যোহন: এক ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরের পরিকল্পনার পরিপূর্ণতা দেখেছিলেন
চলুন এজিয়ান সাগরের পাটম দ্বীপে যাই। এটি কোনো সুন্দর ক্যারিবিয়ান বা দক্ষিণ প্রশান্ত-মহাসগরীয় দ্বীপ নয়। এটি হল একটি কারাগার-দ্বীপ। পাটম পরিত্যক্ত এবং নির্জন। এখানেই আপনি প্রিয় শিষ্য যোহনকে নির্বাসনের জীবন কাটাতে দেখবেন।
যোহন একজন বৃদ্ধ লোক। তিনি বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করেছেন এবং পবিত্র জীবনের এক দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ছেন। তিনি ইফিষে অবস্থিত মন্ডলীতে পরিচর্যার কাজ করেছেন, যিশুর বিধবা মায়ের দেখাশোনা করেছেন, এবং সমগ্র এশিয়া মাইনর জুড়ে প্রচার করেছেন।
যে বয়সে যিশুর শেষ জীবিত শিষ্য হিসেবে তাঁর সম্মান উপভোগ করার কথা, সেইসময়ে যোহন পাটম দ্বীপে নির্বাসিত হন। তিনি নিঃসঙ্গ এবং তাঁর মনে হয়েছিল ইনি হয়ত আর ঈশ্বরের কাজের জন্য উপযোগী নন। কিন্তু যিশুর মৃত্যুর প্রায় ৬০ বছর পরে, এক রবিবারের সকালে, যোহন প্রভুর দিনে যখন আত্মায় পরিপূর্ণ ছিলেন, তিনি তূরীধ্বনির মতো একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পান (প্রকাশিত বাক্য ১:১০)।
যখন যোহন কণ্ঠস্বরের দিকে ফেরেন, তিনি সেই খ্রিষ্টকে দেখতে পান যাঁকে তিনি তাঁর জীবন সমর্পণ করেছিলেন। যিশুর চুল ছিল পশমের মতো সাদা, তাঁর চোখ ছিল আগুনের শিখার মতো, পিতলের ন্যায় তাঁর পায়ের পাতা ছিল উজ্জ্বল, এবং তাঁর স্বর ছিল এক বিশাল জলপ্রপাতের গর্জনের মতো। তাঁর মুখ ছিল দৃপ্ত (প্রকাশিত বাক্য ১:১২-১৬)। যোহন দেখেছিলেন “পিতার নিকট থেকে আগত এক ও অদ্বিতীয় পুত্রের মহিমা, যা অনুগ্রহ ও সত্যে পূর্ণ” (যোহন ১:১৪)।
প্রকাশিত বাক্যে আমরা আসলে ঈশ্বরের পরিকল্পনার পরিপূর্ণতা দেখার জন্য যোহনের সাথে স্বর্গে ভ্রমণ করি। পবিত্র লোকেরা এক পবিত্র ঈশ্বরের সাথে অবিভক্ত সহভাগিতায় অনন্তকাল বসবাস করবে।
এই কোর্সের প্রথম পাঠে, আপনাকে সৃষ্টির পরবর্তী সময়ের এদন উদ্যানটি কল্পনা করতে বলা হয়েছিল। এটি একটি নিখুঁত পৃথিবী ছিল। নানারকম গাছপালা, ফুল-ফলে চারিদিক ভরে ছিল। এটি পাপ এবং তার প্রভাবমুক্ত পৃথিবী ছিল। এটি যন্ত্রণা, চোখের জল, বা মৃত্যুহীন এক পৃথিবী ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এটি ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে নিখুঁত সম্পর্কের একটি পৃথিবী ছিল। কোনোকিছুই মানুষকে ঈশ্বরকে পৃথক করতে পারেনি।
দুঃখের বিষয়, পাপ এই পৃথিবীকে নষ্ট করেছিল। সুন্দর ফুলের মাঝখানে আগাছা গজিয়ে উঠিয়েছিল। শান্ত প্রাণীরা ভয়ঙ্কর শিকারীতে পরিণত হয়েছিল। মানুষকে দুর্দশা, যন্ত্রণা এবং মৃত্যু ভোগ করতে হয়েছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এটি ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে নিখুঁত সম্পর্কটি নষ্ট হয়েছিল। পাপের কারণে, মানুষ এদেন উদ্যান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল এবং জীবনবৃক্ষ থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিল। এটি অনেকটা এরকম ছিল যে শয়তান ঈশ্বরের লোকেদের জীবনে তাঁর উদ্দেশ্যকে পরাজিত করেছিল।
প্রতিশ্রুত এক নিখুঁত পৃথিবী
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সমগ্র শাস্ত্র জুড়ে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের তাঁর মতো করে তোলার উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর পরিকল্পনা দেখিয়েছেন; তিনি এক পবিত্র জাতি তৈরি করতে চান। পুরাতন নিয়মের ভাববাদীরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে ঈশ্বর একদিন তাঁর লোকেদের পবিত্র করবেন এবং তাদের একটি পবিত্র স্থানে ফিরিয়ে আনবেন। পুনরাবৃত্তি করে, প্রকাশক যোহন এই প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
যিহিষ্কেল এমন একটি দিনের দর্শন পেয়েছিলেন যেদিন ঈশ্বর তাঁর পবিত্র লোকেদের মধ্যে বাস করবেন।
আমার বাসস্থান তাদের মধ্যে হবে; আমি তাদের ঈশ্বর হব এবং তারা আমার প্রজা হবে। তখন জাতিগণ জানবে যে আমিই সদাপ্রভু যে ইস্রায়েলকে পবিত্র করেছে, যখন আমার পবিত্রস্থান চিরকাল তাদের মধ্যে থাকবে (যিহিষ্কেল ৩৭:২৭-২৮)।
ঈশ্বর ইস্রায়েলকে পবিত্র করবেন; তিনি তাঁর লোকেদের পবিত্র করবেন। তিনি তাঁর লোকেদের মধ্যে বসবাস করবেন। যিহিষ্কেল ৩৭:২৭-এর প্রতিজ্ঞা প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-এ পরিপূর্ণ হয়েছে:
দেখো, এখন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবাস, তিনি তাদের সঙ্গে বসবাস করবেন। তারা তাঁর প্রজা হবে এবং ঈশ্বর স্বয়ং তাদের সঙ্গে থাকবেন ও তাদের ঈশ্বর হবেন।
