যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
যিশুর জীবন ও পরিচর্যা কাজ
Audio Course Purchase

Search Course

Type at least 3 characters to search

Search through all lessons and sections in this course

Searching...

No results found

No matches for ""

Try different keywords or check your spelling

results found

Lesson 2: যিশুর মতো প্রার্থনা করা

2 min read

by Randall McElwain


পাঠের উদ্দেশ্য

এই পাঠের শেষে শিক্ষার্থীরা:

(১) যিশুর জীবন এবং পরিচর্যা কাজে প্রার্থনার গুরুত্ব বুঝতে পারবে।

(২) যিশুর দেওয়া শিক্ষা থেকে প্রার্থনার নীতিগুলি শিখবে।

(৩) আজকের দিনে আমাদের পরিচর্যা কাজে প্রার্থনার গুরুত্ব বুঝতে পারবে।

(৪) একজন প্রার্থনাশীল ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলির বিকাশ করবে।

পরিচর্যা কাজের নীতি

যদি আমরা যিশুর মতো পরিচর্যা কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই যিশুর মতো প্রার্থনা করতে হবে।

ভূমিকা

প্রার্থনা বিষয়ক একটি বার্তায় অধ্যাপক হাওয়ার্ড হেনড্রিকস (Howard Hendricks) এই অভিযোগকারী বিবৃতিটি দিয়েছিলেন:

আপনি বাইবেল পড়েছেন কিনা তা নিয়ে শয়তান চিন্তিত নয়, কিন্তু যদি আপনি প্রার্থনা না করেন, তাহলে শাস্ত্র কোনোমতেই আপনার জীবনকে রূপান্তরিত করবে না। আপনি এমনকি এটি খুব ভালোভাবে জানার কারণে এটি আপনাকে আত্মিক অহংকারের একটি গুরুতর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।

আপনি আপনার বিশ্বাস ভাগ করে নেন কিনা তা নিয়ে শয়তান চিন্তিত নয়, সমস্যা হল যদি আপনি প্রার্থনা না করেন, কারণ সে জানে মানুষের কাছে ঈশ্বরের কথা বলার চেয়ে ঈশ্বরের কাছে মানুষের সম্পর্কে বলা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যদি একটি স্থানীয় মন্ডলীর পরিচর্যা কাজে যুক্ত হয়ে ওঠেন তাতে শয়তানের কিছুই এসে যায় না, কিন্তু যদি আপনি প্রার্থনা না করেন, তাহলে আপনি সক্রিয় হয়ত থাকবেন কিন্তু আপনি সেই অর্থে কিছুই সম্পন্ন করে উঠতে পারবেন না।[1]

প্রার্থনা ছিল যিশুর পার্থিব পরিচর্যা কাজের কেন্দ্রীয় বিষয় । কোনোকিছুই প্রার্থনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যিশুর পরিচর্যা কাজ তাঁর স্বর্গস্থ পিতার সাথে তাঁর সম্পর্কের উপর ভিত্তিশীল ছিল। সেই সম্পর্ক প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের সাথে নিবিড় সহভাগিতার মাধ্যমে বজায় ছিল।

[2]► এই পাঠটি অধ্যয়ন করার আগে আপনার জীবন এবং পরিচর্যা কাজে প্রার্থনার ভূমিকা পর্যালোচনা করুন। প্রশ্ন করুন:

  • আমার প্রার্থনার জীবন কি অবিচলিত?

  • শেষবার কখন আমি আমার প্রার্থনার একটি নির্দিষ্ট উত্তর দেখেছিলাম?

  • আমার প্রার্থনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতাগুলি কী কী?

  • আমি কি আমার প্রার্থনার জীবনে বৃদ্ধি পাচ্ছি?


[1]Howard G. Hendricks, “Prayer—the Christian’s Secret Weapon” থেকে অভিযোজিত। Veritas-এ পুনর্মুদ্রিত, জানুয়ারী ২০০৪
[2]

“প্রার্থনা হল আত্মার ব্যায়ামাগার।”

-স্যামুয়েল সোয়েমার (Samuel Zwemer, “Apostle to Islam”)

প্রার্থনার ক্ষেত্রে যিশুর দৃষ্টান্ত

যিশুর পরিচর্যা কাজের সময়কাল জুড়ে, আমরা তাঁকে চূড়ান্ত মুহূর্তগুলিতে প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকতে দেখেছি। সুসমাচার পুস্তকগুলি ১৫টি নির্দিষ্ট ঘটনার কথা উল্লেখ করে যখন যিশু প্রার্থনা করেছেন। প্রার্থনা কখনোই দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত বিষয় ছিল না; প্রার্থনা তাঁর জীবনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

অন্যান্য লেখকদের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায়, লূক যিশুর পরিচর্যা কাজে প্রার্থনাকে উল্লেখ করেছেন। একমাত্র লূক আমাদের বলেছেন যে যিশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে বেছে নেওয়ার আগে সারারাত প্রার্থনা করেছিলেন (লূক ৬:১২)। একমাত্র লূক আমাদের জানিয়েছেন রূপান্তর সেই সময়ে ঘটেছিল যখন যিশু পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিয়ে প্রার্থনার জন্য পর্বতে গিয়েছিলেন (লূক ৯:২৮)। এই উএল্লেখ প্রেরিত অধ্যায়ে অব্যাহত রয়েছে কারণ লূক ৩৫বার প্রথম শতকের মন্ডলীর প্রার্থনার ভূমিকা সম্পর্কে লিখেছেন।

যিশুর দৈনন্দিন পরিচর্যা কাজে প্রার্থনা

► মার্ক ১:৩২-৩৯ পড়ুন।

যিশুর পরিচর্যা কাজের প্রথমদিকের এই কাহিনীটি দেখায় যে কীভাবে প্রার্থনা এবং সেবা সম্পর্কযুক্ত। এই কাহিনীটির উত্তরণটি লক্ষ্য করুন। আগেরদিন সন্ধ্যেবেলা লোকেরা যিশু যে বাড়িটিতে ছিলেন তার বাইরে জড়ো হয়েছিল, এবং তিনি তাদের অনেককেই সুস্থ করেছিলেন।

খুব সকালে, যিশু প্রার্থনার জন্য একটি জনমানবশূন্য স্থানে গিয়েছিলেন। শিমোন পিতর তাঁকে খুঁজতে এসে বলেছিলেন, “সবাই আপনার খোঁজ করছে”। যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “চলো, আমরা অন্য কোথাও—কাছের গ্রামগুলিতে যাই, যেন ওইসব জায়গাতেও আমি বাণী প্রচার করতে পারি, কারণ সেজন্যই আমি এসেছি”। যিশুর পরিচর্যা কাজের বিন্যাসটি ছিল সেবার সাথে প্রার্থনা।

এটিই পরিচর্যা কাজের বিন্যাস হওয়া উচিত। প্রার্থনা ছাড়া আমাদের সেবা আত্মিকভাবে ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। সেবা ছাড়া আমাদের প্রার্থনার জীবন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে; আমরা আমাদের আশেপাশের লোকেদের চাহিদা পূরণ করার কোনো চেষ্টা করি না। যিশু দেখিয়েছেন যে প্রার্থনা এবং সেবাকে সংযুক্ত করা আবশ্যক।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে প্রার্থনা

► লূক ৬:১২-১৬ পড়ুন।

যিশুর পরিচর্যা কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বারোজন প্রেরিতকে বেছে নেওয়া। যারা তাঁকে প্রচার করতে শুনেছিল, সেই হাজার হাজার লোকের মধ্যে অনেকেই শিষ্য হিসেবে আহুত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নিকটস্থ ছিল (যোহন ৬:৬০, ৬৬)। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ৭২ জন একটি প্রচারমূলক সফরে যিশুর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যথেষ্ট সুদক্ষ ছিল (লূক ১০:১)। কিন্তু যিশু মাত্র বারোজনকে প্রেরিত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

বারোজন প্রেরিত যিশুর সাথে অনেকটা সময় কাটিয়েছিলেন। তারা তাঁর পার্থিব পরিচর্যা কাজের শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিলেন। তাঁর স্বর্গারোহণের পর, প্রেরিতদের মধ্যে এগারোজন প্রথম শতকের মন্ডলীর নেতা হয়েছিলেন। বারোজনকে নির্বাচন করা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যিশু কোনো বই লেখেননি বা কোনো শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেননি। মন্ডলীর জন্য তাঁর দর্শন এই লোকদের দ্বারাই পূর্ণ হবে।

বারোজন প্রেরিতকে নির্বাচন করার আগে যিশু কী করেছিলেন? তিনি প্রার্থনা করেছিলেন। এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়ে যিশু রাতটি প্রার্থনায় কাটিয়েছিলেন। যদি ঈশ্বরের পুত্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে এত আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে হয়, তাহলে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থনা আরও কতটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে!

