(১) বুঝতে পারবে যে পরিচর্যা কাজের জন্য যিশুই আমাদের আদর্শ।
(২) ঈশ্বর যাদেরকে আহ্বান করেছেন তাদের প্রস্তুত করে তোলার কাজে তাঁর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেবে।
(৩) ঈশ্বর তার জন্য যে ভূমিকা নির্বাচন করেছেন সেটির জন্য তাঁর আহ্বানের প্রতি সমর্পণ করবে।
(৪) প্রলোভনের উপর বিজয়লাভের জন্য যিশুর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।
এই পাঠের জন্য প্রস্তুতি
মথি১-৪, লূক১-৩, এবং যোহন ১ পড়ুন।
পরিচর্যা কাজের নীতি
ঈশ্বর পরিচর্যা কাজের জন্য যাদের ডেকেছেন তাদের তিনি সেটিতে প্রস্তুত করে তোলেন।
ভূমিকা
এই কোর্সে আমরা আমাদের আজকের পরিচর্যা কাজের জন্য একটি আদর্শ হিসেবে যিশুর বিষয়ে অধ্যয়ন করব। যিশু বলেছেন, “আমি তোমাদের কাছে এক আদর্শ স্থাপন করেছি, যেন আমি তোমাদের প্রতি যা করলাম, তোমরাও তাই করো” (যোহন ১৩:১৫)। যিশুর পার্থিব জীবন তাঁর অনুসরণকারীদের জন্য একটি আদর্শ ছিল।
পৌল এই নীতিটি বুঝতে পেরেছিলেন। যখন পৌল ফিলিপীতে অবস্থিত খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা শুনেছিলেন, তখন তিনি যিশুর উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। “খ্রীষ্ট যীশুর যে মনোভাব ছিল, তোমাদেরও ঠিক তেমনই হওয়া উচিত” (ফিলিপীয় ২:৫)। পৌল জানতেন যে যদি এই খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা যিশুর নিদর্শন অনুসরণ করে, তাদের নম্রতা মন্ডলীতে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবে।
ডেভিড প্লটজ (David Plotz) নামের এক ইহুদি সাংবাদিক আফ্রিকা সফরে গিয়ে মালাউই (Malawi) বিমানবন্দরে আটকে পড়েছিলেন। সেখানে তার সাথে এক আফ্রিকান পাস্টারের আলাপ হয় যিনি তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন, দু’দিন ধরে খাবার খাইয়েছিলেন, এবং তার কাছে মুক্তিদাতা যিশুর সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ডেভিড প্লটজ পরে লিখেছেন, “সেই ব্যক্তি যা যা বিশ্বাস করেন আমি সেগুলোর কোনোটাই বিশ্বাস করি না, কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাসে আমি মুগ্ধ। তিনি অনুভব করেন যে খ্রিষ্ট চালিত করছিলেন, এই কারণেই তিনি এক অপরিচিত ব্যক্তিকে নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলেন, খাবার ও পোশাক দিয়েছিলেন।” এই আফ্রিকান পাস্টার বুঝতে পেরেছিলেন যে আমরা যিশুর নিদর্শন অনুসরণ করার জন্য আহুত।
এই কোর্সটি যিশুর জীবনের একটি বিস্তারিত অধ্যয়ন নয়। পরিবর্তে, আমরা যিশুর জীবনের এমন দিকগুলির উপর দৃষ্টিপাত করব যা আজকের পরিচর্যা কাজের জন্য একটি মডেল বা আদর্শ প্রদান করে। আমরা যিশুর উদাহরণের উপর ভিত্তি করে আমাদের পরিচর্যা কাজকে বিন্যস্ত করতে শিখব।
প্রথম পাঠে আমরা পরিচর্যা কাজের জন্য যিশুর প্রস্তুতি দেখব। এটি সেই নীতিকে চিত্রিত করে যেটির মাধ্যমে ঈশ্বর যে পরিচর্যা কাজের জন্য প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে আহ্বান করেছেন, তাদের প্রত্যেককে তিনি সেই পরিচর্যা কাজে প্রস্তুত করে তোলেন।
ঈশ্বর তাঁর দাসের পারিবারিক পটভূমি প্রস্তুত করেছিলেন
► আপনার পারিবারিক পটভূমি এবং জীবনের শুরুর দিকের কথা চিন্তা করুন। ঈশ্বর কীভাবে আপনাকে পরিচর্যা কাজের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করে তোলার জন্য আপনার পটভূমিকে ব্যবহার করেছেন?
সুসমাচার পুস্তকের বংশতালিকাগুলি দেখায় যে একজন সার্বভৌম ঈশ্বর যিশুর জন্মের কয়েক শতাব্দী আগে তাঁর দাসের জন্য পথ প্রস্তুত করেছিলেন। যিশুর জন্মের অনেক আগে, ঈশ্বর তাঁর আগমনের পথ প্রস্তুত করেছিলেন।
বংশতালিকাগুলি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়, “যিশু কে ছিলেন?” বংশতালিকাগুলি অব্রাহাম এবং দায়ূদের গুরুত্ব দেখায়। অব্রাহাম যিশুর বংশবৃত্তান্তে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঈশ্বর অব্রাহামকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “পৃথিবীর সব লোকজন তোমার মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করবে” (আদিপুস্তক ১২:৩)। এই প্রতিজ্ঞা নাসরতীয় যিশুর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়েছিল।
বংশতালিকায় দায়ূদ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঈশ্বর দায়ূদকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তাঁর সিংহাসন চিরস্থায়ী হবে (২ শমূয়েল ৭:১৬)। যখন যিশুর জন্ম হয়েছিল, তখন দায়ূদের কুলের একজন রাজা সিংহাসনে বসার পর ৫০০ বছর পেরিয়ে গেছে। মথি এবং লূক দেখিয়েছেন যে যিশু ছিলেন দায়ূদকে ঈশ্বরের করা প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা।
যিশু ছিলেন দায়ূদ-সন্তান (মথি ১:১-১৭)
গ্রিক ভাষায় লেখা নতুন নিয়মে, মথির লেখা সুসমাচারের প্রথম দু’টি শব্দ মথির প্রথম পাঠকদের আদিপুস্তক (আদিপুস্তক ২:৪, আদিপুস্তক ৫:১) বইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিত। আদিপুস্তক যেমন সৃষ্টির উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব প্রদর্শন করে, তেমনি মথির সুসমাচার ইতিহাসের উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব প্রদর্শন করে। মথির সুসমাচারে উল্লিখিত বংশতালিকা দেখায় যে ইস্রায়েলের সমস্ত ইতিহাসই মশীহের অর্থাৎ মুক্তিদাতার জন্মের দিকে পরিচালিত হয়েছিল।
মথি’র বংশতালিকায় ১৪টি নামের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। এটি একটি সাধারণ ইহুদি স্মরণতালিকা ছিল। চিরাচরিত গ্রুপগুলি শিক্ষার্থীদের এই সমস্ত নামের দীর্ঘ তালিকা মুখস্ত করতে সাহায্য করত। মথির লেখা বংশতালিকার পাঠকরা জানতেন যে এই তালিকায় অব্রাহাম এবং যোষেফের মধ্যেকার প্রতিটি পূর্বপুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মথির লেখায় পুনরাবৃত্ত বাক্যাংশ, “-এর পিতা ছিলেন” যেকোনো পূর্বপুরুষকে নির্দেশ করতে পারে। ইহুদি বংশতালিকা বহুক্ষেত্রেই কিছু প্রজন্মকে এড়িয়ে যায়। মথি যিশুর বংশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন এবং অন্যান্য নামগুলি বাদ দিয়েছেন।
যেহেতু মথি কিছু প্রজন্মকে বাদ দিয়েছেন, তাই যে নামগুলি তিনি রেখেছেন সেগুলি নির্দিষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মথি এই নামগুলি একটি উদ্দেশ্যে নির্বাচন করেছিলেন। যেমন, মথি চারজন নারীকে তালিকাভুক্ত করেছেন। এটি ইহুদি বংশতালিকায় বিরল ছিল। তালিকাভুক্ত নারীদের এমন যোগ্যতা ছিল না যা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। রাহব এবং রূত ছিলেন বিদেশী। তামর, রাহব, এবং বৎশেবা লজ্জাজনক যৌনতার সাথে সংযুক্ত ছিলেন।
একইভাবে, এই তালিকার কিছু পুরুষেরও মর্যাদাহানির মতো বিষয় ঘটেছিল। যিহুদা তামরের সাথে লজ্জাজনক আচরণ করেছিলেন। যিয়োহাখীনের বংশ ইস্রায়েলের সিংহাসন থেকে বঞ্চিত হয়েছিল (মথি ১:১২, যিরমিয় ২২:৩০)। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, মথি দায়ূদকে তাঁর মহান কৃতিত্বের দ্বারা নয়, বরং ঊরীয়ের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক থেকে জন্ম হওয়া শলোমনের পিতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এই নামগুলি যিশুকে পাপী মানবজাতির সাথে চিহ্নিত করে। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে একটি নিষ্কলঙ্ক বংশের মাধ্যমে নয়, বরং সাধারণ পাপীদের বংশধর হিসেবেই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন। ইহুদি নেতারা যিশুর অসম্মানজনক জন্মকে উপহাস করেছিল এবং তাঁকে অযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল (যোহন ৮:৪১, ৪৮)। মথি দেখিয়েছেন যে ঈশ্বর তাঁর মহান উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পাপময় বংশতালিকা থেকেও একজন ব্যক্তিকে ব্যবহার করতে পারেন।
► আমাদের সংস্কৃতিতে একজন ব্যক্তির পারিবারিক পটভূমির কোন বিষয়গুলি আমাদেরকে ভাবাতে পারে যে সেই ব্যক্তিটির মর্যাদা কম রয়েছে?
