(১) পত্রগুলিতে উল্লিখিত পবিত্রতার মূল বিষয়টি বুঝতে পারবে।
(২) তাঁর লোকেদের খ্রিষ্টসদৃশ করে তুলতে ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আনন্দ করবে।
(৩) আমাদেরকে পবিত্র করে তোলার জন্য ঈশ্বর ইতিমধ্যেই কী করেছেন এবং পবিত্রতায় আমাদের বৃদ্ধির জন্য তিনি কী করে চলেছেন – এই দুটির মধ্যে একটি ভারসাম্য বুঝতে পারবে।
(৪) স্বেচ্ছাকৃত পাপের ওপর ক্রমাগত বিজয়ী একটি জীবনের সম্ভাবনার গুরুত্ব বুঝতে পারবে।
[1]যিশুর মৃত্যুর ৩০ বছর পর এটি একটি রবিবারের সকালের ঘটনা। একদল খ্রিষ্টবিশ্বাসী আরাধনা করার জন্য ফিলিপী শহরের একটি গোপন ঘরে একত্রিত হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই উল্লাসিত কারণ তারা তাদের প্রিয় পাস্টার পৌলের থেকে একটি চিঠি পেয়েছে।
লিডার পৌলের চিঠি পড়তে শুরু করেছেন। পৌলে এক আনন্দে উপচে পড়া হৃদয়ে চিঠিটি লিখেছেন। রোমীয় কারাগারে সত্ত্বেও তিনি খ্রিষ্টে আনন্দ করছেন। পৌল জানেন না তাকে মুক্তি দেওয়া হবে নাকি হত্যা করা হবে, তবুও তার হৃদয়ে শান্তি আছে। কেন? “কারণ আমার কাছে খ্রীষ্টই জীবন, আর মৃত্যু লাভজনক” (ফিলিপীয় ১:২১)।
তাদের আত্মিক পিতা হিসেবে, পৌল ফিলিপীয় খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে তাদের খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসে বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে উত্সাহিত করেছেন। তিনি এই বিশ্বাসীদের পবিত্র মানুষ হিসেবে সেইরকম পরিপক্ব দেখতে চান যেমন ঈশ্বর তাদের হতে বলেছেন। পৌল লিখেছেন, “যাই ঘটুক না কেন, তোমরা খ্রীষ্টের সুসমাচারের যোগ্য আচরণ করো” (ফিলিপীয় ১:২৭)। সুসমাচারের যোগ্য জীবন যাপন করো? এটি কীভাবে সম্ভব?
পৌলের উত্তর হল: খ্রিষ্টসদৃশ মানসিকতা নিয়ে জীবন যাপন করুন। “খ্রীষ্ট যীশুর যে মনোভাব ছিল, তোমাদেরও ঠিক তেমনই হওয়া উচিত” (ফিলিপীয় ২:৫)। ফিলিপীয়ের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের যদি খ্রিষ্টের মত মানসিকতা থাকে, তবে তারা খ্রিষ্টের মত হবে। পবিত্র জীবনের রহস্য হল খ্রিষ্টের মত মানসিকতা নিয়ে জীবন যাপন করা। পবিত্রতা হল খ্রিষ্টসদৃশতা।
প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে পবিত্র হতে বলা হয়েছে। ঈশ্বর জগতের ভিত্তির আগে খ্রিষ্টে আমাদের মনোনীত করেছেন যাতে আমরা তাঁর সামনে পবিত্র এবং নির্দোষ হতে পারি (ইফিষীয় ১:৪)। পরিত্রাণের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের চিরন্তন উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে পবিত্র মানুষে পরিণত করা। যিশুর সকল অনুসারীদের জন্য এটাই লক্ষ্য।
প্রথম শতকের কোনো ইহুদি খ্রিষ্টবিশ্বাসী এটা পড়ে অবাক হয়নি যে খ্রিস্টবিশ্বাসীদের পবিত্র হতে বলা হয়েছে। ঈশ্বর লেবীয়পুস্তকে পবিত্রতার আদেশ দিয়েছিলেন (লেবীয়পুস্তক ১৯:২, লেবীয়পুস্তক ২০:৭)। ইহুদিখ্রিষ্টবিশ্বাসিরাজানত যে ঈশ্বর চান তাঁর লোকেরা পবিত্র হোক।
তবে, পরজাতিরা পেগান দেবতাদের আরাধনা করত যারা পবিত্র ছিল না। পবিত্রতার বার্তা পরজাতিদের কাছে অজানা ছিল। পিতর পরজাতি খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে লিখেছিলেন যারা সম্প্রতি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিরর্থক পথ থেকে মুক্তি পেয়েছিল (১ পিতর ১:১৮)। পেগান ধর্মে বিশ্বাসী এই সমস্ত লোকেদের সত্যিকারের ধার্মিকতার কোনো ধারণাই ছিল না, কিন্তু পিতর তাদের একটি পবিত্র জীবনের জন্য আহ্বান করেছিলেন।
প্রেরিতেরা ধর্মান্তরিত পরজাতিদের শিখিয়েছিলেন কীভাবে পবিত্র জীবন যাপন করতে হয়। তাঁরা এই বার্তাটি ইতিবাচকভাবে বুঝিয়েছিলেন: “এটাই যা তোমাদের আবশ্যিকভাবে করতে হবে।” তাঁরা এই বার্তাটি নেতিবাচকভাবে বুঝিয়েছিলেন: “এটাই যা তোমাদের কখনোই করা উচিত নয়।”
চল্লিশ বার এই পত্রগুলি বিশ্বাসীদেরকে “সাধু” হিসেবে উল্লেখ করেছে যার আক্ষরিক অর্থ হল “পবিত্র ব্যক্তি”। একজন সাধু হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ঠিক সেইরকম জীবনযাপন করছেন যেভাবে ঈশ্বর তাঁর লোকেদেরকে বাঁচতে বলেছেন। প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে পবিত্র হতে বলা হয়েছে; প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে সাধু হতে বলা হয়েছে।
প্রেরিতরা বিশ্বাসীদেরকে পবিত্রতা অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন
পৌল করিন্থীয় বিশ্বাসীদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে তারা জীবন্ত ঈশ্বরের মন্দির (২ করিন্থীয় ৬:১৬)। মন্দির ছিল মূলত আরাধনার জন্য একটি পবিত্র স্থান। কারণ আমরা ঈশ্বরের মন্দির, “যা কিছু আমাদের শরীর ও আত্মাকে কলুষিত করে, এসো আমরা সেসব থেকে নিজেদের শুচিশুদ্ধ করি এবং ঈশ্বরের প্রতি সম্ভ্রমবশত পবিত্রতা সিদ্ধ করি” (২ করিন্থীয় ৭:১)।
ঈশ্বর তাঁর লোকেদের তাদের অতীত জীবনধারার পুরনো এবং পাপী সত্তাকে পরিত্যাগ করে নতুন সত্তা পরিধান করতে বলেছেন (ইফিষীয় ৪:২২-২৪)। পৌল লিখেছেন যে খ্রিষ্ট “আমাদের জন্য নিজেকে দান করেছেন, যেন সব দুষ্টতা থেকে আমাদের মুক্ত করেন এবং নিজের জন্য এক জাতিকে, যারা তাঁর একান্তই আপন, তাদের শুচিশুদ্ধ করেন, যেন তারা সৎকর্মে আগ্রহী হয়” (তীত ২:১৪)। ইব্রীয় পুস্তকের লেখক তার পাঠকদের সকলকের সাথে শান্তিতে বাস করার ও পবিত্রতার জন্য আকাঙ্খী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কারণ এটি ছাড়া কেউই প্রভুকে দেখতে পাবে না (ইব্রীয় ১২:১৪)। ঈশ্বরের লোকেদের পবিত্র হতে বলা হয়েছে।
প্রেরিতেরা প্রার্থনা করেছিলেন যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের পবিত্র করে তোলা হবে
পৌল প্রার্থনা করেছেন যেন ঈশ্বরের লোকেরা পবিত্র হয়ে ওঠে।
► ১ থিষলনীকীয় ১:২-১০ পড়ুন। থিষলনীকীয় পত্রের প্রথম দিকে পৌলের উল্লেখ করা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের বর্ণনা দিন।
থিষলনীকীয় মন্ডলীতে যারা পৌলের চিঠি পেয়েছিলেন তারা প্রকৃত খ্রিষ্টবিশ্বাসী ছিলেন। তারা তাদের বিশ্বাস, তাদের ভালোবাসা এবং তাদের আশার অবিচলতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তারা ছিলেন ঈশ্বরের প্রিয়তম। সুসমাচার তাদের কাছে শুধু কথায় নয়, শক্তিতে ও পবিত্র আত্মায় এবং পূর্ণ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এসেছে। তারা পবিত্র আত্মার আনন্দে অনেক নির্যাতনের মধ্যেও বাক্যকে গ্রহণ করেছিলেন। তারা মাকিদনিয়া এবং আখিয়াতে সমস্ত বিশ্বাসীদের জন্য একটি উদাহরণ ছিলেন৷ জীবিত ও সত্য ঈশ্বরের সেবা করার জন্য তাঁরা মূর্তিপুজো থেকে মন ফিরিয়েছিলেন।
নতুন জন্মের মুহূর্ত থেকেই ঈশ্বর তাদের পবিত্র করা শুরু করেছিলেন। তবুও, পৌল প্রার্থনা করেছেন:
শান্তির ঈশ্বর স্বয়ং তোমাদের সর্বতোভাবে পবিত্র করে তুলুন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমনকালে তোমাদের সমগ্র আত্মা, প্রাণ ও দেহ, অনিন্দনীয়রূপে রক্ষিত হোক (১ থিষলনীকীয় ৫:২৩)।
এই প্রার্থনাটি পৌলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আকুল আগ্রহে দিনরাত আমরা প্রার্থনা করেছেন যেন তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যেন তাদের বিশ্বাসের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন (১ থিষলনীকীয় ৩:১০)। এই লোকেরা প্রকৃত খ্রিষ্টবিশ্বাসী ছিল; কিন্তু পৌল জানতেন যে তাদের মধ্যবর্তী পবিত্রতার উন্নতিসাধন প্রয়োজন। তার মানে এই নয় যে তাদের কোনো খুঁত ছিল; পৌল ইতিমধ্যেই তাদের খ্রিষ্টীয় অভিজ্ঞতার জন্য তাদের প্রশংসা করেছিলেন।
তাদের খ্রিষ্টীয় অভিজ্ঞতায় কোনো ত্রুটি ছিল না, কিন্তু পৌল জানতেন যে তাদের আরও বৃদ্ধি প্রয়োজন। তাদের পবিত্র করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যেন ঈশ্বর তাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করেন। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে ঈশ্বর তাদের সবদিক থেকে পবিত্র করবেন। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে ঈশ্বর তাদের আত্মা, মন এবং দেহকে শুদ্ধ করবেন।
পত্রগুলি প্রতিশ্রুতি দেয় যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা পবিত্র হতে পারে
যখন পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যে ইফিষীয়রা যেন ঈশ্বরের পূর্ণতায় পরিপূর্ণ হয়, তখন তিনি নিশ্চিত ছিলেন ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনার উত্তর দেবেন কারণ তিনি এমন একজনের কাছে প্রার্থনা করেছেন “যিনি আমাদের অন্তরে তাঁর সক্রিয় ক্ষমতা অনুসারে আমাদের সকল চাহিদা পূর্ণ করতে অথবা কল্পনারও অতীত কাজ করতে সমর্থ…” (ইফিষীয় ৩:২০)। কিছু শারীরিক বা আর্থিক প্রয়োজনের জন্য প্রার্থনা করার সময় আমরা প্রায়শই এই পদটি উদ্ধৃত করি, কিন্তু এই পদটি আসলে বাইবেলে উল্লিখিত সর্বোচ্চ আত্মিক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেওয়া হয়েছিল: ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতায় পূর্ণ হওয়া। একটি পবিত্র হৃদয়ের জন্য ঈশ্বরের আহ্বান কোনো কঠিন বা অসম্ভব আদেশ নয়। ঈশ্বরের আহ্বান প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য উপলব্ধ।
যখন পৌল থিষলনীকীয়ের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চিত ছিলেন ঈশ্বর তার প্রার্থনার উত্তর দেবেন। “যিনি তোমাদের আহ্বান করেন, তিনি বিশ্বস্ত, তিনিই এই কাজ করবেন” – এই প্রতিজ্ঞাটির সাথে পৌল প্রার্থনা করেছিলেন, “শান্তির ঈশ্বর স্বয়ং তোমাদের সর্বতোভাবে পবিত্র করে তুলুন” (১ থিষলনীকীয় ৫:২৩-২৪)। পত্রগুলি প্রতিশ্রুতি দেয় যে আমরা পবিত্র হতে পারি।
পবিত্রতা হল খ্রিষ্টসাদৃশ্যতা
পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর বিধান এবং ভাববাদীদের মাধ্যমে একটি পবিত্র হৃদয় এবং পবিত্র হাতের বার্তা প্রকাশ করেছিলেন। যিশুখ্রিষ্টের জীবনের মধ্যে দিয়ে, ঈশ্বর নিখুঁত প্রেমের একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। প্রেরিত অধ্যায়ে, প্রথম শতকের খ্রিস্টবিশ্বাসীরা দেখিয়েছিল যে সাধারণ বিশ্বাসীদের পক্ষে পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে পবিত্র জীবনযাপন করা সম্ভব। সুসমাচার পত্রগুলিতে পবিত্রতার বার্তা বিশ্বাসীর দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা হয়েছে।
