যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
Audio Course Purchase

Search Course

Type at least 3 characters to search

Search through all lessons and sections in this course

Searching...

No results found

No matches for ""

Try different keywords or check your spelling

results found

Lesson 5: যিশুর মতো প্রচার করা

2 min read

by Randall McElwain


পাঠের উদ্দেশ্য

এই পাঠের শেষে শিক্ষার্থীরা:

(১) যে গুণগুলি যিশুকে একজন সার্থক প্রচারক করে তুলেছিল তা বুঝতে পারবে।

(২) কার্যকারী প্রচারে পবিত্র আত্মার ভূমিকা বুঝতে পারবে।

(৩) একজন পালক-প্রচারক হিসেবে বিশ্বস্ততার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে।

(৪) একটি সারমন তৈরি করবে যা প্রচারের জন্য যিশুর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে।

পরিচর্যা কাজের নীতি

কার্যকারী প্রচার কেবল মানুষের একার প্রচেষ্টার ফলাফল নয়; কার্যকারী প্রচার পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিযুক্ত হয়।

ভূমিকা

যিশু যে জনতার কাছে প্রচার করেছিলেন, তাদের প্রতিক্রিয়া দেখুন।

  • “যীশু যখন এসব বিষয় বলা শেষ করলেন তখন লোকেরা...আশ্চর্য হয়ে গেল” (মথি ৭:২৮-২৯)।

  • “লোকসকল তার উপদেশে চমৎকৃত হয়েছিল” (মার্ক ১১:১৮)।

  • “বিস্তর লোক আনন্দের সঙ্গে তাঁর কথা শুনছিল” (মার্ক ১২:৩৭)।

যিশুর প্রচার ছিল শক্তিশালী। তাঁর প্রচার শুনতে হাজার হাজার লোক জড়ো হত। নিঃসন্দেহে তাঁর প্রচারশৈলী আজ আমাদের জন্য একটি আদর্শ হওয়া উচিত। মনে রাখবেন যে পৃথিবীতে, যিশু তাঁর মানবতায় পরিচর্যা কাজ করেছিলেন। মনে করবেন না, “অবশ্যই যিশু একজন শক্তিশালী প্রচারক; কারণ তিনি ঈশ্বর ছিলেন।” পরিবর্তে, চিন্তা করুন, “যিশু—মানুষ হিসেবে—এমনভাবে প্রচার করেছিলেন যা শক্তি এবং কর্তৃত্বের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিল। তাঁর প্রচার শ্রোতাদের সত্যের দিকে আকৃষ্ট করেছিল। আমি যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারি যা আমাকে সুসমাচারের আরও কার্যকারী প্রচারক করে তুলবে?”

► কল্পনা করুন যে আপনি ৩০ খ্রিষ্টাব্দে বাস করছেন এবং যিশুকে প্রচার করতে শুনছেন। আপনি কি দেখতে এবং শুনতে আশা করবেন?

যিশু কর্তৃত্বের সাথে প্রচার করতেন

► ২ করিন্থীয় ৪:১-৬ পড়ুন।

যখন যিশু কফরনাহুমে প্রচার করেছিলেন, লোকেরা তাঁর শিক্ষায়, তাঁর কথা বলার ক্ষমতায় আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল (লূক ৪:৩২)। পর্বতের উপরে দেওয়া শিক্ষার পর, “লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গেল। কারণ তিনি শাস্ত্রবিদদের মতো নয়, কিন্তু একজন ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির মতোই শিক্ষা দিলেন” (মথি ৭:২৮-২৯)। শাস্ত্রবিদরা তাদের তত্ত্বকে সমর্থন করার জন্য অন্যান্য রব্বিদের [গুরুদের] উক্তি উল্লেখ করতেন, কিন্তু যিশু কর্তৃত্বের সাথে প্রচার করতেন।

পাস্টার হিসেবে, আমাদেরকে অবশ্যই কর্তৃত্বের সাথে প্রচার করতে হবে। আমাদের কর্তৃত্ব যিশুর কর্তৃত্ব থেকে আলাদা। তাঁর কর্তৃত্ব ছিল তাঁর নিজের মধ্যে সহজাত ছিল; কিন্তু আমাদেরকে যিশুখ্রিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে; আমাদের কর্তৃত্ব আমরা যে বার্তা প্রচার করি তা থেকে উদ্ভূত।

যিশুখ্রিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা কর্তৃত্বের সহকারে প্রচার করি

যিশু বলেছিলেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে”। পরের পদে, তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে এক বিশেষ কাজের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন, “অতএব, তোমরা যাও ও সমস্ত জাতিকে শিষ্য করো…. আর আমি নিশ্চিতরূপে, যুগান্ত পর্যন্ত নিত্য তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি” (মথি ২৮:১৮-২০)। আমাদের কর্তৃত্ব আছে, কারণ আমরা যিশুর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি।

১৭৮৩ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ সমাপ্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এবং রাজা তৃতীয় জর্জ-এর প্রতিনিধিরা প্যারিস শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য মিলিত হয়েছিলেন। রাজা তৃতীয় জর্জ সেই শান্তি চুক্তি সই করতে প্যারিসে যাননি। জর্জ ওয়াশিংটন-ও নিজে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করেননি। প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিদের তাদের শাসকের নামের সেই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার ক্ষমতা ছিল।

একইভাবে, যিশুখ্রিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা প্রচার করি। পৌল লিখেছেন, “কারণ আমরা নিজেদের বিষয়ে প্রচার করি না, কিন্তু যীশু খ্রীষ্টকে প্রভুরূপে করি এবং যীশুর কারণে নিজেদের পরিচয় দিই তোমাদের দাসরূপে” (২ করিন্থীয় ৪:৫)। পৌলের ক্ষমতাটি তার নিজস্ব ক্ষমতা ছিল না। তিনি একজন দাস ছিলেন, কিন্তু যিশুখ্রিষ্টকে প্রভু মেনে তিনি তার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

আমাদেরকে প্রদত্ত বার্তার কারণে আমরা কর্তৃত্বের সাথে প্রচার করি

আমরা যে শাস্ত্র প্রচার করি, তা-ই আমাদের কর্তৃত্বের ভিত্তি। পৌল লিখেছেন, “আমরা ধূর্ততার আশ্রয় নিই না, কিংবা ঈশ্বরের বাক্যকে বিকৃতও করি না। এর বিপরীতে, সহজসরলভাবে সত্যকে প্রকাশ করে আমরা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সব মানুষের বিবেকের কাছে নিজেদের যোগ্য করে তুলি” (২ করিন্থীয় ৪:২)। পৌল কোনো অসৎকাজ বা এমন কোনো কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যা ঈশ্বরের বাক্যের উপর তার বার্তাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

কিছু প্রচারক এমন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন যেগুলি তাদেরকে বাইবেলকে বিশ্বাস না করতে শিখিয়েছে। তারা আর কর্তৃত্বের সাথে প্রচার করেন না। পরিবর্তে, তারা সন্দেহে পরিপূর্ণ। কেন? তারা বাইবেলের কর্তৃত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন; তারা কেবল মানুষের জ্ঞানের উপর নির্ভর করেন। ঈশ্বরের দাস হিসেবে, আমাদের কর্তৃত্ব অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তিশীল হতে হবে।

যদি আপনি ঈশ্বরের বাক্যের বার্তাটি না বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনার ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করার কোনো কারণ নেই। আমরা কেবল তখনই কর্তৃত্বের সাথে প্রচার করতে পারি, যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্যের বার্তাটি বিশ্বাস করি।