ঈশ্বর প্রায়শই তাঁর কাজের জন্য অপ্রত্যাশিত পারিবারিক পটভূমির মানুষদের আহ্বান করেন। কেউই তার পারিবারিক পটভূমির জন্য বঞ্চিত বা অব্যবহারযোগ্য নয়। কোনো ব্যক্তির পারিবারিক পটভূমির যে বিষয়গুলির জন্য আমরা তাকে মর্যাদাহীন বলে মনে করি, তা ঈশ্বরের কাছে একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়।
যিশু ছিলেন আদম-সন্তান (লূক ৩:২৩-৩৮)
মথি অব্রাহাম পর্যন্ত “ইহুদিদের রাজা”-র বংশের সন্ধান করেছেন। লূক আদম পর্যন্ত যিশুর বংশের পরিচয় উল্লেখ করেছেন। এটি যিশুকে “মনুষ্যপুত্র” হিসেবে লূকের জোর দেওয়ার সাথে মানানসই। লূকের বংশতালিকা যিশুর মানবতার উপর জোর দেয়। লূক যিশুর প্রলোভনের কাহিনী তুলে ধরার ঠিক আগেই বংশবৃত্তান্ত উল্লেখ করেছেন। এটি পাঠককে মনে করিয়ে দেয় যে প্রথম আদম ঠিক যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, দ্বিতীয় আদম অর্থাৎ যিশু ঠিক সেখানেই সফল হয়েছেন।
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: মথি এবং লূকের দেওয়া বংশতালিকা
মথি ১ অধ্যায়ে এবং লূক ৩ অধ্যায়ে দেওয়া যিশুর বংশতালিকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মথি অব্রাহাম থেকে শুরু করে রাজা শলোমন হয়ে যোষেফ পর্যন্ত এসেছেন। লূক বংশতালিকাটি যোষেফ থেকে শুরু করে নাথন (দায়ূদের পুত্রদের মধ্যে একজন) হয়ে আদম পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।
বংশতালিকাগুলি অব্রাহাম এবং দায়ূদের মধ্যে একই রয়েছে। তবে দায়ূদ এবং যোষেফের মধ্যে দু’টি বংশতালিকা আলাদা পারিবারিক ধারা তুলে ধরে। এই পার্থক্যের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল মথি যোষেফের পূর্বপুরুষ এবং লূক মরিয়মের পূর্বপুরুষ লিপিবদ্ধ করেছেন।[1]
মথিতে উল্লিখিত যোষেফের বংশধারা হল একটি রাজকীয় বংশবৃত্তান্ত যা শলোমনের মাধ্যমে এসেছে। এটি মথির যিশুকে রাজা হিসেবে প্রকাশ করার বিষয়টির সাথে মানানসই। এটি যিশুর বৈধ বা আইনসম্মত বংশপরিচয় - যা অবশ্যই যোষেফের মাধ্যমে আসতে হবে।
লূকে উল্লিখিত মরিয়মের বংশবৃত্তান্ত হল একটি “শারীরিক” বংশবৃত্তান্ত যা দায়ূদের পুত্র নাথনের মাধ্যমে এসেছে। এই বংশতালিকাটি লূকের যিশুকে “মনুষ্যপুত্র” হিসেবে জোর দেওয়ার সাথে মানানসই। এটি দেখানোর জন্য লূক মরিয়মের মাধ্যমে যিশুর এই শারীরিক বংশতালিকাটি উল্লেখ করেছেন। তিনিও “যোষেফের পুত্র” কথাটি দিয়েই শুরু করেছেন কারণ ইহুদি বংশতালিকা পুরুষের নাম দিয়েই শুরু হয়, এমনকি কোন নারীর বংশতালিকার ক্ষেত্রেও।
মরিয়মের বংশতালিকা দায়ূদের সাথে রক্তের সম্পর্কটি তুলে ধরে। যোষেফের বংশতালিকাটি শলোমনের মাধ্যমে সিংহাসনের অধিকার প্রদান করে।
ঈশ্বর তাঁর দাসের পারিবারিক পটভূমি প্রস্তুত করেছিলেন (ক্রমশ)
যিশু ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র (যোহন ১:১-১৮)
যোহনের সুসমাচার একটি ঐশ্বরিক বংশপরিচয় দিয়ে শুরু হয়েছে; যিশু ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র। “যিশুর জীবন... জন্মের মুহূর্তে শুরু হয়নি। তিনি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটি পূর্বাবস্থা থেকে পৃথিবীতে এসেছিলেন।”[1]
পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েলের লোকেরা তাঁবুর উপর একটি মেঘ হিসেবে ঈশ্বরের উপস্থিতি দেখতে পেত। এখন যিশুখ্রিষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর দৈহিকভাবে আমাদের মধ্যে বাস করেন (যোহন ১:১৪)। ঈশ্বরের ঐশ্বরিক মহিমা এখন মানুষের আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
বাক্য ছিল অনন্ত: “সেই বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন” (যোহন ১:১)। পিতা এবং পুত্র অনন্তকালীন সহভাগিতায় বাস করতেন।[2] যিশু আমাদের পৃথিবীতে কেন এসেছিলেন? পিতাকে প্রকাশ করার জন্য। কেউই পিতাকে দেখেনি, কিন্তু যিশু পিতাকে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন (যোহন ১:১৮)। যখন আমরা যিশুকে দেখি, আমরা তখন পিতাকে দেখি (যোহন ১৪:৯)।
বর্তমানে অনেকেই যিশুকে একজন প্রেমময় বন্ধু এবং পিতাকে একজন কঠোর বিচারক হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু, যোহন ১ অধ্যায় দেখায় যে যিশুর চরিত্র পিতার চরিত্রেরই অনুরূপ। যখন আমরা যিশুকে দেখি, আমরা তখন পিতাকেই দেখি।
[1]J. Dwight Pentecost, The Words and Works of Jesus Christ. (Grand Rapids: Zondervan, ১৯৮১), ২৮
[2]যোহন ১:৩ যিহোবার সাক্ষীদের দাবিকে অস্বীকার করে যে যিশু একজন সৃষ্ট জীব ছিলেন। সৃষ্টির সময় যিশু উপস্থিত ছিলেন। “তাঁর মাধ্যমে সবকিছু সৃষ্ট হয়েছিল; সৃষ্ট কোনো বস্তুই তিনি ব্যতিরেকে সৃষ্ট হয়নি।
ঈশ্বর তাঁর দাসকে এক অলৌকিক জন্মের মাধ্যমে প্রস্তুত করেছিলেন
যিশু আনুমানিক ৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে যিহুদার বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[1] যোষেফ রোমীয় জনগণনায় নাম নথিভুক্ত করতে বেথলেহেমে গিয়েছিলেন। জনগণনার উদ্দেশ্য ছিল রোমের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রদেশগুলির জন্য ট্যাক্স রেকর্ড বজায় রাখা।
রোমের স্বাভাবিক পদ্ধতি ছিল লোকেরা যারা যে শহরে বাস করত এবং কাজ করত সেই হিসেবে তাদের নাম নথিভুক্ত করা। তবে, একটি ইহুদি জনগোষ্ঠীর সাথে শান্তি বজায় রাখার জন্য যারা দ্রুত বিদ্রোহ করত, রোম যিহুদার প্রদেশকে ইহুদি পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের গোষ্ঠীগত পৈতৃক এলাকায় নাম নথিভুক্ত করার অনুমতি দেয়। ফলস্বরূপ, যোষেফ এবং মরিয়ম নাসরত থেকে বেথলেহেম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার পথ যাত্রা করেছিলেন। যদিও নথিভুক্ত করার কাজে কেবল পরিবারের প্রধান পুরুষকে প্রয়োজন ছিল, তবুও যোষেফ মরিয়মকে বেথলেহেমে নিয়ে এসেছিলেন। সম্ভবত জোষেফ নাসরতের ছোটো গ্রামে পরনিন্দা-পরচর্চা করা প্রতিবেশীদের মাঝে মরিয়মকে একা ছেড়ে যেতে চাননি।
ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জাগতিক ঘটনাগুলির মাধ্যমে কাজ করেন। সার্বভৌমভাবে ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা পরিপূরণ করার জন্য একজন পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী সম্রাটকে একটি ইহুদি জনগণনা “মনস্থ” করতে প্রবুদ্ধ করেছিলেন। “রাজার হৃদয় সদাপ্রভুর হাতে ধরা এমন এক জলপ্রবাহ যা তিনি তাদের সবার দিকে প্রবাহিত হতে দেন যারা তাঁকে সন্তুষ্ট করে” (হিতোপদেশ ২১:১)। ঈশ্বরের রাজ্যের কর্মী হিসেবে, এটি আমাদের আবশ্যিকভাবে এক আত্মবিশ্বাস দেয় যে ঈশ্বর তাঁর সমস্ত উদ্দেশ্যই সাধন করেন, এমনকি যখন দেখা যায় যে মন্দ লোকেদের হাতে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রয়েছে।
