যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
Audio Course Purchase

Search Course

Type at least 3 characters to search

Search through all lessons and sections in this course

Searching...

No results found

No matches for ""

Try different keywords or check your spelling

results found

Lesson 8: ক্রুশ এবং পুনরুত্থান

2 min read

by Randall McElwain


পাঠের উদ্দেশ্য

এই পাঠের শেষে শিক্ষার্থীরা:

(১) দুঃখভোগ সপ্তাহে যিশুর পরিচর্যা কাজের বিবিধ প্রতিক্রিয়াগুলি বুঝতে পারবে।

(২) একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে ডুমুর গাছকে অভিশাপ দেওয়ার অর্থটি বুঝবে।

(৩) যে দুর্বলতাটি পিতরকে পতনের দিকে ঠেলে দিয়েছিলে তা চিহ্নিত করতে পারবে।

(৪) খ্রিষ্টীয় জীবন এবং পরিচর্যা কাজের ভিত্তিমূল হিসেবে ক্রুশ এবং পুনরুত্থানের গুরুত্ব উপলব্ধি করবে।

পরিচর্যা কাজের নীতি

সমস্ত ফলপ্রসূ পরিচর্যা কাজ ক্রুশ এবং পুনরুত্থানের শক্তিতেই সম্পন্ন হয়।

ভূমিকা

সুসমাচার পুস্তকগুলির চূড়ান্ত বিষয় হল দুঃখভোগের কাহিনী। সুসমাচার পুস্তকগুলির ৮৯টি অধ্যায়ের মধ্যে ৩০টি অধ্যায় জেরুশালেমে যিশুর বিজয়ের প্রবেশ এবং পুনরুত্থানের মাঝের সপ্তাহের প্রতিই নিবেদিত। যোহন লিখিত সুসমাচারের প্রায় অর্ধেকটাই এই সপ্তাহটি নিয়ে লেখা হয়েছে। এটাই হল চূড়ান্ত সময় যেটির প্রতি যিশুর সমগ্র জীবন এবং পরিচর্যা কাজ নির্দেশিত ছিল। এই পাঠে আমরা আমাদের জীবন এবং পরিচর্যা কাজের জন্য শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের শেষ সপ্তাহটি অধ্যয়ন করব।

► এই পাঠে এগিয়ে যাওয়ার আগে, দু’টি প্রশ্ন আলোচনা করুন:

  • তাত্ত্বিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ক্রুশারোপণের অর্থ কী?

  • তাত্ত্বিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে পুনরুত্থানের অর্থ কী?

যিশুর প্রতি প্রতিক্রিয়াসমূহ: জনসমক্ষে যিশুর পরিচর্যা কাজের শেষ সপ্তাহ

সুসমাচার প্রচারকদের প্রাথমিক গুরুত্বের মধ্যে একটি হল যারা যিশুর সাথে মিলিত হয়েছিল তাদের প্রতিক্রিয়া। উদাহরণস্বরূপ, যিশুর জীবনের শুরুতে, যিনি এই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই হেরোদের প্রতিক্রিয়ার সাথে মথি পণ্ডিতদের উপাসনার তুলনা করেছেন। যোহন কূপের কাছের সেই অশিক্ষিত শমরীয় মহিলাটির সাথে ইহুদি রব্বি নীকোদীমের প্রশ্নাত্মক প্রতিবেদনের তুলনা করেছেন।

► মথি ১০:৩২-৩৯ পড়ুন।

যিশুর বার্তা সম্পর্কে কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারে না; আমরা হয় তাঁর দাবি মেনে নিই অথবা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করি। যিশু তাঁর পরিচর্যা কাজকে একটি তলোয়ার হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা এই দু’টি দলকে বিভক্ত করে। বহু পরিবার যিশুর প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া দ্বারা বিভক্ত হয়েছিল; এমনকি যিশুর নিজের পরিবারও এই পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিল (যোহন ৭:৫, মার্ক ৩:২১)। কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারেনি।

যিশুর প্রতি বিপরীত প্রতিক্রিয়াগুলি তাঁর জনসমক্ষে পরিচর্যা কাজের শেষ সপ্তাহে আরো বেশি নাটকীয় হয়ে উঠেছিল। এই বৈপরীত্য স্বয়ং ক্রুশ পর্যন্ত চলতে থাকে, যেখানে দু’জন চোর যিশুর প্রতি ভিন্ন উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।

লাসারের মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়াসমূহ

► যোহন ১১:-৫৭ পড়ুন।

এমনকি লাসারকে মৃত্যু থেকে জীবিত করার আগেও, ধর্মীয় নেতারা যিশুর বিরোধিতা করেছিল। যিশু যখন শীতকালে “মন্দির-উৎসর্গের পর্ব” (Feast of Dedication)-এর সময় মন্দিরে গিয়েছিলেন, তখন ইহুদি নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগ এনেছিল এবং তাঁকে পাথর মারার চেষ্টা করেছিল। যেহেতু তখনও তাঁর বলিদানের সময় হয়নি, যিশু সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন এবং জেরুশালেমের ধর্মীয় কেন্দ্র থেকে দূরে জর্দন নদীর অন্য পাড়ে পৌঁছেছিলেন (যোহন ১০:২২-৪২)।

যখন লাসারের মৃত্যুর খবর আসে, তখন শিষ্যরা জানতেন যে যিশুর পক্ষে যিহুদা প্রদেশে ফিরে আসা বিপজ্জনক হবে। পাঠকরা সর্বদাই থোমার সন্দেহ এবং হতাশাবাদকে উপহাস করে, কিন্তু প্রভুর প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল। তিনি অনুমান করেছিলেন (সঠিকভাবে) যে যিশুকে যিহুদা প্রদেশে হত্যা করা হবে, কিন্তু থোমা অনুগত ছিলেন। যিশু যখন যিহুদা প্রদেশে ফিরে আসার জন্য জোর দিচ্ছেন, থোমা বাকি শিষ্যদের বলেন, “চলো, আমরাও যাই, যেন তাঁর সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারি” (যোহন ১১:১৬)। থোমার পরবর্তী সন্দেহ নির্বিশেষে, আমাদের এই ভীত শিষ্যের আনুগত্য ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এটা কি আশ্চর্যজনক নয় যে যিশুর পুনরুত্থানের পরে, থোমা ভারতে সুসমাচার প্রচারকাজে শহীদ হয়ে মারা যান?

বেথানীর মতো একটা ছোটো গ্রামে, লাসারের মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার ঘটনা কোনোমতেই গুপ্ত থাকত না। ধর্মীয় নেতাদের কাছে নাটকীয় ঘটনাটি লুকিয়ে রাখার মতো কোনো উপায়ই ছিল না। যোহন এই অলৌকিক ঘটনাটির প্রতি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

লাসারের মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই জনগণ নিশ্চিত হয়েছিল যে যিশু রোমকে উৎখাত করবেন এবং জেরুশালেমে দায়ূদের সিংহাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। তারা নিশ্চিত ছিল যে যিশুই সেই প্রতিশ্রুত মশীহ। “তখন ইহুদিদের অনেকে যারা মরিয়মের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তারা যীশুকে এই কাজ করতে দেখে তাঁকে বিশ্বাস করল” (যোহন ১১:৪৫ এবং ১২:১১)। এত লোক যিশুকে বিশ্বাস করেছিল যে তা দেখে ফরিশীরা বলেছিল, “চেয়ে দেখো, সমস্ত জগৎ কেমন তাঁর পিছনে ছুটে চলেছে!” (যোহন ১২:১৯)। যিশু যখন একটি গাধায় চড়ে জেরুশালেমে প্রবেশ করেছিলেন, তখন এটি জনতার উত্সাহকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া

লাসারকে মৃত্যু থেকে জীবিত করার ঘটনাটি ধর্মীয় নেতাদের যিশুর নিজেকে মশীহ হওয়ার দাবিকে উপেক্ষা করার যেকোনো সুযোগকেই নষ্ট করে দিয়েছিল। যেহেতু জনতা যিশুর দিকে ঝুঁকছিল, ধর্মীয় নেতাদের কাছে মাত্র দু’টি বিকল্প ছিল:

১। যিশুর নিজের সম্পর্কে করা দাবি মেনে নেওয়া। তবে, এর জন্য তাদেরকে ক্ষমতার প্রতি তাদের যে উচ্চাকাঙ্খা ছিল তা সমর্পণ করতে হত। যিশু ইতিমধ্যেই তাদের ভণ্ড আচরণের নিন্দা করেছিলেন। যদি তারা স্বীকার করে যে যিশুই সেই মশীহ, তাহলে তারা ইহুদি জনগণের নেতা হিসেবে তাদের অবস্থান হারাবে।

২। যিশুকে গ্রেপ্তার করা এবং হত্যা করা। যদি তারা যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদের অবশ্যই তাঁকে হত্যা করতে হবে।

ধর্মীয় নেতারা যিশুকে হত্যা করার সিদ্ধান্তকে জাতির জন্য সর্বোত্তম বলেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছিল। ইতিহাস জুড়ে অন্যান্য দুর্বল নেতাদের মতোই, তারা তাদের সিদ্ধান্তের অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। “আমরা কী করছি? এই লোকটি তো বহু চিহ্নকাজ করে যাচ্ছে। আমরা যদি ওকে এভাবে চলতে দিই, তাহলে প্রত্যেকেই ওকে বিশ্বাস করবে। তখন রোমীয়রা এসে আমাদের স্থান ও জাতি উভয়ই ধ্বংস করবে” (যোহন ১১:৪৭-৪৮)। যিশু রোমের বিরুদ্ধে কোনো বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন – এই ভেবে তারা ভয় পেয়েছিল। তারা বুঝতে পারেনি যে তাঁর রাজ্য ছিল আত্মিক।

“আমাদের স্থান” সম্ভবত মন্দিরকে বোঝায়, এবং “আমাদের জাতি” সেই সমস্ত স্বাধীনতাকে বোঝায় যেগুলির অনুমতি রোম ইহুদিদেরকে দিয়েছিল (প্রেরিত ৬:১৩ এবং প্রেরিত ২১:২৮ দেখুন)। যদিও যিহুদা প্রদেশ রোমের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবুও ইহুদিদেরকে মন্দিরে উপাসনা করার, ধর্মীয় আইন পালন করার এবং মহাসভার মাধ্যমে কিছু বেসামরিক শাসন বজায় রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রোম বিদ্রোহ দমন করলে এই সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে।

কায়াফা মহাসভাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে পুরো জাতির কষ্টভোগ করার চেয়ে একজন মানুষের মৃত্যু হওয়া বেশি ভালো (যোহন ১১:৪৯-৫০)। হাস্যকরভাবে, যিশুকে হত্যা করার পর, মহাসভা যা নিয়ে ভয় পেয়েছিল ঠিক সেটাই ঘটেছিল। যিশুকে হত্যা করার চল্লিশ বছর পর, রোমীয়রা মন্দির ধ্বংস করেছিল, ইহুদি জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল এবং কায়াফা যা যা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন সেই সবকিছু করেই তারা একটি ইহুদি বিদ্রোহকে চূর্ণ করে দিয়েছিল।

যেহেতু তারা সমস্ত প্রমাণ ধ্বংস না করে এই অলৌকিক ঘটনাটি লুকিয়ে রাখতে পারত না, তাই সমগ্র ইস্রায়েল জাতিকে রক্ষা করার জন্য মহাসভা যিশু এবং লাসার উভয়কেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল (যোহন ১১:৫৩ এবং যোহন ১২:১০)। অলৌকিক ঘটনা অবিশ্বাসীদের উপলব্ধি করানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমরা সাধারণত মনে করি, “যদি ঈশ্বর একটি অলৌকিক কাজ দ্বারা নিজেকে ‘প্রমাণ’ করেন, তাহলে সবাই বিশ্বাস করবে।” কিন্তু, একটি অলৌকিক ঘটনা একজন সন্দেহবাদীকে কেবল তার অবিশ্বাসেই আরো দৃঢ় করে তুলতে পারে।

