খ্রিষ্টসাদৃশ্য প্রেম হল খ্রিখ্রিষ্টসাদৃশ্য পরিচর্যা কাজের অনুপ্রেরণা।
ভূমিকা
যিশুর সমগ্র জীবন এবং পরিচর্যা কাজ প্রেম দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। বারংবার, তিনি দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের এবং অন্যদের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁর জীবন ও পরিচর্যা কাজের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা যদি যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করি, তাহলে প্রেমকে অবশ্যই আমাদের জীবন এবং পরিচর্যা কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। এই বিষয়টির উদাহরণ উত্তম শমরীয়’র দৃষ্টান্তের চেয়ে আর কোথাও স্পষ্ট না।
► লূক ১০:২৫-৩৭ পড়ুন।
এই রূপক কাহিনীটি বলার আগে, যিশু বলেছিলেন যে ঈশ্বর “এই সমস্ত বিষয় বিজ্ঞ ও শিক্ষিত মানুষদের কাছ থেকে গোপন রেখে ছোটো শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছেন” (লূক ১০:২১)। এটি আত্মিক বোধগম্যতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শেখায়। আত্মিক সত্য বোঝার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক অধ্যয়নের চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন। এটির জন্য আত্মিক প্রত্যাদেশ প্রয়োজন। ঈশ্বরের সত্য একজন শিশুর পক্ষে ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে বোঝার জন্য যথেষ্ট সহজ, কিন্তু একজন পণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষে কেবল তার নিজস্ব মানসিক ক্ষমতা দিয়ে বোঝার জন্য এটি অত্যন্ত গভীর।
এটি কীভাবে হতে পারে? যারা সত্যের আকাঙ্খা করে, তাদের থেকে কি ঈশ্বর তা লুকিয়ে রাখেন? উত্তরটিতে দু’টি নীতি অন্তর্ভুক্ত।
১। আত্মিক সত্য কেবল পবিত্র আত্মা দ্বারাই প্রকাশিত হয়। পৌল লিখেছেন যে “ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা ঈশ্বরের আত্মা ছাড়া আর কেউই জানতে পারে না”। এই কারণে, আমাদেরকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে যা “পবিত্র আত্মার দ্বারা শেখানো ... যা আত্মিক বিভিন্ন সত্যকে আত্মিক ভাষায় ব্যক্ত করে” (১ করিন্থীয় ২:১১, ১৩)।
২।আত্মিকসত্যকেবলগ্রহণকারীশ্রোতাদেরকাছেইপ্রকাশিতহয়। পৌল আরো বলেছেন, “প্রাকৃতিক মানুষ ঈশ্বরের আত্মা থেকে আগত বিষয়গুলি গ্রহণ করতে পারে না, কারণ সেসব তার কাছে মূর্খতা। সে সেগুলি বুঝতেও পারে না, কারণ সেগুলিকে আত্মিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়” (১ করিন্থীয় ২:১৪)।
কৃষকের রূপকটি দেখায় যে শ্রোতার মনোভাব বীজের ফলপ্রসূতা নির্ধারণ করে (মথি ১৩:১-২৩)। কেবল যারা সত্যকে গ্রহণ করে, তারাই সত্য বুঝবে যা তারা শুনেছে।[1]
লূক ১০:২৫-এ আইনজীবী হলেন এই দ্বিতীয় নীতিটির একটি বাস্তব জীবনের চিত্র। আইনজীবীর প্রশ্নটি সত্যের ক্ষুধা বা আকাঙ্খা থেকে আসেনি, কিন্তু যিশুকে ফাঁদে ফেলার ইচ্ছা থেকে এসেছিল; তিনি তাঁকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। যিশুর উত্তর শোনার পর, আইনজীবীর প্রতিক্রিয়াটি “ফলদায়ী মাটির” মতো প্রতিক্রিয়া ছিল না। পরিবর্তে, তিনি নিজেকে ন্যায্য প্রমাণ করার জন্য অন্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন (লূক ১০:২৯)।
“অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?”, যিশু এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছিলেন। উত্তরটি মোশির বিধানেই লেখা ছিল, “‘তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে’; এবং, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করবে’” (লূক ১০:২৭)।
এটি আমাদের জন্য যিশুর দৃষ্টান্তের কেন্দ্রবিন্দু। যিশুর মতো জীবনযাপন এবং পরিচর্যা কাজ করার জন্য, আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীকে যিশুর মতো করেই ভালোবাসতে হবে৷ খ্রিষ্টস্বরূপ প্রেম ছাড়া, এই কোর্সের অন্য কোনো পাঠ সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রেমবিহীন—প্রার্থনা, নেতৃত্বদান, শিক্ষাদান, এবং প্রচার—এর কোনোটাই প্রকৃত অর্থে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সম্ভবত এটি খুব সহজ বলে মনে হচ্ছে। আপনি বলতেই পারেন, “অবশ্যই, আমাদের ঈশ্বরকে এবং মানুষকে ভালোবাসতে হবে। আমি আগে থেকেই এটা জানি!” কিন্তু দিন প্রতিদিন মিনিস্ট্রির কাজের চাপে আমরা প্রেমের হৃদয়টি হারিয়ে ফেলতে পারি। আমাদের মন্ডলীর সদস্যদেরকে না ভালোবেসেও তাদের সেবা করা সম্ভব। পরিবারের লোকেদেরকে না ভালোবেসেও তাদের সেবা করা সম্ভব। ঈশ্বরকে না ভালোবেসেও খ্রিষ্টীয় কাজ করা সম্ভব। খ্রিষ্টীয় পরিচর্যা কাজের জন্য আমাদের প্রেরণা অবশ্যই খ্রিষ্টস্বরূপ প্রেম হতে হবে।
[1]বিশেষ করে নোট করুন যে মথি ১৩:১২। যে সত্যকে গ্রহণ করে, সে আরো সত্য গ্রহণ করতে পারবে: “যার কাছে আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে”। যে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে সে সেই সত্যের প্রতিও অন্ধ হয়ে যায় যা সে ইতিমধ্যে শুনেছে: “যার কাছে নেই, তার কাছে যা আছে, তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে।”
যিশুর মতো করে ঈশ্বরকে ভালোবাসা
মানবজাতির প্রতি যিশুর সেবা পিতার প্রতি তাঁর ভালোবাসার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। পরিচর্যা কাজে বিরক্তি এবং হতাশা এড়াতে, মানুষের প্রতি আমাদের সেবা অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া পরিচর্যা কাজ দ্রুত শূন্য ও ফলহীন হয়ে যাবে।
পিতার প্রতি যিশুর ভালোবাসার তিনটি দিক আমাদের জন্য একটি আদর্শ হিসেবে কাজ করা উচিত: সম্পর্ক, জ্ঞান, এবং আস্থা।
যিশু তাঁর পিতার সাথে এক নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন
বারংবার, সুসমাচার পুস্তকগুলি যিশুর তাঁর পিতার সাথে নিবিড় সম্পর্ককে দেখিয়েছে। এটি:
যিশুর তাঁর বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে দেখা গেছে, “তোমরা কি জানতে না যে, আমাকে আমার পিতার গৃহে থাকতে হবে?” (লূক ২:৪৯)
গেৎশিমানী বাগানে, যিশু ঈশ্বরকে একটি নিবিড় পারিবারিক নামে সম্বোধন করেছিলেন, “আব্বা, পিতা” (মার্ক ১৪:৩৬)। এটি ছিল একটি পুত্রের ভাষা যে তার পিতার সাথে এক সুরক্ষিত সম্পর্কে ছিল।
পরম্পরাগত ইহুদি প্রার্থনায় ঈশ্বরের বহু নাম ব্যবহৃত হত: অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের ঈশ্বর; আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর; পরমধন্য; পরাক্রমী; ইস্রায়েলের মুক্তিদাতা। যিশু সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ নাম “আব্বা ” ব্যবহার করেছিলেন। যিশু তাঁর পিতার সাথে একটি নিবিড় সম্পর্কে থাকতেন।
কেনেথ ই. বেইলি (Kenneth E. Bailey) বহু বছর মধ্যপ্রাচে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি লিখেছেন যে মধ্যপ্রাচ্যের বাচ্চাদের প্রথম বলতে শেখা শব্দটি হলআব্বা। আব্বা হল সেই শব্দ যে নামে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো বাচ্চা তার বাবাকে ডাকে।
পৌল আমাদের বলেছেন যে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে আমাদেরও “আব্বা! পিতা” বলে ডাকার অধিকার আছে (রোমীয় ৮:১৫, গালাতীয় ৪:৬)। আমরা এমন ঈশ্বরের উপাসনা করি না যিনি দূরে থাকেন। পরিবর্তে, যিশুর মতো আমরাও আমাদের পিতার প্রেমে নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করি।
পাস্টার হিসেবে, আমরা আমাদের মিনিস্ট্রির সাফল্যের ভিত্তিতে নিজেদেরকে পরিমাপ করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারি। যদি আমাদের মূল্য আমাদের মন্ডলীর আকার, আমাদের মন্ডলীর অনুমোদন বা আমাদের সহকর্মীদের স্বীকৃতি থেকে আসে, তবে আমরা সাফল্যের জন্য সততা ত্যাগ করতে প্রলুব্ধ হব। আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমরা নিরুৎসাহিত হব। কিন্তু, আমরা যদি আত্মবিশ্বাসী হই যে আমাদের সফলতা যেমনই হোক, আমাদের আব্বা আমাদের ভালোবাসেন, তাহলে আমরা ফলাফলের ভার তাঁর উপর ছেড়ে দিতে পারি। তাঁর ভালোবাসা আমাদের কাজের উপর নির্ভর করে না।
যিশু তাঁর পিতার ইচ্ছা জানতেন
তাঁর পার্থিব পরিচর্যা কাজের শেষে, যিশু সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, “তোমার দেওয়া কাজ সম্পূর্ণ … করেছি” (যোহন ১৭:৪)। যিশু জানতেন যে তাঁর পিতা তাঁকে সম্পন্ন করতে পাঠিয়েছেন, এবং তিনি তাঁর সারা জীবন সেই উদ্দেশ্যসাধন করতেই উৎসর্গ করেছিলেন।
যিশু তাঁর মানবতায়, প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে শিখেছিলেন। প্রার্থনার মাধ্যমে, যিশু পিতার ইচ্ছা জানতে পারতেন।