এই জনগণনা হল অনেকগুলি উদাহরণের মধ্যে একটি উদাহরণ যেখানে দেখানো হয়েছে যে ঈশ্বর কীভাবে যিশুর জন্মের জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করেছিলেন। ঈশ্বর গ্রিক সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক পটভূমি, রোম সাম্রাজ্যের আইনব্যবস্থা এবং ইহুদি বিশ্বাসের ধর্মীয় নীতির মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীকে মশীহ অর্থাৎ মুক্তিদাতার জন্য প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কাজ করেছিলেন। এই পটভূমি অধ্যয়ন করতে অনুগ্রহ করে শেফার্ডস গ্লোবাল ক্লাসরুম কোর্সের পাঠ ১ “নতুননিয়মঅন্বেষণ (Exploring the New Testament)” দেখুন।[2]
মেষপালকদের দেখা করতে আসা (লূক ২:৮-২০)
যিশুর জন্মের ঘোষণাটি পাওয়া প্রথম মানুষেরা ছিল বেথলেহেমের বাইরে থাকা মেষপালকেরা। এটি উল্লেখযোগ্য কারণ প্রথম শতাব্দীর অধিকাংশ ইহুদিরা মেষপালকদের এড়িয়ে চলত। মেষপালকদের সামাজিক মর্যাদা এতটাই নিম্ন ছিল যে তাদের সাক্ষ্য ইহুদি আদালতে গ্রহণ করা হত না। মেষপালকদের উপর দৃষ্টিপাত করার মাধ্যমে লূক বুঝিয়েছেন, “যদি মেষপালকদের স্বাগত জানানো হয়, তাহলে ঈশ্বরের রাজ্যে যে কেউ স্বাগত!” স্বর্গদূত মেষপালকদের বলেছিলেন, “আমি তোমাদের কাছে এক মহা আনন্দের সুসমাচার নিয়ে এসেছি—এই আনন্দ হবে সব মানুষেরই জন্য” (লূক ২:১০)।
সুসমাচার কোনো একক জাতি (ইস্রায়েল) বা কোনো একক সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; সুসমাচার সব মানুষের জন্য। এই বিষয়টি লূকের গোটা সুসমাচার জুড়েই দেখা যায়। লূক মহিলাদের মধ্যে, শমরীয়দের মধ্যে, এবং সক্কেয়র মতো সমাজচ্যুত বা বহিষ্কৃতদের মধ্যে যিশুর পরিচর্যা কাজের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন।
পন্ডিতের দেখা করতে আসা (মথি ২:১-১২)
মথির সুসমাচার প্রথমে ইহুদি পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। যেখানে লূক সমস্ত মানুষের জন্য যিশুর বার্তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন, সেখানে মথি প্রথমে একটি স্বর্গীয় রাজ্যের উপর দেওয়া যিশুর বার্তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন। মেষপালকদের পরিবর্তে, মথি জ্ঞানী ব্যক্তিদের, অর্থাৎ পন্ডিতদের দেখা করতে আসার বিষয়টিকে দেখিয়েছেন। যিশুর পরিবার একটি স্থায়ী বাড়িতে চলে যাওয়ার পরে এই সাক্ষাৎটি ঘটেছিল, যা সম্ভবত তাঁর জন্মের কয়েক মাস পরের ঘটনা (মথি ২:১১)। দু’বছরের কম বয়সী সমস্ত পুরুষ শিশুকে হত্যা করার জন্য হেরোদের আদেশ দ্বারা এটি অনুমান করা হয়।
এই পন্ডিতরা ছিলেন মহাকাশর্বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী যারা অস্বাভাবিক বিন্যাসগুলি গবেষণা করতেন। এমন একটি সময় যখন ভ্রমণ করা বিপদজনক ছিল, সেই সময়ে তারা আকাশে যে অদ্ভুত চিহ্ন দেখেছিলেন তা তদন্ত করার জন্য দীর্ঘ দূরত্ব সফর করেছিলেন।
পন্ডিতেরা প্রথমে জেরুশালেমে এসেছিলেন, যা একজন ইহুদি রাজাকে খুঁজে পাওয়ার একটি যুক্তিযুক্ত স্থান। যখন খবরটি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হেরোদের কাছে পৌঁছেছিল, তিনি অস্থির হয়ে পড়েছিলেন, এবং তাঁর সঙ্গে সমস্ত জেরুশালেম (মথি ২:৩)। “সমস্ত জেরুশালেম” কথাটি পরবর্তীকালে ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করার পূর্বাভাস দেয়।
পন্ডিতদের এই সাক্ষাৎ ছিল অইহুদি বা পরজাতিদের কাছে মুক্তিদাতার প্রথম উপস্থাপনা। জেরুশালেমের যারা সেই চিহ্ন দ্বারা অস্বস্তিতে পড়েছিল, তাদের প্রতিতুলনায় এই পন্ডিতেরা বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। যিশু কেবল ইহুদিদের রাজা হিসেবে নয়, সমগ্র জাতির রাজা হয়ে এসেছিলেন।
মথি উল্লেখ করেননি যে কতজন পন্ডিত যিশুকে সম্মান জানাতে এসেছিলেন। মথি ২:১১ পদে উল্লিখিত তিনটি উপহারের ভিত্তিতে তিনজন পন্ডিতের ধারাটি চলে আসছে। প্রতিটি উপহারই যিশুর পরিচর্যা কাজের কোনো একটি দিককে উপস্থাপন করে।
সোনা হল এমন একটি উপহার যা রাজাকে দেওয়া হয়। যিশু কোনো সিংহাসন থেকে নয়, ক্রুশ থেকে রাজত্ব করেছিলেন।
কুন্দুরু হল এমন একটি উপহার যা যাজককে দেওয়া হয়। বলিদানের সময় কুন্দুরু সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহার করা হত। যিশু একজন যাজক হয়ে এসেছিলেন যিনি সকল মানুষের জন্য ঈশ্বরের উপস্থিতিতে প্রবেশ করা সম্ভব করে তুলেছিলেন।
গন্ধরস মৃতদেহের উপর সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হত। যিশু সমগ্র মানবাজাতির জন্য মৃত্যুবরণ করার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
[1]১৫৮২ সালের আগে পর্যন্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছিল না। এই ক্যালেন্ডারটি আনুমানিক, এটি সুনির্দিষ্ট নয়। হেরোদ দ্য গ্রেট আনুমানিক ৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মারা গিয়েছিলেন। এই তারিখের উপর ভিত্তি করে যিশুর জন্মের সময়কাল আনুমানিক ৫-৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ হতে পারে।
যিশুর জন্মের আগে একজন স্বর্গদূত ঈশ্বরের পরিকল্পনা প্রকাশ করার জন্য স্বপ্নে যোষেফের সাথে কথা বলেছিলেন। পন্ডিতদের সাক্ষাতের পর একজন স্বর্গদূত যোষেফকে মিশরে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন। হেরোদের মৃত্যু (আনুমানিক ৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) না হওয়া পর্যন্ত পরিবারটি মিশরেই ছিল।
বহু দিক থেকেই, হেরোদ দ্য গ্রেট একজন কার্যকর বা সক্রিয় শাসক ছিলেন। তিনি ইহুদিদের সম্মান করতেন, এমনকি তাদের খাদ্যব্যবস্থাও মেনে চলতেন। তিনি মন্দির পুনর্নিমার্ণের কাজ শুরু করেছিলেন যা যিশুর জীবনকালেও অব্যাহত ছিল। ২৫ খ্রিষ্টপূর্বাদে একটি দুর্ভিক্ষের সময়ে তিনি যিহুদার ক্ষুধার্ত মানুষদের খাবারের সংস্থান করার জন্য ব্যক্তিগত অর্থ খরচ করেছিলেন।