পবিত্রতা হল একটি খ্রিষ্টসাদৃশ্য হৃদয় এবং মানসিকতা
পত্রগুলি শেখায় যে পবিত্রতা হল খ্রিষ্টসাদৃশ্যতা। বিশ্বাসীদেরকে খ্রিষ্টের মত হতে হবে। পবিত্র হওয়ার আসলে বাহ্যিক আচরণের চেয়েও বড় বিষয়; পবিত্রতা হৃদয় থেকে শুরু হয়। পবিত্র হওয়ার অর্থ হল আমাদের হৃদয়ে এবং মানসিকতায় খ্রিষ্টের মত হওয়া।
পৌল বলেননি, “তোমাদের খ্রিস্টের মত অভিনয় করা উচিত।” পরিবর্তে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “তোমাদের যিশু খ্রিস্টের মতই হওয়া উচিত।” বাহ্যিকভাবে খ্রিস্টকে অনুকরণ করাই যথেষ্ট নয়; আমাদেরকে অন্তর থেকেও তাঁর মত হতে হবে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যই হল তাঁর লোকেদের খ্রিস্টের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত করে তোলা। “কারণ ঈশ্বর যাদের পূর্ব থেকে জানতেন, তিনি তাদের তাঁর পুত্রের প্রতিমূর্তির সাদৃশ্য দান করবেন বলে নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন” (রোমীয় ৮:২৯)। ঈশ্বরের শাশ্বত উদ্দেশ্য হল আমাকে খ্রিস্টের প্রতিমূর্তিতে পরিণত করা।এটাই পবিত্র হওয়ার অর্থ।
করিন্থীয় মন্ডলীকে লেখা পৌলের পত্রে এই ধারণাটির সবচেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণ পাওয়া যায়। এই মন্ডলীটি নানারকম সমস্যায় পরিপূর্ণ ছিল, তবুও পৌল তাদের সাধু বলে সম্বোধন করেছিলেন এবং তাদের একটি পবিত্র জীবনের জন্য আহ্বান করেছিলেন। কীভাবে এই অপরিণত বিশ্বাসীদের দল, তাদের পেগান বিশ্বাসের অতীত কাটিয়ে ওঠার সংগ্রাম করে, পবিত্র হওয়ার আশা করতে পারে? পৌল উত্তর দিয়েছেন, “যিনি পাপ জানতেন না, ঈশ্বর তাঁকে আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করলেন, যেন আমরা তাঁর দ্বারা ঈশ্বরের ধার্মিকতাস্বরূপ হতে পারি।” (২ করিন্থীয় ৫:২১)।
খ্রিষ্ট আমাদের জন্য পাপস্বরূপ হয়েছিলেন, যেন আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার হয়ে উঠতে পারি। পুরাতন নিয়মে পাপের বলিদানের ঈশ্বরে বিশ্বাসী সকলের পাপ ধুয়ে দিত। আজকে, খ্রিষ্টের রক্ত তাদের পাপ ধুয়ে দেয় যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে। কিন্তু পৌল এই আচ্ছাদিত করা ধুয়ে দেওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আর কেবল আচ্ছাদিত নই; আমরা রূপান্তরিত। যেহেতু আমরা ঈশ্বরের সাথে পুনর্মিলিত হয়েছি, ফলত আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার হয়ে উঠেছি। পৌল লিখেছেন:
অতএব, কেউ যদি খ্রীষ্টে থাকে, সে এক নতুন সৃষ্টি; পুরোনো বিষয় সব অতীত হয়েছে, দেখো সব নতুন হয়ে উঠেছে। এসবই ঈশ্বর থেকে হয়েছে, যিনি খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাঁর নিজের সঙ্গে আমাদের পুনর্মিলিত করেছেন (২ করিন্থীয় ৫:১৭-১৮)।
ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আমাদের ক্রমাগত পাপকে ঢাকার জন্য খ্রিষ্ট মৃত্যুবরণ করেছিলেন তা নয়। খ্রিষ্টের মাধ্যমে আমরা এক নতুন সৃষ্টি। আমরা আর উগ্র নই; আমরা হলাম সেই নতুন সৃষ্টি যারা এক পবিত্র ঈশ্বরের সাথে পুনর্মিলিত হয়েছি।
এই রূপান্তর কেবল বাহ্যিক আচরণের বিষয় নয়, এটি আরো গভীর বিষয়। পৌল থিষলনীয়দের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন।:
শান্তির ঈশ্বর স্বয়ং তোমাদের সর্বতোভাবে পবিত্র করে তুলুন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমনকালে তোমাদের সমগ্র আত্মা, প্রাণ ও দেহ, অনিন্দনীয়রূপে রক্ষিত হোক। (১ থিষলনীকীয় ৫:২৩)।
“সর্বোতভাবে” কথাটির মধ্যে দিয়ে তাদের চরিত্রের সবদিক থেকে পবিত্র করে তোলার ধারণাটি প্রকাশিত হয়েছে। এই পদটিকে “সবকিছুতে পবিত্র করে তুলুন” – এইভাবেও অনুবাদ করা যায়। পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যেন এই বিশ্বাসীরা তাদের সম্পূর্ণ আত্মা, মন এবং দেহে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, “যিনি তোমাদের আহ্বান করেন, তিনি বিশ্বস্ত, তিনিই এই কাজ করবেন” (১ থিষলনীকীয় ৫:২৪)।
এই রূপান্তর জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। ফিলিপীয় পত্রে পৌল একটি নতুন বিষয়ে চিন্তা করার সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি এটিকে “খ্রিষ্টের মন” বলেছেন। পৌল পিতার ইচ্ছার কাছে যিশুর স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণকে বর্ণনা করেছেন। মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশীয় মৃত্যুর সামনেও খ্রিষ্ট নিজেকে নম্র রেখেছিলেন (ফিলিপীয় ২:৮)।
পৌল কখনোই বলেননি, “খ্রিষ্টের নম্রতা জীবনযাপনের একটি ভালো উপায় হবে, কিন্তু অবশ্যই আপনার এবং আমার পক্ষে এই মনোভাব নিয়ে চলা অসম্ভব।” বরং তিনি বলেছেন, “খ্রীষ্ট যীশুর যে মনোভাব ছিল, তোমাদেরও ঠিক তেমনই হওয়া উচিত” (ফিলিপীয় ২:৫)। এই মনটি আপনার; আপনি চাইলেই খ্রিষ্টের মত হতে পারেন!
আমাদের কাছে প্রেমময় বশ্যতার সেই একই মনোভাব থাকতে পারে যা পিতার ইচ্ছার প্রতি যিশুর বশ্যতাকে পরিচালিত করেছিল। আমরা খ্রিষ্টের মানসিকতার অধিকারী হতে পারি। আমরা যিশুখ্রিষ্টের দৃষ্টি দিয়ে জীবনকে দেখতে পারি। এটি কোনো ভালো বোধের মাধ্যমে নয়, বরং পরিবর্তিত হৃদয়ের মাধ্যমে ঘটে। আমাদেরকে কেবল কাজকর্মে নয়, একইসাথে হৃদয় থেকেও খ্রিষ্টের মত হতে বলা হয়েছে। আমাদের খ্রিষ্টের মতো মানসিকতার অধিকারী হতে বলা হয়েছে।
পবিত্রতা হল খ্রিষ্টসাদৃশ্য আচরণ
কিছু লোক উত্তর দিতে পারে, “আমার হৃদয় খ্রিষ্টের মত, কিন্তু আমার কাজ নয়। অভ্যন্তরীণভাবে, আমার উদ্দেশ্য ভালো কিন্তু বাহ্যিকভাবে আমি খ্রিষ্টের মত জীবনযাপন করি না।” প্রেরিতরা আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রকৃতির মধ্যে এই বিভাজন মেনে নিতে পারেননি। আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রকৃতি আমাদের বাহ্যিক কর্মে প্রকাশিত হবে। পবিত্র হওয়া মানে আমাদের আচরণে খ্রিষ্টের মত হওয়া।
সুসমাচারের সব পত্রেই এই বার্তাটি দেখা গেছে। পৌল বলেছেন যে খ্রিষ্ট নিজেকে মন্ডলীর জন্য উৎসর্গ করেছেন যেন তিনি তাকে পবিত্র করতে পারেন। খ্রিষ্ট তাঁর বধূকে পবিত্র করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি এক বধূকে সব রকম কলঙ্ক, বিকৃতি এবং কলুষতা থেকে মুক্ত করে প্রস্তুত করে তুলছেন যেন সে পবিত্র ও অনিন্দনীয় হতে পারে (ইফিষীয় ৫:২৬-২৭)।
আপনি কি এমন একজন স্ত্রীয়ের কথা কল্পনা করতে পারেন যিনি তার স্বামীকে বলেছেন, “আমি তোমার কাছে শারীরিক দিকে থেকে বিশ্বস্ত থাকব না, কিন্তু আমার হৃদয় পবিত্র থাকবে”? অবশ্যই না! এমনকি পৌলও কল্পনা করতে পারেন না যে খ্রিষ্টের বধূ বলছেন, “আমার হৃদয় পবিত্র, কিন্তু আমার আচরণ অপবিত্র থাকবে।” মন্ডলীকে এক কলঙ্কহীন বা দাগহীন বধূ হিসেবে দেখা হয়েছে।
পৌল থিষলনীকীয়ের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে চিঠি লিখেছিলেন। এই মন্ডলীটিতে ইহুদি বিশ্বাসী এবং থিষলনীকীয়ের পেগান ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত দুই ধরণের লোকই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইহুদি বিশ্বাসীরা পুরাতন নিয়মের পবিত্র আচরণের আদেশ জানত, কিন্তু পেগান ধর্মের এমন একটি সমাজে বাস করত যেখানে যৌন অনৈতিকতা একটি স্বাভাবিক বিষয় ছিল।
পৌল নতুন বিশ্বাসীদের শিখিয়েছিলেন যে একটি পবিত্র জীবন যাপন করার অর্থ কী। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে ঈশ্বর যেন আমাদের ঈশ্বর ও পিতার সামনে তাদের হৃদয়কে পবিত্রতায় নিষ্কলঙ্ক করেন (১ থিষলনীকীয় ৩:১৩)। এই নতুন বিশ্বাসীদেরকে তাদের অন্তরে পবিত্র হতে হবে এবং তাদের আচরণেও পবিত্র হতে হবে। “ফলত, ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যে, তোমরা পবিত্র হও।” পবিত্রতা কেবল তাদের অন্তরকে প্রভাবিত করে তা নয়; তাদের আচরণও নির্ধারণ করে (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৬):
“তোমরা পবিত্র হও, বিবাহ-বহির্ভূত যৌনাচার থেকে দূরে থাকো”
“যেন তোমরা প্রত্যেকে এই শিক্ষা লাভ করো যে শরীরকে সংযত রেখে কীভাবে পবিত্র ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে হয়”
“আর এই ব্যাপারে কেউ যেন তার ভাইয়ের (বা, বোনের) প্রতি কোনো অন্যায় আচরণ বা প্রতারণা না করে”
পবিত্র হওয়ার অর্থ হল একটি খ্রিষ্টসদৃশ হৃদয়ের অধিকারী হওয়া যা খ্রিষ্টসদৃশ আচরণকে অনুপ্রাণিত করে। পবিত্র হওয়া মানে খ্রিষ্টের মত হওয়া।
পবিত্রতা হল খ্রিষ্টসদৃশ প্রেম
সুসমাচার পুস্তকগুলি দেখায় যে পবিত্রতা হল ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা এবং আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা। পৌল খ্রিষ্টের মতো আচরণ এবং খ্রিষ্টসদৃশ প্রেমকে সংযুক্ত করেছেন। তিনি ইফিষীয় খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান হিসেবে তাঁর অনুকরণকারী হওয়ার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তারা কীভাবে ঈশ্বরকে অনুকরণ করবে? খ্রীষ্টের মত প্রেমে জীবন যাপন করার মাধ্যমে। “এবং প্রেমে জীবনযাপন করো, যেমন খ্রীষ্ট আমাদের ভালোবেসেছেন এবং নিজেকে সুরভিত নৈবেদ্য ও বলিরূপে ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন” (ইফিষীয় ৫:১-২)।
যখন খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসে, তখন তারা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে প্রকাশ করে। পবিত্র হওয়া মানে খ্রিষ্টের মত প্রেম করা। রোমীয় ১৪ অধ্যায়ে পৌল এই খ্রিষ্টসদৃশ প্রেমের একটি বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি একজন দুর্বল ভাইয়ের জন্য বিশ্বাসীদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার স্বাধীনতা উৎসর্গ করার কথা বলেছেন। কেন? “তুমি যা খাও, সেই কারণে তোমার ভাই যদি অস্বস্তি বোধ করে, তাহলে তুমি আর প্রেমপূর্ণ আচরণ করছ না।” (রোমীয় ১৪:১৫)। আমার স্বাধীনতা যদি কোন ভাইকে সমস্যায় ফেলে, তাহলে আমি প্রেমে হাঁটছি না। খ্রিষ্ট আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কারণেই তাঁর অধিকার সমর্পণ করেছিলেন; অন্যদেরকে ভালোবাসার জন্যই আমাদের অধিকার সমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এটিই হল খ্রিষ্টসদৃশ প্রেম।