ধনী ব্যক্তি এবং লাসারের (যিশু যে লাসারকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন, তিনি নন) কাহিনীটিতে, ধনী ব্যক্তিটি অব্রাহামের কাছে কাতরভাব নিবেদন করেছিল যে তার ভাইদেরকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য তিনি যেন লাসারকে পাঠান। অব্রাহাম বলেছিলেন, “তারা যদি মোশি ও ভাববাদীদের কথায় কর্ণপাত না করে, তাহলে মৃত্যুলোক থেকে উঠে কেউ গেলেও তারা তাকে বিশ্বাস করবে না” (লূক ১৬:৩১)। শাস্ত্র নিজেই সত্যের জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্য। যদি আমরা শাস্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করি, তাহলে অন্য কোনো প্রমাণই আমাদেরকে উপলব্ধি করাতে পারবে না।

যিশুর প্রতি প্রতিক্রিয়া: মরিয়ম

► মথি ২৬:-১৩ এবং যোহন ১২:-১১ পড়ুন।

যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের গোটা সময়কাল জুড়েই, লাসার এবং মার্থার বোন মরিয়ম ছিল তাঁর অন্যতম একনিষ্ঠ অনুগামী। আগের একটি ঘটনায়, মার্থা অভিযোগ করেছিল কারণ মার্থা কাজে ব্যস্ত থাকলেও মরিয়ম বসে বসে যিশুর কথা শুনছিল। সেই ঘটনায়, যিশু মরিয়মের প্রশংসা করে বলেছিলেন যে মরিয়ম “সেই উত্তম বিষয়টিই মনোনীত করেছে, যা তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে না” (লূক ১০:৪২)।

তাঁর মৃত্যুর এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে, যিশু এবং তাঁর শিষ্যরা শিমোন নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েছিলেন যে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিল। লাসার এবং তার বোনেদেরকেও দলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। খাওয়ার সময়, মরিয়ম যিশুর মাথায় এবং পায়ের উপর একটি দামী সুগন্ধি তেল ঢেলে দিয়েছিলেন। এই সুগন্ধি তেলের দাম ছিল ৩০০ দিনারি, যা প্রায় এক বছরের বেতনের সমান। এমন একটি সময়কালে, যখন কোনো ব্যাংক ছিল না, সেইসময়ে এটি সম্ভবত মরিয়মের সঞ্চয়কে তুলে ধরে।

মরিয়ম অত্যাধিক টাকা নষ্ট করেছেন বলে শিষ্যরা রেগে গিয়েছিল (মথি ২৬:৮, মার্ক ১৪:৫), কিন্তু মরিয়ম কেবল একজন ব্যক্তির মতামতকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন, এবং সেই ব্যক্তি হলেন স্বয়ং যিশু। তিনি এমন একটি প্রেমের বশবর্তী হয়ে কাজ করেছিলেন যা তাকে অন্য সবার মতামতের প্রতি অন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সুগন্ধি তেলের দাম কত তা তিনি চিন্তা করেননি, এবং অন্যরা কী ভাবছে তা নিয়ে তিনি পরোয়া করেননি। তিনি তার প্রভুর উপাসনা করেছিলেন, এবং সেটা ছাড়া আর কিছুই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

শিষ্যরা যখন মরিয়মের কাজের প্রতিবাদ করেছিলেন, তখন যিশু তাঁদের তিরস্কার করেছিলেন: “ওকে ছেড়ে দাও… ও আমার প্রতি এক অপূর্ব কাজ করেছে” (মার্ক ১৪:)। মাত্র কয়েকদিন পরেই ক্রুশীয় মৃত্যু হতে চলেছে জেনে, যিশু মরিয়মের কাজের এই প্রতীকটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন: “আমাকে সমাধির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করল” (মথি ২৬:১২)। যিশু এই নারীটিকে সম্মানিত করেছিলেন যিনি প্রেমময় উপাসনার নিঃস্বার্থ কাজে তার সর্বোত্তমটি উজাড় করে দিয়েছিল।

যখন আমরা মরিয়মের যিশুকে অভিষিক্ত করার ঘটনাটি পড়ি, তখন আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, “আমি যিশুকে কতটা ভালোবাসি? আমি কি তাঁর প্রতি বেশি যত্নশীল নাকি অন্যদের মতামতের প্রতি বেশি যত্নশীল? মরিয়ম সত্যিই যিশুকে ভালোবাসতেন।

যিশুর প্রতি প্রতিক্রিয়া: বিজয়ী প্রবেশ

► মথি ২১:-১১ এবং যোহন ১২:১২-১৯ পড়ুন।

রবিবারে, যিশু একটি গাধায় চড়ে জেরুশালেমে গিয়েছিলেন। একটি সাধারণ দিনে, এই ঘটনায় অস্বাভাবিক কিছুই হবে না; একজন গালীলীয় শিক্ষকের সাথে অনুগামীদের একটি ছোটো দল জেরুশালেমে নিস্তারপর্বের উৎসবে যাত্রা করছেন। কিন্তু এটা কোনো সাধারণ সময় ছিল না। লাসারের মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠা এই নিস্তারপর্বের তীর্থযাত্রাকে একটি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ঘটনায় পরিবর্তিত করেছিল।

মথি জেরুশালেমে যিশুর প্রবেশের ধর্মীয় প্রভাব তুলে ধরেছেন। মথি দেখিয়েছেন যে যিশুর প্রবেশ সখরিয় ভাববাদীর ভাববাণী পূর্ণ করেছে। জনতার কথাগুলি গীত ১১৮ অধ্যায় থেকে এসেছে, এটি হল নিস্তারপর্বের একটি গান যা জেরুশালেমে একটি বিজয়ী শোভাযাত্রাকে বর্ণনা করেছে (মথি ২১:-১১, সখরিয় :, গীত ১১৮:২৬)৷

এই শোভাযাত্রাটি রাজনৈতিক ইঙ্গিতে পরিপূর্ণ ছিল:

  • একজন রাজার প্রতি বশীভূত থাকার জন্য জনতা রাস্তায় কাপড় ছড়িয়ে দিয়েছিল (মথি ২১:৮, 2 রাজাবলি ৯:১৩)

  • মেকাবীয় যুগ (Maccabean period) থেকে খেজুর পাতা কোনো সামরিক শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীকস্বরূপ ছিল (যোহন ১২:১৩, ১ মেকাবী ১৩:৫১)।

  • “হোশান্না!” কথাটির অর্থ ছিল “আমাদের রক্ষা করুন”, উদ্ধার পাওয়ার জন্য আর্তচিৎকার।

  • “দাউদের পুত্র” ছিল একটি রাজকীয় এবং মশীহ-সংক্রান্ত উপাধি।

লোকেরা বিশ্বাস করেছিল যে রোমকে উৎখাত করতে এবং তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে যিশু জেরুশালেমে প্রবেশ করছেন। দায়ূদ কুলের রাজার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়েছিল। ভাববাদীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি শীঘ্রই পূরণ হতে চলেছিল।

মাত্র কয়েকদিন পরেই, এই একই লোকেদের মধ্যে অনেকেই চিৎকার করেছিল, “ওকে ক্রুশে দিন!” কেন? কারণ তারা ভুল কারণে যিশুকে নিয়ে উল্লাস করছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল যে তিনি রোমকে উৎখাত করবেন, কিন্তু তাঁর সামরিক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তারা একটি রাজনৈতিক রাজ্য চেয়েছিল, কিন্তু তিনি একটি আত্মিক রাজ্য নিয়ে এসেছিলেন। তাদের এই হতাশায়, এই জনতা শীঘ্রই যিশুর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল।

সানহেদ্রিন মহাসভার রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং সামাজিকভাবে অভিজাত সদস্যরা ইতিমধ্যেই যিশুকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল; ক্ষমতাহীনদের শীঘ্রই তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়ার সময় এসে গিয়েছিল। সামনে কি হতে চলেছে তা জেনে, যিশু সেই শহরের ভাগ্যের জন্য কেঁদেছিলেন যেটি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে (লূক ১৯:৪১-৪৪)। যিশু জানতেন যে তাঁর বিজয় মিছিল ক্রুশের দিকে পরিচালিত হবে। ভিড় জনতা গীত ১১৮:২৬ উল্লেখ করে জয়ধ্বনি করেছিল, “ধন্য সেই ব্যক্তি যিনি সদাপ্রভুর নামে আসেন”। যিশু এই গীতের পরবর্তী পদটি জানতেন, “বলির পশু নাও, আর দড়ি দিয়ে তা বেদির উপর বেঁধে রাখো” (গীত ১১৮:২৭)। যিশু একটি বলিদান হিসেবে জেরুশালেমে প্রবেশ করেছিলেন যাকে শীঘ্রই “বেদীতে”, অর্থাৎ সেই রোমীয় ক্রুশে বাঁধা হবে।

একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: যিশু একটি ডুমুর গাছকে অভিশাপ দেন

► মার্ক ১১:১২-২৫ পড়ুন।

সিনপটিক গসপেলের [মথি, মার্ক, লূক] প্রতিটিতে যিশুর জনসমক্ষে পরিচর্যা কাজের শেষ সপ্তাহে একটি নিষ্ফলা ডুমুর গাছকে অভিশাপ দেওয়ার কাহিনীটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সোমবার বেথানীতে রাত কাটিয়ে জেরুশালেমে যাওয়ার সময়ে যিশু ডুমুর গাছটিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার শিষ্যরা দেখেছিলেন যে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাছটি শুকিয়ে গেছে।

যদিও তখন ডুমুরের মরশুম ছিল না (মার্ক ১১:১৩), তবে পাতার উপস্থিতির অর্থ ছিল যে গাছটিতে সবুজ ডুমুর থাকা উচিত ছিল। ডুমুর গাছের ফল পাতার জন্মানোর অল্প সময় পরেই দেখা যায়। যদি কোনো ডুমুর গাছ কচি ডুমুর না হওয়া সত্ত্বেও পাতায় ভর্তি থাকত, তাহলে সেই গাছটি সেই বছর আর ফল ধারণ করত না।

এই কাহিনীটি ছিল ইস্রায়েলের ফলধারণে ব্যর্থতার একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত।[1] পৃথিবীর সব দেশকে আশীর্বাদ করার জন্য ঈশ্বর ইস্রায়েলকে মনোনীত করেছিলেন (আদি পুস্তক ১২:৩)। পরিবর্তে, ইস্রায়েল যিহোবার নামকে লজ্জিত করেছিল।

মন্দিরটি সকল জাতির লোকের জন্য প্রার্থনাগৃহ হওয়ার কথা ছিল (যিশাইয় ৫৬:৭)। পরিবর্তে, মন্দিরটি হয়ে উঠেছিল দস্যুদের আস্তানা, যেখানে ক্ষমতাশালী প্রধান পুরোহিতরা গরীবদের ঠকাতো।

ডুমুর গাছটি নিষ্ফলা ছিল; ইস্রায়েল ফলহীন ছিল। ডুমুর গাছটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল; ইস্রায়েল দ্রুতই প্রত্যাখ্যাত হতে চলেছিল।

ডুমুর গাছের প্রতি অভিশাপ হল যিশুর জনসমক্ষে পরিচর্যা কাজের শেষ দিনগুলিতে বিচার সম্বন্ধীয় বার্তাগুলির একটি সিরিজ:

১। নিষ্ফলা ডুমুর গাছের জীবন্ত দৃষ্টান্ত (মার্ক ১১:১২-১৪, ২০-২৫)।

২। মন্দির পরিষ্কার (মার্ক ১১:১৫-১৯)।

৩। অবিশ্বস্থ ভাড়াটেদের (ভাগচাষী) রূপক (মার্ক ১২:-১২)।

৪। ধর্মীয় নেতাদের সাথে দ্বন্দ্ব (মার্ক ১২:১৩-৪০)।

৫। মন্দিরের ধ্বংসের বিষয়ে যিশুর ভাববাণী (মার্ক ১৩:-৩৭)।


[1]পুরাতন নিয়মে, একটি ডুমুর গাছ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছে (যেমন যিরমিয় ৮:১৩, হোশেয় ৯:১, যোয়েল ১:৭)।

যিশুর প্রতি প্রতিক্রিয়া: যিশুর জনসমক্ষে প্রচার কাজের চূড়ান্ত সপ্তাহ (ক্রমশ)

যিশুর প্রতি প্রতিক্রিয়া: ধর্মীয় নেতৃবর্গ

► মথি ২১:২৩-২২:৪৬ পড়ুন।

লাসারকে মৃত্যু থেকে জীবিত করার পর, ধর্মীয় নেতারা যিশুকে হত্যা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিল। তবে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা এটিকে কঠিন করে তুলেছিল। তারা জনতার সামনে যিশুকে সম্মানহানি করার কোনো সুযোগ খুঁজছিল। যিশুর বিজয় প্রবেশের পরের দিনগুলিতে, ধর্মীয় নেতারা মন্দিরে একের পর এক বিরোধিতার কৌশল করেছিল। তারা যিশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছিল। পরিবর্তে, জনতা দেখেছিল যে যিশু বারংবার তাঁর প্রজ্ঞা এবং রসিকতা দিয়ে ধর্মীয় নেতাদের বিব্রত করেছিলেন।

প্রথমে, প্রধান পুরোহিত এবং প্রাচীনরা মন্দির পরিষ্কার করার এবং প্রকাশ্যে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যিশু যোহন বাপ্তাইজক সম্পর্কে একটি প্রশ্ন দিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলে জবাব দিয়েছিলেন।

এরপর যিশু তিনটি রূপক কাহিনী বলেছিলেন যা ধর্মীয় নেতাদের দোষীসাব্যস্ত করেছিল। দুই পুত্রের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল যে কেবল পেশা নয়, আনুগত্য ঈশ্বরের রাজ্যে সম্পর্ক প্রমাণ করে। দুষ্ট ভাড়াটেদের দৃষ্টান্তটি যিশুকে মশীহ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করার পরিণতিগুলিকে চিত্রিত করেছিল। অবশেষে, বিবাহভোজের দৃষ্টান্তটি প্রকাশ করেছিল যে, যে ধর্মীয় নেতাদের ভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল মূলত আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া সেইসব ব্যক্তিদের স্বপক্ষে, যাদের কম যোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল।

যিশুকে সম্মানহানি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় নেতারা তাঁকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করার জন্য একাধিক প্রশ্ন নিয়ে এসেছিল। সত্য শেখা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না; তাদের উদ্দেশ্য ছিল যিশুকে নির্মূল করা। যিশু জানতেন যে তারা সত্যের আকাঙ্খী নয়, তাই তিনি তাদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি।

যিশুকে ফাঁদে ফেলতে ব্যর্থ হওয়ার পর নেতারা হাল ছেড়ে দিয়েছিল। মথি তাদের ব্যর্থতা দেখিয়ে এই বিভাগটি শেষ করেছেন: “প্রত্যুত্তরে তারা কেউ একটি কথাও বলতে পারল না। সেদিন থেকে আর কেউ তাঁকে কোনও প্রশ্ন করতে সাহস পেল না” (মথি ২২:৪৬)। মার্ক শেষ করেছেন সাধারণ মানুষের আনন্দের কথা উল্লেখ করে যারা এই বিতর্কগুলি দেখেছিল, “বিস্তর লোক আনন্দের সঙ্গে তাঁর কথা শুনছিল” (মার্ক ১২:৩৭)।

► একজন পাস্টার বা খ্রিষ্টীয় লিডার হিসেবে, আপনি প্রায়শই বিভিন্ন কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। আপনি কীভাবে সঠিক মনোভাবাপন্ন প্রশ্নকর্তা এবং যারা আপনাকে ফাঁদে ফেলতে চায় তাদের মধ্যে পার্থক্য করবেন? এই দুই ধরণের প্রশ্নকর্তার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? (এই পার্থক্যটি দেখার জন্য হিতোপদেশ ২৬:-৫ দেখুন।)

বিচার এবং ক্রুশারোপণ

করিন্থীয় ১৫:-৮ পড়ুন।

যিশুর স্বর্গারোহণের কুড়ি বছর পরে, পৌল করিন্থে একটি মন্ডলী স্থাপন করেছিলেন। এই মন্ডলীটি বিভিন্ন পটভূমি থেকে রূপান্তরিত হওয়া লোকেদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। ইহুদিরা যারা হিব্রু শাস্ত্র জানত এবং অইহুদিরা যারা সত্য ঈশ্বরের কিছুই জানত না উভয়েই মন্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

করিন্থের মন্ডলীটি নানারকম দ্বন্দ্বের দ্বারা বিছিন্ন হয়েছিল এবং ভ্রান্ত শিক্ষার ফলে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। এই সমস্যার উত্তর দিয়ে, পৌল করিন্থীয়দের সেই বার্তাটি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে বার্তাটি তিনি প্রথম প্রচার করেছিলেন। পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী এত বড়ো শহরে পৌলের প্রথম বার্তাগুলি চারটি ঐতিহাসিক ঘটনার উপর দৃষ্টিপাত করে:

  • খ্রিষ্ট আমাদের পাপের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।

  • তিনি সমাধিপ্রাপ্ত হয়েছেন।

  • তিনি তৃতীয় দিনে উত্থাপিত হয়েছেন।

  • তিনি জনসমক্ষে দর্শন দিয়েছিলেন কৈফাকে, বারোজন শিষ্যকে, ভাইদের মধ্যে ৫০০ জনেরও বেশিজনকে একসাথে, যাকোবকে, সকল প্রেরিতশিষ্যকে, এবং অবশেষে পৌলকে।

[1]করিন্থে পৌলের প্রচারিত বার্তার প্রথম অংশটি ছিল ক্রুশের বিষয়ে: “খ্রীষ্ট আমাদের পাপের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন”। ক্রুশের বার্তা হল খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু।

পুরাতন নিয়মে, যে ব্যক্তি বলিদানের জন্য একটি মেষশাবক নিয়ে আসত, সে সেই বলিদানস্বরূপ মৃত্যুর সাথে নিজেকে চিহ্নিত করার জন্য মেষশাবকের মাথায় হাত রাখত। মেষশাবকের মাথায় হাত রেখে উপাসক বলত, “এই মেষশাবকটি আমার জায়গায় মারা যাচ্ছে। আমার পাপের জন্য আমি মৃত্যুর যোগ্য।” একইভাবে, আমরা আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুর যোগ্য ছিলাম, কিন্তু খ্রিষ্ট আমাদের জায়গায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মৃত্যু আমাদের প্রাপ্য ছিল; কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন যাতে আমরা বাঁচতে পারি।

গ্রেপ্তার

► মথি ২৬:-৫, ১৪-৫৬ পড়ুন।

দুঃখভোগ সপ্তাহের বুধবারে, যিশু ঠিক দু’দিন পরেই তাঁর আসন্ন মৃত্যুর কথা ভাববাণী করেছিলেন। মহাসভা, যিশুকে তাঁর ভাববাণীর সময় থেকে অন্তত নয়দিনের মধ্যে, নিস্তারপর্ব উদযাপনের পর জনতা শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেই, গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা করেছিল। মূলত, যখন যিহুদা তার প্রভুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রস্তাব দিয়েছিল, তখনই তারা যিশুকে গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কারণ তাদের তাঁর একজন অনুসারীর সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল।

প্রধান যাজকদের যিহুদাকে প্রকেন য়োজন হয়েছিল? যিশু যখন জনতার থেকে দূরে ছিলেন, তখনই তাদের তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন ছিল। তাঁর জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে প্রকাশ্যে গ্রেপ্তার করলে দাঙ্গা বেঁধে যেত।

[2]শিষ্যদের সাথে নিস্তারপর্বের ভোজ সম্পন্ন করার পরে, যিশু প্রার্থনা করার জন্য গেৎশিমানী বাগানে গিয়েছিলেন। ক্রুশের শারীরিক অত্যাচার এবং পিতার থেকে বিচ্ছেদের আত্মিক যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য এগিয়ে যাওয়ার আগে, যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “পিতা, যদি সম্ভব হয়, এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূর করে দাও। তবুও আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছামতো হোক” (মথি ২৬:৩৯)। এমনকি এই সর্বোচ্চ বিচারেও, যিশু পিতার ইচ্ছার বশীভূত হয়েছিলেন।

পরে সেই সন্ধ্যায়, যিহূদা বিস্তর লোকের সঙ্গে যিশুকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল।[3] যিহুদা যিশুকে চুম্বনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দেওয়ার পর, যিশু সৈন্যদের সাথে কথা বলেন। “‘আমিই তিনি,’ যীশুর এই কথা শুনে তারা পিছিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল” (যোহন ১৮:)। সৈন্যদের এই বড় দলটি এমন একজন ব্যক্তিকে ভয় পেয়েছিল যিনি মৃত্যুর উপর ক্ষমতা রাখেন। তাঁর শত্রুদের হাতে নয়, কিন্তু যিশুর হাতেই ক্ষমতা ছিল। ১৯ শতকের একজন প্রচারক, অক্টাভিয়াস উইনস্লো (Octavius Winslow) লিখেছেন, “কে যিশুকে মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করেছিল? টাকার জন্য যিহুদা নয়। ভয় পেয়ে যাওয়া পীলাত নয়। হিংসার বশবর্তী হওয়া ইহুদিরা নয়। তাঁকে সমর্পণ করেছিলেন স্বয়ং পিতা, ভালোবাসার জন্য!”[4]

বিচার

► মথি ২৬:৫৭-২৭:২৬, লূক ২২:৫৪-২৩:২৫, যোহন ১৮:১২-১৯:১৬ পড়ুন।

যিশুর বিচারের মধ্যে একটি ইহুদি বিচার এবং একটি রোমীয় বিচার – দুটোই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইহুদি আইন ছিল প্রাচীন আইনি ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে মানবিক আইন; ইহুদি আইন জীবন রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করত। রোমীয় আইন তার কঠোর নিয়ম এবং সর্বাঙ্গীণতার জন্য পরিচিত ছিল। এই দু’টি ছিল প্রাচীন বিশ্বের সেরা আইন ব্যবস্থা, কিন্তু তারা ঈশ্বরের পুত্রকে হত্যা করা থেকে পাপী ব্যক্তিদের বিরত করেনি।

গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, যিশুকে ছয়টি আইনি শুনানি বা বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ইহুদি ধর্মীয় বিচার এবং রোমীয় নাগরিক বিচার – দুটোই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকরা দেখিয়েছেন যে ইহুদিদের এই বিচার ইহুদি আইন অনুযায়ী অবৈধ ছিল। যিশুকে দোষী সাব্যস্ত করার তাড়াহুড়োয়, সানহেদ্রিন মহাসভা:

  • রাত্রিকালীন বিচার আয়োজন করেছিল (অবৈধ)

  • যিশুকে গ্রেপ্তার করার আগে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি (অবৈধ)

  • যিশুকে তাঁর পক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো সাক্ষীকে ডাকার অনুমতি দেয়নি (অবৈধ)

  • ইহুদি আইনে বিচারের জন্য যতটা সময় নির্ধারিত থাকে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত, অনেক তাড়াহুড়োতে তা সম্পন্ন করেছিল (অবৈধ)

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, এইসব ঘটেছিল যাতে তারা যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করতে পারে এবং নিস্তারপর্বের আগে তাঁর দেহ সরিয়ে ফেলতে পারে। তারা ঈশ্বরের মেষশাবককে হত্যা করেছিল যাতে তারা সঠিক সময়সূচীতে নিস্তারপর্বের মাংস খেতে পারে!

বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ে

(১) হাননের সামনে ইহুদি শুনানি (যোহন ১৮:১২-১৪, ১৯-২৩)

হাননকে সারাজীবনের জন্য মহাযাজক নিযুক্ত করা হয়েছিল। এমনকি রোমীয়রা হাননকে পদচ্যূত করে তার জামাই কায়াফাকে সেই পদে অভিষিক্ত করার পরেও, বেশিরভাগ ইহুদি হাননকেই “মহাযাজক” উপাধি দিয়ে ডাকতে থাকে। হাননের সামনে এই প্রথম শুনানিটি ছিল অনানুষ্ঠানিক। এতে কোনো অভিযোগ বা সাক্ষী অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

(২) মহাসভার সামনে ইহুদি শুনানি (মথি ২৬:৫৭-৬৮)

সম্পূর্ণ সানহেদ্রিন মহাসভার সামনে প্রথম শুনানি সম্ভবত রাত টোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও সূর্যোদয়ের আগে আইনি বিচার করার অনুমতি ছিল না, কিন্তু ইহুদি নেতারা দ্রুত এগোতে চেয়েছিল। যেহেতু আনুষ্ঠানিক রাত্রিকালীন বিচার বেআইনি ছিল, তাই মহাসভা একটি অনানুষ্ঠানিক শুনানির আয়োজন করেছিল যা ঈশ্বরনিন্দার জন্য যিশুকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং নির্ধারণ করেছিল যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য।

(৩) মহাসভার সামনে আনুষ্ঠানিক ইহুদি বিচার (লূক ২২:৬৬-৭১)

সূর্যোদয়ের পরে মহাসভা একটি আনুষ্ঠানিক বিচারের আয়োজন করেছিল। এই বিচারে মহাসভা ঈশ্বরনিন্দার দায়ে যিশুকে সরকারিভাবে অপরাধী হিসেবে দোষীসাব্যস্ত করেছিল।

(৪) পীলাতের সামনে প্রথম রোমীয় বিচার (লূক ২৩:১-৫, যোহন ১৮:২৮-৩৮)

অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার রোম মহাসভাকে দেয়নি (যোহন ১৮:৩১)। পীলাতের কাছ থেকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়ার জন্য, ইহুদি নেতারা তাদের অভিযোগকে ঈশ্বরনিন্দার মতো ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরিয়ে বিদ্রোহের মতো রাজনৈতিক দোষের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। যারা যিশুর নামে অভিযোগ করেছিল, “আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে ...সে কৈসরকে কর দিতে নিষেধ করে, আর নিজেকে খ্রীষ্ট, একজন রাজা বলে দাবি করে” (লূক ২৩:২)।

নিস্তারপর্বের সময়ে, ইহুদিরা অশুচি হয়ে যাওয়ার ভয়ে এবং নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণে বাধা আসার ভয়ে কোনো রোমীয় ভবনে প্রবেশ করত না। তারা রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করবে না বলে, পীলাত প্রাসাদের দরজার বাইরের প্রাঙ্গনে শুনানি করেছিলেন।

(৫) হেরোদ অন্তিপাসের সামনে রোমীয় বিচার (লূক ২৩:৬-১২)

পীলাত জানতেন যে যিশু নির্দোষ ছিলেন, কিন্তু তিনি ইহুদি নেতাদের ক্রুদ্ধ করতে চাননি। যখন তিনি শুনেছিলেন যে যিশু “তার শিক্ষায় সমগ্র যিহূদিয়ার লোকদের উত্তেজিত করে তুলেছে। গালীল থেকে শুরু করে ও এখানেও এসে পৌঁছেছে” (লূক ২৩:৫), তখন পীলাত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাকে এই সঙ্কট থেকে বেরোতে হবে। নিস্তারপর্বের সপ্তাহে, হেরোদ অন্তিপাস, যিনি গালীল প্রদেশের শাসক ছিলেন, জেরুশালেমে ছিলেন।[5] যেহেতু যিশু গালীল প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন, পীলাত চেয়েছিলেন হেরোদ এই মামলায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব সামলাক। পীলাত যিশুকে হেরোদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু হেরোদ হস্তক্ষেপ করতে প্রত্যাখ্যান করেন।

(৬) পীলাতের সামনে চূড়ান্ত রোমীয় বিচার (মথি ২৭:১৫-২৬, লূক ২৩:১৩-২৫, যোহন ১৮:৩৯-১৯:১৬)

যখন যিশুকে পুনরায় পীলাতের কাছে ফেরত পাঠানো হয়, তখন পীলাত অন্য আরেকটি সমাধানের খোঁজ করেছিলেন। পীলাত জানতেন যে যিশু নির্দোষ ছিলেন: “তোমাদের সাক্ষাতে আমি তাকে পরীক্ষা করেছি, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি আমি খুঁজে পাইনি” (লূক ২৩:১৪)। পীলাত যিশুকে, একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে চাননি।

যখন নেতারা পীলাতকে তার আনুগত্যহীনতা নিয়ে সিজারের [কৈসর] কাছে নালিশ করার হুমকি দেয়, তখন পীলাত তাদের দাবি মেনে নেন। পীলাত একজন দুর্বল শাসক ছিলেন। পূর্বের একটি দ্বন্দ্বে, পীলাত সৈন্যদেরকে সম্রাটের মূর্তি বহন করে জেরুশালেমে প্রবেশ করিয়েছিলেন। একটি ইহুদি দল পীলাতের প্রাসাদের বাইরে পাঁচ দিন ধরে প্রতিবাদ করেছিল। তিনি বিক্ষোভকারীদের হত্যার হুমকি দিলে তারা পবিত্র নগরীতে সিজারের মূর্তি মেনে নেওয়ার পরিবর্তে মৃত্যু গ্রহণ করার ঘোষণা করেছিল। পীলাত পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এই অভিজ্ঞতার কারণে পীলাত ইহুদি জনতাকে নিয়ে ভীত ছিলেন। তাছাড়া, রোমে তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সেজানাস (Sejanus), যিহুদা প্রদেশের লোকেদের নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে পীলাতের ক্ষমতার উপর ভরসা করতেন না। যখন নেতারা হুমকি দিয়েছিল যে তিনি যদি যিশুকে ছেড়ে দেন, তাহলে তারা সিজারের কাছে নালিশ জানাবে, তখন পীলাত যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য তাদের হাতে সমর্পণ করলেন (যোহন ১৯:১৬)। পীলাত যিশুকে দোষী বলে বিশ্বাস করতেন বলে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তা নয়, বরং এর কারণ ছিল তার নিজের দুর্বলতা।

বিচার চলাকালীন, পিতর যিশুকে অস্বীকার করেন।

নিস্তারপর্বের নৈশভোজের সময়ে, যিশু পিতরকে সতর্ক করেছিলেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে” (যোহন ১৩:৩৮)। যিশুর বিচার চলাকালীন, পিতর যিশুকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন।

আমরা যখন পিতরের লজ্জাজনক পতনের কথা পড়ি, তখন আমাদের মনে রাখা উচিত যে পিতর কেবল সেই ব্যক্তিই ছিলেন না যে ওই রাতে যিশুকে ব্যর্থ করেছিল। কেবল পিতর এবং যোহনই বিচারে উপস্থিত ছিল। অন্য শিষ্যরা ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

স্পষ্টতই, পিতর যিশুকে ভালোবাসতেন। তাহলে, কেন তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন? এর আগে, আমরা প্রলোভনের মোকাবিলা করার পাঠ শেখার জন্য যিশুর প্রলোভন অধ্যয়ন করেছি। পিতরের পতন থেকে আমরা আমাদের প্রলোভনের সময়ে নিজেদেরকে সাহায্য করার জন্য সতর্কবার্তাটি দেখতে পাই। অন্তত দু’টি বৈশিষ্ট্য পিতরের পতনের জন্য দায়ী ছিল:

() অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস

যিশু যখন শয়তানের আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন, তখন পিতর গর্ব করে বলেছিল, “আপনার সঙ্গে যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হয়, তাহলেও আমি আপনাকে কখনোই অস্বীকার করব না” (মথি ২৬:৩৫)। আমরা যখন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি, তখন আমাদের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আমরা কেবল পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমেই একটি বিজয়ী খ্রিষ্টীয় জীবন যাপন করতে পারি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস হল আত্মিক ব্যর্থতার প্রথম ধাপ।

() প্রার্থনাহীনতা

গেৎশিমানী বাগানে যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে সতর্ক করেছিলেন, “প্রার্থনা করো, যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়ো” (লূক ২২:৪০)। আসন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার জন্য শক্তি প্রার্থনা করার পরিবর্তে, পিতর ঘুমিয়েছিলেন।

প্রার্থনাহীনতা অনিবার্যভাবে আত্মিক ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যায়। একটি প্রাণবন্ত প্রার্থনাশীল জীবন ছাড়া একটি বিজয়ী খ্রিষ্টীয় জীবন বজায় রাখা অসম্ভব। যতক্ষণ আমাদের প্রার্থনার জন্য সময় থাকে না, শয়তান খ্রিষ্টীয় কর্মীদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত নানারকম কাজে জড়িত রাখার চেষ্টা করে। সে জানে যে আমরা যদি এতই ব্যস্ত থাকি যে প্রার্থনা করার সময় পাচ্ছি না, তাহলে আমরা শীঘ্রই পড়ে যাব।

► আপনার গোটা খ্রিষ্টীয় জীবন এবং পরিচর্যা কাজের দিকে ফিরে তাকান। আপনি যেখানে প্রলোভনে পড়েছিলেন বা যেখানে আপনি পতনের কাছাকাছি এসেছিলেন সেগুলির সম্পর্কে চিন্তা করুন। এই পতনে কোন কারণগুলির অবদান রয়েছে? আপনি কি পরিচর্যা কাজের সাফল্যের সম্মুখীন হচ্ছিলেন যা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের দিকে পরিচালিত করেছিল? আপনি কি খুবই ব্যস্ত ছিলেন এবং প্রার্থনায় পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন? এমন কি অন্যান্য কোনো কারণ আছে যা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতার সংকেত হিসেবে কাজ করতে পারে?