তবে হেরোদ ছিলেন অত্যন্ত সন্দেহবাতিক। তিনি মারিয়াম্নে নামের তার একজন স্ত্রীকে এবং মারিয়াম্নের মা আলেক্সান্দ্রাকে হত্যা করেছিলেন, তার সন্দেহ হয়েছিল যে তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। হেরোদ তিন ছেলেকে এমন বয়সে হত্যা করেছিলেন যে বয়সে তারা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠার আশঙ্কা ছিল। হেরোদের মতো সন্দেহপ্রবণ লোকের কাছে বেথলেহেমের শিশুদের হত্যা করা কোনো আশ্চর্য বিষয় নয়। তার অবস্থান রক্ষা করার জন্য কয়েক ডজন শিশুকে হত্যা করা খুবই ছোটোখাটো ঝামেলা।
হেরোদের নিষ্ঠুরতা তার মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। হেরোদ যখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি আদেশ দেন যে যখন তিনি মারা যাবেন তখন জেরুশালেমের নেতৃস্থানীয় নাগরিকদের গ্রেপ্তার করে হত্যা করা হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এটি তার মৃত্যুর দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে নিশ্চিত করবে। (পরিবর্তে, হেরোদের বিধবা স্ত্রী বন্দীদের মুক্তি দিয়েছিলেন, যার ফলে পুরো প্যালেস্টাইনে একটি উৎসবের দিন উদযাপিত হয়েছিল।)
হেরোদ মারা যাওয়ার পর তার রাজত্ব তিন ছেলের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল। অ্যান্টিপাসকে গালীল এবং পেরিয়ার নিয়ন্ত্রণভার দেওয়া হয়েছিল; ফিলিপকে প্যালেস্টাইনের উত্তর-পূর্ব অংশের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল; আর্খিলায় যিহুদা, ইদ্দুম এবং শমরীয় প্রদেশে শাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রাচীন ইতিহাসবিদরা বলেছিলেন যে আর্খিলায়ের মধ্যে তার বাবার সমস্ত দুর্বলতাই ছিল, কিন্তু তার বাবার কোনো ভালো বৈশিষ্ট্যই তিনি পাননি। তিনি ইহুদিদের ঘৃণা করতেন এবং সিজারের কাছে ইহুদিদের অভিযোগের কারণে ৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পরে যিহুদা পন্তীয় পিলাতের মতো রোমীয় শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল।
হেরোদের মৃত্যুর পর যোষেফকে ইস্রায়েলের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে একজন স্বর্গদূত পুনরায় তার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তবে যেহেতু আর্খিলায়ও হেরোদ দ্য গ্রেট’র মতোই নিষ্ঠুর ছিলেন, তাই যোষেফ তার পরিবার নিয়ে বেথলেহেমে ফেরার পরিবর্তে নাসরতে গিয়েছিলেন।
► ছোটোবেলায় জন ওয়েসলি (John Wesley)-কে জ্বলন্ত বাড়ি থেকে অলৌকিকভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর তাকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে রক্ষা করেছিলেন। ওয়েসলি নিজেকে “জ্বলন্ত আগুন থেকে বের করা কাঠ” (সখরিয় ৩:২) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঈশ্বর কীভাবে অলৌকিক সুরক্ষার মাধ্যমে বা তাঁর বিচক্ষণতার মাধ্যমে তাদের পরিচর্যা কাজের জন্য সংরক্ষণ করেছেন সেই কাহিনীগুলি আলোচনা করার জন্য আপনার ক্লাসের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানান।
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: মথি ২:২৩
মথি অন্য যেকোনো সুসমাচার পুস্তকের চেয়ে বেশি মাত্রায় দেখিয়েছেন যে যিশুর পরিচর্যা কাজ পুরাতন নিয়মের সমস্ত ভাববাণী পূর্ণ করেছিল। এক ইহুদি জনগণের উদ্দেশ্যে লেখা, মথি দেখিয়েছেন যে যিশু ছিলেন সেই প্রতিশ্রুত মুক্তিদাতা:
যিশাইয় ৭:১৪ যিশুর কুমারী মায়ের থেকে জন্ম (মথি ১:২২-২৩) পূর্ণ করেছে।
মীখা ৫:২ যিশুর বেথলেহেমে জন্ম (মথি ২:৫-৬) পূর্ণ করেছে।
হোশেয় ১১:১ মিশরে যাত্রা (মথি ২:১৪-১৫) পূর্ণ করেছে।
যিরমিয় ৩১:১৫ বেথলেহেমে শিশুদের হত্যা (মথি ২:১৬-১৮) পূর্ণ করেছে।
সখরিয় ৯:৯ জেরুশালেমে প্রবেশ (মথি ২১:১-৫) পূর্ণ করেছে।
মথি ২:২৩ পদে ভাববাণীমূলক পরিপূর্ণতার অন্যতম কঠিন একটি উদাহরণ পাওয়া যায়। মথি লিখেছেন, “তিনি বসবাস করার জন্য নাসরৎ নামের এক নগরে গেলেন। এভাবেই ভাববাদীদের দ্বারা কথিত বাণী পূর্ণ হল, তিনি নাসরতীয় বলে আখ্যাত হবেন”।
অসুবিধাটি হল যে পুরাতন নিয়মের ভাববাণীর কোনো রেকর্ড নেই যে মশীহ বা মুক্তিদাতাকে নাসরতীয় বলা হবে। এই পদটির পিছনে দু’টি চিন্তা থাকতে পারে:
১। যিশুর সময়কালে নাসরৎ এমন একটা গ্রাম ছিল যার কোনো গুরুত্বই ছিল না (যোহন ১:৪৬)। ইহুদি জনগণ আশা করেছিল যে তাদের মুক্তিদাতা যিহুদা থেকে আসবে, গালীলের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে নয় (যোহন ৭:৪১, ৫২)। সত্যটি হল এই যে নাসরতের মতো তুচ্ছ জায়গা থেকে যিশুর আসা যিশাইয় ৪৯:৭ এবং যিশাইয় ৫৩:৩-এর মতো ভাববাণীগুলি পূর্ণ করেছিল।
২। যিশাইয় ১১:১ ভাববাণী করেছে যে মশীহ বা মুক্তিদাতা একজন “শাখা” হবেন। শাখা কথাটির জন্য হিব্রু শব্দ “নেৎজার” (netzer) অনেকটা নাসরৎ-এর মতোই শুনতে লাগে। মথি’র ইহুদি পাঠকরা শব্দের এই খেলাটি সম্ভবত উপলব্ধি করে পেরেছিলেন।
ঈশ্বর একজন অগ্রদূতের মাধ্যমে তাঁর দাসের জন্য পথ প্রস্তুত করেছিলেন
যোহন বাপ্তাইজক ছিলেন যিশুর মাসতুতো দাদা। যোহনের কাহিনী শুরু হয় তাঁর বাবা সখরিয় যখন ইস্রায়েল জাতির পক্ষ হয়ে ধূপ জ্বালাচ্ছিলেন সেই সময় থেকে, যা ছিল একজন যাজকের কাছে সবচেয়ে সম্মানিত কর্তব্যগুলির মধ্যে একটি (লূক ১:৯)।
সখরিয় যখন এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন ধূপের বেদির ডানদিকে একজন স্বর্গদূত আবির্ভূত হয়েছিলেন। ইহুদি প্রথা অনুযায়ী, এইটিই হল সেই স্থান যেখানে নৈবেদ্যর সময় ঈশ্বর উপস্থিত হতেন। স্বর্গদূত গাব্রিয়েল সখরিয়কে বলেছিলেন যে একটি পুত্রের জন্য তার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু ইলিশাবেতের সন্তান-ধারণের বয়স পেরিয়ে গিয়েছিল, সখরিয় স্বর্গদূতের প্রতিজ্ঞা নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন। তার বিশ্বাসের অভাবের কারণে, তিনি যোহনের জন্ম হওয়া পর্যন্ত কথা বলতে অক্ষম ছিলেন। একজন যাজক এবং শাস্ত্রের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, সখরিয় হান্না এবং রাহেলের কাহিনী জানতেন এবং তার সেই প্রতিজ্ঞাটি বিশ্বাস করা উচিত ছিল যে ঈশ্বর অলৌকিকভাবে ইলিশাবেতের গর্ভ খুলে দেবেন।