আমাদের কর্তৃত্ব যিশুর থেকে এবং আমরা যে বার্তা প্রচার করি সেখান থেকে এসেছে এই বোধগম্যটি আমাদেরকে পাস্টারদের জন্য দু’টি বিপদ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে।

(১) প্রথম বিপদটি হল একটি ঔদ্ধত্য যেটি বলে, “আমি পাস্টার, আমি বস! কেউ আমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারে না।”

এই ঔদ্ধত্য মানুষকে সুসমাচার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। পৌল বলেছেন, “আমরা নিজেদের বিষয়ে প্রচার করি না, কিন্তু যীশু খ্রীষ্টকে প্রভুরূপে করি” (২ করিন্থীয় ৪:৫)। আমাদের কর্তৃত্ব যিশুর কাছ থেকে এবং ঈশ্বরের বাক্য থেকে আসে।

আমরা কোনো ভুল করলে তা স্বীকার করার নম্রতা আমাদের অবশ্যই থাকতে হবে। একজন পাস্টার একবার বলেছিলেন, “আমি কোনো ভুল করলে তা আমি কখনো মন্ডলীকে জানাই না। যদি জানাই, তাহলে তারা আমার কর্তৃত্বের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলবে।” এই পাস্টার ভুলে গেছিলেন যে আমাদের কর্তৃত্ব আমাদের নিজেদের অভ্রান্ততার উপর ভিত্তিশীল নয়; আমাদের কর্তৃত্ব ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তিশীল। আমাদের মন্ডলীকে ঈশ্বরের অন্তিম কর্তৃত্বের দিকেই এগিয়ে দেওয়া উচিত। আমার কথা গুরুত্বপূর্ণ নয়; ঈশ্বরের বাক্যই কেবল চূড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(২) দ্বিতীয় বিপদটি হল একটি মিথ্যা নম্রতা যেটি বলে, “আমি কেবলই একজন পাস্টার। আমার কোনো কর্তৃত্ব নেই। পেশাদার কাউন্সেলররাই মনোবিজ্ঞান বেশি জানেন; পৃথিবীর উৎস নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক বেশি জানেন; মানুষের যৌন চাহিদা নিয়ে সমাজতত্ত্ববিদরাই ভালো জানেন। আমি আবেগজনিত চাহিদা, সৃষ্টি, বা নৈতিকতা নিয়ে কথা বলতে পারি না কারণ আমি এইসব ব্যাপারে কোনো দক্ষ ব্যক্তি নই।”

পৌল বলেছেন, “আমরা দাস, কিন্তু যিশুখ্রিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা কর্তৃত্বের অধিকারী।” দাস হিসেবে, আমাদেরকে অবশ্যই নম্রতায় জীবন যাপন করতে হবে। কিন্তু যিশুখ্রিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে, আমাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রচার করতে হবে। যখন আমরা যথার্থভাবে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করি, তখন আমরা মহাবিশ্বের রাজার কর্তৃত্বে সেই পরিচর্যা কাজ করি।

যিশুর প্রচারগুলি অভাবী-দুঃস্থ ব্যক্তিদের কাছে সুসমাচার নিয়ে এসেছিল

যিশু তাঁর শ্রোতাদের তাদের প্রয়োজনের কথা বলতেন। যিশু যখন স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে গালীলের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন, তখন তিনি জনতার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন, কারণ তারা “বিপর্যস্ত ও দিশেহারা” ছিল (মথি ৯:৩৫-৩৬)। ইহুদিরা রোমের দাসত্বে ছিল; দরিদ্রদের উন্নতির কোনো আশাই ছিল না; কুষ্ঠরোগীরা ছিল বহিষ্কৃত; কর-আদায়কারীরা ছিল সমাজচ্যুত। এদের প্রত্যেকের কাছে, যিশু আশার কথা বলেছিলেন।

যখন আপনি মানুষের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলেন, তখন আপনি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। যদি আমি আজকে কোনো মরুভূমিতে বাস করি এবং আপনি বলেন, “আজকে আমি জীবনজল নিয়ে প্রচার করব”, আমি মন দিয়ে শুনব! যদি আমি বয়স্ক এবং দুর্বল হই এবং আপনি বলেন, “আমি আজকে সেই ঈশ্বরের ব্যাপারে প্রচার করব যিনি ঈগল পাখির মতো যৌবন দেন,” আমি শুনবই!

যিশু সবসময়ে মনে রেখেছেন যে সুসমাচার মানে হল “শুভ সংবাদ”। যাদের আশার প্রয়োজন ছিল, তাদের কাছে এই শুভ সংবাদ দিতেই তিনি এসেছিলেন। কার্যকারী প্রচার অবশ্যই আমাদের শ্রোতাদের জীবনে আশা নিয়ে আসে। যিশুর মতো, আমরাও অবশ্যই প্রশ্ন করব, “কাদের কাছে আমি প্রচার করছি? তাদের প্রয়োজনগুলি কী কী?”

কল্পনা করুন যে আপনার একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মারাত্মক রক্তপাত হচ্ছে। হাসপাতালে ডাক্তার আপনাকে গাড়ি দুর্ঘটনার নানারকম পরিসংখ্যান বিভিন্ন রঙের চার্ট বানিয়ে দেখালেন। তিনি আপনাকে স্টেথোস্কোপের ঐতিহাসিক বিকাশের কাহিনী শোনালেন। অবশেষে, তিনি আপনাকে অসতর্কভাবে ড্রাইভিংয়ের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করলেন।

ডাক্তার যা যা বললেন সেই সবই ঠিক, কিন্তু এটি আপনার চাহিদা পূরণ করে না। আপনার এমন কাউকে প্রয়োজন যে আপনার ক্ষততে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেবে এবং আপনাকে ব্যাথার ওষুধ দেবে। প্রচার অবশ্যই বাস্তবিক সত্যগুলির চেয়ে বেশি কিছু হতে হবে; প্রচারে অবশ্যই আমাদের শ্রোতাদের প্রয়োজনগুলির ব্যাপারে কথা বলতে হবে।

আমাদের এই পতিত জগতের খারাপ খবরগুলি দেখা খুবই সহজ। কিন্তু সুসমাচার আরো বেশি কিছু করে; এটি একটি রসাতলে যাওয়া পৃথিবীতে আশা নিয়ে আসে। যিশু সবসময়ে তাঁর শ্রোতাদের জন্য আশা নিয়ে এসেছিলেন। যিশু কখনো সত্যকে আপোশ করেননি, এবং আমাদেরও কখনোই সত্যের সঙ্গে আপোশ করা উচিত নয়। কিন্তু যিশু জানতেন যে সত্যকে যথার্থভাবে প্রচার করলে তা আশা নিয়ে আসে। একজন বয়স্ক প্রচারক বলেছিলেন, “তোমাকে সেখানেই আঁচড় দিতে হবে যেখানে লোকেদের চুলকায়।” আপনি যাদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন, তাদের প্রয়োজনগুলি নিয়ে আপনাকে অবশ্যই কথা বলতে হবে।

যিশুর প্রচারগুলি ছিল দোষী সাব্যস্তকারী

যিশু তাঁর শ্রোতাদের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলা দিয়ে শুরু করেছিলেন, কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য তাদের ক্ষততে সাধারণভাবে সাময়িক পট্টি লাগিয়ে দেওয়ার চেয়েও বেশি গভীর ছিল। যিশুর প্রচার তাদের বিবেককে দোষী সাব্যস্ত করেছিল এবং তাদের জীবন পরিবর্তন করেছিল।