খ্রিষ্টসদৃশ প্রেম কী সেই বিষয়ে পৌলের সবচেয়ে বিখ্যাত বর্ণনাটি রয়েছে ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে। বিভাজন, স্বেচ্ছাচারী আচরণ, ঈর্ষা এবং অহংকারের চিহ্নস্বরূপ একটি মন্ডলীকে, পৌল লিখেছিলেন:
প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম সদয়। তা ঈর্ষা করে না, আত্মঅহংকার করে না, গর্বিত হয় না। তা রূঢ় আচরণ করে না, স্বার্থ অন্বেষণ করে না, সহজে ক্রুদ্ধ হয় না, অন্যায় আচরণ মনে রাখে না। প্রেম মন্দ কিছুতে আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যে উল্লসিত হয়(১ করিন্থীয় ১৩:৪-৬)।
১ যোহনে, প্রচারক খ্রিষ্টসদৃশ প্রেমের বাস্তবিক দিকটি তুলে ধরেছেন। ১ যোহন দেখায় যে খ্রিষ্টসদৃশ প্রেম ঠিক কেমন হয়।
প্রেমের জন্য আনুগত্য প্রয়োজন। যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা তাঁকে মেনে চলি (১ যোহন ২:৫; ১ যোহন ৫:৩)। আমরা কখনোই প্রেম এবং আনুগত্যকে আলাদা করতে পারি না।
প্রেমের জন্য একাত্মতা প্রয়োজন। যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, আমরা জগতকে ভালোবাসব না। “কেউ যদি জগৎকে ভালোবাসে, তাহলে পিতার প্রেম তার অন্তরে নেই” (১ যোহন ২:১৫)। আমরা একইসাথে ঈশ্বরকে এবং সেই জগতকে ভালোবাসতে পারি না যা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যায়। একজন পবিত্র ব্যক্তি একটি অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসেন।
প্রেমের জন্য সম্পর্ক প্রয়োজন। যদি আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, আমরা অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের ভালোবাসব। “ঈশ্বরকে যে প্রেম করে, সে তার ভাইবোনকেও প্রেম করবে।” পরিবর্তে, “কেউ যদি বলে, “আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি,” অথচ তার ভাইবোনকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী” (১ যোহন ৪:২০-২১)। যোহন শেখান যে আপনার খ্রিস্টীয় ভাইকে ঘৃণা করার পাশাপাশি ঈশ্বরকে ভালোবাসা অসম্ভব।
এই খ্রিষ্টসদৃশ প্রেমের ফলাফল কী? ঈশ্বরের কাছে আত্মবিশ্বাস। “কিন্তু আমরা যদি পরস্পরকে প্রেম করি, ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বাস করেন এবং আমাদের মধ্যে তাঁর প্রেম পূর্ণতা লাভ করে” (১ যোহন ৪:১২)। এই নিখুঁত প্রেম আমাদের বিচারের দিনের জন্য আত্মবিশ্বাস প্রদান করে এবং শাস্তির ভয় দূর করে। (১ যোহন ৪:১৭-১৮)।
কীভাবে আমরা এই নিখুঁত প্রেম যাপন করব? “আমরা নির্ভয়ে থাকতে পারি, কারণ এই জগতে আমরা তাঁরই মতো রয়েছি” (১ যোহন ৪:১৭)। কেবল আমাদের মধ্যে বসবাসকারী খ্রিষ্টের মাধ্যমেই আমরা খ্রিষ্টসদৃশ প্রেম প্রকাশ করতে পারি।
পবিত্রতার জীবন: আপনি পবিত্র; পবিত্রতা অনুসরণ করুন
জোনাথন একজন পবিত্র ব্যক্তি হতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, পবিত্রতা সম্বন্ধে জোনাথনের উপলব্ধি শাস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি আবেগীয় অনুভূতি-নির্ভর ছিল। ফলস্বরূপ, জোনাথন এক চরম শিক্ষা থেকে অন্য বিপজ্জনক শিক্ষায় চলে গিয়েছিলেন।
একটা সময়ে জোনাথন ঘন ঘন উপবাস করতেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রার্থনা করতেন এবং নিজেকে পবিত্রতায় শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টাও করেছিলেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে আমরা আমাদের আত্ম-শৃঙ্খলার মাধ্যমেই পবিত্র হয়ে উঠি।
জোনাথন খুব দ্রুত নিরুৎসাহিত হয়েছিলেন এবং এই প্রচেষ্টা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি আত্মিক অনুশাসনে উদাসীন হয়ে পড়েন এবং পাপের কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেন। যখন কেউ তাকে পাপের ক্ষেত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত, তখন জোনাথন উত্তর দিতেন, “আমি অনুগ্রহে বেঁচে আছি এবং শৃঙ্খলার প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর আমাকে তখনই পবিত্র করবেন যখন তিনি তা করার জন্য প্রস্তুত।”
আরেকবার, জোনাথন এক নাটকীয় আত্মিক উপহারের জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন যে পবিত্রতা হল আত্মিক উপহার এবং বাহ্যিক শক্তি সম্পর্কিত কোনো বিষয়।
জোনাথনের পবিত্রতার অনুসন্ধান মনোযোগ দিয়ে শাস্ত্র পড়ার চেয়ে আবেগের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে পবিত্রতা যাপন করা যায় তা বোঝার জন্য তিনি ভালো করে বাইবেল পড়েননি।
পত্রগুলি পবিত্র জীবনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের শিক্ষা দেয়। যদি আমরা এই নীতিগুলি ভুলে যাই, তাহলে আমরা আমাদের পবিত্রতা সম্পর্কীয় জ্ঞানে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ব। ঈশ্বর আমাদেরকে যে পবিত্র জীবনে আহ্বান করেছেন তা কীভাবে যাপন করতে হয়, সেটি বোঝানোর জন্যই প্রেরিতরা পত্রগুলি লিখেছিলেন।
আপনাকে পবিত্র করা হয়েছে; আপনাকে পবিত্র করা হচ্ছে
যখন পৌল সাধুদের চিঠি লিখেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “তোমরা পবিত্র।” একজন সাধু ইতিমধ্যেই পবিত্র, কিন্তু পৌল এই সাধুদের লিখেছিলেন, “তোমাদের অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।” আপনি পবিত্র; আপনাকে আবশ্যিকভাবে পবিত্রতায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে হবে।
সুসমাচার পত্রগুলিতে এই ভারসাম্যটি বারবার দেখা গেছে। বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা ইতিমধ্যেই পবিত্র, তবুও যেহেতু আমরা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যে পথ চলি, সেহেতু আমরা পবিত্রতায় বৃদ্ধি পেতে থাকি।
ইব্রীয় পুস্তকের লেখক দেখিয়েছেন যে আমরা খ্রিষ্টের মৃত্যু দ্বারা পবিত্র হয়েছি। “যীশু খ্রীষ্টের দেহ চিরকালের জন্য একবারই উৎসর্গ করা হয়েছে বলে আমরা পবিত্র হয়েছি” (ইব্রীয় ১০:১০)। খ্রিষ্টের মৃত্যু দ্বারা আমরা পরিশুদ্ধ হয়েছি।
লেখক আরো বলেছেন, “কারণ তাঁর একবার মাত্র বলিদানের জন্য যাদের পবিত্র করা হচ্ছে, তাদের তিনি চিরকালের জন্য পূর্ণতা দান করেন” (ইব্রীয় ১০:১৪)। এই বাক্যটিতে পবিত্রতার সাথে সমার্থক দুটি শব্দ আছে। তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে, খ্রিষ্ট তাদের পূর্ণতা (teleios) দান করেছেন যাদের পবিত্র করা হচ্ছে (hagiazo)। এই পদটিতে বলা হয়েছে যে:
আমাদের পবিত্র করা হয়েছে: “তিনি চিরকালের জন্য পূর্ণতা দান করেন…”
যিশু মারা গেছিলেন যাতে আমরা পাপের কবল থেকে মুক্ত হতে পারি। যিশু তাঁর রক্তের মাধ্যমে প্রজাদের পবিত্র করার জন্য নগরদ্বারের বাইরে মৃত্যুবরণ করেছেন (ইব্রীয় ১৩:১২)। তাঁর লোকেদের পবিত্র করতে চাওয়ার ঈশ্বরের যে উদ্দেশ্য তা যিশুর মৃত্যুর মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছিল। আমাদেরকে নিখুঁত করা হয়েছে।
আমাদের পবিত্র করা হচ্ছে: “যাদের পবিত্র করা হচ্ছে”
খ্রিষ্টের মৃত্যু সর্বকালের জন্য ঈশ্বরের পবিত্রীকরণের উদ্দেশ্যকে সম্পন্ন করেছিল, কিন্তু পবিত্রতায় আমাদের যে বৃদ্ধি, তা আমাদের সমগ্র জীবন জুড়ে চলতে থাকে। এটি একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। খ্রিষ্টের মৃত্যুর মাধ্যমে, আমরা পবিত্র; খ্রিষ্টের মৃত্যুর মাধ্যমে, আমরা পবিত্র হয়ে উঠছি।
পৌলের নিজের সাক্ষ্য এই নীতিটি তুলে ধরে। ফিলিপীয় ৩ অধ্যায়ে পৌল লিখেছেন যে তিনি এখনো সিদ্ধিলাভ করেননি, কিন্তু কয়েকটি পদ পরে, তিনি নিজেকে সেই ব্যক্তি হিসেবে নির্দেশ করেছেন যে ইতিমধ্যেই নিখুঁত (“আমাদের মধ্যে যারা পরিপক্ব”)। নিম্নলিখিত পদে মোটা হরফে লেখা দুটি শব্দই teleios থেকে এসেছে। দুটি শব্দকেই “নিখুঁত” অর্থে অনুবাদ করা যেতে পারে।
আমি যে ইতিমধ্যেই এসব পেয়েছি, বা সিদ্ধিলাভ করেছি (teleios), তা নয়, কিন্তু যে জন্য খ্রীষ্ট যীশুর দ্বারা আমি ধৃত হয়েছি, আমিও তা ধারণ করার জন্য প্রাণপণ ছুটে চলেছি... আমাদের মধ্যে যারা পরিপক্ব (teleios), তাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গি যেন এরকমই হয়। যদি কোনো ক্ষেত্রে তোমরা ভিন্নমত পোষণ করো, ঈশ্বর সে বিষয়ও তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট করে তুলবেন (ফিলিপীয় ৩:১২-১৫)।
পৌল বলেছেন, “আমি এখনো নিখুঁত হইনি।” তিনি আরো বলেছেন, “আমাদের মধ্যে যারা পরিপক্ক।” পৌল এখনো লক্ষ্যে পৌঁছাননি; তিনি পবিত্রতায় বেড়ে উঠছেন। সেই অর্থে, তিনি এখনো নিখুঁত নন। কিন্তু, পৌল লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দৌড় শেষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অর্থে, পৌল ইতিমধ্যে নিখুঁত। পৌল একই অনুচ্ছেদে “আমি এখনো নিখুঁত নই” এবং “আমি নিখুঁত” বলতে পারেন।
নিখুঁত হওয়ার অর্থ এই নয় যে আমরা একগুচ্ছ কাজের সিঁড়ি বেয়ে উঠেছি যা আমাদের নিখুঁত করে তোলে। পরিবর্তে, এর অর্থ হল আমরা আমাদের জীবনে ঈশ্বরের অনুগ্রহের কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করেছি। এটি এতটাই তাৎক্ষণিক যে এক মুহূর্তের মধ্যে ঈশ্বর আমাদের হৃদয়কে তাঁর ইচ্ছামতো পুনর্নির্মাণ করেন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেটিতে তাঁর দিকে আমাদের এগিয়ে চলা আমাদের বাকি জীবন জুড়ে অব্যাহত থাকবে।[1]
একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের কথা ভাবুন[2] যে একটা কিক করে বলটাকে গোলে ঢুকিয়ে দিয়েছে; এটা একটা নিখুঁত শট। বলটা যখন গোলে ঢোকে, শট যে কেবল তখনই নিখুঁত হয় তা নয়,যখন এটা বাতাসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন শট ইতিমধ্যেই নিখুঁত; এটি গোলের দিকে এগোচ্ছে মাত্র। খেলোয়াড় যখন বলে কিক-টা করেছেন সেই মুহূর্তটি থেকেই শটটি নিখুঁত।[3]
একইভাবে, চূড়ান্ত উদ্দেশ্যের দিকে পৌল এগিয়ে গেছেন। তিনি তার গতিপথ ঠিক করে নিয়েছিলেন এবং অবিভক্ত হৃদয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তখনও লক্ষ্যে পৌঁছাননি, তবে তিনি লক্ষ্যের পথে ছিলেন। তিনি তখনও নিখুঁত ছিলেন না; কিন্তু তিনি ইতিমধ্যেই হয়ে চলেছেন।
