ইস্রায়েলের লোকেরা কনান দেশে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। ঈশ্বর তাদেরকে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছিলেন, এবং তারা প্রতিজ্ঞার দেশ থেকে অল্পই দূরে ছিল। মোশি সেই দেশটিকে ভালোভাবে বোঝার জন্য ১২ জন গুপ্তচরকে পাঠিয়েছিলেন। ৪০ দিন পরে, গুপ্তচরেরা চমৎকার আঙ্গুর নিয়ে ফিরে এসেছিল এবং কনান দেশের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছিল। সেইসাথে, তারা বলেছিল, কনানীয়রা শক্তিশালী এবং তারা একটা দুর্দান্ত শহরে বাস করে। ওদের কাছে আমাদেরকে ফড়িংয়ের মতো লাগছিল!
শুধু দুজন গুপ্তচর, যিহোশূয় আর কালেব, ঈশ্বরের বিজয়ের প্রতিজ্ঞাকে বিশ্বাস করেছিলেন। কালেব বলেছিলেন, “আমাদের উচিত, উঠে গিয়ে সেই দেশ অধিকার করা, কারণ সেই শক্তি আমাদের অবশ্যই আছে” (গণনাপুস্তক ১৩:৩০)। যিহোশূয় এবং কালেব সেই একই দেশ দেখেছিলেন যা অন্যান্য গুপ্তচরেরা দেখেছিল। তাঁরা বিশাল প্রাচীর দেওয়া শহর দেখেছিলেন। তাঁরা মহান যোদ্ধাদের দেখেছিলেন।
কিন্তু যিহোশূয় এবং কালেব এমনকিছু দেখেছিলেন যা অন্য গুপ্তচরেরা দেখতে পায়নি – তাঁরা দেখেছিলেন যে ঈশ্বর যিনি ইস্রায়েলীদের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন তিনি ইস্রায়েলকে কনান দেশে নিয়ে আসবেন। তাঁরা দেখেছিলেন যে ঈশ্বর যিনি ফরৌণের সৈন্যকে ধ্বংস করেছিলেন তিনিই যিরীহোর প্রাচীর ধ্বংস করবেন। তাঁরা দেখেছিলেন যে অব্রাহামের ছিলেন ঈশ্বরই মোশির ঈশ্বর। ঈশ্বর বলেছিলেন যে কালেবের “অন্তরে এক ভিন্নতর আত্মা আছে এবং যে সর্বান্তঃকরণে আমার অনুগামী হয়েছে” (গণনাপুস্তক ১৪:২৪)।
যেহেতু তারা তাঁকে বিশ্বাস করেনি, ঈশ্বর প্রাপ্তবয়স্ক প্রজন্মের মরুভূমিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিন্দা করেছিলেন। চল্লিশ বছর পরে, ইস্রায়েল কনানে প্রবেশ করেছিল এবং সেই দেশটি ভাগ করার সময় হয়েছিল। কালেবের বয়স তখন ৮০ বছরেরও বেশি। তিনি যিহোশূয়কে বলেছিলেন, “মোশি যেদিন আমাকে বাইরে পাঠিয়েছিলেন, সেদিনের মতো আমি আজও ততটাই শক্তিশালী... এখন আপনি আমাকে এই পার্বত্য দেশটি দিন।” হ্যাঁ, সেখানে একাধিক শক্তিশালী শহর এবং শক্তিশালী যোদ্ধারা ছিল। কিন্তু ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি কালেবের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। “কিন্তু সদাপ্রভুর সাহায্য নিয়ে আমি তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেব, ঠিক যেমনটি তিনি বলেছিলেন” (যিহোশূয় ১৪:১১-১২)।
কোন বিষয়টি কালেবকে এতটা আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল? একটি অবিভক্ত হৃদয়। কালেব বলেছিলেন, “আমি, অবশ্য, সর্বান্তঃকরণে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগামী হয়েছিলাম” (যিহোশূয় ১৪:৮)। কালেব তাঁর সমগ্র হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছিলেন। কালেব একজন অবিভক্ত হৃদয়ের ব্যক্তি ছিলেন।
একটি নিখুঁত হৃদয় হল একটি অবিভক্ত হৃদয়
বাইবেলের ইতিহাস নির্ভর বইগুলো[1] ঈশ্বর তাঁর লোকেদের যে কারণে ডেকেছিলেন সেই বিষয়ে ইস্রায়েলের দুঃখজনক ব্যর্থতার কথা বলে। ইতিহাস নির্ভর বইগুলি দেখায় যে কীভাবে ইস্রায়েল ঈশ্বরের পরিকল্পনা থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। ইস্রায়েলকে অন্যান্য জাতির কাছে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। পরিবর্তে, সে মিথ্যা দেবতার প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠে। তার ব্যর্থতার কারণে, ইস্রায়েল পরাজিত হয়েছিল এবং নির্বাসিত হয়েছিল। তার গৌরব লজ্জায় পরিণত হয়েছিল।
অবিশ্বস্ততার করুণ চিত্রের পাশাপাশি, ওই একই ইতিহাস নির্ভর বইগুলি সেইসব পবিত্র ব্যক্তিদেরকেও দেখায় যাঁরা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করেছিলেন। যখন বহু ইস্রায়েলি ঈশ্বরের (বিচারকর্তৃগণ) কাছে অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিল, তখন একজন যুবতী মোয়াবীয় বিধবা (রূথ) ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। এমনকি নির্বাসনের সময় (২ রাজাবলী), এক যুবতী ইহুদী মেয়ে ঈশ্বরের আহ্বানের বাধ্য হয়েছিল এবং তার লোকদের রক্ষা করেছিল (ইষ্টের)। এই সমস্ত মানুষেরা তাঁদের সমগ্র হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে মান্য করেছিলেন। তাঁরা ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত হওয়ার অর্থে পবিত্র ছিল।
ইতিহাস নির্ভর বইগুলি শেখায় যে পবিত্র হওয়ার মানে হল সম্পূর্ণ আনুগত্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা। পবিত্রতা বলতে নিখুঁত কাজকে বোঝায় না। পবিত্রতা মানে হল একটি অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা।
