[1]যিশু গালীল সাগরের তীর ধরে হেঁটে যাওয়ার সময়, একজন কর আদায়কারীকে দেখতে পান। যেহেতু লেবি রোমীয়দের জন্য কাজ করত, তাই ইহুদী গুরুরা তাকে এড়িয়ে চলত। লেবিকে অবাক করে দিয়ে, যিশু বলেন, “আমাকে অনুসরণ করো” (মার্ক ২:১৪)। অন্যান্য গুরুরা কেবল একজন কর আদায়কারীকে দেখেছিল; কিন্তু যীশু দেখেছিলেন একজন ব্যক্তিকে ভালোবাসতে হবে।
পরে, যিশু লেবির বাড়িতে অনেকজন কর আদায়কারী ও পাপীদের সাথে খেতে বসেন। ফরিশীরা তা দেখে যথেষ্ট অবাক হয়েছিলেন। যিশুর পবিত্র থাকা আবশ্যিক; কেন তিনি পাপীদের সাথে সময় কাটাবেন? যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “পীড়িত ব্যক্তিরই চিকিৎসকের প্রয়োজন, সুস্থ ব্যক্তির নয়। আমি ধার্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদের আহ্বান করতে এসেছি” (মার্ক ২:১৭)।
যিশুর উদাহরণ তাঁর সমসাময়িক ব্যক্তিদের চমকে দিয়েছিল। যিশুর সময়কালে ফরিশীদের পবিত্রতম ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হত। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা পবিত্র, তাই আমরা পাপীদের থেকে দূরে থাকি।” যিশুর বক্তব্য, “আমি পবিত্র, তাই আমি পাপীদের সাথে সময় কাটাই।”
যিশু পাপীদের সাথে সময় কাটিয়ে খুশি হতেন। যিশুকে অনুসরণ করার ফলে, পাপীরা পবিত্র ব্যক্তি হয়ে উঠত। যিশু পবিত্র প্রেমের একটি দৃষ্টান্ত প্রদান করেছিলেন যা জগতকে পরিবর্তন করে। পবিত্রতা হল ঈশ্বরের জন্য এবং মানুষের জন্য নিখুঁত প্রেম। সত্যিকারের পবিত্রতা আমাদের জগতকে পরিবর্তন করে।
“প্রভু, আমাকে তোমার শান্তির সরঞ্জাম করো।
যেখানে ঘৃণা, সেখানে প্রেমের বীজ বোনার শক্তি দাও;
যেখানে আঘাত, সেখানে ক্ষমা;
যেখানে সন্দেহ, সেখানে বিশ্বাস;
যেখানে হতাশা, সেখানে আশা;
যেখানে অন্ধকার, সেখানে আলো;
যেখানে দুঃখ, সেখানে আনন্দ।
ও পবিত্র প্রভু,
শক্তি দাও যেন সান্ত্বনা না চাই, কিন্তু অধিক দিতে পারি;
কেবল নিজের সমস্যা নয়, কিন্তু অন্যের বিষয়ে অধিক বুঝতে পারি;
কেবল নিজের জন্য ভালোবাসা নয়, বরং অন্যদেরকেও অধিক ভালোবাসতেও পারি।
আমরা যেন দিতে পারি যেমন আমরা পেয়েছি;
আমরা যেন ক্ষমা করতে পারি যেমন আমাদের ক্ষমা করা হয়েছে;
যেন মৃত্যুবরণ করতে পারি যেমনভাবে আমরা অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়েছি।”
- সেন্ট ফ্রান্সিস অফ অ্যাসিসি (St. Francis of Assisi)
যিশুর জগতে পবিত্রতা
► আপনার পরিচিত ব্যক্তিরা কীভাবে পবিত্রতাকে পরিমাপ করে? যিশুর জীবন যাপনের সাথে তুলনায় এই মাপকাঠির কেমন?
যিশুর সময়কালের লোকেরা পবিত্রতা সম্পর্কে কী বিশ্বাস করত? একজন পবিত্র ব্যক্তির কেমন জীবন যাপন তারা প্রত্যাশা করত? এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেখলে, আমরা বুঝতে পারব কেন লোকেরা যিশুর জীবন এবং শিক্ষায় এতটা আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল?[1]
যিশুর সময়কালের লোকেরা কী বিশ্বাস করত
যিশুর সময়কালের লোকেরা জানত যে ঈশ্বর হলেন একজন পবিত্র ঈশ্বর। তারা জানত যে ঈশ্বরের লোকেদের অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। একজন পবিত্র ঈশ্বর চান তাঁর লোকেরা পবিত্র হোক। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন কারণ তাঁর লোকেরা পবিত্র ছিল না।
যিশুর সময়কালের লোকেরা জানত যে পবিত্রতা মানে সমস্ত অপবিত্র বিষয়ের থেকে পৃথক হওয়া। পুরাতন নিয়মে বলা হয়েছে পবিত্র হওয়ার মাপকাঠি হল ঈশ্বরের লোকেদের সমস্ত পাপময় বিষয় থেকে দূরে ত্থাকতে হবে।
যিশুর সময়কালের লোকেরা জানত ঈশ্বর তাঁর লোকেদের অন্তরে একটি নতুন চুক্তি লেখার প্রতিজ্ঞা করেছেন। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন যে সেই চুক্তি ধরে রাখার জন্য তিনি তাদের একটি নতুন হৃদয় এবং একটি নতুন আত্মা দেবেন (যিহিষ্কেল ৩৬:২৬)। যিশুর সময়কালের লোকেরা এই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা করছিল।
যিশুর সময়কালের লোকেরা জানত যে একজন ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা রাখেন। যদিও ইস্রায়েল চুক্তি ভেঙেছিল, তবুও ঈশ্বর বিশ্বস্ত ছিলেন। ইহুদী লোকেরা বিশ্বাস করেছিল যে ঈশ্বরের মহিমা ইস্রায়েলে ফিরে আসবে যদি তাঁর লোকেরা পবিত্র হয়।
যিশুর সময়কালের লোকেরা কী অনুশীলন করত
যিশুর সময়কালের ধর্মভীরু লোকেরা এই নীতিগুলি বিশ্বাস করত, কিন্তু তারা যথার্থ পবিত্রতার জন্য ঈশ্বরের যে আদর্শ, সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের পবিত্র হৃদয় ছিল না।
ধর্মযাজকরা মন্দিরের প্রতি তাদের বিশ্বাস রেখে চলতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে বলিদান যথাযথভাবে পালন করা হয়, তবেই ঈশ্বরের মহিমা ফিরে আসবে। যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “কিন্তু তোমরা যাও এবং এই বাক্যের মর্ম কি তা শিক্ষা নাও: ‘আমি দয়া চাই, বলিদান নয়” (মথি ৯:১৩)। যিশু দেখিয়েছিলেন যে শুধু নিয়ম পালন করাই যথেষ্ট নয়।
এসিনরা (Essenes) বিশ্বাস করতেন যে অন্য মানুষদের থেকে আলাদা থাকলে তারা পবিত্র হতে পারবেন। তারা মৃত সাগর (Dead Sea)-এর ধারে সম্প্রদায়ের মাঝে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছিল। যিশু বলেছেন, “আমি তোমাদের বলছি, একইভাবে নিরানব্বইজন ধার্মিক ব্যক্তি, যাদের মন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই, তাদের চেয়ে একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে স্বর্গে অনেক বেশি আনন্দ হবে” (লূক ১৫:৭)। “কারণ আমি ধার্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদের আহ্বান করতে এসেছি” (মথি ৯:১৩)। যিশু কুষ্ঠরোগীদের স্পর্শ করেছিলেন, পাপীদের সাথে বসে খাবার খেয়েছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে আমরা একটি পাপময় জগতেও পবিত্র হতে পারি।
ফরিশীরা বিধানের বাহ্যিক বিবরণ অনুসরণ করেছিল, কিন্তু তারা অভ্যন্তরীণ কলুষতা অগ্রাহ্য করেছিল। যিশু ফরিশীদেরকে কবরের সাথে তুলনা করেছিলেন যেটি “বাইরে থেকে দেখতে তো সুন্দর কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের হাড় ও সব ধরনের অশুচি বিষয়ে পরিপূর্ণ। কইভাবে, লোকেদের কাছে বাহ্যিকভাবে তোমরা নিজেদের ধার্মিক দেখাও কিন্তু অন্তরে তোমরা ভণ্ডামি ও দুষ্টতায় পূর্ণ” (মথি ২৩:২৭-২৮)। যিশু দেখিয়েছিলেন যে পবিত্রতা অবশ্যই হৃদয় থেকে শুরু হওয়া উচিত। আপনি পবিত্র হস্তের অধিকারী হতে পারবেন না যদি আপনার হৃদয় পবিত্র না থাকে।
যিশুর সময়কালের এই সমস্ত লোকেরা সত্যিকারের পবিত্রতার চেয়ে নিয়মকানুনের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিল। ঈশ্বরকে ভালোবাসার পরিবর্তে, তারা পবিত্রতাকে নিয়ম-নীতি দিয়ে পরিমাপ করেছিল। ইস্রায়েল তাদের চারপাশের মানুষকে ভালোবাসার পরিবর্তে, তারা সেই জগতের মধ্যে দেওয়াল তুলে তা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। যিশু দেখিয়েছিলেন যে একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বরকে এবং তার প্রতিবেশীকে ভালোবাসে।
[1]এই উপাদানগুলির বেশিরভাগই Kent Brower, Holiness in the Gospels (Kansas City: Beacon Hill Press, 2005) -এর উপর ভিত্তিতে লেখা।
যিশুর জীবন পবিত্রতার একটি আদর্শ ছিল
যখন আমরা পুরাতন নিয়মে পবিত্রতার বিষয়ে পড়ি, আমরা তখন এরকম মন্তব্য করে ফেলতে পারি যে, “এটা বেশ ভালো একটা তত্ত্ব, কিন্তু এটা বাস্তব জীবনে কেমন হবে?” যিশু আমাদের দেখাতে এসেছিলেন যে দৈনন্দিন জীবনে পবিত্রতা ঠিক কেমন হয়। লূক বংশ-তালিকার সাহায্যে দেখিয়েছেন যে যিশু ছিলেন “আদমের পুত্র, ঈশ্বরের পুত্র” (লূক ৩:৩৮)। যখন আমরা আদমের পুত্র, যিশুর দিকে দেখি, তখন আমরা একজন পবিত্র ব্যক্তির নিখুঁত আদর্শকে দেখতে পাই। সুসমাচার পত্রগুলি নাসরতীয় যিশুর জীবনের পবিত্রতাকে তুলে ধরে।
পবিত্রতা হল ঈশ্বরের সাথে চলা
যিশুর মধ্যে, আমরা ঈশ্বরের সাথে মানুষের আদর্শ সম্পর্কটি দেখতে পাই। যিশুর প্রার্থনাশীল জীবন তাঁর পিতার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে তুলে ধরেছিল। যিশু নিয়মিতভাবে তাঁর পিতার সাথে একাকী সময় কাটানোর জন্য ভিড় থেকে সরে যেতেন। তার মানব জীবনে, যিশু তাঁর স্বর্গস্থ পিতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চেয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে চলতেন।
তবে, পিতার সাথে যিশুর সম্পর্কের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ চিত্রটি ক্রুশের ওপর থেকে তাঁর কান্নার মধ্যে ফুটে ওঠে। ক্রুশের ওপর আমাদের পাপ বহন করার সময়, “যিশু উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে উঠলেন, ... ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে পরিত্যাগ করেছ?’” (মথি ২৭:২৬)। আমাদের পরিবর্তে মৃত্যুবরণ করে এবং আমাদের পাপের জন্য কঠিনতম শাস্তি কাঁধে নিয়ে, যিশু তাঁর পিতার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ব্যথা অনুভব করেছিলেন।
যিশু ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের অন্তরঙ্গতাকে প্রকাশ করেছিলেন। অব্রাহাম এবং দায়ূদের প্রকাশ করা পবিত্রতা নাসরতীয় যিশুর জীবনে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল।
পবিত্রতা হল পৃথকীকরণ