তিরিশ বছর পরে যোহন তার পরিচর্যা কাজ শুরু করেছিলেন। জেরুশালেমে একজন যাজক হিসেবে কাজ করার পরিবর্তে, যোহন যিহুদার প্রান্তরে একজন ভাববাদী হিসেবে পরিচর্যা কাজ করেছিলেন। যোহনকে মুক্তিদাতার একজন অগ্রদূত হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। যোহন যখন প্রচার করতেন, লোকেরা প্রশ্ন তুলেছিল, “যোহনই কি সেই প্রতিশ্রুত মশীহ?” তিনি উত্তর দিয়েছেন, “আমার চেয়েও পরাক্রমী একজন আসছেন। তাঁর চটিজুতোর বাঁধন খোলারও যোগ্যতা আমার নেই” (লূক ৩:১৬)। একজন দাসের অন্যতম নগণ্য কাজ ছিল তার মনিবের জুতোর খেয়াল রাখা, কিন্তু যোহন বলেছেন, “যিনি আসছেন তাঁর অবস্থান আমার থেকে এতটাই উঁচুতে যে আমি এই নগণ্য কাজটারও যোগ্য নই।” যোহন নম্র পরিষেবার একটি আদর্শ প্রদান করেছেন।
পুরো শাস্ত্র জুড়ে ঈশ্বর বিভিন্ন ব্যক্তিদের অন্য কারোর আসার জন্য পথ প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। বার্ণবা এবং পৌলের উদাহরণটি দেখুন। যখন শৌল খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের উপর নির্যাতন করতেন, বার্ণবা তখন ইতিমধ্যেই মন্ডলীতে একজন সম্মানীয় নেতৃত্বপদে ছিলেন। বার্ণবা পৌলকে বিশ্বাস করেছিলেন যখন প্রায় কোনো খ্রিষ্টবিশ্বাসীই মন্ডলীর এই অত্যাচারীর প্রতি বিশ্বাস রাখতে চায়নি।
যখন তাঁরা প্রথম প্রচারকাজ শুরু করেছিলেন, প্রেরিত পুস্তক দলটিকে “বার্ণবা ও শৌল” হিসেবে উল্লেখ করেছে (প্রেরিত ১৩:২)। শীঘ্রই তাঁরা “পৌল ও বার্ণবা” হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন (প্রেরিত ১৩:৪৩ এবং পরবর্তী অংশ)। প্রথমে বার্ণবা নেতৃত্বপদে ছিলেন, কিন্তু তিনি পৌলকে নেতা হয়ে উঠতে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন।
কিছুক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা হবে যোহন বাপ্তাইজক বা বার্ণবার মতো, অন্য কারোর জন্য পথ প্রস্তুত করা। ঈশ্বর আপনাকে যে উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করুন, কাজে আপনার সেরাটা দিন। যদি ঈশ্বর আপনাকে একটি সহায়ক পদে রাখেন, সেই পরিচর্যা কাজটি প্রত্যাখ্যান করবেন না। আপনাকে সর্বাপেক্ষা কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করার জন্য আপনি ঈশ্বরকে ভরসা এবং বিশ্বাস করতে পারেন।
আমরা যোহন বাপ্তাইজকের নম্রতা দেখেছি যখন তিনি তার শিষ্যদেরকে যিশুর দিকে নির্দেশ করেছিলেন। একজন রব্বি বা গুরুর লক্ষ্য ছিল শিষ্যদের জয় করা যারা তাদের শিক্ষককে অনুসরণ করবে এবং সম্মান করবে। পরিবর্তে, যোহন বাপ্তাইজক তার শিষ্যদেরকে এক মহানতর শিক্ষকের দিকে নির্দেশ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার কাজ ছিল তার চেয়েও মহান একজনের দিকে নির্দেশ করা। যোহন তার শিষ্যদেরকে তাকে ছেড়ে যিশুকে অনুসরণ করতে দেখেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল ঈশ্বরের রাজ্য, তার নিজের মহিমা বা গৌরব নয়। খ্রিষ্টীয় লিডার হিসেবে, আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমাদের লক্ষ্য হল মানুষকে যিশুর দিকে নির্দেশ করা, আমাদের নিজেদের জন্য সাফল্য অর্জন করা নয়।
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: অনুতাপ করার অর্থ কী?
► মথি ৩:১-৬ পড়ুন।
যোহন অনুতাপের বার্তা প্রচার করেছিলেন। বর্তমানে কিছু লোক বলে যে অনুতাপ করার অর্থ হল কেবল আপনার মনের পরিবর্তন করা। বহু পেশাদার খ্রিষ্টবিশ্বাসী একটি পরিবর্তিত জীবনের অতি সামান্যই চিহ্ন প্রদর্শন করে থাকে।
কিন্তু “অনুতাপ” কথাটির অর্থ একটি মানসিক সিদ্ধান্তের চেয়ে অনেক বেশি এবং বড়। নতুন নিয়মের লেখকরা “অনুতাপ” শব্দটি ঠিক সেইভাবেই ব্যবহার করেছেন যেভাবে হিব্রু ভাববাদীরা ব্যবহার করেছিলেন। এটির অর্থ ছিল জীবনের আমূল পরিবর্তন। নতুন নিয়মে অনুতাপ করার অর্থ হল:
আপনার ভাবনা-চিন্তা ও বিশ্বাস পরিবর্তন করা এবং
আপনার ক্রিয়াকলাপ ও জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা।
কিছু বছর আগে আমেরিকাতে একজন পপ গায়ক ছিল যে তার পাপময় জীবনযাত্রার জন্য বেশ পরিচিত ছিল। এই গায়ক বলেছিল, “আমি খ্রিষ্টবিশ্বাসী হয়ে গেছি এবং আমি পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে গেছি। আমি আগে যেমন জীবনযাপন করতাম এখনো সেটাই করছি, কিন্তু এখন আমি একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী। যদি আমি মারা যাই, আমি স্বর্গেই যাব।” এই লোকটির দেখানো “অনুতাপ”-এর মধ্যে তার জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তনই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এটি প্রকৃত অনুতাপ নয়।
যোহন শিখিয়েছিলেন যে অনুতাপ আমাদের জীবনের ধারা বা বিন্যাসকে পরিবর্তন করে। যোহন চেয়েছিলেন বাপ্তিষ্মগ্রহণকারীরা তাদের অনুতাপের আচরণ অব্যাহত রাখুক (লূক ৩:৮)। বাপ্তিষ্ম কখনোই একটি ফাঁপা রীতি হয়ে যাওয়া উচিত নয়: “আমি বিশ্বাস করি, তাই এবার আমাকে বাপ্তিষ্ম দিন।” বাপ্তিষ্ম অবশ্যই প্রকৃত অনুতাপ এবং একটি পরিবর্তিত জীবনের একটি সাক্ষ্য হওয়া উচিত।
ঈশ্বর তাঁর দাসকে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুত করেছিলেন
যখন আমরা প্রলোভনের সম্মুখীন হই, তখন প্রলোভনের উপর যিশুর বিজয় একটি আদর্শকে তুলে ধরে। “যীশু পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত হয়ে মরুপ্রান্তরে গেলেন, যেন দিয়াবলের দ্বারা প্রলোভিত হতে পারেন” (মথি ৪:১)। যিশু জনসমাজে তাঁর পরিচর্যা কাজ শুরু করার ঠিক আগেই প্রলোভন এসেছিল । অন্যদের কাছে প্রচার করার আগে, যিশু পিতার ইচ্ছার কাছে তাঁর সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
মথি যিশুর বাপ্তিষ্মের ঠিক পরেই প্রলোভনের কাহিনীটিকে রেখেছেন। আমাদের বড় বড় প্রলোভনগুলি প্রায়শই আত্মিক বিজয়ের পরেই আসে। এলিয় কর্মিল [কার্মেল] পর্বতে বিজয়লাভের ঠিক পরেই আমরা তাকে তার জীবনের জন্য পালাবার সময়ে তাকে হতাশা ও সন্দেহের প্রতি প্রলোভিত হতে দেখি (১ রাজাবলি ১৮-১৯)।
লূক আদম পর্যন্ত যিশুর বংশতালিকা উল্লেখ করার পরে প্রলোভনের কাহিনীটিকে রেখেছেন। লূক দেখিয়েছেন যে যেখানে আদম ব্যর্থ হয়েছিল, মনুষ্যপুত্র যিশু সেখানেই বিজয়ী হয়েছিলেন (লূক ৩:৩৮)। যিশু নিজেকে মানুষরূপে চিহ্নিত করেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন কীভাবে সাধারণ খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা পাপের উপর বিজয়ী হতে পারে।
শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করেছিল যেন তিনি তাঁর ঐশ্বরিক শক্তি ব্যবহার করে পাথরগুলিকে রুটিতে পরিণত করেন। শয়তান যিশুকে পিতার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে তাঁর নিজের লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর নিজের ক্ষমতাকে ব্যবহার করার জন্য প্রলোভিত করেছিল। যিশু খাদ্যের প্রতি তাঁর অধিকারকে পিতার কাছে সমর্পণ করেছিলেন।