যিশু তাঁর শ্রোতাদেরকে তাদের পাপের বিচারের বার্তা নিয়ে মুখোমুখি করে তুলতে ভয় পাননি। ব্যাভিচারিতার দোষে ধরা পড়া নারীটিকে যিশু বলেছিলেন, “তাহলে আমিও তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করি না”, কিন্তু তিনি এটাও বলেছিলেন, “এখন যাও, আর কখনও পাপ কোরো না” (যোহন ৮:১১)।

যোহন যিশুর পরিচর্যা কাজে বেথেসদা সরোবরের কাছে এক পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তির কাহিনী বলেছেন। সেই ব্যক্তিকে সুস্থ করার পরে যিশু বলেছিলেন, “দেখো, তুমি এবার সুস্থ হয়ে উঠেছ। আর পাপ কোরো না, না হলে তোমার জীবনে এর থেকেও বেশি অমঙ্গল ঘটতে পারে” (যোহন ৫:১৪)। পাপের মুখোমুখি হতে যিশু ভীত ছিলেন না।

যখন যিশু প্রচার করতেন, তাঁর শ্রোতারা দোষী সাব্যস্ত হত। যিশু একটি ধার্মিক জীবনের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করতেন, যা নিয়ে সমসাময়িক বহু প্রচারক প্রচার করেন না। যিশু কোথাও বলেননি, “আমার পিতা তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করেন না যে তোমরা তাঁর সমস্ত আজ্ঞা পালন করবে।” পরিবর্তে, যিশু বলেছিলেন, “তোমাদের ধার্মিকতা যদি ফরিশী ও শাস্ত্রবিদদের থেকে অধিক না হয়, তোমরা নিশ্চিতরূপে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না” (মথি ৫:২০)। যারা যিশুর প্রচার শুনত, তা প্রত্যেককেই দণ্ডবোধের অবস্থানে নিয়ে আসত।

যিশুর প্রচার জীবন পরিবর্তন করত

[1]আমেরিকান গৃহযুদ্ধ চলাকালীন প্রেসিডেন্ট অব্রাহাম লিঙ্কন (Abraham Lincoln) একটি মন্ডলীতে গিয়েছিলেন যেখানে পাস্টার ছিলেন ড. ফিনিয়াস গুরলে (Phineas Gurley)। একটি সভা শেষ হওয়ার পর এক বন্ধু প্রশ্ন করেন, “সারমন কেমন লাগল?” লিঙ্কন বলেছিলেন, “দুর্দান্ত উপস্থাপনা ছিল এবং এটি আমাকে সুন্দর কিছু ভাবনা দিয়েছে।”

বন্ধুটি বলেন, “তার মানে এটা তোমার পছন্দ হয়েছে?” লিঙ্কন ইতস্তত করেন এবং তারপর বলেন, “না। আমার মনে হয় রেভারেন্ড গুরলে আজকে ব্যর্থ হয়েছেন।” সেই বন্ধু হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। “তুমি এরকম বলছ কেন?” লিঙ্কন উত্তর দিয়েছিলেন, “তিনি আমাদেরকে মহান কিছু করতে বলেননি।” প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন বিশ্বাস করতেন যে একটি সারমনের প্রতি সাড়া দেবার জন্য একটি আহ্বান থাকা উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে একটি সারমন জীবন পরিবর্তন করা উচিত।

► মথি ১৮ অধ্যায় পড়ুন।

যিশু জীবন পরিবর্তন করার জন্য প্রচার করতেন। তাঁর প্রচার খুবই বাস্তবিক ছিল। মথি ১৮ “স্বর্গরাজ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক”-এর উপর যিশুর প্রচার তুলে ধরেছে। যিশু নিম্নলিখিত বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন:

  • নম্রতার গুরুত্ব (১৮:২-৬)

  • প্রলোভনের প্রতি প্রতিক্রিয়া (১৮:৭-৯)

  • হারিয়ে যাওয়া আত্মাদের প্রতি প্রতিক্রিয়া (১৮:১০-১৪)

  • আপনার বিরুদ্ধে যে পাপ করেছে তার প্রতি প্রতিক্রিয়া (১৮:১৫-২০)

  • ক্ষমাশীল মানসিকতার প্রয়োজনীয়তা (১৮:২১-৩৫)

এগুলি হল দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব সমস্যা। যিশু তাঁর শ্রোতাদের প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতেন। জীবন পরিবর্তন করার জন্য যিশু প্রচার করতেন।

এক জন্মান্ধ ব্যক্তিকে যিশু সুস্থ করেছিলেন, তারপর তিনি তাকে একটি বার্তা দিয়েছিলেন যা সেই ব্যক্তিটির জীবন অনন্তকালের জন্য বদলে দিয়েছিল।

যীশু শুনতে পেলেন তারা লোকটিকে বের করে দিয়েছে। তিনি তাকে যখন দেখতে পেলেন, তিনি বললেন, “তুমি কি মনুষ্যপুত্রে বিশ্বাস করো?”সেই ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, “প্রভু তিনি কে? আমাকে বলুন, আমি যেন তাঁকে বিশ্বাস করতে পারি।”যীশু বললেন, “তুমি তাঁকে দেখেছ। প্রকৃতপক্ষে, তিনিই তোমার সঙ্গে কথা বলছেন।”“প্রভু, আমি বিশ্বাস করি,” একথা বলে সে তাঁকে প্রণাম করল। (যোহন ৯:৩৫-৩৮)

যারা ক্ষুধার্ত ছিল, সেই লোকেদের যিশু আগে রুটি জোগান দিয়েছিলেন, তারপর তাদের কাছে সত্যের ব্যাপারে প্রচার করেছিলেন যা অনন্তকালের জন্য তাদের জীবন বদলে দিয়েছিল। “আমিই সেই জীবন-খাদ্য। যে আমার কাছে আসে, সে কখনও ক্ষুধার্ত হবে না এবং যে আমাকে বিশ্বাস করে, সে কোনোদিনই পিপাসিত হবে না” (যোহন ৬:৩৫)।

জীবন পরিবর্তনকারী বিষয় নিয়ে প্রচার করা একসাথে ঈশ্বরের বাক্যের সত্য এবং লোকেদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আসে। কার্যকারী প্রচার মানুষের প্রয়োজনের সামনে ঈশ্বরের সত্যের কথা বলে।

যখন যিশু প্রচার করতেন তিনি মন, আবেগ, এবং ইচ্ছার উপর জোর দিতেন। প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য এই তিনটিই অন্তর্ভুক্ত।

মনের সঙ্গে যিশু কথা বলেছিলেন

যখন আপনি মথি ১৮ অধ্যায়ে যিশুর সারমন পড়ছেন, আপনি সম্পর্কের উপর সবচেয়ে জ্ঞানময় একটি শিক্ষা পড়ছেন যা আগে কখনো দেওয়া হয়নি। এমন একটি সমাজের কথা কল্পনা করুন যেখানে লোকেরা পরস্পরের সাথে নম্রতার আচরণ করে। এমন একটি সমাজের কথা কল্পনা করুন যেখানে ক্ষমা করা একটি সাধারণ আচরণ। যিশু তাঁর শ্রোতাদের মনে জ্ঞানের বীজ বপন করেছিলেন।

আবেগের সঙ্গে যিশু কথা বলেছিলেন

৩৪ বার সুসমাচার পুস্তকগুলি যিশুর শ্রোতাদের বিস্মিত হওয়ার, অবাক হওয়ার এবং চমৎকৃত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। ইম্মায়ুসের পথে সেই শিষ্যরা বলেছিলেন, “আমাদের সঙ্গে পথ চলতে চলতে তিনি যখন আমাদের কাছে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করছিলেন,তখন কি আমাদের অন্তরে এক আবেগের উত্তাপ অনুভব হচ্ছিল না?” (লূক ২৪:৩২)। যারা যিশুর কথা শুনেছিল তারা তাঁর অনুগ্রহপূর্ণ বাক্যে আনন্দ অনুভব করেছিল, তাদের পাপের জন্য দুঃখিত হয়েছিল, এবং সবকিছুর উপর, ভবিষ্যতের জন্য আশাযুক্ত হয়েছিল।

