এই পাঠের নীতিগুলি শাস্ত্র অধ্যয়নের মূল ভিত্তি। এইগুলি হল এমন কিছু নীতি যা প্রাজ্ঞ বাইবেল শিক্ষকরা তাঁদের অধ্যয়নকে পরিচালনা করার জন্য গড়ে তুলেছেন। এই নীতিগুলি আপনার বাইবেল অধ্যয়ন পদ্ধতির ভিত্তি হওয়া উচিত। অনুগ্রহ করে এই নীতিগুলি বোঝার জন্য পর্যাপ্ত সময় নিন এবং তারপর এগুলিকে আপনার অধ্যয়নে প্রয়োগ করুন।
লেখকের অভিপ্রায় বিবেচনা করুন
লেখক তার পাঠকদেরকে কিছু বলতে চেয়েছেন। অভিপ্রেত অর্থই হল লিখিত অংশটির প্রকৃত অর্থ। ব্যাখ্যা হল লেখকের অভিপ্রেত বার্তাটি বোঝার চেষ্টা করার কাজ। আমাদের কখনোই একটি বার্তার জন্য শাস্ত্রকে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় যা লেখকের উদ্দেশ্যমূলক অর্থের চেয়ে আলাদা।
একটি শাস্ত্রীয় বিবৃতি লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন তার চেয়েও বেশি কিছু বোঝাতে পারে। যখন অব্রাহাম ইসাহাককে বলেছিলেন যে “ঈশ্বর স্বয়ং হোমবলির জন্য মেষশাবকের জোগান দেবেন...” (আদিপুস্তক ২২:৮), তিনি সম্ভবত বুঝতে পারেননি যে ঈশ্বর যিশুর আগমনের মাধ্যমে মহান উপায়ে তার বাক্য পরিপূর্ণ করবেন। যখন মোশি অব্রাহামের এই কথাগুলি লিখেছিলেন, মোশিও সম্ভবত বিবৃতিটির পূর্ণ অর্থ বুঝতে পারেননি। তবে, যিশুর আগমনের প্রতি এই বিবৃতিটি প্রয়োগ করা মোশির উদ্দেশ্যের থেকে একটি সম্পূর্ণ আলাদা অর্থ প্রকাশ করে না; এটি নীতিটির একটি বৃহত্তর, আরো পরিপূর্ণ অর্থ যা ঈশ্বর প্রদান করেন যা আমাদের পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন।
বাইবেলের প্রত্যেক লেখকই চেয়েছিলেন যে প্রথম পাঠকেরা তার বার্তাটি একটি বাস্তবিক উপায়ে প্রয়োগ করুক। আমাদের বার্তার প্রয়োগ প্রথম পাঠকদের প্রয়োগদের চেয়ে আলাদা হতে পারে, কিন্তু এটি একই নীতি অনুসরণ করতে হবে। যেহেতু আমরা একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে বাইবেলের নীতিগুলি প্রয়োগ করছি, তাই আমাদের কার্যকলাপগুলি আলাদা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলের লোকেদেরকে তাদের বাড়ির ছাদগুলোর চারপাশে রেলিংগুলো দিতে বলা হয়েছিল (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৮)। সেই সময়ে বাড়িতে ন্যাড়া ছাদ থাকত, এবং ছাদটি থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হত। আপনি যদি এমন কোনো বাড়িতে না থাকেন যেখানে ন্যাড়া ছাদে মানুষ যায়, তাহলে এটির চারধারে বেড়া দিয়ে এটিকে সুরক্ষিত স্থান করার দরকার নেই। তবে, আমরা এখনো লোকেদের জন্য আমাদের বাড়ি বা সম্পত্তিকে নিরাপদ রাখার নীতিটি প্রয়োগ করতে পারি।
ব্যাখ্যাকারীর কোনো অনুচ্ছেদ বা অংশের বিশদের কাল্পনিক ব্যাখ্যা (imaginary interpretation) করা উচিত নয়। এখানে এক আহত ব্যক্তিকে সাহায্য করা শমরীয় ব্যক্তিকে নিয়ে বলা যিশুর গল্পের একটি কাল্পনিক ব্যাখ্যার উদাহরণ দেওয়া হল (লূক ১০:৩০-৩৫):
শমরীয় একজন সুসমাচার প্রচারক, আহত ব্যক্তিটি একজন পাপী যে রূপান্তরিত হয়েছে, হোটেলটি হল একটি মন্ডলী, এবং দুটি মুদ্রা হল বাপ্তিস্ম এবং মিলন।
এই ব্যাখ্যাটি আমাদের প্রতিবেশীদেরকে প্রেম করার ব্যাপারে যিশু যা বলতে চেয়েছিলেন সেই বিষয়টিকে অবজ্ঞা করে (লূক ১০:২৭-২৯, ৩৬-৩৭): যাদের প্রয়োজন আছে তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে।
কাল্পনিক ব্যাখ্যাসমূহের তিনটি সমস্যা আছে:
১। এগুলি ব্যাখ্যাকারীর মতামত থেকে আসে।
২। এগুলি ভালো ব্যাখ্যামূলক নীতি দ্বারা পরিচালিত নয়।
৩। কোনো স্বাভাবিক, যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে এগুলিকে মূল্যায়ন করা যায় না।
পাঠ্যটি দিয়ে শুরু করুন, আপনার নিজের উপসংহার দিয়ে নয়