ঈশ্বরের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য তখনই পূর্ণ হবে যখন তিনি তাঁর পবিত্র লোকেদের মধ্যে বাস করবেন। যিহিষ্কেলের মতো, সখরিয় এমন একটা দিনের দর্শন দেখেছিলেন যেদিন ঈশ্বরের উদ্দেশ্য তাঁর লোকেদের জন্য পরিপূর্ণ হবে। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, “আমি তোমাদের মধ্যে বাস করব” (সখরিয় ২:১০-১১)।
সখরিয় ৩ অধ্যায়টি ঈশ্বরের তাঁর লোকেদের জন্য পরিকল্পনাকে তুলে ধরে। সখরিয়র দর্শনে, মহাযাজক অপরিষ্কার পোশাক পরেছিলেন যা ইস্রায়েলের অশুচিতাকে প্রকাশ করে। ঈশ্বর একদিন তাঁর লোকেদের শুচি করবেন; ইস্রায়েলের অপরিষ্কার পোশাক সুন্দর পোশাক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।
যারা তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিল তাদের সেই স্বর্গদূত বললেন, “তার নোংরা কাপড় খুলে ফেলো।” তারপর তিনি যিহোশূয়কে বললেন, “দেখো, আমি তোমার পাপ দূর করে দিয়েছি, এবং আমি তোমাকে দামি পোশাক পরাব।” (সখরিয় ৩:৪)।
সখরিয়’র শেষ পদগুলি পুরাতন নিয়মের অন্যতম মহিমাময় চিত্রকে তুলে ধরে।
সেদিন “সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র” এই কথা ঘোড়ার গলার ঘণ্টার উপরে খোদাই করা থাকবে, এবং সদাপ্রভুর গৃহের রান্নার হাঁড়িগুলি বেদির সামনের পবিত্র পাত্রগুলির মতো পবিত্র হবে। জেরুশালেমের ও যিহূদার সমস্ত হাঁড়ি সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হবে, এবং যারা পশু উৎসর্গ করতে আসবে তারা সেইসব পাত্রের কয়েকটা নিয়ে সেগুলিতে রান্না করবে। সেদিন সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর গৃহে কোনও কনানীয় আর থাকবে না। (সখরিয় ১৪:২০-২১)।
ঘোড়ার ঘণ্টাগুলিতে মহাযাজকের পাগড়িতে ঈশ্বরের বাক্য খোদাই করা হবে (যাত্রাপুস্তক ২৮:৩৬-৩৮)। সাধারণ পাত্রগুলিও পবিত্র বেদীর সামনে থাকা শুচি পাত্রগুলির মতোই পবিত্র হবে। জেরুশালেম ঠিক তেমনই হবে যেমন ঈশ্বর এটিকে বানাতে চেয়েছিলেন; সমগ্র শহরটিই ঈশ্বরের বাসস্থান হবে।
ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন; তিনি পবিত্র লোকেদের সাথে একটি পবিত্র শহরে বাস করবেন। সখরিয়ের দর্শন প্রকাশিত বাক্য ২১ এবং ২২-এ পূর্ণ হয়েছে। ঈশ্বরের লোকেরা তাঁর উপস্থিতিতে বাস করবে। “তিনি তাদের সঙ্গে বসবাস করবেন, তারা তাঁর প্রজা হবে” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩)।
পুনর্গঠিত এক নিখুঁত পৃথিবী
পবিত্র বাইবেল একটি নিখুঁত পৃথিবীর বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়েছে যেটি পতনের কারণে হারিয়ে গিয়েছিল। এটি একটি নিখুঁত পৃথিবীর বর্ণনা দিয়ে শেষ হয়েছে যেটি সেইসব মানুষদের জন্য অপেক্ষা করছে যারা তাদের জীবনে ঈশ্বরকে তাঁর পরিকল্পনা পরিপূর্ণ করার অনুমতি দেয়। ঈশ্বরের পবিত্র লোকেদের জন্য একটি পবিত্র নগরী প্রস্তুত করা হয়েছে।
এদন উদ্যানের মতোই, এই পবিত্র নগরীও চারিদিকে নানারকম ফুল, গাছপালা, এবং সুস্বাদু ফলে পরিপূর্ণ এক নিখুঁত পৃথিবী। এখানে সবকিছুই সুন্দর:
তারপর সেই স্বর্গদূত আমাকে জীবন-জলের নদী দেখালেন। তার জল স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ এবং তা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন থেকে নির্গত হয়ে নগরের রাজপথের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে। নদীর দুই পাশে ছিল জীবনদায়ী গাছ, যা বারো মাসে বারো রকমের ফল উৎপন্ন করে। আর সেই গাছের পাতা সব জাতির আরোগ্যলাভের জন্য (প্রকাশিত বাক্য ২২:১-২)।
পাপের কারণে মানবাজতি এদন উদ্যান এবং জীবনবৃক্ষ থেকে নির্বাসিত হয়েছিল। প্রকাশিত বাক্যে, জীবনবৃক্ষ আবার মানুষের জন্য উপলব্ধ।
এটি পাপহীন একটি পৃথিবী হবে। পাঠকেরা মাঝে মাঝে প্রকাশিত বাক্যের মাঝখানের অধ্যায়গুলি পড়ে ভয় পেয়ে যান। এই অধ্যাগুলিতে বিচারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যা পৃথিবীর ওপর নেমে আসবে। বহু পাঠকই সেটা এড়িয়ে শেষের অধ্যায়গুলিতে চলে যেতে পছন্দ করে যেখানে স্বর্গরাজ্যের সৌন্দর্য্যের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। তবে, আমরা বইয়ের মধ্যভাগটি এড়িয়ে যেতে পারি না। এক পবিত্র ব্যক্তির এক পবিত্র ঈশ্বরের সাথে অবিভক্ত সহভাগিতায় থাকার জন্য, পাপের ক্ষমতাকে চূর্ণ হতেই হবে।
