মোশি: একজন ব্যক্তি যিনি পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়েছিলেন
প্রান্তরে মেষ চড়ানোর সময় মোশি দেখেন একটি ঝোপে আগুন জ্বলছে, কিন্তু সেটি পুড়ছে না। তিনি সেই অদ্ভুত দৃশ্য দেখার জন্য এগিয়ে গেলে তিনি শোনেন ঈশ্বর তাকে ডাকছেন, “মোশি, মোশি!” মোশি উত্তর দেন, “আমি এখানে।” ঈশ্বর তাঁকে সতর্ক করে বলেন, “আর কাছে এসো না; তোমার চটিজুতো খুলে ফেলো, কারণ তুমি যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছ সেটি পবিত্র ভূমি” (যাত্রাপুস্তক ৩:৫)।
[1]প্রাচীন বিশ্বে খালি পায়ে যাওয়া ছিল নম্রতা এবং শ্রদ্ধার প্রতীক। কেউ মিশর-রাজ ফৌরণের সামনে জুতো পরে দাঁড়াতে পারত না। মোশি ফৌরণের চেয়েও মহান একজনের উপস্থিতিতে ছিলেন। তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপস্থিতিতে ছিলেন। তিনি পবিত্র স্থানে ছিলেন।
যেখানে মোশি দাঁড়িয়েছিলেন সেই স্থানের বিশেষত্ব কী ছিল? কী এটিকে পবিত্র করেছিল? সেখানে কি “পবিত্র ভূমি” লেখা বা চিহ্নসহ কোনো বেড়া দেওয়া ছিল? না। সেই স্থানকে পবিত্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য কেউ কি কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেছিল? না।
এই স্থানটি পবিত্র হওয়ার একমাত্র কারণ হল এটি ঈশ্বরের ছিল। ঈশ্বর এই স্থানটিকে সমগ্র প্রান্তর থেকে পৃথক করেছিলেন এবং এটিকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছিলেন; ঈশ্বর স্থানটিকে “পবিত্রীকৃত” করেছিলেন। এটি পবিত্রতার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকে তুলে ধরে। এই স্থানটি পবিত্র ছিল কারণ ঈশ্বর এটিকে পৃথক করেছিলেন। অর্থাৎ যা কিছু পবিত্র, তা ঈশ্বরের দ্বারা পৃথকীকৃত, ভিন্ন।
বেশ কিছু বছর পরে, ঈশ্বর মোশির সাথে সিয়োন পর্বতে দেখা করেন। পুনরায়, ঈশ্বর আরেকটি স্থানকে পবিত্র হিসেবে পৃথক করেছেন। মোশি সকলকে সেই পর্বত থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন। তারা সেই পর্বতের ওপরে উঠত না বা এটির চারপাশের কোনো স্থানকে স্পর্শ করত না, কারণ এটি পবিত্র ছিল। সেই পর্বতে ঈশ্বরের উপস্থিতি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে মোশি সকলকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে যদি কেউ পর্বতকে স্পর্শ করে তাহলে তার মৃত্যু হবে (যাত্রাপুস্তক ১৯:১২)। সেই পর্বতটি ঈশ্বরের ছিল। মোশি পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়েছিলেন।
তুমি আমাদেরকে তোমার জন্য গড়ে তুলেছ,
এবং আমাদের সমস্ত হৃদয় বিশ্রামহীন যতক্ষণ না সে তোমার কাছে বিশ্রাম পায়।
আমাদের হৃদয়ের পবিত্রতা দাও এবং
উদ্দেশ্যপূরণের শক্তি দাও, যাতে কোনো স্বার্থপর চিন্তা আমাদেরকে তোমার ইচ্ছা জানার থেকে বিরত করতে না পারে, এবং কোনো দুর্বলতা আমাদেরকে এটা করা থেকে বিরত করতে না পারে।“
অগাস্টিন অফ হিপো
(Augustine of Hippo)
পবিত্রতা হল পৃথকীকরণ
পবিত্রতা ঈশ্বরের একটি গুণ। শাস্ত্রে, পবিত্র শব্দটি ঈশ্বরকে বা এমন কিছুকে নির্দেশ করে যা ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত। মোশি এবং জ্বলন্ত ঝোপের কাহিনীতে, স্থানটি পবিত্র ছিল কারণ এটি কেবল ঈশ্বরের ছিল। পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া। পঞ্চপুস্তক বা বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বইতে বহু উদাহরণ দেখায় যে পবিত্র জিনিসগুলি প্রচলিত বা সাধারণ থেকে পৃথকীকৃত।
একটি পবিত্র দিন
প্রথমবার যখন বাইবেলে পবিত্র শব্দটি দেখা যায়, তখন এটি কোনো ব্যক্তিকে নয়, বরং একটি দিনকে নির্দেশ করেছিল। ছয়দিন ধরে সৃষ্টির পর, ঈশ্বর সপ্তম দিনটিকে অন্য ছয়দিনের থেকে পৃথক করেছিলেন।
আর ঈশ্বর সপ্তম দিনকে আশীর্বাদ করে সেটিকে পবিত্র করলেন, কারণ এই দিনেই তিনি তাঁর সব সৃষ্টিকর্ম সম্পূর্ণ করে বিশ্রাম নিয়েছিলেন (আদিপুস্তক ২:৩)।
সপ্তম দিনটি পবিত্র ছিল কারণ ঈশ্বর এটিকে পৃথক করেছিলেন; এটি আর সাধারণ ছিল না। যিশাইয় বলেছিলেন যে সাব্বাথ বা বিশ্রামবারকে (Sabbath) অন্য সবদিনের থেকে পৃথক করা হয়েছিল। এই দিনটি মানুষের নিজের কাজ করে বা তাদের মত আনন্দ করে কাটানোর জন্য ছিল না; এটি ঈশ্বরের ছিল (যিশাইয় ৫৮:১৩)। আরাধনার জন্য সাব্বাথ ঈশ্বরের দ্বারা পৃথকীকৃত হয়েছিল।
সাব্বাথের প্রতি ইস্রায়েলের বিশ্বস্ততা ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বস্ততাকে প্রদর্শন করেছিল। সেই ঈশ্বর যিনি সাব্বাথকে পৃথক করেছিলেন তিনিই ইস্রায়েলকে পৃথক করেছিলেন।
পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, ‘ইস্রায়েলীদের বলো, “তোমাদের অবশ্যই আমার সাব্বাথ পালন করতে হবে। আগামী বংশপরম্পরায় এটি আমার ও তোমাদের মধ্যে এক চিহ্ন হবে, যেন তোমরা জানতে পারো যে আমিই সেই সদাপ্রভু, যিনি তোমাদের পবিত্র করেছেন।’” (যাত্রাপুস্তক ৩১:১২-১৩)।
পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বরের দ্বারা এবং ঈশ্বরের জন্য পৃথক হওয়া। ঈশ্বর সাব্বাথকে পবিত্র করেছিলেন; ঈশ্বর তাঁর লোকদের পবিত্র করেছেন।
পবিত্র বস্তুসমূহ
একখন্ড জমি যা অন্য স্থানের থেকে পৃথক ছিল তা পবিত্র ছিল; এটি ঈশ্বরের ছিল। একটি দিন যেটি অন্য দিনগুলির থেকে পৃথক ছিল সেটি পবিত্র ছিল; এটি ঈশ্বরের ছিল। যা কিছু ঈশ্বরের জন্য পৃথক ছিল তা পবিত্র ছিল।
যাজকরা যে পোশাক পরতেন তা পবিত্র ছিল (যাত্রাপুস্তক ২৮:২)। সেগুলি ঈশ্বরের বিশেষ নির্দেশে তৈরি করা হত এবং সেগুলি তাঁর ছিল। সেইসমস্ত নৈবেদ্য যা লোকেরা ঈশ্বরের তাঁবুতে নিয়ে আসত তা পবিত্র ছিল; সেগুলি ঈশ্বরের জন্য পৃথক ছিল (যাত্রাপুস্তক ২৮:৩৮)। যাজকেরা আরাধনার সময় একটি বিশেষ তেল ব্যবহার করতেন। ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন, “‘আগামী বংশপরম্পরায় এটিই হবে আমার পবিত্র অভিষেক-তেল।” (যাত্রাপুস্তক ৩০:৩১)। অন্য কেউ এই তেল ব্যবহার করতে পারত না; এটি ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য পৃথক ছিল।
তাঁবুর জন্য অর্থ প্রদান করতে, ঈশ্বর সকল ইস্রায়েলবাসীর জন্য একটি কর ধার্য করেছিলেন যাকে বলা হত পবিত্রস্থানের শেকল (মুদ্রা) (shekel of the sanctuary) (যাত্রাপুস্তক ৩০:১৩, ২৪; যাত্রাপুস্তক ৩৮:২৪-২৬; লেবীয় পুস্তক ৫:১৫; লেবীয় পুস্তক ২৭:৩, ২৫; গণনা পুস্তক ৩:৪৭, ৫০; গণনা পুস্তক ৭:১৩)। এই অর্থ সাধারণ কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হত না। বহু পণ্ডিত ব্যক্তি বিশ্বাস করেন যে এটি যেকোনো সাধারণ শেকলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একটি মুদ্রা ছিল। এটি পবিত্র ছিল; এটি ঈশ্বরের ছিল।
তাঁবুর আসবাবপত্র পবিত্র ছিল। ঈশ্বর মোশিকে এই আসবাবটি অন্য সমস্ত বস্তুর থেকে আলাদা রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। “সেগুলি তুমি পবিত্র করবে, যেন সেগুলি অতি পবিত্র হয়ে যায় এবং যা কিছু সেগুলির সংস্পর্শে আসবে সেগুলিও পবিত্র হয়ে যাবে” (যাত্রাপুস্তক ৩০:২৯)।
ইস্রায়েল যেকোনো বস্তুর জন্য তিনটি সম্ভাবনা বুঝেছিল (লেবীয় পুস্তক ১০:১০)। বস্তুগুলি ছিল:
১। অশুচি। অশুচি জিনিসপত্র ঈশ্বরের লোকদের ব্যবহারের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
২। শুচি এবং সাধারণ।[1] শুচি বস্তু সাধারণ ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত ছিল।
৩। পবিত্র। পবিত্র বস্তু ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য আলাদা করা হয়েছিল। সেগুলি কেবল ঈশ্বরের সেবায় ব্যবহৃত হত।
ইস্রায়েল জাতি কনানদেশে প্রবেশ করার আগে, ঈশ্বর তাঁদের গাছ রোপণের বিষয়ে কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন (লেবীয় পুস্তক ১৯:২৩-২৫):
১। প্রথম তিনবছর, ফল খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। সেই বছরগুলিতে ফলটি মূলত অশুচি ছিল।
২। চতুর্থ বছরের ফল ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য পৃথকীকৃত ছিল; যা সদাপ্রভুর প্রশংসার জন্য একটি নৈবেদ্যস্বরূপ। এটি পবিত্র ছিল, লোকেরা এটি তাদের নিজেদের জন্য ব্যবহার করতে পারত না।