কৌশিক তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রাস্তা খুজঁতে একটা ম্যাপ দেখছিল, কিন্তু তারপরে বলল, “এই ম্যাপটা ভুল।” কৌশিকের প্যাসেঞ্জার প্রশ্ন করলেন, “আপনি কীভাবে জানলেন ম্যাপটি ভুল?” কৌশিক দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিল, “আমি জানি কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। ম্যাপটা ভুল।” কয়েক ঘণ্টা পর, পুরোপুরিভাবে রাস্তা হারিয়ে, কৌশিক হার স্বীকার করে নিল এবং ম্যাপটা বোঝার চেষ্টা করতে ও সেই মতো অনুসরণ করতে শুরু করল। তার কী ভুল ছিল? সে উপসংহার দিয়ে শুরু করেছিল। সে নিশ্চিত ছিল যে তার কাছে সঠিক উত্তর আছে, তাই সে ম্যাপের কথা শুনতে অস্বীকার করেছিল যা তাকে একটি ভিন্ন উত্তর দিয়েছিল।
কিছু কিছু লোক এইভাবেই বাইবেল পড়ে। একবার একজন প্রচারক শাস্ত্রের একটি পদ পড়েছিলেন যা তার পছন্দ হয়নি। তিনি বলেছিলেন, “আমি জানি না এটি কী বোঝাচ্ছে, কিন্তু এটি যা বলছে তা বোঝাচ্ছে না।” তিনি তার উপসংহার দিয়ে শুরু করেছিলেন (“আমি এই শিক্ষাদানের সাথে একমত নই”) এবং তারপর শাস্ত্রটি পড়েছিলেন। তিনি তার উপসংহারের সাথে শাস্ত্রকে মানানসই করে নিতে পারেননি, তাই তিনি সহজভাবেই শাস্ত্র এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন (“এটি যা বলছে তা বোঝাচ্ছে না”)।
শাস্ত্র ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের অবশ্যই শাস্ত্র দিয়ে শুরু করতে হবে এবং তারপর আমাদের উপসংহার খুঁজতে হবে। আমাদের সকলেরই নির্দিষ্ট কিছু অনুমান রয়েছে। আমরা একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করি। সেটা ভালো। সমস্যা হল যখন আমাদের অনুমান আমাদেরকে শাস্ত্রের সুস্পষ্ট শিক্ষা এড়িয়ে চলার দিকে ঠেলে দেয়। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা পাঠ্য (text) দিয়ে শুরু করছি, আমাদের উপসংহার দিয়ে নয়। আমাদের কখনোই আমাদের অনুমানকে পাঠ্য অবজ্ঞা করার দিকে পরিচালিত করতে দেওয়া উচিত নয়।
একটি উদাহরণ
“অতএব, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও সেইরূপ সিদ্ধ হও” (মথি ৫:৪৮)।
কেউ কেউ বলে, “কেউই সিদ্ধ বা নিখুঁত নয়!” অর্থাৎ, তারা যিশুর আজ্ঞাকে উপেক্ষা করে। তারা তাদের উপসংহার দিয়ে শুরু করেছে (“কেউই সিদ্ধ বা নিখুঁত নয়!”) এবং যিশু কী বলেছেন তা বোঝার চেষ্টাও করে না।
মথি ৫:৪৮ অধ্যয়ন করার সময়ে আমাদের অবশ্যই জানতে চাওয়া উচিত, “যিশু ‘সিদ্ধ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?” কীভাবে আমরা আমাদের স্বর্গস্থ পিতার মতো হতে পারি?” মথি ৫:৪৮ পদের আগের কয়েকটি পদই উত্তরটি দিয়েছে: আমাদেরকে সেই একইভাবে আমাদের শত্রুদেরকেও ভালোবাসতে হবে এবং তাদের প্রতি মঙ্গলসাধন করতে হবে যেভাবে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা “…সব মানুষের উপরে সূর্য উদিত করেন এবং ধার্মিক অধার্মিক নির্বিশেষে সকলের উপরে বৃষ্টি দেন” (মথি ৫:৪৫)।
শাস্ত্রীয় শিক্ষাসমূহ শাস্ত্রীয় শিক্ষার বিরোধীতা করে না
যখন আমরা একজন মানব লেখকের লেখা কোনো বই পড়ি, এটি কোনোক্ষেত্রে নিজেরই বিপরীত হতে পারে। দু’জন মানব লেখকের কিছু কিছু বিষয়ে একে অপরের বিরোধিতা করার সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য; এটির নিজের বিরোধিতা করে না।
ঈশ্বর কখনো পরিবর্তন হন না (যাকোব ১:১৭)। এই কারণে শত শত বছর ধরে মানব লেখকদের দ্বারা লিখিত হলেও তাঁর বাক্য এখনো সংগতিপূর্ণ। ঈশ্বরের বাক্য তাঁর নিজের সাথে বিরোধিতা করে না।
এই নীতিটি হল অনুপ্রেরণার মতবাদের (doctrine of inspiration) একটি আবশ্যিক ফলাফল: “সমস্ত শাস্ত্রলিপি ঈশ্বর-নিশ্বসিত …” (২ তিমথি ৩:১৬-১৭)। যদি শাস্ত্রের চূড়ান্ত উৎস ঈশ্বর হন, তাহলে বাইবেল কোনোমতেই নিজের বিরোধিতা করতে পারে না। এটি ভালো বাইবেল ব্যাখ্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যখন দু’টি অনুচ্ছেদ বা অংশকে পারস্পরিকভাবে বিপরীত মনে হয়, তখন আমাদের জানতে চাওয়া উচিত আমরা কোনো একটি শাস্ত্রীয় অংশকে ভুলভাবে বুঝেছি কিনা। যখন আমরা প্রতিটি অংশকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারব, আমরা দেখব যা উভয় অংশই সঠিক।
একটি উদাহরণ