ইচ্ছার সঙ্গে যিশু কথা বলেছিলেন

যিশু নিছক শ্রোতা পেয়েই সন্তুষ্ট হননি; তিনি তাদেরকে অনুসরণকারী হওয়ার জন্য আহ্বান করেছিলেন। কেবল বাহ্যিক পরিবর্তন দিয়ে যিশু সন্তুষ্ট হননি; তিনি হৃদয় এবং জীবন পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একটি পাপময় অতীতসম্পন্ন শমরীয় নারী হোক বা সতর্কভাবে বিধান মান্য করে চলা সেই ধনী যুবকটিই হোক না কেন, যিশু তাঁর সমস্ত শ্রোতাকে আহ্বান করেছিলেন যেন তারা তাদের ইচ্ছাকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে। যখন আমরা যিশুর মতো প্রচার করি, তখন আমরা আমাদের শ্রোতাদেরকে জীবনের একটি নতুন বিন্যাসে আহ্বান করব।


[1]

“কেবল নিছকভাবে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য বাইবেল দেওয়া হয়নি, বরং এটি আমাদের জীবন পরিবর্তন করার জন্য দেওয়া হয়েছে।”

- ডি. এল. মুডি (D.L. Moody)-
র লেখা থেকে গৃহিত

একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: আপনি কি সুসমাচার প্রচার করছেন?

একজন প্রচারক রোমীয় ১ অধ্যায় থেকে সমকামিতার পাপের বিরুদ্ধে প্রচার করেছিলেন। তিনি সত্য প্রচার করেছিলেন। কিন্তু কিছু একটা বাদ ছিল... সেই সভাতে ওই সময়ে এক তরুণ বসেছিল যে সমলিঙ্গের আকর্ষণ নিয়ে লড়াই করেছিল। এই তরুণটি জানে যে সমকামিতা পাপ এবং সে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা শুরু করেছিল। সে তার পাপের এই সত্যটি জানে; তার সেই সুসংবাদটি শোনা প্রয়োজন যেখানে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর প্রলোভনের উপর বিজয় দিতে পারেন।

একজন প্রচারক বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে যিশুর সতর্কবার্তার উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেই সমস্ত আইনের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন যেগুলি সহজেই বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দেয়। কিন্তু কিছু একটা বাদ ছিল... সেই সপ্তাহে এক তরুণ দম্পতি তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য এক উকিলের সাথে দেখা করেছিল. কারণ তারা সেই মতবিরোধের সমাধান করতে পারেনি যা তাদের বিবাহকে বিচ্ছেদের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। তারা জানে যে বিবাহবিচ্ছেদ পাপ; তাদের সেই সুসংবাদটি শোনা প্রয়োজন যেখানে বলা হয়েছে যে যিশু বিষণ্ণ বৈবাহিক সম্পর্ককে নিরাময় করে তুলতে পারেন।

একজন পাস্টার চিৎকার করে বলেছিলেন যে “গর্ভপাত হল এক নির্দোষ শিশুকে খুন করা।” তিনি সত্য প্রচার করেছিলেন। কিন্তু কিছু একটা বাদ ছিল... সেই সভাতে এক মধ্যবয়সী মহিলা ছিলেন, তিনি একজন অপরিপক্ক কিশোরী হিসেবে একটি গর্ভপাতের ক্লিনিকে যাওয়ার দিনের কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকেন। ঈশ্বর তার পাপ ক্ষমা করবেন কিনা সেই নিয়ে তিনি কুড়ি বছর পরেও সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন। তিনি জানেন যে গর্ভপাত পাপ; তার সেই সুসংবাদটি শোনা প্রয়োজন যেখানে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর তার অতীতের জন্য ক্ষমা প্রদান করেছেন।

যিশু যেমন কখনো সত্যকে আপস করেননি, তেমন তিনি কখনোই আশার কথা বলতেও ভুলে যাননি। তিনি জানতেন যে সুসমাচার জীবন পরিবর্তন করে। সমকামিতার আকর্ষণ নিয়ে সংঘর্ষে থাকা তরুণটিকে যিশু বলতেন, “প্রলোভনের উপর তোমাকে বিজয় দেওয়ার জন্য আমার অনুগ্রহই যথেষ্ট।” বৈবাহিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সম্মুখীন হওয়া দম্পতিটিকে যিশু বলতেন, “আমি কঠোর সঙ্গীর হৃদয়েও প্রেমের প্রবাহ দিতে পারি।” গর্ভস্থিত শিশুটির বিরুদ্ধে পাপ করা মহিলাটিকে যিশু বলতেন, আমি গর্ভপাতের পাপটিও ক্ষমা করব ঠিক যেভাবে আমি অন্যান্য পাপও ক্ষমা করেছি। যাও, আর কখনো পাপ কোরো না।”

সুসমাচারে পাপের প্রতি বিচারের বার্তা অন্তর্ভুক্ত। আমাদেরকে অবশ্যই কর্তৃত্বের সাথে বিচার সম্পর্কে প্রচার করতে হবে। কিন্তু যিশুর মতো প্রচার করতে গেলে, আমাদের কখনোই জীবন পরিবর্তনের জন্য অনুগ্রহের শক্তি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আমাদেরকে অবশ্যই এই ভগ্ন পৃথিবীতে ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসংবাদ নিয়ে আসতে হবে।

সুসমাচার সর্বদাই সুসংবাদের দু’টি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রথম, সুসমাচার আমাদেরকে বলে যে ঈশ্বর আমাদের জন্য কী করেছেন। এটি একটি আশাহীন পৃথিবীতে আশা নিয়ে আসে।

তারপর, সুসমাচার আমাদেরকে জানায় যে পবিত্র আত্মার শক্তিতে আমরা কী হয়ে উঠতে পারি। সুসমাচার কখনোই আমাদেরকে আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে ছেড়ে আসে না; এটি আমাদেরকে ঈশ্বরের সাথে আরো নিবিড়তম পথচলার জন্য আহ্বান জানায়।

যিশুর সারমনগুলি ছিল সহজ এবং অবিস্মরণীয়

যিশু কখনোই লোকেদের নিরস সত্যে ক্লান্ত করে দেননি। তিনি জানতেন কীভাবে সহজ এবং সরাসরি পদ্ধতিতে প্রচার করতে হয়। তিনি গভীর সত্য উপস্থাপন করতেন, কিন্তু সেই সাথে তিনি দর্শকাসনে থাকা সবচেয়ে অজ্ঞ ব্যক্তিটিরও আগ্রহ ধরে রাখতেন।

একজন কার্যকারী প্রচারকের লক্ষ্য তার জ্ঞানের গভীরতা দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করা নয়। ঈশ্বরের বাক্যকে সহজভাবে এবং শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করা এবং পবিত্র আত্মাকে ঈশ্বরের বাক্যের সত্য দিয়ে শ্রোতাদের দোষীসাব্যস্ত করার অনুমতি দেওয়াই একজন প্রচারকের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

যিশু কীভাবে তাঁর প্রচারগুলি সহজ এবং আকর্ষণীয় করে তুলতেন?