পুরাতন নিয়মের পুরোনো ইংরেজি অনুবাদগুলি হিব্রু শব্দ শালেম (Shalem) অনুবাদ করার জন্য নিখুঁত (Perfect) শব্দটি ব্যবহার করেছে। শালেম-এর ধারণা “সম্পূর্ণ হওয়া।” নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল সম্পূর্ণ হওয়া। পবিত্র হওয়ার অর্থ হল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের অন্তর্গত হওয়া।
শালেম শব্দটি হিব্রু শব্দ শালোম-এর সাথে সম্পর্কিত। ঈশ্বরের সামনে নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল তাঁর সাথে শান্তিতে থাকা (“তাঁর প্রতি পুরোপুরি সমর্পিত,” ১ রাজাবলী ৮:৬১)। একটি নিখুঁত হৃদয় থাকার অর্থ হল এমন একটি হৃদয়ের অধিকারী হওয়া যেটি সম্পূর্ণ বা অবিভক্ত, এমন একটি যেটির কেবল একক আনুগত্য রয়েছে। ইতিহাস নির্ভর বইগুলি থেকে নিখুঁত বা অবিভক্ত শব্দটির কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক।
এক অবিভক্ত উদ্দেশ্যের সৈন্য
শৌলের মৃত্যুর পর, উত্তরের প্রজাতিরা ইশবোশেথকে রাজা হিসাবে ভূষিত করে এবং পাশাপাশি যিহূদা দায়ূদকে অনুসরণ করে। সেখানে দুই বছরের গৃহযুদ্ধ চলেছিল যেখানে দায়ূদ উত্তরের গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে যিহূদাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দুই বছর পর ইশবোশেথকে তার নিজের সেনাপতিরা হত্যা করে। দায়ূদকে সমস্ত ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে ভূষিত করার জন্য সমস্ত সৈন্যবাহিনী একত্রিত হয়েছিল। একটা গোটা জাতি এক রাজার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
এরা সবাই এমন সব দক্ষ যোদ্ধা, যারা স্বেচ্ছায় সৈন্যদলে নাম লিখিয়েছিল। দাউদকে গোটা ইস্রায়েলের উপর রাজা করার বিষয়ে পুরোপুরি মনস্থির করেই তারা হিব্রোণে এসেছিল। ইস্রায়েলীদের মধ্যে অবশিষ্ট লোকজনও দাউদকে রাজা করার বিষয়ে একমত হল (১ বংশাবলী ১২:৩৮)।
দায়ূদকে রাজা করার জন্য সৈন্যবাহিনী পুরোপুরি মনস্থির (শালেম) করে হিব্রোণে এসেছিল। পুরনো ইংরেজি অনুবাদগুলিতে (KJV) “নিখুঁত হৃদয় নিয়ে” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। “নিখুঁত”-এর অর্থ এই নয় যে সৈন্যবাহিনীতে কেউ পাপ করেনি। এর অর্থ হল যে সেই জাতি সম্পূর্ণরূপে দাউদের অনুগত ছিল। তারা এক রাজার অধীনে একত্রিত হয়েছিল। এই পদে শালেম কোনো ধর্মীয় পরিভাষা নয়; এটি একটি রাজনৈতিক শব্দ। শালেম মানে রাজার প্রতি অবিভক্ত আনুগত্য থাকা।
অখণ্ডিত পাথরের বেদী
ইস্রায়েল প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করার পর, যিহোশূয় এবল পর্বতে একটি যজ্ঞবেদী নির্মাণ করেছিলেন। যিহোশূয় “অকর্তিত (শালেম বা নিখুঁত) পাথর, যার ওপর কোনো লোহার যন্ত্র ব্যবহৃত হয়নি” (যিহোশূয় ৮:৩১) – এমন পাথরের ওপর যজ্ঞবেদী নির্মাণ করেছিলেন। “অকর্তিত” হল সম্পূর্ণ বা নিখুঁত-এর সমার্থক শব্দ। শালেম বা নিখুঁত হওয়া মানে হল অবিভক্ত থাকা।
একটি অবিভক্ত হৃদয়
মন্দির উৎসর্গের সময়, শলোমন ইস্রায়েল জাতিকে অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার কথা বলেছিলেন।
আর তোমাদের অন্তর যেন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিধিবিধান অনুসারে চলার ও তাঁর আদেশের বাধ্য হওয়ার জন্য তাঁর প্রতি পুরোপুরি সমর্পিত (শালেম) থাকে, যেমনটি এসময় হয়েছে (১ রাজাবলী ৮:৬১)।
এটি সেই একই শব্দ যা দায়ূদের অধীনে যুক্ত সৈন্যবাহিনীকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সেই একই শব্দ যা অকর্তিত পাথরকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। শলোমন ইস্রায়েলকে ঈশ্বরের প্রতি অবিভক্ত বিশ্বস্ততার জন্য আহ্বান করেছিলেন। যদি ইস্রায়েলের লোকদের এই অবিভক্ত হৃদয় থাকত, তবে তারা তাঁর বিধি অনুসারে চলত এবং তাঁর আদেশ পালন করত। অবিভক্ত হৃদয়ের একজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের আনুগত্য পালন করেন।
[1]যিহোশূয়ের পুস্তক, বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ, রূৎ, ১ ও ২ শমূয়েল, ১ ও ২ রাজাবলি, ১ ও ২ বংশাবলি, ইষ্রা, নহিমিয় ও ইষ্টের হল বাইবেলের ১২টি ঐতিহাসিক পুস্তক।
বিভক্ত হৃদয় এবং অবিভক্ত হৃদয়
ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস দেখায় যে ঈশ্বর তাঁর লোকেদেরকে অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে তাঁর সেবা করার জন্য আহ্বান করেছিলেন। ঈশ্বর পবিত্র মানুষদের খুঁজছেন। ঈশ্বর অবিভক্ত হৃদয়গুলিকে খুঁজছেন।
রাজা শলোমন: এক বিভক্ত হৃদয়