৩। পঞ্চম বছরের শুরু থেকে, তারা এই ফল খাওয়ার জন্য অনুমতি পেয়েছিল। সেই গাছটি তখন শুচি এবং সাধারণের ব্যবহারের জন্য উপলভ্য।
পবিত্র স্থান সমূহ
তাঁবুটি পবিত্র ছিল কারণ এটি ঈশ্বরের জন্য আলাদা করা হয়েছিল। তাঁবুর সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য আলাদা করা হয়েছিল। যে স্থানে ঈশ্বর মহাযাজকের সাথে দেখা করতেন সেই স্থানটিকে বলা হত পরম পবিত্র স্থান।
পরবর্তীকালে, যিরূশালেম মন্দিরটি পবিত্র ছিল কারণ এটি ঈশ্বরের সেবার জন্য পৃথক করা হয়েছিল। মন্দিরটি পবিত্র থাকার একমাত্র কারণ হল এটি ঈশ্বরের ছিল৷ ইস্রায়েলের পাপের কারণে, যিহিষ্কেল ঈশ্বরের মহিমা মন্দির ছেড়ে চলে যাওয়ার একটি দর্শন দেখেছিলেন (যিহিষ্কেল ১০)।
ঈশ্বরের মহিমা ছেড়ে যাওয়ার পর, মন্দিরটি পবিত্র ছিল না। ৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, রোমান জেনারেল পম্পেই পরম পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছিলেন এবং দেখেছিলেন যে এটি খালি। যেহেতু ঈশ্বর আর সেখানে থাকতেন না, ফলস্বরূপ মন্দিরটিও আর পবিত্র ছিল না।
এক পবিত্র জাতি
লেবির বংশকে ঈশ্বরের কাছে আলাদা করা হয়েছিল। ইস্রায়েল মিশর ত্যাগ করার আগের রাতে, প্রতিটি মিশরীয় পরিবারের প্রথমজাত পুত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। ইস্রায়েলের প্রথমজাত পুত্ররা রক্ষা পেয়েছিল কারণ তারা প্রতিটি বাড়ির দরজার উপরে একটি মেষশাবকের রক্ত ছিটিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের আদেশ পালন করেছিল।
ইস্রায়েল জাতি মিশর থেকে তাদের বেরিয়ে আসা দুইভাবে মনে রেখেছিল। প্রথম, প্রত্যেক ইহুদী পরিবার প্রতিবছর নিস্তার পর্বের রুটি ভোজন করত। এই খাবার ইস্রায়েল জাতির মিশর থেকে বেরিয়ে আসা উদযাপন করত।
দ্বিতীয় যে উপায়ে ইস্রায়েল জাতি মিশর থেকে উদ্ধারের কথা স্মরণ করেছিল তা আরও নাটকীয় ছিল। তিনি তাদের প্রথমজাত পুত্রদের উদ্ধার করেছিলেন তা ইস্রায়েলকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য, ঈশ্বর আদেশ করেছিলেন:
প্রত্যেকটি প্রথমজাত পুরুষকে আমার উদ্দেশে পবিত্র করো। মানুষ হোক কি পশু, ইস্রায়েলীদের মধ্যে প্রত্যেকটি গর্ভের প্রথম সন্তানটি আমার। (যাত্রাপুস্তক ১৩:২)।
পবিত্র শব্দটি হিব্রু শব্দ থেকে এসেছে যা অনুবাদ করলে হয় “পবিত্রীকৃত” বা “পৃথকীকৃত”। প্রত্যেক পরিবারের প্রথমজাত সন্তান ঈশ্বরের। সমস্ত ঈস্রায়েল জাতির প্রথমজাত পুত্রকে উপস্থাপন করার জন্য ঈশ্বর লেবীর বংশকে নির্বাচন করেছিলেন। এই বংশকে সমগ্র জাতির পক্ষে সেবা করেছিল।
প্রত্যেক ইস্রায়েলী মহিলার প্রথমজাত পুরুষ শিশুর পরিবর্তে আমি লেবি গোষ্ঠীকে গ্রহণ করেছি। লেবীয় গোষ্ঠী আমারই, যেহেতু সমস্ত জ্যেষ্ঠ সন্তানেরা আমার। যখন মিশরে আমি সমস্ত প্রথমজাতকে আঘাত করি, তখন ইস্রায়েলীদের মধ্য থেকে আমি পশু হোক অথবা মানুষ, প্রত্যেক প্রথমজাত প্রাণীকে নিজের জন্য স্বতন্ত্র করে রাখি। তারা আমারই হবে। আমিই সদাপ্রভু (গণনা পুস্তক ৩:১২-১৩)।
যাত্রাপুস্তক ২৯ অধ্যায়ে, ঈশ্বর যাজকদের পবিত্রকরণ অনুষ্ঠানের বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। এই অধ্যায়ে পবিত্র শব্দটি নয়বার ব্যবহৃত হয়েছে। লেবীয়দের প্রথমজাতের জায়গায় পবিত্র করা হয়েছিল; গোষ্ঠীটি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের ছিল।
► ইস্রায়েলের জন্য পৃথকীকরণের বার্তায় জোর দেওয়া এটা ঈশ্বরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন? কেন পৌল করিন্থ (২ করিন্থীয় ৬:১৪-৭:১) এবং থিষলনীকিয়ার (১ থিষলনীকীয় ৪-৫) মন্ডলীর জন্য এই বার্তাটির ওপর জোর দিয়েছিলেন? কেন এই বার্তাটি আজ গুরুত্বপূর্ণ?
এই উদাহরণগুলো দেখায় যে পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া। এটি আমাদের আজকে একটি পবিত্র জীবনের অর্থ বুঝতে সাহায্য করে। একজন পবিত্র ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের হয়ে থাকেন। তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের জন্য পৃথকীকৃত। পবিত্র হওয়া মানে হল পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া।
[1]বহু ইংরাজি অনুবাদে “সাধারণ” বস্তুর জন্য “অশুচি” (profane) বা “অপবিত্র”(unholy) শব্দটি ব্যবহার করা হয়। দুটো শব্দের কোনোটির মানেই “পাপপূর্ণ” নয়। এই শব্দগুলি সহজভাবে বোঝায় যে বস্তুটি পবিত্র উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য “পৃথকীকৃত” নয়।
পবিত্র হওয়া মানে হল পাপ থেকে পৃথক হওয়া
যেহেতু ঈশ্বর পবিত্র, তাই তাঁর লোকদেরকেও অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। পাপী মানুষ কোনোমতেই একজন পবিত্র ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। পবিত্র লোকেরা সেই সবকিছু থেকে নিজেদের পৃথক রাখে যা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে।
একজন পবিত্র ঈশ্বর পাপ ঘৃণা করেন
(১) ঈশ্বর বন্যার মাধ্যমে তাঁর পবিত্রতা প্রকাশ করেছিলেন।
ঈশ্বর খুব যত্ন সহকারে এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু পাপ এই সৃষ্টিকে নষ্ট করেছিল। যখন ঈশ্বর মানুষের দিকে তাকিয়েছিলেন, তিনি মানুষের হৃদয়ে মন্দতা দেখেছিলেন।
সদাপ্রভু দেখলেন পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা কত বেড়ে গিয়েছে, এবং তাদের অন্তরের চিন্তাভাবনার প্রত্যেকটি প্রবণতা সবসময় শুধু মন্দই থেকে গেল। পৃথিবীতে মানবজাতিকে তৈরি করেছেন বলে সদাপ্রভু মর্মাহত হলেন, এবং তাঁর অন্তর গভীর মর্মবেদনায় ভরে উঠল (আদিপুস্তক ৬:৫-৬)।
নোহ এবং তাঁর পরিবার রক্ষা পেয়েছিল কারণ নোহ একটি পবিত্র জীবন যাপন করতেন। “নোহ তাঁর সমকালীন লোকদের মধ্যে এক ধার্মিক, অনিন্দনীয় লোক ছিলেন, আর তিনি বিশ্বস্ততাপূর্বক ঈশ্বরের সাথে চলাফেরা করতেন” (আদিপুস্তক ৬:৯)। তিনি পাপ থেকে বিরত থাকতেন।
(২) নাদব এবং অবীহূর প্রতি তাঁর বিচারে ঈশ্বর তাঁর পবিত্রতা প্রকাশ করেছিলেন।
হারোণের বড় ছেলেরা ঈশ্বরের সেবাকার্যের জন্য মনোনীত হয়েছিল। যখন তারা তাঁবুর পবিত্রতা নষ্ট করে, তখন ঈশ্বরের অগ্নি নেমে আসে এবং তাদের সংহার করে, এবং তারা ঈশ্বরের সামনেই মারা যায় (লেবীয় পুস্তক ১০:২)। লেবীয় পুস্তকে নাদব এবং অবীহূর পাপ বিশদে লিখিত নেই, কিন্তু ঈশ্বর বলেছিলেন, “যারা আমার নিকটবর্তী হয়, তাদের আমি আমার পবিত্রতা দেখাব ও সব মানুষের দৃষ্টিতে আমি সম্মানিত হব” (লেবীয় পুস্তক ১০:৩)। ঈশ্বরের যাজককে অবশ্যই তাঁর তাঁবুকে পবিত্ররূপে সেবা করতে হবে। নাদব এবং অবীহূ মনে করেছিল যে তারা সাধারণভাবেই পবিত্রের উপাসনা করতে পারে।
(৩) মোশি এবং হারোণের প্রতি তাঁর বিচারে ঈশ্বর তাঁর পবিত্রতা প্রকাশ করেছিলেন।
মোশি এবং হারোণকে প্রতিজ্ঞার দেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল করা হয়েছিল কারণ তাঁরা ইস্রায়েলের লোকদের দৃষ্টিতে ঈশ্বরের পবিত্রতার সম্মান রাখতে পারেননি (গণনা পুস্তক ২০:১২)। ঈশ্বর মোশিকে জল বের করার জন্য পাথরের সাথে কথা বলতে বলেছিলেন, কিন্তু মোশি পাথরটিকে আঘাত করেছিলেন। ঈশ্বর মোশির ওপর ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন কারণ তিনি লোকদের সামনে ঈশ্বরকে সম্মান প্রদর্শন করেননি।
যেহেতু ঈশ্বর পবিত্র, তাই তিনি পাপকে উপেক্ষা করতে পারেন না। পেন্টাটিউকে দশবার, একটি পাপকে “সদাপ্রভুর কাছে ঘৃণ্য” বলা হয়েছে, অর্থাৎ এমনকিছু যা ঈশ্বর ঘৃণা করেন। একজন পবিত্র ঈশ্বর পাপকে ঘৃণা করেন।
পবিত্র ব্যক্তিরা পাপকে ঘৃণা করেন
[1]ঈশ্বর হলেন পবিত্রতার ঈশ্বর এবং প্রেমের ঈশ্বর। মানুষের পাপ একটি সমস্যা তৈরি করেছিল। কীভাবে একজন পবিত্র ঈশ্বর পাপী মানুষের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে পারেন? কীভাবে ঈশ্বর একই সময়ে মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন এবং তাঁর পবিত্রতার কাছে বিশ্বস্ত থাকতেন?