কষ্টভোগের সামনে প্রার্থনা

► মথি ২৬:৩৬-৪৬ পড়ুন।

গ্রেপ্তার হওয়ার কিছু ঘণ্টা আগে যিশু প্রার্থনা করার জন্য গেৎশিমানীতে গিয়েছিলেন। কষ্টভোগের জন্য তিনি প্রার্থনার দ্বারাই প্রস্তুত হয়েছিলেন। যিশু কখনোই তাঁর মানবতার দুঃখ বা আঘাত থেকে পালানোর জন্য তাঁর ঐশ্বরিকতাকে ব্যবহার করেননি। পরিবর্তে, তিনি কষ্টভোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য শক্তি চেয়ে প্রার্থনার উপর নির্ভর করেছিলেন।

সেই বাগানে যিশুর প্রার্থনা আজকে আমাদের জন্য একটি আদর্শ। তাঁর প্রার্থনা মেকী ছিল না; যিশু কষ্টভোগের বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এটি কি আপনাকে উপলব্ধি করতে অনুপ্রাণিত করে যে যিশু অত্যন্ত মানবীয় উপায়ে কষ্টের প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন? কষ্টভোগ সহ্য করার সময়ে যিশু স্বস্তি চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন:

তিনি বাগানে এই প্রার্থনা করেননি, “ও প্রভু, আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে তুমি আমাকে তোমার পক্ষ হয়ে কষ্টভোগ করার জন্য বেছে নিয়েছ।” না, তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন, তাঁর ভয় হয়েছিল, নিজেকে পরিত্যজ্য মনে হয়েছিল, এবং এমনকি তিনি হতাশও হয়েছিলেন। তবুও তিনি সহ্য করেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে তাঁর পিতা আছেন, যিনি এক প্রেমময় ঈশ্বর যাঁর উপর তিনি পরিস্থিতি নির্বিশেষে নিশ্চিন্তে ভরসা ও বিশ্বাস করতে পারেন।[1]

কষ্টভোগের সামনে আমরা কখনোই নিজেদের সহ্যক্ষমতার বাইরে শক্তিশালী হওয়ার ভান করব না। ইয়োবের মতো আমরাও আমাদের আঘাতের সামনে কাঁদতে পারি। যিশু তাঁর মানবজীবনে ঠিক এটাই করেছিলেন! তবে, যিশুর মতো আমরা বিশ্বস্ত থাকতে পারি কারণ আমরা জানি যে আমাদের প্রেমময় স্বর্গস্থ পিতার চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

প্রার্থনার মধ্যেই আমরা আমাদের পিতার ইচ্ছাকে গ্রহণ করতে পারি। কষ্টভোগের সামনে যিশুর প্রার্থনার এবং কষ্টভোগের সামনে আমাদের প্রার্থনার মূল চাবিকাঠি হল পিতার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করা: “তবুও আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছামতো হোক।”


[1]Philip Yancey, The Jesus I Never Knew. (Grand Rapids: Zondervan, ১৯৯৫), ১৬১

প্রার্থনা সম্পর্কে যিশুর শিক্ষাদান

যিশু তাঁর নিজের দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কেবল প্রার্থনার গুরুত্ব দেখিয়েছেন তা নয়, তিনি তাঁর শিক্ষাদানের বেশিরভাগকেই প্রার্থনায় নিয়োজিত করেছেন। যিশু জানতেন যে তাঁর অনুসরণকারীদের আত্মিক জীবনের জন্য প্রার্থনার একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন প্রয়োজন। এই কারণে তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনায় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

পর্বতের উপরে প্রচারে যিশুর শিক্ষাদান

► মথি ৬:১-১৮ পড়ুন।

পর্বতের উপর প্রচারে, যিশু আত্মিক কাজের তিনটি দিকের বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন: দরিদ্রদের দান করা, প্রার্থনা করা, এবং উপবাস করা। তাঁর শিক্ষাদান থেকে এটি সুস্পষ্ট যে যিশু প্রত্যাশা করেছিলেন যে তাঁর অনুসরণকারীদের জন্য এগুলি স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে। যিশু বলেননি, “যদি তোমরা দরিদ্রদের দান করো...” বা “যদি তোমরা প্রার্থনা করো...” বা “যদি তোমরা উপবাস করো...” তিনি আশা করেছিলেন তাঁর অনুসরণকারীরা দয়ালু, প্রার্থনাশীল, এবং আত্মনিষ্ঠাবোধযুক্ত শিষ্য হবে।

যিশু দেখিয়েছিলেন যে এই ভালো কাজগুলিই অর্থহীন হয়ে যেতে পারে যদি সেগুলি খারাপ উদ্দেশ্য থেকে আসে। প্রাচীন পৃথিবীতে একজন ভণ্ড ছিল মূলত একজন অভিনেতা যে একটি নাটকে বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করার জন্য বিভিন্ন মুখোশ পরত। অন্যদের সামনে “একটি ধর্মীয় চরিত্র অভিনয় করা” সম্ভব।

  • আমাদের মহানুভবতা দিয়ে লোকদের খুশি করার জন্য দরিদ্রদের দান করার সম্ভব। যিশু বলেছেন, “তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে।”

  • আমাদের সুন্দর সুন্দর শব্দ দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করার জন্য প্রার্থনা করা সম্ভব। যিশু বলেছেন, “তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে।”

  • আমাদের ভক্তি এবং আত্মনিষ্ঠা দিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করার জন্য উপবাস করা সম্ভব। যিশু বলেছেন, “তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে।”

প্রতিটি ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তিটি দরিদ্রকে দান করেছিল, প্রার্থনা বা উপবাস করেছিল, সে অন্যদের খুশি করার জন্য কাজটি করেছিল। লোকেরা মুগ্ধ হয়েছিল; সেটাই ছিল তার পুরস্কার। তাই, সে পিতার থেকে কোনো পুরস্কার পাবে না।

স্বর্গস্থ পিতাকে খুশি করাই এই আত্মিক কাজগুলির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। দরিদ্রকে দান করা, প্রার্থনা করা বা উপবাস করা –যেটাই হোক, আমাদের পুরস্কার হল স্বয়ং ঈশ্বর। পার্থিব প্রশংসার জন্য আমাদের এই আত্মিক কাজগুলো করা উচিত নয়। পরিবর্তে, আমরা যেন অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি গভীর আকাঙ্খা থেকে এই কাজগুলি করি।

যিশু তাঁর শিষ্যদের একটি সহজ এবং সরাসরি পদ্ধতিতে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন:

হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক, তোমার রাজ্য আসুক, তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমন পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক। আমাদের দৈনিক আহার আজ আমাদের দাও। আমরা যেমন আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের ক্ষমা করেছি,তেমন তুমিও আমাদের অপরাধসকল ক্ষমা করো। আর আমাদের প্রলোভনে পড়তে দিয়ো না, কিন্তু সেই পাপাত্মা থেকে রক্ষা করো (মথি ৬:৯-১৩)।

মথি ৬:৭-৮ পদে যিশু যে অর্থহীন কথাগুলির নিন্দা করেছেন, সেগুলির মতো এই প্রার্থনাটি নিছক মুখস্থ বলার জন্য নয়। পরিবর্তে, এই প্রার্থনা এমন মনোভাবের আদর্শ তুলে ধরে যেটির আমাদের আমাদের প্রার্থনাকে নির্দেশনা দেওয়া উচিত:

সম্পর্ক

“আমাদের স্বর্গস্থ পিতা” ঈশ্বরের সাথে আমাদের এক নিবিড় সম্পর্ককে দেখায়। খুব দূরবর্তী এক ঐশ্বরিক সত্তার পরিবর্তে, আমরা ঈশ্বরকে এমন একজন পিতা হিসেবে চিনি যিনি তাঁর সন্তানদের ভালো ভালো উপহার দিতে ভালোবাসেন (মথি ৭:১১)। এই কথাগুলি ঘনিষ্ঠতা (“আমাদের…পিতা”) এবং আধিপত্য (“স্বর্গে”) দুটোকেই বোঝায়। ঈশ্বর রাজকীয় এবং ব্যক্তিগত উভয়ই।

সম্মান

“তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক” আমাদের এবং স্বর্গস্থ পিতার মধ্যে পার্থক্য দেখায়। যদিও ঈশ্বর একজন প্রেমময় পিতা, তিনি পবিত্র।[1] উপদেশকের জ্ঞানী ব্যক্তি যেমন শিখিয়েছেন, আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের উপস্থিতিতে শ্রদ্ধা ও ভীতির সাথে প্রবেশ করতে হবে। (উপদেশক ৫:২)

সমর্পণ

“তোমার রাজ্য আসুক, তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমন পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক” তাঁর কর্তৃত্বের কাছে আমাদের স্বেচ্ছা সমর্পণকে তুলে ধরে। ঠিক যেভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা নিখুঁতভাবে স্বর্গে পরিপূর্ণ হয়, আমাদের প্রার্থনা করা উচিত যেন তা পৃথিবীতেও পরিপূর্ণ হয়।

সংস্থান

পৃথিবীতে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষকে দৈনন্দিন খাবারের জন্য আবশ্যিকভাবে কাজ করতে হয়। “আমাদের দৈনিক আহার আজ আমাদের দাও” পিতার প্রতি আমাদের দৈনন্দিন ভরসাকে তুলে ধরে। তাঁর সন্তান হিসেবে, আমাদের প্রয়োজন জোগানোর জন্য তাঁকে আমরা বিশ্বাস করি।

স্বীকারোক্তি

“আমরা যেমন আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের ক্ষমা করেছি,তেমন তুমিও আমাদের অপরাধসকল ক্ষমা করো”। লূক ১১:২-৪ পদে এই একই প্রার্থনাটি উল্লেখ করা হয়েছে “আর আমাদের সব পাপ ক্ষমা করো,যেমন আমরাও নিজেদের সব অপরাধীকে ক্ষমা করি”। যেহেতু আমাদের পাপ হল ঈশ্বরের কাছে একটি ঋণ, (কলসীয় ২:১৪) তাই মথি এবং লূক দুটিতেই এর অর্থটি সমান।

আমাদের অন্যদেরকে ক্ষমা করাকে ঈশ্বরের দ্বারা আমাদের ক্ষমা পাওয়ার সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে যিশু আমাদের এই শিক্ষা দেননি যে আমরা ক্ষমা অর্জন করি। পরিবর্তে, যারা আমাদের সাথে অন্যায় করেছে তাদের আমরা–যারা ক্ষমা পেয়েছি–স্বেচ্ছায় ক্ষমা করে দিই। ক্ষমাশীল দাসের ব্যাপারে বলা যিশুর উপমা আমাদের ক্ষমাশীলতা এবং অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের ইচ্ছার মধ্যে সম্পর্ক দেখায় (মথি ১৮:২১-৩৫)।

বিজয়

“আর আমাদের প্রলোভনে পড়তে দিয়ো না, কিন্তু সেই পাপাত্মা থেকে রক্ষা করো” হল প্রলোভন এবং পরীক্ষার উপর বিজয়ের জন্য একটি প্রার্থনা। ঈশ্বর কখনোই তাঁর সন্তানদের প্রলোভিত করেন না (যাকোব ১:১৩), কিন্তু আমারা প্রত্যেকেই পরীক্ষা এবং প্রলোভনের সম্মুখীন হব। সেই সময়গুলিতে ঈশ্বর কখনোই আমাদেরকে আমাদের সহ্যক্ষমতার বাইরে প্রলোভিত হতে দেবেন না (১ করিন্থীয় ১০:১৩)।

ব্যাকুলভাবে প্রার্থনার বিষয়ে যিশুর শিক্ষা

► লূক ১১:১-১৩ পড়ুন।

লূক একটি উপমার সাহায্যে প্রভুর প্রার্থনা অনুসরণ করেছেন যেটি আমাদের এমন একজন পিতার কাছে ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করতে শেখায় যিনি তাঁর সন্তানদের ভালো ভালো উপহার দিতে ভালোবাসেন। মধ্যপ্রাচ্যে অতিথির সেবা করার জন্য প্রতিবেশীদের থেকে ধার করা প্রচলিত ছিল। যদি কোনো ব্যক্তি ব্যাকুলভাবে কিছু চাইত, তার প্রতিবেশী প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়ে দিত। সেই সংস্কৃতিতে, কোনো অনুরোধে “না” বলাকে রূঢ় আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা হত। এমনকি প্রতিবেশী তার পরিবারকে বিরক্ত করতে না চাইলেও, সে সাহায্যের জন্য ডাক এলে তা প্রত্যাখ্যান করত না।

এর চেয়েও বড় বিষয় হল, ঈশ্বর সেই উত্তম উপহারগুলি তাঁর সেই সন্তানদের দিতে চান, যারা সাহসের সঙ্গে তা যাচ্ঞা করে। ঠিক যেভাবে এই উপমার ব্যক্তিটি ব্যাকুলভাবে চাইছে, আমরাও আমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছে আত্মবিশ্বাসের সাথে চাইতে পারি। কেন? এই কারণে নয় যে ঈশ্বর আমাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে লজ্জিত হবেন, বরং এর কারণ হল আমাদেরকে চাওয়ার, খোঁজ করার এবং কড়া নাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে (লূক ১১:৯)।


[1]“পবিত্র” কথাটির অর্থ হল “আলাদা হওয়া”

একটি গভীর পর্যবেক্ষণ: হিব্রু শিক্ষাশৈলী

লূক ১১:-১৩ পদে যিশু একজন ব্যক্তির কাহিনী বলেছেন যে তার সেই প্রতিবেশীকে সাহায্য করার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠতে চায় না যার একজন অতিথির জন্য কিছু খাবার ধার করার দরকার।

এই উপমাটি বোঝার জন্য আপনাকে হিব্রু শিক্ষাশৈলীটি বুঝতে হবে—কম থেকে বেশি'র যুক্তি। এই শিক্ষা পদ্ধতিটি বলছে, “যদি ক (কম) সত্যি হয়, তাহলে খ (বেশি) আরো কত বেশি মাত্রায় সত্যি।” আজকের সময়ে আমরা বলতে পারি, “যদি একজন ব্যক্তি একজন অভুক্ত অপরিচিত ব্যক্তিকে (ক) খাবার দেয়, তাহলে আরো কত বেশি মাত্রায় একজন প্রেমময় পিতা তাঁর সন্তানদের (খ) খাওয়াবেন।”

আপনি যখন দৃষ্টান্তটি পড়বেন, তখন মনে করবেন না যে “ঈশ্বর হলেন সেই অনিচ্ছুক প্রতিবেশীর মতো। আমাকে অবশ্যই তাঁকে আমার প্রার্থনার উত্তর দিতে রাজি করাতে হবে।” পরিবর্তে, যিশু অনিচ্ছুক বন্ধুকে একজন ইচ্ছুক স্বর্গীয় পিতার সাথে তুলনা করেছেন। একজন পার্থিব প্রতিবেশী যদি ব্যাকুল অনুরোধে সাড়া দেয়, তাহলে স্বর্গস্থ পিতা তাঁর সন্তানদের প্রতি আরো কত বেশি মাত্রায় সাড়া দেবেন!