পবিত্র হওয়ার অর্থ হল পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া। যিশু তাঁর মানব জীবনে, পাপ থেকে পৃথককীকরণের আদর্শটি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি কোনো পাপ জানতেন না (২ করিন্থীয় ৫:২১)। যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের সময় তাঁর খুব কাছে থাকা এক শিষ্য সাক্ষ্য দিয়েছেন, “তাঁর মধ্যে পাপের লেশমাত্র নেই” (১ যোহন ৩:৫)।
যিশু তাঁর মানব জীবনে, ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়ার আদর্শটি প্রকাশ করেছিলেন। যিশু সাক্ষ্য দিয়েছেন, “যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি আমার সঙ্গেই আছেন। তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেননি, কারণ আমি সর্বদা তাই করি যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে” (যোহন ৮:২৯)। যিশু তাঁর পিতার কাছে পৃথক হয়েছিলেন।
পবিত্রতা হল ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি
পবিত্র হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে প্রতিফলিত করা। যখন আমরা যিশুর দিকে দেখি, আমরা পিতার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। “সেই বাক্য দেহ ধারণ করলেন এবং আমাদেরই মধ্যে বসবাস করলেন। আমরা তাঁর মহিমা দেখেছি, ঠিক যেমন পিতার নিকট থেকে আগত এক ও অদ্বিতীয় পুত্রের মহিমা। তিনি অনুগ্রহ ও সত্যে পূর্ণ” (যোহন ১:১৪)। যখন ফিলিপ যিশুকে বলেছিলেন “প্রভু, পিতাকে আমাদের দেখান,” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “যে আমাকে দেখেছে, সে পিতাকেও দেখেছে” (যোহন ১৪:৮-৯)। যিশুর মধ্যে, আমরা ঈশ্বরের নিখুঁত প্রতিমূর্তি দেখতে পাই।
পবিত্রতা হল একটি অবিভক্ত হৃদয়
একজন পবিত্র ব্যক্তি একটি অবিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী; তিনি ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত। গেৎশিমানী বাগানে, যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “পিতা, তোমার ইচ্ছা হলে আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র সরিয়ে নাও। তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক” (লূক ২২:৪২)। যিশুর হৃদয় পিতার ইচ্ছার কাছে সম্পূর্ণভাবে সমর্পিত ছিল। যিশু দেখিয়েছেন অবিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী হওয়া বলতে আসলে কী বোঝায়।
পবিত্রতা হল ধার্মিকতা
সত্যিকারের পবিত্রতার মধ্যে ধার্মিক আচরণ অন্তর্ভুক্ত। একজন পবিত্র ব্যক্তি ন্যায়বিচার, করুণা, এবং নম্রতার মাধ্যমে পরিচিত হয়। যিশুর জীবনে আমরা ধার্মিকতার যথার্থ উদাহরণ দেখতে পাই।
ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত দৃশ্যটি দেখা যায় যখন যিশুকে ক্রুশে ঈশ্বরের ন্যায্য ক্রোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। পাপের শাস্তির জন্য প্রযোজ্য ন্যায়বিচারকে যিশু অস্বীকার করেননি; বরং, তিনি আমাদের পরিবর্তে জরিমানা দিয়ে দিয়েছেন।
যিশু কুষ্ঠরোগী, নারী, শিশু এবং দুঃস্থদের সাথে করুণার আচরণ করেছেন। ব্যাভিচারী নারী, সক্কেয়, ক্রুশের ওপরে থাকা সেই চোর – সকলের প্রতিই তিনি করুণার আচরণ করেছেন। সেইসাথে, যাদের অন্যেরা পরিত্যাগ করেছে, যিশু তাদের প্রতিও করুণাময় ছিলেন।
যিশুর জন্মের ৭০০ বছরেরও বেশি আগে, যিশাইয় মসীহের নম্রতার কথা বর্ণনা করেছিলেন। “আমাদের আকৃষ্ট করার মতো তাঁর কোনো সৌন্দর্য বা রূপ ছিল না, আমরা কামনা করতে পারি, তাঁর চেহারায় এমন কিছুই ছিল না” (যিশাইয় ৫৩:২)। যিশাইয় ভাববাণী করেছিলেন, “তিনি চিৎকার বা উচ্চশব্দ করবেন না, কিংবা পথে পথে নিজের কণ্ঠস্বর শোনাবেন না। তিনি দলিত নলখাগড়া ভেঙে ফেলবেন না, এবং ধূমায়িত সলতে নির্বাপিত করবেন না।” (যিশাইয় ৪২:২-৩)।
যিশু তাঁর প্রথম জনগণের সামনে প্রচারে তাঁর ন্যায়বিচার, করুণা, এবং নম্রতার উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করেছিলেন। নাসরতের সমাজভবনে, যিশু এক আগত দাস সম্পর্কে যিশাইয়ের ভাববাণী পাঠ করেছিলেন:
প্রভুর আত্মা আমার উপর অধিষ্ঠিত, কারণ দীনহীনদের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য তিনি আমাকে অভিষিক্ত করেছেন। তিনি আমাকে বন্দিদের কাছে মুক্তি প্রচার করবার জন্য পাঠালেন, অন্ধদের কাছে দৃষ্টিপ্রাপ্তি প্রচার করার জন্য, নিপীড়িতদের নিস্তার করে বিদায় করার জন্য, প্রভুর প্রসন্নতার বছর ঘোষণা করার জন্য (লূক ৪:১৮-১৯, যিশাইয় ৬১:১-২ থেকে)।
যিশাইয় সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বছরের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, যা সকল মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের সময়। যিশু ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে এসেছেন: “যে শাস্ত্রীয় বাণী তোমরা শুনলে আজ তা পূর্ণ হল” (লূক ৪:২১)। যিশুর পার্থিব পরিচর্যা ধার্মিকতার একটি আদর্শকে তুলে ধরে।
সুসমাচারে পবিত্রতা: আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসা
৭ অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরকে অবিভক্ত প্রেমে ভালোবাসা। পবিত্র হওয়া মানে আমাদের প্রতিবেশীকেও ভালোবাসা। যিশু সমস্ত আজ্ঞার সারসংক্ষেপ হিসেবে এই দুটি আজ্ঞা দিয়েছিলেন, “ঈশ্বরকে প্রেম করো” এবং “তোমার প্রতিবেশীকেও প্রেম করো” (মার্ক ১২:২৯-৩১)।
ঈশ্বরের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময়ই অন্যদের জন্যও ভালোবাসা নিয়ে আসে। যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের ভালোবাসার মানুষদেরকেও ভালোবাসব। পবিত্রতা কখনোই নির্জন বিষয় নয়; একটি পবিত্র জীবন আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্কে যাপিত হয়। পবিত্রতা হল ঈশ্বরের জন্য নিখুঁত প্রেম এবং অন্যদের জন্য নিখুঁত প্রেম। ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত প্রেম কখনোই আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় না।
যিশু এটিকে এইভাবে উল্লেখ করেছেন: “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন তোমরা আমার এই ভাইবোনদের মধ্যে নগণ্যতম কারও প্রতি এরকম করেছিলে, তখন তা আমারই প্রতি করেছিলে” (মথি ২৫:৪০)। যোহন ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে আমাদের প্রতিবেশীদের জন্য ভালোবাসার সাথে সংযুক্ত করেছেন:
কেউ যদি বলে, “আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি,” অথচ তার ভাইবোনকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী। যে ভাই বা বোনকে সে দেখতে পায় তাকে যদি সে প্রেম না করে, তাহলে যে ঈশ্বরকে সে দেখেনি তাঁকে সে প্রেম করতে পারে না। তিনি আমাদের এই আদেশ দিয়েছেন: ঈশ্বরকে যে প্রেম করে, সে তার ভাইবোনকেও প্রেম করবে (১ যোহন ৪:২০-২১)।
এটির মূলে, পাপ হল আত্ম-কেন্দ্রিকতা। উদ্যানে, শয়তান হবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সে ঈশ্বরের মতো হতে পারে (আদিপুস্তক ৩:৫)। বাবিলে লোকেরা নিজেদের জন্য একটি নাম রাখতে উদগ্রীব ছিল (আদিপুস্তক ১১:৪)। ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ইস্রায়েল একজন রাজা চেয়েছিল যাতে সে অন্য সমস্ত জাতির মতো হতে পারে (১ শমূয়েল ৮:৫)। এই সমস্ত ক্ষেত্রে, পাপ হল আত্ম-কেন্দ্রিকতা।
যদি পাপ আত্ম-কেন্দ্রিকতা হয়, তাহলে পবিত্রতা (পাপের বিপরীত) অন্যদের প্রতি দৃষ্টিপাতকে অন্তর্ভুক্ত করবে। যদি পাপ কেবল আমাদের নিজেদের ভালো দেখার দিকে নজর দেয়, তাহলে পবিত্রতার ফলে আমরা অন্যদের জন্য কোনটা ভালো সেই বিষয়ে নজর রাখব। যদি পাপ নিজেকে-প্রেম করা হয়, তাহলে পবিত্রতা হল অন্যদেরকে ভালোবাসা। যে আজ্ঞাটি নতুন নিয়মে সবচেয়ে বেশিবার পুনরাবৃত্ত হয়েছে সেটি হল প্রেমের আজ্ঞা। এটি অন্তত ৫৫ বার পুনরাবৃত্ত হয়েছে।
যিশু শিখিয়েছিলেন যে পবিত্রতা হল অন্যদের প্রতি প্রেমময় সহানুভূতি। যিশু দেখিয়েছিলেন যে একজন পবিত্র ব্যক্তি পাপীদেরকে পবিত্র প্রেমের একটি জীবনের মাধ্যমে একজন পবিত্র ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসে।
“তোমরা পবিত্র হও, কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমি পবিত্র”, ঈশ্বরের এই আজ্ঞাটির প্রতি বাধ্যতা চায় যে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসি। যিশু অন্যদের প্রতি নিখুঁত প্রেমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন এবং তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে অন্যদের নিখুঁতভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন।
যিশু অন্যদের প্রতি নিখুঁত প্রেমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন
যিশুর পরিচর্যা কাজের প্রথমদিকে, বাপ্তিষ্মদাতা যোহন কিছু শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করতে পাঠিয়েছিলেন, “যাঁর আসার কথা ছিল আপনিই কি তিনি না আমরা অন্য কারও প্রতীক্ষায় থাকব?” (লূক ৭:১৯)। একজন ফরিশী ভেবেছিলেন যে যিশু হয়ত তাঁর পৃথকীকৃত জীবন এবং বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষার দিকে নির্দেশ করে উত্তর দেবেন। পরিবর্তে, যিশু অন্যদের প্রতি তাঁর প্রেমময় সেবার দিকে নির্দেশ করেছিলেন:
তোমরা যা দেখলে, যা শুনলে, ফিরে গিয়ে সেসব যোহনকে জানাও। যারা অন্ধ তারা দৃষ্টি পাচ্ছে, যারা খোঁড়া তারা চলতে পারছে, যারা কুষ্ঠরোগী তারা শুচিশুদ্ধ হচ্ছে, যারা কালা তারা শুনতে পাচ্ছে, যারা মৃত তারা উত্থাপিত হচ্ছে ও যারা দরিদ্র তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে। (লূক ৭:২২)।
