(২) ঈশ্বর যে পদ্ধতিতে ত্রিত্বের মধ্যে, অন্যান্য আত্মিক শক্তির সাথে এবং মানুষের সাথে সংযোগ করেছিলেন তা বুঝবে।
(৩) যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন যেসকল উপায়ে সংযোগ করতেন তা উপলব্ধি করবে।
(৪) মানবজাতির মধ্যে ঈশ্বরের স্বরূপের অংশ হিসেবে সংযোগ করার ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেবে।
(৫) ভালো বা মন্দ সাধনের জন্য মানুষের মুখের [জিহ্বা] শক্তিকে সম্মান করবে।
ভূমিকা
সংযোগ বা যোগাযোগ হল এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান। সংযোগের মধ্যে প্রচার, শিক্ষাদান, পারস্পরিক কথোপকথন, লেখালেখি, নাটক, এবং পরস্পরের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের অন্যান্য বিবিধ উপায়সমূহ অন্তর্ভুক্ত।
প্রচারক এবং শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন মিস্ত্রি সঠিকভাবে কথা বলতে না জানে, আমরা সেক্ষেত্রে কোনোরকম চিন্তিত হই না। যদি সে একটা গাড়িকে সাড়াতে পারে, আমরা তাতেই খুশি হই। একজন ভালো রাঁধুনিকে একজন ভালো কথোপকথনকারী না হলেও চলবে। তাকে শুধু জানতে হবে যে কীভাবে ভালো খাবার বানাতে হয়। একজন কৃষক যদি সে জানে যে কীভাবে বীজ বপণ করতে হয়, চাষ করতে হয় এবং ফসল কাটতে হয়, তাহলে তার ভালোভাবে কথা বলতে জানা প্রয়োজনীয় নয়।
যাইহোক, একজন প্রচারক বা শিক্ষককে অবশ্যই সংযোগে সক্ষম হতে হবে। প্রচার করা বা শিক্ষাদানের আহ্বানই হল একটি সংযোগের আহ্বান। এই কারণেই, প্রচারকদের এবং শিক্ষকদের অন্য যেকোনো ব্যক্তির তুলনায় সংযোগ স্থাপন এবং লোকেদের মধ্যে কথা বলার বিষয়ে অনেক বেশি জানা উচিত।
খ্রিষ্টীয় লিডারদের জন্য সংযোগের তিনটি প্রধান প্রকারভেদ হল - প্রচার করা, শিক্ষাদান করা, এবং লেখা। এই কোর্সটি এই তিনটি প্রকারের উপর দৃষ্টিপাত করবে।
সংযোগ স্থাপনে সক্ষম মানেই এই নয় যে প্রত্যেক শিক্ষক বা প্রচারকের মধ্যে একজন প্রেসিডেন্ট বা বিখ্যাত বক্তার মতো সক্ষমতা থাকবে। সংযোগের বিবিধ ধরণ রয়েছে। কিছু কিছু ব্যক্তি খুব ভালো সংযোগকারী হয়ে ওঠে, যদিও তারা কোনো বিখ্যাত পাব্লিক স্পিকার নয়। এই কোর্সটির উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের রাজ্যে কাজ করার জন্য উত্তম সংযোগকারীদের প্রস্তুত করা।
এই প্রথম পাঠটিতে আমরা দেখব যে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য সংযোগ কত গুরুত্বপূর্ণ।
ঈশ্বর একজন সংযোগকারী
ঈশ্বর হলেন একজন ব্যক্তিগত ঈশ্বর যিনি অন্যদের সাথে সংযোগ করেন। অনেক ধর্মের ব্যক্তিসত্তাহীন দেবতাদের থেকে পৃথক, ঈশ্বর একজন সংযোগকারী। বাইবেল ত্রিত্বের মধ্যে ঈশ্বরের সংযোগ, স্বর্গদূত এবং এমনকি শয়তানের সাথে সংযোগ এবং মানুষের সাথে সংযোগ দেখায়।
পিতা ত্রিত্বের অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযোগ করেন
বাইবেল প্রথমদিকে আমরা পড়ি,
আর ঈশ্বর বললেন, “আলো হোক,” এবং আলো হল। তখন ঈশ্বর বললেন, “এসো, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে ও আমাদের সাদৃশ্যে মানুষ তৈরি করি, যেন তারা সমুদ্রের মাছেদের উপরে এবং আকাশের পাখিদের উপরে, গৃহপালিত পশুদের ও সব বন্যপশুর উপরে, এবং জমির সব সরীসৃপ প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ব করে।” (আদিপুস্তক ১:৩, ২৬)।
ঈশ্বর কার সাথে কথা বলছিলেন? ঈশ্বর ঈশ্বরের সাথে কথা বলছিলেন। ত্রিত্বের এক সত্তা ত্রিত্বের আরেক সত্তার সাথে কথা বলেছিলেন; “এসো, আমরা...”
