যে তিনটি সংস্কৃতি প্রথম শতাব্দীতে সুসমাচার পেয়েছিল, তারা বিশ্বকে গড়ে তুলেছিল। ঈশ্বর সুসমাচারকে সবচেয়ে কার্যকারী হওয়ার জন্য বিশ্বকে এমন অবস্থায় প্রস্তুত করেছিলেন।
গ্রীক সংস্কৃতি
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তদকালীন সভ্য দুনিয়া জয় করে তার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রীক সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে এটি অন্যদের চেয়ে উচ্চতর এবং এটি তার সাম্রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করবে। তিনি চেয়েছিলেন যেন সবাই গ্রীক ভাষায় কথা বলে এবং গ্রীক রীতিনীতিগুলি পালন করে। এটি সুসমাচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল, কারণ মিশনারিরা সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে গ্রীক ভাষায় সুসমাচার প্রচার করতে পারত।
গ্রীক চিন্তাধারার কারণে লোকেরা নিজেদেরকে প্রাথমিকভাবে একটি উপজাতি ও পরিবারের সদস্যদের পরিবর্তে ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে দেখার জন্য চালিত হয়েছিল। তাই, তারা ব্যক্তিগত ধর্মীয় পছন্দ বেছে নেবার জন্য আরও উন্মুক্ত হয়ে উঠেছিল। মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে তাদের ধর্ম পরিবর্তন করা সম্ভব।
গ্রীকরা নিজেদের ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্রের নাগরিকের পরিবর্তে নিজেদেরকে বিশ্বের নাগরিক হিসেবে দেখত। তারা বুঝতে পেরেছিল যে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সত্য থাকার পরিবর্তে এমন সত্য রয়েছে যা সমস্ত মানুষের প্রতি প্রযোজ্য। এটি তাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, সত্য হয়তো অন্য কোথাও থেকে তাদের কাছে আসতে পারে এবং তা কেবল তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য থেকে নয়।
গ্রীক দার্শনিকরা জীবন ও মহাবিশ্বের অর্থ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা ককরেছিলেন। তারা বিশ্বাস করত যে প্রত্যেকের জীবন ব্যাখ্যা করার জন্য উত্তর রয়েছে।
গ্রীক দার্শনিকরা যুক্তি ব্যবহার করে দেখান যে প্রাচীন ধর্মগুলি ভুল ছিল। এ ছাড়াও, তারা দেবতাদের কিংবদন্তিতে মানুষকে অপ্রসন্ন করে তুলেছিল। মানবিক দোষত্রুটি সহ, অনৈতিক ও মন্দ কাজের জন্য দোষী দেবতারা ছিল মানবতার অতিরঞ্জন।
গ্রীক দার্শনিকরা জীবন ও বাস্তবতার জন্য নতুন ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেছিলেন। প্রতিটি নতুন দর্শন নিয়ে বিতর্ক হয়, এবং কোন দর্শনই সম্পূর্ণভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে সফল হয়নি। তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি খুঁজে বের করে আলোচনা করেছিল, কিন্তু সেগুলির উত্তর দিতে পারেনি।
মানবতার আধ্যাত্মিক চাহিদা দর্শন মেটাতে পারেনি।
দর্শনবিদ্যা যে প্রশ্নগুলি করেছিল, সেগুলির উত্তর খ্রিষ্টধর্ম দিয়েছিল এবং আধ্যাত্মিক চাহিদাও পূরণ করেছিল।
► গ্রীক সংস্কৃতি কিভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করেছিল এবং সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল?