“কারণ আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, একজন ব্যক্তি বিধান পালন না করে বিশ্বাসের মাধ্যমে নির্দোষ গণ্য হয়” (রোমীয় ৩:২৮)।
“...বিধান পালন করে কোনো মানুষ নির্দোষ প্রতিপন্ন হয় না, কিন্তু হয় যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস দ্বারা” (গালাতীয় ২:১৬)।
“তোমরা দেখতে পাচ্ছ, কোনো মানুষ কেবলমাত্র বিশ্বাসে নয়, কিন্তু তার কর্মের দ্বারাই নির্দোষ গণ্য হয়” (যাকোব ২:২৪)।
কিছু পাঠক বিশ্বাস করে যে পৌল এবং যাকোব বিশ্বাস এবং কাজের ভূমিকা নিয়ে সহমত ছিলেন না। পৌল জোর দিয়েছেন যে মানুষ বিধান পালন ছাড়াই নির্দোষ গণ্য হয়েছে। যাকোব লিখেছেন যে একজন ব্যক্তি কাজের দ্বারাই নির্দোষরূপে গণ্য হয়, কেবল বিশ্বাসের দ্বারা নয়।
এই পদগুলির প্রসঙ্গের দিকে না দেখে একজন ব্যক্তি মনে করতেই পারে যে যাকোব পৌলের বিরোধিতা করেছেন। তবে, প্রতিটি অংশের প্রসঙ্গ দেখায় যে পৌল এবং যাকোব কী বলছিলেন। একজন ব্যক্তি কীভাবে পরিত্রাণ পায় এবং ধার্মিক বলে গণিত হয় সেই ব্যাপারে পৌল কথা বলছেন। একজন ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারা ধার্মিক হয়ে ওঠে। যাকোব বলছেন যে কীভাবে একজন ব্যক্তি প্রকাশ করে যে সে পরিত্রাণ পেয়েছে। একজন ব্যক্তি কাজের দ্বারা তার ধার্মিকতার প্রকাশ করে। পৌল এবং যাকোব দুজনেই সহমত যে একজন ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারা ধার্মিক হয়, তারপর কাজের মাধ্যমে ধার্মিকতার প্রকাশ করে।
শাস্ত্রই হল শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারী
এই নীতিটি আগের নীতিটির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেহেতু শাস্ত্র নিজের বিরোধিতা করে না, তাই যেখানে অর্থটি তুলনামূলকভাবে কম স্পষ্ট এমন অংশগুলি বোঝার সুবিধার ক্ষেত্রে সরল অর্থযুক্ত অংশগুলি আমরা ব্যবহার করতে পারি। আমরা তুলনামূলকভাবে জটিল বা কঠিন পদগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য সুস্পষ্ট পদগুলি ব্যবহার করি; আমরা বেশি কঠিন পদগুলির জন্য আমাদের ব্যাখ্যা মানানসই করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সহজ পদগুলিকে জটিল করি না।
ব্যাখ্যার একটি পাঠ্যপুস্তকে এরকম বলা হয়েছে: “প্রায়শই সাধারণত বাইবেলে একটি অংশে যেটি অস্পষ্ট, অন্য অংশে সেটি সুস্পষ্ট।”[1] সমস্ত শাস্ত্র অধ্যয়নের দ্বারা, আমরা বেশি জটিল অংশগুলির উপরে সহজ অংশগুলির আলো প্রতিফলিত করি।
একটি উদাহরণ
“এখন পুনরুত্থান যদি না থাকে, তাহলে যারা মৃতদের জন্য বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করে, তারা কী করবে? মৃতেরা যদি আদৌ উত্থাপিত না হয়, লোকেরা কেন তাদের জন্য বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করে?” (১ করিন্থীয় ১৫:২৯)
এই পদের কারণে কিছু লোক মনে করে যে জীবিত লোকদের সেইসব মৃত লোকদের স্বার্থে বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত যারা বাপ্তাইজিত না হয়ে মারা গেছে। কিন্তু বাইবেল কোথাওই আমাদেরকে তা করতে বলেনি। পৌল একটি প্রথার উল্লেখ করেছেন যা তার পাঠকেরা অনুশীলন করত, কিন্তু আমরা জানি না সেই প্রথাটি কী ছিল।
শাস্ত্রই হল শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারী। এই নীতিটি আমাদেরকে ১ করিন্থীয় ১৫:২৯ পদের ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। যখন আমরা মথি ২৮:১৯, প্রেরিত ২:৪১, প্রেরিত ৮:১২, এবং প্রেরিত ১৯:৫ পড়ি, আমরা দেখি যে বাপ্তিস্ম জীবিত বিশ্বাসীদের জন্য ছিল। যেহেতু ১ করিন্থীয় ১৫:২৯ মৃতদের জন্য স্পষ্টভাবে বাপ্তিস্মের আজ্ঞা দেয় না এবং যেহেতু অন্যান্য পদগুলি প্রথম শতকের মন্ডলীগুলির সাধারণত নিয়মপালনকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, তাই এটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় মৃতদের জন্য বাপ্তিস্মের আজ্ঞা দেয়।
[1]Walter Kaiser and Moises Silva, An Introduction to Biblical Hermeneutics (Grand Rapids: Zondervan, 1994), 132.
