যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
Audio Course Purchase

Search Course

Type at least 3 characters to search

Search through all lessons and sections in this course

Searching...

No results found

No matches for ""

Try different keywords or check your spelling

results found

Lesson 3: যিশুর মতো নেতৃত্ব দেওয়া

2 min read

by Randall McElwain


পাঠের উদ্দেশ্য

এই পাঠের শেষে শিক্ষার্থীরা:

(১) যে গুণগুলি যিশুকে একজন মহান নেতা করে তুলেছিল তা বুঝতে পারবে।

(২) তার দৈনন্দিন অগ্রাধিকারগুলি নির্ণয় করার জন্য ঈশ্বরপ্রদত্ত মিশন এবং আহ্বানের গুরুত্ব বুঝবে।

(৩) আগামীদিনের নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং একটি পরিচর্যাকারী দল গঠনের পদ্ধতি বিকাশ করবে।

(৪) তিনি যাদের নেতৃত্ব দেন তাদের সেবক হিসাবে তার নিজের ভূমিকাকে উপলব্ধি করবে।

পরিচর্যা কাজের নীতি

নেতারা যখন অন্যদের সেবা করেন, তখন তারা যিশুর মতো হয়ে ওঠেন।

ভূমিকা

নেতৃত্ব হল এমন একটা শব্দ যা দৃঢ় অনুভূতিগুলিকে নাড়িয়ে তোলে। যখন জাগতিক-মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা নেতৃত্ব নিয়ে ভাবে, তারা মূলত ক্ষমতা এবং পদমর্যাদা নিয়েই চিন্তা করে। নেতা হওয়ার মানে হল “বস” হওয়া বা প্রভুত্ব করা। উচ্চাকাঙ্খী নেতারা উচ্চতর পদমর্যাদা পেতে চায় এবং উচ্চতম খেতাব পেতে চায়। এমনকি অনেক পাস্টারও এই মানসিকতা নিয়ে চলেন। তারা তাদের মনোযোগকে বৃহত্তর মন্ডলী, উচ্চতর অবস্থান, এবং মহানতর সম্মানের প্রতি নিবদ্ধ করতে পারেন।

এই জাগতিক মানসিকতার প্রতিক্রিয়ায়, কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী নেতৃত্ব কথাটির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানায়। একজন পাস্টার একবার বলেছিলেন, “আমি আমার মন্ডলীতে লিডার হতে চাই না। আমি আমি কেবলমাত্র সেবা করতে চাই।” যাইহোক না কেন, তার কথাটি খুব বিনম্র শোনালেও, এটি তার মন্ডলীকে দিকনির্দেশহীন বা উদ্দেশ্যহীন অবস্থায় ঠেলে দেয়। সমস্ত প্রতিষ্ঠান, এমনকি মন্ডলীরও নেতাদের প্রয়োজন।

পাস্টারদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে পাস্টার কথাটির মূল বা আসল অর্থ হল মেষপালক”। একজন মেষপালকের কাজ মোটেই চিত্তাকর্ষক নয়! একজন মেষপালক তার দিনের বেশিরভাগ সময় ভেড়াদের সাথে কাটায় যাদের গায়ে উটকো গন্ধ থাকে। তার কাজের দায়িত্বগুলি খুবই ক্লান্তিকর: খাবার এবং জলের খোঁজ করা, যে ভেড়াগুলি পাল ছেড়ে এদিক-ওদিক চলে যায় সেগুলিকে খুঁজে নিয়ে আসা, এবং আহত ভেড়াগুলির যত্ন নেওয়া।

একজন মেষপালকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। একজন মেষপালককে বহু নিম্ন ধরণের কাজ করতে হয়, কিন্তু সে ভেড়ার পালকে সুরক্ষিতভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বহন করে। ভেড়ার পালটি একজন মেষপালকের উপর নির্ভর করে যে হল একজন লিডার।

যিশু একজন প্রকৃত লিডারের আদর্শ দৃষ্টান্ত প্রদান করেছেন। তিনি একজন মেষপালক ছিলেন যিনি নম্রভাবে কাজ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর কাজের একটি গভীর উদ্দেশ্যবোধ ছিল। তিনি দৃঢ় ছিলেন, সাথে পূর্ণমাত্রায় সহানুভূতিশীলও ছিলেন। তিনি পদমর্যাদা খোঁজেননি, কিন্তু তিনি তাঁর লক্ষ্যে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। যিশু দাস-নেতার একটি আদর্শ প্রদান করেছেন।

► সর্বাপেক্ষা সফল একজন লিডারের কথা ভাবুন যাকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তিনটে বা চারটে চরিত্র তালিকাভুক্ত করুন যা এই ব্যক্তিটিকে একজন ভালো নেতা করে তুলেছে। এই চরিত্রগুলি কি যিশুর পরিচর্যা কাজে দেখা যায়? এই চরিত্রগুলি কি আপনার পরিচর্যা কাজে দেখা যায়?

যিশু দেখিয়েছেন যে প্রকৃত নেতৃত্বদানে নম্র পরিচর্যা অন্তর্ভুক্ত। নম্রতা মানে দুর্বলতা বা সংশয়ের মধ্যে থাকা নয়; যিশু দৃঢ় ছিলেন। পুনরাবৃত্তভাবে সুসমাচারপুস্তকগুলি যিশুর কর্তৃত্বকে দেখিয়েছে।[1] তবে, যিশু এই কর্তৃত্ব সম্মান দাবি করার মাধ্যমে নয়, কিন্তু পরিষেবা দানের মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন। যখন তাঁর শিষ্যরা স্বর্গরাজ্যে তাঁদের পদমর্যাদা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করেছিলেন, তখন যিশু বলেছিলেন:

অন্য অন্য জাতির রাজা তাদের প্রজাদের উপরে প্রভুত্ব করে; আর যারা তাদের উপরে কর্তৃত্ব করে, তারা নিজেদের হিতার্থী বলে অভিহিত করে। কিন্তু তোমরা সেরকম হোয়ো না। বরং, তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, তাকে হতে হবে যে সবচেয়ে ছোটো তার মতো, আর প্রশাসককে হতে হবে সেবকের মতো। কারণ শ্রেষ্ঠ কে? যে খাবার খেতে বসে সে, না, যে পরিবেশন করে, সে? যে খাবার খেতে বসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সেবকের মতো আছি। (লূক ২২:২৫-২৭)

এই পাঠে আমরা সেই চরিত্রগুলি দেখব যা যিশুকে একজন মহান নেতা করে তুলেছিল। আমরা শিখব যে কীভাবে যিশুর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সর্বাপেক্ষা কার্যকারী নেতা হয়ে ওঠা যায়।


[1]মথি ৭:২৮-২৯, মার্ক ১:২২-২৮, লূক ৪:৩২-৩৬, লূক ২০:১-৮

একজন কার্যকারী খ্রিষ্টীয় নেতা তার মিশন জানেন

একজন মহান লিডারের একটি সুস্পষ্ট মিশন বা উদ্দেশ্য থাকে, এবং তিনি সেই লক্ষ্যের প্রতি নিবিষ্ট চিত্তে মনোনিবেশ করে থাকেন। যিশু তাঁর মিশন জানতেন। যিশুর মিশন মার্ক ১০:৪৫-এ সম্পূর্ণভাবে সঙ্কলিত হয়েছে: “কারণ, এমনকি, মনুষ্যপুত্রও সেবা পেতে আসেননি, কিন্তু সেবা করতে ও অনেকের পরিবর্তে নিজের প্রাণ মুক্তিপণস্বরূপ দিতে এসেছেন”।

যিশু তাঁর প্রথম প্রকাশ্য প্রচারে তাঁর শ্রোতাদের বলেছিলেন যে তিনি যিশাইয় ভাববাদীর কথিত ভাববাণী পূর্ণ করতে এসেছেন:

প্রভুর আত্মা আমার উপর অধিষ্ঠিত, কারণ দীনহীনদের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য তিনি আমাকে অভিষিক্ত করেছেন। তিনি আমাকে বন্দিদের কাছে মুক্তি প্রচার করবার জন্য পাঠালেন,অন্ধদের কাছে দৃষ্টিপ্রাপ্তি প্রচার করার জন্য,নিপীড়িতদের নিস্তার করে বিদায় করার জন্য,প্রভুর প্রসন্নতার বছর ঘোষণা করার জন্য। (লূক ৪:১৮-১৯, উল্লেখ্য যিশাইয় ৬১:১-৩)

যিশুর মিশন তাঁর দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগুলিকে পরিচালনা করত। যখন যিশু যিহুদা প্রদেশ থেকে গালীলে ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁর মিশন তাঁর পথকে নির্দেশনা দিয়েছিল। ইহুদি রব্বিরা [গুরু] বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শমরীয়দের অশুচিতা এড়াতে জর্দন নদীর পূর্বদিক দিয়ে ভ্রমণ করতেন। কিন্তু, একজন শমরীয় নারীকে ঈশ্বরের করুণার বার্তা প্রচার করার জন্য যিশুর যাত্রাপথ তাঁর মিশন দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিল। এই কারণে, তাঁকে শমরিয়া প্রদেশ দিয়েই যেতে হয়েছিল (যোহন ৪:৪)। একজন খ্রিষ্টীয় নেতা হিসেবে, আপনার মিশন যেন অবশ্যই আপনার দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগুলিকে পরিচালনা করে।