যিশু বাক্যের মাধ্যমে পিতার ইচ্ছাও বুঝতে শিখেছিলেন। কফরনাহুমে, যিশু তাঁর কাজকে ভাববাদী যিশাইয়’র ভাববাণীগুলির পরিপূর্ণতা হিসেবে সারসংক্ষিপ্ত করেছিলেন (লূক ৪:১৮-১৯)। যখন যিশু যোহন বাপ্তাইজকের শিষ্যদেরকে উত্তর দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর মশীহ-সম্বন্ধীয় (Messianic) পরিচর্যা কাজের প্রমাণ হিসেবে ভাববাদী যিশাইয়’র কথাগুলি উল্লেখ করেছিলেন (মথি ১১:৪-৫)। যিশু ঈশ্বরের বাক্য জানতেন।
গোটা নতুন নিয়ম জুড়ে, আমরা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে প্রতিকূল অবস্থার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শাস্ত্রের উল্লেখ করতে দেখতে পাই। সাক্ষ্যমর হওয়ার সময়ে, স্তিফানের সর্বশেষ প্রচারটির প্রাথমিক বিষয়বস্তু ছিল পুরাতন নিয়মের শাস্ত্র এবং যিশুখ্রিষ্টে সেগুলির পরিপূর্ণতা (প্রেরিত ৭:১-৫৩)। যখন ইহুদি নেতারা খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে যিশুর বার্তা ঘোষণা করা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল, তখন মন্ডলী প্রার্থনার জন্য একত্রিত হয়েছিল। তাদের প্রার্থনায় গীত ২ থেকে একটি দীর্ঘ উদ্ধৃতি রয়েছে (প্রেরিত ৪:২৪-৩০, গীত ২:১-২)। প্রথম শতকের বিশ্বাসীরা শাস্ত্র জানতেন। প্রচার এবং প্রার্থনার জন্য এটাই ছিল তাদের স্বাভাবিক ভাষা।
মন্ডলীর ইতিহাস জুড়ে, যে সকল প্রচারক বিশ্বকে পরিবর্তন করেছেন তারা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের বাক্যের ব্যক্তি ছিলেন। জার্মানির ডায়েট অফ ওয়ার্মস (Diet of Worms)-এর কাউন্সিলে মার্টিন লুথার (Martin Luther) সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, “আমি শাস্ত্রের দ্বারা আবদ্ধ এবং আমার বিবেক ঈশ্বরের বাক্যে বন্দী।” জন ওয়েসলি (John Wesley) নিজেকে “ম্যান অফ ওয়ান বুক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। চার্লস স্পারজন (Charles Spurgeon) বলেছিলেন যে প্রচারকদের উচিত ঈশ্বরের বাক্য ভোজন করা যতক্ষণ না “বাইবেলের মূল সারমর্ম আপনার মধ্যে থেকে প্রবাহিত হয়।” হাডসন টেলর (Hudson Taylor) ঈশ্বরের বাক্যে এত বেশি সময় ব্যয় করতেন যে একজন লেখক লিখেছিলেন, “বাইবেলই ছিল সেই পরিবেশ যেখানে টেলর থাকতেন।” এই লোকেরা তাদের বিশ্বকে বদলে দিয়েছিলেন কারণ তারা কর্তৃত্বের সাথে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করেছিলেন।
[1]আমরা যদি যিশুর মতো, প্রথম শতকের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের মতো এবং ইতিহাসের মহান প্রচারকদের মতো পরিচর্যা কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকেও অবশ্যই আমাদের মনোভাব এবং চিন্তাভাবনাকে ঈশ্বরের বাক্য দিয়ে গঠন করতে হবে। শাস্ত্র ছিল পৌলের পরিচর্যা কাজের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব (২ তিমথি ৩:১৬-১৭)। যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যে যেন তাঁর শিষ্যদেরকে পরিচর্যা কাজের জন্য পবিত্রকৃত বা পৃথক করা হয়। এটি ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে: “সত্যের দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করো, তোমার বাক্যই সত্য” (যোহন ১৭:১৭)। ঈশ্বরের বাক্য শিষ্যদেরকে পরিচর্যা কাজে কার্যকরী করে তুলেছিল; ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকেও পরিচর্যা কাজে কার্যকরী করে তোলে।
অজিত ফার্নান্ডো (Ajith Fernando) শ্রীলঙ্কাতে পরিচর্যা কাজে তার জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন যে তিনি শাস্ত্রের উপর ভিত্তি না করে প্রচারে কোনো বড় বিবৃতি না দেওয়ার অভ্যাস করেছেন। এটি তার প্রচারকে ঈশ্বরের বাক্যের উপর স্থির রাখে। খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমরা ঈশ্বরকে তাঁর বাক্যের মাধ্যমেই জানি। পরিচর্যাকারী হিসেবে, আমরা ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তিশীল পরিচর্যা কাজের মাধ্যমে শক্তিশালী মন্ডলী গড়ে তুলি।
যিশু তাঁর পিতাকে বিশ্বাস করতেন
যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের সময়কালে পিতার সাথে তাঁর সম্পর্ক গেৎশিমানী বাগানে তাঁর প্রার্থনার কথাগুলিতে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে, “তবুও আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছামতো হোক” (মথি ২৬:৩৯)। এটি হল পরম আস্থা এবং সমর্পণের ভাষা।
আমরা যার উপর আস্থা রাখি না তার ইচ্ছার কাছে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের সমর্পণ করা কঠিন। আমরা বাহ্যিকভাবে সমর্পণ করতে বাধ্য হতে পারি, কিন্তু আমাদের হৃদয় এমন একজন ব্যক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধা দেয় যাকে আমরা বিশ্বাস করি না। যিশু পিতার ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন কারণ পিতার ভালোবাসা এবং উত্তমতার প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল।
► যোহন ৫:১-৪৭ পড়ুন।
যিশুর সম্পূর্ণ পরিচর্যা কাজ পিতার প্রতি পরম নির্ভরতার এই মনোভাবকে তুলে ধরে। যখন ইহুদি নেতারা বিশ্রামবারে একজন খোঁড়া লোককে সুস্থ করার জন্য যিশুর বিরোধিতা করেছিল, তখন তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল:
আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, পুত্র নিজে থেকে কিছুই করেন না, কিন্তু পিতাকে যা করতে দেখেন, তিনি কেবল তাই করতে পারেন, কারণ পিতা যা করেন, পুত্রও তাই করেন …. আমি আমার ইচ্ছামতো কিছুই করতে পারি না। আমি যেমন শুনি, কেবল তেমনই বিচার করি। আর আমার বিচার ন্যায্য কারণ আমি নিজের নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই ইচ্ছা পালনের চেষ্টা করি। (যোহন ৫:১৯, ৩০)
যিশু ইতিমধ্যেই তাঁর ঈশ্বরত্বের দাবি করেছিলেন: “আমার পিতা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, আর আমিও কাজ করে চলেছি” (যোহন ৫:১৭)। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে ঐশ্বরিক থাকা সত্ত্বেও, যিশু স্বেচ্ছায় তাঁর পার্থিব উদ্দেশ্যের অধীনস্থ ভূমিকায় নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। তিনি এবং পিতা সমান, কিন্তু তিনি পিতার ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করেছিলেন।
যখন শাস্ত্রবিদ এবং ফরিশীরা কয়েক মাস পরেই যিশুর বিরোধিতা করেছিল, তখন তিনি পুনরায় তাঁর পিতার কর্তৃত্বের প্রতি নির্দেশ করে তাঁর কাজগুলির সপক্ষে কথা বলেছিলেন, “আমি নিজে থেকে কিছুই করি না, কিন্তু পিতা আমাকে যা শিক্ষা দেন, আমি শুধু তাই বলি” (যোহন ৮:২৮)। যেহেতু যিশু সম্পূর্ণভাবে পিতার উপর আস্থা রেখেছিলেন, তাই তিনি স্বেচ্ছায় পিতার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করতে পেরেছিলেন।
মন্ডলীতে নেতৃত্বদানের জন্য একটি মুশকিল ভারসাম্য প্রয়োজন। বহু পাস্টার এবং চার্চ-লিডারের নেতৃত্বদানের সুদৃঢ় দক্ষতা থাকে। লিডার হিসেবে, তারা দৃঢ় মতামত এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এটি লিডারের জন্য একটি মূল্যবান শক্তি হতে পারে। তবে, এই শক্তি অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে স্বেচ্ছাসমর্পণের সাথে ভারসাম্যযুক্ত হওয়া উচিত। আমরা যদি আস্থা সহকারে ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ না করি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের পথে আত্মসমর্পণ করার পরিবর্তে আমাদের নিজস্ব পথে জোর খাটানোর প্রবণতা রাখব।
বাইবেলের সবচেয়ে সেরা উদাহরণ হতে পারেন মোশি। মোশি, একজন অত্যন্ত নম্র, ভূপৃষ্ঠ নিবাসী যে কোনো ব্যক্তি অপেক্ষা অধিকতর নম্র ছিলেন (গণনা পুস্তক ১২:৩)। মোশি দৃঢ় ছিলেন, কিন্তু তিনি নম্রও ছিলেন। তিনি মিশরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, রাজা ফরৌণের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি ইস্রায়েলের একগুঁয়ে লোকেদেরকে মরুপ্রান্তরের মধ্যে দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মোশি একজন দৃঢ় নেতা ছিলেন। কিন্তু, একই সময়ে, তিনি ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত ছিলেন। মন্ডলীতে সক্রিয় নেতৃত্বের জন্য আমাদের প্রাকৃতিক শক্তিকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করা প্রয়োজন। এটা কেবল তখনই সম্ভব হয় যখন আমরা বিশ্বাস ও আস্থা সহকারে জীবনে ঈশ্বরের সাথে পথ চলি।
► পিতার প্রতি ভালোবাসার এই তিনটি দিকের (সম্পর্ক, তাঁর বাক্যের জ্ঞান, এবং আস্থার ভিত্তিতে সমর্পণ) মধ্যে, আপনার কাছে ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি?