বুঝতে পারার জন্যই শাস্ত্র লেখা হয়েছিল
ব্যাখার নিয়মমাফিক প্রক্রিয়া ব্যবহারের দ্বারা ঈশ্বরের বাক্যের অর্থ শাস্ত্রের নিজের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে। ঈশ্বরের বাক্য গোপন কোডে লেখা হয়নি।
মন্ডলীর শুরু থেকেই সমস্ত সুসমাচারের সত্য কেবল মন্ডলীর কিছু বিশেষ সদস্যদের জন্যই নয়, বরং সকলের জন্য উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যিশু বলেছিলেন যে তাঁর অনুসরণকারীদের জন্য তাঁর কাছে কোনো গোপন ধর্মতত্ত্ব বা শিক্ষা নেই (যোহন ১৮:২০)। সাধু পৌল তিমথিকে বলেছিলেন অন্যদের কাছে সেই সত্যের শিক্ষা দিতে যা পৌল জনসমক্ষে প্রচার করেছিলেন (২ তিমথি ২:২)। পৌল ব্যাখ্যা করেছেন যে যদি লোকেরা সত্য দেখতে না পায়, তাহলে তার কারণ এটা নয় যে তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, বরং এর কারণ হল শয়তান তাদের অন্ধ করে রেখেছে (২ করিন্থীয় ৪:১-৬)। ঈশ্বরের সত্য উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করাই মন্ডলীর সর্বসময়ের উদ্দেশ্য হয়ে এসেছে।
[1]এটি সত্য যে বেশিরভাগ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে তাদের অর্থের জন্য অবশ্যই সতর্কভাবে অধ্যয়ন করা উচিত, কিন্তু সেগুলির সত্য আমাদের কাছে গোপন করে রাখা হয়নি। শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি অস্পষ্ট পদগুলিতে সমাহিত করে রাখা হয়নি। গীতরচয়িতা বলেছেন, “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ,এবং আমার চলার পথের আলো” (গীত ১১৯:১০৫)। ঈশ্বরের বাক্য উদ্দেশ্য হল আমাদেরকে পথ দেখানো, সত্যকে লুকিয়ে রাখা নয়।
ঈশ্বরের বাক্যের বার্তাকে উন্মুক্ত করার জন্য কোনো বিশেষ চাবির প্রয়োজন নেই। এমন কোনো বইকে বিশ্বাস করবেন না যেগুলি বাইবেলের গোপন কোডগুলিকে উন্মুক্ত করার দাবি করে। ঈশ্বর বলেছিলেন যাতে আমরা তাঁর বাক্য বুঝতে পারি।
একটি উদাহরণ
কিছু বছর অন্তর কেউ না কেউ দাবি করবে, “ঈশ্বর আমার কাছে প্রকাশ করেছেন যে যিশু পরের বছর আসছেন।” ১৯৮৭ সালে খুব জনপ্রিয় একটি বই অনুমান করেছিল যে যিশুর পুনরাগমন ১৯৮৮ সালে হবে। লেখক দাবি করেছিলেন যে তিনি প্রাচীন ইহুদি পর্ব সংক্রান্ত একটি অধ্যয়ন থেকে এই সত্যটি আবিষ্কার করেছেন। সেই একই লেখক ১৯৮৯ সালে পুনরাগমনের কথা অনুমান করে পরের বছরই আরেকটি বই লিখেছিলেন। আমাদের এমন কাউকে বিশ্বাস করা উচিত নয় যে বাইবেলের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গোপনীয় বা লুকানো পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষাদান করে। যিশু বলেছেন, “কিন্তু সেই দিন বা ক্ষণের কথা কেউই জানে না, এমনকি স্বর্গদূতেরাও বা পুত্রও জানে না, কেবলমাত্র পিতা জানেন” (মথি ২৪:৩৬)।
বাইবেলের একটি আজ্ঞা বাইবেলের একটি প্রতিজ্ঞাকে তুলে ধরে
এই নীতিটি শেখায় যে যদি ঈশ্বর কোনো আদেশ দেন, তাহলে তিনি তা মেনে চলাও সম্ভব করে তোলেন।
একজন বাবার কথা কল্পনা করুন যিনি তার ছেলেকে বলছেন, “আমাকে খুশি করতে গেলে তোমাকে আবশ্যিকভাবে দু’মিনিটের মধ্যে এক মাইল দৌড়ে আসতে হবে।” একটা সময় পর্যন্ত, ছেলেটি সর্বশ্রেষ্ঠ চেষ্টা করে যাবে, কিন্তু সে সবসময়েই তার বাবার চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। শেষ পর্যন্ত ছেলেটি নিরাশ হবে এবং চেষ্টা করা ছেড়ে দেবে। এই ব্যক্তি কি একজন ভালো বাবা?