প্রথম আদম ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল যখন সে এমন একটি খাদ্যে গ্রহণ করার জন্য প্রলোভিত হয়েছিল যা তার জন্য ভুল ছিল। দ্বিতীয় আদম বিশ্বস্ত ছিলেন।
মন্দিরের চূড়া থেকে ঝাঁপ দেওয়ার প্রলোভন
শয়তান যিশুকে মন্দিরের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিতে প্রলুব্ধ করেছিল (কিদ্রন উপত্যকা থেকে ৯১ মিটার উপরে)। এটি লোকদের বিস্মিত করবে এবং একই সাথে পিতার কাছে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ করার দাবিও করবে।য়তান যিশুকে প্রলুব্ধ করার জন্য গীত ৯১:১১-১২-এর প্রতিশ্রুতি উদ্ধৃত করেছিল যাতে তিনি তাঁর পিতার প্রতিশ্রুতি পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল যিশু পিতাকে তাঁর দাস বানাবেন—তাঁর চাহিদা ও প্রত্যাশার অধীন করবেন।
যিশু এমন একটি পরিস্থিতিতে গীত ৯১-এর প্রতিজ্ঞা প্রয়োগ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে পরিস্থিতির জন্য প্রতিজ্ঞাটি প্রযোজ্যই নয়। শয়তানের প্রত্যুত্তরে যিশু দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৬ উদ্ধৃত করেছিলেন, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পরীক্ষা কোরো না”। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে আমরা দাবি করতে পারি না যে ঈশ্বর আমাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করবেন।
“আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই যারা বলে, 'আমি আমার অধিকারের দাবি করে আমার শক্তি প্রমাণ করব।' কিন্তু সিদ্ধ মানুষ দেখিয়েছেন যে মানুষের ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি ত্যাগ করার মধ্যেই প্রকৃত শক্তি নিহিত রয়েছে।”
- জি ক্যাম্পবেল মরগান (G.Campbell Morgan) থেকে অভিযোজিত
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: প্রকৃত বিশ্বাস
কিছু কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে, “শাস্ত্রের প্রতিটি প্রতিজ্ঞাই আমার জন্য।” যেহেতু শাস্ত্রের প্রতিটি প্রতিজ্ঞাই সত্য, আমাদের তাই সবসময়ে প্রশ্ন করা উচিত, “এই প্রতিজ্ঞাটি কি এই পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য?” যিশু জানতেন যে গীত ৯১ অধ্যায়ের প্রতিজ্ঞাটি প্রান্তরে তিনি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন সেটির জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না। কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে আমরা ঈশ্বরের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে প্রকৃত বিশ্বাসে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলি দাবি করছি?
(১) আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য জানতে হবে।
বাইবেলের প্রতিজ্ঞার প্রেক্ষাপট এবং প্রতিজ্ঞাটির সাথে সংযুক্ত শর্তাবলী সম্পর্কে আমরা যত বেশি জানতে পারি, তত বেশি করে আমরা আমাদের পরিস্থিতিতে এটির প্রয়োগকে পরিমাপ করতে পারি।
নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েল যদি চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকে তবে ঈশ্বর দৃশ্যমান আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাদের জমি প্রচুর ফল দেবে, তাদের শস্যাগার পরিপূর্ণ হবে এবং তারা সমস্ত সামরিক যুদ্ধে বিজয়লাভ করবে। নতুন নিয়মের প্রতিশ্রুতিগুলির বেশিরভাগই আত্মিক সুবিধা সংক্রান্ত। কিছু ব্যক্তি এটি শিখতে ইচ্ছুক নয়, কিন্তু আমাদের আনন্দ করা উচিত। বস্তুগত সমৃদ্ধির কেবল অস্থায়ী মূল্য রয়েছে; আত্মিক সমৃদ্ধির মূল্য চিরন্তন। বিশ্বাস ঈশ্বরকে দিয়ে আমাদের নিজস্ব ইচ্ছা পূরণ করানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে ঈশ্বরকে তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলিকে তাঁর নির্ধারিত পথেই পূর্ণ করার জন্য বিশ্বাস করে।
(২) আমাদের অবশ্যই নির্দিষ্ট এবং সর্বজনীন প্রতিজ্ঞাগুলির পার্থক্য বুঝতে হবে।
যখন আমরা একটি সাধারণ বা সর্বজনীন প্রতিজ্ঞার কথা পড়ি, আমাদের অবশ্যই জানাতে চাওয়া উচিত যে ঈশ্বর কি সেই প্রতিজ্ঞাটি আমাদের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য করছেন। কিছু কিছু প্রতিজ্ঞা সাধারণ, সেগুলি বিশ্বজনীন নয়।
গীত ১০৩:৩ ঈশ্বরের প্রশংসা করে “যিনি…তোমার সব রোগ ভালো করেন”। কিছু খ্রিষ্টবিশ্বাসী এটিকে একটি বিশ্বজনীন প্রতিজ্ঞা হিসেবে গ্রহণ করেছে যে ঈশ্বর প্রত্যেক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর প্রতিটি অসুস্থতা সুস্থ করবেন। তবে শাস্ত্র দেখায় না যে প্রতিটি শারীরিক অসুস্থতা নিরাময় হবে। পৌল সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, এবং ঈশ্বর বলেছিলেন, “না” (২ করিন্থীয় ১২:৭)। কিছুক্ষেত্রে ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের সুস্থ করা বেছে নেন; কিছুক্ষেত্রে ঈশ্বর তাদেরকে কষ্ট সহ্য করার অনুগ্রহ দেন।
আমাদের সেই তিনজন ইহুদির মতো প্রত্যুত্তর দেওয়া উচিত। যখন রাজা নেবুখাদনেজার তাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তারা বলেছিলেন, “যদি আমাদের জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেওয়া হয়, আমাদের ঈশ্বর যাকে আমরা সেবা করি, তিনি আমাদের রক্ষা করতে পারবেন এবং হে রাজা, আপনার হাত থেকেও আমাদের রক্ষা করবেন। কিন্তু তিনি যদি আমাদের রক্ষা নাও করেন, আপনি জেনে রাখুন হে মহারাজ যে, আমরা আপনার দেবতাদের সেবা করব না অথবা আপনার স্থাপিত সোনার মূর্তিকেও আরাধনা করব না” (দানিয়েল ৩:১৭-১৮)। তাঁরা জানত যে তাঁদেরকে উদ্ধার করার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে; কিন্তু যদি ঈশ্বর কোনো আলাদা পথ বেছে নিতেন, তাঁরা বিশ্বস্তভাবে তাঁকে সেবা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকত।
ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের শারীরিক কষ্ট থেকে উদ্ধার করতে পারেন, কিন্তু তিনি সবসময়ে সেই পথটি বেছে নেন না। যতক্ষণ না ঈশ্বর সুস্পষ্ট করছেন যে বাইবেলের কোনো প্রতিজ্ঞা নির্দিষ্টভাবে আপনার জন্যই করা হয়েছে, ততক্ষণ ঈশ্বরের পছন্দ অনুযায়ীই তাঁকে সুনিশ্চিত ভাবে ভরসা করুন। সাধু যোহন এই প্রতিশ্রুতিটি দিয়েছেন, “ঈশ্বরের কাছে আসার জন্য আমরা এই ভরসা পেয়েছি যে, আমরা যদি তাঁর ইচ্ছানুসারে কিছু প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন। আর আমরা যদি জানি যে, আমরা যা কিছুই প্রার্থনা করি, তিনি তা শোনেন, তাহলে আমরা এও জানব যে, তাঁর কাছে প্রার্থিত সবকিছুই আমরা পেয়েছি” (১ যোহন ৫:১৪-১৫)।