বিশ্বাসী হিসেবে আমরা পবিত্র সাধু যারা খ্রিষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের দ্বারা গৃহিত হয়েছি, কিন্তু আমাদেরকে সেই জীবন্ত বলি হিসেবে আত্মসমর্পণ করার জন্য বলা হয়েছে যা প্রতিদিনের আনুগত্য এবং আত্মসমর্পণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (রোমীয় ১২:১)। আমাদেরকে ইতিমধ্যে পবিত্র করা হয়েছে; আমাদের পবিত্র করা হচ্ছে।
আপনি সাধুগণের মধ্যে একজন; আপনাকে অবশ্যই সাধুদের মত জীবন যাপন করতে হবে
পৌল করিন্থে বসবাসকারী সাধুদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছিলেন। ১ করিন্থীয় সেইসব পবিত্র লোকেদের নির্দেশ করা হয়েছে “খ্রীষ্ট যীশুতে যাদের শুচিশুদ্ধ ও পবিত্ররূপে আহ্বান করা হয়েছে” (১ করিন্থীয় ১:২)। ২ করিন্থীয় “করিন্থে অবস্থিত ঈশ্বরের মণ্ডলী এবং সমস্ত আখায়া প্রদেশের যত পবিত্রগণ আছেন, তাদের সবার প্রতি” উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে (২ করিন্থীয় ১:১)। তারা সাধু ছিল – কিন্তু সাধুদের মত জীবন যাপন করার জন্য তাদের অনেককিছুই শেখার বাকি ছিল।
খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা দুভাবে এই সত্যটিকে ভুল বোঝে। প্রথমত, কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে, “আমি সাধু বলা হয় কারণ ঈশ্বর আমার পাপের পরিবর্তে খ্রিষ্টের ধার্মিকতাকে দেখেন। আমার পবিত্রতা একটি ‘বৈধ অলীকতা।’ এই জগতে আমি কোনোদিনই পবিত্র হব না, কিন্তু ঈশ্বর যেকোনো উপায়েই আমাকে পবিত্র বলেছেন।” রোমীয় ৬ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই উত্তরটি পৌলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র মানুষকে আবশ্যিকভাবে পবিত্র জীবনযাপন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা বলে, “আমি একজন সাধু। আমি কখনোই ঈশ্বরের যথার্থতার পরম মান থেকে নেমে যাই না। আমি কখনোই অনুতপ্ত হই না কারণ আমি কখনোই ভুল করি না। আমি একজন সাধু!” পৌল এই ত্রুটিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ঠিক যেমনভাবে তিনি প্রথম ত্রুটিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। করিন্থের সাধুদের পবিত্র জীবনযাপন করতে শেখানোর জন্য পৌল চিঠি লিখেছিলেন। তাদের জ্ঞান এবং পরিপক্কতার অভাব রয়েছে, তাই পৌল এই সাধুদের শিখিয়েছেন কীভাবে সাধু হিসেবে জীবনযাপন করতে হয়। পবিত্র মানুষকে পবিত্র জীবনযাপন করতে হবে।
করিন্থ শহরটি এটির বাসিন্দাদের অসৎ কাজকর্মের জন্য কুখ্যাত ছিল। এই খারাপ শহরে বসবাসকারী বিশ্বাসীদের পৌল পবিত্র আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের বিবাহ-বহির্ভূত সংসর্গ এড়িয়ে চলতে হবে কারণ তাদের দেহ খ্রিষ্টের দেহের অংশ (১ করিন্থীয় ৬:১৫)। পৌল কিছু আচরণের তালিকা করেছেন যেগুলি ঈশ্বরের রাজ্যে নিষিদ্ধ:
তোমরা বিভ্রান্ত হোয়ো না। কারণ যারা বিবাহ-বহির্ভূত সংসর্গকারী, বা প্রতিমাপূজক, বা ব্যভিচারী, বা সমকামী, বা চোর বা লোভী বা মদ্যপ বা কুৎসা-রটনাকারী, বা পরধনগ্রাহী, তারা কেউই ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার লাভ করবে না (১ করিন্থীয় ৬:৯-১০)।
পাপের এই তালিকার পর পৌল উল্লেখ করেছেন, “আর তোমরাও কেউ কেউ সেইরকমই ছিলে।” পৌল এমন এক জাতির জন্য এটি লিখছেন যারা এই পাপগুলি করেছে। পৌল চান বিশ্বাসী হিসেবে তারা যেন তাদের পূর্ববর্তী জীবনধারা ত্যাগ করে। এই পাপময় অতীত নিয়ে, কীভাবে এই লোকেরা পবিত্রতার জীবন যাপন করতে পারে? পৌল এর উত্তর দিয়েছেন:
কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা ধৌত হয়েছ, শুচিশুদ্ধ হয়েছ ও নির্দোষ প্রতিপন্ন হয়েছ (১ করিন্থীয় ৬:১১)।
১ করিন্থীয় ৬:১১ পদের রূপান্তরের দ্বারা ১ করিন্থীয় ৬:৯-১০ পদে উল্লিখিত পাপগুলি মুছে দেওয়া হয়েছে। এই রূপান্তর কেবল একটি আইনি লেনদেন নয়; পৌল কোথাও এমন পরামর্শ দেননি যে, “তোমারা এই পাপগুলি করতে থাকবে, কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের খারাপ আচরণ বিবেচনা করবেন না, বরং তোমাদের ধার্মিক হিসেবেই দেখবেন।” করিন্থীয় খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের কখনোই তাদের অতীতের পাপে ফিরে যাওয়া উচিত নয়। পৌল বলেছেন, “তোমরা পবিত্র সাধুবর্গ; সেইমতোই আচরণ করো!” তাদের পরিশুদ্ধ করা হয়েছে, তাদের পবিত্র করা হয়েছে। তারা সাধু, তাদের আবশ্যিকভাবে সাধুদের মত জীবন যাপন করতে হবে।
যখন একজন যুবক সেনাবাহিনীতে যোগদান করে, তখন তাকে একটি ইউনিফর্ম দেওয়া হয় যা তাকে একজন সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত করে। একই সময়ে, তাকে একটি ম্যানুয়াল দেওয়া হয় যেটিতে সেনাবাহিনীর আচরণবিধি বিষয়ে লেখা থাকে। শুধু ইউনিফর্ম যথেষ্ট নয়; তাকে অবশ্যই আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।
ইউনিফর্ম পরার চেয়ে আচরণবিধি শিখতে বেশি সময় লাগে। নতুন সৈনিককে তার ইউনিফর্মের সাথে মানানসইভাবে জীবনযাপন করতে শিখতে হবে। তাকে সৈনিক হিসেবে পরিণত হতে হবে। অনেক সময় এই তরুণ সৈনিককে সামরিক নিয়মের কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। তার কাজকর্ম কি নিখুঁত? না। কিন্তু, একজন সৈনিক হিসেবে তার অঙ্গীকার কি সম্পূর্ণ? হ্যাঁ। সেনাবাহিনীতে প্রথম দিনে থেকেই সে একজন সৈনিক; কিন্তু সৈনিকের হিসেবে জীবনযাপন শেখার জন্য তার অনেকদিন লাগবে।
মনে করুন এক যুবক বলেছে, “আমি একজন সৈনিক হিসেবে পরিচিত হতে চাই, কিন্তু আমি আচরণবিধি মেনে চলতে চাই না।” সে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম কেনে, কিন্তু সে আচরণবিধি মেনে চলে না। সে কি সত্যিকারের সৈনিক? না। সে কেবল একজন সৈনিক হওয়ার ভান করে।
পত্রগুলি সেইসব বিশ্বাসীদের জন্য লেখা হয়েছে যারা খ্রিষ্টেকে পরিধান করেছে৷ এখন তারা পবিত্র জীবনযাপন করতে শিখছে। ইফিসীয় ৪-৬ পদে আমরা শিখি যে পারিবারিক সম্পর্ক, মন্ডলীর সম্পর্কে এবং ব্যবসায়িক নীতিতে একটি পবিত্র জীবন কেমন হয়। গালাতীয় ৫ অধ্যায়ে আমরা আত্মার সাথে ধাপে ধাপে বসবাসকারী জীবনের ফল শিখি। ১ পিতরে আমরা শিখি কিভাবে অত্যাচারের মুখে পবিত্র জীবন যাপন করতে হয়। আমরা যখন যাকোবের পত্র পড়ি, তখন আমরা শিখি যে কীভাবে একজন পবিত্র ব্যক্তি তার জিভকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
[4]পৌল কলসীয় বিশ্বাসীদের জন্য লিখেছিলেন, “কারণ তোমাদের মৃত্যু হয়েছে এবং এখন তোমাদের জীবন খ্রীষ্টের সঙ্গে ঈশ্বরে নিহিত আছে।” এই বিশ্বাসীরা পাপের কাছে মারা গেছে; তারা খ্রিষ্টে জীবিত। তারা আর পাপে বন্দী নয়; তারা পবিত্র। তবে পৌল আরো বলেছেন, “তাই তোমাদের সমস্ত পার্থিব প্রবৃত্তিকে নাশ করো” (কলসীয় ৩:৩, ৫)। আপনি পাপের কাছে মৃত; পাপকে মৃত্যুতে ফেলে দিন। আপনি সাধুগণের একজন; আপনাকে সাধুদের মতোই জীবন কাটাতে হবে।
অধ্যায়ের শুরুতেই এই নীতিটি বিবৃত করা আছে।
তাহলে, তোমরা যেহেতু খ্রীষ্টের সঙ্গে উত্থাপিত হয়েছ, তাই ঈশ্বরের ডানদিকে, যেখানে খ্রীষ্ট উপবিষ্ট আছেন, সেই স্বর্গীয় বিষয়সমূহে মনোনিবেশ করো। তোমরা পার্থিব বিষয়সমূহে নয়, স্বর্গীয় বিষয়ে মনোযোগী হও। (কলসীয় ৩:১-২)।
পৌল বলেছেন, “দিন-প্রতিদিন, তোমরা স্বর্গীয় বিষয়ে মনোনিবেশ করো, তোমরা ঐশ্বরিক বিষয়ে নিজেদের মনকে ক্রমাগত স্থির রাখো।” একটি পবিত্র জীবনের চাবিকাঠি হল নিজের মনকে ঐশ্বরিক বিষয়ে মনোযোগী করে তোলা। আপনাকে পবিত্র করা হয়েছে (“তোমরা যেহেতু খ্রীষ্টের সঙ্গে উত্থাপিত হয়েছ”), তাই পবিত্র হন (“স্বর্গীয় বিষয়ে মনোযোগী হও”)।
এই পবিত্র জীবনের ফলাফল কী? “তোমাদের জীবনস্বরূপ খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হবেন, তখন তোমরাও তাঁর সঙ্গে মহিমায় প্রকাশিত হবে” (কলসীয় ৩:৪)। একটি পবিত্র জীবন আপনাকে একজন পবিত্র ঈশ্বরের সাথে অনন্ত জীবন কাটানোর জন্য প্রস্তুত করে তোলে। হনোক ঈশ্বরের সাথে হাঁটতেন, পরে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান, কারণ ঈশ্বর তাঁকে তুলে নিয়েছিলনে (আদিপুস্তক ৫:২৪)। এই জগতে ঈশ্বরের সাথে একটি পবিত্র পথচলা হনোককে ঈশ্বরের সাথে অন্তনকালীন জীবনে প্রস্তুত করে তুলেছিল। এই এই জগতে ঈশ্বরের সাথে একটি পবিত্র পথচলা আমাদেরকে খ্রিষ্টের সাথে মহিমাময় হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
পত্রগুলি সাধুদের কাছে লেখা হয়েছিল। যিশু খ্রিষ্টের রক্তের মাধ্যমে আমরা সাধু হিসেবে গণ্য হয়েছি। আমরা পুরাতন মনুষ্যকে বাদ দিয়ে নতুন মনুষ্যকে পরিধান করেছি। এখন, আমরা প্রতিদিন শিখছি পবিত্র হওয়ার অর্থ কী। আমরা প্রতিদিন ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছি। আমাদের কাজ কি নিখুঁত? না। কিন্তু পবিত্র হওয়ার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার কি সম্পূর্ণ? হ্যাঁ। আমরা সাধু; আমরা সাধু হিসেবে জীবন যাপন করতে শিখছি।
ঈশ্বর আপনাকে পবিত্র করেছেন; আপনাকে অবশ্যই পবিত্রতার অনুসরণ করতে হবে
লেবীয়পুস্তকে ঈশ্বর বলেছেন, “তোমরা নিজেদের উৎসর্গ করো ও পবিত্র হও।” এটি একটি আদেশ ছিল যা লোকেদের অনুসরণ করতে হবে। পরবর্তী পদে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, “আমিই সদাপ্রভু, যিনি তোমাদের পবিত্র করেন।” (লেবীয় পুস্তক ২০:৭-৮)। এটি একটি প্রতিজ্ঞা ছিল যা ঈশ্বর সম্পন্ন করেছেন। পবিত্রতা বোঝার জন্য আমাদেরকে দুটি সত্যের ভারসাম্য করতে হবে:
১। পবিত্রতা হল ঈশ্বরের একটি উপহার; ঈশ্বর তাঁর লোকেদের পবিত্র করেন।
২। পবিত্রতা হল ঈশ্বরের একটি আদেশ; ঈশ্বর তাঁর লোকেদের পবিত্র অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন।
ফরিশীরা কেবল মনে রেখেছিল, “তোমাদের পবিত্রতার সাধনা কর।” তারা বিশ্বাস করত তারা তাদের নিজেদের ক্ষমতায় পবিত্র হতে পারবে। কিন্তু পত্রগুলি এর উত্তরে বলে, “ঈশ্বর তোমাদের পবিত্র করেছেন।”
প্রথম শতকের মন্ডলীর কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী একদম বিপরীত স্রোতে ভেসেছিল। তারা বিশ্বাস করত, “যদি ঈশ্বর আমাদের পবিত্র করতে চান, তিনি তা করবেন। আমাদের কিছু করার নেই।” কিন্তু পত্রগুলি এর উত্তরে বলে, “তোমাদের অবশ্যই পবিত্রতার সাধনা করতে হবে।”