একজন নেতা হিসেবে, আপনি যতটা করতে পারেন তার চেয়েও বেশি কিছু করার আছে। আপনি কীভাবে আপনার অগ্রাধিকারগুলি নির্ণয় করেন? আপনি সবকিছু করতে পারেন না, এবং আপনার সবকিছু করা উচিত নয়। আপনাকে অবশ্যই আপনার মিশন বা উদ্দেশ্য দ্বারা আপনার সুযোগগুলিকে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রত্যেক লিডারের দু’টি তালিকা থাকা উচিত: একটি “করণীয়” তালিকা এবং একটি “অকরণীয়” তালিকা। করণীয় তালিকাতে সেই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে যে কাজগুলি আপনাকে অবশ্যই করতে হবে। অকরণীয় তালিকায় সেই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে যে কাজগুলি আপনাকে আপনার লক্ষ্য থেকে বিভ্রান্ত করে। অন্য কেউ সেই কাজগুলো করার জন্য আহুত হতে পারে, কিন্তু আপনি নন। আপনার মিশন যেন অবশ্যই আপনার দৈনন্দিন অগ্রাধিকারকে পরিচালনা করে।

প্রেরিত পৌল হলেন এমন একজন নেতার দৃষ্টান্ত যিনি তার মিশন জানতেন। রোম সাম্রাজ্যের মূল শহরগুলিতে মন্ডলী স্থাপন করার জন্য পৌলকে আহ্বান করা হয়েছিল। তিনি কারোর প্রতিষ্ঠিত ভিত্তির উপর কোনোকিছু গঠন করতে চাননি, কিন্তু যারা সুসমাচার পায়নি তাদের কাছে তিনি পৌঁছাতে চেয়েছিলেন (রোমীয় ১৫:২০)। এই লক্ষ্যটি পৌল কোথায় ভ্রমণ করবেন, তিনি প্রতিটি স্থানে কতদিন থাকবেন এবং এমনকি তিনি কোন বার্তা প্রচার করবেন তা নির্দেশ করেছিল। পৌলের মিশন তার প্রতিটি সিদ্ধান্তকে নির্দেশনা দিয়েছিল।

► এই প্রশ্নগুলি আলোচনা করুন:

  • ঈশ্বর আপনাকে কোন মিশন প্রদান করেছেন? কয়েকটি শব্দে আপনার মিশনটি সংক্ষেপে লিখুন।

  • আপনার পরিচর্যা কাজে যারা আপনার সাথে যুক্ত হয়েছে, তাদের সাথে কি আপনি আপনার মিশন নিয়ে আলোচনা করেছেন?

  • আপনার মিশন কি আপনার দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগুলিকে পরিচালনা করে?

একজন কার্যকারী খ্রিষ্টীয় নেতা অন্যান্য নেতাদের প্রশিক্ষণ দেন

যিশু তাঁর পরিচর্যা কাজের শুরু থেকেই খুব সতর্ক এবং বিচক্ষণভাবে একদল শিষ্যকে বেছে নিয়েছিলেন এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন যারা পিতার কাছে তাঁর ফিরে যাওয়ার পর তাঁর পরিচর্যা কাজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই শিষ্যরা তাঁর থেকে শিক্ষালাভ করেছিলেন, তাঁর সাথে সময় কাটিয়েছিলেন, তাঁর সাথে পরিচর্যা কাজ করেছিলেন, এবং সারা পৃথিবীতে তাঁর বার্তা প্রচার করেছিলেন। যিশু এই শিষ্যদেরকে তাঁর ভাবমূর্তি মুদ্রাঙ্কিত করেছিলেন এবং তারপর তাদেরকে তাঁর মন্ডলী গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করেছিলেন।

লূক পরিচর্যা কাজের চাপ সম্বন্ধে লিখেছেন। “ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ সেখানে সমবেত হলে এমন অবস্থা হল যে, একে অন্যের পা-মাড়াতে লাগল। যিশু প্রথমে তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিতে লাগলেন” (লূক ১২:১)। যিশু শিষ্যদের কাছে তাঁর পরিচর্যা থেকে বিক্ষিপ্তচিত্ত হননি, যদিও হাজার হাজার মানুষের কাছে পরিচর্যা আরো উদ্দীপক হয়ে উঠতে পারত। তিনি জানতেন যে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাঁকে অবশ্যই তাঁর শিষ্যদেরকে মন্ডলী নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নেতাদের প্রস্তুত করি।

[1]পৌল এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। তিনি বহু লোকের কাছে প্রচার করতেন, কিন্তু তার মনোযোগ প্রত্যেকটি শহরে কয়েকজন লিডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিই নিবদ্ধ ছিল। এটি আজকের লিডারদের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত প্রদান করে। পৌল পরিচর্যা কাজের জন্য পবিত্রগণকে পরিপক্ক করে তোলার জন্য পাস্টারদের আহ্বান করেছিলেন (ইফিষীয় ৪:১২)। মন্ডলীর সব কাজ করার জন্য পাস্টার দায়বদ্ধ নন; পাস্টার মন্ডলীর কাজের জন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পরিপক্ক করে তোলার জন্য দায়বদ্ধ। কার্যকারী নেতারা অন্যান্য নেতাদের প্রশিক্ষণ দেন।


[1]

“যিশু কোনোদিনও কোনো বই লেখেননি। পরিবর্তে, তিনি মানুষের হৃদয়ে, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে তাঁর বার্তা লিখেছিলেন।”

- উইলিয়াম বার্কলে
(William Barclay)

শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যিশুর মডেল

একজন মেন্টর অবশ্যই বিচক্ষণতার সাথে শিষ্যদের নির্বাচন করবেন[1]

► যোহন ১:৩৫-৫১, যোহন ২:১-১১, মথি ৪:১৮-২২, লূক ৫:১-১১, এবং লূক ৬:১২-১৬ পড়ুন।

আপনি যখন এই পদগুলি পড়ছেন, আপনি কি প্রক্রিয়াটি লক্ষ্য করছেন? জনগণের মধ্যে পরিচর্যা কাজের প্রথম সপ্তাহে, যিশু আন্দ্রিয় এবং যোহনকে তাঁকে অনুসরণ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আন্দ্রিয় আবার শিমোন পিতরকে যিশুর কাছে নিয়ে এসেছিলেন। যিশু ফিলিপকে ডেকেছিলেন, যিনি নথনেলকে নিয়ে এসেছিলেন (যোহন ১:৩৫-৫১)। তাদের আহ্বানে এটি ছিল প্রথম পদক্ষেপ। তারা যিশুকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, কিন্তু তখনও স্থায়ী অনুসরণকারী হয়ে ওঠেনি। এটি ছিল যিশুকে অনুসরণ করার একটি আহ্বান। পরে, যিশু তাঁদেরকে পূর্ণ-সময়ের শিষ্য হওয়ার আহ্বান করেছিলেন।

যোহন ২ হল এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কান্না নগরের বিয়েবাড়িতে যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে তাঁর মহিমা প্রকাশ করেছিলেন। অন্যান্য অতিথিরা সেই অলৌকিক কাজটি সম্পর্কে জানত না; এই চিহ্নটি শিষ্যদের জন্য ছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন যাতে তাঁরা তাঁদের বিশ্বাস তাঁর উপর রাখতে পারে এবং তাঁর শিষ্যরা তাঁর উপর বিশ্বাস করলেন (যোহন ২:১১)।

যিশুর নাসরত থেকে কফরনাহুমে ফেরা এবং প্রচারকাজ শুরু করার (মথি ৪:১২-১৭) পর মথি ৪:১৮-২২ পদে ঘটনাটি ঘটেছে। গালীল হ্রদের ধারে হাঁটার সময়, যিশু তাঁকে অনুসরণ করার জন্য শিমোন, আন্দ্রিয়, যাকোব, এবং যোহনকে আহ্বান করেছিলেন। “সেই মুহূর্তেই তাঁরা জাল ফেলে তাঁকে অনুসরণ করলেন” (মথি ৪:২০)। যোহন ১ অধ্যায়ে এই প্রাথমিক আহ্বানের পরে, এই শিষ্যরা মৎস্যজীবী হিসেবে তাঁদের পেশা অব্যাহত রেখেছিল। এবার, যিশু তাঁদেরকে কাজের জন্য আহ্বান জানালেন: “এখন থেকে তুমি মানুষ ধরবে” (লূক ৫:১০)।

এই প্রক্রিয়াটির পরবর্তী ধাপ ছিল যিশুর বারোজন প্রেরিতশিষ্যকে নির্বাচন করা। বহু অনুসরণকারীর (যোহন ৬ অধ্যায়ে বলা হয়েছে “শিষ্যদের”) মধ্যে থেকে যিশু বারোজনকে বেছে নিয়েছিলেন যারা তাঁর নিকটতম সহকারী হয়ে উঠেছিল।

বারোজন প্রেরিতশিষ্যকে নির্বাচন করার সময়ে যিশু তাড়াহুড়ো করেননি। দেখা যায় যে প্রক্রিয়াটির জন্য কয়েক মাস সময় লেগেছিল। এটি যিশুকে তাদের প্রত্যেকের সাথে সময় কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রদান করেছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, একজন নেতা কোনো ব্যক্তিকে জানার জন্য পর্যাপ্ত সময় ব্যয় না করেই দ্রুত তাকে উত্তরসূরি নির্বাচন করে ফেলেন। একজন বিচক্ষণ নেতা এমন কিছু কাজ বরাদ্দ করেন যা একজন ব্যক্তির নেতৃত্বদানের ক্ষমতা মূল্যায়ন করার সুযোগ দেয়।

একজন মেন্টর অবশ্যই তার শিষ্যদের সাথে সময় অতিবাহিত করবেন

► কোনটি বেশি আকর্ষণীয়, অনেকের কাছে পৌঁছানো নাকি অল্প কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া? দীর্ঘমেয়াদের জন্য কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? কেন যিশু বারোজন ব্যক্তির জন্য বেশি এত খেটেছিলেন?