প্রকাশিত বাক্য মূলত ঈশ্বরের লোকদের প্রতি শয়তানের ঘৃণাকে দেখায়। যোহন দশটা শিং এবং সাতটা মাথাসহ একটি পশুকে সমুদ্র থেকে উঠতে দেখেছিলেন (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১)। সেই পশুকে সাধুদের ওপর আঘাত করার এবং তাদের ওপর বিজয়ী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে (প্রকাশিত বাক্য ১৩:৭)। কিছুক্ষণের জন্য, এটি হয় যে শয়তান ঈশ্বরের পবিত্র লোকেদের পরাজিত করেছে। কিন্তু, সেই পশু বা শয়তান শেষপর্যন্ত পরাজিত হবে (প্রকাশিত বাক্য ১৫:২)। ঈশ্বরের লোকেরাই অবশেষে বিজয়ী হবে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে।
ইতিহাসে যুগে যুগে, ঈশ্বরের লোকেরা বিশ্বাস করেছে যে এক পবিত্র ঈশ্বরে সেটাই করবেন যা ন্যায্য। ঈশ্বরের পবিত্রতা গীতরচককে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল যখন তিনি ন্যায়বিচারের জন্য কেঁদেছিলেন। “কারণ তুমি এমন ঈশ্বর নও যিনি দুষ্টতায় সন্তুষ্ট হন; কারণ তুমি দুষ্টদের পাপ সহ্য করতে পারো না” (গীত ৫:৪)। প্রকাশিত বাক্যে, যোহন শহীদদের কান্না শুনেছিলেন, “পবিত্র ও সত্যময়, সর্বশক্তিমান প্রভু, পৃথিবী নিবাসীদের বিচার করতে ও আমাদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে আর কত কাল দেরি করবেন?” (প্রকাশিত বাক্য ৬:১০)।
ঈশ্বরের পবিত্রতা ঈশ্বরের লোকেদের আশ্বস্ত করে যে ন্যায়বিচার জয়ী হবে। যোহন রোমের অত্যাচারে অত্যাচারিত খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে পবিত্র এবং ন্যায়বাদী বিচারক একদিন তাঁর লোকেদের জন্য ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন। প্রকাশিত বাক্য ঈশ্বরের লোকেদেরকে বিশ্বস্ত থাকার আহ্বান জানায়, সাথে জানায় যে একজন পবিত্র ঈশ্বর তাঁর পবিত্র লোকেদের হয়ে প্রতিশোধ নেবেন। প্রকাশিত বাক্য এমন এক সময়ের দিকে দৃষ্টি রাখে যেদিন শয়তান পরাজিত হবে, এবং ঈশ্বরের পবিত্র লোকেরা শান্তিতে বসবাস করবে।
স্বর্গ একটি পবিত্র শহর। এটি এমন একটি শহর যেখানে পাপ বা পাপের প্রভাব নেই। এটি যন্ত্রণা-চোখের জল-দুর্দশা-মৃত্যুহীন এক শহর। “তিনি তাদের সমস্ত চোখের জল মুছে দেবেন। আর কোনো শোক বা মৃত্যু বা কান্না বা ব্যথাবেদনা হবে না, কারণ পুরোনো সমস্ত বিষয় গত হয়েছে” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪)।
কিন্তু সেখানে আরো সুন্দর কিছু আছে। এদন উদ্যানের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিষয়টি ছিল ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে নিখুঁত সহভাগিতা। আদম ও হবা বাগানে ঈশ্বরের সাথে হাঁটতেন। তাঁরা তাঁর সাথে মুখোমুখি কথা বলতেন। কোনোকিছুই ঈশ্বর এবং মানুষকে আলাদা করতে পারেনি। স্বর্গে, আমরা ঈশ্বরের সাথে নিখুঁত সহভাগিতায় থাকব। কোনোকিছুই এক পবিত্র ব্যক্তিকে এক পবিত্র ঈশ্বরের থেকে আলাদা করে দিতে পারবে না।
আর আমি সেই সিংহাসন থেকে এক উচ্চ রব শুনতে পেলাম, তা বলছিল, “দেখো, এখন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবাস, তিনি তাদের সঙ্গে বসবাস করবেন। তারা তাঁর প্রজা হবে এবং ঈশ্বর স্বয়ং তাদের সঙ্গে থাকবেন ও তাদের ঈশ্বর হবেন” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩)।
যোহন স্বর্গকে এক ভয়-যন্ত্রণা-মৃত্যুহীন স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পুরনো পৃথিবীতে যা কিছু ভয়ের কারণ ছিল (সমুদ্রের ভয়াল ঢেউ, রাতের বিপদ, রোগের ভয়াবহতা) তা আর থাকবে না। ঈশ্বরের উপস্থিতিতে অন্তনকালীন শান্তি বিরাজ করবে।
সেখানে আর কোনও অভিশাপ থাকবে না। সেই নগরের মধ্যে থাকবে ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন, আর তাঁর দাসেরা তাঁর উপাসনা করবে। তারা তাঁর শ্রীমুখ দর্শন করবে এবং তাঁর শ্রীনাম তাদের কপালে লেখা থাকবে। সেখানে আর রাত্রি হবে না। তাদের প্রদীপের আলো বা সূর্যের আলোর প্রয়োজন হবে না, কারণ প্রভু ঈশ্বরই তাদের আলো প্রদান করবেন। আর তারা যুগে যুগে চিরকাল রাজত্ব করবে (প্রকাশিত বাক্য ২২:৩-৫)।
পবিত্র লোকেরা সবসময়েই ঈশ্বরকে দেখতে চায়। মোশি ঈশ্বরকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারেননি (যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৮-২০)। দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন, “কখন আমি গিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারি?” (গীত ৪২:২)।[2] যিশু প্রতিজ্ঞা করেছেন যে নির্মল হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিরা ঈশ্বরের দর্শন পাবে (মথি ৫:৮)। প্রকাশিত বাক্যে এই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হয়েছে। “তারা তাঁর শ্রীমুখ দর্শন করবে এবং তাঁর শ্রীনাম তাদের কপালে লেখা থাকবে” (প্রকাশিত বাক্য ২২:৪)।