যিশুর আশ্চর্যকাজের একটি সমীক্ষা মূলত অন্যদের জন্য তাঁর নিখুঁত প্রেমকে তুলে ধরে। একজন রোমীয় শতপতি তাঁর দাসকে সুস্থ করার জন্য যিশুকে অনুরোধ করেছিলেন। বেশিরভাগ ইহুদী গুরুই তাঁর অনুরোধ অস্বীকার করেছিল, কিন্তু যিশু কেবল সেই সুস্থ করেছিলেন তা নয়, সেইসাথে একজন অ-ইহুদী বা পরজাতির বিশ্বাসের প্রশংসাও করেছিলেন (মথি ৮:৫-১৩)।
এমনকি যখন যিশুর আশ্চর্যকাজগুলি বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল, যিশু তখনও প্রেমের আচরণ করেছিলেন। যখন একজন কুঁজো মহিলা তাঁর কাছে এসেছিল, যিশু তাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করেছিলেন। যদিও বিধান এই সুস্থতার বিরোধিতা করে না, তবে ফরিশীরা বিশ্রামবারে সুস্থতার কাজকে অনুমতি দেয় না। প্রেমের মাধ্যমেই, যিশু ধর্মীয় নেতাদের ক্রোধের মোকাবিলা করেছিলেন (লূক ১৩:১০-২১)।
এমনকি যিশু সেইসব মানুষদের প্রতিও প্রেমময় ছিলেন যারা তাদের নিজেদের পাপকাজের জন্য ফল ভোগ করত। যিশু একজন শমরীয় নারীর প্রতি প্রেমের আচরণ করেছিলেন যে একটি অনৈতিক জীবন যাপন করত (যোহন ৪)। তিনি এক নারীকে রক্ষা করেছিলেন যে ব্যাভিচারিতার জন্য ধরা পড়েছিল। এমন নয় যে যিশু তার পাপ এড়িয়ে গিয়েছিলেন; তিনি তাকে আদেশ দিয়েছিলেন “যাও, আর কখনও পাপ কোরো না” (যোহন ৮:১১)। যিশু জানতেন যে পবিত্রতার জন্য পাপ থেকে বিচ্ছিন্নতা আবশ্যিক, কিন্তু তিনি এটাও জানতেন যে নিখুঁত প্রেম পাপের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের ঠিক শেষ মুহূর্তে, অন্যদের প্রতিও প্রেমের আচরণ প্রকাশ করেছিলেন। মহাযাজকের দাস মল্কীয় গেৎশিমানী বাগানে যিশুকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার প্রভুকে সাহায্য করেছিল। যখন শিমোন পিতর মল্কর কান কেটে দেন, যিশু পিতরকে ধমক দিয়েছিলেন এবং মল্ককে সুস্থ করেছিলেন (মথি ২৬:৫০-৫২)। নিজেদের শত্রুকেও ভালোবাসার অর্থ আসলে কী তা যিশু দেখিয়েছিলেন।
যিশু যখন ক্রুশের উপরে ছিলেন, তখন এক দস্যু অনুগ্রহ প্রার্থনা করেছিল। এই দস্যু্র জন্য মৃত্যু উপযুক্ত ছিল; সে একজন মারাত্মক অপরাধী ছিল। যিশু, যিনি নিজের পাপের জন্য নয় বরং অন্যের পাপের জন্য শাস্তিভোগ করছিলেন, তিনি এক মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চোরকে অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন (লূক ২৩:৩৯-৪৩)। নিজের যন্ত্রণা সত্ত্বেও, যিশু এমন একজন মানুষকে ভালোবেসেছিলেন যে আসলে ভালোবাসার যোগ্য ছিল না।
যিশু তাঁর অনুসরণকারীদের অন্যদেরকে নিখুঁতভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন
যিশু তাঁর অনুসরণকারীদের শিখিয়েছিলেন নিখুঁতভাবে ভালোবাসা বলতে আসলে কী বোঝায়। যিশু দেখিয়েছিলেন যে স্বর্গরাজ্যের জীবনের মাপকাঠি হল নিখুঁত প্রেম।
“অতএব, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও সেইরূপ সিদ্ধ হও” এই আদেশটি পর্বতের ওপরে বসে করা প্রচারটির কেন্দ্রবিন্দু। এই আদেশটি অন্যদের প্রতি প্রেমের একগুচ্ছ নিদর্শন তুলে ধরে। আমাদের স্বর্গস্থ পিতার মতো নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল অন্যদের প্রতি অবিভক্ত প্রেমের একটি জীবন যাপন করা।
যদি পবিত্রতার মানে পাপ থেকে পৃথক হওয়ার চেয়ে বেশি কিছু না হত, তাহলে ফরিশীরা পবিত্রতম ব্যক্তি হত। তাদেরকে “পৃথকীকৃত ব্যক্তি” বলা হত। যিশু ফরিশীদের পৃথকীকরণের চেয়েও বেশি কিছু চেয়েছিলেন। “তোমাদের ধার্মিকতা যদি ফরিশী ও শাস্ত্রবিদদের থেকে অধিক না হয়, তোমরা নিশ্চিতরূপে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না” (মথি ৫:২০)।
ফরিশীদের মিথ্যে ধার্মিকতার বিপরীতে, যিশু দেখিয়েছিলেন যে তাঁর রাজ্যের লোকেরা প্রেমের লোক। বাহ্যিক আচরণ যা অভ্যন্তরীণ পবিত্রতার সাথে মেলে না তা আসলে কপটতা বা ভণ্ডামি, তা কোনোমতেই পবিত্রতা নয়। আমাদের অবশ্যই পবিত্র হৃদয় এবং পবিত্র হস্তের অধিকারী হতে হবে।
একজন নিখুঁত প্রেমের ব্যক্তি “হত্যা কোরো না” আজ্ঞাটি পালনের চেয়েও বেশি কিছু পালন করে। প্রেম বিক্ষুব্ধ ভাইয়ের সাথে মিলন প্রত্যাশা করে। একজন নিখুঁত প্রেমের ব্যক্তি “ব্যাভিচার কোরো না” আজ্ঞাটি পালনের চেয়েও বেশি কিছু পালন করে। প্রেম একজন নারীর দিকে লালসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর বিষয়টিও এড়িয়ে চলে।
একজন নিখুঁত প্রেমের ব্যক্তি ডিভোর্সের কারণ খোঁজে না। সে তার স্ত্রীয়ের মধ্যে ভালো বিষয়গুলি দেখতে ভালোবাসে। একজন নিখুঁত প্রেমের ব্যক্তি কোনোরকম ফাঁক না রেখেই সত্যি কথা বলতে ভালোবাসে। একজন নিখুঁত প্রেমের ব্যক্তি প্রতিশোধের চিন্তা করে না।
যিশু বলেছেন:
তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের অত্যাচার করে, তোমরা তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো, ন তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও। কারণ তিনি ভালোমন্দ, সব মানুষের উপরে সূর্য উদিত করেন এবং ধার্মিক অধার্মিক নির্বিশেষে সকলের উপরে বৃষ্টি দেন। (মথি ৫:৪৪-৪৫)।
ঈশ্বর যেমন ভালোবাসেন তেমন ভালোবাসার অর্থ হল নিজের শত্রুকেও ভালোবাসা। যিশু পবিত্রতার দাবীকে খাটো করেননি, বরং তিনি পবিত্রতার চাহিদাকে আরো উচ্চস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আপনার পবিত্রতা অবশ্যই শাস্ত্রবিদ এবং ফরিশীদের বাহ্যিক ধার্মিকতাকে ছাপিয়ে যাওয়া উচিত (মথি ৫:২০)। কেবল বাহ্যিক আচরণ ঠিক করার পরিবর্তে, ঈশ্বর হৃদয়ও পরিবর্তন করেন। যখন আপনি ঈশ্বরের ভালোবাসার মতো ভালোবাসেন, তখন আপনি ঠিক স্বর্গস্থ পিতার মতোই নিখুঁত থাকেন।
একজন ধর্মীয় শাস্ত্রবিদ যিশুকে প্রশ্ন করেছিলেন, “গুরুমহাশয়, অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?” যিশু আরেকটি প্রশ্নের মাধ্যমেই উত্তর দিয়েছিলেন, “বিধানশাস্ত্রে কী লেখা আছে?” সেই শাস্ত্রবিদ সঠিক উত্তরটি জানতেন: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে; এবং, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করবে।”
সেই শাস্ত্রবিদ ভালোবাসার চাহিদার সম্মুখীন হতে চাননি। তিনি তাঁর বিধানের জ্ঞানকে এড়িয়ে চলার জন্য একটি অজুহাত খুঁজছিলেন। “কিন্তু সে নিজের সততা প্রতিপন্ন করতে যীশুকে প্রশ্ন করল, “বেশ, আমার প্রতিবেশী কে?”” যিশু উত্তম শমরীয়ের কাহিনীর রূপকে উত্তর দিয়েছিলেন।
যিশু শিখিয়েছিলেম যে কেবল মুখের কথায় নয়, বরং যথার্থ কাজের মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসা আমাদের কর্তব্য। উত্তম শমরীয়ের মতোই, প্রকৃত খ্রিস্টবিশ্বাসী হল সেই ব্যক্তি যে অন্যদেরকে – এমনকি শত্রুদেরকেও সেবা করার সুযোগ খুঁজতে সত্যিকারের ভালোবাসে। যদি আমরা আমাদেরক প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা সেবা করার সুযোগও খুঁজতে থাকব। যাকোব প্রশ্ন করেছেন:
মনে করো, কোনো ভাই বা বোনের পোশাক ও দৈনন্দিন খাবারের সংস্থান নেই। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তাকে বলে, “শান্তিতে যাও, তুমি উষ্ণ ও তৃপ্ত থাকো,” কিন্তু তার শারীরিক প্রয়োজন সম্পর্কে সে কিছুই না করে, তাহলে, তাতে কী লাভ হবে? (যাকোব ২:১৫-১৬)।
নিখুঁত প্রেম কেবল কথায় নয়, বরং তা কাজে প্রকাশ পায়। পবিত্র ব্যক্তিরা যিশুর মতোই ভালোবাসে। নিখুঁতভাবে ভালোবাসার অর্থ হল আত্মবলিদান দিয়ে ভালোবাসা।
যিশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নিখুঁত প্রেমের শিক্ষা দিয়েছিলেন (যোহন ১৩:১-২০)
গ্রেপ্তার হওয়ার রাতে, যিশু নিখুঁত প্রেমের বিষয়ে তাঁর অন্যতম মহান শিক্ষাটি দিয়েছিলেন। নিস্তারপর্বের ভোজনের সময়, শিষ্যরা তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছিলেন।
যিশু প্রত্যুত্তর করেছিলেন, “কারণ শ্রেষ্ঠ কে? যে খাবার খেতে বসে সে, না, যে পরিবেশন করে, সে? যে খাবার খেতে বসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সেবকের মতো আছি” (লূক ২২:২৭)। তারপর তিনি একটি তোয়ালে নেন এবং শিষ্যদের পা ধুয়ে দিতে শুরু করেন, যা আসলে একজন দাসের কাজ। যিশু হাঁটু মুড়ে বসেছিলেন এবং ঘরে উপস্থিত সকলের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন – এমনকি যিহুদারও পা ধুয়ে দিয়েছিলেন।
তাঁর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, যিশু জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আমি তোমাদের প্রতি কী করলাম, তা কি তোমরা বুঝতে পেরেছ?” তিনি এই পদ-অন্বেষণকারী শিষ্যদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখাতে চেয়েছিলেন:
তোমরা আমাকে ‘গুরুমহাশয়’ ও ‘প্রভু’ বলে থাকো এবং তা যথার্থই, কারণ আমি সেই। এখন তোমাদের প্রভু ও গুরুমহাশয় হয়েও আমি তোমাদের পা ধুয়ে দিলাম, সুতরাং, তোমাদেরও একে অপরের পা ধুয়ে দেওয়া উচিত। আমি তোমাদের কাছে এক আদর্শ স্থাপন করেছি, যেন আমি তোমাদের প্রতি যা করলাম, তোমরাও তাই করো (যোহন ১৩:১৩-১৫)।
যিশু একদম শেষ সময়টিতে, তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন যে নিখুঁত প্রেম বিনয়ী হয়। নিখুঁত প্রেম অবস্থান খোঁজে না; নিখুঁত প্রেম সেবা করার জন্য সুযোগ খোঁজে। পবিত্রতা হল নিখুঁত প্রেম।
নিখুঁত প্রেমের একটি জীবন
যিশু বলেছেন, “অতএব, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও সেইরূপ সিদ্ধ হও” (মথি ৫:৪৮)। বহু লোক বলে, “কেউই সিদ্ধ নয়!” তথাপি, আমরা যিশুর “সিদ্ধ হও” আদেশটি অমান্য করতে পারি না। তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? সাধারণত খ্রিস্টবিশ্বাসীদের পক্ষে কী যিশুর আজ্ঞা মেনে চলা সম্ভব?
