(১) ঈশ্বরের পবিত্রতার সৌন্দর্য এবং আমাদের পবিত্র করার জন্য তাঁর যে পরিকল্পনা তার সমাদর করবে।
(২) পবিত্রতা বিষয়ক ভুল ধারণাগুলি ত্যাগ করবে এবং পবিত্রতার বাইবেলভিত্তিক ধারণাগুলি গ্রহণ করবে।
(৩) পবিত্র হওয়া মানে কী তা একজন নতুন বিশ্বাসীকে বোঝাতে সমর্থ হবে।
(৪) ১ পিতর ১:১৪-১৬ মুখস্ত করবে।
কোর্সের ভূমিকা
পবিত্রতা হল বাইবেলের অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু। শাস্ত্রে, ঈশ্বর আমাদের দেখিয়েছেন তিনি কে: তিনি একজন পবিত্র ঈশ্বর (লেবীয় পুস্তক ১৯:২)। তারপর, ঈশ্বর আমাদের দেখিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহে আমরা কী হয়ে উঠতে পারি: আমরা হয়ে উঠতে একটি পবিত্র জাতি (১ পিতর ১:১৫-১৬)।
প্রত্যেকজন সত্যিকারের বিশ্বাসীর মধ্যে, পবিত্রতার একটি প্রবল আকাঙ্ক্ষা আছে। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমরা তাঁর মতো হতে আকাঙ্খিত। দুঃখজনকভাবে, অধিকাংশ আধুনিক মন্ডলী একটি ভুল ধারণাকে মেনে নিয়েছে যে পবিত্রতা অসম্ভব। খ্রীষ্টসদৃশ হতে চাওয়ার পরিবর্তে, বহু ভণ্ড খ্রীষ্টিয়ান পরাজিত, পাপপূর্ণ জীবনযাত্রা বেছে নিয়েছে। একটি বিজয়ী খ্রিষ্টীয় জীবনের পরিবর্তে, বহু খ্রিষ্টবিশ্বাসী “পাপের সাথে বোঝাপড়া” করে নিয়েছে।
প্রায় শতাধিক বছর আগে, ভারতে আসা এক অন্যতম মহান মিশনারী জন হাইড (John Hyde) বলেছিলেন, “বর্তমানে আমাদের যা প্রয়োজন তা হল পবিত্রতার পুনর্জাগরণ।” যদি সেটা তখনের জন্য সত্যি হয়, তাহলে এটি ২১ শতকের এই পাপপূর্ণ পৃথিবীর জন্যও নিশ্চিতভাবে সত্যি।
যদি পবিত্রতা ঈশ্বরের কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারি, “পবিত্র হওয়া মানে কী?” যদি পবিত্রতা শাস্ত্রে নির্দেশিত থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারি, “একটি পবিত্র জীবন যাপন করা কি সম্ভব?”
এই কোর্সে, আমরা শিখব ঈশ্বর কী বোঝাতে চান যখন তিনি বলেন, “তোমরা পবিত্র হও, কারণ আমি পবিত্র।” পবিত্রতা বিষয়ক বাইবেলের বার্তাটি বুঝলে, আমরা দেখব যে একটি পবিত্র জীবন প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জন্যই সম্ভব। প্রতিটি অধ্যায়ে তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত:
১। আমরা বাইবেলের কিছু শব্দের মানে নিয়ে চর্চা করব যেমন পবিত্র, শুচিকরণ, এবং সিদ্ধ। এই অংশটি পবিত্রতার একটি বাইবেলভিত্তিক থিওলজি বা ঈশতত্ত্ব।
২। আমরা পবিত্র জীবনের বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে চর্চা করব। একটি পবিত্র জীবন, একটি শুচি হৃদয়, এবং একটি খ্রিষ্টসদৃশ আত্মার বিষয়ে বাইবেল কী বলে তা আমরা শিখব।
৩। আমরা এক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জীবন সম্পর্কে জানব যে প্রকাশ করে পবিত্র হওয়া বলতে আসলে কী বোঝায়। আমরা দেখব একজন পবিত্র ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে কেমন আচরণ করেন।
পাঠ্য এবং আলোচ্য শাস্ত্রাংশ
এই অধ্যায়টিতে এগোনোর আগে, নিম্নলিখিত প্রতিটি শাস্ত্রাংশ ভালো করে পড়ুন এবং প্রশ্নগুলি আলোচনা করুন। এটি এমন কিছু বিষয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে যা আমরা এই অধ্যায়ে চর্চা করব।[1]
► লেবীয় পুস্তক ১৯:২ পড়ুন। এই অংশটি অনুযায়ী, কেন ইস্রায়েলকে পবিত্র হতে হবে?
► ১ পিতর ১:১৫-১৬ পড়ুন। বিশ্বাসীদের আচরণ কেমন হতে হবে?
► ইব্রীয় ১২:১৪ পড়ুন। এই অংশটি অনুযায়ী, কোন দুটি গুণ খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অবশ্যই অন্বেষণ করতে হবে যদি তারা প্রভুকে দেখতে চায়?
► ১ থিষলনিকীয় ৪:৩-৮ পড়ুন। ঈশ্বর প্রত্যেক বিশ্বাসীকে কোন পাপগুলি থেকে বিরত থাকতে বলেছেন? ঈশ্বর কীসের জন্য তাঁর লোকদের ডেকেছেন?
► প্রকাশিত বাক্য ২০:৬ পড়ুন। যারা প্রথম পুনরুত্থানে অংশ নেবে তাদের আত্মিক চরিত্র কেমন হওয়া উচিৎ?
[1]এই প্রশ্নগুলি Rev. Timothy Keep দ্বারা সংগৃহিত।
পবিত্রতার সৌন্দর্য
► যখন আপনি শোনেন যে একজন ব্যক্তিকে “পবিত্র” হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, তখন কোন চিত্রটি আপনার মনে ফুটে ওঠে? আপনার সেই চিত্রটি কি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক? কেন?
এক মিশনারি একবার এক বৃদ্ধ আফ্রিকান প্রধানের সাথে দেখা করেন। প্রধান জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী কে?” মিশনারি উত্তর দিয়েছিলেন, “একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী তাঁর শত্রুর গবাদি পশু চুরি করে না। একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী তাঁর শত্রুর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায় না। একজন খ্রিষ্টবিস্বাসী তাঁর শত্রুকে হত্যা করে না।”
প্রধান বলেছিলেন, “বুঝলাম। খ্রিষ্টবিশ্বাসী হওয়া আর বৃদ্ধ হওয়া একই ব্যাপার! যখন আমি যুবক ছিলাম, আমি আমার শত্রুকে আঘাত করেছিলাম এবং তার স্ত্রী ও গবাদি পশু চুরি করেছিলাম। এখন আমি আমার শত্রুকে আঘাত করার ক্ষেত্রেও যথেষ্টই বৃদ্ধ; মানে আমি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী!”