মন্দির উৎসর্গের সময়, শলোমন ইস্রায়েল জাতিকে অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দুঃখজনকভাবে, শলোমন নিজেই তাঁর উপদেশ মানেননি। “শলোমন বয়সে বৃদ্ধ হতে না হতেই, তাঁর স্ত্রীরা তাঁর অন্তর অন্যান্য দেবদেবীদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল, এবং তাঁর অন্তর আর তাঁর বাবা দাউদের মতো তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি পুরোপুরি একাগ্র (শালেম) থাকেনি (১ রাজাবলী ১১:৪)।”
শলোমনের হৃদয় বিভক্ত ছিল। তিনি অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা করার সাথে সাথে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের উপাসনা করতে চেয়েছিলেন। আপনি যিহোবা এবং অন্যান্য দেবতার প্রতি একসাথে অনুগত হতে পারেন না। ১ রাজাবলীর লেখক বলেননি যে শলোমন যিহোবার উপাসনা ত্যাগ করেছিলেন। শলোমন মন্দিরে বলিদান করা অব্যাহত রেখেছিলেন, কিন্তু তাঁর হৃদয় বিভক্ত ছিল। তিনি বিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার চেষ্টা করেছিলেন।
১ রাজাবলী ১১:৪-এ আমরা দায়ূদ এবং শলোমনের হৃদয়ের বিষয়ে ঈশ্বরের পরিপ্রেক্ষিতটি পড়ি। দায়ূদের হৃদয় অবিভক্ত ছিল; শলোমনের হৃদয় বিভক্ত ছিল। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা দায়ূদের ব্যভিচার এবং হত্যা করার বিষয়টিকে সলোমনের পিছিয়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক খারাপ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। কেন রাজাবলীর লেখক বলেছেন যে দায়ূদের হৃদয় সদাপ্রভুর প্রতি সম্পূর্ণ সত্য ছিল?
পাপের প্রতি দায়ূদের প্রত্যুত্তরেই পার্থক্যটি রয়েছে। যে মুহূর্তে ভাববাদী দায়ূদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই মুহূর্তেই অবিলম্বে দায়ূদ অনুতপ্ত হন। দায়ূদ আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেননি। পরিবর্তে তিনি ঈশ্বরের কাছে স্বীকার করেছিলেন, “তোমার বিরুদ্ধে, তোমারই বিরুদ্ধে, আমি পাপ করেছি আর তোমার দৃষ্টিতে যা অন্যায় তাই করেছি” (গীত ৫১:৪)। দায়ূদ এক অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করতেন। তাঁর হৃদয় ছিল শালেম বা নিখুঁত। তাঁর হৃদয় ছিল অবিভক্ত।
গীতসংহিতা ৮৬ মূলত একটি অবিভক্ত হৃদয়ের জন্য দায়ূদের কাতরতাকে চিত্রিত করে। গীতসংহিতা ৮৬তে, দায়ূদ তাঁকে হত্যা করতে চাওয়া সমস্ত শত্রুদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। এই প্রার্থনার মাঝখানে, দায়ূদ কেঁদেছেন, “আমাকে এক অখণ্ড হৃদয় দাও, যেন আমি তোমার নাম সম্ভ্রম করতে পারি” (গীত ৮৬:১১)। দায়ূদ একটি অবিভক্ত হৃদয়ের জন্য কেঁদেছিলেন। দায়ূদ একটি নিখুঁত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
রাজা আসা: এক বিভক্ত হৃদয়
৯১০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আসা সিংহাসনে বসেন। তিনি যিহোবার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, তিনি মিথ্যে দেবতাদের বেদী ধ্বংস করেছিলেন; তিনি সেই সমস্ত উঁচু জায়গা ভেঙে দিয়েছিলেন যেগুলো মূর্তিপূজার জন্য ব্যবহৃত হত। যখন কূশীয় (ইথিওপিয়া নিবাসী) সৈন্যাধ্যক্ষ বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে যিহুদা আক্রমণ করে, আসা উদ্ধারের জন্য ঈশ্বরের কাছে চোখের জল ফেলেছিলেন:
হে সদাপ্রভু, শক্তিশালীর বিরুদ্ধে শক্তিহীনকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তোমার মতো আর কেউ নেই। হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি আমাদের সাহায্য করো, কারণ আমরা তোমারই উপর নির্ভর করে আছি, এবং এই বিশাল সৈন্যদলের বিরুদ্ধে আমরা তোমার নামেই এগিয়ে এসেছি। হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাদের ঈশ্বর; নিছক মরণশীল মানুষ যেন তোমার বিরুদ্ধে জিততে না পারে (২ বংশাবলী ১৪:১১)।
ঈশ্বর আসার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। “আসা ও যিহূদার সামনে সদাপ্রভু সেই কূশীয়দের আঘাত করলেন” (২ বংশাবলী ১৪:১২)। আসা ঈশ্বরের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছিলেন এবং ঈশ্বর তাঁকে এক মহান বিজয় দিয়েছিলেন।
কুড়ি বছর পেরিয়ে যায়, এবং আসা একটি নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। এই সময়ে, উত্তর প্রজাতিদের রাজা, বাশা, যিহুদাকে ভয় দেখাচ্ছিল। তার ভয়ে, আশা অন্য একটি দেশের সাথে সৈন্যচুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দামাস্কাসের (বর্তমান সিরিয়া) শাসক বিন্হদদের সাথে একটি চুক্তি করেন। কেবল ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার পরিবর্তে, আসা এক পরজাতি শাসকের ওপর নির্ভর করেছিলেন।
