আমরা এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী রাজদূত হিসেবে পরিচর্যা কাজ করি।
ভূমিকা
ঈশ্বরের রাজ্য হল নতুন নিয়মের একটি প্রাথমিক বিষয়বস্তু।[1]রাজ্য কথাটি মথিতে ৫৪ বার, মার্কে ১৪ বার, লূকে ৩৯ বার, এবং যোহনে ৫ বার উল্লিখিত হয়েছে।[2]
যিশুর বলা কাহিনীগুলির মধ্যে প্রায় অর্ধেকটিই ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে শিক্ষা দেয়। তিনি রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করেছেন। তিনি রাজ্যের শক্তি প্রকাশ করার জন্য সুস্থ করেছেন এবং মন্দ আত্মাদের তাড়িয়েছেন। তাঁর স্বর্গারোহণের পর, প্রথম শতকের মন্ডলী ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার চালিয়ে গিয়েছিল (প্রেরিত ৮:১২, প্রেরিত ২৮:২৩)।
এই পাঠে, আমরা যিশুর পরিচর্যা কাজে ঈশ্বরের রাজ্যের ব্যাপারে এবং আজকের দিনে পরিচর্যা কাজে রাজ্যের প্রভাব সম্পর্কে অধ্যয়ন করব। এই কোর্সের শেষে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে নাইজেরিয়াতে প্রচার করা একটি সারমন রয়েছে। এই সারমনটি দেখায় যে কীভাবে রাজ্যের বার্তা আমাদের জগতে পরিচর্যা কাজকে প্রভাবিত করে।
ঈশ্বরের রাজ্য
এক্ষেত্রে দু’টি প্রশ্ন আছে যা ঈশ্বরের রাজ্যের অধ্যয়নটির সূচনা করে।[3]
১। ঈশ্বরের রাজ্য কী?
২। কখন ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
ঈশ্বরের রাজ্য কী?
► প্রেরিত ১:১-৮ পড়ুন।
পুনরুত্থানের পরে ৪০ দিন ধরে শিষ্যদের সাথে থাকার সময়ে যিশু ঈশ্বরের রাজ্যের ব্যাপারে তাদেরকে বলেছিলেন। তাঁর স্বর্গারোহণের ঠিক আগের মুহূর্তে, শিষ্যরা প্রশ্ন করেছিলেন, “প্রভু, আপনি কি এই সময়ে ইস্রায়েলীদের কাছে রাজ্য ফিরিয়ে দিতে চলেছেন ?” শিষ্যরা আশা করেছিলেন:
১।একটি তাৎক্ষণিক রাজ্য: “এই সময়ে”। তারা আশা করেছিল যে যিশু অবিলম্বে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন।
২।একটি রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক রাজ্য: “ফিরিয়ে দিতে”। তারা আশা করেছিল যে যিশু রোম সাম্রাজ্যকে উৎখাত করবেন এবং ইস্রায়েলের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করবেন।
৩।একটি জাতীয় রাজ্য: “ইস্রায়েলীদের কাছে রাজ্য”। তারা আশা করেছিল যে পুরাতন নিয়মের অন্যান্য দায়ূদীয় রাজাদের মতোই যিশু দেশ শাসন করবেন।[4]
যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “পিতা তাঁর নিজস্ব অধিকারে যে সময় ও দিন নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, সেসব তোমাদের জানার কথা নয়। কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে এলে তোমরা শক্তি লাভ করবে, আর তোমরা জেরুশালেমে ও সমস্ত যিহূদিয়ায় ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্তসীমা পর্যন্ত আমার সাক্ষী হবে”।
যিশুর উত্তর দেখায় যে তাঁর রাজ্য ছিল:
১।একটি অন্তহীন রাজ্য: “পিতা তাঁর নিজস্ব অধিকারে যে সময় ও দিন নির্দিষ্ট করে রেখেছেন”। যিশুর রাজ্য মানুষের সময়কালের উপর নয়, কিন্তু পিতার সময়ের উপর নির্ভরশীল।
২।একটি অতিপ্রাকৃত রাজ্য: “কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে এলে তোমরা শক্তি লাভ করবে”। যিশুর রাজ্য রাজনৈতিক কর্তৃত্বের উপর নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মার শক্তির উপর নির্ভরশীল।
৩।একটি বিশ্বজনীনরাজ্য: “পৃথিবীর প্রান্তসীমা পর্যন্ত”। যিশুর রাজ্য সমস্ত দেশ-জাতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি ইস্রায়েলের মধ্যে সীমিত ছিল না।
[5]যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন যে তাদের সেই সময়কাল সম্পর্কে জানার প্রয়োজন নেই। পরিবর্তে, তাদের দু’টি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে: পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করা এবং পৃথিবীর প্রান্তসীমা পর্যন্ত তাঁর সাক্ষী হওয়া।
কখন ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
ঈশতত্ত্ববিদদের মধ্যে ঈশ্বরের রাজ্য নিয়ে তিনটি প্রাথমিক দৃষ্টিকোণ রয়েছে।
রাজ্য আসবে।
কিছু কিছু ঈশতত্ত্ববিদ দেখেন যে সহস্রাব্দে যিশু যখন পৃথিবীতে রাজত্ব করবেন তখন শেষ সময়ের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এই লেখকরা মথি ২৪-২৫-এর মতো শাস্ত্রীয় অংশগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন যা সেই রাজ্যের রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক দিকগুলির উপর জোর দেয়।
রাজ্য এসে পড়েছে।
কিছু ঈশতত্ত্ববিদ শিক্ষা দেন যে যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারা সেই সমস্ত শাস্ত্রাংশগুলির উপর জোর দেন যেখানে যিশু বলেছেন যে “স্বর্গরাজ্য সন্নিকট” এবং “তাহলে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের উপরে এসে পড়েছে” (মথি ৪:১৭ এবং লূক ১১:২০)। রাজ্য সংক্রান্ত এই দৃষ্টিভঙ্গিটি রাজ্যের আত্মিক প্রকৃতি এবং বিশ্বাসীদের হৃদয়ে ঈশ্বরের শাসনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
রাজ্য ইতিমধ্যেই এসে গেছে, কিন্তু এখনও তা সম্পূর্ণরূপে সুসম্পূর্ণ হয়নি।
অনেক ঈশতত্ত্ববিদ শিক্ষা দেন যে রাজ্যে বর্তমান এবং ভবিষ্যত – উভয় দিকই অন্তর্ভুক্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বরের রাজ্য যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল; এটি মন্ডলীর কাজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে; খ্রিষ্ট যখন শাসন করতে ফিরে আসবেন তখন এটি সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত হবে।[6] খ্রিষ্ট তাঁর প্রত্যাবর্তনে, তিনি প্রতিটি শাসন এবং প্রতিটি কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতাকে ধ্বংস করার পরে ঈশ্বর পিতার কাছে রাজ্যটি তুলে দেবেন (১ করিন্থীয় ১৫:২৪)। এটি হল ঈশ্বরের রাজ্যের সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা।
► রাজ্য সম্পর্কে এগুলির মধ্যে কোন ধারণাটি আপনি মেনে চলেন? পরিচর্যা কাজের জন্য প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবিক প্রভাব কী?