দুঃখজনকভাবে, বহু মানুষ একটি পবিত্র জীবনযাপনের বিষয়ে এই রকমই ধারণা পোষণ করে। তারা মনে করে যে পবিত্রতা হল একগুচ্ছ পাপকে এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তারা ঈশ্বরের বাক্যে পবিত্রতার সৌন্দর্যের বিষয়ে যা শেখানো হয়েছে সেটিকে হারিয়ে ফেলে।
পবিত্রতা সম্পর্কিত ভুল ধারণা
ঈশ্বর একজন পবিত্র ঈশ্বর। ঈশ্বরের লোকদেরকেও অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। এই বার্তাটিই বাইবেলের কেন্দ্রবিন্দু। তবুও, পবিত্রতা নিয়ে চারিদিকে নানারকম ভুল ধারণা আছে।
১। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে কেবল কিছু লোকই পবিত্র হতে পারে। তারা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের দুটি দলে ভাগ করে। প্রথম দলটি হল তাদের বিশ্বাসে খ্রিষ্টীয়ান, এবং তারা খ্রীষ্টকে তাদের মুক্তিদাতা রূপে গ্রহণ করেছে, কিন্তু তারা তাদের কাজে এবং আচরণে ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে মান্য করে না। দ্বিতীয় দলটিতে এমন খ্রিষ্টিয়ানরা আছে যারা একটা উচ্চতর স্তরে পৌঁছে গেছে, যেমন পুরোহিত, পালক, বা সাধু। এই ধারণা অনুযায়ী, কেবল কিছু মানুষই পবিত্র হতে পারে।
২। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে অন্যদের কাছ থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে আমরা পবিত্র হয়ে উঠতে পারি। বহু বছর আগে, কিছু “পবিত্র লোক” মরুভূমিতে বাস করতে গিয়েছিল। এক ব্যক্তি সমতল থেকে অনেক বেশী উচ্চতায় অবস্থিত এক মাচায় ৩৭ বছর কাটিয়েছিল। সে বিশ্বাস করত যে আমরা অন্যদের এড়িয়ে চলার মাধ্যমে পবিত্র হয়ে উঠতে পারি।
৩। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে যখন আমরা মারা যাই, কেবল তখনই আমরা পবিত্র হয়ে উঠি। তারা বিশ্বাস করে যে আমরা এই জীবনে কখনোই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে পারব না, কিন্তু আমরা তখনই পবিত্র উঠব যখন আমরা মারা যাব। এই বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যু আমাদের শত্রু নয়, বরং আমাদের বন্ধু। মৃত্যুতেই, আমরা শেষপর্যন্ত ঈশ্বরের তাঁর লোকদের জন্য যে উদ্দেশ্য আছে তা অর্জন করি।
৪। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে আমরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পবিত্র হয়ে উঠি। তারা বিশ্বাস করে যে আমরা একটা কোনো স্টাইল মেনে বা “করা উচিৎ এবং করা উচিৎ নয়”-এর তালিকা অনুসরণ করার মাধ্যমে পবিত্র হয়ে উঠি। তারা বিশ্বাস করে যে পবিত্রতা হল বাইরের পোশাকের মতো, একটি পরিবর্তিত হৃদয় নয়।
৫। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে একজন ব্যক্তি পবিত্র তার প্রমাণ পাওয়া যায় পবিত্র আত্মার ভাষায় কথা বললে বা অলৌকিক ঘটনা ঘটলে। তারা পবিত্রতাকে একটি জীবন দিয়ে পরিমাপ করে না, বরং চিহ্ন এবং অলৌকিকতা দিয়ে বিচার করে।
৬। অবশেষে, বহু মানুষ বিশ্বাস করে যে পবিত্রতা অসম্ভব! তারা বিশ্বাস করে যে পবিত্রতা একটি আদর্শ বিষয় যা ঈশ্বর আমাদেরকে আমাদের সবচেয়ে ভালো কাজটা করার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দিয়েছেন, কিন্তু এটা এই পৃথিবীতে বাস্তব বিষয় নয়। এই বিশ্বাস নিয়ে, কেউ ঈশ্বরের “পবিত্র হও” আদেশটি অর্জন করতে পারে না।
তবে, পবিত্র হওয়ার জন্য ঈশ্বরের আদেশ হল এমন একটি আদেশ যা তিনি আমাদেরকে তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য মেনে চলতে বলেন। ঈশ্বর একজন উত্তম পিতা; তিনি আমাদের কখনোই এমন কিছু করতে বলেন না যা তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে করা অসম্ভব। পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বর আমাদের যা বানাতে চেয়েছেন তা হওয়া। আমাদের নিজেদের ক্ষমতায়, একটা পবিত্র হৃদয় অসম্ভব, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিতে, প্রত্যেক বিশাসীর জন্য একটি পবিত্র হৃদয় সম্ভব। পবিত্রতা ঈশ্বরের অনুগ্রহের মাধ্যমে আসে, আমাদের নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী নয়।
► আপনি যেখানে পরিচর্যা কাজ করেন সেখানে পবিত্রতার ভুল ধারণাগুলির মধ্যে কোনটি বেশি প্রচলিত? আপনার আঞ্চলিক খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের মধ্যে কি পবিত্রতা সুন্দরভাবে পরিলক্ষিত হয়?
পবিত্রতার বাইবেলভিত্তিক চিত্র
উপরে উল্লিখিত পবিত্রতার নেতিবাচক ধারণাগুলি বাদ দিয়ে, বাইবেল পবিত্রতাকে ঈশ্বরের সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর সম্ভবনা হিসেবে দেখায়। সেই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করুন যেগুলিকে বাইবেলে পবিত্র বলা হয়েছে। সেগুলির কোনোটিই কুৎসিত বা ঘৃণ্য নয়; তারা সুন্দর এবং আকর্ষণীয়।
ঈশ্বরের মন্দির এবং তাঁর আরাধনার জন্য ব্যবহৃত জিনিসগুলি সুশোভিত ছিল (লুক ২১:৫, যিশাইয় ৬৪:১১, যাত্রাপুস্তক ২৮:২)।
ইজরায়েলকে বলা হত পবিত্র জাতি যে অন্য জাতিকে ঈশ্বরের কাছে আকৃষ্ট করবে (যিশাইয় ৪৯:৩)। তার পবিত্রতা মানুষকে আকর্ষণ করেছিল (১ রাজাবলী ৮:৪১-৪৩); এটি তাদের দূরে সরিয়ে দেয়নি।[1]
চার্চকে একটি পবিত্র জাতি বলা হয়েছে (১ করিন্থীয় ১:২, ১ পিতর ২:৯). সে তার বরের জন্য সুন্দর কনের বেশে সজ্জিত (ইফিষীয় ৫:২৭, প্রকাশিত বাক্য ১৯:৭, প্রকাশিত বাক্য ২১:২)।
এই চিত্রগুলোর প্রত্যেকটিই আকর্ষণীয়। বাইবেল দেখায় যে সত্যিকারের পবিত্রতা অবমাননাকর এবং ভয়ের বিষয় নয়। উপরন্তু, এটি আমাদের স্বর্গস্থ পিতার একটি প্রেমময় উপহার। যদি আমরা পবিত্রতাকে সঠিকভাবে বুঝি, তাহলে আমরা অবশ্যই একটি পবিত্র হৃদয় এবং একটি পবিত্র জীবনের জন্য ক্ষুধার্ত হব। বাইবেল যেভাবে পবিত্রতার শিক্ষা দেয় যদি আমরা সেভাবে পবিত্রতার বিষয়ে প্রচার করতে পারি, তাহলে আমাদের লোকেরাও আবশ্যিকভাবে একটি পবিত্র হৃদয় এবং একটি পবিত্র জীবনের জন্য ক্ষুধার্ত হবে। পবিত্রতা একজন প্রেমিক পিতার তরফ থেকে একটি সুন্দর উপহার।
[1]আপনি বলতে পারেন, “ফরিশীদের ব্যাপারটা কী? তারা ‘পবিত্র লোক’ বলে পরিচিত ছিল, কিন্তু তারা অন্যদের বিতাড়িত করত।” আমরা এই অধ্যায়গুলিতে দেখব যে ফরিশীদের “পবিত্রতা” খাঁটি পবিত্রতা ছিল না। তাদের ধার্মিকতা একটি লোকদেখানো পেশা ছিল, সত্যিকারের পবিত্রতা ছিল না।
পবিত্রতার সৌন্দর্য ঈশ্বরের আদি সৃষ্টিতে দেখা যায়
ঈশ্বর একটি নিখুঁত পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন
শুরু হয়েছিল এদেন উদ্যানে, এক অপরূপ সুন্দর বাগান। আপনি এতদিন অবধি সবচেয়ে মিষ্টি যে ফলটি খেয়েছেন তার কথা ভাবুন; এদেনের ফল তার চেয়েও বেশী মিষ্টি। আপনি এতদিন অবধি সবচেয়ে সুন্দর যে ফুলটি দেখেছেন তার কথা ভাবুন; এদেনের ফুলগুলো তার চেয়েও বেশী সুন্দর দেখতে ছিল। ঈশ্বর একটা নিখুঁত পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, পাপের প্রভাবমুক্ত এক পৃথিবী। তিনি কষ্ট, চোখের জল, বা মৃত্যুহীন এক পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ঈশ্বর মূলত ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্কের পৃথিবী তৈরি করেছিলেন। কোনোকিছুই মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আলাদা করতে পারে না। প্রত্যেকদিন, ঈশ্বর আদম এবং হবার সাথে দেখা করতে আসতেন। অন্য কোনো প্রাণীর কাছে এই সুযোগটা ছিল না। ঈশ্বর মানুষকে তাঁর নিজের সাথে একটি বিশেষ সম্পর্কের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। এদেন উদ্যানে, ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে যথাযথ শান্তি বিরাজ করত।
শয়তান ঈশ্বরের নিখুঁত পৃথিবীকে বিকৃত করেছিল
শয়তান এই নিখুঁত পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ঈশ্বরের তৈরি প্রতিটি জিনিসকে শয়তান ঘৃণা করত। তবে সবকিছুর ওপরে, ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে এই নিবিড় সম্পর্কটাকে শয়তান ঘৃণা করত। সে ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এই সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দিতে বদ্ধপরিকর ছিল।
শয়তান মানুষকে সরাসরি ধ্বংস করতে পারত না, তাই সে ঠিক করেছিল ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যবর্তী সম্পর্কটা নষ্ট করে দেবে। শয়তান জানত যে ঈশ্বর পবিত্র এবং সেই ঈশ্বর তাঁর প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। শয়তান মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের পবিত্র প্রতিকৃতিকে নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। পবিত্র ঈশ্বর এবং পবিত্র মানুষ একটি অভেদ্য সম্পর্কে বাস করত, কিন্তু শয়তান মানুষকে পাপে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে এই সম্পর্ক নষ্ট করতে পেরেছিল।
শয়তান একটি সাপের রূপ ধরে হবার কাছে এসেছিল। সাপ ঈশ্বরের আদেশের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল। সে জানতে চেয়েছিল, “সত্যিই কি ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই বাগানের কোনও গাছের ফল খেয়ো না’?” সে চেয়েছিল হবা ঈশ্বরের উত্তমতার বিষয়ে সন্দেহ করুক। হবা উত্তর দিয়েছিল, “আমরা বাগানের গাছগুলি থেকে ফল খেতে পারি, কিন্তু ঈশ্বর বলেছেন, ‘বাগানের মাঝখানে যে গাছটি আছে, তার ফল তোমরা অবশ্যই খাবে না, আর এটি তোমরা ছোঁবেও না, এমনটি করলে তোমরা মারা যাবে।’” (আদিপুস্তক ৩:১-৬)।
আদম ও হবাকে ভালো-মন্দের জ্ঞান থেকে দূরে রাখার জন্য সাপ ঈশ্বরকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সাপ বলেছিল, “অবশ্যই তোমরা মরবে না। কারণ ঈশ্বর জানেন যে, যখন তোমরা এটি খাবে, তখন তোমাদের চোখ খুলে যাবে, ও তোমরা ভালোমন্দ জানার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের মতো হয়ে যাবে।” সাপ হবাকে অহংকারের পথে উস্কানি দিয়েছিল, “তোমরা ঈশ্বরের মতো হয়ে যাবে” (আদিপুস্তক ৩:৪-৫)।
হবা ফলটা খেয়েছিল, সেটি আদমকে দিয়েছিল, এবং সেও খেয়েছিল। আদম এবং হবা জানত যে তারা ঈশ্বরের নিয়ম অমান্য করেছে। যখন ঈশ্বর বাগানে এসেছিলেন, তারা লজ্জিত ছিল এবং তাঁর কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছিল। ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে থাকা নিবিড় বন্ধুত্ব ভেঙে গিয়েছিল।
ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির ওপর থেকে হাল ছেড়ে দেননি
তাদের পাপের জন্য, ঈশ্বর আদম ও হবাকে এদেন উদ্যান থেকে বের করে দিয়েছিলেন। পাপ ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে থাকা সম্পর্কটি ভেঙে দিয়েছিল। পাপ মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে নষ্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর ভালোবাসার জন্য, ঈশ্বর মানুষকে এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে একা ছেড়ে দেননি। ঈশ্বর বলতেই পারতেন, “আদম, এই বিপর্যয়ের কারণ তুমি। এটা তোমার সমস্যা! আমি এর মধ্যে নেই।” বরং, একজন প্রেমিক ঈশ্বর আমাদের পৃথিবীর অংশ হয়ে গেলেন এবং আমদের পাপের জন্য একটি নিরাময় প্রদান করলেন।
এই নিরাময়ের মধ্যে ছিল ক্ষমার পথ। একজন পবিত্র ঈশ্বর এবং বিপথগামী মানুষের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য ঈশ্বর একটি উপায় প্রদান করেছিলেন। চার্চ সবসময় প্রচার করে, “পাপীরা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে ধার্মিক হতে পারে।” ক্রুশের মাধ্যমে, আমরা আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা পেতে পারি।
এটা একটা অসাধারণ বিষয়! কিন্তু কিছু কিছু সময়ে চার্চ ঈশ্বরের নিরাময়ের অন্য অংশটি ভুলে যায়। পাপের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বিধান কেবল ক্ষমা করার পথটি নয় বরং পুনঃস্থাপন করাও। ঈশ্বর তাঁর প্রতিমূর্তি মানুষের মধ্যে পুনঃস্থাপন করার জন্য একটি উপায় দিয়েছেন।
“তোমরা পাপের শাস্তি থেকে মুক্ত হতে পারো, কিন্তু কখনোই পাপের কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হবে না”, এটা বলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট ছিলেন না। না! ঈশ্বর একটি উপায় প্রদান করেছিলেন যার দ্বারা মানুষ পবিত্র হতে পারে। ঈশ্বর বাগানে পবিত্র লোকদের সাথে হাঁটাচলা করতেন; তিনি একজন পাপীর সাথে চলাফেরা করতে পারেন না। ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাথে সুসম্পর্ক চান, তাই তিনি আমাদের পবিত্র করার জন্য একটি উপায় প্রদান করেছিলেন।
গোটা শাস্ত্র জুড়ে, আমরা ঈশ্বরকে তাঁর লোকদের পবিত্র করে তুলতে দেখি যাদের সাথে তিনি সুসম্পর্কে থাকতে পারেন। ঈশ্বর বলেননি, “আমি জানি তোমরা পাপী, কিন্তু তোমাদের পাপের ক্ষেত্রে আমি আমার চোখ বন্ধ রাখব আর মনে করব তোমরা ধার্মিক।” পরিবর্তে, ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন তাঁর লোকদের তিনি পবিত্র করবেন।
তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা পালন করো ও তাঁর পথে চলো তাহলে তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর শপথ অনুসারে তোমাদের তাঁর পবিত্র প্রজা হিসেবে স্থাপন করবেন (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৯)।
ঈশ্বর তাঁর লোকদের পবিত্র করতে চান। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা তাঁর লোকদের জন্য। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছে যে তাঁর লোকেরা “আখ্যাত হবে পবিত্র প্রজা, এবং সদাপ্রভুর মুক্তিপ্রাপ্ত লোক বলে” (যিশাইয় ৬২:১২)।
পবিত্রতার সৌন্দর্য ঈশ্বরের প্রকৃতিতে প্রকাশিত হয়
পতনের কারণে, মানুষ আর পবিত্র রইল না। আমরা দ্রুত ঈশ্বরের পবিত্র প্রকৃতি ভুলে গেছিলাম। ঈশ্বর আমাদের তাঁর নিজস্ব প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছিলেন। আর এখন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে দেবতাদের তৈরি করেছি – ঈর্ষান্বিত, ঘৃণাপূর্ণ, এবং অহংকারী।
বাবিলীয়রা মর্দক (Marduk)-এর কাহিনী শোনায়, যে তার নিজের মাকে হত্যা করে প্রধান দেবতা হয়ে উঠেছিল। গ্রীকরা জিউস (Zeus)-এর কাহিনী শোনায় যার একাধিক স্ত্রী ছিল। রোমানরা বাক্কাউস (Bacchus)-এর কাহিনী শোনায়, যে মদ্যপান এবং যৌনতার দেবতা।
এই দেবতারা পবিত্র ছিল না । যারা এই দেবতাগুলোর আরাধনা করত তারা তাদের দেবতাগুলোর মতোই ছিল। তারা মিথ্যে বলত, চুরি করত, এবং ঠকাতো ঠিক যেমন তাদের দেবতারা মিথ্যে বলত, চুরি করত, এবং ঠকাতো। পাপী মানুষ পাপী দেবতা তৈরি করেছিল। পরিবর্তে, এই দেবতারা মানুষকে পাপ করে যাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিল। আমরা আমাদের আরাধ্য দেবতাদের মতোই হয়ে উঠেছিলাম।
যিহোবা এরকম মিথ্যে ঈশ্বরদের মতো নন। ঈশ্বর হলেন পবিত্র। বারংবার, শাস্ত্র ঈশ্বরের পবিত্রতার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে। লোহিত সাগর পেরিয়ে যাওয়ার পর, ইজরাজেলের লোকেরা তাদের পবিত্র ঈশ্বরের আরাধনা করেছিল। তারা গেয়েছিল, “দেবতাদের মধ্যে কে তোমার মতো, হে সদাপ্রভু? তোমার মতো কে—পবিত্রতায় মহিমান্বিত...” (যাত্রাপুস্তক ১৫:১১)।
গীতরচক গেয়েছেন, “তথাপি তুমিই পবিত্র; ইস্রায়েলের প্রশংসায় তুমিই অধিষ্ঠিত” (গীত ২২:৩)। ইজরায়েল ঈশ্বরকে তাঁর পবিত্রতার জন্য প্রশংসিত করেছিল। গীতরচক ঈশ্বরকে বলেছেন “ইজরায়েলের পবিত্রতম” (গীত ৭১:২২; গীত ৭৮:৪১; গীত ৮৯:১৮)।
ভাববাদীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে ঈশ্বর পবিত্র। গীতসংহিতার রচয়িতার মতো তাঁরা ঈশ্বরকে বলেছেন “ইস্রায়েলের পবিত্রতম” (যিশাইয় ৫:১৯; যিশাইয় ১০:২০; যিরমিয় ৫০:২৯; যিরমিয় ৫১:৫; যিহিষ্কেল ৩৯:৭)। যিশাইয় তাঁকে সম্মানিত করে বলেছেন, “কারণ যিনি উচ্চ ও উন্নত, যিনি চিরকাল জীবিত থাকেন ও যাঁর নাম পবিত্র” (যিশাইয় ৫৭:১৫)। পবিত্রতা ঈশ্বরের চরিত্রের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যে ঈশ্বরের কাছে তাঁর পবিত্রতার শপথ করা তাঁর নিজের নামে শপথ করার সমান ছিল (আমোষ ৪:২; আমোষ ৬:৮)। হবক্কূক সাক্ষ্য দিয়েছেন যে ঈশ্বরের চোখ এত পবিত্র যে তিনি মন্দ দেখতে পান না (হবক্কূক ১:১৩)। ভাববাদীরা জানতেন যে ঈশ্বর পবিত্র।
স্বর্গে ঈশ্বরের আরাধনা তাঁর পবিত্রতাকে উদযাপন করে। সরাফেরা (Seraphim) বন্দনা করে, “পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র, সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু” (যিশাইয় ৬:৩)। প্রকাশক যোহন দেখেছিলেন চারটি প্রাণী ঈশ্বরের প্রশংসা করছে। তারা গাইছে, “পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র, প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, যিনি ছিলেন এবং যিনি আছেন এবং যিনি আসছেন!” (প্রকাশিত বাক্য ৪:৮)। ঈশ্বর হলেন একজন পবিত্র ঈশ্বর।
ঈশ্বরের তাঁর লোকদের জন্য যে পরিকল্পনা আছে তাতে পবিত্রতার সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়
একজন পবিত্র ঈশ্বর মানব জাতিকে তাঁর সাথে সুসম্পর্কে থাকার জন্য তৈরি করেছিলেন, কিন্তু আমাদের পাপ আমাদেরকে ঈশ্বর থেকে আলাদা করেছিল। তবুও, ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাথে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। যেহেতু কেবল পবিত্র লোকেরাই একজন পবিত্র ঈশ্বরের উপস্থিতিতে থাকতে পারে, তাই তিনি আমাদের পবিত্র করার জন্য একটি উপায় প্রদান করেছিলেন। ঈশ্বর সেই লোকদের পবিত্রতার মানে শিখিয়েছিলেন যারা পবিত্র ছিল না। এগুলি হল সেই পদ্ধতির দুটি অংশ:
১। ঈশ্বর মানুষকে এক পবিত্র ঈশ্বরের স্বভাব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। মর্দক, জিউস, এবং বাক্কুস শক্তিশালী ছিলেন কিন্তু অনৈতিক ছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর নিজেকে শক্তিশালী এবং পবিত্র রূপে প্রকাশ করেছেন।
২। ঈশ্বর মানুষকে পবিত্র মানুষদের স্বভাব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ঈশ্বর বলেছিলেন, “তোমরা পবিত্র হও, কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমি পবিত্র” (লেবীয় পুস্তক ১৯:২)। যেহেতু ঈশ্বর পবিত্র, তাই তাঁর লোকদেরও অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।
যিশাইয় একটি পাপী জাতির কাছে প্রচার করেছিলেন। পাপ ঈশ্বরের লোকদের সৌন্দর্য নষ্ট করেছিল। ঈশ্বরের নির্বাচিত জাতি থেকে, ইজরায়েল বন্দীদশায় পতিত হওয়া এক পরাজিত জাতির লজ্জাজনক পর্যায় পরিণত হয়েছিল। তার আর কোনো সৌন্দর্য ছিল না; সে ছিল এক অপমানিত দাস। কিন্তু যিশাইয় এমন এক দিনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যেদিন ইজরায়েলের ধার্মিকতা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সেইদিন, ইজরায়েল সদাপ্রভুর হাতের এক সৌন্দর্যের মুকুট হয়ে উঠবে (যিশাইয় ৬২:১-৩)।
যারা বাইবেলে পবিত্রতার বার্তাটি ভুল বুঝেছে তারা মূলত পবিত্রতাকে আইনবাদ, কঠোর নিয়মাবলী, এবং কঠিন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে চিত্রিত করে। এটি পবিত্রতার বাইবেলভিত্তিক দৃষ্টিকোণ নয়। উপরন্তু, পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বরের নিজস্ব পবিত্রতার সৌন্দর্য প্রকাশ করা। পবিত্র হওয়া একজন পবিত্র ঈশ্বরের সাথে নিবিড় সম্পর্কে বাস করার আনন্দপূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে। বাইবেলে, পবিত্রতা কখনোই একটি বিষাদের বিষয় নয়; এটি আনন্দ এবং সৌন্দর্যের একটি রূপক!