নোহের সময়কালে, ঈশ্বর ত্রিত্বের মধ্যে সংযোগ করেছিলেন।
পৃথিবীতে মানবজাতিকে তৈরি করেছেন বলে সদাপ্রভু মর্মাহত হলেন, এবং তাঁর অন্তর গভীর মর্মবেদনায় ভরে উঠল। তাই সদাপ্রভু বললেন, “যে মানবজাতিকে আমি সৃষ্টি করেছি, তাদের—এবং তাদের সাথে সাথে পশুদের, পাখিদের ও সরীসৃপ প্রাণীদেরও—আমি এই পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলব, কারণ তাদের তৈরি করেছি বলে আমার অনুতাপ হচ্ছে।” (আদিপুস্তক ৬:৬-৭)।
আমরা জানি না ত্রিত্বের ব্যক্তিরা কীভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, তবে যুক্তিবাদী বা জ্ঞানী সত্তা হিসাবে তাঁরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।
ঈশ্বর আত্মিক সত্তাদের সঙ্গে সংযোগ করেন
ইয়োবের পুস্তক ঈশ্বর এবং শয়তানের মধ্যে একটি কথোপকথন সম্পর্কে কথা বলে।
একদিন স্বর্গদূতেরা সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের উপস্থিত করার জন্য এলেন, এবং শয়তানও তাদের সঙ্গে এল। সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে এলে?” শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল, “পৃথিবীর সর্বত্র এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করে এলাম।” (ইয়োব ১:৬-৭)।
আমরা এই কথোপকথন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না, কিন্তু আমরা জানি যে সদাপ্রভু শয়তানের সাথে কথা বলেছিলেন, যে এক আত্মিক সত্তা।
যখন ভুলভাবে জনগণনা করার জন্য দায়ূদের বিচার করা হয়েছিল (যাত্রাপুস্তক ৩০:১২), তখন ঈশ্বর এক স্বর্গদূতের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন। সেই স্বর্গদূত ভূমির মাধ্যমে বিচার এনেছিলেন। যখন স্বর্গদূত সে নির্দিষ্ট ভূমিতে এসেছিলেন, সদাপ্রভু সেই স্বর্গদূতকে তাঁর তরবারি সরিয়ে রাখার আদেশ দিয়েছিলেন (২ শমূয়েল ২৪:১৬, ১ বংশাবলী ২১:২৭)। ঈশ্বর আত্মিক সত্তাদের সঙ্গে সংযোগ করেন (সখরিয় ১:১৩)।
ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে সংযোগ করেন
অতএব ঈশ্বর তাঁর নিজস্ব প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করলেন, ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তিনি তাকে সৃষ্টি করলেন; পুরুষ ও স্ত্রী করে তিনি তাদের সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা ফলবান হও ও সংখ্যায় বৃদ্ধিলাভ করো; পৃথিবী ভরিয়ে তোলো ও এটি বশে রেখো। সমুদ্রের মাছগুলির উপরে ও আকাশের পাখিদের উপরে এবং প্রত্যেকটি সরীসৃপ প্রাণীর উপরে তোমরা কর্তৃত্ব কোরো।” পরে ঈশ্বর বললেন, “প্রত্যেকটি সবীজ লতাগুল্ম, যা সমগ্র পৃথিবীর বুকে উৎপন্ন হয় ও বীজ সমেত ফল উৎপাদনকারী প্রত্যেকটি গাছপালা আমি তোমাদের দিলাম। সেগুলি তোমাদের খাদ্যদ্রব্য হবে। আর পৃথিবীর সব পশুর ও আকাশের সব পাখির এবং সব সরীসৃপ প্রাণীর কাছে—যে সবকিছুর মধ্যে জীবন আছে—খাদ্যদ্রব্যরূপে আমি প্রত্যেকটি সবুজ চারাগাছ দিলাম।” আর তা সেইমতোই হল। (আদিপুস্তক ১:২৭-৩০)।
ঈশ্বর যখন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের নিজের প্রতিমূর্তিতে তৈরি করেছেন। সেই প্রতিমূর্তির অংশ ছিল যোগাযোগ করার ক্ষমতা। ঈশ্বর আদম এবং হবার সাথে কথা বলেছিলেন। এই অংশে, তিনি তাদের দুটি আদেশ দিয়েছেন। মানুষ সংযোগের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শিখেছিল।
সমগ্র বাইবেল জুড়ে আমরা দেখতে পাই যে ঈশ্বর মানুষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি আদম এবং হবার সাথে পড়ন্ত বেলায় হাঁটা এবং কথা বলার মাধ্যমে সংযোগ করেছিলেন (আদিপুস্তক ৩:৮)।
তিনি এক ব্যক্তির রূপ ধারণ করে মাঝ-দুপুরে অব্রাহামের সাথে কথা বলেছিলেন এবং দেখা করেছিলেন (আদিপুস্তক ১৮:১-৩)।