ঈশ্বর মানুষকে পবিত্র মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করার জন্য তাঁর নিয়ম দিয়েছিলেন। নিয়মটি আমাদের জীবন কঠিন করে তোলার জন্য দেওয়া হয়নি; এটি আমাদের ঈশ্বরের সাথে সঠিক সম্পর্কে বাস করতে সাহায্য করার জন্য প্রযোজ্য হয়েছিল। নিয়মটি ঈশ্বরের লোকদের পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটি নকশা দিয়েছিলেন। পবিত্র লোকেরা পাপকে ঘৃণা করবে ঠিক যেমন একজন পবিত্র ঈশ্বর পাপকে ঘৃণা করেন।
নতুন নিয়মের লেখকরা শিখিয়েছেন যে ঈশ্বরের কাছে পৃথক হতে গেলে পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রয়োজন। যাকোব বলেছেন, “তোমরা কি জানো না, জগতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণার নিদর্শন? কোনো ব্যক্তি যদি জগতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে বেছে নেয়, সে ঈশ্বরের শত্রু হয়ে ওঠে” (যাকোব ৪:৪)। আপনি ঈশ্বর এবং পাপ একসঙ্গে উভয়ের বন্ধু হতে পারেন না। আপনি একই সময়ে ঈশ্বর এবং পাপের সাথে চলতে পারেন না। একটি পবিত্র জীবনের জন্য পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রয়োজন।
পৌল এমন লোকদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন যারা মনে করত ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাদের ইচ্ছাকৃত পাপ অব্যাহত রাখার অনুমতি দিয়েছে। তারা বলেছিল, “বিধানের অধীন নই, কিন্তু অনুগ্রহের অধীন বলে আমরা কি পাপ করেই যাব?” (রোমীয় ৬:১৫)। পৌলের উত্তর দৃঢ় ছিল। “কোনোভাবেই নয়! তোমরা কি জানো না যে, ক্রীতদাসের মতো আদেশ পালনের জন্য যখন তোমরা কারও কাছে নিজেদের সমর্পণ করো, যার আদেশ তোমরা পালন করো, তোমরা তারই ক্রীতদাস হও?” এক্ষেত্রে কেবল দুটি বিকল্প আছে (রোমীয় ৬:১৬):
১। যদি আপনি নিজেকে পাপে সমর্পণ করে, তাহলে এর শেষ হল মৃত্যু।
২। যদি আপনি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে, তাহলে এর শেষ হল ধার্মিকতা।
আপনি নিজেকে পাপ এবং ঈশ্বর উভয়ের কাছে সমর্পণ করতে পারেন না। খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের পাপ থেকে মুক্ত করা হয়েছে, এবং ধার্মিকতার দাস করা হয়েছে (রোমীয় ৬:১৮)। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমাদের অবশ্যই পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে।
পৌল এটিকে বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে রেখেছিলেন যা আমাদের ইচ্ছাকৃত পাপ এড়িয়ে চলার দায়িত্বটিকে প্রকাশ করে। “তোমরা যেহেতু তোমাদের স্বাভাবিক সত্তায় দুর্বল তাই আমি একথা সাধারণ মানুষের মতোই বলছি। যেমন তোমরা তোমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অশুদ্ধতা ও ক্রমবর্ধমান দুষ্টতার কাছে সমর্পণ করতে, তেমনই এখন সেগুলি ধার্মিকতার ক্রীতদাসত্বে সমর্পণ করো, যা পবিত্রতার অভিমুখে চালিত করে” (রোমীয় ৬:১৯)।
যখন আপনি ঈশ্বরের জন্য জীবন যাপন করছেন তখন পাপের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। ঈশ্বরের কাছে পৃথক থাকতে গেলে পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রয়োজন। আমরা ঈশ্বর এবং পাপ উভয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারি না। আদম এবং হবা পাপ করার পরে, তারা ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে নিজেদেরকে বাগানের গাছের আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছিল (আদিপুস্তক ৩:৮)। পাপের সাথে মিলন ঈশ্বরের সাথে বিচ্ছেদ ঘটায়।
পরিত্রাণ আমাদেরকে পাপে বাস করার জন্য মুক্ত করেছে তা নয়। পরিত্রাণ আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করেছে যাতে আমরা পবিত্র হতে পারি। পরিত্রাণের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের সন্তানদের পবিত্রতায় আনা। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল আমাদের পাপ থেকে বের করে আনা এবং তাঁর সাথে সম্পর্কের জন্য পৃথক করে তোলা।[2]
চিহ-মিং তাইওয়ানের একটি পাহাড়ে ভ্রমণ করছিলেন। রাস্তার পাশে একটা পাহাড়ী খাদ ছিল যেটা অনেক নিচে একটা নদীতে নেমে গেছিল। আপনার কি মনে হয় যে চিহ-মিং তার বাস ড্রাইভারকে তাকে দেখাতে বলেছিল যে সে কতটা পাহাড়ের খাদের কাছাকাছি গাড়ি চালাতে পারে? না! চিহ-মিং প্রান্ত থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে চেয়েছিলেন। একই ভাবে, একজন পবিত্র ব্যক্তি পাপ থেকে দূরে থাকেন। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, একজন পবিত্র ব্যক্তি পাপী জীবনযাত্রা এড়িয়ে চলেন। একজন পবিত্র ব্যক্তি পাপ থেকে যতটা সম্ভব দূরে এবং ঈশ্বরের যতটা সম্ভব কাছে থাকেন।
প্রেরিত পিতর এইভাবে বিষয়টাকে প্রকাশ করেছেন, “কিন্তু তোমরা এক মনোনীত বংশ, এক রাজকীয় যাজক-সম্প্রদায়, এক পবিত্র জাতি, ঈশ্বরের অধিকারস্বরূপ নিজস্ব এক প্রজা।” আমরা কীভাবে এইগুলি পালন করব? একটি পবিত্র জীবন যাপনের মাধ্যমে। “তোমরা পাপপূর্ণ কামনাবাসনা থেকে দূরে থাকো, যেগুলি তোমাদের প্রাণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। অবিশ্বাসী প্রতিবেশীদের মধ্যে তোমরা এমন উৎকৃষ্ট মানের জীবনযাপন করো” (১ পিতর ২:৯-১২)। ঈশ্বরের লোকদের পবিত্র জীবন হল মালিকানার একটি চিহ্নস্বরূপ। পবিত্র লোকেরা পাপ থেকে দূরে থাকে কারণ তাঁরা ঈশ্বরের অধিকারস্বরূপ ব্যক্তি, এমন এক জাতি যে ঈশ্বরের। পবিত্র লোকেরা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের কাছে থাকতে চান।
পৌল করিন্থের লোকদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে অধার্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না। তিনি তাদের একটি তালিকা করেছিলেন যারা বহিষ্কৃত হবে: “যারা বিবাহ-বহির্ভূত সংসর্গকারী, বা প্রতিমাপূজক, বা ব্যভিচারী, বা সমকামী, বা চোর বা লোভী বা মদ্যপ বা কুৎসা-রটনাকারী, বা পরধনগ্রাহী, তারা কেউই ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার লাভ করবে না।” এবং এরপর তিনি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, “আর তোমরাও কেউ কেউ সেইরকমই ছিলে।” করিন্থের খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা দুষ্ট পরিবেশে বেড়ে উঠেছিল এবং এইসমস্ত পাপের অনুশীলন করত।
কিন্তু পৌল খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের এমন অবস্থায় ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেননি, “এখন তোমারা খ্রিষ্টবিশ্বসী – যারা বিবাহ-বহির্ভূত সংসর্গ, প্রতিমাপূজা, ব্যভিচারীতা, সমকামীতা, চুরি, লোভ, এবং মদ্যপ আচরণ অনুশীলন করো।” পরিবর্তে, পৌল বলেছেন, “তোমরা প্রভু যিশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা ধৌত হয়েছ, শুচিশুদ্ধ হয়েছ ও নির্দোষ প্রতিপন্ন হয়েছ।” (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১)।
পৌল উল্লাস করেছেন, “তোমরা যা ছিলে তা আর নেই! তোমরা আর সেই সমস্ত পাপের অধীনে নও। তোমরা পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছ এবং এখন তোমরা ঈশ্বরের।” পবিত্র হওয়া মানে হল পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাতে আমরা ঈশ্বরের কাছে পৃথক হতে পারি।
"যিশু মারা গিয়েছিলেন, মানুষকে পাপের সাথে মিলিত করার জন্য নয়, বরং তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য।"
- আর. ই. হাওয়ার্ড (R.E. Howard)
[2]John N. Oswalt, Called to Be Holy: A Biblical Perspective (Nappanee: Evangel Publishing House, 1999), 33
পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বরের কাছে পৃথকীকৃত হওয়া
উষিয় একজন ভালো রাজা ছিলেন যিনি সবসময় সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা ন্যায্য তাই করতেন। তিনি সবসময় ঈশ্বরের অন্বেষণ করতেন, এবং ঈশ্বর তাঁকে ফিলিস্থিনীদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন (২ বংশাবলী ২৬:৪-৭)। উষিয় রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছিলেন। তিনি যিহূদার পরিধি বিস্তার করেছিলেন এবং দুর্বল রাজাদের শাসনকালে যেসব এলাকা পরাজিত হয়েছিল সেগুলোকেও পুনরুদ্ধার করেছিলেন। “তাঁর খ্যাতি একেবারে মিশরের সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল, কারণ তিনি খুব শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন” (২ বংশাবলী ২৬:৮)।
উষিয় একজন শক্তিশালী রাজা ছিলেন, কিন্তু তাঁর কাহিনীর শেষটি ছিল দুঃখবিদারক। “কিন্তু শক্তিশালী হয়ে ওঠার পর উষিয়ের অহংকারই তাঁর পতনের কারণ হয়ে উঠেছিল। তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি তিনি অবিশ্বস্ত হলেন” (২ বংশাবলী ২৬:১৬)।
কোন বিষয়টি ঈশ্বরকে উষিয়ের ওপর ক্ষুণ্ণ করেছিল? রাজা ধূপবেদীতে ধূপ পোড়ানোর জন্য মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি সাধারণ এবং পবিত্রর মধ্যে বিচ্ছেদ নষ্ট করেছিলেন। ফলস্বরূপ, “আমৃত্যু, রাজা উষিয় কুষ্ঠরোগী হয়েই ছিলেন। কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হয়ে তিনি আলাদা একটি বাড়িতে বসবাস করলেন, এবং সদাপ্রভুর মন্দিরে তাঁর প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হল” (২ বংশাবলী ২৬:২১)।