বাইবেলে, ঈশ্বর তাঁর পবিত্র স্বভাব প্রকাশ করেছেন। তারপর, ঈশ্বর তাঁর লোকদের শিখিয়েছেন কীভাবে পবিত্র জীবন যাপন করতে হয়। এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঈশ্বর দেখিয়েছেন যে তিনি তাঁর লোকেদের সেটি হয়ে ওঠার ক্ষমতা দেবেন যা হয়ে ওঠার জন্য তিনি আমাদের আহ্বান করেছেন। তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে, ঈশ্বর একটি পবিত্র জাতি তৈরি করতে পারেন। ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের মধ্যে পাপকে এড়িয়ে যাননি; পরিবর্তে, তিনি আমাদের পবিত্র করেছেন। একজন পবিত্র ঈশ্বর একটি পবিত্র জাতির সাথে সুসম্পর্কে থাকতে চান।
পবিত্র হওয়া বলতে কী বোঝায়?
তাঁর বাক্যের মাধ্যমে, ঈশ্বর তাঁর লোকদের শিখিয়েছেন পবিত্র হওয়ার অর্থ কী। যখন ঈশ্বর তাঁর লোকদের শেখাতে শুরু করেছিলেন, তখন তারা পবিত্রতার ব্যাপারে কিছুই জানত না। তারা কখনো এক পবিত্র ঈশ্বরকে বা এক পবিত্র মানুষকে দেখেনি। ঠিক যেমনভাবে আমরা একটা বাচ্চাকে ভাষা শেখাই সেইভাবেই ঈশ্বর পবিত্রতার মানে শিখিয়েছিলেন।
যখন আমরা একটি ছোটো শিশুকে পড়াই, আমরা একটা চেয়ারের দিকে নির্দেশ করি আর বলি, “চেয়ার।” আমরা একটা গাড়ির দিকে নির্দেশ করি আর বলি, “গাড়ি।” আস্তে আস্তে শিশুটি বিভিন্ন শব্দের মানে শেখে। একটি শিশু “ভালোবাসা” শব্দটির মানে শেখে তার মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসার অভিজ্ঞতা লাভ করার মাধ্যমে। একটি শিশু “ন্যায়বিচার” শব্দটির মানে শেখে যখন তার বাবা-মা তাকে অবাধ্যতার জন্য শাস্তি দেয়।
ঈশ্বর একইভাবে আমাদের পবিত্রতার মানে বুঝিয়েছেন। ভ্রষ্ট মানুষ হিসেবে, আমরা জানতাম না পবিত্র হওয়া বলতে আসলে কী বোঝায়। ঈশ্বর ধীরে ধীরে বাক্যের চিত্রের মাধ্যেম তাঁর লোকদের কাছে পবিত্রতার মানে প্রকাশ করেছেন যা চিত্রায়িত করে পবিত্রতা বলতে আসলে কী বোঝায়। বাইবেল থেকে পবিত্রতা শব্দটিরে অর্থ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখি:
১। পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের সাথে একটি নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখা (২ করিন্থীয় ৬:১৬-১৮)। আদিপুস্তকে পবিত্র লোকেরা (হনোক এবং অব্রাহামের মতো ব্যক্তিরা) আসলে এমন লোক ছিলেন যারা ঈশ্বরের সাথে একটি নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। তাঁরা ঈশ্বরের সাথে চলাফেরা করতেন। পবিত্র লোকদের জীবনকে দেখানোর মাধ্যমে, ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে একজন পবিত্র ব্যক্তি হল এমন এক ব্যক্তি যার ঈশ্বরের সাথে একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে।
২। পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের স্বরূপকে প্রতিফলিত করা (কলসীয় ৩:১০, ২ করিন্থীয় ৩:১৮)। পবিত্রতা একটি মানুষের স্বাভাবিক চরিত্র নয়। পবিত্রতা কেবল ঈশ্বরের ঐকান্তিক বৈশিষ্ট্য। ইস্রায়েলকে পবিত্র হতে বলা হয়েছিল, কারণ ঈশ্বর পবিত্র (লেবীয় পুস্তক ১৯:২)। পবিত্র হওয়া মানে হল আমাদের জীবনে ঈশ্বরের স্বরূপকে প্রতিফলিত করা। পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বরের মতো হওয়া।
৩। পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের জন্য পৃথকীকৃত হওয়া (যাত্রাপুস্তক ২৯:৪৪, লেবীয় পুস্তক ২০:২৬). বাইবেলে প্রথমবার পবিত্র শব্দটি যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে এটি এমন একটি দিনকে নির্দেশ করে যে দিনটি ঈশ্বরের বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য পৃথক হয়েছিল (আদিপুস্তক ২:৩)। সাব্বাত বা বিশ্রামবার (Sabbath Day) দিনটি পবিত্র ছিল; এটিকে অন্য ছয়দিনের থেকে আলাদা করা হয়েছিল বা এটি পৃথক ছিল। যেমনভাবে একটি শিশু “চেয়ার” শব্দটির মানে শেখে, সেভাবেই ঈশ্বর সপ্তম দিনটিকে নির্দেশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “এটি পবিত্র।”
৪। পবিত্র হওয়ার মানে হল একটি অবিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী হওয়া (১ রাজাবলী ৮:৬১)। এই ইতিহাসভিত্তিক বইগুলিতে, ঈশ্বর নিখুঁত শব্দটি এমন লোকদের বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন যাদের একটি অবিভক্ত হৃদয় ছিল। পবিত্র হওয়া মানে হল ঈশ্বরের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারে দৃঢ়মনস্ক থাকা। একটি পবিত্র হৃদয় ঈশ্বরকে কোনোরকম বিভেদ ছাড়াই ভালোবাসে।
৫। পবিত্র হওয়ার মানে হল একটি ধার্মিকতার জীবন যাপন করা (কলসীয় ১:২২, তীত ২:১২, ১৪)। ভাববাদীরা সেইসব মানুষের কাছে প্রচার করেছিলেন যারা মনে করত, “আমরা মন্দিরে আরাধনা করি এবং নৈবেদ্য উৎসর্গ করি। আমরা পবিত্র।” ভাববাদীরা দেখিয়েছেন যে রীতি মেনে চলাই যথেষ্ট নয়। পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বর এবং অন্যদের সামনে ধার্মিকভাবে জীবন যাপন করা। পবিত্র লোকেরা ন্যায়বিচার করে, প্রেম প্রদর্শন করে, এবং ঈশ্বরের সাথে নম্রভাবে চলে (মীখা ৬:৮)।
৬। পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে যথার্থভাবে ভালোবাসা (মথি ২২:৩৬-৪০)। সুসমচারগুলি দেখায় যিশুখ্রিষ্টের জীবনে ঈশ্বরের পবিত্রতার পূর্ণ প্রকাশ। যিশুর একটা পবিত্র হৃদয় ছিল যা পিতার ইচ্ছার প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত ছিল। যিশুর দুটি পবিত্র হাত ছিল যা অন্যদের প্রতি যথার্থ ভালোবাসা প্রদান করেছিল। যিশু দেখিয়েছিলেন যে পবিত্র হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরকে ভালোবাসা, এবং আমরা যেমন নিজেদের ভালোবাসি তেমনই আমাদের প্রতিবেশীদেরকেও ভালোবাসা।
৭। পবিত্র হওয়ার মানে হল পবিত্র আত্মার পরিপূর্ণতায় জীবনযাপন করা (যিহিষ্কেল ৩৬:২৭, ইফিষীয় ৫:১৮)। প্রেরিতে, আমরা এমন খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উদাহরণ দেখি যারা ঈশ্বরের আত্মায় পরিপূর্ণ ছিলেন। পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে, তাঁরা পবিত্র জীবন যাপন করতেন। আমরা কেবল তখনই হই পবিত্র যখন আমরা পবিত্র আত্মার পরিপূর্ণতায় বাস করি।