যিশু তাঁর সময়ের বেশিরভাগ অংশটাই বারোজন প্রেরিতশিষ্যের জন্য নিয়োজিত করেছিলেন। “তিনি বারোজন শিষ্যকে নিয়োগ করলেন ও তাঁদের “প্রেরিতশিষ্য” বলে ডাকলেন যেন তাঁরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থাকেন ও তিনি যেন তাঁদের প্রচারের কাজে চারদিকে পাঠাতে পারেন এবং তাঁরা যেন ভূত তাড়ানোর ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন” (মার্ক ৩:১৪-১৫)। প্রথমত, তারা তাঁর পদ্ধতি শেখার জন্য তাঁর সাথে সময় কাটিয়েছিল। কেবল সেই সময়ের পরেই তারা পরিচর্যাকাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।

মার্ক গালীল প্রদেশে যিশুর একটি সফরের কথা উল্লেখ করেছেন: “যিশু চাইলেন না, যে তাঁরা কোথায় আছেন, কেউ সেকথা জানুক [কারণ তিনি সেখানে ছিলেন], কারণ যিশু সেই সময় তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন” (মার্ক ৯:৩০-৩১)। বিশাল জনতার কাছে পৌঁছানোর কর্মসূচী গড়ে তোলা যিশুর প্রাথমিক চিন্তা ছিল না, বরং তা ছিল এমন লোকেদের গড়ে তোলা যারা মন্ডলীকে নেতৃত্ব দেবে।

যিশু হাজার হাজার লোকের কাছে প্রচার করেছিলেন, কিন্ত তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল ভবিষ্যতের পরিচর্যা কাজের জন্য কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। যিশু জানতেন যে প্রশিক্ষণ অনেক বেশি কার্যকর হয় যদি এটি একটি ছোটো দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করা হয়। রবার্ট কোলম্যান সতর্ক করেছেন, “আপনার মিনিস্ট্রি যত বেড়ে উঠবে, তত প্রত্যেক শিষ্যের জন্য সময় বের করা কঠিন হবে। কিন্তু আপনার মিনিস্ট্রি যত বৃদ্ধি পাবে, প্রত্যেক শিষ্যের জন্য সময় বের করা তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”

আপনি যখন সুসমাচার পুস্তকগুলি পড়বেন, আপনি দেখতে পাবেন যে যিশু কখনোই একা পরিচর্যা কাজ করেননি, অন্তত তিনজন শিষ্য তাঁর সাথে থাকতেন। যিশু এবং তাঁর শিষ্যরা প্রায়শই প্রশিক্ষণের জন্য নির্জন এলাকায় ফিরে যেতেন। যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের শেষের দিকে, তিনি শিষ্যদের সঙ্গে অনেক বেশি মাত্রায় সময় কাটিয়েছিলেন। জেরুজালেমে থাকার শেষ সপ্তাহে যিশু বেশিরভাগ সময়েই শিষ্যদেরকে তাঁর সাথে রাখতেন। এই ব্যক্তিদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিল তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

একটি ইহুদি প্রবাদে বলা হয়, “একজন শিষ্য হল সেই ব্যক্তি যে তার গুরুর ধুলো খায়।” একজন শিষ্য তার গুরুকে এত নিকটবর্তীভাবে অনুসরণ করত যে তার গুরুর পায়ের ধুলোও গিলে ফেলত। একজন শিষ্য ঠিক সেটাই খেত যা তার গুরু খেতেন; একজন শিষ্য ঠিক সেখানেই যেত যেখানে তার গুরু যেতেন; একজন শিষ্য তার গুরুর শিক্ষা এবং দৃষ্টান্তের প্রতি সমর্পিত থাকত। যিশুর অনুসরণকারীরা ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সাথে সময় কাটিয়েছিলেন যতক্ষণ না তারা তাদের গুরুর চরিত্র পরিধান করেছিলেন। পরবর্তীকালে, তারা “খ্রিষ্টবিশ্বাসী” হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন; তারা তাদের গুরুর মতো হয়ে উঠেছিল।

একইভাবে, পৌলের সাথেও সর্বদা তিমথি, তীত, লূক, বা তূখিক’র মতো অনুসরণকারীরা থাকত। পৌল তাদের সাথে সময় অতিবাহিত করার মাধ্যমে তাদেরকে পরিচর্যা কাজের জন্য প্রশিক্ষিত করে তুলেছিলেন।

পুনরায়, এটি আজকে আমাদের জন্য একটি মডেল প্রদান করে। আপনি যখন আপনার পরিচর্যা কাজ করেন, আপনি দলের তরুণ সদস্যদের আপনাকে অনুসরণ করতে উত্সাহিত করতে পারেন, যাতে তারা পরিচর্যা কাজ কীভাবে করতে হয় তা শিখতে পারে। মন্ডলীর এক সফল নেতা বলেছিলেন, “আমি আমার সাথে একজন কম বয়সী পরিচর্যাকারীকে না নিয়ে কখনো পরিচর্যা কাজের জন্য সফর করি না। মন্ডলীর আগামীর লিডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া আমার কাছে আমার নিজের পরিচর্যা কাজের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।” এই পাস্টার বুঝতে পেরেছেন যে কার্যকারী নেতারা অন্য নেতাদের প্রশিক্ষণ দেন।

একজন মেন্টর তার শিষ্যদের জন্য পরিচর্যা কাজের মডেল প্রদর্শন করে দেখাবেন

শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেওয়ার পর যিশু বলেছিলেন, “আমি তোমাদের কাছে এক আদর্শ স্থাপন করেছি, যেন আমি তোমাদের প্রতি যা করলাম, তোমরাও তাই করো” (যোহন ১৩:১৫)। যিশু উদাহরণ দ্বারা শিক্ষা দিতেন। তিনি জানতেন যে “এটা করো” বলাই যথেষ্ট নয়। আমাদের অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে যে এটা কীভাবে করতে হয়। যিশু তাঁর শিষ্যদের ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু করতে বলেননি যতক্ষণ না তিনি তা প্রদর্শন করে দেখিয়েছিলেন।

শিষ্যরা যিশুকে প্রার্থনা করতে দেখে বলেছিলেন, “প্রভু...আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়ে দিন” (লূক ১১:১)। যিশু কেবল প্রার্থনার বিষয়ে একটি শিক্ষা দিয়েছিলেন তা নয়। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁকে প্রার্থনা করতে দেখে শিষ্যরা প্রার্থনা কি তা বুঝতে আকাঙ্খী হয়ে উঠেছিলেন৷ ছাত্র-ছাত্রীরা যখন শেখার জন্য ক্ষুধার্ত হয়, তখন তারা আরো ভালো করে শেখে!

শিষ্যরা যিশুকে তাঁর প্রচারে শাস্ত্র ব্যবহার করতে শুনেছিলেন। যিশু প্রায়শই পুরাতন নিয়মের উল্লেখ করতেন। তিনি বাইবেল প্রচারের মডেল স্থাপন করেছিলেন। শিষ্যরা কি এই পাঠটি শিখেছিল? অবশ্যই! পিতর যখন প্রেরিত ২ অধ্যায়ে প্রচার করেছিলেন, তিনি যোয়েল, গীত ১৬, এবং গীত ১১০ অধ্যায়ের উল্লেখ করেছিলেন। পিতর যিশুর কাছ থেকে শাস্ত্রের উপর তার প্রচার তৈরি করতে শিখেছিলেন। প্রেরিত পুস্তকের প্রতিটি প্রচার পুরাতন নিয়মকে নির্দেশ করে।

পৌল এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। বারংবার তিনি লিখেছেন, “তোমরা আমার দৃষ্টান্ত দেখেছ। আমার আদর্শ অনুসরণ করো।”[2] পৌল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তীত এবং তিমথির মতো শিষ্যরা পাস্টার হওয়ার জন্য তাদের শিক্ষক পৌলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার মাধ্যমে শিক্ষালাভ করেছিলেন।

আজকে, আমরা যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিই তাদের কাছে আমাদের পরিচর্যা কাজের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা করা উচিত। তারা আমাদের সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোই দেখে। সর্বোপরি তারা আমাদের চরিত্রকে পর্যবেক্ষণ করে, যখন আমরা ভুল স্বীকার করি এবং শিখতে থাকি। শিষ্যরা আমাদের উদাহরণ দেখে পরিচর্যা কাজের বাস্তবতা শেখে।

একজন মেন্টর অবশ্যই তার শিষ্যদেরকে দায়িত্ব অর্পণ করবেন

► মথি ১০:৫-১১:১ পড়ুন।

শুরু থেকেই, শিষ্যদেরকে পরিচর্যা কাজের জন্য প্রস্তুত করাই যিশুর উদ্দেশ্য ছিল। তিনি তাঁদেরকে অনুসরণ করার আহ্বান করেছিলেন যাতে তিনি তাঁদেরকে মনুষ্যধারী করতে পারেন (মথি ৪:১৯)।