“সিদ্ধ হও” কথাটির অর্থ কী?
দুটো জিনিস আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে যিশু ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। প্রথমে, মথি ৫:৪৮-এ গ্রীক শব্দের অনুবাদ “সিদ্ধ বা নিখুঁত”-এর সংজ্ঞাটির দিকে দেখুন। টেলিওস (Teleios) মানে হল “পরিপূর্ণ বা সম্পূর্ণ হওয়া।” টেলিওস একটি বিশেষ্য থেকে আসে যার অর্থ “লক্ষ্য” বা “উদ্দেশ্য।” সিদ্ধ হওয়ার অর্থ হল একটি লক্ষ্যে পৌঁছানো।
পুরাতন নিয়ম দেখায় যে একজন সিদ্ধ ব্যক্তির ঈশ্বরের জন্য একটি অবিভক্ত হৃদয় থাকে। এই ধারণাটি নতুন নিয়মেও অব্যাহত রয়েছে। ঈশ্বরের তাঁর লোকেদের জন্য লক্ষ্য হল পরিপূর্ণ প্রেম, একটি অবিভক্ত হৃদয় থেকে ভালোবাসা। আমাদের নিজেদের শক্তিকে কি যথার্থভাবে কাজটি করা সম্ভব? না। ঈশ্বরের জন্য নিখুঁত, অবিভক্ত প্রেম কি সম্ভব? যিশু বলেছেন, “হ্যাঁ।”
দ্বিতীয়, মথি ৫:৪৮-এর প্রেক্ষাপটের দিকে দেখুন। মথি ৫:৪৮-এর আগে এবং পরের পদগুলি দেখায় যে নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল একটি নিখুঁত প্রেমে ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসা। যিশুর আদেশের সারসংক্ষেপটি ঈশ্বরের প্রতি এবং আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি ভালোবাসার জীবনকে তুলে ধরে।
“অতএব সিদ্ধ হও” আদেশটি মথি ৫:২১-৪৭-এ আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসার একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে। হত্যা, ব্যাভিচারিতা, বিবাহবিচ্ছেদ, প্রতিশ্রুতি ভাঙা এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে, পবিত্র লোকেরা ভালোবাসায় জীবন যাপন করে। এই আজ্ঞাগুলির শেষেরটি হল “তোমাদের শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের অত্যাচার করে, তোমরা তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো” (মথি ৫:৪৪)। পবিত্র লোকেরা এমন লোকেদেরকেও ভালোবাসে যারা তাদের ক্ষতি করতে চায়। নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরের মতো ভালোবাসা।
এই আজ্ঞাটির ঠিক পরেই, মথি ৬:১-১৮-তে ঈশ্বরকে সত্যিকারের ভালোবাসা বলতে আসলে কী বোঝায় তার কিছু উদাহরণ যিশু দিয়েছেন। ভন্ড লোকেরা মানুষের কাছে প্রশংসা পাওয়ার জন্য দুঃস্থদের দান করে; কিন্তু যারা ঈশ্বরকে নিখুঁতভাবে ভালোবাসে তারা গোপনে দান করে, কারণ তারা জানে তাদের পিতা গোপনে সবকিছুই দেখছেন।
ভন্ড লোকেরা “সমাজভবনগুলিতে বা পথের কোণে কোণে দাঁড়িয়ে লোক-দেখানো প্রার্থনা করতে ভালোবাসে।” যারা ঈশ্বরকে নিখুঁতভাবে ভালোবাসে, তারা তাদের ঘরের ভিতর যায় এবং দরজা বন্ধ করে তাদের পিতার কাছে প্রার্থনা করে যিনি অদৃশ্য রয়েছেন। ভন্ড লোকেরা লোকেদের দেখানোর জন্য উপবাস করে; তারা তাদের মুখ নিস্তেজ ও মলিন রাখতে ভালোবাসে যাতে অন্য লোকেরা তাদের দেখে বুঝতে পারে যে তারা উপবাস করছে। যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে তারা চায় তাদেরকে যেন কেবল তাদের পিতাই দেখেন যিনি অদৃশ্য রয়েছেন।
পৌল কলসীয়ের বিশ্বাসীদের একটি পবিত্র জীবন যাপনের আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি ভালোবাসা এবং ক্ষমার একটি জীবন বর্ণনা করেছিলেন:
অতএব, ঈশ্বরের মনোনীত, পবিত্র ও প্রিয়জনরূপে সহানুভূতি, দয়া, নম্রতা, সৌজন্যবোধ এবং সহিষ্ণুতায় নিজেদের আবৃত করো। পরস্পরের প্রতি সহনশীল হও। একের বিরুদ্ধে অপরের কোনো ক্ষোভ থাকলে, পরস্পরকে ক্ষমা করো। প্রভু যেমন তোমাদের ক্ষমা করেছেন, তোমরাও তেমনই করো… (কলসীয় ৩:১২-১৩)।
এই তালিকাটির চূড়ান্ত বিষয়টি হল ভালোবাসা। “এসব গুণের ঊর্ধ্বে ভালোবাসাকে পরিধান করো, যা সেইসব গুণকে পূর্ণ ঐক্যের বাঁধনে আবদ্ধ করে” (কলসীয় ৩:১৪)। নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল ভালোবাসাকে পরিধান করা। যখন যিশু বলেছিলেন “নিখুঁত হও,” তখন তিনি আসলে আমাদেরকে ঈশ্বর এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসার আদেশ দিয়েছিলেন। নিখুঁত ভালোবাসা হল একটি অবিভক্ত হৃদয় থেকে আসা ভালোবাসা।
নিখুঁত প্রেম কতটা নিখুঁত?
সাধারণ ব্যবহারে, আমরা কখনো কখনো নিখুঁত শব্দটি পরম অর্থে ব্যবহার করি। আমরা এমন কিছু বোঝাতে নিখুঁত ব্যবহার করি যা আর উন্নত করা যায় না বা বাড়ানো যায় না। আমরা যদি নিখুঁতকে কৃতিত্বের পরম স্তর হিসাবে ভাবি, তবে আমরা আমাদের কাজের দ্বারা পবিত্রতা পরিমাপ করব। ফরীশীদের মতো, আমরা পবিত্রতাকে পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে দেখব।
অনেকেই পবিত্র জীবনে এই পন্থা অবলম্বন করেন। ফরিশীদের মতো, তাদের টিক চিহ্ন দেওয়ার জন্য বক্সের একটি তালিকা আছে। যদি সমস্ত বক্স চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তারা মনে করে নেয় যে তারা নিখুঁত।
“আমি কি আদেশ পালন করি?”
“আমি কি সঠিক পোশাক পরি?”
“আমি কি সঠিক কথা বলি?”
