ইয়োব সবকিছু হারিয়েছিলেন। তার সম্পত্তি চলে গেছিল। তার সন্তানেরা ঝড়ে মারা গিয়েছিল। তার শরীর ভেঙে গিয়েছিল। তিনি ছাইয়ের গাদায় বসে ভাঙা মাটির পাত্র একটি টুকরো দিয়ে শরীরে ঘা চুলকাতেন। তার স্ত্রী তাকে বলেছিলেন যেন তিনি ঈশ্বরকে অভিশাপ দেন এবং মারা যান। তার বন্ধুরা তাঁকে অকথ্য পাপের জন্য দোষারোপ করেছিলেন। যারা তাকে একসময় সম্মান করত, তারাই এখন তাকে উপহাস করে।
তার দুর্দশায় ইয়োব কখনো প্রার্থনা করেননি, “ঈশ্বর, আমার সম্পত্তি ফিরিয়ে দাও” বা এমনকি এটাও বলেননি “ঈশ্বর আমার দেহকে সুস্থ করো।” পরিবর্তে, তিনি কেঁদেছিলেন, “কোথায় তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে তা যদি শুধু আমি জানতে পারি; তাঁর আবাসের কাছে যদি শুধু যেতে পারি!” (ইয়োব ২৩:৩)। ইয়োব কেঁদেছিলেন কারণ তিনি সেই ঈশ্বরকে খুঁজে পাননি যাঁকে তিনি নিবিড়ভাবে চিনতেন। “কিন্তু আমি যদি পূর্বদিকে যাই, তিনি সেখানে নেই; আমি যদি পশ্চিমদিকে যাই, সেখানেও তাঁকে খুঁজে পাই না। তিনি যখন উত্তর দিকে কাজ করেন, আমি তাঁর দেখা পাই না; তিনি যখন দক্ষিণ দিকে ফেরেন, আমি তাঁর কোনও ঝলক দেখতে পাই না” (ইয়োব ২৩:৮-৯)।
ইয়োব সেইসব দিনের কথা স্মরণ করেছেন যখন ঈশ্বরের বন্ধুত্ব তার তাঁবু উপর ছিল (ইয়োব ২৯:৪)। কিন্তু এখন:
তিনি আমাকে কাদায় ছুঁড়ে ফেলেছেন, ও আমি ধুলো ও ভস্মের মতো হয়ে গিয়েছি। “হে ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে আর্তনাদ করেছি, কিন্তু তুমি উত্তর দাওনি; আমি উঠে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু তুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়েছ। নির্মমভাবে তুমি আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছ; তোমার হাতের শক্তি দিয়ে তুমি আমাকে আক্রমণ করেছ (ইয়োব ৩০:১৯-২১)।
এটি হল এমন একজন ব্যক্তির কান্না যিনি তার প্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলেন। এটি হল সেই ব্যক্তির কান্না যিনি ঈশ্বরকে ভালোবেসেছিলেন।
ইয়োবের কাহিনী কিন্তু হতাশা দিয়ে শেষ হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে থেকে ঈশ্বরের রব শোনার পর, ইয়োব প্রত্যুত্তর করেছিলেন, “তোমার কথা আমি কানে শুনেছিলাম, কিন্তু এখন আমি স্বচক্ষে তোমাকে দেখলাম” (ইয়োব ৪২:৫)। ইয়োব তাঁর সম্পত্তি, স্বাস্থ্য, বা এমনকি তাঁর পরিবারকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিলেন তা নয়, বরং ইয়োব ঈশ্বরের উপস্থিতি ফিরে আসায় স্বস্তি পেয়েছিলেন। ইয়োব স্বস্তি পেয়েছিলেন যখন তিনি ঈশ্বরকে দেখতে পেয়েছিলেন। ইয়োব একজন পবিত্র ব্যক্তি ছিলেন; ইয়োব ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন।
কাব্য পুস্তকগুলিতে পবিত্রতা: ঈশ্বরকে ভালোবাসা
► ঈশ্বরকে ভালোবাসার অর্থ কী? কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা আপনার সময় এবং অর্থের জন্য আপনার অগ্রাধিকারগুলিকে প্রভাবিত করবে? ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা কীভাবে তাঁর আদেশের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করবে?
ইয়োবের পুস্তক এবং গীতসংহিতা সেই একই বার্তা পুনরাবৃত্ত করেছে যা আমরা পেন্টাটিউক বা বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বইতে দেখেছিলাম: পবিত্রতা হল ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক। আমরা কেবল তখনই পবিত্র যখন আমরা ঈশ্বরের সাথে সুসম্পর্কে বাস করি। পবিত্র হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরকে সম্পূর্ণভাবে ভালোবাসা।
হনোক, নোহ, অব্রাহাম পবিত্র ছিলেন কারণ তাঁরা ঈশ্বরের সাথে চলতেন। একইভাবে, ইয়োব এবং দায়ূদও পবিত্র ছিলেন কারণ তাঁরা ঈশ্বরের সাথে চলতেন। ইয়োবের পুস্তক এমন এক ব্যক্তির কথা বলে যিনি ঈশ্বরকে সর্বান্তকরণে ভালোবাসতেন। গীতসংহিতার বইটি এমন এক ব্যক্তির প্রার্থনা এবং গান যিনি ঈশ্বরের সাথে অন্তরঙ্গ সহভাগিতায় তাঁর সর্বোচ্চ আনন্দ খুঁজে পেতেন।
পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরে আনন্দ করেন; তাঁরা তাঁর মধ্যেই গভীর আনন্দ খুঁজে পান। একজন পবিত্র ব্যক্তির ইচ্ছাকে যা নিয়ন্ত্রণ করে তা হল ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাওয়া।
যারা পবিত্রতাকে “করা উচিত এবং করা উচিত নয়”-এই তালিকা দিয়ে পরিমাপ করে, তাদের জন্যও এটা সহজতর। বহু লোক পবিত্রতাকে আনন্দের পরিবর্তে একটি কর্তব্য বলে মনে করে। শাস্ত্র দেখায় যে পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরে আনন্দ করেন। ইয়োব ঈশ্বরের সাথে তাঁর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ব্যতীত আর কিছুই চাননি। দায়ূদ ঈশ্বরের সাথে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্কের আনন্দের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি তাঁর গভীরতম আনন্দ ঈশ্বরের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন।
এক শিক্ষক এমন এক শহরে শিক্ষকতা করতেন যেখানে পানীয় জল নিরাপদ ছিল না। একদিন প্রচন্ড গরমে তিনি তার জলের ফিল্টারটি আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। ক্লাস শেষ করার পরে, তার মাথায় একটাই চিন্তা ছিল, “আমার জল চাই!” আপনি যদি তাকে ১০০ ডলার আর এক কাপ পরিষ্কার জলের বিকল্প দিতেন, তিনি জলটাই বেছে নিতেন। যখন তিনি মারাত্মক তৃষ্ণার্ত, তখন জলটাই যেকোনো কিছুর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সেই রাতে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করেছিলেন, “আমি কি ঈশ্বরের জন্যও এতটা তৃষ্ণার্ত যতটা তৃষ্ণার্ত আমি আজকে জলের জন্য ছিলাম? তিনি কি আমার কাছে এই জগতের যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”
দায়ূদ ঈশ্বরের জন্য তৃষ্ণার্ত ছিলেন। “হরিণী যেমন জলস্রোতের আকাঙ্ক্ষা করে, হে ঈশ্বর, তেমনি আমার প্রাণ তোমার আকাঙ্ক্ষা করে” (গীত ৪২:১-২)। দায়ূদ ঈশ্বরের প্রতি তাঁর তৃষ্ণাকে এক তৃষ্ণার্ত হরিণের সাথে তুলনায় ব্যাখ্যা করেছিলেন। একটা তৃষ্ণার্ত হরিণের সবচেয়ে বড় চাহিদা হল জল; একজন পবিত্র ব্যক্তির সবচেয়ে বড় চাহিদা হল ঈশ্বরের সাথে নিবিড় সম্পর্ক। একজন পবিত্র ব্যক্তি ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত হয় (মথি ৫:৬)।
গীতসংহিতা পাপীদের আনন্দ এবং একজন পবিত্র ব্যক্তির আনন্দকে তুলনা করেছে। পাপীরা যুদ্ধে উল্লাস করে; তারা মিথ্যায় আনন্দ পায়; তারা অভিশাপ দিতে ভালোবাসে (গীত ৬২:৪; গীত ৬৮:৩০; গীত ১০৯:১৭)। অন্যদিকে, পবিত্র ব্যক্তিরা ঈশ্বরের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ আনন্দ খুঁজে পায়; তারা ঈশ্বরের গৃহ এবং স্থানকে ভালোবাসে যেখানে তাঁর মহিমা বিরাজ করে (গীত ১৬:১১; গীত ২৬:৮)। গীতরচক স্থির ছিলেন, “তুমি ছাড়া জগতে আর কিছুই আমি কামনা করি না” (গীত ৭৩:২৫)। পবিত্র ব্যক্তিরা ঈশ্বরের মধ্যেই তাদের গভীর আনন্দ খুঁজে পায়।
গীত ৬৩ ঈশ্বরে ধ্যান করার সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে। দায়ূদ শৌলের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁর জীবন বিপদের মধ্যে ছিল, আপনি কী ভাবছেন? বেশিরভাগ মানুষই বিপদটা নিয়েই ভাববে। দায়ূদ বলেছেন, “বিছানায় শুয়ে আমি তোমাকে স্মরণ করি; রাত্রির প্রহরে আমি তোমার কথা চিন্তা করি”। এমনকি বিপদের সময়তেও, দায়ূদের চিন্তা ঈশ্বরের প্রতি থাকত। তিনি এই ধ্যান করার বিষয়টিকে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে দেখতেন (গীত ৬৩:৫-৬)।
গীতসংহিতার গায়ক ঈশ্বরে আনন্দ করতেন; তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন। পবিত্র ব্যক্তিরা ঈশ্বরে আনন্দ করে। ভেবে দেখুন: কোনটি আপনাকে তৃষ্ণার্ত করে? আপনি কি ঈশ্বরে আনন্দ করেন?