কিছু কিছু লোক মনে করে যে ঈশ্বর হলেন একজন অযৌক্তিক পিতা। যখন ঈশ্বর বলেন, “পবিত্র হও,”[1] তারা বলে, “ঈশ্বর জানেন যে আমরা তাঁর আদেশগুলি পালন করতে পারব না।”
জন কেলভিন (John Calvin) বলেছেন যে আমরা “... ঈশ্বরের [আজ্ঞা] দ্বারা মানুষের শক্তি পরিমাপ করতে” পারি না।[2] কেলভিন বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর যে আজ্ঞাগুলি দেন তা আমরা মানবিক শক্তিতে মেনে চলতে পারি না, কিন্তু যারা পরিত্রাণ পেয়েছে তাদের জন্য সেগুলি মেনে চলার শক্তি তিনিই প্রদান করেন। জন ওয়েসলি (John Wesley) শিখিয়েছেন যে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিটি আদেশ হল একটি প্রতিজ্ঞা যে ঈশ্বরের শক্তি একজন বিশ্বাসীর মধ্যে পরিপূর্ণ হবে।
একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক, মানবিক শক্তিতে ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলি পূরণ করতে পারে না। কিন্তু আমরা ঈশ্বরের শক্তিতে ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলি পূরণ করতে পারি। একজন প্রেমিক পিতা তাঁর সন্তানদের তাঁর আজ্ঞাগুলি পালনের জন্য শক্তি দেন। একজন প্রেমিক পিতা অসম্ভব আদেশ দিয়ে তাঁর সন্তানদের হতাশ করেন না। শাস্ত্রের প্রতিটি আদেশ পালনের জন্য সংযুক্ত অনুগ্রহও প্রদত্ত রয়েছে।
যিশু আদেশ দিয়েছেন, “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে” (মথি ২২:৩৭)। এটি একইসাথে একটি আজ্ঞা এবং একটি প্রতিজ্ঞা। একটি অবিভক্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসার জন্য ঈশ্বরের আদেশটি মূলত যদি আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি তাহলে আমাদেরকে একটি অবিভক্ত হৃদয় প্রদান করার জন্য তাঁর প্রতিজ্ঞাটি প্রকাশ করে।
একটি উদাহরণ
“অতএব, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও সেইরূপ সিদ্ধ হও” (মথি ৫:৪৮)।
প্রেক্ষাপট থেকে আমরা বুঝতে পারি যে যিশু প্রেমের কথা বলছেন, সবকিছুতে নিখুঁত হওয়ার কথা বলছেন না। আমরা এটাও বুঝতে পারি যে এটি এমন কিছু নয় যা আমরা আমাদের নিজেদের শক্তিতে সাধন করতে পারি। যে ঈশ্বর আমাদেরকে সিদ্ধ বা নিখুঁত হওয়ার আজ্ঞা দেন, তিনিই হলেন সেই ঈশ্বর যিনি আজ্ঞা পরিপূরণ করেন। গীতরচয়িতা সাক্ষ্য দিয়েছেন, “ঈশ্বর আমায় শক্তি জোগান আর আমার পথ সুরক্ষিত রাখেন” (গীত ১৮:৩২)।
যিশুর আদেশ অবশ্যই যথার্থভাবে বোঝা উচিত। এটি অবশ্যই যিশুর শিক্ষার তাত্ক্ষণিক প্রেক্ষাপটের আলোকে এবং একটি নিখুঁত বা সিদ্ধ (অবিভক্ত) হৃদয় এবং একটি পবিত্র (পৃথক) লোকেদের প্রতি বাইবেলের শিক্ষার আলোকে পড়তে হবে। একবার আমরা এটি বুঝতে পারলে, যিশুর আদেশ একটি করুণাময় প্রতিশ্রুতি হয়ে ওঠে, তা আর মানুষের প্রচেষ্টার জন্য একটি অসম্ভব মান হয়ে থাকে না।
[1]ঈশ্বর এটি বহুবার আজ্ঞা দিয়েছেন, কেবল একবার নয়। (লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪, ৪৫, লেবীয় পুস্তক ২০:৭, এবং ১ পিতর ১:১৬।)
[2]John Calvin’s commentary on 1 Thessalonians 5:23 from The Epistles of Paul to the Romans and Thessalonians.