তিনি একটি স্বপ্নের মাধ্যমে যোষেফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন (আদিপুস্তক ৩৭:৫)।
তিনি একটি জ্বলন্ত ঝোপের মাধ্যমে মোশির সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন (যাত্রাপুস্তক ৩:২-৪)।
তিনি শমূয়েলের সাথে একটি দর্শনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলেন (১ শমূয়েল ৩:৪-১৫)।
তিনি একজন ভাববাণীর মাধ্যমে দায়ূদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন (২ শমূয়েল ১২:১)।
তিনি স্বপ্নের মাধ্যমে যোষেফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন (মথি ১:২০, মথি ২:১৩, ১৯, ২২)।
তিনি একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে মেরীর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন (লূক ১:২৬-২৮)।
তিনি স্বর্গ থেকে আগত এক কন্ঠস্বরের মাধ্যে যিশুর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন (মথি ৩:১৭)।
তিনি একটি বোধের মাধ্যমে পিতরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন (প্রেরিত ১০:১০-১৬)।
তিনি বিভিন্ন দর্শনের মাধ্যমে পৌলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন (২ করিন্থীয় ১২:১-৭)।
তিনি আজকে আমাদের সাথে তাঁর আত্মার মাধ্যমে সংযোগ করেন (রোমীয় ৮:১৬)।
যিশু একজন সংযোগকারী
যিশু সংযোগ স্থাপনে অধিক সময় কাটিয়েছেন
সুসমাচারের প্রায় অর্ধেক কথাই হল যিশুর কথা। ৫০০ বারেরও বেশি, সুসমাচারগুলিতে দেখা গেছে যে যিশু কথা বলছেন, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন এবং লোকেদের উত্তর দিচ্ছেন। অন্য সময়, আমরা তাঁকে অন্য লোকেদের কথা শুনতে দেখি। যিশুর কিছু সংযোগের উদাহরণ:
তিনি বন্ধুদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি তার পরিবারের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি তার শিষ্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি কূপের কাছে একজন মহিলার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি ক্রুশে চোরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি একটি ধর্মধামে লোকেদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি ব্যভিচারে ধরা পড়া একজন মহিলার সাথে কথা বলেছিলেন।
তিনি অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি পীলাত, হেরোদ এবং তার অন্যান্য অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলেছিলেন।
তিনি কোনো কোনো সময়ে বিশাল জনতার সাথে, একবারে প্রায় ৫০০০ লোকের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
তিনি ফরীশী, সদ্দুকী এবং অন্যান্য দলের সাথে কথা বলেছিলেন।
যিশুর সংযোগ স্থাপনের কয়েকটি উপায় লক্ষ্য করুন:
তিনি গান গেয়েছেন।
তিনি শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি প্রশংসা করেছেন।
তিনি ধমক দিয়েছেন।
তিনি প্রচার করেছেন।
তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি গল্প বলেছেন।
তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন।
তিনি উপদেশ দিয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন করেছেন।
তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তিনি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
তিনি উদ্দেশ্যমূলক শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি পুরাতন নিয়ম পাঠ করেছেন।
তিনি জনসমক্ষে ও ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনা করেছেন।
তিনি শিষ্যদের অনুশীলন মিশনে পাঠিয়েছেন।