ডালাস উইলার্ড (Dallas Willard) একটি বাচ্চা ছেলের কথা বলেছিলেন যার মা মারা গিয়েছিলেন। একদিন রাত্তিরে, প্রচন্ড ভয় পেয়ে, বাচ্চাটি তার বাবার ঘরে শুতে চায়। মাঝরাতে ছেলেটি উঠে পড়ে এবং তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আমার দিকে মুখ করে শুয়ে আছ?” বাবা উত্তর দেন, “হ্যাঁ, আমার মুখ তোমার দিকেই আছে।” এটাই যথেষ্ট ছিল; বাচ্চাটি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছিল। স্বর্গে পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরের মুখ দেখতে পাবে। তাঁর মুখ অনন্তকালের জন্য আমাদের দিকে থাকবে; আমরা শান্তিতে বাস করব।
ঈশ্বরের পরিকল্পনা পরিপূর্ণ হবে! এদন উদ্যান আবার ভরে উঠবে। পবিত্র হৃদয় এবং পবিত্র হাতের অধিকারী ব্যক্তিরা এক পবিত্র ঈশ্বরের জন্য চিরকাল বাস করবে। এটাই হল ঈশ্বরের তাঁর লোকেদের জন্য পরিকল্পনা।
[2]এই প্রার্থনাটির একটি বিকল্প অনুবাদ হল, “কখন আমি উপস্থিত হব আর ঈশ্বরের মুখ দর্শন করব?” [“When shall I come and see the face of God?”– English Standard Version-এর ফুটনোট অনুযায়ী]
পবিত্রতা হল ঈশ্বরের সাথে অবিভক্ত সহভাগিতা
যোহন ঈশ্বরের লোকেদের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনার একটি দর্শন দেখেছিলেন। এটি পবিত্র লোকেদের একটি পবিত্র নগরে বাস করার একটি দর্শন। প্রকাশিত বাক্যে তিনবার, যোহন আমাদের অন্তনকালীন বাসগৃহের স্থানটিকে পবিত্র নগরী হিসেবে বর্ণনা করেছেন (প্রকাশিত বাক্য ২১:২, ১০; প্রকাশিত বাক্য ২২:১৯)। এটি এক পবিত্র ঈশ্বরের, পবিত্র স্বর্গদূতেদের, এবং পবিত্র লোকেদের বাড়ি। এই সুন্দর শহরটি প্রকৃত পবিত্রতার একটি স্থান। কেবল পবিত্র লোকেরাই এখানে থাকতে পারে।
প্রকাশিত বাক্য ২১ স্বর্গরাজ্যের একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরে, কিন্তু সেইসাথে এটি এই সতর্কতাটিও সংযুক্ত করে:
কিন্তু যারা কাপুরুষ, অবিশ্বাসী, ঘৃণ্য স্বভাববিশিষ্ট, খুনি, অবৈধ যৌনাচারী, যারা তন্ত্রমন্ত্র-মায়াবিদ্যা অভ্যাস করে, যারা প্রতিমাপূজা করে এবং যত মিথ্যাবাদী, তাদের স্থান হবে জ্বলন্ত গন্ধকের আগুনের হ্রদে। এই হল দ্বিতীয় মৃত্যু (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮)।
স্বর্গ একটি পবিত্র শহর। ঈশ্বর কখনোই পাপকে সেই শহরের পবিত্রতা নষ্ট করার জন্য ঢুকতে দেবেন না। পুরনো দিনের প্রচারকেরা বলতেন, “স্বর্গ হল পবিত্র লোকেদের জন্য প্রস্তুত করা এক পবিত্র শহর।” কেবলমাত্র একজন পবিত্র ব্যক্তিই এই পবিত্র শহরে বাস করা উপভোগ করবে।
একজন আত্ম-কেন্দ্রিক মানুষ কখনোই এমন একটি শহরে আনন্দ উপভোগ করবে না যে শহরের মূল আকর্ষণ হল ঈশ্বরের মেষশাবক। একজন ব্যক্তি যে পাপময় আনন্দের জন্য জীবন যাপন করে, সে সেই শহরে নিরানন্দে থাকবে যেটি শুচি। একজন ব্যক্তি যে ঈশ্বরকে ভালোবাসে না, সে সেই শহরে বিরক্ত হয়ে যাবে যেখানে ঈশ্বরের উপাসনা অনন্তকালীন। পবিত্র নগরীটি পবিত্র লোকেদের জন্য বানানো হয়েছে। যেহেতু ঈশ্বরের লোকেরা পবিত্র এবং শুচি, তারা সেই নগরীতে ঈশ্বরের সাথে চিরকাল বাস করবে।
যিহিষ্কেল ৪০-৪৮ অধ্যায়ের প্রতিজ্ঞা নতুন যিরুশালেমে পরিপূর্ণ হয়েছে। তবে, পাঠক খুব তাড়াতাড়িই যিহিষ্কেলের দর্শন এবং প্রকাশিত বাক্যে এটির প্রকাশের মধ্যে পার্থক্যটি দেখতে পাবেন। যিহিষ্কেলের দর্শনে, মন্দিরটি নগরের মাঝখানে অবস্থিত। নতুন যিরুশালেমে কোনো মন্দির নেই, কারণ এটির মন্দির হল সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর এবং সেই মেষশাবক (প্রকাশিত বাক্য ২১:২২)। ঈশ্বর নিজেই সেই মন্দির! সমগ্র নগরীই এখন ঈশ্বর এবং তাঁর লোকেদের জন্য পৃথক হওয়া এক পবিত্র ভূমি।
উদ্যানে ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে যে অবিভক্ত সহাভাগিতা ছিল তা পুনর্নির্মিত হয়েছে। সেই গ্লানি এবং ভয় যা পাপে পরিপূর্ণ আদম ও হবাকে ঈশ্বরের সামনে লুকোতে বাধ্য করেছিল তা চলে গেছে। আমরা ঈশ্বরের শ্রীমুখ দেখব। পবিত্র লোকেরা এক পবিত্র ঈশ্বরের সাথে অবিভক্ত সহাভাগিতা উপভোগ করবে।
পুরাতন নিয়মে, ঈশ্বর ইস্রায়েলকে যাজকদের এক রাজ্য এবং একটি পবিত্র জাতি হিসেবে পৃথক করেছিলেন (যাত্রাপুস্তক ১৯:৬)। প্রকাশিত বাক্যে, মন্ডলী হল ঈশ্বরের কাছে একটি রাজ্য এবং যাজকবর্গ (প্রকাশিত বাক্য ৫:১০)। ইস্রায়েল জাতির মতো, এই রাজ্য এক বিভিন্ন দেশের, গোষ্ঠীর, জাতির ও ভাষাভাষী লোকের এক বিশাল জনারণ্য হবে যাদের গণনা করার সামর্থ কারও নেই (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯)। আদিপুস্তক ১২:৩-এর প্রতিজ্ঞা প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-তে পরিপূর্ণ হয়েছে।