রাজা উষিয় হত্যা করেননি, চুরি করেননি, বা ব্যাভিচারিতাও করেননি। তিনি মূর্তিপূজাও করেননি বা যাদুটোনাও করেননি। উষিয় ঈশ্বরের পৃথকীকরণের নীতিকে লঙ্ঘন করার মাধ্যমে পাপ করেছিলেন। তাঁর অহংকারের বশে তিনি পবিত্র ধূপবেদী স্পর্শ করেছিলেন। তিনি অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অবিশ্বস্ত হয়েছিলেন।
অহংকারের বশবর্তী হয়ে রাজা উষিয় মন্দিরের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছিলেন। নিয়ম ঈশ্বরের লোকদের শিখিয়েছিল যে তাদের অবশ্যই পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে, যাতে তারা ঈশ্বরের সাথে সুসম্পর্কে বাস করতে পারে। একটি পবিত্র জীবন হল ঈশ্বরের কাছে পৃথকীকৃত হওয়া।
ইতিহাসমূলক বইগুলি এমন অনেক মানুষ ও জিনিসের উদাহরণ দেয় যারা বা যেগুলি ঈশ্বরের জন্য পৃথক ছিল। ঠিক যেমন তিনি জ্বলন্ত ঝোপের ক্ষেত্রে করেছিলেন, ঈশ্বর এক খন্ড জমিকে পবিত্র হিসেবে পৃথক করেছিলেন। “সদাপ্রভুর সৈন্যদলের সেনাপতি উত্তর দিলেন, ‘তোমার চটিজুতো খুলে ফেলো, যেহেতু তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছ, সেই স্থানটি পবিত্র’” (যিহোশূয় ৫:১৫)।
যখন ইস্রায়েল যিরীহো আক্রমণ করেছিল, ঈশ্বর তাদের সেই সবকিছু ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন যে “এই নগর এবং এর মধ্যে থাকা সবকিছু সদাপ্রভুর উদ্দেশে বর্জিত হবে... সমস্ত সোনা ও রুপো এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র সদাপ্রভুর উদ্দেশে পৃথক থাকবে ও সেগুলি অবশ্যই তাঁর ভাণ্ডারে যাবে” (যিহোশূয় ৬:১৭, ১৯)। যিরীহোতে, এই জিনিসগুলি পবিত্র ছিল না; এগুলি তখনই পবিত্র হয়ে উঠেছিল যখন ঈশ্বর এগুলি নিজের বলে দাবী করেছিলেন।
দায়ূদ লেবীয়দের আদেশ করেছিলেন, “আপনাদেরই নিজেদের ও আপনাদের সহকর্মী লেবীয়দের পবিত্র করতে হবে এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকটির জন্য আমি যে স্থানটি প্রস্তুত করে রেখেছি, সেখানে সেটি নিয়ে আসতে হবে” (১ বংশাবলী ১৫:১২)। নিয়ম-সিন্দুক জেরুশালেমে নিয়ে আসার আগে, লেবীয় জাতি নিজেদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যর জন্য পৃথক করেছিল।
পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াই পবিত্র লোকদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য নয়। ইস্রায়েল তার চারপাশের অন্যান্য পাপী দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল যাতে ঈশ্বরের নিজস্ব হয়ে ওঠার জন্য সে ঈশ্বরের কাছে তাঁর মূল্যবান সম্পদ হতে পারে (লেবীয় পুস্তক ২০:২৬; যাত্রাপুস্তক ১৯:৫)। মন্দির উৎসর্গ করার সময়ে, শলোমন প্রার্থনা করেছিলেন, “কারণ তুমি তাদের তোমার নিজস্ব উত্তরাধিকার হওয়ার জন্য জগতের সব জাতির মধ্যে থেকে আলাদা করে বেছে নিয়েছ, ঠিক যেভাবে তুমি, হে সার্বভৌম সদাপ্রভু, আমাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে বের করে আনার সময় তোমার দাস মোশির মাধ্যমে ঘোষণা করলে” (১ রাজাবলী ৮:৫৩)। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে অন্য সমস্ত জাতির থেকে আলাদা করেছিলেন যাতে সে তাঁর হতে পারে। ইস্রায়েলের কাছে ঈশ্বরের ঐতিহ্য হওয়ার সম্মান ছিল।
অবিশ্বাসীদের সাথে সহভাগিতার বিরুদ্ধে করিন্থীয়দের সতর্ক করতে, পৌল যিশাইয়কে উক্তি করে বলেছিলেন, “‘অতএব, তোমরা তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসো ও পৃথক হও, একথা প্রভু বলেন। কোনো অশুচি বস্তু স্পর্শ কোরো না…’” (২ করিন্থীয় ৬:১৭)।
পৃথকীকরণের বার্তাটি নেতিবাচক। তবে, এই পদটি একটি অসাধারণ প্রতিজ্ঞার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়! আমরা পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি যাতে আমরা ঈশ্বরের কাছে পৃথক হতে পারি। পৌল একটি প্রতিজ্ঞা অব্যাহত রেখেছেন: “...আমি তোমাদের গ্রহণ করব। আমি তোমাদের পিতা হব, আর তোমরা হবে আমার পুত্রকন্যা, সর্বশক্তিমান প্রভু একথা বলেন” (২ করিন্থীয় ৬:১৭-১৮)।
অপবিত্র সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্নতা আমাদেরকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে না। পরিবর্তে, আমরা পাপ থেকে আলাদা হয়েছি যাতে আমরা ঈশ্বরের সাথে চলার আনন্দ পেতে পারি। খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে পাপ থেকে আলাদা হতে হবে যাতে আমরা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের অন্তর্গত হতে পারি। পবিত্র লোকেরা আনন্দের সাথে পাপ থেকে দূরে থাকে কারণ তারা জানে যে পাপ থেকে বিচ্ছিন্নতা তাদের স্বর্গস্থ পিতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।
এই আদর্শটি খাবার এবং পোশাকের নিয়মের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। ঈশ্বর কেন বলেছিলেন, “এই খাবারগুলি খাবে না” বা “এই ধরণের উপাদান পরিধান করবে না”? এই নিয়মগুলি ইস্রায়েলকে শেখানোর জন্য বস্তুগত পাঠ ছিল যে তাকে ঈশ্বরের কাছে পৃথক হতে হবে। এই নিয়মগুলি ইস্রায়েলকে এমন একটি জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল যা ঈশ্বরের ছিল। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে বলেছিলেন, “তুমি যেহেতু আমার দৃষ্টিতে বহুমূল্য ও মর্যাদার পাত্র আর আমি যেহেতু তোমাকে ভালোবাসি” (যিশাইয় ৪৩:৪)। কী অসাধারণ চিত্র! ইস্রায়েল ঈশ্বরের কাছে শাস্তিস্বরূপ পৃথক হয়নি; সে সম্মান এবং ভালোবাসার জন্য পৃথক হয়েছিল। সে সমস্ত জাতির মধ্যে ঈশ্বরের নিজস্ব সম্পত্তি ছিল (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫)।
এই ধারণাটি তাঁবুর ক্ষেত্রে চিত্রিত হয়েছে। যারা রীতি-অনুযায়ী অশুচি ছিল তাদের স্থান ছিল শিবিরের বাইরে। যারা রীতি-অনুযায়ী শুচি ছিলেন তাঁরা শিবিরের ভিতরে ছিলেন। শিবিরের মধ্যস্থানে, যাজকরা তাঁবুতে বলি উৎসর্গ করতেন। কেবল মহাযাজকই মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে পারতেন। এই ব্যবস্থা লোকেদের একটি চাক্ষুষ অনুস্মারক দিয়েছিল যে পাপ থেকে বিচ্ছিন্নতা আমাদের ঈশ্বরেরকাছে পৃথক করে তোলে। এটি লোকেদের দেখিয়েছিল যে ঈশ্বরের পবিত্র উপস্থিতির কাছাকাছি থাকার অর্থ কী।
1 = শিবিরের বাইরের স্থান (অশুচি)
2 = শিবিরের ভেতরের স্থান (শুচি)
3 = তাঁবু (যাজকবর্গ)
4 = সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান (মহাযাজক)
[1]যেহেতু লোকেরা পৃথকীকরণের নীতি অনুসরণ করেছিল, ফলস্বরূপ তারা শিখেছিল যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পবিত্র হতে হবে। জীবনের সমস্ত কিছুর উপর ঈশ্বরের কর্তৃত্ব রয়েছে।
লেবীয় পুস্তক ১৭–২৬কে বলা হয় “পবিত্রতার নীতি” (Holiness Code)। পবিত্রতার নীতি ইস্রায়েলকে শিখিয়েছিল কীভাবে একটি পবিত্র জাতি হিসেবে বাস করতে হয়। ক্ষুদ্রতম বর্ণনা থেকে বৃহত্তম আদর্শ, এই নীতিগুলি ঈশ্বরের পবিত্রতা থেকে অনুপ্রাণিত ছিল। এগুলি ইস্রায়েলকে দেখিয়েছিল কীভাবে এক পাপে পরিপূর্ণ জগতে পবিত্র হতে হয়। তারা ইস্রায়েলকে শিখিয়েছিল কীভাবে পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তারা শিখিয়েছিল যে ইস্রায়েল ঈশ্বরের কাছে পৃথক, যিনি তাদেরকে মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৬)।
লেবীয় পুস্তক ২০ অধ্যায়ে, ঈশ্বর বলেছেন, “আমার উদ্দেশে তোমাদের পবিত্র হতে হবে, কারণ আমি সদাপ্রভু পবিত্র এবং জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের আমি পৃথক রেখেছি, যেন তোমরা আমার নিজস্ব হও” (লেবীয় পুস্তক ২০:২৬)। “জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের আমি পৃথক রেখেছি।” কেন? “যেন তোমরা আমার নিজস্ব হও।” এটাই ছিল ঈশ্বরের কাছে পৃথকীকরণ।
লেবীয় পুস্তক ২০:২৬-এ অনুবাদকৃত হিব্রু শব্দ “বিচ্ছিন্ন” আদিপুস্তক ১:৪-এ ব্যবহৃত হয়েছে যখন ঈশ্বর আলোকে অন্ধকার থেকে বিভক্ত বা পৃথক করেছিলেন। আপনি আলো এবং অন্ধকারকে মিশ্রিত করতে পারেন না; তারা বিপরীত। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে চারপাশের পাপে পরিপূর্ণ জাতিগুলি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন।
ঈশ্বর তাঁর লোকেদের পাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হতে বলেছিলেন। কেন? যাতে তারা সম্পূর্ণরূপে তাঁর অন্তর্গত হতে পারে। এই নীতিগুলি প্রকাশ করে যে সমস্ত জীবন ঈশ্বরের। একটি পবিত্র জাতির জন্য, সমস্ত জীবন ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীন। পবিত্র হওয়া মানে সকল ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া। আমরা পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি যাতে আমরা ঈশ্বরের অন্তর্গত হতে পারি।
► কোনটি বেশী কঠিন বলে মনে হয় – পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নাকি ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া? কেন?