যিশু নানারকম গল্প বলতেন

যারা যিশুর প্রচার শুনত, তারা প্রায়শই এই কথাগুলি শুনত, “আমি তোমাদের একটা গল্প বলি।” তাঁর গল্পগুলি তাঁর দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখত এবং তাঁর বার্তার প্রতি লোকেদের কান খুলে দিত।

তিন-পয়েন্টের আউটলাইন মনে রাখার চেয়ে আমরা একটি গল্পকে বেশি সময় ধরে মনে রাখতে পারি। ভালো গল্প একটি প্রচারকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যা আমাদেরকে সেই প্রচারের মূল বিষয়বস্তুটি মনে রাখতে সাহায্য করে। একটি দুর্দান্ত গল্প মূলত প্রচারক যে বার্তাটি দিতে চাইছেন সেটিকে সারসংক্ষেপে প্রকাশ করে।

► আপনি শেষ যে গল্পটি কোনো সারমনে শুনেছেন তা নিয়ে আলোচনা করুন। এটি কি প্রচারকের বার্তাটিকে কার্যকরীভাবে উপস্থাপন করেছিল? আপনার কি গল্পটির উদ্দেশ্যটি মনে আছে? সারমনটি কি সেই গল্পটি ছাড়া একইরকম ফলদায়ক এবং স্মরণীয় হত?

যিশু সহজ ভাষা ব্যবহার করতেন

একজন শিক্ষক যত ভালোভাবে একটি কনসেপ্ট বা ধারণাকে বুঝতে পারেন, তিনি তত সহজভাবেই সেটিকে একজন শিক্ষার্থীর কাছে বিশ্লেষণ করতে পারেন। যে শিক্ষক কোনো ধারণা বোঝানোর জন্য কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেন, তিনি সাধারণত তার বোঝার অভাবটিকে ঢাকার চেষ্টা করেন। আপনি কোনোকিছু যত ভালোভাবে বুঝবেন, আপনি তত সহজেই সেটি বোঝাতে বা উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন।

যিশু জানতেন কীভাবে সত্যকে তাঁর দর্শকদের বোধগম্য ভাষায় অনুবাদ করতে হয়। তিনি কৃষকদের কাছে বীজ বপনের ব্যাপারে প্রচার করেছিলেন। তিনি মেষপালকদের কাছে ভেড়াদের ব্যাপারে প্রচার করেছিলেন। তিনি জেলেদের কাছে মাছের বিষয়ে প্রচার করেছিলেন। অনেকেই যিশুর বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছিল, কিন্তু কেউই তাঁর প্রচার শুনে একঘেয়েমি বোধ করেনি।

যিশুর বার্তা মৎস্যজীবী, কৃষক, গৃহবধূদের মতো মানুষদের কাছে বোধগম্য হয়েছিল। কিন্তু, সেইসাথে তা শাস্ত্রবিদ, ধর্মীয় নেতা, এবং রাজনৈতিক আধিকারিকদের সমস্যাগুলিকেও তুলে ধরেছিল। তাঁর প্রচার সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তির ব্যাপারে কথা বলেছিল। সহজ মানে অগভীর নয়। আমাদের প্রচারও অবশ্যই সুস্পষ্টতা এবং সহজতা সহযোগে সুসমাচারের মহান সত্যগুলোকে প্রকাশ করা উচিত।

যিশু পুনরাবৃত্ত করতেন

এক তরুণ পাস্টার তার মন্ডলীর সদস্যদের নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তাদের এটি ইতিমধ্যেই জানা উচিত; আমি দু’বছর আগেই এটা নিয়ে প্রচার করেছিলাম।” তাঁর বন্ধু তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে যিশু একই বার্তা বারবার প্রচার করতেন যতক্ষণ না সেটি তাঁর শিষ্যদের বোধগম্য হত।

সেই বন্ধু এই পাস্টারকে প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমার কি মনে হয় যে তোমার প্রচার যিশুর চেয়েও বেশি ভালো?”

“অবশ্যই না!”

“তোমার কি মনে হয় যে তোমার মন্ডলীর সদস্যরা শিষ্যদের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান?”

“না!”

“তাহলে তোমাকে সেই সত্যগুলি পুনরাবৃত্ত করে যেতেই হবে, যেমন যিশু করতেন।”

যিশু একই সত্য বারবার প্রচার করতেন। বারংবার, তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থান নিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বহুবার স্বর্গরাজ্যের বার্তা প্রচার করেছিলেন। যিশু জানতেন যে এই সত্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তাই তিনি তাঁর শ্রোতাদের কাছে বার্তাটি পৌঁছানোর জন্য যতবার প্রয়োজন ততবার প্রচার করেছিলেন।

যিশুর সারমনগুলি অকৃত্রিম ছিল

যিশুর প্রচার ছিল খাঁটি এবং অকৃত্রিম। তাঁর জীবন তাঁর বার্তার সাথে সাদৃশ্যযুক্ত ছিল। যিশু যে কেবল ধার্মিক জীবনযাপনের কথা প্রচার করতেন তা নয়; তিনি একটি ধার্মিক জীবন যাপনও করতেন। কেউই যিশুর বার্তা এবং তাঁর জীবনের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য দেখাতে পারেনি। যিশু যা প্রচার করতেন তেমনই জীবন যাপন করেছিলেন।

মনে করুন যে আপনি গাড়ি চালানো শিখতে চাইছেন। আপনি দু’জন শিক্ষকের খোঁজ পেয়েছেন যারা গাড়ি চালানো শেখান। একজন শিক্ষক যিনি কোনোদিনও গাড়ি চালাননি, কিন্তু ড্রাইভিং সম্পর্কে প্রচুর বই পড়েছেন। অপর শিক্ষকের বহু বছর ধরে একজন সুদক্ষ গাড়িচালক হিসেবে সুনাম আছে। আপনি কোন শিক্ষককে বেছে নেবেন?

[1]এবার কল্পনা করুন যে আপনি খ্রিষ্টীয় জীবন যাপন সম্পর্কে শিখতে চান। আপনি দু’জন পাস্টারকে খুঁজে পেলেন। একজন পাস্টার পাপময় জীবন যাপন করেন, কিন্তু তিনি ভালো সারমন প্রচার করেন। অন্য পাস্টার এমনভাবে জীবন যাপন করেন যা ঈশ্বরের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ককে প্রকাশ করে। আপনি কোন পাস্টারকে বেছে নেবেন?

আমাদের প্রচার অবশ্যই খাঁটি হতে হবে। আমরা যা প্রচার করি আমাদের অবশ্যই সেই জীবন যাপন করতে হবে। বহু প্রচারক দেখিয়েছেন যে কিছু সময়ের জন্য নকলি সততা সম্ভব। লোকেরা এমন একজন প্রচারকের দ্বারা প্রতারিত হতে পারে যে সততা নিয়ে প্রচার করার পাশাপাশি মন্ডলীতে দেওয়া অফারিং থেকে টাকা চুরি করছে। তারা এমন একজন প্রচারকের দ্বারা ভুল পথে চালিত হতে পারে যে নৈতিকতার শিক্ষা দিলেও নিজে ব্যাভিচারিতা করছে। তারা এমন একজন প্রচারকের দ্বারা ঠকতে পারে যে প্রেমের কথা প্রচার করলেও নিজের স্ত্রী’কে মারধোর করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, সত্য প্রকাশিত হবে। একটি শূন্য হৃদয়ের ফল হবে এমন একটি মিনিস্ট্রি যা আত্মিক শক্তিহীন। ঈশ্বর তখনই আমাদের মাধ্যমে কাজ করেন যখন আমরা তাঁকে আমাদের মধ্যে কাজ করার অনুমতি দিই।

কখনোই প্রচারের চটকদারিতে একটি পাপময় জীবনকে লুকিয়ে রাখার অনুমতি দেবেন না। কার্যকারী প্রচার এমন একটি হৃদয় থেকে শুরু হয় যে ঈশ্বরকে চেনে।