ঠিক যেভাবে ইস্রায়েল কেবল পবিত্র থেকেই যাজকদের এক রাজ্য হিসেবে তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পেরেছিল, তেমনই মন্ডলীও তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে যদি সে পবিত্র থাকে। ঈশ্বরের লোকেদের অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। পুরাতন নিয়মে, লেবীয়রা তাদের পবিত্রতা প্রকাশ করার জন্য সাদা মসলিনের পোশাক পরত। একইভাবে, যোহন দেখিয়েছেন যে সাধুদের পবিত্র হতে হবে (প্রকাশিত বাক্য ৩:৪-৫; প্রকাশিত বাক্য ৬:১১; প্রকাশিত বাক্য ১৯:৮)। কেবল তারাই নগরে প্রবেশ করতে পারবে যারা তাদের পোশাক পরিষ্কার করে (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৪)। একজন পবিত্র ব্যক্তি একজন পবিত্র ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে বসবাস করবে।
পবিত্রতার অনুশীলন: যখন আমি পবিত্র বোধ করি না
এটা কি পরিচিত শোনাচ্ছে? আপনি একটি প্রচার শুনেছেন যেটি আপনাকে গভীরতর পবিত্রতায় অনুপ্রাণিত করেছে। আপনি প্রার্থনা করলেন এবং পরিত্র জীবনের জন্য নিজেকে সঁপে দিলেন। পরবর্তী আট সপ্তাহ আপনি আত্মিক জীবনে বেড়ে উঠলেন। আপনি আপনার জীবনে আত্মার ফল বৃদ্ধি পেতে দেখলেন। ঈশ্বর এবং আপনার প্রতিবেশীর জন্য আপনি প্রচন্ড ভালোবাসা অনুভব করলেন।
তারপর হঠাৎ দেখা গেল উন্নতি এবং বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি এখনো ঈশ্বরের সাথে হাঁটছেন; আপনি এখনো একটি বিজয়ের জীবন যাপন করছেন; আপনি আমরা ঈশ্বর এবং আপনার প্রতিবেশীকেও ভালোবাসেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ, বা এমনকি পরিচর্যাকাজের চাপে আপনি অনুভব করলেন, “আমার মনে হচ্ছে না আমি পবিত্রতায় বৃদ্ধি পাচ্ছি। সমস্যাটা কোথায়?”
আপনি কীভাবে পবিত্র জীবন যাপন করা বজায় রাখবেন যখন আপনি পবিত্র বোধ করতে পারছেন না? আপনি কি হাল ছেড়ে দেবেন আর বলবেন, “পবিত্রতা অসম্ভব”? আপনি কীভাবে পবিত্রতায় চলা বজায় রাখবেন?
► আপনি কখনো এই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? আপনি কীভাবে উত্তর দিয়েছিলেন?
“যখন আমি পবিত্র বোধ করি না, তখন আমার অবশ্যই বিশ্বাসে পথ চলা উচিত।”
২ নং পাঠে আমরা দেখেছি যে পবিত্রতা হল ঈশ্বরের সঙ্গে চলা। অব্রাহাম ঈশ্বরের সঙ্গে এমন এক দেশে গিয়েছিলেন যে দেশ তিনি কখনো দেখেননি। তিনি আনুগত্য এবং বিশ্বাসে ঈশ্বরের সঙ্গে হেঁটেছিলেন। ৪,০০০ বছর পরে, অব্রাহামের বিশ্বাস সম্বন্ধে পড়া খুবই রোমাঞ্চকর বলে মনে হয়। কিন্তু আপনি নিজেকে তার জায়গায় বসান – ধূসর পাথুরে জমির মধ্যে দিয়ে দিনের পর দিন হেঁটে চলা। যেখানে ধূ-ধূ দিগন্ত, এবং এমনকি আপনি জানেনও না যে আপনি কোথায় যাচ্ছেন। আপনার কি মনে হয় যে অব্রাহাম প্রতিদিন সেই দিনটার জন্য একটা দারুণ উত্তেজনা নিয়ে ঘুম থেকে উঠতেন? খুব সম্ভবত একদমই না! এমনও কোনো কোনো দিন ছিল যেদিন তিনি বলতেন, “আমার আজকে হাঁটতে একটুও ইচ্ছা করছে না।” কিন্তু অব্রাহাম ঈশ্বরের সঙ্গে চলা বজায় রেখেছিলেন।
আমরা পড়েছি যে নোহ একটি পাপময় পৃথিবীতে ঈশ্বরের সঙ্গে চলতেন। চারিদিকে প্রতিমাপূজক এবং যারা সবসময় পাপের নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করে সেইসব মানুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে (আদিপুস্তক ৬:৫) নোহ ঈশ্বরের সঙ্গে চলতেন। আপনার কি মনে হয়, তিনি প্রতিদিন সেই দিনটার জন্য একটা দারুণ উত্তেজনা নিয়ে ঘুম থেকে উঠতেন? কখনো কখনো তিনি নিশ্চয়ই হাঁপিয়ে যেতেন এবং নিরাশ হতেন। কিন্তু নোহ ঈশ্বরের সঙ্গে চলা বজায় রেখেছিলেন।
পবিত্রতার জীবনের একটি চাবিকাঠি হল এটি মনে রাখা যে আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছি; আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা পবিত্র হয়েছি; আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারাই পবিত্রতায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছি। কিছু মানুষ বোঝে যে তারা বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছে। এমনকি তারা জানেও যে বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারা পবিত্র হয়েছে। কিন্তু তারপর তারা এই বিশ্বাসের ফাঁদে পড়ে যায় যে ক্রমাগত বৃদ্ধি তাদের নিজের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।
পবিত্রতার জীবনে কী শৃঙ্খলা অন্তর্ভুক্ত? অবশ্যই! আমাদের কি সমস্ত পার্থিব প্রবৃত্তিকে নাশ করা উচিত? (কলসীয় ৩:৫)। হ্যাঁ। আমাদের কি পিছনের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে সামনে যা আছে, তারই দিকে প্রাণপণ প্রয়াসে লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়ানো উচিত, যাতে ঈশ্বর খ্রিষ্ট যিশুতে স্বর্গীয় যে আহ্বান দিয়েছেন, সেই পুরস্কার লাভ করতে পারি? (ফিলিপীয় ৩:১৩-১৪)। অবশ্যই!