আমার ধরে নেওয়া উচিত নয় যে বাইবেলের প্রতিটি প্রতিজ্ঞাই আমার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য। বিশ্বাস বলে, “আমি ‘তাঁর ইচ্ছানুসারে’ চাইব।” আমার কখনোই প্রতিটি প্রতিজ্ঞাকে একটি ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞা হিসেবে ভেবে নেওয়া উচিত নয়। পরিবর্তে, আমাকে অবশ্যই জানতে চাইতে হবে সেই প্রতিজ্ঞাটি আমার পরিস্থিতির জন্য সঙ্কল্পিত কিনা।
(৩) আমাদের অবশ্যই যিশুর নামে প্রার্থনা করতে হবে।
যিশু প্রতিজ্ঞা করেছেন, “আর আমার নামে তোমরা যা কিছু চাইবে, আমি তাই পূরণ করব, যেন পুত্র পিতাকে মহিমান্বিত করেন” (যোহন ১৪:১৩)। যিশুর নামে প্রার্থনা করার অর্থ হল যে আপনার প্রার্থনা যিশুর সমস্ত অগ্রাধিকার, ইচ্ছা, এবং চরিত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ। যিশু সেই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন যেগুলি ঈশ্বরের জন্য গৌরব আনে; আমাদেরও একই কাজ করা উচিত। যদি আমাদের প্রকৃত বিশ্বাস থাকে, আমরা আমাদের নিজেদের ইচ্ছার পরিবর্তে ঈশ্বরের গৌরবের সন্ধান করব।
পিতার গৌরবান্বিত হওয়ার প্রার্থনা করার অর্থ হল আমরা আমাদের জীবনের জন্য ঈশ্বরের চূড়ান্ত উদ্দেশ্যের কাছে সমর্পণ করছি। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “কারণ তোমাদের জন্য কৃত পরিকল্পনার কথা আমি জানি, সদাপ্রভু এই কথা বলেন।তা হল তোমাদের সমৃদ্ধির পরিকল্পনা, তোমাদের ক্ষতি করার নয়, তোমাদের এক আশা ও ভবিষ্যৎ মঙ্গলদানের পরিকল্পনা” (যিরমিয় ২৯:১১)। আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে এই প্রতিজ্ঞাটি ইস্রায়েলকে দেওয়া হয়েছিল কারণ তারা ৭০ বছর ধরে বাবিলনের দাসত্ব করছিল। এমনকি বাবিলনের দাসত্ব ঈশ্বরের লোকেদের জন্য মঙ্গল সাধন করেছিল; তাদের দুর্দশায় ইস্রায়েল ঈশ্বরকে ডেকেছিল এবং তিনি তাদের কথা শুনেছিলেন।
এই প্রতিজ্ঞাটি কি আজকে আমাদের জন্য প্রযোজ্য? হ্যাঁ! ঈশ্বরের চরিত্র বদলায়নি; তিনি তাঁর সন্তানদের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসেন। যা কিছু ঘটবে সবই যে ভালো হবে তা নয়, তবে আমরা যিশুর নামে আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রার্থনা করতে পারি কারণ আমরা জানি যে আমাদের জীবনে যা ঘটে তার সবকিছুতেই ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য সাধন করছেন।
ঈশ্বর পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর দাসকে প্রস্তুত করেছিলেন (ক্রমশ)
প্রলোভন (ক্রমশ)
জগতের রাজত্বের প্রস্তাব
শয়তানের চূড়ান্ত প্রলোভনটি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিল, এমন একটি পথ যেখানে যিশু ক্রুশ ছাড়াই ভবিষ্যতে আধিপত্য অর্জন করতে পারতেন। যদি যিশু শয়তানের কাছে মাথা নত করতেন, তিনি ক্রুশের যন্ত্রণাকে সরিয়ে দিতে পারতেন। যিশু দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৩ উল্লেখ করে উত্তর দিয়েছিলেন, “তুমি তোমার ঈশ্বর প্রভুরই আরাধনা করবে, কেবলমাত্র তাঁরই সেবা করবে” (মথি ৪:১০)।
প্রলোভনের উপর যিশুর বিজয়
প্রলোভনের ক্ষেত্রে যিশুর দৃষ্টান্ত দ্বারা উপকৃত হওয়ার সময়ে আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে যিশু সম্পূর্ণ মানুষ ছিলেন। তিনি প্রলোভিত হয়েছিলেন “সব বিষয়ে...অথচ নিষ্পাপ থেকেছেন” (ইব্রীয় ৪:১৫)।
► ১ করিন্থীয় ১০:১৩ এবং ইব্রীয় ৪:১৫ পড়ুন। প্রলোভনের ব্যাপারে এগুলি কী শেখায়?
১ যোহন ২:১৬ পদে প্রেরিত যোহন দেখিয়েছেন যে মাংসের অভিলাষ, চোখের অভিলাষ, এবং জীবনের অহংকার থেকে প্রলোভন আসতে পারে। যিশু এই সবকটি ক্ষেত্রেই প্রলোভিত হয়েছিলেন।
যিশু যখন রুটির জন্য ক্ষুধার্ত ছিলেন তখন শয়তান মাংসকে প্রলুব্ধ করেছিল।
শয়তান যিশুকে পৃথিবীর রাজত্ব দেখিয়ে দৃষ্টিকে প্রলুব্ধ করেছিল।
শয়তান যিশুকে একটি নাটকীয় কাজের জন্য প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে জীবনের অহংকারকে আবেদন করেছিল যা জনতাকে বিস্মিত করে তুলত।
প্রলোভনের বিরুদ্ধে যিশুর বিজয় আমাদের জন্য প্রলোভনের সময়ে একটি আদর্শ প্রদান করে। প্রলোভনের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য যিশু যে তিনটি অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন তা লক্ষ্য করুন।
পবিত্র আত্মার শক্তি
যিশু পবিত্র আত্মার পরিচালনায় চলেছিলেন। তিনি সেটাই করেছিলেন যা করার জন্য পবিত্র আত্মা তাঁকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। “যীশু পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে জর্ডন নদী থেকে ফিরে এলেন এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত হয়ে মরুপ্রান্তরে গেলেন” (লূক ৪:১)।
যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যা কাজের পুরো সময়কালেই পবিত্র আত্মার শক্তিতে কাজ করেছিলেন। তিনি আত্মার শক্তিতে মন্দ আত্মাদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন (মথি ১২:২৮)। ঈশ্বর “নাসরতের যীশুকে পবিত্র আত্মায় ও পরাক্রমে অভিষিক্ত করেছিলেন এবং কীভাবেই বা তিনি বিভিন্ন স্থানে সকলের কল্যাণ করে বেড়াতেন ও দিয়াবলের ক্ষমতাধীন ব্যক্তিদের সুস্থ করতেন, কারণ ঈশ্বর তাঁর সহবর্তী ছিলেন” (প্রেরিত ১০:৩৮)।
যিশু পবিত্র আত্মার শক্তিতে তাঁর পার্থিব পরিচর্যা কাজ করেছিলেন। আমরা যদি প্রলোভনের সামনে শক্তিশালী হতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই পবিত্র আত্মার শক্তিতে জীবন যাপন করতে হবে।
প্রার্থনার শক্তি
৪০ দিনের উপবাস ও প্রার্থনার পর যিশুকে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। প্রার্থনা তাঁকে আত্মিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল। পরবর্তী পাঠে আমরা যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজে প্রার্থনার কেন্দ্রীয়তা দেখব। যিশুকে নিজেই যদি প্রার্থনার উপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে আমরা কীভাবে প্রার্থনা ছাড়া আত্মিক বিজয়ের আশা করতে পারি?