[1]

“যিশু কখনোই বলেননি, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের মিনিস্ট্রির পরিমাপ দেখে চিনবে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের ফল দেখে চিনবে’ – যা হল পিতার ইচ্ছার প্রতি তাদের আনুগত্য।”

- ক্রেগ কিনার (Craig Keener)

প্রয়োগ: মেষপালকের ভূমিকায় পাস্টার

► মার্ক ৬:৩০-৩৪ পড়ুন।

একজন পাস্টারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচয় হল সে একজন মেষপালক। “অনেক লোককে দেখতে পেলেন, তিনি তাদের প্রতি করুণায় পূর্ণ হলেন। কারণ তারা ছিল পালকহীন মেষপালের মতো। তাই তিনি তাদের বহু বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন”। যিশু ভিড় জনতার দিকে তাকিয়েছিলেন এবং একদল মেষকে দেখেছিলেন যাদের একজন মেষপালকের প্রয়োজন ছিল।

► কল্পনা করার চেষ্টা করুন যে মার্ক ৬ অধ্যায়ে উল্লিখিত সেই ৫,০০০ জনতার মধ্যে কারা থাকতে পারে। একটি তালিকা তৈরি করুন।

  • আপনার তালিকায় কি করগ্রাহীরা আছে যারা লোকেদের ঠকাত? তারা সেখানে ছিল। সেই অসৎ করগ্রাহীদের উপর দণ্ডাজ্ঞা ঘোষণা করা খুব সহজ কাজই হত, কিন্তু যিশু হারানো মেষদের দেখেছিলেন যাদের উদ্ধার পাওয়া প্রয়োজন ছিল।

  • আপনার তালিকায় কি বিচার-মনোভাবী ফরিশীরা অন্তর্ভুক্ত যারা যিশুকে একটি ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছিল? তারাও সেখানে ছিল। যিশুর পক্ষে ভিড় জনতার সামনে তাদেরকে বিব্রত করা খুবই সহজ কাজ ছিল, কিন্তু যিশু একদল জেদি মেষকে দেখেছিলেন যাদের সঠিক পথের প্রয়োজন ছিল।

  • আপনার তালিকা কি একজন অবিশ্বস্ত স্বামীকে অন্তর্ভুক্ত করে যার হৃদয় তাকে তার ব্যাভিচারিতার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে? সেও সেখানে ছিল। যিশু একটি পতিত মেষকে দেখেছিল যার সংশোধন এবং তারপর সুস্থতা প্রয়োজন ছিল।

  • আপনার তালিকায় কি এমন কিশোররা আছে যারা তাদের বাড়িতে অবাধ্য হয়েছিল এবং অজানা ভিড়ে যোগ দেওয়ার জন্য স্কুল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল? তারাও সেখানে ছিল। যিশু এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো কিছু মেষকে দেখেছিলেন যাদের পুনরায় হারিয়ে যাওয়ার আগে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন ছিল।

যখন আপনি প্রচার করেন, তখন আপনি কাদেরকে দেখেন? আপনি কি কেবল আপনার মন্ডলীর সদস্যদের ত্রুটিগুলিই দেখেন, নাকি আপনি আপনার মেষদের গভীর প্রয়োজনগুলি দেখতে পান? আপনি কি কেবল একজন রুষ্ট বোর্ড মেম্বারকে দেখেন, নাকি একটি আহত মেষকে দেখেন যে অন্যদেরকে আঘাত করে? আপনি কি কেবল একজন পিছু হঠে যাওয়া ব্যক্তিকেই দেখেন, নাকি আপনি এমন একটি মেষকে দেখেন যে পাপের কারণে সংগ্রাম করছে? যিশু দুঃস্থ মেষদের দেখেছিলেন।

► যোহন ১০:১-১৮ পড়ুন।

পাস্টার হিসেবে আমরা মেষপালক হওয়ার জন্য আহুত। একজন মেষপালক কীভাবে মেষেদের পরিচর্যা করে? যোহন ১০ অধ্যায় একটি দৃষ্টান্ত বা আদর্শ প্রদান করে।

একজন মেষপালক মেষদের নেতৃত্ব দেয়

আপনি যদি একজন মেষপালককে দেখেন, আপনি তাকে দেখবেন না যে সে মুগুর দিয়ে আঘাত করে ভেড়ার দলকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তে, একজন মেষপালক সঠিক পথে ভেড়াগুলিকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। যিশু বলেছেন, “মেষ তার গলার স্বর শোনে। সে নিজের মেষদের নাম ধরে ডেকে তাদের বাইরে নিয়ে যায়। নিজের সব মেষকে বাইরে নিয়ে এসে সে তাদের সামনে সামনে এগিয়ে চলে। তার মেষেরা তাকে অনুসরণ করে, কারণ তারা তার কণ্ঠস্বর চেনে” (যোহন ১০:৩-৪)।

সুসমাচার পুস্তকগুলি পড়ার সময়ে, বহুবার আমাদের মনে হয়েছে যে যিশু পিতর, যোহন, বা থোমাকে মুগুর দিয়ে আঘাত করলেই ভালো হত! বারবার, তারা সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু, তাদেরকে আঘাত করার পরিবর্তে যিশু এই দুর্বল, প্রতিকূলতার সাথে লড়তে থাকা শিষ্যদের তুলে ধরার জন্য এবং তাদেরকে সঠিক পথে সুস্থির করার জন্য একজন মেষপালকের যষ্ঠিই ব্যবহার করেছেন।

একজন মেষপালক হিসেবে, ঈশ্বর আপনার মন্ডলীতে যে মেষদের [সদস্যদের] দিয়েছেন, তাদেরকে কি নেতৃত্ব দেন নাকি তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ান? আপনি কি মেষদের নেতৃত্ব দেওয়া মেষপালক নাকি মেষদের বাধ্য হয়ে চলার জন্য আদেশ দেওয়া ম্যানেজার?

একজন মেষপালক তার মেষদের যত্ন নেয়

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে, “কত ভালো হত, যদি আমি একটা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা’র চাকরি করতাম যেখানে শনি-রবি দুদিন ছুটি থাকত আর বিকেল ৫টা’র পর কোনো ফোন আসত না”? এটা কিছু কিছু সময়ে শুনতে দারুণ লাগে! কিন্তু সেটা একজন মেষপালকের জীবন নয়।

একজন মেষপালক কেবল অফিসের নির্ধারিত সময়টিতেই নয়, মেষদের যখনই সাহায্যের প্রয়োজন, তখনই তাদের যত্ন নেয়, খেয়াল রাখে। সে কখনোই একটি আহত মেষকে বলে না, “আমি আবার আগামীকাল কাজে আসব, অতএব সকাল ৯টা অবধি অপেক্ষা করো।” মেষপালক মেষকে উদ্ধার করার জন্য রাতের ঘুম ছেড়েও বেরিয়ে যায়।

একইভাবে, পাস্টারও তাঁর মেষদের যত্ন নেন যখনই তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। প্রচারের চেয়েও বড় বিষয় হল আত্মিক মেষদের যত্ন নেওয়া। এটিতে প্রচার করা অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু এটিতে কাউন্সেলিং করা, ভিসিট করা, মন দিয়ে শোনা, প্রার্থনা করা, এবং কিছু কিছু সময়ে একটি আহত মেষের সাথে বসে কিছুটা সময় কাটানোও অন্তর্ভুক্ত।