আত্মসমর্পণ এবং সাধনা উভয়ই পবিত্রকরণে গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর আমাদের পবিত্র করেছেন; আমাদের পবিত্রতা অনুসরণ করতে হবে। আমরা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেছি এবং আমাদেরকে রূপান্তরিত করার অনুমতি তাঁকে দিয়েছি, কিন্তু আমাদের জন্য ঈশ্বরের যে উদ্দেশ্য রয়েছে তার দিকে আমাদের স্বেচ্ছায় এগিয়ে চলতে হবে (ফিলিপীয় ৩:১৩)। পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করার অর্থ এই নয় যে আমাদের আর প্রচেষ্টার প্রয়োজন নেই। আমরা পবিত্রতা অনুসরণ করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কারণ ঈশ্বর আমাদের পবিত্র করেন।
যখন স্টিফেনের বাচ্চারা ছোটো ছিল, তারা পারিবারিক প্রার্থনার সময়ে কখনো কখনো বাইবেল পড়ত। একদিন স্টিফেনের ছোটো মেয়ে ফিলিপীয় ২:১২-তে আসে এবং এটি তারই পড়ার পালা ছিল। অতি অনুগ্রহ-সহকারে, রূথ জোরে জোরে পড়ে, “কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা তোমাদের পরিত্রাণ সম্পন্ন করো!” “তোমাদের পরিত্রাণ সম্পন্ন করো” – এই আদেশটি পড়ে সে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছল। কিন্তু পরের পদটিই বলছে “কারণ ঈশ্বর তাঁর শুভ-সংকল্পের জন্য তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা উৎপন্ন ও কাজ করার জন্য সক্রিয় আছেন।” আমাদের কাজ সম্পন্ন হয় কারণ ঈশ্বর কাজ করেন।
অনেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের মতের বিপরীতে, ঈশ্বরের কাজ তখনই সম্পন্ন হয় যখন আমরা আমাদের নিজেদের পরিত্রাণের জন্য কাজ করি। এর মানে কি এই যে আমরা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি? একদমই তা নয়! পৌল আরো বলেছেন, “কারণ ঈশ্বর তাঁর শুভ-সংকল্পের জন্য তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা উৎপন্ন ও কাজ করার জন্য সক্রিয় আছেন।” (ফিলিপীয় ২:১৩)। ইনি ঈশ্বর যিনি আকাঙ্খা দেন (“ইচ্ছা”); ইনি ঈশ্বর যিনি কাজের ক্ষমতা দেন। ঈশ্বর যিনি আমাদের মধ্যে কাজ করেন, তাঁকে ছাড়া আমাদের সমস্ত কাজই ব্যর্থ। আমরা নিজেদেরকে পবিত্র করতে পারি না, কিন্তু আমাদের নিজেদের পবিত্র হতে চাওয়ার ইচ্ছা ব্যতীত ঈশ্বর আমাদেরকে পবিত্র করবেন না।
“তোমরা হবে আমার পুত্রকন্যা”– ঈশ্বরের এই অসাধারণ প্রতিজ্ঞাটির বিষয়ে পৌল করিন্থীয়দের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন (২ করিন্থীয় ৬:১৮)। এরপর তিনি তাদেরকে পবিত্র জীবন যাপন করার আদেশ দিয়েছেন। “প্রিয় বন্ধুরা, যেহেতু আমাদের কাছে এসব প্রতিশ্রুতি আছে, তাই যা কিছু আমাদের শরীর ও আত্মাকে কলুষিত করে, এসো আমরা সেসব থেকে নিজেদের শুচিশুদ্ধ করি এবং ঈশ্বরের প্রতি সম্ভ্রমবশত পবিত্রতা সিদ্ধ করি” (২ করিন্থীয় ৭:১)। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার কারণে, আমরা নিজেদেরকে সমস্ত কলুষতা থেকে শুদ্ধ করতে পারি। আমাদেরকে পবিত্র করার জন্য ঈশ্বরের যে প্রতিজ্ঞা তা আমাদেরকে পবিত্রতা অনুসরণ করার আত্মবিশ্বাস প্রদান করে।
থিষলনীকীয়ের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে লেখার সময়ে, পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যেন ঈশ্বর তাদের হৃদয়কে পবিত্রতায় নিষ্কলঙ্ক করেন (১ থিষলনীকীয় ৩:১৩)। এটাই হল ঈশ্বরের কাজ। এরপর, পৌল শেখাতে শুরু করেছিলেন কীভাবে তাদের চলা উচিত এবং ঈশ্বরকে খুশি করা উচিত। কেন? “ফলত, ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যে, তোমরা পবিত্র হও” (১ থিষলনীকীয় ৪:১, ৩)। ঈশ্বর থিষলনীকীয়ের খ্রিস্টবিশ্বাসীদের পবিত্র করছিলেন, তাই তাদের একটি পবিত্র জীবনের অনুসরণ করা উচিত।
গালাতীয়ের পত্রগুলি সেইসব বিশ্বাসীদের জন্য লেখা হয়েছে যারা নিয়ম সংক্রান্ত কাজ দ্বারা পরিত্রাণের দিকে ফিরে আসতে প্রলোভিত হয়। পৌল তাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে তারা খ্রিষ্টে বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিক হয়েছেন এবং বিধান পালনের দ্বারা নয়, কারণ নিয়ম মেনে কেউ ধার্মিক হতে পারবে না (গালাতীয় ২:১৬)। যদি বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকতার বিষয়টিই সুসমাচারের শেষ হয়, তবে পৌলের জন্য চিঠিতে এটি বলা যথার্থ হত যে, “আপনি বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিক হয়েছেন৷ এখন আপনি আপনার ইচ্ছা মত জীবনযাপন করতে পারেন এবং আপনি স্বর্গে যাবেন। স্বর্গে আপনার স্থান নিশ্চিত।” কিন্তু পৌল তা বলেননি! পরিবর্তে, তিনি বলেছেন:
আর যারা খ্রীষ্ট যীশুর, তারা শারীরিক লালসার সমস্ত আসক্তি ও অভিলাষকে ক্রুশার্পিত করেছে। আমরা যেহেতু পবিত্র আত্মার বশে জীবনযাপন করি, এসো আমরা আত্মার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি। (গালাতীয় ৫:২৪-২৫)।
সারিবদ্ধ থাকার অর্থ হল একজন অধিনায়কের পিছনে সঠিক পদক্ষেপ অনুসরণ করে চলা। এটি শৃঙ্খলা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেয়। এটি আমাদের নিজস্ব ইচ্ছায় নয়, বরং আত্মার পরিচালনায় জীবন যাপনের পরামর্শ দেয়। ঈশ্বর গালাতীয়দের পবিত্র করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাদেরকেও আবশ্যিকভাবে পবিত্রতার অনুসরণ করে চলতে হবে।
ইব্রীয় পুস্তকের লেখক লিখেছেন যে ঈশ্বর আমাদের মঙ্গলের জন্য আমাদের শাসন করেন, যাতে আমরা তাঁর পবিত্রতায় অংশ নিতে পারি। কি অসাধারণ এক সত্য! পতিত মানুষ ঈশ্বরের পবিত্রতায় অংশ নিতে পারে। এটি পেগান ধর্মের মত কিছু রহস্যময় একাত্মতা বা মিলন নয়। এটি আত্মিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে একটি খুব বাস্তব শিক্ষা। তিনি ধার্মিকতার ফল সম্পর্কে, অন্যদের সাথে শান্তি সম্পর্কে এবং তিক্ততা ও যৌন অনৈতিকতার মতো পাপের বিষয়ে লিখেছেন (ইব্রীয় ১২:১০-১৬)। এটা অবিশ্বাস্য কিছু নয়; এটি স্বাভাবিক খ্রিস্টধর্ম। ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের পবিত্র হতে ডেকেছেন; তিনি আশা করেন তাঁর সন্তানরা তাঁর পবিত্রতায় অংশ নেবে।
আমরা কীভাবে ঈশ্বরের পবিত্রতায় অংশ নিতে পারি? আমরা যখন ঐশ্বরিক প্রকৃতি ভাগ করে নিই তখন আমরা ঈশ্বরের পবিত্রতায় অংশীদার হই।[5] আমাদেরকে নিজের মত করে গড়ে তোলার জন্য ঈশ্বরের শক্তি এবং তাঁর প্রতিমূর্তিতে বেড়ে ওঠার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা – পিতর দুটি দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
প্রথমে, পিতর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আমরা ঈশ্বরের প্রকৃতির অংশীদার হতে পারি:
যিনি নিজ মহিমা ও মহত্ত্বে আমাদের আহ্বান করেছেন, তাঁর তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা তাঁর ঐশ্বরিক পরাক্রম আমাদের জীবন ও ভক্তিপরায়ণতা সম্পর্কে যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছুই দান করেছেন। এসবের মাধ্যমে তিনি আমাদের তাঁর অত্যন্ত মহান ও বহুমূল্য সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যেন সেগুলির মাধ্যমে ঐশ্বরিক স্বভাবের অংশীদার হও। সেই সঙ্গে মন্দ কামনাবাসনার দ্বারা উদ্ভূত যে জগতের কলুষতা, তা থেকে তোমরা পালিয়ে যেতে পারো। (২ পিতর ১:৩-৪)।
ঈশ্বর আমাদের পবিত্র করেছেন। তাঁর ঐশ্বরিক শক্তি আমাদের আত্মিক জীবন এবং ধার্মিকতার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস প্রদান করেছে। ঐশ্বরিকতা কোনো অসম্ভব স্বপ্ন নয়; ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর মূল্যবান এবং মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে একটি হল আমরা ঐশ্বরিক প্রকৃতির অংশীদার হতে পারি। এই যে প্রতিশ্রুতি, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার মতো দেখতে পারি তা মূলত ঈশ্বরের প্রতিটি সন্তানের জন্য। এটা আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় না; ধার্মিকতা ঈশ্বরের অনুগ্রহের দান। ঈশ্বরের শক্তির মাধ্যমে, আমরা ঈশ্বরের চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারি। ঈশ্বর আমাদের পবিত্র করে তোলেন।
তারপর, পিতর আরো বলেছেন:
বিশেষ এই কারণেই তোমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করে তোমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত করো সৎ আচরণ, সৎ আচরণের সঙ্গে জ্ঞান, জ্ঞানের সঙ্গে আত্মসংযম, আত্মসংযমের সঙ্গে নিষ্ঠা, নিষ্ঠার সঙ্গে ভক্তি, ও ভক্তির সঙ্গে একে অপরের প্রতি স্নেহ এবং একে অপরের প্রতি স্নেহের সঙ্গে ভালোবাসা। কারণ তোমরা যদি এই সমস্ত গুণের অধিকারী হয়ে সেগুলির বৃদ্ধি ঘটাও, তাহলে সেগুলিই তোমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের পথে তোমাদের নিষ্ক্রিয় বা নিষ্ফল হতে দেবে না। (২ পিতর ১:৫-৮)।
যেহেতু ঈশ্বরের ঐশ্বরিক শক্তি আমাদের ঐশ্বরিক চরিত্রের অংশীদার করেছে, তাই আমাদের অবশ্যই সদগুণ, জ্ঞান, আত্মসংযম, নিষ্ঠা, ধার্মিকতা, ভ্রাতৃপ্রেম এবং ভালোবাসায় বৃদ্ধি পেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে। ঈশ্বর যা করেছেন, তার জন্য আমাদের অবশ্যই পবিত্রতার অনুসরণ করতে হবে।
পিতর কখনোই এই পরামর্শ দেন না যে আমরা নিজেদের প্রচেষ্টায় নিজেদেরকে পবিত্র করি। তিনি আইনের শিক্ষা দিচ্ছেন না। আমরা আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জন করি না। কিন্তু, পিতর আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে আমরা আত্ম-শৃঙ্খলা ছাড়া পবিত্র জীবন যাপন করতে পারি না।
আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্যেই পবিত্রতার অনুসরণ করতে পারি। তাঁর অনুগ্রহ আমাদের পবিত্র জীবনের সাধনাকে শক্তিশালী করে। ঈশ্বরের ঐশ্বরিক শক্তির কারণে (পদ ৩-৪), আমরা বেড়ে ওঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করি (পদ ৫-৮)। আমাদের পবিত্রতার সাধনা আইনবাদ নয়; এটি একটি রূপান্তরিত হৃদয়ের স্বাভাবিক ইচ্ছা। আমরা যদি সত্যিই ঈশ্বরের সন্তান হই, তাহলে আমরা পবিত্রতায় বেড়ে উঠতে চাইব। আমরা যদি সত্যিই ঈশ্বরের সন্তান হই, তাহলে আমরা আমাদের জীবনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হতে দেখতে চাইব।