প্রার্থনা সম্পর্কে যিশুর শিক্ষাদান (ক্রমশ)

ব্যাকুলভাবে প্রার্থনার বিষয়ে যিশুর শিক্ষা (ক্রমশ)

প্রার্থনা হল একটি সম্পর্ক।

যদি ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের প্রার্থনার উত্তর দিতে চান, তাহলে কেন মাঝে মাঝে তাঁর উত্তর দেরি করে? চাও, খোঁজ করো, এবং কড়া নাড়ো হল [ব্যাকরণে] বর্তমান কাল নির্দেশক আজ্ঞা। এগুলি বোঝায় যে আমাদের ক্রমাগত চাইতে, খুঁজতে এবং কড়া নাড়তে হবে। কেন?

[1]একটি কারণ হল যে প্রার্থনা একটি অনুরোধের তালিকা দেওয়ার চেয়েও অনেক বড় একটি বিষয়। প্রার্থনা হল আমাদের স্বর্গস্থ পিতার সাথে একটি চলমান সম্পর্ক। ঠিক যেমন পৌল আমাদের আজ্ঞা দিয়েছেন, “অবিরত প্রার্থনা করো,” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭)। যিশু আমাদের ক্রমাগত চাইতে, খোঁজ করতে, এবং কড়া নাড়তে আদেশ করেছেন। ঈশ্বরের সাথে এই চলমান কথোপকথনের মাধ্যমে, আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। প্রার্থনা অনুরোধের তালিকার চেয়ে বেশি; প্রার্থনা হল একটি সম্পর্ক।

অবিচলভাবে প্রার্থনা করার সম্পর্কে একটি দৃষ্টান্ত

লূক ১৭ পদে ফরিশীরা যিশুকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য কবে আসবে। তিনি তাদের উত্তর দিয়েছিলেন যে তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য চিহ্নের প্রত্যাশা করা উচিত নয়। পরিবর্তে, তিনি তাদের বলেছিলেন, “ঈশ্বরের রাজ্য বিরাজ করছে তোমাদের মধ্যেই” (লূক ১৭:২০-২১)। যারা যিশুকে অনুসরণ করছে ঈশ্বরের রাজ্য ইতিমধ্যেই তাদের মধ্যে বিরাজ করছে।

যিশু তারপর তাঁর শিষ্যদের দিকে ফেরেন এবং তাঁদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কে শিক্ষা দেন। তাঁরা আশা করেছিলেন যে যিশু অবিলম্বে একটি রাজনৈতিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন, কিন্তু যিশু তাঁদেরকে তাঁর মৃত্যুর পরেও অপেক্ষা করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। অপেক্ষা করার সময়ে, তাদের অবশ্যই প্রার্থনায় অবিচল থাকতে হবে এবং আশা হারালে চলবে না। যিশু তখন বিশ্বস্ত প্রার্থনা সম্পর্কে একটি কাহিনী বলেছিলেন।

[2]► লূক ১৮:১-৮ পড়ুন।

বহু প্রাচীন শহরেই বিচারকরা খুব অসৎ ছিলেন। ঘুষ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ সহজে বিচার পেত না। এই বিধবার কাছে বিচারককে ঘুষ দেওয়ার মতো টাকা ছিল না, তাই তিনি তার মামলা শুনতে রাজি হননি। তবে এই অবিচল মহিলাটি হাল ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি। অবশেষে, অধার্মিক বিচারক বলেছিলেন, “এই বিধবা যেহেতু আমাকে বারবার জ্বালাতন করে চলেছে, তাই সে যেন ন্যায়বিচার পায়”।

এই দৃষ্টান্তটি সেই ব্যাকুল প্রতিবেশীর দৃষ্টান্তের অনুরূপ “কম থেকে বেশি”-র শিক্ষাশৈলী ব্যবহার করেছে। আপনি যখন এই দৃষ্টান্তটি পড়বেন, তখন বুঝবেন:

  • ঈশ্বর একজন অধার্মিক বিচারক নন। আমাদের পিতা তাঁর নির্বাচিতদের ন্যায়বিচার দিতে চান।

  • আমরা সেই বিধবা মহিলাটি নই। সে একজন অপরিচিত ছিল; আমরা ঈশ্বরের সন্তান।

  • সে বিচারকের কাছে যাওয়ার অধিকার পায়নি; যিশুর মাধ্যমে, আমাদের ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার অধিকার আছে।

এটি বৈপরীত্যের একটি উপমা। যদি একজন অধার্মিক বিচারক একজন অবিচল বিধবাকে উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা তাঁর সন্তানদের প্রার্থনায় আরো কত বেশি মাত্রায় উত্তর দেবেন।

বিনম্র প্রার্থনার একটি দৃষ্টান্ত

► লূক ১৮:৯-১৪ পড়ুন।

যিশুর পরবর্তী উপমাটি তাদের উদ্দেশ্যে ছিল “নিজেদের ধার্মিকতার প্রতি যাদের আস্থা ছিল ও অন্যদের যারা হীনদৃষ্টিতে দেখত”। এই উপমাটি প্রার্থনায় উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষা দেয়।

উপমাটির মূল বক্তব্যটি একদম শেষে রয়েছে: “যে কেউ নিজেকে উন্নত করে, তাকে নত করা হবে, আর যে কেউ নিজেকে নত করে তাকে উন্নত করা হবে”। ফরিশীরা ভাবত তাদের ধার্মিকতার কারণে প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়। যিশু দেখান যে প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয় সেইসব ব্যক্তিদের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহের কারণে যাদের নিজস্ব কোনো ধার্মিকতা নেই। কেউই উত্তরযুক্ত প্রার্থনার যোগ্য নয়; যারা কিছুই পাওয়ার যোগ্য নয় তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের কারণে ঈশ্বর প্রার্থনায় সাড়া দেন।


[1]

“প্রার্থনা কোনো জিনিস চাওয়ার এবং আমরা যা চাই তা পাওয়ার বিষয় নয়। প্রার্থনা হল ঈশ্বরের কাছে চাওয়া এবং আমাদের যা প্রয়োজন তা পাওয়া।” – ফিলিপ ইয়ান্সে (Philip Yancey)

[2]

“প্রার্থনা ঈশ্বরের অনিচ্ছা কাটিয়ে ওঠা নয়। প্রার্থনা হল ঈশ্বরের ইচ্ছাকে ধরে রাখা।”

- মার্টিন লুথার
(Martin Luther)