কথ্য সংযোগের পাশাপাশি, যিশু বেশ কিছু নাটকীয় সংযোগ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। যিশুর বহু কাজই সংযোগের উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছিল। একবার তিনি নিচু হয়ে মাটিতে লিখেছিলেন (যোহন ৮:৬)। তিনি কী লিখেছিলেন তা আমরা জানি না, তবে লেখার কাজটি কিছুর সংযোগ স্থাপন করেছিল।
যখন যিশু মন্দির থেকে মুদ্রা বিনিময়কারী এবং ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তখন তাদের কাজের প্রতি তাঁর অসন্তোষ প্রকাশিত হচ্ছিল (মথি ২১:১২-১৩)। আরেকবার, যিশু একটি ডুমুর গাছকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। ডুমুর গাছটিকে দেওয়া অভিশাপ ডুমুর গাছটির প্রতি কোনো বিচার ছিল না, কিন্তু তাঁর শিষ্যদের কাছে একটি বার্তা তুলে ধরার একটি উপায় ছিল (মথি ২১:১৮-২২)।
যিশুর প্রতিটি আশ্চর্যকাজই কোনো না কোনো বিষয়ের শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ছিল। সেগুলিকে যিশুর বার্তা প্রমাণীকরণের জন্য আংশিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একজন সাধারণ মানুষ সেই কাজগুলি করতে পারে না যা যিশু করেছিলেন৷ মূল বিষয় হল, তাঁর এইগুলো করতে পারা প্রকাশ করে যে তিনি একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন না।
যিশু, যিনি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর ছিলেন, তাঁর পরিচর্যা কাজে সংযোগের ভূমিকা মূলত সংযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে। সংযোগ বা যোগাযোগ হল এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে ঈশ্বর যা পরিকল্পনা করেছেন এবং যা করার জন্য আমাদের আহ্বান করেছেন তা আমরা অর্জন করি।
ঈশ্বর মানুষকে সংযোগের ক্ষমতা দিয়েছেন
সংযোগ হল মানবজাতির মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির একটি অংশ
যখন ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “এসো, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে ও আমাদের সাদৃশ্যে মানুষ তৈরি করি” (আদিপুস্তক ১:২৬)। আমরা মানবজাতির মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির সমস্ত দিক বুঝতে পারি না, তবে এই প্রতিমূর্তির অংশটি সংযোগ করার ক্ষমতা বলে মনে হয়।
জড় পদার্থের সংযোগ করার কোনো ক্ষমতা নেই। বয়ে যাওয়া হাওয়া বা বহমান নদী শব্দ সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু সেই শব্দগুলি কোনো সংযোগ স্থাপন করে না। সংযোগের জন্য বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন, এবং জড় পদার্থের কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই।
প্রাণীদের মধ্যে সংযোগের সীমিত ক্ষমতায় রয়েছে। তারা পরস্পরকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। তারা বোঝাতে পারে যে খাবার উপলব্ধ রয়েছে। তবে, তারা মানুষের মতো বিশদ সংযোগে পারদর্শী নয়।
সংযোগ হল আমাদের মানবতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দৈনন্দির কাজের বেশিরভাগই আমরা সংযোগের মাধ্যমে করি। আমরা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সংযোগের মাধ্যে জ্ঞান সঞ্চার করে থাকি। আমরা সংযোগের মাধ্যমে নিজেদের বিনোদন করে থাকি।
আমরা সংযোগের মাধ্যমে অন্যদের সংশোধন করি। নাথান দায়ূদকে একটি গল্পের মাধ্যে সংশোধন করেছিলেন। পৌল গালাতীয়দের একটি চিঠির মাধ্যমে সংশোধন করেছিলেন। আমরা সংযোগের মাধ্যমে অন্যদের প্রশংসা করে থাকি। পৌলের চিঠিগুলি সাধারণত প্রশংসা দিয়েই শুরু হত। মানবতায় সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ।
ঈশ্বর সংযোগের অবমাননা করতে বারণ করেছেন