প্রত্যুত্তরে, ভাববাদী হনানি আসাকে অতীতে কূশীয়দের বিরুদ্ধে তাঁর মহান জয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আসাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে “আপনি যখন সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করলেন, তখন তিনি আপনার হাতে তাদের সঁপে দিলেন।” কেন ঈশ্বর এমন করেছিলেন? কারণ “সদাপ্রভুর চোখ তাদেরই শক্তিশালী করে তোলার জন্য গোটা পৃথিবী জুড়ে বিচরণ করে যাচ্ছে, যাদের অন্তর তাঁর প্রতি পুরোপুরি সমর্পিত (শালেম)” (২ বংশাবলী ১৬:৮-৯)।
যখন আসা ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেছিলেন, তখন ঈশ্বর তাঁকে একটি মহান বিজয় দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আসা একজন সিরিয়ার শাসকের উপর নির্ভর করছিলেন। যেহেতু আসা আর একমাত্র ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেননি, তাই ঈশ্বর তাকে আর বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন না। হনানি সতর্ক করেছিলেন যে আসা তাঁর রাজত্বের বাকি সময়ে যুদ্ধ করে কাটাবেন।
আসার রাজত্বের শেষ বছরগুলো তাঁর প্রথম বছরগুলোর উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতির একটি ছায়া মাত্র। জীবনের শেষ দিকে, আসা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তাঁর রোগেও তিনি সদাপ্রভুর সন্ধান করেননি (২ বংশাবলী ১৬:১২)।
আসার রাজত্ব অন্যান্য বহু রাজার চেয়ে ভালো ছিল। আসা কখনো যিহোবার উপাসনা করা ত্যাগ করেননি, কিন্তু তাঁর হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি অবিভক্ত ছিল না। তিনি ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এই কারণে, আসা ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলি অর্জন করতে পারেননি।
আসার জীবন একটি বিভক্ত হৃদয়ের বিপদের একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত। প্রথম গল্পে, আসা ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেছিলেন। দ্বিতীয় গল্পে, তিনি ঈশ্বরের লোকেদের নেতা হিসেবে সেবা করতে থাকলেন, কিন্তু তাঁর হৃদয় নিখুঁত ছিল না। ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণ আস্থা না রেখে, তিনি ঈশ্বরের শত্রুর সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। আসা একটি বিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন।
রাজা অমৎসিয়: এক বিভক্ত হৃদয়
অমৎসিয় আমাদের সামনে এক বিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী হওয়ার বিপদ তুলে ধরেন। অমৎসিয়ার রাজত্ব এক মহান প্রতিজ্ঞা দিয়ে শুরু হয়েছিল: তিনি ঠিক সেটাই করতেন যা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা ঠিক (২ রাজাবলী ১৪:৩; ২ বংশাবলী ২৫:২)। আসার মতোই, অমৎসিয়ও ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন।
যাইহোক, রাজাবলী এবং বংশাবলী উভয়ই বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে। রাজাবলীর লেখক বলেছেন যে অমৎসিয় যা সঠিক তা করেছিলেন, তবুও সেটা তাঁর পিতা দায়ূদের মতো ছিল না। বংশাবলীর লেখক বলেছেন যে অমৎসিয় যা সঠিক তা করেছিলেন, তবে তিনি সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে তা করেননি। উঁচু জায়গাগুলো তিনি সরিয়ে দেননি। এই কারণে, লোকেরা মিথ্যা দেবতাদের কাছে বলি উৎসর্গ করা অব্যাহত রেখেছিল। বিভক্ত হৃদয়ের একজন নেতা জাতিকে সমস্যায় ফেলে।
আসার মতো, অমৎসিয় দেখেছিলেন যে বিভক্ত হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবা করা কষ্ট নিয়ে আসে। যদিও অমৎসিয়ের রাজত্ব ভালোভাবে শুরু হয়েছিল, তিনি পরে ইদোমের দেবতাদের উপাসনা করেছিলেন। বিচারে, ঈশ্বর উত্তর রাজ্যকে অমৎসিয়কে পরাজিত করার অনুমতি দিয়েছিলেন। অমৎসিয়র প্রথম দিকের রাজত্বের প্রতিশ্রুতি কখনই পূর্ণ হয়নি কারণ তাঁর হৃদয় বিভক্ত ছিল। অমৎসিয়ের হৃদয় নিখুঁত ছিল না।
যিশু সেইসব ধর্মীয় নেতাদের সাথে কথা বলেছিলেন যারা বাহ্যিক চেহারা সম্পর্কে খুব সতর্ক ছিলেন, কিন্তু হৃদয়ের বিষয়ে উদাসীন ছিলেন।
শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীরা, ভণ্ডের দল, ধিক্ তোমাদের! তোমরা তোমাদের মশলাপাতি—পুদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়ে থাকো কিন্তু বিধানের আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন ন্যায়বিচার, করুণা, বিশ্বস্ততা—এগুলি উপেক্ষা করে থাকো। ভালো হত, তোমরা আগের বিষয়গুলি উপেক্ষা না করে যদি এগুলিও পালন করতে। অন্ধ পথপ্রদর্শক তোমরা! তোমরা মশা ছাঁকো, কিন্তু উট গিলে ফেলো! (মথি ২৩:২৩-২৪)।
এই ধর্মীয় নেতারা সাবধানে আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলত ঠিকই, কিন্তু তারা তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিধান অনুসরণ করেনি। যিশু তাদের মিথ্যা ধর্মের নিন্দা করেছিলেন। “তোমরা মশা ছাঁকো (তোমরা ছোট ছোট বিষয়ে সতর্ক), কিন্তু উট গিলে ফেলো (তোমরা বড় সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাও)।” পবিত্রতা হৃদয় থেকে শুরু হয়।