প্রয়োগ: খ্রিষ্টবিশ্বাসীর জীবনে প্রার্থনা

খ্রিষ্টসাদৃশ্য লোকেরা হল প্রার্থনাশীল ব্যক্তি। ১৯ শতকে ইংল্যান্ডের লিভারপুলের বিশপ জে. সি. রাইল (J.C. Ryle) ইতিহাসের মহান খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জীবন অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন ধনী, কেউ বা গরীব। কেউ শিক্ষিত ছিলেন; কেউ ছিলেন কম শিক্ষিত। কেউ ক্যালভিনিস্ট ছিলেন; কেউ ছিলেন আর্মিনীয়। কেউ মন্ডলীতে প্রচলিত বিধিবদ্ধ উপাসনাপদ্ধতি [লিটার্জি] ব্যবহার করতেন; কেউ স্বাধীন ছিলেন। “কিন্তু সকলের মধ্যে একটিই বিষয় সর্বজনীন ছিল। তারা সকলেই ছিলেন প্রার্থনাশীল ব্যক্তি।”[1]

মন্ডলীর ইতিহাস জুড়ে খ্রিষ্টসাদৃশ্য ব্যক্তিরা সবসময়ের জন্যই প্রার্থনাশীল ব্যক্তি হয়ে এসেছেন। মহান খ্রিষ্টীয় নেতা ই. এম. বাউন্ডস (E.M. Bounds), প্রত্যেকদিন সকালে ৪:০০-৭:০০ পর্যন্ত প্রার্থনা করতেন। তিনি লিখেছেন, “পবিত্র আত্মা পদ্ধতির মাধ্যমে নয়, কিন্তু মানুষের মাধ্যমে প্রবাহিত হন। তিনি কোনো সরঞ্জামের উপরে নয়, কিন্তু মানুষের উপরে নেমে আসেন। তিনি পরিকল্পনাকে নয়, মানুষকেপ্রার্থনাশীল মানুষকে অভিষিক্ত করেন।”[2]

জর্জ মুলার (George Müller) হাজার হাজার বাচ্চাদের অনাথ আশ্রম চালাতেন। তিনি স্থির করেছিলেন যে তিনি কোনো মানুষের কাছে সাহায্য চাইবেন না, পরিবর্তে প্রার্থনার উপর নির্ভর করবেন। তিনি কেবল প্রার্থনার মাধ্যমেই ৭০ লক্ষ ডলার পেয়েছিলেন। মুলার কেবল তার অনাথ আশ্রমগুলিকে সহায়তা করেছিলেন তা নয়, তিনি অন্যান্য মিনিস্ট্রিতেও কয়েক হাজার ডলার দান করেছিলেন। জর্জ মুলার প্রার্থনার শক্তি জানতেন।

কেন আমরা প্রার্থনা করি?

[3]আমরা প্রার্থনা করি কারণ আমরা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল।

যিশু তাঁর মানবতায় তাঁর পিতার সাথে কথা বলার জন্য প্রার্থনার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। প্রার্থনা হল ঈশ্বরের উপর নির্ভরতার একটি প্রকাশ। এটি দেখায় যে আমরা নিজেদের ওপর নয়, কিন্তু ঈশ্বরের উপর নির্ভর করি।

► মথি ২৬:৩১-৪৬ পড়ুন।

শিমোন পিতরের পতন প্রার্থনার গুরুত্ব দেখায়। যিশু তাঁর শিষ্যদের সতর্ক করেছিলেন, “এই রাত্রিতে তোমরা সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।” আরো সরাসরিভাবে যিশু পিতরকে সতর্ক করেছিলেন, “শিমোন, শিমোন, শয়তান তোমাদেরকে গমের মতো ঝাড়াই করার জন্য অনুমতি চেয়েছে” (লূক ২২:৩১)। দু’টি দুর্বলতার কারণে পিতর ব্যর্থ হয়েছিলেন।

১। পিতর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, “সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেলেও, আমি কিন্তু কখনও যাব না ….আপনার সঙ্গে যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হয়, তাহলেও আমি আপনাকে কখনোই অস্বীকার করব না” (মথি ২৬:৩৩, ৩৫)। অহংকার পিতরকে তার নিজের শক্তির উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল।

২। পিতর প্রার্থনা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নিজের শক্তির উপর আত্মবিশ্বাসী থাকায় পিতর ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেননি। যিশুর সাথে প্রার্থনায় যোগদান করার পরিবর্তে, পিতর ঘুমিয়েছিলেন। আমরা সবচেয়ে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি যখন আমরা ঈশ্বরের উপর আমাদের সম্পূর্ণ নির্ভরতা উপলব্ধি করি। ডিক ইস্টম্যান (Dick Eastman) লিখেছেন, “কেবল প্রার্থনাতেই আমরা আমাদের সমস্যাগুলি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করি।”[4]

[5]আরো পরিপূর্ণভাবে ঈশ্বরকে জানার জন্য আমরা প্রার্থনা করি।

আধুনিক মন্ডলীর একটি বড় দুর্বলতা হল ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের অগভীর জ্ঞান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আমাদের প্রার্থনার অনুরোধ কেবল বস্তুগত চাহিদা এবং ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা নিয়ে গঠিত থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এইরকম প্রার্থনা করার জন্য বেশি সময় ব্যয় করে, “হে ঈশ্বর, দয়া করে আমার সন্তানদের একটি ভাল চাকরি পেতে সাহায্য করো”, “হে ঈশ্বর, দয়া করে আমার সন্তানদের তোমার প্রতিমূর্তিতে গড়ে তোলো।” আমরা আত্মিক নিরাময়ের চেয়ে শারীরিক নিরাময়ের জন্য আরো বেশি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি। এটি দেখায় যে আমরা প্রার্থনার প্রকৃত অর্থ বুঝি না।

প্রার্থনার প্রাথমিক উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হল ঈশ্বরকে আরো পরিপূর্ণভাবে জানা। প্রার্থনায় আমরা ঈশ্বরের হৃদয়ের সাথে মিলিত হই। আমরা যা করতে চাই তা ঈশ্বরকে করতে বাধ্য করা “প্রার্থনা” নয়। প্রার্থনা আমাদেরকে ঈশ্বরের হৃদয় বুঝতে পারার জ্ঞান প্রদান করে, যতক্ষণ না আমরা সেটাই চাই যা তিনি চান।

যখন আমরা এরকম অবস্থানে পৌঁছাই, যিশু বলেছেন, “তোমরা প্রার্থনায় যা কিছু চাও, বিশ্বাস করো যে তোমরা তা পেয়ে গিয়েছ, তবে তোমাদের জন্য সেরকমই হবে” (মার্ক ১১:২৪)। যেহেতু আমাদের হৃদয় ঈশ্বরের হৃদয়ের সাথে এক সুরে বাঁধা, তাই আমরা ভুল উদ্দেশ্য থেকে বা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু চাইব না (যাকোব ৪:৩ এবং ১ম যোহন ৫:১৪)। ঈশ্বরের হৃদয়ের এই জ্ঞান নিয়মিত প্রার্থনার মাধ্যমে আসে।

পিউরিটানরা (Puritans) বলেন যে আমাদের অবশ্যই “প্রার্থনা করতে হবে যতক্ষণ না আমরা প্রার্থনা করছি।” অন্য কথায়, অর্থহীন কথাগুলিকে সরিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতিতে প্রবেশ করার জন্য আমাদের অবশ্যই যথেষ্ট দীর্ঘ এবং ধৈর্য সহকারে প্রার্থনা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ততক্ষণ প্রার্থনা করতে হবে যতক্ষণ না আমরা ঈশ্বরে আনন্দ করছি।

► এমন একটি সময়ের কথা বলুন যখন প্রার্থনা আপনাকে ঈশ্বর এবং তাঁর ইচ্ছা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করেছিল।

আমরা কীভাবে প্রার্থনা করি?