মানবতার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির অন্যান্য দিকগুলির মতো, সংযোগ বা যোগাযোগ করার ক্ষমতারও অপব্যবহার করা যেতে পারে। শয়তান সৃষ্টি করতে পারে না; সে কেবল ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছেন তা বিকৃত করতে পারে। শয়তান আমাদের সংযোগ করার ক্ষমতাকে বিকৃত করার চেষ্টা করে। মিথ্যা বলা, পরচর্চা করা এবং অপবাদ দেওয়া হল সংযোগের বিকৃতি।
ঈশ্বর আমাদের যা যা নিষেধ করেছেন:
(১) মিথ্যা বলা।
“অতএব, তোমাদের প্রত্যেকে মিথ্যাচার ত্যাগ করে প্রতিবেশীর সঙ্গে সত্য কথা বলো, কারণ আমরা সকলে একই দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ” (ইফিষীয় ৪:২৫)।
“পরস্পরের কাছে মিথ্যা কথা বোলো না, কারণ তোমরা তোমাদের পুরোনো সত্তাকে তার কার্যকলাপসহ পরিত্যাগ করে নতুন সত্তাকে পরিধান করেছ” (কলসীয় ৩:৯)।
“তোমার জিভ মন্দ থেকে সংযত রাখো এবং মিথ্যা বাক্য থেকে মুখ সাবধানে রাখো” (গীত ৩৪:১৩)।
“অতএব, তোমরা সমস্ত বিদ্বেষ ও সমস্ত ছলনা, ভণ্ডামি, ঈর্ষা ও সমস্ত রকম কুৎসা-রটানো ত্যাগ করো” (১ পিতর ২:১)।
“ভাইবোনেরা, তোমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে কুৎসা-রটনা থেকে দূরে থাকো। যে তার ভাইয়ের (বা বোনের) বিরুদ্ধে কথা বলে, কিংবা তার বিচার করে, সে বিধানের বিরুদ্ধে কথা বলে ও তা বিচার করে” (যাকোব ৪:১১)।
(৩) ঈশ্বরনিন্দা করা।
“ঈশ্বরনিন্দা কোরো না বা তোমাদের লোকজনের শাসককে অভিশাপ দিয়ো না” (যাত্রাপুস্তক ২২:২৮)।
“আর তাই আমি তোমাদের বলছি, মানুষের সব পাপ ও ঈশ্বরনিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে নিন্দা ক্ষমা করা হবে না” (মথি ১২:৩১)।
(৪) অভিশাপ দেওয়া বা অবমাননা করা।
“যারা তোমাদের নির্যাতন করে, তাদের আশীর্বাদ করো; আশীর্বাদ করো, অভিশাপ দিয়ো না” (রোমীয় ১২:১৪)।
“তোমরা শুনেছ, পূর্বেকার মানুষদের বলা হয়েছিল, ‘তোমরা নরহত্যা কোরো না, আর যে নরহত্যা করবে, সে বিচারের দায়ে পড়বে।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে তার ভাইয়ের উপরে ক্রোধ করে, সে বিচারের দায়ে পড়বে। এছাড়াও, কেউ যদি তার ভাইকে বলে, ‘ওরে অপদার্থ,’ তাকে মহাসভায় জবাবদিহি করতে হবে। আবার, কেউ যদি বলে, ‘তুই মূর্খ,’ সে নরকের আগুনের দায়ে পড়বে” (মথি ৫:২১-২২)।
সংযোগের জন্য বাইবেলভিত্তিক নীতিসমূহ
বাইবেল আমাদেরকে শব্দ ব্যবহার করে ভালো কাজ করার জন্য এবং ক্ষতি এড়িয়ে চলার জন্য কিছু নীতি দিয়েছে।
(১) অতিরিক্ত কথা বলবেন না।
প্রচুর কথা বলে পাপের অবসান ঘটানো যায় না, কিন্তু বিচক্ষণ লোকজন তাদের জিভকে সংযত রাখে (হিতোপদেশ ১০:১৯)।
মূর্খরাও যদি নীরবতা বজায় রাখে তবে তাদের জ্ঞানবান বলে মনে করা হয়, ও যদি তারা তাদের জিভ নিয়ন্ত্রণে রাখে তবে তাদের বিচক্ষণ বলে মনে করা হয় (হিতোপদেশ ১৭:২৮)।
বেশি কথা বলবেন না। একজন অতিরিক্ত বক্তা তার নিজের কথা বা অন্যের কথাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। সে এমন কিছু বলে যা সে আসলে বলতে চায় না এবং সে ধরে নেয় যে অন্য লোকেরাও একই কাজ করে। সে জ্ঞান ছাড়াই মতামত দেয়। আপনি জানেন না এমন কিছু সম্পর্কে আপনাকে মতামত দিতে হবে না; প্রতিটি মতামতের মূল্য সমান নয়।
(২) ভাবনা-চিন্তা না করে কথা বলবেন না।
আমার প্রিয় ভাইবোনেরা, তোমরা এ বিষয়ে মনোনিবেশ করো: প্রত্যেকেই শুনতে আগ্রহী হও ও কথা বলায় ধীর হও এবং ক্রোধে ধীর হও (যাকোব ১:১৯)।
মূর্খেরা তাদের সব ক্রোধ প্রকাশ করে ফেলে, কিন্তু জ্ঞানবানেরা শেষ পর্যন্ত তা প্রশমিত করে (হিতোপদেশ ২৯:১১)।
আপনার আবেগবশতঃ এমন কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি দেবেন না যার জন্য আপনাকে পরে অনুশোচনা করতে হবে।
(৩) প্রথমবারেই কোনো পরিস্থিতির বিচার করবেন না।
শোনার আগেই উত্তর দেওয়া— হল মূর্খতার ও লজ্জার বিষয় (হিতোপদেশ ১৮:১৩)।