রোমীয় সংস্কৃতি
গ্রীক সাম্রাজ্য বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হওয়ার পর রোমীয় সাম্রাজ্যের বিকাশ ঘটে। রোমীয়রা অনেক দেশ জয় করেছিল এবং একতাবদ্ধ করেছিল, কিন্তু সাধারণ সংস্কৃতির অধিকাংশই তখনও ছিল গ্রীক।
রোমীয় বিজয়ের ফলে লোকেরা তাদের স্থানীয় দেবদেবীর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল যারা তাদের সাহায্য করতে পারেনি। লোকেরা এক সর্বশক্তিমান, সর্বজনীন ঈশ্বরের কথা শুনতে আরও ইচ্ছুক হয়ে ওঠে।
রোমীয়রা অনেক দেবদেবীতে বিশ্বাস করত এবং গ্রীক পুরাণের মতো কিংবদন্তি ছিল। অনেক শিক্ষিত রোমানরা প্রকৃতপক্ষে দেবদেবীতে বিশ্বাস করত না, কিন্তু তাদের সংস্কৃতির অংশ হিসাবে ধর্ম পালন করত।
রোমীয় আইন ন্যায়বিচারের স্পষ্ট ধারণা নিয়ে এসেছিল। রোমীয় আদালত এক যুক্তিসংগত উপায়ে প্রমাণ বিবেচনা করত। এটি মানুষের অপরাধবোধ ও ধার্মিকগণনার (justification) মতবাদগুলির ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল।
রোমীয় আধিপত্য দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক খন্ডযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল, যাকে প্যাক্স রোমানা (Pax Romana), রোমীয় শান্তি বলা হয়। এটি যাতায়াতকে নিরাপদ করে তুলেছিল এবং মিশনারিরা কোনো সমস্যা ছাড়াই জাতীয় সীমানা অতিক্রম করতে পারত।
রোমীয় সংস্কৃতি কিভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করেছিল এবং সুসমাচার প্রচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল?
ইহুদি সংস্কৃতি
ইহুদিরা সভ্য বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এবং সর্বত্র তারা সমাজগৃহ বা সিনাগগ স্থাপন করেছিল এবং তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিল। প্রেরিতরা লক্ষ্য করেছিলেন যে, মোশিকে প্রত্যেক নগরে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল (প্রেরিত ১৫:২১)। রোমে ইস্রায়েলের ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত ইহূদীদের প্রভাব ছিল।
পৌরাণিক কাহিনীর ভুলপ্রবণ, অনৈতিক দেবতাদের তুলনায় ইহুদীধর্মের একজন সার্বভৌম, পবিত্র ঈশ্বরের ধারণাটি অনেক বেশি সম্মানজনক ছিল। নৈতিক বিশৃঙ্খলার বিশ্বে ইহুদিধর্মের উচ্চ নৈতিকতা আকর্ষণীয় ছিল। খ্রিষ্টধর্ম এই নৈতিকতাগুলি শেয়ার করে নিয়েছিল, তাদের উন্নীত করেছিল, এবং একজন পাপী ব্যক্তিকে রূপান্তরিত করার এবং পবিত্র জীবনযাপনকে সক্ষম করার জন্য অনুগ্রহের সম্ভাবনা প্রচার করেছিল।
ইতিহাসে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এবং মশীহের প্রত্যাশা সম্বন্ধে ইহূদীধর্মের ধারণা ভবিষ্যতের জন্য আশা জাগিয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল ঈশ্বরের হস্তক্ষেপে, মানুষের সমাধানে নয়। খ্রিষ্টধর্ম ঘোষণা করেছিল যে মশীহ এসেছেন এবং একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে।
► ইহূদী সংস্কৃতি কিভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করেছিল এবং সুসমাচার প্রচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল?
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৭ম পর্ব
এই প্যাসেজে, প্রেরিত ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি চিঠিটি লিখছেন। তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান, তারপর স্পেনে মিশনারি কাজ শুরু করার জন্য তাদের সাহায্য পেতে চান। চিঠির এই উদ্দেশ্যটি এর কাঠামোকে পরিচালিত করেছিল, কারণ পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে সুসমাচার কী, কেন প্রত্যেকের এটি প্রয়োজন, কেন বার্তাবাহকরা গুরুত্বপূর্ণ, এবং কেন তিনি যাওয়ার জন্য যোগ্য ছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, বিশ্বব্যাপী মিশন সবসময়ই ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৫:৮-৩৩ পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১৫:৮) যিশু ইহুদি পিতৃপুরুষদের প্রতি দেওয়া মশীহ সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছিলেন এবং ইহুদি জাতি ও ধর্মের মাধ্যমে এসেছিলেন।
(১৫:৯-১২) বেশ কয়েকটা পুরাতন নিয়মের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেরিত দেখান যে, ঈশ্বর সবসময় সুসমাচারকে পরজাতীয়দের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। পৌল যেসমস্ত শাস্ত্রাংশগুলি উদ্ধৃত করেছেন তাতে ভাববাদীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে:
পরজাতীয়রা ঈশ্বরের উপাসক হয়ে উঠবে।
মশীহ পরজাতীয়দের উপর রাজত্ব করবেন।
পরজাতীয়রা মশীহের উপর বিশ্বাস করবে।
(১৫:১৩-১৪) প্রেরিত রোমীয় মন্ডলীর জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন এবং বলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে তারা আত্মিকভাবে শক্তিশালী। পরবর্তী পদগুলিতে তিনি তাদের মিশন কাজের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে আহ্বান করবেন। এমনকি এক আশীর্বাদপ্রাপ্ত ও আত্মিকভাবে শক্তিশালী মন্ডলীও সম্পূর্ণ নয় যদি না সেটি মিশনারি কাজের দর্শন থাকে এবং সেই কাজে জড়িত থাকে।
► যদি কোনো মন্ডলীর দূরবর্তী স্থানে মিশনারি কাজকে সমর্থন করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে কী হবে?