হ্যাঁ, পাস্টাররা, আপনারা নিজেদেরও যত্ন নেবেন। আপনি একজন কার্যকারী মেষপালক হতে পারবেন না যদি আপনি দৈহিকভাবে, আবেগের দিক থেকে, এবং আত্মিকভাবে নিজের ক্ষয় করেন। যিশু একাকী সময় কাটাতেন, এবং আপনাকেও অবশ্যই নিজের জন্য একাকী সময় কাটাতে হবে। কিন্তু, এমন অনেক সময়ও ছিল যখন যিশু জানতেন যে মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাঁকে তাঁর নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করতে হবে।

পরিচর্যা কাজ এবং বিশ্রামের ভারসাম্য রাখা কঠিন হতে পারে। একজন বিচক্ষণ প্রচারক-পালক হিসেবে, আপনাকে অবশ্যই পবিত্র আত্মার নির্দেশনা এবং আপনার চারপাশের বিজ্ঞ পরামর্শের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। পবিত্র আত্মার কন্ঠস্বর শুনুন যখন তিনি বলছেন, “এটা বিশ্রামের এবং পুনর্নবীকরণের সময়।” আপনার স্ত্রী বা আপনার সহকর্মীর কথা শুনুন যিনি বলছেন, “তোমার কিছুটা ব্যক্তিগত বিশ্রামের সময় প্রয়োজন।” ঈশ্বর পুনর্নবীকরণের পর এক নতুন উদ্যম নিয়ে আপনার দায়িত্বে যে মেষদের দিয়েছেন তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য ফিরুন।

একজন মেষপালক তার মেষদের সুরক্ষিত রাখে

বিপদের সময় দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া এক ভাড়াটে লোকের সাথে যিশু এক উত্তম মেষপালকের তুলনা করেছিলেন যে প্রয়োজনে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তার মেষদের রক্ষা করে। ভাড়াটে লোক মেষদের বিন্দুমাত্রও যত্ন নেয় না, কিন্তু মেষপালক মেষদের জন্য তার নিজের জীবনও দিয়ে দেয় (যোহন ১০:১৩, ১৫)।

যিশু তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলিতেও তাঁর শিষ্যদের ব্যাপারে চিন্তা করেছিলেন। শেষ নৈশভোজে, তিনি তাঁদেরকে সেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন যেটির সম্মুখীন তারা দ্রুত হতে চলেছিল। গেৎশিমানী বাগানে যিশু পিতর, যাকোব, এবং যোহনকে শিক্ষা দেওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন। ক্রুশের উপর থেকে তিনি মরিয়মের দায়িত্ব যোহনকে দিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তেও একজন উত্তম মেষপালক তাঁর মেষদের জন্য যত্নশীল ছিলেন।

পৌল ইফিষীয় মন্ডলীর প্রাচীনদেরকে মেষপালক হিসেবে পরিচর্যা করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের কাজ ছিল সেই লোকেদের যত্ন নেওয়া যাদেরকে যিশুর মূল্যবান রক্ত দিয়ে কেনা হয়েছিল। পরবর্তী পদে, পৌল হিংস্র নেকড়েদের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন যা মেষপালকে আক্রমণ করে। মেষপালকরা মেষপালকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দায়বদ্ধ ছিল (প্রেরিত ২০:২৮-৩১)।

একজন প্রচারক-পালক হিসেবে, আপনি কি সেই মেষদের সুরক্ষিত রাখেন যাদেরকে ঈশ্বর আপনার মন্ডলীতে রেখেছেন? আপনি কি তাদেরকে ধর্মতত্ত্বগত ভুল থেকে, তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক এবং পরিবারের উপর আসা আঘাত থেকে, এবং অন্যান্য আত্মিক আঘাত থেকে রক্ষা করেন? আপনি কি মেষপালক নাকি একজন ভাড়া করা লোক?

পরের রবিবারে প্রচার করার আগে, আপনার মেষদের কী প্রয়োজন আছে তা ঈশ্বরের কাছে জানতে চান। ঈশ্বরকে বলুন তিনি যেন আপনাকে আপনার মেষপালের মধ্যে থাকা দুঃখার্ত হৃদয়গুলিকে দেখিয়ে দেন। যখন আপনি প্রচার করেন, তখন সেই মেষদের দেখুন যারা হেনস্থা এবং অসহায়তা বোধ করে এবং যাদের একজন ঈশ্বরীয় মেষপালকের প্রেমের প্রয়োজন রয়েছে।

একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: “ধিক!”

► মথি ২৩:১-৩৯ পড়ুন।

যিশু “ধিক্ তোমাকে” কথাটি ব্যবহার করেছিলেন যখন তিনি সেই শহরগুলির উল্লেখ করেছিল যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল (মথি ১১:২১), সেই সমস্ত ফরিশী এবং শাস্ত্রবিদদের উদ্দেশ্যে এই কথাটি বলেছিলেন যারা লোকেদেরকে ভুল পথে চালনা করেছিল (মথি ২৩:১৩-২৯), এবং যিহুদার ব্যাপারে বলেছিলেন যিনি যিশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল (মার্ক ১৪:২১)। আমরা কখনো কখনো এই “ধিক্‌” কথাটি রাগত স্বরে পড়ি যা যিশুর প্রেমের কথা ভুলিয়ে দেয়, এমনকি তাদের প্রতি প্রেমের কথাও ভুলিয়ে দেয় যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

ধিক্‌ শব্দটির মধ্যে একটি বিচার রয়েছে, কিন্তু সেখানে একটি দুঃখও রয়েছে। যাদের বিচার করা হয়েছে, তাদের জন্য “ধিক্‌” শব্দটি বিচার এবং “দুঃখ ও করুণা” – উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। এটি “তাদের প্রতি যিশুর দুঃখকে প্রকাশ করেছে যারা তাদের অবস্থার প্রকৃত দুর্দশা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়”।[1] “ধিক্‌” শব্দটি গভীর দুঃখের পাশাপাশি সতর্কতাও প্রকাশ করে।

যিশু তাঁর প্রিয় শহরের ভাগ্যের জন্য রোদন করে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তাঁর রায় ঘোষণার সমাপ্তি করেছিলেন। “হায়! জেরুশালেম, জেরুশালেম, তুমি ভাববাদীদের হত্যা করো ও তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয়, তাদের পাথরের আঘাত করে থাকো। কতবার আমি তোমার সন্তানদের একত্র করতে চেয়েছি, যেমন মুরগি তার শাবকদের নিজের ডানার তলায় একত্র করে, কিন্তু তোমরা ইচ্ছুক হওনি”। যিশু সেই শহরের ভাগ্যের জন্য কেঁদেছিলেন যে শহরটি শীঘ্রই তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করবে (মথি ২৩:৩৭ এবং লূক ১৯:৪১)।

বিচার নিয়ে প্রচার করার জন্য এটি আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত। আমাদের প্রচারে অবশ্যই পাপের বিরুদ্ধে সতর্কতা এবং যারা অনুতাপ করা প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের উপর বিচারের বার্তা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের বার্তা যেন অবশ্যই পাপের প্রতি আমাদের দুঃখকে প্রকাশ করে; পাপীর প্রতি আমাদের রাগকে নয়।

এক অবাধ্য কিশোর নরকের উপর একটি প্রচার শুনে বাড়ি ফিরেছিল। তার বাবা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “কীরে, সারমন কেমন লাগল?” ছেলেটি উত্তর দিয়েছিল, “আমার এটা মোটেও পছন্দ হয়নি। আমার মাথা গরম হয়ে গেছে!” পরের সপ্তাহে, ছেলেটি আরেকজন প্রচারককে নরকের উপর প্রচার করতে শোনে। তার বাবা আবার জানতে চান, “কীরে, সারমন কেমন লাগল?” ছেলেটি উত্তর দিয়েছিল, “আমি অবশ্যই যিশুর সেবা করব। আমি কোনোমতেই ওই জঘন্য কষ্টদায়ক জায়গায় যেতে চাই না!”

বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। “গত সপ্তাহে, নরকের উপর একটা সারমন শুনে তুই রেগে গিয়েছিলিস। এই সপ্তাহে, নরকের উপর একটা সারমন তোকে অনুতপ্ত করেছে। পার্থক্যটা কী?” ছেলেটি বলেছিল, “এই প্রচারক যখন আমাকে নরক নিয়ে সতর্ক করছিলেন, তখন তিনি নিজেও কাঁদছিলেন।”

যখন আপনি বিচারের বিষয়ে কথা প্রচার করেন, তখন কি আপনি কাঁদেন? যখন আপনি নরকের উপর কোনো সারমন তৈরি করেন, তখন কি আপনি কাঁদেন? আপনি কি এমন একজন মেষপালক যিনি তাঁর মেষদের ভালোবাসেন, এমনকি সেইসময়েও ভালোবাসেন যখন আপনাকে অবশ্যই বিচারের ব্যাপারে সতর্কতা দিতে হবে?


[1]Martin H. Manser, Dictionary of Bible Themes. (London: Martin Manser, ২০০৯). এছাড়াও দেখুন, Joel B. Green and Scot McKnight, Dictionary of Jesus and the Gospels. (Westmont, Illinois: InterVarsity Press, ১৯৯২).

উপসংহার: প্রচারে পবিত্র আত্মার ভূমিকা

প্রচারক হিসেবে, আমাদের শ্রোতাদের প্রতি দণ্ডবোধ নিয়ে আসার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র আত্মার শক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। আমরা যদি আবেগজনক আবেদন তৈরি করতে মানব নির্মিত কৌশল ব্যবহার করি, আমরা হয়ত দ্রুত ফলাফল দেখতে পাব, কিন্তু আত্মিক ফলাফলগুলির অভাব থাকবে। একমাত্র পবিত্র আত্মাই আমাদের শ্রোতাদের মধ্যে চিরস্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারেন।

► ১ করিন্থীয় ২:১-১৬ পড়ুন।

পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে আত্মিক পরিবর্তন কেবল পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমেই ঘটে। আরেয়পাগের সভায় দার্শনিকদের সাথে তর্কবিতর্ক করার পরে তিনি এথেন্স ছেড়ে করিন্থে এসেছিলেন (প্রেরিত ১৭:১৬-১৮:১)। করিন্থে তিনি স্থির করেছিলেন যে তিনি কোনো উচ্চমাত্রার বাক্য ব্যবহার করবেন না বা জ্ঞানগর্ভ কথা বলবেন না, এবং তিনি যিশুখ্রিষ্ট এবং তাঁর ক্রুশারোপণ ছাড়া অন্যকিছু প্রচারও করবেন না। তিনি “পবিত্র আত্মার পরাক্রমের প্রদর্শনযুক্ত” প্রচার করেছিলেন (১ করিন্থীয় ২:১-৫)।

পৌল জানতেন যে যারা আত্মিক তাদের কাছে পবিত্র আত্মা আত্মিক সত্যগুলি প্রকাশ করেন (১ করিন্থীয় ২:১৩)। পৌল শিক্ষাকে মূল্য দিতেন; তিনি নিজে একজন মহান শাস্ত্রবিদ ছিলেন। তিনি জনসমক্ষে কার্যকারী বক্তৃতার গুরুত্ব জানতেন, তিনি মহান গ্রিক বাগ্মীদের বক্তব্য অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি জানতেন কীভাবে যৌক্তিক বক্তব্য গড়ে তুলতে হয়; রোমীয় অধ্যায়টি হল যৌক্তিক বিন্যাসের একটি অতুলনীয় রচনা। কিন্তু সবকিছুর উপরে, পৌল পবিত্র আত্মার শক্তিকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি জানতেন যে প্রকৃত দণ্ডবোধ কেবল পবিত্র আত্মার কাজের দ্বারাই আসে।

পৌল করিন্থীয় মন্ডলীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে “এই সম্পদ আমরা মাটির পাত্রে ধারণ করছি, যেন এরকম প্রত্যক্ষ হয় যে সর্বগুণে উৎকৃষ্টতর এই পরাক্রম আমাদের থেকে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে” (২ করিন্থীয় ৪:৭)। পাত্রটি মহাসম্পদ নয়! মিনিস্ট্রি লিডার হিসেবে আমরা হলাম ভগ্ন পাত্র যা মাটি দিয়ে নির্মিত। কিন্তু, আমরা যাদের পরিচর্যা করছি, তাদের কাছে সেই মহাসম্পদ অর্থাৎ সুসমাচার বহন করে নিয়ে যাওয়ার একটি অপূর্ব সুযোগ আমাদের কাছে আছে।

এটি হল মিনিস্ট্রি লিডারদের জন্য শক্তিশালী সতর্কতা। পাত্রটি যে মহাসম্পদ ধারণ করেছে সেটির পরিবর্তে পাত্রটির উপর মনোনিবেশ করা সহজ। আমরা বার্তার চেয়েও বেশি মনোযোগ আমাদের উপস্থাপনায় দিই; আমরা মহাসম্পদের চেয়েও বেশি মনোযোগ সেই পাত্রটিকে দিই। পৌল আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে ঈশ্বর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাটির পাত্র ব্যবহার করেছেন, এটি বোঝানোর জন্য যে শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর নিজে; আমরা নই। ঈশ্বরের শক্তির পথে আমাদের কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। যে গৌরব তাঁর একার, আমাদের কখনোই সেই গৌরব নেওয়া উচিত নয়। পবিত্র আত্মার শক্তিতেই আমাদের প্রচার করতে হবে।

৫ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট

মুদ্রণযোগ্য PDF এখানে উপলভ্য।

(১) মথি লিখিত সুসমাচারে পাঁচটি প্রধান সারমন রয়েছে। প্রতিটি সারমন পড়ুন এবং সেই সারমনের একটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করুন যা এটিকে কার্যকারী করে তুলেছে এবং সেটি নিচের টেবিলে লিখুন। এই অ্যাসাইনমেন্টে কোনো ঠিক বা ভুল উত্তরের ব্যাপার নেই। প্রশ্ন করুন, “কীভাবে যিশু আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন, বা তাঁর বার্তাটি আমাকে মনে রাখতে এবং প্রয়োগ করতে সাহায্য করেছেন?”

(২) যখন আপনি আপনার পরবর্তী সারমনটি প্রস্তুত করবেন, তখন যিশুর সারমনে আপনি যে বৈশিষ্ট্যগুলি পেয়েছেন সেগুলি পর্যালোচনা করুন। কার্যকারীভাবে সংযোগ স্থাপনের জন্য তাঁর সারমনগুলিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করুন। ক্লাসের অন্যদের সাথে এই সারমনটি আলোচনা করুন। এই প্রশ্নটি দিয়ে সারমনটির মূল্যায়ন করুন, “আমি কি আমার সারমনটিকে যিশুর আদর্শে সাজিয়েছি?”

সারমন বৈশিষ্ট্যসমূহ

পর্বতের উপর প্রচার

(মথি ৫-৭)

 

প্রেরিতদের প্রেরণ

(মথি ১০)

 

স্বর্গরাজ্যের রূপক

(মথি ১৩)

 

স্বর্গরাজ্যের জীবন

(মথি ১৮)

 

জলপাই পর্বতের উপর শিক্ষাদান

(মথি ২৪-২৫)

 
Next Lesson