যিশুর সাথে তাদের প্রথম বছরের বেশিরভাগ সময়ে, শিষ্যরা তাঁর পরিচর্যা কাজ পর্যবেক্ষণ করেছিল। তাঁর উদাহরণ থেকে তারা শিখেছিলেন। তারা পর্যবেক্ষণ করার পর, যিশু শিষ্যদেরকে পরিচর্যা কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন। মথি ১০ অধ্যায় দেখায় যে কীভাবে যিশু শিষ্যদেরকে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।

তিনি তাদের কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন (মথি ১০:১)।

শিষ্যদেরকে প্রেরণ করার আগে, যিশু তাদেরকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তা পালন করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। কখনো কখনো লিডাররা কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তাদের সাহায্যকারীদের বিশ্বাস করতে ভয় পান। তবে, যাদেরকে আপনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, এই কর্তৃত্বহীন দায়িত্ব তাদের অক্ষম করে তোলে। আমাদের সাহায্যকারীদের ততক্ষণ দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয় যতক্ষণ না আমরা তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট কর্তৃত্ব প্রদান পারছি।

তিনি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন (মথি ১০:৫-৪২)।

যিশু তাঁর শিষ্যদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন: স্বর্গরাজ্য প্রচার করো। তাদের দায়িত্ব সুস্পষ্ট ছিল। তারা জানতেন যে যিশু তাদের কাছ থেকে কী কাজ প্রত্যাশা করেন।

যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন যে তাদের কোথায় পরিচর্যা করা উচিত: ইস্রায়েল পরিবারের হারিয়ে যাওয়া মেষদের কাছে। পরে, প্রেরিতরা পরজাতীয়দের কাছে প্রচার করেছিলেন, কিন্তু তারা যখন পরিচর্যা করতে শিখছিল, তখন যিশু তাদের এলাকা বা বাড়ির কাছাকাছি কাজ শুরু করতে বলেছিলেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের সফল হওয়ার জন্য আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করা উচিত। এমন একটি কাজ দিয়ে শুরু করুন যা সম্পাদন করা সহজ। যিশু যুক্তিসঙ্গত লক্ষ্য স্থাপন করেছিলেন।

যিশু তাঁর শিষ্যদের তাড়না সম্বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাড়না আসার কারণ এটি নয় যে শিষ্যরা তাদের পরিচর্যা কাজে ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু এর কারণ ছিল যিশুর প্রতি অনুগত হওয়ার আহ্বান তাঁর অনুসরণকারীদের এবং যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের মধ্যে বিভাজন নিয়ে আসে।

তিনি তাঁদেরকে বিভিন্ন দলে পাঠিয়েছিলেন (মার্ক :)।

যিশু পরিচর্যা কাজে দলের গুরুত্ব দেখিয়েছিলেন। তিনি দু’টি দলে শিষ্যদের পাঠিয়েছিলেন। কয়েক মাস পরে, যিশু তাঁর অনুসরণকারীদের মধ্যে ৭২জনকে দু’টি দলে ভাগ করে পাঠিয়েছিলেন (লূক ১০:১)। এটি প্রথম শতকের মন্ডলীর পরিচর্যার মডেল হয়ে উঠেছিল। পিতর এবং যোহন একসাথে পরিচর্যা করেছিলেন। বার্ণবা এবং শৌল একসাথে ভ্রমণ করেছিলেন। পৌল এবং সীল একসঙ্গে পরিচর্যা করেছিলেন।

একজন মেন্টরকে আবশ্যিকভাবে তার শিষ্যদের তত্ত্বাবধান করতে হবে

শিষ্যরা পরিচর্যা কাজ শেষ করে ফিরে আসার পর যিশুর কাছে রিপোর্ট দিয়েছিল (মার্ক ৬:৩০)। যিশুর তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ফলো-আপ করা। দায়িত্ব অর্পণ করাই যথেষ্ট নয়; একজন কার্যকারী নেতা তার শিষ্যের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করবেন। মূল্যায়ন ছাড়া দায়িত্ব অর্পণ খারাপ কর্মক্ষমতার ফলাফল নিয়ে আসে।

► মথি ১৭:১৪-২১ পড়ুন।

হাওয়ার্ড হেনড্রিকস (Howard Hendricks) দেখিয়েছেন যে শেখার পদ্ধতিতে ব্যর্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিষ্যরা প্রশ্ন করেছিলেন, “কেন আমরা ওই ছেলেটির মধ্যে থেকে মন্দ আত্মাটিকে দূর করতে পারিনি?” তাদেরকে বিশ্বাসের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে যিশু প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছিলেন। যিশু স্বর্গে চলে যাওয়ার পর পরিচর্যা কাজে ব্যর্থ হওয়ার তুলনায় এই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যর্থ হওয়া অনেক ভালো ছিল।

একজন শিষ্যের প্রতি ফলপ্রসূ তত্ত্বাবধানে মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকা আবশ্যিক। যখন একজন শিষ্য কোনো কাজে ব্যর্থ হয়, তখন তাকে যেন কোনোভাবেই দল থেকে বরখাস্ত না করা হয়। পরিবর্তে, আমাদেরকে ব্যর্থতার কারণটি পর্যালোচনা করতে হবে এবং ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।

যিশু লূক ৯ অধ্যায়ে এই প্যাটার্ন বা বিন্যাসটি দেখিয়েছেন:

  • ৯:১-৬ পদে যিশু বারোজন শিষ্যকে পাঠিয়েছিলেন।

  • ৯:১০ পদে তারা যিশুর কাছে তাদের সফরের বিবরণ দিয়েছিল।

  • ৯:৩৭-৪৩ পদে শিষ্যরা একটি মন্দ আত্মাকে তাড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল।

  • ৯:৪৬-৪৮ পদে যিশু তাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের মহানতার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন।

  • ৯:৪৯-৫০ পদে যিশু যোহনকে পরিচর্যা কাজে একটি খারাপ সিদ্ধান্তের জন্য তিরস্কার করেছিলেন।

  • ৯:৫২ পদে যিশু শমরিয়ার একটি গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শিষ্যদেরকে পাঠিয়েছিলেন।

  • ৯:৫৪-৫৫ পদে যিশু যাকোব এবং যোহনকে পরিচর্যা কাজের আরো একটি খারাপ সিদ্ধান্তের জন্য তিরস্কার করেছিলেন।

  • ১০:১ পদে যিশু একটি বড় দলকে পরিচর্যা কাজের জন্য পাঠিয়েছিলেন।

যিশু শিক্ষা, দায়িত্ব অর্পণ, এবং মূল্যায়নের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করতেন। শিষ্যরা ব্যর্থ হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। পরিবর্তে, তিনি ব্যর্থতাকে শিক্ষার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

পৌল পরবর্তীকালে একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। তিনি ক্রীট দ্বীপে মন্ডলীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তীতকে এবং ইফিষীয়তে পাস্টার হিসেবে তিমথিকে নিয়োগ করেছিলেন। তারপর তিনি এই দু’জনকে আরো প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা চিঠি লিখেছিলেন। প্রথম মিশন সফরের মন্ডলীগুলি স্থাপনের পর, মন্ডলীগুলিকে তত্ত্বাবধান প্রদান করার উদ্দেশ্যে পৌল দ্বিতীয় সফরে গিয়েছিলেন (প্রেরিত ১৫:৩৬)।

প্রশিক্ষণের এই পদ্ধতিটি আজকেও কার্যকর। বহু লিডাররা একজন তরুণ পরিচর্যাকারীকে কোনো ধারাবাহিক তত্ত্বাবধান বা জবাবদিহিতা ছাড়াই পরিচর্যা কাজে পাঠিয়ে দেনএবং যখন সেই পরিচর্যাকারী ব্যর্থ হয়, তারা বিস্মিত হন। আমাদের কখনোই এমন ভাবা উচিত নয়, “আমি যা শেখানোর শিখিয়ে দিয়েছি, তাই তারা কাজটা সঠিকভাবেই করবে।” পরিবর্তে, তত্ত্বাবধান হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যদি আপনি লিডারদের প্রশিক্ষিত করতে চান, আপনাকে অবশ্যই তত্ত্বাবধানে সময় নিয়োগ করতে হবে।

হাওয়ার্ড হেনড্রিকস (Howard Hendricks) নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণের চারটি ধাপ তালিকাভুক্ত করেছেন:

১। বলা: তাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষা দিন। যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে স্বর্গরাজ্যের বার্তা প্রচার করেছিলেন।

২। দেখানো: পরিচর্যা কাজের জন্য একটি মডেল বা নমুনা প্রদান করুন। যিশু শিষ্যদের কাছে পরিচর্যা কাজ প্রদর্শন করেছিলেন।

৩। অনুশীলন: সরাসরি তত্ত্বাবধানের অধীনে পরিচর্যা কাজ। যিশু তাঁর শিষ্যদের পরিচর্যা কাজে পাঠিয়েছিলেন এবং তারপরে তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করেছিলেন।

৪। করা: সরাসরি তত্ত্বাবধান ছাড়া পরিচর্যা কাজ। পঞ্চাশত্তমীর পরে, শিষ্যরা যিশুর তত্ত্বাবধান ছাড়া পরিচর্যা কাজ করেছিলেন।