“আমাদের জীবনের কোনোকিছুই ঈশ্বরের কাছে একটি তুচ্ছ বিবরণ নয়।”
– অসওয়াল্ড চেম্বার্স
(Oswald Chambers)
পবিত্রতার অনুশীলন: “এই জগতে, কিন্তু জগতের মতো নয়”
বাইবেলভিত্তিক পৃথকীকরণ জগতের কাছে একটি দৃষ্টান্ত প্রদান করে
যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর শিষ্যেরা জগতে থাকলেও, যেন এই জগতের মতো না হয়। দানিয়েল রাজকীয় খাবার এবং পানীয় দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে নিজেকে অশুচি করতে অস্বীকার করেছিলেন (দানিয়েল ১:৮)। সমগ্র ইতিহাস জুড়ে, ঈশ্বরের লোকেরা তাদের নিজেদেরকে সমাজের পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন। এটিই ঈশ্বরের লোকদের তাদের জগতে একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ করে তুলেছিল।
ইস্রায়েল যাজকদের এক রাজ্য হওয়ার জন্য আহূত হয়েছিল, এক পবিত্র জাতি যে অন্যদের ঈশ্বরের পথে নেতৃত্ব দিত (যাত্রাপুস্তক ১৯:৬)। যখন ইস্রায়েল ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, সে তার উদ্দেশ্যপূরণে সফল হয়েছিল। রাহাব বলেছিলেন, “আমাদের মধ্যে এক মহা ভয় এসে পড়েছে … আমাদের হৃদয় গলে গেল, তোমাদের জন্য আমাদের প্রত্যেকের সাহস নষ্ট হয়ে গেল।” কেন? কারণ ইস্রায়েল বিশাল সৈন্যবাহিনী সহ একটি শক্তিশালী দেশ ছিল? না! কারণ, “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু উপরে স্বর্গের ও নিচে পৃথিবীর ঈশ্বর” (যিহোশূয় ২:৯-১১)। যখন ইস্রায়েল ঈশ্বরের জন্য পৃথক হয়েছিল, সে সমস্ত জাতির কাছে একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে উঠেছিল।
আমরা এই নীতিবোধ যোষেফের জীবনে দেখতে পাই। যেহেতু যোষেফ নিজেকে মিশরের পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন, ফলস্বরূপ তিনি ফরৌণের কাছে একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে উঠেছিলেন। “এই লোকটির মতো কাউকে কি আমরা খুঁজে পাব, যার অন্তরে ঈশ্বরের আত্মা আছে?” (আদিপুস্তক ৪১:৩৮)। যদি যোষেফ মিশরীয়দের মতো জীবন কাটাতেন, তাহলে তাঁকে কখনোই ফরৌণের কাছে এক দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হত না।
যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর অনুগামীরা এই জগতে থাকলেও যেন এই জগতের মতো না হয়। এই কথাটি কখনো কখনো সেইসব খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা ভুল বুঝেছে যারা সতর্ক, ধার্মিক জীবনযাপন করতে চায়। তারা ভুল বুঝে মনে করে যে পৃথিবীতে থাকা একটি প্রয়োজনীয় পাপ যা ঈশ্বরের লোকেদের স্বর্গরাজ্যের পথে সহ্য করতে হবে।
তথাপি, তাঁর অনুগামীরা এই জগতের নয় এই বিষয়ে উল্লাস করার পর, যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “তুমি যেমন আমাকে জগতে পাঠিয়েছ, আমিও তেমনই তাদের জগতে পাঠাচ্ছি” (যোহন ১৭:১৬-১৮)। যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যেন তাঁর শিষ্যেরা সক্রিয়ভাবে জগতে সেবাকার্য করে। যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যে আমরা যখন পৃথিবীতে প্রেরিত হচ্ছি তখন আমরা যেন জগতের মতো হয়ে না যাই। পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার মাধ্যমে, আমরা জগতকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের আহ্বান পূরণ করতে পারি। ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে, আমরা পাপে পরিপূর্ণ একটি বিশ্বের জন্য লবণ এবং আলো হতে পারি।
প্রেরিতেরা জানতেন যে একটি পবিত্র জীবন হল জগতের কাছে একটি সাক্ষ্য। পিতর বিশ্বাসীদেরকে অবিশ্বাসীদের সাক্ষাতে ঈশ্বরীয় জীবনযাপন করতে বলেছিলেন:
অবিশ্বাসী প্রতিবেশীদের মধ্যে তোমরা এমন উৎকৃষ্ট মানের জীবনযাপন করো যে, যদিও তারা তোমাদের দুষ্কর্মকারী বলে অপবাদ দেয়, তবুও তারা তোমাদের সৎ কর্মগুলি দেখতে পায় ও যেদিন ঈশ্বর আমাদের পরিদর্শন করেন, সেদিন তারা তাঁর গৌরব কীর্তন করবে (১ পিতর ২:১২)।
পৌল ক্রীট দ্বীপের মন্ডলীর নেতা তীতকে চিঠি লিখেছিলেন। এই বিশ্বাসীরা মূর্তিপূজকদের (পেগান) দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। পৌল তীতকে বলেছিলেন যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অবশ্যই এমনভাবে জীবনযাপন করতে হবে “আমাদের পরিত্রাতা ঈশ্বর সম্বন্ধীয় শিক্ষাকে তারা যেন সর্বতোভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে” (তীত ২:১০)। যেহেতু খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা পবিত্র জীবন যাপন করত, তাই তাদের জীবন সুসমাচারকে শোভিত করত। পবিত্র ব্যক্তিদের আচরণ সুসমাচারকে আমাদের জগতে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
পৌল ফিলিপীতে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের একটি ঐশ্বরিক জীবনের জন্য আহ্বান করেছিলেন। তাদের পাপ থেকে আলাদা থাকতে হবে। “যেন তোমরা এই কুটিল ও অবক্ষয়ের যুগে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক ও শুচিশুদ্ধ সন্তান হতে পারো। তোমরা তখন তাদের মধ্যে আকাশের তারার মতো এই জগতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে” (ফিলিপীয় ২:১৫)।
যেহেতু ঈশ্বরের লোকেরা পবিত্র জীবন যাপন করে, ফলস্বরূপ আমরা জগতে আলোর মত দীপ্তিমান থাকি। ঈশ্বরের সন্তানদের জীবনের মধ্যে দিয়ে একটি অন্ধকার জগতে একটি উজ্জ্বল সাক্ষ্য প্রদত্ত হয়। পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পরিত্রাণ অর্জনের জন্য একটি বৈধ প্রচেষ্টা নয়। পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আমাদেরকে জগতের আলো এবং লবণ হওয়ার জন্য যিশুর যে আহ্বান তা পরিপূরণ করতে সক্ষম করে তোলে (মথি ৫:১৩-১৪)। পবিত্র হাত আমাদের জগতের জন্য দৃঢ় সাক্ষ্য।
বাইবেলভিত্তিক পৃথকীকরণের নীতিসমূহ
বহু মানুষের কাছে জগৎ থেকে বিচ্ছেদ হল করণীয় এবং না করণীয়-এর একটি তালিকা। প্রায়শই বিচ্ছেদকে নিয়মের একটি তালিকা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। অনেক লোক বিচ্ছেদকে সংজ্ঞায়িত করে তাদের এমন পোশাকের তালিকার দ্বারা যা তারা পরিধান করে না, এমন কোনো জায়গা যেখানে তারা যেখানে যায় না এবং সেইসব বিনোদন যেটিতে তারা অংশগ্রহণ করে না।
এটি অবশ্যই সত্যি যে পবিত্র লোকেরা নির্দিষ্ট কিছু পোশাক পরবে না বা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় যাবে না। একজন পবিত্র ব্যক্তি জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চান। তাই, পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া নিয়মের একটি তালিকার চেয়েও বড় বিষয়।
শুধুমাত্র নিয়মের একটি তালিকা দ্বারা বিচ্ছেদ সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হল যে নিয়মগুলি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়, কিছুক্ষেত্রে সামান্য ব্যাখ্যাসহ। একটি মন্ডলী নিয়মের একটি সেট দ্বারা তার পৃথকীকরণকে চিহ্নিত করে; অন্য মন্ডলী নিয়মের অন্য সেট দ্বারা তার পৃথকীকরণকে চিহ্নিত করে। একটি ভালো পদ্ধতি হল বাইবেলের নীতিগুলিকে সংজ্ঞায়িত করা যা সমস্ত সময়ে এবং সমস্ত সংস্কৃতিতে সত্য।
খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমাদের জীবনধারার মাধ্যমে ঈশ্বরের বাক্য এবং পবিত্র আত্মার পরিচালনার কাছে সমর্পণের বিষয়টি প্রতিফলিত হওয়া আবশ্যিক। যদি আমরা এমন ব্যক্তি হতে চাই যারা ঈশ্বরের নিজের লোক হিসেবে পৃথকীকৃত (১ পিতর ২:৯), তাহলে আমরা আনন্দ সহকারে তাঁর বাক্যের শিক্ষা মেনে চলব।
যদিও বাইবেল আধুনিক জীবনের অনেক দিককে সরাসরি সম্বোধন করে না, তবে এটি এমন কিছু নীতি স্থাপন করে যা আমাদের পথ দেখাবে। সেই নীতিগুলি কী যা একজন পবিত্র ব্যক্তির জীবনধারাকে পরিচালনা করবে?