প্রার্থনার ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা সক্রিয় প্রার্থনা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখি।

আমরা ধৈর্য সহকারে প্রার্থনা করি।

যিশু ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র। কেউ আশা করতেই পারে যে তাঁর প্রার্থনার জীবন সাধারণ কথাগুলি বলার মতো একটি বিষয় হবে, “পিতা, তুমি কি চাও যে আমি করি?” এবং তিনি অবিলম্বে উত্তর পাবেন! পরিবর্তে, আমরা বারোজন প্রেরিতশিষ্যকে নির্বাচন করার আগে যিশুকে সারা রাত প্রার্থনায় কাটাতে দেখি। আমরা তাঁকে গেৎশিমানী বাগানে প্রার্থনায় মল্লযুদ্ধ করতে দেখি। এমনকি যিশুর ক্ষেত্রেও প্রার্থনায় ধৈর্য এবং সময় প্রয়োজন হয়েছিল। প্রার্থনা হল ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করা।

প্রার্থনায় অপেক্ষা করার গুরুত্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে গ্লেন প্যাটারসন (Glenn Patterson) বলেছেন, “আমরা যখন অপেক্ষা করছি, তখন ঈশ্বর আমাদের মধ্যে কী করছেন তা আমরা কীসের জন্য অপেক্ষা করছি সেটির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। অপেক্ষা করা হল ঈশ্বরের আমাদেরকে যা গড়ে তুলতে চান তা গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার অংশ।” আমরা ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে, আমরা তাঁকে আরো ভালোভাবে জানতে শিখি।

গীত ৩৭:১-৯ প্রার্থনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় শেখায়। এই আজ্ঞাগুলি লক্ষ্য করুন:

  • [6]বিচলিত হবেন না।

  • সদাপ্রভুতে আস্থা রাখুন।

  • সদাপ্রভুতে আনন্দ করুন।

  • আপনার চলার পথ সদাপ্রভুতে সমর্পণ করুন।

  • তাঁর উপর নির্ভর রাখুন।

  • সদাপ্রভুর সামনে নীরব থাকুন।

  • ধৈর্য ধরে তাঁর প্রতীক্ষায় থাকুন।

  • রাগ থেকে দূরে থাকুন।

  • বিচলিত হবেন না (পুনরায়!)।

এই আজ্ঞাগুলি এমন একজন ঈশ্বরের প্রতি একটি ধৈর্যশীল বিশ্বাসকে নির্দেশ করে যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন এবং আপনার হৃদয়ের আকাঙ্খা পূরণ করবেন (গীত ৩৭:৪)। ধৈর্যশীল প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি হয়ে উঠি যা ঈশ্বর আমাদের জন্য চান।

[7]অবিচল প্রার্থনার একটি নমুনা

জর্জ মুলার (George Müller) তার খ্রিষ্টীয় জীবনের প্রথমদিকে তার পাঁচ বন্ধুর মন পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। বহু মাস পরে, তাদের মধ্যে একজন প্রভুর কাছে আসেন। দশ বছর পর, অন্য দু’জন রূপান্তরিত হয়েছিলেন। চতুর্থ ব্যক্তিটির পরিত্রাণ পেতে ২৫ বছর সময় লেগেছিল।

মুলার তার মৃত্যু পর্যন্ত পঞ্চম বন্ধুটির জন্য প্রার্থনায় অবিচল ছিলেন। ৫২ বছর ধরে, তিনি কখনোই প্রার্থনায় হাল ছেড়ে দেননি যে এই বন্ধুটি খ্রিষ্টকে গ্রহণ করবেন কিনা! মুলারের মৃত্যুর কয়েক দিন পরে, পঞ্চম বন্ধু পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। মুলার অবিচল প্রার্থনায় বিশ্বাসী ছিলেন।

আমরা নম্রভাবে প্রার্থনা করি।

যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক” (লূক ২২:৪২)। যিশু জানতেন যে তিনি তাঁর পিতার নিখুঁত ইচ্ছার উপর বিশ্বাস করতে পারেন।

প্রার্থনা হল একটি নম্র কাজ। আমরা অন্যদের জন্য প্রার্থনা করি কারণ আমরা নিজেদের জ্ঞানে তাদের সাহায্য করতে পারি না; আমাদেরকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতেই হবে। আমরা নিজেদের জন্য প্রার্থনা করি, কারণ আমাদের শক্তিতে আমরা জীবন চালাতে পারি না; আমাদেরকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতেই হবে।

প্রার্থনা স্বীকার করে যে আমাদের ঈশ্বরের সাহায্য প্রয়োজন। আমরা যখন জীবনের সমস্যাগুলিকে সমাধান করার ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতায় আত্মবিশ্বাসী বোধ করি, তখন আমাদের আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করার সম্ভাবনা কম। যখন আমরা স্বীকার করি যে আমরা নিজেদের ক্ষমতায় জীবন পরিচালনা করতে পারি না, তখন আমরা নম্রতার সাথে প্রার্থনা করি।

আমাদের আত্মবিশ্বাসী নম্রতার সাথে প্রার্থনা করা উচিত। আমরা যখন উত্তরের জন্য ঈশ্বরের অপেক্ষা করি, তখন আমরা আশ্বাস ও শান্তি পেতে পারি কারণ আমরা এমন একজন স্বর্গস্থ পিতার কাছে প্রার্থনা করছি যিনি আমাদের ভালবাসেন এবং তাঁর সন্তানদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কামনা করেন। জীবন এবং পরিচর্যা কাজের চাপের মধ্যে, নম্র প্রার্থনা আমাদেরকে ঈশ্বরের উপর শান্তিপূর্ণ আস্থা প্রদান করে।

আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনা করি।

যিশু তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরকে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করে প্রার্থনা শুরু করতে শিখিয়েছিলেন, “আমাদের...পিতা”। প্রকৃত প্রার্থনা ব্যক্তিগত হয়। পল মিলার (Paul Miller) লিখেছেন, “বহু মানুষ কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় তা শেখার জন্য সংগ্রাম করে কারণ তারা প্রার্থনার দিকে মনোযোগ দেয়, ঈশ্বরের দিকে নয়।”[8] বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আমরা ঈশ্বরের সাথে কথা বলার পরিবর্তে “প্রার্থনা বলি”। এটি হল “অর্থহীন পুনরাবৃত্তি” (মথি ৬:৭)-র বিরুদ্ধে যিশু যে সতর্কতাটি দিয়েছিলেন তার কেন্দ্রবিন্দু।

এমন একজন ব্যক্তির কল্পনা করুন যে কিছু বিবৃতি মুখস্থ করে রাতে পরিবারের সাথে খেতে বসেছে। সে বলছে, “আমি আমাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে চাই, তাই আমি কিছু কথা মুখস্থ করে এসেছি।” এটি কোনো প্রকৃত কথোপকথন নয়! আমরা আশা করি যে একজন ব্যক্তি তার পরিবারের লোকেদের প্রতি মনোযোগ দেবে, সে যে কথাগুলি ব্যবহার করবে তার উপর নয়।

নিজের বা অন্যদের দ্বারা লিখিত প্রার্থনাগুলি আমাদেরকে সেই বিষয়গুলি মনে করিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে যা প্রার্থনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, তবে প্রার্থনা একগুচ্ছ মুখস্থ শব্দের পরিবর্তে ঈশ্বরের দিকে মনোনিবেশ করে। প্রার্থনা কোনো সিস্টেম নয়; প্রার্থনা হল একটি সম্পর্ক। প্রার্থনা অবশ্যই ব্যক্তিগত হতে হবে।

কীভাবে আমরা প্রার্থনাশীল ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি?