যদি আমরা কেবল বাহ্যিক চেহারা নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে বলতে পারি:
“আমি পবিত্র কারণ আমি _______________ পরি না”
“আমি পবিত্র কারণ আমি _______________ যাই না।”
“আমি পবিত্র কারণ আমি _______________ দেখি না।”
আমরা যা করি বা করি না তার কারণে যখন আমরা নিজেকে পবিত্র বলে দাবি করি, তখন আমরা সেই ফরিশীদের মতো হয়ে উঠি। যিশু একজন ফরিশীর কথা বলেছিলেন যে প্রার্থনা করেছিলেন, “হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আমি কোনো দস্যু, দুর্বৃত্ত, ব্যভিচারী, এমনকি, ওই কর আদায়কারী, বা অন্য লোকের মতো নই। আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস করি এবং যা আয় করি, তার এক-দশমাংশ দান করি” (লূক ১৮:১১-১২)। এই ফরীশী তার কাজের দ্বারা পবিত্রতাকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন: “আমি প্রতারণা করি না, আমি ন্যায্য নই, আমি উপবাস করি, আমি দশমাংশ দিই।” সে পবিত্র হওয়ার দাবী করেছিল, কিন্তু তার হৃদয় পবিত্র ছিল না।
ফরিশীরা জগৎ থেকে তাদের বিচ্ছেদ নিয়ে গর্বিত ছিল, কিন্তু তাদের হৃদয় পবিত্র ছিল না। যিশু বলেছিলেন, “শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীরা, ভণ্ডের দল, ধিক্ তোমাদের! তোমরা চুনকাম করা কবরের মতো! সেগুলি বাইরে থেকে দেখতে তো সুন্দর কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের হাড় ও সব ধরনের অশুচি বিষয়ে পরিপূর্ণ (মথি ২৩:২৭)।” বাহ্যিকভাবে, ফরিশীরা পৃথক ছিল; অভ্যন্তরীণভাবে, তারা পাপী ছিল।
► কোনটি পরিমাপ করা সহজ বলে মনে হয় – বাহ্যিক চেহারা নাকি অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা? কোনটি জাল করা সহজ – বাহ্যিক চেহারা নাকি অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা? আমরা কোনটির উপর বেশি জোর দিই – বাহ্যিক চেহারা নাকি অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা?
হিষ্কিয় রাজার জীবন থেকে একটি উদাহরণ
পৃথকীকরণের বিধানগুলি এই শিক্ষাটিই দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে ঈশ্বরের পবিত্র লোকের প্রয়োজন। কিন্তু ঈশ্বর সর্বদাই আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে তাঁর লোকেদের হৃদয়ের বিষয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন।
হিষ্কিয়ের পুনরুজ্জীবনের একটি কাহিনী এই নীতিকে ব্যাখ্যা করে। মন্দির শুদ্ধ হওয়ার পর, হিষ্কিয় নিস্তারপর্ব পুনরায় চালু করেছিলেন। তিনি সমগ্র জাতিকে জেরুশালেমে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন, “তাঁর পবিত্র সেই পীঠস্থানে এসো”। হিষ্কিয়ের দূতেরা এই অনুষ্ঠানে পুরো জাতিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য পুরো ইস্রায়েল জুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন। বহু জায়গাতেই, লোকেরা “তাদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ করল । তা সত্ত্বেও, আশের, মনঃশি ও সবূলূন থেকে কেউ কেউ নিজেদের নত করল ও জেরুশালেমে গেল” (২ বংশাবলী ৩০:১, ১০-১১)।
যেহেতু জনতার ভিড়ে অনেকেই ঈশ্বরের উদ্দেশে নিজেদের উৎসর্গ করেননি, তাই প্রথাগতভাবে যারা শুচিশুদ্ধ ছিল না ও যারা তাদের আনা মেষশাবকগুলি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করতে পারেনি, তাদের হয়ে লেবীয়দেরই নিস্তারপর্বের মেষশাবকগুলি বধ করতে হল (২ বংশাবলী ৩০:১৭)। কারণ সেই জাতি মন্দিরের উপাসনা ছাড়াই বহুদূর চলে গেছিল, লোকেরা অশুচি ছিল এবং নিস্তারপর্ব পালন করতে প্রস্তুত ছিল না। যাজকদের কি করার ছিল? ঈশ্বর লোকদেরকে নিস্তারপর্ব পালন করার অনুমতি দিয়েছিলেন কারণ তাদের হৃদয় ঈশ্বরের অন্বেষণ করেছিল, যদিও তারা তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পরিষ্কার ছিল না।
যদিও যেসব লোকজন ইফ্রয়িম, মনঃশি, ইষাখর ও সবূলূন থেকে এসেছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশ জনই নিজেদের শুচিশুদ্ধ করেননি, তবু তারা লিখিত বিধিনিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ খেয়েছিল। কিন্তু হিষ্কিয় তাদের জন্য প্রার্থনা করে বললেন, “মঙ্গলময় সদাপ্রভু তাদের প্রত্যেককে ক্ষমা করুন, যারা তাদের অন্তর ঈশ্বরের—তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর—অন্বেষণ করার জন্য ঠিক করেছে, এমনকি পবিত্র পীঠস্থানের নিয়মানুসারে তারা যদি শুচিশুদ্ধ নাও হয়, তাও যেন তিনি তাদের ক্ষমা করলেন।” সদাপ্রভু হিষ্কিয়ের প্রার্থনা শুনেছিলেন ও মানুষজনকে সুস্থ করলেন (২ বংশাবলী ৩০:১৮-২০)।
ঈশ্বর অবিভক্ত হৃদয়ের খোঁজ করছিলেন। এমনকি যখন লোকেরা পৃথকীকরণের নিয়ম মেনে চলত না, তখনও ঈশ্বর সেইব হৃদয়ের খোঁজ করতেন যারা ঈশ্বরকে খোঁজার জন্য পৃথক হয়েছিল।