বাইবেলের উপর তিনটি লেন্স
একজন ইভাঞ্জেলিকালপন্থী খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে, আমরা বাইবেলকে মতবাদ এবং অনুশীলনের জন্য চূড়ান্ত কর্তৃত্ব হিসেবে গ্রহণ করি। পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জ্ঞান বাইবেলের মধ্যে রয়েছে।
তবে, এটি উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যা ব্যাখ্যা করি তা আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পড়ি। বেশিরভাগ ইভাঞ্জেলিকালপন্থীর জন্য তিনটি লেন্স রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা বাইবেল পড়ি। এই লেন্সগুলি কোনোভাবেই শাস্ত্রের কর্তৃত্বকে প্রতিস্থাপন করে না। এগুলি হল কেবল আমাদের শাস্ত্র পড়ার এবং তা বুঝতে পারার উপায়সমূহ।
শাস্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে বোঝার জন্য আমাদের এই তিনটি লেন্সকেই ব্যবহার করতে হবে। যদি আমরা কোনো একটি লেন্সকে উপেক্ষা করি, তাহলে আমরা শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে ফেলতে পারি। এই উপায়গুলি ব্যবহার করে বাইবেল পড়া আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের বার্তা আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
এই ছবিটি আপনাকে বাইবেলের সাথে এই লেন্সগুলির সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করতে পারে। আমরা লেন্সগুলির মাধ্যমে বাইবেলকে দেখি।[1]
প্রথম যে লেন্সটির মধ্যে দিয়ে আমরা শাস্ত্রকে দেখি তা হল ট্রেডিশন বা ঐতিহ্য। ঐতিহ্যের লেন্সটি প্রশ্ন করে, “ইতিহাসে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা কীভাবে এই শাস্ত্রটি বুঝেছে?” ট্রেডিশন টেক্সট সম্পর্কে বোঝার ক্ষেত্রে ইতিহাস জুড়ে অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অন্তর্দৃষ্টির তুলনায় আমাদের বোধগম্যতা পরীক্ষা করে।
ট্রেডিশনের মধ্যে রয়েছে প্রথম শতকের মন্ডলীর ক্রীড সমূহ, মহান ধর্মতত্ত্ব সকল যা অতীতে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং পূর্ববর্তী প্রজন্মের শিক্ষাসমূহ। ঐতিহ্য দেখায় কীভাবে মন্ডলীর ইতিহাস জুড়ে বাইবেল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মন্ডলীর ঐতিহ্য সব বিষয়ে সহমত হয় না; কিন্তু যা মন্ডলী সর্বত্র এবং সর্ব সময়ে শিখিয়ে এসেছে সেই ঐতিহ্য হল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। স্বতন্ত্র সম্প্রদায় বা ডিনোমিনেশনগুলির ঐতিহ্য বিবেচনা করা উচিত, তবে এটি সর্বজনীন মন্ডলীর ঐতিহ্যের মতো এতটা কর্তৃত্বের অধিকারী নয়।
ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর বাক্য বুঝতে সাহায্য করতে ঐতিহ্যের মাধ্যমের কথা বলেন। যদি আপনার ব্যাখ্যা শাস্ত্রকে এমন একটি অর্থ প্রদান করে যা কেউ কখনো দেখেনি বা প্রকাশ করেনি, আপনার বোঝা বা অনুমান করা উচিত যে আপনি ভুল করছেন!
লেন্স ২: যুক্তি
যুক্তি (Reason) হল আমাদের ব্যবহার করা দ্বিতীয় লেন্স। এই লেন্সটি প্রশ্ন করে, “এই শাস্ত্রাংশটির একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা কী?” যুক্তির লেন্সটি আমাদেরকে আমরা শাস্ত্রে যা পড়েছি যা বোঝার জন্য আমাদের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করার কথা বলে। আমরা শাস্ত্র বোঝার জন্য যুক্তি ব্যবহার করি; তবে, আমরা শাস্ত্রকে সত্য প্রমাণ করার জন্য যুক্তিকে ব্যবহার করতে পারছি না বলে আমাদের কখনোই শাস্ত্র থেকে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। বহু লোক অলৌকিক কাজ সংক্রান্ত বাইবেলের নথিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে কারণ তারা মনে করে সেই অলৌকিক কাজগুলিই যুক্তির সাথে বিপরীত। তবে অলৌকিক কাজগুলি যুক্তির বিরোধী নয়, কারণ আমরা যৌক্তিকভাবে বুঝতে পারি যে ঈশ্বরের অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতায় রয়েছে।
কিছু লোক যুক্তির ব্যবহারের বিরোধিতা করে; তারা তর্ক করে যে আমাদের পতিত মন ঈশ্বরের বাক্য বোঝার জন্য বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। এটি সত্য যে মানুষের সীমিত মানসিক ক্ষমতায় আছে। তবে পৌল তার যুক্তিতর্কগুলি করার সময় সংগতিপূর্ণভাবে যুক্তিপ্রয়োগ করার জন্য আহ্বান করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, রোমীয় পত্রে পৌল একগুচ্ছ প্রশ্ন করেছেন যা তার পাঠকদেরকে পরিত্রাণের মহান সত্যের একটি যৌক্তিক বোধগম্যতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের যুক্তি কখনোই চূড়ান্ত কর্তৃত্ব না হলেও, আমাদের শাস্ত্রের যৌক্তিক অর্থকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
লেন্স ৩: অভিজ্ঞতা
অভিজ্ঞতা (experience) হল শেষ লেন্স। এই লেন্সটি প্রকাশ করে, “আমি যা বুঝেছি তা কি অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অভিজ্ঞতার সাথে মেলে?” ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কখনোই পরম সত্যের উর্দ্ধে বিশ্বাস করা উচিত নয়। তবে, ঐতিহ্য এবং যুক্তির সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে অভিজ্ঞতা মূল্যবান।