বিচার চলাকালীন, যিহুদা আত্মহত্যা করে।

পিতরের অস্বীকারের বিবরণের ঠিক পরেই, মথি যিহুদার আত্মহত্যার ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। নিজের বিশ্বাসঘাতকতার ফলাফল দেখে, যিহুদা তার মন পরিবর্তন করেন এবং প্রধান যাজকদের এবং প্রাচীনদের কাছে ৩০টি রূপোর মুদ্রা ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “নির্দোষ মানুষের রক্ত সমর্পণ করে আমি পাপ করেছি” (মথি ২৭:-৪)। যিহুদা তার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য যে রৌপ্যমুদ্রা তাকে দেওয়া হয়েছিল তা ফেলে দেন এবং নিজেকে ফাঁসি দেন (মথি ২৭:৫)। যিহুদা আজীবন অপরাধবোধ বয়ে বেড়াবার পরিবর্তে আত্মহত্যা বেছে নিয়েছিল।

মথির বিবরণ পিতরের অনুতাপ এবং যিহুদার অনুশোচনাকে পাশাপাশি রেখেছে। পিতর এবং যিহুদা দু’জনেই তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত ছিল। কিন্তু, যিহুদার জন্য, মথি এমন একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন যা একজনের মন পরিবর্তনের ধারণা প্রকাশ করে; তা সত্যিকারের অনুতাপের জন্য প্রচলিত শব্দটি নয়। এই পার্থক্যটি পাপের শাস্তির প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পৌল অনুশোচনা (পাপের ফলাফলের জন্য দুঃখ) এবং অনুতাপের (পাপের জন্য দুঃখ এবং দিক পরিবর্তন) মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে লিখেছেন। প্রেরিত লিখেছেন: “ঐশ্বরিক দুঃখ নিয়ে আসে অনুতাপ, যা পরিত্রাণের পথে চালিত করে; সেখানে অনুশোচনার কোনও অবকাশ নেই; কিন্তু জাগতিক দুঃখ নিয়ে আসে মৃত্যু” (২ করিন্থীয় ৭:১০)।

ঐশ্বরিক দুঃখ সত্যিকারের অনুতাপ নিয়ে আসে, যা পরিত্রাণ ও জীবনের দিকে নিয়ে যায়। পার্থিব দুঃখ অনুশোচনা নিয়ে আসে, যা কেবল অপরাধবোধ এবং মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। পিতর এবং যিহুদা দু’জনেই দুঃখিত ছিলেন, কিন্তু কেবল পিতর সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছিলেন।

যিহুদা তার বিশ্বাসঘাতকতার ফলাফল দেখেছিল এবং লজ্জা ও অপরাধবোধের পরিবর্তে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিল; সে অনুশোচনা অনুভব করেছিলেন, কিন্তু অনুতপ্ত হননি। পিতর তার ব্যর্থতার ফলাফল দেখেছিল এবং সত্যিকারের অনুতাপ বেছে নিয়েছিল। যিহুদার অনুশোচনার ফলাফল ছিল মৃত্যু; পিতরের অনুতাপের ফলাফল ছিল আজীবন ফলপ্রসূ পরিচর্যা কাজ।

► আপনি কি এমন লোকেদের দেখেছেন যারা পাপের জন্য অনুশোচনা অনুভব করেছে, কিন্তু সত্যিকারের অনুতপ্ত হয়নি? ফলাফল কী ছিল? আমাদের প্রচারে, কীভাবে আমরা মানুষকে সত্যিকারের অনুতাপের জায়গায় নিয়ে যেতে পারি?

ক্রুশারোপণ

► মথি ২৭:২৭-৫৪ পড়ুন।

যিহুদা প্রদেশ ছিল একজন রোমীয় সৈন্যের জন্য একটি ভয়ঙ্কর কর্মক্ষেত্র। লোকেরা রোমীয় সৈন্যদের ঘৃণা করত এবং জেলট-রা (Zealots) তাদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। নিস্তারপর্বের সময়ে, সেনাবাহিনীকে দাঙ্গার জন্য অবিরাম সতর্ক থাকতে হত। একজন সৈনিকের জন্য এর চেয়ে খারাপ কার্যভার আর কিছু ছিল না। যখন একজন ইহুদি বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত, তখন সৈন্যরা দণ্ডিত ব্যক্তির প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ করত।

যিশুর সাথে যা যা করা হয়েছিল—মারধোর, উপহাস, কাঁটার মুকুট—কঠোর সৈন্যদের নিষ্ঠুরতাকে তুলে ধরে যারা তাদের এসাইনমেন্টকে ঘৃণা করত, যারা তাদের চারপাশের লোকদের ঘৃণা করত এবং লড়াই করতে পারবে না এমন কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে আনন্দ পেত। যিশু এই সৈন্যদের প্রতি কোনোরকম রাগ ছাড়াই এই সবকিছু সহ্য করেছিলেন।

বহু লেখক ক্রুশ থেকে বলা যিশুর সাতটি বাণীর প্রতি দৃষ্টিপাত করে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাহিনীটি অধ্যয়ন করেছেন। একজন ব্যক্তির শেষ কথাগুলিই সেই ব্যক্তির কাছে কি গুরুত্বপূর্ণ তা প্রকাশ করে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে যিশু কী বলেছিলেন?

ক্ষমার বাণী

যিশুকে যখন তারা ক্রুশে পেরেকবিদ্ধ করেছিল, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন, “পিতা, এদের ক্ষমা করো, কারণ এরা জানে না, এরা কী করছে” (লূক ২৩:৩৪)। শেষ পর্যন্ত, তিনি প্রেম এবং ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন।

মৃত্যুর যোগ্য এক চোরকে যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজই তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে” (লূক ২৩:৪৩)।

সহানুভূতির বাণী

যিশু যোহনকে তাঁর মায়ের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন, “নারী, ওই দেখো, তোমার পুত্র!” এবং যোহনকে বলেছিলেন, “ওই দেখো, তোমার মা!” (যোহন ১৯:২৬-২৭)। এর আগে, যিশু শিখিয়েছিলেন যে গভীরতম পারিবারিক বন্ধন হল আত্মিক। “এই যে আমার মা ও ভাইয়েরা। কারণ যে কেউ আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, তারাই আমার ভাই, বোন ও মা” (মথি ১২:৪৯-৫০)।

যিশুর মৃত্যুকালে, তাঁর নিজের সৎ-ভাইরা অবিশ্বাসী ছিলেন; তাঁরা তাঁর আত্মিক পরিবারের অংশ ছিলেন না। তাই, যিশু তাঁর মায়ের দায়িত্ব তাঁর আত্মিক ভাই, প্রিয় যোহনকে দিয়েছিলেন।

দৈহিক যন্ত্রণার বাণী

ঈশ্বরের পুত্র হওয়ায় যিশুকে ক্রুশের শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়নি। তিনি একজন দণ্ডিত অপরাধীর সমস্ত শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তীব্র গরমে জল ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকার পর, যিশু চিৎকার করে উঠেছিলেন, “আমার পিপাসা পেয়েছে” (যোহন ১৯:২৮)।

আত্মিক যন্ত্রণার বাণী

মথি এবং মার্ক কেবল একটি বাণীই উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সম্ভবত এই কথাগুলিই ছিল ক্রুশের উপর থেকে বলা সবচেয়ে হৃদয়-বিদারক কথা: “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে পরিত্যাগ করেছ?” (মথি ২৭:৪৬, মার্ক ১৫:৩৪)।

নিশ্চিতভাবেই যিশুর সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা ছিল পিতার কাছ থেকে তাঁর বিচ্ছেদ। পিতা এবং পুত্র অনন্তকাল থেকে এক অবিচ্ছেদ্য সহভাগিতায় জীবন যাপন করেছিলেন। এখন, যেহেতু যিশু আমাদের পাপ বহন করেছেন, তিনি পিতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন।

ক্রুশের উপরে, ঈশ্বর “তাঁকে পাপস্বরূপ করেছিলেন যিনি কোনো পাপ জানতেন না, যাতে তাঁর মধ্যে আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার হতে পারি” (২ করিন্থীয় ৫:২১)। যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ে ভাববাদী সেই “অত্যাচারিত দাস”-এর কথা বলেছেন যিনি আমাদের সমস্ত পাপ বহন করবেন (যিশাইয় ৫৩:-১২)। পৌল দেখিয়েছেন যে এই প্রতিস্থাপনমূলক প্রায়শ্চিত্ত ক্রুশে সম্পন্ন হয়েছিল।

যিশু আমাদের জন্য পাপস্বরূপ হয়েছিলেন “যেন আমরা তাঁর দ্বারা ঈশ্বরের ধার্মিকতাস্বরূপ হতে পারি” (2 করিন্থীয় ৫:২১)। আমরা আর পাপের দাসত্বে নেই; ক্রিষ্টের মৃত্যুর মাধ্যমে, আমরা ধার্মিক হয়েছি। পৌল কেবল বলেননি যে আমাদেরকে তাতে এক নিছক ধার্মিক হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। বরং, তিনি বলেছেন যে তাঁর মধ্যে আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতা হয়েছি। ক্রুশের উপরে খ্রিষ্টের কাজের মাধ্যমে, একটি প্রকৃত পরিবর্তন ঘটেছে। খ্রিষ্ট পাপস্বরূপ হয়েছিলেন যেন আমরা ধার্মিকতা হই।

সমর্পণের বাণী

“পিতা, তোমার হাতে আমি আমার আত্মা সমর্পণ করি” (লূক ২৩:৪৬)। যিশু তাঁর সমগ্র জীবনকালে পিতার প্রতি এক বিশ্বস্ত সমর্পণে জীবনযাপন করেছিলেন। ক্রুশের কষ্ট নিয়ে, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন, “তবুও আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছামতো হোক” (মথি ২৬:৩৯)। এখন তিনি পিতার ইচ্ছার কাছে তাঁর সমর্পণের চূড়ান্ত স্বীকারোক্তিটি ঘোষণা করলেন।

বিজয়ের বাণী

“সমাপ্ত হল” (যোহন ১৯:৩০)। বিজয়ের এই চীত্কারে যিশু ঘোষণা করেছিলেন যে পিতা তাঁকে যে কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন তা তিনি সম্পন্ন করেছেন। পাপের মূল্য প্রদান করে দেওয়া হয়েছিল; শয়তান পরাজিত হয়েছিল। পুরাতন নিয়মে পূর্বাভাসিত মেষশাবকের প্রায়শ্চিত্ত এবং যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন হয়েছিল।

সমাধি

► মথি ২৭:৫৭-৬১ পড়ুন।

করিন্থে পৌল তার বার্তায় প্রচার করেছিলেন যে যিশু আমাদের পাপের জন্য মারা গিয়েছিলেন এবং তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল (১ করিন্থীয় ১৫:৩-৪)। পৌল এবং প্রথম শতকের মন্ডলীর কাছে সমাধি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

অনেক দুঃখভোগ সপ্তাহ (Passion Week) উদযাপন আজকাল সরাসরি গুড ফ্রাইডে থেকে ইষ্টার সানডে-তে চলে যায়। কিন্তু মন্ডলীর ইতিহাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, “পবিত্র শনিবার” (হোলি স্যাটারডে) ইষ্টার ভিজিল’র (ইষ্টারের আগের নিশিযাপন) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। সমাধির তাৎপর্য কী?[6]

ঐতিহাসিক তাৎপর্য

সমাধি দেখায় যে যিশু সত্যিই মারা গিয়েছিলেন। ইসলামিক অন্যান্য দাবির বিপরীতে, যেখানে বলা হয় যে, যিশু অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন যেখান থেকে তিনি পরে জেগে উঠেছিলেন, সমাধি দেখায় যে তিনি মারা গিয়েছিলেন। রোমীয়রা খুব ভালো করেই জানত যে কীভাবে একজন দণ্ডিত বন্দিকে হত্যা করতে হয়। এমন কোনো সম্ভাবনাই ছিল না যে মৃত্যু হওয়ার আগে ক্রুশ থেকে সেই ব্যক্তিকে তারা নামিয়ে নিয়ে যাবে।

এছাড়াও, ভারী পাথর এবং রক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছিল যে কেউ কবর থেকে পালাতে পারবে না। এমনকি যদি রোমীয় সৈন্যরা ভুলবশত যিশুকে তাঁর মৃত্যুর আগে কবর দিয়েও থাকে, তবে এটা অকল্পনীয় যে ক্রুশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যন্ত্রণা সহ্য করা একজন ব্যক্তি কবর-বস্ত্র ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারে, ভারী পাথরটি দূরে ঠেলে দিতে পারে এবং পেশাদার প্রহরীদের একটি দলকে পরাস্ত করতে পারে। সমাধি এই ঐতিহাসিক সত্যটি নিশ্চিত করে যে নাসরতের যিশু মারা গিয়েছিলেন।