পবিত্র ব্যক্তিরা সবসময় তাদের হৃদয় ঈশ্বরের কাছে পৃথক রাখে
পবিত্রতা সবসময় ঈশ্বর থেকে শুরু হয়। যা কিছু পবিত্র তা তাঁর থেকেই শুরু। ঈশ্বর সাব্বাথ বা বিশ্রামবারকে, জ্বলন্ত ঝোপের স্থানকে, ইস্রায়েলের প্রথমজাতকে, উপাসনার বেদীকে এবং লেবীয় জাতিকে পবিত্রীকৃত করেছিলেন। ঈশ্বর এগুলিকে তাঁর নিজের বলে দাবী করেছিলেন। এই সবকিছুই ঈশ্বরের উপস্থিতিতে পবিত্র হয়েছিল।
পবিত্রতা ঈশ্বর থেকে শুরু হয়, কিন্তু ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর কাছে পৃথক হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন। আমরা যদি কেবল সেই বাক্যগুলি পড়ি যেখানে ঈশ্বর বলেছেন, “আমি তোমাদের পবিত্র করব,” তাহলে আমরা ধরে নিই যে পবিত্র করা কেবল ঈশ্বরের কাজ। তবে, বাইবেল দেখায় যে পবিত্রতার জন্য একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ।
যাত্রাপুস্তক ১৯ একটি উদাহরণ দেয়। ঈশ্বর মোশিকে আদেশ দিয়েছিলেন, “লোকদের কাছে যাও এবং তাদের পবিত্র করো।” “মোশি... তাদের পবিত্র করলেন।” মোশি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের জন্য লোকদের পৃথক করেছিলেন। পরে, ঈশ্বর বলেছিলেন, “এমনকি যারা সদাপ্রভুর নিকটবর্তী হয়, সেই যাজকরাও যেন নিজেদের পবিত্র করে” (যাত্রাপুস্তক ১৯:১০-২২)। যাজকদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যেন তাঁরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের জন্য নিজেদের পৃথক করে। তাঁদের পবিত্র হতেই হত; তাঁদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে পৃথক করতেই হত।
একটি অবিভক্ত হৃদয়ের দুটি দিক আছে:
১। ঈশ্বর তাঁর লোকদের পৃথক করার প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমিই সেই সদাপ্রভু, যিনি তোমাদের পবিত্র করেছেন” (যাত্রাপুস্তক ৩১:১৩)। ঈশ্বর তাঁর লোকদের পবিত্র করেছেন।
২। ঈশ্বর তাঁর লোকদের পবিত্র হওয়ার জন্য আদেশ করেছেন: “তোমরা উৎসর্গীকৃত ও পবিত্র হও, কেননা আমি পবিত্র” (লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪; লেবীয় পুস্তক ২০:৭)।
আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহের প্রতিক্রিয়ায় নিজেদেরকে পবিত্র করি। পবিত্র মানুষ স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করে। তারা ঈশ্বরের কাছে দ্বিধা ছাড়াই নিজেদেরকে বিলিয়ে দেয়।
লেবীয় পুস্তক ২০-তে “নিজেরা পবিত্র হও” আদেশটি প্রতিশ্রুতি দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছে, “আমিই সদাপ্রভু, যিনি তোমাদের পবিত্র করেন।” উভয় পদে এটি একই হিব্রু শব্দ। এটি এভাবে অনুবাদ করা যেতে পারে: “নিজেরা পবিত্র হও…. আমিই সদাপ্রভু, যিনি তোমাদের পবিত্র করেন” (লেবীয় পুস্তক ২০:৭-৮)।
[1]পবিত্র হওয়ার মধ্যে ঈশ্বরের কাজ এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া দুটোই অন্তর্ভুক্ত। আমরা আমাদের নিজেদের চেষ্টায় পবিত্র হতে পারি না, আবার এটাও বলতে পারি না, “যদি ঈশ্বর আমাকে পবিত্র করতে চান, তিনি আমার প্রতিক্রিয়া ছাড়াই আমাকে পবিত্র করবেন।” আমরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার মাধ্যমে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিই। একটি অবিভক্ত হৃদয়ের সম্পূর্ণ উৎসর্গ দাবী করে।
পবিত্রতা কেবল ঈশ্বর থেকে উৎপন্ন হয়। তবে, ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান করেছেন। আমরা ঈশ্বরের আহ্বানে আত্মসমর্পণ করার ফলে পবিত্র হয়েছি। পৌল লিখেছেন, “অতএব, ভাইবোনেরা, ঈশ্বরের বহুবিধ করুণার পরিপ্রেক্ষিতে, আমি তোমাদের কাছে মিনতি করছি, তোমরা তোমাদের শরীরকে জীবন্ত বলিরূপে, পবিত্র ও ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্যরূপে উৎসর্গ করো—তাই হবে তোমাদের যুক্তিসংগত আরাধনা” (রোমীয় ১২:১)। পৌল আমাদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। কারণ ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেনযে তিনি আমাদের পবিত্র করবেন, আমাদের অবশ্যই নিজেদের সমর্পণ করতে হবে। পবিত্রতা একইসাথে একটি আদেশ (“নিজেরা পবিত্র হও”) এবং একটি প্রতিজ্ঞা (“আমি তোমাদের পবিত্র করব”)।
পবিত্র ব্যক্তিরা ঈশ্বরকে একটি পরিপূর্ণ “হ্যাঁ” বলে
শলোমন, আসা, অমৎসিয়-এর জীবন একটি বিভক্ত হৃদয়ের বিপদ দেখায়। একটি বিভক্ত হৃদয় ঈশ্বরের লোকদের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য নয়। একটি পবিত্র হৃদয় হল একটি অবিভক্ত হৃদয়। তাহলে, একটি অবিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী হওয়ার অর্থ কী? এমন একটি হৃদয়ের অধিকারী হওয়ার অর্থ কী যেটি শালেম বা নিখুঁত?
খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা ঈশ্বরের দাস হওয়ার জন্য আহুত। একজন দাসে কাজ হল তার প্রভু তাকে যা করতে বলেন তা পালন করা। একজন ভালো দাস জিজ্ঞেস করে না, "আমার কি এটা করা উচিৎ?" একজন ভালো দাস তার প্রভু যা আদেশ করেন তা স্বেচ্ছায় মান্য করে। একজন দাসের কাজ হল সম্পূর্ণ এবং দ্বিধাহীন “হ্যাঁ” বলা।
একইভাবে, যে ব্যক্তি অবিভক্ত হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবা করে সে স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের ডাকে “হ্যাঁ” বলে সাড়া দেয়। এটিই হল একটি অবিভক্ত হৃদয়। মোশি ইস্রায়েলকে অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আহ্বান করেছিলেন:
এখন হে ইস্রায়েল, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের কাছে কী চান? তিনি কেবল চান যেন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করো, সব ব্যাপারে তাঁর পথে চলো, তাঁকে ভালোবাসো, তোমাদের সমস্ত হৃদয় ও প্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করো, আর তোমাদের মঙ্গলের জন্য আজ আমি তোমাদের কাছে সদাপ্রভুর যেসব আদেশ ও অনুশাসন দিচ্ছি তা পালন করো? (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২-১৩)।
একজন কলেজ পড়ুয়া হিসেবে, এলিজাবেথ এলিয়ট (Elisabeth Elliot) তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, “প্রভু, আমি শাশ্বত ‘হ্যাঁ’ বলেছি।’ লাঙলের হাতে হাত রেখে আমাকে যেন আর ফিরে তাকাতে না হয়। আমার সামনে ক্রুশের পথ সোজা কর। আমাকে ভালবাসা দাও, যাতে কোনও বিপথগামী চিন্তা বা পদক্ষেপের জন্য কোনও জায়গা না থাকে।”[2] এলিয়টের একটি অবিভক্ত হৃদয় ছিল; তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিখুঁত ছিলেন।
এই প্রার্থনার পরবর্তী বছরগুলিতে এলিজাবেথ এলিয়ট অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁর স্বামী, জিম এলিয়ট (Joe Elliot), ১৯৫৬ সালে ইকুয়েডরের হুয়াওরানি উপজাতির মধ্যে প্রচার করার চেষ্টা করার সময় নিহত হন। এলিজাবেথ পরে তাদের কাছেই একজন মিশনারি হয়ে ওঠেন যারা তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছিল। একমাত্র সেই ব্যক্তি যিনি “শাশ্বত হ্যাঁ” বলেছেন তিনিই তাঁর স্বামীর হত্যাকারীদের কাছে একজন মিশনারি হিসেবে যেতে পারেন।
একজন পবিত্র ব্যক্তি অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করেন। একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বরকে “শাশ্বত হ্যাঁ” বলেন। এর অর্থ ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। যখন একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা জানেন, তিনি তা স্বেচ্ছায় মেনে চলেন। তার হৃদয় বিভক্ত নয়; তিনি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের অন্তর্গত। একজন পবিত্র ব্যক্তি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের মুহূর্তে ঈশ্বরের কাছে “হ্যাঁ” বলেন।
একজন পবিত্র ব্যক্তি প্রতিদিন “হ্যাঁ” বলা অবিরত রাখেন। এলিজাবেথ এলিয়ট “শাশ্বত হ্যাঁ” বলার পরে, তিনি সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে থাকেন। এমন অনেক সময় ছিল যখন তিনি আবার বলেছিলেন, “হ্যাঁ, প্রভু।” কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী বিশ্বাস করে যে “একবার সব হ্যাঁ” আপনার প্রতিশ্রুতির সমস্ত ভবিষ্যত পরীক্ষাকে সরিয়ে দেবে। সকলের জন্য একবার আত্মসমর্পণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শয়তান আপনার প্রতিশ্রুতি পরীক্ষা করতেই থাকবে। বারবার, আপনি বলতে থাকবেন, “হ্যাঁ, প্রভু। আমার জীবন তোমারই। এটি পবিত্র জীবনের অবিরাম “হ্যাঁ”।
“আমরা ঈশ্বরের দ্বারা তখনই ব্যবহৃত হতে পারি যখন আমরা তাঁকে আমাদের চরিত্রের গভীর, গোপন স্থানগুলি আমাদেরকে দেখানোর অনুমতি দিই। আমরা যখন এটি দেখি তখন আমাদের মধ্যে হিংসা, অলসতা বা অহংকারকে চিনে উঠতে পারি না। কিন্তু যীশু আমাদের কাছে তাঁর অনুগ্রহ কাজ শুরু করার আগে আমাদের নিজেদের মধ্যে থাকা সমস্ত কিছু প্রকাশ করবেন।”
-অসওয়াল্ড চেম্বার্স (Oswald Chambers)
[2]Elisabeth Elliot, Passion and Purity (Old Tappan: Fleming H. Revell Co., 1984), 25
তিনি রহস্যের চাবিকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন – জর্জ মুলার