কিন্তু, কখনো ভুলে যাবেন না যে আপনার পার্থিব প্রবৃত্তিকে নাশ করা, সামনে যা আছে তারই দিকে প্রাণপণ প্রয়াস, এবং লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়ানো, ঈশ্বরের শক্তিতে হয়, যিনি আপনার মধ্যে কাজ করেন, ইচ্ছা ও কাজ উভয়ই তাঁর শুভ সন্তুষ্টির জন্য। (ফিলিপীয় ২:১৩)। তিনিই একমাত্র যিনি ইচ্ছা (সংকল্প) দিয়েছেন; তিনি একমাত্র যিনি শক্তি (কাজ) দেন। আমাদের পবিত্র করার জন্য তাঁর যে উদ্দেশ্য তা পূর্ণ করার জন্য তিনি আমাদের মধ্যে কাজ করছেন। যখন আপনি পবিত্র বোধ করেন না, তখন মনে রাখবেন যে আপনি ঈশ্বরের অনুগ্রহে বিশ্রাম নেন যিনি আপনাকে প্রতিদিন তাঁর প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত করছেন।
“যখন আমি পবিত্র বোধ করি না, তখন আমার অবশ্যই তাঁর পবিত্রতায় বিশ্রাম নেওয়া উচিত।”
৫ নং পাঠে আমরা দেখেছি যে পরিপূর্ণতা একটি ত্রুটিহীন কর্মক্ষমতার বিষয় নয়, বরং একটি হৃদয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত যা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অবিভক্ত। ৭ নং পাঠে আমরা শিখেছি যে যিশুর আদেশ, “নিখুঁত হও” হল ঈশ্বরের প্রতি অবিভক্ত ভালোবাসা আদেশ। খ্রিষ্টীয় পরিপূর্ণতা কর্মক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়; এটি প্রেম সম্পর্কিত বিষয়।
ঈশ্বর পবিত্র বলেই আমরা পবিত্র। আমাদের পরিচয় খ্রিষ্টে। তিনি আমাদের পবিত্র করেন। সুসমাচারের একটি মহান সত্য হল যে আমরা আর নিজেদের ক্ষমতায় পবিত্রতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করি না। আমরা খ্রিষ্টে বিশ্রাম করতে পারি। আমাদের পরিচয় খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমাদের পরিচয় সাধু হিসেবে, আমাদের পরিচয় পবিত্র মানুষ হিসেবে তাঁর মধ্যে রয়েছে।
রবার্ট কোলম্যান (Robert Coleman) একবার একটি গল্প বলেছিলেন যার বিষয় ছিল যখন আমরা নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারি না তখন ঈশ্বরকে নিখুঁতভাবে ভালবাসার অর্থ কী। ডাঃ কোলম্যান গ্রীষ্মকালে একদিন তার বাগানে কাজ করছিলেন। যখন তার ছোট ছেলে দেখে যে তার বাবাক রোদে ঘেমে যাচ্ছে, তখন সে তার জন্য এক কাপ জল আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলেটি একটি নোংরা কাপ তুলে উঠোনের একটি পুকুর থেকে সেটিতে জল ভরে তার বাবার কাছে নিয়ে আসে। ডাঃ কোলম্যান বলেন, “গ্লাসটি নোংরা ছিল এবং জলটাও ঘোলাটে ছিল। কিন্তু পানীয়টি নিখুঁত ছিল, কারণ এটি ভালোবাসার এক হৃদয় থেকে এসেছিল।” এটা আমাদের সীমিত পরিপূর্ণতার ছবি। আমরা আমাদের ভগ্ন, খুঁতযুক্ত কাজকে এমন একজন ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসি যিনি এটি গ্রহণ করেন শুধু এই কারণে যে এটি প্রেমের হৃদয় থেকে এসেছে।
ঈশ্বর আমাদের ব্যর্থ প্রচেষ্টাগুলি গ্রহণ করেন এবং সেগুলিতে এমন কিছুতে রূপান্তর করেন যা আমাদের কল্পনার বাইরে – কারণ আমাদের পবিত্রতা তাঁর সীমাহীন পবিত্রতার একটি নিছক ছায়া মাত্র। এমনকি আমাদের শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাও আমাদের মানবিক সীমাবদ্ধতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু যখন আমরা তাঁর পবিত্রতায় বিশ্রাম নিই, তখন আমরা বুঝতে পারি যে তাঁর “পবিত্র হও” আদেশের আনুগত্য কেবল তাঁর নিজের মাধ্যমেই সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হয়। অবিভক্ত ভালোবাসার হৃদয় সহকারে, আমরা তাঁর কাছে আমাদের মাটির পাত্র নিয়ে আসি – এবং তিনি সেটিকে বিশুদ্ধ এবং ঝকঝকে কিছুতে রূপান্তরিত করেন। আমাদের পবিত্রতা তাঁর পবিত্রতায় পরিপূর্ণ হয়।
“যখন আমি পবিত্র বোধ করি না, তখন আমার অবশ্যই স্মরণ করা উচিত যে আমি এক পবিত্র জাতির অংশ।”
প্রকাশিত বাক্যের একটি প্রধান - কিন্তু প্রায়শই উপেক্ষিত একটি বিষয় হল – মন্ডলী৷ সাতটি মন্ডলীকে বার্তার একটি সিরিজ দিয়ে প্রকাশিত বাক্য শুরু হয়েছে। এই বার্তাগুলি খ্রিষ্টের বৃহত্তর দেহের মধ্যে স্থানীয় মন্ডলীর সম্প্রদায়ের গুরুত্ব প্রকাশ করে। কিন্তু এটিই মন্ডলী সংক্রান্ত বিষয়ের উপর প্রকাশিত বাক্যের জোর দিয়ে বলার শেষ নয়।
উদ্ধারপ্রাপ্ত ১,৪৪,০০০-এর একটি সম্প্রদায় সমগ্র মন্ডলী অর্থাৎ খ্রিষ্টের দেহের একটি রূপক প্রতিনিধি হতে পারে। এই পুস্তকের পরবর্তী অংশে, মন্ডলী মেষশাবকের বধূ হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে (প্রকাশিত বাক্য ১৯:৭-৮)। মন্ডলী হল প্রকাশিত বাক্যের কেন্দ্রবিন্দু।
যদি এটি সত্য হয়, পৃথিবীতে একটি মন্ডলী হিসেবে আমাদের উপাসনা এবং সহভাগিতা হল চিরন্তন মন্ডলী হিসেবে আমাদের উপাসনা এবং সহভাগিতা করার জন্য একটি প্রস্তুতি৷ মন্ডলী হিসেবে আজকে আমাদের জীবনের জন্য এটির অর্থ কী?