যে অন্যদের বিবাদে নাক গলায় সে এমন একজনের মতো যে কান ধরে দলছুট কুকুরকে পাকড়াও করে (হিতোপদেশ ২৬:১৭)।
অনেক দ্বন্দ্বই ভুল বোঝাবুঝির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। সাধারণত মনোযোগ সহকারে শোনা সেগুলির সমাধান করতে পারে। একটি পরিস্থিতি বিচার করার ক্ষেত্রে ধীর হন। সততার জন্য খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি যদি এমন কিছু বলে যা আপনার কাছে ভুল বলে মনে হয়, তাহলে তাকে দ্রুত বিচার করতে উদ্যত হবেন না।
আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না এমন দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলুন। বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট তথ্য নাও থাকতে পারে।
(৪) কৌতুক সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
যে পাগল লোক মৃত্যুজনক জ্বলন্ত তির ছোঁড়ে সে তেমনই, যে তার প্রতিবেশীকে প্রতারণা করে ও বলে, “আমি শুধু একটু মশকরা করছিলাম!” (হিতোপদেশ ২৬:১৮-১৯)।
যেহেতু আমাদের কথার প্রভাব রয়েছে, সেহেতু অনিয়ন্ত্রিত রসিকতা পাগলের হাতে অস্ত্রের মতো। আপনার রসিকতার কারণে লোকেদের ভুল করতে বাধ্য করবেন না। আপনি যদি সিরিয়াস না হন, তাহলে তাদের তা বলবেন না, নাহলে তারা আপনাকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করবে না।
শারীরিক ত্রুটি নিয়ে মজা করবেন না। কারোর ব্যর্থতা নিয়ে রসিকতা করবেন না। এমন কৌতুক বলবেন না যা পাপকে তুচ্ছ দেখায়।
(৫) সংশোধন সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
গুপ্ত ভালোবাসার চেয়ে প্রকাশ্য ভর্ৎসনা ভালো। বন্ধুর আঘাতকে বিশ্বাস করা যায়... (হিতোপদেশ ২৭:৫-৬ক)।
একজন ব্যক্তিকে সংশোধন করার একটি সঠিক সময় এবং সঠিক উপায় রয়েছে। নিশ্চিত করুন যে আপনার সংশোধনের উদ্দেশ্য ধ্বংস করা নয়, বরং নির্মাণ করা। নিশ্চিত করুন যে আপনার সংশোধন ব্যক্তিগত, সর্বজনীন নয়। আপনি যে ব্যক্তিকে সংশোধন করছেন তার বিষয়ে আপনি যত্নশীল এবং আপনি তাদের সাহায্য করতে চান তা প্রকাশ করুন। আপনার সংশোধন গৃহিত হওয়ার আগে একটি সুস্থ সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
(৬) আপনার কথাবার্তাকে বিশুদ্ধ রাখুন।
কোনও রকম অশ্লীলতা, নির্বোধের মতো কথাবার্তা বা স্থূল রসিকতা যেন শোনা না যায়, কারণ এসবই অসংগত; বরং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করো (ইফিষীয় ৫:৪)।
এমন কোনো কেলেঙ্কারি সম্পর্কে বলবেন না যদি না আপনি সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দায়বদ্ধ হন। এমন কনো কৌতুক বলবেন না যা আপনাকে অবশ্যই গোপনে বলতে হবে। অবিশ্বাসীরা তাদের বিস্ময় প্রকাশে জন্য যৌন শব্দ বা ব্যক্তিগত শরীরের অঙ্গগুলির নাম ব্যবহার করে, কিন্তু এটি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জন্য উপযুক্ত নয়। স্ট্রেস বা মানসিকচাপের কারণে ঈশ্বর বা যিশুকে বিস্ময়কর শব্দ হিসেবে উল্লেখ করে আপনি যদি আন্তরিকভাবে সাহায্যের জন্য ঈশ্বরকে আহ্বান না করেন তবে তা অসম্মানজনক।
(৭) আপনার কথা দিয়ে লোকেদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাবেন না।
বিকৃতমনা লোক বিবাদ বাধায়, ও পরনিন্দা পরচর্চা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও বিচ্ছিন্ন করে দেয় (হিতোপদেশ ১৬:২৮)।
অন্যের খরচে নিজেকে সুন্দর দেখানোর চেষ্টা করবেন না। অন্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবেন না। পরচর্চা করে কারো পরিচর্যার কার্যকারিতাকে আঘাত করবেন না।
কথা বলার আগে, কেবল এই প্রশ্নটিই করবেন না “এটা কি সত্যি?” সাথে এই প্রশ্নটাও করবেন “কেন আমার এটা বলা উচিত?”