ভাববাণীমূলক তাৎপর্য

মেষশাবক সম্পর্কে লেখা হত্যার দিকে পরিচালিত করে, যিশাইয় ভাববাণী করেছিলেন, “তাঁকে দুষ্টজনেদের সঙ্গে সমাধি দেওয়া হল, মৃত্যুতে তিনি ধনী ব্যক্তির সঙ্গী হলেন” (যিশাইয় ৫৩:৯)। যিশুর সমাধি মশীহ সংক্রান্ত ভাববাণী পূরণ করেছিল।

যিশু মারা যাওয়ার পর, আরিমাথীয় জোসেফ মৃতদেহটি নেওয়ার জন্য পীলাতের কাছে যান। জোসেফ সানহেদ্রিন মহাসভার সদস্য ছিলেন, কিন্তু তিনি যিশুর মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্তে রাজি ছিলেন না। এমনকি বেশিরভাগ নেতারা যিশুর বিরুদ্ধে চলে যাওয়ার পরেও, কেউ কেউ ঈশ্বরের রাজ্যের সন্ধান করছিল। জোসেফ এই গোপন শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি এবং নীকদীম জোসেফের সমাধিতে যিশুর দেহ কবর দিয়েছিলেন (মথি ২৭:৫৭-৬০, মার্ক ১৫:৪২-৪৬, লূক ২৩:৫০-৫৪, যোহন ১৯:৩৮-৪২)।

এটি করতে কতটা সাহসের প্রয়োজন ছিল ভেবে দেখুন। এমনকি শিষ্যরা যিশুকে পরিত্যাগ করার পরেও, জোসেফ একজন দোষীসাব্যস্ত অপরাধীর সাথে নিজের পরিচয়যুক্ত করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। জনসমক্ষে এই কাজ মহাসভায় জোসেফের অবস্থান এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর অবস্থানকে বিপন্ন করে তুলেছিল। এছাড়াও, জোসেফ পীলাতের ক্রোধের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। রোমীয় অধিকর্তারা খুব কম ক্ষেত্রেই বন্ধুদের বা আত্মীয়দেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের ক্রুশবিদ্ধ হওয়া দেহের সমাধির অনুমতি দিত। অন্যান্য অপরাধীদের জন্য একটি সতর্কবাণী হিসেবে মৃতদেহগুলি জনসাধারণের সামনে রেখে দেওয়া হত। পীলাতের অনুমতি হল আরো একটি প্রমাণ যে পীলাত জানতেন যিশু যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই নির্দোষ ছিলেন।

ঈশতাত্ত্বিক তাৎপর্য

পৌল আমাদের বাপ্তিষ্মকে যিশুর সমাধিস্থ হওয়ার সাথে সমতুল্য করেছেন:

অথবা, তোমরা কি জানো না, আমরা যারা খ্রীষ্ট যীশুতে বাপ্তাইজিত হয়েছি, আমরা সকলে তাঁর মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হয়েছি? সেই কারণে আমরা মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিষ্মের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে সমাধিপ্রাপ্ত হয়েছি, যেন খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমার মাধ্যমে মৃতলোক থেকে উত্থিত হয়েছিলেন, তেমনই আমরাও এক নতুন জীবন লাভ করি। (রোমীয় ৬:-৪)

সমাধি ছিল যিশুর মৃত্যুর একটি প্রকাশ্য নিশ্চিতকরণ। একইভাবে, বাপ্তিষ্ম হল যিশুর মৃত্যুতে আমাদের অংশগ্রহণের একটি প্রকাশ্য সাক্ষ্য। বাপ্তিষ্মে, আমাদেরকে পুরনো জীবনধারার কাছে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

সমাধি হল একজন ব্যক্তির মৃত্যুকে স্বীকারোক্তি দেওয়ার চূড়ান্ত ধাপ। পশ্চিমের দেশগুলিতে, শোকার্তরা এই পৃথিবীতে “বিদায়”-এর চূড়ান্ততাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সমাধিস্থ কফিনবাক্সে মাটি ফেলে। পৌল পাপের প্রতি আমাদের মৃত্যুর চূড়ান্ততার উপর জোর দিয়েছেন। খ্রিষ্টের মৃত্যুর মতোই, আমরা পাপের কাছে মৃত। আমরা খ্রিষ্টের সাথে সমাধিস্থ হওয়ার পরে আবার পাপে ফিরে আসা একটি মৃতদেহকে মাটি খুঁড়ে বের করে আনার মতো।[7] আমরা খ্রিষ্টের সাথে সমাধিস্থ হয়েছি; আমরা আর পাপের প্রতি জীবিত নই।


[1]

"তাঁকে কি চাবুক মারা হয়েছিল?

এটি হয়েছিল যাতে তাঁর আঘাতের মাধ্যমে আমরা সুস্থ হতে পারি।

তিনি কি নির্দোষ থাকা সত্ত্বেও নিন্দিত হয়েছিলেন?

এটি হয়েছিল যাতে আমরা অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও মুক্তি পেতে পারি।

তিনি কি কাঁটার মুকুট পরেছিলেন?

এটি হয়েছিল যাতে আমরা মহিমার মুকুটে ভূষিত হতে পারি।

তাঁর পোশাকও কি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল?

এটি হয়েছিল যাতে আমরা চিরস্থায়ী ধার্মিকতার বস্ত্র পরিধান করতে পারি।

তাঁকে কি উপহাস এবং অপমান করা হয়েছিল?

এটি হয়েছিল যাতে আমরা সম্মানিত এবং আশীর্বাদযুক্ত হতে পারি।

তাঁকে কি একজন অপরাধী এবং পাপী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল?

এটি করা হয়েছিল যাতে আমরা সমস্ত পাপ থেকে নির্দোষ এবং ন্যায়পরায়ণরূপে গণিত হতে পারি।

তিনি কি নিজেকে বাঁচাতে অক্ষম হয়েছিলেন?

এটি হয়েছিল যাতে তিনি অন্যদেরকে সর্বোত্তমভাবে বাঁচাতে সক্ষম হন।

তিনি কি শেষপর্যন্ত মারা গিয়েছিলেন যা ছিল সবচেয়ে বেদনাদায়ক এবং লজ্জাজনক মৃত্যু?

এটি হয়েছিল যাতে আমরা অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারি, এবং সর্বোচ্চ মহিমায় মহিমান্বিত হতে পারি।“

- বিশপ রায়ল (Bishop Ryle)

[2]

“যিশু তাঁর ঈশ্বরত্বের কাছে মানবিক দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি খোঁজেননি; তিনি প্রার্থনার আশ্রয় নিয়েছিলেন।”

- টি. বি. কিলপ্যাট্রিক (T.B. Kilpatrick)-এর লেখা থেকে অভিযোজিত

[3]যোহন ১৮:৩ এই দলটিকে সৈন্যদের একটি “ব্যান্ড” বা “কোহর্ট” হিসেবে চিহ্নিত করে৷ একটি রোমীয় কোহর্ট সাধারণত ৬০০ জন পুরুষ নিয়ে গঠিত হত।
[4]John Stott, The Message of Romans (Westmont, Illinois: InterVarsity Press, ১৯৯৪),২৫৫–এ উদ্ধৃত।
[5]কোনো অভু্যত্থান সামলাতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে, নিস্তারপর্ববের সপ্তাহ চলাকালীন, প্যালেস্টাইনের সমস্ত রোমীয় আধিকারিক জেরুশালেমে চলে আসত।
[6]James Boice, “The Burial of Jesus.” থেকে অভিযোজিত। মার্চ ২২, ২০২১-এর http://www.alliancenet.org/tab/the-burial-of-jesus-christ-part-one দেখুন।
[7]James Boice, “The Burial of Jesus.” থেকে অভিযোজিত। মার্চ ২২, ২০২১-এর http://www.alliancenet.org/tab/the-burial-of-jesus-christ-part-one দেখুন।

পুনরুত্থান

পৌল ক্রুশ সম্পর্কে করিন্থে প্রচার করেছিলেন; খ্রিষ্ট আমাদের পাপের জন্য মারা গিয়েছিলেন এবং কবরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এরপরে, পৌল পুনরুত্থান নিয়ে প্রচার করেছিলেন; খ্রিষ্ট তৃতীয় দিনে উঠেছিলেন এবং বহু সাক্ষীকে দেখা দিয়েছিলেন (১ করিন্থীয় ১৫:-৮)। পুনরুত্থান হল খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু।

► মথি ২৭:৬২-২৮:১৫ পড়ুন।

ধর্মীয় নেতারা পীলাতকে ক্রুশের লিপি পরিবর্তন করতে বললে তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। তিনি যিশুকে একটি স্মারকচিহ্ন সহ ক্রুশারোপিত করেছিলেন যাতে বলা হয়েছিল, “নাসরতের যীশু, ইহুদিদের রাজা” (যোহন ১৯:১৯)। একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর জন্য এই উপাধি ব্যবহার করে পীলাত ইহুদিদেরকে উপহাস করেছিলেন যাদের তিনি ঘৃণা করতেন।

ক্রুশারোপণের পর, ধর্মীয় নেতারা পুনরায় পীলাতের কাছে গিয়েছিল, এবং কবরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য রোমীয় সৈন্য মোতায়েন করতে বলেছিল।

মহাশয়, আমাদের মনে পড়ছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকাকালীন বলেছিল, ‘তিন দিন পরে আমি আবার উত্থিত হব।’ সেই কারণে, তিন দিন পর্যন্ত সমাধিটি পাহারা দিতে আদেশ দিন, তা না হলে, তাঁর শিষ্যেরা এসে সেই দেহ চুরি করে নিয়ে যাবে ও লোকদের বলবে যে তিনি মৃতলোক থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। তাহলে শেষের এই প্রতারণা প্রথমের থেকে আরও গুরুতর হবে। (মথি ২৭:৬৩-৬৪)

পীলাতের অনুমতি নিয়ে, তারা কবরটি আবদ্ধ করে দিয়েছিল এবং যারা যিশুকে গেৎশিমানী বাগান থেকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। হঠাৎই:

সেখানে এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প হল, কারণ প্রভুর এক দূত স্বর্গ থেকে নেমে এলেন। তিনি সমাধির কাছে গিয়ে সেই পাথরটি গড়িয়ে দিলেন ও তাঁর উপরে বসলেন। তাঁর বস্ত্র ছিল বিদ্যুতের মতো এবং তাঁর পোশাক ছিল তুষারের মতো ধবধবে সাদা। তাঁকে দেখে প্রহরীরা এত ভয়ভীত হয়েছিল, যে তারা কাঁপতে লাগল ও মরার মতো পড়ে রইল। (মথি ২৮:২-৪)

যিশু জীবিত হয়ে উঠেছিলেন!