এই প্রত্যেকটি লেন্সই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি কেবল ঐতিহ্যকে ব্যবহার করি, আমরা রোমান ক্যাথলিকদের মতো মন্ডলীর শিক্ষাকে শাস্ত্রের কর্তৃত্বের সমান রূপে দেখার মতো ভুল করব। আমরা যদি কেবল যুক্তি ব্যবহার করি, তাহলে আমরা চূড়ান্ত কর্তৃত্বের স্থানে চিন্তা ভাবনাকে দেখব। যদি আমরা কেবল অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করি, যদি আমরা কেবল অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করি, আমাদের ব্যাখ্যা সীমিত হয়ে যাবে এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি, দৃষ্টিকোণ, এবং মানুষের মতামতের উপর নির্ভরশীল হবে। এই লেন্সগুলি হল আমাদের শাস্ত্র বোঝার উপায়, কিন্তু এগুলি এমনভাবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয় যা শাস্ত্রের কর্তৃত্বের বিরোধিতা করে।
একটি উদাহরণ
“এই কারণের জন্য আমি পিতার কাছে নতজানু হই... যেন ঈশ্বরের সকল পূর্ণতায় ভরপুর হয়ে ওঠো” (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৯)।
পৌল প্রার্থনা করেছিলেন যেন ইফিষীয় মন্ডলী ঈশ্বরের সাথে তাদের সম্পর্কে গভীরভাবে বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যেন তারা ঈশ্বরের সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতায় পূর্ণ হয়। যদি আমরা এই তিনটি লেন্স দিয়ে এই প্রার্থনাটি দেখি তাহলে আমরা কী দেখব?
ঐতিহ্য। সমস্ত প্রজন্মের খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা শিখিয়েছেন যে ঈশ্বর বিশ্বাসীদের জন্য একটি গভীর পথচলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কীভাবে ঈশ্বর বিশ্বাসীদের মধ্যে এই উদ্দেশ্যটি সম্পন্ন করেন তার বিশদ বিবরণে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা একমত হননি, তবে মন্ডলীর ইতিহাস জুড়ে, বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা একমত হয়েছেন যে ঈশ্বর তাঁর সন্তানদেরকে নিজের সাথে গভীর সম্পর্কের জন্য আহ্বান করেন।
দ্বিতীয় শতকে ইরেনিয়াস (Irenaeus) লিখেছেন যে আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল “যেন আমরা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি এবং সদৃশ হতে পারি।”[3] ইরেনিয়াস বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক বিশ্বাসীই ঈশ্বরের সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতায় পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। চতুর্থ শতকে পূর্বদেশীয় লেখকরা যেমন গ্রেগরি অফ নাইসা (Gregory of Nyssa) শিখিয়েছিলেন যে খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের ঈশ্বরের সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতায় আরো বেশি করে পূর্ণ হয়ে উঠতে হবে। ১৭ শতকে ফরাসী ক্যাথলিক ফ্র্যাঙ্কোইস ফেনেলন (Francois Fenelon) লিখেছিলেন যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহপূর্ণ শক্তিতে, আমরা “যিশুর মতো জীবন যাপন করতে, তাঁর মতো চিন্তাভাবনা করতে...” সক্ষম।[4] ঈশ্বরের অনুগ্রহের মাধ্যমেই আমরা তাঁর প্রতিমূর্তির অনুরূপ হয়ে উঠতে পারি।
যুক্তি। পৌলের প্রার্থনাটি পড়ার সময়ে, আমাদের যুক্তি প্রশ্ন করে, “এই প্রার্থনার আমার ব্যাখ্যা কি শাস্ত্রের বাকি অংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?” খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য একটি গভীর জীবনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে এই প্রার্থনাকে ব্যাখ্যা করা কি যুক্তিযুক্ত? অন্যান্য শাস্ত্রাংশগুলির দেখলে, আমরা দেখি যে রোমীয় ১২:১, ১ থিষলনীকীয় ৫:২৩, এবং অন্যান্য পাঠ্য একটি গভীর জীবনের পরামর্শ দেয় বা সুপারিশ করে যা বিশ্বাসীর জন্য উপলব্ধ। ঈশ্বরের সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতায় পূর্ণ হওয়ার বাস্তবতাটি যুক্তিযুক্ত।
অভিজ্ঞতা। ইতিহাস জুড়ে মহান খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অভিজ্ঞতা একটি গভীর জীবনের জন্য তাদের আকাঙ্খাকে প্রকাশ করে। প্রত্যেক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ খ্রিষ্টবিশ্বাসী ঈশ্বরকে আরো জানার জন্য ক্ষুধার্ত বা প্রবলভাবে আকাঙ্খিত। মহান খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের সাক্ষ্যগুলি দেখায় যে এই ক্ষুধা ঈশ্বরের অনুগ্রহ দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল।
“ট্রেডিশন বা ঐতিহ্য হল যুগে যুগে আত্মার শিক্ষাদানের ক্রিয়াকলাপের ফল… এটি অব্যর্থ নয়, তবে এটি [গুরুত্বহীন]ও নয় এবং আমরা যদি তা উপেক্ষা করি তাহলে নিজেদেরকে দরিদ্র করে তুলি।”
- জে. আই. প্যাকার (J.I. Packer, “Upholding the Unity of Scripture Today”)
[3]As quoted in William M. Greathouse, From the Apostles to Wesley (Kansas City: Beacon Hill Press, 1979), 38
বিতর্কমূলক অংশগুলি বিবেচনার সময়ে কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
শাস্ত্রে এমন কিছু অংশ বা অনুচ্ছেদ আছে যেগুলি বিভিন্ন মন্ডলীতে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং কখনও কখনও বন্ধুদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যখন আপনি এরকম কোনো অংশ দেখেন তখন কেবল আপনার মতামত রক্ষা করার পরিবর্তে নিচের প্রশ্নগুলি বিবেচনা করুন:
আমি কি উপসংহার দিয়ে শুরু করছি? আমি কি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমি পড়ার আগেই শাস্ত্রটি কী প্রকাশ করতে পারে তা ভেবে ফেলেছি?