এই পাঠে, আমরা রাজ্যের সেই দিকগুলি দেখব যা ইতিমধ্যেই কাজ করছে এবং রাজ্যের সেই দিকগুলি দেখব যা পূর্ণ হতে বাকি রয়েছে৷ একটি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল:
একজন রাজা: তাঁর জন্মের সময়ের সেই পন্ডিতরা থেকে ক্রুশের শিলালিপি পর্যন্ত, যিশু রাজা হিসেবে এসেছিলেন।
কর্তৃত্ব: যিশু তাঁর অলৌকিক কাজ এবং কবরের উপর বিজয়ের মাধ্যমে তাঁর কর্তৃত্ব প্রদর্শন করেছিলেন।
বিধান: পর্বতের উপরে দেওয়া শিক্ষায় যিশু রাজ্যের সমস্ত আইন সারসংক্ষিপ্ত করেছিল।
রাজ্যক্ষেত্র: যিশু শিখিয়েছিলেন যে তাঁর রাজ্য পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তারিত হবে এবং সমস্ত ভাষা ও সমস্ত জাতি থেকে সমস্ত লোককে অন্তর্ভুক্ত করবে।
জনগণ: যত লোক রাজার দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছে এবং তাঁর শাসনাধীন, তারা সকলেই যিশুর রাজ্যের নাগরিক।
[1]এই অধ্যায়ে ব্যবহৃত উৎসগুলি হল:
D. Matthew Allen, “The Kingdom in Matthew.” (১৯৯৯). এটি https://bible.org/article/kingdom-matthew থেকে প্রাপ্ত। মার্চ ২২, ২০২১ তারিখে।
Darrell L. Bock, Luke: Baker Exegetical Commentary on the New Testament. (Grand Rapids: Baker Books, ১৯৯৪-১৯৯৬)
J. Dwight Pentecost, The Words and Works of Jesus Christ. (Grand Rapids: Zondervan, ১৯৮১)
Martyn Lloyd-Jones, Studies in the Sermon on the Mount. (Grand Rapids: Eerdmans, ১৯৫৯)
[2]মথি সাধারণত “স্বর্গরাজ্য” নির্দেশ করেছেন, যেখানে লূক “ঈশ্বরের রাজ্য” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মথির প্রথম পাঠকরা ছিল ইহুদি; ইহুদিরা ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা এড়িয়ে চলত এবং সাধারণত ঈশ্বরের জন্য একটি শব্দার্থ হিসাবে “স্বর্গ” কথাটি ব্যবহার করত। দেখা যায় যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মথি “ঈশ্বরের রাজ্য”-কে পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন। এই পাঠে আমি মথি’র উল্লেখ ছাড়া “ঈশ্বরের রাজ্য” কথাটি ব্যবহার করব।
“রাজ্য এসে গেছে;
রাজ্য আসছে;
রাজ্য রাজ্য এখনও আসা বাকি।
-মার্টিন লয়েড-জোনস”
(Martyn Lloyd-Jones)
[6]ভাষ্যকাররা যিশুর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে রাজ্যের শুরুকে বোঝাতে “রাজ্যের সূচনা” কথাটি ব্যবহার করেন। “রাজ্যের সুসম্পূর্ণতা” হল খ্রিষ্টের প্রত্যাবর্তনে রাজ্যের প্রতিশ্রুতির চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা।
স্বর্গরাজ্যের প্রতিশ্রুতি
► মথি ৩:১-১২ পড়ুন।
নতুন নিয়মে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় যোহন বাপ্তাইজকের প্রচারে। পুরাতন চুক্তির শেষ ভাববাদী হিসেবে, যোহন ইস্রায়েলের ধর্মীয় নেতাদের ভণ্ডামির নিন্দা করেছিলেন। প্রথম নতুন নিয়মের বার্তাবাহক হিসেবে, তিনি এক নতুন রাজার জন্য পথ প্রস্তুত করেছিলেন। “মন পরিবর্তন করো, কারণ স্বর্গরাজ্য এসে পড়ল” (মথি ৩:২)। “এসে পড়ল” কথাটি বোঝায় যে স্বর্গরাজ্য দ্রুত আসতে চলেছিল। এটি তখনও আসেনি, কিন্তু তা খুব নিকটবর্তী ছিল। যোহন ইস্রায়েলকে মশীহের আগমনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য প্রচার করেছিলেন যিনি একটি নতুন রাজ্যের সূচনা করবেন।
যোহন গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই যিশু জনসমক্ষে তাঁর পরিচর্যা কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য গালীলের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন (মথি ৪:২৩)। যোহন বাপ্তাইজকের মতো, যিশু ঘোষণা করেছিলেন, “মন পরিবর্তন করো, কারণ স্বর্গরাজ্য সন্নিকট” (মথি ৪:১৭)।
► মথি ১০:৫-৪২ পড়ুন।
ইস্রায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছে রাজ্যের বার্তা প্রচার করতে যিশু বারোজন শিষ্যকে প্রেরণ করেছিলেন। যোহন বাপ্তাইজক এবং যিশুর মতোই, তারা প্রচার করেছিলেন, “স্বর্গরাজ্য সন্নিকট” (মথি ১০:৫-৭)।
শিষ্যদের পরিচর্যা কাজ তাদের প্রভুর পরিচর্যা কাজের অনুরূপ ছিল। যিশুর মতো, তাদেরকেও রাজ্যের কথা ঘোষণা করতে এবং মানুষের শারীরিক চাহিদাগুলি মেটাতে হয়েছিল। যিশুর মতো, তারাও অসুস্থদের সুস্থ করেছিল এবং শয়তানের রাজত্বে ঈশ্বরের রাজ্য প্রবেশ করার চিহ্ন হিসেবে মন্দ আত্মাদের তাড়িয়েছিল। যিশু অসুস্থদের সুস্থ করতে, মৃতদের জীবিত করতে, কুষ্ঠরোগীদের শুচি করতে এবং মন্দ আত্মাদের তাড়াতে তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিলেন (মথি ১০:৮)।
স্বর্গরাজ্যের সূচনা
► মথি ১২:২২-৩২ পড়ুন।
রাজ্যের প্রতিশ্রুতি কোনো নতুন বিষয় ছিল না। পুরাতন নিয়মের ভাববাদীরা আগামীর রাজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, যিশু ঘোষণা করেছিলেন যে সেই রাজ্যটি কেবল ভবিষ্যতের আশা নয়, বরং তা এক তাৎক্ষণিক বাস্তবতা। যিশু ঈশ্বরের রাজ্যের সূচনা ঘোষণা করেছিলেন। যিশু যেখানে উপস্থিত থাকতেন, সেখানেই ঈশ্বরের রাজ্য উপস্থিত থাকত।
মন্দ আত্মাদের উপর তাঁর ক্ষমতার সাহায্যে যিশু সেই রাজার কর্তৃত্ব দেখিয়েছিলেন যিনি শয়তানের রাজ্যকে পরাস্ত করেছেন। তিনি একজন ভূত-নিপীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করার পরে, ফরিশীরা দাবি করেছিল যে যিশু ভূতেদের অধিপতি বেলসবুলের শক্তির মাধ্যমে তাদের তাড়িয়েছিলেন। যিশু উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের শক্তির মাধ্যমে শয়তানের রাজ্য জয় করছেন: “যদি আমি ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে ভূতদের বিতাড়িত করি, তাহলে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের উপরে এসে পড়েছে” (মথি ১২:২৮)। যিশু শয়তানের রাজ্যকে আক্রমণ করেছিলেন।
► মথি ১১:১-২৪ পড়ুন।
যিশুর অলৌকিক কাজগুলিই ছিল তাঁর রাজ্য শুরু হওয়ার চিহ্ন। যোহনের সুসমাচারে যিশুর অলৌকিক কাজের জন্য “চিহ্নকাজ” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। অলৌকিক কাজগুলি ছিল যিশুর ঈশ্বরত্বের চিহ্ন এবং নতুন রাজ্যের প্রমাণ।
যোহন বাপ্তাইজক ঘোষণা করেছিলেন যে “স্বর্গরাজ্য সন্নিকট”। তিনি আশা করেছিলেন যে একটি রাজনৈতিক রাজ্য ইস্রায়েলের জন্য মুক্তি নিয়ে আসতে চলেছে। পরিবর্তে, যোহন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে বন্দি ছিলেন! তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে জানতে পাঠিয়েছিলেন, “যাঁর আসার কথা ছিল আপনিই কি তিনি না আমরা অন্য কারও প্রতীক্ষায় থাকব?” (মথি ১১:৩) যিশুর পরিচর্যা কাজ একজন রাজনৈতিক মশীহ সম্পর্কে যোহনের প্রত্যাশার সাথে মেলেনি, কারণ যোহন আশা করেছিলেন সেই মশীহ পার্থিব রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন।