(১৫:১৫-১৬) পরজাতীয়দের কাছে সুসমাচার নিয়ে যাওয়ার জন্য তার বিশেষ আহ্বান সম্পর্কে তিনি তাদের বলেন। এই কাজের জন্য ঈশ্বর তাকে বিশেষ আত্মিক বরদান দিয়েছেন। তার আকাঙ্ক্ষা হল, পরজাতীয় মন্ডলীগুলি যেন পবিত্র, অকৃত্রিম ও ঈশ্বরের প্রীতিজনক হয়।
(১৫:১৭-১৯) ঈশ্বর তার পরিচর্যায় সাফল্য দিয়েছেন। অনেক পরজাতীয় ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্যের বাধ্য হয়েছে। পরিচর্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল হল যে, লোকেরা অনুতপ্ত হয় এবং ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যে জীবনযাপন করে। সাফল্যের অন্য কোন চিহ্নই এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি বলেছেন যে, তার পরিচর্যাও ঈশ্বরের দ্বারা অলৌকিক কাজগুলির দ্বারা চিহ্নিত। তিনি অঞ্চল জুড়ে সুসমাচার ছড়িয়ে দিয়েছেন।
(১৫:২০-২২) তার অভ্যাস ছিল এমন জায়গাগুলিতে প্রচার করা যেখানে আগে সুসমাচার প্রচার করা হয়নি। তিনি পদ্ধতিগতভাবে অঞ্চলগুলি কভার করেছিলেন। সেই অগ্রাধিকারের কারণেই তিনি রোমে যাননি, কারণ ইতিমধ্যেই সেখানে সুসমাচার প্রচারিত হয়েছিল।
(১৫:২৩-২৪) তিনি তার নিকটবর্তী প্রতিটি এলাকায় সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন রোমীয় মন্ডলী তাদের ছাড়িয়ে তাকে যেন স্পেনে মিশনারি যাত্রা করতে সাহায্য করে। এই যাত্রা তাকে রোমে প্রচার ও সহভাগিতা করার সুযোগ দেবে এবং সেইসঙ্গে তাকে এমন এক এলাকায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে যেখানে এখনও পৌঁছানো যায়নি।
► ব্যাখ্যা করুন যে কীভাবে প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসী এবং প্রতিটি মন্ডলীই সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঋণ রয়েছে। (যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ১ম পাঠের ১:১৫ পদের নোটটি দেখুন।)
(১৫:২৫-২৯) প্রথমে, তিনি পরজাতীয় মন্ডলী থেকে ইহুদি মন্ডলীতে আর্থিক দান বহন করার জন্য যিরূশালেমে যাত্রা করবেন। এই উপহারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উপহার পাঠিয়ে পরজাতীয়রা ইহুদিদের কাছে তাদের ঋণ স্বীকার করছিল, কারণ ইহুদি খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা তাদের কাছে সুসমাচার নিয়ে এসেছিল। উপহার গ্রহণ করার মাধ্যমে ইহুদিরা স্বীকার করবে যে পরজাতীয়রাও একই মন্ডলীভুক্ত। পৃথক খ্রিষ্টীয় ধর্ম থাকবে না। এই কারণেই পৌল তাদের প্রার্থনা করতে বলেছিলেন যেন ইহুদি বিশ্বাসীরা সেই উপহার গ্রহণ করে।
(১৫:৩০-৩৩) তিনি তাদের প্রার্থনা করতে বলেছিলেন, যেন তিনি যিরূশালেমের অবিশ্বাসী ইহুদিদের কাছ থেকে বিপদমুক্ত হন, যাতে তিনি রোমে আসতে সক্ষম হন। এই প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল বটে, তবে তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে নয়। ইহুদি শাসকদের দ্বারা যিরূশালেমে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পৌল বন্দী হিসেবে রোমে আসেন, রোমীয় রাজ্যপাল তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিচারের জন্য রোমে পাঠিয়েছিলেন। (কাহিনীটি প্রেরিত ২১:২৬ পদে শুরু হয়ে প্রেরিত পুস্তকের শেষ অংশে রয়েছে।) আমরা জানি না যে, পৌল কখনো স্পেনে গিয়েছিলেন কি না।
► পৌলের জীবনের ঘটনাবলীর মধ্যে আমরা কিভাবে ঈশ্বরের দূরদর্শিতা দেখতে পাই, এমনকি যদি তার পরিকল্পনা অনুযায়ী স্পেন সফর নাও ঘটে থাকে?