“কখনও ভালো বইকে বাইবেলের জায়গা নিতে দেবেন না। কূপ থেকেই পান করুন!”
- অ্যামি কারমাইকেল
(Amy Carmichael)
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: যিশু কি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেছিলেন?
মরমনবাদ (Mormonism) এবং যিহোবার সাক্ষী (Jehovah’s Witnesses)-এর মতো ভ্রান্ত-ধর্মবিশ্বাস, এবং পাশাপাশি ইসলামের মতো অখ্রিষ্টীয় ধর্মগুলি অস্বীকার করে যে যিশু প্রকৃতই ঈশ্বর ছিলেন। তারা যিশুকে একজন মহান শিক্ষক বা নবী হিসেবে, প্রথম-সৃষ্ট সত্তা হিসেবে, এবং এমনকি মশীহ হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। কিন্তু, তারা অস্বীকার করে যে তিনি প্রকৃতই ঈশ্বর ছিলেন।[1]
এই সমস্ত ধর্মের অনুগামীরা সবসময়ে দাবি করবে, “যিশু কখনোই নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেননি। তিনি বলেছিলেন তিনি ঈশ্বরের পুত্র, ঠিক যেমন আমরা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের পুত্র [সন্তান]।”
যিশু কি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেছিলেন? হ্যাঁ। যারা যিশুর কথা শুনেছিল, তারা তাঁর দাবিগুলি বুঝতে পেরেছিল। যখন যিশু ঈশ্বরকে “আমার পিতা” বলে উল্লেখ করেছিলেন, ইহুদি নেতারা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। কেন? “এই কারণে ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার আপ্রাণ চেষ্টা করল, কারণ তিনি যে শুধু বিশ্রামদিন লঙ্ঘন করছিলেন, তা নয়, তিনি ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলেও সম্বোধন করে নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য করেছিলেন” (যোহন ৫:১৮)।
যিশুর নিজেকে ঈশ্বর বলার অন্যতম এক স্পষ্ট দাবির উল্লেখ পাওয়া যায় যখন তিনি ইহুদি নেতাদের বলেছিলেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, অব্রাহামের জন্মের পূর্ব থেকেই আমি আছি” (যোহন ৮:৫৮)। এই কথাগুলিই ঈশ্বর বলেছিলেন যখন তিনি সেই জ্বলন্ত ঝোপে মোশির কাছে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন: “ইস্রায়েলীদের তোমাকে একথাই বলতে হবে: ‘আমি আছি আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন’” (যাত্রা পুস্তক ৩:১৪)। এই কথাগুলি বলে যিশু নিজেকে সেই ঈশ্বর বলে দাবি করছিলেন যিনি মোশির কাছে এসেছিলেন। ইহুদি নেতারা জানত যে যিশু তাঁর কথায় ঠিক কী বোঝাতে চাইছিলেন। প্রত্যুত্তরে, তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য পাথর তুলে নিয়েছিল। এটাই ছিল ঈশ্বরনিন্দার—মিথ্যাভাবে ঈশ্বর বলে দাবি করার যথার্থ শাস্তি (লেবীয় পুস্তক ২৪:১৬)।
যিশুর বিচার চলাকালীন, কায়াফা প্রশ্ন করেছিলেন, “তুমিই কি সেই খ্রীষ্ট, পরমধন্য ঈশ্বরের পুত্র?” যিশুর উত্তর খুবই নির্দিষ্ট ছিল: “আমিই তিনি। আর তোমরা মনুষ্যপুত্রকে সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকতে ও স্বর্গের মেঘে করে আসতে দেখবে।” এই উত্তর দিয়ে যিশু দাবি করেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের ডানদিকে বসে আছেন এবং তিনিই দানিয়েল ভাববাদীর ভাববাণী করা সেই মনুষ্যপুত্র যিনি পৃথিবীর বিচার করতে আসবেন (গীত ১১০:১ এবং দানিয়েল ৭:১৩-১৪)। কায়াফা জানতেন যে যিশু নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করছেন। তিনি নিজের পোশাক ছিঁড়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “তোমরা তো ঈশ্বরনিন্দা শুনলে” (মার্ক ১৪:৬১-৬৪)।
আপনি যিশুর দাবিগুলি বিশ্বাস করতে অস্বীকার করতে পারেন, কিন্তু, যিশু নিজেই নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবি করেছেন তা স্বীকার না করে আপনি মনোযোগ দিয়ে সুসমাচার পুস্তকগুলি পড়তে পারবেন না। তাঁর শ্রোতারা তাঁর দাবি শুনেছিল এবং হয় তাঁকে ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করতে বা তাঁকে মিথ্যা ভাববাদী এবং ঈশ্বরের নিন্দাকারী হিসেবে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল।
[1]এই ভ্রান্ত-ধর্মবিশ্বাসগুলির শিক্ষা সম্বন্ধে জানতে অধ্যয়ন করুন Shepherds Global Classroom–এর কোর্স, Faith Traditions of the World (বিশ্বের ধর্মীয় পরম্পরা সমূহ)।
যিশুর মতো করে আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসা
যিশুর শিক্ষাদানকালে, তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রোতা হিসেবে করগ্রাহী এবং পাপীদের আকৃষ্ট করেছিলেন। যিশু কেবল এই লোকদের শিক্ষাই দিতেন তা নয়, তিনি তাদের সাথে বসে খাওয়া-দাওয়াও করতেন। যখন ফরিশীরা দেখেছিল যে যিশু স্বেচ্ছায় পাপীদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করছেন, তখন তারা তাঁর সমালোচনা করতে শুরু করেছিল। যিশু তিনটি গল্প বলে এর উত্তর দিয়েছিলেন। আপনি যখন এই গল্পগুলি পড়েন, তখন পটভূমির দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দিক আপনার উপলব্ধি করা উচিত।
১। যিশুর সময়কালে, একজন ব্যক্তির সাথে বসে খাবার খাওয়ার অর্থ হল আপনি তার সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপন করেছন।[1] যখন যিশু পাপীদের সাথে বসে খেয়েছিলেন, এর তিনি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। যিশু দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বর লোকেদের তাঁর কাছে আসার জন্য অপেক্ষা করেন না; পরিবর্তে, ঈশ্বর সক্রিয়ভাবে যারা হারিয়ে গেছে তাদের সন্ধান করেন।
২। যিশুর সময়কালে ইহুদিরা আশা করত যে একজন ধার্মিক ব্যক্তি পাপীদের সাহচর্য এড়িয়ে চলবে। রব্বিরা শেখাতেন যে যখন মশীহ আসবেন, তিনি দুষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সমস্ত সংযোগ এড়িয়ে চলবেন এবং কেবল ধার্মিকের সাথেই ভোজন করবেন।
► লূক ১৫:১-৩২ পড়ুন।
এটি তিনটি অংশে বিভক্ত একটি বড় রূপক কাহিনী: একটি হারানো মেষ, একটি হারানো মুদ্রা এবং একটি হারানো পুত্র৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে, উপমার মূল বিষয় হল সেই ব্যক্তির আনন্দ যে তার হারিয়ে যাওয়া জিনিসটি খুঁজে পেয়েছে। যিশু দেখিয়েছেন যে যখন পাপীরা মন-পরিবর্তন করে, তখন স্বর্গে আনন্দ হয়।
[2]রব্বিদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় প্রবাদ ছিল: “যখন একজন পাপী ঈশ্বরের সামনে ধ্বংস হয়, তখন স্বর্গে আনন্দ হয়।” যিশু এটাকে সম্পূর্ণভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন: “একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে স্বর্গে অনেক বেশি আনন্দ হবে”। যিশু এবং অন্যান্য রব্বিদের মধ্যে কী পার্থক্য ছিল? প্রেম। এক প্রেমময় হৃদয় থেকে পরিচর্যা কাজের অর্থ কী তা যিশু দেখিয়েছিলেন।
যখন আমরা ভালোবাসা ছাড়া পরিচর্যা কাজ করি, তখন মানুষের চেয়েও পদমর্যাদা এবং অবস্থান বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে, আমরা যখন ভালোবাসার হৃদয় থেকে পরিচর্যা করি, তখন আমরা হারিয়ে যাওয়া আত্মাদের জন্য মর্যাদা ত্যাগ করতে ইচ্ছুক থাকি। যিশু ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা সহ্য করতে ইচ্ছুক ছিলেন মূলত সেইসব ব্যক্তিদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য যাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার প্রয়োজন ছিল।
► আমরা যদি জিজ্ঞেস করি, “আপনি কি অপব্যয়ী পুত্রের প্রতি ভালোবাসা দেখাবেন?” আমরা সবার উত্তর হবে, “হ্যাঁ।” আমরা সঠিক উত্তরটা জানি! পরিবর্তে, জিজ্ঞাসা করুন, “আমার জীবনের পথে সেই অপব্যয়ী কে ছিল? আমি কীভাবে সেই ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলাম?”