যিশু তাঁর মশীহ সংক্রান্ত কাজের দিকে নির্দেশ করে উত্তর দিয়েছিলেন।
তোমরা যা শুনছ ও দেখছ, ফিরে গিয়ে যোহন কে সেই কথা বলো। যারা অন্ধ তারা দৃষ্টি পাচ্ছে, যারা খোঁড়া তারা চলতে পারছে, যারা কুষ্ঠরোগী তারা শুচিশুদ্ধ হচ্ছে, যারা কালা তারা শুনতে পাচ্ছে, যারা মৃত তারা উত্থাপিত হচ্ছে ও যারা দরিদ্র তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে। আর ধন্য সেই ব্যক্তি যে আমার কারণে বাধা পায় না (মথি ১১:৪-৬)।
যিশু যোহনকে মশীহ সম্বন্ধে ভাববাণী করা চিহ্নগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যা পূর্ণ হচ্ছিল। যদিও যিশু যোহনের শক্তি এবং সাহসের প্রশংসা করেছিলেন, তবুও তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে স্বর্গরাজ্যে সর্বনিম্ন ব্যক্তিও যোহনের চেয়ে মহান। কেন? যিশু রাজ্যের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি নতুন চুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন। নতুন নিয়মের সর্বনিম্ন বিশ্বাসী সেই বিশেষাধিকারের অধিকারী ছিল যা পুরাতন নিয়মের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধুও কখনো দেখেননি। নতুন নিয়মের বিশ্বাসীরা পুরাতন নিয়মের প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণতা দেখেছিল। প্রতিশ্রুত রাজ্য শুরু হয়েছিল।
স্বর্গরাজ্যের জীবন: পর্বতের উপরে দেওয়া প্রচার
সুসমাচার পুস্তকগুলিতে দীর্ঘতম একক সারমন হিসেবে যা নথিভুক্ত রয়েছে তা হল যিশুর পাহাড়ের উপরে দেওয়া শিক্ষা [যা “সারমন অন দ্য মাউন্ট” নামেও পরিচিত]। ঈশ্বরের রাজ্য হল এই প্রচারের একটি সমন্বয়সাধনকারী বিষয়বস্তু। এটি বিভিন্ন উপায়ে দেখা যায়:
প্রথম উপদেশটি শেখায় যে স্বর্গরাজ্য তাদের জন্য, যারা আত্মায় দীনহীন (মথি ৫:৩)। শেষ উপদেশটি শেখায় যে স্বর্গরাজ্য তাদের জন্য, যারা ধার্মিকতার কারণে তাড়িত (মথি ৫:১০)। এই দু’টিই সমগ্র উপদেশের বাকি অংশের চারপাশে একটি মলাট তৈরি করে যা দেখায় যে উপদেশের প্রাথমিক বিষয়বস্তু হল স্বর্গরাজ্য।
যিশু বিধান পুনর্গঠন করার কর্তৃত্ব দাবি করেছেন (মথি ৫:২১-৪৮)। এটি একজন রাজার কাজ যার কাছে তাঁর রাজ্যের বিধানগুলি তৈরি করার এবং প্রয়োগ করার অধিকার বা ক্ষমতা আছে।
যিশু শিষ্যদেরকে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, “তোমার রাজ্য আসুক, তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমন পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক” (মথি ৬:৯-১৩)। পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্যের অগ্রগতির জন্য আমাদেরকে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। যখন ঈশ্বরের লোকেরা পর্বতের উপরে দেওয়া সেই শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তখন রাজ্যের প্রসার ঘটে এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব রাজ্যের নতুন নাগরিকদের কাছে প্রসারিত হয়।
সারমনের শেষে, যিশু শিখিয়েছিলেন যে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার জন্য কেবল কঠিন পরিশ্রমই যথেষ্ঠ নয়। কেবল তারাই রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে যারা পিতার ইচ্ছা পালন করে (মথি ৭:২১)।
পর্বতের উপরে দেওয়া প্রচার পড়ার নীতিসমূহ
পর্বতের উপরে দেওয়া প্রচার পড়ার সময়ে আমাদেরকে তিনটি নীতি মনে রাখতে হবে।
(১) পর্বতের উপরে দেওয়া প্রচারের আদেশগুলি মেনে চলা কখনোই স্বর্গরাজ্যের নাগরিকত্ব “অর্জন” করে না।
আমাদের কখনোই ভাবা উচিত নয়, “এইভাবে জীবন যাপন করলেই একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসীতে পরিণত হওয়া যাবে।” পরিবর্তে, স্বর্গরাজ্যের নাগরিক হিসেবে জীবন যাপনের একটি নির্দেশিকা হিসেবে আমাদের এই উপদেশটি পড়তে হবে: “এইভাবে জীবনযাপন করতে হবে, কারণ আমি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী।” আমরা কেবল অনুগ্রহেই রক্ষা পেয়েছি; তাই, ঈশ্বরের রাজ্যের সদস্য হিসেবে, আমরা তাঁর আদেশ পালন করি।
(২) পর্বতের উপরে দেওয়া প্রচার শিষ্যদের জন্য প্রযোজ্য, অবিশ্বাসীদের জন্য নয়।
এটি কোনো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য একটি সংবিধান নয়। যদি আপনার অবিশ্বাসী প্রতিবেশী এই নীতিগুলির দ্বারা জীবন যাপন করতে অস্বীকার করে, তাহলে অবাক হবেন না! এটি হল ঈশ্বর রাজ্যের জীবনের একটি বর্ণনা, মানুষের রাজ্যের জীবন যাপনের বর্ণনা নয়।
(৩) পর্বতের উপরে দেওয়া প্রচার প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য প্রযোজ্য।
অনেকে এই যুক্তি দিয়ে এই সারমনের দাবি এড়াতে চেষ্টা করেছে যে এই নীতিগুলি সাধারণ বিশ্বাসীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কেউ কেউ বলেছেন, “এই বিধান আগামী সহস্রাব্দের রাজত্বের জন্য।” কেউ কেউ বলেছেন, “এটি কিছু সাধুর জন্য। বেশিরভাগ খ্রিষ্টবিশ্বাসীই এই আদেশগুলি অনুসরণ করতে পারবে না।” কেউ কেউ বলেছেন, “এই সারমনটি দেখায় যে আমরা কখনোই ঈশ্বরের আদেশকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। যখন আমরা দেখি যে আমরা কখনোই ঈশ্বরের চাহিদা পূরণ করতে পারব না, তখন আমরা কেবল অনুগ্রহের উপরেই নির্ভর করব।”
[1]তবে, প্রথম শতকের মন্ডলী প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য একটি নির্দেশিকা হিসেবে এই সারমন পাঠ করেছিল। যাকোব এবং ১ পিতর এই উপদেশের অনেকগুলি আদেশের পুনরাবৃত্তি করেছে। যিশু ঈশ্বরের পবিত্রতার মানকে দুর্বল করতে অস্বীকার করেছিলেন। ফরিশীদের চেয়ে নিম্নমানের পরিবর্তে, যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে উচ্চতর মানদণ্ডে অধিষ্ঠিত করেছিলেন: “তোমাদের ধার্মিকতা যদি ফরিশী ও শাস্ত্রবিদদের থেকে অধিক না হয়, তোমরা নিশ্চিতরূপে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না” (মথি ৫:২০)।
ঈশ্বরের রাজ্যের জীবন
► মথি ৫-৭ অধ্যায় পড়ুন।
যিশু যদি তাঁর পার্থিব পরিচর্যা কাজের সময়ে সেই রাজ্য শুরু করে থাকেন, তাহলে আমরা এখন ঈশ্বরের রাজ্যে বাস করছি। পর্বতের উপর দেওয়া শিক্ষা স্বর্গরাজ্যের একজন নাগরিকের চরিত্র বর্ণনা করে। এখানে সেই উপদেশের বিষয়গুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল।
(১) ঈশ্বরের রাজ্যের মূল্যবোধ এই পৃথিবীর মূল্যবোধের বিপরীত।
পৃথিবীর কোনো শাসক কখনো বলেন না যে দরিদ্র হওয়া, শোক করা, আমাদের অধিকার সমর্পণ করা বা নির্যাতিত হওয়া ধন্য। পর্বতের উপরের প্রচারগুলি [“ধন্য তারা …”] যিশুর সময়কালের রোম সাম্রাজ্যের মূল্যবোধের এবং আমাদের আজকের বিশ্বের মূল্যবোধের ঠিক বিপরীত কথা বলে। ঈশ্বরের রাজ্য মানুষের রাজ্যের চেয়ে আলাদা।
(২) ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিকদের তাদের বিশ্বকে প্রভাবিত করা উচিত।