বাইবেলে, নিখুঁত শব্দটি পরম নয়। এটি আরও বৃদ্ধির বিষটিকে অস্বীকার করে না। ইয়োব নিখুঁত ছিলেন (ইয়োব ১:১), কিন্তু তিনি যে অভিজ্ঞতাগুলো সহ্য করেছিলেন তার মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের সাথে তাঁর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
বাইবেলে, নিখুঁত হওয়ার অর্থ বৃদ্ধির প্রতিটি পর্যায়ে সম্পূর্ণ হওয়া। ইব্রীয় পত্রের লেখক সেইসব খ্রিস্টবিশ্বাসীদেরকে লিখেছিলেন যারা তাদের বৃদ্ধির পর্যায়ে নিখুঁত ছিল না। তারা আধ্যাত্মিক পরিপক্কতা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল।
প্রকৃতপক্ষে, এতদিনে তোমাদের শিক্ষক হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যের প্রাথমিক সত্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমাদেরই একজন শিক্ষকের প্রয়োজন। তোমাদের প্রয়োজন কঠিন খাবার নয়, কিন্তু দুধের। যে দুধ খেয়ে বেঁচে থাকে সে এখনও শিশু, ধার্মিকতা বিষয়ের শিক্ষা সম্পর্কে তার কোনো পরিচয় নেই। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক (teleios) লোকদের প্রয়োজন কঠিন খাবার, যারা সবসময় অনুশীলনের মাধ্যমে ভালো ও খারাপের মধ্যে প্রভেদ নির্ণয় করতে নিজেদের অভ্যস্ত করে তুলেছে। (ইব্রীয় ৫:১২-১৪)।
ইব্রীয় পত্রের লেখক মোটেই এই পরামর্শ দিচ্ছেন না যে পরিপক্ক (বা নিখুঁত) বিশ্বাসীদের আর আধ্যাত্মিক খাবারের প্রয়োজন নেই! তিনি তাদের পরিপক্কতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, যাতে তারা তাদের আধ্যাত্মিক বয়সের জন্য উপযুক্ত আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করতে পারে। নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল আমাদের খ্রিস্টীয় অভিজ্ঞতার পর্যায়ের জন্য সঠিকভাবে পরিপক্ক হওয়া। নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল আমরা সম্পূর্ণ এবং পরিপূর্ণ; আমরা ঠিক সেটাই যা ঈশ্বর আমাদের করতে চান।
একটি পরিমাপ মানদণ্ডের পরিবর্তে, নিখুঁত বিষয়টিকে বাইবেলে একটি বৃত্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। একটি বৃত্ত নিখুঁত; এটিকে আর কোনোভাবে অতিরিক্ত বৃত্তাকার করা যাবে না। তবে, একটি নিখুঁত বৃত্তকে বড় করা যেতে পারে; একটি নিখুঁত বৃত্তকে বাড়ানো এবং প্রসারিত করা যেতে পারে। এটি নিখুঁত, কিন্তু এটি এখনও ক্রমবর্ধমান।
একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বর এবং তার প্রতিবেশীদের জন্য নিখুঁত ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। আমরা যত পরিপক্ক হই, আমাদের ভালোবাসার ক্ষমতায় তত বাড়তে থাকে। বৃত্তটি বড় হতে থাকে। আমরা যত পরিপক্ক হই, আমাদের ভালোবাসা “জ্ঞান ও গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে” (ফিলিপীয় ১:৯)। বৃদ্ধির প্রতিটি পর্যায়ে, ঈশ্বর বলেন, “এই ব্যক্তিরা আমাকে এক নিখুঁত ভালোবাসায় ভালোবাসে। এরা পবিত্র।”
যে ব্যক্তি ৪০ বছর ধরে ঈশ্বরের সাথে চলাফেরা করেছে, সেই ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কীভাবে ভালোবাসা দেখাতে হয় তা এমন এক ব্যক্তির চেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারবে যে ঈশ্বরের সাথে এক বছর হেঁটেছে। কিন্তু উভয়েই তাদের প্রতিবেশীকে অবিভক্ত হৃদয় থেকে ভালবাসতে পারে। দুজনেই নিখুঁত ভালোবাসা দেখাতে পারে।
যখন একটি পাঁচ বছরের শিশু তার বাবার জন্য একটি ছবি আঁকে, তখন বাবা বলেন, “ধন্যবাদ! এটা একদম নিখুঁত হয়েছে!” তার মানে এই নয় যে তার শিল্পকর্ম আর ভালো হতে পারে না। ১৫ বছর বয়সে, এই একই শিশু আরো ভালো ছবি আঁকবে।
“এটা নিখুঁত!” মানে, “এই ছবিটি এক ভালোবাসার হৃদয় থেকে এসেছে। এটা তার পরিপক্কতার পর্যায় অনুযায়ী সঠিক।”
নিখুঁত ভালোবাসা পারফরম্যান্সের কোনো মান নয়। নিখুঁত ভালোবাসা হল ঈশ্বর এবং অন্যান্য লোকেদের প্রতি অবিভক্ত ভালোবাসা। নিখুঁত প্রেম যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করে, যিনি দৈনন্দিন জীবনে নিখুঁত প্রেম প্রকাশ করতে এসেছিলেন।
সাধারণ বিশ্বাসীদের পক্ষে কি নিখুঁতভাবে ভালোবাসা সম্ভব?
১৭ শতকের পিউরিটানরা (Puritans) বাইবেলের ব্যাখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নিয়ে মত প্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল যে বাইবেলের আদেশগুলি মূলত “আচ্ছাদিত প্রতিশ্রুতি”। পিউরিটানরা বুঝিয়েছিল যে একটি বাইবেলের আদেশ হল আসলে একটি প্রতিশ্রুতির ছদ্মবেশ। বাইবেলের একটি আদেশ বাইবেলের একটি প্রতিশ্রুতিকে বোঝায়। ঈশ্বর যদি কিছু আদেশ করেন, তাহলে তিনি সেটির আনুগত্য সম্ভব করে দেবেন। ঈশ্বর তাঁর লোকেদের কাছে যা চান, তিনি তাঁর লোকেদের মধ্যে তা করবেন।
একজন পার্থিব বাবার কথা কল্পনা করুন যিনি তাঁর ছেলেকে একটি অসম্ভব আদেশ দিয়েছেন। “তুমি যদি আমাকে খুশি করতে চাও, তোমাকে দু’মিনিটের মধ্যে এক মাইল দৌড়াতে হবে।” কিছু সময়ের জন্য, ছেলেটি এই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু তার বাবার প্রত্যাশাটি অসম্ভব। অবশেষে ছেলেটি নিরুৎসাহিত হবে এমনকি তিক্ত হয়ে উঠবে। এটা কি একজন ভালো বাবার উদাহরণ? না।
ঈশ্বর একজন ভালো পিতা। তিনি তাঁর সন্তানদের অসম্ভব আদেশ দিয়ে হতাশ করেন না। যখন যীশু আমাদেরকে আমাদের স্বর্গীয় পিতার মতো নিখুঁত হওয়ার আদেশ দেন, তখন তিনি আমাদেরকে তাঁর আদেশ পালন করার ক্ষমতাও দেন।
যিশুর প্রচারগুলিতে ঈশ্বরের রাজ্যের জীবন দেখা যায়। এটি একটি নতুন বিধান নয় যা পুরনো বিধানের চেয়ে আরো বড় বাঁধন নিয়ে আসে। আমরা ঈশ্বরের চাহিদা পূরণ করা থেকে কতটা দূরে আছি তা আমাদের দেখানোর জন্য এটি কোনো মারাত্মক আদর্শও নয়। এটি হল ঈশ্বরের রাজ্যে দৈনন্দিন জীবনের একটি ছবি। যিশু কোথাও বলেননি, “এটা আমার আদেশ, কিন্তু তুমি মানতে পারো না!” পরিবর্তে, যিশু বলেছেন, “তুমি এমনই হবে।”
আমরা যদি যিশুর আদেশকে মানুষের ক্ষমতার দৃষ্টিতে দেখি তবে তা অসম্ভব। মানুষের শক্তিতে, আমরা নিখুঁত হওয়ার জন্য ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে পারি না। মানুষের শক্তিতে, আমরা আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে, আমাদের সমস্ত আত্মা এবং আমাদের সমস্ত মন দিয়ে আমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারি না। যাইহোক, ঈশ্বরের শক্তিতে, আমরা ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে পারি। নিখুঁত ভালোবাসা কেবল ঈশ্বরের অনুগ্রহের মাধ্যমে সম্ভব।
এক ধনী যুবক জিজ্ঞেস করেছিল, “গুরুমহাশয়, অনন্ত জীবন লাভের জন্য আমাকে কী ধরনের সৎকর্ম করতে হবে?” (মথি ১৯:১৬)। যিশু দশ আজ্ঞার তালিকা থেকে উত্তর দিয়েছিলেন:
…নরহত্যা কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, তোমার পিতামাতাকে সম্মান করো ও তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতোই প্রেম করো (মথি ১৯:১৮-১৯)।
যখন সেই যুবকটি বলেছিল, “এ সমস্ত আমি পালন করেছি,” যিশু তখন আরো একটি আজ্ঞা যোগ করেছিলনে। “…তুমি যদি সিদ্ধ হতে চাও, তাহলে যাও, গিয়ে তোমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দাও, তাহলে তুমি স্বর্গে ধন লাভ করবে। তারপর এসে আমাকে অনুসরণ করো” (মথি ১৯:২০-২১)। নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল যিশুকে সম্পদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা।
যুবকটি দুঃখিত হয়ে চলে গিয়েছিল, কারণ তার প্রচুর সম্পত্তি ছিল। ধনী যুবকটি তার প্রতিবেশীকে পুরোপুরি ভালোবাসতে পারেনি; সে তার সম্পত্তি বিক্রি করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে না। সে ঈশ্বরকে পুরোপুরি ভালোবাসতে পারেনি; সে যীশুকে অনুসরণ করার জন্য বাড়ি ছেড়ে যাবে না। এই যুবকের হৃদয় বিভক্ত ছিল। সে ঈশ্বরকে চেয়েছিল, কিন্তু সাথে সে তার বিপুল সম্পত্তিও চেয়েছিল।
শিষ্যত্বের দাবী দেখে শিষ্যরা খুবই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তাহলে কে পরিত্রাণ পেতে পারে?” যিশুর প্রত্যুত্তরই এই প্রশ্নটির উত্তর, “সাধারণ বিশ্বাসীদের পক্ষে কি নিখুঁতভাবে ভালোবাসা সম্ভব?”। যিশু বলেছিলেন, “মানুষের পক্ষে এটা অসম্ভব, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে সবকিছুই সম্ভব” (মথি ১৯:২৫-২৬)।
মানুষের শক্তিতে, ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে নিখুঁতভাবে ভালোবাসা অসম্ভব। কিন্তু ঈশ্বরের সাহায্যে সবই সম্ভব। একজন প্রেমময় পিতা তার সন্তানদের কখনোই এমন আদেশ দিয়ে হতাশ করেন না যেগুলো পালন করা যায় না। শাস্ত্রের আদেশগুলি মূলত অনুগ্রহের সাথে আদেশ পালনে সাহায্য করে। “তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন নিখুঁত তেমনি নিখুঁত হও”, এই আদেশটি খ্রিস্টানদের হতাশার দিকে চালিত করার বিধান নয়। এটি একটি অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি যে ঈশ্বর আমাদের মধ্যে সেই সবকিছুই করতে পারেন যা আমরা নিজেদের মধ্যে কখনোই করতে পারিনি।
নিখুঁত হওয়ার জন্য যিশুর আদেশ পালন করা কি সম্ভব? যিশুর প্রচার অনুসারে, উত্তরটি একটি আনন্দদায়ক “হ্যাঁ!” ঈশ্বরের রাজ্যে নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল এক নিখুঁত ভালোবাসার হৃদয়। ঈশ্বরের রাজ্যে নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে এককভাবে ভালোবাসা। এটা কি সম্ভব? যিশুর মতে, নিখুঁত প্রেম একইসাথে সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়ও। নিখুঁত প্রেম হল তাঁর লোকেদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য।
জেসন বলেছেন, “আমি আমার পুরো হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসি। এবং বেশিরভাগ লোককেই ভালোবাসি। কিন্তু আমি কৃষ্ণাঙ্গদের ভালোবাসতে পারি না। আমার মনে হয় সব কৃষ্ণাঙ্গই অলস।”
জেসনের বন্ধু এর উত্তরে বলেছিলেন, “কিন্তু খ্রিস্টবিশ্বাসী মানে তো সবাইকেই ভালোবাসতে হবে! খ্রিস্টবিশ্বাসীরা অন্য লোকেদের অন্যায়ভাবে বিচার করতে পারে না।” জেসন উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি মনে করি না যে ঈশ্বর এই ধরনের ছোট জিনিসগুলিতে আগ্রহী। আমাদের থেকে আলাদা মানুষদের এড়িয়ে চলা কি স্বাভাবিক নয়?”