পবিত্র ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বিধানের আনন্দ করে
একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বরের বিধানে আনন্দ করেন। গীতসংহিতা দেখায় যে ঈশ্বরের বিধান তাঁর লোকেদের জন্য কোনো হুমকি নয়, পবিত্র ব্যক্তিরা ঈশ্বরর বিধানকে ভালোবাসে। দায়ূদ বলেছেন, “আমি তোমার ইচ্ছা পালন করতে চাই, হে ঈশ্বর” (গীত ৪০:৮)। তিনি ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলার জন্য লড়াই করেননি; তিনি ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতায় আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন।
গোটা গীতসংহিতা জুড়ে ঈশ্বরের বিধানের আনন্দ করার কথা লেখা আছে। গীত ১১৯-এর মূল বিষয় হল ঈশ্বরের বাক্য। দায়ূদের আনন্দের কথাগুলি শুনুন:
আমার চোখ খুলে দাও যেন আমি তোমার নিয়মকানুনের আশ্চর্য বিষয়াদি দেখতে পাই (গীত ১১৯:১৮)।
তোমার মুখের বিধিবিধান হাজার হাজার রুপো ও সোনার চেয়ে আমার কাছে বেশি মূল্যবান (গীত ১১৯:৭২)।
তোমার অসীম করুণা আমাকে ঘিরে রাখুক যেন আমি বাঁচতে পারি, কারণ তোমার নিয়মবিধান আমার আনন্দের বিষয় (গীত ১১৯:৭৭).
আহা, আমি তোমার বিধিবিধান কতই না ভালোবাসি! তা আমার সারাদিনের ধ্যানের বিষয় (গীত ১১৯:৯৭)।
হে সদাপ্রভু, আমি তোমার পরিত্রাণের প্রতীক্ষায় আছি, আর তোমার আইনব্যবস্থা আমাকে আনন্দ দেয় (গীত ১১৯:১৭৪)।
ঈশ্বরের বিধান ঈশ্বরের ভালোবাসাকে প্রকাশ করে
“হে সদাপ্রভু, এই পৃথিবী তোমার প্রেমে পূর্ণ, তোমার নির্দেশাবলি আমাকে শিক্ষা দাও” (গীত ১১৯:৬৪)। ঈশ্বর তাঁর বিধানের মধ্যে দিয়ে তাঁর প্রেমের প্রকাশ করেন: “তোমার প্রেম অনুযায়ী তোমার দাসের প্রতি ব্যবহার করো, আর তোমার নির্দেশাবলি আমাকে শিক্ষা দাও” (গীত ১১৯:১২৪)। পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরের বিধানের আনন্দ করে কারণ তারা জানে ঈশ্বরের বিধান ঈশ্বরের প্রেমকে প্রকাশ করে।
মোশি বলেছিলেন যে ঈশ্বরের বিধানের প্রতি ইস্রায়েলের আনুগত্য অন্যান্য জাতিকে তাদের প্রজ্ঞার প্রতি ঈর্ষান্বিত করবে!
সেগুলি সাবধানতার সঙ্গে পালন কোরো, কারণ তাতে অন্যান্য জাতির মধ্যে তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রকাশ পাবে, যারা এসব অনুশাসনের বিষয় শুনে বলবে, “সত্যিই এই মহান জাতি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬)।
মোশি প্রশ্ন করেছিলেন, “আর আমি আজ তোমাদের সামনে যে বিধান দিচ্ছি, তার মতো ন্যায়নিষ্ঠ অনুশাসন ও বিধান কোনও বড়ো জাতির আছে?” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৮)। ঈশ্বরের বিধান ইস্রায়েলকে দাসত্বে রাখেনি; ঈশ্বরের বিধান ইস্রায়েলকে আশীর্বাদ করেছিল।
[2]আজকাল প্রচারকদের এই শিক্ষা দিতে শোনা যায় যে, ঈশ্বরের বিধান এমন একটি ভারী বোঝা যা মেনে চলা যায় না। কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে যে ঈশ্বরের বিধান এমন একটি লক্ষ্য যেখানে কেউ পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু, মোশি, দায়ূদ এবং পুরাতন নিয়মের অন্যান্য সাধুরা ঈশ্বরের বিধানে আনন্দ করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বরের নাম এবং ঈশ্বরের বিশ্রামবারকে সম্মান করা একটি আনন্দ। তারা মিথ্যা প্রতিমার কাছে মাথা নত করতে চাননি।
তারা বিশ্বাস করতেন না যে তারা তাঁদের পিতামাতার অসম্মান করলে, খুন এবং ব্যভিচার করলে, বা চুরি করলে এবং মিথ্যা বললে তারা সুখী হবেন। তারা জানতেন যে আমাদের প্রতিবেশীর জিনিসে লোভ করার চেয়ে বরং সন্তুষ্ট থাকা ভালো। ঈশ্বরের বিধান একটি বোঝাস্বরূপ ছিল না. ঈশ্বর প্রেমের হৃদয় থেকে তাঁর বিধান দিয়েছেন। বিধান পবিত্র লোকেদের এক পবিত্র ঈশ্বরের সাথে তাদের সম্পর্কের পথের নির্দেশনা দিয়েছিল। ঈশ্বরের বিধান তাঁর লোকেদের জন্য আনন্দদায়ক ছিল।[3]
ঈশ্বরের বিধান ঈশ্বরের চরিত্রকে প্রকাশ করে
যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা তাঁর বিধানকেও ভালোবাসব। গীতরচক ঘোষণা করেছেন, “তোমার বিধিবিধান কত আশ্চর্য; তাই আমি সেগুলি মান্য করি” (গীত ১১৯:১২৯)। দায়ূদ বলেননি, “তোমার বিধিবিধান খুব কঠিন, কিন্তু আমি সেগুলি মান্য করার চেষ্টা করব।” না, দায়ূদ বলেছেন, “ঈশ্বরের বিধান আশ্চর্য!”
পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরের বিধানে আনন্দ করে। গীতরচক ঈশ্বরের বিধানকে ভালোবাসতেন কারণ তিনি জানতেন যে সেই বিধান আসলে নিয়ম-নীতির একটির তালিকার চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার; ঈশ্বরের বিধান ঈশ্বরের চরিত্রকে প্রকাশ করে।
► গীত ১১১ এবং ১১২ পড়ুন।
গীত ১১১ এবং ১১২ হল সংযোজক অধ্যায়। এইদুটি একসাথে, পবিত্র লোকেদের জন্য ঈশ্বরের বিধানের গুরুত্বকে প্রদর্শন করে। গীত ১১১ ঈশ্বরের চরিত্র বর্ণনা করে: ঈশ্বর ধার্মিক, অনুগ্রহকারী, করুণাময়।
গীত ১১২ শুরুতে রয়েছে, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সদাপ্রভুকে সম্ভ্রম করে, যে তাঁর আজ্ঞা পালনে মহা আনন্দ পায়।” যে ব্যক্তি ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করেন, সে আশীর্বাদযুক্ত হবে। কীভাবে? সে ঈশ্বরের মতো হয়ে উঠবে। সে অনুগ্রহকারী, করুণাময় এবং ধার্মিক হবে। এইগুলি হল সেই একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা দিয়ে গীত ১১১-তে ঈশ্বরকে বর্ণনা করা হয়েছে। যত আমরা ঈশ্বরের বিধান পালনে আনন্দ করি, তত বেশি আমরা ঈশ্বরের মতো হয়ে উঠি।
পঞ্চপুস্তক বা বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই শেখায় যে একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে প্রতিফলিত করে। গীত ১১১ এবং ১১২ দেখায় যে, একজন ব্যক্তি যে ঈশ্বরের বিধানে আনন্দ করে, সে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে পরিবর্তিত হয়। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের বিধানের আনন্দ করে সে ঈশ্বরের মতো হয়ে ওঠে।
যদি আমরা সত্যিই ঈশ্বরকে ভালোবাসি, আমরা ঈশ্বরের বিধান মান্য করব। দায়ূদ প্রশ্ন করেছিলেন, “কে সদাপ্রভুর পর্বতে আরোহণ করবে? কে তাঁর পুণ্যস্থানে দাঁড়াবে?” কে ঈশ্বরের উপস্থিতিতে থাকবে? সেই ব্যক্তি যার হাত পরিষ্কার এবং হৃদয় নির্মল (গীত ২৪:৩-৪)। ঈশ্বরের উপস্থিতিতে বাস করতে গেলে ঈশ্বরের বিধানের প্রতি বাধ্যতা প্রয়োজন। গীতনির্ভর বইগুলিতে দেখানো হয়েছে যে যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে তাদের থেকে তিনি আনুগত্য চান।
কাব্য পুস্তকগুলি আরো দেখায় যে ঈশ্বর বিশ্বস্ত আনুগত্যকে সম্ভব করেন। এটি তাদের জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা যারা তাকে ভালোবাসে।
ইয়োবের কাহিনী শুরু হয়েছে এইভাবে: “ঊষ দেশে একজন লোক বসবাস করতেন, যাঁর নাম ইয়োব। তিনি ছিলেন অনিন্দনীয় ও ন্যায়পরায়ণ; তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন এবং কুকর্ম এড়িয়ে চলতেন” (ইয়োব ১:১)। যখন ইলীফস ইয়োবকে পাপের জন্য দোষারোপ করেছিলেন, ইয়োব উত্তর দিয়েছিলেন:
আমার পা ঘনিষ্ঠভাবে তাঁর পদচিহ্নের অনুসরণ করেছে, বিপথগামী না হয়ে আমি তাঁর পথেই চলেছি। আমি তাঁর ঠোঁটের আদেশ অমান্য করিনি; তাঁর মুখের কথা আমি আমার দৈনিক আহারের চেয়েও বেশি যত্নসহকারে সঞ্চয় করে রেখেছি। (ইয়োব ২৩:১১-১২)
কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে, “কিভাবে ইয়োব বলতে পারেন যে তিনি ঈশ্বরের আদেশ ভঙ্গ করেননি? প্রত্যেকেই প্রতিদিন পাপ করে।” ইয়োব উত্তর দেন, “আমি ঈশ্বরকে ভালোবাসি এবং আমি তাঁর প্রতি যত্নবান আনুগত্যে আনন্দ করি।” ইয়োব ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পথ চলেছেন। তিনি তাঁর মুখনির্গত আজ্ঞা পালন করেছেন। একটি পবিত্র জীবন কি সম্ভব? ইয়োবের উত্তর, “হ্যাঁ।” ইয়োব জানতেন যে যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে তাদের জন্য তিনি বিশ্বস্ত আনুগত্য করা সম্ভব করে তোলেন।
একটি পবিত্র জীবন আমাদের নিজস্ব শক্তির উপর ভিত্তি করে নয়; বরং এটি ঈশ্বরের উপর দৈনন্দিন নির্ভরতা থেকে আসে। ইয়োবের নিষ্কলঙ্ক থাকার কারণ এটি ছিল না যে তিনি অস্বাভাবিকভাবে শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন। ঈশ্বরের সাথে তাঁর অন্তরঙ্গভাবে পথ চলার কারণে তিনি নিষ্কলঙ্ক ছিলেন। ইয়োব বুঝতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বর বিশ্বস্ত আনুগত্য চান এবং ঈশ্বর বিশ্বস্ত আনুগত্য সম্ভব করে তোলেন।
এই সত্যটি বিশ্বাসীদের দৈনন্দিন জীবনে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। ঈশ্বর চান তাঁর লোকেরা পবিত্র হোক এবং ঈশ্বর তাঁর লোকেদের পবিত্র করেন৷ তাঁর মাধ্যমেই আমরা পবিত্র ও শুদ্ধ হয়েছি। ঈশ্বর পবিত্রতা চান এবং ঈশ্বর পবিত্রতা প্রদান করেন। ঈশ্বর সেই সবকিছু প্রদান করেন যা বাক্য অনুযায়ী দরকার।
যারা ঈশ্বরে আনন্দ করে তাদের হৃদয়ের ইচ্ছা পূর্ণ হয়
গীত ৩৭ ঈশ্বরে আনন্দ করার ফলাফলটি দেখায়। “সদাপ্রভুতে আনন্দ করো, তিনিই তোমার মনের অভিলাষ পূর্ণ করবেন” (গীত ৩৭:৪)।
কিছু পাঠক মনে করেন যে গীত ৩৭:৪ শেখায়, “যদি আমি ঈশ্বরের সেবা করি, তাহলে আমি যা চাই তিনি আমাকে তাই সেটাই দেবেন। তিনি আমাকে ধনী করবেন।” দায়ূদ এমন কোনো সুসমাচার প্রচার করেননি যেটা বলে, “ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের ধনী করতে চান।” দায়ূদ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলেছেন: “যদি তোমার আন্তরিক চাহিদা ঈশ্বর হন, ঈশ্বর নিজেকেই তোমায় দেবেন।” যদি আপনি ঈশ্বরকে চান, আপনি ঈশ্বরকে পাবেন।
যদি আপনি সুস্বাস্থ্য, সম্পত্তি, এবং সম্মান পাওয়ার জন্য ঈশ্বরকে মেনে চলেন, তাহলে গীত ৩৭:৪-এর বার্তাটি আপনাকে নিরাশ করবে। যদি আপনি বস্তুগত আশীর্বাদের জন্য ঈশ্বরকে মেনে চলেন, তাহলে আপনি নিরাশ হবেন যখন দেখবেন যে আপনার পুরস্কার আসলে... ঈশ্বর স্বয়ং!
একজন আত্মসর্বস্ব ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে পাওয়া তার কোনো বড় পুরস্কার নয়। একজন আত্মসর্বস্ব ব্যক্তি ঈশ্বরকে চায় না। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে চায়, তার জন্য গীত ৩৭:৪ একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিজ্ঞা। একজন পবিত্র ব্যক্তির কাছে, সম্ভাব্য মহান উপহারটি হল ঈশ্বর নিজে।
যারা তাঁকে চায়, ঈশ্বর তাদেরকে তাঁর সাথে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক প্রদান করেন। ঈশ্বরে আনন্দ করা সবসময় যে আর্থিক আশীর্বাদ নিয়ে আসে তা নয় বা এর মানে কেবল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়াই নয়। যেসব লোকেরা ঈশ্বরে আনন্দ করে, তাদেরকে শত্রুরা ঘৃণা করতে পারে। পবিত্র ব্যক্তিরা প্রায়শই সমস্যায় পড়েন। তবে, দায়ূদ এবং ইয়োব দেখেছিলেন যে দুর্ভোগের সময়তেও, ঈশ্বর তাদেরকে সম্মান করেন যারা তাঁর মধ্যে আনন্দ করে।
পবিত্রতা হল ঈশ্বরকে ভালোবাসা। পবিত্র মানুষ ঈশ্বরে আনন্দিত হয়; প্রতিদানে, ঈশ্বর অবাধে নিজেকে তাদের কাছে অর্পণ করেন যারা তাঁর জন্য ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত।
“আমরা কল্পনা করি যে যা কিছু অপছন্দের তা হল আমাদের কর্তব্য! আমাদের প্রভুর আত্মার মতো কি আর কিছু আছে? 'হে আমার ঈশ্বর, তোমার ইচ্ছা পালন করে আমি আনন্দিত হই।’”
- অসওয়াল্ড চেম্বার্স
(Oswald Chambers)
[3]Dennis F. Kinlaw, This Day with the Master (Grand Rapids: Zondervan, 2004) থেকে অভিযোজিত।
সুসমাচারে পবিত্রতা: ঈশ্বরকে ভালোবাসা
একজন ধার্মিক আইনবিদ যিশুকে প্রশ্ন করেছিলেন, “গুরুমহাশয়, অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?” যিশু মোশির বিধানের দিকে নির্দেশ করেছিলেন। “বিধানশাস্ত্রে কী লেখা আছে? তুমি কি পাঠ করছ?”