যিশুর সময়কালে এসীন সম্প্রদায় (Essenes) শিক্ষা দিত যে ধার্মিক ব্যক্তিদের সমাজ থেকে সরে আসা উচিত এবং বিচ্ছিন্নভাবে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা উচিত। যিশু বলেছিলেন, “না! তোমাদেরকে অবশ্যই লবণ হতে হবে, যা তোমাদের জগৎকে সংরক্ষণ করে এবং আস্বাদযুক্ত করে। তোমাদেরকে অবশ্যই আলো হতে হবে, যাতে স্বর্গে তোমাদের পিতা গৌরবান্বিত হন।” ঈশ্বরের রাজ্য প্রাথমিকভাবে আত্মিক হলেও, স্বর্গরাজ্যের নাগরিকদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে উপকৃত হওয়া উচিত।
আমরা এমন অনেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর উদাহরণ তালিকাভুক্ত করতে পারি যারা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের লবণ এবং আলোস্বরূপ ছিলেন। উইলিয়াম উইলবারফোর্স (William Wilberforce) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্রীতদাস বাণিজ্য বাতিল করার জন্য পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; মেথডিস্ট আন্দোলন ইংরেজ সমাজের সকল স্তরে সামাজিক সংস্কার এনেছিল; উইলিয়াম কেরী (William Carey) ভারতে ভ্রুণহত্যা এবং সতীদাহ প্রথার (বিধবাদের পুড়িয়ে মেরে ফেরার রীতি) বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়েছিলেন; খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা অনেক দেশে সাক্ষরতা ছড়িয়েছে, বহু হাসপাতাল ও অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছে, এবং দরিদ্র ও অভাবীদের সেবা করেছে।
(৩) ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিকরা পিতার ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য বিধানের ন্যূনতম চাহিদাও অতিক্রম করে যায়।
যিশু বিধানকে প্রতিস্থাপন করতে নয়, বরং বিধান পরিপূর্ণ করতে এসেছিলেন। “সেগুলি লোপ করার জন্য আমি আসিনি, কিন্তু পূর্ণ করার জন্যই এসেছি” (মথি ৫:১৭)। কোনো কিছুকে পূর্ণ করা মানে হল সেটিতে সম্পূর্ণতা লাভ করা বা সেটি সম্পন্ন করা। যিশু বিধান বাতিল করতে আসেননি, বরং বিধানের পিছনে থাকা আত্মাকে প্রকাশ করতে এসেছিলেন। ছয়টি উদাহরণের একটি সিরিজে, যিশু দেখিয়েছেন যে স্বর্গরাজ্যের নাগরিকদের ধার্মিকতাকে অবশ্যই শাস্ত্রবিদ এবং ফরিশীদের ধার্মিকতাকে অতিক্রম করে যেতে হবে।
বিধান
স্বর্গরাজ্যের নাগরিক
বিধান হত্যাকে নিষিদ্ধ করেছে।
স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা মূল কারণ—রাগকে চিহ্নিত করে।
বিধান ব্যাভিচারিতাকে নিষিদ্ধ করেছে।
স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা শারীরিক অভিলাষের দৃষ্টিতে কোনো নারীর দিকে তাকায় না।
বিধান “বিচ্ছেদের ত্যাগপত্র” দাবি করেছে।
স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বেরোনোর অজুহাত খোঁজার পরিবর্তে সেই সম্পর্কে টিকে থাকার উপায় খোঁজে।
বিধান মিথ্যা শপথ নিতে বারণ করেছে।
স্বর্গরাজ্যের একজন নাগরিকের “হ্যাঁ বা না”-ই যথেষ্ট।
বিধান প্রতিশোধকে সীমিত করেছে ( “চোখের পরিবর্তে চোখ”)।
স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা প্রেম প্রদর্শন করে, প্রতিশোধ নয়।
বিধান চায় আপনি আপনার প্রতিবেশীকে ভালোবাসুন।
স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা তাদের শত্রুদেরকেও ভালোবাসে।[2] তারা স্বর্গস্থ পিতার প্রেম এবং করুণা প্রদর্শন করে (লূক ৬:৩৬)।
(৪) স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা অন্যদের সন্তুষ্ট করার চেয়ে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার ব্যাপারে বেশি মনোযোগী।
ফরিশীরা চাইত লোকেরা তাদের উদারতা দেখুক; স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা গোপনে দান করে। ভণ্ডরা চাইত লোকেরা তাদের চিত্তাকর্ষক প্রার্থনা শুনুক; স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা সহজভাবে এবং আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে। ফরিশীরা চাইত লোকেরা তাদের দীর্ঘ উপবাসের জন্য সম্মান ও সহানুভূতি দেখাক; স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা কেবল পিতার কাছ থেকে পুরস্কারের জন্য উপবাস করে।
(৫) স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা তাদের সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয় বা তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে চিন্তিত নয়।
পরিবর্তে, তারা তাদের স্বর্গস্থ পিতার বন্দোবস্তে বিশ্বাস রেখে চলে।
(৬) স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা অন্যদের বিচার করে না।
তবে, তারা ভ্রান্ত শিক্ষককের মন্দ ফল বুঝতে সতর্ক থাকে।
(৭) স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা তাদের প্রার্থনায় আত্মবিশ্বাসী।
স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা তাদের প্রার্থনায় আত্মবিশ্বাসী, কারণ তারা জানে যে তাদের পিতা যিনি স্বর্গে আছেন তিনি তাদেরকে উত্তম জিনিস দেন যারা তাঁর কাছে তা চায়! (মথি ৭:১১)
(৮) স্বর্গের নাগরিকরা জানে যে কেবলমাত্র দু’টিই পথ আছে।
একটি প্রশস্ত দ্বার এবং একটি সংকীর্ণ দ্বার আছে। একটি উত্তম গাছ এবং একটি মন্দ গাছ আছে। একজন জ্ঞানী নির্মাতা এবং একজন নির্বোধ নির্মাতা আছে। স্বর্গরাজ্যের নাগরিকরা বিচক্ষণ।
স্বর্গরাজ্যের নীতি দ্বারা জীবনযাপন করা
[3]কীভাবে আমরা পর্বতের উপরে দেওয়া শিক্ষার নীতিসমূহের দ্বারা জীবন যাপন পারি? মূল চাবিকাঠিটি হল মথি ৫:৪৮। স্বর্গরাজ্যের নাগরিকদেরকে আমাদের স্বর্গস্থ পিতার মতো হওয়ার আহ্বান করা হয়েছে। যিশুর শিক্ষা যতটা সহজ, তা ততটাই কঠিন। কেবল ঈশ্বরের অনুগ্রহই আমাদেরকে যিশুর শিক্ষা অনুযায়ী জীবন যাপন করা শক্তি দেয়। আমাদের নিজস্ব ক্ষমতায়, আমরা কখনই এই সারমনের দাবি পূরণ করতে পারি না। কেবল পবিত্র আত্মাই স্বর্গরাজ্যের জীবনকে সম্ভব করে তোলে।
আমরা যখন পর্বতের উপরে দেওয়া শিক্ষা” নিয়ে প্রচার করি, তখন আমাদের এই নীতিটি বুঝতে হবে। আমরা যদি কেবল বিধান বা নীতি হিসেবে সেই উপদেশগুলি প্রচার করি, তাহলে আমরা লোকেদের হতাশ ও নিরুৎসাহিত করব। কেবল যখন আমরা স্বর্গরাজ্যের জীবনের আদেশ হিসেবে সেই উপদেশ প্রচার করি - যা ঈশ্বরের অনুগ্রহ দ্বারা প্রদত্ত, পুত্রের বলিদান দ্বারা ক্রীত, এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত - তখনই পর্বতের উপরে দেওয়া সারমন প্রকৃত সুসমাচার, সেই “সু-সংবাদ” হয়ে ওঠে।
► পর্বতের উপরে দেওয়া সারমনটি সম্পূর্ণরূপে পড়ার পর এবং এই সারাংশটি পর্যালোচনা করার পর, আলোচনা করুন:
আপনার সমাজের খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য সারমনের কোন শিক্ষাগুলি সবচেয়ে কঠিন?
একজন খ্রিষ্টীয় নেতা হিসেবে সারমনের কোন শিক্ষাগুলি আপনার জন্য সবচেয়ে কঠিন?