[1]৮। পবিত্র হওয়ার মানে হল খ্রিষ্টসদৃশ হওয়া (রোমীয় ৮:২৯)। যিশু ছিলেন একটি পবিত্র হৃদয় এবং পবিত্র দুই হাতের যথার্থ উদাহরণ। পত্রগুলি দেখায় যে সাধারণ খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের পক্ষে যিশুখ্রিষ্টের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা সম্ভব। পত্রগুলি মূলত দৈনন্দিন ভিত্তিতে একটি পবিত্র জীবন যাপন করার একটি নির্দেশিকা প্রদান করে। এই পত্রগুলি আমাদের শেখায় যে কীভাবে খ্রিষ্টসদৃশ ব্যক্তিদের মতো জীবনযাপন করতে হয়।
৯। পবিত্রতা আমাদের ঈশ্বরকে দেখার জন্য প্রস্তুত করে তোলে (১ যোহন ৩:২-৩, ইব্রীয় ১২:১৪)। এদনে, ঈশ্বর একটি উদ্যান প্রস্তুত করেছিলেন যেখানে পবিত্র লোকেরা আমাদের পিতার সাথে নিখুঁত সম্পর্কে থাকতে পারত। পাপের কারণে, আমরা সেই উদ্যান থেকে বিতাড়িত হয়েছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা ত্যাগ করেননি। প্রকাশিত বাক্য অধ্যায়ে, আমরা দেখি যে ঈশ্বরের লোকেরা একদিন তাঁর মুখ দর্শন করবে। কোনো পাপী মানুষ তাঁর দিকে তাকাতে পারে না, কিন্তু ঈশ্বর পবিত্র মানুষদের প্রস্তুত করছেন যারা তাঁর উপস্থিতিতে অনন্তকাল থাকবে। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা তাঁর লোকদের জন্য।
“আমাদের অবশ্যই পবিত্র হতে হবে, কারণ এটা হল একটি মহৎ উদ্দেশ্য যার জন্য খ্রীষ্ট পৃথিবীতে এসেছিলেন। মানুষকে তাদের অন্তরে পাপের আধিপত্য থেকে রক্ষা না করে সেটির অপরাধ থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা বলা সমস্ত শাস্ত্রীয় সাক্ষ্যের বিরোধিতা করে। যীশু একজন পরিপূর্ণ পরিত্রাতা। তিনি কেবল পাপের দোষ দূর করেছেন তা নয়; তিনি এটির শক্তিকে ধ্বংস করেছেন।”
-বিশপ জে. সি. রায়াল (J.C. Ryle)-এর বক্তব্য থেকে গৃহিত
উপসংহার: এক পবিত্র ঈশ্বর তাঁর লোকদের পবিত্র হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন
ড. জন স্টট (Dr. John Stott) বিংশ শতাব্দীর একজন অন্যতম বিখ্যাত খ্রিষ্টীয় প্রচারক ছিলেন। তাঁর শেষ প্রচারগুলির একটিতে, ড. স্টট ঈশ্বরের লোকদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার বিষয়ে বলেছিলেন।[1] আমরা বিশ্বাস দ্বারা অনুগ্রহের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেয়েছি; আমরা মৃত্যু থেকে জীবনে আনীত হয়েছি। কেন? আমাদের রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল আমাদের খ্রিষ্টের সদৃশ করে তোলা। ড. জন স্টট বলেছিলেন, “খ্রিষ্টসদৃশতা হল ঈশ্বরের লোকদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা।”
নতুন নিয়মের তিনটি বাক্য আমাদের দেখায় কীভাবে খ্রিষ্ট-স্বরূপে আমাদের বৃদ্ধি পৃথিবীতে আমাদেরকে ঈশ্বরের সাথে জীবনযাপনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এই পাঠ্যাংশগুলি একজন বিশ্বাসীর জীবনে পবিত্রতার গুরুত্বটি প্রকাশ করে।
রোমীয় ৮:২৯ অতীতের দিকে দেখে এবং তাঁর সন্তানদের জন্য ঈশ্বরের অনন্তকালীন উদ্দেশ্য প্রকাশ করে:
কারণ ঈশ্বর যাদের পূর্ব থেকে জানতেন, তিনি তাদের তাঁর পুত্রের প্রতিমূর্তির সাদৃশ্য দান করবেন বলে নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন, যেন তিনি অনেক ভাইয়ের মধ্যে প্রথমজাত হন।
[2]ঈশ্বরের অনন্তকালীন উদ্দেশ্য হল যেন আমরা তাঁর পুত্রের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হই। শুরু থেকেই, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে খ্রিষ্টের মত করে তোলা। রোমীয় ৮:২৮ প্রতিজ্ঞা করে যে যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে তাদের জন্য সবকিছুই একসাথে মঙ্গলসাধনের উদ্দেশ্যে কাজ করে। এই প্রতিজ্ঞাটি তাদের জন্য যারা তাঁর উদ্দেশ্য অনুসারে আহূত। তাঁর উদ্দেশ্য কী? ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য হল তাঁর সন্তানদের তাঁর পুত্রের প্রতিমূর্তিতে তৈরি করা। ঈশ্বর আমাদের পরিত্রাণ দিয়েছেন আমাদের পবিত্র করার জন্য।
পৌল কলসীয় মন্ডলীর খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের তাদের জীবনে ঈশ্বর যে অসাধারণ পরিবর্তন এনেছিলেন তা স্মরণ করিয়েছিলেন: এক সময় তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলে এবং তোমাদের মন্দ আচরণের জন্য অন্তরে ঈশ্বরের শত্রু হয়েছিলে; কিন্তু ঈশ্বর এখন খ্রিষ্টের মানবদেহে মৃত্যুবরণের দ্বারা তোমাদের সম্মিলিত করেছেন।” খ্রিষ্টের মৃত্যু দ্বারা, এই লোকেরা যারা ঈশ্বরের শত্রু ছিল, তারা এখন তাঁর সাথে সম্মিলিত হয়েছে। ঈশ্বরের নিজের কাছে তাদের সম্মিলিত করার উদ্দেশ্যটি পৌল তারপর এই বিশ্বাসীদেরকে স্মরণ করিয়েছিলেন: তিনি তাদের সম্মিলিত করেছেন, যেন তাঁর সাক্ষাতে তাদের পবিত্র, নিষ্কলঙ্ক ও অনিন্দনীয়রূপে উপস্থিত করেন (কলসীয় ১:২১-২২)।
পৌল শুধু এটা বলেননি, “তোমরা ঈশ্বরের সাথে পুনর্মিলিত হয়েছ যাতে তোমরা অনন্তকাল স্বর্গে কাটাতে পারো।” এটা একটা অসাধারণ সমাচার! কিন্তু এটা সম্পূর্ণ সুসমাচার নয়। পৌল বলেছেন, “তোমরা ঈশ্বরের সাথে পুনর্মিলিত হয়েছ যাতে তোমরা পবিত্র হতে পারো।” ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল তাঁর সন্তানদের পবিত্র এবং নিষ্কলঙ্ক করা।
২ করিন্থীয় ৩:১৮ বর্তমানের দিকে দৃষ্টি রাখে এবং দেখায় কীভাবে এই উদ্দেশ্য বর্তমানে বিশ্বাসীদের জীবনে পরিপূর্ণ হচ্ছে:
আর আমরা সকলে, যারা অনাবৃত মুখমণ্ডলে প্রভুর মহিমা দর্পণের মতো প্রতিফলিত করছি, আমরা তাঁরই প্রতিমূর্তিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া মহিমায় রূপান্তরিত হচ্ছি, যে মহিমা প্রভু, যিনি আত্মা, তাঁর কাছ থেকে আসে।
পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে আমরা গৌরবের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে পরিবর্তিত হচ্ছি। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পবিত্র আত্মার শক্তি দ্বারা তাঁর সন্তানদের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন আমরা আরো বেশী করে খ্রিষ্টের মত হয়ে উঠছি।
১ যোহন ৩:২ ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রাখে এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা প্রকাশ করে:
প্রিয় বন্ধুরা, বর্তমানে আমরা ঈশ্বরের সন্তান এবং আমরা কী হব, তা এখনও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু আমরা জানি, যখন তিনি প্রকাশিত হবেন আমরা তাঁরই মতো হব, কারণ তিনি যেমন আছেন, আমরা তেমনই তাঁকে দেখতে পাব।
প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটি এমন একটি দিনের কথা বলে যেদিন আমরা ঈশ্বরকে সামনাসামনি দেখব। সেইদিন আমরা তাঁর মত হব। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে এবং শাশ্বতভাবে সাধিত হবে। জন স্টট উক্তি করেছেন, “আমরা খ্রিষ্টের সাথে থাকব, খ্রিষ্টের মত, অনন্তকাল।”
খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, একটি পবিত্র জীবনের জন্য আমাদের সাধনা হল নিজেদের সেই দিনের জন্য প্রস্তুত করা যেদিন আমরা ঈশ্বরকে এবং আমাদের জীবনে তাঁর উদ্দেশ্যকে পূরণ হতে দেখব। পবিত্রতায় বৃদ্ধির জন্য এটি আমাদের একান্ত কাম্য হওয়া উচিৎ। প্রতিদিন আমরা আরো বেশী করে তাঁর প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছি।
পবিত্রতা কোনো মানুষের ধারণা নয়; পবিত্রতা হল ঈশ্বরের চরিত্র। পবিত্রতা বলতে আমরা যা বুঝি তা আসলে বাইবেলে প্রকাশিত ঈশ্বরের চরিত্রের উপর ভিত্তিশীল। যত বেশী আমরা তাঁর মত হয়ে ওঠার চেষ্টা করি, তত আমরা ঈশ্বরের শ্বাশত উদ্দেশ্যের সাথে সহায়তা করি। পবিত্রতা হল প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য ঈশ্বরের অন্তনকালীন উদ্দেশ্য। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিৎ যাতে আমাদের হৃদয়ে এবং জীবনে এই উদ্দেশ্য পূরণ হয়।
[1]Keswick সভায় জন স্টটের বক্তৃতা (জুন ২০, ২০১৪)। ২০শে ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে https://www.leightonfordministries. org/2014/06/20/john-stott-address-at-keswick/ থেকে সংগৃহিত।
“মানবজাতির জন্য ঈশ্বর একটি চূড়ান্ত গন্তব্য নির্ধারণ করেছেন – পবিত্রতা। তাঁর একটি উদ্দেশ্য হল সাধুদের সৃষ্টি করা। তিনি মানবজাতিকে রক্ষা করতে এসেছিলেন কারণ তিনি তাদেরকে পবিত্র হওয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন।”
- অসওয়াল্ড চেম্বার্স (Oswald Chambers)
তিনি রহস্যের চাবিকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন – স্যামুয়েল কাবু মরিস
১৮৭৩ সালে পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া দেশে স্যামুয়েল মরিস (Samuel Morris)[1] প্রিন্স কাবু (Prince Kaboo) নামে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি এক আদিবাসী প্রধানের ছেলে ছিলেন। যখন তার বাবা যুদ্ধে হেরে যান, কাবুকে মুক্তিপণ হিসেবে আটকে রাখা হয়। একদিন কাবু একটা উজ্জ্বল আলো দেখতে পান এবং স্বর্গ থেকে এক রব শোনেন যা তাকে পালিয়ে যেতে বলেছিল। যে দড়ি দিয়ে তাকে বেধে রাখা হয়েছিল সেটি আলগা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, এবং কাবু দৌড়ে জঙ্গলে ঢুকে যান।
তিনি দিনের পর দিন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে মনরোভিয়া শহরে পৌঁছান। সেই শহরে এক যুবক তাকে চার্চে আমন্ত্রণ জানায়। যখন কাবু সেই চার্চে যান, এক মিশনারি তাকে পৌলের জীবন পরিবর্তনের কাহিনীটি শুনিয়েছিলেন। তিনি যখন স্বর্গ থেকে আগত সেই আলো এবং রবের কথা বলেন, তখন কাবু বুঝতে পারেন যে সেই রবই তিনি জঙ্গলে থাকার সময়ে শুনেছিলেন! তারপর তিনি অল্প দিনের মধ্যে খ্রিষ্টকে তার মুক্তিদাতা রূপে গ্রহণ করেন এবং স্যামুয়েল মরিস নামে বাপ্তাইজিত হন।
পরবর্তী দু’বছর স্যামুয়েল মরিস তার বাইবেল অধ্যয়নকালে বাড়ি রং করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি বিশেষ করে পবিত্র আত্মার বিষয়ে এবং আত্মার শক্তিতে জীবন যাপনের বিষয়ে জানতে বেশী আগ্রহী ছিলেন। একজন মিশনারি তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি যা জানেন সবই তাকে শিখিয়েছেন, এটা জানার পর মরিস জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আপনার শিক্ষক কে ছিলেন?” তিনি তাকে আমেরিকানিবাসী এক প্রচারকের কথা বলেছিলেন যাঁর নাম স্টিফেন মেরিট (Stephen Merritt)। কোনো টাকা-পয়সা এবং পরিবহন ছাড়াই আমেরিকা যাওয়ার জাহাজ ধরতে মরিস পায়ে হেঁটে নিকটবর্তী এক বন্দরে পৌঁছান। তিনি আত্মায় জীবনযাপনের ব্যাপারে আরো জানতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
তিনি জাহাজের অপেক্ষায় সমুদ্রের ধারেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যখন জাহাজটি আসে, মরিস ক্যাপ্টেনকে অনুরোধ করেন তাঁকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। ক্যাপ্টেন প্রত্যাখান করেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার দুই কর্মী পালিয়ে যায়। তখন ক্যাপ্টেন মরিসকে বলেন যে তাকে নিউ ইয়র্ক পৌঁছানোর বিনিময়ে জাহাজে কাজ করে দিতে হবে। যাত্রাকালে জাহাজের কর্মীরা তার সাথে খুব দুর্ব্যবহার করে এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজগুলিই তাকে করতে দেওয়া হয়। তবে, স্যামুয়েল সবসময় তার সকল কর্মীবন্ধুদের প্রতি খ্রিষ্টের প্রেম দেখিয়েছিলেন, ফলস্বরূপ জাহাজ নিউ ইয়র্কে পৌঁছানো অবধি ক্যাপ্টেন এবং বেশীরভাগ কর্মী ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।
মরিস নিউ ইয়র্কে পৌঁছে স্টিফেন মেরিট-এর মিশন খুঁজে পান এবং তাঁর পবিত্র আত্মার বিষয়ে আরো জানার ইচ্ছার বিষয়টি তাকে জানান। মিঃ মেরিটের একটি মিটিংয়ে যাওয়ার ছিল তাই তিনি মরিসকে সন্ধ্যে অবধি অপেক্ষা করতে বলেন। যখন তিনি সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসেন, তিনি দেখেন মরিস একটি প্রার্থনা সভা পরিচালনা করছেন। আমেরিকায় তাঁর প্রথম রাতে, স্যামুয়েল মরিস প্রায় ২০ জন লোককে খ্রীষ্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