[1]Timothy C. Tennent. The Call to Holiness (Franklin: Seedbed Publishing), 2014), 54-55
“পৌল বলেছিলেন, ‘আমি খ্রিস্টের সাথে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছি...’ তিনি বলেননি, ‘আমি যিশু খ্রিষ্টকে অনুকরণ করার সংকল্প করেছি,’ বা, ‘আমি সত্যিই তাঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করব’- বরং বলেছেন ‘তাঁর মৃত্যুতে আমি তাঁর সাথে চিহ্নিত হয়েছি।’
- ওসওয়াল্ড চেম্বার্স (Oswald Chambers)
[5]Dr. A. Philip Brown, “Divine Holiness and Sanctifying God: A Proposal,” unpublished paper থেকে গৃহিত উপাদান।
কীভাবে আমি একটি পবিত্র জীবন যাপন করব? “আমি নই, কিন্তু খ্রিষ্ট”
ফিলিপীয় খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের চিঠি লেখার সময়, পৌল যিশুকে তাদের মনোভাবের উদাহরণ হিসেবে নির্দেশ করেছিলেন। মৃত্যুতে, এমনকি ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত অনুগত থেকে খ্রিষ্ট নিজেকে অবনত করেছিলেন (ফিলিপীয় ২:৮)। পৌল এই বিশ্বাসীদের বোঝাতে চেয়েছিলেন যে ঈশ্বরের সন্তানদের পথ হল নম্রতার পথ, তা আত্ম-প্রচারের পথ নয়। আমাদের অবশ্যই খ্রিষ্টসাদৃশ্য মনোভাব থাকা উচিত।
আমরা এমন উত্তর দিতে প্রলোভিত হতে পারি, “অবশ্যই, যিশু একটি নিখুঁত জীবন যাপন করেছিলেন। তিনি ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র। কিন্তু সেটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি যিশু নই!” কীভাবে আমরা খ্রিস্টের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি? পৌল শিখিয়েছিলেন যে খ্রিষ্টের আত্মা বিশ্বাসীর মধ্যে বাস করে।
পৌল তরুণ খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য লিখেছেন, “তোমরা অবশ্য রক্তমাংসের দ্বারা নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যদি ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন। আর যার মধ্যে খ্রীষ্টের আত্মা নেই, সে খ্রীষ্টের নয়” (রোমীয় ৮:৯)। আমরা নিজেদের ক্ষমতায় নয় বরং পবিত্র আত্মার শক্তিতে একটি পবিত্র জীবন যাপন করি।
পৌলের নিজের সাক্ষ্যটি এই রূপান্তরকে প্রকাশ করে। পৌল নিজের জীবনকে অনেকটা সেই ফরিশী হিসেবে নির্দেশ করেছেন যে তার নিজের ক্ষমতায় বিধানের সবকিছু পূরণ করার চেষ্টা করেছিল। তিনি সেই সময়টির কথা স্মরণ করেছেন যখন তাঁর মধ্যে ন্যায্য বিষয়টি করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ক্ষমতা ছিল না। তিনি বলেছেন, “তাই যদি হয়, আমি আর নিজে থেকে এ কাজ করি না, কিন্তু আমার মধ্যে যে পাপ বাস করে তাই করে” (রোমীয় ৭:১৭)। পৌলের নিজের ক্ষমতায় ধার্মিক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল।
খ্রিষ্টকে জানার পর পৌলের সাক্ষ্য “আমি নই, কিন্তু পাপ” থেকে বদলে হয়েছিল “আমি নই, কিন্তু খ্রিষ্ট” (গালাতীয় ২:২০)। পৌল একটি বিজয়ী জীবন যাপন করতে পেরেছিলেন কারণ খ্রিষ্ট তাঁর মধ্যে বাস করতেন।
পৌল করিন্থীয়দের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, “তোমরা কি উপলব্ধি করতে পারো না যে, যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের মধ্যে আছেন?” (২ করিন্থীয় ১৩:৫)। আমরা খ্রিষ্টসাদৃশ্য হতে পারি কারণ খ্রিষ্ট আমাদের মধ্যে বাস করেন। লুথেরান ঈশতত্ত্ববিদ ডিট্রিচ বনহফার (Dietrich Bonhoeffer) এটিকে অনেকটা এইভাবে বলেছেন: একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী হওয়ার মানে হল “ঠিক যে স্থানটি আগে পুরাতন মনুষ্য দ্বারা অধিকৃত ছিল, একদম ঠিক স্থানটিই এখন যিশুখ্রিষ্ট দ্বারা অধিকৃত।”[1]
খ্রিষ্ট আমাদের মধ্যে বাস করেন, অথবা একই নীতিকে অন্যভাবে বলা যায়, “আমরা খ্রিষ্টে বাস করি।” পৌলের সবচেয়ে ব্যবহৃত বক্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল “খ্রিষ্টের মধ্যে”। পৌল তার চিঠিতে ১৫০ বারেরও বেশি “খ্রিষ্টে”, “তাঁর মধ্যে,” “যাঁর মধ্যে” বা “পুত্রে” ইত্যাদির কিছু সংস্করণ ব্যবহার করেছেন। পৌল বারবার খ্রিষ্টীয় জীবনের গোপনীয়তা বা নিগূঢ় তত্ত্ব হিসেবে খ্রিষ্টে আমাদের স্থানের দিকে নির্দেশ করেছেন। প্রতিদিন বিজয় আসে কারণ আমরা খ্রিষ্টে আছি।
আমাদের পুরানো জীবন “আদমে” ছিল, যা আমাদের পতিত পাপী আত্মায় ছিল। আমাদের নতুন জীবন “খ্রিষ্টে” যাপিত হয়, সেই পুনরুত্থিত প্রভুর শক্তিতে যিনি প্রতিদিন আমাদেরকে পাপের উপর বিজয় দেন।
আদমে আমরা অন্ধকারে চলেছিলাম; খ্রিষ্টে আমরা আলোয় হাঁটি।
আদমে আমরা পাপের দাস ছিলাম; খ্রিষ্টে আমরা ধার্মিকতার অনুচর।
আদমে আমরা মাংসের পাপে আনন্দ করতাম; খ্রিষ্টে আমরা “নতুন সত্তাকে পরিধান করেছি, যা তার স্রষ্টার প্রতিমূর্তিতে ঈশ্বরের জ্ঞানে নতুন হয়ে উঠছে” (কলসীয় ৩:১০)।
এই উপলব্ধি বিজয়ী জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা নিজেদেরকে আদমের মধ্যে দেখি (“ক্ষমাকৃত পাপীরা” যারা পাপের দাসত্বে বাস করে), আমরা ক্রমাগত প্রলোভনে পড়তে থাকব। যখন আমরা নিজেদেরকে খ্রিষ্টের মধ্যে দেখি (“রূপান্তরিত সাধুগণ” যাদের খ্রিষ্টের মাধ্যমে ক্ষমতা রয়েছে), আমরা পাপের উপর বিজয়ী হয়ে বাস করব। পৌল কলসীয় খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের পবিত্র জীবনের গোপন কথা বলেছিলেন: “সুতরাং,খ্রিষ্ট যিশুকে যেমন প্রভুরূপে গ্রহণ করেছ, তেমনই তাঁর মধ্যেই জীবনযাপন করতে থাকো” (কলসীয় ২:৬)। যেহেতু আমরা খ্রিষ্টে চলি, ফলত আমরা পবিত্র হয়ে উঠি।
কিছু মানুষ পবিত্রতাকে অসুখের টিকার মতো মনে করে যা ডাক্তার আপনাকে অসুস্থতা প্রতিরোধ করার জন্য দিয়ে থাকেন। তারা মনে করে যে আমরা যখন আমাদেরকে পবিত্র করার জন্য ঈশ্বরকে বলি, তখন তিনি আমাদের একটি “পবিত্র টিকা বা ইঞ্জেকশন” দেন যা আমাদের পাপী হতে বাধা দেয়। তারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর আমাদের পবিত্র করার পরে, আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষমতায় একটি পবিত্র জীবন যাপন করি।
পবিত্র বাইবেল কোথাও এমন চিত্র প্রকাশ করে না। বরং, আমরা খ্রিষ্টে বাস করি। আমরা খ্রিস্টে পবিত্র। আমরা পাপ এবং মৃত্যুর কবল থেকে খ্রিষ্ট যিশুতে মুক্ত (রোমীয় ৮:২)। আমরা খ্রিষ্টে পরিশুদ্ধ (১ করিন্থীয় ১:২)। আমাদের নিজেদের শক্তিতে যিশুকে অনুকরণ করার মরিয়া প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পবিত্র হয়ে উঠি না। যিশুকে আমাদের মধ্যে বাস করতে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা পবিত্র হয়ে উঠি। যে গর্ব করে, সে প্রভুতেই গর্ব করুক (১ করিন্থীয় ১:৩১)।
আমি খ্রীষ্টের সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছি। আমি আর জীবিত নেই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। আর এই শরীরে আমি যে জীবনযাপন করছি, তা আমি ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাস দ্বারাই যাপন করছি; তিনি আমাকে প্রেম করেছেন ও আমার জন্য নিজেকে প্রদান করেছেন (গালাতীয় ২:২০)।
পৌলের সাক্ষ্যকে এভাবে অনুবাদ করা যেতে পারে: “আমার দেহে এখন যে আছে তা আমি ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাস করে যাপন করছি।” পৌল মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্তও পবিত্রতার আহ্বানকে অস্বীকার করেননি। পৌল সাক্ষ্য দেন যে তিনি এখন পবিত্র জীবনযাপন করছেন। তিনি কীভাবে পবিত্র জীবন যাপন করেন? ঈশ্বরের পুত্রকে বিশ্বাস দ্বারা। পৌল কেবল একটি পবিত্র জীবনই যাপন করেছিলেন কারণ “আমি আর জীবিত নেই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমার মধ্যে জীবিত আছেন।”
যোহন ১৫ অধ্যায়ে যিশুর শিক্ষার সাথে পৌলের বক্তব্যের সামঞ্জস্য আছে।
আমি দ্রাক্ষালতা, তোমরা সবাই শাখা। যে আমার মধ্যে থাকে এবং আমি যার মধ্যে থাকি, সে প্রচুর ফলে ফলবান হবে; আমাকে ছাড়া তোমরা কিছুই করতে পারো না (যোহন ১৫:৫)।
পবিত্রতা আমাদের খ্রিযিয় জীবন থেকে আলাদাভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো বস্তু নয়; পবিত্রতা একটি সম্পর্ক যা বজায় রাখতে হয়। আমরা বেঁচে আছি কারণ আমরা দ্রাক্ষালতার সাথে সংযুক্ত থাকি। আমরা কেবল খ্রিযিয় জীবনের মাধ্যমে একটি পবিত্র জীবন যাপন করি। একজন পবিত্র ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বাস করেন এবং আমরা তাঁর সাথে চলার মাধ্যমে পবিত্র।
“কারণ তোমাদের মৃত্যু হয়েছে এবং এখন তোমাদের জীবন খ্রীষ্টের সঙ্গে ঈশ্বরে নিহিত আছে” (কলসীয় ৩:৩)। আমাদের নিজেদের ক্ষমতায় পবিত্র জীবন অর্জিত হয় না; একটি পবিত্র জীবন ঈশ্বরের মধ্যে খ্রিষ্টের সাথে লুকানো আছে। আমরা খ্রিষ্টের মানসিকতার সাথে প্রতিদিন বসবাস করে একটি পবিত্র জীবন যাপন করি। যেহেতু আমরা খ্রিষ্টে চলি, তাই পাপপূর্ণ জগতে পবিত্র জীবন যাপন করার ক্ষমতা আমাদের আছে। দৈনন্দিন জীবনে পবিত্র হওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। পবিত্র হওয়া বলতে এটাই বোঝায়।
[1]Dietrich Bonhoeffer, Ethics (New York: Macmillan, 1965), 41
“একটি পবিত্র জীবনের রহস্য যিশুকে অনুকরণ করার মধ্যে নয়, কিন্তু যিশুর পবিত্রতা আমার মধ্যে প্রকাশ করার মধ্যে রয়েছে।”
- অসওয়াল্ড চেম্বার্স
(Oswald Chambers)
পবিত্রতার অনুশীলন: একটি বিজয়ের জীবন যাপন করা
পবিত্র জীবনের বার্তা একটি চমৎকার বার্তা। তবে কোন মতবাদ যদি দৈনন্দিন জীবনে না মানা হয়, তাহলে সেটির ব্যবহারিক গুরুত্ব খুবই কম। ইচ্ছাকৃত পাপের উপর বিজয়ী জীবন কি যাপন করা সম্ভব নাকি পবিত্র জীবনের বার্তা কেবলই একটি স্বপ্ন?
পাপের ওপর বিজয় কি সম্ভব?
পৌল প্রতিজ্ঞা করেছেন যে যিনি আমাদের ভালোবাসেন তাঁর মাধ্যমে আমরা বিজয়ীর থেকেও বেশি বিজয়ী হতে পারি (রোমীয় ৮:৩৭)। নিশ্চিতভাবেই খ্রিষ্টে একটি বিজয়ী জীবনের এই প্রতিজ্ঞা পাপের ওপর বিজয়কে প্রকাশ করে। যদি ইচ্ছাকৃত পাপের বিরুদ্ধে দৈনন্দিন বিজয়ে জীবন যাপন করা সম্ভব হয়, তাহলে কেন বহু খ্রিষ্টবিশ্বাসী বিজয়ীভাবে জীবন যাপন করতে ব্যর্থ হয়? আত্মিক পরাজয়ের কারণগুলি কী কী?