“পর্বতের উপর দেওয়া উপদেশ হল কোনোকিছুর বিনিময়ে ভালোবাসা, নিজের লাভের জন্য ভালোবাসা, বা প্রকৃত ধার্মিকতার আহ্বানকে উপেক্ষা করার বিরুদ্ধে একটি সতর্কতা। প্রকৃতপক্ষে, এই সারমনটি হল ক্ষমা, দান, কৃতজ্ঞতা এবং করুণাময় প্রেমের ধরণ প্রদর্শন করার জন্য একটি আহ্বান যা আসলে ঈশ্বরের সদৃশ।”
- ড্যারেল বক (Darrell Bock)
স্বর্গরাজ্যের গুপ্তরহস্য: স্বর্গরাজ্যের বিভিন্ন রূপককাহিনী
ইহুদি শিক্ষকরা জানতেন যে আমরা প্রস্তাবিত বিবৃতি মনে রাখার চেয়ে গল্পকে অনেক বেশি মনে রাখতে সক্ষম। এই কারণে, উপমা বা রূপক কাহিনীর ব্যবহার ইহুদি রব্বিদের কাছে একটি জনপ্রিয় শিক্ষাপদ্ধতি ছিল। যিশু ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে গভীর সত্যগুলি উপস্থাপন করা জন্য রূপকের ব্যবহার করেছিলেন।
যিশুর পরিচর্যা কাজের প্রথম দিকে, বিভিন্ন রূপক কাহিনীর ব্যবহার তাঁর শত্রুদের সঙ্গে সরাসরি বিরোধ এড়িয়ে শিষ্যদের শিক্ষা দেওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে, যিশু জেরুশালেমে সরাসরিভাবে ধর্মীয় নেতাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন; কিন্তু এই প্রাথমিক বছরগু লিতে, তাঁর মনোযোগ শিষ্যদের শিক্ষাদানের প্রতিই ছিল।
অনেকেই এই রূপক কাহিনীগুলি শুনেছিল, কিন্তু তা বুঝতে পারেনি। তারা শোনে কিন্তু কখনো বুঝতে পারে না; তারা দেখেন কিন্তু কখনো হৃদয়ে গ্রহণ করে না (মথি ১৩:১৪)। কেন? কারণ তারা তাদের হৃদয় কঠিন করে ফেলেছে। যিশাইয় ভাববাদী ভাববাণী করেছিলেন:
কারণ এই লোকেদের হৃদয় অনুভূতিহীন হয়েছে, তারা কদাচিৎ তাদের কান দিয়ে শোনে এবং তারা তাদের চোখ বন্ধ করেছে।অন্যথায়,তারা হয়তো তাদের চোখ দিয়ে দেখবে,তাদের কান দিয়ে শুনবে,তাদের মন দিয়ে বুঝবে ও ফিরে আসবে,যেন আমি তাদের আরোগ্য দান করি। (মথি ১৩:১৫, উল্লেখ্য যিশাইয় ৬:৯)
বিভিন্ন রূপক কাহিনীর মাধ্যমে, যিশু তাদেরকে শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন যাদের কান খোলা ছিল।
মথি ১৩ অধ্যায় স্বর্গরাজ্যের গোপনীয়তা সম্পর্কে বিভিন্ন রূপক কাহিনীর একটি সিরিজ উপস্থাপন করে (মথি ১৩:১১)। এই উপমাগুলি যিশুর অনুগামীদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রকৃতি প্রকাশ করে, পাশাপাশি অবিশ্বাসী নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে তাঁর শিক্ষার বেশিরভাগ অংশ গোপন রাখে।
► আরো এগিয়ে যাওয়ার আগে, কিছুক্ষণ সময় নিন ও মথি ১৩:১-৫২ এবং লূক ১৯:১১-২৭ পড়ুন। যখন আপনি রূপক কাহিনীগুলি পড়ছেন, তখন প্রত্যেকটির প্রাথমিক বিষয়বস্তুটি পরের পৃষ্ঠায় দেওয়া টেবিলটিতে একটি বা দু’টি বাক্যে লিখুন। প্রতিটি রূপকের জন্য, আজকের পরিচর্যা কাজের ক্ষেত্রে একটি প্রয়োগ খুঁজে বের করুন। উদাহরণ হিসেবে প্রথম রূপকটি আপনার জন্য করে দেওয়া হয়েছে।
বীজের প্রতি শ্রোতার প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে যে এটি কেমন ফল ধারণ করবে।
যখন আমি প্রচার করি এবং শিক্ষা দিই, আমাকে অবশ্যই ফলাফলের জন্য ঈশ্বররের উপর নির্ভর করতে হবে। ফলনের দায়িত্ব আমার নয়; আমি বিশ্বস্তভাবে বীজ বপন করার জন্য দায়বদ্ধ।
শ্যামাঘাস
সর্ষে বীজ
খামির
গুপ্তধন
বহুমূল্য মুক্তো
টানা-জাল
গৃহস্বামী
দশটি মিনা
কৃষকের রূপক (মথি ১৩:৩-৯, ১৮-২৩; লূক ৮:৫-১৮)
স্বর্গরাজ্য সম্পর্কিত এই রূপক কাহিনীটির সিরিজে প্রথম রূপকটি শেখায় যে বীজের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া বীজের ফলপ্রসূতা নির্ধারণ করে। স্বর্গরাজ্যে, কেউ কেউ বিশ্বাস করবে এবং ফল ধারণ করবে, পাশাপাশি অনেকেই বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করবে বা একটি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার পরেই পড়ে যাবে।
এই রূপকটিকে জমির রূপক বলা যেতে পারে, কারণ এটি বিভিন্ন ধরণের জমির গল্প; ভিন্ন কৃষকের নয়। প্রতিটি উদাহরণে, বীজ একই ছিল এবং কৃষক একই ছিল; পার্থক্য ছিল মাটির ক্ষেত্রে। আমরা যখন স্বর্গরাজ্যের বার্তা ঘোষণা করি, তখন কিছু শ্রোতা অন্যদের তুলনায় কম গ্রহণকারী হলে আমাদের হতবাক হওয়া উচিত নয়। আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। যিশু শিখিয়েছিলেন যে কিছু শ্রোতা উর্বর জমি হবে, পাশাপাশি কেউ কেউ ঈশ্বরের বাক্যের বিরুদ্ধে নিজেদের কঠিন করবে।
কৃষকের রূপক কাহিনীটিতে লূকের উপসংহার দেখায় যে এটি হল সত্য শোনার একটি দৃষ্টান্ত। “কাজেই কীভাবে শুনছ, সে বিষয়ে সতর্ক থেকো। যার আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে; যার নেই, এমনকি, কিছু আছে বলে যদি সে মনে করে, তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে” (লূক ৮:১৮)। যখন কোনো ব্যক্তি সত্যের প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়, তখন সে আরো সত্য গ্রহণ করে। সেই উপদেশে অন্যান্য দৃষ্টান্ত দেওয়ার আগে, যিশু তাঁর শ্রোতাদের শিখিয়েছিলেন কীভাবে এক ফলদায়ক বা উর্বর জমির মতো হয়ে শুনতে হয়।
শ্যামাঘাসের রূপক (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩)
ইহুদিরা আশা করেছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য দুষ্টদের অবিলম্বে বিচার করবে। যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে এমন একটি সময়ের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন যে সময়ে বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী উভয়ই পৃথিবীতে একসাথে বাস করবে। এই রূপক কাহিনীটিতে, ক্ষেত্র হল পৃথিবী (মথি ১৩:৩৮)। কেবল যুগের শেষে স্বর্গদূতেরা শ্যামাঘাস বা আগাছা জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে (মথি ১৩:৪০)। ঈশ্বরের রাজ্য ঈশ্বরের সময়ে বিকশিত হবে; মানুষের সময়ে নয়।
সর্ষে বীজের রূপক (মথি ১৩:৩১-৩২)
যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজ দেখা কোনো ব্যক্তিই বিশ্বজুড়ে মন্ডলীর বিস্তারের পূর্বাভাস দিতে পারেনি। শিষ্যরা ছিলেন অশিক্ষিত, দরিদ্র এবং ভীতু। তাঁদের অনন্যসাধারণ প্রতিভা, সামাজিক মর্যাদা বা রাজনৈতিক ক্ষমতার অভাব ছিল। তাঁরা ছিলেন সর্ষে বীজের মতো। কিন্তু একটি ছোটো সর্ষে বীজ যেমন একটি বড় গাছ বা ঝোপে বেড়ে ওঠে, তেমনভাবেই ঈশ্বরের রাজ্য সারা বিশ্বে পৌঁছে যাবে।
যিশুর শ্রোতারা ঈশ্বরের রাজ্যকে সর্ষে বীজের সাথে তুলনা করার কথা শুনে হয়তো অবাক হয়ে গিয়েছিল। ইহুদি রব্বিরা আশা করেছিল ঈশ্বরের রাজ্য শক্তি ও গৌরবের সাথে আসবে। তারা পাপীদের বিচারের একটি প্রদর্শন আশা করেছিল; তারা রোমের বিরুদ্ধে সামরিক বিদ্রোহ আশা করেছিল; নতুন ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে তারা সামাজিক উত্থান আশা করেছিল। পরিবর্তে, যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে স্বর্গরাজ্যের এক মুগ্ধতাহীন সূচনার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।
যখন আমরা নতুন নিয়ম পড়ি, আমরা প্রথম শতাব্দীতে যিহুদা প্রদেশের গুরুত্বহীনতা ভুলে যেতে পারি। যিহুদা প্রদেশ নতুন নিয়মের কেন্দ্র, কিন্তু এটি প্রথম শতাব্দীর বিশ্বের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে ছিল। আপনার দেশের রাজধানীর কথা চিন্তা করুন। প্রথম শতকে যিহুদা প্রদেশের ভূমিকা এটি ছিল না; সেই ভূমিকাটির অধিকারী ছিল রোম। এমন একটি শহরের কথা চিন্তা করুন যেখানে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। প্রথম শতকে যিহুদা প্রদেশের ভূমিকা এটি ছিল না; সেই ভূমিকাটির অধিকারী ছিল এথেন্স বা আলেক্সান্ড্রিয়া।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যিহুদা প্রদেশ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না; এটা অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল না; এটা সামাজিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আপনার দেশের সবচেয়ে নগণ্যতম অঞ্চলটির কথা চিন্তা করুন; সেটাই ছিল রোম সাম্রাজ্যে যিহুদা প্রদেশের অবস্থান।