প্যাসেজের অধ্যয়ন - রোমীয় ৮ম পর্ব
১৬ অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ
পৌলের অন্য যেকোনো পত্রের তুলনায় এই পত্রে নাম অনুসারে আরও বেশি শুভেচ্ছা রয়েছে। হতে পারে যে, যেহেতু তিনি রোমে যাননি, তাই তিনি মন্ডলীর সাথে তার সম্পর্ক শুরু করতে সাহায্য করার জন্য সেখানে থাকা তার সমস্ত পরিচিতদের উল্লেখ করেছিলেন।
► একজন শিক্ষার্থীকে গ্রুপের জন্য রোমীয় ১৬ অধ্যায় পড়তে হবে।
পদের টীকাভাষ্য
(১৬:১-২) ফৈবী সম্ভবত যারা এই চিঠিটি বহন করেছিল তাদের সঙ্গে ছিলেন। পৌল তাদেরকে তার পরিচর্যায় সাহায্য করতে বলেছিলেন কারণ তিনি অনেক মানুষের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছিলেন। সাহায্যের জন্য সবচেয়ে ভাল ব্যক্তি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ইতিমধ্যেই অন্যদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
(১৬:৩-৪) আক্বিলা এবং প্রিষ্কিল্লা পৌলের জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। (তাদের সম্পর্কে আরও ইতিহাস জানার জন্য প্রেরিত ১৮:১-৩, ২৪-২৬ পদ দেখুন।)
(১৬:৭, ১১, ২১) পৌলের আত্মীয়স্বজনের নাম এই পদগুলিতে রয়েছে।
(১৬:১৩) উল্লেখিত মহিলাটি সম্ভবত আক্ষরিকভাবে পৌলের মা নন। রূফ হয়তো কুরীণিয় শিমোনের পুত্র যিনি যিশুর ক্রুশ বহন করেছিলেন, কারণ মার্ক ১৫:২১ পদে তার নাম এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেন তিনি পরবর্তী সময়ে মন্ডলীতে পরিচিত ছিলেন।
(১৬:১৭-১৮) এমন অনেক মানুষ আছে যারা তাদের নিজস্ব অনুগামীদল গড়ে তোলার জন্য মন্ডলীর মৌলিক সত্যগুলি থেকে অন্যদের সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে। তারা খ্রিষ্টের সেবা করে না, বরং তাদের নিজেদের অভিলাষ পূরণ করে। তাদের বার্তা পরিত্রাণের সঠিক মতবাদের পরিপন্থী। (৩ যোহন ১:৯-১০ এবং ২ পিতর ২:১-৩ পদ দেখুন।)
(১৬:১৯) সত্য সম্বন্ধে আমাদের যতটা সম্ভব শিখতে হবে। মন্দ সম্বন্ধে আমাদের বেশি জানার প্রয়োজন নেই। যে-লোকেরা মন্দ বিষয়গুলি নিয়ে অধ্যয়ন করে, তারা এক অস্বাস্থ্যকর আকর্ষণ এবং তাদের চিন্তাভাবনাকে বিকৃত করার বিপদের সম্মুখীন হয়।
(১৬:২০) শেষ পর্যন্ত খ্রিষ্টের কাজের মাধ্যমে মন্ডলী শয়তানকে পরাজিত করবে (আদিপুস্তক ৩:১৫)।
(১৬:২২) তর্তিয় (Tertius) লেখক ছিলেন না, কিন্তু পৌল তাকে যা যা বলেছিলেন তেমনই তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন।
(১৬:২৫-২৭) এই পদগুলি পত্রের প্রধান বিষয়গুলি তুলে ধরে। “আমার সুসমাচার” এবং “যীশু খ্রীষ্ট-বিষয়ক ঘোষণা” বাক্যাংশগুলি লক্ষ্য করুন । তিনি আবারও বলেন যে, সুসমাচার হল এক নতুন প্রত্যাদেশ বা প্রকাশ (revelation) এবং ভাববাদীদের পুরাতন বার্তা উভয়ই। তিনি মিশনের চূড়ান্ত রেফারেন্স দিয়ে শেষ করেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে বার্তাটি সমস্ত জাতির জন্য। মিশন কাজের লক্ষ্য সেই একই রকম রয়েছে যা যিশু মহান আজ্ঞায় বলেছিলেন (মথি ২৮:১৯-২০): মানুষকে খ্রিষ্টের আনুগত্যে নিয়ে আসা। চিঠিটি শেষ হয়েছে যেভাবে এটি শুরু হয়েছিল, যেমন ১:৫ পদ বলে: পরিচর্যার উদ্দেশ্য হল সমস্ত জাতির মানুষকে ঈশ্বরের আনুগত্যে নিয়ে আসা।
রোমীয় পুস্তক থেকে একটি সুসমাচার উপস্থাপনা