আইনবিদ দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫ এবং লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ উদ্ধৃত করেছিলেন। এই শাস্ত্রাংশগুলি বিধানকে সংক্ষেপিত করে। “সে উত্তরে বলল, ‘তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে এবং, তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করবে।’” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “তুমি যথার্থ উত্তর দিয়েছ। তাই করো এবং এতেই তুমি জীবন লাভ করবে” (লূক ১০:২৫-২৮)। পবিত্রতা হল প্রকৃত প্রেম।
কিছু মাস পরে যিশু যিরুশালেমে ছিলেন। এক শাস্ত্রবিদ প্রশ্ন করেন, “সব আজ্ঞার মধ্যে কোনটি সর্বাপেক্ষা মহৎ?” (মার্ক ১২:২৮)। ফরিশীরা পুরাতন নিয়ম থেকে ৬১৩টি বিধান গুনেছিল। কোনটি সর্বশ্রেষ্ঠ আজ্ঞা তা নিয়ে তারা প্রায়শই তর্ক করত। যিশু উত্তর করেছিলেন:
সব থেকে মহৎ আজ্ঞাটি হল এই, ‘হে ইস্রায়েল শোনো, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, একই প্রভু। তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে।’ দ্বিতীয়টি হল, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতোই প্রেম করবে।’ এগুলির থেকে আর বড়ো কোনও আজ্ঞা নেই (মার্ক ১২:২৯-৩১)।
যিশু পবিত্রতাকে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা এবং অন্যদের প্রতি ভালোবাসা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। প্রকৃত পবিত্রতা ভালোবাসার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আমরা খ্রিষ্টের মতো প্রেমে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে পবিত্রতায় বেড়ে উঠি। পবিত্র হওয়া মানে যিশুর মতো ভালোবাসা; এটাই হল নিখুঁত প্রেম।
৫ নং পাঠে আমরা দেখেছিলাম যে পুরাতন নিয়মের লেখকেরা অবিভক্ত হৃদয়কে বোঝানোর জন্য নিখুঁত শব্দটি ব্যবহার করতেন। নিখুঁত হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরের কাছে নিজের অঙ্গীকারে অবিভক্ত হওয়া। নতুন নিয়মের লেখকেরা নিখুঁত শব্দটিকে একইভাবে ব্যবহার করেছেন। যিশু তাঁর অনুসরণকারীদের “নিখুঁত” হতে বলেছেন (মথি ৫:৪৮)। সুসমাচারে আমরা দেখতে পাই যে নিখুঁত হতে গেলে আমাদের মধ্যে অবশ্যই ঈশ্বরের জন্য এবং প্রতিবেশীদের জন্য এক অবিভক্ত ভালোবাসা থাকতে হবে। নিখুঁত হওয়ার মানে হল কোনোরকম অনিচ্ছা বা সন্দেহ ছাড়াই ভালোবাসা। এটাই হল নিখুঁত প্রেম।
নিখুঁত বা সিদ্ধ প্রেমের বার্তাটি সুসমাচার পুস্তকগুলিতে নতুন বিষয় নয়। যিশু ইস্রায়েলকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর সবসময়ের জন্যই ঈশ্বরের জন্য এবং আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি ভালোবাসা চান। দ্বিতীয় বিবরণ ৬ দেখায় যে প্রেম হল বিধানের ভিত্তিমূল। ভালোবাসাহীন বাধ্যতা আইনী পথে পরিচালিত করে। যিশু শিখিয়েছিলেন যে পবিত্র হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরকে ভালোবাসা। যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা তাঁকে মেনে চলব। পবিত্রতা হল আপনার সমগ্র হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসা।
ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা আবেগের চেয়েও বড় বিষয়। জন ওয়েসলি ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসাকে অনেকটা এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন:
….তাঁর মধ্যে আনন্দ করা, তাঁর ইচ্ছায় উল্লাস করা, তাঁকে ক্রমাগত সন্তুষ্ট করার চেষ্টা থাকা, তাঁর মধ্যে আমাদের আনন্দ খুঁজে পাওয়া, এবং তাঁর মধ্যে সম্পূর্ণ আনন্দ করার জন্য সর্বদাই একটা তৃষ্ণা থাকা।[1]
ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা আমাদের জীবনের সমগ্র পথকে পরিবর্তন করে দেয়। ঈশ্বরের প্রশংসা করা আমাদের সর্বোচ্চ আকাঙ্খা এবং আমাদের সর্বোচ্চ আনন্দ হয়ে ওঠে। যিশু দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের প্রতি যথার্থ ভালোবাসা বলতে আসলে কী বোঝায়। যিশুর মধ্যে আমরা সেই পবিত্র প্রেমকে দেখতে পাই যা ঈশ্বর প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জন্য চান।
যিশু তাঁর জীবনে ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত প্রেমকে প্রকাশ করেছিলেন
যিশু তাঁর পিতার প্রতি নিখুঁত প্রেমকে প্রকাশ করেছিলেন। যিশু তাঁর পিতার কাছে আনন্দপূর্ণ সমর্পণে জীবন যাপন করেছিলেন। এটা এক দাসের জবরদস্তি সমর্পণ ছিল না; এটা এক পুত্রের প্রেমময় সমর্পণ ছিল।
প্রলোভন পিতার প্রতি যিশুর প্রেমকে প্রকাশ করে
যিশু মানুষের মধ্যে তাঁর প্রচারকার্য শুরু করার আগে, প্রান্তরে প্রলোভনের সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রতিটা প্রলোভনই পিতা এবং পুত্রের মধ্যবর্তী সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার দিকে পরিচালিত হয়েছিল।
শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করেছিল যেন তিনি পিতাকে অবজ্ঞা করেন এবং নিজের জন্য রুটি জোগাড় করেন। শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করেছিল যেন তিনি জগতের আধিপত্য লাভের জন্য পিতার আরাধনা করা ত্যাগ করেন। শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করেছিল যেন তিনি মন্দিরের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিয়ে পিতাকে পরীক্ষা করেন (লূক ৪:১-১২)। প্রত্যেকটা প্রলোভনই পিতার জন্য যিশুর ভালোবাসার প্রতি একটি পরীক্ষা ছিল। যিশু তাঁর স্বর্গস্থ পিতার প্রতি তাঁর পরিপূর্ণ বিশ্বাস প্রদর্শনের মাধ্যমে উত্তর দিয়েছিলেন।
পাথরকে রুটিতে পরিণত করার পরিবর্তে, যিশু দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩ উদ্ধৃত করেছিলেন, “লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচে না।” মোশি ইস্রায়েলকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে ঈশ্বরকে মরুভূমিতে মান্না জুগিয়ে দিয়েছিলেন; ইস্রায়েল তাদের পিতার প্রেমময় ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করেছিল। একইভাবে, যিশুও তাঁর পিতার প্রেমময় ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করেছিলেন।
শয়তানের কাছে মাথা নত করার পরিবর্তে, যিশু দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৩ উদ্ধৃত করেছিলেন, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে এবং তাঁর নামেই শপথ করবে।” যেহেতু যিশু প্রকৃতভাবে ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন, তাই তিনি শয়তানের কাছে মাথা নত করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মন্দিরের চূড়া থেকে লাফ দিয়ে তাঁর পিতাকে পরীক্ষা করার পরিবর্তে, যিশু দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৬ উদ্ধৃত করেছিলেন, “লেখা আছে, ‘তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পরীক্ষা কোরো না।’” যেহেতু যিশু প্রকৃতভাবে ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন, তাই তিনি সুরক্ষার বিষয়ে পিতার প্রতিজ্ঞা পরীক্ষার করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মন্দির পরিষ্কার করা পিতার প্রতি যিশুর প্রেমকে প্রকাশ করে
ছেলেবেলাতেও যিশু তাঁর পিতার গৃহকে ভালোবাসতেন (লূক ২:৪৯)। তিনি তাঁর পিতাকে ভালোবাসতেন, তাই তিনি তাঁর পিতার গৃহকেও ভালোবাসতেন।
যখন যিশু মন্দিরে অসৎ ব্যবসায়ীদের দেখেছিলেন, তিনি ধার্মিক ক্রোধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