(১) শালীনতার নীতি
বিনয়ের নীতি নিশ্চিত করে যে আমাদের পোশাক এবং আচরণ অবশ্যই ঈশ্বরের সম্মানজনক হবে এবং তার চোখে লজ্জাজনক সমস্ত কিছু এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের পোশাক এবং আচরণ ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করার ইচ্ছা দ্বারা পরিচালিত হয়।
সমগ্র বাইবেলে, নগ্নতা লজ্জাজনক ছিল। পাপ করার পরে আদম এবং হবা লজ্জিত হয়েছিল, কারণ তারা জানত যে তারা নগ্ন ছিল (আদিপুস্তক ৩:৭)। তাই তারা নিজেদের লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় তৈরি করেছিল। যখন ঈশ্বর বাগানে তাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন, তখন তিনি তাদের চামড়ার আরও সম্পূর্ণ পোশাক তৈরি করে দিয়েছিলেন এবং তাদের পরিধান করিয়েছিলেন (আদিপুস্তক ৩:২১)।
বাকি সমস্ত শাস্ত্রাংশ জুড়ে, নগ্নতা মূলত লজ্জার প্রতীক।[1] ভাববাদীরা নগ্নতাকে ঈশ্বরের বিচারের একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন (যিশাইয় ২০:১-৪; হোশেয় ২:৩; যিহিষ্কেল ২৩:২৯)। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমাদের পোশাকের মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া উচিত যে আমরা ঈশ্বরের শালীনতাকে সম্মান করি। আমাদের নগ্নতা দ্বারা লজ্জিত হওয়া উচিত যা ঈশ্বরের ভাববাদীদের কাছে লজ্জার প্রতীক ছিল। আমাদের পোশাক এমন ধরনের পোশাক হওয়া উচিত আমাদেরকে ঈশ্বরের পবিত্র এবং শুচি ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করে।
বাইবেলে লিঙ্গভেদ বিষয়টি শালীনতার অন্তর্ভুক্ত। যদিও বাইবেল ইস্রায়েলীদের পরিধান করার জন্য পোশাকের কোনো নির্দিষ্ট ধরণকে সংজ্ঞায়িত করে না, তথাপি ঈশ্বর তাঁর লোকদের পোশাকের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পার্থক্য বজায় রাখার আদেশ দিয়েছিলেন (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৫)।
নতুন নিয়ম আমাদের শেখায় যে আমাদের সাজসজ্জা প্রকাশ করে আমরা ঈশ্বরের সন্তান। পৌল দুই সাজসজ্জার ধরনের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়েছেন:
নারীরা পরিশীলিত সাজসজ্জা করুক, শিষ্টাচার ও শালীনতা বজায় রাখুক। চুলের বাহার[2] সোনা ও মণিমুক্তা বা বহুমূল্য পোশাক দ্বারা নয়, কিন্তু যে নারীরা নিজেদের ঈশ্বরের উপাসক বলে দাবি করে, তারা যোগ্য সৎকর্মের দ্বারা ভূষিত হোক (১ তিমথি ২:৯-১০)।
পৌল অপরিশীলিত চুলের বিন্যাস, গয়না এবং পোশাকের অযৌক্তিক সাজসজ্জা নিষিদ্ধ করেছেন। একই সময়ে, পৌল সম্মানজনক পোশাকের সাজসজ্জার প্রশংসা করেছেন যা সেই নারীদের জন্য উপযুক্ত, যারা ধার্মিকতা প্রকাশ করে। এটি উত্তম কাজের সাজবিন্যাস যা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের সন্ধান করা উচিত।
পৌলের শিক্ষা বাহ্যিক সাজ-পোশাক এবং অন্তরাত্মার মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে। এই বিভাগে পৌলের তিমথিকে লেখা চিঠিতে তিনি মন্ডলীতে প্রার্থনার উল্লেখ করছেন। তিনি তিমথিকে জানাচ্ছেন কীভাবে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের প্রার্থনা করা উচিত। তিনি প্রতিটি লিঙ্গের জন্য উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন।
পৌল লিখেছেন যে পুরুষদের সবসময় ক্রোধ এবং মতবিরোধ ত্যাগ করে প্রার্থনা করা উচিত (১ তিমথি ২:৮)। আমাদের কখনোই রাগান্বিত আত্মার বশবর্তী হয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতিতে যাওয়া উচিত নয়। পৌল লিখেছেন যে নারীদের সবসময় নম্রতা এবং বশ্যতার মনোভাব নিয়ে প্রার্থনা করা উচিত; এটি এমনকি পোশাক এবং অলংকারেও প্রতিফলিত হয়। আমাদের কখনোই অহংকার এবং আত্ম-শ্লাঘা নিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতিতে যাওয়া উচিত নয়। পবিত্র ব্যক্তিদের মধ্যে একটি নম্রতার ভাব থাকে যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।
পিতর বাহ্যিক সাজ-পোশাক এবং অন্তরাত্মার মধ্যে একই সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন।
তোমাদের সৌন্দর্য যেন বাহ্যিক সাজসজ্জা, যেমন চুলের বাহার, সোনার অলংকার বা সূক্ষ্ম পোশাক-পরিচ্ছদের উপর নির্ভরশীল না হয়। বরং সেই সৌন্দর্য হবে তোমাদের আন্তরিক সত্তার, শান্ত ও কোমল আত্মার অম্লান শোভায় ভূষিত, যা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মহামূল্যবান। কারণ প্রাচীনকালের পবিত্র নারীরা, যাঁরা ঈশ্বরের উপরে প্রত্যাশা রাখতেন, এভাবেই নিজেদের সৌন্দর্যময়ী করতেন। তাঁরা নিজের নিজের স্বামীর বশ্যতাধীন থাকতেন… (১ পিতর ৩:৩-৫)।
পৌলের মতই, পিতর দুই ধরনের অলংকরণের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিস্তৃত চুলের বিন্যাস, গয়না এবং পোশাকের বাহ্যিক সাজসজ্জা নিষিদ্ধ করেন। তারপর, তিনি একটি নম্রতা এবং শান্ত ভাবের আত্মিক সাজসজ্জার আদেশ দেন, যা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মূল্যবান। পবিত্র লোকেরা এই জগতের অনুমোদন পাওয়ার চেয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মূল্যবান হওয়ার বিষয়ে বেশি যত্নশীল। ঈশ্বরের প্রতি আশাবাদী পবিত্র নারীরা এভাবেই নিজেকে সাজাতেন।
খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমাদের বিনোদনের মাধ্যমে অবশ্যই প্রকাশিত হওয়া উচিত যে আমরা ঈশ্বরের জন্য পৃথক। পৌল বলেছেন যে খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে আমাদের মন সর্বদা এমন বিষয়ে পরিপূর্ণ থাকা উচিত যা আমাদের আরো বেশী খ্রিষ্টস্বরূপ করে তুলবে।
অবশেষে বলি, ভাইবোনেরা, যা কিছু সত্য, যা কিছু মহান, যা কিছু যথার্থ, যা কিছু বিশুদ্ধ, যা কিছু আদরণীয়, যা কিছু আকর্ষণীয়—যদি কোনো কিছু উৎকৃষ্ট বা প্রশংসার যোগ্য হয়—তোমরা সেই সমস্ত বিষয়ের চিন্তা করো (ফিলিপীয় ৪:৮)।
পবিত্র জাতি হিসেবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ঈশ্বর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আপনি যখন লেবীয় পুস্তক পড়েন, আপনি দেখবেন যে কোনোকিছুই ঈশ্বরের দৃষ্টির বাইরে নয়। সবকিছুই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ! তার মানে এই নয় যে ঈশ্বর একজন অত্যাচারী শাসক যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এটির কারণ হল ঈশ্বর এমন একজন প্রেমিক পিতা যিনি তাঁর সন্তানদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ে যত্নশীল। আমাদের স্বর্গস্থ পিতা চান না যে তাঁর সন্তানেরা এমন কোনো পোশাক পরিধান করুক যা তাঁর যত্ন দিয়ে তৈরি করা দেহকে অসম্মান করে। আমাদের স্বর্গস্থ পিতা চান না যে তাঁর সন্তানেরা তাদের মনকে এমন কোনো বিনোদনে পরিপূর্ণ করুক যা তাদের পাপপূর্ণ এবং লজ্জাজনক মানসিকতায় অনুপ্রাণিত করবে। আমরা তাঁর নিজের অধিকারের জন্য একটি জাতি, এবং তিনি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য যত্নশীল।
► শালীনতার নীতি আপনার সংস্কৃতিতে প্রয়োগ করুন। আপনার জগতে শালীনতা বজায় রাখার জন্য কোন ক্ষেত্রগুলি (পোশাক এবং জীবনধারা উভয়ই) একটি চ্যালেঞ্জ?
(২) ধনাদক্ষ বা জিম্মাদারির নীতি
ধনাদক্ষতার নীতি নিশ্চিত করে যে আমাদের যা কিছু আছে সবকিছুই ঈশ্বরের। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমরা আমাদের সমস্ত অর্থ এবং সংস্থান এমনভাবেই ব্যবহার করব যা তাঁকে সম্মান করে।
১৮ শতকে কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী একটা কঠোর পোশাক বিধি অনুসরণ করত। তারা পোশাকে কোনোরকম নকশা রাখত না। তারা পোশাকে চকচকে বোতাম লাগাত না; পুরুষেরা নেকটাই পরত না; তারা কেবল ধূসর রঙের কাপড়ের পোশাক পরত। এটি এমন দেখাতো যে তারা খুব নম্র।
তবে জন ওয়েসলি পোশাক নিয়ে একটি প্রচার করেছিলেন যেখানে তিনি অনুযোগ করেছেন যে নম্রতার এই প্রকাশ কেবল বাহ্যিক ছিল। জামাকাপড় সাদামাটা দেখালেও কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী দায়িত্বশীলতার নীতিকে উপেক্ষা করেছিল। তারা তাদের পোশাকের জন্য সবচেয়ে দামি উপকরণ কিনতে লন্ডন থেকে প্যারিস ভ্রমণ করত। হ্যাঁ, তারা শুধু ধূসর কাপড়ই কিনত – কিন্তু তারা তাদের সম্পদ দেখানোর জন্য দামী কাপড় কিনত। তারা বিনয়ী ছিল, কিন্তু তারা ঈশ্বরের অর্থের ভাল পরিচারক ছিল না।[3]
ওয়েসলি জোর দিয়েছিলেন যে জগত থেকে আলাদা হওয়ার অর্থ ঈশ্বর আমাদের যে অর্থ প্রদান করেন তার একটি ভাল পরিচারক হওয়া। তিনি প্রচার করেছিলেন যে একজন পবিত্র ব্যক্তির অযৌক্তিক পোশাকের জন্য অর্থ অপচয় করা উচিত নয়। শালীন পোশাক পরা সম্ভব কিন্তু আমাদের পছন্দের ক্ষেত্রে অপচয় করা উচিত নয়। পৌল বলেছিলেন যে আমাদের সাজসজ্জা অবশ্যই ব্যয়বহুল পোশাক হওয়া উচিত নয় (১ তিমথি ২:৯)।
ধনাদক্ষতার নীতি কখনোই বলে না সবসময় সস্তা জিনিস কিনতে হবে। কখনো কখনো ভালো গুণমানসম্পন্ন কাপড় যার দাম বেশী তা বেশীদিন টিকে যায়। কিছু কিছু মন্ডলী সস্তা নিকাশ ব্যবস্থা করে অর্থ সঞ্চয় করে – কিন্তু সেই লিক সারাতে টাকার চেয়ে বেশী সময় নষ্ট করে! এটি খারাপ দায়িত্বশীলতার পরিচয়।
ধনাদক্ষতার নীতি বলে, “আমরা হলাম ঈশ্বরের অর্থের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি যা ঈশ্বর আমাদের প্রতি বিশ্বাসে দিয়েছেন। আমাদের অবশ্যই এটা জ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরা ঈশ্বরের সেই তালন্তের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি যা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আমরা অবশ্যই এটা তাঁর গৌরবের জন্য ব্যবহার করব। আমরা যা কিছু করি সবকিছুই অবশ্যই তাঁকে সম্মানের জন্য করা উচিত।”
► ধনাদক্ষতার নীতি আপনার সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করুন। কীভাবে আপনার মন্ডলীগুলি ঈশ্বরের সম্পদের উত্তম ধনাদক্ষ হতে পারে?