► যদি প্রকাশিত বাক্য খ্রিষ্টের নববধূর একটি ছবি হয়, তাহলে মন্ডলীর চিত্রায়ন কীভাবে মন্ডলীর জীবনকে প্রভাবিত করা উচিত? অথবা অন্য উপায়ে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে – কোন ক্ষেত্রে আপনার মন্ডলীকে প্রকাশিত বাক্যের মন্ডলীর মত দেখায়? কোন ক্ষেত্রে আপনার মন্ডলীকে প্রকাশিত বাক্যের মন্ডলীর মত দেখায় না?
এই সত্যের একটি বাস্তব ফলাফল হল যে আমাদের পবিত্র জীবন মন্ডলীর সাথে সহভাগিতায় যাপিত হয়। ব্যক্তিবাদী আধুনিক পৃথিবীতে, বহু খ্রিষ্টবিশ্বাসী কেবলমাত্র ব্যক্তিগত, একান্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে পরিত্রাণের কথা ভাবেন।
যাই হউক না কেন, হনোকের মত ব্যক্তি যাঁরা ঈশ্বরের সাথে চলতেন তেমন উদাহরণের পাশাপাশি ঈশ্বরের এমন সন্তানদের উদাহরণ আছে যাঁরা ঈশ্বরের সাথে একই দেহের অংশ হিসেবে পথ চলেছেন। ইস্রায়েলে পবিত্রতার বিধান ঈশ্বরের লোকদের জন্য ছিল (লেবীয় পুস্তক ২০:২৬)। ইস্রায়েল একটি সাধারণত জাতির চেয়েও বেশি কিছু ছিল; এটি মূলত ঈশ্বরের প্রতিকৃতিতে একসাথে বেড়ে ওঠা এক সম্মিলিত দেহ ছিল।
নতুন নিয়মের মন্ডলী একই ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের একটি গ্রুপের চেয়েও অনেক বড় একটি বিষয় ছিল। মন্ডলী খ্রিষ্টের দেহ ছিল এবং আজও তাই আছে৷ প্রকাশিত বাক্যের সাধুরা একটি শরীরের অংশ হিসেবে শহীদ হয়েছেন। এমনকি যখন তারা একাকী মারা যান, তারা জানতেন যে তারা এক সর্বজনীন মন্ডলীর অংশ। প্রকাশিত বাক্যের সাধুরা একটি দেহের অংশ হিসেবে পবিত্র জীবনযাপন করেছেন। তারা এক পবিত্র বধূর অংশ। এমনকি যখন যোহন পাটম দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন, তখনও তিনি জানতেন যে তিনি সর্বজনীন মন্ডলীর একটি অংশ।
এখন প্রায়শই লোকেদের বলতে শোনা যায়, “আমি যিশুকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি মন্ডলীকে ভালোবাসি না।” এটি মন্ডলী সংক্রান্ত একটি দুঃখজনক ভুল বোঝাবুঝি উপর ভিত্তিশীল! যদি মন্ডলী খ্রিষ্টের নববধূ হয় এবং আমি খ্রিষ্টকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে আমাকে অবশ্যই মন্ডলীকে ভালোবাসতে হবে। মন্ডলী হল ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে একত্রে বেড়ে ওঠা বিশ্বাসীদের একটি দেহ ৷
[1]আমাদেরকে একা থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। জন ওয়েসলি (John Wesley) বলেছেন, “সমস্ত পবিত্রতাই সামাজিক পবিত্রতা।” তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে আমরা একটি দেহের অংশ হিসেবে বেড়ে উঠি। ওয়েসলি আত্মিক দায়বদ্ধতার জন্য বিশ্বাসীদেরকে ছোটো ছোটো দলে ভাগ করে ছিলেন, কারণ লোকেরা অন্যদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ফলে আত্মিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
এটি আজকের দিনে আমাদের জন্য কী অর্থ প্রকাশ করে? পবিত্র লোকেরা একটি পবিত্র মন্ডলীর অংশ। আমরা একটি পবিত্র শরীরের অংশ হিসেবে পবিত্রতায় বৃদ্ধি পাই। আমি যখন কোনো সমস্যায় সংগ্রাম করি, তখন ঈশ্বর পবিত্রতার সন্ধানকারী একজন সহকর্মীকে উপস্থিত করেন যিনি আমার দুর্বলতার ক্ষেত্রে আমাকে উত্সাহিত করতে পারেন। অন্যদিকে ঈশ্বর যখন আমাকে কোনো স্থানে বিজয়ী করেছেন, আমি সেই একই ক্ষেত্রে দুর্বল কোনো ভাইকে উৎসাহ দিতে পারি। পবিত্র জীবনের উদ্দেশ্য হল আত্ময় পরিপূর্ণ বিশ্বাসীদের একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বসবাস করা যারা আমাদের পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রেমকে প্রকাশ করে চলেছে।
ইব্রীয় পুস্তকের লেখক খুব ভালোভাবে এটি বুঝতে পেরেছিলেন।
আবার এসো, আমরা এও বিবেচনা করে দেখি, কীভাবে আমরা পরস্পরকে প্রেমে ও সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। এসো, আমরা সভায় একত্রিত হওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ না করি, কেউ কেউ যেমন এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। বরং এসো পরস্পরকে উৎসাহিত করি, বিশেষত আরও বেশি তৎপর হয়ে করি, কারণ তোমরা দেখতেই পাচ্ছ প্রভুর আগমনের সেইদিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে (ইব্রীয় ১০:২৪-২৫)।