সবচেয়ে মূল্যবান, সবচেয়ে মারাত্মক
এক প্রাচীন কিংবদন্তী এক রাজার কাহিনী সোনায় যিনি তাঁর চাকরকে তাঁর রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি খুঁজে আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিছু সপ্তাহ পরে, চাকরটি ফিরে আসে এবং বলে, “মহারাজ, আপনার রাজত্বের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হল জিভ [কথা]। জিভ দিয়েই, একজন জ্ঞানী ব্যক্তি অন্যদের দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করাতে সক্ষম; একজন ধার্মিক ব্যক্তি অন্যদের দিয়ে সঠিক কাজ করাতে সক্ষম। জিভই হল আপনার রাজ্যের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস।
সেই রাজা তারপর তাঁর চাকরকে তাঁর রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক জিনিসটি খুঁজে আনতে পাঠান, যাতে তারা সেগুলি বাদ দিতে পারে। কিছু সপ্তাহ পরে, চাকরটি ফিরে আসে এবং বলে, “মহারাজ, আপনার রাজত্বের সবচেয়ে মারাত্মক জিনিস হল জিভ। জিভ দিয়েই, একজন মূর্খ তার চারপাশের সবাইকে বোকামি করতে মানিয়ে ফেলতে পারে। জিভ দিয়েই, একজন খারাপ লোক অন্যদের দিয়ে খারাপ কাজ করাতে পারে। জিভই হল আপনার রাজ্যের সবচেয়ে মারাত্মক জিনিস।”
► গীত ১৫ পাঠ করুন। এই গীত থেকে, আমরা যে যে ভুল উপায়ে সংযোগ স্থাপন করতে পারি তার তালিকা তৈরি করুন।
► যাকোব ৩:১-১২ পাঠ করুন। ভালো এবং মন্দ উভয়ের জন্য জিহ্বার [কথা-র] ক্ষমতা আলোচনা করুন।
সংযোগ উত্তম বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে
যাকোব বলেছেন যে সমস্ত উৎকৃষ্ট ও নিখুঁত দান ঈশ্বর থেকে আসে (যাকোব ১:১৭)। সংযোগ হল আমাদের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া উপহারগুলির মধ্যে অন্যতম। এই উপহার দিয়ে আমরা করতে পারি এমন একাধিক অসাধারণ বিষয় রয়েছে:
আমরা প্রার্থনা করতে পারি।
আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে পারি।
আমরা ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারি।
আমরা অন্যদের সান্ত্বনা দিতে পারি।
আমরা অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারি।
আমরা অন্যদের সত্যের শিক্ষা দিতে পারি।
যারা ভুল করছে আমরা তাদের সংশোধন করতে পারি।
ঈশ্বর তাঁর রাজ্যবিস্তারের জন্য মানব সংযোগ ব্যবহারের উপায়টি বেছে নিয়েছেন।
তখন যীশু তাঁদের কাছে এসে বললেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। অতএব, তোমরা যাও ও সমস্ত জাতিকে শিষ্য করো, পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও। আর আমি তোমাদের যে সমস্ত আদেশ দিয়েছি, সেগুলি পালন করার জন্য তাদের শিক্ষা দাও। আর আমি নিশ্চিতরূপে, যুগান্ত পর্যন্ত নিত্য তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি” (মথি ২৮:১৮-২০)।
পৌল যুবক তিমথিকে উত্তম উদ্দেশ্যের জন্য সংযোগকে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
“আর বহু সাক্ষীর উপস্থিতিতে তুমি আমাকে যেসব বিষয় বলতে শুনেছ, সেগুলি এমন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে অর্পণ করো, যারা অন্যদের কাছে সেগুলি শিক্ষা দিতে সমর্থ হবে” (২ তিমথি ২:২)।
“আর প্রভুর সেবক কখনোই ঝগড়ায় লিপ্ত হবে না; বরং সে সবার প্রতি হবে সদয়, শিক্ষাদানে নিপুণ এবং সহনশীল” (২ তিমথি ২:২৪)।
আমরা আমাদের সংযোগের জন্য দায়বদ্ধ
আমরা ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য দায়বদ্ধ।
ঈশ্বর মানুষকে তাঁর সাথে সংযোগ স্থাপনের সক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। শাস্ত্র এমন অনেক উপায় তুলে ধরে যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে ইতিবাচকভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারি:
ঈশ্বরের সাথে কথা বলা (আদিপুস্তক ১৭:১৮, যাত্রাপুস্তক ৩:১১, গণনাপুস্তক ২২:১০, বিচারকর্তৃগণ ৬:৩৬)।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা (আদিপুস্তক ২০:১৭, লূক ৬:১২, প্রেরিত ৪:২৪, রোমীয় ১৫:৩০)।
ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দন করা (যাত্রাপুস্তক ৮:১২, গীত ৫৭:২, গীত ৭৭:১)।
