে গির্জায় আসতে পারে, যদি সে তর্ক না করার প্রতিশ্রুতি করে। তিনি গিয়েছিলেন এবং ২২ বছর বয়সে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল।
শামাগী তার লিভারের রোগ থেকে সুস্থ হয়েছিলেন। তিনি তার রোগের কারণে বিয়ে করবেন বলে আশা করেননি, কিন্তু ঈশ্বর তাকে এক নতুন ভবিষ্যৎ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে রয়েছে। শমাগী একজন পালক এবং পরিচর্যার প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন।
২ নং পাঠের পর্যালোচনামূলক প্রশ্ন
(১) কোন উপায়ে মানুষ ‘সাধারণ প্রকাশ’ লাভ করে?
(২) শাস্ত্র ছাড়াই সব মানুষ ঈশ্বর সম্বন্ধে কী জানে?
(৩) ‘বিশেষ প্রকাশ’ কী?
(৪) মূর্তিপূজা কী?
(৫) দু’টি উপায়ে যা পাপ-প্রবৃত্তি মানুষের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে।
২ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
এমন একটি সমাজের অবস্থা বর্ণনা করে একটি পৃষ্ঠা লিখুন যারা সুসমাচার শোনেনি কিন্তু ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের কি জ্ঞান ছিল? তাদের চিন্তা ভাবনার কি ঘটেছিল? তাদের পাপাচার বর্ণনা করুন। ব্যাখ্যা করুন কেন সকলেই একই ধরনের মন্দতা দেখায় না।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.