তিনি দড়ি দিয়ে একটি চাবুক তৈরি করে গবাদি পশু ও মেষপালসহ সবাইকে মন্দির চত্বর থেকে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি মুদ্রা-বিনিময়কারীদের মুদ্রা ছড়িয়ে দিয়ে তাদের টেবিল উল্টে দিলেন (যোহন ২:১৫)।
যিশু কেন রেগে গিয়েছিলেন? কারণ এই ব্যবসায়ীরা তাঁর পিতার গৃহকে অসম্মানিত করেছিল: “আমার পিতার গৃহকে ব্যবসার গৃহে পরিণত কোরো না” (যোহন ২:১৬)। যিশু তাঁর পিতাকে ভালোবাসতেন এবং তাঁর পিতাকে অসম্মানিত করার জন্য ক্রুদ্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
যিশুর সাধারণ মানুষের মতোই আবেগ ছিল। দুষ্টতার ক্ষেত্রে, তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন – কিন্তু তিনি পাপ করেননি (মার্ক ৩:৫; ইফিষীয় ৪:২৬)। পবিত্রতা যিশুর আবেগকে মুছে দেয়নি। বরং, যেহতু তিনি পবিত্র ছিলেন, ফলস্বরূপ যিশুর আবেগ তাঁর পিতার আবেগকে প্রতিফলিত করেছিল। যিশু সেই বিষয়গুলি নিয়ে রেগে গিয়েছিলেন যা তাঁর পিতাকে ক্রুদ্ধ করেছিল।
যিশুর সমর্পণ পিতার প্রতি তাঁর ভালোবাসাকে প্রকাশ করে
তাঁর বিদায়ী বার্তায়, যিশু তাঁর আনুগত্য বা বাধ্যতাকে পিতার প্রতি তাঁর ভালোবাসার একটি সাক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। “কিন্তু জগৎ যেন শিক্ষাগ্রহণ করে যে, আমি পিতাকে প্রেম করি এবং পিতা আমাকে যা আদেশ করেন, আমি ঠিক তাই পালন করি” (যোহন ১৪:৩১)। যিশু পিতার ইচ্ছার কাছে এক স্বেচ্ছা সমর্পণের মাধ্যমে পিতার প্রতি তাঁর প্রেমকে প্রকাশ করেছিলেন। এটাই হল প্রকৃত ভালোবাসা।
চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়তেও, যিশু পিতার ইচ্ছার প্রতি অনুগত ছিলেন। যিশু জানতেন যে এক লজ্জাজনক বিচারের মধ্যে দিয়ে গিয়ে তাঁকে ক্রুশে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। তাঁকে মানুষের পাপের জন্য পিতার থেকে আলাদা হতে হবে। যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “পিতা, তোমার ইচ্ছা হলে আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র সরিয়ে নাও…” (লূক ২২:৪২)। নাসরতীয় যিশু পিতার কাছে সমর্পণের চূড়ান্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
তাঁর মানবিক সত্ত্বায়, যিশু মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মানবিক সত্ত্বাতেই, যিশু পিতার কাছে তাঁর স্বেচ্ছা সমর্পণের প্রকাশ দেখিয়েছিলেন। “তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক।” যিশু পিতার ইচ্ছার কাছে তাঁর সমর্পণের মাধ্যমে পিতার প্রতি তাঁর প্রকৃত প্রেমের প্রকাশ করেছিলেন।
যিশুর জীবন প্রকৃত বা নিখুঁত প্রেমের একটি দৃষ্টান্ত প্রদান করে। পবিত্র হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরকে ঠিক সেইভাবে ভালোবাসা যেভাবে যিশু তাঁর পিতাকে ভালোবাসতেন।
যিশু তাঁর অনুসরণকারীদের ঈশ্বরকে যথার্থভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন
ঈশ্বরকে ভালোবাসা আবেগের চেয়েও বড় বিষয়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিজ্ঞা যা আমাদের জীবনের চূড়ান্ত অগ্রাধিকারগুলিকে বদলে দেয়। যিশু অনেকটা এইভাবে প্রেম বা ভালোবাসাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন:
কেউ যদি আমার কাছে আসে এবং তার বাবা ও মা, স্ত্রী ও সন্তান, ভাই ও বোন, এমনকি, নিজের প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না। যে আমার অনুগামী হতে চায় অথচ নিজের ক্রুশ বহন করে না, সে আমার শিষ্য হতে পারে না (লূক ১৪:২৬-২৭)।
ইহুদি শিক্ষকদের কাছে, ঘৃণা কথাটির অর্থ ছিল “কোনো কিছুর থেকে কম ভালোবাসা।” যিশুর অনুসরণকারীদের অবশ্যই যেকোনো কারোর থেকে যিশুকেই বেশি ভালোবাসতে হবে, এমনকি তাঁর নিজের থেকেও। এটাই হল ঈশ্বরকে ভালোবাসার অর্থ – সবকিছুর ওপরে ঈশ্বরকে ভালোবাসা।
যিশু বলেছেন, “কেউই দুজন মনিবের সেবা করতে পারে না। সে হয় একজনকে ঘৃণা করে অপরজনকে ভালোবাসবে, নয়তো সে একজনের অনুগত হয়ে অপরজনকে অবজ্ঞা করবে” (লূক ১৬:১৩)। ভালোবাসা হল একান্ত। আপনি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, তবে তিনি জীবনের সবকিছুর উপরে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
যিশু শিখিয়েছিলেন যে বিশ্বস্ত এবং স্বেচ্ছা আনুগত্য ভালোবাসাকে প্রকাশ করে। “যে আমার আদেশ লাভ করে সেগুলি পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে।” এই প্রেমময় আনুগত্য বা বাধ্যতার পুরস্কার হল ঈশ্বরের সাথে একটি সুনিবিড় সম্পর্ক। “আমাকে যে প্রেম করে, আমার পিতাও তাকে প্রেম করবেন, আর আমিও তাকে প্রেম করব এবং নিজেকে তারই কাছে প্রকাশ করব” (যোহন ১৪:২১)।
বহু বছর পরে, যোহন আন্তরিকভাবে যিশুর কথাগুলি স্মরণ করেছিলেন। যোহন লিখেছেন, “কিন্তু যে তাঁর বাক্য পালন করে, তার অন্তরে ঈশ্বরের প্রেম প্রকৃত অর্থেই পূর্ণতা লাভ করেছে” (১ যোহন ২:৫)। পবিত্রতা হল ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত প্রেম। পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে স্বেচ্ছায় সমর্পণ করে। পবিত্র লোকেরা যিশুর আনুগত্যের আদর্শকেই অনুসরণ করে।
যখন আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, আমরা তাঁর ইচ্ছা পালন করে আনন্দ পাই। যখন আমরা ঈশ্বরকে যথার্থভাবে ভালোবাসি, আমরা স্বেচ্ছায় আমাদের সমস্ত ইচ্ছা পিতার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করি। যখন আমরা ঈশ্বরকে যথার্থভাবে ভালোবাসি, দায়ূদের সাথে আমরাও প্রার্থনা করি:
হে ঈশ্বর, তুমি আমার অনুসন্ধান করো আর আমার হৃদয়ের কথা জানো; আমাকে পরীক্ষা করো আর জানো আমার উদ্বেগের ভাবনা। দেখো, আমার মধ্যে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, আর আমাকে অনন্ত জীবনের পথে চালাও (গীত ১৩৯:২৩-২৪)।
নিখুঁত প্রেম আমাদের স্বর্গস্থ পিতাকে খুশি করার জন্য আমাদেরকে একটি দৃপ্ত ইচ্ছা প্রদান করে। আমরা সেইসব কিছুই প্রত্যাখ্যান করি যা তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ককে বিঘ্নিত করে। পবিত্রতা হল ঈশ্বরের জন্য নিখুঁত প্রেম।
যিশু এবং পিতার মধ্যে সম্পর্কটি হল খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য একটি আদর্শ
► যোহন ১৭ পড়ুন।
যিশু তাঁর মহাযাজকীয় প্রার্থনায় পবিত্রতার একটি চিত্র দিয়েছেন। যোহন ১৭-তে, যিশু নিজের জন্য, তাঁর শিষ্যদের জন্য এবং তারপর সমস্ত বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। যীশু দেখিয়েছেন যে পিতার সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্কটি সকল খ্রিষ্টবিশ্বাসী এবং আমাদের পিতার মধ্যে সম্পর্কের একটি নমুনা।
যিশু তাঁর নিজের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন (যোহন ১৭:১-৫)
মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েও, যিশু আনন্দ করেছিলেন যে পিতা তাঁকে যে কাজ দিয়েছেন তা তিনি সম্পন্ন করেছেন: “তোমার দেওয়া কাজ সম্পূর্ণ করে, আমি পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করেছি।”
তারপর এই প্রার্থনায়, যিশু বলেছেন,
সত্যের দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করো, তোমার বাক্যই সত্য। তুমি যেমন আমাকে জগতে পাঠিয়েছ, আমিও তেমনই তাদের জগতে পাঠাচ্ছি। তাদেরই জন্য আমি নিজেকে পবিত্রকরি, যেন তারাও সত্যের দ্বারা পবিত্র হতে পারে (যোহন ১৭:১৭-১৯)।