কেবলমাত্র রোমীয় পুস্তকের পদগুলি ব্যবহার করেই সুসমাচার ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সুসমাচারের এই উপস্থাপনাটিকে কখনও কখনও “রোমীয় পথ” (Roman Road) বলা হয়।
প্রতিটি রেফারেন্সের জন্য প্রথম বাক্যটি মনে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রোমীয় ৩:২৩
“কারণ সকলেই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হয়েছে।”
প্রত্যেক ব্যক্তি এমন কাজ করে পাপ করেছে যা তারা জানে যে তা ভুল। এই পদটি মানুষের আসল সমস্যাটিকে তুলে ধরে। তারা ঈশ্বরের বাধ্য হয়নি; তারা জেনেশুনে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে। কোনো মানুষই এর ব্যতিক্রম নয়। সর্বদা যা সঠিক তা করার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিই ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এই পয়েন্টটিতে আরো জোর দেওয়ার জন্য আপনি রোমীয় ৩:১০ (“ধার্মিক কেউই নেই, একজনও নেই”) এবং রোমীয় ৫:১২ (“সব মানুষের কাছে মৃত্যু উপস্থিত হল কারণ সকলেই পাপ করেছিল”) ব্যবহার করতে পারেন।
রোমীয় ৬:২৩
“পাপের বেতন মৃত্যু, কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু, খ্রীষ্ট যীশুতে অনন্ত জীবন।”
পাপীরা অনন্ত মৃত্যুর যোগ্য, কিন্তু ঈশ্বর যিশুর মাধ্যমে অনন্ত জীবনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
এই পদটি দেখায় যে কেন পাপ এতটা গুরুতর। পাপের কারণে, মৃত্যুর শাস্তি প্রত্যেক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। এটি হল অনন্ত মৃত্যু, ঈশ্বরের বিচার, যা প্রত্যেক পাপীর প্রাপ্য।
আমরা যে মৃত্যু অর্জন করেছি তার বিপরীতে, ঈশ্বরের জীবনের উপহার দিয়েছেন, যা আমরা অর্জন করিনি।
রোমীয় ৫:৮
“কিন্তু ঈশ্বর এভাবে তাঁর প্রেম আমাদের প্রতি প্রদর্শন করেছেন: আমরা যখন পাপী ছিলাম তখন খ্রীষ্ট আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করলেন।”
আমাদের জন্য ঈশ্বরের উপহার খ্রিষ্টের মৃত্যু দ্বারা প্রদান করা হয়েছে।
আমরা যে বিচারের যোগ্য তা আমরা ভোগ করি, এমন ইচ্ছা ঈশ্বরের ছিল না। যেহেতু তিনি আমাদের ভালোবাসেন, সেহেতু আমরা যাতে করুণা পেতে পারি তার জন্য ঈশ্বর আমাদের জন্য একটি উপায় জুগিয়েছিলেন। যিশু এক বলিদান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, যাতে আমরা ক্ষমা পেতে পারি। আমরা পরিত্রাণ লাভের জন্য কিছু করব সেই অপেক্ষায় ঈশ্বর থাকেননি – আমরা পাপী থাকা অবস্থাতেই এটি আমাদের কাছে এসেছে। পরিত্রাণ উত্তম ব্যক্তিদের জন্য নয়, বরং পাপীদের জন্য দেওয়া হয়েছে।
পাপীর জন্য পরিত্রাণের একমাত্র শর্ত হল যে সে নিজেকে পাপী বলে স্বীকার করে এবং ঈশ্বরের ক্ষমার প্রতিজ্ঞাকে বিশ্বাস করে।
অনুতাপের বিষয়টি কি? যদি একজন ব্যক্তি স্বীকার করে যে সে অন্যায় করেছে এবং ক্ষমা পেতে চায়, তাহলে সে বোঝায় যে সে তার পাপগুলি ত্যাগ করতে ইচ্ছুক।
রোমীয় ১০:১৩
“যে কেউ প্রভুর নামে ডাকবে, সেই পরিত্রাণ পাবে।”
পরিত্রাণের প্রস্তাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রদত্ত। কেউ এর বাইরে নয়। কোনো অন্য যোগ্যতার অস্তিস্ত্ব নেই।
রোমীয় ৫:১
“বিশ্বাসের মাধ্যমে যেহেতু আমরা নির্দোষ গণ্য হয়েছি, … ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের শান্তি স্থাপিত হয়েছে।”
ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করা আমাদের ঈশ্বরের বন্ধু করে তোলে, আর দোষী বলে গণ্য হই না।
ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তির অর্থ হল আমরা আর তাঁর শত্রু নই; আমরা পুনর্মিলিত হয়েছি। যে পাপ ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের পৃথক করেছিল তা পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধার্মিকগণিত হওয়ার অর্থ হল আর দোষী নয় বলে গণ্য হওয়া। বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকগণিত হওয়ার অর্থ হল আমাদের ক্ষমা করার জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করা জরুরি।
রোমীয় ৮:১
“অতএব, এখন যারা খ্রীষ্ট যীশুতে আছে, তাদের প্রতি কোনও শাস্তি নেই”
যেহেতু আমরা খ্রিষ্টের সঙ্গে সংযুক্ত, তাই আমরা যে পাপ করেছি তার জন্য আমরা আর দন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত নই।
খ্রিষ্ট এক পাপহীন জীবন যাপন করেছিলেন এবং ক্রুশে তাঁর মৃত্যুর দ্বারা ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছিলেন। বিশ্বাসের দ্বারা আমরা তাঁর সঙ্গে চিহ্নিত হই, এবং পিতা ঈশ্বরের দ্বারা গৃহীত হই। ঈশ্বর আমাদের এমনভাবে আচরণ করেন যেন আমরা কখনও পাপ করিনি।
উপসংহার
ব্যাখ্যা করুন যে একজন অবিশ্বাসী ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, নিজেকে একজন পাপী বলে স্বীকার করে, এবং তার জন্য যিশুর বলিদানের ভিত্তিতে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারে।
শেখার এবং অনুশীলনের জন্য
এই পদ্ধতিটি শেখার এবং তা অনুশীলন করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল, রোমীয় পুস্তকের যে পদগুলি ব্যবহার করবেন সেগুলি আপনার বাইবেলে গোল দাগ দেওয়া বা আন্ডারলাইন করা। এরপর, ব্যবহারের ক্রম অনুযায়ী প্রতিটির পাশে একটি নম্বর লিখুন। উদাহরণস্বরূপ, যে পদটি প্রথমে ব্যবহার করা হবে তার পাশে ১ নম্বর লিখুন।
সুসমাচার উপস্থাপন করা অনুশীলন করুন। প্রতিটি পদ পড়ুন এবং সেটির সঙ্গে যে ব্যাখ্যা রয়েছে তা বলুন। প্রতিটি পদের (উপরে দেওয়া) পরে প্রথম বাক্যেটিতে যে ধারণাগুলি রয়েছে তা অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন। তারপরে, যদি সহায়ক বলে হয়, যা কিছু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন তার জন্য অন্যান্য বাক্য ব্যবহার করুন। এই পাঠে দেওয়া শব্দগুলি হুবহু ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
যতক্ষণ না আপনি কেবল বাইবেলের সাহায্য ছাড়া অন্য কিছু না দেখে এটি করতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অভ্যাস করুন।
১২ নং পাঠের পর্যালোচনামূলক প্রশ্ন
(১) প্রথম শতাব্দীতে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনটি মহান সংস্কৃতি কিভাবে বিশ্বকে প্রস্তুত করেছিল, তা ব্যাখ্যা করুন।
(২) কীভাবে প্রেরিত দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর সবসময় পরজাতীয়দের কাছে যাওয়ার জন্য সুসমাচারের পরিকল্পনা করেছিলেন?
(৩) যিরূশালেমের মন্ডলীর জন্য উপহারটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
(৪) কীভাবে পৌল রোমে এসেছিলেন?
Print Course
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.