সর্ষে বীজের উপমাটি রোম সাম্রাজ্যের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের একটি ছোটো দল থেকে এক মহীরূহ হয়ে ওঠার মতো ঈশ্বরের রাজ্যের বৃদ্ধি দেখায়, যা সমস্ত দেশ-জাতির কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।[1] ইহুদি রব্বিরা শিখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্য কেবল ইহুদিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে; যিশু শিখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
খামিরের রূপক (মথি ১৩:৩৩)
খামিরের দৃষ্টান্তটি স্বর্গরাজ্যের অতিপ্রাকৃত বৃদ্ধিকেও চিত্রিত করে। যিশু খামিরকে [এটি মূলত ইস্ট বা ছত্রাক] স্বর্গরাজ্যের বিস্তারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনকাপ ময়দা দিয়ে ১০০ জনের জন্য রুটি তৈরি করা যেত। এটির তুচ্ছ সূচনা সত্ত্বেও, স্বর্গরাজ্য একটি শক্তিশালী শক্তিতে পরিণত হবে।
খামিরের রূপকটি স্বর্গরাজ্যের অবিচল এবং দৃঢ় বৃদ্ধিকে তুলে ধরে। খামির নাটকীয় নয়; এটি ডিনামাইটের মতো বিস্ফোরিত হয় না; এটি নিঃশব্দে ময়দার তালের মধ্যে দিয়ে কাজ করে। ইহুদি রব্বিরা শিখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্য বিশ্বব্যাপী চিহ্নের দ্বারা প্রবর্তিত হবে; যিশু দেখিয়েছিলেন যে যতক্ষণ না এটি সারা বিশ্বে পৌঁছাচ্ছে, ততক্ষণ স্বর্গরাজ্য ধীরে ধীরে, কিন্তু অবিচলভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
গুপ্তধন এবং মহামূল্য মুক্তোর রূপক (মথি ১৩:৪৪-৪৬)
এই দু’টি রূপক কাহিনী স্বর্গরাজ্যের আনন্দ সংক্রান্ত। দু’টিতেই, এক ব্যক্তি মহামূল্য কিছু খুঁজে পেয়েছে যেখানে সে তার সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে সেটি কিনেছে। এই রূপকগুলির মূল বিষয়বস্তু লোকটির ত্যাগস্বীকার নয়, কিন্তু মহামূল্য কিছু খুঁজে পাওয়ায় তার আনন্দই এখানে মূখ্য বিষয়। সে আনন্দে সে তার সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে! প্রকৃত শিষ্যরা খ্রিষ্টকে অনুসরণ করার জন্য সবকিছু দিয়ে দেওয়াতেই আনন্দ করে।
এই রূপক কাহিনীগুলি স্বর্গরাজ্যের চূড়ান্ত মূল্যবোধকে দেখায়। ঈশ্বরের রাজ্য জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে আমাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করে। আরেকটি জায়গায়, যিশু বলেছেন, “তোমার চোখ যদি পাপের কারণ হয়, তা উপড়ে ফেলে দাও। কারণ দুই চোখ নিয়ে নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে, বরং এক চোখ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা ভালো” (মার্ক ৯:৪৭)। ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা যেকোনো পার্থিব পার্থিব ত্যাগস্বীকারের যোগ্য।
টানা-জালের রূপক (মথি ১৩:৪৭-৫০)
গালীল সাগরে মাছধরা নৌকাগুলি একটা বড় জাল ফেলত, যার মধ্যে খাওয়ার যোগ্য এবং অযোগ্য দু’ধরনের মাছই ধরা পড়ত। তীরে আসার পর, জেলেরা ভালো মাছগুলিকে মন্দ মাছগুলির থেকে আলাদা করত।
শ্যামাঘাসের রূপকটির মতোই, এই দৃষ্টান্তটিও শিষ্যদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে যুগের শেষে বিচার উপস্থিত হবে। দ্রুত বিচারের পরিবর্তে, তাঁদেরকে এটা জেনে স্বর্গরাজ্যের ব্যাপারে প্রচার করতে হবে যে ঈশ্বর তাঁর নিজের সময় মতো দুষ্ট এবং ধার্মিকের বিচারের করবেন। একটি চূড়ান্ত বিচার হবে যা ভালোকে মন্দ থেকে পৃথক করবে, কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই সেই সময়কালটা ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
গৃহস্বামীর রূপক (মথি ১৩:৫১-৫২)
যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে রূপক কাহিনীর এই সিরিজটি শুরু করেছিলেন যাতে তারা অবশ্যই এক ফলপ্রসূ জমি হয়ে ওঠে। তিনি তাদেরকে অন্যদের কাছে এই রূপকগুলি প্রচার করার দায়িত্বটি শিখিয়ে সিরিজটি শেষ করেছিলেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যেক শাস্ত্রবিদকে অবশ্যই তার জ্ঞানের ভান্ডার থেকে অন্যদের শেখানোর জন্য কিছু বের করতে হবে। আমরা কেবল আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য শিখি, তা নয়। শিষ্যদরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা অন্য শিষ্যদেরকেও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
এই রূপকটি লূক থেকে এসেছে, কিন্তু মথিতেও অনুরূপ একটি রূপক রয়েছে যা যিশু জলপাই পর্বতের উপর শিক্ষাদানের [এটি “অলিভেট ডিসকোর্স” নামেও পরিচিত] সময়ে বলেছিলেন। যখন যিশু জেরুশালেমের কাছাকাছি ছিলেন, তখন তিনি দশটি মিনা [প্রাচীন মুদ্রা] বা তালন্তের এই রূপকটি বলেছিলেন, কারণ লোকেরা ভেবেছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য শীঘ্রই আসতে চলেছে (লূক ১৯:১১)।
যখন যিশু জেরুশালেমে আসছিলেন, লোকেরা একজন রাজনৈতিক মশীহ বা মুক্তিদাতা নিয়ে তাদের প্রত্যাশায় মারাত্মকরকম উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় বিশ্বস্ত থাকতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই রূপক কাহিনীটি বলেছিলেন। প্রভু তাদেরকে যা শিখিয়েছিলেন তা তাদের সতর্কভাবে লুকিয়ে রাখার বিষয় ছিল না; বরং, তাদেরকে এই সবকিছু স্বর্গরাজ্যের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে হবে।
[1]দানিয়েল ৪:১২ এবং যিহিষ্কেল ৩১:৬ পদে একটি গাছে নানা পাখির বাসা বহু দেশ/জাতির মধ্যে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রসারকে উপস্থাপন করেছিল।
[2]“মিনা” ছিল অর্থের একটি পরিমাপ। এটি একজন দাসের তিন মাসের বেতনের সমতুল্য ছিল।
স্বর্গরাজ্যের সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা
► মথি ২৪-২৫ পড়ুন।
যিশুর প্রথম দিকের শিক্ষাদানের বেশিরভাগই স্বর্গরাজ্যের দ্রুত সূচনার দিকে দৃষ্টিবদ্ধ করেছিল। যিশু যখন তাঁর পার্থিব পরিচর্যা কাজের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছান, তখন তিনি ভবিষ্যতে স্বর্গরাজ্যের সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আরো অনেককিছু জানিয়েছিলেন। মথি ২৪ এবং ২৫ অধ্যায়ের জলপাই পর্বতের উপর শিক্ষাদান হল স্বর্গরাজ্যের প্রতিশ্রুতিগুলির ভবিষ্যত পূর্ণতা সম্পর্কে যিশুর সবচেয়ে বর্ধিত শিক্ষাদান।
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: হেরোদের মন্দির
১৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রাজা হেরোদ দ্য গ্রেট মন্দিরের এক বড় সংস্কার শুরু করেছিলেন।[1] এই মন্দির ৫১৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সরুব্বাবিল’র দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল, যা শলোমনের আসল মন্দিরটির চেয়ে তুলনামূলকভাবে ছোটো এবং সাধারণ ছিল। হেরোদ মন্দিরটিকে তার প্রাচীন সৌন্দর্য ও গৌরবের আদলেই ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। তিনি একটি পুনর্নির্মাণ প্রকল্প চালু করেছিলেন যা ৮০ বছর ধরে চলেছিল। হেরোদ ১০,০০০ সুদক্ষ কর্মচারী-শ্রমিককে নিযুক্ত করেছিলেন এবং ১,০০০ লেবীয়কে মন্দিরের সেই বিভাগের জন্য প্রশিক্ষিত করেছিলেন যেখানে কেবল যাজকরাই প্রবেশ করতে পারতেন।
হেরোদ আশা করেছিলেন যে তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। যিশুর পরিচর্যা কাজের সময়কালে, ৪৬ বছর ধরে মন্দির নির্মাণের কাজ চলেছিল (যোহন ২:২০)। ৬৩ খ্রিষ্টাব্দের আগে সমগ্র মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি এবং তা মাত্র সাত বছরের মধ্যে ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান জেনারেল টাইটাস দ্বারা জেরুশালেম অবরোধের পর ধ্বংস হয়ে যায়।