ঈশ্বরের কাছে একটি প্রতিজ্ঞা করা (গণনাপুস্তক ২১:২, গণনাপুস্তক ৩০:২; উপদেশক ৫:৪)।
ঈশ্বরের কাছে আবেদন করা (দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৯, ইয়োব ৫:৮, রোমীয় ১১:২)।
মানুষ ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক উপায়গুলি অনুসরণ করে সেগুলি নিয়েও শাস্ত্র আমাদের সচেতন করে:
ঈশ্বরকে অপমান করা (যাত্রাপুস্তক ২২:২৮)।
ঈশ্বরকে অভিশাপ দেওয়া (ইয়োব ২:৯)।
ঈশ্বরকে মিথ্যা বলা (প্রেরিত ৫:৪)।
ঈশ্বরকে উপহাস করা (২ রাজাবলী ১৯:১৬)।
আমরা একে অপরের সাথে আমাদের সংযোগ স্থাপনের জন্য দায়বদ্ধ।
ঈশ্বর কেবল তাঁর সাথেই নয়, বরং পরস্পরের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যও আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমরা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুইভাবেই সংযোগ স্থাপন করতে পারি; আমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যারা আমাদের নির্যাতন করে আমরা যেন তাদের আশীর্বাদ করি; তাদের আশীর্বাদ করতে বলা হয়েছে এবং অভিশাপ দিতে নয় (রোমীয় ১২:১৪)। আমাদের পরস্পরের সাথে সংযোগ স্থাপনের কিছু ইতিবাচক উপায় লক্ষ্য করুন:
একে অপরকে অনুপ্রাণিত করা (১ থিষলনীকীয় ৫:১১, ইব্রীয় ৩:১৩, ইব্রীয় ১০:২৫)।
একে অপরকে শিক্ষা দেওয়া (কলসীয় ৩:১৬)।
একে অপরকে নির্দেশনা দেওয়া (রোমীয় ১৫:১৪)।
একে অপরকে অভিবাদন জানানো (রোমীয় ১৬:১৬, ১ করিন্থীয় ১৬:২০, ২ করিন্থীয় ১৩:১২)।
একে অপরকে সচেতন করা (কলসীয় ৩:১৬)।
আমাদের ক্ষতিকর সংযোগ এড়িয়ে চলার জন্য সতর্ক করা হয়েছে:
একে অপরকে প্রতারিত না করা (লেবীয় পুস্তক ১৯:১১, ইফিষীয় ৪:২৫)।
একে অপরকে বিচার না করা (রোমীয় ১৪:১৩)।
একে অপরকে অপবাদ না দেওয়া (যাকোব ৪:১১)।
আমরা সুসমাচার প্রচারের জন্য দায়বদ্ধ।
যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে সারা পৃথিবীর কাছে সুসমাচার নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের লোকেদের সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে অবিশ্বাসীদের কাছে সুসমাচার তুলে ধরা উচিত। যে প্রাথমিক উপায়ের মাধ্যমে ঈশ্বর যিশু খ্রিষ্টের সুসমাচার বিস্তারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তা হল কথিত সংযোগের মাধ্যম। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন,
অতএব, তোমরা যাও ও সমস্ত জাতিকে শিষ্য করো, পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও। আর আমি তোমাদের যে সমস্ত আদেশ দিয়েছি, সেগুলি পালন করার জন্য তাদের শিক্ষা দাও (মথি ২৮:১৯-২০)।
উপসংহার
যেহেতু সংযোগ বা যোগাযোগ মানবজাতির মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিরূপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই সংযোগের পদ্ধতি বোঝা এবং তা অনুশীলন করা খ্রিষ্টীয় লিডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই কোর্সটি আপনাকে সংযোগের বিবিধ প্রকারগুলি বুঝতে সাহায্য করবে। এটি আপনাকে ঈশ্বরের রাজ্যে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সংযোগের দক্ষতাকে ব্যবহার করার জন্য সুসজ্জিত করে তুলবে।
১ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) পরবর্তী পাঠের শুরুতে, আপনি এই পাঠের ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা নেবেন। রস্তুতির সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
(২) ক্লাসের কাছে একটি তিন মিনিটের বক্তৃতা উপস্থাপন করুন যেখানে আপনি সেই মিনিস্ট্রির ব্যাপারে কথা বলবেন যার জন্য ঈশ্বর আপনাকে আহ্বান করেছেন। আপনি আপনার বর্তমানে মিনিস্ট্রির পাশাপাশি আপনার ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়েও কথা বলতে পারেন।
১ নং পাঠের পরীক্ষা
(১) খ্রিষ্টীয় লিডারদের জন্য সংযোগের প্রধান তিনটি প্রকারভেদ কী কী?
(২) কার সঙ্গে পিতা ঈশ্বর সংযোগ করেন?
(৩) সংযোগের চারটি অপব্যবহারের তালিকা করুন যেগুলি ঈশ্বর নিষেধ করেছেন।
(৪) সেই প্রাথমিক উপায়টি কী যার মাধ্যমে ঈশ্বর যিশু খ্রিষ্টের সুসমাচার বিস্তারের জন্য বেছে নিয়েছেন?
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.