স্টিফেন মেরিট স্যামুয়েল মরিসকে টেলর ইউনিভার্সিটি (Taylor University)-তে ভর্তি হতে সাহায্য করেছিলেন যাতে তিনি লাইবেরিয়াতে প্রচারকার্যের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। মরিস কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই কেবল ঈশ্বরের বিধানের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ইন্ডিয়ানার ক্যাম্পাসে পৌঁছেছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, “দয়া করে আমাকে এমন একটা ঘর দিন যেটা কেউ চায় না।” গভীর রাতে তাঁর সহপাঠীরা তাকে তার পিতার সাথে কথা বলতে শুনতে পেত। ঈশ্বরের প্রতি তার পরম বিশ্বাস ক্যাম্পাসের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী চার্চগুলিকেও প্রভাবিত করেছিল।
যদিও মরিস লাইবেরিয়াতে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে ঈশ্বরের একটা ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল। টেলর ইউনিভার্সিটতে ভর্তি হওয়ার দু’বছরের মধ্যে মরিস নিউমোনিয়ায় মারা যান। তার মাত্র ২০ বছর বয়স ছিল, কিন্তু তিনি ঈশ্বরের পরিকল্পনায় শান্তিতে ছিলেন। স্যামুয়েল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, “এটা আমার কাজ নয়। এটা তাঁর কাজ। আমি আমার দায়িত্ব সম্পন্ন করেছি। আফ্রিকাতে কাজ করার জন্য তিনি আমার চেয়েও ভালো লোকদের পাঠাবেন।”
মরিসের জীবন এত লোককে প্রভাবিত করেছিল যে তাঁর শেষযাত্রায় শ’য়ে শ’য়ে লোক রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিল। বেশ কিছু সহশিক্ষার্থী “প্রিন্স কাবুর স্মরণে” সেবাকার্যের জন্য মিশনারি হিসেবে আফ্রিকায় গিয়েছিলেন।
টেলর ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “স্যামুয়েল মরিস ছিলেন টেলর ইউনিভার্সিটির জন্য ঈশ্বর প্রেরিত এক দূত। তিনি ভেবেছিলেন তিনি তার মিশনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে এখানে এসেছিলেন। কিন্তু আসলে ঈশ্বর তাকে সারা পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সাধনে টেলর ইউনিভার্সিটকে প্রস্তুত করে তুলতে পাঠিয়েছিলেন। যারা তাঁর সাথে মিলিত হয়েছিল, সকলেই ঈশ্বরের প্রতি তাঁর মহৎ তথা সরল বিশ্বাস দেখে বিমুগ্ধ হয়েছিল।”
বর্তমানে ইন্ডিয়ানার ওয়েন ফোর্টে স্যামুয়েল মরিস-এর কবরে একটি স্মারক ফলক আছে, যাতে লেখা আছে:
স্যামুয়েল মরিস
১৮৭৩-১৮৯৩
প্রিন্স কাবু
পশ্চিম আফ্রিকার অধিবাসী
বিখ্যাত খ্রিষ্টীয় আধ্যাত্মবাদী
সরল বিশ্বাসের প্রেরিত
আত্মায় পরিপূর্ণ জীবনের প্রবক্তা
স্যামুয়েল মরিস-এর ক্ষণকালীন জীবন দেখায় যে প্রত্যেক বিশ্বাসী পবিত্র আত্মার শক্তিতে জীবন যাপন করতে পারে। একটি পবিত্র হৃদয় এবং একটি পবিত্র জীবনই হল প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য।
(১) পবিত্রতার সৌন্দর্য ঈশ্বরের আদি সৃষ্টিতে দেখা যায়। ঈশ্বর একটি পাপহীন নিখুঁত পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।
(২) পবিত্রতার সৌন্দর্য ঈশ্বরের প্রকৃতিতে প্রকাশিত হয়। ঈশ্বর হলেন একজন পবিত্র ঈশ্বর।
(৩) ঈশ্বরের তাঁর লোকদের জন্য যে পরিকল্পনা আছে তাতে পবিত্রতার সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। যদিও পাপ মানুষের চরিত্রকে অপবিত্র করেছিল, তবুও ঈশ্বর তাঁর পবিত্র লোকদের জন্য তাঁর পরিকল্পনা ত্যাগ করেননি। একজন পবিত্র ঈশ্বর এবং স্খলিত মানবতার মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত করতে, ঈশ্বর শিখিয়েছিলেন:
একজন পবিত্র ঈশ্বর কেমন হন
একজন পবিত্র মানুষ কেমন হয়
(৪) পবিত্রতা সম্পর্কে একাধিক ভুল ধারণা আছে। যেমন:
কেবল কিছু লোকই পবিত্র হতে পারে।
অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে আমরা পবিত্র হয়ে উঠতে পারি।
যখন আমরা মারা যাই, কেবল তখনই আমরা পবিত্র হয়ে উঠি।
আমরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পবিত্র হয়ে উঠি।
একজন ব্যক্তি পবিত্র তার প্রমাণ পাওয়া যায় পবিত্র আত্মার ভাষায় কথা বললে বা অলৌকিক ঘটনা ঘটলে।
পবিত্রতা অসম্ভব।
(৫) পবিত্রতা সম্পর্কিত সত্যটি হল সহজ। এটি হল যে পবিত্রতা বলতে আসলে কী বোঝায়:
পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের সাথে একটি নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখা।
পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের স্বরূপকে প্রতিফলিত করা।
পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরের জন্য পৃথকীকৃত হওয়া।
পবিত্র হওয়ার মানে হল একটি অবিভক্ত হৃদয়ের অধিকারী হওয়া।
পবিত্র হওয়ার মানে হল একটি ধার্মিকতার জীবন যাপন করা।
পবিত্র হওয়ার মানে হল ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে যথার্থভাবে ভালোবাসা।
পবিত্র হওয়ার মানে হল পবিত্র আত্মার পরিপূর্ণতায় জীবনযাপন করা।
পবিত্র হওয়ার মানে হল খ্রিষ্টসদৃশ হওয়া।
পবিত্রতা আমাদের ঈশ্বরকে দেখার জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
(৬) নতুন নিয়মের তিনটি বাক্য আমাদের একজন বিশ্বাসীর জীবনে পবিত্রতার গুরুত্বটি দেখায়।
রোমীয় ৮:২৯ দেখায় যে ঈশ্বরের চিরন্তন উদ্দেশ্য হল আমাদেরকে তাঁর পুত্রের প্রতিমূর্তিতে গঠন করা।
২ করিন্থীয় ৩:১৮ দেখায় যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হচ্ছে কারণ আমরা প্রতিদিনই খ্রিষ্টের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হই।
১ যোহন ৩:২ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতাকে প্রকাশ করে; যখন আমরা ঈশ্বরকে দেখব, তখন আমরা তাঁর মতো হয়ে উঠব।
পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
(১) মনে করুন এক নতুন খ্রিষ্টবিশ্বাসী আপনাকে বলেছে, “আমি বাইবেলে পড়েছি যে ঈশ্বর আমাদের পবিত্র হতে বলেছেন কারণ তিনি পবিত্র। এটা একপ্রকার অসম্ভব! পবিত্র হওয়ার মানে কী?” এই নতুন বিশ্বাসীর জন্য এক পাতার মধ্যে একটি উত্তর লিখুন। আপনার পরবর্তী ক্লাসে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাদের উত্তর পড়তে হবে। ক্লাসে উত্তরগুলি আলোচনা করার জন্য সময় দিন।
(২) ১ পিতর ১:১৪-১৬ পাঠ করে পরবর্তী ক্লাস সেশনটি শুরু করুন।
(৩) এই কোর্সে একটি ফাইনাল প্রজেক্ট অন্তর্ভুক্ত আছে যা ক্লাসের শেষ দিনে জমা দিতে হবে। আপনি এখন থেকেই এই প্রজেক্টে কাজ করা শুরু করতে পারেন। এই প্রজেক্টির ব্যাপারে বিশদে জানতে কোর্সটির শেষে দেখুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.