এই শাস্ত্রটি নিয়ে আমার ব্যাখ্যা কি শাস্ত্রের অন্যান্য অংশগুলির বিরোধিতা করে?
অন্যান্য পদগুলি কি এই অংশটির জন্য আরো সুস্পষ্ট কিছু বোঝায়?
আমার ব্যাখ্যা কি কোনো গোপন বার্তাভিত্তিক, নাকি আমি সম্ভাব্য সুস্পষ্ট পদ্ধতিতে অংশটি ব্যাখ্যা করছি?
এই অংশটি কি কোনো আদেশ দিচ্ছে? যদি তাই হয়, আদেশটির দ্বারা কোন প্রতিশ্রুতির কথা বোঝানো হয়েছে?
বিভিন্ন সময়কাল ধরে এই অংশটি সম্পর্কে খ্রিষ্টবিশ্বসী মন্ডলীর ঐতিহ্য কী প্রকাশ করে এসেছে?
এই অংশটির একটি সুস্পষ্ট এবং যুক্তিযুক্ত অন্তর্দৃষ্টিটি কী?
এই অংশটি সম্পর্কে অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অভিজ্ঞতা কী বলে?
এই প্রশ্নগুলি নিশ্চয়তা দেয় না যে আপনি একটি অংশের ব্যাখ্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সম্মতি পাবেন। তবে এগুলি আপনাকে সম্মতির জায়গাগুলি খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। যদি তা না হয়, তাহলে প্রশ্নগুলি সেই সমস্ত কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে যেগুলি নিয়ে ঈশ্বরের বাক্যের কর্তৃত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খাঁটি খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা শাস্ত্রের কিছু অংশ বা অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যার বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে।
(১) বাইবেলের ব্যাখ্যার মৌলিক নীতিগুলি বুঝতে পারলে তা আপনাকে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তে আসা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে।
(২) পাঠ্য (text) দিয়ে শুরু করুন, আপনার নিজের উপসংহার দিয়ে নয়। আপনার অনুমানগুলি আপনাকে পাঠ্যটিকে উপেক্ষা করার কারণ হতে দেবেন না।
(৩) শাস্ত্রীয় শিক্ষাসমূহ শাস্ত্রীয় শিক্ষার বিরোধীতা করে না। যদি দু’টি অংশকে বিপরীতার্থক বলে মনে হয়, তাহলে বিবেচনা করে দেখুন যে আপনি কোনো একটি অংশকে ভুল বুঝেছেন কিনা।
(৪) শাস্ত্রই হল শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারী। তুলনামূলকভাবে কঠিন অংশগুলির ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ অংশগুলি ব্যবহার করুন।
(৫) বুঝতে পারার জন্যই শাস্ত্র লেখা হয়েছিল। পাঠ্যের সাধারণ বোধগুলি লক্ষ্য করুন।
(৬) বাইবেলের একটি আজ্ঞা বাইবেলের একটি প্রতিজ্ঞাকে তুলে ধরে। যে ঈশ্বর আদেশ দেন, সেই ঈশ্বরই আমাদের আনুগত্যকে শক্তিযুক্ত করেন।
(৭) পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জ্ঞান বাইবেলের মধ্যে রয়েছে।
(৮) আমরা তিনটি লেন্সের মাধ্যমে শাস্ত্রের দিকে দেখি যা আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্য বুঝতে সাহায্য করে:
ঐতিহ্য: ইতিহাস জুড়ে অন্যান্য খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের অন্তর্দৃষ্টি।
যুক্তি: পাঠ্যের অর্থের একটি যুক্তিযুক্ত বোধগম্যতা।
SGC exists to equip rising Christian leaders around the world by providing free, high-quality theological resources. We gladly grant permission for you to print and distribute our courses under these simple guidelines:
No Changes – Course content must not be altered in any way.
No Profit Sales – Printed copies may not be sold for profit.
Free Use for Ministry – Churches, schools, and other training ministries may freely print and distribute copies—even if they charge tuition.
No Unauthorized Translations – Please contact us before translating any course into another language.
All materials remain the copyrighted property of Shepherds Global Classroom. We simply ask that you honor the integrity of the content and mission.