যে গ্রীক শব্দটি এই অংশটিতে তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে তার মানে “পবিত্র করা” হতে পারে বা “শুদ্ধ করা বা পৃথক করা” হতে পারে। যিশু যেহেতু কোনো পাপ করেননি, তাই তাঁর পবিত্র হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এই প্রার্থনায়, “পবিত্র করা”-র অর্থ হল “পৃথক করা”। যিশু নিজেকে পৃথক করেছিলেন যাতে পিতা তাঁকে যে কাজ দিয়েছেন তা যেন তিনি সম্পন্ন করতে পারেন। যিশু নিজেকে সেই কাজের জন্য বিচ্ছিন্ন করেছিলেন যা পিতা তাঁকে দিয়েছিলেন।
যিশু তাঁর শিষ্যদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন (যোহন ১৭:৬-১৯)
যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যেন তাঁর শিষ্যেরা সত্যে পবিত্র হয়। “তাদেরই জন্য আমি নিজেকে পবিত্র করি, যেন তারাও সত্যের দ্বারা পবিত্র হতে পারে।” যেভাবে যিশু পৃথিবীতে সেবাকাজের জন্য পৃথক ছিলেন, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর শিষ্যেরাও সেবাকাজের জন্য পৃথক হোক। পুত্র এবং পিতার মধ্যবর্তী সম্পর্কটি সকল শিষ্য এবং পিতার মধ্যবর্তী সম্পর্কের জন্য একটি আদর্শ ছিল। যেহেতু শিষ্যেরা যিশুর পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন, তাঁরাও এই জগতের কাছে তাঁর সত্য প্রচারকের জন্য পৃথক হয়েছিলেন।
যিশু সকল বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন (যোহন ১৭:২০-২৬)
যিশু এরপর সেই সমস্ত বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছেন যারা তাঁকে বিশ্বাস করবে। তিনি প্রার্থনা করেছেন যে সমস্ত খ্রিষ্টবিশ্বাসী সেই একই একতায় থাকবে যে সহভাগিতা তিনি এবং তাঁর পিতা উপভোগ করেছেন। যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যে আমরা যথার্থভাবে একক হয়ে উঠব। এটি সেই একই বাক্য যা মথি ৫:৪৮-এ আছে, “অতএব, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও সেইরূপ সিদ্ধ হও।” এই বাক্যটি একটি উদ্দেশ্য পরিপূরণের পরামর্শ দেয়। উদ্দেশ্যটি হল যথার্থ প্রেম, সেই প্রেম যা ত্রিত্ত্বের মধ্যে প্রকাশিত হয়।
বিশ্বাসী হিসেবে আমরা পিতা এবং পুত্রের স্বর্গীয় প্রেমের সহভাগিতায় আমন্ত্রিত। যিশু প্রার্থনা করেছেন, “যেভাবে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ, তেমনই তাদেরও ভালোবেসেছ এবং আমিও তাদের সেইভাবে ভালোবাসি।” যিশু এবং পিতার মধ্যবর্তী ভালোবাসা প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য একটি দৃষ্টান্ত। এটাই হল পবিত্র হওয়ার অর্থ: যিশুর প্রদর্শিত সেই প্রকৃত প্রেমের অধিকারী হওয়া।
[1]John Wesley, “On Love.” ২১শে ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে http://wesley.nnu.edu/john-wesley/the-sermons-of-john-wesley-1872- edition/sermon-139-on-love/ থেকে সংগৃহিত।
পবিত্রতার অনুশীলন: আমি কি ঈশ্বরকে ভালোবাসি?
সাইমন তার পাস্টারকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। “পাস্টার, আমি পবিত্র হতে চাই। আব্রাহামের মতো আমিও ঈশ্বরের বন্ধু হতে চাই। কিন্তু একটি সমস্যা আছে। আমি এমন কিছু কাজ করি যা আমি জানি ভুল। আমি ঈশ্বরকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি তাঁকে মানতে চাই না। আমি কি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারি যদি আমি তাঁর আনুগত্য না করি?
যিশু প্রায় ২০০০ বছর আগে সাইমনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছিলেন। “তোমরা যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো, তাহলে আমার সব আদেশ পালন করবে” (যোহন ১৪:১৫)। ঈশ্বর কোথাও বলেননি, “তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে তুমি ইচ্ছাকৃত পাপ অব্যাহত রাখতে পারো।” বরং যিশু বলেছেন, “তোমরা যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো, তাহলে আমার সব আদেশ পালন করবে।” যিশু আরো সংযোগ করেছেন, “যে আমাকে প্রেম করে না, সে আমার শিক্ষাও পালন করে না” (যোহন ১৪:২৪)।
কিছু নামধারী খ্রিষ্টবিশ্বাসী ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা বলার সাথে সাথে তাদের ইচ্ছাকৃত পাপও অব্যাহত রাখে। এই লোকেদের কাছে, ঈশ্বরকে ভালোবাসা কেবল একটি আবেগ। তারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে বলে দাবি করে, কিন্তু এটা তাদের জীবন পরিবর্তন করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বরকে ভালোবাসা একটি আবেগ বা অনুভূতির চেয়েও বেশি কিছু। ঈশ্বরকে ভালোবাসার জন্য তাঁর আদেশের প্রতি স্বেচ্ছায় বাধ্যতা প্রয়োজন।
সারার তার পাস্টারের কাছে একটি প্রশ্ন ছিল। “পাস্টার, আমি পবিত্র হতে চাই। ইয়োবের মতো আমিও নিষ্কলঙ্ক এবং ধার্মিক হতে চাই। আমি সমস্ত আদেশ পালনের ব্যাপারে সতর্ক। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে। আমি ঈশ্বরকে প্রকৃতভাবে ভালোবাসি না। আমি ঈশ্বরকে ভয় থেকে ভালোবাসি কারণ আমি তাঁর অবাধ্য হলে তিনি রেগে যাবেন। আমি ঈশ্বরকে মেনে চলি, কিন্তু তাঁকে ভালোবাসি না। আমি কি ঈশ্বরকে না ভালোবেসেও পবিত্র হতে পারি?”
যিশু প্রায় ২০০০ বছর আগে সারার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছিলেন। যিশু ইফিষের মন্ডলীতে একটি বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক শিক্ষাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। তাড়নার সামনেও তাদের বিশ্বস্ততার জন্য তিনি তাদের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি বলেছিলেন, “তবুও তোমার বিরুদ্ধে আমার কিছু কথা আছে: তুমি তোমার প্রথম প্রেম পরিত্যাগ করেছ।” যিশু এই প্রেমের অভাব বিষয়টিকে এতটাই গভীরভাবে নিয়েছিলেন যে যদি তারা অনুশোচনা না করে এবং তাদের প্রথম প্রেম পুনরায় লাভ না করে তাহলে তিনি তাদের দীপাধারটিকে তার স্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছিলেন (প্রকাশিত বাক্য ২:২-৫)।
কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী বিশ্বাস করে যে তারা আনুগত্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জন করতে পারে, কিন্তু তাদের আনুগত্যে প্রেম থাকে না। তারা বিশ্বাস করে যে পবিত্রতা নিয়মের একটি তালিকার প্রতি আনুগত্যের বিষয়। তারা ভুলে গেছে যে পবিত্রতার মূল হল ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা।
অন্তরে, শিমোন আর সারার সমস্যার শিকড়টা একই ছিল; তাঁদের দুজনের কেউই ঈশ্বরকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসতেন না। ঈশ্বরের প্রতি শিমোনের ভালোবাসার অভাব তাঁর জাগতিকতায় প্রকাশিত হত। জাগতিকতা বলে, “আমি এই জগতকে ঈশ্বরের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।”
ঈশ্বরের প্রতি সারার ভালোবাসার অভাব আইনবাদে দেখা যায়। আইনবাদ বলে, “আমি প্রেমে নয়, ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জনের আকাঙ্খায় ঈশ্বরের আনুগত্য করি।” এগুলোর কোনোটিই ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়। জাগতিকতা এবং আইনবাদ উভয়ের প্রতি একটাই উত্তর - ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা।
জাগতিকতার প্রতি উত্তর: ঈশ্বরকে ভালোবাসা
জাগতিক হওয়ার মানে কী? অনেক সময়, আমরা জাগতিকতাকে সংজ্ঞায়িত করি পোশাকের ধরন, বিনোদনের ধরন, জনসাধারণের অনুমোদনের আকাঙ্খা, দেখনদারি বা অন্য কোনো বাহ্যিক চিহ্ন দ্বারা। এগুলো জাগতিকতার লক্ষণ হতে পারে, কিন্তু জাগতিকতা অনেক গভীর। জাগতিকতাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করা হয়: “কোন বিষয়টি আমাকে সত্যিকারের আনন্দ দেয়?”