► নেতৃত্বদানে শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আপনি কী করছেন? আমরা যে ধাপগুলি অধ্যয়ন করেছি, তার মধ্যে আপনি কোনটি কার্যকরভাবে করেন? কোন পদক্ষেপটির উন্নতি প্রয়োজন? একটি দল হিসেবে, ভবিষ্যতের লিডারদের পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে আরো ফলপ্রসূ হতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার পরিচর্যা কাজের বিন্যাসে লিডারদের গড়ে তোলার জন্য আপনার প্ল্যান তৈরী না হওয়া পর্যন্ত এই আলোচনাটি চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

আমাদের শিষ্যরা যেন অবশ্যই অন্য শিষ্যদের তৈরি করে

যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে মনোনীত করোনি, আমিই তোমাদের মনোনীত করেছি এবং ফলধারণ করবার জন্য নিযুক্ত করেছি—সেই ফল যেন স্থায়ী হয়…” (যোহন ১৫:১৬)। আরো শিষ্য তৈরি করার জন্য যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে প্রস্তুত করেছিলেন।

► মথি ১৩:৩১-৩২ পড়ুন।

যিশুর বলা সর্ষে বীজের দৃষ্টান্তটি দেখিয়েছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য তার আসল আকারের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। যেমন একটি ক্ষুদ্র সর্ষে বীজ তার প্রত্যাশিত আকারের চেয়ে অনেক বড় একটি উদ্ভিদে বেড়ে উঠতে পারে, ঠিক সেইভাবে মন্ডলী কারোর আশার পরিমাপের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। পুরাতন নিয়মে, একটি গাছে থাকা পাখিরা হল বহু দেশসহ একটি মহান রাজ্যের প্রতিনিধি (দানিয়েল ৪:১২ এবং যিহিষ্কেল ৩১:৬)। যিশু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বেশি মাত্রায় শিষ্য তৈরি করার সাথে সাথে মন্ডলী তার আসল আকারের অনুপাতে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং সমস্ত জাতির কাছে পৌঁছাবে।

ডঃ রবার্ট কোলম্যান (Robert Coleman) লিখেছেন যে আমাদের পরিচর্যা কাজের চূড়ান্ত মূল্যায়ন হচ্ছে পুনরুৎপাদন। “এখানে অবশেষে আমাদের সকলকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে যে কীভাবে আমাদের জীবন বহুগুণ হচ্ছে। প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কি মহান নিযুক্তির [দ্য গ্রেট কমিশন] দৃষ্টিভঙ্গি বহন করবে এবং তারা কি বিশ্বস্ত দাসদের কাছে তা প্রদান করবে যারা অন্যদেরও তা শিক্ষা দেবে? খুব শীঘ্রই এমন সময় উপস্থিত হবে যখন আমাদের মিনিস্ট্রি তাদের হাতে থাকবে।”[3]


[1]Robert Coleman, The Master Plan of Evangelism. (Grand Rapids: Baker Book House, ১৯৬৩) থেকে অভিযোজিত।
[2]অন্যান্য উদাহরণ গুলি হল ১ করিন্থী ১১:১, ফিলিপী ৩:১৭, ফিলিপী ৪:৯।
[3]Robert Coleman, “The Jesus Way to Win the World: Living the Great Commission Every Day.” Evangelical Theological Society, ২০০৩.

একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: যিশুর মহাযাজকীয় প্রার্থনা

যিশুর মহাযাজকীয় প্রার্থনার মধ্যভাগটি তাঁর শিষ্যদের উপর দৃষ্টিবদ্ধ (যোহন ১৭:-১৯)। এই প্রার্থনাটি শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে যিশুর পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি শেখায়।[1]

() প্রথমে, আমরা যাদের মেন্টর করি তাদেরকে সুরক্ষিত করি।

যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “তাদের সঙ্গে থাকার সময়, আমি তাদের রক্ষা করেছি”। সুসমচার পুস্তকগুলিতে ২০ বার যিশু তাঁর শিষ্যদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। তিনি তাদেরকে ত্রুটি থেকে সুরক্ষিত করেছিলেন। যখন আমরা শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিই, আমাদের তখন অবশ্যই তাদেরকে তাদের জগতের বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমাদের প্রশিক্ষণ অবশ্যই বাস্তবিক হতে হবে।

► আপনার সংস্কৃতিতে নবীন পরিচর্যাকারীরা কোন কোন বিপদের সম্মুখীন হয়? একজন মেন্টর হিসেবে, আপনি কীভাবে তাদের এই বিপদগুলির জন্য প্রস্তুত করবেন?

() তারা পরিপক্ব হওয়ার সাথে সাথে, আমরা মেন্টরা তাদের উপর আস্থা রাখি।

যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “আমি এই নিবেদন করছি না যে তুমি তাদের জগৎ থেকে নিয়ে নাও কিন্তু সেই পাপাত্মা থেকে তাদের রক্ষা করো” (যোহন ১৭:১৫)। যিশু জানতেন যে শিষ্যরা প্রলোভনের সম্মুখীন হবে, কিন্তু যাদের তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল। আমাদের অবশ্যই আমারা যে তরুণ লিডারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, তাদের উপর ভরসা করা শিখতে হবে। এর জন্য আমাদের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অন্যদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।

অজিত ফার্নান্ডো (Ajith Fernando) লিখেছেন যে লিডাররা তাঁদের অনুসরণকারীদের দুভাবে দেখেন।

  • দুর্বল লিডাররা তাদের অনুসরণকারীদের দুর্বলতাগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

  • কার্যকারী লিডাররা তাদের অনুসরণকারীদের প্রবলতার উপরে নজর দেন, পাশাপাশি দুর্বলতাগুলিও সমাধান করার কাজ করে। কার্যকারী লিডাররা অন্যদেরকে “আশার দৃষ্টি” দিয়ে দেখে।

(৩) প্রশিক্ষিত করার পর, আমরা আমাদের শিষ্যদের জগতে পরিচর্যা কাজ করতে প্রেরণ করি।

যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “তুমি যেমন আমাকে জগতে পাঠিয়েছ, আমিও তেমনই তাদের জগতে পাঠাচ্ছি” (যোহন ১৭:১৮)। পঞ্চাশত্তমীর পরে, শিষ্যরা সেই মহান মিশন শুরু করেছিল যার জন্য যিশু তাদের প্রস্তুত করেছিলেন। আমরা শিষ্যদেরকে মেন্টর করি, যাতে তারা এক চাহিদাগ্রস্থ জগতে সুসমাচার নিয়ে যেতে পারে।

যিশু বলেছিলেন, “তাদেরই মধ্যে আমি মহিমান্বিত হয়েছি” (যোহন ১৭:১০)। আমরা যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিই তাদের পাঠানোর সময়ে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে যিশু মহিমান্বিত হচ্ছেন। আমরা যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, আমরা তাদের কাছ থেকে নিজেদের জন্য গৌরব নিতে প্রলুব্ধ হয়ে পড়তে পারি। অন্যদের শিষ্য করার ক্ষমতা আমাদের আছেএই বিষয়টি থেকে আমরা গৌরব পাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হয়ে পড়তে পারি। এর পরিবর্তে, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন একমাত্র ঈশ্বরই মহিমান্বিত হন৷


[1]Ajith Fernando, Jesus Driven Ministry (Wheaton, Illinois: Crossway Books, ২০০২), ১৭২-১৭৩ থেকে অভিযোজিত।

প্রয়োগ: একটি মিনিস্ট্রি টিম বা পরিচর্যাকারী দলের মূল্য

যিশুর উদাহরণ পরিচর্যা কাজে টিম বা দলের গুরুত্ব দেখায়। টিম মিনিস্ট্রিতে নবীন সহকর্মীদের মেন্টর করা এবং সহকর্মী পাস্টারদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উভয়ই জড়িত। আমাদেরকে অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। দল এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

দল ভারসাম্য প্রদান করে

যিশু বিভিন্ন পটভূমি থেকে লোকেদের বেছে নিয়েছিলেন। পিতর এবং যোহন নিত্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। মথি রোমের জন্য কাজ করেছিল, পাশাপাশি স্বদেশী (জিলট) দলভুক্ত শিমোন যিহুদা প্রদেশ থেকে রোমীয়দের তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। এই মানুষগুলি ছিলে বিপরীতমুখী। শিষ্যদের বাছাই করার সময়, যিশু বিভিন্ন ধরণের মানুষকে বেছে নিয়েছিলেন।

যদিও আমরা সাধারণত একটি দলে এই প্রকার বিরোধী ব্যক্তিদের থাকার অসুবিধাগুলি দেখতে পাই, তবে আমাদের এই ভিন্ন ব্যক্তিত্বের সুবিধাগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়। পিতরের মতো একজন প্রেরিতশিষ্য দ্রুত বড় বড় ঘোষণা করতেন। থোমা এবং আন্দ্রিয়’র মতো সতর্ক প্রেরিতশিষ্যরা তার কাজে ভারসাম্য প্রদান করত। নেতৃত্বে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব থাকার কারণে প্রথম শতকের মন্ডলী উপকৃত হয়েছিল।