ঈশ্বর বলেছেন, “পবিত্র লোকেরা সকলকে – এমনকি যারা আমাদের থেকে আলাদা তাদেরকেও – ভালোবাসা এবং অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখে।”
শাস্ত্রের এই রাজকীয় বিধান, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতোই ভালোবেসো,” যদি তোমরা প্রকৃতই মেনে চলো, তাহলে তোমরা ঠিকই করছ। কিন্তু তোমরা যদি পক্ষপাতিত্ব করো, তবে পাপ করেছ এবং বিধানের দ্বারাই তোমরা বিধানভঙ্গকারীরূপে দোষী সাব্যস্ত হবে (যাকোব ২:৮-৯)।
আপনার চরিত্রের একটি পরিমাপ হল আপনি সেইসব লোকেদের সাথে কেমন আচরণ করেন যারা আপনার জন্য কিছুই করতে পারে না। অর্থ, চাকরি বা কর্তৃত্ব দিয়ে আমাদের পুরস্কৃত করার অবস্থানে থাকা লোকেদের প্রতি সমাদর ও সম্মান প্রদর্শন করা সহজ। ভালোবাসা তাদেরকেই সম্মান করে যারা আমাদের জন্য কিছুই করতে পারে না: দরিদ্র, বৃদ্ধ, শিশু এবং পদহীন অন্য যেকোনো মানুষ। প্রেমের রাজকীয় বিধান প্রভাবিত করে যে কীভাবে আমরা প্রত্যেকের সাথে আচরণ করি। প্রেম বিধান পরিপূরণ করে।
প্রেম বিধান পরিপূরণ করে
নিখুঁত প্রেমের থিমটি একটি পবিত্র জীবনের বার্তার কেন্দ্রবিন্দু। পাঠ ৭-এ, আমরা দেখেছি যে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা একটি সাধারণ আবেগের চেয়ে অনেক বেশি। ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা আমাদের জীবনের সমগ্র ফোকাস পরিবর্তন করে দেয়। আমরা এখন নিজেকে খুশি করার চেয়ে ঈশ্বরকে খুশি করতে চাই। একইভাবে, আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা আমাদের মনোযোগ নিজেদের দিকে থেকে অন্যদের দিকে নিয়ে যায়।
পৌল রোমের মন্ডলীকে লিখেছিলেন:
তোমরা কারও কাছে কোনো ঋণ কোরো না, কেবলমাত্র পরস্পরের কাছে ভালোবাসার ঋণ কোরো; কারণ যে তার অপরকে ভালোবাসে, সে বিধান পূর্ণরূপে পালন করেছে। “ব্যভিচার কোরো না,” “নরহত্যা কোরো না,” “চুরি কোরো না,” “লোভ কোরো না,” এই আজ্ঞাগুলি এবং আরও যে কোনো আজ্ঞা থাকুক না কেন, এই একটি আজ্ঞায় সেসবই সংকলিত হয়েছে, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতোই প্রেম করো।” ভালোবাসা প্রতিবেশীর কোনও অনিষ্ট করে না। সেই কারণে, প্রেম করাই বিধানের পূর্ণতা। (রোমীয় ১৩:৮-১০)।
প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসী প্রেমের ঋণে ঋণী। পৌল আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে আমরা যদি প্রেমের বাধ্যবাধকতা পূরণ করি তাহলে আমরা বিধানের অন্যান্য সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করব। আমরা যদি অন্যদের ভালোবাসি, তাহলে আমরা ব্যভিচার, খুন, চুরি বা লোভ করব না। বিধানের বাধ্যবাধকতা পরিপূর্ণ তখনই হবে যখন আমি আমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসব।
রোমীয়র শেষদিকের অধ্যায়গুলিতে, পৌল দেখিয়েছেন কীভাবে ভালোবাসা বিধান পরিপূর্ণ করে। যারা ঈশ্বরের প্রেমে পরিপূর্ণ, তারা:
নিজেদের চেয়ে খ্রিষ্টের দেহের সেবায় বেশি নিয়োজিত থাকে (রোমীয় ১২:৩-৫)
মন্দকে ঘৃণা করে এবং উত্তমকে প্রেম করে (রোমীয় ১২:৯)
অন্যদের প্রতি পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনে আগ্রহী হয় (রোমীয় ১২:১০)
পরস্পরের প্রয়োজনের খেয়াল রাখে (রোমীয় ১২:১৩)
পারস্পরিকভাবে, এমনকি শত্রুদের সাথেও শান্তিতে বসবাস করে (রোমীয় ১২:১৪-২১)
সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করে (রোমীয় ১৩:১-৭)
অন্য বিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে সম্মান করে (রোমীয় ১৪:১-২৩)
খ্রিষ্টের মতোই তাদের প্রতিবেশীদের প্রয়োজন পরিপূরণ করে (রোমীয় ১৫:১-৩)
ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা আমাদের হৃদয়ের অভিমুখকে নিজের দিক থেকে ঈশ্বরের দিকে পরিবর্তন করে। আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা আমাদের হৃদয়ের অভিমুখ নিজের দিক থেকে অন্যের দিকে পরিবর্তন করে। দুটোই পবিত্র ব্যক্তি হওয়ার অর্থের অংশ।
জন ওয়েসলি (John Wesley) খ্রিষ্টীয় পরিপূর্ণতার অর্থ তুলে ধরেছেন:
প্রেম ঈশ্বরের সর্বোচ্চ উপহার; নম্র, মৃদু, ধৈর্যশীল ভালোবাসা। সমস্ত দর্শন, প্রকাশ বা উপহার ভালোবাসার তুলনায় সামান্য জিনিস। ধর্মে উচ্চতর কিছু নেই; আপনি যদি আরো বেশি ভালোবাসার পরিবর্তে আরো কিছুর সন্ধান করেন তবে তা আর অন্যকিছু নয়, আপনি প্রশস্ত চিহ্নের সন্ধান করছেন, আপনি রাজকীয় পথ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
এবং যখন আপনি অন্যদের জিজ্ঞাসা করছেন, “আপনি কি এটি বা সেই আশীর্বাদটি পেয়েছেন?” আপনি যদি আরো বেশি ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু বলতে চান তবে আপনি ভুল করছেন; আপনি তাদেরকে পথ থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছেন। তাহলে আপনার হৃদয়ে এটি স্থির করুন, যে মুহুর্ত থেকে ঈশ্বর আপনাকে সমস্ত পাপ থেকে রক্ষা করেছেন, আপনি আর অন্যকিছু করার লক্ষ্য রাখবেন না, তবে ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে বর্ণিত সেই ভালোবাসার প্রতি আরো বেশি লক্ষ্য রাখবেন। আপনি এর চেয়ে আর উপরে যেতে পারবেন না।[1]
আমাদের খ্রিষ্টবিশ্বাসী প্রতিবেশীদের ভালোবাসা
দুটি ক্ষেত্র প্রদর্শন করবে যে অন্য খ্রিস্টবিশ্বাসীদের প্রতি নিখুঁত প্রেম কেমন হয়।
প্রেম অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে সম্মান করে
করিন্থের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে লেখা পত্রে, পৌল খ্রিস্টীয় স্বাধীনতার বিষয়টি সম্বোধন করেছিলেন। আমার স্বাধীনতার দ্বারা আত্মিকভাবে আহত হতে পারে এমন অন্য একজন বিশ্বাসীর জন্য আমার কেমন প্রতিক্রিয়া থাকা উচিত? পৌল সেইসব দৃঢ় খ্রিস্টবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন যারা বলেছে, “আমরা জানি যে প্রতিমা কিছুই নয়। প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খাওয়াও আমাদের কাছে বড় কোনো ব্যাপারে নয়।” পৌল উত্তর দিয়েছেন:
কিন্তু, তোমরা সতর্ক থেকো, তোমাদের এই অধিকার যেন কোনোভাবেই দুর্বল মানুষের কাছে বিঘ্নের কারণ না হয়। কারণ দুর্বল বিবেকবিশিষ্ট যদি কেউ তোমাকে, অর্থাৎ তোমার মতো জ্ঞানবিশিষ্ট মানুষকে, প্রতিমার মন্দিরে খাবার গ্রহণ করতে দেখে, তাহলে সে কি প্রতিমাদের কাছে উৎসর্গ করা খাবার গ্রহণ করতে সাহস পাবে না? তাই, তোমার জ্ঞানের জন্য এই দুর্বল বিশ্বাসী, যার জন্য খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছেন, তাকে নষ্ট করা হয়। তোমরা যখন তোমাদের ভাইবোনের বিরুদ্ধে পাপ করো ও তাদের দুর্বল বিবেককে আঘাত করো, তোমরা খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে পাপ করো। এই কারণে, আমি যে খাবার গ্রহণ করি, তা যদি অপর বিশ্বাসীর পাপে পতনের কারণ হয়, আমি আর কখনও সেই খাবার গ্রহণ করব না, যেন আমি তার পতনের কারণ না হই। (১ করিন্থীয় ৮:৯-১৩)।
পৌল নিজেকে একজন দুর্বল খ্রিস্টীয় ভাইকে পতনের কারণ না করে বরং সারা জীবনের জন্য মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবেন। নিখুঁত প্রেমের অর্থ হল যে সে তার নিজের অধিকারের চেয়ে অন্য খ্রিস্টীয় ভাইয়ের পরিত্রাণের জন্য বেশি যত্নশীল। পরে, পৌল বলেছেন, “কিন্তু আমরা এই অধিকার প্রয়োগ করিনি। কিন্তু তার পরিবর্তে, আমরা সবকিছু সহ্য করেছি, যেন খ্রীষ্টের সুসমাচারের কোনো বাধা সৃষ্টি না করি।” (১ করিন্থীয় ৯:১২)।
করিন্থীয়দের বক্তব্য, “আমরা যা করতে চাই তা করতে পারি। অন্য বিশ্বাসীদের ব্যাপারে ভাবার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই।” পৌল বলেছেন, “আমি অন্যান্য বিশ্বাসীদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরিচর্যা করার জন্য মুক্ত। আমি আমার নিজের আকাঙ্খা ও অধিকারের অধীন নই। আমি মুক্তভাবে অন্যদের ভালোবাসতে পারি।” এটি হল নিখুঁত বা সিদ্ধ প্রেম, যা ঈশ্বর প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে দিতে চান।
► রোমীয় ১৪ পড়ুন।
রোমের মন্ডলীতে, দুর্বল খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা ছিল যারা কেবল শাকসবজি খেতেন। এরা ইহুদি খ্রিষ্টবিশ্বাসী হতে পারে যারা ইহুদিদের খাদ্য আইন মেনে চলতে থাকে এবং অপরিষ্কার খাবার খাওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না। আরো দৃঢ় খ্রিষ্টবিশ্বাসীও ছিল যারা যথেষ্ট জ্ঞানী ছিল এবং তারা জানত যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য খাদ্য আইন আর বাধ্যতামূলক নয়।
পৌল প্রতিটি দলকেই দেখিয়েছিলেন যে খ্রিষ্টের মতো প্রেম করার অর্থ কী। দুর্বল খ্রিস্টবিশ্বাসীর অবশ্যই সেই ব্যক্তির বিচার করা উচিত নয় যে মাংস খায়। ভালোবাসা বিচার করে না।
তবে, দৃঢ় খ্রিষ্টবিশ্বাসী কখনোই দুর্বল খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে ঘৃণা করবেন না এবং তার স্বাধীনতাকে এমনভাবে ব্যবহার করবেন না যা দুর্বলদের বিশ্বাসকে ক্ষুন্ন করবে। পরিবর্তে, দৃঢ় খ্রিষ্টবিশ্বাসী দুর্বল বিশ্বাসীর বিশ্বাসকে ধ্বংস না করার জন্য তার নিজের অধিকার ছেড়ে দেবে। কেন? ভালোবাসার খাতিরে:
তুমি যা খাও, সেই কারণে তোমার ভাই যদি অস্বস্তি বোধ করে, তাহলে তুমি আর প্রেমপূর্ণ আচরণ করছ না। তোমার খাওয়াদাওয়ার জন্য তোমার ভাইয়ের বিনাশের কারণ হোয়ো না, যার জন্য খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছেন। (রোমীয় ১৪:১৫)।
এটাই হল আপনার খ্রিষ্টবিশ্বাসী প্রতিবেশীকে ভালবাসার অর্থ। আমাদেরকেও খ্রিষ্টের মতোই প্রেম করতে হবে। তিনি এই দুর্বল ভাইয়ের জন্য জীবন দিয়েছেন; নিশ্চিতভাবে পৌল বলেছেন, আমরা মাংস খাওয়ার অধিকার ছেড়ে দিতে পারি।
► একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন যেখানে দৃঢ় এবং ঐশ্বরিক বিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। এগুলি স্পষ্ট বাইবেলভিত্তিক শিক্ষার বিষয় নয়; একটি বিবিধ বিশ্বাসের বিষয়। এইক্ষেত্রে রোমীয় ১৪ থেকে পৌলের নীতিগুলি প্রয়োগ করুন। কীভাবে প্রতিটি দল – দুর্বল এবং দৃঢ় খ্রিস্টবিশ্বাসীরা – এই ক্ষেত্রটিকে নির্দেশ করে?