যিশু দুঃখার্তদের প্রতি তাঁর করুণার মাধ্যমে প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন
সুসমাচার পুস্তকগুলি পড়ার সময়ে, আপনি কখনো লক্ষ্য করেছেন যে, যে সকল পাপীরা অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের থেকে দূরে পালাত, তারা যিশুর কাছে দৌড়ে যেত? কোন বিষয়টির জন্য পাপীরা যিশুর উপস্থিতি খুঁজত?
এটা নয় যে যিশু তাদের পাপ উপেক্ষা করেছিলেন; তিনি যেকোনো ফরিশীর চেয়ে ধার্মিকতার উচ্চতর মান দাবি করেছিলেন (মথি ৫:২০)। পাপীরা যিশুর কাছে দৌড়ে যেত কারণ তিনি একজন করুণাময় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পাপকে অব্যাহতি দিতেন না, কিন্তু তিনি পাপের কবলে পড়া ব্যক্তির জন্য করুণা অনুভব করতেন।
আমরা এটি ব্যাভিচারিতার দায়ে ধরা পড়া এক নারীর প্রতি যিশুর বলা কথাগুলিতে দেখতে পাই। তার অভিযোগকারীরা চলে যাওয়ার পর, যিশু বলেছিলেন, “তাহলে আমিও তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করি না। এখন যাও, আর কখনও পাপ কোরো না” (যোহন ৮:১১)। যিশু পাপকে অব্যাহতি দেননি; তিনি চেয়েছিলেন এই মহিলাটি সারা জীবনের জন্য তার পাপের জীবন ত্যাগ করুক। তাই, তিনি দণ্ডাজ্ঞার বদলে সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন।
লূকের সুসমাচার যিশুর করুণা বা সহানুভূতির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। লূক সক্কেয়’র কাহিনী বলেছেন, যে একজন করগ্রাহী ছিল এবং তাকে সমস্ত ধর্মীয় নেতারাই ঘৃণা করত। দর্শকদের অবাক করে দিয়ে, যিশু নিজেকে এমন এক ব্যক্তির বাড়িতে অতিথি করেছিলেন যে একজন পাপী ছিল (লূক ১৯:৭)।
► লূক ৫:১২-১৬ পড়ুন।
এই সুস্থতার কাহিনী উল্লেখ করার সময়ে, লূক একটি বিশদ বিবরণ দিয়েছেন যা জনতাকে বিস্মিত করে দিয়েছিল। যিশু তাঁর হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করেছিলেন। প্রাচীন পৃথিবীতে কেউ কখনো কুষ্ঠরোগীকে স্পর্শ করেনি! সংক্রমণের সম্ভাবনার কারণে এটি চিকিৎসাগতভাবে বিপজ্জনক ছিল। এবং একজন ইহুদির ক্ষেত্রে, এটি একজন ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অশুচি করে তুলত।
[3]কেন যিশু এই কুষ্ঠরোগীটিকে স্পর্শ করেছিলেন? তিনি করুণাবিষ্ট করেছিলেন। “করুণায় পূর্ণ হয়ে যীশু তাঁর হাত বাড়িয়ে সেই ব্যক্তিকে স্পর্শ করলেন” (মার্ক ১:৪১)। এই কুষ্ঠরোগীর শারীরিক নিরাময়ের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু, সেইসাথে তার মানসিক নিরাময়েরও প্রয়োজন ছিল। কুষ্ঠরোগীদেরকে অন্য লোকেদের থেকে দূরে থাকতে হত। কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর, এই মানুষটি কখনো অন্য মানুষের স্পর্শ অনুভব করেননি। যিশু এই বিকৃত চেহারার ব্যক্তিকে স্পর্শ না করেই সুস্থ করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি জানতেন যে কুষ্ঠরোগীটির অন্য ব্যক্তির স্পর্শ প্রয়োজন। যিশু করুণা অনুভব করেছিলেন।
আমরা যদি যিশুর মতো পরিচর্যা কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই যিশুর মতো এক করুণাময় হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে। যখন পাপী লোকেরা যিশুর চোখের দিকে তাকাত, তখন তারা প্রেমময় করুণা দেখতে পেত। পাপী লোকেরা যখন আপনার চোখের দিকে তাকায়, তারা কী দেখতে পায়?
যিশু দুঃস্থদের প্রতি তাঁর সেবার মাধ্যমে প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন
এটি বলা সহজ, “আমি অভাবীদের জন্য করুণা বোধ করি”; কিন্তু, তাদের চাহিদা পূরণ করা অনেক কঠিন কাজ। যিশু তাঁর চারপাশের লোকেদের চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে প্রেম দেখিয়েছিলেন। যিশুর পুরো পরিচর্যা কাজই ছিল একটি সেবা। পৌল লিখেছেন যে যিশু একজন দাসের রূপ নিয়ে নিজেকে শূন্য করেছেন (ফিলিপীয় ২:৭)। যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন, “কারণ, এমনকি, মনুষ্যপুত্রও সেবা পেতে আসেননি, কিন্তু সেবা করতে ও অনেকের পরিবর্তে নিজের প্রাণ মুক্তিপণস্বরূপ দিতে এসেছেন” (মার্ক ১০:৪৫)।
যিশুর অলৌকিক কাজগুলি অন্যদের কাছে তাঁর সেবাকে প্রকাশ করে। অলৌকিক কাজগুলি ছিল তাঁর মশীহ-সম্বন্ধীয় উদ্দেশ্যের চিহ্ন, কিন্তু সেগুলি মানুষের প্রয়োজন মেটানোর একটি মাধ্যমও ছিল। কিছুক্ষেত্রে অলৌকিক কাজগুলি কেবল অল্প সংখ্যক লোকের জন্য করা হয়েছিল। কিছুক্ষেত্রে সেগুলি ক্ষমতাহীন বা প্রভাবহীন লোকেদের উপকার করেছিল। কিছুক্ষেত্রে (সাব্বাথ বা বিশ্রামবারে) তাঁর অলৌকিক কাজগুলি তাঁকে আরো প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
যিশু ক্ষমতাবানদের আনুকূল্য লাভের জন্য অলৌকিক কাজ করেননি; তিনি অভাবীদের সেবা করার জন্য অলৌকিক কাজ করেছিলেন। শাস্ত্রে দু’বার দেখা গেছে যে যিশু অলৌকিক কাজ করতে অস্বীকার করেছেন। ফরিশীরা তাঁর সাথে বিতর্ক শুরু করেছিল, “তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য তারা এক স্বর্গীয় নিদর্শন দেখতে চাইল” (মার্ক ৮:১১)। যিশু কোনো নিদর্শন দেখাতে অস্বীকার করেছিলেন। তারপর যিশুর বিচার চলাকালীন, হেরোদ তাঁর কাছে তাঁর করা কিছু চিহ্নকাজ দেখতে চেয়েছিলেন (লূক ২৩:৮)। যিশু হেরোদকেও উত্তর দিতে অস্বীকার করেছিলেন। যিশু কারোর দাবিতে বা সন্দেহপ্রবণ দর্শকদের প্রভাবিত করার জন্য অলৌকিক কাজ করেননি।
যিশু হেরোদ আন্তিপাস-এর জন্য কোনো অলৌকিক কাজ করতে অস্বীকার করলেও একজন মৎস্যজীবীর শাশুড়িকে, কুষ্ঠরোগীদের, অন্ধ ভিখারিদের, এবং মন্দ আত্মাগ্রস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন যারা তাঁকে বিনিময়ে কিছুই দিতে পারেনি। তিনি ৫,০০০ লোককে খাবার দিয়েছিলেন যারা তাঁকে ত্যাগ করে কৃতজ্ঞতার অভাব দেখিয়েছিল এবং তিনি সেই মহাযাজকের দাসকে সুস্থ করেছিলেন যিনি তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিলেন। যিশু তাঁর অলৌকিক কাজের মাধ্যমে অভাবীদেরকে সাহায্য করেছিলেন।