বিচক্ষণ লিডাররা বিভিন্ন পটভূমি থেকে দলের সদস্যদের খুঁজে নেন। একটি শক্তিশালী দল মন্ডলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন সামর্থ নিয়ে আসে। দলের একজন সদস্যের আর্থিক বিষয় সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা থাকতে পারে; আরেক ব্যক্তি ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী হতে পারে; অন্য একজন বাইবেলের গভীর অন্তর্দৃষ্টি খুঁজে পেতে পারে। মন্ডলীর জন্য ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্ব প্রদানের কাজে সকলে একত্রিত হয়।

দল সুপরামর্শ প্রদান করে

শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়, যিশু জানতেন যে তিনি মন্ডলীর ভিত্তি স্থাপন করছেন। পঞ্চাশত্তমীর পরে, প্রারম্ভিক মন্ডলীকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হবে। যিশু জানতেন যে শিষ্যদের একে অপরের প্রয়োজন হবে যখন তারা এই সিদ্ধান্তগুলি নেবেন।

প্রথম শতকের মন্ডলী যে অন্যতম প্রাথমিক সিদ্ধান্তটির সম্মুখীন হয়েছিল তা ছিল, “কীভাবে পরজাতিয় [অইহুদি বা গ্রিক] বিশ্বাসীরা মন্ডলীর অংশ হয়ে উঠবে? তাদের কি ইহুদি বিধানের সমস্ত রীতি-নীতি পালন করতে হবে?” আমাদের কাছে সহজ বলে মনে হলেও এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। এটি কোনো ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় ছিল না; খাবার এবং ত্বকছেদ সংক্রান্ত বিধানগুলি সম্পূর্ণভাবে পুরাতন নিয়মভিত্তিক ছিল। এই সিদ্ধান্তটির দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল ছিল। আজকে, আপনি এবং আমি এই সিদ্ধান্তটির দ্বারা প্রভাবিত; যদি জেরুশালেমের পরিষদ অন্যরকম কিছু সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে পরজাতিয় খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের আজকে ইহুদি বিধান মেনেই চলতে হত।

প্রেরিত ১৫ দেখায় যে কীভাবে প্রথম শতকের মন্ডলী এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সামলেছিল। বিভিন্ন মতামত শোনার পর তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। পরজাতি মন্ডলীর প্রতি লেখা চিঠিতে প্রেরিতরা সিদ্ধান্তটি বর্ণনা করার জন্য খুব সুন্দর একটা কথা উল্লেখ করেছিলেন, “পবিত্র আত্মা ও আমাদের কাছে এ বিষয়ে বিহিত মনে হয়েছে” (প্রেরিত ১৫:২৮)। পবিত্র আত্মা মন্ডলীর নেতাদের একত্রিত করে তাদের মতামত জানাতে দিয়ে, এবং তারপর দলটিকে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে পরিচালিত করেন।

হিতোপদেশের লেখক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে একাধিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।

  • মূর্খদের পথ তাদের কাছে ঠিক বলে মনে হয়, কিন্তু জ্ঞানবানেরা পরামর্শ শোনে। (হিতোপদেশ ১২:১৫)

  • উপদেশকদের সংখ্যা বেশি হলে জয় সুনিশ্চিত হয়। (হিতোপদেশ ১১:১৪)

  • নিশ্চয় যুদ্ধ শুরু করার জন্য তোমার জ্ঞানগর্ভ পরিচালনা প্রয়োজন,ও অনেক পরামর্শদাতার মাধ্যমেই যুদ্ধজয় করা যায়। (হিতোপদেশ ২৪:৬)

এটি মন্ডলীর লিডারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। যদি আপনি অন্যদের কথা শুনতে অনিচ্ছুক হন, তাহলে হিতোপদেশ বলছে যে আপনি জ্ঞানী ব্যক্তি নন। একজন মূর্খ ব্যক্তি সবসময়ে মনে করে যে সে সঠিক, কিন্তু একজন জ্ঞানী ব্যক্তি অন্যদের কথা শুনতে ইচ্ছুক থাকে।

যদি একটি দলের উদ্দেশ্য হয় সঠিক পরামর্শ দেওয়া, তাহলে আমাদের এমন লোকেদের প্রয়োজন যারা আমাদের চেয়ে আলাদাভাবে ভাবনা-চিন্তা করে। আমাদের নিশ্চিত থাকতে হবে যে একটি দল নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অবিকল প্রতিরুপ খোঁজ করছি না। আমাদের এমন লোকেদের প্রয়োজন নেই যারা সবসময়ে দ্রুত আমাদের সাথে সহমত হয়ে যায়।

দল উৎসাহ প্রদান করে

উপদেশক টীম বা দলের উপকারিতা বর্ণনা করেছে। “একজনের চেয়ে দুজন ভালো,কারণ তাদের কাজে অনেক ভালো ফল হয় যদি একজন পড়ে যায়,তবে তার সঙ্গী তাকে উঠাতে পারে। কিন্তু হায় সেই লোক যে পড়ে যায় আর কেউ তাকে উঠাবার জন্য নেই” (উপদেশক ৪:৯-১০)।

যখন মন্ডলী বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল, প্রেরিতরা একে অপরকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। প্রথম শতকের মন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা বর্ণনা করার জন্য লূক “একযোগে” কথাটি ব্যবহার করেছেন।

বিখ্যাত প্রচারক ও মিশনারি হাডসন টেলর (Hudson Taylor) এই নীতিটি ব্যাখ্যা করেছেন। টেলর পরিচর্যা কাজের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে চীন দেশে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তিনি খুব তাড়াতাড়ি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। তার কিছু সাহায্যকারী তাকে আর্থিক সাহায্য পাঠানো ছেড়ে দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত প্রচারকরা তার সমালোচনা করত। এমনকি ব্রিটিশ সরকারও তার কাজের বিরোধিতা করেছিল। তার বাগদত্তা তাকে ইংল্যান্ড থেকে লিখেছিলেন যে তিনি একজন প্রচারককে বিয়ে করার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। টেলর নিরুৎসাহিত হয়েছিলেন এবং তিনি বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এই সময়ে, উইলিয়াম বার্নস (William Burns) নামে একজন বয়স্ক স্কটিশ প্রচারক চীন দেশের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় প্রচারমূলক ভ্রমণে হাডসন টেলরের সাথে সাত মাস কাটিয়েছিলেন। দুই জন একসঙ্গে ভ্রমণ করেছিলেন, একসঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন, এবং একসঙ্গে প্রচার করেছিলেন। সেই সফরের সময় টেলর চীনের জন্য তার দর্শন ফিরে পান। জন পোলক (John Pollock) লিখেছেন, “উইলিয়াম বার্নস হাডসন টেলরকে তাঁর [টেলরের] নিজের থেকে বাঁচিয়েছিলেন।”

হাডসন টেলর পরবর্তীকালে ‘চীন ইনল্যান্ড মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মিশনারি হিসেবে পরিচিত; উইলিয়াম বার্নস প্রায় অজানাই রয়ে গেছেন। তবে, চীন অভ্যন্তরীণ মিশনের মাধ্যমে জয়ী হাজার হাজার ধর্মান্তরণের জন্য উইলিয়াম বার্নস কিছু কৃতিত্ব দাবি করার যোগ্য। বার্নস একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে হাডসন টেলরকে উত্সাহিত করেছিলেন। দল উৎসাহ প্রদান করে।

দল দায়বদ্ধতা প্রদান করে

আমাদের প্রত্যেকের একটি দুর্বলতা রয়েছে—এমন কিছু বৈশিষ্ট্য যা আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে দেখতে পাই না। আমরা আমাদের পরিচর্যা কাজে দুর্বলতাগুলি বহন করি যা আমাদের পারিবারিক পটভূমি থেকে, আমাদের খ্রিষ্টবিশ্বাসী হয়ে ওঠার আগের জীবন থেকে এবং আমাদের ব্যক্তিত্ব থেকে আসে। এই বিষয়গুলি আমাদের পরিচর্যার কাজকে প্রভাবিত করে।

আমরা হয়তো নিজেদের মধ্যে এই দুর্বলতাগুলি দেখতে পাই না, কিন্তু দলের অন্যান্য সদস্যরা আমাদের এই ক্ষেত্রগুলি সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে পারে যা আমাদের পরিচর্যা কাজকে ধ্বংস করতে পারে। ইব্রীয় পুস্তকের লেখক খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে ভালো কাজে পরস্পরকে...উদ্বুদ্ধ করতে আহ্বান করেছেন (ইব্রীয় ১০:২৪)। “উদ্বুদ্ধ করা” কথাটির পিছনে যে মূল গ্রিক শব্দটি আছে তা কাউকে প্ররোচিত করা বা খোঁচা দেওয়ার ধারণাটি বহন করে। কখনো কখনো, এটি অসম্মতিজনক। আমরা কেউই প্ররোচিত হতে পছন্দ করি না, কিন্তু জবাবদিহিতা মূল্যবান। প্রত্যেক খ্রিষ্টীয় নেতার অন্তত এমন একজন ব্যক্তিকে প্রয়োজন যিনি বলতে পারেন, “এই কাজটি বোকামি। আপনার এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।”

মধ্যযুগের মঠ এবং ওয়েসলির ক্লাস মিটিং থেকে শুরু করে ‘প্রমিস কিপার’-এর মতো আধুনিক গোষ্ঠী – সবক্ষেত্রেই খ্রিষ্টীয় নেতাদের জবাবদিহিতার দীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে। আজকের দিনে মন্ডলীর লিডাররা সাপ্তাহিক দায়বদ্ধতা থেকে উপকৃত হন। এটি পারস্পরিকভাবে, ছোটো ছোটো দলে বা ফোনের মাধ্যমেও করা যেতে পারে। আমরা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার আগেই এই দায়বদ্ধতা আমাদেরকে আত্মিক বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে।

উত্তম জবাবদিহিতার জন্য প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সততা এবং সদস্যদের মধ্যে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা প্রয়োজন। আপনি জবাবদিহিতা সংক্রান্ত প্রশ্নের বিভিন্ন উদাহরণ খুঁজে পেতে পারেন। নিচের তালিকার প্রশ্নগুলি দেখুন:

  • এই সপ্তাহে, আপনি কি ঈশ্বরের সাথে নিয়মিতভাবে সময় কাটিয়েছেন?