প্রেম পাপে পতিত হওয়া একজন খ্রিস্টবিশ্বাসীর জন্য চিন্তা করে
রেচেল একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী যিনি ব্যবসায়িক লেনদেনে তার মন্ডলীর একজন সদস্য দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। আইজ্যাক রেচেলকে জেনেশুনে এমন একটি ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করে যে গাড়িটির গুরুতর যান্ত্রিক সমস্যা আছে। আইজ্যাক র্যাচেলকে মিথ্যা বলেছিল, “আমি এই গাড়িটা একজন মেকানিককে দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। এটি চমৎকার অবস্থায় রয়েছে। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী।”
গাড়ি কেনার দুই দিন পর, রেচেল জানতে পারলেন যে গাড়ির ট্রান্সমিশন খারাপ ছিল – এবং আইজ্যাক এই সমস্যা সম্পর্কে জানতেন।
► রেচেলের কী করা উচিত?
আপনার কী মনে হয়, “র্যাচেলের সবাইকে সতর্ক করা উচিত যে আইজ্যাক অসৎ?” নাকি আপনার মনে হয়, "রেচেলের একজন সহ খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে বিরক্ত করার জন্য কিছুই বলা উচিত নয়?” যিশুর উত্তর দেখা যাক।
► মথি ১৮:১৫-১৭ পড়ুন।
যিশু চারটি পদক্ষেপ দিয়েছেন যা দেখায় যে একজন পাপে পতিত হওয়া সহ-খ্রিষ্টবিশ্বাসীর সাথে নিখুঁত প্রেম ঠিক কেমন আচরণ করে। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে এই উদাহরণটি পাপপূর্ণ আচরণের সাথে সম্পর্কিত। যিশু ব্যক্তিগত মতভেদের কথা বলছেন না। যিশু মোটেই বলছেন না, “যাও, অন্য সবার সমস্যায় জড়িয়ে পড়ো।” যিশু এমন একটি পরিস্থিতিকে সম্বোধন করছেন যেখানে একজন খ্রিষ্টীয় ভাই অন্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে পাপ করে। পদক্ষেপগুলি দেখুন:
১। আমি সেই ভাইয়ের কাছে একা যাব। নিখুঁত প্রেম মন্দ কিছুতে আনন্দ করে না (১ করিন্থীয় ১৩:৬)। এটি ভুলটিকে সকলের কাছে প্রচারের সুযোগ খোঁজে না। পরিবর্তে, একজন প্রেমময় ব্যক্তি শান্তভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করে। একজন প্রেমময় ব্যক্তি পাপকাজে ধরা পড়া ব্যক্তিকে কোমল মনোভাব নিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনে (গালাতীয় ৬:১)। মূল উদ্দেশ্যটি হল একজন ভাইকে পুনরুদ্ধার করা, প্রতিশোধ নেওয়া নয়। যদি সেক্ষেত্রে কোনো অনুতাপ না থাকে...
২। আমি এক বা দুজন আত্মিক নেতাকে সাক্ষী হিসেবে রাখব। পুনরায় মূল উদ্দেশ্যটি হল পুনরুদ্ধার করা। এই সাক্ষীদের অবশ্যই মন্ডলীর আত্মিক নেতা হতে হবে যারা সঠিক শিক্ষা দিতে পারে এবং আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে (গালাতীয় ৬:১)। যদি সেক্ষেত্রে কোনো অনুতাপ না থাকে...
৩। আমি অবশ্যই দোষকে মন্ডলী ফেলোশিপের নজরে আনবো। এখনো পুনরুদ্ধার করাই মূল উদ্দেশ্য। প্রতিশোধ নেওয়া বা জনসমক্ষে অপমান করা কখনোই উদ্দেশ্য নয়। এক ভাইয়ের মধ্যে অনুতাপ আনা এবং তাকে আগের অবস্থায় আনাই মন্ডলীর শাসনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। যদি সেই ব্যক্তি জেদী হয় এবং অনুতাপ করতে অস্বীকার করে...
৪। মন্ডলীর সেই দোষী সদস্যকে শৃঙ্খলাপরায়ণ করা আবশ্যক। করিন্থীয় মন্ডলীতে একজন সদস্য ছিল যে যৌনতা সংক্রান্ত পাপে দোষী ছিল। পৌল সেই ব্যক্তিতে শৃঙ্খলাপরায়ণ করার জন্য মন্ডলীকে আদেশ দিয়েছিলেন। “তোমরা ওই দুষ্ট ব্যক্তিকে তোমাদের মধ্য থেকে দূর করে দাও” (১ করিন্থীয় ৫:১৩)। আমরা খ্রিষ্টের দেহে কোনো পাপকে অবজ্ঞা করতে পারি না।
তবে, যিশুর বক্তব্যটি দেখুন। তাকে পরজাতীয় বা কর আদায়কারী হিসেবেই দেখুন (মথি ১৮:১৭)। পরজাতীয় এবং কর আদায়কারীদের সাথে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের কেমন আচরণ করা উচিত? ভালোবাসা দিয়ে। এমনকি এখানেও, উদ্দেশ্যটি হল পুনরুদ্ধার করা। ২ করিন্থীয়তে, পৌল এমন একজন বিশ্বাসীর অবস্থার কথা উল্লেখ করেছিলেন যে মন্ডলীর কাছ থেকে শাসন পেয়েছে এবং অনুতাপ করেছে। পৌল বলেছেন,
অধিকাংশ লোকই তাকে যে শাস্তি দিয়েছে, তাই তার পক্ষে যথেষ্ট। বরং, এখন তোমাদের উচিত তাকে ক্ষমা করা ও সান্ত্বনা দেওয়া, যেন সে দুঃখের আতিশয্যে ভেঙে না পড়ে। তাই, আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা পুনরায় তার প্রতি তোমাদের ভালোবাসা প্রদর্শন করো। (২ করিন্থীয় ২:৬-৮)।
১ করিন্থীয়তে, মন্ডলী উন্মুক্ত পাপকে প্রশ্রয় দিয়েছিল এবং পাপীকে শাসন করতে ইচ্ছুক ছিল না। পৌল তাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা-র অর্থ হল আমরা যেন তাদের শাসন করি যারা খ্রিস্টের দেহের বিরুদ্ধে পাপ করে।
২ করিন্থীয়তে, মন্ডলী একজন ব্যক্তিকে শাসন করেছিল যে পাপ করেছিল, কিন্তু যখন এই ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়েছিল, মন্ডলী তাকে ক্ষমা করতে চায়নি! পৌল তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা-র অর্থ হল আমরা যেন অনুতপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করি (২ করিন্থীয় ২:৭)।
মন্ডলীর শাসনের উদ্দেশ্য সর্বদা অনুতাপ করা এবং পুনরায় গঠন করা হতে হবে। নিখুঁত ভালোবাসা প্রতিশোধ চায় না।
আমাদের অবিশ্বাসী প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসা
আমরা কীভাবে অবিশ্বাসীদের প্রতি নিখুঁত প্রেম প্রদর্শন করি, বিশেষত তাদের প্রতি যারা আমাদেরকে খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে ঘৃণা করে? যিশু বলেছেন:
তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছিল, ‘তোমার প্রতিবেশীকে প্রেম কোরো’ ও ‘তোমার শত্রুকে ঘৃণা কোরো। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের অত্যাচার করে, তোমরা তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো, যেন তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও। (মথি ৫:৪৩-৪৫)।
আপনি যখন আপনার তাড়নাকারীদের ভালোবাসেন, তখন আপনি আসলে আপনার স্বর্গস্থ পিতার মতোই নিখুঁত। পবিত্র লোকেরা আমাদের স্বর্গস্থ পিতার মতোই প্রেম করেন। এটাই হল নিখুঁত হওয়ার অর্থ।
পবিত্র লোকেরা “অন্যদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে, কেবল সহবিশ্বাসীদের প্রতিই নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাসী নয়, যারা আমাদের বিরোধিতা করে এবং যারা পাপকর্মে লিপ্ত হয় তাদের সকলের প্রতিও ভালোবাসা প্রদর্শন করে। যারা আমাদের বিরোধিতা করে তাদের সাথে আমাদেরকে সদয়, ভদ্রভাবে, ধৈর্যের সাথে এবং নম্রভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ঈশ্বর বিবাদের আলোড়ন, প্রতিশোধ নেওয়া, বা হুমকি বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব মীমাংসা বা ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার পাওয়ার উপায় হিসেবে হিংসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। যদিও ঈশ্বর আমাদেরকে পাপপূর্ণ কাজগুলিকে ঘৃণা করার নির্দেশ দেন, আমাদের যেকোনো ব্যক্তিকে ভালোবাসতে হবে এবং তার জন্য প্রার্থনা করতে হবে যে এই ধরনের আচরণে জড়িত।”[2]
খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা সর্বদাই এমন একটি জগতে বাস করে যা সুসমাচারের বিরোধিতা করে। পৌল রোমে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে এমন এক কর্তৃপক্ষকে সম্মান করতে এবং তাদের এমন একটি সরকারকে ট্যাক্স দিতে আদেশ করেছিলেন যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের হত্যা করেছে এবং শীঘ্রই পৌলকেও হত্যা করতে চলেছে।
পিতর সমস্ত খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের আদেশ দিয়েছেন, “প্রত্যেক মানুষের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করো: বিশ্বাসী সমাজকে প্রেম করো, ঈশ্বরকে ভয় করো, রাজাকে সমাদর করো” (১ পিতর ২:১৭)। আবারও, একজন দুষ্ট শাসকই পিতরকে এরপর দ্রুত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পিতর খ্রিস্টবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে আমাদের শত্রুদেরকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে। আমরা আমাদের শত্রুদেরকে ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা সুসমাচারের সত্যতার সাক্ষ্য দিই। “কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছা হল এই যে, সৎকর্মের দ্বারা তোমরা নির্বোধ লোকেদের অর্থইীন কথাবার্তাকে যেন স্তব্ধ করে দিতে পারো” (১ পিতর ২:১৫)।
জোশুয়া হলেন উত্তর নাইজেরিয়ার এমন একটি এলাকায় একজন নাইজেরিয় পাস্টার যেখানে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা ইসলামিক জঙ্গিদের হাতে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিল। ইসলামিক সৈন্যরা গির্জাঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল, খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের হত্যা করেছিল এবং দাস হিসেবে বিক্রি করার জন্য অল্পবয়সী মেয়েদের অপহরণ করেছিল। শেষবার যখন আমি নাইজেরিয়া গিয়েছিলাম, জোশুয়া আমাকে মন্ডলীর সদস্যদের মৃতদেহের ছবি দেখিয়েছিলেন যারা ইসলামিক হামলাকারীদের হাতে নিহত হয়েছিল।