জাগতিক হওয়া মানে এই পৃথিবীতে আনন্দ করা। একজন জাগতিক ব্যক্তি এই পৃথিবী থেকে চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা কামনা করে। জাগতিক হওয়া মানে এই জগতের জিনিসকে ঈশ্বরের জিনিসের চেয়েও বেশি মূল্য দেওয়া।
লোট দেখলেন যে জর্দন উপত্যকা ভালোভাবে জলে পরিপূর্ণ। তিনি সেই উপত্যকাকে বেছে নিয়েছিলেন যা তাঁর দৃষ্টিকে আকর্ষণ করেছিল (আদিপুস্তক ১৩:১০-১১)। লোট ছিলেন জাগতিক; তিনি এই জগতের আনন্দে আনন্দিত ছিলেন।
দীমা তার পরিচর্যা কাজ পরিত্যাগ করেছিল কারণ তিনি এই জগতে তার আনন্দ খুঁজে নিয়েছিল। পৌল লিখেছেন, “কারণ দীমা, এই জগৎকে ভালোবেসে আমাকে ত্যাগ করে থিষলনিকাতে চলে গেছে” যা এক সমৃদ্ধ শহর (২ তিমথি ৪:১০)। দীমা জাগতিক ছিলেন; তিনি এই জগতকে ভালোবেসেছিলেন।
একজন ঈশ্বরপ্রেমী ব্যক্তি তাঁর সর্বোচ্চ আনন্দ ঈশ্বরের মধ্যেই খুঁজে পান। গীতরচক লিখেছেন, “তুমি ছাড়া জগতে আর কিছুই আমি কামনা করি না” (গীত ৭৩:২৫)। গীতরচক ঈশ্বরপ্রেমী ছিলেন; তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন।
জাগতিকতার উত্তর কিছু মুষ্টিবদ্ধ নিয়মাবলী নয়। জাগতিকতার উত্তর হল ঈশ্বরের প্রতি একটি ভালোবাসা। ১৯ শতকে স্কটিশ পাস্টার থমাস চালমার্স (Thomas Chalmers), “নতুন প্রেমের অসাধারণ শক্তি”, এই বিষয়টির উপর বাক্য প্রচার করেছিলেন। রেভ. চালমার্স বলেছিলেন এক্ষেত্রে দুটি জিনিস আমাদের অবশ্যই করতে হবে যদি আমরা এই জগতকে ভালোবাসা বন্ধ করতে চাই।
১। আমাদের কিছু জিনিস অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমাদের এই জগতের শূন্যতা বুঝতে হবে। এই জগতের অসাড়তা দেখতে পেলে, এই জগতের প্রতি আমাদের ভালোবাসা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু কেবল সেটাই যথেষ্ট নয়।
২। আমাদের কিছু জিনিস অবশ্যই শুরু করতে হবে। আমাদেরকে এই জগতের প্রতি ভালোবাসাকে আরো প্রেমময় কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। যখন আমরা ঈশ্বরের প্রেমে পড়ি, আমাদের নতুন প্রেম জগতের প্রতি আমাদের পুরনো প্রেমকে সরিয়ে দেয়।
এই জগতের প্রেম থেকে নিরাময়ের উপায় হল ঈশ্বরের প্রেমে পড়া। যিশু একজন ব্যবসায়ীর উপমা দিয়েছিলেন যিনি তাঁর সমস্তকিছু একটি মুক্তো কেনার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আবার স্বর্গরাজ্য এমন এক বণিকের মতো, যে উৎকৃষ্ট সব মুক্তার অন্বেষণ করছিল। যখন সে অমূল্য এক মুক্তার সন্ধান পেল সে ফিরে গিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করে তা কিনে নিল (মথি ১৩:৪৫-৪৬)।
কল্পনা করুন যদি আপনি এই ব্যবসায়ীকে বলেন, “আমি আপনার জন্য খুব দুঃখিত! এটা দুঃখজনক যে আপনাকে এত সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছিল।” ব্যবসায়ী আপনাকে দেখে হাসবেন! তিনি বলবেন, “ত্যাগ স্বীকার? আমি ত্যাগ স্বীকার করছি না; আমি অনেক দামী একটা মুক্তো কিনছি। আমি যে জিনিসগুলি বিক্রি করেছি তা এই সুন্দর মুক্তোটির তুলনায় কিছুই নয়।” ব্যবসায়ীটি নতুন আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছেন। তিনি এমন কিছুর প্রেমে পড়েছেন যা তাঁর পুরোনো প্রেমকে বিতাড়িত করেছে।
জাগতিকতার উত্তর হল ঈশ্বরের প্রেমে পড়া। ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা অর্থের জন্য, করতালির জন্য, প্রদর্শনের জন্য এবং জগত ঈশ্বরের লোকেদের প্রলুব্ধ করার জন্য ব্যবহার করে এমন সমস্ত জিনিসের জন্য আমাদের ভালোবাসাকে দূর করবে। পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরকে ভালোবাসেন – এবং সেই ভালোবাসা এই জগতের প্রতি ভালোবাসাকে বিতাড়িত করে দেয়।
যখন আমরা আন্তরিকভাবে একটি পবিত্র জীবনযাপন করতে চাই, তখন আমরা খ্রিষ্টিয় পরিপূর্ণতা বিষয়ক বাইবেলের নীতি থেকে বেরিয়ে একটি আইনবাদগত “পরিপূর্ণতাবাদে” (perfectionism) যেতে প্রলুব্ধ হতে পারি।
বাইবেলভিত্তিক খ্রিষ্টীয় পরিপূর্ণতা হল এমন একটি হৃদয় যা ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসায় অবিভক্ত। খ্রিষ্টীয় পরিপূর্ণতা এমন একটি হৃদয়কে প্রকাশ করে যা প্রতিটি ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করে। এটা স্বীকার করে যে ভালোবাসার আন্তরিক হৃদয়ও আমাদের নিখুঁত কর্মক্ষমতার স্তরে আনতে পারে না। আমরা আমাদের মানবিক দুর্বলতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। একজন পবিত্র ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করবেন না, কিন্তু পবিত্রতম ব্যক্তি সেইসব ক্ষেত্রে ঈশ্বরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করে চলেন যেখানে আমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ঈশ্বরের ঠিক ও ভুলের সম্পূর্ণ মানদণ্ড থেকে ছিটকে পড়ি।
অন্যদিকে “পরিপূর্ণতাবাদ”, আমাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিখুঁত কাজ করার আশা করতে পরিচালিত করে। পরিপূর্ণতাবাদ আমার জীবনে যিশু এবং তাঁর শক্তির উপর দৃষ্টিপাত করার পরিবর্তে একজন পবিত্র ব্যক্তি হিসেবে আমার এবং আমার কর্মক্ষমতার প্রতি আলোকপাত করে।
পরিপূর্ণতাবাদ সাধারণত বিচ্ছেদের মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জনের জন্য একটি আইনি প্রচেষ্টার দিকে পরিচালিত করে। এটি মূলত আমি যা করি না (আমি ধূমপান করি না, আমি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করি না, আমি অশালীন পোশাক পরি না) বা আমি যেগুলি করি (আমি উপবাস করি, প্রার্থনা করি, আমি মন্ডলীতে যাই) তার একটি তালিকা দ্বারা পবিত্রতা পরিমাপ করে থাকে।
আমরা ৪ নং পাঠে যেমন দেখেছি, একজন পবিত্র ব্যক্তি ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন কিছু থেকে আলাদা থাকতে চাইবেন। মুখে বলা, “আমি আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালবাসি” এবং তারপর এমন জীবন যাপন করা যা পার্থিব বাসনা চরিতার্থ করতে চাওয়া– ব্যাপারটি ভুল।
যাইহোক, আমাদের কখনই বিচ্ছিন্ন হৃদয় এবং বিচ্ছিন্ন জীবনের জন্য আমাদের আকাঙ্খাকে আমাদের বিশ্বাসের এমন একটি বিন্দুতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয় যে আমরা "করুন এবং করবেন না" এর তালিকা দ্বারা ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ক পরিমাপ করতে পারি। পবিত্রতা প্রথমে হৃদয়ের বিষয় এবং এটি ঈশ্বরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক আমাদের পবিত্র, বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের আকাঙ্খাকে অনুপ্রাণিত করে। বিপরীতটি কখনই কাজ করবে না: একটি পৃথক জীবন কোনোমতেই ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার সম্পর্ককে অনুপ্রাণিত করে না।
আমাদের আবশ্যিকভাবে ঈশ্বরের আদেশ অনুযায়ী নিখুঁত হতে হবে। আমাদের কখনোই পরিপূর্ণতাবাদের মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জনের চেষ্টা করা উচিত নয়। একটি নিখুঁত হৃদয় হল এমন একটি হৃদয় যা ঈশ্বরকে সম্পূর্ণভাবে ভালোবাসে।
► আপনার মন্ডলীতে বড় প্রলোভন কোনটি, জাগতিকতা নাকি আইনবাদ? আলোচনা করুন কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি গভীর প্রেম এই সমস্যাগুলির জন্য একটি সঠিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে পারে। আপনি যাদের মধ্যে পরিচর্যা কাজ করেন তাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি অনুপ্রাণিত করার জন্য ব্যবহারিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করুন।
একটি পবিত্র জীবনের চাবিকাঠি: ঈশ্বরকে ভালোবাসা