(৩) সংযমের নীতি
সংযমের নীতি নিশ্চিত করে যে আমরা কোনোকিছুকেই (এমনকি তা ভালো কিছু হলেও) আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দেব না। আমাদের জগতে থাকার সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হল আমরা জগতে থাকি কিন্তু আমরা জগতের নই! আমাদের জগতে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমরা উপভোগ করতে পারি এবং তা করা উচিত। একটি পবিত্র জীবনের জন্য সংযম বা নম্রতা প্রয়োজন এমনকি ভালো বিষয়বস্তু হলেও।
খাবার একটা উদাহরণ। খিদে পাওয়া হল একটি স্বাভাবিক বিষয়; এতে কোনো পাপ নেই। পৌল লিখেছেন যে আমাদের ঈশ্বরের গৌরবের খাদ্যগ্রহণ করা উচিত (১ করিন্থীয় ১০:৩১)। খাওয়া পাপের বিষয় নয়। তবে, যদি আমি অতিভোজী ব্যক্তি হই যার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাহলে আমি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য খাচ্ছি না। জগত আত্মতৃপ্তির জন্য খাদ্যগ্রহণ করে; যদি আমার খাদ্যাভাসে অসংযমী হই, তাহলে আমি জগতের। পরিবর্তে, আমি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য খাই। এর মানে হল যে ঈশ্বর আমাকে যে উত্তম খাদ্য জুগিয়েছেন তা খাওয়ার সময় আমি আত্ম-সংযম অনুশীলন করব।
করিন্থীয়রা জোর দিয়েছিল যে তারা ব্যাভিচার করতে পারে কারণ তারা ঈশ্বরের আত্মিক সন্তান এবং শরীর আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের বক্তব্য, “পেটের জন্য খাদ্য এবং খাদ্যের জন্য পেট।” তাদের সংস্কৃতি থেকে তাদের ধারণা ছিল যে শরীর যা চায় তা পাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
পৌল করিন্থীয়দের শিক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে এবং তারপর তাদের শিক্ষার পিছনে মিথ্যা ধারণাগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। “‘সবকিছু করা আমার পক্ষে নিয়মসংগত,” কিন্তু কোনো কিছুই আমার উপরে কর্তৃত্ব করবে না। “পেটের জন্য খাদ্য এবং খাদ্যের জন্য পেট,” – কিন্তু ঈশ্বর এই উভয়কেই ধ্বংস করবেন” (১ করিন্থীয় ৬:১২-২০)। তিনি আরো বলেছেন, “তোমরা কি জানো না যে, তোমাদের দেহ স্বয়ং খ্রীষ্টেরই অঙ্গ?” পৌল উপসংহার দিয়েছেন, “তোমরা আর তোমাদের নিজের নও, তোমাদের মূল্য দিয়ে কিনে নেওয়া হয়েছে। অতএব, তোমাদের দেহ দিয়ে তোমরা ঈশ্বরের গৌরব করো।”
পৌলের নীতি হল এই – যদি কোনোকিছু নিয়মসঙ্গত হয়েও থাকে, তবুও সেগুলির আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জীবনের সমস্ত কিছুতে, এমনকি আমাদের জীবনের ওপরেও ঈশ্বরের কর্তৃত্ব আছে। আমরা যা কিছু করি সেই সবকিছুতেই আমাদেরকে অবশ্যই ঈশ্বরকে সম্মানিত করতে হবে। এটি চায় যে আমরা সংযম এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সাথে জীবন-যাপন করি।
এটি দৈনন্দিন জীবনে কেমনভাবে পরিলক্ষিত হয়? এর মানে হল যা আমরা খাই বা পান করি তাতে আত্ম-সংযম। এটির মানে হল আমাদের বিনোদনে আত্ম-সংযম। একজন পবিত্র ব্যক্তি হিসেবে, আমি কোনো কিছুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হব না। এমনকি একটি অতি সাধারণ বিনোদনও খারাপ হতে পারে (আমার জন্য) যদি সেটি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সংযমের আদর্শ সবক্ষেত্রেই আত্ম-সংযমের শিক্ষা দেয়।
এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হল যেটি দেখায় যে কীভাবে এই নীতিগুলিকে ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যেতে পারে। মনে রাখবেন, এটি শুধুমাত্র একটি উদাহরণ, এটি আপনার জন্য কোনো নিয়ম নয়!
জেমস নামের এক যুবক একটা নতুন কম্পিউটার কিনেছিল যেটায় “টেট্রিস” নামের একটা গেম ছিল। গেমটা নিয়ে কোন বিশেষ সমস্যা ছিল না। এটি হিংসাত্মক বা যৌন-উদ্দীপক ধরণের ছিল না। এটা একটা সাধারণ পাজল ছিল। যাইহোক, জেমস দ্রুত বুঝতে পারে যে গেমটার দ্বারা সে পরিচালিত হচ্ছে! সে কোন কাজ করতে বসছে – আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই গেমটা খেলতে শুরু করে দিচ্ছে। সে ভাবছে, “আমি কাজ থেকে একটু বিরতি নেব এবং টেট্রিস খেলব।” তিরিশ মিনিট পরে সে বলছে, “আমি আরো একটা গেম খেলতে চাই।” কিন্তু একঘন্টা পরেও, সে খেলেই যাচ্ছে। অবশেষে, ঈশ্বর তাকে সংযমের আদর্শের কথা স্মরণ করালেন। “সবকিছু করা আমার পক্ষে নিয়মসংগত,’ কিন্তু কোনো কিছুই আমার উপরে কর্তৃত্ব করবে না” (১ করিন্থীয় ৬:১২)।
এই কারণেই, জেমস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তার কম্পিউটার থেকে টেট্রিস ডিলিট করে দেওয়া উচিত। এটা কি প্রত্যেকের জন্যই একটি বাইবেলভিত্তিক নিয়ম? না! বাইবেলে কোথাও টেট্রিস-এর কথা উল্লেখ করা নেই! কিন্তু জেমসের ক্ষেত্রে, সংযমের আদর্শ হল সেই গেমকে এড়িয়ে চলা যা তাকে নিয়ন্ত্রণ করত।
আদর্শ মূলত নীতির চেয়ে বৃহত্তর বিষয়। বাইবেলে টেট্রিস-এর বিরুদ্ধে আলাদা করে কোনো শিক্ষার উল্লেখ নেই। যদি টেট্রিস আপনার প্রিয় গেম হয়ে থাকে, তাহলে জেমস সেটা বন্ধ করেছে বলে আপনারও সেটা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু জেমসের ক্ষেত্রে, তার দুর্বলতার জন্য টেট্রিস একটা ফাঁদ ছিল। যদি আমরা কেবল পবিত্র জীবনই যাপন করতে চাই তাহলে আমরা ঈশ্বরের কাছে জানতে চাইতে পারি, “আমি কীভাবে এমন জীবন যাপন করতে পারি যা তোমাকে সন্তুষ্ট করে?”
► আপনার সংস্কৃতিতে সংযমের নীতি প্রয়োগ করুন। আপনার জীবনে বাইবেলভিত্তিক বিষয়গুলির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কোন ক্ষেত্রগুলি একটি চ্যালেঞ্জ?
(৪) গ্রহণযোগ্যতার নীতি
যখন তিমথি, যার বাবা ছিলেন গ্রীক এবং মা ছিলেন ইহুদী, পৌল এবং সীলের সাথে তাদের পরিচর্যা কার্যে যোগ দিয়েছিলেন, পৌল চেয়েছিলেন মন্ডলীর কাজের স্বার্থে তিমথি সুন্নত বা ত্বকচ্ছেদ (লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন) সম্পন্ন করুক (প্রেরিত ১৬:৩)। এর আগে পৌল তীতের সুন্নত করতে অস্বীকার করেছিলেন যিনি মূলত গ্রীক জাতির ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ছিলেন (গালাতীয় ২:৩)। এই পরিস্থিতিতে পৌলের ভিন্ন মতামত পরিচর্যা কার্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শের শিক্ষা দেয়।
তীতের ক্ষেত্রে পৌল সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন যে আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহে পরিত্রাণ পেয়েছি। ইহুদি আইন অনুসরণ করার জন্য একজন পরজাতির ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন খ্রিষ্টীয় স্বাধীনতার বার্তাকে দুর্বল করে তুলবে। যারা তীতের সুন্নতের দাবী করেছিলেন পৌল তাদের বিরোধীতা করেছিলেন (গালাতীয় ২:১-৬)। প্রেরিত ১৫ অধ্যায়ে যিরূশালেম মন্ডলী মেনে নিয়েছিল যে পরজাতিদের ধর্মান্তরের জন্য সুন্নতের প্রয়োজন নেই।
প্রেরিত ১৬ অধ্যায়ে পৌল তিমথিকে ত্বকচ্ছেদ করতে বলেছিলেন। কেন? পরিত্রাণের জন্য নয়, বরং ইহুদি ধর্মস্থানগুলিতে সক্রিয়ভাবে পরিচর্যার কাজ করার জন্য।
► ১ করিন্থীয় ৯:১৯-২৩ পড়ুন।
পৌল একই নীতি করিন্থীয়দের কাছেও তুলে ধরেছিলেন। সুসমাচারের জন্য, পৌল বাইবেলের নীতির সাথে জড়িত নয় এমন ক্ষেত্রে আত্মত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তিনি বাইবেলের বিশ্বাসের সাথে আপস করেননি, তবে তিনি পরিচর্যা কার্যের খাতিরে তার স্বাধীনতাকে উৎসর্গ করেছিলেন।
এটি খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির পরামর্শ দেয়। কিছু বিষয় একটি পরিস্থিতিতে সঠিক হতে পারে এবং অন্য পরিস্থিতেতে সঠিক নাও হতে পারে। সক্রিয় পরিচর্যার স্বার্থে, একজন লিডার কিছু স্বাধীনতা কিছুক্ষেত্রে ছাড়তে পারে যা তাঁর নিজস্ব বিশ্বাসকে আঘাত করে না। এগুলি বাইবেলভিত্তিক শিক্ষার বিষয় নয়, উপরন্তু ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক অনুশীলন সংক্রান্ত ব্যাপার।
গ্যারি হলেন একজন আফ্রিকান মিশনারি। গ্যারি তার মুখভর্তি দাঁড়ি রেখেছিলেন। তার দেশে দাঁড়ি হল বয়স এবং ক্ষমতার প্রতীক। একটি উপজাতির প্রধান সবসময় একটি লম্বা দাঁড়ি রাখেন। গ্যারি যাদের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন সকলের কাছেই তার দাঁড়ি সম্মান অর্জন করে। তিনি গ্রহণযোগ্যতার নীতি হিসেবে দাঁড়ি রাখেন।
রিক হল একজন এশীয় মিশনারি। রিকের দেশে দাঁড়ি মর্যাদাহীন এবং ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই। তার দেশে ফেরার পরেই, রিক দেখেন যে তাঁর দাঁড়ি তার কার্যকারিতাকে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে। তিনি গ্রহণযোগ্যতার নীতি হিসেবে তার দাঁড়ি কামিয়ে ফেলেছিলেন।
দাঁড়ি রাখা ঠিক না ভুল? কোনোটাই নয়! দুজন ব্যক্তিই গ্রহণযোগ্যতার নীতি অনুসরণ করতে শিখতে শিখেছিলেন – অর্থাৎ ঈশ্বর আমাকে যে পরিস্থিতিতে রাখেন সেটির জন্য সবচেয়ে ভালো কোনটি?