  • এই সপ্তাহে, আপনি কি কোনোভাবে আপনার সততার সাথে আপস করেছেন?

  • এই সপ্তাহে, আপনার ভাবনা-চিন্তা কি পবিত্র ছিল?

  • এই সপ্তাহে, আপনি কি কোনো যৌনতাজনিত পাপ করেছেন?

  • এই সপ্তাহে, আপনি আপনার স্ত্রীর [বা স্বামীর] সাথে উল্লেখযোগ্য কি কিছু করেছেন?

  • এই সপ্তাহে, আপনি কি একজন অবিশ্বাসীর কাছে আপনার বিশ্বাসের কথা বলেছেন?

  • আপনি কি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর বিশ্বস্তভাবে দিয়েছেন?

প্রলোভনের সময়ে একটি দলের দায়বদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ। একজন তরুণ পাস্টারের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে পৌল কীভাবে একটি দীর্ঘস্থায়ী মিনিস্ট্রি গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পৌল তিমথিকে সতর্ক করে বলেছিলেন, “তুমি যৌবনের সব কু-অভিলাষ থেকে পালিয়ে যাও এবং যারা শুদ্ধচিত্তে প্রভুকে ডাকে, তাদের সঙ্গে ধার্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তিলাভের অনুধাবন করো” (২ তিমথি ২:২২)। পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে তিমথির আত্মিক জীবন অন্যান্য ঈশ্বর-অনুসারীদের সাথে যোগদানের দ্বারা উপকৃত হবে যারা এক পবিত্র হৃদয় নিয়ে প্রভুকে ডাকে।

► যদি আপনি একটি মিনিস্ট্রি টীমের অংশ হন, তাহলে আপনার দল থেকে পাওয়া কিছু উপকারিতার কথা আলোচনা করুন। একটি মিনিস্ট্রি টীমের অংশ হওয়ার চ্যালেঞ্জগুলি কী কী?

একটি দলের সাথে কাজ করা

যিশু অত্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ দলে পরিণত করেছিলেন। যিশু তাদের ভিন্নতাকে গ্রহণ করেছিলেন এবং একটি দল গঠন করেছিলেন যারা প্রথম শতকের মন্ডলীকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। মন্ডলীর পিতরের দৃঢ় নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল, এবং ফিলিপের শান্ত স্বভাবেরও প্রয়োজন ছিল। একজন লিডারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল একদল অনুসরণকারীকে একটি দলে পরিণত করা।

শ্রীলঙ্কার একজন চার্চ-লিডার অজিত ফার্নান্ডো (Ajith Fernando) একটি দল তৈরি করার প্রতিকূলতাগুলি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তিনি লিখছেন:

ইভাঞ্জেলিক্যাল বা সুসমাচার প্রচারভিত্তিক মন্ডলীর সম্ভাব্য দুঃখের বিষয় হল যে আমরা যেভাবে সিদ্ধান্ত নিই এবং কাজ করি তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনুভূতিগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাস্ত্রীয় তত্ত্বকে অতিক্রম করে। বাইবেলভিত্তিক খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলেন, “এই ব্যক্তি সম্পর্কে আমার অনুভূতি যাই হোক না কেন, আমি তাকে গ্রহণ করব কারণ ঈশ্বর চান আমি তা করি। এবং আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব যেন তিনি আমাকে তার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কাজ করার অনুগ্রহ দেন।” আমাদের ধর্মতত্ত্ব বলে যে এই ব্যক্তির সাথে কাজ করার এই প্রচেষ্টা সফল হবে, যদিও আমাদের অনুভূতি অন্য বার্তা দিতে পারে। আমাদের ধর্মতত্ত্ব এই সম্পর্কের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে আমাদের চালিত করে। আমরা সেই ব্যক্তির জন্য এবং তার সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রার্থনা করব। আমরা নিয়মিত তার সাথে দেখা করব বা যোগাযোগ রাখব। আমরা তার প্রতি খ্রিষ্টীয় প্রেম দেখাব এবং তার ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্য আমরা যা করতে পারি তা করার চেষ্টা করব। এই ব্যক্তি দলের মাধ্যমে কী অর্জন করতে পারেন, তা নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি।[1]

১ করিন্থীয় ১২:১২-২৫ পদ শিক্ষা দেয় যে, খ্রিষ্টের দেহের মধ্যে কেবল আমাদের পছন্দ নয় বলে কাউকে প্রত্যাখ্যান করার অধিকার আমাদের নেই। যদি আপনি একটি মন্ডলী গঠন করেন, সেখানে আপনি এমন সদস্যদের পাবেন যারা আপনার খুশির কারণ নয়। একজন খ্রিষ্টীয় লিডার হিসেবে, আপনাকে অবশ্যই বলতে হবে, “আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি যেমনই হোক, আমি এই ব্যক্তিকে গ্রহণ করব কারণ ঈশ্বর তাকে আমার দায়িত্বে রেখেছেন। আমি তার সাথে কাজ করার জন্য ঈশ্বরের কাছে অনুগ্রহ চাইব, এবং ঈশ্বরকে বলব যেন তিনি তাকে আশীর্বাদ করেন এবং পরিচর্যা কাজে তাকে সমৃদ্ধ করেন।”


[1]Ajith Fernando, Jesus Driven Ministry (Wheaton, Illinois: Crossway Books, ২০০২), ১৩৩

একজন কার্যকারী খ্রিষ্টীয় লিডার হল আসলে একজন দাস

আগামীদিনে পাস্টার হতে চলা এক ব্যক্তিকে একবার একজন জিজ্ঞাসা করেছিল, “তুমি পাস্টার হতে চাও কেন?” সেই যুবক উত্তর দিয়েছিল, “আমি এয়ারপোর্টে একজনকে তার পাস্টারের স্যুটকেস বহন করতে দেখেছিলাম। আমি চাই কেউ আমার স্যুটকেস বহন করুক!”

যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি ভীষণ রকম আলাদা ছিল! এই যুবকটি সেবা পেতে চেয়েছিল; যিশু সেবা করতে চাইতেন। “কারণ, এমনকি, মনুষ্যপুত্রও সেবা পেতে আসেননি, কিন্তু সেবা করতে ও অনেকের পরিবর্তে নিজের প্রাণ মুক্তিপণস্বরূপ দিতে এসেছেন” (মার্ক ১০:৪৫)। যিশু আমাদের দেখিয়েছেন যে প্রকৃত নেতৃত্বে সেবা করা অন্তর্ভুক্ত। যিশু নিজেকে নত করেছিলেন, একজন দাসের রূপ ধারণ করেছিলেন (ফিলিপীয় ২:৭)।

► যোহন ১৩:১-২০ পড়ুন।

সুসমাচার পুস্তকগুলিতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে আমরা যিশুর দাসরূপ-নেতৃত্বের আদর্শ অধ্যয়ন করতে পারি, তবে সবচেয়ে শক্তিশালী উদাহরণগুলির মধ্যে একটি হল যিশুর তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেওয়ার কাহিনী। এই দৃশ্যে, যিশু একজন দাস হওয়ার অর্থ কী তা দেখিয়েছেন।

কিছু গির্জা শেষ নৈশভোজে যিশুর কাজগুলিকে পুনরায় রূপ দেওয়ার জন্য একটি পা ধোয়ার একটি অনুষ্ঠান রাখে। এটি একটি সুন্দর পরিষেবা হতেই পারে, তবে এটি উপলব্ধি করা আরো জোরালো হবে যে যিশু কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি এমন একটা কাজ করেছিলেন, যেটা করার প্রয়োজন ছিল।

জেরুশালেমের রাস্তাঘাট ভীষণ ধুলোময় থাকার কারণে কোনো আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে একজন দাসকে বিশেষত অতিথিদের পা ধুইয়ে দেওয়ার জন্যই নিয়োগ করা হত। এটি ছিল নিম্নতম দাসদের জন্য একটি নিচু স্তরের দায়িত্ব। যখন যিশু নিস্তারপর্বের উদযাপনে তাঁর শিষ্যদের সাথে যোগদান করেছিলেন, তখন সেই ঘরে কোনো দাস উপস্থিত ছিল না। কোনো শিষ্যই স্বেচ্ছাসেবা হিসেবে এই কাজ করতে রাজি ছিল না; তারা যিশুর রাজ্যে বড় বড় পদমর্যাদা আশা করছিল। যিশু হাঁটু গেঁড়ে বসেছিলেন এবং সর্বনিম্ন দাসের কাজ করতে শুরু করেছিলেন।