পাস্টার এবং মন্ডলীর লিডার হিসেবে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের সিদ্ধান্তকে যুক্তিযুক্ত করা সহজ। আমরা দরিদ্রদের চেয়ে ধনীদের সাথে বেশি সময় কাটিয়ে এই যুক্তি দিতে পারি, “ওই ব্যবসায়ী মন্ডলীর পরিচর্যা কাজকে সহায়তা করতে পারে।” যখন আমরা একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সাথে দেখা করার জন্য একজন বিধবার সাথে দেখা করা বাতিল করি, তখন আমরা এটাকে অজুহাত দিতে পারি, “ওই ব্যক্তি যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং ঈশ্বরের কাজে সাহায্য করতে পারেন।” যিশু কখনো এমন করেননি। আমরা যদি যিশুর মতো পরিচর্যা কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই যিশুর মতো সেবক হতে হবে। তাঁর মতো আমদেরকেও নিজেদের সেবা পাওয়ার দিকে নয়, বরং অন্যদের সেবা করার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে (মথি ২০:২৮)। পৌল লিখেছেন, “কারণ আমরা নিজেদের বিষয়ে প্রচার করি না, কিন্তু যীশু খ্রীষ্টকে প্রভুরূপে করি এবং যীশুর কারণে নিজেদের পরিচয় দিই তোমাদের দাসরূপে” (২ করিন্থীয় ৪:৫)।
কিছু পাস্টার মনে করেন, “আমি যথেষ্ট শিক্ষিত। আমি আমার মন্ডলীতে কোনো কৃষকের দাস নই।” পৌল কখনো এভাবে ভাবেননি। পৌলের শিক্ষাগত যোগ্যতা অতুলনীয় ছিল, কিন্তু তিনি যিশুর জন্য করিন্থীয়দের সেবক হয়েছিলেন। তিনি বলতেই পারতেন, “আমার শিক্ষাগত যোগতা দেখো; আমি ইহুদি সাহিত্য, গ্রিক দর্শন, এবং খ্রিষ্টীয় তত্ত্বে প্রশিক্ষিত। আমি সমাজগৃহে, গ্রিক আরেয়পাগের সভায়, এবং রোমীয় সেনেটে বক্তৃতা দিতে পারি।” পরিবর্তে তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার প্রভু যিশুর জন্য করিন্থের সবচেয়ে কম-শিক্ষিত ব্যক্তিটির দাস।”
আমরা যদি যিশুর মতো পরিচর্যা করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই একজন দাসের মতো জীবনযাপন করার নম্রতা থাকতে হবে। সেবক হিসেবে, আমাদের জীবনধারা একজন গভর্নরের মতো বিলাসবহুল জীবনধারা নয়। আমরা যদি যিশুর মতো ভালোবাসতে চাই, তবে আমাদেরকে অবশ্যই নম্র দাসের মতো হতে হবে।
যিশু তাঁর শত্রুদের প্রতি তাঁর করুণার মাধ্যমে প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন
► মথি ৫:৪৩-৪৮ পড়ুন।
যিশু তাঁর অনুগামীদেরকে শিখিয়েছিলেন যে স্বর্গস্থ পিতার মতো সিদ্ধ হওয়ার অর্থ হল স্বর্গস্থ পিতা যেমন ভালোবাসেন, সেইভাবে ভালোবাসা। এর মানে হল “তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের অত্যাচার করে, তোমরা তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো।” যখন আপনি এই ধরণের প্রেম প্রদর্শন করবেন, তখন জগৎ জানবে যে আপনি আপনার স্বর্গস্থ পিতার সন্তান।
যিশু পর্বতের উপরে যে শিক্ষা প্রচার করেছিলেন তার প্রায় ২০০ বছর আগে, একজন ইহুদি শাস্ত্রবিদ বেশকিছু শিক্ষা লিপিবদ্ধ করেছিলেন যা সিরাখ (Sirach) নামে পরিচিত। দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে তিনি তাঁর অনুগামীদের সেই লোকেদের সাথে আচরণ করতে শিখিয়েছিলেন যারা সাহায্যের যোগ্য নয়:[4]
তুমি যখন একটি ভালো কাজ করো, নিশ্চিত থাকো যে তুমি জানো যে কে এতে উপকৃত হচ্ছে; তাহলে তুমি যা করবে তা নষ্ট হবে না।
নম্র লোকেদের ভালো করো, কিন্তু যারা ধার্মিক নয় তাদের কিছু দিও না।
তাদের খাবার দিও না, নয়তো তারা তোমার বিরুদ্ধে তোমার দয়া ব্যবহার করবে। এই জাতীয় লোকেদের জন্য তুমি যে ভালো কাজ করবে তার বিনিময়ে তোমাকে দ্বিগুণ কষ্ট দেবে।
সর্বশক্তিমান নিজে পাপীদের ঘৃণা করেন, এবং তিনি তাদের শাস্তি দেবেন।
ধার্মিকদের দান করো, কিন্তু পাপীদের সাহায্য কোরো না।
বেন সিরা (Ben Sira)’র লেখাগুলিকে যিশুর সময়কালের ইহুদিরা ধর্মশাস্ত্র বলে বিবেচনা করত। যিশু যখন বলেছিলেন, “তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছিল, ‘তোমার প্রতিবেশীকে প্রেম কোরো’ ও ‘তোমার শত্রুকে ঘৃণা কোরো,’” (মথি ৫:৪৩), এটি সেই লেখা যা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। সিরাখ-এ বলা হয়েছিল, “শুধু ধার্মিকদের জন্যই ভালো কাজ করো। মন্দদের জন্য ভালো কাজ নষ্ট করো না।”
► এখন আবার মথি ৫:৪৩-৪৮ পড়ুন। আপনি বুঝতে পারলেন যে কেন যিশুর শিক্ষা তাঁর শ্রোতাদের হতবাক করে দিয়েছিল?
পুরাতন নিয়মে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদেরকে তাদের শত্রুদেরকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। এটি নতুন ছিল না। পুরাতন নিয়মের উপর একটি ক্লাসে একজন অধ্যাপক তাঁর শিক্ষার্থীদেরকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন।
আপনারপ্রতিবেশী মন্ডলীর শত্রু। আপনি যখন সামনে দিয়ে যান,সে আপনাকে অভিশাপ দেয়। সে আপনাকে ঠকাতেচেষ্টা করে, এমনকি আপনার গবাদি পশুও চুরি করার চেষ্টা করে। একদিন ঝড়-বৃষ্টির সময়ে,আপনি দেখতে পান আপনার প্রতিবেশীর গরুটিরবাঁধন আলগা হয়ে গেছে এবংগরুটি পালিয়ে যাচ্ছে। আপনার প্রতিবেশীর প্রতি আপনার দায়িত্ব কী?
১। আপনি কি গরুটাকে চাবুক মেরে আরো দূরে তাড়িয়ে দেবেন?
শিক্ষার্থীরা জানে যে এটি সঠিক উত্তর নয়!
২। আপনি এটি উপেক্ষা করেন এবং বলেন, “এটা আমার সমস্যা নয়”?
অনেক শিক্ষার্থীই এই বিকল্পটি বেছে নেয়। তারা বলে, “এটা প্রতিবেশীর গরু, আমার গরু নয়। আমি আমার নিজের কাজ করব। এছাড়া, ওই প্রতিবেশী আমাকে পছন্দ করে না; সে আমার সাহায্যের কদর করবে না।”
৩। আপনি কি যাত্রা পুস্তক ২৩:৪ মান্য করেন? “তোমার শত্রুর বলদ অথবা গাধাকে যদি তুমি পথভ্রষ্ট হয়ে চরতে দেখো, তবে নিঃসন্দেহে সেটি ফিরিয়ে দেবে”।
পুরাতন নিয়মেও, ঈশ্বরের লোকেদেরকে বলা হয়েছিল যেন তারা তাদের শত্রুদের ভালোবাসে। কিন্তু, যিশুর সময়কালে, লোকেরা সিরাখের তুলনায় যাত্রাপুস্তক ২৩ কমই উদ্ধৃত করত। তারা সেই শিক্ষাই পছন্দ করত যা তাদেরকে তাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসার এবং তাদের শত্রুকে ঘৃণা করার অনুমতি দিত! যিশু বলেছেন, “তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবেসো, … যেন তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও। কারণ তিনি ভালোমন্দ, সব মানুষে”-কে ভালোবাসেন।
বাস্তব জীবনে এটা কেমন হয়? আপনার পরিচর্যা কাজে এরকম একটা দৃশ্য কল্পনা করুন:
একদল লোক যারা আপনার অনেক বিশ্বাসের সাথে সহমত হলেও তারা বারবার জনসমক্ষে আপনার বিরোধিতা করে। তারা এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে যার উদ্দেশ্য হল আপনাকে ফাঁদে ফেলা; তারা আপনার সদস্যদের বলে যে আপনি একজন ভ্রান্ত শিক্ষক; তারা আশা করে যে আপনি এমন কিছু করবেন যা আপনাকে আপনার অনুগামীদের সাথে সমস্যায় ফেলবে। আপনি তাদের সাথে কেমন আচরণ করবেন?
১। তাদের তাড়িয়ে দেবেন এবং বলবেন যেন তারা কখনো ফিরে না আসে?
২। তারা আপনার সাথে যে আচরণ করেছে, তাদের সাথে সেই একই আচরণ করবেন?
৩। তাদের ভুলের ব্যাপারে সৎ থাকবেন, কিন্তু প্রেমে তাদের উত্তর দেবেন?