যদি আমরা বিশ্বাস না করি যে একটি বিজয়ের জীবন সম্ভব তাহলে আমরা পরাজিত হব
কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী একটি বিজয়ের জীবন যাপন করে না কারণ তারা মেনে নিয়েছে যে একটি বিজয়ের জীবন অসম্ভব। তারা এমন কিছু প্রচার শুনেছে যেগুলি শেখায় যে আমরা অবশ্যই ক্রমাগত ইচ্ছাকৃত পাপে পতিত হতে থাকব – এবং তারা পাপের ওপর যে কোনো রকম বিজয়ের ক্ষেত্রেই হতাশ মনোভাব রাখে। যদি আমরা পাপের ওপর একটি বিজয়ী জীবনযাপন করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই যোহনের বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে: “আমি তোমাদের এসব লিখছি, যেন তোমরা পাপ না করো” (১ যোহন ২:১)। যোহন এক আত্মবিশ্বাস সহ খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন যে তাদের পক্ষে একটি বিজয়ের জীবন যাপন করা সম্ভব। প্রলোভনের মুখে আমাদের আত্মবিশ্বাস দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই বিশ্বাসের সাথে এই আশার দাবি করতে হবে।
যদি আমরা অতীতের আত্মিক অভিজ্ঞতা বা মন্ডলীর অবস্থানের ওপর নির্ভর করি তাহলে আমরা পরাজিত হব
কিছু লোক পবিত্র জীবনকে এককালীন অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখে যার জন্য কোনো দৈনন্দিন শৃঙ্খলা বা প্রচেষ্টার প্রয়োজন নেই। তারা বিশ্বাস করে যে একবার তারা সাক্ষ্য দিয়ে দিয়েছে, “ঈশ্বর বিশ্বাসের দ্বারা আমার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং আমাকে পবিত্র করেছেন”– এরপর আর কিছুই করার নেই। তবে, পৌল যেমন দেখিয়েছেন, তেমনভাবেই আমাদের অবশ্যই ক্রমাগত কাজ করে যেতে হবে। পাপের উপর বিজয়ের জন্য শৃঙ্খলার একটি অবিরাম জীবন প্রয়োজন। আমাকে অবশ্যই পাপকে “না” বলে যেতে হবে যাতে আমি ঈশ্বরের কাছে “হ্যাঁ” বলতে পারি।
যিশুর প্রলোভন সংক্রান্ত কিছু কিছু প্রচার শয়তানের প্রলোভনের ওপর যিশুর বিজয় দিয়ে শেষ হয়। তবে, লূক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়ে কাহিনীটি শেষ করেছেন, “প্রলোভনের সমস্ত কৌশল ব্যর্থ হলে দিয়াবল কিছুকালের জন্য যীশুকে ছেড়ে চলে গেল, এবং পরবর্তী সুযোগের অপেক্ষায় রইল” (লূক ৪:১৩)। যিশুর প্রলোভিত হওয়ার এটাই শেষবার নয়। যদিও সুসমাচারগুলিতে পরবর্তী প্রলোভনগুলির ব্যাপারে বিশদে লেখা নেই, তবে লূক স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে শয়তান যিশুকে আবার প্রলোভইত করার পরিকল্পনা করেছিল।
আমাদের কখনোই এমন ভেবে নেওয়া ঠিক নয় যে আমরা আত্মিক পরিপক্কতার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যেখান থেকে আমরা কখনো পড়ে যাব না। বরং, আমাদের সবসময় আমাদের দেহ এবং মনের ওপর কঠোর নজর রেখে চলতে হবে। শয়তান ঠিক সেই সময়ে আঘাত করতে ভালোবাসে যখন আমরা আমাদের বর্ম খুলে রেখেছি। একটি পবিত্র জীবনের জন্য সতর্ক নজরদারি প্রয়োজন।
পালক এবং মন্ডলীর নেতারা আত্মিক বিজয়ের জন্য আমাদের সামাজিক অবস্থানের উপর নির্ভর করতে প্রলোভিত হতে পারে। আমরা এটি অনুমান করতে পারি কারণ আমরা সত্য প্রচার করি এবং ঈশ্বরের অভিষেক অনুভব করি যে আমরা পড়ে যেতে পারি না। তবে, রবিবার প্রচার করা এবং সোমবার শয়তানের প্রলোভনে পড়া সম্ভব। আমাদের কখনোই অতীত অভিজ্ঞতা বা মন্ডলীতে আমাদের অবস্থানের উপর নির্ভর করা উচিত নয়।
যদি আমরা আমাদের নিজেদের ক্ষমতায় খ্রিষ্টীয় জীবন যাপন করার চেষ্টা করি তাহলে আমরা ব্যর্থ হব
একটি বিজয়ীর জীবন আমাদের নিজেদের ক্ষমতায় নয় বরং পবিত্র আত্মার ক্ষমতায় আসে। আত্মার নিরবচ্ছিন্ন শক্তিতে পবিত্র জীবন দৈনন্দিনভাবে যাপন করতে হয়। আমরা কখনোই সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারি না যেখানে আমরা আমাদের নিজেদের ক্ষমতায় শয়তানের প্রলোভনকে পরাজিত করতে পারি। পিতর আবেগজনিত করে বলেছিলেন, “সবাই আপনাকে ছেড়ে গেলেও, আমি যাব না... আপনার সঙ্গে যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হয়, তাহলেও আমি আপনাকে কখনোই অস্বীকার করব না” (মার্ক ১৪:২৯-৩১)। তিনি মনে করেছিলেন তিনি নিজের ক্ষমতাতেই শয়তানের আঘাত সামলাতে পারবেন। তিনি খুব তাড়াতাড়ি ব্যর্থ হয়েছিলেন।
তবে, যেহেতু আমরা আত্মার শক্তিতে বাস করি, তিনি আমাদেরকে প্রলোভনের ওপরে বিজয় দেন। ঠিক যেইভাবে যিশু আত্মার শক্তিতে প্রলোভনের সম্মুখীন হয়েছিলেন, আমরাও আত্মার শক্তিতে প্রলোভনের মুখোমুখি হতে পারি।
পুনরায়, পালক এবং মন্ডলীর নেতারা নিজেদের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করার জন্য প্রলোভিত হতে পারে। যদিও আমরা সভায় প্রার্থনা করি, তবুও আমরা ঈশ্বরের সাথে একাকী সময় কাটাতে ব্যর্থ হতে পারি। যদিও আমরা জনসমক্ষে ঈশ্বরের বাক্য স্বীকার করার কথা পড়ি, তবুও আমাদের সাথে ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মাধ্যমে যে ব্যক্তিগত কথাগুলি বলেন তা শোনার জন্য সময় দিতেও আমরা ব্যর্থ হতে পারি। আমরা অবশ্যই আমাদের পরিচর্যার প্রচেষ্টাকে ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তিগত পথ চলা এবং আত্মিক বিজয়ের জন্য তাঁর আত্মার শক্তির উপর আমাদের নির্ভরতা হ্রাস করতে দেব না।
যদি আমরা পতিত হই
যোহন বিশ্বাসীদেরকে পাপের ওপরে বিজয়ের একটি জীবনে আহ্বান করেছিলেন। “আমার প্রিয় সন্তানেরা, আমি তোমাদের এসব লিখছি, যেন তোমরা পাপ না করো” (১ যোহন ২:১)। আত্মিক ব্যর্থতা ছাড়া জীবন যাপন করা সম্ভব। তবে, যোহন তাদের জন্যও বিধান দিয়েছেন যারা পাপে পতিত হয়েছে, “কিন্তু কেউ যদি পাপ করে, তাহলে আমাদের একজন পক্ষসমর্থনকারী আছেন; তিনি আমাদের হয়ে পিতার কাছে মিনতি করেন। তিনি যীশু খ্রীষ্ট, সেই ধার্মিক পুরুষ” (১ যোহন ২:১)। এই ভারসাম্যটি গুরুত্বপূর্ণ – এবং প্রায়শই এটি অবজ্ঞা করা হয়ে থাকে।
একদিকে, কিছু ব্যক্তি আছে যারা এই পদটির কেবল প্রথম অংশের উপর জোর দিয়েছে: “আমি তোমাদের এসব লিখছি, যেন তোমরা পাপ না করো।” তারা প্রচার করে যে আমরা ইচ্ছাকৃত পাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারি এবং থাকতে পারি। তবে যারা দুর্বলতার মুহূর্তে ব্যর্থ হয় তাদের উদ্দেশ্যে এই দলের লোকেদের কোনো বার্তা নেই।
অন্যদিকে, এমন বহু লোক আছে যারা এই পদটির কেবল পরবর্তী অংশটির ওপর জোর দিয়েছে: “কিন্তু কেউ যদি পাপ করে, তাহলে আমাদের একজন পক্ষসমর্থনকারী আছেন; তিনি আমাদের হয়ে পিতার কাছে মিনতি করেন। তিনি যীশু খ্রীষ্ট, সেই ধার্মিক পুরুষ।” তারা মনে করে যে একটি বিজয়ী জীবন অসম্ভব এবং সেইজন্য আমরা অবশ্যই ক্রমাগত পাপে পতিত হতেই থাকব।
এক্ষেত্রে যোহন যথার্থ ভারসাম্য প্রদান করেছেন। প্রথমত, একটি বিজয়ী জীবন সম্ভব; আমাকে শয়তানের প্রলোভনের কাছে মাথা নত করতে হবে না। কিন্তু দ্বিতীয়ত, যদি আমি দুর্বলতা মুহূর্তে ব্যর্থ হই, তাহলে আমার জন্য একজন উকিল আছেন। আমাকে খ্রিষ্টীয় জীবনের পথ ত্যাগ করতে হবে না। আমার হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, ঈশ্বর আমাকে শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলবেন। কিন্তু তিনি আমাকে ঠিক সেইভাবেই শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলবেন যেভাবে একজন স্নেহশীল পিতা তাঁর সন্তানকে শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তোলেন – “যে শাসন ধার্মিকতার ও শান্তির ফসল উৎপন্ন করে।” তিনি আমাদের মঙ্গলের জন্য আমাদের শাসন করেন, যেন আমরা তাঁর পবিত্রতার অংশীদার হতে পারি (ইব্রীয় ১২:১০, ১১)।
শয়তান খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের বোঝাতে চায় যে ঈশ্বরকে খুশি করার উপায় হিসেবে আমাদেরকে কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হবে। সে চায় আমরা যেন ভুলে যাই যে আমরা ঈশ্বরের সাথে মিলিত হয়েছি এবং এখন আমরা তাঁর সন্তান। আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখন তাঁর পুত্রের মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে মিলিত হয়েছিলাম। সেই কথা বিবেচনা করলে, আমরা আরও কত বেশি সুনিশ্চিত যে, তাঁর জীবনের দ্বারা আমরা রক্ষা পাব (রোমীয় ৫:১০)।
পাপী হিসেবে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জন করতে পারিনি; তিনি আমাদেরকে তাঁর পুত্রের মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর নিজের সাথে পুনর্মিলিত করেছেন। তাই, পৌল বলেছেন, “আরও কত বেশি সুনিশ্চিত যে, তাঁর জীবনের দ্বারা আমরা রক্ষা পাব!” বহু খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে দেখলে মনে হয় তারা বিশ্বাস করে যে “আমি বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহে পরিত্রাণ পেয়েছি, কিন্তু আমি ঈশ্বরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো হয়ে থেকে পরিত্রাণের জীবন যাপন করছি।”
এটা অনেকটা সেইসব বাবা-মাদের মত যারা বলে, “হ্যাঁ, এই পৃথিবীতে আনার জন্য আমি তোমাকে অনেক আদর-যত্ন দিয়েছি – কিন্তু এখন তোমাকে তোমার দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে আমার ভালোবাসা অর্জন করে নিতে হবে।” এটা কোনো স্নেহশীল বাবা-মা নয়! এবং আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা এরকম নন।
পরিবর্তে, আমি যেমন প্রথমে আমাকে আত্মিক জীবনে নিয়ে আসার জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করেছিলাম, আমি আমার আত্মিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনুগ্রহের উপরই নির্ভর করি। এবং, যদি আমি ব্যর্থ হই, আমাকে আবার আত্মিক স্বাস্থ্যে ফিরে আসার জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করতে হবে।
তিনি রহস্যের চাবিকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন – হাডসন টেলর
আধুনিক কালের সবচেয়ে প্রভাবশালী মিশনারিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাডসন টেলর (Hudson Taylor), যিনি চাইনা ইনল্যান্ড মিশন-এর প্রতিষ্ঠাতা।[1] টেলর ১৭ বছর বয়সে তাঁর মায়ের প্রার্থনার মাধ্যমে মন পরিবর্তন করেন। তিনি মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং মাত্র ২১ বছর বয়সে একজন মিশনারি হিসেবে চিন দেশে পাড়ি দেন।
২৮ বছর বয়সে তিনি হেপাটাইটিসের কারণে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। পরের পাঁচ বছরে তিনি ঈশ্বরের নেতৃত্বের সন্ধান করেছিলেন এবং বিশ্বাস করেছিলেন যে ঈশ্বর চান যে তিনি যেন মিশনারিদের চিনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার জন্য নিয়োগ করেন যেখানে প্রচারের কাজ হয়নি। ৩৪ বছর বয়সে হাডসন এবং মারিয়া টেলর তাদের সন্তানদের নিয়ে অন্য ১৬ জন মিশনারির একটি দলের সাথে যাত্রা করেছিলেন, যা ছিল চাইনা ইনল্যান্ড মিশনারি-এর প্রথম মিশনারিদের দল।