► যোহন ২০:-২৯ পড়ুন।

সুসমাচার পুস্তকগুলি যিশুর পুনরুত্থান-পরবর্তী একাধিক আবির্ভাবের উল্লেখ করেছে। তিনি বহু লোকের কাছে একাধিক ভিন্ন স্থানে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

সংশয়বাদীরা (Skeptics) মাঝে মাঝে তর্ক করে, “সেই মহিলারা সমাধিস্থানে হ্যালুশিনেট [অলীক কোন অস্তিত্বে বিশ্বাস] করছিল। তারা সেটাই দেখেছিল যা তারা দেখতে চেয়েছিল।” কিন্তু, এই সাক্ষীরা যিশুকে জীবিত দেখার প্রত্যাশা করেননি; তারা জানতেন যে তিনি মারা গেছেন! তারা তখনও তাঁর পুনরুত্থান নিয়ে করা ভাববাণীগুলি বোঝেননি (যোহন ২০:৯)। এমনকি, যখন প্রথম সাক্ষীরা বলেছিলেন যে তারা যিশুকে দেখেছে, তখন বাকি শিষ্যরা সন্দেহ করেছিল (মার্ক ১৬:১৩)। তারা আশা করেননি যে যিশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।

ধীরে ধীরে, মগদলীনী মরিয়মের কাছে (যোহন ২০:১১-১৮), ইম্মায়ুসের পথে সফররত দু’জন শিষ্যের কাছে (লূক ২৪:১৩-৩২), এগারোজন প্রেরিতশিষ্যের কাছে (যোহন ২০:১৯-৩১), এবং এমনকি ৫০০ জন লোকের একটি দলের কাছে আবির্ভাবের মাধ্যমে, যিশুর অনুগামীরা উপলব্ধি করেছিল যে তিনি সত্যিই জীবিত হয়েছেন। প্রারম্ভিক মন্ডলী এই কথাগুলি দিয়েই আরাধনা করা শুরু করেছিল, “তিনি জীবিত। তিনি সত্যিই জীবিত!”

প্রয়োগ: ক্রুশ এবং পুনরুত্থানের শক্তিতে পরিচর্যা কাজ

অনেক উদারপন্থী ঈশতত্ত্ববিদরা (liberal theologians) পুনরুত্থানকে একটি পৌরাণিক কাহিনী হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, যিশুর জীবনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সম্পর্কে একটি সুন্দর গল্পের উপর প্রেরিতদের বিশ্বাস ভিত্তিশীল ছিল না, বরং তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের দৃঢ় সত্যের উপর ভিত্তিশীল ছিল। প্রেরিতরা জানতেন যে যিশু মারা গেছেন এবং তিনি মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। এটি তাদেরকে অত্যাচার সহ্য করার, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। কীভাবে যিশুর মৃত্যু এবং পুনরুত্থান আজও পরিচর্যা কাজের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত?

ক্রুশের শক্তিতে পরিচর্যা কাজ

► ১ করিন্থীয় ১:১৭-:৫ পড়ুন।

পৌল তার দ্বিতীয় মিশনারি সফরে, এথেন্স থেকে করিন্থে যান যেখানে তিনি আরেয়পাগে প্রচার করেছিলেন। এখানে দেখা যাচ্ছে যে পৌল এথেন্সে তার পরিচর্যা কাজ থেকে কেবল সীমিত ফলাফল দেখেছিলেন (প্রেরিত ১৭:১৬-৩৪)। তিনি এথেন্সে কোনো মন্ডলী স্থাপন করেননি, এবং দার্শনিক মনোভাবসম্পন্ন এথেনীয়রা পুনরুত্থান সম্পর্কে তার বার্তাকে উপহাস করেছিল। এথেন্স থেকে, পৌল ৭৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, আখায়া (Achaia) প্রদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর করিন্থে যাত্রা করেছিলেন।

থিষলনিকা, বেরিয়া এবং এথেন্স: পরপর তিনটি শহরে বিরোধিতার পর পৌল করিন্থে আসেন। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি বলেছেন, “আমি দুর্বলতায় ও ভয়ে এবং মহাকম্পিত হয়ে তোমাদের কাছে গিয়েছিলাম” (১ করিন্থীয় ২:৩)। যদিও গ্রিক শ্রোতারা বাগ্মীতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মেধার খোঁজ করেছিল, কিন্তু পৌল কেবল ক্রুশকে প্রচার করার জন্যই দৃঢ়সংকল্প ছিলেন। তার বার্তার শক্তি তার বাগ্মীতা থেকে নয় বরং ক্রুশ থেকেই এসেছিল। পৌল প্রচার করেছিলেন, “কিন্তু তা মানবিক জ্ঞানের বাক্য দিয়ে নয় কারণ এতে খ্রীষ্টের ক্রুশের পরাক্রম ক্ষুণ্ণ হয়” (১ করিন্থীয় ১:১৭)।

করিন্থে পৌল বলেছিলেন, “আমি মনস্থির করেছিলাম, তোমাদের সঙ্গে থাকার সময়, আমি যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ বলে জানা ছাড়া আর কিছুই জানতে চাইব না” (১ করিন্থীয় ২:২)। পৌল জানতেন যে ক্রুশের বার্তা অনেককে অসন্তুষ্ট করবে।।

ইহুদিরা অলৌকিক বিভিন্ন চিহ্ন দাবি করে এবং গ্রিকেরা জ্ঞানের খোঁজ করে, কিন্তু আমরা ক্রুশবিদ্ধ খ্রীষ্টকে প্রচার করি; তিনি ইহুদিদের কাছে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ ও অইহুদিদের কাছে মূর্খতাস্বরূপ। (১ করিন্থীয় ১:২২-২৩)

এই বার্তাটি ইহুদিদের কাছে একটি প্রতিবন্ধকতা বা কলঙ্ক ছিল। তারা মশীহকে প্রমাণিত করে এমন লক্ষণগুলির সন্ধান করেছিল। একজন ক্রুশবিদ্ধ ব্যক্তি মনোনীত মশীহ হতে পারে – এই ধারণাটিই তাদের কাছে ছিল অযৌক্তিক। বিধানে বলা হয়েছে, “যাকে গাছে টাঙানো হয় সে ঈশ্বরের অভিশপ্ত” (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:২৩)। ক্রুশারোপিত যিশুই যে মশীহ – এই দাবিটাই একজন ইহুদির কাছে কলঙ্কস্বরূপ ছিল।

ক্রুশের বার্তা অইহুদিদের কাছে মূর্খতাস্বরূপ ছিল। গ্রিকরা একজন শহীদের মহৎ মৃত্যুকে সম্মান করত। যিশু যদি রোমীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হতেন, তাহলে গ্রিক দার্শনিকরা তাকে তার সাহসিকতার জন্য সম্মানিত করতেন। কিন্তু ক্রুশবিদ্ধ হওয়া সেই ভুক্তভোগী ব্যক্তির পক্ষে অসম্মানজনক ছিল; এটি কোনো মহৎ মৃত্যু ছিল না। ক্রুশবিদ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের সাধারণত যথাযথভাবে কবর দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হত। তাদের মাংস পাখি বা ইঁদুর খেয়ে ফেলত এবং হাড়গুলি একটি আস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়া হত। ক্রুশবিদ্ধ হওয়া এক ইহুদি গ্রাম্য ব্যক্তিকে “প্রভু” হিসেবে দাবি করা একজন অইহুদি শ্রোতার কাছে অযৌক্তিক ছিল।

ক্রুশ ইহুদিদের কাছে একটি কলঙ্ক এবং অইহুদিদের কাছে একটি মূর্খতাস্বরূপ ছিল, কিন্তু পৌল কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই ক্রুশের বার্তা প্রচার করেছিলেন। পৌলের দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য একটি আদর্শস্বরূপ। আজকেও, প্রথম শতকের মতোই, ক্রুশ অনেকেই অসন্তুষ্ট করবে, এবং অনেকেরই এটিকে মূর্খতা বলে মনে হবে, কিন্তু এটাই হল সেই বার্তা যা আমাদের অবশ্যই প্রচার করতে হবে।

পরিচর্যাকারী এবং চার্চ-লিডার হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাস আমাদের সামর্থ্য থেকে আসে না; আমাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি হল ক্রুশের বার্তা। পৌল এক অত্যুত্তম শিক্ষাগত যোগ্যতা, একটি অপূর্ব মেধার অধিকারী ছিলেন, এবং তিনি তার সময়কালের সবচেয়ে মহান জ্ঞানীদের সাথে তর্ক করার জন্য পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু তার চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি ছিল ক্রুশ। যখন আমরা লোকেদেরকে কেবল তর্কের দ্বারা জয় করি, তাদের বিশ্বাস কেবল মানুষের জ্ঞানের উপরেই থেকে যায়; কিন্তু যখন আমরা তাদেরকে ক্রুশের দিকে নির্দেশ করি, তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিমূল হয়ে ওঠে ঈশ্বরের শক্তি (১ করিন্থীয় ২:৫)।

পুনরুত্থানের শক্তিতে পরিচর্যা কাজ

► প্রেরিত ২:২২-৩৬ পড়ুন।

প্রেরিত পুস্তুকটি দেখায় যে প্রাথমিক খ্রিষ্টীয় প্রচারের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল পুনরুত্থান। পঞ্চাশত্তমীতে, পিতর পুনরুত্থানকে একটি প্রমাণ হিসেবে নির্দেশ করেছিলেন যা দেখিয়েছে যে যিশু ভাববাদীদের দ্বারা করা প্রতিশ্রুতিগুলির পূর্ণতা ছিলেন।

আগ্রিপ্পর সামনে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে পৌল বলেছিলেন, “আর এখন, ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দান করেছিলেন, তারই উপর আমার প্রত্যাশার জন্য, আজ আমি বিচারের সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের বারো গোষ্ঠী সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হওয়ার প্রত্যাশায়”। এই প্রতিশ্রুতি কী ছিল? পুনরুত্থান। “ঈশ্বর মৃতজনকে উত্থাপিত করেন, কেন একথা বিশ্বাস করা আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়?” (প্রেরিত ২৬:৬-৮)।

► ১ করিন্থীয় ১৫:১২-৩৪ পড়ুন।

১ করিন্থীয়তে, পৌল দেখিয়েছেন যে তাঁর পরিচর্যা কাজ কেবল ক্রুশের শক্তিতে নয়, পুনরুত্থানের শক্তির ওপরেও ভিত্তিশীল। পৌল জোর দিয়েছেন যে পুনরুত্থান ছাড়া, তাঁর পরিচর্যা কাজ অর্থহীন। “আবার খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হয়ে থাকেন তবে আমাদের প্রচার করা ও তোমাদের বিশ্বাস করা, সব অর্থহীন হয়েছে” (১ করিন্থীয় ১৫:১৪)। পুনরুত্থান ছাড়া যিশু আরেকজন ব্যর্থ মশীহ ছাড়া আর কেউ নন। পুনরুত্থান ছাড়া, যিশু হয়ত একজন দুর্ভাগ্য শহীদ, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুত মশীহ নন।

পুনরুত্থান হল আমাদের খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের ভিত্তিমূল। “আর যদি খ্রীষ্ট উত্থাপিত না হয়েছেন, তোমাদের বিশ্বাস নিরর্থক, তোমরা এখনও তোমাদের পাপের মধ্যে রয়েছ” (১ করিন্থীয় ১৫:১৭)। ক্রুশের উপরে, খ্রিষ্ট আমাদের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত প্রদান করেছিলেন, কিন্তু পুনরুত্থানই ছিল সেই বিষয় যা মৃত্যু এবং পাপের উপর খ্রিষ্টের ক্ষমতা প্রমাণ করেছিল। যদি পুনরুত্থান না থাকে, তাহলে পৌল বলছেন, আপনার বিশ্বাস শূন্য এবং আপনি এখনো আপনার পাপের দাসত্বে আছেন।

পুনরুত্থান হল আমাদের খ্রিষ্টীয় আশার ভিত্তিমূল। “কারণ মৃত্যু যেহেতু একজন মানুষের মাধ্যমে এসেছিল, মৃতদের পুনরুত্থানও তেমনই একজন মানুষের মাধ্যমেই আসে। কারণ আদমে যেমন সকলের মৃত্যু হয়, তেমনই খ্রীষ্টে সকলেই পুনর্জীবিত হবে” (১ করিন্থীয় ১৫:২১-২২)। পৌল করিন্থীয়দের আশ্বস্ত করেছিলেন যে তারা পুনরুত্থানের আশা অধিকারী কারণ খ্রিষ্ট মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়েছিলেন।