► আপনি কি এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছেন যেখানে খ্রিষ্টের জন্য আপনার চারপাশের লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য গ্রহণযোগ্যতার নীতি আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা উৎসর্গ করতে বাধ্য করেছে?
(৫) দায়িত্বের নীতি: কার কাছে আমি উত্তর দিতে দায়বদ্ধ?
একজন শিক্ষক কিছু কলেজ পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তোমরা তোমাদের ছাত্রাবাসের হ্যান্ডবুকের জন্য কোনটা পছন্দ করবে, নিয়মকানন নাকি নীতি?” তারা উত্তর দিয়েছিল, “আমরা নীতির পক্ষে!”
তারপর সেই শিক্ষক প্রশ্ন করেছিলেন, “কোনটা মেনে চলা সহজ: একটা নিয়ম যেখানে বলা হয়েছে, ‘মাঝরাতে অবশ্যই আলো নিভিয়ে রাখতে হবে’ নাকি একটা নীতি যেখানে বলা হয়েছে, ‘তুমি পরিচর্যা কার্যের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে যাতে তুমি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারো এবং প্রতিদিন সকালে তোমার প্রথম ক্লাসের পড়াশোনায় মনঃসংযোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারো’”? ছাত্রেরা দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে একটি নীতির জন্য আমাদের সাধারণ নিয়মের চেয়ে অনেক বেশী চিন্তা করতে হয়!
নীতি কঠিন হতে পারে। একটি অন্যতম মূল বিষয় হল এটি উপলব্ধি করা যে আমরা বিচ্ছেদ বিষয়ে ঈশ্বরের উত্তর। আপনার এমন একটি নিয়ম থাকতে পারে না যা বলে, "প্রতিদিন _____ গ্রাম খাবারই উপযুক্ত। তার চেয়ে বেশী মানেই পেটুক।" এটি অসম্ভব! পরিবর্তে, আমাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ।
একজন ব্যক্তি এমন একটি অফিসে থাকবে যার জন্য সুন্দর স্যুট লাগবে; খামারে পরার জন্য একটি সুন্দর স্যুট কিনলে অন্য একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি হবে!
ঈশ্বর তাদের পরিচর্যার ব্যবস্থা, তাদের পটভূমি এবং এমনকি তারা যে পাপের প্রবণতায় রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন প্রত্যয় দিতে পারেন। আমরা সবাই একরকম নই; আমরা সবাই একরকম দেখতে নই। আমাদের পরিচিতদের ভিন্ন জীবনধারার প্রতি বিশ্বাস থাকতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত পার্থক্যগুলি শাস্ত্রের শিক্ষার বিরোধিতা না করে, এই পার্থক্যগুলি বাইবেলের স্বাধীনতার চিহ্নস্বরূপ হতে পারে।
এটির কারণে, আমাকে আবশ্যিকভাবে দুটি জিনিস মনে রাখতে হবে:
১। আমার অন্য ব্যক্তিদের হৃদয় বিচার করা উচিৎ নয়। তারা জগৎ থেকে তাদের পৃথকীকরণের জন্য ঈশ্বরের কাছে উত্তর দিয়েছে (রোমীয় ১৪:৪)।
২। আমার নিজের হৃদয়কে সতর্কভাবে বিচার করা আবশ্যিক। আমি জগৎ থেকে আমার পৃথকীকরণের জন্য ঈশ্বরের কাছে উত্তর দিতে দায়বদ্ধ (২ করিন্থীয় ৫:৯-১০)।
[1]দৃষ্টান্তস্বরূপ, নগ্নতা ঈশ্বরের বিচারের একটি প্রতীক ছিল (হোশেয় ২:৩; যিহিষ্কেল ২৩:২৯)।
[2]“বিনুনিযুক্ত” (braided) শব্দটি কিছুক্ষেত্রে পাঠকদের বিভ্রান্ত করে। পৌলের সময়ে এটি ছিল চুলের একটি বিন্যাস যেখানে বিনুনিতে নানারকম অলংকার যোগ করা হত। তার আদর্শ হল “মহিলারা শালীনতা দ্বারা সজ্জিত হোক, অতিরিক্ত বিন্যাস-বাহার দ্বারা নয়।”
[3]John Wesley, “On Dress” from The Works of John Wesley, (Grand Rapids: Baker Books, 1996)
তারা রহস্যের চাবিকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন - কাউন্ট জিনজেনডর্ফ এবং মোরাভিয়ানগণ
১৮ শতকে, খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের একটি দল মোরাভিয়ায় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে জার্মানিতে পালিয়ে যায়। তারা কাউন্ট নিকোলাস ভন জিনজেনডর্ফ (Count Nikolaus von Zinzendorf)[1]-এর এস্টেটে বসতি স্থাপন করেছিল, যিনি পরবর্তীকালে তাদের নেতা হয়েছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে, ৩০০-এরও বেশী মোরাভিয়ান হেরনহুটের এই এস্টেটে বাস করতে শুরু করেছিল।
মোরাভিয়ানরা সত্যিকারের পবিত্রতার প্রতি দায়বদ্ধ ছিল। তারা শাস্ত্রে নির্দেশিত আদর্শ অনুযায়ী সহজ সরল জীবন যাপন করত। তারা তাদের যত্নশীল বাইবেল অধ্যয়ন এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রার্থনার জন্য পরিচিত ছিল। ১৭২৭ সালে, মোরাভিয়ানরা একটি প্রার্থনা সভা শুরু করেছিল যেটি ১০০ বছরেরও বেশী সময় ২৪ ঘন্টা ধরে অব্যাহত ছিল।
মোরাভিয়ানরা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত হতে চেয়েছিল। পৃথকীকৃত জীবনের এই অঙ্গীকারের ফল কী হয়েছিল? ঈশ্বর তাদের একটি শক্তিশালী উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন।
অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উপর মোরাভিয়ানদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। একজন মোরাভিয়ান মিশনারি, পিটার বোহেলার, জন এবং চার্লস ওয়েসলির ধর্মান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অ্যাল্ডারগেট স্ট্রিটের একটি মোরাভিয়ান চ্যাপেলে জন ওয়েসলির পরিত্রাণ গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পরে, তিনি এই ভক্ত বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও জানতে হেরনহুটে ভ্রমণ করেছিলেন। ওয়েসলি থেকে উইলিয়াম কেরি পর্যন্ত, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা মোরাভিয়ানদের পবিত্রতার সাধনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
মোরাভিয়ানরা জগতের কাছে একটি সুদৃঢ় প্রচারকার্যের সাক্ষ্য তুলে ধরেছিল। ১৭২৭ সালের প্রার্থনা সভা শুরু হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ২৬ জন তরুণ মোরাভিয়ান মিশনারি কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলেন – এটি এমন একটি সময়ে যখন বিদেশী মিশনগুলি প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চগুলির মধ্যে প্রায় অজানা ছিল। ১৮ শতকের সময়, বিচ্ছিন্ন খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের এই ছোটো দলটি থেকে প্রায় ৩০০ জনেরও বেশী মিশনারি পাঠানো হয়েছিল। প্রথম দিকের কিছু প্রোটেস্ট্যান্ট মিশনারি মোরাভিয়ানদের দ্বারা প্রেরিত হয়েছিল। সেইসব খ্রিষ্টবিশ্বাসী যারা ঈশ্বরের কাছে পৃথকীকৃত তাদেরকে ঈশ্বর জগতকে পরিবর্তন করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
(১) পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া বা ঈশ্বরের কাছে থাকা। উদাহরণস্বরূপ:
একটি পবিত্র দিন
পবিত্র বস্তুসমূহ
পবিত্র স্থান
এক পবিত্র জাতি
(২) পবিত্র হওয়া মানে হল পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। কারণ ঈশ্বর পাপকে ঘৃণা করে, ঈশ্বরের লোকেরা পাপকে ঘৃণা করে।
(৩) পবিত্র হওয়া মানে ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া। পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের কাছে পৃথক হওয়া।
(৪) পবিত্র ব্যক্তিরা পাপ থেকে দূরে থাকে। ঈশ্বরের নিকটবর্তী থাকার অর্থ হল যে আমরা পাপ থেকে দূরে থাকব।
(৫) পবিত্র জীবনযাপন ইস্রায়েলকে বিশ্বের সামনে সাক্ষী হিসেবে সুসজ্জিত করেছে। পবিত্র জীবন খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে সমগ্র বিশ্বের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সুসজ্জিত করে।
(৬) বাইবেলভিত্তিক পৃথকীকরণ হৃদয় থেকে শুরু হয়।
(৭) জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আদর্শগুলির অন্তর্ভুক্ত হল:
শালীনতার নীতি
ধনাদক্ষ বা জিম্মাদারির নীতি
সংযমের নীতি
গ্রহণযোগ্যতার নীতি
দায়িত্বের নীতি
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) একটি পরিস্থিতি নির্বাচন করুন যেখানে আপনার সমাজে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের পক্ষে পৃথকীকরণ কঠিন। এই অধ্যায়ের নীতিগুলি ব্যবহার করে, কীভাবে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা পাপ থেকে পৃথক হতে পারে এবং আপনার নির্বাচিত সমস্যা থেকে ঈশ্বরের কাছে পৃথক হতে পারে সেই পরামর্শ দিয়ে একটি ১-২ পাতার প্রবন্ধ লিখুন।
(২) ২ করিন্থীয় ৬:১৬-১৮ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.