হাডসন টেলরের সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তিগুলির মধ্যে একটি হল, “ঈশ্বরের পদ্ধতিতে করা ঈশ্বরের কাজে কখনোই ঈশ্বরের দেওয়া সরবরাহের অভাব হবে না।” আমরা প্রায়শই এটিকে অর্থ সম্পর্কিত একটি বিবৃতি হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকি, কিন্তু টেলরের কাছে এটি আরো বেশি কিছু ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর অর্থ, আশ্বাস, বিশ্বাস, শান্তি, শক্তি এবং তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করবেন। চাইনা ইনল্যান্ড মিশন-এর প্রধান হিসেবে পঞ্চাশ বছরে হাডসন টেলর এই প্রতিশ্রুতি অগণিত বার পূরণ হতে দেখেছিলেন।
১৯৬৯ সালে টেলর তার আত্মিক জীবনে সবচেয়ে বড় সংকটের সম্মুখীন হন। তিনি নানারকম প্রলোভন এবং ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি তাঁর মা’কে লিখেছিলেন, “আমি কখনো জানতেই পারিনি আমার মানসিকতা কতটা খারাপ।” আবার তিনি এটাও লিখেছিলনে, “আমি জানি যে আমি ঈশ্বরকে ভালোবাসি এবং তাঁর কাজকে ভালোবাসি, এবং কেবল তাঁকেই সর্বতভাবে সেবা করতে চাই। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুক যেন আমি তাঁকে আরো বেশি করে ভালোবাসতে পারি এবং আরো ভালোভাবে তাঁর সেবা করতে পারি।”
১৮৬৯ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর হাডসন টেলর সাক্ষ্য দিয়েছেন যে টেলরের জীবনে ঈশ্বর নতুনভাবে তাঁর আত্মাকে সেচন করেছেন। টেলর এক সহকর্মীকে লিখেছেন, “ঈশ্বর আমাকে এক নতুন মানুষ তৈরি করেছেন!” টেলরের জীবনে ঈশ্বরের উপস্থিতি সম্পর্কে তাঁর নতুন আশ্বাসের চাবিকাঠিটি ছিল একজন সহ-মিশনারি জন ম্যাকার্থির লেখা একটি চিঠিতে উল্লিখিত একটি বাক্য। টেলর তাঁর প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঈশ্বরের উপস্থিতি সম্পর্কে গভীর বিশ্বাস এবং নিশ্চয়তা অর্জনের পথ খুঁজছিলেন। ম্যাকার্থি লিখেছেন, “কীভাবে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারি? বিশ্বাসের জন্য চেষ্টা করে নয়, বরং বিশ্বস্ত ব্যক্তির উপর নির্ভর করার মাধ্যমে।”
টেলর তার বোনকে লিখেছেন,
যেমনটা আমি পড়েছি, ঠিক তেমনটাই আমি দেখেছি! “আমরা যদি বিশ্বাসবিহীন হই, তিনি থাকবেন চিরবিশ্বস্ত।” আমি যিশুর দিকে তাকিয়েছিলাম এবং দেখেছিলাম (আর যখন আমি দেখলাম, ওহ, কী অনাবিল আনন্দ)! তিনি বলেছেন, “আমি তোমাকে কখনো ত্যাগ করব না।”
“আহা, এখানেই বিশ্রাম!” আমার মনে হয়। “আমি তাঁর মধ্যে বিশ্রাম করার জন্য বৃথাই চেষ্টা চালিয়ে গেছি। আমি আর চেষ্টা করব না। তিনি কি আমাকে আমার সাথে থাকার, আমাকে ছেড়ে না যাওয়ার, আমাকে ব্যর্থ না করার প্রতিশ্রুতি দেননি?” এবং, প্রিয় বোন, তিনি কখনো প্রতিশ্রুতি ভাঙবেন না।
আমি শুধু এইটুকুই দেখিনি যে যিশু আমাকে ছেড়ে যাবেন না, সাথে এটাও দেখেছি যে আমি তাঁর দেহের, তাঁর মাংসের এবং তাঁর হাড়ের অংশ। দ্রাক্ষালতা কেবল শিকড় নয়, সবই—মূল, কাণ্ড, শাখা, ডাল, পাতা, ফুল, ফল। এবং যিশু শুধু এগুলিই নন – তিনি মাটি এবং রোদ, বাতাস এবং ঝরনা, এবং আমরা যতটা স্বপ্ন দেখেছি, চেয়েছি বা প্রয়োজন বোধ করেছি, তিনি তার চেয়ে দশ হাজার গুণ বেশি। আহা, এই সত্যকে দেখতে পাওয়ার কী যে আনন্দ! আমি প্রার্থনা করি যে তোমারও জ্ঞানের চোখ আলোকিত হোক, যেন তুমিও খ্রিষ্টে আমাদেরকে অবাধে দেওয়া সম্পদগুলি জানতে এবং উপভোগ করতে পারো।
এই মুহূর্তটিতে টেলর বুঝতে পেরেছিলেন যে খ্রিষ্টসাদৃশ্যতা নিজস্ব প্রচেষ্টার মাধ্যমে নয় বরং সেই দ্রাক্ষালতার সাথে একতার মাধ্যমে আসে যা জীবন প্রদান করে। এই খ্রিষ্টের সাথে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে আসে। পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে লিখেছন, “তিনি আত্মসমর্পণ সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই জানতেন, তবে এটি আরও বেশি কিছু ছিল; এটি ছিল একটি নতুন প্রাপ্তি, নিজেকে এবং সবকিছুকে তাঁর কাছে হস্তান্তর করার একটি আনন্দ।”
এটি কোনো সাময়িক আবগেজনক অভিজ্ঞতা ছিল না। তিরিশ বছর পরে, টেলর স্মৃতিচারণ করতে করতে লিখেছেন, “যোহন ৪:১৪-তে লেখা ‘কিন্তু আমি যে জল দান করি, তা যে খাবে, সে কোনোদিনই তৃষ্ণার্ত হবে না’ এই পদটি থেকে যে আশীর্বাদ আমরা পেয়েছি, তা আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। যখন আমরা বুঝতে পারি খ্রিষ্ট যা বলছেন তাতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ‘তৃষ্ণার্ত’ মানে ‘তৃষ্ণার্ত’, ‘কখনো হবে না’ মানে ‘কখনোই হবে না’ – তখন আমাদের হৃদয়ে আনন্দ উপচে পড়ে কারণ আমরা সেই উপহার গ্রহণ করেছি।” এই কথাটি লক্ষ্য করুন - “কারণ আমরা সেই উপহার গ্রহণ করেছি।“ টেলর বুঝতে পেরেছিলেন ঈশ্বরের পবিত্রতার অনুগ্রহ একটি উপহার যা গ্রহণ করতে হয়, কোনো বস্তু নয় যা অর্জন করা যায়।
ঈশ্বরের অনুগ্রহের এই অভিজ্ঞতা টেলরের বাকি জীবনকে মোটেই সহজ করে তোলেনি। পরের বছরটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন বছরগুলোর অন্যতম। সেই বছরেই তার দুই সন্তান মারা যায় এবং মারিয়া ৩৩ বছর বয়সে মারা যায়। পরবর্তীতে, টেলর বক্সার বিদ্রোহের (Boxer Rebellion) আতঙ্কের মধ্য দিয়ে চাইনা ইনল্যান্ড মিশন-এর নেতৃত্ব দেন। সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে মিশনের ৭৯ জন সদস্য নিহত হন।
কিন্তু এই সবের মধ্য দিয়েও, টেলর তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে ঈশ্বর যা প্রয়োজন তা সরবরাহ করবেন। একজন এপিস্কোপাল যাজক যিনি এক কঠিন সময়ে টেলরকে দেখতে গিয়েছিলেন, তিনি লিখেছেন, “এখানে প্রায় ৬০ বছর বয়সী একজন মানুষ ছিলেন, যিনি মারাত্মক বোঝা বহন করা সত্ত্বেও একেবারে শান্ত এবং নিরুদ্বিগ্ন ছিলেন।” কেন? কারণ টেলর দ্রাক্ষালতার সাথে ছিলেন এবং তিনি খ্রীষ্টে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি এমন একজন ছিলেন যিনি যা করতেন তা “ঈশ্বরের দেওয়া শক্তির গুণেই, যেন সব বিষয়ে যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর প্রশংসিত হন।” (১ পিতর ৪:১১)।
এই অভিজ্ঞতা টেলরের আত্মিক বৃদ্ধিকে স্থগিত করে দেয়নি। বা তাঁর “খ্রিষ্টে বিশ্রাম” এর অর্থ এই নয় যে কোনো প্রচেষ্টা জড়িত ছিল না। প্রতি সকালে, পরিচর্যার কাজ সামলে টেলর দৈনন্দিন কাজ শুরু করার আগে দুই ঘন্টা প্রার্থনা করতেন এবং বাইবেল পড়তেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পৌলের মতই আমাদের লক্ষ্যের দিকে প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। কিন্তু এই প্রচেষ্টাটি ঈশ্বরের শক্তির উপর নির্ভর ছিল, হাডসন টেলরের শক্তির উপর নয়। টেলর জানতেন যে তার বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার জন্য বিছানা থেকে সরে যাওয়ার শক্তিও ছিল ঈশ্বরের অনুগ্রহের ফল। তিনি খ্রিষ্টের মত হতে পারেন কারণ তিনি ‘খ্রিষ্টেছিলেন’।
টেলরের ছেলে তার প্রার্থনা এবং বাক্যে নির্ভরশীল জীবনের কথা স্মরণ করেছেন। খ্রিষ্টে বিশ্রামের অর্থ এই নয় যে টেলর আত্মিক অনুশাসনের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করেছিলেন।
তিনি মনে করতেন সবকিছু থেকে উদ্ধার পাওয়ার একটাই পথ – ঈশ্বরের সাথে দৈনন্দিন, প্রতিমুহুর্তের সহভাগিতা; এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি কেবল গোপন প্রার্থনা আর বাক্যের ওপর বেঁচে থাকার মাধ্যমেই বজায় রাখা যায়, কারণ এটির মাধ্যমেই ঈশ্বর নিজেকে আকাঙ্খিত হৃদয়গুলির কাছে প্রকাশ করেন। টেলরের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল জীবনে প্রার্থনা করা এবং বাইবেল পড়ার জন্য সময় বের করা সহজ ছিল না, কিন্তু তিনি জানতেন যে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায়শই তারা তাদের বাবার সাথে একটি বড় ঘরে থাকত; মূলত তাদের জন্য একটি দিক ছিল, আর তাদের বাবার জন্য আরেকটি দিক ছিল, আর পুরো জায়গাটাই একটি পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকত। অল্প কিছুক্ষণের ঘুমের পরেই, তারা দেশলাই কাঠি জ্বালানোর আওয়াজ পেত আর সেটা জ্বলে উঠতে দেখত, যার মানে হল টেলর ওই ঘুমন্ত-ক্লান্ত অবস্থাতেও খুব মন দিয়ে তার ছোট্ট দুই খন্ডের বাইবেলটি পড়ছেন। রাত দুটো থেকে ভোর চারটে পর্যন্তই তিনি সাধারণত প্রার্থনায় সময় কাটাতেন; যে সময়টায় তিনি সবচেয়ে নিশ্চিত এবং অবিচলভাবে এক অবিভক্ত হৃদয়ে ঈশ্বরের অপেক্ষা করতেন... টেলর বুঝতে পেরেছিলেন একটি মিশনারি জীবনের সবচেয়ে কঠিন অংশ হল একটি দৈনন্দিন প্রার্থনাময় বাইবেল পাঠ। তিনি বলতেন, “শয়তান আপনাকে দিয়ে সবসময়ই কিছু না কিছু করানোর চেষ্টা করবে, তাই আপনার সবসময় নিজেকে প্রার্থনা আর শাস্ত্রপাঠে মগ্ন রাখা উচিত।”
বর্তমানে ১,৬০০ জন মিশনারি OMF ইন্টারন্যাশনাল-এ কাজ করে, যেটি চাইনা ইনল্যান্ড মিশন-এর উত্তরাসুরি। কয়েক লক্ষ চৈনিক বিশ্বাসী এই মিশনের পরিচর্যা কার্যের মাধ্যমে খ্রিষ্টের পথে এসেছে। এটি এমন একজন ব্যক্তির ফল যিনি খ্রিষ্টের সাথে একতায় জীবন যাপন করেছিলেন।[2]
[2]Dr. and Mrs. Howard Taylor, Hudson Taylor’s Spiritual Secret থেকে অভিযোজিত।
১০ নং পাঠের পর্যালোচনা
(১) প্রেরিতরা প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীকে পবিত্র হতে বলেছেন।
(২) পবিত্র হওয়ার মানে হল খ্রিষ্টের মত হওয়া।
পবিত্র হওয়ার মানে হল একটি পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী হওয়া: একটি খ্রিষ্টসাদৃশ্য হৃদয় এবং মন।
পবিত্র হওয়ার মানে হল পবিত্র হাতের অধিকারী হওয়া: খ্রিষ্টসাদৃশ্য আচরণ।
পবিত্র হওয়ার মানে হল খ্রিষ্টসাদৃশ্য প্রেমের অধিকারী হওয়া।
(৩) পত্রগুলি দেখায় যে দৈনন্দিন জীবনে পবিত্রতা কেমন দেখতে হবে।
আপনাকে পবিত্র করা হয়েছে; আপনাকে পবিত্র করা হচ্ছে।
আপনি সাধুগণের মধ্যে একজন; আপনাকে অবশ্যই সাধুদের মত জীবন যাপন করতে হবে।
ঈশ্বর আপনাকে পবিত্র করেছেন; আপনাকে অবশ্যই পবিত্রতা অনুসরণ করতে হবে।
(৪) আমাদের মধ্যে বসবাসকারী খ্রিষ্টের আত্মার মাধ্যমে আমরা পবিত্র জীবন যাপনে সক্ষম।
(৫) আমরা “খ্রিষ্টের মধ্যে” একটি পবিত্র জীবন যাপন করি। আমাদের পুরনো জীবন “আদমের মধ্যে” যাপিত হয়েছে। আমাদের নতুন জীবন “খ্রিষ্টের মধ্যে” যাপিত হয়।
(৬) একটি পবিত্র জীবন দ্রাক্ষালতার সাথে দৈনন্দিন সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল।
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) “একটি খ্রিষ্টস্বরূপ জীবন”– এই বিষয়টির ওপর একটি প্রচার তৈরি করুন। জীবনযাপনের দু'টি উপায়কে তুলনা করুন: আদমে আমাদের পুরানো জীবন এবং খ্রীষ্টে আমাদের নতুন জীবন। দেখান কিভাবে "খ্রিষ্টে থাকা" আমাদেরকে পাপের উপর বিজয়ের জন্য শক্তি দেয়।
(২) ফিলিপীয় ২:১-৫ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.