ফরিশীরা সম্ভাব্য সমস্ত উপায়েই যিশুর বিরোধিতা করতে চেয়েছিল। তিনি তাদের ভুলগুলির ব্যাপারে সৎ ছিলেন; তিনি তাদের সত্য শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু তিনি সবসময়ে তাদের প্রতি প্রেমের আচরণ বজায় রেখেছিলেন।
যদি আমরা যিশুর মতো পরিচর্যা কাজ করতে চাই, আমাদের অবশ্যই আমাদের শত্রুদেরকে ভালোবাসতে হবে। এটি হল যিশুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যে আমাদের বার্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে গেছে, যে আমাদেরকে নির্যাতন করেছে – সকলের প্রতিই আমাদের যিশুর শর্তহীন প্রেম প্রদর্শন করতে হবে।
[1]হিতোপদেশ পুস্তকে এটি চিত্রিত হয়েছে। ‘নারীরূপী প্রজ্ঞা’ তার টেবিলে খাওয়ার জন্য “অনভিজ্ঞকে” আমন্ত্রণ জানায় (হিতোপদেশ ৯:১-৬)। প্রজ্ঞা সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে, অনভিজ্ঞ ব্যক্তি জ্ঞানী হয়ে উঠবে।
ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসা সম্পর্কে লেখা সহজ। কিন্তু সেই ভালোবাসা দৈনন্দিন জীবনে প্রকাশ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন। আমরা যখন আমাদের নিজেদের জীবনে যিশুর চরিত্র গড়ে তুলি তখনই আমরা তাঁকে আমাদের জগতের সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত হই।
আমাদের পক্ষে কি যিশুর চরিত্রের অধিকারী হওয়া সম্ভব? শাস্ত্র শেখায় যে ঈশ্বর তাঁর লোকেদেরকে তাঁর মতো ভাবনা-চিন্তা করতে সক্ষম করতে পারেন। তিনি তাঁর লোকেদের একটি নতুন আত্মা দিতে চান যা আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী চাইতে এবং তিনি আমাদের যেভাবে জীবন যাপন করার আহ্বান করেছেন সেইভাবে জীবন যাপন করতে সাহায্য করে (যিহিষ্কেল ৩৬:২৬-২৭)। ঈশ্বর আমাদের মধ্যে তাঁর পুত্রের চরিত্র বিকাশ করতে চান।
দৈনন্দিন পরিষেবায় বিশ্বস্ততার ব্যাপারে অসওয়াল্ড চেম্বার্স (Oswald Chambers) কী বলেছেন তা দেখা যাক:
যখন আপনার ঈশ্বরের থেকে আর কোনো দর্শন নেই, আমার জীবনে আর কোনো উদ্যম অবশিষ্ট নেই, এবং আর কেউ আপনাকে দেখছে না বা অনুপ্রাণিত করছে না, তখন ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিতে পরের ধাপে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার পরাক্রমী ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রয়োজন... সুসমাচার প্রচার করার চেয়ে বরং সেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং তাঁর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার বিষয়ে আরও বেশি সচেতনতা প্রয়োজন।
যে জিনিসটি সত্যই ঈশ্বরের জন্য সাক্ষ্য দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য সাক্ষ্য দেয় তা হল অবিচল অধ্যবসায়, এমনকি সেই সময়েও তা বজায় রাখা যখন কাজটি অন্যরা দেখতে পায় না। এবং অপরাজিত জীবন যাপনের একমাত্র উপায় হল ক্রমাগত ঈশ্বরের দিকে তাকিয়ে থাকা। ঈশ্বরকে বলুন তিনি যেন পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের প্রতি আপনার আত্মার চোখ খোলা রাখেন...[1]
আমরা কীভাবে পরিচর্যা কাজে এই বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি? আমরা কীভাবে ঈশ্বরকে এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, বছরের পর বছর ক্রমাগত ভালোবেসে যেতে পারি? আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যিশুর চরিত্র প্রকাশ করতে হবে। এটি প্রয়োজন যে আমরা খ্রিষ্টের মানসিকতার অধিকারী হই।
খ্রিষ্টের মনোভাবের একটি বর্ণনা
► ফিলিপীয় ২:১-১৬ পড়ুন।
ফিলিপীয় মন্ডলীর জন্য পৌলের দেওয়া নির্দেশনা হল একটি শক্তিশালী সহায়িকা যেখানে যিশু খ্রিষ্টের চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের দ্বারা বিভাজিত একটি মন্ডলীকে পৌল লিখেছেন, “স্বার্থযুক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা ভ্রান্ত দম্ভের বশবর্তী হয়ে কিছু কোরো না, কিন্তু নম্রতা সহকারে অন্যকে নিজেদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করো। নিজেদেরই বিষয়ে নয়, কিন্তু তোমরা অন্যদের বিষয়েও চিন্তা করো” (ফিলিপীয় ২:৩-৪)।
কীভাবে তারা এটির অধিকারী হয়ে উঠতে পারত? কেবল যদি তারা পৌলের নির্দেশনা মেনে চলত, যেখানে বলা হয়েছে, “খ্রীষ্ট যীশুর যে মনোভাব ছিল, তোমাদেরও ঠিক তেমনই হওয়া উচিত” (ফিলিপীয় ২:৫)।
পৌল চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন যা খ্রিষ্টীয় জীবনে বেমানান।[2] এই বৈশিষ্ট্যগুলি খ্রিষ্টীয় সাক্ষ্যকে নষ্ট করে এবং একজন খ্রিষ্টীয় পরিচর্যাকারীর সক্রিয়তাকে ধ্বংস করে। পৌল বলেছেন:
(১) স্বার্থযুক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা...বশবর্তী হয়ে কিছু কোরো না (ফিলিপীয় ২:৩)।
স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা প্রশ্ন করে, “এটায় আমার কী লাভ? এটা থেকে আমি কীভাবে উপকৃত হব?” আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে যিশু কোনো কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করার আগে বা ক্রুশীয় কষ্টভোগের আগে প্রশ্ন করছেন, “এতে আমার কী লাভ?” অবশ্যই না!
পৌল বলছেন, “যদি আমাদের মধ্যে খ্রিষ্টের মনোভাব থাকে–যদি আমরা খ্রিষ্টের মতো ভাবনা-চিন্তা করি–তাহলে আমরা কোনোকিছুই স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খার বশবর্তী হয়ে করব না।” আমাদের মনোভাব হবে একজন দাসের মনোভাবের মতো হবে। আমরা প্রশ্ন করব না, “কীভাবে আমি সেবা পাব?”, বরং আমাদের প্রশ্ন হবে, “কীভাবে আমি সেবা করব?”
(২) ভ্রান্ত দম্ভের বশবর্তী হয়ে কিছু কোরো না (ফিলিপীয় ২:৩)।
দাম্ভিকতা প্রশ্ন করে, “এটায় আমাকে কেমন লাগবে? লোকেরা কি প্রভাবিত হবে?” আবারও, আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে কূপের ধারে সেই শমরীয় নারীর সাথে সাক্ষাৎ করার আগে যিশু প্রশ্ন করছেন, “লোকেরা কি প্রভাবিত হবে?” অবশ্যই না!
পৌল বলছেন, “যদি আমাদের মধ্যে খ্রিষ্টের মনোভাব থাকে–যদি আমরা খ্রিষ্টের মতো ভাবনা-চিন্তা করি–তাহলে আমরা কোনোকিছুই অহংকারের বশবর্তী হয়ে করব না।” আমরা সামাজিক মর্যাদা লাভের সুযোগ খুঁজব না, বরং, খ্রিষ্টকে প্রদর্শন করার সুযোগ খুঁজব।
(৩) অভিযোগ...না করে সব কাজ করো (ফিলিপীয় ২:১৪)।
অসন্তোষ বলে, “আমি এর চেয়েও ভালোর যোগ্য!” আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে যিশু বলছেন, “আমার মোটেই শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেওয়া উচিত নয়। আমি গুরু। আমি আরো ভালো পরিষেবা পাওয়ার যোগ্য।” অবশ্যই না!