জর্জ মুলার (George Muller)[1] ১৯ শতকের একজন মহান খ্রিষ্টবিশ্বাসী ছিলেন।[2] তিনি পাঁচটি বড় বড় অনাথ আশ্রম তৈরি করেছিলেন এবং ১০,০০০-এরও বেশি অনাথ বাচ্চার দেখাশোনার করেছিলেন। মুলার তার অনাথ আশ্রমগুলিকে সমর্থন করার জন্য এবং অন্যান্য মিশনারিদের দেওয়ার জন্য কোটি কোটি ডলার সংগ্রহ করেছিলেন। তার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত মুলার ১,২২,০০০ জন শিশুর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, প্রায় ২০ লক্ষ বাইবেল এবং ১০ কোটিরও বেশি বই এবং পুস্তিকা বিতরণ করেছিলেন। তিনি এই কাজটি করতে কখনো একজন ব্যক্তির কাছেও টাকা চাননি। তিনি কেবল ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
যখন ঈশ্বর মুলারকে তার অনাথ আশ্রম তৈরির জন্য আহ্বান করেছিলেন, তখন মুলারের কাছে মাত্র ৫০ সেন্ট ছিল! মুলার ঈশ্বরের আদেশের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। মুলারের কাছে মাত্র ৫০ সেন্ট ছিল – কিন্তু তিনি তা ঈশ্বরকে দিয়েছিলেন এবং বাকি সমস্ত কিছুর জন্য ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছিলেন৷ মুলার পরে সাক্ষ্য দেন যে অনাথ বাচ্চাদের কোনোদিনই একবেলার জন্যেও খাবার বাদ যায়নি; ঈশ্বর সব প্রয়োজন যুগিয়ে দিয়েছিলেন।
যুবক বয়সে মুলারের জীবনযাত্রা বেশ খারাপ ছিল, এমনকি ১৬ বছর বয়সে তিনি কারাগারে কাটিয়েছিলেন। তবে, ২০ বছর বয়সে জর্জ মুলার খ্রিষ্টকে তার জীবন সমর্পণ করেন। পরবর্তী বেশ কয়েক বছর ধরে, মুলার আধ্যাত্মিক বিজয়ের সময়কালের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন কিন্তু সেইসাথে সংগ্রামের ক্ষেত্রগুলিকেও স্বীকৃত করেছিলেন। অবশেষে, ২৪ বছর বয়সে, মুলার "একটি সম্পূর্ণ এবং পরিপূর্ণ হৃদয়ের আত্মসমর্পণ” করেন। “আমি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রভুর কাছে সমর্পণ করেছি।”
৭০ বছর বয়সে মুলার প্রচারের জন্য দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করা শুরু করেন। ৭০ থেকে ৮৭ বছর বয়সের মধ্যে তিনি ৪২টি দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং ৩০ লক্ষেরও বেশি লোকের কাছে প্রচার করেছেন।
বৃদ্ধ বয়সে জর্জ মুলার-কে তাঁর কর্মজীবনের গোপন রহস্য নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “একটা দিন ছিল যেদিন আমি নিজের কাছে (আমার মতামত এবং ইচ্ছা), জগতের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি, এবং এমনকি আমার বন্ধুদের স্বীকৃতি বা দোষারোপের কাছে মারা গেছিলাম। তখন থেকেই, আমি শুধু ঈশ্বরের স্বীকৃতির প্রতি অনুগত।” জর্জ মুলার একজন অবিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তিনি ঈশ্বরের চোখে নিখুঁত ছিলেন।
[2]Roger Steer, Spiritual Secrets of George Muller (PA: OMF Books, 1985) এবং J. Gilchrist Lawson, Deeper Experiences of Famous Christians (Anderson: Warner Press, 1911) থেকে অভিযোজিত।
৫ নং পাঠের পর্যালোচনা
(১) পবিত্র হওয়ার মানে হল একটি অবিভকত হৃদয়ের অধিকারী হওয়া।
(২) হিব্রু শব্দ শালেম অর্থ হল “অবিভক্ত”। এই শব্দটি শালোম শব্দটির সাথে সম্পর্কিত, যার মানে “শান্তি”। একটি “নিখুঁত” বা “অবিভক্ত” হৃদয় থাকা মানে একক আনুগত্যসহ একটি হৃদয়ের অধিকারী হওয়া।
(৩) শলোমন, আসা, অমৎসিয়-এর জীবন একটি বিভক্ত হৃদয়ের বিপদ দেখায়। প্রত্যেকেই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছিল কারণ তাদের হৃদয় বিভক্ত ছিল।
(৪) পবিত্রতা হৃদয় থেকে শুরু হয়। যারা একটি পবিত্র হৃদয় ব্যতীত বাহ্যিক নিয়ম নিয়ে আগ্রহী যিশু তাদের নিন্দা করেছিলেন।
(৫) আমাদের নিজেদেরকে অতি অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে হবে। ঈশ্বর তাঁর লোকদের পবিত্র করেন। ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহের প্রতিক্রিয়ায় তাদের পবিত্র করার জন্য তাঁর লোকদের আহ্বান করেন।
(৬) পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরকে সম্পূর্ণভাবে “হ্যাঁ” বলে। একজন অনুগত দাসের মতো, তারা স্বেচ্ছায় তাদের প্রভুকে হ্যাঁ বলে।
(৭) আমরা “শাশ্বত হ্যাঁ” বলার পরে, আমাদের অবশ্যই প্রতিদিন “হ্যাঁ” বলা অব্যাহত রাখতে হবে।
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) “একটি অবিভক্ত হৃদয়ের জীবনযাপন” – এই বিষয়টির উপর একটি প্রচার তৈরি করুন। আপনি নিজের মতো করে লিখতে পারেন বা নিম্নলিখিত পয়েন্টগুলির সাহায্য নিতে পারেন:
ক। বাইবেলের একটি বিভক্ত হৃদয়ের উদাহরণ
খ। একটি বিভক্ত হৃদয় নিয়ে জীবন কাটানোর বিপদ
গ। একটি বিভক্ত হৃদয়ের শ্রুশুষা
(২) গীতসংহিতা ৮৬:১১-১২ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.