এই দৃশ্যটি নেতৃত্বদান সম্পর্কে যিশুর ধারণাকে তুলে ধরে। অন্যেরা পদমর্যাদা এবং ক্ষমতার জন্য নেতৃত্ব চেয়েছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ অবস্থান লাভ করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। যিশু ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিলেন; তিনি শিষ্যদের প্রভু ছিলেন। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় সর্বনিম্ন অবস্থানটি নিয়েছিলেন।

[1]এটাই হল খ্রিষ্টসাদৃশ্য একজন নেতা হওয়ার অর্থ। একজন খ্রিষ্টসাদৃশ্য নেতা সেই কাজগুলিই নেন যা কেউ নিতে চায় না। একজন খ্রিষ্টসাদৃশ্য নেতা চিৎকার করে আদেশ চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দ্বারা নয়, কিন্তু তার বিনম্র পরিষেবা প্রদানের উদাহরণ দ্বারা অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করেন।

একজন একবার বলেছিল, “একটি দাসরূপ আত্মার পরীক্ষা হল যখন আমার সাথে একজন দাসের মতো ব্যবহার করা হয়, তখন আমি কেমন আচরণ করি?’” একজন লিডার যে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করে, সে কখনোই দাসের অবস্থানে কাজ করতে অসন্তুষ্ট হয় না। ভুলে যাবেন না যে যিশু অন্যান্য শিষ্যদের সাথে যিহুদারও পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। আপনি কি এমন একটি লোকের পা নম্রভাবে ধুইয়ে দেওয়ার কথা কল্পনা করতে পারেন যে লোকটি ইতিমধ্যেই আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে বলে ঠিক করে ফেলেছে?

যখন যিশু শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিচ্ছিলেন, তিনি তখন এই পদমর্যাদাপ্রিয় লোকেদের বলেছিলেন, “আমি তোমাদের কাছে এক আদর্শ স্থাপন করেছি, যেন আমি তোমাদের প্রতি যা করলাম, তোমরাও তাই করো” (যোহন ১৩:১৫)। তিরিশ বছর পর শিমোন পিতর সম্ভবত যিশুর এই নম্রতা বুঝতে পেরেছিলেন যখন তিনি লিখেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই পরস্পরের প্রতি নতনম্র আচরণ করো” (১ পিতর ৫:৫)। ঠিক যেভাবে যিশু তোয়ালে জড়িয়ে তাঁর শিষ্যদের সেবা করেছিলেন, ঠিক সেইভাবেই আমাদেরকে নম্রতা জড়িয়ে আমাদের চারপাশের সকলের সেবা করতে হবে।

খ্রিষ্টীয় লিডার হিসেবে, আমরা সেবার সুযোগের পরিবর্তে পদমর্যাদা খোঁজার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারি। যিশু দেখিয়েছিলেন যে খ্রিষ্টীয় নেতৃত্ব হল সেবা করা।


[1]

“হেড টেবিলগুলি ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে তোয়ালে এবং ওয়াশবাসিনকে বদলে দিয়েছে… এখন তোয়ালে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।“

- সি. জেন উইলকেস (C. Gene Wilkes)

উপসংহার: অন্যান্য খ্রিষ্টীয় কর্মীদের পরিচালনা করার গুরুত্ব

আপনার জীবনের শেষ পর্যায়ে, অন্যান্য খ্রিষ্টীয় কর্মীদের একজন পরামর্শদাতা বা মেন্টর হিসেবে আপনার প্রভাবই আপনার পরিচর্যা কাজের সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার হয়ে উঠতে পারে। আপনি যদি আপনার পরিচর্যার কাজের সময়কালে মাত্র ১২জন খ্রিষ্টীয় কর্মীকে শিক্ষাদান করেন, তাহলে আপনার প্রভাব সেই ১২জন এবং তারা পরবর্তীকালে যাদের শেখাবে তার দ্বারা বহুগুণ হবে।

দুঃখের বিষয়, যদিও বেশিরভাগ খ্রিষ্টীয় নেতাই শিক্ষাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে জানে, কিন্তু খুব সংখ্যক নেতাই অন্যদের তৈরি করার ক্ষেত্রে সময় অতিবাহিত করে। কেন আমরা পরিচর্যা কাজের এই দিকটি অগ্রাহ্য করি?

একটি কারণ হল মেন্টরিং বা শিক্ষাদানের মূল্য। অন্যকে তৈরি করতে মূল্যবান সময় প্রয়োজন। আমরা প্রায়শই বিশ্বাস করি যে তরুণ লিডারদের তৈরি করার কাজে সময় ব্যয় করার চেয়ে বৃহৎ গোষ্ঠীর পরিচর্যার জন্য আরো ভালোভাবে সময় ব্যয় করা যেতে পারে।

আরেকটি কারণ হল যে মেন্টরিং কাজটির সাথে হতাশা যুক্ত থাকে। এটা বলতে খুব ভালো লাগে, “আমি পরবর্তী প্রজন্মের লিডারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।” কিন্তু বাস্তব চিত্রটা সাধারণত কম উত্তেজনাপূর্ণ হয়।

বহুবার, যিশু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে শ্লথ অগ্রগতি দেখে হতাশ হয়েছিলেন। যিশুর সাথে তিন বছর থাকার পর, ফিলিপ বলেছিল, “প্রভু, পিতাকে আমাদের দেখান, তাই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট হবে” (যোহন ১৪:৮)। যিশু ৫,০০০ লোককে খাওয়ানোর কয়েক সপ্তাহ পরেই, শিষ্যরা ৪,০০০ জনতার সম্মুখীন হয়েছিল। তারা প্রশ্ন করেছিল, “কিন্তু এই জনহীন প্রান্তরে ওদের তৃপ্ত করার মতো কে এত রুটি জোগাড় করবে?” (মার্ক ৮:৪)।

প্রেরিত পৌলও একই হতাশার সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রথম মিশনারি সফরে যোহন মার্ক সঙ্গ ত্যাগ করেছিল (প্রেরিত ১৩:১৩)। দীমাকে মাসের পর মাস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর, নিঃসঙ্গ কারাগার থেকে পৌল লিখেছিলেন, “কারণ দীমা, এই জগৎকে ভালোবেসে আমাকে ত্যাগ করে” (২ তিমথি ৪:১০)।

মেন্টরিংয়ের কাজ সময়সাপেক্ষ এবং তা হতাশাজনক হতে পারে, কিন্তু এটি লিডারের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেক পরিপক্ক খ্রিষ্টীয় লিডারের আগামীদিনের লিডারদের তৈরি করা উচিত। একই সময়ে, প্রত্যেক খ্রিষ্টীয় লিডারের একজন মেন্টর দরকার যিনি কঠিন সময়ে সহায়তা প্রদান করবেন।

হাওয়ার্ড হেনড্রিকস (Howard Hendricks) বলেছেন যে প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে তিনজন ব্যক্তিকে প্রয়োজন:

১। প্রত্যেক ব্যক্তির একজন পৌলকে প্রয়োজন, একজন মেন্টর যিনি আপনাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে চ্যালেঞ্জ করেন।

২। প্রত্যেক ব্যক্তির একজন বার্ণবাকে প্রয়োজন, এমন একজন বন্ধু যিনি আপনাকে এতটাই ভালবাসেন যাতে তিনি আপনার দুর্বলতা সম্পর্কে আপনার প্রতি সততাপরায়ন হতে পারেন।

৩। প্রত্যেক ব্যক্তির একজন তিমথিকে প্রয়োজন, একজন কমবয়সী ব্যক্তি যাকে শিষ্যত্ব প্রদান করা যায় এবং মিনিস্ট্রির কাজের জন্য তৈরি করে নেওয়া যায়।

► এই প্রশ্নগুলির দ্বারা এই পাঠটি শেষ করুন:

  • “কে আমার পৌল?”

  • “কে আমার বার্ণবা?”

  • “কে আমার তিমথি?”

৩ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট

মুদ্রণযোগ্য PDF এখানে উপলভ্য।

(১) নিচের টেবিলে চারটি ঘটনার কথা উল্লেখ করুন যেখানে শিষ্যরা যিশুর পরিচর্যা কাজ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। যিশুকে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে শিষ্যরা যা যা শিখেছিলেন তা লিখুন।

(২) দুই বা তিনজনের নাম লিখুন যাদের আপনি আগামীর পরিচর্যা কাজের জন্য মেন্টর করবেন। একটি ছোটো প্যারাগ্রাফে দুটি প্রশ্নের উত্তর দিন:

  • আমি যে ব্যক্তিকে মেন্টর করছি তার মধ্যে আমি কোন যোগ্যতা বা গুণগুলি দেখতে চাই?

  • আমি যে ব্যক্তিকে মেন্টর করছি তার মধ্যে আমি ঈশ্বরের কোন কাজটি সম্পন্ন হতে দেখতে চাই? (নির্দিষ্টভাবে।)

আপনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের মেন্টর করার পদক্ষেপ শুরু করুন। পরিচর্যা কাজের সুযোগের জন্য আপনি কীভাবে তাদের প্রস্তুত করে তুলতে পারেন তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনাকে পথ দেখান।

ঘটনা শাস্ত্র শিষ্যদের জন্য শিক্ষা
একটি মন্দআত্মাগ্রস্থ ছেলেকে যিশুর সুস্থতা দান মথি ১৭:১৪-২১ বিশ্বাসের শক্তি
     
     
Next Lesson