হেরোদের মন্দির মূলত শলোমনের মন্দিরের চেয়ে আকারে দ্বিগুণ বড়ো ছিল, যেখানে জেরুশালেমে বিভিন্ন উৎসব বা পর্বের জন্য হাজার হাজার ইহুদি তীর্থযাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। এটি রোম সাম্রাজ্যের অন্যতম বিস্ময় ছিল।
জেরুশালেমে যিশুর শেষ সপ্তাহে, শিষ্যরা তাঁকে মন্দিরের ভবনগুলি দেখাচ্ছিলেন। যেহেতু মন্দিরের নির্মাণ কাজ তখনও চলছিল, তারা সম্ভবত একটি বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করছিলেন যা মন্দিরে তাদের পূর্ববর্তী দর্শনের পর থেকে পরিবর্তিত হয়েছিল।
মন্দির ধ্বংস সম্পর্কে একটি ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে যিশু তার প্রতিক্রিয়া জানান। “তোমরা কি এসব জিনিস দেখছ? আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এদের একটি পাথরও অন্যটির উপরে থাকবে না, সবকটিকেই ভূমিসাৎ করা হবে”। তখন শিষ্যরা প্রশ্ন করেছিল, “আমাদের বলুন, কখন এসব ঘটনা ঘটবে এবং আপনার আগমনের, বা যুগান্তের চিহ্নই বা কী কী হবে ?” (মথি ২৪:২, ৩)
শিষ্যদের প্রশ্নের দু’টি ভাগ ছিল; যিশুর উত্তরেরও দু’টি ভাগ ছিল। ঠিক যেমন পুরাতন নিয়মের ভাববাণীগুলি নিকটবর্তী এবং দূরবর্তী – উভয় দিককেই অন্তর্ভুক্ত করে, তেমনই যিশুর ভাববাণীও এমন কিছু ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করেছিল যা শিঘ্রই ঘটবে এবং এমন কিছু ঘটনা ছিল যা যুগের শেষের দিকে ঘটবে।
শিষ্যরা প্রশ্ন করেছিল, “কখন এসব ঘটনা ঘটবে?” “এসব ঘটনা” (মন্দিরের পতন যেখানে একটা পাথরের উপর আরেকটা পাথর থাকবে না) ৭০ খ্রিষ্টাব্দে ঘটেছিল।
শিষ্যরা প্রশ্ন করেছিল, “আপনার আগমনের, বা যুগান্তের চিহ্নই বা কী কী হবে?” যিশু ভবিষ্যতের আগমন সম্পর্কে বলেছিলেন, “তারা মনুষ্যপুত্রকে স্বর্গের মেঘে করে আসতে দেখবে, তিনি পরাক্রমে ও মহামহিমায় আবির্ভূত হবেন” (মথি ২৪:৩০)।
যিশু দেখিয়েছিলেন যে স্বর্গরাজ্যে সমস্ত দেশ থেকে ইহুদি এবং অইহুদি – সব ধরণের লোকেরাই অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি দেখিয়েছিলেন যে স্বর্গরাজ্যে পরজাতিদের আগমন “জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে” ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল (মথি ২৫:৩৪)। ঈশ্বরের রাজ্য ছিল তাঁর লোকেদের জন্য ঈশ্বরের এক অন্তনকালীন পরিকল্পনা।
জলপাই পর্বতের উপরে করা প্রচারে উল্লিখিত দু’টি রূপক কাহিনী শেখায় যে, যখন আমরা স্বর্গরাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছি, তখন আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বস্ত থাকতে হবে। সেই বোকা পাঁচ কুমারী অপেক্ষা করেছিল, কিন্তু সেই অপেক্ষায় যথার্থ প্রস্তুতি ছিল না। এক তালন্ত পাওয়া সেই দাস অপেক্ষা করেছিল, কিন্তু বিশ্বস্তভাবে তা করেনি। স্বর্গরাজ্যের নাগরিক হিসেবে, আমরা সেই রাজার পরিচর্যার জন্য বিশ্বস্ততা এবং অধ্যবসায়ের প্রতি আহুত।
অন্তিম বিচারে, মথি ১৩ অধ্যায়ে উল্লিখিত সেই ভালো এবং মন্দের পৃথকীকরণ ঘটবে। এই বিচার কখন এবং কীভাবে ঘটবে তা প্রাথমিক শিক্ষা নয়। পরিবর্তে, যিশুর শিক্ষাটি হল কীভাবে স্বর্গরাজ্যের নাগরিকদেরকে অন্তিম বিচারের প্রস্তুতির জন্য আজকে জীবনযাপন করতে হবে। সেদিন রাজা বলবেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন তোমরা আমার এই ভাইবোনদের মধ্যে নগণ্যতম কারও প্রতি এরকম করেছিলে, তখন তা আমারই প্রতি করেছিলে” (মথি ২৫:৪০)। রাজার পুনরাগমনের জন্য আমাদেরকে ক্রমাগত প্রস্তুতির মধ্যে থাকতে হবে। যখন তিনি আসবেন তখন তিনি যেন আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বস্ত দেখতে পান।
প্রয়োগ: শিষ্যত্বের মূল্য
► লূক ৯:২১-২৭ পড়ুন।
ঈশ্বরের রাজ্যে নাগরিকত্ব কেবল অনুগ্রহের দ্বারাই পাওয়া যায়। আমরা ভালো কাজের মাধ্যমে স্বর্গরাজ্যের নাগরিক হই না। তবে, এর মানে এই নয় যে শিষ্যত্বের জীবনে কোনো মূল্য দিতে হবে না। লূক ৯ অধ্যায়ে, যিশু তাঁর অনুগামীদেরকে শিষ্যত্বের মূল্য সম্পর্কে শিখিয়েছেন।
ডালাস উইলার্ড (Dallas Willard) লিখেছেন, "অনুগ্রহ প্রচেষ্টার বিরোধী নয়, অনুগ্রহ অর্জনের বিরোধী।"[1] শিষ্য হিসাবে আমরা যে প্রচেষ্টা করি তা অনুগ্রহের বিরোধী নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের শিষ্যত্ব অনুসরণ করার ক্ষমতা একমাত্র উপায় ঈশ্বরের অনুগ্রহের কারণে।
যিশুর শিক্ষাদানের এই বিন্যাসটি লক্ষ্য করুন: ক্রুশ এবং তার পরবর্তী মহিমা।
যিশু তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থান নিয়ে ভাববাণী করেছিলেন (লূক ৯:২১-২২)। এটিই ছিল সেই মূল্য যা স্বর্গরাজ্যে আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য যিশু প্রদান করেছিলেন।
যিশু তাঁর অনুগামীদেরকে বলেছিলেন যে তাঁর শিষ্য হতে গেলে মূল্য প্রদান করতে হবে (লূক ৯:২৩-২৫)। “কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করতে চায়, সে অবশ্যই নিজেকে অস্বীকার করবে, প্রতিদিন তার ক্রুশ তুলে নেবে ও আমাকে অনুসরণ করবে”। যিশু ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্রুশের উপর কষ্টভোগ করেছিলেন; যদি আমরা স্বর্গরাজ্যে বাস করতে চাই, তাহলে আমাদেরকেও অবশ্যই ক্রুশ তুলে নিতে হবে।
যিশু ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলেছেন (লূক ৯:২৬-২৭)। “কেউ যদি আমার ও আমার বাক্যের জন্য লজ্জাবোধ করে, মনুষ্যপুত্র যখন তাঁর নিজের মহিমায় ও তাঁর পিতা এবং পবিত্র স্বর্গদূতদের মহিমায় আসবেন, তিনিও তার জন্য লজ্জাবোধ করবেন”।
ক্রুশের সহভাগী না হলে আমরা স্বর্গরাজ্যের মহিমার সহভাগীও হতে পারব না। যিশু “নিজেকে অবনত করলেন;মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশে মৃত্যু পর্যন্ত,অনুগত থাকলেন। সেই কারণে, ঈশ্বর তাঁকে সর্বোচ্চ স্থানে উন্নীত করলেন …” (ফিলিপীয় ২:৮-৯)।
ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, আমরা একই প্যাটার্ন অনুসরণ করি। “আর সমস্ত অনুগ্রহের ঈশ্বর, যিনি খ্রীষ্টে তাঁর অনন্ত মহিমা প্রদানের জন্য তোমাদের আহ্বান করেছেন, সাময়িক কষ্টভোগ করার পর তিনি স্বয়ং তোমাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন এবং তোমাদের শক্তিশালী, সুদৃঢ় ও অবিচল করবেন” (১ পিতর ৫:১০)। এটি হল স্বর্গরাজ্যে জীবনের আকার। গৌরবে মহিমান্বিত হওয়ার আগে খ্রিষ্ট ক্রুশের যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন। তাঁর অনুগামীদেরকেও অনন্ত গৌরব উপভোগ করার আগে ক্রুশ তুলে নিতে হবে।
যিশু একনিষ্ঠ শিষ্যদের খোঁজ করেছিলেন। তিনি চাননি যে তাঁর শিষ্যদের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা থাকবে; তিনি চেয়েছিলেন যে তারা অনুগত হৃদয়ের অধিকারী হবেন। একজন শিষ্য হয়ে উঠতে কত মূল্য দিতে হয়? “কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করতে চায়, সে অবশ্যই নিজেকে অস্বীকার করবে, তার ক্রুশ তুলে নেবে ও আমাকে অনুসরণ করবে” (মথি ১৬:২৪)।
১। একজন শিষ্যকে অবশ্যই নিজেকে অস্বীকার করতে হবে। নিজেকে “না” বলা একটি কঠিন কাজ।
২। একজন শিষ্যকে অবশ্যই তার ক্রুশ তুলে নিতে হবে। যিশুর অনুগামীরা বুঝতে পেরেছিল যে ক্রুশ মানে মৃত্যু। ক্রুশ হল কষ্টভোগ এবং লজ্জার প্রতিতিনিধি। কিন্তু প্রথম শতকের খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা জানতেন যে শিষ্যত্বের জন্য ক্রুশ প্রয়োজন। যখন ইগনাসিয়াস (Ignatius)-কে শহীদ হওয়ার জন্য রোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, “আমি একজন শিষ্য হওয়া শুরু করছি।” শিষ্যত্বের জন্য একটি ক্রুশ প্রয়োজন।
৩। চরিত্র এবং আচরণে একজন শিষ্যকে ক্রমাগত যিশুকে অনুসরণ করে চলতে হবে। এই অনুসরণ করে চলা হল বর্তমান কালের কাজ।
শিষ্যত্বের জন্য এই মূল্য দেওয়া কি যথাযথ? যিশু শিষ্য হওয়ার তিনটি কারণ দিয়েছেন। হাস্যকরভাবে, এই কারণগুলির জন্যই অনেকে শিষ্যত্ব এড়িয়ে চলে। কেন আমাদের শিষ্যত্বের মূল্য দিতে হবে?