নির্যাতিত খ্রিস্টবিশ্বাসীদের বিশ্বাসে অটল থাকার জন্য উত্সাহিত করে, তিনি তাদের একসাথে মিলিত হওয়ার পাশাপাশি একে অপরকে অনুপ্রাণিত এবং উত্সাহিত করতে বলেছিলেন। মন্ডলীর কাজের একটি অংশ হল প্রতিটি সদস্যকে গভীরভাবে ভালোবাসা এবং পবিত্রতার জন্য উত্সাহিত করা।
যখন আপনি কোনো কারণে পবিত্র বোধ করেন না, তখন ঈশ্বর আপনাকে যে দেহে রেখেছেন সেই দেহেই আপনার খ্রিষ্টবিশ্বাসী বন্ধুদের মাধ্যমে আপনাকে আরও বৃদ্ধি পেতে উত্সাহিত করার জন্য তাঁকে অনুমতি দিন। আপনি সার্বজনীন মন্ডলীর অংশ, কিন্তু আপনি একটি স্থানীয় সংস্থারও অংশ। ঈশ্বর আপনাকে একটি কারণেই সেখানে রেখেছেন। আপনার সহবিশ্বাসীদেরকে অনুমতি দিন যেন তারা আপনাকে পবিত্র জীবনে আরও বেশি বৃদ্ধির জন্য নাড়া দিতে পারে।
“যখন কেউ পবিত্র জীবন গড়ে তোলার কথা চিন্তা করে তখন তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের সাথে একা হতে হবে, তখন তার আর অন্য কোনো কাজ নেই।”
- অসওয়াল্ড চেম্বার্স
(Oswald Chambers)
তিনি রহস্যের চাবিকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন – ফ্যানি ক্রসবি
যখন ফ্যানি ক্রসবি (Fanny Crosby)[1]-র বয়স মাত্র দু’মাস, তখন একজন ডাক্তারের ভুলের কারণে তিনি চিরকালের মতো অন্ধ হয়ে যান। তার কিছু মাস পরে তার বাবা মারা যান। তার মা পরিচারিকার কাজ করার জন্য দীর্ঘসময় পরিবারকে একা ছেড়ে যেতেন। পাপে-অভিশপ্ত এক পৃথিবীতে জীবন কাটানোর জটিলতাগুলি ফ্যানি ভালোবাবেই বুঝতে পেরেহিলেন।
ফ্যানি ক্রসবি-র লেখা গানগুলি খ্রিস্টের প্রতি তার প্রতিজ্ঞার সাক্ষ্য দেয়। তিনি সম্পূর্ণভাবে তার ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করেছিলেন।
ফ্যানি ক্রসবি বুঝতে পেরেছিলেন যে পবিত্রতা হল ঈশ্বরের প্রতি এবং আমাদের প্রতিবেশীদের জন্য নিখুঁত ভালোবাসা। তিনি মদ্যপ এবং গৃহহীনদের পরিচর্যাকারী মিশনগুলিতে তার সময় এবং অর্থ ব্যয় করেছিলেন। তিনি এবং তার স্বামী বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নয় এমন সমস্তকিছু দিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন এবং তিনি তার প্রতিবেশীকে ভালোবাসতেন। দিনে দিনে ফ্যানি ক্রসবি খ্রিষ্টের স্বরূপে এবং নিখুঁত প্রেমে বৃদ্ধি পেয়েছিলেন।
ফ্যানি সেই দিনের দিকে তাকিয়ে থাকতেন যেদিন “তারা তাঁর মুখ দর্শন করবে” –এই প্রতিজ্ঞাটি পরিপূর্ণ হবে। যখন কেউ তার পরিস্থিতির জন্য তাকে করুণা দেখাত, ফ্যানি ক্রসবি উত্তকে দিতেন যে তিনি তার দৃষ্টিহীনতায় আনন্দ করেন কারণ, “যেদিন আমি স্বর্গে যাব, প্রথম মুখ যা আমার দৃষ্টিকে উচ্ছ্বসিত করবে তা হবে আমার পরিত্রাতার মুখ। আমি তাঁকে সামনাসামনি দেখব।”
[1]ছবি: "Francis Jane Crosby, 1820-1915" by W.J. Searle, the Library of Congress Prints and Photographs Division, http://hdl.loc.gov/loc.pnp/cph.3b17084, থেকে সংগৃহীত। "কোনো পরিচিত নিষেধাজ্ঞা নেই।"
১১ নং পাঠের পর্যালোচনা
(১) পবিত্রতা হল ঈশ্বরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সহভাগিতা।
(২) আদিপুস্তক ৩ থেকে শুরু করে প্রেরিতদের মাধ্যমে, ঈশ্বর মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যে অন্তরঙ্গ সহভাগিতাকে পুনর্নির্মাণ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। এই প্রতিজ্ঞা প্রকাশিত বাক্যে পরিপূর্ণ হয়েছে।
(৩) প্রকাশিত বাক্য এক পবিত্র ব্যক্তিকে এক পবিত্র ঈশ্বরের সাথে অবিভক্ত সহভাগিতায় থাকতে দেখায়।
(৪) মন্ডলীর সাথে সহভাগিতা হল স্বর্গে সহভাগিতার জন্য প্রস্তুতি। পার্থিব মন্ডলী (ক্ষয়ণীয়) হল শাশ্বত মন্ডলীর একটি নমুনা। এটির কারণেই, সেইখানের মন্ডলীর সাথে একতায় আমাদের এখানের মন্ডলীতে জীবনকে সাজিয়ে তোলা উচিত।
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) মনে করুন কেউ আপনাকে বলেছেন, “আমি যিশুকে ভালোবাসি, কিন্তু মন্ডলীকে নয়।” ১-২ পাতার একটি চিঠি লিখুন যেখানে আপনি সেই ব্যক্তিকে দেখাবেন যে যিশুকে ভালোবাসা মূলত যিশুর বধূ অর্থাৎ মন্ডলীকেও ভালোবাসার দিকে পরিচালিত করা উচিত। দেখান কীভাবে একটি পবিত্র হৃদয় ঈশ্বরের মন্ডলীর জন্য ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত হবে। দেখান কীভাবে মন্ডলীর অংশ হওয়া আমাদের পবিত্রতায় বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।
(২) প্রকাশিত বাক্য ২১:২-৩ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.