আমরা ঈশ্বরকে তখনই ভালোবাসি যদি আমরা তাকে সম্পূর্ণরূপে মেনে চলি। আমরা তখনই ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে মান্য করি যদি আমরা তাঁকে সত্যিই ভালোবাসি। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমরা কর্তব্য অনুসারে আমরা ঈশ্বরের সেবা করার বাইরেও যেতে পারি। আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারি যেখানে আমরা তাঁকে সেবা করে আনন্দিত হই। এই আনন্দ কেবল প্রেমের মাধ্যমেই আসবে। যে সন্তান তার পিতা-মাতার আনুগত্য করে কেবল ভয় বা কর্তব্যের কারণে সে কখনই বাধ্যতায় আনন্দ পায় না। একটি শিশু যে ভালোবাসা থেকে আনুগত্য অনুসরণ করে সে আনুগত্যকে আনন্দ বলে মনে করে।
যখন একটি ছোটো শিশু বেহালা শেখে, তাকে অবশ্যই প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে। প্রথম দিকে অনুশীলনটি আনন্দের চেয়ে বেশি কর্তব্য বলে মনে হতে পারে। কিন্তু শিশুটি যদি কখনো একজন চমৎকার বেহালাবাদক হয়ে ওঠে, তাহলে তাকে অবশ্যই এমন জায়গায় পৌঁছাতে হবে যেখানে বেহালা বাজানো কর্তব্যের চেয়েও বেশি কিছু। এটা একটি আনন্দের বিষয় হতে হবে। কর্তব্য হল যখন একটি শিশু অনুশীলন করে কারণ তার মা বলেছেন, “তোমাকে অবশ্যই অনুশীলন করতে হবে।” আর আনন্দ তখন হয় যখন একটি শিশু খেলা করে কারণ সে খেলাটিকে উপভোগ করে। প্রকৃত বেহালাবাদক অনুশীলনের কর্তব্যে আনন্দ পান।
আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের জন্যও একই কথা সত্য। একজন পবিত্র ব্যক্তি আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা হিসেবে ঈশ্বরের বাক্য পড়েন, কিন্তু তিনি ঈশ্বরের বাক্যে আনন্দও পান। ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য একটি কর্তব্য এবং একটি আনন্দ উভয় হয়ে ওঠে।
আমরা যখন কর্তব্যের পরিবর্তে আনন্দ সহকারে ঈশ্বরের সেবা করি তখন সেই পার্থক্যটির কথা ভাবুন। বাধ্যতা আনন্দে পরিণত হয়, বোঝায় নয়। প্রার্থনা, ঈশ্বরের বাক্য এবং খ্রিস্টীয় জীবনের অনুশাসনগুলি আনন্দে পরিণত হয়। এটাই হল ঈশ্বরকে ভালোবাসার অর্থ। পবিত্র লোকেরা আনন্দের সাথে আনুগত্যে চলেন কারণ তাঁরা ঈশ্বরকে ভালোবাসেন।
জন সাং (John Sung) বিংশ শতকের অন্যতম বিখ্যাত প্রচারক। তিনি চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের একজন মেথোডিস্ট পাস্টারের ছেলে ছিলেন, এবং নয় বছর বয়সে তিনি খ্রিষ্টবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
১৯ বছর বয়সে সাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসেন। অতিব মেধাবী ছাত্র, জন সাং মাত্র ছয় বছরের মধ্যে রসায়নে তার স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই সময়ে সাং তার বাবার কাছে শেখা বাইবেলের সমস্ত শিক্ষার ওপর সন্দেহ করতে শুরু করেন।
সাং তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ইউনিয়ন থিওলজিক্যাল সেমিনারিতে এক বছর পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সঠিক উত্তর প্রদানের পরিবর্তে, ইউনিয়নের উদারপন্থী (liberal) অধ্যাপকেরা আবারও সাংয়ের বিশ্বাসকে আরো ক্ষুণ্ন করেন।
১৯২৬ সালে জন সাং হারলেমে একটি সভায় যোগদান করেছিলেন। সেই রাতে ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে ঈশ্বর তার জীবনে যে পরিবর্তন করেছেন সে বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিল। সাং ঈশ্বরের সাথে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপনের পথ খোঁজা শুরু করেছিলেন। সেমিনারির অধ্যাপকেরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে জন সাং মানসিকভাবে অসুস্থ, এবং সাংকে পাগলাগারদে পাঠানোর জন্য প্রেসিডেন্ট হেনরি স্লোয়ান কফিন (Henry Sloan Coffin)-কে নিশ্চিত করিয়েছিলেন । অ্যাসাইলামে তার কাটানো ১৩৯টি দিনে জন সাং পুরো বাইবেলটি ৪০ বার পড়েছিলেন।
ছাড়া পাওয়ার পর জন সাং চীনে ফিরে আসেন। ড. সাং জানতেন যে তিনি চীনের যেকোনো নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যাবেন। কিন্তু, জাহাজে ওঠার পর ঈশ্বর সাংকে তার জীবনের আরো বড় সমর্পণের জন্য ডেকেছিলেন। একদিন তার সমর্পণের চিহ্ন হিসেবে এবং শিক্ষকতার কেরিয়ারের সমস্ত বাধা ছিন্ন করতে, ড. সাং তার সমস্ত ডিপ্লোমা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার অ্যাওয়ার্ডগুলি এক জায়গায় জড়ো করেন এবং জলে ছুঁড়ে ফেলে দেন।
জন সাং চীনে “ড. জন সাং, রসায়নবিদ্যার অধ্যাপক” হিসেবে নয়, বরং “জন সাং, ঈশ্বরের দাস” হিসেবে এসেছিলেন। জন সাং প্রচার করা শুরু করেছিলেন এবং একটি পরাক্রমী সুসমাচার-প্রচারক সেবাকাজ গঠন করেছিলেন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন ১৯২৭ সালে জন সাংয়ের চীনে আসা থেকে ১৯৪৪ সালে ৪১ বছর বয়সে তার মৃত্যুর সময়কালের মধ্যে জন সাংয়ের পরিচর্যায় ১,০০,০০০-এরও বেশি মানুষ ধর্মান্তরিত (কনভার্ট) হয়েছিল।
জন সাংয়ের জীবন দেখায় যে ঈশ্বরকে ভালোবাসা আবেগের চেয়েও বড় বিষয়। ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসার জন্যই, জন সাং চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুমূল্য শিক্ষকতার চাকরির জন্য তার আশা-আকাঙ্খা ত্যাগ করেছিলেন এবং প্রচারকার্যের জন্য ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসার কারণেই, জন সাং ভালো মাইনের পদ এবং স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে একটি সাধারণ জীবন যাপন করেছিলেন, তার আহারও সাধারণ ছিল। ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসার কারণেই, জন সাং প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা প্রার্থনা এবং বাইবেল পাঠে ব্যয় করতেন। তার জীবন ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসার দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল এবং সেই ভালোবাসার কারণে, ঈশ্বর জন সাংকে হাজার হাজার মানুষকে খ্রিষ্টের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
৭ নং পাঠের পর্যালোচনা
(১) পবিত্র হওয়া মানে ঈশ্বরকে ভালোবাসা।
(২) পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরের মধ্যেই তাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পায়।
(৩) যেহেতু তারা জানে যে ঈশ্বরের নিয়ম তাঁর ভালোবাসাকে প্রতিফলিত করে, তাই পবিত্র লোকেরা ঈশ্বরের নিয়মে আনন্দিত হয়।
(৪) যারা ঈশ্বরে আনন্দ করে তারা দেখতে পায় যে ঈশ্বর তাদের কাছে নিজেকে দান করেন।
(৫) ঈশ্বরকে ভালবাসার অর্থ কী তা জানার জন্য যিশু নিখুঁত চিত্র প্রদান করেছিলেন।
(৬) জাগতিকতার উত্তর হল ঈশ্বরের প্রতি গভীর ভালোবাসা।
(৭) আইনবাদের উত্তর হল ঈশ্বরের প্রতি গভীর ভালোবাসা।
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) মনে করুন যে একজন নতুন খ্রিষ্টবিশ্বাসী আপনাকে বলেছেন, “আমি ঈশ্বরের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতে চাই। আমি ঈশ্বরকে ভালোবাসি, কিন্তু তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক কীভাবে বৃদ্ধি পাবে তা জানা কঠিন। আমি ঈশ্বরকে দেখতে পাই না আর তাই তিনি অনেক দূরে আছেন বলে মনে হয়। আমি কি করতে পারি?” একটি ১-২ পাতার চিঠি লিখুন যাতে আপনি সেই বিশ্বাসীকে কীভাবে ঈশ্বরের সাথে তার সম্পর্ক বাড়াতে হয় তা বুঝতে সাহায্য করতে পারেন। শাস্ত্র পাঠ করা, একটি প্রার্থনা জীবন গড়ে তোলা এবং আপনার বিশ্বাস ভাগ করে নেওয়ার জন্য ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার পরবর্তী ক্লাস মিটিংয়ে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাদের উত্তর পড়তে হবে এবং একটি সময় উত্তর নিয়ে আলোচনা করার জন্য থাকা আবশ্যক।
(২) মার্ক ১২:২৯-৩১ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.