১। নিরাপত্তা। ক্রুশকে এড়িয়ে যে নিজের জীবন রক্ষা করার চেষ্টা করে, সে বিনষ্ট হবে (লূক ৯:২৪)।
২। প্রকৃত ধন। যে নিজেকে খ্রিষ্টের সাথে চিহ্নিত করা প্রত্যাখ্যান করে, সে সবকিছু হারাবে (লূক ৯:২৫)।
৩। পুরস্কার। যারা খ্রিষ্টকে অনুসরণ করে, কেবল তাদেরকেই স্বর্গরাজ্যে স্বাগত জানানো হবে (লূক ৯:২৬-২৭)।
► লূক ১৪:২৫-৩৩ পড়ুন।
যিশু পরবর্তীকালে শিষ্যত্বের উপর আরো অনেক শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশাবলী তিনটি বিভাগে বিভক্ত:
১। শিষ্যত্বের মূল্য (লূক ১৪:২৬-২৭)
২। মূল্যের কথা চিন্তা না করেই শিষ্য হয়ে ওঠার বোকামি (লূক ১৪:২৮-৩২)
৩। শিষ্যত্বের মূল্যের স্মরণিকা (লূক ১৪:৩৩)
আপনি যদি গাড়ি কিনতে যান, সেলসম্যান মাঝে মাঝে গাড়ির চূড়ান্ত মূল্যটি লুকানোর চেষ্টা করবেন। তিনি বলবেন, “এই চমত্কার গাড়িটি দেখুন!” “এই গাড়িটার শক্তিটা অনুভব করুন!” আপনি গাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবার পর তিনি আপনাকে দামটা বলবেন।
যিশু কখনোই তাঁর অনুগামীদেরকে স্বর্গরাজ্যের একটি সহজ পথের প্রস্তাব দেননি। তিনি শুরুতেই মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন:
কেউ যদি আমার কাছে আসে এবং তার বাবা ও মা, স্ত্রী ও সন্তান, ভাই ও বোন, এমনকি, নিজের প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না। যে আমার অনুগামী হতে চায় অথচ নিজের ক্রুশ বহন করে না, সে আমার শিষ্য হতে পারে না । (লূক ১৪:২৬-২৭)
এই অনুচ্ছেদে, কোনো কিছুকে অপ্রিয় মনে করার অর্থ হল সেটিকে অন্য কোনোকিছুর চেয়ে কম ভালোবাসা। যিশু বলছেন, “তুমি আমার শিষ্য হতে পারবে না যদি না তুমি আমাকে তোমার নিজের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোন, এমনকি তোমার নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসো!”
একজন শিষ্য হতে হলে কত মূল্য দিতে হয়? সবকিছু! খ্রিষ্টের শিষ্য হওয়া মশীহের প্রতিশ্রুতির আনন্দে অংশ নেওয়ার চেয়েও বেশি; এটির জন্য ক্রুশের সহভাগী হওয়া প্রয়োজন।
► যোহন লিখিত সুসমাচারে শিষ্যত্বের জন্য তিনটি অতিরিক্ত শর্ত দিয়েছে। যোহন ৮:৩১, যোহন ১৩:৩৫, এবং যোহন ১৫:৮ পড়ুন। আপনি কি আপনার মিনিস্ট্রিতে লূক এবং যোহনের শিষ্যত্বের শর্তের উপর ভিত্তি করে শিষ্য তৈরি করছেন?
[1]Dallas Willard, The Great Omission: Reclaiming Jesus’s Essential Teachings on Discipleship. (New York: HarperOne, ২০০৬)
উপসংহার: ঈশ্বরের রাজ্য কী?
যতক্ষণ না খ্রিষ্ট ফিরে আসছেন, আমরা ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কে তাঁর শিক্ষার সমস্ত বিবরণ বুঝতে পারব না। তবে, সুসমাচার পুস্তকগুলি ঈশ্বরের রাজ্যের অনেক বৈশিষ্ট্য দেখায়:
ঈশ্বরের রাজ্য হল একটি আত্মিক রাজ্য। “কারণ ঈশ্বরের রাজ্য ভোজনপানের বিষয় নয়, কিন্তু ধার্মিকতার, শান্তির ও পবিত্র আত্মায় আনন্দের” (রোমীয় ১৪:১৭)। নতুন জন্ম আমাদেরকে শয়তানের শক্তি থেকে উদ্ধার করেছে এবং আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যের অংশ করে তুলেছে।
ঈশ্বরের রাজ্য শেষ সময়ে একটি দৃশ্যমান, রাজনৈতিক রাজত্বকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
ঈশ্বরের রাজ্য বিশ্বজনীন; এটি কেবল ইহুদি জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
ঈশ্বরের রাজ্য হল পৃথিবীতে কার্যকারী ঈশ্বরের শক্তি। এই রাজ্য কোনো দৃশ্যমান আধিপত্য নয়। ১০টি মিনা’র রূপকে, রাজ্যটি ছিল করার কর্তৃত্বের, কোনো ভৌগোলিক অঞ্চল নয় (লূক ১৯:১১-১২)।
ঈশ্বরের রাজ্য হল অতিপ্রাকৃত। মানুষ বীজ বপন করে; কিন্তু সে এটিকে বৃদ্ধি করতে পারে না। স্বর্গরাজ্য ঈশ্বরের শক্তির মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।
ঈশ্বরের রাজ্য কোনো অস্পষ্ট ভবিষ্যতের আশা নয়; এটি একটি বর্তমান বাস্তবতা যা অবিলম্বে একটি জবাব দাবি করে।
ঈশ্বরের রাজ্য যিশুর পরিচর্যা কাজের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। মন্দ আত্মাদের উপর তাঁর শক্তি শয়তানের রাজত্বের উপর ঈশ্বরের রাজ্যের বিজয়কে প্রদর্শন করেছিল।
ঈশ্বরের রাজ্য মন্ডলীর কাজের মাধ্যমে অগ্রসর হতে থাকে। পর্বতের উপর দেওয়া প্রচারটি দেখায় কীভাবে বর্তমান যুগে বসবাস করার জন্য বিশ্বাসীদের আহ্বান করা হয়েছে।
খ্রিষ্টের গৌরবময়ভাবে রাজত্ব করার চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনে ঈশ্বরের রাজ্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হবে। শয়তানের শক্তি ভেঙ্গে যাবে, এবং ঈশ্বর অনন্তকাল রাজত্ব করবেন।
► এই কোর্সের শেষে “স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার” শিরোনামে একটি সারমন রয়েছে। ৭ নং পাঠে এগিয়ে যাওয়ার আগে এটি পড়ুন।
৬ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট
পর্বতের উপর যিশু যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তার উপর ভিত্তি করে তিনটি সারমনের একটি সিরিজ প্রস্তুত করুন। আপনার সারমনগুলির বিষয়বস্তু হওয়া উচিত “ঈশ্বরের রাজ্যের জীবন।” দেখান যে কীভাবে আজকে আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক হিসেবে জীবন যাপন করতে হবে। নিশ্চিত হোন যে আপনি সারমনটি একটি সুসংবাদ হিসেবে প্রচার করছেন। দেখান যে কীভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক হিসেবে জীবন যাপন করার জন্য শক্তিযুক্ত করে।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.