পঞ্চম শতকে এক রোমীয় অভিজাত নারী অ্যানিসিয়া ফ্যালটোনিয়া প্রোবা (Anicia Faltonia Proba), অগাস্টিনের কাছে প্রার্থনার ব্যাপারে কিছু পরামর্শ চেয়েছিলেন। প্রোবা জানতে চেয়েছিলেন কীভাবে একজন প্রার্থনাশীল ব্যক্তি হয়ে ওঠা যায়। অগাস্টিন প্রার্থনা সম্পর্কে বিজ্ঞ পরামর্শসহ একটি দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন।[9] এই বিভাগে আমরা অগাস্টিনের প্রার্থনার নীতিগুলি পর্যালোচনা করব।

কোন ধরণের ব্যক্তি প্রার্থনাশীল ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে?

প্রথমে, অগাস্টিন বলেছেন যে একজন প্রার্থনাশীল ব্যক্তিকে অবশ্যই এমন একজন ব্যক্তি হতে হবে যে আর অন্য অন্য কোন সম্পদ নেই। একজন প্রার্থনাশীল ব্যক্তি হল এমন একজন ব্যক্তি যে কেবল প্রার্থনার উপর নির্ভর করে।

প্রোবা ছিলেন রোমের অন্যতম সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী এবং ধনী এক ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী। তার তিনজন ছেলেই রোমীয় রাষ্ট্রদূত (consul) পদে চাকরি করতেন। অগাস্টিন প্রোবাকে লেখা চিঠিটি শুরু করেছেন এই বলে যে তাকে অবশ্যই “নিজেকে এই জগত থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে হবে।” গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা যতই ধনী, শক্তিশালী বা সফল হই না কেন, ঈশ্বরের সামনে আমাদের অসহায়ত্ব স্বীকার করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের প্রার্থনা সেই সাধারণ করগ্রাহীর প্রার্থনার বদলে ফরিশীর প্রার্থনার মতোই হবে।

আমাদের কীসের জন্য প্রার্থনা করা উচিত?

অগাস্টিন প্রোবাকে অপূর্ব পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “একটি সুখী জীবনের জন্য প্রার্থনা করুন।” এটি শুনতে স্বার্থপরের মতো লাগতে পারে, কিন্তু অগাস্টিন ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রকৃত সুখ কেবল ঈশ্বর থেকেই আসে। একজন ব্যক্তি “প্রকৃত সুখী হয় যখন তার কাছে সেই সবকিছু থাকে যা সে চায় এবং মন কিছু পেতে চায় না যা তার চাওয়া উচিত নয়।”

একজন খ্রিষ্টবিশ্বাসী সুখী কারণ তার কাছে ঈশ্বর আছে, এবং ঈশ্বর তার জন্য যা চায় না তা তার কাছে নেই। গীতরচকের কথা অনুযায়ী আমরা ঈশ্বরের উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট।

সদাপ্রভুর কাছে আমার একটিই নিবেদন, যা আমি একান্তভাবে চাই, সদাপ্রভুর সৌন্দর্য দেখবার জন্য তাঁর মন্দিরে তাঁকে অন্বেষণের উদ্দেশে, যেন আমি জীবনের সবকটি দিন সদাপ্রভুর গৃহে বসবাস করি। (গীত ২৭:৪)

যদি আমরা অন্য সবকিছুর উর্দ্ধে ঈশ্বরের উপস্থিতিকে প্রকৃত অর্থে চাই, আমরা এইটা জেনে সুখের জন্য প্রার্থনা করতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের জন্য নিজেকে প্রদান করে আমাদের গভীরতম ইচ্ছাটি পূরণ করবেন!

প্রতিকূলতার মাঝে আমাদের কীভাবে প্রার্থনা করা উচিত?

অগাস্টিন প্রোবাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে পৌল উপলব্ধি করেছিলেন যে এমন কিছু সময় আসবে যখন “সঠিক কী প্রার্থনা করতে হয়, তা আমরা জানি না” (রোমীয় ৮:২৬)। যখন আমরা অসহায়তায় পৌঁছাই তখন আমরা কীভাবে প্রার্থনা করব?

অগাস্টিন শাস্ত্রের তিনটি অংশ দেখেন। প্রথমে, তিনি পৌলের উদাহরণটি উল্লেখ করেছেন যেখানে পৌল “আমার শরীরে এক কাঁটা” থেকে তিনি মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। উদ্ধারের পরিবর্তে, ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট, কারণ আমার শক্তি দুর্বলতায় সিদ্ধিলাভ করে”। পৌল সাক্ষ্য দিয়েছেন, “অতএব, আমার দুর্বলতা সম্পর্কে আমি সানন্দে আরও বেশি গর্ব করব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপরে অবস্থিতি করে…. কারণ যখন আমি দুর্বল, তখনই আমি শক্তিমান” (২ করিন্থীয় ১২:৮-১০)।

দ্বিতীয়, অগাস্টিন গেৎশিমানীতে যিশুর উদাহরণটি উল্লেখ করেছেন। যিশু ঈশ্বরের প্রতি তাঁর ইচ্ছাকে সমর্পণ করেছিলেন। যিশু উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন: “পিতা, যদি সম্ভব হয়, এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূর করে দাও”। কিন্তু তিনি শেষে বলেছিলেন, “তবুও আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছামতো হোক” (মথি ২৬:৩৯)।

শেষে, অগাস্টিন রোমীয় ৮:২৬ উল্লেখ করেছেন। যখন আমরা জানি না কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে, তখন পবিত্র আত্মা আমাদের হৃদয়কে সাহায্য করেন। পবিত্র আত্মা আমাদের দুর্বলতায় আমাদের সাহায্য করেন এবং শব্দের অতীত গভীর আর্তস্বরে আমাদের জন্য বিনতি করেন। যখন আমাদের কাছে পর্যাপ্ত শব্দ থাকে না, তখন পবিত্র আত্মা পিতার কাছে আমাদের প্রার্থনা তুলে ধরেন, যিনি সেগুলি গ্রহণ করেন এবং সমস্ত কিছুকে একসাথে মঙ্গলের জন্য কাজ করান, বিশেষত তাদের জন্য যারা তাঁর উদ্দেশ্য অনুসারে আহুত (রোমীয় ৮:২৬-২৮)।


[1]Matt Friedeman, The Accountability Connection. (Wheaton, Illinois: Victor Books, ১৯৯২), ৩৭-এ উদ্ধৃত।
[2]Edward M. Bounds, Power Through Prayer. (Kenosha, Wisconsin: Treasures Media, n.d.), ২
[3]

“যদি আমরা প্রার্থনা ছাড়া কোনোকিছু করি, সেটা করা কি আদৌ মূল্যবান?”