শয়তান সাধারণত তখনই আক্রমণ করে যখন আমরা আমাদের প্রার্থনা জীবনে উদাসীন হয়ে পড়ি। সে জানে যে আমরা প্রলোভনের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ব যদি আমরা একটি অত্যাবশ্যক প্রার্থনাশীল জীবন বজায় না রাখি।
ঈশ্বরের বাক্যের শক্তি
যিশু শাস্ত্রের বাক্য দিয়ে প্রতিটি প্রলোভনের জবাব দিয়েছিলেন। তিনি কীভাবে এই শাস্ত্রীয় পদগুলি জেনেছিলেন? ইহুদি শিশুরা তাদের শৈশবকালীন শিক্ষার অংশ হিসেবে তোরাহ (Torah) মুখস্ত করত। যিশু যখন প্রলুব্ধ হয়েছিলেন, তখন শাস্ত্রের কথাগুলি দ্রুত তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল।
খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে আমাদের হৃদয়ে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য রোপণ করতে হবে। পরীক্ষার সম, শাস্ত্র আমাদের প্রলোভনের মোকাবিলা করার শক্তি দেবে।
প্রলোভনের মোকাবিলা করার জন্য যিশু যে অস্ত্রগুলি ব্যবহার করেছিলেন সেই একই অস্ত্র আমাদের কাছে রয়েছে। আত্মার শক্তি, প্রার্থনার শক্তি, এবং ঈশ্বরের বাক্যের শক্তি দিয়ে যিশুর মতোই আমাদের প্রলোভনের মোকাবিলা করতে হবে৷ সেই অস্ত্রগুলি না থাকলে আমরা শয়তানের আক্রমণে পড়ব।
একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: মানবদেহ-ধারণ
প্রথম শতকের খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা সর্বজনীনভাবে সহমত ছিলেন যে যিশু ঐশ্বরিক ছিলেন। যদিও এরিয়াসের (Arius) মতো ভ্রান্তশিক্ষাকরা যিশুর ঐশ্বরিকত্বকে অস্বীকার করেছিলেন, গোঁড়া খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা শিখিয়েছিল যে যিশু ঐশ্বরিক ছিলেন।
অর্থোডক্স খ্রিষ্টবিশ্বাসও শিখিয়েছিল যে যিশু সম্পূর্ণ মানুষ ছিলেন। এই মতবাদ প্রায়শই ভ্রান্তশিক্ষাকরা অস্বীকার করেছে। বর্তমানেও অনেক প্রচারক যিশুর মানবতাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে না। অনেক খ্রিষ্টবিশ্বাসী অনুমান করে যে যিশু সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর ছিলেন, কিন্তু তাঁর মানবতা বাস্তব ছিল না। তারা মনে করে তিনি একটি মানবদেহ ধারণ করেছিলেন, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণরূপে মানুষ ছিলেন না।
কিছু সারমনের দৃষ্টান্ত এই মিথ্যা ধারণার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। কিছু প্রচারক একজন রাজার কিংবদন্তি কাহিনী বলে যিনি ভ্রমণের জন্য একজন কৃষক হওয়ার ভান করেছিলেন। তবে, যিশু এমন একজন ঈশ্বর ছিলেন না যিনি মানুষ হওয়ার ভান করেছিলেন। তিনি আমাদের একজন হয়েছিলেন।
যিশুর মানবতার মতবাদ আমাদের খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের অভিজ্ঞতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যিশু যদি সম্পূর্ণ মানুষ না হন, তবে তাঁর জীবন আমাদের জন্য বাস্তবসম্মত আদর্শ নয়। একজন ঈশতত্ত্ববিদ এটিকে এভাবে বলেছিলেন, “যদি যিশু সত্যিই আমাদের মতো না হন, তবে আমরাও তাঁর মতো হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি।”[1]
অনেক লোক বিশ্বাস করে যে আমাদের ক্রমাগত ইচ্ছাকৃত পাপের মধ্যে পড়তে হবে। যিশু তাঁর মানবতার মধ্যে দেখিয়েছিলেন যে, সাধারণ খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে পাপের উপর বিজয় বজায় রাখতে পারে।
যিশু যদি আমাদের ভগ্ন মানবতার অংশ হয়ে উঠতে পারেন, যদি তিনি আত্মার শক্তির জন্য আমাদের প্রয়োজনের অনুরূপ অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন, এবং যদি তিনি আমাদের মতোই প্রলোভিত হয়ে থাকেন, তবে প্রলোভনের বিরুদ্ধে তাঁর বিজয় আমাদের দেখায় যে কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজয় অর্জন করা যায়। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমরা বিজয়ী জীবন যাপন করতে পারি।
► কোনটি বোঝা আপনার পক্ষে কঠিন, যিশুর ঈশ্বরত্বের মতবাদ নাকি তাঁর মানবতার মতবাদ? আমাদের খ্রিষ্টীয় জীবন এবং পরিচর্যা কাজে এই মতবাদগুলির প্রতিটি কীভাবে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে আলোচনা করুন।
[1]Cherith Fee Nordling, “Open Question” Christianity Today, এপ্রিল ২০১৫, ২৬-২৭
উপসংহার: ঈশ্বর তাঁর দাসদের প্রস্তুত করছেন
এই পাঠে আমরা দেখেছি কীভাবে যিশুর পরিচর্যা কাজের জন্য ঈশ্বর পথ প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর বংশের মাধ্যমে, রোম সাম্রাজ্যের মাধ্যমে, একটি অলৌকিক জন্মের মাধ্যমে, যোহন বাপ্তাইজকের পরিচর্যা কাজের মাধ্যমে, এবং এমনকি প্রলোভনের মাধ্যমে, ঈশ্বর যিশুর জন্য পথ প্রস্তুত করেছিলেন।
আমরা সমগ্র বাইবেল জুড়ে এই সত্যটি বারবার দেখতে পাই। পৌলের উদাহরণ দেখুন। পৌল রোমান শহর তার্ষ (Tarsus)-তে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তার একাধিক পরজাতি বন্ধু ছিল। ইহুদিদের থেকে ভিন্ন, পৌল অইহুদীদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
পৌলের বাবা ছিলেন একজন রোমীয় নাগরিক, তাই পৌলের রোমীয় নাগরিকত্বের মূল্যবান অধিকার ছিল। তার মা ইহুদি ছিলেন, তাই পৌল পুরাতন নিয়মের শাস্ত্রগুলিতে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। তিনি ভীষণ মেধাবী ছিলেন এবং তিনি মহান রব্বি [গুরু] গমলিয়েলের অধীনে ইব্রীয় ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেছিলেন। তার রোমীয় পটভূমিতে তিনি গ্রিক ভাষা এবং গ্রিক দার্শনিকদের শিক্ষা অধ্যয়ন করেছিলেন।
এই পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে, এটি মোটেই বিষ্ময়কর নয় যে ঈশ্বর পৌলকে অইহুদী বা পরজাতিদের কাছে একজন প্রচারক হওয়ার জন্য আহ্বান করেছিলেন। জন্মের সময় থেকেই ঈশ্বর পৌলকে অইহুদীদের কাছে প্রথম প্রেরিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। ঈশ্বর এই পরিচর্যা কাজের জন্য যে প্রস্তুতির ব্যবস্থা করেছিলেন তা চিন্তা করুন:
পৌলের রোমীয় নাগরিকত্বের কারণে তিনি সমস্ত জায়গায়ে অবাধে যেতে পারতেন।
পৌলের ইব্রীয় এবং গ্রিক ভাষায় প্রশিক্ষণ তাকে নতুন নিয়মের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুস্তকগুলি লেখার কলাকৌশল প্রদান করেছিল।
গ্রিক দর্শনের উপর পৌলের অধ্যয়ন এবং দক্ষতা তাকে এথেন্সে গ্রিক দার্শনিকদের সাথে কথা বলতে সক্ষম করেছিল।
হয়তো আপনি বলবেন, “ঈশ্বর আমাকে পৌলের মতো অসাধারণ শিক্ষা দেননি। আমার পারিবারিক প্রেক্ষাপটও বিশেষ কিছু নয়।” ঠিক আছে! প্রথম শতকের মন্ডলীর আরেক নেতাকে দেখুন।
শিমোন একজন পেশাদার মৎস্যজীবী হিসেবে বড় হয়েছিলেন। পৌলের মতো শিক্ষা বা মেধা তার ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, পিতর পরে বলেছিলেন যে পৌল কিছু জিনিস লিখেছিলেন যা বোঝা কঠিন (২ পিতর ৩:১৫-১৬)। কিন্তু ঈশ্বর পিতরকে এক পরাক্রমী উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন। যারা পৌলের গভীর কথায় অভিভূত হত তারা পিতরের সরল উপদেশগুলি বুঝতে পারত।
ঈশ্বর আপনাকে আপনার সেবার জায়গার জন্য প্রস্তুত করেছেন। আপনি যদি আপনার প্রশিক্ষণ, আপনার পটভূমি এবং ঈশ্বর আপনাকে যা দিয়েছেন তা সমর্পণ করেন, তাহলে তিনি আপনাকে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করতে ব্যবহার করবেন। ঈশ্বর যে পরিচর্যা কাজের জন্য যাদের ডেকেছেন তাদের তিনি সেটিতে প্রস্তুত করে তোলেন।
(১) এই পাঠে আমরা প্রলোভনের বিরুদ্ধে জয়ের ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ দেখেছি। নিচের প্রথম চার্টে বাইবেলের তিনটি উদাহরণ তালিকাভুক্ত করুন যারা প্রলোভনের বিরুদ্ধে বিজয় অব্যাহত রেখেছিল। এমন কোনো জিনিস লক্ষ্য করুন যা তাদের প্রলোভনের মুখামুখি হত্তয়ার শক্তি দিয়েছিল। তারপর তিনটি বাইবেলের উদাহরণ তালিকাভুক্ত করুন যারা প্রলোভনে পরাজিত হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে, একটি কারণ চিহ্নিত করুন যা তাদের পতনের দিকে পরিচালিত করেছিল।
(২) আপনি যে উদাহরণগুলি তালিকাভুক্ত করেছেন সেগুলির ভিত্তিতে প্রলোভনের উপর একটি সারমন বা বাইবেল স্টাডি প্রস্তুত করুন। যিশুর উদাহরণের পাশাপাশি আপনি আপনার চার্টে যে উদাহরণগুলি তালিকাভুক্ত করেছেন সেগুলিও অন্তর্ভুক্ত করুন।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.