দ্বিতীয় শতাব্দীতে, লুসিয়ান (Lucian) নামের এক গ্রিক ঔপন্যাসিক, পুনরুত্থানে বিশ্বাসের জন্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে উপহাস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “হতভাগ্য দরিদ্ররা প্ররোচিত হয় যে তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে। এই কারণে, তারা মৃত্যুকে হেয় জ্ঞান করে এবং তাদের বিশ্বাসের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক।” লুসিয়ান খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উপহাস করেছিলেন, কিন্তু তার কথা সত্য ছিল। লুসিয়ান যেমন বলেছিলেন, দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করেছিল যে তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে। সেই বিশ্বাসের কারণে তারা বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিতেও রাজি ছিল।

বর্তমান সময়েও আমাদের জন্য সত্য হওয়া উচিত। আমরা যদি সত্যিই বিশ্বাস করি যে খ্রিষ্ট মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন, তাহলে তা আমাদের নির্যাতন এমনকি মৃত্যুর মুখেও আস্থা প্রদান করবে। পুনরুত্থান হল আমাদের খ্রিষ্টীয় আশার ভিত্তি।

পুনরুত্থান হল আমাদের খ্রিষ্টীয় জীবনের আশার ভিত্তি। পৌল পুনরুত্থানতত্বের একটি চমকপ্রদ ব্যবহারিক প্রয়োগ করেছেন। “মৃতেরা যদি উত্থাপিত না হয়, তাহলে,‘এসো আমরা ভোজন ও পান করি,কারণ আগামীকাল আমরা মারা যাব’…তোমাদের যেমন হওয়া উচিত, চেতনায় ফিরে এসো এবং পাপ করা থেকে ক্ষান্ত হও” (১ করিন্থীয় ১৫:৩২, ৩৪)। পৌলের বক্তব্য অনুযায়ী, পুনরুত্থান আমাদেরকে ঈশ্বরীয় জীবন যাপনের জন্য একটি কারণ প্রদান করে। যদি পুনরুত্থান না থাকে, তাহলে আমরা এপিকুরিয়ান (Epicurean)-দের মতো জীবন যাপন করব, যারা বলেছিল, “খাও আর পান করো কারণ আমরা শীঘ্রই মারা যাব।” যদি পুনরুত্থান না থাকে, তাহলে অনন্তকালের জন্য জীবন যাপন করার কোনো কারণই নেই। কিন্তু পৌল আরো বলেছেন, যদি পুনরুত্থান থেকে থাকে, তাহলে ওঠো এবং পাপমুক্ত এক জীবন যাপন করো। পাপের উপরে আমাদের বিজয় পুনরুত্থানের আমাদের আত্মবিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত।

পরিচর্যা কাজে চ্যালেঞ্জের মুখে পুনরুত্থানের কাহিনীটির আমাদের বিশ্বাসের অভাবের জন্য আমাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত। আমরা কতবার ভাবি যে আমরা প্রার্থনার উত্তর পাবো না? কেন? কারণ আমরা পুনরুত্থানের শক্তি ভুলে যাই! বিজয়ের সামান্য আস্থা রেখে আমরা কতবার প্রলোভনের মুখোমুখি হই? কেন? কারণ আমরা পৌলের প্রতিশ্রুতি ভুলে যাই: “যিনি যীশুকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করেছেন, তাঁর আত্মা যদি তোমাদের মধ্যে বাস করেন, তাহলে যিনি খ্রীষ্টকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করেছেন, তিনি তোমাদের নশ্বর শরীরকেও তাঁর আত্মার মাধ্যমে সঞ্জীবিত করবেন, যিনি তোমাদের অন্তরে বাস করেন” (রোমীয় ৮:১১)।

যদি খ্রিষ্ট আমাদের মধ্যে বাস করেন, আমরা আর মাংসে জীবন যাপন করি না; আমরা আর পাপে বন্দি নই। এটি হল পুনরুত্থানের শক্তিতে যাপন করা জীবন। যে শক্তি যিশুকে কবর থেকে পুনরুত্থিত করেছিল, সেই একই শক্তি আমাদের প্রতিদিন পাপের উপর বিজয় দেয়। এটিই হল পুনরুত্থানের শক্তিতে বেঁচে থাকার এবং পরিচর্যা করার অর্থ।

উপসংহার: একটি খ্রিষ্টসাদৃশ্য জীবন এবং পরিচর্যা কাজের চিহ্নসমূহ

আপনার জীবন কি খ্রিষ্টের মতো?

লূক লিখেছেন, “আর আন্তিয়খেই শিষ্যেরা সর্বপ্রথম খ্রীষ্টিয়ান নামে আখ্যাত হল” (প্রেরিত ১১:২৬)। লোকেরা আন্তিয়খের বিশ্বাসীদের দেখে বলতে শুরু করেছিল, “ওই লোকগুলো খ্রিষ্টের মতো আচরণ করে৷ আমাদের তাদেরকে ‘খ্রিষ্টীয়ান’ বলা উচিত।’” এই পদটি পড়ার সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমার প্রতিবেশীরা কি আমার আচরণ, কথা এবং মনোভাব দেখে ‘খ্রিষ্টীয়ান’ কথাটি ভাববে? আমাকে কি খ্রিষ্টের মতো দেখতে লাগে?” আন্তিয়খের বিশ্বাসীরা এমনভাবে জীবন যাপন করত যা যিশুখ্রিষ্টের চরিত্রকে প্রতিফলিত করেছিল; তারা খ্রিষ্টবিশ্বাসী ছিল।

বহু বছর ধরে পাস্টার হিসেবে কাজ করার পর, ড. এইচ. বি. লন্ডন (H. B. London) এখন তরুণ পাস্টারদের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি পাস্টাররা সম্মুখীন হতে পারে এমন আত্মিক বিপদগুলি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। “একজন ব্যক্তি পবিত্র না হয়েও পবিত্র বিষয়ের কাছাকাছি থাকতে পারে। ক্ষমা না করেও ক্ষমা করার বিষয়ে প্রচার করা সম্ভব। পরিচর্যাকারীরা মিনিস্ট্রির জন্য এত বেশি পরিশ্রম করতে পারেন যে তারা তাদের আত্মার স্বাস্থ্যকে অবহেলা করেন।”[1] অন্যদের কাছে প্রচার করা এবং তারপরে নিজেকে অযোগ্য করা তোলাও সম্ভব (১ করিন্থীয় ৯:২৭)।

ড. লন্ডন পাস্টারদেরকে অন্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় আত্মিক ব্যর্থতা এড়াতে সাহায্য করার জন্য কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রগুলি আমাদেরকে খ্রিষ্টের মতো জীবন বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। তিনি লিখেছেন:

  • আপনি যা প্রচার করেন সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করুন। যা আপনি নিজের জীবনে প্রথমে প্রয়োগ করেননি তা কখনোই অন্যদের কাছে প্রচার করবেন না।

  • আপনার আত্মার যত্ন নিন। কিছু কিছু ডাক্তার অস্বাস্থ্যকর। তারা অন্যদের যত্ন নেয়, কিন্তু তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যকে অবজ্ঞা করে। কিছু কিছু পাস্টার আত্মিকভাবে অস্বাস্থ্যকর। একজন পাস্টার হিসেবে, আপনার আত্মিক উন্নতির জন্য যত্ন নেওয়ায় সময় নিন।

  • নিজেকে নম্র করুন। মনে রাখবেন একজন পাস্টার হল একজন মেষপালক; ব্যাঙ্কের অধ্যক্ষ নন। একজন সেবক হোন।

  • হতাশার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠুন। আপনি মিনিস্ট্রি কাজে হতাশ হবেন। আপনার শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বিপথগামী হবে। কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনার বিরুদ্ধে যাবে। মন্ডলীর সদস্যরা আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু হতাশার মাঝে আপনার আশা হারাবেন না। যিহুদা যিশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। দীমা পৌলকে পরিত্যাগ করেছিলেন। চোখের জলের মধ্যে দিয়েও, বেড়ে উঠতে থাকুন এবং সেই মেষপালকে পালন করতে থাকুন।

আপনার পরিচর্যা কাজ কি খ্রিষ্টের মতো?

যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজের এই পাঠগুলিতে, আমরা যিশুর পরিচর্যা কাজের অনেক বৈশিষ্ট্য দেখেছি। এই বৈশিষ্ট্যগুলি কি আপনার পরিচর্যা কাজে দেখা যায়?

আপনার পরিচর্যা কাজের মূল্যায়নের জন্য এখানে কিছু প্রশ্ন দেওয়া হল:

  • পাপীরা কি পরিত্রাণ পাচ্ছে? যিশু যখন প্রচার করতেন, লোকেরা নতুন জীবন পেয়েছিল। আপনি কি মানুষজনকে নতুন জন্মে নিয়ে আসছেন?

  • বিশ্বাসীরা কি পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হচ্ছে? যিশু তাঁর সন্তানদের কাছে পবিত্র আত্মাকে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আপনি যাদের সেবা করেন তাদের মধ্যে কি এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হচ্ছে?

  • শয়তান কি পরাজিত হচ্ছে? শয়তানের দৃঢ়দুর্গগুলি কি ভাঙছে? যিশুর পরিচর্যা কাজ আত্মিক কর্তৃত্ব দ্বারা চিহ্নিত ছিল।

  • অসুস্থ লোকেরা কি সুস্থতা পাচ্ছে? ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলি কি পুনর্মিলিত হচ্ছে? ভগ্ন জীবনগুলি কি পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে? ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলি কি জোড়া লাগছে? যারা শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক ক্ষত ভোগ করেছিল, তাদের যিশু সুস্থ করেছিলেন।

  • লোকেরা কি অনুগ্রহ এবং সত্য দেখতে পাচ্ছে? আমি কি তাদেরকে যিশুর কাছে আকর্ষিত করছি, নাকি তাদেরকে যিশুর থেকে দূরে করে দিচ্ছি? যিশু দোষী সাব্যস্থ করার মাধ্যমে এবং অনুগ্রহের সাহায্যে সত্যের প্রচার করেছিলেন।

► আপনি এই প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করার সময়ে, খ্রিষ্টসাদৃশ্যতায় আপনার পরিচর্যা কাজ বৃদ্ধি পেতে পারে এমন ক্ষেত্রগুলির সন্ধান করুন। মনে রাখবেন যে প্রত্যেক পরিচর্যাকারীরই বেড়ে ওঠার জায়গা আছে, তাই এই তালিকাটিকে আত্ম-নিন্দার হাতিয়ার না করে বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করুন।


[1]H. B. London, They Call Me Pastor. (Grand Rapids: Baker Books, ২০০০), ১৪৫

৮ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট

(১) “ক্রুশের উপর সাতটি বাণী”-র উপর একটি সারমন বা বাইবেল পাঠ প্রস্তুত করুন। বর্তমানের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য যিশুর এই বাণীগুলির বার্তার উপর জোর দিন।

(২) দৈনন্দিন খ্রিষ্টীয় জীবনের জন্য পুনরুত্থানের তাৎপর্যের উপর একটি সারমন বা বাইবেল পাঠ প্রস্তুত করুন। আপনার প্রস্তুতিতে সুসমাচার পুস্তকগুলি এবং ১ করিন্থীয় ১৫:১৫-১৭-এ পৌলের কথাগুলি – উভয় থেকেই পুনরুত্থানের কাহিনী ব্যবহার করুন।

Next Lesson