-ড. হাওয়ার্ড হেনড্রিকস
(Dr. Howard Hendricks)

[4]Dick Eastman, The Hour That Changes the World. (Grand Rapids: Baker Book House, ১৯৯৫), ১২
[5]

“আমরা প্রার্থনাকে নিজের জন্য কিছু পাওয়ার উপায় হিসাবে দেখি; প্রার্থনার বাইবেলভিত্তিক ধারণা হল আমরা যেন ঈশ্বরকে জানতে পারি।”

- অসওয়াল্ড চেম্বার্স
(Oswald Chambers)

[6]

“লোকেরা আমাদের আবেদন পদদলিত করতে পারে, আমাদের বার্তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে, আমাদের যুক্তির বিরোধিতা করতে পারে, আমাদের ব্যক্তিদের অবজ্ঞা করতে পারে; কিন্তু তারা আমাদের প্রার্থনার সামনে অসহায়।”

- জে. সিডলো ব্যাক্সটার
(J. Sidlow Baxter)

[7]

“মানুষ আমাদের আবেদন নাকচ করতে পারে, আমাদের বার্তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে, আমাদের যুক্তিগুলির বিরোধিতা করতে পারে, আমাদের লোকজনকে তুচ্ছ করতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রার্থনার সামনে তারা অসহায়।“

- জে. সিডলো ব্যাক্সটার
(J. Sidlow Baxter)

[8]Paul E. Miller, A Praying Life: Connecting with God in a Distracting World. (Colorado Springs: NavPress, ২০০৯)
[9]Philip Schaff, ed. The Confessions and Letters of St. Augustine: Nicene and Post-Nicene Fathers, First Series, Volume 1. (Buffalo, New York: Christian Literature Publishing Company, ১৮৮৬), ৪৫৯-৪৬৯

উপসংহার: যখন আপনি জানেন না কীভাবে প্রার্থনা করবেন

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নীরব থাকা হল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায় যা আপনি করতে পারেন।[1] আপনি প্রার্থনা করতে চান, কিন্তু আপনি জানেন না কীভাবে করবেন; প্রার্থনা আসবে না। আপনি তখন কী করবেন? একটি গুপ্ত সত্য আপনাকে বুঝতে হবে যা হল খ্রিষ্ট হলেন আমাদের মহান মহাযাজক।

ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমরা সমস্ত বিশ্বাসীর যাজকত্বে বিশ্বাস করি। এই মহান সংস্কারসাধন (Reformation) ধর্মতত্ত্ব শেখায় যে আমাদের প্রত্যেকের পিতার সমীপে আসার অধিকার আছে। তবে, যদি বুঝতে ভুল হয়, তাহলে এই ধর্মতত্ত্বটি আত্মিক সংগ্রামের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি সন্দেহে পরিপূর্ণ হতে পারি: “আমি কি যথেষ্ট প্রার্থনা করেছি? আমি কি সত্যিই আমার ভূমিকা পালন করেছি?”

২০১৩ সালের একটি কনফারেন্সে প্রফেসর অ্যালান টরেন্স (Alan Torrance) এই প্রশ্নগুলি নিয়ে তার সংগ্রামের ব্যাপারে এই সাক্ষ্যটি দিয়েছিলেন।

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে আমার স্ত্রী জেন (Jane) ক্যান্সারে মারা যান। তিনি একজন খুব ভালো খ্রিষ্টবিশ্বাসী নারী, স্ত্রী এবং মা ছিলেন। ক্যান্সার তার দেহে যত ছড়িয়ে পড়ছিল তত তাকে মৃত্যুযন্ত্রণা পেতে দেখা খুবই কঠিন ছিল এবং আমাদের সন্তানদের তার কষ্টের সাক্ষী হওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। এমন অনেক সময় ছিল যখন আমার দুঃখের মধ্যে, কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে এবং কীসের জন্য প্রার্থনা করতে হবে তা জানতে আমি সংগ্রাম করেছি। আমি প্রার্থনা করতে জানতাম না।

সেই সময়ে, খ্রিষ্টের যাজকত্ব অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে যা আমি বলে বোঝাতে পারব না। যখন আমি জেনকে আমার হাতে ধরেছিলাম, তখন সেই উর্ধ্বস্থিত যাজক (যিশুখ্রিষ্ট) আমাদের পক্ষ হয়ে মধ্যস্থতা পূর্বক বিনতি করছিলেন। আমরা তাঁর সান্নিধ্যে বিশ্রাম নিতে পেরেছিলাম।

সেই সময়ে আমি যে প্রার্থনাটি করে যেতাম সেটি ছিল প্রভুর প্রার্থনা। আমি কোনোভাবেই নিজের কথা দিয়ে প্রার্থনা করতে পারতাম না। “আমার পিতা, যিনি স্বর্গে আছেন—আমি যেখানে আছি সেখান থেকে অনেক দূরে।” পরিবর্তে, পবিত্র আত্মা দ্বারা আমি প্রার্থনা করেছিলাম, “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক...তোমার রাজ্য আসুক, তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে”

খ্রিষ্টের অবিরাম যাজকত্বের তাৎপর্য আবিষ্কার করার অর্থ হল সুসমাচারকে এমনভাবে জানা যা আমাদের জীবন এবং আরাধনার প্রতিটি অংশকে রূপান্তরিত করে।

আমরা সমস্ত বিশ্বাসীর যাজকত্বের বিষয়টিকে ভুল বুঝি যখন আমরা ভাবি যে এর অর্থ হল আমরা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব আত্মিক শক্তিতে পিতার কাছে পৌঁছাব। এটি একটি ভুল। সমস্ত বিশ্বাসীর যাজকত্ব প্রকাশ করে যে আমাদের খ্রিষ্ট ছাড়া আর অন্য কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই। তিনিই হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আমাদের জন্য বিনতি করেন, প্রার্থনায় আমাদের ভগ্ন প্রচেষ্টাগুলি গ্রহণ করেন, এবং গ্রহণযোগ্য বলিদানরূপে সেগুলিকে পিতার কাছে উপস্থাপন করেন। আমাদের প্রার্থনা পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিযুক্ত হয় এবং আমাদের মহাযাজক যিশু খ্রিষ্টের মাধ্যমে তা মধ্যস্থতাপ্রাপ্ত হয়।

যখন আপনি জানেন না যে কীভাবে প্রার্থনা করবেন, তখন নিরাশ হবেন না। একজন আছেন যিনি আমাদের জন্য প্রার্থনা করছেন, আমাদের পক্ষ হয়ে নতজানু হচ্ছেন, পিতার কাছে বিনতি করছেন, আমরা যা বলতে পারি না তা বলছেন।


[1]এই অংশটি Marc Cortez, Everyday Theology থেকে অভিযোজিত।

২ নং পাঠের অ্যাসাইনমেন্ট

মুদ্রণযোগ্য PDF এখানে উপলভ্য।

(১) একটি কনকর্ডেন্স বা ‘বাইবেল সার্চ প্রোগ্রাম’ ব্যবহার করে বাইবেলে প্রার্থনার তিনটি উদাহরণ খুঁজে বের করুন। প্রতিটি প্রার্থনাকে প্রভুর প্রার্থনার সাথে তুলনা করুন। প্রভুর প্রার্থনার কোন কোন বিষয়গুলি বাইবেলের অন্যান্য প্রার্থনায় খুঁজে পাওয়া গেছে? আপনি যা যা দেখলেন তা পরের পৃষ্ঠায় দেওয়া টেবিলে লিখুন।

(২) একমাসের জন্য একটি প্রার্থনার ডায়েরি ব্যবহার করুন। প্রার্থনায় আপনার হতাশা, প্রার্থনায় আপনার বিজয়, এবং প্রার্থনায় ঈশ্বরের উত্তরগুলি সেখানে লিখে রাখুন। আপনার প্রার্থনার জীবনের বৃদ্ধিকে অনুপ্রাণিত করতে এই ডায়েরিটি ব্যবহার করুন।

বাইবেলের প্রার্থনা শাস্ত্র প্রার্থনার উপাদানসমূহ
নহিমিয়ের প্রার্থনা নহিমিয় ১:-১১
  • সম্পর্ক: “তাদের পক্ষে তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করে থাকো”

  • সম্মান: “মহান ও অসাধারণ ঈশ্বর”

  • সমর্পণ: “আমি তোমার দাস...প্রার্থনা করছি”

  • সংস্থান: “তোমার দাসকে আজ সফলতা দাও”

  • স্বীকারোক্তি: “আমরা ইস্রায়েলীরা এমনকি আমি ও আমার পিতৃকুলের সকলে তোমার বিরুদ্ধে যে সকল পাপ করেছি তা আমি স্বীকার করছি।”

     
     
     
Next Lesson