তারপরে জোশুয়া আমাকে এই আক্রমণগুলিতে তার মন্ডলীর প্রতিক্রিয়ার ছবিগুলি দেখিয়েছিল। তার গির্জা একটি মুসলিম গ্রামে একটি স্কুল তৈরি করেছে; তারা গ্রামের জন্য নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য একটি কুঁয়ো খুঁড়েছে; তারা পোলিওতে আক্রান্ত মুসলিমদের জন্য হুইলচেয়ার দিয়েছে; তারা এই গ্রামের জন্য একটি মেডিকেল ক্লিনিক নির্মাণ করেছে। তারা তাদের শত্রুর প্রতি ভালোবাসা দেখাচ্ছে।
পাস্টার জোশুয়া বলেছিলেন, “বহু মুসলিম খ্রিষ্টের কাছে আসছে কারণ তারা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের ভালোবাসা দেখেছে। আমরা ওদের বন্দুক বা প্রতিশোধের দ্বারা বশ করিনি; আমরা মথি ৫:৪৩-৪৮-এর মতো জীবন যাপন করে ওদের হৃদয় জিতে নিয়েছি।” এটাই হল নিখুঁত প্রেমের ফসল যা আমাদের আজকের জগতে যাপন করা হয়।
► আপনার পরিচিত অবিশ্বাসী প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী কী? আপনার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য কিছু ব্যবহারিক পদক্ষেপের তালিকা করুন।
রাশিয়ান লেখক লিও টলস্টয় একটি ছোট গল্প লিখেছেন যেটি দেখায় যে নিখুঁত প্রেমের জীবনযাপনের অর্থ কী। মার্টিন ছিল এক দরিদ্র মুচি, যে ঈশ্বরকে গভীরভাবে ভালোবাসত।[3] এক রাতে, মার্টিন বাইবেল পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে। সে স্বপ্নে দেখে যে যিশু বলছেন, “আগামীকাল আমি তোমার দোকানে যাব।”
পরের দিন মার্টিন যিশুর জন্য অপেক্ষা করছিল। অন্যান্য লোকেরা মার্টিনের দোকানে এসেছিল, কিন্তু যিশু আসেননি। একজন বৃদ্ধ সৈনিক ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে কাঁপছিল। মার্টিন সেই সৈনিককে তার দোকানে গরম চা খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। একজন দরিদ্র মহিলা দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল এবং তার বাচ্চাকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছিল। মার্টিন সেই শিশুটির জন্য স্যুপ এবং একটি কম্বল নিয়ে এসেছিল। পরে মার্টিন এক ক্ষুধার্ত কিশোরকে খাবার কিনে দেয়।
মার্টিন হতাশ হয়েছিল যে যিশু আসেননি, তাই সে বলেছিল, “এটি কেবলই একটি স্বপ্ন ছিল। যিশু জুতোর দোকানে আসবেন এটা ভাবাই আমার বোকামি ছিল।”
সেই রাতে, মার্টিন তার বাইবেল পড়তে পড়তে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সে স্বপ্নে দেখে তার দোকানে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। সৈনিকটি বলছে, “মার্টিন, তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? আমি যিশু!” শিশুটিকে নিয়ে থাকা মহিলাটি বলছে, “মার্টিন, আমি যিশু।” ক্ষুধার্ত কিশোরটি বলছে, “আমি যিশু।” মার্টিন ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং পড়তে শুরু করে:
কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে খাবার দিয়েছিলে; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে পান করতে দিয়েছিলে; আমি অপরিচিত ছিলাম, তোমরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলে; আমার পোশাকের প্রয়োজন ছিল, তোমরা পোশাক দিয়েছিলে; আমি অসুস্থ ছিলাম, তোমরা আমার দেখাশোনা করেছিলে; আমি কারাগারে ছিলাম, তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে… আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন তোমরা আমার এই ভাইবোনদের মধ্যে নগণ্যতম কারও প্রতি এরকম করেছিলে, তখন তা আমারই প্রতি করেছিলে (মথি ২৫:৩৫-৪০)।
দ্বিতীয় শতাব্দীতে, খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের একটি দলকে “জুয়াড়ি” বলা হত কারণ তারা সংক্রামক রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল। সেই জুয়াড়িরা বন্দীদের সাথে দেখা করত, অসুস্থদের যত্ন করত এবং পরিত্যক্ত শিশুদের উদ্ধার করত। জুয়াড়িরা নিখুঁত ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল।
২৫২ খ্রিষ্টব্দে, কার্থেজ শহরে একটি প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। ডাক্তাররা রোগীদের দেখতে অস্বীকার করতেন; পরিবারের লোকেরা মৃতদের লাশ রাস্তায় ফেলে দিত; শহরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল ছিল। কার্থেজের বিশপ সাইপ্রিয়ান (Cyprian) সেইসময়ে তার মণ্ডলীকে একত্রে ডাকেন। তিনি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের নিখুঁত ভালোবাসার মানুষ হতে বলা হয়েছে। কার্থেজের খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা মৃতদের কবর দিয়েছিল, অসুস্থদের সেবা করেছিল এবং শহরটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। তারা ছিল নিখুঁত ভালোবাসার মানুষ; তারা ঠিক তেমনই নিখুঁত ছিল যেমন তাদের স্বর্গের পিতা নিখুঁত।
[1]John Wesley, A Plain Account of Christian Perfection (Kansas City: Beacon Hill Press, 1966), 99 থেকে অভিযোজিত।
[2]Discipline of the Bible Methodist Connection of Churches, 2014 থেকে।
[3]লিও টলস্টয়, “যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে ঈশ্বরও আছেন।”
তিনি রহস্যের চাবিকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন – এস্টার অ্যাহন কিম
এস্থার অ্যান কিম (Esther Ahn Kim) ছিলেন একজন সঙ্গীত শিক্ষিকা যিনি ১৯৩৭ সালে জাপানি দখলদারিত্ব শুরুর সময় কোরিয়ায় বসবাস করতেন।[1] জাপানিরা প্রত্যেক নাগরিককে নমসান পর্বতে সূর্যদেবীর উপাসনালয়ে প্রণাম করতে বাধ্য করেছিল। ১৯৩৯ সালে, এস্থারকে মন্দিরে প্রণাম করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মাথা নত করতে অস্বীকার করার শাস্তি ছিল জেল এবং নির্যাতন।
কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, “আমরা বাহ্যিকভাবে প্রণাম করব, কিন্তু আমরা আমাদের হৃদয়ে খ্রিষ্টেরই উপাসনা করব।” এস্থার দৃঢ়সংকল্প করেছিলেন যে তিনি মিথ্যা ঈশ্বরের কাছে মাথা নত করতে পারবেন না। এক অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন। সেদিন তিনি মাথা নত করতে অস্বীকার করেছিলেন।
১৯৩৯ সালের শেষের দিকে, বেশ কয়েক মাস লুকিয়ে থাকার পর, এস্থার অ্যান কিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি সেই মাসগুলি জেলে যাওয়ার প্রস্তুতিতে কাটিয়েছিলেন। তিনি উপবাস করেছিলেন এবং প্রার্থনা করেছিলেন, তিনি শাস্ত্র মুখস্থ করেছিলেন, তিনি কষ্টভোগ করার জন্য তার মন এবং শরীরকে প্রস্তুত করেছিলেন।
কিম ছ’বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন। তাকে অনেকবার নির্যাতন করা হয়েছিল কিন্তু তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন। কিন্তু কিম জানতেন যে তাকেও তার প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে বলা হয়েছিল। কারাগারে, এস্থার প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা করতে শুরু করতেন, “হে ঈশ্বর, তুমি আজ আমার মাধ্যমে কাকে ভালোবাসতে চাও?” একবার তিনি এমন এক মহিলাকে কয়েক দিনের জন্য তার খাবারের রেশন দিয়েছিলেন যে তার স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ছিল। এস্থার কিমের ভালোবাসার মাধ্যমে এই মহিলা মৃত্যুর আগে খ্রিষ্টের কাছে এসেছিল।
[1]Esther Ahn Kim, If I Perish (Chicago: Moody Press, 1977) থেকে অভিযোজিত।
৮ নং পাঠের পর্যালোচনা
(১) যিশুর জগতের লোকেরা পুরাতন নিয়ম থেকে পবিত্রতা সম্পর্কে যা শিক্ষা পেয়েছিল তা বিশ্বাস করেছিল। তবে, তারা এক পবিত্র জাতির জন্য ঈশ্বরের আদর্শ অনুসারে জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
(২) পবিত্রতার নিখুঁত দৃষ্টান্ত নাসরতীয় যিশুর জীবনে দেখা যায়। তিনি পুরাতন নিয়ম থেকে পবিত্রতার প্রতিটি নীতি অনুসরণ করেছিলেন।
(৩) আমাদের প্রতিবেশীকে নিখুঁতভাবে ভালবাসা মানে যিশুর মতো ভালোবাসা – আত্মত্যাগের মাধ্যমে এবং নম্রভাবে।
(৪) নিখুঁত হওয়া মানে সম্পূর্ণ হওয়া। নিখুঁত হওয়ার অর্থ এই নয় যে আর কোনো বৃদ্ধি প্রয়োজন নেই।
(৫) একটি আদেশ আসলে একটি “প্রতিশ্রুতির ছদ্মবেশে”। ঈশ্বর যা আদেশ করেন, তিনি তা সম্ভব করেন। পবিত্রতা মানুষের শক্তি দ্বারা নয়, ঈশ্বরের অনুগ্রহে সম্পন্ন হয়।
(৬) প্রেম বিধান পূরণ করে। যখন আমরা ঈশ্বরের যেমন প্রেম করতে বলেছেন সেইরকম প্রেম করব, তখনই আমরা বিধানের দাবি পরিপূরণ করব।
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) “আপনার ২১ শতকের শত্রুকে ভালোবাসা” – এটির ওপর একটি প্রচার তৈরি করুন। শাস্ত্রের রেফারেন্স হিসেবে মথি ৫:৪৩-৪৮ ব্যবহার করুন। আমাদের জগতে শত্রুকে ভালোবাসার অর্থ কী তা দেখান। আপনার শত্রুকে ভালোবাসার কাজটি সম্ভব করে তোলার জন্য ঈশ্বর খ্রিষ্টের মাধ্যমে কী করেছেন সেই সংক্রান্ত সুসমাচারটি (সুসংবাদ) অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করবেন।
(২) মথি ৫:৪৩-৪৮ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.