পৌল বলছেন, “যদি আমাদের মধ্যে খ্রিষ্টের মনোভাব থাকে–যদি আমরা খ্রিষ্টের মতো ভাবনা-চিন্তা করি–তাহলে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ না করে পরিচর্যা কাজ করব, এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও তা মেনে চলব।” আমরা উপলব্ধি করব যে আমরা কোনোকিছুরই যোগ্য নই। যখন আমরা মনে রাখি যে আমাদের যা কিছু আছে সবই ঈশ্বরের অনুগ্রহের একটি উপহার, তখন এটি পরিচর্যা কাজের প্রতিকূলতা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়।
হেলেন রোজভেয়ার (Helen Roseveare) ছিলেন বিংশ শতকের এক অন্যতম মহান মিশনারি। তিনি ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষিত একজন ডাক্তার। আফ্রিকার জায়ার [Zaire] দেশে মিশনারি হিসেবে পরিচর্যা কাজ করার সময়ে তিনি একটি হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিলেন।। যেহেতু সেখানে কোনো উপাদানই ছিল না, তাই প্রথম পদক্ষেপ ছিল ইঁট তৈরি করা। ইঁটভাটায় ইঁট তৈরি করা আফ্রিকান শ্রমিকদের সাথে ডঃ রোজভেয়ার’ও কাজ করেছিলেন।
ইঁট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে, তার নরম হাত রক্তাক্ত হয়ে যেত। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন, “ঈশ্বর, আমি আফ্রিকাতে এসেছিলাম একজন শল্যচিকিত্সক হিসেবে কাজ করতে, ইঁট বানাতে নয়! অবশ্যই এখানে এই তুচ্ছ কাজটা করার জন্য অন্য অনেক লোকেরা আছে।”
কিছু সপ্তাহ পরে, আফ্রিকান শ্রমিকদের মধ্যে একজন এসে তাকে বলেছিল, “ডাক্তার, যখন তুমি অপারেশন রুমে থাকো, তখন তোমাকে ডাক্তার হিসেবে দেখে আমাদের খুব ভয় লাগে। কিন্তু যখন আমাদের সাথে ইঁট নিয়ে কাজ করছ, আর সেটা করতে গিয়ে আমাদের মতো তোমার আঙুল থেকেও রক্ত পড়ে, তখন তুমি আমাদের দিদি, এবং আমরা তোমাকে ভালোবাসি।” ডঃ রোজভেয়ার তখন হঠাতই উপলব্ধি করেছিলেন, “ঈশ্বর কেবল একজন ডাক্তার হিসেবে আমাকে আফ্রিকাতে পাঠাননি; তিনি আমাকে খ্রিষ্টের প্রেম প্রদর্শন করার জন্য পাঠিয়েছেন।”
(৪) তর্কবিতর্ক না করে সব কাজ করো (ফিলিপীয় ২:১৪)।
বাদানুবাদ বলে, “হ্যাঁ, প্রভু, কিন্তু... আমি অনুগত হতে ইচ্ছুক, কিন্তু...।” পুনরায়, আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে যিশু বলছেন, “পিতা, আমি এখানে তোমার সেবা করতে এসেছি; কেন তুমি এটাকে এত কঠিন করেছ?” আমরা কখনোই কল্পনা করতে পারি না যিশু পিতার সাথে বাদানুবাদ করছেন।
পৌল বলছেন, “যদি আমাদের মধ্যে খ্রিষ্টের মনোভাব থাকে–যদি আমরা খ্রিষ্টের মতো ভাবনা-চিন্তা করি–তাহলে আমরা কখনো তর্ক করব না এবং তুলনামূলকভাবে সহজতর পথ খুঁজব না।” আমরা একটি সহজতর পথের জন্য দর কষাকষি করে আমাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সমঝোতা করব না। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উত্তর হবে, “হ্যাঁ, প্রভু।” আমরা খ্রিষ্টের মানসিকতার অধিকারী হব।
যখন পৌল ফিলিপীয়দের খ্রিষ্টের মনোভাবের অধিকারী হতে বলেছিলেন, তখন তিনি স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করেছিলেন যে এটি সম্ভব। তিনি জানতেন যে তারা নম্র, অনুগত স্বভাবের অধিকারী হতে পারে যা যিশুর জীবনকে চিহ্নিত করেছিল। আমরা কীভাবে খ্রিষ্টের এই মনোভাব লাভ করতে পারি?
আমাদের মন শাস্ত্রের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়
এই পাঠের শুরুতে আমরা দেখেছি যে কীভাবে শাস্ত্র আমাদেরকে ঈশ্বরের ইচ্ছা শেখায়। যিশু ঈশ্বরের বাক্য জানতেন। প্রেরিতশিষ্যরা ঈশ্বরের বাক্য জানতেন। মন্ডলীর ইতিহাসে প্রতিটি দীর্ঘস্থায়ী পুনর্জাগরণ ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যয়ন দিয়েই শুরু হয়েছে।
পৌল ফিলিপীয় বিশ্বাসীদেরকে জীবনের বাক্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন (ফিলিপীয় ২:১৬)। সুসমাচারের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং অঙ্গীকার তাদেরকে তাদের জগতে আলোস্বরূপ করে তুলেছিল।
ঈশ্বরের বাক্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়নের মাধ্যমেই আমরা যিশুর মতো চিন্তা করতে শুরু করি, খ্রিষ্টের মন ধারণ করি।। তার মানে এই নয় যে শাস্ত্র বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই গ্রিক ও হিব্রু ভাষা জানতে হবে; এর মানে এই নয় যে আপনার কাছে বাইবেলের টীকা সংক্রান্ত বইয়ের একটি বিরাট লাইব্রেরি থাকতে হবে; এর সহজ অর্থ হল যে আপনাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যে সময় ব্যয় করতে হবে। এটি আপনার দৈনন্দিন আহারের অংশ হতে হবে।
খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য হওয়া উচিত। এটি একটি আনন্দ হওয়া উচিত, কেবল একটি কর্তব্য নয়। একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কেউ বলে না, “আজ তোমাকে খেতে হবে! তুমি যদি না খাও, তাহলে তুমি দুর্বল হয়ে যাবে।” আপনাকে যা করতে হবে তা হল ভালো খাবার পাওয়া, এবং একজন সুস্থ ব্যক্তি খেতে চায়! ঈশ্বরের বাক্য প্রতিটি ক্ষুধার্ত খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জন্য খাদ্য হওয়া উচিত।
যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করি, তখন আমাদের মন, ভাবনা-চিন্তা সবকিছুই খ্রিষ্টের মানসিকতায় রূপান্তরিত হয়। বহু খ্রিষ্টবিশ্বাসীই নতুন জন্ম পেয়েছে, কিন্তু তারা সেই একইভাবে ভাবনা-চিন্তা করা বজায় রেখেছে যা তারা অবিশ্বাসী হিসেবে করত। তাদের মন খ্রিষ্টের মানসিকতায় রূপান্তরিত হয়নি। কেন?
নতুন বিশ্বাসী হিসেবে, আমাদের অবশ্যই খ্রিষ্টের মতো চিন্তা করার জন্য আমাদের মনকে পুনরায় বিন্যাস করতে হবে। আপনি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী হওয়ার আগে, আপনি প্রথমে আপনার নিজের প্রয়োজন সম্পর্কে চিন্তা করেতেন। সম্ভবত আপনি একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দেখেছিলেন, কিন্তু আপনি ভেবেছিলেন, “আমার নিজের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। আমি সেই লোকটিকে দিতে পারব না।” একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আপনি ঈশ্বরের বাক্যে পড়েছেন, “যারা দরিদ্রদের দান করে তাদের কোনো কিছুর অভাব হয় না” (হিতোপদেশ ২৮:২৭)। আপনি যিশুর কথা শুনেছেন, “দান কোরো, তোমাদেরও দেওয়া হবে। প্রচুর পরিমাণে, ঠেসে, ঝাঁকিয়ে তোমাদের পাত্র এমনভাবে তোমাদের কোলে ভরিয়ে দেওয়া হবে, যেন তা উপচে পড়ে। কারণ যে মানদণ্ডে তোমরা পরিমাপ করবে, সেই একই মানদণ্ডে পরিমাপ করে তোমাদের ফেরত দেওয়া হবে” (লূক ৬:৩৮)। আপনি অর্থ সম্পর্কে ঠিক সেইভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছেন, যেভাবে খ্রিষ্ট অর্থ সম্পর্কে ভেবেছিলেন। আপনি ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে খ্রিষ্টের মন লাভ করছেন।
খ্রিষ্টবিশ্বাসী হওয়ার আগে, আমাদেরকে যারা কষ্ট দিত, আমরাও তাদেরকে পাল্টা আঘাত করার চেষ্টা করেছি। যখন কেউ আমাদেরকে অপমান করেছে, আমরা তীব্র রাগ প্রকাশ করেছি। কিন্তু খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমরা পড়েছি, “সহিষ্ণুতায় নিজেদের আবৃত করো।” (কলসীয় ৩:১২)। আমরা পড়েছি, “মন্দের পরিশোধে মন্দ বা অপমানের পরিশোধে অপমান কোরো না, বরং আশীর্বাদ কোরো; কারণ এর জন্যই তোমাদের আহ্বান করা হয়েছ, যেন তোমরা আশীর্বাদের অধিকারী হতে পারো” (১ পিতর ৩:৯)। আমরা অন্যদেরকে সেইভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করেছি ঠিক যেভাবে খ্রিষ্ট সেই ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যারা তাঁকে আঘাত করেছিল। আমরা ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে খ্রিষ্টের মন লাভ করছি।
আমাদের মন দৈনন্দিন সমর্পণের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়
পৌল ফিলিপীয় বিশ্বাসীদেরকে সেই মনোভাবের অধিকারী হতে বলেছিলেন যা খ্রিষ্ট যিশুর ছিল। তিনি এই মানসিকতা বর্ণনা করেছেন এবং তারপর তাদেরকে বলেছেন যে কীভাবে এটি তাদের জীবনে সম্ভব হতে পারে। তাদের অবশ্যই বিশ্বস্ত আনুগত্যের মাধ্যমে তাদের পরিত্রাণের কাজ করে যেতে হবে, তবে তা তাদের পরিত্রাণ অর্জনের জন্য নয় – কিন্তু এর কারণ হল ঈশ্বর ইতিমধ্যেই কাজ করছেন, “তাঁর শুভ-সংকল্পের জন্য তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা উৎপন্ন ও কাজ করার জন্য” (ফিলিপীয় ২:১২-১৩)। যখন তারা নম্রভাবে ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পন করি, তখন তিনি তাদেরকে ঈশ্বরীয় জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষা (“ইচ্ছা”) এবং শক্তি (“কাজ করার”) প্রদান করেন।
যখন আমরা একটি সমর্পিত জীবন যাপন করি, তখন পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে সেই একই বৈশিষ্ট্যগুলি বিকাশ করেন যা আমরা যিশুর জীবন এবং পরিচর্যা কাজে দেখেছি। আমরা আমাদের প্রচেষ্টায় খ্রিষ্টের মনোভাব লাভ করি না; আমরা সমর্পণের মাধ্যমে খ্রিষ্টের মনোভাব লাভ করি।
এটি অবশ্যই একটি দৈনন্দিন সমর্পণ হওয়া উচিত। পৌল আমাদেরকে আমাদের শরীরকে জীবন্ত বলিরূপে উৎসর্গ করার জন্য আহ্বান করেছেন (রোমীয় ১২:১)। একটি জীবন্ত বলিদান মৃত নয়; এটি ক্রমাগত জীবিত। একটি সমর্পণ আছে যেখানে আমরা আমাদের ইচ্ছাকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করে দিই, কিন্তু এমন অনেক সমর্পণও আছে যেখানে আমাদেরকে প্রতিদিন তাঁর ইচ্ছার কাছে ক্রমাগত সমর্পণ করে যেতে হয়।
ন্যান্সি লেই ডি’মস (Nancy Leigh DeMoss) সমর্পিত জীবনের একটি চিত্র দিয়েছেন।[3] যখন আপনি এই বর্ণনাগুলি পড়ছেন, তখন প্রশ্ন করুন, “আমি কি এই ক্ষেত্রটিতে দৈনন্দিন সমর্পণের জীবন যাপন করছি? আমি কি এই ক্ষেত্রটিতে খ্রিষ্টের মনের প্রকাশ করছি?”
যখন আপনার মাংস কোনো কোনো সমালোচনামূলক কথা পুনরাবৃত্ত করতে চায়, তখন পবিত্র আত্মা বলেন, “যেন কারও নিন্দা না করে” (তীত ৩:২)। সমর্পিত হৃদয় বলে, “হ্যাঁ।”
যখন আপনার মাংস কোনো প্রতিকূলতা নিয়ে অভিযোগ করতে চায়, তখন পবিত্র আত্মা বলেন, “সমস্ত পরিস্থিতিতেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করো” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৮)। সমর্পিত হৃদয় বলে, “হ্যাঁ।”
যখন আপনার মাংস একটি অযৌক্তিক মনিবকে প্রতিরোধ করতে চায়, তখন পবিত্র আত্মা বলেন, “প্রভুর কারণে ...বশ্যতাস্বীকার করো” (১ পিতর ২:১৩)। সমর্পিত হৃদয় বলে, “হ্যাঁ।”
[4]আমাদের সমর্পণে, খ্রিষ্টের মধ্যে যে পবিত্র আত্মা ছিলেন, সেই একই পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে বাস করেন। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে–আমাদের উত্তম ইচ্ছার মাধ্যমে নয়–দৈনন্দিন জীবনের হতাশার সামনে, পরিচর্যা কাজের হতাশার সামনে, এবং শয়তানের দেওয়া প্রলোভনের সামনে খ্রিষ্টের মতো আচরণ করার জন্য শক্তিযুক্ত আমরা হই।
► সাম্প্রতিক সময়ের কথা উল্লেখ করুন যখন কোনো মাংসিক ইচ্ছা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরোধী হয়েছে। যখন এই প্রলোভনের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন আপনি কীভাবে প্রতিদিনের আত্মসমর্পণে জীবনযাপন করেছিলেন? এমন কোনো বর্তমান প্রলোভন কী আছে যেখানে আপনাকে আবার ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে? একটি ক্লাস হিসেবে, এই ক্ষেত্রগুলিতে একে অপরের জন্য প্রার্থনা করুন।
“একটি পবিত্র জীবনের রহস্য যিশুকে অনুকরণ করার মধ্যে নয়, কিন্তু স্বয়ং যিশুকে আমার জীবনে প্রকাশ করার মধ্যে রয়েছে…. পবিত্রীকরণ যিশুর কাছ থেকে নেওয়া পবিত্র হওয়ার শক্তি নয়; এটি যিশুর কাছ থেকে সেই পবিত্রতা নেওয়া যা তাঁর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল।”
- অসওয়াল্ড চেম্বার্স (Oswald Chambers)
উপসংহার: ঈশ্বর খ্রিষ্টসাদৃশ্য প্রেমের মাধ্যমে কাজ করেন
আমরা একটি অস্থির পৃথিবীতে বাস করি। যারা এই পাঠগুলি পড়ছে, তাদের মধ্যে অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে বাস করে যেখানে মন্ডলী শাসনব্যবস্থা, ভ্রান্ত ধর্মমত বা সামাজিক চাপ দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হয়। এটি ভাবা কি যুক্তিযুক্ত যে আমরা আমাদের শত্রুকে ভালোবাসার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বকে প্রকৃত অর্থে পরিবর্তন করতে পারি? আমাদের শত্রু যখন আমাদেরকে হত্যা করার চেষ্টা করছে তখন আমরা কীভাবে আমাদের শত্রুকে ভালোবাসতে পারি?
একবার একজন সাংবাদিক বাগদাদে বসবাসকারী এক ইরাকি খ্রিষ্টবিশ্বাসীর সাথে কথা বলেছিলেন।[1] সাংবাদিক যখন সেই ব্যক্তির সাথে কথা বলেছিলেন, তখন আইসিস [ISIS] সৈন্যরা তার বাড়ি থেকে মাত্র ৪০ মিনিট দূরত্বে ছিল। সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমাদের মন্ডলী কি এখনো আরাধনা করার জন্য মিলিত হচ্ছে?” সেই খ্রিষ্টবিশ্বাসী উত্তর দিয়েছিল: “হ্যাঁ! এমনকি, আমরা আমাদের মন্ডলীতে দুটো প্রার্থনার গ্রুপ চালু করেছি–উত্তর দিকে আমাদের যে নির্যাতিত ভাই-বোনেরা রয়েছে তাদের জন্য প্রার্থনা করার একটা গ্রুপ এবং আমাদের শত্রুদের জন্য প্রার্থনা করার একটা গ্রুপ।”
বাগদাদের সেন্ট জর্জ’স চার্চ’র সসদ্যরা তাদের শত্রুদের জন্য প্রার্থনা করে। তারা মুসলিম অখ্রিস্টিয়ান বিধবাদেরকে খাবারের প্যাকেট দেয়। তারা তাদের শত্রুদের ভালোবাসে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে তারা যিশুর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার জন্যই আহুত।
এই নিবন্ধটি আমাদের সেই সত্যের কথা মনে করিয়ে দেয় যা মন্ডলীর ইতিহাস জুড়ে দেখা যায়। ঈশ্বরের কাজ করার পদ্ধতি সর্বদা মানুষের পথের বিপরীত। মানুষ মধ্যযুগে অখ্রিস্টিয়ানদের বিরুদ্ধে সামরিক ক্রুসেডের মাধ্যমে কাজ করেছে; ঈশ্বর রেমন্ড লাল (Raymond Lull) নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করেছেন যিনি ৮২ বছর বয়সে বিশ্বে তার একাধিক মিশনারি ভ্রমণের শেষ সফরের সময়ে মারা গিয়েছিলেন। মানুষ সামরিক শক্তির মাধ্যমে কাজ করে; ঈশ্বর একজন হাডসন টেলর (Hudson Taylor)-এর মাধ্যমে কাজ করেন যিনি চিনদেশের মধ্যে সুসমাচার প্রচারের জন্য তার জীবন দিয়েছেন। মানুষ শক্তির মাধ্যমে কাজ করে; ঈশ্বর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্বলতার মাধ্যমে কাজ করেন।
ঈশ্বরের পথ কখনোই মানুষের পথ নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের পথই বিজয়ী। খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা যিশুর মতো ভালোবাসে বলেই আমাদের পৃথিবী অনন্তকালের জন্য পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তনটি ধীর এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেদনাদায়ক, কিন্তু এটিই হল আমাদের পতিত জগতে তাঁর কাজ করার জন্য ঈশ্বরের উপায়।
যিশুর মতো পরিচর্যা কাজ করার জন্য আমাদেরকে যিশুর মতো প্রেমও করতে হবে। একবার একজন বয়স্ক প্রচারককে তার পরিচর্যা কাজের রহস্য জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “লোকেরা একমাত্র একটি উপায়েই বুঝতে পারবে যে ঈশ্বর তাদের কতটা ভালোবাসেন এবং সেটি হল আপনি তাদের কতটা ভালোবাসেন তা প্রকাশ করা।” এই প্রচারক বুঝতে পেরেছিলেন যে খ্রিষ্টের প্রেম আমাদের মাধ্যমে আলোকিত হয়, আমরা বিশ্বকে ঈশ্বরের কাছে আকৃষ্ট করি। এটাই হল যিশুর মতো ভালোবাসার অর্থ।
[1]Mindy Belz, “How Does the Church Move the World?” World Magazine, ২৭শে মে, ২০১৭
এই পাঠে আমরা দেখেছি কীভাবে যিশু ভালোবেসেছেন। এই অ্যাসাইনমেন্টে আপনাকে এমন উপায়গুলি খুঁজে বের হবে যেখানে আপনি আপনার প্রতিবেশীকে প্রেম করার ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারেন। অ্যাসাইনমেন্ট করতে বেশি সময় নেওয়া উচিত নয়; এটা বাস্তবায়িত বা অনুশীলন করতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে! এটি অনুশীলন করতে ব্যর্থ হবেন না। যিশু যেমন ভালোবেসেছেন, তেমনভাবে ভালোবাসার জন্যই আমাদেরকে আহ্বান করা হয়েছে।
সুসমাচার পুস্তকগুলি থেকে মানুষের প্রতি যিশুর ভালোবাসার তিনটি নির্দিষ্ট উদাহরণ লিখুন। তারপর আপনার জীবনের জন্য তিনটি নির্দিষ্ট প্রয়োগ উল্লেখ করুন। আপনি কীভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করবেন? এই অ্যাসাইনমেন্টটি আপনার জন্য; যতটা সম্ভব নির্দিষ্ট হন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.